জামাআতে নামাজ আদায়ের ফযীলত
জামাআতে নামাজ আদায়ের ফযীলত >> সহীহ মুসলিম শরীফ এর মুল সুচিপত্র দেখুন >> নিম্নে মুসলিম শরীফ এর একটি অধ্যায়ের হাদিস পড়ুন
৪১. অধ্যায়ঃ নির্ধারিত সময় থেকে বিলম্বে নামাজ আদায় করা মাকরূহ আর ঈমাম বিলম্ব করলে মুক্তাদী কি করিবে?
৪২. অধ্যায়ঃ জামাআতে নামাজ আদায়ের ফযীলত এবং তা পরিত্যাগকারীর প্রতি কঠোরতা
৪৩. অধ্যায়ঃ যে ব্যক্তি আযান শুনে তার জন্য মাসজিদে আসা ওয়াজিব
৪৪. অধ্যায়ঃ জামাআতের সাথে নামাজ আদায় করা হিদায়াতের শামিল
৪৫. অধ্যায়ঃ জামাআতের সাথে ইশা ও ফাজরের নামাজ আদায় করার ফযীলত
৪৬. অধ্যায়ঃ মুয়ায্যিন আযান দিলে মসজিদ থেকে বেরিয়ে যাওয়া নিষেধ
৪৭. অধ্যায়ঃ কোন ওযরবশতঃ জামাআতে শারীক না হওয়া
৪৮. অধ্যায়ঃ জামাআতে নাফ্ল নামাজ এবং চাটাই, মুসল্লা ও কাপড় ইত্যাদি পবিত্র বস্তুর উপর নামাজ আদায় জায়িয
৪৯. অধ্যায়ঃ ফারয নামাজ জামাআতে আদায়ের ফাযীলত এবং নামাজের জন্য অপেক্ষা করা
৪১. অধ্যায়ঃ নির্ধারিত সময় থেকে বিলম্বে নামাজ আদায় করা মাকরূহ আর ঈমাম বিলম্ব করলে মুক্তাদী কি করিবে?
১৩৫১. আবু যার [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] আমাকে বললেনঃ তুমি যদি এমন ইমামের অধীনস্থ হয়ে পড় যে উত্তম সময়ে নামাজ আদায় না করে দেরী করে আদায় করিবে তাহলে কী করিবে? আবু যার বলেন – এ কথা শুনে আমি জিজ্ঞেস করলাম [হে আল্লাহর রসূল!] , এরূপ অবস্থায় পতিত হলে আপনি আমাকে কী করিতে আদেশ করছেন? রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলিলেন, তুমি উত্তম সময়ে নামাজ আদায় করে নিবে। তারপরে যদি তাদের সাথে অর্থাৎ- ইমামের সাথে জামাআতে নামাজ পাও তাহলে তাদের সাথেও আদায় করিবে। এটা তোমার জন্য নাফল হিসেবে গণ্য হইবে।
তবে বর্ণনাকারী খালাফ তার বর্ণনায় [আরবী] কথাটা উল্লেখ করেননি।
[ই.ফা.১৩৩৮, ইসলামিক সেন্টার-১৩৫০]
১৩৫২. আবু যার [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
তিনি বলেন, আমাকে রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] বললেনঃহে আবু যার! আমার পরে অচিরেই এমন আমীর বা শাসকদের আবির্ভাব ঘটবে যারা একেবারে শেষ ওয়াক্তে নামাজ আদায় করিবে। এরূপ হলে তুমি কিন্তু সময় মতো [নামাজের উত্তম সময়ে] নামাজ আদায় করে নিবে। পরে যদি তুমি তাদের সাথে নামাজ আদায় করো তাহলে তা তোমার জন্য নাফল হিসেবে গণ্য হইবে। আর যদি তা না হয় তাহলে তুমি অন্তত তোমার নামাজ রক্ষা করিতে সক্ষম হলে।
[ই.ফা.১৩৩৯, ইসলামিক সেন্টার-১৩৫১]
১৩৫৩. আবু যার [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
তিনি বলেন, আমার বন্ধু রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] আমাকে আমীরের বা নেতার আদেশ শুনতে ও মানতে আদেশ করিয়াছেন যদিও সে একজন হাত-পা কাটা ক্রীতদাস হয়। আর আমি যেন সময় মতো [প্রথম ওয়াক্তে] নামাজ আদায় করি। এরপরে তুমি দেখ যে, লোকজন [জামাআতে] নামাজ আদায় করে নিয়েছে তাহলে তুমি তো আগেই তোমার নামাজ হিফাযাত করেছ। অন্যথায় [অর্থাৎ- তাদের সাথে জামাআতের নামাজ পেলে] তা তোমার জন্য নাফল হিসেবে গণ্য হইবে।
[ই.ফা.১৩৪০, ইসলামিক সেন্টার-১৩৫২]
১৩৫৪. আবু যার [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] আমার উরুর উপর সজোরে হাত মেরে বললেনঃ যারা সময় মতো নামাজ আদায় না করে দেরী করে আদায় করে, তোমাকে যদি এমন লোকদের মাঝে থাকতে হয় তাহলে কী করিবে? বর্ণনাকারী আবদুল্লাহ ইবনিস সাবিত বলেন – আবু যার জিজ্ঞেস করিলেন, তাহলে আপনি আমাকে কী আদেশ করছেন? রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] বললেনঃ তুমি সময় মতো [প্রথম ওয়াক্তে] নামাজ আদায় করে নাও এবং নিজের কাজে চলে যাও। তারপর যখন নামাজ আদায় করা হইবে তখন যদি তুমি মসজিদে উপস্থিত থাক তাহলে [তাদের সাথে জামাআতে] নামাজ আদায় করে নাও।
[ই.ফা.১৩৪১, ইসলামিক সেন্টার-১৩৫৩]
১৩৫৫. আবুল আলিয়াহ্ আল বাররা [রহমাতুল্লাহি আলাইহি] হইতে বর্ণীতঃ
