জানাজার নামাজে সূরা ফাতিহা পাঠ করা ও না করার হাদিস
জানাজার নামাজে সূরা ফাতিহা পাঠ করা ও না করার হাদিস>> সুনান তিরমিজি শরীফ এর মুল সুচিপত্র দেখুন
অধ্যায়ঃ ৮, অনুচ্ছেদঃ (৩৫-৪৯)=১৫টি
৩৫. অনুচ্ছেদঃ মৃত ব্যক্তিকে কবরে রাখার পূর্বে বসা
৩৬. অনুচ্ছেদঃ বিপদের মাঝে সাওয়াবের আশায় ধৈর্য ধরার ফাযীলাত
৩৭. অনুচ্ছেদঃ জানাযার নামাযের তাকবীর
৩৮. অনুচ্ছেদঃ জানাযার নামাযের দুআ
৩৯. অনুচ্ছেদঃ জানাযার নামাযে সূরা ফাতিহা পাঠ
৪০. অনুচ্ছেদঃ জানাযার নামাযের ধরণ ও মৃত ব্যক্তির জন্য সুপারিশ
৪১. অনুচ্ছেদঃ সূর্য উদয় এবং অস্ত যাওয়ার সময় জানাযার নামাজ আদায় করা মাকরূহ
৪২. অনুচ্ছেদঃ শিশুদের জন্য জানাযার নামাজ আদায় করা
৪৩. অনুচ্ছেদঃ ভূমিষ্ঠ হয়ে চিৎকার না করলে সেই শিশুর জানাযা আদায় না করা
৪৪. অনুচ্ছেদঃ জানাযার নামাজ মাসজিদে আদায় করা
৪৫. অনুচ্ছেদঃ ঈমাম সাহেব পুরুষ ও স্ত্রীলোকের জানাযার নামাজ আদায়ে কোথায় দাঁড়াবে?
৪৬. অনুচ্ছেদঃ শহীদ ব্যক্তির জানাযা আদায় না করা
৪৭. অনুচ্ছেদঃ কবরের উপর জানাযা আদায় করা
৪৮. অনুচ্ছেদঃ নাজাশীর জন্য রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ]-এর জানাযার নামাজ
৪৯. অনুচ্ছেদঃ জানাযার নামাযের ফাযীলাত
২৬. অনুচ্ছেদঃ জানাযার [লাশের] আগে আগে চলা
১০০৭. সালিম [রঃ] হইতে তার পিতা হইতে বর্ণীতঃ
তিনি বলেন, আমি রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ], আবু বাকর ও উমার [রাদি.]-কে জানাযার আগে আগে চলতে দেখেছি।
-সহিহ, ইবনি মা-জাহ [১৪৮২]।জানাজার নামাজে সূরা ফাতিহা ও নিয়ম – এই হাদীসটির তাহকিকঃ সহীহ হাদীস
১০০৮. সালিম ইবনি আবদুল্লাহ [রাদি.] হইতে তার পিতা হইতে বর্ণীতঃ
তিনি বলেন, আমি রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ], আবু বাকর ও উমার [রাদি.]-কে জানাযার আগে আগে চলতে দেখেছি।
জানাজার নামাজে সূরা ফাতিহা ও নিয়ম – এই হাদীসটির তাহকিকঃ সহীহ হাদীস
১০০৯. যু্হরী [রঃ] হইতে বর্ণীতঃ
তিনি বলেন, রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ], আবু বাকর ও উমার [রাদি.] জানাযার আগে আগে চলতেন। যুহরী বলেন, আমাকে সালিম [রঃ] জানিয়েছেন যে, তার পিতাও জানাযার আগে আগে যেতেন।
-সহিহ, ইবনি মা-জাহ। আনাস [রাদি.] হইতেও এই অনুচ্ছেদে হাদীস বর্ণিত আছে। আবু ঈসা বলেন, অনেকগুলো সূত্রে ইবনি উমার [রাদি.]-এর হাদীসটি বর্ণিত হয়েছে। যুহরী [রঃ] হইতে বর্ণিত যে, রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ] জানাযার আগে আগে যেতেন। সালিম [রঃ] বর্ণনা করেন যে, তার পিতা জানাযার আগে আগে যেতেন। হাদীস বিশারদগণ সকলেই [যুহরী হইতে বৰ্ণিত] মুরসাল হাদীসটিকে বেশি সহী্হ্ বলেছেন। ইবনিল মুবারাক বলেন, এই বিষয়ে ইবনি উয়াইনার হাদীসটি হইতে যুহরীর মুরসাল রিওয়ায়াতটি বেশি সহী্হ্। আমার মনে হয় ইবনি উআইনা হইতে ইবনি জুরাইয এটিকে গ্রহণ করিয়াছেন
আবূ্ ঈসা বলেন, এই হাদীসটি হাম্মাম ইবনি ইয়াহইয়া যিয়াদ হইতে এবং মানসূর, বাকর ও সুফিয়ান যুহরী হইতে, সালিমের বরাতে তার পিতা হইতে বর্ণনা করিয়াছেন।আলিমদের মাঝে জানাযার আগে আগে চলা প্রসঙ্গে মত পার্থক্য আছে। রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ]-এর একদল বিশেষজ্ঞ সাহাবী ও অপরাপর কিছু সংখ্যক আলিমের মতে জানাযার আগে আগে চলা উত্তম। এই মত ঈমাম শাফি ও আহমাদ [রঃ]-এর।আবু ঈসা বলেন, এই অনুচ্ছেদে আনাস [রাদি.]-এর বর্ণিত [পরবর্তী] হাদীস অরক্ষিত।জানাজার নামাজে সূরা ফাতিহা ও নিয়ম – এই হাদীসটির তাহকিকঃ সহীহ হাদীস
১০১০. আনাস ইবনি মালিক [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
তিনি বলেন, রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ], আবু বাকার, উমার এবং উসমান [রাদি.] জানাযার আগে আগে চলতেন।
-সহিহ, ইবনি মা-জাহ [১৪৮৩]। আবু ঈসা বলেন, আমি এই হাদীস সম্পর্কে মুহাম্মাদ আল-বুখারীকে প্রশ্ন করলে তিনি বলেন, মুহাম্মাদ ইবনি বাকার এ হাদীসের সনদে ভুল করিয়াছেন। মূলতঃ ইউনুস-যুহরীর সূত্রে হাদীসে বর্ণিত আছে যে, রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ], আবু বাকার ও উমার [রাদি.] জানাযার আগে আগে যেতেন। যুহরী বলেন, সালিম আমাকে অবহিত করিয়াছেন যে, তার পিতাও জানাযার আগে আগে যেতেন। মুহাম্মাদ আল-বুখারী বলেন, এটিই হলো বেশি সহিহ বর্ণনা। জানাজার নামাজে সূরা ফাতিহা ও নিয়ম – এই হাদীসটির তাহকিকঃ সহীহ হাদীস
অনুচ্ছেদঃ ২৭ জানাযার পিছে পিছে যাওয়া
১০১১. আবদুল্লাহ ইবনি মাসউদ [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
তিনি বলেছেন, আমরা রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ] -কে জানাযার পিছে পিছে যাওয়া প্রসঙ্গে প্রশ্ন করলাম। তিনি বলেন ঃ দৌড়ের চেয়ে কিছুটা ধীরে চলবে। যদি সে ভাল ব্যক্তি হয় তাহলে তোমরা তাকে তাড়াতাড়ি তার জায়গায় পৌছে দিলে। সে মন্দ ব্যক্তি হলে তাড়াতাড়ি এক জাহান্নামীকে বিতাড়িত করা হল। লাশের অনুসরণ করা হয়। লাশ কারো অনুসরণ করে না। যে ব্যক্তি লাশের আগে আগে চলে সে আমাদের দলভুক্ত নয়।
যঈফ, ইবনি মাজাহ হাদীস নং-[১৪৮৪], আবু ঈসা বলেনঃ ইবনি মাসউদ [রাদি.] হইতে বর্ণিত হাদীসটি আমরা শুধু উপরোক্ত সূত্রেই জেনেছি। মুহাম্মাদ ইবনি ইসমাঈল আল-বুখারী আবু মাযিদ বর্ণিত এ হাদীসটিকে তার কারণে যঈফ বলেছেন। ইয়াহইয়াকে আবু মাযিদ প্রসঙ্গে প্রশ্ন করা হলে তিনি মন্তব্য করেন, একটি পাখি উড়ে এসে আমাদেরকে হাদীস শুনিয়েছে [রাবী অপরিচিত]। রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ] -এর বিশেষজ্ঞ সাহাবী ও অপরাপর আলিম এ হাদীস অনুসারে আমল করিয়াছেন। তাহাদের মতে জানাযার পিছে পিছে যাওয়াই অতিশয় ভাল। ঈমাম সাওরী ও ইসহাক [রঃ]-এর এ অভিমত। আবু মাযিদ একজন অখ্যাত ও অপরিচিত রাবী। ইবনি মাসউদ [রাদি.] সূত্রে তার দুটি হাদীস বর্ণিত আছে। তাইমুল্লাহ গোত্রের ঈমাম ইয়াহইয়া বিশ্বস্ত রাবী। তার উপনাম আবুল হারিস। তাকে ইয়াহইয়া আল-জাবির এবং ইয়াহইয়া আল-মুজবিরও বলা হয়। তিনি ছিলেন কূফার বাসিন্দা। শুবা, সুফিয়ান সাওর, আবুল আহওয়াস ও সুফিয়ান ইবনি উয়াইনা তার সূত্রে হাদীস বর্ণনা করিয়াছেন। জানাজার নামাজে সূরা ফাতিহা ও নিয়ম – এই হাদীসটির তাহকিকঃ দুর্বল হাদীস
অনুচ্ছেদঃ ২৮ সাওয়ার হয়ে জানাযার পিছে পিছে চলা মাকরূহ
১০১২. সাওবান [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
তিনি বলেন, একটি জানাযায় উপস্থিত হওয়ার উদ্দেশে আমরা রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ] -এর সাথে বের হলাম। তিনি কিছু ব্যক্তিকে আরোহী অবস্থায় দেখে বলিলেন ; তোমাদের কি শরম নেই? আল্লাহ তাআলার ফেরেশতাগণ পায়ে হেঁটে যাচ্ছেন আর তোমরা পশুর পিঠে সাওয়ার হয়ে যাচ্ছো!
