জমি বর্গা, জমি ভাড়া, চাষাবাদ ও জমি ইজারা দেয়া

জমি বর্গা, জমি ভাড়া, চাষাবাদ ও জমি ইজারা দেয়া

জমি বর্গা, জমি ভাড়া, চাষাবাদ ও জমি ইজারা দেয়া >> সহীহ মুসলিম শরীফ এর মুল সুচিপত্র দেখুন >> নিম্নে মুসলিম শরীফ এর একটি অধ্যায়ের হাদিস পড়ুন

১৭. অধ্যায়ঃ জমি বর্গা {১৪} দেয়া
১৮. অধ্যায়ঃ খাদ্যের বিনিময়ে জমি ইজারা
১৯. অধ্যায়ঃ স্বর্ণ-রৌপ্যের বিনিময়ে জমি ভাড়া দেয়া
২০. অধ্যায়ঃ বর্গাচাষ এবং টাকার বিনিময়ে জমি ভাড়া বিষয়
২১. অধ্যায়ঃ কোন বিনিময় গ্রহণ ব্যতীতই জমি চাষাবাদ করিতে দেয়া

১৭. অধ্যায়ঃ জমি বর্গা  {১৪} দেয়া

{১৪} এ অধ্যায়ে বর্ণিত হাদীসের মর্মে জমি বর্গা দেয়া নিষিদ্ধ বুঝা যায়। কিন্তু রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] কর্তৃক গৃহীত খাইবারের ভূমি ব্যবস্থা দ্বারা বর্গা দেয়া বৈধ প্রমাণিত। জমির মালিক জমি চাষাবাদ না করে তা কৃষককে আল্লাহর ওয়াস্তে চাষাবাদ করিতে দেয়া উত্তম বিধায়, বর্গা দেয়া মানবিক দৃষ্টিভঙ্গিতে নিষিদ্ধ করা হয়েছে। তবে এ নিষেধ মানে মাকরূহ তানজিহ্‌। আর বর্গা দেয়াও জায়িয। তবে এ পরিমাণ ফসল দিতে হইবে বা এ অংশেষ ফসল দিতে হইবে- এরূপ শর্ত করে বর্গা দেয়া অবৈধ।

৩৮০৮. জাবির ইবনি আবদুল্লাহ [রা.] হইতে বর্ণীতঃ

রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] জমি বর্গা দিতে নিষেধ করিয়াছেন।

[ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৩৭৭২, ইসলামিক সেন্টার- ৩৭৭২]

৩৮০৯. জাবির ইবনি আবদুল্লাহ [রা.] হইতে বর্ণীতঃ

তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলেছেনঃ যার কাছে জমি আছি সেটি তার চাষাবাদ করা উচিত। যদি সে নিজে তা না করে তবে যেন তার কোন ভাইকে চাষাবাদ করিতে প্রদান করে।

[ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৩৭৭৩, ইসলামিক সেন্টার- ৩৭৭৩]

৩৮১০. জাবির ইবনি আবদুল্লাহ [রা.] হইতে বর্ণীতঃ

তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ]-এর কতিপয় সাহাবীর প্রয়োজনের চেয়েও বেশী জমি ছিল। রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] বললেনঃ যার নিকট প্রয়োজনের বেশী জমি আছে সে যেন তা চাষাবাদ করে অথবা তার কোন ভাইকে [চাষাবাদ করিতে] দেয়। আর যদি সে তা না চায় তাহলে তার জমি সে আটকে রাখুক।

[ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৩৭৭৪, ইসলামিক সেন্টার- ৩৭৭৪]

৩৮১১. জাবির ইবনি আবদুল্লাহ [রা.] হইতে বর্ণীতঃ

তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] শ্রমের উপরে বা ফসলের অংশ দিয়ে জমি বর্গা দিতে নিষেধ করিয়াছেন।

[ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৩৭৭৫, ইসলামিক সেন্টার- ৩৭৭৫]

৩৮১২. জাবির [রা.] হইতে বর্ণীতঃ

তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলেছেন: যার জমি আছে সে যেন তাতে চাষাবাদ করে। তা যদি সে না পারে অথবা অক্ষম হয়, তাহলে সে যেন তার অপর কোন মুসলিম ভাইকে [চাষাবাদ করিতে] দেয়। কিন্তু বর্গা দিবে না।

[ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৩৭৭৬, ইসলামিক সেন্টার- ৩৭৭৬]

৩৮১৩. শাইবান ইবনি ফার্রূখ [রহমাতুল্লাহি আলাইহি] হাম্মাম [রহমাতুল্লাহি আলাইহি] হইতে বর্ণীতঃ

সুলাইমান ইবনি মুসা [রহমাতুল্লাহি আলাইহি] আতা-কে জিজ্ঞেস করিলেন আপনার নিকট জাবির ইবনি আবদুল্লাহ [রাদি.] কি এ কথা বর্ণনা করিয়াছেন যে, রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলেছেন: যার জমি আছে সে যেন তা চাষাবাদ করে অথবা তার অপর ভাইকে চাষ করার জন্যে দিয়ে দেয়। সেটা বর্গায় দিবে না। তিনি বলিলেন, হ্যাঁ, তা-ই।

[ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৩৭৭৭, ইসলামিক সেন্টার- ৩৭৭৭]

৩৮১৪. জাবির [রা.] হইতে বর্ণীতঃ

নবী [সাঃআঃ] মুখাবারাহ্‌ নিষেধ করিয়াছেন।

[ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৩৭৭৮, ইসলামিক সেন্টার- ৩৭৭৮]

৩৮১৫. জাবির ইবনি আবদুল্লাহ [রা.] হইতে বর্ণীতঃ

রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলেছেনঃ যার নিকট অতিরিক্ত জমি আছে তার উচিত সেটি চাষাবাদ করা অথবা আবাদ করার জন্যে তার অপর ভাইকে দেয়া। তোমরা সেটা বিক্রি করো না।

[রাবী বলেন] আমি সাঈদকে জিজ্ঞেস করলাম, বিক্রি করো না-এ কথা কি বর্গা দেয়া? তিনি বলিলেন, হ্যাঁ, তা-ই।

[ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৩৭৭৯, ইসলামিক সেন্টার- ৩৭৭৯]

৩৮১৬. জাবির [রা.] হইতে বর্ণীতঃ

তিনি বলেন, আমরা রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ]-এর সময়ে জমি বর্গায় নিতাম এবং প্রাপ্য হিসেবে শস্য মাড়াই করার পর ছড়ায় যা অবশিষ্ট থাকত তা এবং এ ধরনের সামান্য কিছু ভাগ পেতাম। তখন রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] বললেনঃ যার জমি আছে সে সেটা আবাদ করুক অথবা তার অপর ভাইকে দিয়ে আবাদ করাক অন্যথায় সে নিজেই ধরে রাখুক।

[ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৩৭৮০, ইসলামিক সেন্টার- ৩৭৮০]

৩৮১৭. জাবির ইবনি আবদুল্লাহ [রা.] হইতে বর্ণীতঃ

তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ]-এর আমালে আমরা খালের সন্নিকটবর্তী জমিতে এক তৃতীয়াংশ ও এক চতুর্থাংশ ফসলের বিনিময়ে জমি বর্গা দিতাম। এরপর রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] তথায় দাঁড়িয়ে বলিলেন, জামি যার সে-ই তাতে চাষ করিবে। আর যদি সে তা না করে তবে যেন তার ভাইকে আবাদ করিতে দেয়। যদি তার ভাইকে তা না দেয়, তবে যেন তা আটকে রাখে।

[ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৩৭৮০, ইসলামিক সেন্টার- ৩৭৮০]

৩৮১৮. জাবির [রা.] হইতে বর্ণীতঃ

তিনি বলেন, আমি নবী [সাঃআঃ]-কে বলিতে শুনেছি- যার জমি আছে সে যেন তা দান করে অথবা সে যেন তা ধার দেয়।

[ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৩৭৮২, ইসলামিক সেন্টার- ৩৭৮২]

৩৮১৯. আমাশ [রহমাতুল্লাহি আলাইহি]-এর সূত হইতে বর্ণীতঃ

আমাশ [রহমাতুল্লাহি আলাইহি]-এর সূত্রে উপরোক্ত হাদীস বর্ণনা করেন। অবশ্য তিনি বলেছেন যে, সে যেন তা চাষ করে অথবা অন্য কোন লোককে চাষ করিতে দেয়।

[ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৩৭৮৩, ইসলামিক সেন্টার- ৩৭৮৩]

৩৮২০. জাবির ইবনি আবদুল্লাহ [রা.] হইতে বর্ণীতঃ

রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] জমি বর্গা দিতে নিষেধ করিয়াছেন।

বুকায়র [রহমাতুল্লাহি আলাইহি] নাফির সূত্রে ইবনি উমর [রাদি.] থেকে বর্ণনা করেন। তিনি বলেন, আমরা আমাদের জমি বর্গায় দিতাম। এরপর রাফি ইবনি খাদীজের হাদীস শুনে তা ছেড়ে দেই।

[ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৩৭৮৪, ইসলামিক সেন্টার- ৩৭৮৪]

৩৮২১. জাবির [রা.] হইতে বর্ণীতঃ

তিনি বলেন যে, রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] খালি জমি দু বা তিন বছরের জন্যে বিক্রি করিতে নিষেধ করিয়াছেন।

[ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৩৭৮৫, ইসলামিক সেন্টার- ৩৭৮৫]

৩৮২২. জাবির [রা.] হইতে বর্ণীতঃ

তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] কয়েক বছরের জন্য জমি বিক্রি করিতে নিষেধ করিয়াছেন।

ইবনি আবু শাইবার বর্ণনায় আছে-কয়েক বছরের জন্যে ফল বিক্রি করিতে নিষেধ করিয়াছেন।

[ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৩৭৮৬, ইসলামিক সেন্টার- ৩৭৮৬]

৩৮২৩. আবু হুরাইরাহ [রা.] হইতে বর্ণীতঃ

তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলেছেন: যার জমি আছে তার উচিত সে যেন তা চাষ করে অথবা তার অপর ভাইকে তা আবাদ করিতে দেয়। এতে যদি সে রাজী না হয়, তাহলে তার জমি যেন সে আটকে রাখে।

[ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৩৭৮৭, ইসলামিক সেন্টার- ৩৭৮৭]

৩৮২৪. জাবির ইবনি আবদুল্লাহ [রা.] হইতে বর্ণীতঃ

তিনি রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ]-কে মুযাবানাহ্‌ ও হুকূল থেকে নিষেধ করিতে শুনেছেন। তখন জাবির ইবনি আবদুল্লাহ [রাদি.] বলেন, মুযাবানাহ্‌ হলো কাঁচা খেজুরের বিনিময়ে শুকনা খেজুর বদল করা। আর হুকূল হলো জমি বর্গা দেয়া।

[ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৩৭৮৮, ইসলামিক সেন্টার- ৩৭৮৮]

৩৮২৫. আবু হুরাইরাহ [রা.] হইতে বর্ণীতঃ

তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] মুহাকালাহ {১৫} ও মুযাবানাহ{১৬} থেকে নিষেধ করিয়াছেন।

[ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৩৭৮৯, ইসলামিক সেন্টার- ৩৭৮৯]

{১৫} মুহাকালাহ ক্ষেত্রে শস্য অনুমান করে সংগৃহীত শস্যের বিনিময়ে বিক্রি করা।

{১৬} মুযাবানাহ্‌ গাছে থাকা খেজুর ঘরের শুকনো খেজুরের বিনিময়ে বিক্রি করা।

৩৮২৬. আব সাঈদ খুদ্‌রী [রা.] হইতে বর্ণীতঃ

তিনি বলেন, রসূলু্ল্লাহ [সাঃআঃ] মুযাবানাহ্‌ ও মুহাকালাহ থেকে নিষেধ করিয়াছেন। মুযাবানাহ্‌ হলো খেজুর গাছের মাথায় ঝুলে থাকা ফল ক্রয় করা, আর মুহাকালাহ হলো জমি ইজারা দেয়া।

[ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৩৭৯০, ইসলামিক সেন্টার- ৩৭৯০]

৩৮২৭. ইবনি উমর [রা.] হইতে বর্ণীতঃ

তিনি বলেন, আমরা মুখাবারাহ্‌ করায় কোন দোষ মনে করতাম না। এভাবে যখন প্রথম বছর অতিবাহিত হলো, তখন রাফি [রাদি.] বলিলেন, নবী [সাঃআঃ] এ কাজ থেকে নিষেধ করিয়াছেন।

