জান্নাতের বিবরণ । গাছ প্রাসাদ ফল হুর ও ঝর্ণা সমূহের বর্ণনা

জান্নাতের বিবরণ । গাছ প্রাসাদ ফল হুর ও ঝর্ণা সমূহের বর্ণনা

জান্নাতের বিবরণ । গাছ প্রাসাদ ফল হুর ও ঝর্ণা সমূহের বর্ণনা , এই অধ্যায়ে মোট ৫০ টি হাদীস (২৫২৩-২৫৭২) >> সুনান তিরমিজি শরীফ এর মুল সুচিপত্র দেখুন

অধ্যায়-৩৬ঃ জান্নাতের বিবরণ, অনুচ্ছেদঃ (১-২৭)=২৭টি

১. অনুচ্ছেদঃ জান্নাতের গাছের বর্ণনা
২. অনুচ্ছেদঃ জান্নাত ও এর উপকরণাদির বর্ণনা
৩. অনুচ্ছেদঃ জান্নাতের প্রাসাদসমূহের বিবরণ
৪. অনুচ্ছেদঃ জান্নাতের স্তরসমূহের বিবরণ
৫. অনুচ্ছেদঃ জান্নাতী রমণীদের বিবরণ
৬. অনুচ্ছেদঃ জান্নাতীদের সঙ্গমশক্তি
৭. অনুচ্ছেদঃ জান্নাতবাসীগণের বৈশিষ্ট্য
৮. অনুচ্ছেদঃ জান্নাতীদের পোশাকের বর্ণনা
৯. অনুচ্ছেদঃ জান্নাতীদের ফলের বর্ণনা
১০. অনুচ্ছেদঃ জান্নাতের পাখির বর্ণনা
১১. অনুচ্ছেদঃ জান্নাতের ঘোড়ার বর্ণনা
১২. অনুচ্ছেদঃ জান্নাতীদের বয়সের বর্ণনা
১৩. অনুচ্ছেদঃ জান্নাতীদের কাতারসমূহের বর্ণনা
১৪. অনুচ্ছেদঃ জান্নাতের দরজাসমূহের বর্ণনা
১৫. অনুচ্ছেদঃ জান্নাতের বাজারের বর্ণনা
১৬. অনুচ্ছেদঃ আল্লাহ্‌ তাআলার দীদার [সাক্ষাৎ] লাভ
১৭. অনুচ্ছেদঃ আল্লাহ্‌র সাক্ষাতে কোন ভিড় হইবে না
১৮. অনুচ্ছেদঃ আল্লাহ্‌ তাআলা জান্নাতীদেরকে ডেকে বলবেন
১৯. অনুচ্ছেদঃ জান্নাতবাসীরা নিজ নিজ বালাখানা [প্রাসাদ] থেকে পরস্পরকে দেখবে
২০. অনুচ্ছেদঃ জান্নাতী ও জাহান্নামীদের চিরস্হায়ী বাসস্হান
২১. অনুচ্ছেদঃ জান্নাত কষ্টদায়ক কার্য দ্বারা এবং জাহান্নাম কু-প্রবৃত্তি ও লালসা দ্বারা বেষ্টিত
২২. অনুচ্ছেদঃ জান্নাত ও জাহান্নামের তর্ক-বিতর্ক
২৩. অনুচ্ছেদঃ অতি সাধারণ জান্নাতীর মর্যাদা প্রসঙ্গে
২৪. অনুচ্ছেদঃ জান্নাতের হুরদের কথার বর্ণনা
২৫. অনুচ্ছেদঃ জান্নাতের ঝর্ণাসমূহের বর্ণনা
২৬. অনুচ্ছেদঃ ফুরাতের ভাণ্ডার
২৭. অনুচ্ছেদঃ জান্নাতের নদীসমূহের বর্ণনা

১. অনুচ্ছেদঃ জান্নাতের গাছের বর্ণনা

২৫২৩. আবু হুরাইরাহ্ [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলেছেনঃ জান্নাতে এক বিশাল গাছ আছে, যার ছায়াতলে যে কোন যাত্রী একশত বছর ধরে চলতে থাকিবে [কিন্তু তা অতিক্রম করে যেতে পারবে না]।

সহীহ ঃ বুখারী [৩২৫২]। আনাস ও আবু সাঈদ [রাদি.] হইতেও এ অনুচ্ছেদে হাদীস বর্ণিত আছে। আবু ঈসা বলেন, এ হাদীসটি সহীহ। জান্নাতের বিবরণ – এই হাদীসটির তাহকিকঃ সহীহ হাদীস

২৫২৪. আবু সাঈদ আল-খুদরী [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

নাবী [সাঃআঃ] বলেছেনঃ জান্নাতে এমন একটি গাছ আছে, যার ছায়াতলে যে কোন যাত্রী একশত বছর ধরে চলতে থাকিবে কিন্তু তা অতিক্রম করে যেতে পারবে না। আর এটাই হলো [কুরআনে বর্ণিত] সম্প্রসারিত ছায়া”। [সূরা ওয়াক্বিআহ্ ৩০]

সহীহ ঃ বুখারী, মুসলিম। আবু ঈসা বলেন ঃ আবু সাঈদ [রাদি.]-এর বর্ণনা হিসেবে হাদীসটি হাসান গারীব। জান্নাতের বিবরণ – এই হাদীসটির তাহকিকঃ সহীহ হাদীস

২৫২৫. আবু হুরাইরাহ্ [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

তিনি বলেন, রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলেছেনঃ জান্নাতের প্রতিটি গাছের কাণ্ডই স্বর্ণ দ্বারা নির্মিত।

সহীহ ঃ তালীকুর রাগীব [৪/২৫৭]। আবু ঈসা বলেন, এ হাদীসটি হাসান। আবু সাঈদের বর্ণনা হিসেবে গারীব। জান্নাতের বিবরণ – এই হাদীসটির তাহকিকঃ সহীহ হাদীস

২. অনুচ্ছেদঃ জান্নাত ও এর উপকরণাদির বর্ণনা

২৫২৬. আবু হুরাইরাহ্ [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

তিনি বলেন, আমরা বললামঃ হে আল্লাহ্‌র রাসূল [সাঃআঃ]! আমদের কি হলো যে, আমরা আপনার নিকট থাকাবস্থায় আমাদের অন্তর খুবই নরম হয়ে যায়, আমরা দুনিয়ার প্রতি উদাসীন হয়ে যাই এবং আমাদেরকে পরকালবাসীদের অন্তর্ভুক্ত মনে করিতে থাকি। তারপর আপনার কাছ থেকে সরে গিয়ে পরিবার-পরিজনের নিকট ফিরে গিয়ে দুনিয়াবী কাজে জড়িয়ে পড়ি এবং সন্তানাদির সুগন্ধ পেতে থাকি, তখন আমাদের অবস্থা সম্পূর্ণ উল্টো হয়ে যায়। রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ] বললেনঃ তোমরা যে অবস্থায় আমার নিকট হইতে বেরিয়ে যাও, সবসময় যদি সেই অবস্থায় থাকতে তাহলে ফেরেশতারা তোমাদের বাড়িতে গিয়ে তোমাদের সাথে সাক্ষাৎ করতো। আর তোমরা অপরাধ না করলে আল্লাহ্‌ তাআলা নতুন প্রাণী সৃষ্টি করিতেন। যাতে তারা অপরাধ করে আর তিনি তাহাদেরকে ক্ষমা করেন। আবু হুরায়রা্ [রাদি.] বলেন, আমি প্রশ্ন করলামঃ হে আল্লাহ্‌র রাসূল [সাঃআঃ]! কী দিয়ে প্রানী সৃষ্টি করা হয়েছে? তিনি বললেনঃ পানি দিয়ে। আমি আবার জিজ্ঞেস করলাম, কী দিয়ে জান্নাত তৈরি করা হয়েছে? তিনি বললেনঃ সোনা-রুপার ইট দিয়ে। একটি রুপার ইট, তারপর একটি সোনার ইট, এভাবে গাঁথা হয়েছে। এর গাঁথুনির উপকরণ [চুন-সুরকি-সিমেন্ট] সুগন্ধি মৃগনাভি এবং কঙ্করসমূহ মণি-মুক্তার ও মাটি হলো জাফ্রান। জান্নাতে প্রবেশকারী লোক অত্যন্ত সুখ-স্বাচ্ছন্দে থাকিবে, কোন দুঃখ-কষ্ট ও অভাব-অনটন তাকে স্পর্শ করিবে না। সে অনন্তকাল এতে অবস্থান করিবে আর মৃত্যুবরণ করিবে না। না তার পরনের পোশাক পুরাতন হইবে আর না তার যৌবনকাল শেষ হইবে [অনন্তযৌবনা হইবে]। তিনি পুনরায় বললেনঃ তিনজনের দুআ ফিরিয়ে দেয়া হয় নাঃ ন্যায়পরায়ণ শাসকের দুআ, রোযাদারের ইফতারের সময়কালীন দুআ এবং মাযলুমের দুআ। আল্লাহ্‌ তাআলা একে [মাযলুমের দুআ] মেঘমালার উপর তুলে নেন, তার জন্য আকাশের দরজাসমূহ উন্মুক্ত হয়ে যায় এবং আল্লাহ্‌ তাআলা বলেনঃ আমার ইজ্জাত ও সম্মানের শপথ! কিছু দেরিতে হলেও আমি তোমাকে সাহায্য করবো।

“কী দিয়ে প্রাণী সৃষ্টি করা হয়েছে” অংশটুকু ব্যতীত হাদীসটি সহীহ, সহীহাহ [২/৬৯২-৬৯৩], গাইয়াতুল মারাম [৩৭৩]। আবু ঈসা বলেন, এই হাদীসের সনদ খুব একটা মজবুত নয়। আর আমার মতে এর সনদসূত্র মুত্তাসিল [পরস্পর সংযুক্ত] নয়। এই হাদীসটি অন্য সনদেও আবু হুরাইরাহ্ [রাদি.]-এর সূত্রে নাবী [সাঃআঃ] হইতে বর্ণিত হয়েছে। জান্নাতের বিবরণ – এই হাদীসটির তাহকিকঃ সহীহ হাদীস

৩. অনুচ্ছেদঃ জান্নাতের প্রাসাদসমূহের বিবরণ

২৫২৭. আলী [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

তিনি বলেন, রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলেছেনঃ জান্নাতের প্রাসাদগুলো এমন হইবে যে, এর ভিতর থেকে বাইরের সবকিছু দেখা যাবে এবং বাইরে থেকে ভিতরের সবকিছু দেখা যাবে। এক বেদুঈন উঠে দাঁড়িয়ে প্রশ্ন করলো, হে আল্লাহ্‌র রাসূল [সাঃআঃ]! এসব প্রসাদ কাদের জন্য? তিনি বললেনঃ যারা উত্তম ও সুমধুর কথা বলে, ক্ষুধার্তকে খাবার দেয়, প্রায়ই রোযা রাখে এবং লোকেরা রাতে ঘুমিয়ে থাকাবস্থায় জাগ্রত থেকে আল্লাহ্‌ তাআলার জন্য নামাজ আদায় করে তাহাদের জন্য।

