চাঁদ দেখে রোজা রাখার হাদিস । বিলম্ব না করে ইফতার করা

চাঁদ দেখে রোজা রাখার হাদিস । বিলম্ব না করে ইফতার করা

চাঁদ দেখে রোজা রাখার হাদিস । বিলম্ব না করে ইফতার করা , এই অধ্যায়ে হাদীস =৬০ টি ( ৬১৯-৬৭৮ পর্যন্ত ) >> মুয়াত্তা ইমাম মালিক এর মুল সুচিপত্র দেখুন

অধ্যায় – ১৮ঃ রোযা

পরিচ্ছেদঃ ১ -রোযার চাঁদ দেখা ও রমযানের রোযা খোলার বর্ণনা
পরিচ্ছেদঃ ২ -ফজরের পূর্বে যে রোযার নিয়ত করেছে
পরিচ্ছেদঃ ৩ – বিলম্ব না করে ইফতার করা
পরিচ্ছেদঃ ৪ – যে ব্যক্তির জানাবত [গোসল ফরয হওয়া] অবস্থায় ফজর হয় সে ব্যক্তির রোযা
পরিচ্ছেদঃ ৫ -রোযাদারের জন্য চুমু খাওয়ার অনুমতি
পরিচ্ছেদঃ ৬ -রোযাদারের চুমু খাওয়ার ব্যাপারে কঠোরতা
পরিচ্ছেদঃ ৭ -প্রবাসে রোযা রাখা
পরিচ্ছেদঃ ৮ -যে ব্যক্তি রমযানে সফর হইতে প্রত্যাবর্তন করে অথবা রমযানে সফরের ইচ্ছা করে সে কি করিবে?
পরিচ্ছেদঃ ৯ -রমযানের রোযা ভঙ্গ করার কাফ্ফারা
পরিচ্ছেদঃ ১০ -রোযাদারের শিঙ্গা লাগানো নয়
পরিচ্ছেদঃ ১১ -আশুরা দিবসে রোযা
পরিচ্ছেদঃ ১২ -ঈদুল ফিতর ও ঈদুল আযহা দিবসে এবং সারা বৎসর রোযা রাখা
পরিচ্ছেদঃ ১৩ -অনবরত রোযা রাখার [সওমে বেসাল] প্রতি নিষেধাজ্ঞা
পরিচ্ছেদঃ ১৪ -ভুলে হত্যা ও যিহার {১} -এর রোযা
পরিচ্ছেদঃ ১৫ -রোযার রুগ্ন ব্যক্তির করণীয়
পরিচ্ছেদঃ ১৬ -রোযার মানত করা এবং মৃত ব্যক্তির পক্ষ হইতে রোযা রাখা
পরিচ্ছেদঃ ১৭ -রমযানের কাযা ও কাফ্ফারা হাদীসটির তাহকিকঃ নির্ণীত নয়
পরিচ্ছেদঃ ১৮ -নফল রোযার কাযা
পরিচ্ছেদঃ ১৯ -ওযরের কারণে রমযানের রোযা ভঙ্গের ফিদইয়া
পরিচ্ছেদঃ ২০ -রোযার কাযা
পরিচ্ছেদঃ ২১ -সন্দেহের দিনে রোযা রাখা
পরিচ্ছেদঃ ২২ -রোযার বিবিধ আহকাম

পরিচ্ছেদঃ ১ -রোযার চাঁদ দেখা ও রমযানের রোযা খোলার বর্ণনা

৬১৭ আবদুল্লাহ্ ইবনি উমার [রাদি.] হইতে বর্ণিতঃ

রসূলুল্লাহ্ [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম] রোযার উল্লেখ করে বলেছেন, তোমরা চাঁদ না দেখা পর্যন্ত রোযা রেখো না। আর চাঁদ না দেখে রোযা খুলো না। যদি তোমাদের উপর [আকাশ] মেঘাচ্ছন্ন হয়, তবে রোযা খোলার জন্য অন্য দিন হিসাব করো নিও।

[বুখারি ১৭০৬, মুসলিম ১০৮০] চাঁদ দেখে রোজা রাখার হাদিস – এই হাদীসটির তাহকিকঃ সহীহ হাদীস

৬১৮ আবদুল্লাহ্ ইবনি উমার [রাদি.] হইতে বর্ণিতঃ

রসূলুল্লাহ্ [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম] বলেছেন, মাস উনত্রিশ দিনেরও হয়, যদি [আকাশ মেঘাচ্ছন্ন হওয়ার কারণে] তোমাদের উপর চাঁদ পর্দাবৃত করা হয়, তবে তার জন্য দিন গণনা করো।

[বুখারি ১৯০৭, মুসলিম ১০৮০] চাঁদ দেখে রোজা রাখার হাদিস -এই হাদীসটির তাহকিকঃ সহীহ হাদীস

৬১৯ আবদুল্লাহ্ ইবনি আব্বাস [রাদি.] হইতে বর্ণিতঃ

রসূলুল্লাহ্ [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম] রমযানের উল্লেখ করলেন। [এই প্রসঙ্গে] তিনি বলিলেন, তোমরা চাঁদ না দেখে রোযা রেখো না। এবং চাঁদ না দেখা পর্যন্ত রোযা খুলো না। আর যদি আকাশ তোমাদের উপর মেঘাচ্ছাদিত হয়, তবে সংখ্যা ত্রিশ পূর্ণ করো।

[সহীহ, আবু দাঊদ ২৩২৭, তিরমিজি ৬৮৮, নাসাঈ ২১২৪, আলবানী হাদীসটিকে সহীহ বলেছেন {সহীহ আল-জামে ১৭৯০} তবে ঈমাম মালিক কর্তৃক বর্ণিত হাদীসের সনদে বিচ্ছিন্নতা রয়েছে] চাঁদ দেখে রোজা রাখার হাদিস -এই হাদীসটির তাহকিকঃ অন্যান্য

৬২০ মালিক [রাদি.] হইতে বর্ণিতঃ

তাঁর কাছে খবর পৌঁছেছে যে, উসমান ইবনি আফফান [রাদি.]-এর আমলে বিকালে চাঁদ দৃষ্ট হয়। কিন্তু উসমান [রাদি.] সন্ধ্যা হওয়া ও সূর্য অস্ত না যাওয়া পর্যন্ত ইফতার করেননি।

ইয়াহ্ইয়া [রাহিমাহুল্লাহ] বলেন, আমি মালিক [রাহিমাহুল্লাহ]-কে বলিতে শুনিয়াছি, যে ব্যক্তি রমযানের চাঁদ একাই দেখেছে সে নিজে রোযা রাখবে, তার জন্য রোযা ভঙ্গ করা সমীচীন নয় । কারণ সে জানে যে, উহা রমযান মাস। আর যে শাওয়ালের চাঁদ একা দেখেছে. সে রোযা ভঙ্গ করিবে না, কারণ লোকে [এ বলে] অপবাদ দিবে যে, আমাদের একজন রোযা রাখেনি। পক্ষান্তরে যারা নির্ভরযোগ্য নয় তেমন ব্যক্তিদের খেয়াল হলে তবে তারা বলবে, আমরা অবশ্য চাঁদ দেখেছি। আর যে ব্যক্তি দিনে শাওয়ালের চাঁদ দেখিতে পায়, সে রোযা ইফতার করিবে না বরং সে দিনের রোযা পূর্ণ করিবে, কারণ তা আগামী রাতের চাঁদ।

ইয়াহইয়া [রাহিমাহুল্লাহ] বলেন, আমি মালিক [রাহিমাহুল্লাহ]-কে বলিতে শুনিয়াছি, যদি লোকে ঈদের দিন রোযা রাখে এবং তারা উহাকে রোযার দিন বলে মনে করে, তৎপর একজন বিশ্বস্ত লোক এসে তাদেরকে বলে, রমযানের চাঁদ তাদের রোযার একদিন পূর্বে দেখা গিয়েছে, আর তাদের এ দিবস হচ্ছে একত্রিশের, তবে যে মুহূর্তে তাদের কাছে খবর পৌঁছে সে মুহূর্তেই তারা রোযা ভেঙে ফেলবে। অবশ্য তারা সে খবর সূর্য হেলিবার পর হলে সে দিন তারা ঈদের নামাজ আদায় করিবে না। [হাদীসটি ঈমাম মালিক [রাহিমাহুল্লাহ] একক ভাবে বর্ণনা করিয়াছেন]

চাঁদ দেখে রোজা রাখার হাদিস -এই হাদীসটির তাহকিকঃ নির্ণীত নয়

পরিচ্ছেদঃ ২ -ফজরের পূর্বে যে রোযার নিয়ত করেছে

৬২১ নাফি [রাহিমাহুল্লাহ] হইতে বর্ণিতঃ

আবদুল্লাহ্ ইবনি উমার [রাদি.] বলিতেন, যে ফজরের পূর্বে নিয়ত করেনি, সে রোযা রাখবে না। [সহীহ, আবু দাঊদ ২৪৫৪, তিরমিজি ৭৩০, নাসাঈ ২৩৪১, ইবনি মাজাহ ১৭০, আলবানী হাদীসটিকে সহীহ বলেছেন {সহীহ আল-জামে ৬৫৩৮}]

ইবনি শিহাব [রাহিমাহুল্লাহ] কর্তৃক নাবী সাঃআঃ-এর সহধর্মিনী আয়েশা [রাদি.] ও হাফসা [রাদি.] হইতে অনুরূপ [মত] বর্ণনা করা হয়েছে। [হাদীসটি ঈমাম মালিক [রাহিমাহুল্লাহ] একক ভাবে বর্ণনা করিয়াছেন]

এই হাদীসটির তাহকিকঃ নির্ণীত নয়

পরিচ্ছেদঃ ৩ – বিলম্ব না করে ইফতার করা

৬২২ সাহল ইবনি সাদ সাঈদী [রাদি.] হইতে বর্ণিতঃ

রাসূলুল্লাহ [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম] বলেছেন, সর্বদা লোক মঙ্গলের উপর থাকিবে যতদিন ইফতার সত্বর করিবে

। [বুখারি ১৯৫৭, মুসলিম ১০৯৮] চাঁদ দেখে রোজা রাখার হাদিস -এই হাদীসটির তাহকিকঃ সহীহ হাদীস

৬২৩ সাঈদ ইবনি মুসায়্যাব [রাহিমাহুল্লাহ] হইতে বর্ণিতঃ

রাসূলুল্লাহ [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম] বলেছেন, মানুষ সর্বদা মঙ্গলের উপর প্রতিষ্ঠিত থাকিবে যতদিন ইফতার সত্বর করিবে। [হাদীসটি ঈমাম মালিক [রাহিমাহুল্লাহ] একক ভাবে বর্ণনা করিয়াছেন]