যঈফ, ইবনি মাজাহ হাদীস নং-[১৪৮০], এই অনুচ্ছেদে মুগীরা ইবনি শুবা ও জাবির ইবনি সামুরা [রাদি.] হইতেও হাদীস বর্ণিত আছে। আবু ঈসা বলেন, সাওবান [রাদি.]-এর হাদীসটি মাওকূফরূপেও বর্ণিত আছে। মুহাম্মাদ [রঃ] বলেন, মাওকূফ বর্ণনাটিই অনেক বেশী সহীহ। জানাজার নামাজে সূরা ফাতিহা ও নিয়ম – এই হাদীসটির তাহকিকঃ দুর্বল হাদীস
২৯. অনুচ্ছেদঃ জানাযায় সাওয়ার হয়ে যাওয়ার অনুমতি প্রসঙ্গে
১০১৩. সিমাক ইবনি হারব [রঃ] হইতে বর্ণীতঃ
তিনি বলেন, জাবির ইবনি সামুরা [রাদি.]-কে আমি বলিতে শুনেছিঃ আমরা ইবনিদ দাহ্দাহ-এর জানাযাতে রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ]-এর সাথে উপস্থিত ছিলাম। রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ] তাহাঁর ঘোড়ার পিঠে সাওয়ার অবস্থায় ছিলেন। আমরা তাহাঁর চারপাশে ছিলাম এবং সেটি আস্তে আস্তে এগিয়ে যাচ্ছিলো এবং ঘোড়ার চলার তালে তালে তিনি দুলছিলেন।
-সহীহ, আল আহকাম [৭৫], মুসলিম। জানাজার নামাজে সূরা ফাতিহা ও নিয়ম – এই হাদীসটির তাহকিকঃ সহীহ হাদীস
১০১৪. জাবির ইবনি সামুরা [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
ইবনিদ দাহদাহ-এর জানাযায় রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ] পায়ে হেটে যান, কিন্তু ফিরে আসেন ঘোড়ার পিঠে সাওয়ার হয়ে।
-সহীহ, দেখুন পূর্বের হাদীস। এই হাদীসটিকে আবু ঈসা হাসান সহিহ বলেছেন। জানাজার নামাজে সূরা ফাতিহা ও নিয়ম – এই হাদীসটির তাহকিকঃ সহীহ হাদীস
৩০. অনুচ্ছেদঃ জানাযা [লাশ] নিয়ে তাড়াতাড়ি এগিয়ে যাওয়া
১০১৫. আবু হুরাইরা [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
নাবী [সাঃআঃ] বলেনঃ জানাযা [লাশ] নিয়ে তোমরা তাড়াতাড়ি এগিয়ে চল। কেননা, সে যদি ভাল লোক হয় তাহলে তোমরা উত্তম পরিণতির দিকে তাকে এগিয়ে দিলে। আর যদি সে খারাপ লোক হয়ে থাকে তাহলে তাকে তোমাদের গর্দান হইতে তাড়াতাড়ি নামিয়ে রাখলে।
-সহীহ, ইবনি মা-জাহ [১৪৭৭], বুখারী, মুসলিম। আবু বাকরা [রাদি.] হইতেও এই অনুচ্ছেদে হাদীস বর্ণিত আছে। আবু হুরাইরা [রাদি.] হইতে বর্ণিত হাদীসটিকে আবু ঈসা হাসান সহী্হ্ বলেছেন। জানাজার নামাজে সূরা ফাতিহা ও নিয়ম – এই হাদীসটির তাহকিকঃ সহীহ হাদীস
৩১. অনুচ্ছেদঃ উহুদ যুদ্ধের শহীদগণ ও হামযা [রাদি.] প্রসঙ্গে আলোচনা
১০১৬. আনাস ইবনি মালিক [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
তিনি বলেন, রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ] উহুদের যুদ্ধের দিন হামযা [রাদি.]-এর লাশের নিকটে এলেন। সেখানে দাঁড়িয়ে তিনি দেখিতে পেলেন, তার শরীরের অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ কেটে তাকে বিকৃত করা হয়েছে। তিনি বললেনঃ [হামযার বোন] সাফিয়্যা তাহাঁর মনে আঘাত পাবে এমন ভয় যদি না হতো তাহলে আমি এই অবস্থায়ই তাহাঁর লাশ ছেড়ে যেতাম। তাকে হিংস্র জীবজন্তু খেয়ে ফেলত এবং সে এদের পেট হইতেই কিয়ামাতের দিন বেরিয়ে আসত। বর্ণনাকারী বলেন, এরপর তিনি একটি সাদা-কালো ডোরাযুক্ত চাদর নিয়ে আসতে বলিলেন এবং সেটা দিয়ে তার কাফন পরান। তা এত ছোট ছিল যে, মাথার দিকে টানলে তার দুপা বেরিয়ে যেত, আবার তার পায়ের দিকে টানলে তার মাথা বেরিয়ে যেত। বর্ণনাকারী বলেন, নিহইতের পরিমাণ ছিল অনেক বেশি কিন্তু কাপড় কম ছিল। তাই এক কাপড়ে একজন, দুইজন, এমনকি তিনজনকেও একসাথে কাফন পরানো হয় এবং একই কবরে দাফন করা হয়। রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ] প্রশ্ন করিতেনঃ এদের মধ্যে কার বেশি কুরআন জানা আছে? তাকেই তিনি কিবলার সম্মুখে এগিয়ে রাখতেন। রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ] লাশগুলোর দাফন সম্পন্ন করিলেন, কিন্তু তাহাদের জানাযা আদায় করেননি।
-সহীহ, আল আহকাম [৫৯, ৬০]। আনাস [রাদি.] হইতে বর্ণিত হাদীসটিকে আবু ঈসা হাসান গারীব বলেছেন। আমরা আনাস [রাদি.]-এর এই হাদীস সম্পর্কে উপরোক্ত সূত্র ব্যতীত আর কোন সূত্রে জানতে পারিনি। হাদীসে বর্ণিত নামিরা অর্থ পুরাতন কাপড়। উসামা ইবনি যাইদের বর্ণনা সম্পর্কে মতভেদ আছে। লাইস ইবনি সাদ বৰ্ণনা করিয়াছেন ইবনি শিহাব হইতে, তিনি আব্দুর রাহমান ইবনি কাব ইবনি মালিক হইতে, তিনি জাবির ইবনি আব্দুল্লাহ ইবনি যাইদ হইতে, আর মামার বর্ণনা করিয়াছেন যুহরী হইতে, তিনি আব্দুল্লাহ ইবনি সালাবা হইতে, তিনি জাবির হইতে। এই হাদীসটি আনাস [রাদি.] হইতে যুহরীর সূত্রে উসামা [রাদি.] ব্যতীত অন্য কেউ বর্ণনা করেননি। লাইস ইবনি সাদ-ইবনি শিহাব হইতে, তিনি আবদুর রাহমান ইবনি কাব হইতে, তিনি জাবির ইবনি আবদুল্লাহ হইতে এই সূত্রে বর্ণিত হাদীস সম্বন্ধে মুহাম্মাদ বুখারীকে আমি প্রশ্ন করলে তিনি বলেন, এই সূত্রটি বেশি সহিহ। জানাজার নামাজে সূরা ফাতিহা ও নিয়ম – এই হাদীসটির তাহকিকঃ সহীহ হাদীস
৩২. অনুচ্ছেদঃ [জানাযায় শারীক হওয়া]
১০১৭. আনাস ইবনি মালিক [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
তিনি বলেন, রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ] অসুস্থকে দেখিতে যেতেন, জানাযায় উপস্থিত হইতেন, গাধার পিঠে সাওয়ার হইতেন এবং কেনা গোলামের দাওয়াতও ক্ববুল করিতেন। বানূ কুরাইযার [যুদ্ধের] দিন তিনি একটি গাধার পিঠে সাওয়ার ছিলেন। এর লাগাম ও গদি ছিল খেজুর গাছের বাকলের তৈরী।