হাসান ঃ তালীকুর রাগীব [২/৪৬], মিশকাত [১২৩৩]। আবু ঈসা বলেন, এই হাদীসটি গারীব। কোন কোন হাদীস বিশারদ আবদুর রাহ্মান ইবনি ইসহাকের স্মৃতিশক্তির সমালোচনা করিয়াছেন। তিনি কূফার বাসিন্দা। অন্যদিকে আবদুর রাহ্মান ইবনি ইসহাক আল-কুরাশী মাদীনার অধিবাসী। ইনি প্রথম ব্যক্তির চাইতে বেশি নির্ভরযোগ্য। জান্নাতের বিবরণ – এই হাদীসটির তাহকিকঃ হাসান হাদীস

২৫২৮. আবদুল্লাহ ইবনি ক্বাইস [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

নাবী [সাঃআঃ] বলেছেনঃ জান্নাতে দুটি বাগান আছে, যার সকল পাত্রসমূহ ও অন্যান্য সামগ্রী রূপা দিয়ে নির্মিত এবং আরো দুটি বাগান আছে, যার পাত্রসমূহ ও এতে যা কিছু আছে সবই স্বর্ণ দিয়ে নির্মিত। আর আদন নামক জান্নাতে মানুষ ও তাহাদের পালনকর্তার সাক্ষাতের মাঝে মহাপরাক্রমশালীর গৌরবের চাদর ছাড়া আর কিছুই অন্তরাল থাকিবে না।

সহীহ ঃ ইবনি মা-জাহ [১৮৬], বুখারী, মুসলিম। একই সনদে নাবী [সাঃআঃ] হইতে বর্ণিত আছে যে, তিনি বলেনঃ জান্নাতে মণি-মুক্তা দিয়ে নির্মিত একটি তাঁবুর প্রস্থ ষাট মাইল। এর প্রতিটি কোণে এক একজন করে হুর থাকিবে। অন্যরা তাকে দেখিতে পাবে না। ঈমানদারগণ তাহাদের [নিজ নিজ হুরের] নিকট যাতায়াত করিবে। সহীহ ঃ বুখারী [৩২৪৩], মুসলিম [৮/১৪৮]।আবু ঈসা বলেন, এই হাদীসটি হাসান সহীহ। আবু ইমরান আল-জাওনীর নাম আবদুল মালিক ইবনি হাবীব। আহ্মাদ ইবনি হাম্বাল [রাহঃ] বলেন, আবু বাক্র ইবনি আবু মূসার নাম অজানা। আবু মূসা আল-আশআরী [রাদি.]-এর নাম আবদুল্লাহ ইবনি কাইস। আবু মালিক আল-আশআরী [রাদি.]-এর নাম সাদ ইবনি তারিক ইবনি আশইয়াম। জান্নাতের বিবরণ – এই হাদীসটির তাহকিকঃ সহীহ হাদীস

৪. অনুচ্ছেদঃ জান্নাতের স্তরসমূহের বিবরণ

২৫২৯. আবু হুরাইরাহ্ [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

তিনি বলেন, রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলেছেনঃ জান্নাতের একশত স্তর [ধাপ] রয়েছে। প্রত্যেক দুস্তরের মাঝখানে রয়েছে একশত বছরের ব্যবধান।

সহীহ ঃ সহীহাহ্ [৯২২], মিশকাত [৫৬৩২]। আবু ঈসা বলেন, এই হাদীসটি হাসান গারীব। জান্নাতের বিবরণ – এই হাদীসটির তাহকিকঃ সহীহ হাদীস

২৫৩০. মুআয ইবনি জাবাল [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলেছেনঃ যে লোক রামাযানের রোযা রেখেছে, নামাজ আদায় করেছে এবং বাইতুল্লাহ্র হাজ্জ আদায় করেছে, বর্ণনাকারী বলেন, মুআয [রাদি.] যাকাতের কথা বলেছেন কি-না আমার মনে নেই, তার অপরাধ ক্ষমা করা আল্লাহ্‌ তাআলার দায়িত্ব হয়ে যায়, চাই সে আল্লাহ্‌ তাআলার রাস্তায় হিজরাত করুক কিংবা আপন জন্মস্থানেই অবস্থান করুক। মুআয [রাদি.] বলেন, আমি কি মানুষের নিকট এই খবর পৌঁছে দিব না? রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলেনঃ লোকদেরকে আমাল করিতে ছেড়ে দাও। কেননা, জান্নাতে একশ স্তর রয়েছে। প্রত্যেক দুস্তরের মাঝখানে আসমান-যমীনের সমান ব্যবধান বিদ্যমান। আর সর্বোচ্চ ও সর্বোৎকৃষ্ট জান্নাত হচ্ছে ফিরদাউস। এর উপরেই রয়েছে আল্লাহ্‌ তাআলার আরশ এবং এখান থেকেই জান্নাতের ঝর্ণাসমূহ প্রবাহমান। সুতরাং তোমরা আল্লাহ্‌ তাআলার নিকট প্রার্থনা করার সময় ফিরদাউসের প্রার্থনা করিবে।

সহীহ ঃ সহীহাহ্ [৯২১]। আবু ঈসা বলেন, এই হাদীসটি এভাবেই হিশাম ইবনি সাঈদ হইতে, তিনি যাইদ ইবনি আসলাম হইতে, তিনি আতা ইবনি ইয়াসার হইতে, তিনি মুআয ইবনি জাবাল হইতে এই সনদে বর্ণিত হয়েছে। আমার মতে এই হাদীসটি অধিক সহীহ। হাম্মামের সূত্রে যাইদ ইবনি আসলাম হইতে, তিনি আতা ইবনি ইয়াসার হইতে, তিনি উবাদাহ্ ইবনি সামিত হইতে এই সনদে বর্ণিত হাদীসের চাইতে। আতা মুআয ইবনি জাবালের সাক্ষাৎ পাননি। মুআয ইবনি জাবাল উমার [রাদি.]-এর খিলাফতকালে মৃত্যুবরণ করেন। জান্নাতের বিবরণ – এই হাদীসটির তাহকিকঃ সহীহ হাদীস

২৫৩১. উবাদাহ্ ইবনিস সামিত [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলেছেনঃ জান্নাতের একশতটি স্তর রয়েছে। প্রতি দুই স্তরের মাঝে আসমান-যমীনের সমান ব্যবধান বর্তমান। ফিরদাউস হচ্ছে সবচেয়ে উঁচু স্তরের জান্নাত, সেখান থেকেই জান্নাতের চারটি ঝর্ণা প্রবাহিত হয় এবং এর উপরেই [আল্লাহ্‌ তাআলার] আরশ স্থাপিত। তোমরা আল্লাহ্‌ তাআলার নিকট প্রার্থনা করার সময় ফিরদাউসের প্রার্থনা করিবে।

সহীহ ঃ প্রাগুক্ত। আহমাদ ইবনি মানী-ইয়াযীদ ইবনি হারুন হইতে, তিনি হাম্মাম হইতে, তিনি যাইদ ইবনি আসলাম [রাহঃ] হইতে এই সূত্রেও উপরের হাদীসের সমার্থবোধক হাদীস বর্ণিত আছে। জান্নাতের বিবরণ – এই হাদীসটির তাহকিকঃ সহীহ হাদীস

৫. অনুচ্ছেদঃ জান্নাতী রমণীদের বিবরণ

২৫৩৫. আবু সাঈদ আল-খুদরী [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

নাবী [সাঃআঃ] বলেছেনঃ যে দলটি কিয়ামাত দিবসে সর্বপ্রথম জান্নাতে প্রবেশ করিবে, তাহাদের মুখমণ্ডল হইবে পূর্ণিমার রাতের চাঁদের মতো উজ্জ্বল, আর দ্বিতীয় দলের মুখমণ্ডল হইবে আকাশে মুক্তার ন্যায় ঝলমলে তারকার মতো উজ্জ্বল। তাহাদের মধ্যে প্রত্যেক পুরুষের জন্য দুজন করে স্ত্রী [হুর] থাকিবে এবং প্রত্যেক স্ত্রীর সত্তরজোড়া জামা থাকিবে। এই জামার ভিতর দিয়েও তার পায়ের জংঘার অস্থিমজ্জা দেখা যাবে।

সহীহ ঃ সহীহাহ্ [১৭৩৬], মিশকাত তাহক্বীক্ব সানী [৫৬৩৫], তালীকুর রাগীব [২৬১]। আবু ঈসা বলেন, এই হাদীসটি হাসান সহীহ। জান্নাতের বিবরণ – এই হাদীসটির তাহকিকঃ সহীহ হাদীস

৬. অনুচ্ছেদঃ জান্নাতীদের সঙ্গমশক্তি

২৫৩৬. আনাস [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

নাবী [সাঃআঃ] বলেছেনঃ জান্নাতে প্রত্যেক মুমিনকে এত এত পরিমাণ সঙ্গমশক্তি প্রদান করা হইবে। প্রশ্ন করা হলো, হে আল্লাহ্‌র রাসূল [সাঃআঃ]! তারা এমন করিতে সক্ষম হইবে? তিনি বলেনঃ প্রত্যেককে একশত জনের সমান সঙ্গমশক্তি প্রদান করা হইবে।

হাসান সহীহ ঃ মিশকাত [হাঃ ৫৬৩৬] যাইদ ইবনি আরকাম [রাদি.] হইতেও এই অনুচ্ছেদে হাদীস বর্ণিত আছে। আবু ঈসা বলেন, এই হাদীসটি সহীহ গারীব। ইমরান আল-কাত্তান [রাহঃ] ছাড়া কাতাদাহ হইতে আনাস [রাদি.]-এর সূত্রে বর্ণিত হাদীস হিসেবে এটি সম্বন্ধে আমাদের জানা নেই। জান্নাতের বিবরণ – এই হাদীসটির তাহকিকঃ হাসান সহীহ

৭. অনুচ্ছেদঃ জান্নাতবাসীগণের বৈশিষ্ট্য

২৫৩৭. আবু হুরাইরাহ [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলেছেনঃ যে দলটি সর্বপ্রথম জান্নাতে প্রবেশ করিবে, সেই দলের মানুষদের আকৃতি হইবে পূর্ণিমার চাঁদের মতো উজ্জ্বল। তারা সেখানে থুথু ফেলবে না, নাকের শিকনিও বের হইবে না, প্রস্রাব-পায়খানাও করিবে না। তাহাদের ব্যবহার্য পাত্রসমূহ হইবে স্বর্ণের তৈরি আর সোনা–রূপার সংমিশ্রণে তৈরি হইবে চিরুনি। চন্দন কাঠ ও আগরবাতি জ্বালানো থাকিবে। তাহাদের শরীরের ঘাম হইবে মিশকের মতো সুগন্ধময়। তাহাদের প্রত্যেকের জন্য দুজন করে স্ত্রী [হুর] থাকিবে। সৌন্দর্যের কারণে মাংসের ভিতর দিয়ে তাহাদের পায়ের জংঘার হাড়ের মজ্জা পর্যন্ত দৃষ্টিগোচর হইবে। তাহাদের মধ্যে না থাকিবে ঝগড়া–বিবাদ, আর না থাকিবে হিংসা–বিদ্বেষ। তাহাদের সকলের অন্তর যেন একটি অন্তরে পরিণত হইবে। সকাল-বিকাল তারা আল্লাহ্‌ তাআলার পবিত্রতা বর্ণনা করিবে।