চাঁদ দেখে রোজা রাখার হাদিস -এই হাদীসটির তাহকিকঃ নির্ণীত নয়

৬২৪ হুমায়দ ইবনি আবদুর রহমান [রাহিমাহুল্লাহ] হইতে বর্ণিতঃ

উমার ইবনি খাত্তাব [রাদি.] এবং উসমান ইবনি আফফান [রাদি.] দুজনে মাগরিবের নামাজ আদায় করিতেন, এমন সময় তখন তাঁরা রাত্রির অন্ধকার দেখিতে পেতেন। [আর এটা হত] ইফতার করার পূর্বে। অতঃপর তাঁরা [দুজনে] ইফতার করিতেন। আর এটা হতো রমযান মাসে। [হাদীসটি ঈমাম মালিক [রাহিমাহুল্লাহ] একক ভাবে বর্ণনা করিয়াছেন]

চাঁদ দেখে রোজা রাখার হাদিস -এই হাদীসটির তাহকিকঃ নির্ণীত নয়

পরিচ্ছেদঃ ৪ – যে ব্যক্তির জানাবত [গোসল ফরয হওয়া] অবস্থায় ফজর হয় সে ব্যক্তির রোযা

৬২৫ আয়েশা [রাদি.] হইতে বর্ণিতঃ

এক ব্যক্তি রসূলুল্লাহ্ সাঃআঃকে বলল, তখন তিনি দরজায় দণ্ডায়মান ছিলেন, আর আমি শুনতেছিলাম, ইয়া রসূলুল্লাহ্! জানাবত অবস্থায় আমার ফজর হয় অথচ আমি রোযা রাখতে ইচ্ছা করি। রসূলুল্লাহ্ [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম] বলিলেন, আমারও জানাবত অবস্থায় ফজর হয়, অথচ আমি রোযা রাখবার ইচ্ছা করি। তাই আমি গোসল করি এবং রোযা রাখি! তখন লোকটি তাঁর নিকট আরয করিল, ইয়া রসূলাল্লাহ্! আপনি অবশ্য আমাদের মত নন। আল্লাহ্ আপনার অতীত ও ভবিষ্যত ত্রুটিসমূহ মার্জনা করিয়াছেন। এতে রসূলুল্লাহ্ [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম] রাগান্বিত হলেন এবং বলিলেন, আল্লাহর কসম, আমি তোমাদের তুলনায় আল্লাহকে অধিক ভয় করি আর আমি তাক্ওয়ার বিষয়ে তোমাদের অপেক্ষা অধিক জ্ঞাত।

[সহীহ, মুসলিম ১১১০]এই হাদীসটির তাহকিকঃ সহীহ হাদীস

৬২৬ নাবী সাঃআঃ-এর সহধর্মিনী আয়েশা ও উম্মে সালমা [রাদি.] হইতে বর্ণিতঃ

রসূলুল্লাহ্ সাঃআঃ-এর স্বপ্নদোষে নয় স্ত্রী সহবাসের কারণে রমযানে জানাবত অবস্থায় ফজর হত, অতঃপর তিনি রোযা রাখতেন।

[বুখারি ১৯২৬, ১৯৩০, মুসলিম ১১০৯] এই হাদীসটির তাহকিকঃ সহীহ হাদীস

৬২৭ আবু বক্‌র ইবনি আবদুর রহমান [রাহিমাহুল্লাহ] হইতে বর্ণিতঃ

আমি ও আমার পিতা মারওয়ানের নিকট ছিলাম, মারওয়ান তখন মদীনার শাসনকর্তা। তাঁর কাছে উল্লেখ করা হয় যে, আবু হুরায়রা [রাদি.] বলেন, যে ব্যক্তির জানাবত অবস্থায় ফজর হয়, তার সেই দিনের রোযা নষ্ট হয়েছে। মারওয়ান বলিলেন, হে আবদুর রহমান। আমি তোমাদের কসম দিচ্ছি যে, তুমি অবশ্যই উম্মুল মুমিনীনদ্বয় আয়েশা [রাদি.] ও উম্মে সালমা [রাদি.]-এর কাছে গমন কর এবং এ বিষয়ে উভয়কে প্রশ্ন কর। অতঃপর আবদুর রহমান গেলেন, আমিও সাথে ছিলাম। আবদুর রহমান তাহাকে সালাম জানালেন এবং বলিলেন, হে উম্মুল মুমিনীন! আমরা মারওয়ান ইবনি হাকামের কাছে ছিলাম, তাঁর নিকট আলোচিত হয় যে, আবু হুরায়রা [রাদি.] বলেছেন যে ব্যক্তির জানাবত অবস্থায় ফজর হয়েছে সে সেই দিনের রোযা ভঙ্গ করেছে। আয়েশা [রাদি.] বলিলেন, আবু হুরায়রা যেমন বলেছেন, [মাসআলা] তেমন নয়। হে আবদুর রহমান! রসূলুল্লাহ্ [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম] যা করিয়াছেন তুমি কি তা হইতে বিমুখ হইতে চাও ? আবদুর রহমান বলিলেন, না, আল্লাহ্‌র কসম, [তা হয় না]। আয়েশা [রাদি.] বলিলেন, আমি রসূলুল্লাহ্ সাঃআঃ-এর ব্যাপারে সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, তিনি স্বপ্নদোষে নয়, সহবাসের কারণে জানাবত অবস্থায় ফজর করিতেন। অতঃপর সেই দিনের রোযা রাখতেন। [রাবী] বলেন, তারপর আমরা আয়েশা [রাদি.]-এর নিকট হইতে বের হলাম এবং উম্মে সালমা [রাদি.]-এর কাছে গেলাম এবং এ বিষয়ে তাহাকে প্রশ্ন করলাম। আয়েশা [রাদি.] যেমন বলেছেন তিনিও তেমন বলিলেন।

অতঃপর আমরা প্রস্থান করলাম এবং মারওয়ান ইবনি হাকামের কাছে উপস্থিত হলাম। তাঁরা দুজনে যা বর্ণনা করিয়াছেন আবদুর রহমান মারওয়ানের কাছে তা উল্লেখ করলেন। অতঃপর মারওয়ান বলিলেন, আমি তোমাকে কসম দিচ্ছি, হে আবু মুহাম্মদ, আমার সওয়ারী দরজায় [উপস্থিত] রয়েছে, তুমি উহার উপর সওয়ার হয়ে অবশ্যই আবু হুরায়রা [রাদি.]-এর নিকট গমন কর। তিনি তাঁর [নিজস্ব] ভূমিতে আকীক নামক স্থানে অবস্থান করিতেছেন। নিশ্চয়ই এ খবরটি তাহাকে পৌঁছিয়ে দাও। আবদুর রহমান সওয়ার হলেন, আমি তাঁর সাথে আরোহণ করলাম।

অতঃপর আমরা আবু হুরায়রা [রাদি.]-এর কাছে এলাম। আবু হুরায়রা [রাদি.]-এর সহিত আবদুর রহমান কিছুক্ষণ কথা বলিলেন। তারপর এই বিষয়ে তাঁর সাথে আলোচনা করলেন। এরপর আবু হুরায়রা [রাদি.] বলিলেন, এই বিষয়ে আমার জানা নাই, আমাকে খবরদাতা খবর দিয়েছেন।

{১} [সহীহ, মুসলিম ১১০৯]{১} হয়তো আবু হুরায়রা [রাদি.]-এর উদ্দেশ্য হচ্ছে, ফজরের পূর্বে গোসল করে নেয়া উত্তম অথবা তাঁর উদ্দেশ্য, সহবাস অবস্থায় ফজর হলে তারা রোযা রাখবে না, অথবা এই মত প্রথমে ছিল পরে তিনি তা প্রত্যাহার করিয়াছেন এবং পূর্ব মত রহিত হয়েছে।এই হাদীসটির তাহকিকঃ সহীহ হাদীস

৬২৮ নাবী সাঃআঃ-এর সহধর্মিণী আয়েশা ও উম্মে সালমা [রাদি.] হইতে বর্ণিতঃ

রসূলুল্লাহ্ সাঃআঃ-এর স্বপ্নদোষ ব্যতীত সহবাসের কারণে জানাবত অবস্থায় ফজর হত, অতঃপর তিনি রোযা রাখতেন।

[বুখারি ১৯২৬, ১৯৩০, মুসলিম ১১০৯]এই হাদীসটির তাহকিকঃ সহীহ হাদীস

পরিচ্ছেদঃ ৫ -রোযাদারের জন্য চুমু খাওয়ার অনুমতি

৬২৯ আতা ইবনি ইয়াসার [রাদি.] হইতে বর্ণিতঃ

এক ব্যক্তি রমযান মাসে রোযা অবস্থায় তাঁর স্ত্রীকে চুমু খেলেন এবং এতে খুবই অনুতপ্ত হলেন। অতঃপর এই বিষয়ে প্রশ্ন করার জন্য তাঁর স্ত্রীকে পাঠালেন। সে নাবী সাঃআঃ-এর সহধর্মিনী উম্মে সালমা [রাদি.]-এর কাছে গেল এবং সেই বিষয় তাঁর কাছে উল্লেখ করিল। উম্মে সালমা [রাদি.] তাকে বলিলেন, রোযা অবস্থায় রসূলুল্লাহ্ সাঃআঃ-ও চুমা দিয়ে থাকেন। সে তার স্বামীর কাছে ফিরে এসে এই খবর তাকে জানাল। কিন্তু তাঁর পেরেশানী আরো বৃদ্ধি পেল। তিনি বলিলেন, আমরা রসূলুল্লাহ্ সাঃআঃ-এর মত নই। আল্লাহ্ তাঁর রাসূলের জন্য যা ইচ্ছা হালাল করেন। তারপর তাঁর স্ত্রী পুনরায় উম্মে সালমা [রাদি.]-এর কাছে গেল। [এবার] উম্মে সালমা [রাদি.]-এর নিকট রসূলুল্লাহ্ সাঃআঃকে পেল। রসূলুল্লাহ্ [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম] বলিলেন, এই স্ত্রীলোকটির ব্যাপার কি ? উম্মে সালমা [রাদি.] তাকে বিষয়টি জানালেন। রসূলুল্লাহ্ [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম] বলিলেন, আমিও এটা করি, তুমি এই স্ত্রীলোককে এই খবর দাওনি কেন ? উম্মে সালমা [রাদি.] বলিলেন, আমি তাকে এই খবর দিয়েছি। অতঃপর তার স্বামীর কাছে গিয়ে সেই খবর বলেছে। এতে তাঁর চিন্তা আরো বৃদ্ধি পেয়েছে এবং তিনি বলেছেন, আমরা রসূলুল্লাহ্ সাঃআঃ-এর মত নই। আল্লাহ্ তাঁর রাসূলের জন্য ইচছা হালাল করেন। এটা শুনে রসূলুল্লাহ্ [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম] রাগান্বিত হলেন এবং বলিলেন, আমি অবশ্য তোমাদের অপেক্ষা আল্লাহকে অধিক ভয় করি এবং তাঁর সীমানাসমূহকে তোমাদের অপেক্ষা অধিক জানি। [হাদীসটি ঈমাম মালিক [রাহিমাহুল্লাহ] একক ভাবে বর্ণনা করিয়াছেন]

