জানাযার সালাত এ তাকবীর চারটি এবং সুরা ফাতিহা পাঠ করা
জানাযার সালাত এ তাকবীর চারটি এবং সুরা ফাতিহা পাঠ করা >> বুখারী শরীফ এর মুল সুচিপত্র পড়ুন
এ বিষয়ে আরও পড়ুন >> মুয়াত্তা মালিক >> সহীহ মুসলিম >> আবু দাউদ >> ইবনে মাজাহ >> তিরমিজি >> নাসাঈ >> মিশকাত >> রিয়াদুস সালেহীন >> বুলুগুল মারাম হাদীস শরীফ হতে
পর্বঃ ২৩, জানাযা, অধ্যায়ঃ (৪৬-৬৬)=২১টি
২৩/৪৬. অধ্যায়ঃ জানাযার জন্য দণ্ডায়মান হওয়া।
২৩/৪৭. অধ্যায়ঃ জানাযার জন্য দাঁড়ালে কখন বসবে ?
২৩/৪৮. অধ্যায়ঃ যে ব্যক্তি জানাযার পিছে পিছে যায়, সে লোকদের কাঁধ হইতে তা নামিয়ে না রাখা পর্যন্ত বসবে না আর বসে পড়লে তাকে দাঁড়াবার নির্দেশ দেওয়া হইবে।
২৩/৪৯. অধ্যায়ঃ যে ব্যক্তি ইয়াহূদীর জানাযা দেখে দাঁড়ায়।
২৩/৫০. অধ্যায়ঃ পুরুষরা জানাযা বহন করিবে, স্ত্রীলোকেরা নয়।
২৩/৫১. অধ্যায়ঃ জানাযার কাজ শীঘ্র সম্পাদন করা।
২৩/৫২. অধ্যায়ঃ খাটিয়ায় [১] থাকাকালে মৃত ব্যক্তির উক্তিঃ আমাকে নিয়ে এগিয়ে চল
২৩/৫৩. অধ্যায়ঃ জানাযার সালাতে ইমামের পিছনে দু বা তিন কাতারে দাঁড়ানো।
২৩/৫৪. অধ্যায়ঃ জানাযার সালাতের কাতার।
২৩/৫৫. অধ্যায়ঃ জানাযার সালাতে পুরুষদের সঙ্গে বালকদের কাতার।
২৩/৫৬. অধ্যায়ঃ জানাযার সালাতের নিয়ম।
২৩/৫৭. অধ্যায়ঃ জানাযার পিছনে পিছনে যাবার ফযীলত।
২৩/৫৮. অধ্যায়ঃ দাফন হয়ে যাওয়া পর্যন্ত অপেক্ষা করা।
২৩/৫৯. অধ্যায়ঃ জানাযার সালাতে বয়স্কদের সঙ্গে বালকদেরও অংশগ্রহণ করা।
২৩/৬০. অধ্যায়ঃ মুসল্লা (ঈদগাহ বা নির্ধারিত স্থানে) এবং মসজিদে জানাযার সালাত আদায় করা।
২৩/৬১. অধ্যায়ঃ কবরের উপরে মসজিদ বানানো ঘৃণিত কাজ।
২৩/৬২. অধ্যায়ঃ নিফাসের অবস্থায় [২৩] মারা গেলে তার জানাযার সালাত।
২৩/৬৩. অধ্যায়ঃ মহিলা ও পুরুষের (জানাযার সালাতে) ইমাম কোথায় দাঁড়াবেন?
