চাষাবাদ , জমি ভাগে চাষ করা ও গাছ লাগানো সম্পর্কে

চাষাবাদ , জমি ভাগে চাষ করা ও গাছ লাগানো সম্পর্কে

চাষাবাদ , জমি ভাগে চাষ করা ও গাছ লাগানো সম্পর্কে >> বুখারী শরীফ এর মুল সুচিপত্র পড়ুন

পর্বঃ ৪১, চাষাবাদ, অধ্যায়ঃ (১-২১)=২১টি

৪১/১. অধ্যায়ঃ আহারের জন্য খাদ্যশস্য উৎপাদন এবং ফলবান বৃক্ষ রোপণের গুরুত্ব ।
৪১/২. অধ্যায়ঃ শুধু কৃষি সরঞ্জাম নিয়ে ব্যস্ত থাকার অথবা নির্দেশিত সীমালঙ্ঘন করার পরিণতি সম্পর্কে সতর্কীকরণ।
৪১/৩. অধ্যায়ঃ ক্ষেত-খামার রক্ষাণাবেক্ষণের জন্য কুকুর পালা।
৪১/৪. অধ্যায়ঃ চাষাবাদের কাজে গরু ব্যবহার করা।
৪১/৫. অধ্যায়ঃ যখন কোন ব্যক্তি বলিল যে, তুমি খেজুর ইত্যাদির বাগানে মেহনত কর, আর তুমি উৎপাদিত ফলে আমার অংশীদার হইবে।
৪১/৬. অধ্যায়ঃ খেজুর গাছ ও অন্যান্য গাছ কাটা প্রসঙ্গে ।
৪১/৭. অধ্যায়ঃ
৪১/৮. অধ্যায়ঃ অর্ধেক বা এর অনুরূপ পরিমাণ ফসলের শর্তে ভাগে চাষাবাদ করা।
৪১/৯. অধ্যায়ঃ ভাগচাষে যদি বছর নির্ধারণ না করে।
৪১/১০. অধ্যায়ঃ
৪১/১১. অধ্যায়ঃ ইয়াহূদীদের সাথে জমি ভাগে চাষ করা।
৪১/১২. অধ্যায়ঃ ভাগচাষে যেসব শর্তারোপ করা মাকরূহ বা অপছন্দনীয়।
৪১/১৩. অধ্যায়ঃ যদি কেউ অন্যদের সম্পদ দিয়ে তাদের অনুমতি ব্যতিরেকে কৃষি কাজ করে এবং তাতে তাদের কল্যাণ নিহিত থাকে তবে তা বৈধ।
৪১/১৪. অধ্যায়ঃ নাবী (সাঃআঃ) -এর সাহাবীগণের ওয়াক্‌ফ ও খাজনার জমি এবং তাঁদের কৃষিকাজ ও লেনদেন প্রসঙ্গে।
৪১/১৫. অধ্যায়ঃ যে ব্যক্তি অনাবাদী জমি চাষ করে।
৪১/১৬. অধ্যায়ঃ
৪১/১৭. অধ্যায়ঃ জমির মালিক বলিল, আমি তোমাকে ততদিনের জন্য অবস্থান করিতে দেব যতদিন আল্লাহ তাআলা তোমাকে অবস্থান করিতে দেন এবং কোন নিদিষ্ট সময়ের উল্লেখ করিল না এমতাবস্থায় তারা একসাথে যতদিন রাযি থাকে ততদিন- এ চুক্তি বলবৎ থাকবে।
৪১/১৮. অধ্যায়ঃ নাবী (সাঃআঃ)-এর সাহাবীগণ (রাদি.) কৃষিকাজ ও ফল-ফসল উত্পাদনে একে অপরকে সহায়তা করিতেন তার বিবরণ ।
৪১/১৯. অধ্যায়ঃ সোনা-রূপার বিনিময়ে জমি কিরায়া (নগদ বিক্রি) করা।
৪১/২০. অধ্যায়ঃ
৪১/২১. অধ্যায়ঃ গাছ লাগানো সম্পর্কে।

৪১/১. অধ্যায়ঃ আহারের জন্য খাদ্যশস্য উৎপাদন এবং ফলবান বৃক্ষ রোপণের গুরুত্ব ।

মহান আল্লাহর বাণীঃ তোমরা যে বীজ বপন কর, সে সম্পর্কে চিন্তা করেছ কি? তোমরা কি তাতে অঙ্কুরিত কর, না আমিই অঙ্কুরিত করি? আমি ইচ্ছা করলে তাকে খড়-কুটা করে দিতে পারি।” (ওয়াকিয়াহঃ ৬৩-৬৫)

২৩২০. আনাস ইবনে মালিক (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, নাবী (সাঃআঃ) বলেছেন, যে কোন মুসলমান ফলবান গাছ রোপণ করে কিংবা কোন ফসল ফলায় আর তা হইতে পাখী কিংবা মানুষ বা চতুষ্পদ জন্তু খায় তবে তা তার পক্ষ হইতে সদাকা বলে গণ্য হইবে।

মুসলিম (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) …… আনাস (রাদি.) সূত্রে নাবী (সাঃআঃ) হইতে হাদীসটি বর্ণিত হয়েছে।

৪১/২. অধ্যায়ঃ শুধু কৃষি সরঞ্জাম নিয়ে ব্যস্ত থাকার অথবা নির্দেশিত সীমালঙ্ঘন করার পরিণতি সম্পর্কে সতর্কীকরণ।