এই হাদীসটির তাহকিকঃ নির্ণীত নয়

৬৩০ উম্মুল মুমিনীন আয়েশা [রাদি.] হইতে বর্ণিতঃ

রসূলুল্লাহ্ [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম] তাঁর কোন এক সহধর্মিনীকে চুমু খেতেন, অথচ তিনি রোযাদার। তারপর তিনি হাসলেন।

[বুখারি ১৯২৮, মুসলিম ১১০৬] এই হাদীসটির তাহকিকঃ সহীহ হাদীস

৬৩১ বর্ণনাকারী হইতে বর্ণিতঃ

উমার ইবনি খাত্তাব [রাদি.]-এর স্ত্রী আতিকা বিনত সাঈদ [রাদি.] উমার ইবনি খাত্তাব [রাদি.]-এর মাথায় চুমু খেতেন, অথচ তিনি রোযাদার। তবুও তিনি তাহাকে নিষেধ করিতেন না। [হাদীসটি ঈমাম মালিক [রাহিমাহুল্লাহ] একক ভাবে বর্ণনা করিয়াছেন]

এই হাদীসটির তাহকিকঃ নির্ণীত নয়

৬৩২ আয়েশা বিন্ত তালহা [রাহিমাহুল্লাহ] হইতে বর্ণিতঃ

তিনি নাবী সাঃআঃ-এর সহধর্মিনী আয়েশা [রাদি.]-এর নিকট ছিলেন। সেখানে তাঁর স্বামী প্রবেশ করলেন। তিনি হলেন আবদুল্লাহ্ ইবনি আবদুর রহমান ইবনি আবু বক্‌র সিদ্দীক [রাদি.]। তিনি রোযাদার ছিলেন। আয়েশা [রাদি.] তাহাকে বলিলেন, তোমাকে তোমার পরিবারের কাছে যেতে এবং তাকে চুমু খেতে ও তার সাথে খেল-তামাশা করিতে কিসে বাধা দিয়েছে ? তিনি বলিলেন, আমি তাহাকে চুমু খাই কিভাবে, আমি যে রোযাদার! তিনি [আয়েশা রা.] বলেন, হ্যাঁ [রোযাদার হয়েও তা করিতে পার]। [হাদীসটি ঈমাম মালিক [রাহিমাহুল্লাহ] একক ভাবে বর্ণনা করিয়াছেন]

চাঁদ দেখে রোজা রাখার হাদিস -এই হাদীসটির তাহকিকঃ নির্ণীত নয়

৬৩৩ বর্ণনাকারী হইতে বর্ণিতঃ

আবু হুরায়রা ও সাদ আবি ওয়াক্কাস [রাদি.] রোযাদারের জন্য চুমু খাওয়ার অনুমতি দিতেন। [হাদীসটি ঈমাম মালিক [রাহিমাহুল্লাহ] একক ভাবে বর্ণনা করিয়াছেন]

চাঁদ দেখে রোজা রাখার হাদিস -এই হাদীসটির তাহকিকঃ নির্ণীত নয়

পরিচ্ছেদঃ ৬ -রোযাদারের চুমু খাওয়ার ব্যাপারে কঠোরতা

৬৩৪ বর্ণনাকারী হইতে বর্ণিতঃ

মালিক [রাহিমাহুল্লাহ]-এর নিকট রেওয়ায়ত পৌঁছেছে যে, নাবী সাঃআঃ-এর সহধর্মিনী আয়েশা [রাদি.] যখন উল্লেখ করিতেন যে, রসূলুল্লাহ্ [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম] চুমু খেতেন, তখন [তিনি আয়েশা রা.] বলিতেন, তোমাদের চাইতে রসূলুল্লাহ্ [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম] অধিক ক্ষমতা রাখেন নিজের নফসের উপর। {১} [বুখারি ১৯২৭, মুসলিম ১১০৬, তবে ঈমাম মালিক কর্তৃক বর্ণিত হাদীসের সনদে انقطاع তথা বিচ্ছিন্নতা রয়েছে]

১৭قَالَ يَحْيَى قَالَ مَالِك قَالَ هِشَامُ بْنُ عُرْوَةَ قَالَ عُرْوَةُ بْنُ الزُّبَيْر لَمْ أَرَ الْقُبْلَةَ لِلصَّائِمِ تَدْعُو إِلَى خَيْرٍ.

উরওয়াহ ইবনি যুবায়র [রাহিমাহুল্লাহ] বলেন, রোযাদারের জন্য চুমু খাওয়া কোন মঙ্গলের দিকে আহ্বান করে বলে আমি মনে করি না।

{১} নিজের নফস ও প্রবৃত্তির উপর তিনি সর্বাপেক্ষা ক্ষমতাবান ব্যক্তি।এই হাদীসটির তাহকিকঃ অন্যান্য

৬৩৫ বর্ণনাকারী হইতে বর্ণিতঃ

আবদুল্লাহ্ ইবনি আব্বাস [রাদি.]-কে রোযাদারের চুমু খাওয়ার বিষয়ে প্রশ্ন করা হয়। তিনি বৃদ্ধের জন্য অনুমতি দেন। আর যুবকের জন্য মাকরূহ বলেন। {১} [হাদীসটি ঈমাম মালিক [রাহিমাহুল্লাহ] একক ভাবে বর্ণনা করিয়াছেন]

{১} এতে বিপদের আশংকাই বেশি, এই সময় এমন কাজও করে বসতে পারে যাতে রোযা ভঙ্গ হয়ে যায় এবং কাফফারাও দিতে হয়। এই হাদীসটির তাহকিকঃ নির্ণীত নয়

৬৩৬ বর্ণনাকারী হইতে বর্ণিতঃ

আবদুল্লাহ্ ইবনি উমার [রাদি.] রোযাদারের জন্য চুমু খাওয়া এবং স্ত্রীর সাথে মিলিত হওয়াকে নিষেধ করিতেন। {১} [হাদীসটি ঈমাম মালিক [রাহিমাহুল্লাহ] একক ভাবে বর্ণনা করিয়াছেন]

{১} মিলিত হওয়ার অর্থ সঙ্গমে যেভাবে মিলিত হয় সেভাবে মিলিত হওয়া, সঙ্গম হোক বা না হোক।

চাঁদ দেখে রোজা রাখার হাদিস -এই হাদীসটির তাহকিকঃ নির্ণীত নয়

পরিচ্ছেদঃ ৭ -প্রবাসে রোযা রাখা

৬৩৭ আবদুল্লাহ্ ইবনি আব্বাস [রাদি.] হইতে বর্ণিতঃ

রাসূলুল্লাহ [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম] মক্কা বিজয় বৎসরে রমযান মাসে মক্কার দিকে সফরে বের হলেন এবং রোযা রাখলেন। কাদীদ নামক স্থানে পৌঁছালে পর তিনি রোযা ভঙ্গ করলেন এবং তাঁর সাথে অন্যরাও রোযা ভঙ্গ করলেন। আর তাঁরা রসূলুল্লাহ্ সাঃআঃ-এর হুকুম হইতে যা সদ্য অতঃপর যা অতি সদ্য তা গ্রহণ করিতেন। [অর্থাৎ যে কোন নূতন হুকুম পাওয়া বা শোনামাত্রই গ্রহণ করিতেন]।

[বুখারি ১৯৪৪, মুসলিম ১১৩]এই হাদীসটির তাহকিকঃ সহীহ হাদীস

৬৩৮ রসূলুল্লাহ্ সাঃআঃ-এর জনৈক সাহাবী হইতে বর্ণিতঃ

রসূলুল্লাহ্ [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম] বিজয় বৎসর তাঁর সফরে সাহাবীগণকে রোযা খুলতে নির্দেশ দিলেন এবং বলিলেন, তোমরা তোমাদের শত্রুদের জন্য শক্তি সঞ্চয় কর, আর রসূলুল্লাহ্ [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম] নিজে রোযা রাখলেন। আবু বক্‌র ইবনি আবদুর রহমান [রাহিমাহুল্লাহ] বলেন, যে ব্যক্তি আমার নিকট হাদীস বর্ণনা করিয়াছেন তিনি বলেছেন, আমি আরজ নামক স্থানে রসূলুল্লাহ্ সাঃআঃকে নিজের মাথায় পানি ঢালতে দেখেছি, পিপাসায় অথবা প্রচণ্ড গরমের কারণে।

অতঃপর রসূলুল্লাহ্ সাঃআঃকে বলা হল, আপনি রোযা রেখেছেন বলে একদল লোক [এখনও] রোযা রেখেছে। অতঃপর রসূলুল্লাহ্ [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম] যখন কাদীদে পৌঁছালেন, তখন তিনি পেয়ালা চাইলেন এবং [পানি অথবা দুধ] পান করলেন, তারপর সাহাবীগণ রোযা ভঙ্গ করলেন।

[সহীহ, আবু দাঊদ ২৩৬৫, আলবানী হাদীসটিকে সহীহ বলেছেন {সহীহ ও যয়ীফ, সুনানে আবু দাঊদ}] এই হাদীসটির তাহকিকঃ সহীহ হাদীস

৬৩৯ আনাস ইবনি মালিক [রাদি.] হইতে বর্ণিতঃ

আমরা রমযানে রসূলুল্লাহ্ সাঃআঃ-এর সাথে সফর করেছি। অতঃপর কোন রোযাদার রোযাভঙ্গকারীর উপর দোষারোপ করেননি এবং কোন রোযাভঙ্গকারীও কোন রোযাদারের উপর দোষারোপ করেননি।

[বুখারি ১৯৪৭, মুসলিম ১১১৮] চাঁদ দেখে রোজা রাখার হাদিস -এই হাদীসটির তাহকিকঃ সহীহ হাদীস

৬৪০ হামযা ইবনি আমর আসলামী [রাদি.] হইতে বর্ণিতঃ

হামযা ইবনি আমর আসলামী [রাদি.] রসূলুল্লাহ্ সাঃআঃ-এর কাছে বলিলেন, ইয়া রসূলুল্লাহ্ ! আমি প্রায়ই রোযা রাখি। আমি কি সফরে রোযা রাখব ? রসূলুল্লাহ্ [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম] তাহাকে বলিলেন, তুমি ইচ্ছা করলে রোযা রাখ, আর ইচ্ছা করলে রোযা ছাড়।

[বুখারি ১৯৪৩, মুসলিম ১১২১, তবে ঈমাম মালিক কর্তৃক বর্ণিত হাদীসের সনদ মুরসাল] এই হাদীসটির তাহকিকঃ অন্যান্য

৬৪১ নাফি [রাদি.] হইতে বর্ণিতঃ

আবদুল্লাহ্ ইবনি উমার [রাদি.] রমযানে সফরে রোযা রাখতেন না। [হাদীসটি ঈমাম মালিক [রাহিমাহুল্লাহ] একক ভাবে বর্ণনা করিয়াছেন]

এই হাদীসটির তাহকিকঃ নির্ণীত নয়

৬৪২ হিশাম ইবনি উরওয়াহ্ [রাহিমাহুল্লাহ] হইতে বর্ণিতঃ

উরওয়াহ্ [রাহিমাহুল্লাহ] রমযানে সফর করিতেন, আমরাও তাঁর সাথে সফর করতাম। অতঃপর উরওয়াহ্ [রাহিমাহুল্লাহ] রোযা রাখতেন কিন্তু আমরা রোযা রাখতাম না, তিনি আমাদেরকে রোযা রাখতে বলিতেন না। [হাদীসটি ঈমাম মালিক [রাহিমাহুল্লাহ] একক ভাবে বর্ণনা করিয়াছেন]

এই হাদীসটির তাহকিকঃ নির্ণীত নয়

পরিচ্ছেদঃ ৮ -যে ব্যক্তি রমযানে সফর হইতে প্রত্যাবর্তন করে অথবা রমযানে সফরের ইচ্ছা করে সে কি করিবে?