সহীহঃ বুখারী [৩২৪৫], মুসলিম [৮/১৪৬-১৪৭]। আবু ঈসা বলেন, এ হাদীসটি সহীহ। আল উলুওয়াতুঃ চন্দন কাঠ। জান্নাতের বিবরণ – এই হাদীসটির তাহকিকঃ সহীহ হাদীস

২৫৩৮. সাদ ইবনি আবী ওয়াক্কাস [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

নাবী [সাঃআঃ] বলেছেনঃ যদি জান্নাতের কোন জিনিসের এক চিমটি পরিমাণও [পৃথিবীতে] আসতে পারতো তাহলে আসমান-যমীন সকল স্হান আলোকিত ও সৌন্দর্যমন্ডিত হয়ে যেতো। কোন জান্নাতী যদি দুনিয়াতে উঁকি দিত এবং তার হস্তালংকার প্রকাশিত হয়ে পড়তো তাহলে তা সূর্যের আলোকে নিস্তেজ করে দিত যেভাবে সূর্যের আলো নক্ষত্রসমূহের আলোকে নিস্তেজ করে দেয়।

সহীহঃ মিশকাত তাহক্বীক্ব সানী [৫৬৩৭]। আবু ঈসা বলেন, এই হাদীসটি গারীব। এই হাদীসটি শুধুমাত্র ইবনি লাহীআর বর্ণনা হিসাবে আমরা জেনেছি। ইয়াহহিয়া ইবনি আইয়ুব এই হাদীসটি ইয়াযীদ ইবনি আবু হাবীবের সূত্রে বর্ণনা করিয়াছেন এবং [আমির-এর স্থলে] উমার ইবনি সাদ ইবনি আবু ওয়াক্কাস [রাদি.] নাবী [সাঃআঃ] হইতে, এই সূত্র উল্লেখ করিয়াছেন। জান্নাতের বিবরণ – এই হাদীসটির তাহকিকঃ সহীহ হাদীস

৮. অনুচ্ছেদঃ জান্নাতীদের পোশাকের বর্ণনা

২৫৩৯. আবু হুরাইরাহ [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

তিনি বলেন, রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলেছেনঃ জান্নাতীদের শরীরে কোন লোম থাকিবে না, দাড়ি–গোঁফ থাকিবে না এবং চোখে সুরমা লাগানো থাকিবে। কখনো তাহাদের যৌবন শেষ হইবে না, জামাও পুরাতন হইবে না।

হাসানঃ মিশকাত তাহক্বীক্ব সানী [৫৬৩৮, ৫৬৩৯], তালীকুর রাগীব [৪/২৪৫]। আবু ঈসা বলেনঃ এই হাদীসটি গারীব। জান্নাতের বিবরণ – এই হাদীসটির তাহকিকঃ হাসান হাদীস

২৫৪০. আবু সাঈদ [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ] আল্লাহ তাআলার বাণী “সুউচ্চ বিছানা থাকিবে” [সূরাদি. ওয়াকিয়া-৩৪] প্রসঙ্গে বলেন, এর উচ্চতা হইবে আসমান-যমিনের উচ্চতার সমান আর তা হইবে পাঁচশত বছরের দূরত্বের সমান।

যঈফ, মিশকাত [৫৬৩৪], আবু ঈসা বলেনঃ এ হাদীসটি গারীব। আমরা শুধুমাত্র রিশদীন ইবনি সাদের রিওয়ায়াত হিসাবে এ হাদীস জেনেছি। এ হাদীসের ব্যাখ্যায় কিছু আলিম বলেন, সেই বিছানাসমূহের এক স্তর হইতে আরেক স্তরের উচ্চতা হইবে আসমান-যমিনের মাঝখানের দূরত্বের সমান।জান্নাতের বিবরণ – এই হাদীসটির তাহকিকঃ দুর্বল হাদীস

৯. অনুচ্ছেদঃ জান্নাতীদের ফলের বর্ণনা

২৫৪১. আসমা বিনতু আবু বাক্‌র [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

তিনি বলেন, রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ]-এর সামনে সিদরাতুল মুনতাহা [প্রান্তসীমার কুলগাছ] সম্পর্কে আলোচনা করা হলে আমি তাঁকে বলিতে শুনেছিঃ সেই গাছের একটি শাখার ছায়াতলে কোন যাত্রী এক শত বছর পর্যন্ত চলতে থাকিবে [তবুও তা অতিক্রম করিতে পারবে না] অথবা বলেছেনঃ এক শত সাওয়ারী এর ছায়াতলে অবস্থান করিবে [ইয়াহ্ইয়া ইবনি আবদুল্লাহ সংশয়ে পতিত হয়েছেন যে, তার উর্ধ্বতন রাবী কোন্ কথাটি বলেছেন]। সে গাছে অসংখ্য সোনার পতঙ্গ আছে এবং এর ফলগুলো মটকার মত বড় বড়।

যঈফ; মিশকাত-তাহক্বীক্ব ছানী, হাঃ নং-৫৬৪০; তালীকুর রাগী- হাঃনং- ৪/২৫৬। আবু ঈসা বলেনঃ এ হাদীসটি হাসান, সহীহ গারীব। জান্নাতের বিবরণ – এই হাদীসটির তাহকিকঃ দুর্বল হাদীস

১০. অনুচ্ছেদঃ জান্নাতের পাখির বর্ণনা

২৫৪২. আনাস ইবনি মালিক [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

তিনি বলেন, হাওযে কাওসার প্রসঙ্গে রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ]-কে প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেনঃ তা একটি ঝর্না যা আল্লাহ্‌ তাআলা জান্নাতে আমাকে প্রদান করিয়াছেন। এর পানি দুধের চেয়ে সাদা এবং মধুর চেয়ে মিষ্টি। এতে অনেক পাখি রয়েছে যাদের ঘাড় উটের ঘাড়ের মতো উঁচু। উমার [রাদি.] বলেন, তাহলে তো এগুলা সতেজ হইবে। রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলেনঃ যারা এগুলো আহার করিবে, তারা আরো সুন্দর ও সুখী হইবে।

সহীহঃ মিশকাত [৫৬৪১], সহীহ [২৫১৪]। আবু ঈসা বলেন, এই হাদীসটি হাসান গারীব। মুহাম্মাদ ইবনি আবদুল্লাহ ইবনি মুসলিম হলেন ইবনি শিহাব যুহরীর ভাইয়ের ছেলে। আবদুল্লাহ ইবনি মুসলিম ইবনি উমার ও আনাস ইবনি মালিক [রাদি.] হইতে হাদীসটি বর্ণনা করিয়াছেন। জান্নাতের বিবরণ – এই হাদীসটির তাহকিকঃ সহীহ হাদীস

১১. অনুচ্ছেদঃ জান্নাতের ঘোড়ার বর্ণনা

২৫৪৩. বুরাইদা [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

এক ব্যক্তি রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ]-কে প্রশ্ন করেন, হে আল্লাহর রাসূল! জান্নাতে ঘোড়া আছে কি? তিনি বললেনঃ আল্লাহ তাআলা [যদি] তোমাকে জান্নাতে প্রবেশ করান এবং তুমি তাতে লাল পদ্মরাগ মনির ঘোড়ার পিঠে সওয়ার হইতে চাও আর তুমি জান্নাতের যেদিকে যেতে ইচ্ছা কর, সেদিকেই উড়িয়ে নিয়ে যাবে। তিনি [রাবী] বলেন, আরেক ব্যক্তি প্রশ্ন করিল, হে আল্লাহর রাসূল! জান্নাতে উটও আছে কি? তিনি তার সাথীকে যে উত্তর দিয়েছিলেন তাকেও এরকম উত্তর না দিয়ে বলেনঃ আল্লাহ তাআলা যদি তোমাকে জান্নাতে প্রবেশ করান, তাহলে তোমার মন যা চাবে এবং চোখে যা ভালো লাগবে সবই পাবে।

সুওয়াইদ-আবদুল্লাহ ইবনিল মুবারাক হইতে তিনি সুফিয়ান হইতে তিনি আলকামা ইবনি মারসাদ হইতে তিনি আবদুর রহমান ইবনি সাবিতের সূত্রে রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ] হইতে উক্ত মর্মে উপরের হাদীসের মতই বর্ণনা করিয়াছেন। এ হাদীসটি মাসঊদী বর্ণিত হাদীসের চাইতে অনেক বেশী সহীহ। যঈফ, মিশকাত [৫৬৪২], যঈফা [১৯৮০] জান্নাতের বিবরণ – এই হাদীসটির তাহকিকঃ দুর্বল হাদীস

২৫৪৪. আবু আইয়ূব [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

তিনি বলেন, জনৈক বেদুঈন রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ]-এর নিকটে এসে প্রশ্ন করিল, হে আল্লাহর রাসূল! আমি তো ঘোড়া পছন্দ করি। বেহেশতে ঘোড়া আছে কি? রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ] বললেনঃ তোমাকে যদি বেহেশতে প্রবেশ করানো হয় তাহলে মনি-মুক্তার একটি ঘোড়া তোমাকে দেয়া হইবে। এর দুটি ডানা থাকিবে এবং তোমাকে এর পিঠে সওয়ার করানো হইবে। তারপর তুমি যেদিকে যেতে চাও, সেটি তোমাকে নিয়ে সেদিকে উড়ে যাবে।

যঈফ; মিশকাত-হাঃনং-৫৬৪৩; যঈফাহ্। আবু ঈসা বলেনঃ এ হাদীসের সনদ তেমন শক্তিশালী নয়। আমরা কেবল উপরোক্ত সূত্রেই এটিকে আবু আইয়ূব [রাদি.]-এর রিওয়ায়াত হিসাবে জানতে পেরেছি। আবু সাওরা হলেন আবু আইয়ূব [রাদি.]-এর ভ্রাতুষ্পুত্র। তিনি হাদীসশাস্ত্রে দূর্বল। ইয়াহ্‌ইয়া ইবনি মুঈন তাকে অত্যন্ত দূর্বল রাবী বলে আখ্যায়িত করিয়াছেন। আমি মুহাম্মাদ ইবনি ইসামাঈলকে বলিতে শুনিয়াছি, এই আবু সাওরা মুনকার রাবী এবং আবু আইয়ূব [রাদি.] হইতে বহু মুনকার রিওয়ায়াত বর্ণনা করিয়াছেন যার সমর্থনযোগ্য কোন রিওয়ায়াত বিদ্যমান নেই। জান্নাতের বিবরণ – এই হাদীসটির তাহকিকঃ দুর্বল হাদীস

