জবেহ করার নিয়ম । শিকার ও কোন প্রকার জন্তু খাওয়া যায়

জবেহ করার নিয়ম । শিকার ও কোন প্রকার জন্তু খাওয়া যায়

জবেহ করার নিয়ম । শিকার ও কোন প্রকার জন্তু খাওয়া যায় , এই পর্বের হাদীস =২৬ টি (১২৫৪-১২৭৯) >> আল লুলু ওয়াল মারজান এর মুল সুচিপত্র দেখুন

পর্ব-৩৪ঃ শিকার, যব্‌হ ও কোন্ প্রকার জন্তু খাওয়া যায়

৩৪/১. প্রশিক্ষিত কুকুর দ্বারা শিকার করা।
৩৪/৩. প্রত্যেক বিষদাঁত বিশিষ্ট জন্তু ও প্রত্যেক নখর বিশিষ্ট পাখি খাওয়া হারাম।
৩৪/৪. সাগরের মৃত [বৈধ] জন্তু খাওয়া বৈধ।
৩৪/৫. গৃহপালিত গাধার গোশ্‌ত খাওয়া হারাম।
৩৪/৬. ঘোড়ার গোশ্‌ত খাওয়া।
৩৪/৭. দব্ব বা গিরগিটি খাওয়া বৈধ।
৩৪/৮. টিড্ডি বা ফড়িং খাওয়া বৈধ।
৩৪/৯. খরগোশ খাওয়া বৈধ।
৩৪/১০. যে সব জিনিস দিয়ে শিকার করা হয় এবং শত্রুর পশ্চাদ্ধাবণ করা হয় সেগুলো ব্যবহার করা বৈধ কিন্তু পাথরের ব্যবহার নিন্দনীয়।
৩৪/১১. খাঁচার বা বেঁধে রাখা পশু তীর বা অন্য কিছু দ্বারা বিদ্ধ করা নিষিদ্ধ।

৩৪/১. প্রশিক্ষিত কুকুর দ্বারা শিকার করা।

১২৫৪. আদী ইবনি হাতিম [রাদি.] হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ [সাঃআঃ]-কে জিজ্ঞেস করলামঃ হে আল্লাহ্‌র রসূল  [সাঃআঃ]! আমরা প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত কুকুরগুলোকে শিকারে পাঠিয়ে থাকি। তিনি বললেনঃ কুকুরগুলো তোমার জন্য যেটি ধরে রাখে সেটি খাও। আমি বললামঃ যদি ওরা হত্যা করে ফেলে? তিনি বললেনঃ যদি ওরা হত্যাও করে ফেলে। আমি বললামঃ আমরা তো ফলকের সাহায্যেও শিকার করে থাকি। তিনি বললেনঃ সেটি খাও, যেটি তীরে যখম করেছে; আর যেটি তীরের পার্শ্বের আঘাতে মারা গেছে সেটি খেও না।

[বোখারী পর্ব ৭২ অধ্যায় ৩ হাদীস নং ৫৪৭৭; মুসলিম ৩৪/১, হাঃ ১৯২৯] জবেহ করার নিয়ম -এই হাদীসটির তাহক্কিকঃ সহীহ হাদীস

১২৫৫. আদী ইবনি হাতিম [রাদি.] হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ [সাঃআঃ]-কে জিজ্ঞেস করলামঃ আমরা এমন সম্প্রদায়, যারা এ সকল কুকুরের দ্বারা শিকার করে থাকি। তিনি বললেনঃ তুমি যদি তোমার প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত কুকুরগুলোকে বিসমিল্লাহ পড়ে পাঠিয়ে থাক তাহলে ওরা যেগুলো তোমাদের জন্য ধরে রাখে, তা খাও; যদিও শিকারকে কুকুর হত্যা করে ফেলে। তবে যদি কুকুর শিকারের কিছুটা খেয়ে ফেলে [তাহলে খাবে না]। কেননা, তখন আমার আশঙ্কা হয় যে, সে শিকার নিজেরই উদ্দেশে ধরেছে। আর যদি তার সঙ্গে অন্য কুকুর মিলে যায়, তাহলে খাবে না।