যঈফ, ইবনি মাজাহ হাদীস নং-[৪১৭৮]। আবু ঈসা বলেন, আমরা এ হাদীসটি শুধু মুসলিম হইতে আনাস [রাদি.] সূত্রেই জেনেছি। কিন্তু মুসলিম আল-আওয়ার হাদীস শাস্ত্রে যঈফ। তার পিতার নাম কাইসান আল-মুলাঈ। তার সম্পর্কে সমালোচনা করা হয়েছে। শুবা এবং সুফিয়ান মুলাঈ তার নিকট হইতে হাদীস বর্ণনা করিয়াছেন। জানাজার নামাজে সূরা ফাতিহা ও নিয়ম – এই হাদীসটির তাহকিকঃ দুর্বল হাদীস
৩৩. অনুচ্ছেদঃ [রসুলুল্লাহ সাঃআঃ]-এর মৃত্যুর স্থান ও দাফনের স্থান]
১০১৮. আইশা [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ]-এর মৃত্যুর পর তার দাফন সম্পর্কে সাহাবীগণের মাঝে মতের অমিল দেখা দেয়। আবু বাকার [রাদি.] বলিলেন, রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ]-এর নিকট হইতে আমি কিছু শুনিয়াছি, তা আমি ভুলিনি। তিনি বলেছেনঃ যে স্থানে আল্লাহ তাআলা তাহাঁর নাবীকে দাফন হওয়ার ইচ্ছা করেন সে স্থানেই তাহাঁর মৃত্যু দেন। তোমরা তাঁকে তাহাঁর শয্যাস্থানে দাফন কর।
-সহিহ, আল আহকাম [১৩৭, ১৩৮], মুসলিম, মুখতাসার শামায়িল [৩২৬]। এই হাদীসটিকে আবু ঈসা গারীব বলেছেন। স্মরণশক্তির দিক হইতে আবদুর রাহমান ইবনি আবু বাকারকে দুর্বল বলা হয়েছে। আরো কয়েকটি সূত্রে হাদীসটি বর্ণিত আছে। ইবনি আব্বাস [রাদি.] এই হাদীসটিকে আবু বাকার [রাদি.]-এর সূত্রে রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ] হইতে বর্ণনা করিয়াছেন।জানাজার নামাজে সূরা ফাতিহা ও নিয়ম – এই হাদীসটির তাহকিকঃ সহীহ হাদীস
৩৪. অনুচ্ছেদঃ [মৃত ব্যক্তির উত্তম গুণ বর্ণনা করা]
১০১৯. ইবনি উমার [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
নাবী [সাল্লালাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম] বলেছেনঃ তোমরা তোমাদের মৃত লোকদের ভালো দিকগুলো আলোচনা কর এবং তাহাদের খারাপ দিকগুলো আলোচনা থেকে ক্ষান্ত হও।
যঈফ, মিশকাত [১৬৭৮], রাওযুন্ নাযীর [৪৮২] আবু ঈসা বলেন, এ হাদীসটি গারীব। আমি মুহাম্মাদ [বুখারী]-কে বলিতে শুনিয়াছি যে, ইমরান ইবনি আনাস আল-মাক্কী একজন উপেক্ষিত রাবী অর্থাৎ তার বর্ণিত হাদীস অগ্রাহ্য। কোন কোন রাবী এ হাদীসটি আতা হইতে আইশা [রাদি.] সূত্রেও বর্ণনা করিয়াছেন। ইমরান ইবনি আবী আনাস আল-মিসরী এই ইমরান ইবনি আনাস আল-মাক্কীর তুলনায় বেশী উল্লেখযোগ্য ও বিশ্বাসযোগ্য।জানাজার নামাজে সূরা ফাতিহা ও নিয়ম – এই হাদীসটির তাহকিকঃ দুর্বল হাদীস
৩৫. অনুচ্ছেদঃ মৃত ব্যক্তিকে কবরে রাখার পূর্বে বসা
১০২০. উবাদা ইবনি সামিত [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
তিনি বলেন, কোন লাশের সাথে যদি রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ] যেতেন তাহলে কবরে তা না রাখা পর্যন্ত তিনি বসতেন না। একদা এক ইয়াহুদী পণ্ডিত তাকে বলিল, হে মুহাম্মাদ! আমরাও এরূপ করি। এরপর হইতে রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ] [মৃত ব্যক্তিকে কবরে রাখার] আগেই বসতে লাগলেন এবং বললেনঃ তোমরা তাহাদের বিপরীত কর।
-হাসান, ইবনি মা-জাহ [১৫৪৫]। এ হাদীসটিকে আবু ঈসা গারীব বলেছেন। হাদীস শাস্ত্রে বিশ্র ইবনি রাফি খুব একটা শক্তিশালী নন। জানাজার নামাজে সূরা ফাতিহা ও নিয়ম – এই হাদীসটির তাহকিকঃ হাসান হাদীস
৩৬. অনুচ্ছেদঃ বিপদের মাঝে সাওয়াবের আশায় ধৈর্য ধরার ফাযীলাত
১০২১. আবু সিনান [রঃ] হইতে বর্ণীতঃ
তিনি বলেন, আমার ছেলে সিনানকে আমি দাফন করলাম। কবরের কিনারায় আবু তালহা আল-খাওলানী [রঃ] বসা অবস্থায় ছিলেন। কবর হইতে আমি যখন উঠে আসতে চাইলাম তখন আমার হাত ধরে তিনি বলিলেন, হে আবু সিনান! তোমাকে কি আমি সুসংবাদ দিব না? আমি বললাম, অবশ্যই দিন। তিনি বলিলেন, আবু মূসা আল-আশআরী [রাদি.] হইতে যাহ্হাক ইবনি আবদুর রাহমান ইবনি আর্যাব [রঃ] আমাকে বর্ণনা করিয়াছেন যে, রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলেছেনঃ কোন বান্দার কোন সন্তান মারা গেলে তখন আল্লাহ্ তাআলা তাহাঁর ফেরেশতাহাদের প্রশ্ন করেন, তোমরা আমার বান্দার সন্তানকে কি ছিনিয়ে আনলে? তারা বলে, হ্যাঁ। পুনরায় আল্লাহ তাআলা প্রশ্ন করেন, তোমরা তার হৃদয়ের টুকরাকে ছিনিয়ে আনলে? তারা বলে, হ্যাঁ। পুনরায় তিনি প্রশ্ন করেন, তখন আমার বান্দা কি বলেছে? তারা বলে, সে আপনার প্রতি প্রশংসা করেছে এবং
إِنَّا ِلِلَّٰهِ وَإِنَّا إِلَيْهِ رَاجِعُونَ
ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন
পাঠ করেছে। আল্লাহ্ তাআলা বলেন, জান্নাতের মধ্যে আমার এই বান্দার জন্য একটি ঘর তৈরী কর এবং তার নাম রাখ “বাইতুল হাম্দ” বা প্রশংসালয়।
-হাসান, সহীহাহ [১৪০৮]।এই হাদীসটিকে আবু ঈসা হাসান গারীব বলেছেন। জানাজার নামাজে সূরা ফাতিহা ও নিয়ম – এই হাদীসটির তাহকিকঃ হাসান হাদীস
৩৭. অনুচ্ছেদঃ জানাযার নামাযের তাকবীর
১০২২. আবু হুরাইরা [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
নাবী [সাঃআঃ] নাজাশীর জন্য চার তাকবীরের মাধ্যমে [গায়বী] জানাযার নামাজ আদায় করেন।