২৩/৬৪. অধ্যায়ঃ জানাযার সালাতে তাকবীর চারটি।
২৩/৬৫. অধ্যায়ঃ জানাযার সালাতে সুরা ফাতিহা পাঠ করা।
২৩/৬৬. অধ্যায়ঃ দাফনের পর কবরকে সম্মুখে রেখে (জানাযার) সালাত আদায়। হত
২৩/৪৬. অধ্যায়ঃ জানাযার জন্য দণ্ডায়মান হওয়া।
১৩০৭. আমির ইবনু রাবীআ (রাদি.) নাবী (সাঃআঃ) হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, তোমরা জানাযা দেখলে তা তোমাদের পিছনে ফেলে যাওয়া পর্যন্ত দাঁড়িয়ে থাকবে। হুমাইদী আরও উল্লেখ করিয়াছেন, তা তোমাদের পশ্চাতে ফেলে যাওয়া বা মাটিতে নামিয়ে রাখা পর্যন্ত।
২৩/৪৭. অধ্যায়ঃ জানাযার জন্য দাঁড়ালে কখন বসবে ?
১৩০৮. আবু সাঈদ খুদরী (রাদি.) সূত্রে নাবী (সাঃআঃ) হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, তোমাদের কেউ জানাযা যেতে দেখলে যদি সে তাহাঁর সহযাত্রী না হয়, তবে ততক্ষন সে দাঁড়িয়ে থাকবে, যতক্ষণ না সে ব্যক্তি জানাযা পিছনে ফেলে বা জানাযা তাকে পিছনে ফেলে যায় অথবা পিছনে ফেলে যাওয়ার পূর্বে তা (মাটিতে) নামিয়ে রাখা হয়।
১৩০৯. সাঈদ মাক্বুরী (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) এর পিতা হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, আমরা একটি জানাযায় শরীক হলাম। (সেখানে) আবু হুরাইরা (রাদি.) মারওয়ানের হাত ধরলেন এবং তাহাঁর জানাযা নামিয়ে রাখার পূর্বেই বসে পড়লেন। তখন আবু সাঈদ এগিয়ে এসে মারওয়ানের হাত ধরে বলিলেন, দাঁড়িয়ে পড়ুন ! আল্লাহর কসম! ইনি [আবু হুরাইরা (রাদি.)] তো জানেন যে, নাবী (সাঃআঃ) ঐ কাজ করিতে (জানাযা নামিয়ে রাখার পূর্বে বসতে) নিষেধ করিয়াছেন। তখন আবু হুরাইরা (রাদি.) বলিলেন, তিনি ঠিকই বলেছেন।
২৩/৪৮. অধ্যায়ঃ যে ব্যক্তি জানাযার পিছে পিছে যায়, সে লোকদের কাঁধ হইতে তা নামিয়ে না রাখা পর্যন্ত বসবে না আর বসে পড়লে তাকে দাঁড়াবার নির্দেশ দেওয়া হইবে।
১৩১০. আবু সাঈদ খুদরী (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ
নাবী (সাঃআঃ) হইতে বর্ণিত। তিনি বলেন, তোমাদের কেউ যখন কোন জানাযা যেতে দেখবে, যদি সে তার সহযাত্রী না হয় তাহলে সে ততক্ষন দাঁড়িয়ে থাকবে, যতক্ষণ না তা চলে যায় অথবা নামিয়ে না রাখা হয়।
২৩/৪৯. অধ্যায়ঃ যে ব্যক্তি ইয়াহূদীর জানাযা দেখে দাঁড়ায়।
১৩১১. জাবির ইবনু আবদুল্লাহ (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, আমাদের পার্শ্ব দিয়ে একটি জানাযা যাচ্ছিল। নাবী (সাঃআঃ) তা দেখে দাঁড়িয়ে গেলেন। আমরাও দাঁড়িয়ে পড়লাম এবং নিবেদন করলাম, হে আল্লাহর রাসুল! এ তো ইয়াহূদীর জানাযা। তিনি বললেনঃ তোমরা যে কোন জানাযা দেখলে দাঁড়িয়ে পড়বে।
১৩১২. আবদুর রহমান ইবনু আবু লাইলাহ (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, সাহল ইবনু হুনাইফ ও কায়স ইবনু সাদ (রাদি.) কাদিসিয়াতে উপবিষ্ট ছিলেন, তখন লোকেরা তাদের সামনে দিয়ে একটি জানাযা নিয়ে যাচ্ছিল। (তা দেখে) তারা দাঁড়িয়ে গেলেন। তখন তাদের বলা হল, এটা তো এ দেশীয় জিম্মী ব্যক্তির (অমুসলিমের) জানাযা। তখন তারা বলিলেন, (একদা) নাবী (সাঃআঃ)-এর সামনে দিয়ে একটি জানাযা যাচ্ছিল। তখন তিনি দাঁড়িয়ে গেলে তাঁকে বলা হল, এটা তো এক ইয়াহুদীর জানাযা। তিনি এরশাদ করলেনঃ সে কি মানুষ নয়?