তিনি বলেন, [একদিন] আবদুল্লাহ ইবনি যিয়াদ নামাজ আদায় করিতে দেরী করিল। এরপরেই আবদুল্লাহ ইবনিস্ সামিত আমার কাছে আসলেন। আমি তাকে একখানা চেয়ার পেতে দিলে তিনি বসলেন। তখন আমি তার কাছে আবদুল্লাহ ইবনি যিয়াদ – এর কৃতকর্মের কথা উল্লেখ করলাম। তখন তিনি ঠোঁট কামড়িয়ে সজোরে আমার উরুর উপর হাত মেরে বলিলেন – আমিও এ ব্যাপারে আবু যারকে জিজ্ঞেস করে ছিলাম, তুমি যেমন আমাকে জিজ্ঞেস করলে। আর আমি যেভাবে তোমার উরুর উপরে সজোরে হাত মারলাম তেমনি তিনিও আমার উরুর উপর হাত মেরে বলিলেন, তুমি যেমন আমাকে জিজ্ঞেস করলে ঠিক তেমনি আমিও রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] – কে এ বিষয়ে জিজ্ঞেস করেছিলাম। আর আমি যেমন তোমার উরুর উপর সজোরে আঘাত করলাম ঠিক তেমনি তিনিও আমার উরুর উপর হাত মেরে বললেনঃ তুমি সময় মতো [প্রথম ওয়াক্তে] নামাজ আদায় করে নিবে। তবে সবার সাথে জামাআতে যদি নামাজ আদায় করার সুযোগ হয় তাহলে তাদের সাথেও নামাজ আদায় করে নিবে – এক্ষেত্রে বলবে না যে, আমি নামাজ আদায় করে নিয়েছি তাই এখন আমি নামাজ আদায় করব না।
[ই.ফা.১৩৪২, ইসলামিক সেন্টার-১৩৫৪]
১৩৫৬. আবদুল্লাহ ইবনিস সামিত [রহমাতুল্লাহি আলাইহি] হইতে বর্ণীতঃ
তিনি বলেন, আবু যার তাকে বলিলেন – তোমরা অথবা বলিলেন [বর্ণনাকারীর সন্দেহ] তুমি যদি এমন লোকদের মধ্যে অবস্থান করো যারা সময় মতো নামাজ আদায় না করে দেরী করে পড়ে তাহলে কী করিবে? এরপর আবার নিজেই বলিলেন, তুমি সময়মত [প্রথম ওয়াক্তে] নামাজ আদায় করে নিবে। তারপর জামাআতে নামাজ হলে তাদের সাথেও নামাজ আদায় করে নিবে। কারণ এটি তোমার জন্য বাড়তি সওয়াবের কাজ হিসেবে গণ্য হইবে।
[ই.ফা.১৩৪৩, ইসলামিক সেন্টার-১৩৫৫]
১৩৫৭. আবুল আলিয়াহ্ আল বাররা [রহমাতুল্লাহি আলাইহি] হইতে বর্ণীতঃ
তিনি বলেন, আবদুল্লাহ ইবনিস সামিতকে বললাম, আমি এমন সব আমীর বা নেতার পিছনে জুমুআর নামাজ আদায় করি যারা দেরী করে নামাজ আদায় করে থাকে। মাত্বার বলেনঃ এ কথা শুনে আবুল আলিয়াহ্ আল বাররা আমার উরুর উপরে সজোরে এমনভাবে হাত দিয়ে চাপড়ালেন যে, আমি ব্যথাই পেলাম। এবার তিনি বলিলেন- এ বিষয়ে আমি আবু যারকে জিজ্ঞেস করেছিলাম। তিনিও আমার উরুর উপরে সজোরে হাত দিয়ে চাপড়িয়ে বলিলেন – আমি রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] – কে এ বিষয়ে জিজ্ঞেস করলে তিনি বললেনঃ এমতাবস্থায় তোমরা সময়মত [প্রথম ওয়াক্তে] নামাজ আদায় করে নিবে। আর তাদের সাথে জামাআতের নামাজকে নাফল হিসেবে আদায় করিবে। আবুল আলিয়াহ্ আল বাররা আরো বলেন, আবদুল্লাহ ইবনিস্ সামিত বলেছেন, আমি জানতে পেরেছি যে, [এ কথা বলার সময়] আল্লাহর নবী [সাঃআঃ] ও আবু যার – এর উরুর উপর সজোরে চাপড় দিয়েছিলেন।
[ই.ফা.১৩৪৪, ইসলামিক সেন্টার-১৩৫৬]
৪২. অধ্যায়ঃ জামাআতে নামাজ আদায়ের ফযীলত এবং তা পরিত্যাগকারীর প্রতি কঠোরতা
১৩৫৮. আবু হুরায়রা [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলেছেনঃ জামাআতে নামাজ আদায় করা তোমাদের কারো একাকী নামাজ আদায় করার চাইতে পঁচিশ গুণ বেশী উত্তম।
[ই.ফা.১৩৪৫, ইসলামিক সেন্টার-১৩৫৭]
১৩৫৯. আবু হুরায়রাহ্ [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলেছেনঃ জামাআতের সাথে নামাজ আদায় করা একাকী নামাজ আদায় করার চেয়ে পঁচিশ গুণ বেশী উত্তম। তিনি আরো বলেছেনঃ রাতের কর্তব্যরত মালায়িকাহ্ [ফেরেশতাগণ] এবং দিনের কর্তব্যরত মালায়িকাহ্ ফাজ্বরের নামাজের সময় একত্র হয় | এ কথা বলে আবু হুরায়রাহ্ [রাদি.] বলিলেন, এক্ষেত্রে তোমরা ইচ্ছা করলে কুরআনের আয়াতটি পাঠ করো
وَقُرْآنَ الْفَجْرِ إِنَّ قُرْآنَ الْفَجْرِ كَانَ مَشْهُودًا
অর্থাৎ- “ফাজরের ওয়াক্তের কুরআন পাঠে উপস্থিত থাকে”- [সূরাহ্ ইসরা ১৭:৭৮]।
[ই.ফা.১৩৪৬, ইসলামিক সেন্টার-১৩৫৮]
১৩৬০. আবু হুরায়রাহ্ [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
তিনি বলেন, আমি নবী [সাঃআঃ] -কে বলিতে শুনেছি ……। তবে আবু বাকর ইবনি ইসহাক্ব তার বর্ণিত হাদীসে [আরবী] এর পরিবর্তে [আরবী] কথাটি উল্লেখ করিয়াছেন।
[ই.ফা.১৩৪৬, ইসলামিক সেন্টার-১৩৫৮]
১৩৬১. আবু হুরায়রাহ্ [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলেছেনঃ এক ওয়াক্ত নামাজ জামাআতের সাথে আদায় করা পঁচিশ ওয়াক্ত একাকী নামাজ আদায় করার সমান।
[ই.ফা.১৩৪৮, ইসলামিক সেন্টার-১৩৬০]
১৩৬২. আবু হুরায়রাহ্ [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলেছেনঃ ইমামের সাথে এক ওয়াক্ত নামাজ আদায় করা একাকী পঁচিশ ওয়াক্ত নামাজ আদায় করার চেয়েও উত্তম।
[ই.ফা.১৩৪৯, ইসলামিক সেন্টার-১৩৬১]
১৩৬৩. আবদুল্লাহ ইবনি উমর [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলেছেনঃ জামাআতের সাথে নামাজ আদায় করা নামাজ একাকী আদায় করা নামাজ থেকে সাতাশ গুণ অধিক মর্যাদা সম্পন্ন।