-সহীহ, ইবনি মা-জাহ [১৫৩৪], বুখারী, মুসলিম। ইবনি আব্বাস, ইবনি আবী আওফা, জাবির, আনাস ও ইয়াযীদ ইবনি সাবিত [রাদি.] হইতেও এই অনুচ্ছেদে হাদীস বর্ণিত আছে। আবু ঈসা বলেন, ইয়াযীদ ইবনি সাবিত [রাদি.] যাইদ ইবনি সাবিত [রাদি.]-এর বড় ভাই। বদরের যুদ্ধে তিনি অংশ গ্রহণ করেছিলেন কিন্তু যাইদ [রাদি.] অংশ গ্রহণ করেননি। আবু হুরাইরা [রাদি.] হইতে বর্ণিত হাদীসটিকে আবু ঈসা হাসান সহিহ বলেছেন। এই হাদীস অনুযায়ী রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ]-এর বেশিরভাগ সাহাবী ও অপরাপর আলিমের মতে চার তাকবীরে জানায়ার নামাজ আদায় করিতে হইবে। এই মত ঈমাম সুফিয়ান সাওরী, মালিক ইবনি আনাস, ইবনিল মুবারাক, শাফিঈ, আহমাদ ও ইসহাকের। জানাজার নামাজে সূরা ফাতিহা ও নিয়ম – এই হাদীসটির তাহকিকঃ সহীহ হাদীস
১০২৩. আবদুর রাহমান ইবনি আবী লাইলা [রঃ] হইতে বর্ণীতঃ
তিনি বলেন, আমাদের জানাযাগুলোতে যাইদ ইবনি আরকাম [রাদি.] চারবার তাকবীর দিতেন। কিন্তু এক জানাযায় তিনি পাঁচবার তাকবীর দিলেন। তাকে এই বিষয়ে আমরা প্রশ্ন করলে তিনি বলিলেন, রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ] পাঁচ তাকবীরও দিতেন।
-সহীহ, ইবনি মা-জাহ [১৫০৫], মুসলিম। যাইদ ইবনি আরকাম [রাদি.] হইতে বর্ণিত হাদীসটিকে আবু ঈসা হাসান সহিহ বলেছেন। এই মত গ্রহণ করিয়াছেন রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ]-এর কিছু সাহাবী ও অপরাপর আলিমগণ। তাহাদের মতে জানাযা নামাযে পাঁচবার তাকবীর পাঠ করিতে হইবে। ঈমাম আহমাদ ও ইসহাক [রঃ] বলেন, জানাযার নামাযে যদি ঈমাম সাহেব পাঁচবার তাকবীর পাঠ করেন তবে মুক্তাদীদেরকে তার অনুসরণ করিতে হইবে।জানাজার নামাজে সূরা ফাতিহা ও নিয়ম – এই হাদীসটির তাহকিকঃ সহীহ হাদীস
৩৮. অনুচ্ছেদঃ জানাযার নামাযের দুআ
১০২৪. আবু ইবরাহীম আল-আশহালী [রঃ] হইতে তার পিতা হইতে বর্ণীতঃ
তিনি বলেন, রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ] জানাযার নামাজ পড়তেন তখন এই দুআ পাঠ করিতেনঃ
اللَّهُمَّ اغْفِرْ لِحَيِّنَا وَمَيِّتِنَا وَشَاهِدِنَا وَغَائِبِنَا وَصَغِيرِنَا وَكَبِيرِنَا وَذَكَرِنَا وَأُنْثَانَا
আল্লা-হুম্মাগফির লিহায়্যিনা ওয়া মায়্যিতিনা ওয়া শা-হিদিনা ওয়া গা-য়িবিনা ওয়া সগীরিনা ওয়া কাবীরিনা ওয়া যাকারিনা ওয়া উনসা-না।
“হে আল্লাহ! আপনি আমাদের মধ্যকার জীবিত, মৃত, উপস্থিত, অনুপস্থিত, ছোট, বড় এবং পুরুষ ও মহিলা সবাইকেই মাফ করুন”। ইয়াহইয়া বলেন, আবু হুরাইরা [রাদি.]-এর সূত্রে রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ] হইতে আমাকে আবু সালামা ইবনি আবদুর রাহমান একই রকম হাদীস বর্ণনা করিয়াছেন। তবে এই বর্ণনাতে আরো আছেঃ
اللَّهُمَّ مَنْ أَحْيَيْتَهُ مِنَّا فَأَحْيِهِ عَلَى الإِسْلاَمِ وَمَنْ تَوَفَّيْتَهُ مِنَّا فَتَوَفَّهُ عَلَى الإِيمَانِ
আল্লা-হুম্মা মান আহ্ইয়াইতাহু মিন্না ফা’আহয়িহি ‘আলাল-ইসলাম। ওয়ামান তাওয়াফ্ফাইতাহু মিন্না ফাতাওয়াফফাহু ‘আলাল ঈমান।
“হে আল্লাহ! আমাদের মাঝে যে ব্যক্তিকে আপনি বাঁচিয়ে রাখেন তাকে ইসলামের উপর বাঁচিয়ে রাখুন এবং যে ব্যক্তিকে মৃত্যু দেন তাকে ঈমানের সহিত মৃত্যু দান করুন”।
-সহীহ, ইবনি মা-জাহ [১৪৯৮] আবদুর রাহমান ইবনি আওফ, আবু কাতাদা, জাবির ও আওফ ইবনি মালিক [রাদি.] হইতেও এই অনুচ্ছেদে হাদীস বর্ণিত আছে। আবু ইবরাহীমের পিতা হইতে বর্ণিত হাদীসটিকে আবু ঈসা হাসান সহিহ বলেছেন। এই হাদীসটিকে মুরসাল হিসেবে ইয়াহইয়া ইবনি আবী কাসীর-আবু সালামা ইবনি আবদুর রাহমানের সূত্রে রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ] হইতে হিশাম আদ-দাস্তাওয়াঈ ও আলী ইবনিল মুবারাক মুর্সাল হিসেবে বর্ণনা করিয়াছেন। ইকরিমা ইবনি আম্মার এটিকে ইয়াহইয়া ইবনি আবী কাসীর-আবু সালামা হইতে আইশা [রাদি.]-এর সূত্রে রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ] হইতে বর্ণনা করিয়াছেন। ইকরিমা ইবনি আম্মারের রিওয়ায়াত সংরক্ষিত নয়। ইয়াহইয়ার সূত্রে হাদীস বর্ণনার ক্ষেত্রে অনেক সময় তিনি বিভ্রান্তিতে পতিত হন। ইয়াহইয়া ইবনি আবী কাসীর হইতে আব্দুল্লাহ ইবনি আবী কাতাদার বরাতে তার পিতার সূত্রে ও নাবী [সাঃআঃ] হইতে হাদীসটি বর্ণিত আছে।আবু ঈসা বলেন, মুহাম্মদ আল-বুখারী বলেছেন, ইয়াহইয়া ইবনি আবী কাসীর-আবু ইবরাহীম আল-আশহালী হইতে তার পিতার সূত্রে বর্ণিত রিওয়ায়াতটি এই অনুচ্ছেদে সবচেয়ে বেশি সহিহ। আমি তাকে আবু ইবরাহীম আল-আশহালীর নাম জিজ্ঞেস করলে তিনি তা বলিতে পারেননি।জানাজার নামাজে সূরা ফাতিহা ও নিয়ম – এই হাদীসটির তাহকিকঃ সহীহ হাদীস
১০২৫. আওফ ইবনি মালিক [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
তিনি বলেন, এক মৃত ব্যক্তির জানাযার নামাজ আদায় কালে আমি রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ]-কে যে দুআ পাঠ করিতে শুনিয়াছি আমি তার বাক্যগুলি মনে রেখেছিঃ
اللَّهُمَّ اغْفِرْ لَهُ وَارْحَمْهُ وَاغْسِلْهُ بِالْبَرَدِ وَاغْسِلْهُ كَمَا يُغْسَلُ الثَّوْبُ
আল্ল-হুম্মাগ্ফির্লাহূ ওয়ার্হাম্হু ওয়াগ্সিল্হু বিমা বিল বারাদি ওয়াগ্সিল্হু কামা ইয়ুগসালুছ ছাওবু
“হে আল্লাহ! তাকে ক্ষমা করুন, তাকে দয়া করুন এবং তাকে এমনভাবে [আপনার দয়ার] শিশির বিন্দু দিয়ে ধৌত করুন যেভাবে কাপড় ধোয়া হয়”।
-সহীহ, ইবনি মা-জাহ [১৫০০] মুসলিম। এই হাদীসটিকে আবু ঈসা হাসান সহিহ বলেছেন। মুহাম্মাদ ইবনি ইসমাঈল বুখারী [রঃ] এটাকেই এই অনুচ্ছেদের সবচেয়ে বেশি সহিহ হাদীস বলেছেন।জানাজার নামাজে সূরা ফাতিহা ও নিয়ম – এই হাদীসটির তাহকিকঃ সহীহ হাদীস
৩৯. অনুচ্ছেদঃ জানাযার নামাযে সূরা ফাতিহা পাঠ