২৩২১. আবু উমামাহ বাহিলী (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, লাঙ্গলের ফাল এবং কিছু কৃষি সরঞ্জাম দেখে বলিলেন, আমি নাবী (সাঃআঃ)- কে বলিতে শুনিয়াছি এটা যে সম্প্রদায়ের ঘরে প্রবেশ করে, আল্লাহ সেখানে অপমান প্রবেশ করান। রাবী মুহাম্মাদ [ইবনু যিয়াদ (রহমাতুল্লাহি আলাইহি)] বলেন, আবু উমামাহ (রাদি.)-এর নাম হল সুদাই ইবনু আজলান।

৪১/৩. অধ্যায়ঃ ক্ষেত-খামার রক্ষাণাবেক্ষণের জন্য কুকুর পালা।

২৩২২. আবু হুরাইরা (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, আল্লাহর রাসুল (সাঃআঃ) বলেছেন, যে ব্যক্তি শস্য ক্ষেতের পাহারা কিংবা পশুর হিফাযতের উদ্দেশ্য ছাড়া অন্য কোন উদ্দেশ্যে কুকুর পোষে, প্রতিদিন তার নেক আমল হইতে এক কীরাত পরিমাণ কমতে থাকবে। ইবনু সীরীন ও আবু সালিহ (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) আবু হুরাইরা (রাদি.) সূত্রে নাবী (সাঃআঃ) হইতে বর্ণনা করেনঃ বকরী অথবা ক্ষেতের হিফাযত কিংবা শিকারের উদ্দেশ্য ছাড়া।

আবু হাযিম (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) আবু হুরাইরা (রাদি.) সূত্রে নাবী (সাঃআঃ) হইতে বর্ণনা করেন, শিকার ও পশুর হিফাযত করার কুকুর।

২৩২৩. সুফিয়ান ইবনু আবু যুহাইর (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ

যিনি আয্‌দ-শানূআ গোত্রের লোক, তিনি নাবী (সাঃআঃ)-এর একজন সাহাবী ছিলেন। তিনি বলেন, আমি আল্লাহর রাসুল (সাঃআঃ)- কে বলিতে শুনিয়াছি, যে ব্যক্তি এমন কুকুর পোষে যা ক্ষেত ও গবাদী পশুর হিফাযতের কাজে লাগে না, প্রতিদিন তার নেক আমল হইতে এক কীরাত পরিমাণ কমতে থাকে। আমি বললাম, আপনি কি এটা আল্লাহর রাসুল (সাঃআঃ) হইতে শুনেছেন? তিনি বলিলেন, হ্যাঁ, এ মসজিদের প্রতিপালকের কসম (আমি তাহাঁর কাছেই শুনিয়াছি)।

৪১/৪. অধ্যায়ঃ চাষাবাদের কাজে গরু ব্যবহার করা।

২৩২৪. আবু হুরাইরা (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ

নাবী (সাঃআঃ) বলেছেন, এক ব্যক্তি একটি গরুর উপর সাওয়ার ছিল, তখন গরুটি সে ব্যক্তির দিকে লক্ষ্য করে বলিল, আমাকে এ কাজের জন্য সৃষ্টি করা হয়নি। আমাকে চাষাবাদ তথা ক্ষেতের কাজের জন্য সৃষ্টি করা হয়েছে। নাবী (সাঃআঃ) বলিলেন, আমি, আবু বক্‌র ও উমার (রাদি.) এটা বিশ্বাস করি। তিনি আরো বলিলেন, এক নেকড়ে বাঘ একটি বকরী ধরেছিল, রাখাল তাকে ধাওয়া করিল। নেকড়ে বাঘটা তাকে বলিল, সেদিন হিংস্র জন্তুর প্রাধান্য হইবে, যেদিন আমি ছাড়া কেউ তার রাখাল থাকবে না, সেদিন কে তাকে রক্ষা করিবে? নাবী (সাঃআঃ) বলিলেন, আমি, আবু বক্‌র ও উমার (রাদি.) এটা বিশ্বাস করি। আবু সালামাহ (রাদি.) বলেন, তারা দুজন [আবু বক্‌র ও উমার (রাদি.)] সেদিন মজলিসে হাযির ছিলেন না।

৪১/৫. অধ্যায়ঃ যখন কোন ব্যক্তি বলিল যে, তুমি খেজুর ইত্যাদির বাগানে মেহনত কর, আর তুমি উৎপাদিত ফলে আমার অংশীদার হইবে।

২৩২৫. আবু হুরাইরা (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, আনসাররা নাবী (সাঃআঃ)- কে বলিলেন, আমাদের এবং আমাদের ভাই (মুহাজির)- দের মধ্যে খেজুরের বাগান ভাগ করে দিন। নাবী (সাঃআঃ) বলিলেন, না। তখন তাঁরা (মুহাজিরগণকে) বলিলেন, আপনারা আমাদের বাগানে কাজ করুন, আমরা আপনাদেরকে ফলে অংশীদার করব। তাঁরা বলিলেন, আমরা শুনলাম এবং মানলাম।

৪১/৬. অধ্যায়ঃ খেজুর গাছ ও অন্যান্য গাছ কাটা প্রসঙ্গে ।

আনাস (রাদি.) বলেন, নাবী (সাঃআঃ) খেজুর গাছ কেটে ফেলার আদেশ দেন এবং তা কেটে ফেলা হয় ।