[১৯]. [১৯] একমাত্র ইসলামই মানুষের অধিকার প্রতিষ্ঠা করেছে। যারা আজ মানব অধিকার প্রতিষ্ঠার ফাঁকা বুলি আওড়াচ্ছে তারা দেখাক এরূপ দুএকটি দৃষ্টান্ত।
১৩১৩. See previous Hadith. ইবন আবু লাযলাহ (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, আমি সাহল এবং কায়স (রাদি.) এর সঙ্গে ছিলাম। তখন তারা দুজন বলিলেন,আমরা নাবী (সাঃআঃ)-এর সঙ্গে ছিলাম। জাকারিয়া (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) সূত্রে ইবনু আবু লাযলাহ (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) হইতে বর্ণনা করেন,আবু মাসউদ ও কায়স (রাদি.) জানাযা যেতে দেখলে দাড়িয়ে যেতেন।
২৩/৫০. অধ্যায়ঃ পুরুষরা জানাযা বহন করিবে, স্ত্রীলোকেরা নয়।
১৩১৪. আবু সাঈদ খুদরী (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ
আল্লাহর রাসুল (সাঃআঃ) বলেছেনঃ যখন জানাযা খাটে রাখা হয় এবং পুরুষরা তা কাঁধে বহন করে নেয়, তখন সে সৎ হলে বলিতে থাকে, আমাকে সামনে এগিয়ে নিয়ে যাও। আর সৎ না হলে সে বলিতে থাকে, হায় আফসোস! তোমরা এটাকে কোথায় নিয়ে যাচ্ছ? মানব জাতি ব্যতীত সবাই তার চিৎকার শুনতে পায়। মানুষ তা শুনলে জ্ঞান হারিয়ে ফেলত।
২৩/৫১. অধ্যায়ঃ জানাযার কাজ শীঘ্র সম্পাদন করা।
আনাস (রাদি.) বলেন, তোমরা (জানাযাকে) বিদায় দানকারী। অতএব, তোমরা তার সম্মুখে, পশ্চাতে এবং ডানে বামে চলবে। অন্যান্যরা বলেছেন, তার নিকট নিকট (চলবে)।
১৩১৫. আবু হুরাইরা (রাদি.) সূত্রে নাবী (সাঃআঃ) হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, তোমরা জানাযা নিয়ে দ্রুতগতিতে চলবে। কেননা, সে যদি পুণ্যবান হয়, তবে এটা উত্তম, যার দিকে তোমরা তাঁকে এগিয়ে দিচ্ছ আর যদি সে অন কিছু হয়, তবে সে একটি আপদ, যাকে তোমরা তোমাদের ঘাড় হইতে জলদি নামিয়ে ফেলছ।
২৩/৫২. অধ্যায়ঃ খাটিয়ায় [১] থাকাকালে মৃত ব্যক্তির উক্তিঃ আমাকে নিয়ে এগিয়ে চল
১৩১৬. আবু সাঈদ খুদরী (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, নাবী (সাঃআঃ) বলেনঃ যখন জানাযা (খাটিয়ায়) রাখা হয় এবং পুরুষ লোকেরা তা তাদের কাঁধে তুলে নেয়, সে পুণ্যবান হলে তখন বলিতে থাকে, আমাকে সামনে এগিয়ে দাও। আর পুণ্যবান না হলে সে আপন পরিজনকে বলিতে থাকে, হায় আফসোস! এটা নিয়ে তোমরা কোথায় যাচ্ছ? মানুষ জাতি ব্যতীত সবাই তার চিৎকার সুন্তে পায়। মানুষ যদি তা শুনতে পেত তবে অবশ্যই অজ্ঞান হয়ে যেত।
