জাফার ইবনি আবু তালিব, আসমা বিনতু উমায়স ও তাদের নৌ সফর-সঙ্গীদের ফাজীলাত

জাফার ইবনি আবু তালিব, আসমা বিনতু উমায়স ও তাদের নৌ সফর-সঙ্গীদের ফাজীলাত

জাফার ইবনি আবু তালিব, আসমা বিনতু উমায়স ও তাদের নৌ সফর-সঙ্গীদের ফাজীলাত >> সহীহ মুসলিম শরীফ এর মুল সুচিপত্র দেখুন >> নিম্নে মুসলিম শরীফ এর একটি অধ্যায়ের হাদিস পড়ুন

৪১. অধ্যায়ঃ জাফার ইবনি আবু তালিব, আসমা বিনতু উমায়স ও তাদের নৌ সফর-সঙ্গীদের ফাজীলাত

৬৩০৪. আবু মূসা আশআরী [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

তিনি বলেন যখন আমাদের নিকট রসূলুল্লাহ্ [সাঃআঃ] এর হিজরাতের সংবাদ পৌঁছাল তখন আমরা ইয়ামানে ছিলাম। তারপর আমি ও আমার দুভাই তাহাঁর নিকট মিলিত হওয়ার জন্য হিজরত করলাম। আমি ছিলাম সে দুজনের ছোট। তাঁদের মধ্যে একজনের নাম ছিল আবু বুরদাহ [রাদি.] অন্যজন ছিলেন আবু রুহম [রাদি.] তিনি হয়ত বলেছেন, তখন পঞ্চাশ জনের কিছু বেশি, নয়ত বলেছেন তিপ্পান্ন জন অথবা বাহান্ন জন ব্যক্তি আমাদের সম্প্রদায় ছিল। আমরা একটি নৌকায় আরোহিত হলাম। নৌকাটি আমাদের নিয়ে আবিসিনিয়ার সন্নিকটে উপস্থিত হলো, যেখানে বাদশাহ ছিলেন নাজাশী। তখন আমরা তাহাঁর নিকট জাফার ইবনি আবু তালিব [রাদি.] ও তাহাঁর সাথীদের দেখা পেলাম। তারপর জাফর[রাদি.] বলিলেন, রসূলুল্লাহ্ [সাঃআঃ] আমাদেরকে এখানে পাঠিয়েছেন এবং অবস্থান করার আদেশ দিয়েছেন। অতএব আপনারা আমাদের সাথে অবস্থান করুন। তিনি বলেন আমরা তাহাঁর সাথে থাকতে লাগলাম, পরিশেষে আমরা সকলে একসাথে মাদীনাহ প্রত্যাবর্তন করলাম। তিনি বলেন তারপর খাইবার বিজয়কালে আমরা রসূলুল্লাহ্ [সাঃআঃ] এর সাথে একত্রিত হলাম্ তিনি আমাদেরও গনীমাতের সম্পদের অংশ দিলেন কিংবা তিনি বলেছেন, তিনি তা হইতে আমাদেরও প্রদান করিয়াছেন। তিনি তাহাঁর সাথে যারা যুদ্ধের মাঠে সমবেত হয়েছিল তাদের ছাড়া কাউকে গনীমাতের অংশ দান করেননি। তবে জাফর ও তাহাঁর সাথীদের সাথে আমাদের নৌকায় আরোহী সাথীদেরও তাঁদের সাথে অংশ প্রদান করেছিলেন। রাবী বলেন, লোকদের মধ্যে কেউ আমাদের অর্থাৎ-নৌকা আরোহীদের বলে বেড়াত যে, আমরা তোমাদের অগ্রে হিজরাতকারী।

[ই.ফা.৬১৮৫, ইসলামিক সেন্টার- ৬২২৯]