২৩২৬. আবদুল্লাহ ইবনু উমার (রাদি.) সূত্রে নাবী (সাঃআঃ) হইতে হইতে বর্ণিতঃ

নাবী (সাঃআঃ) বনূ নাযির গোত্রের বুওয়াইরা নামক স্থানে অবস্থিত বাগানটির খেজুর গাছ জ্বালিয়ে দিয়েছেন এবং বৃক্ষ কেটে ফেলেছেন। এ সম্পর্কে হাস্‌সান (রাদি.) (তাহাঁর রচিত কবিতায়) বলেছেন, বুওয়াইরা নামক স্থানে অবস্থিত বাগানটিতে দাউ দাউ করে আগুন জ্বলছে আর বনূ লূয়াই গোত্রের সর্দাররা তা সহজে মেনে নিল।

৪১/৭. অধ্যায়ঃ

২৩২৭. রাফি‌ ইবনু খাদীজ (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, মদীনাবাসীর মধ্যে বেশী জমিন আমাদের ছিল। আমরা ভাগে জমিন চাষ করিতে দিতাম এবং সে ক্ষেতের এক নির্দিষ্ট অংশ জমির মালিকের জন্য নির্ধারিত করে দিতাম। তিনি বলেন, কখনো এ অংশের উপর দুর্যোগ আসত, অন্য অংশ নিরাপদ থাকত। আবার কখনো অন্য অংশের উপর দুর্যোগ আসত আর এ অংশ নিরাপদ থাকত। আমাদের এরূপ করিতে নিষেধ করে দেয়া হয়েছিল। আর সে সময় সোনা-রূপার (বিনিময়ে জমি চাষ করার) প্রচলন ছিল না।

৪১/৮. অধ্যায়ঃ অর্ধেক বা এর অনুরূপ পরিমাণ ফসলের শর্তে ভাগে চাষাবাদ করা।

এবং কাইস ইবনু মুসলিম (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) আবু জা‌ফর (রাদি.) হইতে বর্ণনা করেন। তিনি বলেন, মদীনাতে মুহাজিরদের এমন কোন পরিবার ছিল না, যারা এক-তৃতীয়াংশ কিংবা এক-চতুর্থাংশ ফসলের শর্তে ভাগে চাষ করিতেন না।  আলী, সাদ ইবনু মালিক, আবদুল্লাহ ইবনু মাসঊদ (রাদি.) উমার ইবনু আবদুল আযীয, কাসিম, উরওয়াহ (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) এবং আবু বকর, উমার ও আলী (রাদি.) এর বংশধর এবং ইবনু সীরীন (রহমাতুল্লাহি আলাইহি)- ও ভাগে চাষ করিয়াছেন। আবদুর রহমান ইবনু আসওয়াদ (রাদি.) বলেন, আমি আবদুর রহমান ইবনু ইয়াযীদের ক্ষেতে শরীক ছিলাম। উমার (রাদি.) লোকেদের সাথে এ শর্তে জমি বর্গা দিয়েছেন যে, উমার (রাদি.) বীজ দিলে তিনি ফসলের অর্ধেক পাবেন। আর যদি তারা বীজ দেয় তবে তাদের জন্য এই পরিমাণ হইবে। হাসান (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) বলেন, যদি ক্ষেত তাদের মধ্যে কোন একজনের হয়, আর দুজনেই তাতে খরচ করে, তা হলে উত্পন্ন ফসল সমান হারে ভাগ করে নেয়ার মধ্যে কোন দোষ নেই। যুহরী (রহমাতুল্লাহি আলাইহি)- ও এ মত পোষণ করেন। হাসান (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) বলেন, আধা-আধি শর্তে তুলা চাষ করিতে কোন দোষ নেই। ইবরাহীম, ইবনু সীরীন, আতা, হাকাম, যুহরী ও কাতাদাহ (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) বলেন, তাঁতীকে এক-তৃতীয়াংশ বা এক চতুর্থাংশের শর্তে কাপড় বুনতে দেয়ায় কোন দোষ নেই। মামার (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) বলেন, (উপার্জিত অর্থের) এক-তৃতীয়াংশ বা এক-চতুর্থাংশের শর্তে সময় নিদিষ্ট করে গবাদি পশু ভাড়া দেয়াতে কোন দোষ নেই।

২৩২৮. আবদুল্লাহ ইবনু উমার (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ

নাবী (সাঃআঃ) খায়বারবাসীদেরকে উত্পাদিত ফল বা ফসলের অর্ধেক ভাগের শর্তে জমি বর্গা দিয়েছিলেন। তিনি নিজের সহধর্মিণীদেরকে একশ ওসক দিতেন, এর মধ্যে ৮০ ওসক খুরমা ও ২০ ওসক যব। উমার (রাদি.) (তাহাঁর খিলাফতকালে খায়বারের) জমি বন্টন করেন। তিনি নাবী (সাঃআঃ)-এর সহধর্মিণীদের ইখতিয়ার দিলেন যে, তাঁরা জমি ও পানি নিবেন, না কি তাদের জন্য ওটাই চালু থাকবে, যা নাবী (সাঃআঃ)-এর যামানায় ছিল। তখন তাদের কেউ জমি নিলেন আর কেউ ওসক নিতে রাজী হলেন। আয়েশা (রাদি.) জমিই নিয়েছিলেন।

৪১/৯. অধ্যায়ঃ ভাগচাষে যদি বছর নির্ধারণ না করে।

২৩২৯. ইবনু উমার (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, নাবী (সাঃআঃ) উত্পাদিত ফল কিংবা ফসলের অর্ধেক শর্তে খায়বারের জমি বর্গা দিয়েছিলেন।