১২. অনুচ্ছেদঃ জান্নাতীদের বয়সের বর্ণনা

২৫৪৫. মুআয ইবনি জাবাল [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

নাবী [সাঃআঃ] বলেছেনঃ জান্নাতীরা জান্নাতে প্রবেশের সময় তাহাদের শরীরে লোম থাকিবে না, দাড়ি-গোঁফও থাকিবে না এবং চোখে সুরমা লাগানো থাকিবে। তারা হইবে ত্রিশ অথবা তেত্রিশ বছরের যুবক।

হাসানঃ দেখুন হাদীস নং [২৫৩৯]। আবু ঈসা বলেন, এই হাদীসটি হাসান গারীব। উক্ত হাদীসটি কাতাদার কোন কোন শিষ্য তার সুত্রে মুরসালভাবে বর্ণনা করিয়াছেন, মুসনাদরূপে বর্ণনা করেননি। জান্নাতের বিবরণ – এই হাদীসটির তাহকিকঃ হাসান হাদীস

১৩. অনুচ্ছেদঃ জান্নাতীদের কাতারসমূহের বর্ণনা

২৫৪৬. বুরাইদাহ [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

তিনি বলেন, রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলেছেনঃ জান্নাতীদের একশত বিশটি কাতার হইবে, তার মধ্যে এই উম্মাতের হইবে আশিটি কাতার এবং অন্যান্য সকল উম্মাতের হইবে চল্লিশটি।

সহীহঃ ইবনি মা-জাহ [৪২৮৯]। আবু ঈসা বলেন, এই হাদীসটি হাসান। এই হাদীসটি আলকামা ইবনি মারসাদ হইতে, তিনি সুলাইমান ইবনি বুরাইদাহ হইতে, তিনি নাবী [সাঃআঃ] হইতে এই সুত্রে মুরসাল হিসেবেও বর্ণিত আছে। বর্ণনাকারীগণের মধ্যে কেউ বলেছেন, সুলাইমান ইবনি বুরাইদাহ হইতে তার বাবার সুত্রে বর্ণিত। আবু সিনান–মুহারিব ইবনি দিসার সুত্রে বর্ণিত হাদীসটি হাসান। আবু সিনানের নাম যিরার ইবনি মুররাহ এবং আবু সিনান আশ–শাইবানীর নাম সাঈদ ইবনি সিনান, তিনি বাসরাবাসী। আবু সিনান আশ–শামীর নাম ঈসা ইবনি সিনান আল-কাসমালী। জান্নাতের বিবরণ – এই হাদীসটির তাহকিকঃ সহীহ হাদীস

২৫৪৭. আবদুল্লাহ ইবনি মাসউদ [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

তিনি বলেন, আমরা একটি তাঁবুতে প্রায় চল্লিশজন লোক নাবী [সাঃআঃ]-এর সঙ্গে ছিলাম। রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ] তখন আমাদেরকে বললেনঃ তোমরা কি এই কথায় সন্তুষ্ট যে, তোমরা জান্নাতীদের সংখ্যার এক-চতুর্থাংশ হইবে? সমবেত সাহাবীগণ বলিলেন, হ্যাঁ। তিনি আবার বললেনঃ তোমরা কি এক-তৃতীয়াংশ সংখ্যক হইতে খুশি আছো? তারা বলিলেন, হ্যাঁ। তিনি আবার বললেনঃ তোমরা কি অর্ধেক সংখ্যক হলে খুশি আছো? মুসলিম ব্যক্তি ছাড়া অন্য কেউ জান্নাতে প্রবেশ করিতে পারবে না। তোমরা তো মুশরিকদের তুলনায় কালো ষাঁড়ের চামড়ায় সাদা লোমসদৃশ অথবা লাল ষাঁড়ের চামড়ায় কালো লোমসদৃশ।

সহীহ, ইবনি মা-জাহ [৪২৮৩], বুখারী, মুসলিম। আবু ঈসা বলেন, এই হাদীসটি হাসান সহীহ। ইমরান ইবনি হুসাইন ও আবু সাঈদ আল-খুদরী [রাদি.] হইতেও এই অনুচ্ছেদে হাদীস বর্ণিত আছে। জান্নাতের বিবরণ – এই হাদীসটির তাহকিকঃ সহীহ হাদীস

১৪. অনুচ্ছেদঃ জান্নাতের দরজাসমূহের বর্ণনা

২৫৪৮. সালিম ইবনি আবদুল্লাহ [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

তিনি বলেন, রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলেছেনঃ আমার উম্মাতগণ যে দরজা দিয়ে জান্নাতে যাবে, তার প্রস্থ হইবে অত্যন্ত দ্রুতগামী অশ্বারোহীর তিন দিনের পথ। তা সত্ত্বেও এতো ভীড় হইবে যে, তাহাদের কাঁধ ঢলে পড়ার উপক্রম হইবে।

যঈফ, মিশকাত, তাহকীক ছানী [৫৬৪৫] আবু ঈসা বলেনঃ এ হাদীসটি গারীব। তিনি আরও বলেন আমি মুহা্ম্মাদ [বুখারী]-কে এই হাদীস প্রসঙ্গে প্রশ্ন করলে তিনি অজ্ঞতা প্রকাশ করেন। তিনি আরও বলেনঃ খালিদ ইবনি আবু বাকার সালিম ইবনি আব্দুল্লাহর সূত্রে অনেক মুনকার হাদীস বর্ণনা করিয়াছেন। জান্নাতের বিবরণ – এই হাদীসটির তাহকিকঃ দুর্বল হাদীস

১৫. অনুচ্ছেদঃ জান্নাতের বাজারের বর্ণনা

২৫৪৯. সাঈদ ইবনিল মুসাইয়্যিব [রঃ] হইতে বর্ণীতঃ

একদা তিনি আবু হুরাইরা [রাদি.]-এর সাথে দেখা করলে তিনি বলিলেন, আমি আল্লাহ তাআলার নিকটে প্রার্থনা করছি তিনি যেন আমাকে ও তোমাকে জান্নাতের বাজারে একত্র করেন। সাঈদ [রঃ] প্রশ্ন করেন, জান্নাতে কি বাজারও আছে? তিনি বলিলেন, হ্যাঁ। রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ] আমাকে জানিয়েছেন যে, জান্নাতীরা জান্নাতে গিয়ে নিজ নিজ আমলের পরিমাণ ও মর্যাদা অনুযায়ী সেখানে জায়গা [মর্যাদা] পাবে। তারপর দুনিয়ার সময় অনুসারে জুমুআর দিন তাহাদেরকে [তাহাদের রবের দর্শনের] অনুমতি দেয়া হইবে এবং তারা তাহাদের রবকে দেখিতে আসবে। তাহাদের জন্য তাহাঁর আরশ প্রকাশিত হইবে। জান্নাতের কোন এক বাগানে তাহাদের সামনে তাহাদের প্রভুর প্রকাশ ঘটবে। তাহাদের জন্য নূর, মণিমুক্তা, পদ্মরাগ মণি, যমরূদ ও সোনা-রূপা ইত্যাদির মিম্বারসমূহ রাখা হইবে। তাহাদের মধ্যকার সবচাইতে নিম্নস্তরের জান্নাতীও মিশক ও কর্পুরের স্তূপের উপর আসন গ্রহণ করিবে। তবে সেখানে কেউ হীন-নীচ হইবে না। মিম্বারে আসীন ব্যক্তিগণকে তারা তাহাদের চাইতে শ্রেষ্ঠ বা উৎকৃষ্ট ভাববে না। আবু হুরাইরা [রাদি.] বলেন, আমি প্রশ্ন করলাম, হে আল্লাহর রাসূল! আমরা কি আমাদের রবকে দেখিতে পাব? তিনি বললেনঃ হ্যাঁ। সূর্য বা পূর্ণিমার চাঁদ দেখিতে তোমাদের কি কোন সন্দেহ হয়? আমরা বললাম, না। তিনি বললেনঃ ঠিক সে রকম তোমাদের রবের দেখা্তেও কোন সন্দেহ থাকিবে না। আর সে মাজলিসের প্রত্যেক লোক আল্লাহ্ তাআলার সাথে কথা বলবে। এমনকি তিনি একে একে তাহাদের নাম ধরে ডেকে বলবেনঃ হে অমুকের পুত্র অমুক! অমুক দিন তুমি এমন কথা বলেছিলে, মনে আছে কি? এভাবে তিনি তাকে দুনিয়ার কিছু নাফরমানী ও বিদ্রোহের কথা মনে করিয়ে দিবেন। লোকটি তখন বলবে, হে আমার রব! আপনি কি আমাকে মাফ করেননি? তিনি বলবেনঃ হ্যাঁ, আমার ক্ষমার বদেৌলতেই তুমি এ জায়গাতে পৌঁছেছ। এই অবস্থায় হঠাৎ তাহাদের উপর এক খন্ড মেঘ এসে তাহাদেরকে ছেয়ে ফেলবে এবং তা হইতে তাহাদের উপর সুগন্ধি [বৃষ্টি] বর্ষিত হইবে, যেরূপ সুগন্ধ তারা ইতিপূর্বে কখনো কিছুতে পায়নি। আমাদের রব বলবেনঃ উঠো! আমি তোমাদের সম্মানে যে মেহমানদারি প্রস্তুত করেছি সেদিকে অগ্রসর হও এবং যা কিছু পছন্দ হয় তা গ্রহণ কর। তখন আমরা একটি বাজারে এসে হাযির হব, যা ফেরেশতারা ঘিরে রাখবে। সেখানে এরূপ পণ্যসামগ্রী থাকিবে, যা না কোন চোখ দেখেছে, না কোন কান শুনেছে এবং না কখনো অন্তরের কল্পনায় ভেসেছে। আমরা সেখানে যা চাইব, তাই তুলে দেয়া হইবে। তবে বেচা-কেনা হইবে না। আর সে বাজারেই জান্নাতীরা একে অপরের সাথে দেখা করিবে। উচ্চ মর্যাদাসম্পন্ন জান্নাতী সামনে এগিয়ে তাহাঁর চাইতে অল্প মর্যাদাবান জান্নাতীর সাথে দেখা করিবে। তবে সেখানে তাহাদের মধ্যে উঁচু-নীচু বলিতে কিছু থাকিবে না। তিনি তার পোশাক দেখে অস্থির হয়ে যাবেন। এ কথা শেষ হইতে না হইতেই তিনি মনে করিতে থাকিবেন যে, তার গায়ে আগের চাইতে উত্তম পোশাক দেখা যাচ্ছে। আর এরূপ এজন্যই হইবে যে, সেখানে কারো দুঃখ-কষ্ট বা দুশ্চিন্তা স্পর্শ করিবে না। তারপর আমরা নিজেদের স্থানে ফিরে আসব এবং নিজ নিজ স্ত্রীদের দেখা পাব। তারা তখন বলবে, মারহাবা, স্বাগতম! কি ব্যাপার! যে রূপ-সৌন্দর্য নিয়ে বিচ্ছিন্ন হয়েছিলে, তার চাইতে উত্তম সৌন্দর্য নিয়ে ফিরে এসেছ। আমরা বলব, আজ আমরা আমাদের আল্লাহ্ তাআলার সাথে মাজলিসে বসেছিলাম। কাজেই এ পরিবর্তন সংঘটিত হয়েছে। আর এটাই ছিল স্বাভাবিক।