১০২৬. ইবনি আব্বাস [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
জানাযার নামাযে রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ] সূরা ফাতিহা পাঠ করিয়াছেন।
-সহীহ, ইবনি মা-জাহ [১৪৯৫], বুখারী। উম্মু শারীক [রাদি.] হইতেও এই অনুচ্ছেদে হাদীস বর্ণিত আছে। আবু ঈসা বলেন, ইবনি আব্বাস [রাদি.] হইতে বর্ণিত হাদীসের সনদ খুব একটা মজবুত নয়। বর্ণনাকারী ইবরাহীম ইবনি উসমান হচ্ছেন আবু শাইবা আল-ওয়াসিতী। তিনি প্রত্যাখ্যাত বর্ণনাকারী অর্থাৎ তার বর্ণিত হাদীস প্রত্যাখ্যাত। ইবনি আব্বাস [রাদি.]-এর বক্তব্য হিসাবে বর্ণিত রিওয়ায়াতটিই সহিহ। তিনি বলেন, জানাযার নামাযে সূরা ফাতিহা পাঠ করা সুন্নাত। জানাজার নামাজে সূরা ফাতিহা ও নিয়ম – এই হাদীসটির তাহকিকঃ সহীহ হাদীস
১০২৭. তালহা ইবনি আবদুল্লাহ ইবনি আওফ [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
ইবনি আব্বাস [রাদি.] এক মৃত ব্যক্তির জানাযা আদায় করিলেন এবং তাতে সূরা ফাতিহা পাঠ করিলেন। তাকে এ প্রসঙ্গে আমি প্রশ্ন করলে তিনি বলিলেন, এটা সুন্নাত অথবা সুন্নাতের পূর্ণতা দানকারী।
-সহিহ, দেখুন পূর্বের হাদীস। এ হাদীসটিকে আবু ঈসা হাসান সহিহ বলেছেন। এ হাদীস অনুযায়ী রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ]– এর একদল বিশেষজ্ঞ সাহাবী ও অপরাপর আলিমগণ আমল করিয়াছেন। জানাযার নামাযে প্রথম তাকবীর পাঠ করার পর সূরা ফাতিহা পাঠকে তারা পছন্দ করিয়াছেন। এই মত ঈমাম শাফি, আহমাদ ও ইসহাকেরও। অপর একদল বিশেষজ্ঞ আলিম বলেছেন, জানাযার নামাযে সূরা ফাতিহা পাঠ করিবে না। কেননা, এটা হচ্ছে আল্লাহ্র প্রশংসা, নাবীর প্রতি দরূদ পাঠ এবং মৃতের জন্য দুয়া করা। এই মত সুফিয়ান সাওরী ও কুফাবাসী আলিমদের। রাবী তালহা ইবনি উবাইদুল্লাহ ইবনি আউফ হলেন আব্দুল রাহমান ইবনি আউফের ভ্রাতুষ্পুত্র। তার নিকট হইতে যুহরী হাদীস বর্ণনা করিয়াছেন। জানাজার নামাজে সূরা ফাতিহা ও নিয়ম – এই হাদীসটির তাহকিকঃ সহীহ হাদীস
৪০. অনুচ্ছেদঃ জানাযার নামাযের ধরণ ও মৃত ব্যক্তির জন্য সুপারিশ
১০২৮. মারসাদ ইবনি আবদুল্লাহ আল-ইয়াযানী [রঃ] হইতে বর্ণীতঃ
তিনি বলেন, যখন মালিক ইবনি হুবাইরা [রাদি.] জানাযার নামাজ আদায় করিতেন তখন লোকজনের উপস্থিতি অল্প হলে তাহাদেরকে তিনি তিন সারিতে ভাগ করিতেন। তারপর তিনি বলিতেন, রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলেছেনঃ যে ব্যক্তির জানাযার নামাজ তিন কাতার লোক আদায় করেছে তার জন্য [জান্নাত] অবধারিত হয়েছে।
-হাসান, আহকামুল জানায়িয [১২৮]।আইশা, উম্মু হাবীবা, আবু হুরাইরা ও মাইমূনা [রাদি.] হইতেও এ অনুচ্ছেদে হাদীস বর্ণিত আছে। মালিক ইবনি হুবাইরা হইতে বর্ণিত হাদীসটিকে আবু ঈসা হাসান বলেছেন। অনেক বর্ণনাকারী মুহাম্মদ ইবনি ইসহাকের সূত্রে এ হাদীসটি বর্ণনা করিয়াছেন। ইব্রাহীম ইবনি সাদ ও মুহাম্মদ ইবনি ইসহাক হইতে হাদীসটি বর্ণনা করিয়াছেন। কিন্তু তিনি মারসাদ ও মালিক ইবনি হুরাইরার মাঝে আরও একজন বর্ণনাকারী উল্লেখ করিয়াছেন। পূর্বোক্ত বর্ণনাই আমার মতে বেশী সহিহ। জানাজার নামাজে সূরা ফাতিহা ও নিয়ম – এই হাদীসটির তাহকিকঃ হাসান হাদীস
১০২৯. আইশা [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলেছেনঃ যদি কোন মুসলমান মারা যাওয়ার পর একশত জনের একদল মুসলমান তার জানাযার নামাজ আদায় করে এবং তারা তার জন্য সুপারিশ করে, তবে তার জন্য তাহাদের সুপারিশকে ক্ববূল করা হইবে। আলী [ইবনি হুজর] তার বর্ণিত হাদীসে [একশতের স্থলে] একশত বা ততোধিক বাক্য উল্লেখ করিয়াছেন।
-সহিহ, আল আহকাম [৯৮], মুসলিম। আইশা [রাদি.] হইতে বর্ণিত হাদীসটিকে আবু ঈসা হাসান সহিহ বলেছেন। এ হাদীসটিকে কিছু বর্ণনাকারী মাওকূফ হিসেবে বর্ণনা করিয়াছেন, মারফূ হিসেবে নয়। জানাজার নামাজে সূরা ফাতিহা ও নিয়ম – এই হাদীসটির তাহকিকঃ সহীহ হাদীস
৪১. অনুচ্ছেদঃ সূর্য উদয় এবং অস্ত যাওয়ার সময় জানাযার নামাজ আদায় করা মাকরূহ
১০৩০. উকবা ইবনি আমির আল-জুহানী [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
তিনি বলেন, এমন তিনটি সময় আছে যে সময়ে আমাদেরকে রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ] নামাজ আদায় করিতে অথবা আমাদের মৃত ব্যক্তিদের দাফন সম্পন্ন করিতে বারণ করিতেনঃ চক্ মক্ করে সূর্য উঠার সময় হইতে তা সম্পূর্ণভাবে না উঠা পর্যন্ত; দুপুরের সময় সূর্য ঠিক [মাথার উপর] সোজা হয়ে যাওয়া হইতে যতক্ষণ পর্যন্ত তা ঢলে না পড়ে এবং যে সময় সূর্য ডুবার সময় হয়, সম্পূর্ণভাবে তা ডুবে না যাওয়া পর্যন্ত।
-সহীহ, ইবনি মা-জাহ [১৫১৯], মুসলিম। এ হাদীসটিকে আবু ঈসা হাসান সহিহ বলেছেন। এই হাদীস অনুযায়ী রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ] একদল সাহাবী ও একদল আলিম আমল করিয়াছেন। জানাযার নামাজ উল্লেখিত ওয়াক্তসমূহে আদায় করাকে তারা মাকরূহ বলেছেন। ইবনিল মুবারাক বলেছেন, মৃতকে দাফন না করার কথা বলে এ হাদীসে জানাযার নামাজ না আদায় করা বুঝানো হয়েছে। সূর্য উদয়ের সময়, ঠিক দুপুরে এবং সূর্য ডুবার সময় তিনি জানাযার নামাজ আদায় করাকে মাকরূহ্ বলেছেন। এই মত গ্রহণ করিয়াছেন ঈমাম, আহমাদ ও ইসহাক। ঈমাম শাফি বলেছেন, যেসব ওয়াক্তে নামাজ আদায় করা মাকরূহ্ সেসব ওয়াক্তে জানাযার নামাজ আদায় করাতে কোন সমস্যা নেই। জানাজার নামাজে সূরা ফাতিহা ও নিয়ম – এই হাদীসটির তাহকিকঃ সহীহ হাদীস