২৩/৫৩. অধ্যায়ঃ জানাযার সালাতে ইমামের পিছনে দু বা তিন কাতারে দাঁড়ানো।
১৩১৭. জাবির ইবনু আবদুল্লাহ (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ
আল্লাহর রাসুল (সাঃআঃ) (আবিসিনিয়ার বাদশাহ) নাজাশীর জানাযা আদায় করেন। আমি দ্বিতীয় অথবা তৃতীয় কাতারে ছিলাম।
২৩/৫৪. অধ্যায়ঃ জানাযার সালাতের কাতার।
১৩১৮. আবু হুরাইরা (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, নাবী (সাঃআঃ) তাহাঁর সাহাবীগণকে নাজাশীর মৃত্যু খবর শোনালেন, পরে তিনি সম্মুখে অগ্রসর হলেন এবং সাহাবীগন তাহাঁর পিছনে কাতারবন্দী হলে তিনি চার তাক্বীরে [২০] (জানাযার সালাত) আদায় করিলেন।
১৩১৯. শাবী (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, এমন এক সাহাবী যিনি নাবী (সাঃআঃ)-এর সঙ্গে উপস্থিত ছিলেন, তিনি আমাকে খবর দিয়েছেন যে, নাবী (সাঃআঃ) একটি পৃথক কবরের নিকট গমন করিলেন এবং লোকেদের কাতারবন্দী করে চার তাক্বীরের সঙ্গে (জানাযার সালাত) আদায় করিলেন। [শাইবানী (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) বলেন] আমি শাবী (রহমাতুল্লাহি আলাইহি)-কে জিজ্ঞেস করলাম, এ হাদীস আপনাকে কে বর্ণনা করিয়াছেন? তিনি বলিলেন, ইবনু আব্বাস (রাদি.)।
১৩২০. জাবির ইবনু আবদুল্লাহ (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, নাবী (সাঃআঃ) বললেনঃ আজ হাবাশা দেশের (আবিসিনিয়ার) একজন পুণ্যবান লোকের মৃত্যু হয়েছে, তোমরা এসো তাহাঁর জন্য (জানাযার) সালাত আদায় কর। বর্ণনাকারী বলেন, আমরা তখন কাতারবন্দী হয়ে দাঁড়ালে নাবী (সাঃআঃ) (জানাযার) সালাত আদায় করিলেন, আমরা ছিলাম কয়েক কাতার। আবু যুবাইর (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) জাবির (রাদি.) হইতে বর্ণনা করেন, জাবির (রাদি.) বলেছেন, আমি দ্বিতীয় কাতারে ছিলাম।
২৩/৫৫. অধ্যায়ঃ জানাযার সালাতে পুরুষদের সঙ্গে বালকদের কাতার।
১৩২১. ইবনু আব্বাস (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ
আল্লাহর রাসুল (সাঃআঃ) এক (ব্যক্তির) কবরের পার্শ্ব দিয়ে যাচ্ছিলেন, যাকে রাতের বেলা দাফন করা হয়েছিল। তিনি জিজ্ঞেস করিলেন, একে কখন দাফন করা হল? সাহাবীগন বলিলেন, গত রাতে। তিনি বললেনঃ তোমরা আমাকে জানালে না কেন? তাঁরা বলিলেন, আমরা তাঁকে রাতের আধারে দাফন করেছিলাম, তাই আপনাকে জাগানো পছন্দ করিনি। তখন তিনি (সেখানে) দাঁড়িয়ে গেলেন। আমরাও তাহাঁর পিছনে কাতারবন্দী হয়ে দাঁড়ালাম। ইবনু আব্বাস (রাদি.) বলেন, আমিও তাদের মধ্যে ছিলাম। তিনি তাহাঁর জানাযার সালাত আদায় করিলেন।