৩৮২৮. আমর ইবনি দীনার [রহমাতুল্লাহি আলাইহি] হইতে বর্ণীতঃ

আমর ইবনি দীনার [রহমাতুল্লাহি আলাইহি] হইতে উক্ত সানাদে অনুরূপ বর্ণনা করেন। অবশ্য ইবনি উয়াইনাহ্ [রহমাতুল্লাহি আলাইহি] বর্ণিত হাদীসে অতিরিক্ত আছে যে-এরপর এ কারণে আমরা তা ছেড়ে দেই।

[ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৩৭৯১, ইসলামিক সেন্টার- ৩৭৯১]

৩৮২৯. ইবনি উমর [রা.] হইতে বর্ণীতঃ

তিনি বলেন, রাফি [রহমাতুল্লাহি আলাইহি] আমাদেরকে আমাদের জমি হইতে ফায়দা হাসিল করা হইতে বাধা দান করিয়াছেন।

[ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৩৭৯৩, ইসলামিক সেন্টার- ৩৭৯৩]

৩৮৩০. নাফি [রহমাতুল্লাহি আলাইহি] হইতে বর্ণীতঃ

ইবনি উমর [রাদি.] তাহাঁর জমি ইজারা দিতেন নবী [সাঃআঃ]-এর যুগে এবং আবু বাক্‌র, উমর, উসমান ও মুআবিয়াহ্‌ [রাদি.]-এর খিলাফাত কালের প্রথম যুগ পর্যন্ত। এরপর মুআবিয়াহ্‌ [রাদি.]-এর খিলাফাতের শেষ দিকে তাহাঁর কাছে এ সংবাদ গেল যে, রাফি ইবনি খাদীজ [রাদি.] এ বিষয়ে নবী [সাঃআঃ]-এর নিষেধমূলক হাদীস বর্ণনা করিয়াছেন। ইবনি উমর [রাদি.] তাহাঁর নিকট উপস্থিত হলেন। আমিও তাহাঁর সাথে ছিলাম। এরপর তিনি তাহাঁর কাছে এ ব্যাপারে জানতে চাইলেন। তিনি বলিলেন, রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] জমি ইজারা দিতে নিষেধ করিতেন। এরপরি ইবনি উমর [রাদি.] তা বাদ দেন।

এরপর হইতে যখন তাকে এ বিষয়ে জিজ্ঞেস করা হত, তিনি বলিতেন-ইবনি খাদীজ [রাদি.] বলেছেন: রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] এ থেকে নিষেধ করিয়াছেন।

[ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৩৭৯৪, ইসলামিক সেন্টার- ৩৭৯৪]

৩৮৩১. আইয়ূব [রহমাতুল্লাহি আলাইহি] হইতে বর্ণীতঃ

আইয়ূব [রহমাতুল্লাহি আলাইহি] হইতে উক্ত সানাদে অনুরূপ বর্ণনা করেন। ইবনি উলাইয়্যার বর্ণনায় আইয়ূব [রহমাতুল্লাহি আলাইহি] বাড়তি আরও বলেছেন যে, এরপর ইবনি উমর [রাদি.] তা পরিত্যাগ করেন এবং আর কখনও জমি ইজারা দেননি।

[ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৩৭৯৫, ইসলামিক সেন্টার- ৩৭৯৫]

৩৮৩২. নাফি [রহমাতুল্লাহি আলাইহি] হইতে বর্ণীতঃ

তিনি বলেন যে, একদা আমি ইবনি উমারের সাথে রাফি ইবনি খাদীজের নিকট গেলাম। বালাত নামক স্থানে তাহাঁর সাথে সাক্ষাৎ হলো। তিনি তাকে অবহিত করিলেন যে, রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] জমি ইজারা দিতে নিষেধ করিয়াছেন।

[ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৩৭৯৬, ইসলামিক সেন্টার- ৩৭৯৬]

৩৮৩৩. ইবনি উমর [রা.] হইতে বর্ণীতঃ

তিনি একবার রাফির নিকট আসেন। এরপর নবী [সাঃআঃ]-এর হাদীস উল্লেখ করেন।

[ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৩৭৯৭, ইসলামিক সেন্টার- ৩৭৯৭]