[বোখারী পর্ব ৭২ অধ্যায় ৭ হাদীস নং ৫৪৮৩; মুসলিম ৩৪/১, হাঃ ১৯২৯] জবেহ করার নিয়ম -এই হাদীসটির তাহক্কিকঃ সহীহ হাদীস

১২৫৬. আদী ইবনি হাতিম [রাদি.] হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, আমি নাবী [সাঃআঃ]-কে পার্শ্বফলা বিহীন তীর [দ্বারা শিকার] সম্পর্কে জিজ্ঞেস করলাম। তিনি বলিলেন, যদি তীরের ধারালো পার্শ্ব আঘাত করে, তবে সে [শিকারকৃত জানোয়ারের গোশত] খাবে, আর যদি এর ধারহীন পার্শ্বের আঘাতে মারা যায়, তবে তা খাবে না। কেননা তা প্রহারের মৃত, যবহকৃত নয়। আমি বললাম, হে আল্লাহর রসূল  [সাঃআঃ]! আমি বিসমিল্লাহ পড়ে আমার [শিকারী] কুকুর ছেড়ে দিয়ে থাকি। পরে তার সাথে শিকারের কাছে [অনেক সময়] অন্য কুকুর দেখিতে পাই যার উপর আমি বিসমিল্লাহ পড়িনি এবং আমি জানি না, উভয়ের মধ্যে কে শিকার ধরেছে। তিনি বলিলেন, তুমি তা খাবে না। তুমি তো তোমার কুকুরের উপর বিসমিল্লাহ পড়েছ, অন্যটির উপর পড়নি।

[বোখারী পর্ব ৩৪ অধ্যায় ৩ হাদীস নং ২০৫৪; মুসলিম ৩৪/১, হাঃ ১৯২৯] জবেহ করার নিয়ম -এই হাদীসটির তাহক্কিকঃ সহীহ হাদীস

১২৫৭. আদী ইবনি হাতিম [রাদি.] হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, আমি নাবী [সাঃআঃ]-কে তীরের ফলকের আঘাত দ্বারা লব্ধ শিকার সম্পর্কে জিজ্ঞেস করলাম। উত্তরে নাবী [সাঃআঃ] বলিলেন, তীরের ধারালো অংশের দ্বারা যেটি নিহত হয়েছে সেটি খাও। আর ফলকের বাঁটের আঘাতে যেটি নিহত হয়েছে সেটি অকীয [অর্থাৎ থেতলে যাওয়া মৃতের অন্তর্ভুক্ত]। আমি তাঁকে কুকুরের দ্বারা লব্ধ শিকার সম্পর্কেও জিজ্ঞেস করলাম। উত্তরে তিনি বলিলেন, যে শিকারকে কুকুর তোমার জন্য ধরে রাখে সেটি খাও। কেননা, কুকুরের ঘায়েল করা যবাহর হুকুম রাখে। তবে তুমি যদি তোমার কুকুর বা কুকুরগুলোর সঙ্গে অন্য কুকুর পাও এবং তুমি আশঙ্কা কর যে, অন্য কুকুরটিও তোমার কুকুরের শিকার পাকড়াও করেছে এবং হত্যা করেছে, তা হলে তা খেও না। কেননা, তুমি তো কেবল নিজের কুকুরের উপর বিসমিল্লাহ বলেছ। অন্যের কুকুরের ক্ষেত্রে তা বলনি।

[বোখারী পর্ব ৭২ অধ্যায় ১ হাদীস নং ৫৪৭৫; মুসলিম ৩৪/১, হাঃ ১৯২৯] জবেহ করার নিয়ম -এই হাদীসটির তাহক্কিকঃ সহীহ হাদীস