[ই.ফা.১৩৫০, ইসলামিক সেন্টার-১৩৬২]
১৩৬৪. আবদুল্লাহ ইবনি উমর [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
নবী [সাঃআঃ] বলেছেনঃ কোন ব্যক্তির জামাআতে নামাজ আদায় করা তার একাকী আদায় করা নামাজ থেকে সাতাশ গুণ অধিক [মর্যাদাসম্পন্ন]।
[ই.ফা.১৩৫১, ইসলামিক সেন্টার-১৩৬৩]
১৩৬৫. ইবনি নুমায়র [রহমাতুল্লাহি আলাইহি] তার পিতার হইতে বর্ণীতঃ
যে হাদীস বর্ণনা করিয়াছেন তাতে “বিশগুণের কিছু বেশী” মর্যাদার কথা উল্লেখ করিয়াছেন। আর আবু বাকর [রহমাতুল্লাহি আলাইহি] -এর বর্ণনায় “সাতাশগুণ” মর্যাদার কথা উল্লেখ আছে।
[ই.ফা.১৩৫২, ইসলামিক সেন্টার-১৩৬৪]
১৩৬৬. আবদুল্লাহ ইবনি উমর [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
নবী [সাঃআঃ] বলেছেনঃ বিশগুণের চেয়ে অধিক মর্যাদাসম্পন্ন। {১}
[ই.ফা.১৩৫৩, ইসলামিক সেন্টার-১৩৬৫]
{১} মর্যাদা বেশী কম হওয়া বিষয়ে নির্ভরযোগ্য বিশ্লেষণ হল নামাজ আদায়কারী ব্যক্তির বিনয়, নম্রতা ও সুন্দরভাবে পূর্ণরূপে নামাজ আদায় করার অবস্থানুপাতে সাওয়াব লাভ করার মর্যাদার পার্থক্য হইবে | [শারহে মুসলিম-১ম খন্ড ২৩১ পৃষ্ঠা]
১৩৬৭. আবু হুরায়রাহ্ [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
কোন এক ওয়াক্ত নামাজ জামাআতে রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] কিছু সংখ্যক লোককে না পেয়ে বললেনঃ আমি ইচ্ছা করেছি যে, কোন জনৈক ব্যক্তিকে আমি নামাজে ইমামাত করার আদেশ করি এবং যারা নামাজে জামাআতে আসে না তাদের কাছে যাই এবং কাঠ-খড় দ্বারা আগুন জ্বালিয়ে তাদের বাড়ী-ঘর জ্বালিয়ে দিতে আদেশ করি। তাদের কেউ যদি জানত যে তারা একখন্ড গোশত হাড্ডি পাবে তাহলে তারা তাতে অবশ্যই উপস্থিত হত। অর্থাৎ- ইশার নামাজে [উপস্থিত হত]।
[ই.ফা.১৩৫৪, ইসলামিক সেন্টার-১৩৬৬]
১৩৬৮. আবু হুরায়রাহ্ [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলেছেনঃ ইশা ও ফাজরের নামাজ আদায় করা মুনাফিক্বদের সর্বাপেক্ষা কঠিন। তারা যদি জানত যে, এ দুটি নামাজের পুরষ্কার বা সাওয়াব কত তাহলে হামাগুড়ি দিয়ে বুক হেঁচড়ে হলেও তারা এ দুওয়াক্ত জামাআতে উপস্থিত হত | আমি ইচ্ছা করেছি নামাজ আদায় করার আদেশ দিয়ে কাউকে ঈমামতি করিতে বলি। আর আমি কিছু লোককে নিয়ে জ্বালানী কাঠের বোঝাসহ যারা নামাজের জামাআতে আসে না তাদের কাছে যাই এবং আগুন দিয়ে তাদের ঘর-বাড়ী জ্বালিয়ে দেই।
[ই.ফা.১৩৫৫, ইসলামিক সেন্টার-১৩৬৭]
১৩৬৯. আবু হুরায়রাহ্ [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
তিনি রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] থেকে কিছু সংখ্যক হাদীস বর্ণনা করিয়াছেন। তার মধ্যে একটি হাদীস হলো, রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলেছেনঃ আমি মনস্থ করেছি যে, লোকজনকে জ্বালানী কাঠের স্তূপ করিতে বলি। তারপর একজনকে নামাজে ইমামাত করিতে আদেশ করি এবং লোকজনসহ গিয়ে তাদের ঘর-বাড়ী জ্বালিয়ে দেই, যারা জামাআতে উপস্থিত হয় না।
[ই.ফা.১৩৫৬, ইসলামিক সেন্টার-১৩৬৮]
১৩৭০. আবু হুরায়রাহ্ [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
নবী [সাঃআঃ] থেকে অনুরূপ হাদীস বর্ণনা করিয়াছেন।
[ই.ফা.১৩৫৭, ইসলামিক সেন্টার-১৩৬৯]
১৩৭১. আবদুল্লাহ ইবনি মাসউদ [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
জুমুআর নামাজ আদায় করিতে আসে না এমন এক দল লোক সম্পর্কে নবী [সাঃআঃ] বললেনঃ আমার ইচ্ছা হয় যে, জনৈক ব্যক্তিকে নামাজে ঈমামত করার নির্দেশ দেই আর আমি গিয়ে যারা জুমুআর নামাজ আদায় করিতে আসে না, আগুন লাগিয়ে তাদের ঘর-বাড়ি জ্বালিয়ে দেই।
[ই.ফা.১৩৫৮, ইসলামিক সেন্টার-১৩৭০]
৪৩. অধ্যায়ঃ যে ব্যক্তি আযান শুনে তার জন্য মাসজিদে আসা ওয়াজিব
১৩৭২. আবু হুরায়রাহ্ [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
তিনি বলেন, এক অন্ধ লোক নবী [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম] -এর কাছে এসে বলিল হে আল্লাহর রসূল! আমাকে ধরে মাসজিদে নিয়ে আসার মতো কেউ নেই। অতঃপর তাকে বাড়ীতে নামাজ আদায় করার অনুমতি প্রদান করার জন্য সে রসূলুল্লাহ [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম] – এর কাছে আবেদন জানাল। তিনি [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম] তাকে বাড়ীতে নামাজ আদায় করার অনুমতি দিলেন। কিন্তু যে সময় লোকটি ফিরে যেতে উদ্যত হলো তখন রসূলুল্লাহ [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম] তাকে ডেকে জিজ্ঞেস করিলেন? তুমি কি নামাজের আযান শুনতে পাও? সে বলিল, হ্যাঁ [আমি আযান শুনতে পাই]। নবী [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম] বললেনঃ তাহলে তুমি মাসজিদে আসবে।