৬৪৩ মালিক [রাহিমাহুল্লাহ] হইতে বর্ণিতঃ

তাঁর কাছে রেওয়ায়ত পৌঁছেছে, উমার ইবনি খাত্তাব [রাদি.] রমযানে যদি সফরে থাকতেন, তবে তিনি যদি জানতেন যে, তিনি মদীনায় দিনের প্রথম দিকে প্রবেশ করিবেন তবে তিনি রোযা অবস্থায় [মদীনায়] প্রবেশ করিতেন। [হাদীসটি ঈমাম মালিক [রাহিমাহুল্লাহ] একক ভাবে বর্ণনা করিয়াছেন]

মালিক [রাহিমাহুল্লাহ] বলেন, যে ব্যক্তি রমযানে সফরে থাকে অতঃপর জানতে পারে যে, সে নিজের পরিবার পরিজনের মধ্যে দিনের প্রথমদিকে প্রবেশ করিবে এবং প্রবেশের পূর্বে ফজর হয়, তবে সে রোযা অবস্থায় প্রবেশ করিবে।

মালিক [রাহিমাহুল্লাহ] বলেন, আর যে ব্যক্তি রমযানে সফরে বের হইতে ইচ্ছা করে এবং স্বীয় [আবাস] ভূমিতে থাকতেই ফজর হয়, তার বের হওয়ার পূর্বে সেই দিনের রোযা রাখবে।

মালিক [রাহিমাহুল্লাহ] বলেন, যে ব্যক্তি রোযা না রাখা অবস্থায় সফর হইতে ফিরেছে, আর তার স্ত্রীও রোযা রাখেনি [ঋতুমতী বলে], এখন রমযানের মধ্যে ঋতু হইতে পাক হয়েছে, তবে তার স্বামী ইচ্ছা করলে [রোযার দিনে] তার সাথে সহবাস করিতে পারে [কারণ দুজনে রোযা অবস্থায় নয়]।

এই হাদীসটির তাহকিকঃ নির্ণীত নয়

পরিচ্ছেদঃ ৯ -রমযানের রোযা ভঙ্গ করার কাফ্ফারা

৬৪৪ আবু হুরায়রা [রাদি.] হইতে বর্ণিতঃ

এক ব্যক্তি রমযানের রোযা ভঙ্গ করেছে। রসূলুল্লাহ্ [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম] তাহাকে একটি ক্রীতদাস আযাদ করার নির্দেশ দিলেন অথবা একনাগাড়ে দুই মাস রোযা রাখার অথবা ষাটজন মিসকিনকে আহার দেয়ার জন্য বলিলেন। লোকটি বলল, আমি সামর্থ্য রাখি না। তারপর রসূলুল্লাহ্ সাঃআঃ-এর নিকট এক টুকরি খেজুর আনা হয়। রসূলুল্লাহ্ [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম] বলিলেন, এটা গ্রহণ কর এবং সদকা কর। লোকটি বলল, ইয়া রসূলুল্লাহ্! আমার হইতে অধিক মুহতাজ আমি পাইনি। [এই কথা শুনে] হাসলেন. এমনকি রসূলুল্লাহ্ সাঃআঃ-এর সামনের দন্ত মুবারক প্রকাশিত হল। অতঃপর বলিলেন। এটা তুমি খাও।

[বুখারি ১৯৩৬, মুসলিম ১১১১] এই হাদীসটির তাহকিকঃ সহীহ হাদীস

৬৪৫ সাঈদ ইবনি মুসায়্যাব [রাহিমাহুল্লাহ] হইতে বর্ণিতঃ

জনৈক বেদুঈন বুক চাপড়াতে চাপড়াতে এবং চুল টানতে টানতে রসূলুল্লাহ্ সাঃআঃ-এর কাছে এল। সে বলিতেছিল [পূণ্য হইতে] দূরবর্তী ধ্বংস হয়েছে। রসূলুল্লাহ্ [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম] বলিলেন, সে কি ? সে বলল, আমি স্ত্রীর সাথে রমযানে সহবাস করেছি অথচ আমি রোযাদার। রসূলুল্লাহ্ [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম] [এটা শুনে] বলিলেন, তুমি একটি গোলাম আযাদ করার শক্তি রাখ কি ? সে বলল, না। রসূলুল্লাহ্ [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম] বলিলেন, একটি উট হাদয়ি স্বরূপ পাঠাইবার সামর্থ্য রাখ কি ? সে বলল, না। রসূলুল্লাহ্ [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম] বলিলেন, তুমি বস। অতঃপর রসূলুল্লাহ্ সাঃআঃ-এর নিকট এক টুকরি খেজুর আনা হল। তখন রসূলুল্লাহ্ [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম] বলিলেন, এটা নাও এবং সদকা কর। লোকটি বলল, ইয়া রসূলুল্লাহ্ [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম] আমার অপেক্ষা অধিক মুহতাজ কাউকেও আমি পাইনি। রসূলুল্লাহ্ [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম] বলিলেন, এটা তুমি খাও এবং স্ত্রী সহবাসের কাফফারাস্বরূপ একদিন রোযা রাখ। [বাইহাকী বর্ণনা করেন {সুনানে কুবরা ৪/২২৭}

মালিক [রাহিমাহুল্লাহ] বলেন, আতা খোরাসানী [রাহিমাহুল্লাহ] বলেছেন, আমি সাঈদ ইবনি মুসায়্যাব [রাহিমাহুল্লাহ]-কে প্রশ্ন করলাম, সেই টুকরিতে কত খেজুর ছিল ? তিনি বলিলেন, পনের صَاعًا হইতে বিশ صَاعًا পর্যন্ত। {১}

ইয়াহইয়া [রাহিমাহুল্লাহ] বলেন, মালিক [রাহিমাহুল্লাহ] বলেছেন, আমি আহলে ইলমকে [বিজ্ঞ উলামা] বলিতে শুনিয়াছি, যে ব্যক্তি রমযানের কাযা [করিতে গিয়ে] দিনে তার স্ত্রীর সাথে সহবাস অথবা অন্য কারণে রোযা ভঙ্গ করে ফেলে, তার উপর কাফফারা [ওয়াজিব] হইবে না। যে কাফফারার কথা রসূলুল্লাহ্ [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম] হইতে বর্ণিত হয়েছে, তা সেই ব্যক্তি সম্বন্ধে যে ব্যক্তি রমযান মাসে আপন স্ত্রীর সাথে দিনে সহবাস করেছে। অবশ্য সেই ব্যক্তির উপর সেই দিনের কাযা [ওয়াজিব] হইবে। মালিক [রাহিমাহুল্লাহ] বলেন, এটাই সর্বাপেক্ষা পছন্দনীয় যা আমি এই ব্যাপারে শুনিয়াছি।

{১} صَاعًا ছা- খাদ্যশস্যের একটি পরিমাণ, প্রায় তিন সের ওজনের। এই হাদীসটির তাহকিকঃ নির্ণীত নয়

পরিচ্ছেদঃ ১০ -রোযাদারের শিঙ্গা লাগানো

৬৪৬ নাফি [রাহিমাহুল্লাহ] হইতে বর্ণিতঃ

আবদুল্লাহ্ ইবনি উমার [রাদি.] শিঙ্গা লাগাতেন অথচ তিনি রোযাদার । তিনি বলেন, অতঃপর তিনি তা ছেড়ে দেন। তৎপর তিনি যখন রোযা রাখতেন, ইফতার না করা পর্যন্ত শিঙ্গা লাগাতেন না। [হাদীসটি ঈমাম মালিক [রাহিমাহুল্লাহ] একক ভাবে বর্ণনা করিয়াছেন]

এই হাদীসটির তাহকিকঃ নির্ণীত নয়

৬৪৭ ইবনি শিহাব [রাহিমাহুল্লাহ] হইতে বর্ণিতঃ

সাদ ইবনি আবি ওয়াক্কাস ও আবদুল্লাহ্ ইবনি উমার [রাদি.] দুজনে শিঙ্গা লাগাতেন অথচ তাঁরা রোযাদার। [হাদীসটি ঈমাম মালিক [রাহিমাহুল্লাহ] একক ভাবে বর্ণনা করিয়াছেন]

এই হাদীসটির তাহকিকঃ নির্ণীত নয়

৬৪৮ হিশাম ইবনি উরওয়াহ্ [রাহিমাহুল্লাহ] হইতে বর্ণিতঃ

হিশাম ইবনি উরওয়াহ্ [রাহিমাহুল্লাহ] তাঁর পিতা হইতে বর্ণনা করেন যে, তিনি শিঙ্গা লাগাতেন অথচ তিনি রোযাদার। অতঃপর এই কারণে রোযা ভঙ্গ করিতেন না। হিশাম বলেন, আমি তাহাকে রোযাদার অবস্থা ছাড়া কখনো শিঙ্গা লাগাতে দেখিনি। [হাদীসটি ঈমাম মালিক [রাহিমাহুল্লাহ] একক ভাবে বর্ণনা করিয়াছেন]

মালিক [রাহিমাহুল্লাহ] বলেন, রোযাদারের শিঙ্গা লাগানো মাকরূহ নয় কিন্তু দুর্বল হয়ে পড়ার ভয় হলে মাকরূহ, দুর্বল না হলে এটা মাকরূহ হইবে না। আর যদি কোন ব্যক্তি রমযানে শিঙ্গা লাগায়, অতঃপর রোযা ভঙ্গ করা হইতে বিরত থাকে, আমি তার জন্য কোন কিছু [লাগবে বলে] মনে করি না এবং যেদিন শিঙ্গা লাগিয়েছে সেই দিনের রোযা কাযা করার হুকুমও করি না। কেননা রোযার ক্ষতির আশংকায় রোযাদারের জন্য শিঙ্গা লাগানো মাকরূহ করা হয়েছে। ফলে যে ব্যক্তি লাগিয়েছে, সন্ধ্যা পর্যন্ত রোযা ইফতার করা হইতে বিরত রয়েছে আমি তার জন্য কোন দোষ মনে করি না এবং তার উপর সেই দিনের [রোযার] কাযাও প্রয়োজন হইবে না।