২৩/৫৬. অধ্যায়ঃ জানাযার সালাতের নিয়ম।
নাবী (সাঃআঃ) বলেছেনঃ যে ব্যক্তি জানাযার সালাত আদায় করিবে……। তিনি বলেন, তোমরা তোমাদের সঙ্গীর জন্য (জানাযার) সালাত আদায় কর। নাবী (সাঃআঃ) একে সালাত বলেছেন, (অথচ) এর মধ্যে রুকূ ও সাজদাহ নেই এবং এতে কথা বলা যায় না, এতে রয়েছে তাকবির্ ও তাসলিম। ইবনু উমর (রাদি.) পবিত্রতা ছাড়া (জানাযার) সালাত আদায় করিতেন না ও সূর্যোদয় ও সূর্যাস্তকালে এ সালাত আদায় করিতেন না। (তাকবীর কালে) দুহাত উত্তোলন করিতেন। হাসান (বাসরী) (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) বলেন, আমি সাহাবীগণকে এমন অবস্থায় পেয়েছি যে, তাঁদের জানাযার সালাতের (ইমামতের) জন্য তাঁকেই অধিকতর যোগ্য মনে করা হতো, যাকে তাঁদের ফরয সালাতসমূহের (ইমামতের) জন্য তাঁরা পছন্দ করিতেন। ঈদের দিন (সালাত কালে) বা জানাযার সালাত আদায় কালে কারো উযূ নষ্ট হয়ে গেলে, তিনি পানি খোঁজ করিতেন, তায়াম্মুম করিতেন না। কেউ জানাযার নিকট পৌঁছে, লোকদের সালাত রত দেখলে তাকবীর বলে তাতে শামিল হয়ে যেতেন। ইবনু মুসাইয়িব (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) বলেছেন, দিনে হোক বা রাতে, বিদেশ হোক কিংবা দেশে (জানাযার সালাতের) চার তাকবীরই বলবে। আনাস (রাদি.) বলেছেন, (প্রথম) এক তাকবীর হল সালাতের সূচনা। আল্লাহ তাআলা বলেছেনঃ “তাদের (মুনাফিকদের) কেউ মারা গেলে কক্ষনও তার জন্য সালাত (জানাযা) আদায় করিবে না” – (
আত-তাওবাহ ৮৪)। এ ছাড়াও জানাযার সালাতে রয়েছে একাধিক কাতার ও ইমামতের বিধান।
১৩২২. শাবী (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, এমন এক সাহাবী আমাকে খবর দিয়েছেন, যিনি তোমাদের নাবী (সাঃআঃ)-এর সঙ্গে একটি পৃথক কবরের পার্শ্ব দিয়ে যাচ্ছিলেন। তিনি (নাবী (সাঃআঃ) ) ইমামত করিলেন, আমরা তার পিছনে কাতারবন্দী [২১] হলাম এবং সালাত আদায় করলাম। [শাইবানী (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) বলেন,] আমরা (শাবীকে) জিজ্ঞেস করলাম, হে আবু আমর! আপনাকে এ হাদীস কে বর্ণনা করিয়াছেন? তিনি বলিলেন, ইবনু আব্বাস (রাদি.)।
