জমজম কূপের ঘটনা ও আরবের মূর্খতা বর্ণনা

জমজম কূপের ঘটনা ও আরবের মূর্খতা বর্ণনা

জমজম কূপের ঘটনা ও আরবের মূর্খতা বর্ণনা >> বুখারী শরীফ এর মুল সুচিপত্র পড়ুন

পর্বঃ ৬১, মর্যাদা ও বৈশিষ্ট্য, অধ্যায়ঃ (১১-১২)=২টি

৬১/১১. অধ্যায়ঃ যমযম কূপের ঘটনা।
৬১/১২. অধ্যায়ঃ যমযমের ঘটনা ও আরবের মূর্খতা।

৬১/১১. অধ্যায়ঃ যমযম কূপের ঘটনা।

৩৫২২. আবু জামরা (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, আবদুল্লাহ ইবন আব্বাস (রাদি.) আমাদেরকে বলিলেন, আমি কি তোমাদেরকে আবু যার (রাদি.) এর ইসলাম গ্রহণের ঘটনা বিস্তারিতভাবে বর্ণনা করব? আমরা বললাম হাঁ, অবশ্যই। তিনি বলেন, আবু যার (রাদি.) বলেছেন, আমি গিফার গোত্রের একজন মানুষ। আমরা জানতে পেলাম মক্কায় এক ব্যক্তি আত্মপ্রকাশ করে নিজেকে নাবী বলে দাবী করছেন। আমি আমার ভাইকে বললাম, তুমি মক্কায় গিয়ে ঐ ব্যক্তির সাথে সাক্ষাৎ ও আলোচনা করে বিস্তারিত খোঁজ – খবর নিয়ে এস। সে রওয়ানা হয়ে গেল এবং মক্কার ঐ লোকটির সঙ্গে সাক্ষাৎ ও আলাপ – আলোচনা করে ফিরে আসলে আমি জিজ্ঞেস করলাম- কী খবর নিয়ে এলে? সে বলিল, আল্লাহর কসম! আমি একজন মহান ব্যক্তিকে দেখেছি যিনি সৎকাজের আদেশ এবং মন্দ কাজ হইতে নিষেধ করেন। আমি বললাম, তোমার খবরে আমি সন্তুষ্ট হইতে পারলাম না। অতঃপর আমি একটি ছড়ি ও এক পাত্র খাবার নিয়ে মক্কার দিকে রওয়ানা হলাম। মক্কায় পৌছে আমার অবস্থা দাঁড়াল এমন- তিনি আমার পরিচিত নন, কারো নিকট জিজ্ঞেস করাও আমি সমীচীন মনে করি না। তাই আমি যমযমের পানি পান করে মসজিদে থাকতে লাগলাম। একদিন সন্ধ্যা বেলা আলী (রাদি.) আমার নিকট দিয়ে গমনকালে আমার প্রতি ইশারা করে বলিলেন, মনে হয় লোকটি বিদেশী। আমি বললাম, হাঁ। তিনি বলিলেন, আমার সঙ্গে আমার বাড়িতে চল। পথেই তিনি আমাকে কোন কিছু জিজ্ঞেস করেননি। আর আমিও ইচ্ছা করে কোন কিছু বলিনি। তাহাঁর বাড়িতে রাত্রি যাপন করে ভোর বেলায় আবার মসজিদে গেলাম যাতে ঐ ব্যক্তি সম্পর্কে জিজ্ঞেস করব। কিন্তু ওখানে এমন কোন লোক ছিল না যে ঐ ব্যক্তি সম্পর্কে কিছু বলবে। ঐ দিনও আলী (রাদি.) আমার নিকট দিয়ে চলার সময় বলিলেন, এখনো কি লোকটি তার গন্তব্যস্থল ঠিক করিতে পারেনি? আমি বললাম, না। তিনি বলিলেন, আমার সঙ্গে চল। পথিমধ্যে তিনি আমাকে জিজ্ঞেস করিলেন বল, তোমার বিষয় কী? কেন এ শহরে এসেছ? আমি বললাম, যদি আপনি আমার বিষয়টি গোপন রাখার আশ্বাস দেন তাহলে তা আপনাকে বলিতে পারি। তিনি বলিলেন নিশ্চয়ই আমি গোপন করব। আমি বললাম, আমরা জানতে পেরেছি, এখানে এমন এক লোকের আবির্ভাব হয়েছে যিনি নিজেকে নাবী বলে দাবী করেন। আমি তাহাঁর সঙ্গে বিস্তারিত আলাপ আলোচনা করার জন্য আমার ভাইকে পাঠিয়েছিলাম। কিন্তু সে ফেরত গিয়ে আমাকে সন্তোষজনক কোন কিছু বলিতে পারেনি। তাই নিজে দেখা করার ইচ্ছা নিয়ে এখানে আগমন করেছি। আলী (রাদি.) বলিলেন, তুমি সঠিক পথপ্রদর্শক পেয়েছ। আমি এখনই তাহাঁর কাছে উপস্থিত হবার জন্য রওয়ানা হয়েছি। তুমি আমাকে অনুসরণ কর এবং আমি যে গৃহে প্রবেশ করি তুমিও সে গৃহে প্রবেশ করিবে। রাস্তায় যদি তোমার বিপদজনক কোন লোক দেখিতে পাই তবে আমি জুতা ঠিক করার অজুহাতে দেয়ালের পার্শ্বে সরে দাঁড়াব, যেন আমি জুতা ঠিক করছি। তুমি কিন্তু চলতেই থাকবে। আলী (রাদি.) পথ চলতে শুরু করিলেন। আমিও তাহাঁর অনুসরণ করে চলতে লাগলাম। তিনি নাবী (সাঃআঃ) -এর নিকট প্রবেশ করলে, আমিও তাহাঁর সঙ্গে ঢুকে পড়লাম। আমি বললাম, আমার নিকট ইসলাম পেশ করুন। তিনি পেশ করিলেন। আর আমি মুসলিম হয়ে গেলাম। নাবী (সাঃআঃ) বলিলেন, হে আবু যার। এখনকার মত তোমার ইসলাম গ্রহণ গোপন রেখে তোমার দেশে চলে যাও। যখন আমাদের বিজয়ের খবর জানতে পাবে তখন এসো। আমি বললাম, যে আল্লাহ আপনাকে সত্য দীনসহ পাঠিয়েছেন তাহাঁর শপথ! আমি কাফির মুশরিকদের সামনে উচ্চঃস্বরে তৌহীদের বাণী ঘোষণা করব। (ইবন আব্বাস (রাদি.) বলেন, ) এই কথা বলে তিনি মসজিদে হারামে গমন করিলেন, কুরাইশের লোকজনও সেখানে হাজির ছিল। তিনি বলিলেন হে কুরাইশগণ! আমি নিশ্চিতভাবে সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, আল্লাহ ছাড়া কোন মাবুদ নেই এবং আমি আরো সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, মুহাম্মাদ (সাঃআঃ) আল্লাহর বান্দা ও তাহাঁর রাসুল। এতদশ্রবণে কুরাইশগণ বলে উঠল, ধর এই ধর্মত্যাগী লোকটিকে। তারা আমার দিকে এগিয়ে আসলো এবং আমাকে নির্মমভাবে প্রহার করিতে লাগল; যেন আমি মরে যাই। তখন আব্বাস (রাদি.) আমার নিকট পৌঁছে আমাকে ঘিরে রাখলেন। অতঃপর তিনি কুরাইশকে উদ্দেশ্য করে বলিলেন, তোমাদের বিপদ অবশ্যম্ভাবী। তোমরা গিফার বংশের জনৈক ব্যক্তিকে হত্যা করিতে উদ্যোগী হয়েছ অথচ তোমাদের ব্যবসা – বাণিজ্যের কাফেলাকে গিফার গোত্রের নিকট দিয়ে যাতায়াত করিতে হয়। এ কথা শুনে তারা সরে পড়ল। পরদিন ভোরবেলা কাবাগৃহে উপস্থিত হয়ে গতদিনের মতই আমি আমার ইসলাম গ্রহণের পূর্ণ ঘোষনা দিলাম। কুরাইশগণ বলে উঠলো, ধর এই ধর্মত্যাগী লোকটিকে। গতদিনের মত আজও তারা নির্মমভাবে আমাকে মারধর করলো। এই দিনও আব্বাস (রাদি.) এসে আমাকে রক্ষা করিলেন এবং কুরাইশদেরকে উদ্দেশ্য করে ঐ দিনের মত বক্তব্য রাখলেন। ইবন আব্বাস (রাদি.) বলেন, এটাই ছিল আবু যার (রাদি.) -এর ইসলাম গ্রহণের প্রথম ঘটনা।