এই হাদীসটির তাহকিকঃ নির্ণীত নয়

পরিচ্ছেদঃ ১১ -আশুরা দিবসে রোযা

৬৪৯ নাবী সাঃআঃ-এর সহধর্মিনী আয়েশা [রাদি.] হইতে বর্ণিতঃ

আশুরা দিবস এমন একটি দিবস ছিল, যে দিবসে জাহিলিয়া যুগে কুরাইশগণ রোযা রাখত। জাহিলিয়া যুগে রসূলুল্লাহ্ সাঃআঃ-ও সে দিবসে রোযা রাখতেন। অতঃপর রসূলুল্লাহ্ [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম] মদীনায় এলে পরে তিনি সেই রোযা রাখলেন এবং লোকদেরকেও সেই দিনের রোযা রাখতে হুকুম করলেন। অতঃপর যখন রমযানের রোযা ফরয হল, উহাই ফরয হিসেবে রইল। আশুরা দিবসের রোযা ছেড়ে দেয়া হল। অতঃপর যে ইচ্ছা করত ঐ দিবসে রোযা রাখত, আর যে ইচ্ছা করত না সে তা ছেড়ে দিত।

[বুখারি ২০০২, মুসলিম ১১২৫] এই হাদীসটির তাহকিকঃ সহীহ হাদীস

৬৫০ হুমায়দ ইবনি আবদুর রহমান ইবনি আউফ [রাহিমাহুল্লাহ] হইতে বর্ণিতঃ

তিনি হজ্জের সালে {১} আশুরা দিবসে মুয়াবিয়া ইবনি আবু সুফইয়ান [রাদি.]-কে মিম্বরের উপর বলিতে শুনেছেন, হে মদীনাবাসী! তোমাদের আলেমগণ কোথায় ? আমি এই দিবস সম্পর্কে রসূলুল্লাহ্ সাঃআঃকে বলিতে শুনিয়াছি এটা আশুরা দিবস; তোমাদের উপর এই [দিবসের] রোযা ফরয করা হয়নি। আমি রোযা রেখেছি, তোমরা যে ইচ্ছা কর রোযা রাখতে পার, আর যার ইচছা রোযা ছেড়ে দাও।

[বুখারি ২০০৩, মুসলিম ১১২৯] {১} হজ্জের সাল- ৪৪ হিজরীতে আমীর মুয়াবিয়া তাঁর শাসনামলে প্রথমবার যে হজ্জ করেন উহাকে হজ্জের সাল বলা হয়েছে।এই হাদীসটির তাহকিকঃ সহীহ হাদীস

৬৫১ মালিক [রাহিমাহুল্লাহ] হইতে বর্ণিতঃ

তাঁর নিকট রেওয়ায়ত পৌঁছেছে যে, উমার ইবনি খাত্তাব [রাদি.] হারিস ইবনি হিশাম [রাদি.]-এর নিকট খবর পাঠিয়েছেন, কাল আশুরা দিবস, তুমি নিজেও রোযা রাখ এবং পরিবার-পরিজনকেও রোযা রাখতে বল। [হাদীসটি ঈমাম মালিক [রাহিমাহুল্লাহ] একক ভাবে বর্ণনা করিয়াছেন]

এই হাদীসটির তাহকিকঃ নির্ণীত নয়

পরিচ্ছেদঃ ১২ -ঈদুল ফিতর ও ঈদুল আযহা দিবসে এবং সারা বৎসর রোযা রাখা

৬৫২ আবু হুরায়রা [রাদি.] হইতে বর্ণিতঃ

রসূলুল্লাহ্ [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম] দুই দিবসে রোযা নিষেধ করিয়াছেন ঈদুল ফিতর ও ঈদুল আযহার দিন।

[সহীহ, মুসলিম ১১৩৮] এই হাদীসটির তাহকিকঃ সহীহ হাদীস

৬৫৩ মালিক [রাহিমাহুল্লাহ] হইতে বর্ণিতঃ

তিনি আহলে ইলমকে [বিজ্ঞ উলামা] বলিতে শুনেছেন, সর্বদা রোযা রাখতে কোন দোষ নেই, যদি রসূলুল্লাহ্ [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম] যে দিবসে রোযা রাখতে নিষেধ করিয়াছেন সেই সব দিবসে রোযা রাখা হইতে বিরত থাকে। সেই সব দিবস হল মিনা-এর দিনগুলো, ফিতর ও আযহা দিবস। আমাদের কাছে এই বিষয়ে যা পৌঁছেছে এবং এই ব্যাপারে আমি যা শুনিয়াছি তন্মধ্যে এটা হচ্ছে সর্বাপেক্ষা আমার পছন্দনীয়। [হাদীসটি ঈমাম মালিক [রাহিমাহুল্লাহ] একক ভাবে বর্ণনা করিয়াছেন]

এই হাদীসটির তাহকিকঃ নির্ণীত নয়

পরিচ্ছেদঃ ১৩ -অনবরত রোযা রাখার [সওমে বেসাল] প্রতি নিষেধাজ্ঞা

৬৫৪ আবদুল্লাহ্ ইবনি উমার [রাদি.] হইতে বর্ণিতঃ

রসূলুল্লাহ্ [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম] অনবরত রাত্রেও কিছু না খেয়ে রোযা রাখতে নিষেধ করিয়াছেন। সাহাবীগণ বলিলেন, ইয়া রসূলুল্লাহ্! আপনি যে অনবরত রোযা রাখেন! রসূলুল্লাহ্ [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম] বলিলেন, আমি অবশ্য তোমাদের মত নয়। আমাকে আহার ও পানীয় দেওয়া হয়।

[বুখারি ১৯৬২, মুসলিম ১১০২] এই হাদীসটির তাহকিকঃ সহীহ হাদীস

৬৫৫ আবু হুরায়রা [রাদি.] হইতে বর্ণিতঃ

রসূলুল্লাহ্ [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম] বলেছেন, তোমরা অনবরত রোযা রাখা হইতে নিজেদেরকে বাঁচাও। তোমরা অনবরত রোযা রাখা হইতে নিজেদেরকে বাঁচাও। সাহাবীগণ বলিলেন, ইয়া রাসূলুল্লাহ! তবে আপনি যে অনবরত রোযা রাখেন ? রসূলুল্লাহ্ [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম] বলিলেন, আমি তোমাদের মত নই। আমি রাত্রি যাপন করি [এই অবস্থায়] যে, আমার প্রভু আমাকে আহার দান করেন এবং পানীয় দান করেন।

[বুখারি ১৯৬৬, মুসলিম ১১০৩] এই হাদীসটির তাহকিকঃ সহীহ হাদীস

পরিচ্ছেদঃ ১৪ -ভুলে হত্যা ও যিহার {১} -এর রোযা

৬৫৬ ইয়াহইয়া [রাহিমাহুল্লাহ] হইতে বর্ণিতঃ

আমি মালিক [রাহিমাহুল্লাহ]-কে বলিতে শুনিয়াছি, সেই ব্যক্তি সম্পর্কে যে ব্যক্তির উপর ধারাবাহিকভাবে দুই মাসের রোযা ফরয হয়েছে ভুলে হত্যা অথবা যিহার করা বাবদ। অতঃপর তার কোন কঠিন পীড়া হয়েছে যদ্দরুন রোযা ভাঙতে হয়েছে। সে যদি আরোগ্য লাভ করে এবং রোযা রাখতে সক্ষম হয়, তবে আমি [এই ব্যাপারে] যা শুনেয়ছ, তন্মধ্যে উত্তম হল সেই ব্যক্তির জন্য এতে বিলম্ব করা জায়েয নয়। তার যে রোযা পূর্বে গত হয়েছে, উহার ভিত্তি করে সে অবশিষ্ট রোযা রাখবে।

তদ্রূপ ভুলে হত্যার কারণে যে নারীর উপর রোযা ওয়াজিব হয়েছে, সে তার রোযার মাঝখানে ঋতুমতী হলে রোযা রাখবে না। তবে পাক হলে পর সে রোযা রাখতে বিলম্ব করিবে না এবং যে রোযা পূর্বে রেখেছে তার উপর ভিত্তি করে অবশিষ্ট রোযা রাখবে। আল্লাহর কিতাবের বিধান মুতাবিক যার উপর দুই মাসের রোযা ধারাবাহিকভাবে রাখা ওয়াজিব হয়েছে, তার জন্য পীড়াজনিত ব্যাপার ও ঋতুস্রাব ব্যতীত রোযা ভঙ্গ করা জায়েয নয়। এইরূপ ব্যক্তির জন্য সফর আরম্ভ করে রোযা ভঙ্গ করারও অনুমতি নেই। যেরূপ কুরআনুল কারীমে ইরশাদ করা হয়েছে, তোমাদের মধ্যে যে ব্যক্তি রুগ্ন থাকে কিংবা সফরে থাকে, তবে সে অন্য দিন রোযা রাখবে।

ইয়াহইয়া [রাহিমাহুল্লাহ] বলেন, মালিক [রাহিমাহুল্লাহ] বলেছেন, এই ব্যাপারে যা শুনিয়াছি, তার মধ্যে এটাই আমার কাছে সর্বাপেক্ষা উত্তম।

{১} যিহাব: নিজের স্ত্রীকে মায়ের সঙ্গে তুলনা করে সম্বোধন করা। এই হাদীসটির তাহকিকঃ নির্ণীত নয়

পরিচ্ছেদঃ ১৫ -রোযার রুগ্ন ব্যক্তির করণীয়

৬৫৭ ইয়াহইয়া [রাহিমাহুল্লাহ] হইতে বর্ণিতঃ

আমি মালিক [রাহিমাহুল্লাহ]-কে বলিতে শুনিয়াছি, আমি আহলে ইলম-এর কাছে যা শুনিয়াছি তা হচ্ছে এই পীড়িত ব্যক্তির যদি এমন রোগ হয় যাতে রোযা রাখা তার জন্য দুষ্কর এবং কষ্টদায়ক হয়, যখন রোগ এই স্তরে পৌঁছে তখন তার জন্য রোযা ইফতার [রাখিয়া ভাঙিয়া ফেলা বা শুরুতেই না রাখা] করা জায়েয আছে। তদ্রূপ পীড়িত ব্যক্তির যদি নামাযে দাঁড়াতে মুশকিল হয় অর্থাৎ পীড়ার কারণে তার ওযর [অপারগতা] সেই দরজায় পৌঁছায়, আল্লাহ্ তাআলা বান্দার ওযর সম্পর্কে বান্দা অপেক্ষা অধিক জ্ঞাত। আবার কোন কোন রোগ সেই দরজার হয় না, যখন ওযর এই স্তরে পৌঁছে, তখন সে বসে নামাজ আদায় করিবে। আর আল্লাহর দ্বীন সহজ। তিনি মুসাফিরের জন্য সফরে রোযা ভাঙার অনুমতি দিয়েছেন। অথচ মুসাফির পীড়িত ব্যক্তির তুলনায় রোযা রাখতে অধিক সক্ষম।