৪২. অনুচ্ছেদঃ শিশুদের জন্য জানাযার নামাজ আদায় করা
১০৩১. মুগীরা ইবনি শুবা [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
নাবী [সাঃআঃ] বলেছেনঃ আরোহী ব্যক্তি লাশের পিছে পিছে যাবে, আর পায়ে হাঁটা ব্যক্তি যেদিক দিয়ে ইচ্ছা সেদিক দিয়ে যেতে পারবে এবং শিশুর [লাশের] জানাযাও আদায় করিতে হইবে।
-সহিহ, ইবনি মা-জাহ [১৫০৭]।এ হাদীসটিকে আবু ঈসা হাসান সহিহ বলেছেন। ইসরাঈল এবং আরও অনেকে হাদীসটিকে সাঈদ ইবনি উবাইদুল্লাহ হইতে বর্ণনা করিয়াছেন। এ হাদীস অনুযায়ী রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ]– এর একদল বিশেষজ্ঞ সাহাবী ও অপরাপর আলিম আমল করিয়াছেন। পূর্ণাঙ্গ দেহ বিশিষ্ট বাচ্চা জন্মানোর পর চিৎকার না করলেও তার জানাযা নামাজ আদায় করিতে হইবে। এই কথা বলেছেন ঈমাম আহমাদ ও ইসহাক।জানাজার নামাজে সূরা ফাতিহা ও নিয়ম – এই হাদীসটির তাহকিকঃ সহীহ হাদীস
৪৩. অনুচ্ছেদঃ ভূমিষ্ঠ হয়ে চিৎকার না করলে সেই শিশুর জানাযা আদায় না করা
১০৩২. জাবির [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলেছেনঃ কোন শিশু যদি জন্মগ্রহণ করার পরে চিৎকার না করে তবে তার জানাযার নামাজ আদায় করিতে হইবে না, সে কোন ব্যক্তির ওয়ারিস হইবে না এবং তারও কেউ ওয়ারিস হইবে না।
-সহিহ, ইবনি মা-জাহ [১৫০৮]। আবু ঈসা বলেন, এ হাদীসের বর্ণনায় রাবীগণের গরমিল আছে। এটাকে একদল মারফূ হাদীস রূপে জাবির [রাদি.]-এর সূত্রে বর্ণনা করিয়াছেন, আশআস ইবনি সাওওয়ার এবং আরও অনেকে এটাকে জাবির হইতে মাওকূফ হিসাবে বর্ণনা করিয়াছেন। মুহাম্মাদ ইবনি ইসহাক আতা ইবনি আবু বারাহ-এর বরাতে জাবির হইতে মাওকূফ হিসেবে বর্ণনা করিয়াছেন। মারফূ বর্ণনা হইতে মাওকূফ বর্ণনাটিই বেশী সহিহ। এ হাদীস অনুযায়ী একদল বিশেষজ্ঞ আলিম আমল করিয়াছেন। শিশু জন্মগ্রহণ করার পর চিৎকার না করলে তাহাদের মত অনুযায়ী তার জানাযা আদায় করিবে না। এই মত দিয়েছেন সুফিয়ান সাওরী ও শাফিঈ [রঃ]। জানাজার নামাজে সূরা ফাতিহা ও নিয়ম – এই হাদীসটির তাহকিকঃ সহীহ হাদীস
৪৪. অনুচ্ছেদঃ জানাযার নামাজ মাসজিদে আদায় করা
১০৩৩. আইশা [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
তিনি বলেন, সুহাইল ইবনি বাইযা [রাদি.]-এর জানাযা রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ] মসজিদের অভ্যন্তর ভাগে আদায় করিয়াছেন।
-সহীহ, ইবনি মা-জাহ [১৫১৮]। এ হাদীসটিকে আবু ঈসা হাসান বলেছেন। এ হাদীস অনুযায়ী একদল আলিম আমল করেন। ঈমাম শাফি [রঃ] বলেন, ঈমাম মালিক [রঃ] বলেছেন, জানাযার নামাজ মসজিদের অভ্যন্তরভাগে আদায় করা যাবে না। শাফিঈ [রঃ] বলেন, মসজিদে জানাযার নামাজ আদায় করা যায়। এ হাদীস নিজের অনুকূলে তিনি দলীল হিসেবে উপস্থাপন করেন। জানাজার নামাজে সূরা ফাতিহা ও নিয়ম – এই হাদীসটির তাহকিকঃ সহীহ হাদীস
৪৫. অনুচ্ছেদঃ ঈমাম সাহেব পুরুষ ও স্ত্রীলোকের জানাযার নামাজ আদায়ে কোথায় দাঁড়াবে?
১০৩৪. আবু গালিব [রঃ] হইতে বর্ণীতঃ
তিনি বলেন, আনাস [রাদি.]-এর সাথে আমি এক লোকের জানাযার নামাজ আদায় করলাম। তিনি লাশের মাথা বরাবর দাঁড়ালেন। তারপর লোকেরা কুরাইশ বংশের এক মহিলার লাশ নিয়ে আসলো। তার বলিল, হে হামযার পিতা! এর জানাযা আদায় করুন। তিনি তার খাটিয়ার মাঝ বরাবর দাঁড়ালেন। তাকে আলা ইবনি যিয়াদ [রঃ] বলিলেন, স্ত্রীলোকটির খাটিয়ার মাঝ বরাবর এবং পুরুষ লোকটির মাথা বরাবর আপনি যেভাবে দাঁড়ালেন, এভাবে কি রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ]-কে দাঁড়াতে দেখেছেন? তিনি বলিলেন, হ্যাঁ। নামাজ শেষে তিনি বলিলেন, তোমরা এই নিয়ম ভালোভাবে স্মরণ রাখ।
-সহীহ, ইবনি মা-জাহ [১৪৯৪]। সামুরা [রাদি.] হইতেও এ অনুচ্ছেদে হাদীস বর্ণিত আছে। আনাস [রাদি.] হইতে বর্ণিত হাদীসটিকে আবু ঈসা হাসান বলেছেন। হাম্মামের সূত্রে একাধিক বর্ণনাকারী একইরকম হাদীস বর্ণনা করিয়াছেন। এই হাদীস হাম্মামের সূত্রে ওয়াকী [রঃ] বর্ণনা করেছন, কিন্তু তিনি সনদে গড়মিল করিয়াছেন। তিনি বলেছেন গালিব আনাস হইতে, সঠিক হল আবু গালিব। আব্দুল ওযারিস এবং আরও অনেকে হাম্মামের মতই আবু গালিব হইতে বর্ণনা করিয়াছেন। আবু গালিবের নাম নিয়ে মত পার্থক্য আছে। কেউ বলেছেন, তার নাম নাফি, কেউ বলেছেন রাফি। এ হাদীস অনুযায়ী একদল আমিল আমল করিয়াছেন। এই মত আহমাদ ও ইসহাকেরও। জানাজার নামাজে সূরা ফাতিহা ও নিয়ম – এই হাদীসটির তাহকিকঃ সহীহ হাদীস
১০৩৫. সামুরা ইবনি জুনদাব [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ] এক মহিলার জানাযা আদায় করিলেন, তিনি তার কোমর বরাবর দাঁড়ালেন।
-সহিহ, ইবনি মা-জাহ [১৪৯৩], বুখারী, মুসলিম। আবু ঈসা বলেন, এ হাদীসটি হাসান সহিহ। হুসাইন আল-মুআল্লিমের সূত্রে শুবা [রঃ] এই হাদীসটি বর্ণনা করিয়াছেন। জানাজার নামাজে সূরা ফাতিহা ও নিয়ম – এই হাদীসটির তাহকিকঃ সহীহ হাদীস
৪৬. অনুচ্ছেদঃ শহীদ ব্যক্তির জানাযা আদায় না করা
১০৩৬. আব্দুর রাহমান ইবনি কাব ইবনি মালিক [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