যঈফ, ইবনি মাযাহ [৪৩৩৬] আবু ঈসা বলেনঃ এ হাদীসটি গারীব। আমরা শুধুমাত্র উপরোক্ত সূত্রেই এই হাদীস জেনেছি। সুয়াইদ ইবনি আমর আওযাঈর সূত্রে এই হাদীদের অংশ বিশেষ বর্ণনা করিয়াছেন। জান্নাতের বিবরণ – এই হাদীসটির তাহকিকঃ দুর্বল হাদীস

২৫৫০. আলী [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

তিনি বলেনঃ রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলেছেনঃ জান্নাতে যে বাজার আছে, তাতে নারী-পুরুষের প্রতিকৃতি ছাড়া আর কিছুর ক্রয়-বিক্রয় হইবে না। যখন কেউ কোন প্রতিকৃতির আকাঙ্ক্ষা করিবে, সঙ্গে সঙ্গে তা পেয়ে যাবে।

যঈফ, মিশকাত [৫৬৪৬], যঈফা [১৯৮২] আবু ঈসা বলেনঃ এ হাদীসটি হাসান গারীব। জান্নাতের বিবরণ – এই হাদীসটির তাহকিকঃ দুর্বল হাদীস

১৬. অনুচ্ছেদঃ আল্লাহ্‌ তাআলার দীদার [সাক্ষাৎ] লাভ

২৫৫১. জারীর ইবনি আবদুল্লাহ আল-বাজালী [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

তিনি বলেন, আমরা এক পূর্ণিমার রাতে নাবী [সাঃআঃ] এর সামনে উপবিষ্ট ছিলাম। তিনি চাঁদের দিকে দৃষ্টিপাত করে বললেনঃ তোমাদেরকে খুব শীঘ্রই তোমাদের প্রভুর সামনে উপস্থিত করা হইবে। তখন তোমরা অবাধে তাহাঁর সাক্ষাৎ লাভ করিবে, যেমনভাবে এই চাঁদকে দেখিতে পাচ্ছো। তাঁকে দেখার মধ্যে কোন রকম সংশয় থাকিবে না। তোমরা দুনিয়ার কাজে পরাভূত না হয়ে সূর্যোদয়ের পূর্বে ও সূর্যাস্তের পূর্বের নামাজ অর্থাৎ ফজর ও আসরের নামাজ আদায় কর। তারপর তিনি এই আয়াতটি তিলাওয়াত করেনঃ “সূর্যোদয়ের পূর্বে ও সূর্যাস্তের পূর্বে তোমার প্রভুর সপ্রশংস পবিত্রতা ও মহিমা ঘোষণা কর”– [সূ-রা ক্বাফ ৩৯]।

সহীহঃ ইবনি মা-জাহ [১৭৭], বুখারী, মুসলিম। আবু ঈসা বলেন, এই হাদীসটি হাসান সহীহ। জান্নাতের বিবরণ – এই হাদীসটির তাহকিকঃ সহীহ হাদীস

২৫৫২. সুহাইব [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

সুহাইব [রাদি.] হইতে আল্লাহ্‌ তাআলার বাণী

‏لِلَّذِينَ أَحْسَنُوا الْحُسْنَى وَزِيَادَةٌ

“যারা মঙ্গলজনক কাজ করে তাহাদের জন্য রয়েছে মঙ্গল এবং আরো অধিক”- [সূরা ইউনুস ২৬] প্রসঙ্গে বর্ণিত। এ আয়াতের ব্যাখ্যায় নাবী [সাঃআঃ] বলেছেনঃ জান্নাতীরা জান্নাতে প্রবেশের পর একজন আহবানকারী [ফেরেশতা] ডেকে বলবেন, তোমাদের জন্য আল্লাহ্‌ তাআলার নিকট আরো প্রতিশ্রুতি রয়েছে। তারা [জান্নাতীরা] বলবে, তিনি কি আমাদের চেহারা উজ্জ্বল করে এবং জাহান্নাম থেকে মুক্তি দিয়ে জান্নাতে প্রবেশ করাননি? ফেরেশতারা বলবেন, হ্যাঁ। তারপর পর্দা খুলে যাবে [এবং আল্লাহ্‌ তাআলার সাক্ষাৎ সংঘটিত হইবে]। তিনি বলেন, আল্লাহ্‌র কসম! তিনি মানুষকে তাহাঁর সাক্ষাতের চেয়ে বেশি পছন্দনীয় ও আকাঙ্ক্ষিত কোন জিনিসই প্রদান করেননি।

সহীহঃ ইবনি মা-জাহ [১৮৭], মুসলিম। আবু ঈসা বলেন, এই হাদীসটি হাম্মাদ ইবনি সালামা [রাহঃ] মুসনাদ ও মারফু হিসাবে বর্ণনা করিয়াছেন। সুলাইমান ইবনিল মুগীরা এই হাদীসটি সাবিত আল-বুনানীর বরাতে আবদুর রাহমান ইবনি আবু লাইলার বক্তব্য হিসেবে বর্ণনা করিয়াছেন। জান্নাতের বিবরণ – এই হাদীসটির তাহকিকঃ সহীহ হাদীস

২৫৫৩. ইবনি উমার [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

তিনি বলেন, রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলেছেনঃ একজন সাধারণ মর্যাদাসম্পন্ন জান্নাতীর বাগান, স্ত্রী, আমোদ-প্রমোদের সামগ্রী, খাদিম এবং খাট-পালং ও আসনসমূহ কেউ দেখিতে চাইলে তা তার জন্য হাজার বছরের পথ। তাহাদের মধ্যে আল্লাহ তাআলার নিকটে সবচাইতে মর্যাদাবান ব্যক্তি সকাল-সন্ধ্যায় তাহাঁর চেহারা দর্শন করিবে। তারপর তিনি এ আয়াত তিলাওয়াত করেনঃ “কতক মুখমন্ডল সেদিন উজ্জ্বল হইবে এবং তারা তাহাদের রবের দিকে তাকিয়ে থাকিবে”- [সূরা আল-ক্বিয়ামাহ্ঃ ২২-২৩]।

যঈফ; যঈফাহ্- হাঃনং- ১৯৮৫ । আবু ঈসা বলেনঃ বিভিন্নভাবে এ হাদীসটি ইসরাঈল হইতে তিনি সুওয়াইর-ইবনি উমার [রাদি.] হইতে এ সূত্রে মারফূ হিসেবে বর্ণিত হয়েছে। আবদুল মালিক ইবনি আবজার-সুওয়াইর হইতে ইবনি উমার [রাদি.]-এর সূত্রে মাওকূফ হিসেবে বর্ণনা করিয়াছেন। উবাইদুল্লাহ আল-আশজাঈ [রঃ] সুফিয়ান হইতে তিনি সুওয়াইর হইতে তিনি মুজাহিদ হইতে তিনি ইবনি উমার [রাদি.] সূত্রে তার বক্তব্য হিসেবে রিওয়ায়াত করিয়াছেন, মারফূরূপে বর্ণনা করেননি। জান্নাতের বিবরণ – এই হাদীসটির তাহকিকঃ দুর্বল হাদীস

১৭. অনুচ্ছেদঃ আল্লাহ্‌র সাক্ষাতে কোন ভিড় হইবে না

২৫৫৪. আবু হুরাইরাহ [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

তিনি বলেন, রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ] তাহাঁর সাহাবীদেরকে প্রশ্ন করেনঃ পূর্ণিমার রাতে চাঁদ দেখিতে তোমরা কি কোন প্রকার ভিড় অনুভব করো? সূর্য দেখার মধ্যে কি তোমরা কোন রকম ভিড় অনুভব করো? তারা বলিলেন, না। তিনি বললেনঃ তোমরা যেমনিভাবে পূর্ণিমার চাঁদ দেখিতে পাও, ঠিক তেমনিভাবে তোমাদের প্রভুকেও দেখিতে পাবে। আর এতে কোন ভীড় অনুভব করিবে না।

সহীহঃ ইবনি মা-জাহ [১৭৮]। বুখারী, মুসলিম। আবু ঈসা বলেন, এ হাদীসটি হাসান সহীহ গারীব। ইয়াহইয়া ইবনি ঈসা আর-রামলী [রাহঃ] প্রমুখ আমাশ হইতে, তিনি আবু সালিহ হইতে, তিনি আবু হুরাইরাহ [রাদি.] হইতে, তিনি নাবী [সাঃআঃ] হইতে, এই সুত্রে অনুরূপ বর্ণনা করিয়াছেন। আবদুল্লাহ ইবনি ইদরীস [রাহঃ] আমাশ হইতে, তিনি আবু সালিহ হইতে, তিনি আবু সাঈদ [রাদি.] হইতে, তিনি নাবী [সাঃআঃ] হইতে এই সুত্রে বর্ণনা করিয়াছেন। আবদুল্লাহ ইবনি ইদরীস–আমাশের সুত্রে বর্ণিত হাদীসটি সুরক্ষিত নয়। আবু সালিহ–আবু হুরাইরাহ [রাদি.] হইতে, তিনি নাবী [সাঃআঃ] হইতে এই সুত্রে বর্ণিত হাদীসটি অনেক বেশি সহীহ। সুহাইল ইবনি আবু সালিহ [রাহঃ] তার বাবা হইতে, তিনি আবু হুরাইরাহ [রাদি.] হইতে, তিনি নাবী [সাঃআঃ] হইতে একই রকম বর্ণনা করিয়াছেন। এই হাদীসটি আবু সাঈদ [রাদি.] এর সুত্রে রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ] হইতে ভিন্নভাবে বর্ণিত আছে। এই সূত্রটিও সহীহ। জান্নাতের বিবরণ – এই হাদীসটির তাহকিকঃ সহীহ হাদীস

১৮. অনুচ্ছেদঃ আল্লাহ্‌ তাআলা জান্নাতীদেরকে ডেকে বলবেন

২৫৫৫. আবু সাঈদ আল-খুদরী [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

তিনি বলেন, রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলেছেনঃ আল্লাহ্‌ তাআলা জান্নাতবাসীদেরকে ডেকে বলবেন, হে জান্নাতবাসীগণ! তারা বলবে,

 لَبَّيْكَ رَبَّنَا وَسَعْدَيْكَ

“লাব্বাইকা রব্বানা ওয়া সাদাইকা” [হে প্রভু! আমরা উপস্থিত]। তিনি বলবেন, তোমরা কি খুশি হয়েছো? তারা বলবে, আমরা কেন খুশি হবো না? আপনি তো আমাদেরকে ঐ সমস্ত জিনিস প্রদান করিয়াছেন যা আপনার আর কোন সৃষ্টিকেই দেননি। তিনি বলবেন, আমি তোমাদেরকে এর চেয়েও উত্তম জিনিস প্রদান করবো। তারা বলবে, এর চেয়েও উত্তম জিনিস আর কি আছে? তিনি বলবেন, আমি তোমাদের উপর আমার চির সন্তুষ্টি বর্ষণ করছি, এরপর আর কখনো তোমাদের উপর অসন্তুষ্ট হবো না।