[ই.ফা.১৩৫৯, ইসলামিক সেন্টার-১৩৭১]
৪৪. অধ্যায়ঃ জামাআতের সাথে নামাজ আদায় করা হিদায়াতের শামিল
১৩৭৩. আবদুল্লাহ ইবনি মাসউদ [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
আমাদের ধারণা হলো মুনাফিক্ব যার নিফাক্ব স্পষ্ট হয়ে গিয়েছিল এবং রুগ্ন ব্যক্তি ছাড়া কেউই নামাজের জামাআত পরিত্যাগ করেনা। রসূলুল্লাহ [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম] – এর সময় রুগ্ন ব্যক্তিও দুজন মানুষের কাঁধে ভর দিয়ে নামাজের জামাআতে উপস্থিত হত। তিনি আরো বলেছেনঃ রসূলুল্লাহ [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম] আমাদের হিদায়াতের কথা শিখিয়েছেন। আর হিদায়াতের কথা ও পদ্ধতির মধ্যে একটি হলো সে মসজিদে গিয়ে নামাজ আদায় করা যে মাসজিদে আযান দেয়া হয়েছে।
[ই.ফা.১৩৬০, ইসলামিক সেন্টার-১৩৭২]
১৩৭৪. আবদুল্লাহ ইবনি মাসঊদ [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
তিনি বলেন, যে ব্যক্তি আগামীকাল ক্বিয়ামাতের দিন মুসলিম হিসেবে আল্লাহর সাথে সাক্ষাৎ পেতে আনন্দবোধ করে, সে যেন ঐ নামাজের রক্ষণাবেক্ষণ করে, যেসব নামাজের জন্য আযান দেয়া হয়। কেননা, আল্লাহ তাআলা তোমাদের নবীর জন্য হিদায়াতের পন্থা পদ্ধতি বিধিবদ্ধ করিয়াছেন। আর এসব নামাজও হিদায়াতের পন্থা পদ্ধতি, যেমন জনৈক ব্যক্তি নামাজের জামাআতে উপস্থিত না হয়ে বাড়ীতে নামাজ আদায় করে থাকে, অনুরূপ তোমরাও যদি তোমাদের বাড়ীতে নামাজ আদায় করো তাহলে নিঃসন্দেহে তোমরা তোমাদের নবীর সুন্নাত বা পন্থা-পদ্ধতি পরিত্যাগ করলে। আর তোমরা যদি এভাবে তোমাদের নবীর সুন্নাত বা পদ্ধতি পরিত্যাগ করো তাহলে অবশ্যই পথ হারিয়ে ফেলবে। কেউ যদি অতি উত্তমভাবে পবিত্রতা অর্জন করে [নামাজ আদায় করার জন্য] কোন একটি মাসজিদে উপস্থিত হয় তাহলে মাসজিদে যেতে সে যতবার পদক্ষেপ ফেলবে তার প্রতিটি পদক্ষেপের পরিবর্তে আল্লাহ তাআলা তার জন্য একটি নেকী লিখে দেন, তার মর্যাদা বৃদ্ধি করে দেন এবং একটি করে পাপ দূর করে দেন। আবদুল্লাহ ইবনি মাসউদ [রাদি.] বলেন, আমরা মনে করি যার মুনাফিক্বী সর্বজনবিদিত এমন মুনাফিক্ব ছাড়া কেউ-ই জামাআতে নামাজ আদায় করা ছেড়ে দেয় না। অথচ রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] – এর যামানায় এমন ব্যক্তি জামাআতে উপস্থিত হত যাকে দুজন মানুষের কাঁধে ভর দিয়ে এসে নামাজের কাতারে দাঁড় করিয়ে দেয়া হত।
[ই.ফা.১৩৬১, ইসলামিক সেন্টার-১৩৭৩]
৪৫. অধ্যায়ঃ জামাআতের সাথে ইশা ও ফাজরের নামাজ আদায় করার ফযীলত
১৩৭৫. আবুশ্ শাসা [রহমাতুল্লাহি আলাইহি] হইতে বর্ণীতঃ
তিনি বলেন, আমরা আবু হুরায়রাহ্ [রাদি.] – এর সাথে মাসজিদে বসেছিলাম। ইতোমধ্যে মুয়াযযিন [নামাজের জন্য] আযান দিলো। এ সময়ে জনৈক ব্যক্তি মসজিদ থেকে উঠে চলে যেতে থাকল। আর আবু হুরায়রাহ্ [রাদি.] তার প্রতি তাকিয়ে দেখিতে থাকলেন। লোকটি মসজিদ থেকে বেরিয়ে গেল। এ দেখে আবু হুরায়রাহ্ [রাদি.] বললেনঃ এ ব্যক্তি তো আবুল ক্বাসিম [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম] – এর নীতি ও পদ্ধতির নাফরমানী করিল।
[ই.ফা.১৩৬২, ইসলামিক সেন্টার-১৩৭৪]
১৩৭৬. আবুশ্ শাসা আল মুহারিবী [রহমাতুল্লাহি আলাইহি] হইতে বর্ণীতঃ
তিনি বলেন, আযানের পর জনৈক ব্যক্তিকে মসজিদ থেকে বের হয়ে যেতে দেখে আবু হুরায়রাহ্ [রাদি.] বলিলেন, এ লোকটি তো আবুল ক্বাসিম [সাঃআঃ] -এর আদেশ লঙ্ঘন করিল।
[ই.ফা.১৩৬৩, ইসলামিক সেন্টার-১৩৭৫]
৪৬. অধ্যায়ঃ মুয়ায্যিন আযান দিলে মসজিদ থেকে বেরিয়ে যাওয়া নিষেধ
১৩৭৭. আবদুর রহ্মান ইবনি আবু আম্রাহ্ [রহমাতুল্লাহি আলাইহি] হইতে বর্ণীতঃ
তিনি বলেন, একদিন মাগরিবের নামাজের পর উসমান ইবনি আফ্ফান মাসজিদে এসে একাকী এক জায়গায় বসলেন। তখন আমি তার কাছে গিয়ে বসলাম। তিনি আমাকে বলিলেন – ভাতিজা, আমি রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] – কে বলিতে শুনেছি, যে ব্যক্তি জামাআতের সাথে ইশার নামাজ আদায় করিল সে যেন অর্ধেক রাত পর্যন্ত নামাজ আদায় করিল। আর যে ব্যক্তি ফাজ্রের নামাজ জামাআতের সাথে আদায় করিল সে যেন সারা রাত জেগে নামাজ আদায় করিল।
[ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ১৩৬৪, ইসলামিক সেন্টার- ১৩৭৬]
১৩৭৮. আবু সাহ্ল উসমান ইবনি হাকীম হইতে বর্ণীতঃ
একই সানাদে উপরোক্ত হাদীসের অনুরূপ হাদীস বর্ণনা করিয়াছেন।
[ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ১৩৬৫, ইসলামিক সেন্টার- ১৩৭৭]
১৩৭৯. জুনদুব ইবনি আবদুল্লাহ [রহমাতুল্লাহি আলাইহি] হইতে বর্ণীতঃ
রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলেছেনঃ যে ব্যক্তি ফাজ্রের নামাজ আদায় করিল সে মহান আল্লাহর রক্ষণাবেক্ষণের অন্তর্ভুক্ত হলো। আর আল্লাহ তোমাদের কারো কাছে তাহাঁর রক্ষণাবেক্ষণ ও নিরাপত্তাদানের বিনিময়ে কোন অধিকার দাবী করেন না। যদি করেন তাহলে তাকে এমনভাবে পাকড়াও করবেন যে, উল্টিয়ে জাহান্নামের আগুনে নিক্ষেপ করবেন।
[ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ১৩৬৬, ইসলামিক সেন্টার- ১৩৭৮]
১৩৮০. আনাস ইবনি সীরীন [রহমাতুল্লাহি আলাইহি] হইতে বর্ণীতঃ
তিনি বলেন, আমি জুনদুব [ইবনি আবদুল্লাহ] আল ক্বাসরীকে বলিতে শুনেছি যে, রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলেছেনঃ যে ব্যক্তি ফাজ্রের নামাজ আদায় করিল সে আল্লাহর নিরাপত্তা লাভ করিল। আর আল্লাহ তাআলা যদি তাহাঁর নিরাপত্তা প্রদানের হাক্ব কারো থেকে দাবী করে বসেন তাহলে সে আর রক্ষা পাবে না। তাই তাকে মুখ থুবড়ে জাহান্নামের আগুনে নিক্ষেপ করবেন।
[ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ১৩৬৭, ইসলামিক সেন্টার- ১৩৭৯]
১৩৮১. জুনদুব ইবনি সুফ্ইয়ান [রহমাতুল্লাহি আলাইহি] হইতে বর্ণীতঃ
নবী [সাঃআঃ] থেকে এ হাদীসটি বর্ণনা করিয়াছেন। তবে এ হাদীসে তিনি “তাকে উল্টিয়ে জাহান্নামের আগুনে নিক্ষেপ করবেন” কথাটি উল্লেখ করেননি।
[ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ১৩৬৮, ইসলামিক সেন্টার- ১৩৮০]
৪৭. অধ্যায়ঃ কোন ওযরবশতঃ জামাআতে শারীক না হওয়া
১৩৮২. মাহ্মূদ ইবনির রাবী আল আনসারী [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
নবী [সাঃআঃ] – এর সাথে বদর যুদ্ধে অংশগ্রহণকারী আনসারী সহাবী ইত্বান ইবনি মালিক রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] – এর কাছে এসে বললেনঃ হে আল্লাহর রসূল! আমি আমার দৃষ্টিশক্তি হারিয়ে ফেলেছি। অথচ আমি আমার ক্বওমের লোকদের ইমামাত করি। কিন্তু বৃষ্টি হলে তাদের ও আমার এলাকার মধ্যবর্তী উপত্যকা প্লাবিত হয়ে যায়। তাই আমি মাসজিদে গিয়ে নামাজ আদায় করাতে পারি না। [এভাবে আমিও জামাআতে নামাজ আদায় করা থেকে বঞ্চিত হই] হে আল্লাহর রসূল! তাই আমার আকাঙ্ক্ষা হলো, আপনি আমার বাড়ীতে গিয়ে একটি জায়গায় নামাজ আদায় করবেন। সে স্থানটিকে আমি আমার নামাজের স্থান হিসেবে নির্দিষ্ট করে নিব। হাদীস বর্ণনাকারী মাহমূদ ইবনির রাবী আল আনসারী বলেন, এ কথা শুনে রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] বললেনঃ ইনশাআল্লাহ, খুব শিগগীর আমি তা করব। ইত্বান ইবনি মালিক আল আনসারী বলেন: পরদিন সকালে কিছুটা বেলা হলে রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] ও আবু বকর [রাদি.] আসলেন। রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] [আমার বাড়ীতে প্রবেশের] অনুমতি চাইলেন। আমি তাকে অনুমতি দিলে তিনি বাড়ীর ভিতরে গিয়ে না বসেই সোজা ঘরে প্রবেশ করিলেন এবং আমাকে জিজ্ঞেস করিলেন। ঘরের কোন্ স্থানে নামাজ আদায় করলে তোমার ভাল হয়? আমি তখন তাকে ঘরের এক কোণের দিকে ইশারা করে দেখিয়ে দিলে রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] সেখানে নামাজ আদায় করিতে দাঁড়ালেন। তিনি তাকবীরে তাহরীমা বললে আমরাও তাহাঁর পিছনে দাঁড়িয়ে গেলাম। তিনি দু রাকআত নামাজ আদায় করে সালাম ফিরালেন। ইত্বান ইবনি মালিক আল আনসারী বলেন – আমরা রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] – এর জন্য ছোট ছোট টুকরা করে যে গোশ্ত পাক করেছিলাম তা খাওয়ার জন্য তাঁকে তৎক্ষণাৎ চলে যেতে বাধা দিলাম। ইতোমধ্যে [খবর ছড়িয়ে পড়াতে] আমাদের আশে-পাশের বাড়ীর লোকজন ছুটে আসল। শেষ পর্যন্ত ঘরে বেশ কিছু সংখ্যক লোক জমে গেল। তাদের মধ্যে একজন বলিল, মালিক ইবনিদ্ দুখশুন কোথায়? [তাকে তো দেখছি না!] অন্য একজন বলে উঠল, আরে, সে তো মুনাফিক্ব। সে আল্লাহ এবং তাহাঁর রসূলকে মোটেই পছন্দ করে না। এ কথা শুনে রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] বললেনঃ তার সম্পর্কে এভাবে বলো না। তুমি কি মনে করো না যে, সে শুধুমাত্র আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্যই