৪১/১০. অধ্যায়ঃ

২৩৩০. আমর (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, আমি তাউস (রহমাতুল্লাহি আলাইহি)- কে বললাম, আপনি যদি বর্গাচাষ ছেড়ে দিতেন, (তাহলে খুব ভাল হত) কেননা, লোকেদের ধারণা যে, নাবী (সাঃআঃ) তা নিষেধ করিয়াছেন। তাউস (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) বলিলেন, হে আমর! আমি তো তাদেরকে বর্গাচাষ করিতেই দিই এবং তাদের সাহায্য করি এবং তাদের মধ্যে সবচেয়ে জ্ঞানী অর্থাৎ ইবনু আব্বাস (রাদি.) আমাকে বলেছেন, নাবী (সাঃআঃ) বর্গাচাষ নিষেধ করেননি। তবে তিনি বলেছেন, তোমাদের কেউ তার ভাইকে জমি দান করুক, এটা তার ভাইয়ের কাছ হইতে নিদিষ্ট উপার্জন গ্রহণ করার চেয়ে উত্তম।

৪১/১১. অধ্যায়ঃ ইয়াহূদীদের সাথে জমি ভাগে চাষ করা।

২৩৩১. ইবনু উমার (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ

আল্লাহর রাসুল (সাঃআঃ) খায়বারের জমি ইয়াহূদীদেরকে এ শর্তে বর্গা দিয়েছিলেন যে, তারা তাতে পরিশ্রম করে কৃষি কাজ করিবে এবং উত্পাদিত ফসলের অর্ধেক তারা পাবে।

৪১/১২. অধ্যায়ঃ ভাগচাষে যেসব শর্তারোপ করা মাকরূহ বা অপছন্দনীয়।

২৩৩২. রাফি (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, মদীনাবাসীদের মধ্যে ফসলের জমি আমাদের বেশী ছিল। আমাদের মধ্যে কেউ তার জমি ইজারা দিত এবং বলত, জমির এ অংশ আমার আর এ অংশ তোমার। কখনো এক অংশে ফসল হত আর অন্য অংশে হত না। নাবী (সাঃআঃ) তাদেরকে এরূপ করিতে নিষেধ করিয়াছেন।

৪১/১৩. অধ্যায়ঃ যদি কেউ অন্যদের সম্পদ দিয়ে তাদের অনুমতি ব্যতিরেকে কৃষি কাজ করে এবং তাতে তাদের কল্যাণ নিহিত থাকে তবে তা বৈধ।

২৩৩৩.আবদুল্লাহ ইবনু উমার (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ

নাবী (সাঃআঃ) বলেছেন, একবার তিন জন লোক পথ চলছিল, তারা বৃষ্টিতে আক্রান্ত হল। অতঃপর তারা এক পাহাড়ের গুহায় আশ্রয় নিল। হঠাৎ পাহাড় হইতে এক খন্ড পাথর পড়ে তাদের গুহার মুখ বন্ধ হয়ে গেল। তারা একে অপরকে বলিল, নিজেদের কৃত কিছু সত্কাজের কথা চিন্তা করে বের কর, যা আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য করা হয়েছে এবং তার ওয়াসীলা করে আল্লাহর নিকট দুআ কর। তাহলে হয়ত আল্লাহ তোমাদের উপর হইতে পাথরটি সরিয়ে দিবেন। তাদের একজন বলিতে লাগল, হে আল্লাহ! আমার আব্বা-আম্মা খুব বৃদ্ধ ছিলেন এবং আমার ছোট ছোট সন্তানও ছিল। আমি তাদের ভরণ-পোষণের জন্য পশু পালন করতাম। সন্ধ্যায় যখন আমি বাড়ি ফিরতাম তখন দুধ দোহন করতাম এবং আমার সন্তানদের আগে আমার আব্বা-আম্মাকে পান করাতাম। একদিন আমার ফিরতে দেরী হয় এবং সন্ধ্যা হওয়ার আগে আসতে পারলাম না। এসে দেখি তারা ঘুমিয়ে পড়েছেন। তখন আমি দুধ দোহন করলাম, যেমন প্রতিদিন দোহন করি। তারপর আমি তাঁদের শিয়রে (দুধ নিয়ে) দাঁড়িয়ে রইলাম। তাদেরকে জাগানো আমি পছন্দ করিনি এবং তাদের আগে আমার বাচ্চাদেরকে পান করানোও অসঙ্গত মনে করি। অথচ বাচ্চাগুলো দুধের জন্য আমার পায়ের কাছে পড়ে কান্নাকাটি করছিল। এভাবে ভোর হয়ে গেল। হে আল্লাহ! আপনি জানেন আমি যদি শুধু আপনার সন্তুষ্টির জন্যই এ কাজটি করে থাকি তবে আপনি আমাদের হইতে পাথরটা খানিক সরিয়ে দিন, যাতে আমরা আসমানটা দেখিতে পাই। তখন আল্লাহ পাথরটাকে একটু সরিয়ে দিলেন এবং তারা আসমান দেখিতে পেল। দ্বিতীয় ব্যক্তি বলিল, হে আল্লাহ! আমার এক চাচাতো বোন ছিল। পুরুষরা যেমন মহিলাদের ভালবাসে, আমি তাকে তার চেয়ে অধিক ভালবাসতাম। একদিন আমি তার কাছে চেয়ে বসলাম (অর্থাৎ খারাপ কাজ করিতে চাইলাম) কিন্তু তা সে অস্বীকার করিল যে পর্যন্ত না আমি তার জন্য একশ দিনার নিয়ে আসি। পরে চেষ্টা করে আমি তা যোগাড় করলাম (এবং তার কাছে এলাম)। যখন আমি তার দুপায়ের মাঝে বসলাম (অর্থাৎ সম্ভোগ করিতে তৈরী হলাম) তখন সে বলিল, হে আল্লাহর বান্দা! আল্লাহকে ভয় কর। অন্যায়ভাবে মাহর (পর্দা) ছিঁড়ে দিয়ো না। (অর্থাৎ আমার কুমারীর সতীত্ব নষ্ট করো না) তখন আমি দাঁড়িয়ে গেলাম। হে আল্লাহ! আপনি জানেন আমি যদি শুধু আপনার সন্তুষ্টির জন্য এ কাজটি করে থাকি, তবে আপনি আমাদের জন্য পাথরটা সরিয়ে দিন। তখন পাথরটা কিছু সরে গেল। তৃতীয় ব্যক্তি বলিল, হে আল্লাহ! আমি এক ফারাক চাউলের বিনিময়ে একজন শ্রমিক নিযুক্ত করেছিলাম। যখন সে তার কাজ শেষ করিল আমাকে বলিল, আমার পাওনা দিয়ে দাও। আমি তাকে তার পাওনা দিতে গেলে সে তা নিল না। আমি তা দিয়ে কৃষি কাজ করিতে লাগলাম এবং এর দ্বারা অনেক গরু ও তার রাখাল জমা করলাম। বেশ কিছু দিন পর সে আমার কাছে আসল এবং বলিল, আল্লাহকে ভয় কর (আমার মজুরী দাও)। আমি বললাম, এই সব গরু ও রাখাল নিয়ে নাও। সে বলিল, আল্লাহকে ভয় কর, আমার সাথে ঠাট্টা করো না। আমি বললাম, আমি তোমার সাথে ঠাট্টা করছি না, ওইগুলো নিয়ে নাও। তখন সে তা নিয়ে গেল। হে আল্লাহ! আপনি জানেন, যদি আমি আপনার সন্তুষ্টি লাভের জন্য এ কাজটি করে থাকি, তবে পাথরের বাকীটুকু সরিয়ে দিন। তখন আল্লাহ পাথরটাকে সরিয়ে দিলেন। আবু আবদুল্লাহ [বুখারী (রহমাতুল্লাহি আলাইহি)] বলেন, ইবনু উকবা (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) নাফি (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) ——এর স্থলে ——– বর্ণনা করিয়াছেন।