[২১] জানাযার সালাতে তিন বা তার অধিক কাতার করা উত্তম এবং তিন কাতারের ফযীলতও বর্ণিত হয়েছে। (আহকামুল জানায়িয ১২৭-১২৮ পৃষ্ঠা, আলবানী)
২৩/৫৭. অধ্যায়ঃ জানাযার পিছনে পিছনে যাবার ফযীলত।
যায়দ ইবনু সাবিত (রাদি.) বলেন, জানাযার সালাত আদায় করলে তুমি তোমার দায়িত্ব পালন করলে। হুমাইদ ইবনু হিলাল (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) বলেন, জানাযার সালাতের পর (চলে যেতে চাইলে) অনুমতি গ্রহণের কথা আমার জানা নেই, তবে যে ব্যক্তি সালাত আদায় করে চলে যায়, সে এক কীরাত সওয়াব লাভ করে।
১৩২৩. নাফি (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, ইবনু উমর (রাদি.)-এর নিকট বর্ণনা করা হল যে, আবু হুরাইরা (রাদি.) বলে থাকেন, যিনি জানাযার পশ্চাতে গমন করবেন তিনি এক কীরাত সওয়াবর অধিকারী হইবেন। তিনি বলিলেন, আবু হুরাইরা (রাদি.) আমাদের বেশি বেশি হাদীস শোনান।
১৩২৪. See previous Hadith. নাফি (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) হইতে বর্ণিতঃ
তবে আয়েশা (রাদি.) এ বিষয়ে আবু হুরাইরা (রাদি.)-কে সমর্থন জানিয়েছেন। তিনি বলেছেন, আমিও আল্লাহর রাসুল (সাঃআঃ)-কে এ হাদীস বলিতে শুনিয়াছি। ইবনু উমর (রাদি.) বলিলেন, তা হলে তো আমরা অনেক কীরাত (সওয়াব) হারিয়ে ফেলেছি। فَرَّطْت এর অর্থ আল্লাহর আদেশ আমি খুইয়ে ফেলেছি।
২৩/৫৮. অধ্যায়ঃ দাফন হয়ে যাওয়া পর্যন্ত অপেক্ষা করা।
১৩২৫. আবু হুরাইরা (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, আল্লাহর রাসুল (সাঃআঃ) বলেছেনঃ যে ব্যক্তি মৃতের জন্য সালাত আদায় করা পর্যন্ত জানাযায় উপস্থিত থাকবে, তার জন্য এক কীরাত, আর যে ব্যক্তি মৃতের দাফন হয়ে যাওয়া পর্যন্ত উপস্থিত থাকবে তার জন্য দুকীরাত। জিজ্ঞেস করা হল দুকীরাত কী? তিনি বলিলেন, দুটি বিশাল পর্বত সমতুল্য (সওয়াব)।
২৩/৫৯. অধ্যায়ঃ জানাযার সালাতে বয়স্কদের সঙ্গে বালকদেরও অংশগ্রহণ করা।
১৩২৬. ইবনু আব্বাস (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ (সাঃআঃ) একটি কবরের নিকট আসলেন। সাহাবাগন বলিলেন, একে গত রাতে দাফন করা হয়েছে। ইবনু আব্বাস (রাদি.) বলেন, তখন আমরা আল্লাহর রাসুল (সাঃআঃ)-এর পিছনে কাতারবন্দী হলাম। অতঃপর তিনি তার জানাযার সালাত আদায় করিলেন।