৬১/১২. অধ্যায়ঃ যমযমের ঘটনা ও আরবের মূর্খতা।

৩৫২৩. আবু হুরায়রা (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ

নাবী (সাঃআঃ) বলেন, আসলাম, গিফার এবং মুযাইনাহ ও জুহানাহ গোত্রের কিছু অংশ অথবা জুহানাহর কিছু অংশ কিংবা মুযায়নাহর কিছু অংশ আল্লাহর নিকট অথবা বলেছেন কিয়ামতের দিন আসাদ, তামীম, হাওয়াযিন ও গাত্ফান গোত্র চেয়ে উত্তম বলে বিবেচিত হইবে।

৩৫২৪. ইব্ন আব্বাস (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, তুমি যদি আরবদের অজ্ঞতা সম্বন্ধে জানতে আগ্রহী হও, তবে সুরা আন্আমের ১৩০ আয়াতের অংশটুকু মনোযোগের সঙ্গে পাঠ কর। “অবশ্যই ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে তারা যারা নিজ সন্তানদেরকে হত্যা করেছে বোকামির দরুন ও অজ্ঞতাবশতঃ এবং হারাম করে নিয়েছে তা যা আল্লাহ তাদেরকে জীবিকা হিসেবে দিয়েছিলেন, কেবল আল্লাহ সম্বন্ধে মিথ্যা রচনা করার উদ্দেশ্যে। নিশ্চয় তারা বিপথগামী হয়েছে এবং তারা হিদায়াতপ্রাপ্তও ছিল না”। (আল-আনআম ১৪০)

Comments

Leave a Reply