৪১/১৪. অধ্যায়ঃ নাবী (সাঃআঃ) -এর সাহাবীগণের ওয়াক্‌ফ ও খাজনার জমি এবং তাঁদের কৃষিকাজ ও লেনদেন প্রসঙ্গে।

নাবী (সাঃআঃ) উমার (রাদি.)- কে বলিলেন, তুমি মূল জমিটা এ শর্তে সদাকা কর যে, তা আর বিক্রি করা যাবে না। কিন্তু তার উত্পাদন ব্যয় করা হইবে। তখন তিনি এভাবেই সদাকা করিলেন।

২৩৩৪. আসলাম (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, উমার (রাদি.) বলেছেন, পরবর্তী যুগের মুসলমানদের বিষয়ে যদি আমরা চিন্তা না করতাম, তবে যে সব এলাকা জয় করা হত, তা আমি মুজাহিদদের মধ্যে বন্টন করে দিতাম, যেমন নাবী (সাঃআঃ) খায়বার বন্টন করে দিয়েছিলেন।

৪১/১৫. অধ্যায়ঃ যে ব্যক্তি অনাবাদী জমি চাষ করে।

কুফার অনাবাদী জমি সম্পর্কে আলী (রাদি.)-এর এ মত ছিল। (আবাদকারী তার মালিক হইবে)। উমার (রাদি.) বলেছেন, যে ব্যক্তি কোন অনাবাদ জমি আবাদ করিবে সে তার মালিক হইবে। আমর ইবনু আউফ (রাদি.) সূত্রে নাবী (সাঃআঃ) হইতে এরূপ বর্ণিত হয়েছে এবং তিনি বলেছেন, তা হইবে যে ক্ষেত্রে কোন মুসলিমের হক নাই, আর যালিম ব্যক্তির তাতে হক নাই। জাবির (রাদি.) কর্তৃক নাবী (সাঃআঃ) হইতে এ সম্পর্কিত রিওয়ায়াত বর্ণিত হয়েছে।

২৩৩৫. আয়েশা (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ

নাবী (সাঃআঃ) বলেছেন, যে ব্যক্তি এমন কোন জমি আবাদ করে, যা কারো মালিকানায় নয়, তাহলে সেই (মালিক হওয়ার) বেশী হকদার। উরওয়াহ (রাদি.) বলেন, উমার (রাদি.) তাহাঁর খিলাফতকালে এরূপ ফায়সালা দিয়েছেন।

৪১/১৬. অধ্যায়ঃ

২৩৩৬. আবদুল্লাহ ইবনু উমার (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ

নাবী (সাঃআঃ) যুল-হুলায়ফা উপত্যকায় শেষরাতে বিশ্রাম করছিলেন। তিনি স্বপ্নে দেখলেন যে, তাঁকে বলা হলো, আপনি বরকতময় উপত্যকায় রয়েছেন। মূসা (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) বলেন, সালিম আমাদের সাথে সে জায়গাতেই উট বসিয়েছিলেন যেখানে আবদুল্লাহ (রাদি.) উট বসাতেন এবং সে জায়গা লক্ষ্য করিতেন, যে জায়গায় আল্লাহর রাসুল (সাঃআঃ) শেষরাতে অবতরণ করেছিলেন। সে জায়গা ছিল উপত্যকার মধ্যভাগে অবস্থিত মসজিদ হইতে নীচে এবং মসজিদ ও রাস্তার মাঝখানে।