২৩/৬০. অধ্যায়ঃ মুসল্লা (ঈদগাহ বা নির্ধারিত স্থানে) এবং মসজিদে জানাযার সালাত আদায় করা।
১৩২৭. আবু হুরাইরা (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, আল্লাহর রাসুল (সাঃআঃ) নাজাশীর মৃত্যুর দিনই আমাদের তাহাঁর মৃত্যুর খবর জানান এবং ইরশাদ করেনঃ তোমরা তোমাদের ভাই-এর (নাজাশীর) জন্য ক্ষমা প্রার্থনা কর। [২২]
১৩২৮. See previous Hadith. আবু হুরাইরা (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, নাবী (সাঃআঃ) তাঁদের নিয়ে মুসাল্লায় কাতার করিলেন, অতঃপর চার তাকবীর আদায় করিলেন।
১৩২৯.আবদুল্লাহ ইবনু উমর (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ
নাবী (সাঃআঃ)-এর নিকট ইয়াহূদীরা তাদের এক পুরুষ ও এক স্ত্রীলোককে হাযির করিল, যারা ব্যভিচার করেছিল। তখন তিনি তাদের উভয়কে রজমের (পাথর নিক্ষেপে হত্যা) নির্দেশ দেন। মসজিদের পাশে জানাযার স্থানের নিকটে তাদের দুজনকে রজম করা হল।
২৩/৬১. অধ্যায়ঃ কবরের উপরে মসজিদ বানানো ঘৃণিত কাজ।
হাসান ইবনু হাসান ইবনু আলী (রাদি.) –এর মৃত্যু হলে তাহাঁর স্ত্রী এক বছর যাবৎ তাহাঁর কবরের উপর কুববা (তাঁবু) তৈরী করে রাখেন, পরে তিনি তা উঠিয়ে নেন। তখন লোকেরা এই বলিতে আওয়াজ শুনলেন, ওহে! তারা কি হারানো বস্তু ফিরে পেয়েছে? অপর একজন জবাব দিল, না, বরং নিরাশ হয়ে ফিরে গেছে?
১৩৩০. আয়েশা (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, নাবী (সাঃআঃ) এর যে রোগে মৃত্যু হয়েছিল, সে রোগাবস্থায় তিনি বলেছিলেনঃ ইয়াহূদী ও নাসারা সম্প্রদায়ের প্রতি আল্লাহর অভিশাপ, তারা তাদের নাবীদের কবরকে মসজিদে পরিণত করেছে। আয়েশা (রাদি.) বলেন, সে আশঙ্কা না থাকলে তাহাঁর (নাবী (সাঃআঃ)-এর) কবরকে উন্মুক্ত রাখা হত, কিন্তু আমি আশঙ্কা করি যে, (উন্মুক্ত রাখা হলে) একে মসজিদে পরিণত করা হইবে।
২৩/৬২. অধ্যায়ঃ নিফাসের অবস্থায় [২৩] মারা গেলে তার জানাযার সালাত।
১৩৩১. সামুরা ইবনু জুনদাব (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, নাবী (সাঃআঃ)-এর পশ্চাতে আমি এমন এক স্ত্রীলোকের জানাযার সালাত আদায় করেছিলাম, যে নিফাসের [২৩] অবস্থায় মারা গিয়েছিল। তিনি (রাদি.) তার ( স্ত্রীলোকটির) মাঝ বরাবর দাঁড়িয়েছিলেন।
[২৩] প্রসূতি মহিলার প্রসব পরবর্তী রক্তস্রাবকে আরবীতে নিফাস বলা হয়।
২৩/৬৩. অধ্যায়ঃ মহিলা ও পুরুষের (জানাযার সালাতে) ইমাম কোথায় দাঁড়াবেন?