لاَ إِلَهَ إِلاَّ اللَّهُ
“লা-ইলা-হা ইল্লাল্ল-হ” বলেছে। অর্থাৎ- “আল্লাহ ছাড়া আর কোন ইলাহ নেই” বলে বিশ্বাস করেছে। ইত্বান ইবনি মালিক আল আনসারী বলেন, এ কথা শুনে উপস্থিত সবাই বলিল, আল্লাহ এবং তাহাঁর রসূলই এ ব্যাপারে সর্বাধিক অবগত। একজন বলিল, আমরা দেখি, সে মুনাফিক্বদের সাথে হাসিমুখে আলাপ করে এবং তাদের [উপদেশ দানের মাধ্যমে] কল্যাণ কামনা করে বা তাদের সাথে সলাপরামর্শ করে। [এ কথা শুনে] রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] বললেনঃ যে ব্যক্তি শুধু আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভের নিমিত্তে
لاَ إِلَهَ إِلاَّ اللَّهُ
লা-ইলা-হা ইল্লাল্লাহ বলেছে অর্থাৎ- আল্লাহ ছাড়া আর কোন ইলাহ নেই বলে ঘোষণা করেছে, আল্লাহ তাআলা তাকে জাহান্নামের জন্য হারাম করিয়াছেন। বর্ণনাকারী ইবনি শিহাব বলেন- পরে আমি বানী সালিম গোত্রের নেতৃস্থানীয় হুসায়ন ইবনি মুহাম্মাদ আনসারীকে মাহমূদ ইবনির রাবী বর্ণিত হাদীসটি সম্পর্কে জিজ্ঞেস করলে তিনি হাদীসটির সত্যতা স্বীকার করিলেন।
[ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ১৩৬৯, ইসলামিক সেন্টার- ১৩৮১]
১৩৮৩. ইত্বান ইবনি মালিক [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
তিনি বলেন, আমি রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] – এর কাছে গেলাম। তবে এ হাদীসে তিনি এতটুকু অধিক বর্ণনা করিয়াছেন যে, জনৈক ব্যক্তি বলে উঠল, মালিক ইবনিদ্ দুখশুন অথবা বলিল [বর্ণনাকারীর সন্দেহ] মালিক ইবনিদ্ দুখায়শিন কোথায়? তিনি হাদীসটিতে এতটুকু কথা অধিক বলেছেন যে, মাহমূদ ইবনির রাবী বলেছেন, আমি এ হাদীসটি একদল লোকের কাছে বর্ণনা করলাম। তাদের মধ্যে [সহাবা] আবু আইয়ূব আল আনসারীও ছিলেন। তিনি বলিলেন, তুমি যা বললে আমার মনে হয় না রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] তা বলেছেন। মাহমূদ ইবনির রাবী বলেন, এ কথা শুনে আমি এ মর্মে শপথ করলাম যে ইত্বান ইবনি মালিককে আবার জিজ্ঞেস করার জন্য তার কাছে ফিরে যাব। তিনি বলেছেনঃ অতঃপর আমি তার কাছে গেলাম। তখন তিনি অত্যন্ত বৃদ্ধ হয়ে গিয়েছিলেন এবং তাহাঁর দৃষ্টিশক্তিও নষ্ট হয়ে গিয়েছিল। তিনি ছিলেন তার ক্বওমের ঈমাম। আমি গিয়ে পাশে বসে এ হাদীসটি সম্পর্কে তাঁকে জিজ্ঞেস করলাম। তখন তিনি আমাকে প্রথমবারের মতো করে হাদীসটি বর্ণনা করে শুনালেন। হাদীসটির বর্ণনাকারী যুহরী বলেছেন, এ ঘটনার পরেও আরো অনেক ফারয ও অন্যান্য বিষয়ে হুকুম আহ্কাম অবতীর্ণ হয়েছে। আমরা মনে করি যে, [হুকুম-আহ্কামের] বিষয়টি এর পরেই শেষ হয়েছে। সুতরাং যে ব্যক্তি ধোঁকায় পড়তে না চায়, সে যেন এর দ্বারা ধোঁকায় না পড়ে।
[ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ১৩৭০, ইসলামিক সেন্টার- ১৩৮২]
১৩৮৪. মাহমূদ ইবনির রাবী [রহমাতুল্লাহি আলাইহি] হইতে বর্ণীতঃ
তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] আমাদের বাড়ীতে একটি বালতি থেকে পানি নিয়ে যে কুল্লি করেছিলেন তা এখনো আমার মনে আছে। মাহমূদ ইবনির রাবী বলেন, ইত্বান ইবনি মালিক আমার কাছে বর্ণনা করিয়াছেন। তিনি বলেছেনঃ আমি বললাম, হে আল্লাহর রসূল! আমার দৃষ্টিশক্তি নষ্ট হয়ে গেছে। তিনি এভাবে হাদীসটি বর্ণনা করে, “তিনি আমাদের সাথে নিয়ে দুরাকআত নামাজ আদায় করিলেন। আর আমরা রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] -এর জন্য পাকানো জাশীশাহ্ নামক খাবার খেতে তাকে ঠেকিয়ে রাখলাম পর্যন্ত” উল্লেখ করিলেন। তবে এরপর ইউনুস ও মামার বর্ণিত অতিরিক্ত কথাটুকু তিনি উল্লেখ করেননি।
[ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ১৩৭১, ইসলামিক সেন্টার- ১৩৮৩]
৪৮. অধ্যায়ঃ জামাআতে নাফ্ল নামাজ এবং চাটাই, মুসল্লা ও কাপড় ইত্যাদি পবিত্র বস্তুর উপর নামাজ আদায় জায়িয
১৩৮৫. আনাস ইবনি মালিক [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