১২৫৮. আদী ইবনি হাতিম [রহমাতুল্লাহি আলাইহি] হইতে বর্ণিতঃ

নাবী [সাঃআঃ] হইতে বর্ণিত। তিনি বলেছেনঃ তুমি যদি তোমার কুকুরকে বিসমিল্লাহ পড়ে পাঠাও, এরপর কুকুর শিকার পাকড়াও করে এবং মেরে ফেলে, তবে তুমি তা খেতে পার। আর যদি কুকুর কিছুটা খেয়ে ফেলে, তাহলে খাবে না। কেননা, সে তো নিজের জন্যই ধরেছে। আর যদি এমন কুকুরদের সঙ্গে মিশে যায়, যাদের উপর বিসমিল্লাহ পড়া হয়নি এবং সেগুলো শিকার ধরে মেরে ফেলে, তা হলে তা খাবে না। কেননা, তুমি তো জান না যে, কোন কুকুরটি হত্যা করেছে? আর যদি তুমি শিকারের প্রতি তীর নিক্ষেপ করে থাক; এরপর তা একদিন বা দুদিন পর এমতাবস্থায় হাতে পাও যে, তার গায়ে তোমার তীরের আঘাত ব্যতীত অন্য কিছু নেই, তাহলে খাও। আর যদি তা পানির মধ্যে পড়ে থাকে, তা হলে তা খাবে না।

[বোখারী পর্ব ৭২ অধ্যায় ৮ হাদীস নং ৫৪৮৪; মুসলিম ৩৪/১, হাঃ ১৯২৯] জবেহ করার নিয়ম -এই হাদীসটির তাহক্কিকঃ সহীহ হাদীস

১২৫৯. আবু সালাবা আল খুশানী [রাদি.] হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, আমি জিজ্ঞেস করলামঃ হে আল্লাহর নাবী [সাঃআঃ]! আমরা আহলে কিতাব সম্প্রদায়ের এলাকায় বসবাস করি। আমারা কি তাহাদের থালায় খেতে পারি? তাছাড়া আমরা শিকারের অঞ্চলে থাকি। তীর ধনুকের সাহায্যে শিকার করি এবং প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত ও প্রশিক্ষণবিহীন কুকুর দিয়ে শিকার করে থাকি। এমতাবস্থায় আমার জন্য কোন্‌টা বৈধ হইবে? উত্তরে তিনি [সাঃআঃ] বললেনঃ তুমি যে সকল আহলে কিতাবের কথা উল্লেখ করলে তাতে বিধান হলঃ যদি অন্য পাত্র পাও তাহাদের পাত্রে খাবে না। আর যদি না পাও, তাহলে তাহাদের পাত্রগুলো ধুয়ে নিয়ে তাতে আহার কর। আর যে প্রাণীকে তুমি তোমার তীর ধনুকের সাহায্যে শিকার করেছ এবং বিসমিল্লাহ পড়েছ, সেটি খাও। আর যে প্রাণীকে তুমি তোমার প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত কুকুর দ্বারা শিকার করেছ এবং বিসমিল্লাহ পড়েছ, সেটি খাও। আর যে প্রাণীকে তুমি তোমার প্রশিক্ষণবিহীন কুকুর দ্বারা শিকার করেছ, সেটি যদি যবহ করিতে পার তবে তা খেতে পার।

[বোখারী পর্ব ৭২ অধ্যায় ৪ হাদীস নং ৫৪৭৮; মুসলিম ৩৪/১, হাঃ ১৯৩০] জবেহ করার নিয়ম -এই হাদীসটির তাহক্কিকঃ সহীহ হাদীস

৩৪/৩. প্রত্যেক বিষদাঁত বিশিষ্ট জন্তু ও প্রত্যেক নখর বিশিষ্ট পাখি খাওয়া হারাম।

১২৬০. আবু সালাবা [রাদি.] হইতে বর্ণিতঃ

রাসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] দাঁত বিশিষ্ট সর্বপ্রকার হিংস্র জন্তু খেতে নিষেধ করিয়াছেন।

[বোখারী পর্ব ৭২ অধ্যায় ২৯ হাদীস নং ৫৫৩০; মুসলিম ৩৪/৩, হাঃ ১৯৩২] জবেহ করার নিয়ম -এই হাদীসটির তাহক্কিকঃ সহীহ হাদীস