আল্লাহ্ তাআলা কিতাবে বলেছেন, তোমাদের মধ্যে যে ব্যক্তি রুগ্ন থাকে অথবা সফরে থাকে, সে অন্যদিন রোযা করিবে। আল্লাহ্ তাআলা [এই আয়াতে] মুসাফিরের জন্য সফরে রোযা না রাখার অনুমতি দিয়েছেন। অথচ সে রোযার উপর পীড়িতের তুলনায় অধিক শক্তিশালী। এই ব্যাপারে যা শুনিয়াছি তন্মধ্যে এটাই আমার কাছে পছন্দনীয়। আমাদের নিকট এটাই ঐকমত্যে গৃহীত।

এই হাদীসটির তাহকিকঃ নির্ণীত নয়

পরিচ্ছেদঃ ১৬ -রোযার মানত করা এবং মৃত ব্যক্তির পক্ষ হইতে রোযা রাখা

৬৫৮ মালিক [রাহিমাহুল্লাহ] হইতে বর্ণিতঃ

সাঈদ ইবনি মুসায়্যাব [রাহিমাহুল্লাহ]-কে জিজ্ঞেস করা হল সেই ব্যক্তি সম্পর্কে, যে ব্যক্তি মাসের রোযার মানত করেছে, তার জন্য নফল রোযা রাখা জায়েয কিনা? সাঈদ [রাহিমাহুল্লাহ] বলিলেন, নফলের পূর্বে মানতের [রোযা] আরম্ভ করিবে। [হাদীসটি ঈমাম মালিক [রাহিমাহুল্লাহ] একক ভাবে বর্ণনা করিয়াছেন]

মালিক [রাহিমাহুল্লাহ] বলেন, সুলায়মান ইবনি ইয়াসার [রাহিমাহুল্লাহ] হইতেও আমার নিকট এইরূপ রেওয়ায়ত পৌঁছেছে।

ইয়াহইয়া [রাহিমাহুল্লাহ] বলেন, মালিক [রাহিমাহুল্লাহ] বলেছেন, যে ব্যক্তির মৃত্যু হয়েছে অথচ তার উপর মানত রয়েছে গোলাম আযাদ করার অথবা সদকা প্রদানের অথবা কুরবানী করার। ফলে সে তার সম্পদ হইতে সেই মানত পূর্ণ করার অসিয়ত করেছে। তবে সদকা এবং কুরবানী তার সম্পদের এক-তৃতীয়াংশ হইতে পূর্ণ করা হইবে।

মানতকে অন্যান্য নফল অসিয়তের উপর অগ্রাধিকার প্রদান করা হইবে। তবে যদি অন্য অসিয়ত ও মানতের মত [ওয়াজিব] হয়। কারণ নফল কাজ বা নফল কাজের অসিয়ত ওয়াজিব অসিয়ত ও মানতের সমতুল্য নয়। মানত ইত্যাদি মৃত ব্যক্তির সকল সম্পদ হইতে আদায় না করে এক-তৃতীয়াংশ সম্পদ হইতে আদায় করা হইবে। যদি তাঁর জন্য এটা বৈধ হয়, তবে মুতাওয়াফ্ফী [মৃত্যুর সন্নিকটে পৌঁছেছে এমন ব্যক্তি] তার উপর ওয়াজিব বিষয়গুলোকে পিছিয়ে রাখবে। এমতাবস্থায় যখন তার মৃত্যু উপস্থিত হইবে, তখন তার সম্পদের মালিক হইবে তার ওয়ারিসগণ, বিশেষত ঐ সকল বিষয় যেসব বিষয়ে তার পক্ষ হইতে তাকীদ করবার জন্য তেমন কোন ব্যক্তি না থাকে। [স্বভাবতই ওয়ারিসগণ ঐসব মানত বা অসিয়ত পূর্ণ করিতে আগ্রহী হইবে না]। সকল সম্পদ হইতে ঐসব আদায় করা তার জন্য জায়েয হলে সে এই সকল ব্যাপারে বিলম্ব করিবে। যখন মৃত্যুর সময় উপস্থিত হইবে তখন সে উহা প্রকাশ করিবে। হয়তো ঐ সকল [প্রকাশিত দাবি-দাওয়া] পূরণে তার সমস্ত সম্পত্তিই নিঃশেষ হয়ে যাবে, তার জন্য এটা জায়েয নয়।

এই হাদীসটির তাহকিকঃ নির্ণীত নয়

৬৫৯ বর্ণনাকারী হইতে বর্ণিতঃ

আবদুল্লাহ্ ইবনি উমার [রাদি.]-কে প্রশ্ন করা হল একজন আর একজনের পক্ষে রোযা রাখবে কি ? অথবা একজন অন্যজনের পক্ষে নামাজ আদায় করিবে কি ? তিনি উত্তরে বলিলেন, একজন আর একজনের পক্ষে রোযা রাখবে না এবং অপরের পক্ষে নামাজও আদায় করিবে না। [হাদীসটি ঈমাম মালিক [রাহিমাহুল্লাহ] একক ভাবে বর্ণনা করিয়াছেন]

এই হাদীসটির তাহকিকঃ নির্ণীত নয়

পরিচ্ছেদঃ ১৭ -রমযানের কাযা ও কাফ্ফারা

৬৬০ খালিদ ইবনি আসলাম [রাহিমাহুল্লাহ] হইতে বর্ণিতঃ

খালিদ ইবনি আসলাম [রাহিমাহুল্লাহ] বর্ণনা করেন উমার ইবনি খাত্তাব [রাদি.] রমযান মাসে মেঘাচ্ছন্ন এক দিনে ইফতার করলেন। তিনি মনে করলেন যে, সন্ধ্যা হয়েছে এবং সূর্য ডুবেছে। অতঃপর এক ব্যক্তি এসে বলল, হে আমিরুল মুমিনীন! সূর্য উদিত হয়েছে। উমার ইবনি খাত্তাব [রাদি.] বলিলেন, বিষয়টির সমাধান হচ্ছে, আমরা যথাসাধ্য চেষ্টা করেছি। [হাদীসটি ঈমাম মালিক [রাহিমাহুল্লাহ] একক ভাবে বর্ণনা করিয়াছেন]

মালিক [রাহিমাহুল্লাহ] বলেন, উমার [রাদি.] এটার দ্বারা আমাদের মতে কাযা মুরাদ নিয়েছেন। [আল্লাহ্ সর্বজ্ঞানী] তার উক্তি বিষয়টির সমাধান সহজ এতে মেহনতের স্বল্পতা ও এটা সহজ হওয়াই তিনি বুঝাতে চেয়েছেন। তিনি বলেন, এর পরিবর্তে আর একদিন রোযা রাখব।

এই হাদীসটির তাহকিকঃ নির্ণীত নয়

৬৬১ নাফি [রাহিমাহুল্লাহ] হইতে বর্ণিতঃ

আবদুল্লাহ্ ইবনি উমার [রাদি.] বলিতেন, যে ব্যক্তি সফর অথবা পীড়ার কারণে রোযা রাখেনি, সে রমযানের রোযা রাখবে একাধারে। [হাদীসটি ঈমাম মালিক [রাহিমাহুল্লাহ] একক ভাবে বর্ণনা করিয়াছেন]

এই হাদীসটির তাহকিকঃ নির্ণীত নয়

৬৬২ ইবনি শিহাব [রাহিমাহুল্লাহ] হইতে বর্ণিতঃ

আবদুল্লাহ ইবনি আব্বাস ও আবু হুরায়রা [রাদি.] তাঁরা দুজনে রমযানের কাযা সম্পর্কে ইখতিলাফ [মতপার্থক্য] করিয়াছেন। একজন বলেছেন, কাযা রোযা পৃথক পৃথক রাখা হইবে। আর একজন বলেছেন, পৃথক পৃথক রাখা যাবে না [অর্থাৎ একাধারে রাখতে হইবে]। তাঁদের দুজনের মধ্যে কে বলেছেন পৃথক করা যাবে, কে বলেছেন পৃথক করা যাবে না, তা আমার [নির্দিষ্ট] জানা নাই। [হাদীসটি ঈমাম মালিক [রাহিমাহুল্লাহ] একক ভাবে বর্ণনা করিয়াছেন]

এই হাদীসটির তাহকিকঃ নির্ণীত নয়

৬৬৩ নাফি [রাহিমাহুল্লাহ] হইতে বর্ণিতঃ

আবদুল্লাহ ইবনি উমার [রাদি.] বলিতেন, যে রোযা অবস্থায় স্বেচ্ছায় বমি করে, তার উপর কাযা ওয়াজিব হইবে। আর যার অনিচ্ছাকৃত বমি হয়, তাকে করিতে হইবে না। [হাদীসটি ঈমাম মালিক [রাহিমাহুল্লাহ] একক ভাবে বর্ণনা করিয়াছেন]

এই হাদীসটির তাহকিকঃ নির্ণীত নয়

৬৬৪ ইয়াহইয়া ইবনি সাঈদ [রাহিমাহুল্লাহ] হইতে বর্ণিতঃ

ইয়াহইয়া ইবনি সাঈদ [রাহিমাহুল্লাহ] শুনেছেন সাঈদ ইবনি মুসায়্যাব [রাহিমাহুল্লাহ]-কে রমযানের কাযা সম্পর্কে প্রশ্ন করা হলে তিনি বলিতেন, আমার কাছে পছন্দনীয় হচ্ছে রমযানের কাযাকে পৃথক না করে একাধারে রাখা। [হাদীসটি ঈমাম মালিক [রাহিমাহুল্লাহ] একক ভাবে বর্ণনা করিয়াছেন]

ইয়াহইয়া [রাহিমাহুল্লাহ] বলেন, মালিক [রাহিমাহুল্লাহ]-কে আমি বলিতে শুনিয়াছি, যে ব্যক্তি রমযানের কাযা পৃথক পৃথক করে রেখেছে সেই ব্যক্তিকে রোযা পুনরায় রাখতে হইবে না। সে রোযাই তার পক্ষে যথেষ্ট হইবে। কিন্তু আমার নিকট একাধারে রাখাই পছন্দনীয়।

ইয়াহইয়া [রাহিমাহুল্লাহ] বলেন, আমি মালিক [রাহিমাহুল্লাহ]-কে বলিতে শুনিয়াছি, যে ব্যক্তি রমযানের রোযা অথবা অন্য কোন ওয়াজিব রোযায় ভুলবসত আহার করে অথবা পান করে তাকে সে দিনের পরিবর্তে অন্য একদিন কাযা করিতে হইবে।