সহীহঃ বুখারী, মুসলিম। আবু ঈসা বলেন, এই হাদীসটি হাসান সহীহ। জান্নাতের বিবরণ – এই হাদীসটির তাহকিকঃ সহীহ হাদীস

১৯. অনুচ্ছেদঃ জান্নাতবাসীরা নিজ নিজ বালাখানা [প্রাসাদ] থেকে পরস্পরকে দেখবে

২৫৫৬. আবু হুরাইরাহ [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

নাবী [সাঃআঃ] বলেছেনঃ জান্নাতবাসীরা নিজেদের অট্টালিকা [প্রাসাদ] থেকে সম্মান অনুযায়ী পরস্পরকে দেখিতে পাবে, যেভাবে তোমরা পূর্বাকাশে উদয়াচলে ও পশ্চিমাকাশে অস্তাচলে নক্ষত্রসমুহ দেখিতে পাও। তারা প্রশ্ন করেন, হে আল্লাহ্‌র রাসূল [সাঃআঃ]! তারা কি নাবীগণ? তিনি বলেন, হ্যাঁ। সেই মহান সত্তার শপথ, যার হাতে আমার জীবন! সেসব ব্যক্তিও উচ্চ সম্মানের আসনে থাকিবে যারা আল্লাহ্‌ ও তাহাঁর রাসুলের প্রতি বিশ্বাস স্হাপন করেছে এবং রাসূলদেরকে সত্য বলে স্বীকার করেছে।

সহীহঃ রাওযুন নাযীর [২/৩৬০-৩৬১], তালীকুর রাগীব [৪/২৫১], বুখারী, মুসলিম। আবু ঈসা বলেন, এই হাদীসটি হাসান সহীহ। জান্নাতের বিবরণ – এই হাদীসটির তাহকিকঃ সহীহ হাদীস

২০. অনুচ্ছেদঃ জান্নাতী ও জাহান্নামীদের চিরস্হায়ী বাসস্হান

২৫৫৭. আবু হুরাইরাহ [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলেছেনঃ ক্বিয়ামাত দিবসে আল্লাহ্‌ তাআলা সমস্ত মানুষকে একটি ময়দানে একত্রিত করবেন, তারপর রাব্বুল আলামীন তাহাদের সামনে আত্মপ্রকাশ করে বলবেনঃ পৃথিবীতে যে যার অনুসরণ করতো, এখন কেন সে তার পদাঙ্ক অনুসরণ করিবে না? অতএব, ক্রুশ পূজারীদের জন্য ক্রুশ, মূর্তি পূজারীদের জন্য মূর্তি, অগ্নি উপাসকদের জন্য আগুন উপস্থাপন করা হইবে এবং সকলেই নিজ নিজ পূজনীয় মাবুদদের সাথে চলবে। আর মুসলিমগণ তাহাদের জায়গাতেই থেকে যাবে। রাববুল আলামীন তাহাদের সামনে প্রকাশিত হয়ে বলবেনঃ তোমরা কেন ঐসব মানুষদের অনুসরণ করছো না? তারা বলবে, নাঊযুবিল্লাহ মিনকা, নাঊযুবিল্লাহ মিনকা [আল্লাহ্‌ তাআলার নিকট আশ্রয় প্রার্থনা করছি]। আল্লাহ্‌ তাআলাই আমাদের প্রভু। আর এটা আমাদের জায়গা। আমরা আমাদের প্রভুর সাক্ষাৎ পাবার পূর্বমুহূর্ত পর্যন্ত এ স্থান ছেড়ে যাবো না। তিনি তাহাদেরকে নির্দেশ দিবেন এবং তাহাদেরকে নিজ জায়গায় অটল রাখবেন। তারপর আল্লাহ্‌ তাআলা অদৃশ্য হয়ে যাবেন। তিনি পুনরায় তাহাদের সামনে প্রকাশিত হয়ে বলবেন, তোমরা কেন ঐসব মানুষের অনুসরণ করছো না? তারা বলবে, নাঊযুবিল্লাহ মিনকা, নাঊযুবিল্লাহ মিনকা, আল্লাহ্‌ আমাদের রব এবং এটা আমাদের অবস্থানস্থল। আমরা আমাদের রবের দেখা পাওয়ার পূর্ব মুহুর্ত পর্যন্ত এ জায়গা ছেড়ে যাবো না। তিনি তাহাদেরকে আদেশ দিবেন এবং স্বস্থানে দৃঢ় রাখবেন। সাহাবীগণ প্রশ্ন করিলেন, হে আল্লাহ্‌র রাসূল [সাঃআঃ]! আমরা কি আমাদের প্রভুর দেখা পাবো? তিনি বললেনঃ তোমাদের কি পূর্ণিমার রাতের চাঁদ দেখিতে অন্যদেরকে কষ্ট দিতে হয়? তারা বলিলেন, না, হে আল্লাহ্‌র রাসূল [সাঃআঃ]! তিনি বললেনঃ অনুরূপভাবে সে সময় তোমরা তাঁকে দেখার জন্য তোমাদের কাউকেও যন্ত্রণা দিতে হইবে না। তারপর আল্লাহ্‌ তাআলা আড়ালে চলে যাবেন। তিনি পুনরায় তাহাদের সামনে প্রকাশিত হয়ে নিজের পরিচিতি উপস্থাপন করে বলবেনঃ আমিই তোমাদের প্রভু। তোমরা আমার অনুসরণ কর। মুসলিমগণ উঠে দাঁড়াবে। চলার পথে পুলসিরাত স্থাপন করা হইবে। তারা তা খুব সহজেই দ্রুতগামী ঘোড়া ও উটের মতো অতিক্রম করিবে এবং এর উপরে তাহাদের ধ্বনি হবেঃ সাল্লিম সাল্লিম [হে আল্লাহ্‌ আমাদেরকে শান্তিতে রাখো]। জাহান্নামীরা অতিক্রম না করিতে পেরে এখানেই থেকে যাবে। তাহাদের মধ্য হইতে একটি দলকে জাহান্নামে নিক্ষেপ করা হইবে এবং জাহান্নামকে প্রশ্ন করা হইবে, তোর পেট ভরেছে কি? সে বলবে, আরো আছে কি? আবার আরেকটি দলকে জাহান্নামে নিক্ষেপ করা হইবে এবং প্রশ্ন করা হইবে, তোর পেট ভরেছে কি? সে বলবে, আরো আছে কি? এভাবে সমস্ত জাহান্নামীকে যখন জাহান্নামে নিক্ষেপ করা হইবে, তখন দয়ালু প্ৰভু আল্লাহ্‌ তাআলা তাহাঁর পা এর উপর রাখবেন এবং এর এক অংশ আরেক অংশের সাথে সংকুচিত হয়ে যাবে। তিনি বলবেন, যথেষ্ট হয়েছে তো? জাহান্নাম বলবে, হ্যাঁ, যথেষ্ট হয়েছে, যথেষ্ট হয়েছে।

এরপর আল্লাহ্‌ তাআলা যখন জান্নাতীদেরকে জান্নাতে এবং জাহান্নামীদেরকে জাহান্নামে প্রবেশ করাবেন, তখন মৃত্যু-কে গলায় কাপড় বেঁধে টেনে আনা হইবে এবং জান্নাতী ও জাহান্নামীদের মাঝখানের প্রাচীরে রাখা হইবে। তারপর ডেকে বলা হইবে, হে জান্নাতীগণ! তারা ভয়ে ভয়ে আত্মপ্রকাশ করিবে। তারপর বলা হইবে, হে জাহান্নামীগণ! তারাও সুসংবাদ মনে করে শাফাআত লাভের আশায় আত্মপ্রকাশ করিবে। তারপর জান্নাতী ও জাহান্নামীদেরকে প্রশ্ন করা হইবে, তোমরা কি একে চিনো? জান্নাতী ও জাহান্নামীরা বলবে, হ্যাঁ আমরা একে চিনে ফেলেছি। এটা মৃত্যু যা আমাদের উপর নির্দিষ্ট করা হয়েছিল। তারপর মৃত্যুকে চিৎ করে শোয়ানো হইবে এবং জান্নাত ও জাহান্নামের মধ্যকার প্রাচীরের উপর যবেহ করা হইবে। তারপর বলা হইবে, হে জান্নাতীগণ! তোমরা চিরকাল জান্নাতে থাকিবে। এরপর আর মৃত্যু নেই। হে জাহান্নামীগণ! তোমরা চিরকাল জাহান্নামে থাকিবে, এরপর আর মৃত্যু নেই।

সহীহ ঃ তাখরীজ তাহাভীয়া [৫৭৬], হাদীসটি বুখারী ও মুসলিমে সংক্ষিপ্তভাবে আছে। আবু ঈসা বলেন, এই হাদীসটি হাসান সহীহ। নাবী [সাঃআঃ] হইতে আল্লাহ্‌ তাআলার সাক্ষাৎ লাভ বিষয়ক এরকম অনেক হাদীস বর্ণিত আছে। মানুষ আল্লাহ্‌ তাআলার সাক্ষাৎ লাভ করিবে এবং [তাহাঁর] পা বা একই রকম বিষয়েরও উল্লেখ আছে। সুফইয়ান সাওরী, মালিক ইবনি আনাস, ইবনি মুবারাক, সুফইয়ান ইবনি উআইনা ও ওয়াকী [রাহঃ] প্রমুখ ঈমামগণ এই জাতীয় বিষয় বর্ণনা করিয়াছেন এবং বলেছেন, তা বর্ণনা করা যাবে এবং আমরা এগুলোতে বিশ্বাস করি। কিন্তু এগুলো কেমন হইবে তা প্রশ্ন করা যাবে না। মুহাদ্দিসগণও এই মতামত গ্রহণ করিয়াছেন যে, যেভাবে এই জাতীয় হাদীস বর্ণিত হয়ে এসেছে, ঠিক সেভাবেই বর্ণনা করা যাবে এবং এই বিষয়ের উপর বিশ্বাসও রাখতে হইবে। কিন্তু এর ব্যাখ্যা করা যাবে না এবং সংশয় পোষণও করা যাবে না, তাহাঁর হাত-পা এগুলো কেমন তাও বলা যাবে না। আলিমগণ এই অভিমতই অবলম্বন করিয়াছেন। আর হাদীসে বর্ণিত হয়েছে “তিনি তাহাদের সামনে তাহাঁর পরিচিতি উপস্থাপন করবেন”-এর তাৎপর্য এই যে, তিনি তাহাদের সামনে নিজের নূরের তাজাল্লী প্রকাশ করবেন। জান্নাতের বিবরণ – এই হাদীসটির তাহকিকঃ সহীহ হাদীস