২৩৩৭. উমার (রাদি.) সূত্রে নাবী (সাঃআঃ) হইতে হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, গতরাতে আমার নিকট আমার প্রতিপালকের দূত এসেছিলেন। এ সময় তিনি আকীক উপত্যকায় অবস্থান করছিলেন। (এসে) তিনি বলিলেন, এই বরকতময় উপত্যকায় সালাত আদায় করুন, অর্থাৎ হাজ্জের সাথে উমরাহ এর ইহরাম বাঁধলাম।

৪১/১৭. অধ্যায়ঃ জমির মালিক বলিল, আমি তোমাকে ততদিনের জন্য অবস্থান করিতে দেব যতদিন আল্লাহ তাআলা তোমাকে অবস্থান করিতে দেন এবং কোন নিদিষ্ট সময়ের উল্লেখ করিল না এমতাবস্থায় তারা একসাথে যতদিন রাযি থাকে ততদিন- এ চুক্তি বলবৎ থাকবে।

২৩৩৮. ইবনু উমার (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ

উমার ইবনু খাত্তাব (রাদি.) ইয়াহূদী ও নাসারাদের হিজায হইতে নির্বাসিত করেন। আল্লাহর রাসুল (সাঃআঃ) যখন খায়বার জয় করেন, তখন ইয়াহূদীদের সেখান হইতে বের করে দিতে চেয়েছিলেন। যখন তিনি কোন স্থান জয় করেন, তখন আল্লাহ, তাহাঁর রাসুল ও মুসলিমদের জন্য হয়ে যায়। কাজেই ইয়াহূদীদের সেখান হইতে বহিষ্কার করে দিতে চাইলেন। তখন ইয়াহূদীরা আল্লাহর রাসুল (সাঃআঃ)-এর কাছে অনুরোধ করিল, যেন তাদের সে স্হানে বহাল রাখা হয় এ শর্তে যে, তারা সেখানে চাষাবাদে দায়িত্ব পালন করিবে আর ফসলের অর্ধেক তাদের থাকবে। আল্লাহর রাসুল (সাঃআঃ) তাদের বলিলেন, আমরা এ শর্তে তোমাদের এখানে বহাল থাকতে দিব যতদিন আমাদের ইচ্ছা। কাজেই তারা সেখানে বহাল রইল। অবশেষে উমার (রাদি.) তাদেরকে তাইমা ও আরীহায় নির্বাসিত করে দেন।

৪১/১৮. অধ্যায়ঃ নাবী (সাঃআঃ)-এর সাহাবীগণ (রাদি.) কৃষিকাজ ও ফল-ফসল উত্পাদনে একে অপরকে সহায়তা করিতেন তার বিবরণ ।

২৩৩৯. যুহাইর (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, একটি কাজ আমাদের উপকারী ছিল, যা করিতে আল্লাহর রাসুল (সাঃআঃ) আমাদের নিষেধ করিলেন। আমি বললাম, আল্লাহর রাসুল (সাঃআঃ) যা বলেছেন তাই সঠিক। যুহাইর (রাদি.) বলিলেন, আমাকে ডেকে জিজ্ঞেস করিলেন, তোমরা তোমাদের ক্ষেত-খামার কিভাবে চাষাবাদ কর? আমি বললাম, আমরা নদীর তীরের ফসলের শর্তে অথবা খেজুর ও যবের নির্দিষ্ট কয়েক ওসাক প্রদানের শর্তে জমি ইজারা দিয়ে থাকি। নাবী (সাঃআঃ) বলিলেন, তোমরা এরূপ করিবে না। তোমরা নিজেরা তা চাষ করিবে অথবা অন্য কাউকে দিয়ে চাষ করাবে অথবা তা ফেলে রাখবে। রাফ (রাদি.) বলেন, আমি শুনলাম ও মানলাম।

২৩৪০. জাবির (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, লোকেরা এক-তৃতীয়াংশ, এক-চতুর্থাংশ ও অর্ধেক ফসলের শর্তে বর্গা চাষ করত। তখন নাবী (সাঃআঃ) বলিলেন, যে ব্যক্তির নিকট জমি রয়েছে, সে যেন নিজে চাষ করে অথবা তা কাউকে দিয়ে দেয়। যদি তা না করে তবে সে যেন তার জমি ফেলে রাখে।

২৩৪১. Read previous Hadith.আবু হুরাইরা (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, আল্লাহর রাসুল (সাঃআঃ) বলেছেন, যার নিকট জমি রয়েছে, সে যেন তা নিজে চাষ করে, অথবা তার ভাইকে দিয়ে দেয়, যদি এটাও না করিতে চায়, তবে সে যেন তার জমি ফেলে রাখে।

২৩৪২.আমর (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, আমি (বর্গাচাষ সম্পর্কিত) এ হাদীসটি তাউস (রহমাতুল্লাহি আলাইহি)- কে জিজ্ঞেস করলাম। তিনি বলিলেন, (অন্যকে দিয়ে) চাষবাদ করানো যেতে পারে। (কেননা) ইবনু আব্বাস (রাদি.) বলেছেন, নাবী (সাঃআঃ) তা (বর্গাচাষ) নিষেধ করেননি। তবে তিনি বলেছেন যে, তোমাদের নিজের ভাইকে জমি দান করে দেয়া উত্তম, তার কাছ হইতে নিদিষ্ট কিছু গ্রহণ করার চেয়ে।

২৩৪৩. নাফি (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) হইতে বর্ণিতঃ

ইবনু উমার (রাদি.) নাবী (সাঃআঃ)-এর সময়ে এবং আবু বকর, উমার, উসমান (রাদি.) মুআবিয়া (রাদি.)-এর শাসনের শুরু ভাগে নিজের ক্ষেতে বর্গাচাষ করিতে দিতেন।