৩৮৩৪. নাফি [রহমাতুল্লাহি আলাইহি] হইতে বর্ণীতঃ

ইবনি উমর [রাদি.] জমি বর্গা দিতেন। নাফি বলেন, এরপর রাফি বর্ণিত একটি হাদীস তাকে জানান হলো। রাবী বলেন, তিনি আমাকে সাথে নিয়ে তার নিকট গেলেন। তিনি তার কোন চাচার সূত্রে হাদীস বর্ণনা করিলেন। তাতে উল্লেখ আছে যে, নবী [সাঃআঃ] জমি বর্গা দিতে নিষেধ করিয়াছেন। রাবী বলেন, এরপর থেকে ইবনি উমর [রাদি.]-এ কাজ ত্যাগ করেন এবং আর কোন সময় জমি বর্গা দেননি।

[ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৩৭৯৮, ইসলামিক সেন্টার- ৩৭৯৮]

৩৮৩৫. আওন হইতে বর্ণীতঃ

উক্ত হাদীস বর্ণিত। রাবী বলেন, এরপর তিনি তার চাচার সূত্রে নবী [সাঃআঃ] থেকে হাদীস বর্ণনা করেন।

[ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৩৭৯৯, ইসলামিক সেন্টার- ৩৭৯৯]

৩৮৩৬. সালিম ইবনি আবদুল্লাহ [রহমাতুল্লাহি আলাইহি] হইতে বর্ণীতঃ

তিনি বলেন যে, আবদুল্লাহ ইবনি উমর [রাদি.] নিজের জমি বর্গা দিতেন। পরে তার কাছে এ সংবাদ পৌঁছল যে, রাফি ইবনি খাদীজ আনসারী [রাদি.] জমি বর্গা দিতে নিষেধ করে থাকেন। আবদুল্লাহ [রাদি.] তাহাঁর সাথে দেখা করে জিজ্ঞেস করেন, হে ইবনি খাদীজ! জমি বর্গার ব্যাপারে আপনি রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] থেকে কি হাদীস বর্ণনা করিয়াছেন? রাফি ইবনি খাদীজ [রাদি.] আবদুল্লাহকে বলিলেন, আমি আমার দুজন চাচার নিকট শুনেছি- যাঁরা বদরের যুদ্ধে অংশগ্রহণ করেছিলেন, তারা পরিবার-পরিজনের নিকট বর্ণনা করেন যে, রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] জমি বর্গা দিতে নিষেধ করিয়াছেন। আবদুল্লাহ [রাদি.] বলিলেন, রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ]-এর সময়ে আমি ভাল করেই জানতাম যে, জমি বর্গা দেয়া যায়। এরপর আবদুল্লাহ ভীত হলো যে, রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] হয়তো এমন কিছু বলেছেন, যা তিনি জানতে পারেননি। সুতরাং তিনি জমি বর্গা দেয়া ত্যাগ করেন।

[ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৩৮০০, ইসলামিক সেন্টার- ৩৮০০]

১৮. অধ্যায়ঃ খাদ্যের বিনিময়ে জমি ইজারা

৩৮৩৭. রাফি খাদীজ [রা.] হইতে বর্ণীতঃ

তিনি বলেন, আমরা রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ]-এর সময়ে জমির মুহাকালাহ করতাম এবং এক তৃতীয়াংশ, এক চতুর্থাংশ বা নির্দিষ্ট পরিমাণ খাদ্যের বিনিময়ে ইজারা দিতাম। এরপর এক সময় আমার এক চাচা আমাদের নিকট এসে বলিলেন, রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] আমাদেরকে এমন একটি বিষয় থেকে নিষেধ করিয়াছেন যা আমাদের জন্যে লাভজনক ছিল। আর আল্লাহ ও তাহাঁর রসূলের কথা মেনে চলা আমাদের জন্যে অধিক কল্যাণকর। তিনি আমাদেরকে জমি মুহকালাহ করিতে এবং এক তৃতীয়াংশ, এক চতুর্থাংশ বা নির্দিষ্ট পরিমাণ খাদ্যের বিনিময়ে ইজারা দিতে নিষেধ করিয়াছেন। আর জমির মালিককে নিজে চাষ করিতে বা অপরের দ্বারা চাষ করাতে নির্দেশ দিয়েছেন এবং ইজারা বা অন্য কিছু করার বিষয়ে অসন্তুষ্টি প্রকাশ করিয়াছেন।

[ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৩৮০১, ইসলামিক সেন্টার- ৩৮০১]

৩৮৩৮. রাফি ইবনি খাদীজ [রা.] হইতে বর্ণীতঃ

তিনি বলেন, আমরা জমির মুহাকালাহ করতাম এবং এক তৃতীয়াংশ ও এক চতুর্থাংশের বিনিময়ে ইজারা দিতাম। এরপর ইবনি উলাইয়্যার হাদীসের অনুরূপ বর্ণনা করেন।

[ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৩৮০২, ইসলামিক সেন্টার- ৩৮০২]

৩৮৩৯. ইয়ালা ইবনি হাকীম [রা.] হইতে বর্ণীতঃ

ইয়ালা ইবনি হাকীম [রাদি.]-এর সানাদে উপরোক্ত হাদীসের অনুরূপ বর্ণনা করেন।

[ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৩৮০৩, ইসলামিক সেন্টার- ৩৮০৩]

৩৮৪০. রাফির সূত্রে নবী [সাঃআঃ] হইতে বর্ণীতঃ

রাফির সূত্রে নবী [সাঃআঃ] হইতে বর্ণনা করেন। কিন্তু তাতে তার কোন এক চাচার কথা বলেননি।

[ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৩৮০৪, ইসলামিক সেন্টার- ৩৮০৪]

৩৮৪১. রাফি [রা.] হইতে বর্ণীতঃ

যুহায়র ইবনি রাফি [রহমাতুল্লাহি আলাইহি] তাহাঁর চাচা হন। রাফি বলেন, যুহায়র একদা আমার নিকট এসে বলেন, রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] আমাদেরকে এমন একটি বিষয় থেকে নিষেধ করিয়াছেন যা আমাদের জন্যে ছিল লাভজনক। আমি বললাম, তা কী? রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] যা বলেছেন তাই যথার্থ। তিনি বলিলেন, আমার নিকট তিনি জিজ্ঞেস করিয়াছেন, কিভাবে তোমরা মুহাকালাহ করো? আমি বললাম, হে আল্লাহর রসূল! আমরা খালের সন্নিকটবর্তী জমির ফসলের শর্তে বিংবা খুরমা বা যবের কয়ের অসক প্রদানের শর্তে জমি বর্গা দিয়ে থাকি। তিনি বলিলেন, আর এরূপ করো না। তোমরা নিজেরা চাষ করো অথবা অপরকে দিয়ে চাষ করাও, তা না হলে এমনি রেখে দাও।

[ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৩৮০৫, ইসলামিক সেন্টার- ৩৮০৪ {ক}]

৩৮৪২. রাফি [রা.] সূ্ত্রে নবী [সাঃআঃ] হইতে বর্ণীতঃ

উপরোক্ত হাদীস বর্ণিত। কিন্তু এতে তার চাচা যুহায়রের নাম উল্লেখ করেননি।

[ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৩৮০৬, ইসলামিক সেন্টার- ৩৮০৫]

১৯. অধ্যায়ঃ স্বর্ণ-রৌপ্যের বিনিময়ে জমি ভাড়া দেয়া

৩৮৪৩. হানযালাহ্ ইবনি কায়স [রহমাতুল্লাহি আলাইহি]-এর সূত্রে হইতে বর্ণীতঃ

তিনি রাফি ইবনি খাদীজের নিকট জমি বর্গা দেয়া সম্পর্কে জিজ্ঞেস করেন। তিনি বলিলেন, রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] জমি বর্গা দিতে নিষেধ করিয়াছেন। রাবী বলেন, তখন আমি বললাম : স্বর্ণ ও রৌপ্যের বিনিময়েও কি নিষেধ? তিনি বলিলেন, স্বর্ণ ও রৌপ্যের বিনিময়ে হলে কোন সমস্যা নেই।

[ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৩৮০৭, ইসলামিক সেন্টার- ৩৮০৬]