২৫৫৮. আবু সাঈদ [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

তিনি মারফু হিসেবে বর্ণনা করেন যে, রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলেছেনঃ কিয়ামাত দিবসে মৃত্যুকে উপস্থিত করা হইবে সাদা-কালো বর্ণের ভেড়ার আকারে এবং জান্নাত ও জাহান্নামের মাঝখানে দাঁড় করিয়ে যবেহ করা হইবে। আর তারা [জান্নাতী ও জাহান্নামীরা] তা দেখিতে থাকিবে। কেউ যদি আনন্দ-উল্লাসের কারণে মৃত্যুবরণ করতো, তাহলে জান্নাতবাসীরা [এতে আশ্চর্য হয়ে] মারা যেতো। আর কেউ যদি চিন্তা ও দুঃখের কারণে মৃত্যুবরণ করতো তাহলে জাহান্নামীরা [দুঃখ ও ক্ষোভে] মারা যেতো।

“কেউ যদি মৃত্যুবরণ করতো” এই অংশ ব্যতীত হাদীসটি সহীহ, যঈফাহ [২৬৬৯], বুখারী, মুসলিম। আবু ঈসা বলেন, এ হাদীসটি হাসান সহীহ। জান্নাতের বিবরণ – এই হাদীসটির তাহকিকঃ সহীহ হাদীস

২১. অনুচ্ছেদঃ জান্নাত কষ্টদায়ক কার্য দ্বারা এবং জাহান্নাম কু-প্রবৃত্তি ও লালসা দ্বারা বেষ্টিত

২৫৫৯. আনাস [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলেছেনঃ জান্নাত দুঃখ-কষ্ট ও শ্রমসাধ্য বিষয় দ্বারা ঘেরা এবং জাহান্নাম কু-প্রবৃত্তি ও লোভ-লালসা দ্বারা ঘেরা।

সহীহ ঃ মুসলিম [৮/১৪২-১৪৩]। আবু ঈসা বলেন, এই হাদীসটি হাসান সহীহ এবং উপরোক্ত সূত্রে গারীব। জান্নাতের বিবরণ – এই হাদীসটির তাহকিকঃ সহীহ হাদীস

২৫৬০. আবু হুরাইরাহ [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলেছেনঃ আল্লাহ্‌ তাআলা জান্নাত-জাহান্নাম সৃষ্টি করার পর জিবরীল [আঃ]-কে জান্নাতের দিকে পাঠিয়ে দিয়ে বলেনঃ জান্নাত এবং আমি এর মধ্যে জান্নাতীদের জন্য যেসব দ্রব্যাদি সৃষ্টি করে রেখেছি, তুমি সেগুলো দেখে এসো। তিনি বলেনঃ তারপর তিনি জান্নাতে গিয়ে আল্লাহ্‌ তাআলার সৃষ্টিকৃত সমস্ত দ্রব্যাদি দেখলেন এবং তাহাঁর নিকট ফিরে এসে বলিলেন, আপনার সম্মানের শপথ! যে কেউ জান্নাতের সুখ-স্বাচ্ছন্দ প্রসঙ্গে শুনবে, সে-ই তাতে প্রবেশের চেষ্টা করিবে। তারপর তিনি আদেশ করিলেন। ফলে কষ্ট-মুসীবাতের বস্তু দ্বারা জান্নাতকে ঘেরাও করা হলো। তিনি জিবরীল [আঃ]-কে পুনরায় বললেনঃ তুমি আবার জান্নাতে প্রবেশ কর এবং জান্নাতীদের জন্য আমার তৈরিকৃত সামগ্ৰী দেখে এসো। রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলেনঃ তারপর তিনি সেখানে ফিরে গিয়ে দেখিতে পেলেন যে, তা কষ্ট ও মুসীবাতের বস্তু দ্বারা ঘেরাও করে রাখা হয়েছে। তিনি আল্লাহ্‌ তাআলার নিকট ফিরে এসে বলিলেন, আপনার সম্মানের শপথ! আমার ভয় হচ্ছে যে, এতে কোন ব্যক্তিই যেতে পারবে না। এবার আল্লাহ্‌ তাআলা তাকে বললেনঃ আমি জাহান্নাম এবং জাহান্নামীদের জন্য যে আযাব তৈরি করে রেখেছি তুমি গিয়ে তা দেখে এসো। তিনি সেখানে গিয়ে দেখিতে পেলেন যে, এর একাংশ অন্য অংশের উপর চড়াও হচ্ছে [একটি অন্যটিকে গ্রাস করছে]। তিনি তা দেখার পর আল্লাহ্‌ তাআলার সামনে ফিরে এসে বলিলেন, আপনার সম্মানের শপথ! যে ব্যক্তি এর বর্ণনা শুনবে সে এতে প্রবেশ করিবে না। তারপর তাহাঁর নির্দেশে জাহান্নামকে লোভ-লালসা দ্বারা ঘিরে ফেলা হলো। এবার জিবরীল [আঃ]-কে তিনি বললেনঃ তুমি আবার সেখানে যাও [এবং তা দেখে এসো]। তিনি সেখানে আবারো গেলেন এবং ফিরে এসে বলিলেন, আপনার সম্মানের কসম! আমার তো ধারণা হচ্ছে যে, কেউই এই থেকে মুক্তি পাবে না, সকলেই এতে প্রবেশ করিবে।

হাসান সহীহ ঃ তাখরীজুত তানকীল [২/১৭৭]। আবু ঈসা বলেন, এই হাদীসটি হাসান সহীহ। জান্নাতের বিবরণ – এই হাদীসটির তাহকিকঃ হাসান সহীহ

২২. অনুচ্ছেদঃ জান্নাত ও জাহান্নামের তর্ক-বিতর্ক

২৫৬১. আবু হুরাইরাহ [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

তিনি বলেনঃ রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলেছেনঃ জান্নাত ও জাহান্নামের মধ্যে তর্ক-বির্তক হলো। জান্নাত বললো, গরীব-মিসকীন ও দুর্বল ব্যক্তি আমার মধ্যে প্রবেশ করিবে। জাহান্নাম বললো, যতো স্বৈরাচারী যালিম ও অহংকারীরা আমার মধ্যে প্রবেশ করিবে। আল্লাহ্ তাআলা জাহান্নামকে বলেনঃ তুই আমার আযাব, আমি তোর দ্বারা যার থেকে ইচ্ছা প্রতিশোধ গ্রহণ করবো। তিনি জান্নাতকে বলেনঃ তুমি আমার রাহমাত, আমি তোমার দ্বারা যাকে ইচ্ছা উপকৃত করবো।

হাসান সহীহ ঃ যিলালুল জান্নাত [৫২৮], মুসলিম। আবু ঈসা বলেন, এই হাদীসটি হাসান সহীহ। জান্নাতের বিবরণ – এই হাদীসটির তাহকিকঃ হাসান সহীহ

২৩. অনুচ্ছেদঃ অতি সাধারণ জান্নাতীর মর্যাদা প্রসঙ্গে

২৫৬২. আবু সাঈদ আল-খুদরী [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

তিনি বলেন, রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলেছেনঃ অতি সাধারণ মর্যাদা সম্পন্ন একজন জান্নাতীরও আশি হাজার খাদিম ও বাহাত্তর জন হূর থাকিবে। আর তার জন্য মণিমুক্তা, যমরূদ ও ইয়াকূতের তাঁবু নির্মাণ করা হইবে। সেটা এত বড় হইবে যে, তা সিরিয়ার অন্তর্গত জাবিয়া হইতে ইয়ামানের সানআ পর্যন্ত সমান জায়গা জুড়ে বিস্তৃত হইবে।

যঈফ মিশকাত [৫৬৪৮] যঈফ জামি সাগীর [২৬৬]। আর এ সনদেই রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ] হইতে বর্ণিত আছে, তিনি বলেনঃ যে জান্নাতী মারা গেছে চাই সে কম বয়সী হোক বা বেশী বয়সী, সে ত্রিশ বছরের যুবক হয়ে জান্নাতে যাবে, এর বেশী বয়স আর হইবে না। ঠিক জাহান্নামীদের বয়স ও অনুরূপ হইবে। একই সনদে রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলেনঃ সাধারণ জান্নাতীদের মাথায় তাজ [মুকুট] পরানো হইবে। আর এ তাজের সবচাইতে নিম্নমানের মুক্তা এমন হইবে যে, এটা পূর্ব হইতে পশ্চিম পর্যন্ত সবকিছু আলোকিত করিবে। আবু ঈসা বলেন, এ হাদীসটি গারীব। আমরা শুধুমাত্র রিশদীন ইবনি সাদের রিওয়ায়াত হিসাবে এ হাদীস জেনেছি। জান্নাতের বিবরণ – এই হাদীসটির তাহকিকঃ দুর্বল হাদীস

২৫৬৩. আবু সাঈদ আল-খুদরী [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

তিনি বলেন, রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলেছেনঃ কোন মুমিন লোক যদি জান্নাতে সন্তানের আকাঙ্ক্ষা করে তাহলে সঙ্গে সঙ্গে তার স্ত্রী গর্ভধারণ করিবে ও সন্তান প্রসব করিবে এবং সন্তানটি হইবে বয়সে যুবক। তার ইচ্ছা অনুযায়ী মুহুর্তের মধ্যেই এসব হয়ে যাবে।

সহীহ ঃ প্রাগুক্ত।

আবু ঈসা বলেন, এই হাদীসটি হাসান গারীব। আলিমদের মধ্যে এই বিষয়ে মতপার্থক্য রহিয়াছে। কেউ বলেন, জান্নাতে সম্ভোগ হইবে কিন্তু সন্তান জন্মগ্রহণ করিবে না। তাঊস, মুজাহিদ ও ইবরাহীম নাখঈ প্রমুখ হইতে এই রকম বর্ণিত আছে। মুহাম্মাদ ইবনি ইসমাঈল আল-বুখারী [রাহঃ] বলেন, উক্ত হাদীস প্রসঙ্গে ইসহাক ইবনি ইবরাহীম বলেন যে, মুমিন লোক জান্নাতে সন্তানের ইচ্ছা করা মাত্র সন্তান ভূমিষ্ঠ হইবে, কিন্তু সে এমন কিছু ইচ্ছা করিবে না। মুহাম্মাদ [রাহঃ] আরো বলেন, আবু রাযীন আল-উকাইলী হইতেও রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ]-এর অনুরূপ হাদীস বর্ণিত আছে যে, সেখানে কোন জান্নাতীদের কোন সন্তান জন্মগ্রহণ করিবে না। আবু সিদ্দীক আন নাজীর-এর নাম বাকর ইবনি আমর তাকে বাকর ইবনি কাইসও বলা হয়। জান্নাতের বিবরণ – এই হাদীসটির তাহকিকঃ সহীহ হাদীস

২৪. অনুচ্ছেদঃ জান্নাতের হুরদের কথার বর্ণনা

২৫৬৪. আলী [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

তিনি বলেন, রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলেছেনঃ জান্নাতে আয়াতলোচনা হুরদের সমবেত হওয়ার একটি জায়গা রয়েছে। তারা সেখানে এমন সুরেলা আওয়াজে গান গাইবে, যেমন আওয়াজ কোন মাখলূক ইতিপূর্বে কখনো শুনেনি। তারা এই বলে গান গাইবেঃ আমরা তো চিরঙ্গিনী, আমাদের ধ্বংস নেই। আমরা তো আনন্দ-উল্লাসের জন্যই, দুঃখ-কষ্ট নেই আমাদের। আমরা চির সন্তুষ্ট, আমরা কখনো অসন্তুষ্ট হব না। তাহাদের কতই না সৌভাগ্য যাদের জন্য আমরা এবং আমাদের জন্য যারা।