২৩৪৪. Read previous Hadith. রাফি ইবনু খাদীজ (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ

হাদীসটি তাহাঁর নিকট বর্ণনা করা হয় যে, নাবী (সাঃআঃ) ক্ষেত ভাগে ইজারা দিতে নিষেধ করিয়াছেন। তখন ইবনু উমার (রাদি.) রাফি (রাদি.) এর নিকট গেলেন। আমিও তাহাঁর সঙ্গে গেলাম। তিনি (ইবনু উমার) তাঁকে জিজ্ঞেস করিলেন। তিনি [রাফি (রাদি.)] বলিলেন, নাবী (সাঃআঃ) ক্ষেত ভাগে ইজারা দিতে নিষেধ করিয়াছেন। তখন ইবনু উমার (রাদি.) বলিলেন, আপনি তো জানেন যে, আমরা আল্লাহর রাসুল (সাঃআঃ)-এর যামানায় নালার পার্শ্বস্থ ক্ষেতের ফসলের শর্তে এবং কিছু ঘাসের বিনিময়ে আমাদের ক্ষেত ইজারা দিতাম।

২৩৪৫. সালিম (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) হইতে বর্ণিতঃ

আবদুল্লাহ ইবনু উমার (রাদি.) বলেছেন, আমি জানতাম যে, আল্লাহর রাসুল (সাঃআঃ)-এর যামানায় ক্ষেত বর্গাচাষ করিতে দেয়া হত। তারপর আবদুল্লাহ (রাদি.)-এর ভয় হল, হয়ত নাবী (সাঃআঃ) এ সম্পর্কে এমন কিছু নতুন নির্দেশ দিয়েছেন, যা তাহাঁর জানা নেই। তাই তিনি ভাগে জমি ইজারা দেয়া ত্যাগ করিলেন।

৪১/১৯. অধ্যায়ঃ সোনা-রূপার বিনিময়ে জমি কিরায়া (নগদ বিক্রি) করা।

ইবনু আব্বাস (রাদি.) বলেন, তোমারা যা কিছু করিতে চাও তার মধ্যে সবচেয়ে উত্তম হল, নিজের খালি জমি এক বছরের জন্য ইজারা দেয়া ।

২৩৪৬. রাফি ইবনু খাদীজ (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, আমার কাছে আমার চাচারা বর্ণনা করিয়াছেন যে, আল্লাহর রাসুল (সাঃআঃ)-এর যামানায় লোকেরা নালার পার্শ্বস্থ ফসলের শর্তে কিংবা এমন কিছু শর্তে ভাগে জমি ইজারা দিত, যা ক্ষেতের মালিক নিজের জন্যে নির্দিষ্ট করে নিত। নাবী (সাঃআঃ) আমাদের এরূপ করিতে নিষেধ করেন। রাবী বলেন, আমি রাফি (রাদি.)- কে বললাম, দীনার ও দিরহামের শর্তে জমি (ইজারা দেয়া) কেমন? রাফি (রাদি.) বলিলেন, দীনার ও দিরহামের বিনিময়ে ইজারা দেয়াতে কোন দোষ নেই। [লাইস (রহমাতুল্লাহি আলাইহি)] বলেন, আমার মনে হয়, যে বিষয়ে নিষেধ করা হয়েছে, হালাল ও হারাম বিষয়ে বিজ্ঞজনেরা সে সম্পর্কে চিন্তা করলেও তারা তা জায়েয মনে করবেন না। কেননা, তাতে (ক্ষতির) আশঙ্কা রয়েছে।

আবু আবদুল্লাহ [ইমাম বুখারী (রহমাতুল্লাহি আলাইহি)] বলেন, আমার মনে হয়, যে বিষয়ে নিষেধ করা হয়েছে- এখান হইতে লাইস (রহমাতুল্লাহি আলাইহি)-এর উক্তি শুরু হয়েছে।

(২৩৩৯, ৪০১৩) (আ.প্র. ২১৭৬, ই.ফা. ২১৯৩)

২৩৪৭. রাফি ইবনু খাদীজ (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, আমার কাছে আমার চাচারা বর্ণনা করিয়াছেন যে, আল্লাহর রাসুল (সাঃআঃ)-এর যামানায় লোকেরা নালার পার্শ্বস্থ ফসলের শর্তে কিংবা এমন কিছু শর্তে ভাগে জমি ইজারা দিত, যা ক্ষেতের মালিক নিজের জন্যে নির্দিষ্ট করে নিত। নাবী (সাঃআঃ) আমাদের এরূপ করিতে নিষেধ করেন। রাবী বলেন, আমি রাফি (রাদি.)- কে বললাম, দীনার ও দিরহামের শর্তে জমি (ইজারা দেয়া) কেমন? রাফি (রাদি.) বলিলেন, দীনার ও দিরহামের বিনিময়ে ইজারা দেয়াতে কোন দোষ নেই। [লাইস (রহমাতুল্লাহি আলাইহি)] বলেন, আমার মনে হয়, যে বিষয়ে নিষেধ করা হয়েছে, হালাল ও হারাম বিষয়ে বিজ্ঞজনেরা সে সম্পর্কে চিন্তা করলেও তারা তা জায়েয মনে করবেন না। কেননা, তাতে (ক্ষতির) আশঙ্কা রয়েছে।