৩৮৪৪. হানযালাহ্‌ ইবনি কায়স আনসারী [রহমাতুল্লাহি আলাইহি] হইতে বর্ণীতঃ

তিনি বলেন, আমি রাফি ইবনি খাদীজকে স্বর্ণ ও রৌপ্যের বিনিময়ে জমি বর্গা দেয়া সম্পর্কে জিজ্ঞেস করেছি। তিনি বলেছেন, এতে কোন সমস্যা নেই। রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ]-এর আমালে লোকেরা পানির ঝর্ণার পাশ্ববর্তী অংশ, খালের অগ্রভাগের ভেজা অংশ ও ক্ষেতের অন্যান্য সুবিধা নেয়ার শর্তে জমি বর্গা দিত। এতে কখনও এক অংশ বিনষ্ট হত ও অপর অংশ ভাল থাকত। আবার কখনও এ অংশ ভাল থাকত আর অপর অংশ বিনষ্ট হত। আর এ ধরনের বর্গায় বঞ্চনা ছাড়া আর কিছুই হত না। এ কারণে তিনি এ থেকে নিষেধ করেন। আর যদি নির্দিষ্ট পরিমাণের [স্বর্ণ-রৌপ্যের] বিনিময়ে বর্গা দেয়া হয়, তাহলে তাতে কোন সমস্যা নেই।

[ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৩৮০৮, ইসলামিক সেন্টার- ৩৮০৭]

৩৮৪৫. রাফি ইবনি খাদীজ [রা.] হইতে বর্ণীতঃ

তিনি বলেন, আমরা আনসারদের মধ্যে সবচেয়ে বেশী জমির মালিক ছিলাম। এ শর্তে আমরা জমির ইজারা দিতাম যে, এ অংশ আমাদের আর ঐ অংশ তাদের। এরপর অনেক সময় এ অংশে ফসল ফলত আর ঐ অংশে কিছুই ফলত না। এরপর নবী [সাঃআঃ] এ কাজ থেকে আমাদেরকে নিষেধ করেন। আর রৌপ্যের বিনিময়ে ইজারা দিতে তিনি আমাদেরকে নিষেধ করেননি।

[ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৩৮০৯, ইসলামিক সেন্টার- ৩৮০৮]

৩৮৪৬. ইয়াহ্ইয়া ইবনি সাঈদ [রহমাতুল্লাহি আলাইহি]-এর সূত্রে হইতে বর্ণীতঃ

ইয়াহ্ইয়া ইবনি সাঈদ [রহমাতুল্লাহি আলাইহি]-এর সূত্রে অনুরূপ বর্ণনা করেন।

[ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৩৮১০, ইসলামিক সেন্টার- ৩৮০৯]

২০. অধ্যায়ঃ বর্গাচাষ এবং টাকার বিনিময়ে জমি ভাড়া বিষয়

৩৮৪৭. আবদুল্লাহ ইবনি সায়িব [রহমাতুল্লাহি আলাইহি] হইতে বর্ণীতঃ

তিনি বলেন, আমি আবদুল্লাহ ইবনি মাকালের নিকট মুযারাআ সম্পর্কে জিজ্ঞেস করি। তিনি বলিলেন, সাবিত ইবনি যাহহাক [রাদি.] আমাকে জানিয়েছেন যে, রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] মুযারাআ থেকে নিষেধ করিয়াছেন। [এ নিষেধাজ্ঞা জমির নির্দিষ্ট পরিমাণ ফসলের শর্তে হলে হইবে। তবে খাইবারের ভূমি বর্গাচাষের হাদীস থেকে বর্গাচাষ বৈধ প্রমাণিত।]

ইবনি আবু শাইবাহর বর্ণনায় কথাটি এরুপ আছে যে, তিনি তা থেকে নিষেধ করিয়াছেন। তিনি আরো বলেছেন-আমি ইবনি মাকালের নিকট জিজ্ঞেস করেছি। তিনি আবদুল্লাহর নাম বলেনন।

[ই ফা ৩৮১১, ই সে ৩৮১০]

৩৮৪৮. আবদুল্লাহ ইবনি সায়িব [রহমাতুল্লাহি আলাইহি] হইতে বর্ণীতঃ

তিনি বলেন, আমরা আবদুল্লাহ ইবনি মাকালের নিকট উপস্থিত হই এবং মুযারাআ সম্পর্কে জিজ্ঞেস করি। তিনি জানান, সাবিত [রাদি.] বলেছেন, রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] মুযারাআহ করিতে নিষেধ করিয়াছেন এবং ইজারা দিতে আদেশ করিয়াছেন আর বলেছেন-এতে কোন সমস্যা নেই।

[ই ফা ৩৮১২ ই সে ৩৮১১]