জাবির [রাদি.] তাকে জানিয়েছেন যে, উহুদের যুদ্ধের দুই দুইজন শহীদকে রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ] একই কাপড়ে একসাথে কাফন সম্পন্ন করিয়াছেন। তিনি প্রশ্ন করিতেনঃ এদের দুজনের মধ্যে কোন ব্যক্তির বেশী কুরআন মুখস্ত আছে ? তাহাদের কোন একজনের দিকে ইশারা করা হলে তিনি প্রথমে তাকে [কিবলার দিকে] কবরে রাখতেন। তারপর তিনি বলিতেনঃ এদের জন্য আমি কিয়ামতের দিন সাক্ষী হব। [বর্ণনাকারী বলেন] তিনি রক্তমাখা দেহেই তাহাদেরকে দাফন করার হুকুম দিয়েছেন এবং তাহাদের জানাযা আদায় করেন নি, এমন কি তাহাদের গোসলও করানো হয়নি।
-সহীহ, ইবনি মা-জাহ [১৫১৪], বুখারী। আনাস ইবনি মালিক [রাদি.] হইতেও এ অনুচ্ছেদে হাদীস বর্ণিত আছে। জাবির [রাদি.] হইতে বর্ণিত হাদীসটিকে আবু ঈসা হাসান সহিহ বলেছেন। যুহরী তার সনদের ধারাবাহিকতায় উল্লেখিত হাদীসটি আনাস [রাদি.] হইতে বর্ণনা করিয়াছেন। যুহরী হইতে আব্দুল্লাহ ইবনি সালাবা ইবনি আবু সুয়াইবের বরাতে নাবী [সাঃআঃ] হইতেও হাদীসটি বর্ণিত আছে। কোন কোন রাবী হাদীসটি জাবির হইতেও বর্ণনা করিয়াছেন। বিশেষজ্ঞ আলিমদের মধ্যে শহীদ ব্যক্তির জানাযা আদায়ের ব্যাপারে মতের অমিল আছে। একদল আলিম তাহাদের জানাযা আদায় না করার কথা বলেছেন। মদীনার আমিলগণ এই মত দিয়েছেন। একইরকম কথা বলেছেন ঈমাম শাফি এবং আহমাদও। অপর একদল আলিম বলেন, শহীদ ব্যক্তিদের জানাযা আদায় করিতে হইবে। “হামযা [রাদি.]-এর জানাযা রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ] আদায় করিয়াছেন” তারা দলীল হিসেবে এই হাদীস নিজেদের পক্ষে উপস্থাপন করিয়াছেন। এই মত সুফিয়ান সাওরী এবং কূফাবাসী আলিমদের। একইরকম মত দিয়েছেন ঈমাম ইসহাকও। জানাজার নামাজে সূরা ফাতিহা ও নিয়ম – এই হাদীসটির তাহকিকঃ সহীহ হাদীস
৪৭. অনুচ্ছেদঃ কবরের উপর জানাযা আদায় করা
১০৩৭. শাবী [রঃ] হইতে বর্ণীতঃ
তিনি বলেন, এমন এক ব্যক্তি আমাকে জানিয়েছেন যিনি রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ]-কে দেখেছেন। রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ] একটি বিচ্ছিন্ন কবর দেখলেন। অতঃপর তিনি তার সাহাবীদেরকে তাহাঁর পিছনে কাতারবন্দী করে দাঁড় করালেন এবং তার উপর [কবরের উপর] জানাযার নামাজ আদায় করিলেন। বর্ণনাকারীকে প্রশ্ন করা হল, কে আপনাকে জানিয়েছেন? তিনি বলিলেন, ইবনি আব্বাস [রাদি.]।
-সহীহ, ইবনি মা-জাহ [১৫৩০], বুখারী, মুসলিম। আনাস, বুরাইদা, ইয়াযীদ ইবনি সাবিত, আবু হুরাইরা, আমির ইবনি রাবীআ, আবু কাতাদা ও সাহল ইবনি হুনাইফ [রাদি.] হইতেও এ অনুচ্ছেদে হাদীস বর্ণিত আছে। ইবনি আব্বাস [রাদি.]-এর হাদীসটিকে আবু ঈসা হাসান সহিহ বলেছেন। এ হাদীস অনুযায়ী রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ]-এর বেশিরভাগ বিশেষজ্ঞ সাহাবী ও অপরাপর আলিম আমল করিয়াছেন। এই মত দিয়েছেন ঈমাম শাফি, আহমাদ ও ইসহাক। অপর একদল বিশেষজ্ঞ আলিম বলেছেন, জানাযার নামাজ কবরের উপর আদায় করাযাবে না। মালিক ইবনি আনাস [রঃ]-এর এই মত। ইবনিল মুবারাক বলেছেন, মৃত ব্যক্তিকে যদি জানাযার নামাজ আদায় না করে দাফন করে তাহলে কবরের উপর জানাযা আদায় করা যাবে। অর্থাৎ কবরের উপর জানাযা আদায় করা ইবনিল মুবারাকের মতে জায়িয। আহমাদ ও ইসহাক বলেছেনঃ একমাস পর্যন্ত কবরের উপরে জানাযার নামাজ পড়া যাবে। তারা উভয়ে বলেছেন, ইবনিল মুসায়িবের নিকট আমরা যা শুনিয়াছি তা হলঃ সাদ ইবনি উবাদা [রাদি.]-এর মায়ের কবরের উপর এক মাস পর রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ] জানাযার নামাজ আদায় করিয়াছেন। জানাজার নামাজে সূরা ফাতিহা ও নিয়ম – এই হাদীসটির তাহকিকঃ সহীহ হাদীস
১০৩৮. সাঈদ ইবনিল মুসায়্যিব [রাহঃ] হইতে বর্ণীতঃ
সাদ [রাদি.]-এর আম্মা ইন্তিকাল করেন। এ সময় নাবী [সাল্লালাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম] হাযির ছিলেন না। তিনি [সফর হইতে] প্রত্যাবর্তন করে তার জানাযার নামাজ আদায় করেন। ইতিমধ্যে [মৃত্যুর পর] একমাস চলে গিয়েছিল।
যঈফ, ইরওয়া [৩/১৮৩, ১৮৬] জানাজার নামাজে সূরা ফাতিহা ও নিয়ম – এই হাদীসটির তাহকিকঃ দুর্বল হাদীস
৪৮. অনুচ্ছেদঃ নাজাশীর জন্য রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ]-এর জানাযার নামাজ
১০৩৯. ইমরান ইবনি হুসাইন [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
তিনি বলেন, আমাদেরকে রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ] বললেনঃ তোমাদের ভাই নাজাশী মারা গেছেন। তোমরা তার জন্য দাঁড়িয়ে নামাজ আদায় কর। বর্ণনাকারী বলেন, মৃত ব্যক্তির জানাযার নামাযের ন্যায় আমরা দাঁড়িয়ে কাতার বাঁধলাম এবং তার জন্য জানাযার নামাজ আদায় করলাম।
-সহীহ, ইবনি মা-জাহ [১৫৩৫], মুসলিম। আবু হুরাইরা, জাবির ইবনি আবদুল্লাহ, আবু সাঈদ, হুযাইফা ইবনি উসাইদ ও জারীর ইবনি আবদুল্লাহ [রাদি.] হইতেও এ অনুচ্ছেদে হাদীস বর্ণিত আছে। উল্লেখিত সনদ সূত্রে হাদীসটিকে আবু ঈসা হাসান সহীহ গারীব বলেছেন। হাদীসটি আবু কিলাবা তার চাচা আবুল মুহাল্লাবের বরাতে ইমরান ইবনি হুসাইন হইতে বর্ণনা করিয়াছেন। আবুল মুহাল্লাবের নাম আবদুর রাহমান, পিতার নাম আমর। অপর মতে তার নাম মুআবিয়া। জানাজার নামাজে সূরা ফাতিহা ও নিয়ম – এই হাদীসটির তাহকিকঃ সহীহ হাদীস
৪৯. অনুচ্ছেদঃ জানাযার নামাযের ফাযীলাত
১০৪০. আবু হুরাইরা [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