৩৪/৪. সাগরের মৃত [বৈধ] জন্তু খাওয়া বৈধ।

১২৬১. জাবির ইবনি আবদুল্লাহ [রাদি.] হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] আমাদের তিনশ সওয়ারীর একটি সৈন্যবাহিনীকে কুরাইশদের একটি কাফেলার উপর সুযোগ মতো আক্রমণ চালানোর জন্য পাঠিয়েছিলেন। আবু উবাইদাহ ইবনিল জাররাহ্ [রাদি.] ছিলেন আমাদের সেনাপতি। আমরা অর্ধমাস সমুদ্র তীরে অবস্থান করলাম। ভয়ানক ক্ষুধা আমাদেরকে পেয়ে বসল। ক্ষুধার জ্বালায় গাছের পাতা খেতে থাকলাম। এ জন্যই এ সৈন্যবাহিনীর নাম রাখা হয়েছে জায়শুল খাবাত অর্থাৎ পাতাওয়ালা সেনাদল। এরপর সমুদ্র আমাদের জন্য আম্বর নামক একটি প্রাণী নিক্ষেপ করিল। আমরা অর্ধমাস ধরে তা থেকে খেলাম। এর চর্বি শরীরে লাগালাম। ফলে আমাদের শরীর পূর্বের মত হৃষ্টপুষ্ট হয়ে গেল। এরপর আবু উবাইদাহ[রাদি.] আম্বরটির শরীর থেকে একটি পাঁজর ধরে খাড়া করালেন। এরপর তাহাঁর সাথীদের মধ্যকার সবচেয়ে লম্বা লোকটিকে আসতে বলিলেন। সুফ্ইয়ান [রাদি.] আরেক বর্ণনায় বলেছেন, আবু উবাইদাহ [রাদি.] আম্বরটির পাঁজরের হাড়গুলোর মধ্য থেকে একটি হাড় ধরে খাড়া করালেন এবং [ঐ] লোকটিকে উটের পিঠে বসিয়ে এর নিচে দিয়ে অতিক্রম করালেন। জাবির বলেন, সেনাদলের এক ব্যক্তি [খাদ্যের অভাব দেখে] প্রথমে তিনটি উট যবেহ করেছিলেন, তারপর আরো তিনটি উট যবহ্ করেছিলেন, তারপর আরো তিনটি উট যবেহ করেছিলেন। এরপর আবু উবাইদাহ[রাদি.] তাকে [উট যবেহ করিতে] নিষেধ করিলেন।

[বোখারী পর্ব ৬৪ অধ্যায় ৬৬ হাদীস নং ৪৩৬১; মুসলিম ৩৪/৪, হাঃ ১৯৩৫] জবেহ করার নিয়ম -এই হাদীসটির তাহক্কিকঃ হাসান হাদীস

৩৪/৫. গৃহপালিত গাধার গোশ্‌ত খাওয়া হারাম।

১২৬২. আলী ইবনি আবু ত্বলিব [রাদি.] হইতে বর্ণিতঃ

রাসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] খাইবার যুদ্ধের দিন মহিলাদের মুতআহ [নির্দিষ্ট সময়ের জন্য বিয়ে] করা থেকে এবং গৃহপালিত গাধার গোশত খেতে নিষেধ করিয়াছেন।

[বোখারী পর্ব ৬৪ অধ্যায় ৩৯ হাদীস নং ৪২১৬; মুসলিম ৩৪/৪, হাঃ ১৪০৭] জবেহ করার নিয়ম -এই হাদীসটির তাহক্কিকঃ সহীহ হাদীস

১২৬৩. আবু সালাবা [রাদি.] হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেনঃ রাসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] গৃহপালিত গাধার গোশ্‌ত খাওয়া হারাম করিয়াছেন।

[বোখারী পর্ব ৭২ অধ্যায় ২৮ হাদীস নং ৫৫২৭; মুসলিম ৩৪/৫, হাঃ ১৯৩২] জবেহ করার নিয়ম -এই হাদীসটির তাহক্কিকঃ সহীহ হাদীস

১২৬৪. ইবনি উমার [রাদি.] হইতে বর্ণিতঃ

রাসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] খাইবার যুদ্ধের দিন গৃহপালিত গাধার গোশত খেতে নিষেধ করিয়াছেন

[বোখারী পর্ব ৬৪ অধ্যায় ৩৯ হাদীস নং ৪২১৭; মুসলিম ৩৪/৫, হাঃ ৫২১] জবেহ করার নিয়ম -এই হাদীসটির তাহক্কিকঃ সহীহ হাদীস