২১. অধ্যায়ঃ কোন বিনিময় গ্রহণ ব্যতীতই জমি চাষাবাদ করিতে দেয়া

৩৮৪৯. আমর [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

মুজাহিদ তাউসকে বললেনঃ আপনি আমাদের সাথে ইবনি রাফি ইবনি খাদীজের নিকট চলুন এবং তার পিতার সূত্রে নবী [সাঃআঃ] হইতে বর্ণিত হাদীসটি শুনুন। রাবী আমর [রাদি.] বলেন, তখন রাবী [রহমাতুল্লাহি আলাইহি] তাঊস [রহমাতুল্লাহি আলাইহি] মুজাহিদকে তিরস্কার করে বলিলেন, আল্লাহর কসম! আমি যদি জানতাম যে, রাসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] এ কাজ থেকে নিষেধ করিয়াছেন- তবে আমি তা করতাম না। কিন্তু তাদের মধ্যে যিনি সবচেয়ে বেশী জ্ঞানী অর্থাৎ- ইবনি আব্বাস [রাদি.] আমার কাছে বর্ণনা করিয়াছেন যে, রাসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলেছেনঃ কোন ব্যক্তির পক্ষে তার কোন জমি অপর ভাইকে স্বেচ্চায় চাষাবাদ করিতে দেয়া তার উপর নির্দিষ্ট পরিমাণ ফসলের চুক্তিতে দেয়া অপেক্ষা ভাল।

[ই ফা ৩৮১৩ ই সে ৩৮১২]

৩৮৫০. তাউস [রহমাতুল্লাহি আলাইহি] হইতে বর্ণীতঃ

তিনি মুখাবারাহ করিতেন। আমর বলেন, আমি তাঁকে বললাম, হে আবু আবদুর রহমান! আপনি যদি এ মুখাবারাহ করা ছেড়ে দিতেন [তবে তা সুন্দর হত]। কেননা লোকেরা মনে করে যে, নবী [সাঃআঃ] মুখাবারাহ করিতে নিষেধ করিয়াছেন। তিনি বলিলেন, হে আমর! তাদের মধ্যে যিনি শ্রেষ্ঠ জ্ঞানী অর্থাৎ- ইবনি আব্বাস, তিনি আমাকে বলেছেন যে, নবী [সাঃআঃ] এ ব্যাপারে নিষেধ করেননি। তিনি শুধু বলেছেন, তোমাদের কোন ভাইকে কোন বিনিময় গ্রহণ ছাড়াই জমি চাষাবাদ করিতে দেয়া নির্দিষ্ট পরিমাণ ফসলের চুক্তিতে দেয়া অপেক্ষা উত্তম।

[ই ফা ৩৮১৪ ই সে ৩৮১৩]

৩৮৫১. ইবনি আব্বাস [রাদি.] সূত্রে নবী [সাঃআঃ] হইতে বর্ণীতঃ

ইবনি আব্বাস [রাদি.] সূত্রে নবী [সাঃআঃ] থেকে অনুরূপ বর্ণনা করেন।

[ই ফা ৩৮১৫ ই সে ৩৮১৪]

৩৮৫২. আব্বাস [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

নবী [সাঃআঃ] বলেছেনঃ তোমাদের মধ্যে কারো ভূমি তার অপর ভাইকে নিঃস্বার্থভাবে চাষাবাদ করিতে দেয়া নির্দিষ্ট পরিমাণ ফসলের বদলে দেয়ার চেয়ে উত্তম।

রাবী বলেন, ইবনি আব্বাস [রাদি.] বলেছেনঃ এটাকেই বলা হয় হাক্ল, আর আনসারদের পরিভাষায় বলা হয় মুহাকালাহ।

[ই ফা ৩৮১৬ ই সে ৩৮১৫]

৩৮৫৩. ইবনি আব্বাস [রাদি.] সূত্রে নবী [সাঃআঃ] হইতে বর্ণীতঃ

তিনি বলেন, যার জমি আছে সে যদি তা অপর ভাইকে নিঃস্বার্থভাবে চাষাবাদ করিতে দেয় তবে সেটি তার জন্য উত্তম।

[ই ফা ৩৮১৭ ই সে ৩৮১৬]


Posted

in

by

Comments

Leave a Reply