এই হাদীসটির তাহকিকঃ নির্ণীত নয়

৬৬৫ মালিক [রাহিমাহুল্লাহ] হইতে বর্ণিতঃ

হুমায়দ ইবনি কায়েস মক্কী [রাহিমাহুল্লাহ] বলেছেন যে, আমি মুজাহিদ [রাহিমাহুল্লাহ]-এর সাথে ছিলাম। তিনি বায়তুল্লাহ্ তওয়াফ করিতেছিলেন। এমন সময় তাঁর কাছে একজন লোক এল এবং কাফফারার রোযা সম্পর্কে তাহাকে জিজ্ঞেস করিল। উহা একাধারে রাখতে হইবে, না আলাদা আলাদা রাখতে পারবে। মুজাহিদ [রাহিমাহুল্লাহ] বলিলেন, আলাদা আলাদা রাখবে না, কারণ উবাই ইবনি কাব [রাদি.]-এর কিরাআতে রয়েছে

ثَلَاثَةِ أَيَّامٍ مُتَتَابِعَاتٍََََ {১}

[হাদীসটি ঈমাম মালিক [রাহিমাহুল্লাহ] একক ভাবে বর্ণনা করিয়াছেন]

ইয়াহইয়া [রাহিমাহুল্লাহ] বলেন, মালিক [রাহিমাহুল্লাহ] বলেছেন, আমার নিকট পছন্দনীয় হল, আল্লাহ্ তাআলা কুরআনে যেরূপ নির্ধারিত করিয়াছেন সেরূপ একাধারে রোযা রাখ।

ইয়াহইয়া [রাহিমাহুল্লাহ] বলেন, মালিক [রাহিমাহুল্লাহ]-কে প্রশ্ন করা হল এমন এক স্ত্রীলোক সম্পর্কে, যে স্ত্রীলোকের রমযানে ফজর হয়েছে রোযাবস্থায়। হঠাৎ তার তাজা রক্ত বের হল, ঋতুর নির্দিষ্ট সময় ছাড়া। অতঃপর সে লক্ষ্য রাখবে সন্ধ্যা পর্যন্ত সেরূপ রক্ত দেখার জন্য কিন্তু কিছুই দেখল না। অন্য একদিন ফজরে হঠাৎ আর এক দফা রক্ত বের হল কিন্তু এটা পূর্বের তুলনায় কম। অতঃপর কয়েক দিন তার হায়েযের পূর্ব পর্যন্ত তা বন্ধ রইল। সেই স্ত্রীলোক নিজের নামাজ ও রোযার বিষয়ে কি করিবে ? এর উত্তরে মালিক [রাহিমাহুল্লাহ] বলেন, সেই রক্ত হায়েযে গণ্য হইবে। যখন তা দেখবে রোযা ছেড়ে দিবে এবং সেই রোযা পরে কাযা করিবে। তার রক্ত বন্ধ হয়ে গেলে সে গোসল করিবে এবং রোযা রাখবে।

মালিক [রাহিমাহুল্লাহ]-এর নিকট প্রশ্ন করা হল এমন এক ব্যক্তি সম্পর্কে, যে ব্যক্তি রমযানের শেষ দিন মুসলমান হল, তাকে রমযানের সকল রোযা করিতে হইবে কি ? এবং যেদিন মুসলমান হয়েছে সে দিনের [রোযার] কাযা তার উপর ওয়াজিব হইবে কি ? মালিক [রাহিমাহুল্লাহ] প্রশ্নের উত্তরে বলিলেন, তাকে বিগত রোযা কাযা করিতে হইবে না। সে আগামীতে রোযা আরম্ভ করিবে, যেদিন মুসলমান হয়েছে সে দিনের রোযা রাখাটা আমার কাছে পছন্দনীয়।

{১} তিন দিন একাধারে। এই হাদীসটির তাহকিকঃ নির্ণীত নয়

পরিচ্ছেদঃ ১৮ -নফল রোযার কাযা

৬৬৬ ইবনি শিহাব [রাহিমাহুল্লাহ] হইতে বর্ণিতঃ

নাবী সাঃআঃ-এর সহধমির্ণী আয়েশা ও হাফসা [রাদি.]-এর নফল রোযার নিয়তে ফজর হল এবং তাঁদের দুজনের জন্য খাদ্যদ্রব্য হাদিয়াস্বরূপ প্রেরণ করা হয়। তাঁরা উহা দ্বারা রোযা ভেঙে ফেলেন। অতঃপর রসূলুল্লাহ্ [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম] প্রবেশ করলেন। ইবনি শিহাব [রাহিমাহুল্লাহ] বলেন, আয়েশা [রাদি.] বলেছেন, হাফসা [রাদি.] ছিলেন পিতার মত সাহসী। আর তিনি আমার আগে কথা বলিলেন, ইয়া রসূলুল্লাহ্! আমি এবং আয়েশা আমরা উভয়ের নফল রোযা অবস্থায় ফজর হল। অতঃপর আমাদের উদ্দেশ্যে খাদ্যদ্রব্য হাদিয়ারূপে প্রেরণ করা হয়। আমরা তা দ্বারা রোযা ভেঙে ফেলি। রসূলুল্লাহ্ [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম] তাঁর বক্তব্য শোনার পর বলিলেন, তোমরা এই রোযার পরিবর্তে অন্য একদিন [রোযা] কাযা করিবে। [যয়ীফ, আবু দাঊদ ২৪৫৭, তিরমিজি ৭৩৫, আলবানী হাদীসটিকে যয়ীফ বলেছেন, {যয়ীফ আল-জামে ৬৩০৩} তবে ঈমাম মালিক কর্তৃক বর্ণিত হাদীসটি মুরসাল]

ইয়াহইয়া [রাদি.] বলেন, আমি মালিক [রাহিমাহুল্লাহ]-কে বলিতে শুনেছে, যে ভুলবশত নফল রোযা অবস্থায় আহার অথবা পান করে, তার উপর কাযা ওয়াজিব নয়। নফল রোযা অবস্থায় যেই দিন আহার বা পান করেছে সেই দিনের রোযা পূর্ণ করিবে এবং রোযা ভঙ্গ করিবে না। আর নফল রোযাদার যদি এমন কোন অসুবিধার সম্মুখীন হয়, যার কারণে রোযা ভাঙতে হয়, তবে তাকে কাযা করিতে হইবে না, যদি কোন ওযরবশত রোযা ভেঙে থাকে এবং ইচ্ছা করে রোযা ভঙ্গ না করে। আর আমি সেই ব্যক্তির জন্য নফল নামাযের কাযা জরুরী মনে করি না, যে ব্যক্তি এমন কোন হাদাস্-এর [পেশাব-পায়খানার আবেগ, বায়ু নির্গত হওয়ার আবেগ] কারণে নামাজ ভেঙেছে, যাকে বাধা দিয়ে রাখা যায় না, যাতে ওযূর প্রয়োজন হয়।

ইয়াহইয়া [রাহিমাহুল্লাহ] বলেন, মালিক [রাহিমাহুল্লাহ] বলেছেন, কোন ব্যক্তি নেক আমলসমূহের মধ্যে কোন নেক আমলে প্রবৃত্ত হলে [নেক আমল বলিতে] যথা নামাজ, রোযা, হজ্জ বা অনুরূপ কোন নেক আমল, যা লোকে নফলস্বরূপ করে থাকে, সেই ব্যক্তির জন্য উহা ছেড়ে দেওয়া সমীচীন নয়, যতক্ষণ উহা সুন্নত মুতাবিক পূর্ণ না করে। যদি নামাযের নিয়তে তকবীর বলে তবে দুই রাকআত না পড়া পর্যন্ত উহা ছাড়বে না। রোযা রাখলে সেই দিনের রোযা পূর্ণ না করা পর্যন্ত ইফতার করিবে না। ইহরাম বাঁধলে তার হজ্জ পূর্ণ না করা পর্যন্ত ইহরাম ছাড়বে না। যখন তাওয়াফে প্রবেশ করিবে সাত তাওয়াফ পূর্ণ না করা পর্যন্ত উহা ছাড়বে না।

এই সকলের মধ্যে কোন ইবাদতই আরম্ভ করে ছেড়ে দেওয়া উচিত নয়, যতক্ষণ উহা পূর্ণ না করে। তবে কোন ওযরবশত যা তার জন্য প্রকাশ পায়, যেরূপ লোকের ওযর প্রকাশ পেয়ে থাকে, যেমন পীড়াসমূহ যার কারণে মাযূর [অক্ষম] হয়ে যায় অথবা অন্য কোন কারণে অক্ষম বলে গণ্য হয়। এটা এজন্য যে, আল্লাহ্ তাআলা কিতাবে ইরশাদ করিয়াছেন পানাহার করিতে থাক, যতক্ষণ পর্যন্ত সাদা বর্ণের সুতা [সুবহে সাদিক] কালবর্ণের সুতা [সুবহে কাযিব] হইতে প্রকাশিত না হয়। অতঃপর রাত্রি পর্যন্ত রোযা পূর্ণ কর। ফলে তার উপর রোযা পূর্ণ করা ওয়াজিব।

যেমন আল্লাহ্ তাআলা ইরশাদ করিয়াছেন তোমরা আল্লাহ্‌র জন্য হজ্জ ও উমরাহ্ পূর্ণ কর। অতঃপর যদি কোন ব্যক্তি নফল হজ্জের ইহরাম বাঁধে যে ইতিপূর্বে ফরয হজ্জ আদায় করেছে, সেই ব্যক্তির জন্য হজ্জ আরম্ভ করার পর তা ছেড়ে দেওয়ার অনুমতি নেই। মাঝপথে ইহরাম ছেড়ে দিয়ে হালাল হওয়া চলবে না। যদি কোন ব্যক্তি কোন নফল কাজে প্রবৃত্ত হয়, তার জন্য উহা পূর্ণ করা ওয়াজিব, যেমন ফরযকে পূর্ণ করা হয়। আমি যা শুনিয়াছি তন্মধ্যে এটা অতি উত্তম।

এই হাদীসটির তাহকিকঃ অন্যান্য

পরিচ্ছেদঃ ১৯ -ওযরের কারণে রমযানের রোযা ভঙ্গের ফিদইয়া

৬৬৭ মালিক [রাহিমাহুল্লাহ] হইতে বর্ণিতঃ

তিনি জানতে পেরেছেন যে, আনাস ইবনি মালিক [রাদি.] যখন অতি বৃদ্ধ হন, তখন তিনি রোযা রাখতে পারতেন না, তাই তিনি ফিদইয়া দিতেন। [হাদীসটি ঈমাম মালিক [রাহিমাহুল্লাহ] একক ভাবে বর্ণনা করিয়াছেন]