তিনি বলেন, তাহাঁর দাদী মুলায়কাহ্ তার নিজের হাতে প্রস্তুত একটি খাবার খেতে রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] – কে দাওয়াত দিলে তিনি [সাঃআঃ] তা খেলেন। খাওয়া শেষে তিনি [সাঃআঃ] বললেনঃ তোমরা সবাই উঠে দাঁড়াও, আমি তোমাদের [বারাকাত বা শিক্ষাদানের] জন্য নামাজ আদায় করব। আনাস ইবনি মালিক [রাদি.] বলেনঃ আমি উঠে গিয়ে আমাদের একটি চাটাইয়ের উপর দাঁড়ালাম যা দীর্ঘদিন ধরে ব্যবহারের ফলে কালো বর্ণ ধারণ করেছিল। আমি সেটির উপর কিছু পানি ছিটিয়ে দিলাম। রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] ঐ চাটাইয়ের উপর দাঁড়ালেন। আর বৃদ্ধা মহিলারা দাঁড়ালেন পিছনে। অতঃপর রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] আমাদেরকে সাথে নিয়ে দুরাকআত নামাজ আদায় করিলেন এবং তারপর চলে গেলেন।
[ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ১৩৭২, ইসলামিক সেন্টার- ১৩৮৪]
১৩৮৬. আনাস ইবনি মালিক [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
তিনি বলেন, আখলাক্ব বা নৈতিক চরিত্রের বিচারে রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] ছিলেন সর্বোত্তম মানুষ। অনেক সময় এমন হয়েছে যে, তিনি [সাঃআঃ] আমাদের ঘরে থাকতেই নামাজের সময় হয়ে গেছে। তখন তিনি [সাঃআঃ] যে বিছানার উপর থাকতেন সেটিই ঝেড়ে ফেলে পানি ছিটিয়ে দিতে বলিতেন। অতঃপর রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] নামাজের ইমামাত করিতেন। আমরা তাহাঁর পিছনে দাঁড়াতাম। তিনি [সাঃআঃ] আমাদেরকে নিয়ে নামাজ আদায় করিতেন।
বর্ণনাকারী [আবু তাইয়্যাহ্] বলেনঃ তাহাঁর [আনাস ইবনি মালিক-এর] বাড়ীর বিছানা খেজুর পাতায় তৈরি ছিল।
[ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ১৩৭৩, ইসলামিক সেন্টার- ১৩৮৫]
১৩৮৭. আনাস ইবনি মালিক [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
তিনি বলেন, একদিন নবী [সাঃআঃ] আমাদের বাড়ীতে আসলেন। তখন সেখানে শুধু আমি, আমার মা এবং আমার খালা উম্মু হারাম ছিলেন। তিনি [সাঃআঃ] {আমাদের লক্ষ্য করে বলিলেন,} উঠো, আমি তোমাদের নিয়ে নামাজ আদায় করব। তখন কোন ফরয নামাজের ওয়াক্ত ছিল না। তিনি [সাঃআঃ] আমাদের নিয়ে নামাজ আদায় করিলেন। জনৈক ব্যক্তি [হাদীস বর্ণনাকারী] সাবিতকে জিজ্ঞেস করিলেন, তিনি [সাঃআঃ] আনাসকে তাহাঁর কোন্ পাশে দাঁড় করিয়েছিলেন? তিনি [সাবিত] বললেনঃ তিনি [সাঃআঃ] তাকে ডান পাশে দাঁড় করিয়েছিলেন। অতঃপর তিনি [সাঃআঃ] আমাদের পরিবারের সবার জন্য দুন্ইয়া ও আখিরাতের সব রকম কল্যাণের জন্য দুআ করিলেন। আমার মাতা তখন বলিলেন, হে আল্লাহর রসূল! আপনার এ ক্ষুদ্র খাদিমের [আনাসের] জন্য আল্লাহর কাছে দুআ করুন। তিনি [সাঃআঃ] আমার জন্য সব রকমের কল্যাণের দুআ করিলেন। দুআর শেষভাগে তিনি [সাঃআঃ] যা বলিলেন তা হলো :
اللَّهُمَّ أَكْثِرْ مَالَهُ وَوَلَدَهُ وَبَارِكْ لَهُ فِيهِ
হে আল্লাহ! তার সম্পদ ও সন্তান-সন্ততি বাড়িয়ে দাও এবং এতে তাকে বারাকাত দান করো।
[ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ১৩৭৪, ইসলামিক সেন্টার- ১৩৮৬]
১৩৮৮. আনাস ইবনি মালিক [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] তাকে এবং তার মা অথবা খালাকে সাথে করে নামাজ আদায় করিলেন। তিনি বলেছেনঃ রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] আমাকে তাহাঁর ডানে দাঁড় করালেন এবং মেয়েদের পিছনে দাঁড় করালেন।
[ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ১৩৭৫, ইসলামিক সেন্টার- ১৩৮৭]
১৩৮৯. শুবাহ্ [রহমাতুল্লাহি আলাইহি] হইতে বর্ণীতঃ
একই সানাদে হাদীসটি বর্ণনা করিয়াছেন।
[ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ১৩৭৫, ইসলামিক সেন্টার- ১৩৮৮]
১৩৯০. নবী [সাঃআঃ] – এর স্ত্রী মায়মূনাহ্ [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] নামাজ আদায় করিতেন আর আমি তাহাঁর পাশেই থাকতাম। তিনি [সাঃআঃ] যখন সেজদা করিতেন তখন কোন কোন সময় তাহাঁর কাপড় আমার শরীর স্পর্শ করত। আর তিনি [সাঃআঃ] চাটাইয়ের উপর নামাজ আদায় করিতেন।
[ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ১৩৭৬, ইসলামিক সেন্টার- ১৩৮৯]
১৩৯১. আবু সাঈদ আল খুদরী [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
তিনি [একদিন] রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] – এর কাছে গিয়ে দেখিতে পেলেন যে, তিনি [সাঃআঃ] চাটাইয়ের উপর নামাজ আদায় করছেন এবং চাটাইয়ের উপরই সেজদা করছেন।
[ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ১৩৭৭, ইসলামিক সেন্টার- ১৩৯০]