১২৬৫. [আবদুল্লাহ] ইবনি আবু আওফা [রাদি.] হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, খায়বারের যুদ্ধের সময় আমরা ক্ষুধায় কষ্ট ভোগ করছিলাম। খায়বার বিজয়ের দিন আমরা পালিত গাধার দিকে এগিয়ে গেলাম এবং তা যব্‌হ করলাম। যখন তা হাঁড়িতে ফুটছিল তখন রাসূলূল্লাহ্ [সাঃআঃ]-এর ঘোষণা দানকারী ঘোষণা দিলঃ তোমরা হাঁড়িগুলো উপুড় করে ফেল। গাধার গোশত হইতে তোমরা কিছুই খাবে না। আবদুল্লাহ [ইবনি আবু আওফা] [রাদি.] বলেন, আমরা বললাম, আল্লাহর রসূল  [সাঃআঃ] এ কারণে নিষেধ করিয়াছেন, যেহেতু তা হইতে খুমুস বের করা হয়নি। [রাবী বলেন] আর অন্যরা বলিলেন, বরং তিনি এটাকে অবশ্যই হারাম করিয়াছেন।

[বোখারী পর্ব ৫৭ অধ্যায় ২০ হাদীস নং ৩১৫৫; মুসলিম ৩৪/৫ হাঃ ১৯৩৭] জবেহ করার নিয়ম -এই হাদীসটির তাহক্কিকঃ সহীহ হাদীস

১২৬৬. আবদুল্লাহ ইবনি আবু আওফা [রাদি.] হইতে বর্ণিতঃ

[খাইবার যুদ্ধে] তাঁরা নাবী [সাঃআঃ]-এর সঙ্গে ছিলেন। তাঁরা গাধার গোশত পেলেন। তাঁরা তা রান্না করিলেন। এমন সময়ে নাবী [সাঃআঃ]-এর ঘোষণাকারী ঘোষণা করিলেন, পাতিলগুলো উল্টে ফেল।

[বোখারী পর্ব ৬৪ অধ্যায় ৩৯ হাদীস নং ৪২২১-৪২২২; মুসলিম ৩৪/৫, হাঃ ১৯৩৮] জবেহ করার নিয়ম -এই হাদীসটির তাহক্কিকঃ সহীহ হাদীস

১২৬৭, ইবনি আব্বাস [রাদি.] হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, আমি জানি না, গৃহপালিত গাধাগুলো মানুষের মালপত্র বহন করে, কাজেই তা গোশত খেলে মানুষের বোঝা বহনকারী পশু নিঃশেষ হয়ে যাবে, এজন্য রাসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] তা খেতে নিষেধ করেছিলেন, না-খাইবারের দিনে এর গোশত স্থায়ীভাবে হারাম ঘোষণা দিয়েছেন।

[বোখারী পর্ব ৬৪ অধ্যায় ৩৯ হাদীস নং ৪২২৭; মুসলিম ৩৪/৫, হাঃ ১৯৩৯] জবেহ করার নিয়ম -এই হাদীসটির তাহক্কিকঃ সহীহ হাদীস

১২৬৮. সালামাহ ইবনিল আকওয়া [রাদি.] হইতে বর্ণিতঃ

নাবী [সাঃআঃ] খায়বার যুদ্ধে আগুন প্রজ্জ্বলিত দেখে জিজ্ঞেস করিলেন, এ আগুন কেন জ্বালানো হচ্ছে? সাহাবীগণ বলিলেন, গৃহপালিত গাধার গোশত রান্না করার জন্য। তিনি [সাঃআঃ] বলিলেন, পাত্রটি ভেঙ্গে দাও এবং গোশত ফেলে দাও। তাঁরা বলিলেন, আমরা গোশত ফেলে দিয়ে পাত্রটা ধুয়ে নিব কি? তিনি বলিলেন, ধুয়ে নাও।

[বোখারী পর্ব ৪৯ অধ্যায় ৩২ হাদীস নং ২৪৭৭; মুসলিম ৩৪/৫, হাঃ ১৮০২] জবেহ করার নিয়ম -এই হাদীসটির তাহক্কিকঃ সহীহ হাদীস

৩৪/৬. ঘোড়ার গোশ্‌ত খাওয়া।

১২৬৯. জাবির ইবনি আবদুল্লাহ [রাদি.] হইতে বর্ণিতঃ.

রাসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] খাইবারের যুদ্ধের দিন [গৃহপালিত] গাধার গোশত খেতে নিষেধ করিয়াছেন এবং ঘোড়ার গোশত খেতে অনুমতি দিয়েছেন।

[বোখারী পর্ব ৬৪ অধ্যায় ৩৯ হাদীস নং ৪২১৯; মুসলিম ৩৪/৬, হাঃ ১৯৪১] জবেহ করার নিয়ম -এই হাদীসটির তাহক্কিকঃ সহীহ হাদীস

১২৭০. আসমা [রাদি.] হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেনঃ রাসূলুল্লাহ [সাঃআঃ]-এর আমালে আমরা একটি ঘোড়া [নাহর] যব্‌হ্ করেছি। পরে আমরা সেটি খেয়েছি।

[বোখারী পর্ব ৭২ অধ্যায় ২৪ হাদীস নং ৫৫১১; মুসলিম ৩৪/৬, হাঃ ১৯৪২] জবেহ করার নিয়ম -এই হাদীসটির তাহক্কিকঃ সহীহ হাদীস

৩৪/৭. দব্ব বা গিরগিটি খাওয়া বৈধ।

১২৭১. ইবনি উমার [রাদি.] হইতে বর্ণিতঃ

নাবী [সাঃআঃ] বলেছেনঃ দব্ব* [মরু অঞ্চলের এক প্রকার প্রাণী] আমি খাই না, আর হারামও বলি না।

[বোখারী পর্ব ৭২ অধ্যায় ৩৩ হাদীস নং ৫৫৩৬; মুসলিম ৩৪/৭, হাঃ ১৯৪৩] *দব্বঃ দব্ব হল মরুভূমিতে বিচরণশীল গিরগিটির ন্যায় এক প্রকার প্রাণী যা হালাল। জবেহ করার নিয়ম -এই হাদীসটির তাহক্কিকঃ সহীহ হাদীস

১২৭২. ইবনি উমার [রাদি.] হইতে বর্ণিতঃ

নাবী [সাঃআঃ]-এর সাহাবীদের মাঝে কতিপয় ব্যক্তি সমবেত ছিলেন, তাহাদের মাঝে সাদও ছিলেন, তারা গোশ্‌ত খাচ্ছিলেন। এমন সময় নাবী [সাঃআঃ]-এর সহধর্মিণীদের কেউ তাহাদের ডেকে বলিলেন যে, এটা দবের গোশ্‌ত। তারা [আহার থেকে] বিরত রইলেন। তখন রাসূলুল্লাহ্ [সাঃআঃ] বললেনঃ খাও বা আহার কর, এটা হালাল। কিংবা তিনি বলেছিলেনঃ এটা [খেতে] কোন অসুবিধে নেই। তবে এটা আমার খাদ্য নয়।

[বোখারী পর্ব ৯৫ অধ্যায় ৬ হাদীস নং ৭২৬৭; মুসলিম ৩৪/৭, হাঃ ১৯৪৪] জবেহ করার নিয়ম -এই হাদীসটির তাহক্কিকঃ সহীহ হাদীস

১২৭৩. খালিদ ইবনি ওয়ালীদ [রাদি.] হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, তিনি রাসূলুল্লাহ [সাঃআঃ]-এর সঙ্গে মাইমূনাহ [রাদি.]-এর গৃহে প্রবেশ করিলেন। মাইমূনাহ [রাদি.] তাহাঁর ও ইবনি আব্বাসের খালা ছিলেন। তিনি তাহাঁর কাছে একটি ভুনা যব্ব দেখিতে পেলেন, যা নজ্‌দ থেকে তাহাঁর [মাইমূনাহ্‌র] বোন হুফাইদা বিন্‌ত হারিস নিয়ে এসে ছিলেন। মাইমূনাহ [রাদি.] যবটি রাসূলুল্লাহ [সাঃআঃ]-এর সামনে উপস্থিত করিলেন। তাহাঁর অভ্যাস ছিল, কোন খাদ্যের নাম ও তার বিবরণ বলে না দেয়া পর্যন্ত তিনি খুব কমই তার প্রতি হাত বাড়াতেন। তিনি যব এর দিকে হাত বাড়ালে উপস্থিত মহিলাদের মধ্য থেকে একজন বললঃ তোমরা রাসূলুল্লাহ [সাঃআঃ]-এর সামনে যা পেশ করছ সে সম্বন্ধে তাঁকে অবহিত কর। তারপর সে মহিলাই বললঃ হে আল্লাহ্‌র রসূল  [সাঃআঃ]! ওটা যব। এ কথা শুনে রাসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] তাহাঁর হাত তুলে ফেললেন। খালিদ ইবনি ওয়ালীদ [রাদি.] জিজ্ঞেস করলেনঃ হে আল্লাহ্‌র রসূল  [সাঃআঃ]! যব খাওয়া কি হারাম? তিনি বললেনঃ না। কিন্তু যেহেতু এটি আমাদের এলাকায় নেই। তাই এটি খাওয়া আমি পছন্দ করি না। খালিদ [রাদি.] বলেনঃ আমি সেটি টেনে নিয়ে খেতে থাকলাম। আর রাসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] আমার দিকে তাকিয়ে রইলেন।