১৩৩২. সামুরা ইবনু জুনদাব (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, নাবী (সাঃআঃ)-এর পশ্চাতে আমি এমন এক স্ত্রীলোকের জানাযায় সালাত আদায় করেছিলাম, যে নিফাসের অবস্থায় মারা গিয়েছিলন। তিনি তার ( স্ত্রীলোকটির) মাঝ বরাবর দাঁড়িয়েছিলেন।
২৩/৬৪. অধ্যায়ঃ জানাযার সালাতে তাকবীর চারটি।
১৩৩৩. আবু হুরাইরা (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, আল্লাহর রাসুল (সাঃআঃ) নাজাশীর মৃত্যুর দিন তাহাঁর মৃত্যুর খবর জানালেন এবং সাহাবীবর্গকে সঙ্গে নিয়ে জানাযার সালাতের স্থানে গেলেন এবং তাদেরকে সারিবদ্ধ করে চার তাক্বীরে জানাযার সালাত আদায় করিলেন।
১৩৩৪. জাবির (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ
নাবী (সাঃআঃ) আসহামা নাজাশীর জানাযায় সালাত আদায় করিলেন, তাতে তিনি চার তাকবীর দিলেন। ইয়ায়ীদ ইবনু হারূন ও আবদুস্ সামাদ (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) সালীম (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) হইতে أَصْحَمَةَ শব্দটি উল্লেখ করেন।
২৩/৬৫. অধ্যায়ঃ জানাযার সালাতে সুরা ফাতিহা পাঠ করা।
হাসান (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) বলেছেন, শিশুর জানাযার সালাতে সুরা ফাতিহা তিলাওয়াত করিবে এবং দুআ পড়বে
اَللهُمَّ الجْعَلْهُ لَنَا فَرَطًا وَسَلَفًا وَأَجْرًا
আল্লাহুম্মাজ আলহু লানা ফারাতান ওয়া সালাকান ওয়া আজরান, “হে আল্লাহ! তাকে আমাদের জন্য অগ্রে প্রেরিত, অগ্রগামী এবং আমাদের পুরস্কার স্বরূপ গ্রহন কর।”
১৩৩৫. ত্বলহাহ ইবনু আবদুল্লাহ ইবনু আওফ (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, আমি ইবনু আব্বাস (রাদি.)-এর পিছনে জানাযার সালাত আদায় করলাম। তাতে তিনি সুরা ফাতিহা পাঠ করিলেন [২৪] এবং (সালাত শেষে) বলিলেন, (আমি সুরা ফাতিহা পাঠ করলাম) যাতে লোকেরা জানতে পারে যে, এটা সুন্নাত।
২৩/৬৬. অধ্যায়ঃ দাফনের পর কবরকে সম্মুখে রেখে (জানাযার) সালাত আদায়।
১৩৩৬. শাবী (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, আমাকে এমন এক সাহাবী বর্ণনা করিয়াছেন, যিনি নাবী (সাঃআঃ) –এর সঙ্গে একটি পৃথক কবরের পাশ দিয়ে যাচ্ছিলেন। তিনি তাঁদের ইমামতি করিলেন এবং তাঁরা তাহাঁর পিছনে জানাযার সালাত আদায় করিলেন। (বর্ণনাকারী বলেন) আমি শাবীকে জিজ্ঞেস করলাম, হে আবু আমর! আপনার নিকট এ হাদিস কে বর্ণনা করিয়াছেন? তিনি বলিলেন, ইবনু আব্বাস (রাদি.)।
১৩৩৭. আবু হুরাইরা (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ
কালো এক পুরুষ বা এক মহিলা মসজিদে ঝাড়ু দিত। সে মারা গেল। কিন্তু নাবী (সাঃআঃ) তার মৃত্যুর খবর জানতে পারেননি। একদা তার কথা উল্লেখ করে তিনি জিজ্ঞেস করিলেন, এ লোকটির কি হল? সাহাবীগণ বলিলেন, হে আল্লাহর রাসুল! সে তো মারা গেছে। তিনি বললেনঃ তোমরা আমাকে জানাওনি কেন? সে ছিল এমন এমন বলে তাঁরা তার ঘটনা উল্লেখ করিলেন। বর্ণনাকারী বলেন, তাঁরা তার মর্যাদাকে খাটো করে দেখলেন। নাবী (সাঃআঃ) বললেনঃ আমাকে তার কবর দেখিয়ে দাও। বর্ণনাকারী বলেন, তখন তিনি তার কবরের কাছে আসলেন এবং তার জানাযার সালাত আদায় করিলেন।
Leave a Reply