আবু আবদুল্লাহ [ইমাম বুখারী (রহমাতুল্লাহি আলাইহি)] বলেন, আমার মনে হয়, যে বিষয়ে নিষেধ করা হয়েছে- এখান হইতে লাইস (রহমাতুল্লাহি আলাইহি)-এর উক্তি শুরু হয়েছে। (২৩৩৯, ৪০১৩)

(আ.প্র. ২১৭৬, ই.ফা. ২১৯৩)

৪১/২০. অধ্যায়ঃ

২৩৪৮. আবু হুরাইরা (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ

একদিন নাবী (সাঃআঃ) কথা বলছিলেন, তখন তাহাঁর নিকট গ্রামের একজন লোক উপবিষ্ট ছিল। নাবী (সাঃআঃ) বর্ণনা করেন যে, জান্নাতবাসীদের কোন একজন তার রবের কাছে চাষাবাদের অনুমতি চাইবে। তখন আল্লাহ তাআলা তাকে বলবেন, তুমি কি যা চাও, তা পাচ্ছ না? সে বলবে, হ্যাঁ নিশ্চয়ই। কিন্তু আমার চাষ করার খুবই আগ্রহ। নাবী (সা) বলিলেন, তখন সে বীজ বুনবে এবং তা চারা হওয়া, গাছ বড় হওয়া ও ফসল কাটা সব কিছু পলকের মধ্যে হয়ে যাবে। আর তা (ফসল) পাহাড় সমান হয়ে যাবে। তখন আল্লাহ তাআলা বলবেন, হে আদম সন্তান! এগুলো নিয়ে নাও। কোন কিছুই তোমাকে তৃপ্তি দেয় না। তখন গ্রাম্য লোকটি বলে উঠল, আল্লাহর কসম, এই ধরনের লোক আপনি কুরাইশী বা আনসারদের মধ্যেই পাবেন। কেননা তাঁরা চাষী। আর আমরা তো চাষী নই। এ কথা শুনে নাবী (সাঃআঃ) হেসে দিলেন।

৪১/২১. অধ্যায়ঃ গাছ লাগানো সম্পর্কে।

২৩৪৯. সাহল ইবনু সাদ (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, জুমুআর দিন আসলে আমরা আনন্দিত হতাম এজন্য যে, আমাদের (প্রতিবেশী) এক বৃদ্ধা ছিলেন, তিনি আমাদের নালার ধারে লাগানো বীট গাছের মূল তুলে এনে তার ডেকচিতে রাখতেন এবং তার সাথে যবের দানাও মিশাতেন। (বর্ণনাকারী বলেন) আমার যতটুকু মনে পড়ে তিনি (সাহল) বলেছেন যে, তাতে কোন চর্বি না তৈলাক্ত কিছু থাকত না। আমরা জুমুআর সালাতের পর বৃদ্ধার নিকট আসতাম এবং তিনি তা আমাদের সামনে পরিবেশন করিতেন। এ কারণে জুমুআর দিন আমাদের খুব আনন্দ হত। আমরা জুমুআর সালাতের পরই আহার করতাম এবং কায়লুলাহ (বিশ্রাম) করতাম।

২৩৫০. আবু হুরাইরা (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, লোকজন বলে যে, আবু হুরাইরা বেশী হাদীস বর্ণনা করে থাকেন। প্রকৃতপক্ষে আল্লাহর কাছেই সবার প্রত্যাবর্তন। এবং তারা আরো বলে, মুহাজির ও আনসারদের কী হল যে, তারা আবু হুরাইরার মতো এত হাদীস বর্ণনা করেন না। [আবু হুরাইরা (রাদি.) বলেন,] আমার মুহাজির ভাইদেরকে বাজারে বেচা-কেনা এবং আনসার ভাইদেরকে তাদের ক্ষেত খামার ও বাগানের কাজ-কর্ম ব্যতিব্যস্ত রাখত। আমি ছিলাম একজন মিসকীন লোক। পেটে যা জুটে, খেয়ে না খেয়ে তাতেই তুষ্ট হয়ে আল্লাহর রাসুল (সাঃআঃ)-এর কাছে পড়ে থাকতাম। তাই লোকেরা যখন অনুপস্থিত থাকত, আমি হাযির থাকতাম। লোকেরা যা ভুলে যেত, আমি তা স্মরণ রাখতাম। একদিন নাবী (সাঃআঃ) বলিলেন, তোমাদের যে কেউ আমার কথা শেষ হওয়া পর্যন্ত তার চাদর বিছিয়ে রাখবে এবং আমার কথা শেষ হলে চাদরখানা তার বুকের সাথে মিলাবে, তাহলে সে আমার কথা কখনো ভুলবে না। আমি আমার পশমী চাদরটা নাবী (সাঃআঃ)-এর কথা শেষ না হওয়া পর্যন্ত বিছিয়ে রাখলাম। সে চাদর ছাড়া আমার গায়ে আর কোন চাদর ছিল না। নাবী (সাঃআঃ)-এর কথা শেষ হওয়ার পর আমি তা আমার বুকের সাথে মিলালাম। সে সত্তার কসম! যিনি তাঁকে সত্য দিয়ে প্রেরণ করিয়াছেন, আজ পর্যন্ত আমি তাহাঁর একটি কথাও ভুলিনি। আল্লাহর কসম! যদি আল্লাহর কিতাবের এ দুটি আয়াত না থাকত, তবে আমি কখনো তোমাদের নিকট হাদীস বর্ণনা করতাম না। (তা এই) :

“যারা আমার নাযিলকৃত নির্দশনসমূহ গোপন করে ……… আল্লাহ অত্যন্ত দয়ালু পর্যন্ত”-

(আল-বাকারা ১৫৯-১৬০)।


Posted

in

by

Comments

Leave a Reply