[বোখারী পর্ব ৭০ অধ্যায় ১০ হাদীস নং ৫৩৯১; মুসলিম ৩৪/৭, হাঃ ১৯৪৫, ১৭৪৬] জবেহ করার নিয়ম -এই হাদীসটির তাহক্কিকঃ সহীহ হাদীস

১২৭৪. ইবনি আব্বাস [রাদি.] হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, ইবনি আব্বাসের খালা উম্মু হুফায়দ [রাদি.] একদা নাবী [সাঃআঃ]-এর খিদমাতে পনীর, ঘি ও দব্ব হাদিয়া পাঠালেন। কিন্তু নাবী [সাঃআঃ] শুধু পনীর ও ঘি খেলেন আর দব্ব অরুচিকর হওয়ায় বাদ দিলেন। ইবনি আব্বাস [রাদি.] বলেন, রাসূলুল্লাহ [সাঃআঃ]-এর দস্তরখানে [যব] খাওয়া হয়েছে। তা হারাম হলে রাসূলুল্লাহ [সাঃআঃ]-এর দস্তরখানে খাওয়া হত না।

[বোখারী পর্ব ৫১ অধ্যায় ৭ হাদীস নং ২৫৭৫; মুসলিম ৩৪/৭ হাঃ ১৯৪৭] জবেহ করার নিয়ম -এই হাদীসটির তাহক্কিকঃ সহীহ হাদীস

৩৪/৮. টিড্ডি বা ফড়িং খাওয়া বৈধ।

১২৭৫. ইবনি আবু আওফা [রাদি.] হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেনঃ আমরা নাবী [সাঃআঃ]-এর সঙ্গে সাতটি কিংবা ছয়টি যুদ্ধে অংশগ্রহণ করি। আমরা তাহাঁর সঙ্গে পঙ্গপাল খাই।

[বোখারী পর্ব ৭২ অধ্যায় ১৩ হাদীস নং ৫৪৯৫; মুসলিম ৩৪/৮, হাঃ ১৯৫২] জবেহ করার নিয়ম -এই হাদীসটির তাহক্কিকঃ সহীহ হাদীস

৩৪/৯. খরগোশ খাওয়া বৈধ।

১২৭৬. আনাস [রাদি.] হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, [মাক্কাহর অদূরে] মার্‌রায্ যাহরান নামক স্থানে আমরা একটি খরগোশ তাড়া করলাম। লোকেরা সেটার পিছনে ধাওয়া করে ক্লান্ত হয়ে পড়ল। অবশেষে আমি সেটাকে পেয়ে গেলাম এবং ধরে আবু ত্বলহা [রাদি.]-এর নিকট নিয়ে গেলাম। তিনি সেটাকে যব্‌হ করে তার পাছা অথবা রাবী বলেন, দু উরু রাসূলুল্লাহ [সাঃআঃ]-এর খিদমতে পাঠালেন। {শুবাহ [রহমাতুল্লাহি আলাইহি] বলেন,} দুটি উরুই, এতে কোন সন্দেহ নেই। তখন নাবী [সাঃআঃ] তা গ্রহণ করেছিলেন।