মালিক [রাহিমাহুল্লাহ] বলেন, আমি ফিদইয়া দেওয়াকে জরুরী মনে করি না। তবে দেওয়া আমার মতে উত্তম, যদি সামর্থ্য থাকে। যে ব্যক্তি ফিদইয়া দিবে সে প্রতিদিনের পরিবর্তে রসূলুল্লাহ্ সাঃআঃ-এর মুদ-এর [এক সের পরিমাণ ওজনের একটি পরিমাপ] সমপরিমাণ এক মুদ আহার করাবে।

এই হাদীসটির তাহকিকঃ নির্ণীত নয়

৬৬৮ মালিক [রাহিমাহুল্লাহ] হইতে বর্ণিতঃ

তাঁর নিকট রেওয়ায়ত পৌঁছেছে যে, আবদুল্লাহ্ ইবনি উমার [রাদি.]-কে গর্ভবতী স্ত্রীলোক সম্পর্কে প্রশ্ন করা হল সে যদি সন্তান সম্বন্ধে আশংকা করে এবং রোযা রাখা তার জন্য দুষ্কর হয় [তবে কি করিবে] ? তিনি বলিলেন, সে রোযা রাখবে না এবং প্রতিদিনের পরিবর্তে একজন মিসকিনকে আহার দিবে এক মুদ গম, রসূলুল্লাহ্ সাঃআঃ-এর মুদ পরিমাপে। [হাদীসটি ঈমাম মালিক [রাহিমাহুল্লাহ] একক ভাবে বর্ণনা করিয়াছেন]

মালিক [রাহিমাহুল্লাহ] বলেছেন, আহলে ইল্ম গর্ভবতীর জন্য রোযার কাযা ওয়াজিব মনে করেন না, যেমন আল্লাহ্ তাআলা বলেছেন

فَمَنْ كَانَ مِنْكُمْ مَرِيضًا أَوْ عَلَى سَفَرٍ فَعِدَّةٌ مِنْ أَيَّامٍ أُخَرَ {১}

গর্ভবতী অবস্থাকে তাঁরা রোগের মধ্যে একটি রোগ বলে মনে করেন যার সঙ্গে রয়েছে সন্তানের জীবনের আশংকা।

{১} তোমাদের মধ্যে কেউ পীড়িত হলে বা সফরে থাকলে অন্য সময় এই সংখ্যা পূর্ণ করে নিতে হইবে। ২ ঃ ১৮৪ এই হাদীসটির তাহকিকঃ নির্ণীত নয়

৬৬৯ আবদুর রহমান ইবনি কাসিম [রাহিমাহুল্লাহ] হইতে বর্ণিতঃ

তাঁর পিতা বলিতেন, যার উপর রমযানের কাযা রয়েছে, সে রোযা রাখতে সক্ষম, তবু কাযা [রোযা] রাখে নি, এইভাবে পরবর্তী রমযান এসে গিয়েছে, তবে সে প্রতিদিনের পরিবর্তে একজন মিসকিনকে এক মুদ করে গম দিবে, তদুপরি তার উপর কাযাও জরুরী হইবে। [হাদীসটি ঈমাম মালিক [রাহিমাহুল্লাহ] একক ভাবে বর্ণনা করিয়াছেন]

মালিক [রাহিমাহুল্লাহ] বলেন, সাঈদ ইবনি যুবায়র [রাহিমাহুল্লাহ] হইতেও অনুরূপ বর্ণনা তাঁর কাছে পৌঁছেছে।

এই হাদীসটির তাহকিকঃ নির্ণীত নয়

পরিচ্ছেদঃ ২০ -রোযার কাযা

৬৭০ নাবী সাঃআঃ-এর সহধর্মিনী আয়েশা [রাদি.] হইতে বর্ণিতঃ

আমার জিম্মায় রমযানের রোযা [কাযা] থাকত। আমি তা রাখতে সক্ষম হতাম না, শাবান মাস না আসা পর্যন্ত।

[বুখারি ১৯৫০, মুসলিম ১১৪৬] এই হাদীসটির তাহকিকঃ সহীহ হাদীস

পরিচ্ছেদঃ ২১ -সন্দেহের দিনে রোযা রাখা

৬৭১ মালিক [রাহিমাহুল্লাহ] হইতে বর্ণিতঃ

তিনি আহলে ইলমকে যেই দিনে সন্দেহ হয় সেই দিনে রোযা রাখতে নিষেধ করিতে শুনেছেন, যদি উহাতে রমযানের রোযার নিয়ত করা হয়। আর তাঁরা মনে করেন, যে ব্যক্তি এরূপ [সন্দেহের] দিনে রোযা রেখেছে চাঁদ না দেখে, অতঃপর সেই দিন রমযান বলে প্রমাণিত হয়েছে, তার উপর সেই রোযার কাযা ওয়াজিব হইবে। তবে [সন্দেহের দিনে] নফল রোযা রাখতে তাঁরা কোন দোষ মনে করেন না।

মালিক [রাহিমাহুল্লাহ] বলেন, মাসআলা আমাদের নিকট এইরূপই এবং আমি এর উপর আমাদের শহরের আহলে ইলমকে একমতাবলম্বী পেয়েছি। [ঈমাম মালিক [রাহিমাহুল্লাহ]-এর উক্তি]

এই হাদীসটির তাহকিকঃ নির্ণীত নয়

পরিচ্ছেদঃ ২২ -রোযার বিবিধ আহকাম

৬৭২ নাবী সাঃআঃ-এর সহধর্মিনী আয়েশা [রাদি.] হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ্ [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম] রোযা রাখতেন একাধারে, এমনকি আমরা বলতাম, তিনি আর রোযা ছাড়বেন না, আর যখন তিনি রোযা রাখতেন না, আমরা তখন বলতাম, তিনি আর রোযা রাখবেন না। রমযান ব্যতীত কোন পূর্ণ মাসের রোযা রসূলুল্লাহ্ [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম] রাখেননি এবং শাবান মাসের চাইতে বেশি অন্য কোন মাসে রোযা রাখতেও তাহাকে দেখিনি।

[বুখারি ১৯৬৯, মুসলিম ১১৫৬] এই হাদীসটির তাহকিকঃ সহীহ হাদীস

৬৭৩ আবু হুরায়রা [রাদি.] হইতে বর্ণিতঃ

রসূলুল্লাহ্ [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম] বলেছেন, রোযা [একটি] ঢাল, কাজেই তোমাদের যে কেউ রোযাদার হও, সে বাজে কথা বলবে না এবং বর্বরতার কাজ করিবে না। যদি কোন ব্যক্তি তাকে গালি দেয় অথবা কাটাকাটি-মারামারি করিতে আসে, তবে সে যেন বলে, আমি রোযাদার, আমি রোযাদার।

[বুখারি ১৮৯৪, মুসলিম ১১৫১] এই হাদীসটির তাহকিকঃ সহীহ হাদীস

৬৭৪ আবু হুরায়রা [রাদি.] হইতে বর্ণিতঃ

রসূলুল্লাহ্ [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম] বলেছেন, সেই সত্তার কসম, যার হাতে আমার প্রাণ নিশ্চয়ই রোযাদারের মুখের গন্ধ আল্লাহ্‌র নিকট মৃগনাভীর ঘ্রাণ হইতেও উত্তম; নিঃসন্দেহে রোযাদার তার প্রবৃত্তি ও পানাহারকে ত্যাগ করে আমার জন্য। তাই রোযা আমারই এবং আমি তার প্রতিদান দেব। প্রতিটি নেকীর প্রতিদান দশ হইতে সাত শত পর্যন্ত, আর রোযা আমার জন্য, আমিই উহার প্রতিদান দেব।

[বুখারি ১৮৯৪, মুসলিম ১১৫১] এই হাদীসটির তাহকিকঃ সহীহ হাদীস

৬৭৫ আবু হুরায়রা [রাদি.] হইতে বর্ণিতঃ

রমযান মাস যখন প্রবেশ করে তখন জান্নাতের দরজাসমূহ খুলে দেয়া হয়। এবং জাহান্নামের দরজাসমূহ বন্ধ করে দেয়া হয়, আর শয়তানকে শিকলে আবদ্ধ করা হয়।

[সহীহ মারফু, বুখারি ১৮৯৮] চাঁদ দেখে রোজা রাখার হাদিস -এই হাদীসটির তাহকিকঃ সহীহ হাদীস

৬৭৬ মালিক [রাহিমাহুল্লাহ] হইতে বর্ণিতঃ

তিনি আহলে ইলমদের কাছে শুনেছেন যে, তাঁরা দিনের কোন মুহূর্তে রোযাদারের জন্য মেছওয়াক করাকে মাকরূহ জানতেন না দিনের শুরুর দিকে হোক বা শেষভাগে হোক। তিনি বলেন, আমি কাউকেও শুনিনি, উহাকে মাকরূহ জানতে অথবা উহা হইতে বারণ করিতে।

ইয়াহইয়া [রাহিমাহুল্লাহ] বলেন, ঈদুল ফিতরের পর ছয় দিনের রোযা সম্পর্কে মালিক [রাহিমাহুল্লাহ]-কে আমি বলিতে শুনিয়াছি, তিনি আহলে ইলম এবং আহলে ফিক্হ, কউকেও সেই [ছয় দিনের] রোযা রাখতে দেখেননি এবং তিনি বলেন, প্রাচীনদের কারো নিকট হইতে [উহা রাখার ব্যাপারে] আমার কাছে কোন কিছু পৌঁছেনি। আর আহলে ইলম উহাকে মাকরূহ জানতেন এবং উহা বিদআত হওয়ার আশংকা করিতেন। আরো ভয় ছিল, অজ্ঞরা সহজকে কঠিন করা যাদের অভ্যাস তারা রমযানের মধ্যে যা গণ্য নয় উহাকে রমযানের সাথে মিলিয়ে দিবে, যদি তারা আহলে ইলমকে উহা রাখতে দেখে এবং তাঁদের নিকট হইতে এই ব্যাপারে অনুমতি লাভ করে।

ইয়াহ্ইয়া [রাহিমাহুল্লাহ] বলেন, আমি মালিক [রাহিমাহুল্লাহ]-কে বলিতে শুনিয়াছি, আহলে ইলম ও আহলে ফিকহ এবং লোকে যাদেরকে স্মরণ করে থাকে, তাঁদের কাউকেও জুমআ দিবসের রোযা হইতে নিষেধ করিতে শুনিনি। জুমআর দিনে রোযা রাখা ভাল। আমি কোন কোন আহলে ইলমকে তা পালন করিতে দেখেছি। আর আমি মনে করি, তাঁরা [জুমআ দিবসের প্রতি] লক্ষ্য রাখতেন [এর গুরুত্ব উপলব্ধি করে]।

চাঁদ দেখে রোজা রাখার হাদিস -এই হাদীসটির তাহকিকঃ নির্ণীত নয়


by

Comments

One response to “চাঁদ দেখে রোজা রাখার হাদিস । বিলম্ব না করে ইফতার করা”

Leave a Reply