৬৩০৫. রাবী [আব্দুল্লাহ ইবনি বাররাদ আশআরী] [রহমাতুল্লাহি আলাইহি] হইতে বর্ণীতঃ

অতঃপর আমাদের নৌকায় সফর সঙ্গিনী আসমা বিনতু উমায়স [রাদি.] রাসুলুল্লাহ [সাঃআঃ] এর স্ত্রী হাফসাহ [রাদি.] এর সাথে সাক্ষাৎ করার জন্য বের হন। যাঁরা নাজাশীর নিকট হিজরাত করেছিলেন, তিনি ছিলেন তাঁদের একজন। ইত্যবসরে উমর[রাদি.] হাফসার নিকট আসলেন। তখন আসমা বিনতু উমায়স [রাদি.] তাহাঁর নিকট উপস্থিত ছিলেন। তখন উমর [রাদি.]আসমাকে দেখে বলিলেন, ইনি কে? হাফসাহ [রাদি.] বলিলেন তিনি আসমা বিনতু উমায়স। উমর [রাদি.] বলিলেন ইনিই কি হাবশায় হিজরাতকারিণী, নৌকায় আরোহণকারিণী? তখন আসমা [রাদি.] বলিলেন জি হ্যাঁ। উমর [রাদি.] বলিলেন, হিজরাতের দৃষ্টিকোণে আমরা তোমাদের চেয়ে অগ্রগামী। অতএব তোমাদের চেয়ে আমরা রাসুলুল্লাহ [সাঃআঃ] এর সম্বন্ধে বেশি হকদার। তখন আসমা [রাদি.] রাগান্বিত স্বরে বলিলেন, হে উমর! কথাটি সঠিক নয়। কক্ষনো সঠিক হইতে পারে না আল্লাহর শপথ! তোমরা রাসুলুল্লাহ [সাঃআঃ]এর সাথে ছিলে। তিনি তোমাদের ক্ষুধার্তদের খাবার দান করিতেন, অজ্ঞদের জ্ঞানের আলো বিতরণ করিতেন। আর আমরা আবিসিনিয়ায় প্রবাসে বিপদের ঝুঁকি মাথায় নিয়ে অবস্থান করছিলাম। এটা ছিল শুধু আল্লাহ ও তাহাঁর রসূলের সান্নিধ্য লাভের জন্যই। আল্লাহর শপথ! তুমি যা বলেছ তা রাসুলুল্লাহ [সাঃআঃ] এর নিকট আলোচনা না করা পর্যন্ত আমি কোন খাবার খাব না এবং পানীয় দ্রব্যও ছুঁবো না। আমার [বিদেশ বিভুঁইয়ে] সার্বক্ষণিক বিপদ ও ভয়ভীতির মাঝে দিনাতিপাত করতাম। আমি ব্যাপারটি রাসুলুল্লাহ [সাঃআঃ] এর কাছে উত্থাপন করব এবং প্রশ্ন করব। আল্লাহর শপথ! আমি মিথ্যাচার করব না, বিপথগামীও হব না এবং প্রকৃত ঘটনার চেয়ে বাড়িয়েও কিছু বলব না। রাবী বলেন, যখন রাসুলুল্লাহ [সাঃআঃ] আসলেন তখন আসমা [রাদি.] বলিলেন, হে আল্লাহর নবী! উমর [রাদি.] এই এই বলেছেন। তখনরাসুলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলিলেন আমার প্রতি তোমাদের তুলনায় তার হক অধিক নেই। কারণ, তাহাঁর ও তাহাঁর সঙ্গীদের জন্য আছে কেবল একটি হিজরাত। আর তোমাদের নৌকারোহীদের জন্য আছে দুটি হিজরাত। তিনি আসমা [রাদি.] বলেন, আমি আবু মূসা [রাদি.] ও নৌকারোহীদের দলবেঁধে এসে আমার নিকট এ হাদীসটি প্রশ্ন করিতে দেখেছি। তাঁদের বিষয়ে রাসুলুল্লাহ [সাঃআঃ] যা বলেছেন তাঁদের নিকট এর চেয়ে বেশি আনন্দদায়ক এবং বড় ও মহৎ কোন ব্যাপার ছিল না। আবু বুরদাহ [রাদি.] বলেন যে, আসমা [রাদি.] বলেছেন, আমি আবু মূসা [রাদি.] কে দেখেছি তিনি আমার নিকট হইতে এ হাদীস আনন্দের আতিশয্যে বারবার শুনতে চাইতেন।

[ই.ফা.৬১৮৫, ইসলামিক সেন্টার- ৬২২৯]

Comments

Leave a Reply