৪৯. অধ্যায়ঃ ফরজ নামাজ জামাআতে আদায়ের ফাযীলত এবং নামাজের জন্য অপেক্ষা করা
১৩৯২. আবু হুরায়রাহ্ [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলেছেনঃ কোন ব্যক্তি মাসজিদে জামাআতের সাথে নামাজ আদায় করলে তা তার বাড়ীতে বা বাজারে নামাজ আদায় করার চেয়ে বিশগুণেরও অধিক মর্যাদা সম্পন্ন। কারণ কোন লোক যখন নামাজের জন্য ওযূ করে এবং ভালভাবে ওযূ করে মাসজিদে আসে তাকে নামাজ ছাড়া আর কিছুই মাসজিদে আনে না; আর সে নামাজ ছাড়া অন্য কোন উদ্দেশ্যও পোষণ করে না। সুতরাং এ উদ্দেশে সে যখনই পদক্ষেপ করে তখন থেকে মাসজিদে প্রবেশ না করা পর্যন্ত তার প্রতিটি নেকীর বদলে ঐ ব্যক্তির মর্যাদা বৃদ্ধি করা হয় এবং একটি করে পাপ মিটিয়ে দেয়া হয়। অতঃপর মাসজিদে প্রবেশ করার পর যতক্ষণ সে নামাজের জন্য অপেক্ষা করিতে থাকে ততক্ষণ যেন সে নামাজরত থাকে। আর তোমাদের কেউ যখন নামাজ আদায় করার পর নামাজের স্থানেই বসে থাকে ততক্ষণ পর্যন্ত মালায়িকাহ্ [ফেরেশ্তাগণ] তার জন্য এ বলে দুআ করিতে থাকে যে, হে আল্লাহ! তুমি তার তাওবাহ্ ক্ববূল করো। এরূপ দুআ ততক্ষণ পর্যন্ত করিতে থাকে যতক্ষণ না সে কাউকে কষ্ট দেয় এবং যতক্ষণ পর্যন্ত ওযূ নষ্ট না করে। {১}
[ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ১৩৭৮, ইসলামিক সেন্টার- ১৩৯১]
{১}হে আল্লাহ! তার প্রতি অনুগ্রহ কর এবং তাকে ক্ষমা কর।
১৩৯৩. আমাশ [রহমাতুল্লাহি আলাইহি] হইতে বর্ণীতঃ
অনুরূপ অর্থবোধক হাদীস বর্ণনা করিয়াছেন।
[ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ১৩৭৯, ইসলামিক সেন্টার- ১৩৯২]
১৩৯৪. আবু হুরায়রাহ্ [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলেছেনঃ তোমাদের কেউ যতক্ষণ পর্যন্ত নামাজের পর উক্ত স্থানে বসে থাকে ততক্ষণ পর্যন্ত মালায়িকাহ্ এ বলে তার জন্য দুআ করিতে থাকে যে, হে আল্লাহ! তুমি তাকে ক্ষমা করে দাও। হে আল্লাহ! তুমি তাকে রহ্মাত দান করো। আর তোমাদের মধ্যে সে ব্যক্তি ততক্ষণ নামাজরত বলেই গণ্য হইবে যতক্ষণ সে নামাজের জন্য অপেক্ষামান থাকে।
[ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ১৩৮০, ইসলামিক সেন্টার- ১৩৯২ [ক] ]
১৩৯৫. আবু হুরায়রাহ্ [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলেছেনঃ বান্দা যতক্ষণ পর্যন্ত নামাজের জন্য বসে নামাজের জন্য অপেক্ষা করিতে থাকে ততক্ষণ পর্যন্ত সে নামাজরত থাকে আর মালায়িকাহ্ও ততক্ষণ পর্যন্ত তার জন্য এ বলে দুআ করিতে থাকে যে,
اللَّهُمَّ اغْفِرْ لَهُ اللَّهُمَّ ارْحَمْهُ
হে আল্লাহ! তুমি তাকে ক্ষমা করে দাও। হে আল্লাহ! তুমি তাকে রহম করো। [আর মালায়িকাহ্] ততক্ষণ পর্যন্ত এরূপ দুআ করিতে থাকে যতক্ষণ সে সেখান থেকে উঠে চলে না যায় কিংবা যতক্ষণ ওযূ নষ্ট না করে। হাদীস বর্ণনাকারী রাফি বলেন, আমি জিজ্ঞেস করলাম হাদাস বা ওযূ নষ্ট করা কাকে বলে? তিনি বললেনঃ নিঃশব্দে বা সশব্দে বায়ু নিঃসরণ করা।
[ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ১৩৮১, ইসলামিক সেন্টার- ১৩৯৩]
১৩৯৬. আবু হুরায়রাহ্ [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলেছেনঃ যতক্ষণ পর্যন্ত নামাজের জন্য কোন ব্যক্তি অপেক্ষা করে এবং শুধু নামাজের কারণেই সে ঘরে [পরিবার-পরিজনের কাছে] ফিরে যায় না ততক্ষণ পর্যন্ত সে যেন নামাজরত অবস্থায়ই থাকে [অর্থাৎ- যতক্ষণ পর্যন্ত সে নামাজের জন্য অপেক্ষা করিল ততক্ষণ সে নামাজ আদায় করিল বলেই ধরে নেয়া হইবে]।
[ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ১৩৮২, ইসলামিক সেন্টার- ১৩৯৪]
১৩৯৭. আবু হুরায়রাহ্ [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
রসূলুল্লাহ [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম] বলেছেনঃ তোমাদের কেউ যখন নামাজের জন্য অপেক্ষা করে তখন ওযূ ভঙ্গ না করা পর্যন্ত সে যেন নামাজরত থাকল। এ সময়ে মালাকগণ এ বলে তার জন্য দুআ করিতে থাকো যে,
اللَّهُمَّ اغْفِرْ لَهُ اللَّهُمَّ ارْحَمْهُ
হে আল্লাহ! তুমি তাকে ক্ষমা করো। হে আল্লাহ! তুমি তার প্রতি রহম করো।
[ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ১৩৮৩, ইসলামিক সেন্টার- ১৩৯৫]
১৩৯৮. আবু হুরায়রাহ্ [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
নবী [সাঃআঃ] থেকে অনুরূপ হাদীস বর্ণনা করিয়াছেন।
[ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ১৩৮৪, ইসলামিক সেন্টার- ১৩৯৬]
Leave a Reply