যঈফ, যঈফা [১৯৮২] এ অনুচ্ছেদে আবু হুরাইরা, আবু সাঈদ ও আনাস [রাদি.] হইতেও হাদীস বর্ণিত আছে। আবু ঈসা বলেন, এ হাদীসটি গারীব। জান্নাতের বিবরণ – এই হাদীসটির তাহকিকঃ দুর্বল হাদীস

২৫৬৫. ইয়াহইয়া ইবনি কাসীর [রাহঃ] হইতে বর্ণীতঃ

ইয়াহইয়া ইবনি কাসীর [রাহঃ] হইতে আল্লাহ্ তাআলার বাণী,

‏فَهُمْ فِي رَوْضَةٍ يُحْبَرُونَ 

“তারা তো বাগানের মধ্যে আনন্দিত থাকিবে” [রূমঃ ১৫] আয়াতের ব্যাখ্যা প্রসঙ্গে বর্ণিত আছে, তিনি বলেনঃ তারা গান শুনবে।

সনদ সহীহ মাকতু, হাদীসের বর্ণনা অনুযায়ী গানের অর্থ হল হুরদের উচ্চকণ্ঠে গানের আওয়াজ। জান্নাতের বিবরণ – এই হাদীসটির তাহকিকঃ সহীহ মাকতু

২৫. অনুচ্ছেদঃ জান্নাতের ঝর্ণাসমূহের বর্ণনা

২৫৬৬. ইবনি উমার [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

তিনি বলেন, রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলেছেনঃ তিন প্রকার লোক কিয়ামতের দিন কস্তুরীর স্তূপের উপর আসন গ্রহণ করিবে। পূর্ববর্তী ও পরবর্তীগণ তাহাদের এ মর্যাদায় ঈর্ষা করিবে। ১] যে ব্যক্তি দিন-রাত পাঁচ ওয়াক্ত নামাযের আযান দেয়; ২] যে ব্যক্তি কোন জাতির নেতৃত্ব করে আর তারা তার উপর সন্তুষ্ট থাকে এবং ৩] যে গোলাম আল্লাহ্ তাআলার ও তার মনিবের হক আদায় করে।

যঈফ; মিশকাত-হাঃনং-৬৬৬, নাকদুত্ তাজ-হাঃনং-১৮৪; তালীকুর রাগীব-হাঃনং-১/১১০ । আবু ঈসা বলেনঃ এ হাদীসটি হাসান গারীব। আমরা শুধুমাত্র সুফিয়ান সাওরীর সূত্রে এ হাদীস জেনেছি। আবুল ইয়াকযানের নাম উসমান ইবনি উমাইর, মতান্তরে ইবনি ক্বাইস। জান্নাতের বিবরণ – এই হাদীসটির তাহকিকঃ দুর্বল হাদীস

২৫৬৭. আবদুল্লাহ ইবনি মাসউদ [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলেনঃ আল্লাহ তাআলা তিন প্রকার লোককে ভালবাসেন। ১] যে ব্যক্তি রাত জেগে [তাহাজ্জুদ] নামাযে কুরআন তিলাওয়াত করে; ২] যে ব্যক্তি ডান হাতে দান-খাইরাত করে আর তার বাঁ হাতও তা টের পায়না এবং ৩] যে ব্যক্তি কোন সেনাবাহিনীতে যুদ্ধরত অবস্থায় থাকে, তার সাথীরা পরাজিত হয়ে গেলেও সে দুশমনের মুকাবিলা করিতে থাকে।

যঈফ; মিশকাত-তাহক্বীক্ব ছানী, হাঃনং-১৯২১। আবু ঈসা বলেনঃ উপরোক্ত সূত্রে এ হাদীসটি গারীব এবং অরক্ষিত। সঠিক হল সে বর্ণনাটি যা শুবা [রঃ] প্রমুখ মানসূর হইতে তিনি রিবঈ ইবনি হিরাশ হইতে তিনি যাইদ ইবনি যাব্ইয়ান হইতে তিনি আবু যার [রাদি.] হইতে তিনি রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ] হইতে এ সূত্রে বর্ণনা করিয়াছেন। আবু বাক্‌র ইবনি আইয়্যাশ হাদীস বর্ণনায় প্রচুর ভুল করেন। জান্নাতের বিবরণ – এই হাদীসটির তাহকিকঃ দুর্বল হাদীস

২৫৬৮. আবু যার [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলেনঃ আল্লাহ তাআলা তিন প্রকার লোককে ভালবাসেন এবং তিন প্রকার লোককে ঘৃণা করেন। যাদের আল্লাহ তাআলা ভালবাসেন তারা হলঃ [১] কোন ব্যক্তি কোন সম্প্রদায়ের নিকটে এসে আল্লাহ্‌ তাআলার ওয়াস্তে কিছু চাইল, তবে আত্মীয়তার সম্পর্কের দোহাই দিয়ে চায়নি। তারা তাকে কিছুই দিল না। এ সম্প্রদায়ের একটি লোক তাহাদের হইতে আলাদা হয়ে গোপনে তাকে কিছু দান করিল এবং তার দান প্রসঙ্গে আল্লাহ তাআলা ও গ্রহণকারী ব্যতীত আর কেউ জানতে পারল না। [২] একটি দল সারারাত সফররত থাকল, তারপর সকল কিছুর তুলনায় ঘুম যখন তাহাদের প্রিয় হয়ে গেল, ফলে সব লোক [বালিশে] মাথা রেখে ঘুমিয়ে পড়ল; কিন্তু তাহাদেরই একজন আমার সন্তুষ্টি অর্জনের উদ্দেশ্যে নামাযে দাঁড়ায় এবং আমার কুরআনের আয়াত তিলাওয়াত করে। [৩] আর এক ব্যক্তি কোন সেনাবাহিনীতে যোগদান করিল। তারপর শত্রুর মুকাবিলা করে তার পক্ষের লোকেরা পরাজিত হল; কিন্তু সে বুক ফুলিয়ে সামনে এগিয়ে গেলো। তারপর সে হয় শহীদ হল কিংবা বিজয়ী হল। আর আল্লাহ তাআলা যে তিনজনকে ঘৃণা করেন তারা হলঃ [১] বৃদ্ধ যেনাকারী; [২] অহংকারী ভিক্ষুক এবং [৩] অত্যাচারী সম্পদশালী ব্যক্তি।

যঈফ, মিশকাত [১৯২২]। মাহমূদ ইবনি গাইলান-নাযর ইবনি শুমাইল হইতে তিনি শুবা [রঃ] হইতে উপরে বর্ণিত হাদীসের সমার্থক হাদীস বর্ণনা করিয়াছেন। আবু ঈসা বলেনঃ এ হাদীসটি সহীহ। শাইবান [রঃ]- ও মানসূরের সূত্রে এরকমই বর্ণনা করিয়াছেন। এই সূত্রে বর্ণিত রিওয়ায়াতটি আবু বাক্‌র ইবনি আইয়্যাশের সূত্রে বর্ণিত হাদীসের তুলনায় অনেক বেশী সহীহ। জান্নাতের বিবরণ – এই হাদীসটির তাহকিকঃ দুর্বল হাদীস

২৬. অনুচ্ছেদঃ ফুরাতের ভাণ্ডার

২৫৬৯. আবু হুরাইরাহ [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

তিনি বলেন, রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলেছেনঃ ফুরাত নদী শীঘ্রই তার স্বর্ণের ভাণ্ডার প্রকাশ করে দিবে। তখন যে লোক সেখানে উপস্থিত থাকিবে, সে যেন তা থেকে কিছুই না নেয়।

সহীহ ঃ বুখারী, মুসলিম। আবু ঈসা বলেন, এই হাদীসটি হাসান সহীহ। জান্নাতের বিবরণ – এই হাদীসটির তাহকিকঃ সহীহ হাদীস

২৫৭০. আবু হুরাইরাহ [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

আবু হুরাইরা [রাদি.]-এর সূত্রে রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ] হইতে উপরোক্ত হাদীসের একই রকম বর্ণনা আছে। তবে এতে তিনি বলেছেনঃ “ফুরাত হইতে স্বর্ণের একটি পাহাড় বের হইবে ”।

সহীহ ঃ বুখারী, মুসলিম। আবু ঈসা বলেন, এই হাদীসটি হাসান সহীহ। জান্নাতের বিবরণ – এই হাদীসটির তাহকিকঃ সহীহ হাদীস

২৭. অনুচ্ছেদঃ জান্নাতের নদীসমূহের বর্ণনা

২৫৭১. হাকীম ইবনি মুআবিয়াহ্ [রাহঃ] হইতে বর্ণীতঃ

রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলেছেনঃ জান্নাতের মধ্যে পানি, মধু, দুধ ও মদের সমুদ্র আছে। এগুলো থেকে আরো ঝর্ণা বা নদীসমূহ প্রবাহিত হইবে।

সহীহ ঃ মিশকাত তাহক্বীক্ব সানী [৫৬৫০]। আবু ঈসা বলেন, এই হাদীসটি হাসান সহীহ। হাকীম ইবনি মুআবিয়া হলেন বাহয [রাহঃ]-এর বাবা। আল জুরাইরীর উপনাম আবু মাসউদ। তার নাম সাঈদ ইবনি ইয়াস। জান্নাতের বিবরণ – এই হাদীসটির তাহকিকঃ সহীহ হাদীস

২৫৭২. আনাস ইবনি মালিক [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

তিনি বলেন, রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলেছেনঃ কোন লোক জান্নাতের জন্য আল্লাহ্‌ তাআলার নিকট তিনবার প্রার্থনা করলে জান্নাত তখন বলে, হে আল্লাহ্‌! তাকে জান্নাতে প্রবেশ করান। আর কোন লোক তিনবার জাহান্নাম হইতে পানাহ [আশ্রয়] চাইলে জাহান্নাম তখন আল্লাহ্‌ তাআলার নিকট বলে, হে আল্লাহ্‌! তাকে জাহান্নাম থেকে মুক্তি দিন।

সহীহ ঃ মিশকাত তাহক্বীক্ব সানী [২৪৭৮], তালীকুর রাগীব [৪/২২২]। ইউনুস [রাহঃ] এ হাদীসটি আবু ইসহাক হইতে, তিনি বুরাইদ ইবনি আবু মারইয়াম হইতে, তিনি আনাস [রাদি.] হইতে, তিনি রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ] হইতে এই সূত্রে একই রকম বর্ণনা করিয়াছেন। আবু ইসহাক হইতে বুরাইদ ইবনি আবু মারইয়াম এর বরাতে আনাস [রাদি.]-এর বক্তব্য হিসেবেও বর্ণিত হয়েছে। জান্নাতের বিবরণ – এই হাদীসটির তাহকিকঃ সহীহ হাদীস

Comments

One response to “জান্নাতের বিবরণ । গাছ প্রাসাদ ফল হুর ও ঝর্ণা সমূহের বর্ণনা”

Leave a Reply