তিনি বলেন, রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলেছেনঃ যে লোক জানাযার নামাজ আদায় করিল সে লোকের জন্য এক কীরাত সাওয়াব। আর জানাযার সাথে সাথে যে লোক যায় এবং দাফন সমাপ্ত পর্যন্ত থাকে তার জন্য দুই কীরাত সাওয়াব। এর একটি অথবা অপেক্ষাকৃত ছোটটি উহুদ পাহাড়ের সমান। [বর্ণনাকারী বলেন] একথা ইবনি উমারের নিকট আমি বর্ণনা করলে তিনি আইশা [রাদি.]-এর নিকট পাঠিয়ে এ প্রসঙ্গে তাকে প্রশ্ন করেন। জবাবে তিনি বলিলেন, আবু হুরাইরা সত্য কথা বলেছেন। ইবনি উমার [রাদি.] বলেন, আমরা তো তাহলে অনেক কীরাত হইতে বঞ্চিত হয়েছি।
-সহীহ, ইবনি মা-জাহ [১৫৩৯], বুখারী, মুসলিম। বারাআ, আবদুল্লাহ ইবনি মুগাফফাল, আবদুল্লাহ ইবনি মাসউদ, আবু সাঈদ, উবাই ইবনি কাব, ইবনি উমার ও সাওবান [রাদি.] হইতেও এ অনুচ্ছেদে হাদীস বর্ণিত আছে। আবু হুরাইরা [রাদি.]-এর হাদীসটিকে আবু ঈসা হাসান সহিহ বলেছেন। বিভিন্ন সূত্রে উল্লেখিত হাদীসটি আবু হুরাইরা [রাদি.] হইতে বর্ণিত হয়েছে। জানাজার নামাজে সূরা ফাতিহা ও নিয়ম – এই হাদীসটির তাহকিকঃ সহীহ হাদীস
৫০. অনুচ্ছেদঃ [জানাযা বহন করা প্রসঙ্গে]
১০৪১. আব্বাস ইবনি মানসূর [রাহঃ] হইতে বর্ণীতঃ
তিনি বলেছেন, আমি আবুল মুহায্যিমকে বলিতে শুনেছিঃ আমি দশ বছর ধরে আবু হুরাইরা [রাদি.]-এর সান্নিধ্যে ছিলাম। আমি তাকে বলিতে শুনিয়াছি, আমি রসুলুল্লাহ [সাল্লালাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম]-কে বলিতে শুনেছিঃ যে ব্যক্তি লাশের পিছে পিছে গেল এবং তা তিনবার বহন করিল সে মৃত ব্যক্তির প্রতি তার দায়িত্ব সম্পূর্ণভাবে পালন করিল।
যঈফ, মিশকাত [১৬৭০] আবু ঈসা বলেন, এ হাদীসটি গারীব। কিছু রাবী এ হাদীসটি উল্লেখিত সনদ সূত্রে মারফূ হিসেবে বর্ণনা করেননি। আবুল মুহায্যিমের নাম ইয়াযীদ, পিতার নাম সুফিয়ান। শুবা [রাহঃ] তাকে যঈফ বলেছেন। জানাজার নামাজে সূরা ফাতিহা ও নিয়ম – এই হাদীসটির তাহকিকঃ দুর্বল হাদীস
৫১. অনুচ্ছেদঃ মৃত ব্যক্তিকে নিয়ে যেতে দেখে দাঁড়ানো
১০৪২. আমির ইবনি রাবীআ [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলেছেনঃ মৃত ব্যক্তিকে নিয়ে যেতে দেখলে তোমরা দাঁড়িয়ে যাবে। তোমরা দাঁড়িয়ে থাকিবে যতক্ষণ পর্যন্ত না তা তোমাদেরকে ছাড়িয়ে যায় অথবা তা মাটিতে না রাখা হয়।
-সহীহ, ইবনি মা-জাহ [১৫৪২], বুখারী, মুসলিম। আবু সাঈদ, জাবির, সাহল ইবনি হুনাইফ, কাইস ইবনি সাদ ও আবু হুরাইরা [রাদি.] হইতেও এ অনুচ্ছেদে হাদীস বর্ণিত আছে। আমির ইবনি রাবীআর হাদীসটিকে আবু ঈসা হাসান সহিহ বলেছেন। জানাজার নামাজে সূরা ফাতিহা ও নিয়ম – এই হাদীসটির তাহকিকঃ সহীহ হাদীস
১০৪৩. আবু সাঈদ-আল-খুদরী [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
তিনি বলেন, রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলেছেনঃ মৃত ব্যক্তিকে নিয়ে যেতে দেখলে তোমরা দাঁড়িয়ে যাবে। লাশের পিছু পিছু যে লোক যাবে সে লোক যেন না বসে যতক্ষণ পর্যন্ত তা নিচে নামিয়ে না রাখা হয়।
-সহীহঃ বুখারী, মুসলিম। এ অনুচ্ছেদে আবু সাঈদ [রাদি.] বর্ণিত হাদীসটিকে আবু ঈসা হাসান সহিহ বলেছেন। ঈমাম আহমাদ ও ইসহাক [রঃ] বলেছেন, কাঁধ হইতে মৃত ব্যক্তিকে নিচে নামিয়ে না রাখা পর্যন্ত লাশের অনুসরণকারী বসবে না। রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ]-এর একদল বিশেষজ্ঞ সাহাবী ও অপরাপর আলিম প্রসঙ্গে বর্ণিত আছে যে, লাশ ছাড়িয়ে তারা আগে চলে যেতেন এবং বসে থাকতেন যতক্ষণ পর্যন্ত মৃত ব্যক্তির লাশ না পৌঁছাত। ঈমাম শাফির মতও তাই। জানাজার নামাজে সূরা ফাতিহা ও নিয়ম – এই হাদীসটির তাহকিকঃ সহীহ হাদীস
৫২. অনুচ্ছেদঃ মৃত ব্যক্তিকে দেখে না দাঁড়ানোর অনুমতি প্রসঙ্গে
১০৪৪. আলী ইবনি আবী তালিব [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
“মৃত ব্যক্তিকে নিচে না রাখা পর্যন্ত দাঁড়িয়ে থাকা” প্রসঙ্গে তার সামনে আলোচনা করা হলে তিনি বলিলেন, রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ] আগে দাঁড়াতেন কিন্তু পরবর্তীতে বসে থেকেছেন।
-সহীহ, ইবনি মা-জাহ [১৫৪৪], মুসলিম। হাসান ইবনি আলী ও ইবনি আব্বাস [রাদি.] হইতেও এ অনুচ্ছেদে হাদীস বর্ণিত আছে। আলী [রাদি.] হইতে বর্ণিত হাদীসটিকে আবু ঈসা সহিহ বলেছেন। উল্লেখিত হাদীসের সনদে চারজন রাবী হলেন তাবিঈ। তাহাদের মাঝে একজন অন্য জনের নিকট হইতে বর্ণনা করিয়াছেন। এ হাদীস অনুযায়ী একদল বিশেষজ্ঞ আলিম আমল করেন। ঈমাম শাফি [রঃ] বলেন, এই হাদীসটি এ অনুচ্ছেদে অধিকতর সহীহ। পূর্ববর্তী দাড়ানো প্রসঙ্গে হাদীসের নির্দেশকে এই হাদীস মানসূখ [রহিত] করে দিয়েছে। ঈমাম আহমাদ [রঃ] বলেন, ইচ্ছা করলে কোন লোক দাঁড়াতেও পারে আবার নাও দাঁড়াতে পারে। “রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ] আগে দাঁড়াতেন কিন্তু পরবর্তীতে বসে থেকেছেন” তিনি দলীল হিসাবে এই হাদীসটিকে পেশ করিয়াছেন। ইসহাক ইবনি ইবরাহীমও একইরকম কথা বলেছেন। আবু ঈসা বলেনঃ “রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ] আগে দাঁড়াতেন কিন্তু পরবর্তীতে বসে থেকেছেন” আলী [রাদি.]-এর এই কথার তাৎপর্য এই যে, মৃত ব্যক্তিকে নিয়ে যেতে দেখলে রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ] দাঁড়াতেন এবং এ অভ্যাস পরবর্তী কালে ছেড়ে দিয়েছেন। তারপর তিনি আর লাশ নিয়ে যেতে দেখলে দাঁড়াতেন না। জানাজার নামাজে সূরা ফাতিহা ও নিয়ম – এই হাদীসটির তাহকিকঃ সহীহ হাদীস
Leave a Reply