[বোখারী পর্ব ৫১ অধ্যায় ৫ হাদীস নং ২৫৭২; মুসলিম ৩৪/৪, হাঃ ১৯৫৩] জবেহ করার নিয়ম -এই হাদীসটির তাহক্কিকঃ সহীহ হাদীস

৩৪/১০. যে সব জিনিস দিয়ে শিকার করা হয় এবং শত্রুর পশ্চাদ্ধাবণ করা হয় সেগুলো ব্যবহার করা বৈধ কিন্তু পাথরের ব্যবহার নিন্দনীয়।

১২৭৭. আবদুল্লাহ ইবনি মুগাফ্‌ফাল [রাদি.] হইতে বর্ণিতঃ

তিনি এক ব্যক্তিকে দেখলেন, সে ছোট ছোট পাথর নিক্ষেপ করছে। তখন তিনি তাকে বললেনঃ পাথর নিক্ষেপ করো না। কেননা, রাসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] পাথর ছুঁড়তে নিষেধ করিয়াছেন অথবা রাবী বলেছেনঃ পাথর ছোঁড়াকে তিনি অপছন্দ করিতেন এবং নাবী [সাঃআঃ] বলেছেনঃ এর দ্বারা কোন প্রাণী শিকার করা হয় না এবং কোন শত্রুকেও ঘায়েল করা হয় না। তবে এটি কারো দাঁত ভেঙ্গে ফেলতে পারে এবং চোখ ফুঁড়ে দিতে পারে। তারপর তিনি আবার তাকে পাথর ছুঁড়তে দেখলেন। তখন তিনি বললেনঃ আমি তোমাকে রাসূলুল্লাহ [সাঃআঃ]-এর হাদীস বর্ণনা করেছিলাম যে, তিনি পাথর নিক্ষেপ করিতে নিষেধ করিয়াছেন অথবা তিনি তা অপছন্দ করিয়াছেন। অথচ তুমি পাথর নিক্ষেপ করছ? আমি তোমার সঙ্গে কথাই বলব না- এতকাল এতকাল পর্যন্ত

। [বোখারী পর্ব ৭২ অধ্যায় ৫ হাদীস নং ৫৪৭৯; মুসলিম ৩৪/১০, হাঃ ১৯৫৪] জবেহ করার নিয়ম -এই হাদীসটির তাহক্কিকঃ সহীহ হাদীস

৩৪/১১. খাঁচার বা বেঁধে রাখা পশু তীর বা অন্য কিছু দ্বারা বিদ্ধ করা নিষিদ্ধ।

১২৭৮. আনাস [রাদি.] হইতে বর্ণিতঃ

নাবী [সাঃআঃ] জীবজন্তুকে বেঁধে তীর নিক্ষেপ করিতে নিষেধ করিয়াছেন।

[বোখারী পর্ব ৭২ অধ্যায় ২৫ হাদীস নং ৫৫১৩; মুসলিম ৩৪/১২, হাঃ ১৯৫৬] জবেহ করার নিয়ম -এই হাদীসটির তাহক্কিকঃ সহীহ হাদীস

১২৭৯. সাঈদ ইবনি যুবায়র [রহমাতুল্লাহি আলাইহি] হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বললেনঃ আমি ইবনি উমার[রাদি.]-এর কাছে ছিলাম। এরপর আমরা একদল তরুণ কিংবা তিনি বলেছেন, একদল মানুষের কাছ দিয়ে যাবার সময় দেখলাম, তারা একটি মুরগী বেঁধে তার প্রতি তীর ছুঁড়ছে। তারা যখন ইবনি উমার[রাদি.]-কে দেখিতে পেল, তখন তারা তা থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে গেল। ইবনি উমার[রাদি.] বললেনঃ এ কাজ কে করেছে? এ কাজ যে করে নাবী [সাঃআঃ] তাহাঁর উপর অভিশাপ দিয়েছেন।

[বোখারী পর্ব ৭২ অধ্যায় ২৫ হাদীস নং ৫৫১৫; মুসলিম ৩৪/১১, হাঃ ১৯৫৮] জবেহ করার নিয়ম -এই হাদীসটির তাহক্কিকঃ সহীহ হাদীস


by

Comments

One response to “জবেহ করার নিয়ম । শিকার ও কোন প্রকার জন্তু খাওয়া যায়”

Leave a Reply