সূর্য ও চন্দ্র গ্রহণের নামাজ
সুনানে নাসাঈ শরীফ এর মুল সুচিপত্রে যান >> সূর্য ও চন্দ্র গ্রহণের নামাজ । নাসাঈ হাদীস
পর্বঃ ১৬, সূর্য ও চন্দ্র গ্রহণ হাদীস (১৪৫৯ – ১৫০৩)
১.পরিচ্ছেদঃ সূর্য ও চন্দ্র গ্রহণ
২.পরিচ্ছেদঃ সূর্য গ্রহণের সময় তাসবীহ, তাকবীর এবং দোয়া করা
৩.পরিচ্ছেদঃ সূর্য গ্রহণের সময় নামাজ আদায় করার নির্দেশ
৪.পরিচ্ছেদঃ চন্দ্র গ্রহণের সময় নামাজ আদায় করার নির্দেশ
৫.পরিচ্ছেদঃ গ্রহণের সময় সূর্য আলোকিত না হওয়া পর্যন্ত নামাজ আদায় করার নির্দেশ
৬.পরিচ্ছেদঃ গ্রহণকালীন সময়ের নামাজের জন্য ডাক দেওয়ার নির্দেশ
৭.পরিচ্ছেদঃ গ্রহণকালীন নামাজে কাতারবন্দী হওয়া
৮.পরিচ্ছেদঃ গ্রহণকালীন নামাজ কিরূপ?
৯.পরিচ্ছেদঃ ইবনি আব্বাস [রাঃআঃ] থেকে বর্ণিত আর এক প্রকার গ্রহণকালীন নামাজ
১০.পরিচ্ছেদঃ অন্য আর এক প্রকার সূর্য গ্রহণকালীন নামাজ
১১.পরিচ্ছেদঃ আয়িশাহ [রাঃআঃ] থেকে আর এক প্রকার বর্ণনা
১২.পরিচ্ছেদঃ অন্য আর এক প্রকার বর্ণনা
১৩.পরিচ্ছেদঃ সূর্য গ্রহণকালীন নামাজে কিরাআতের পরিমাণ
১৪.পরিচ্ছেদঃ গ্রহণকালীন নামাজে উচ্চস্বরে কিরাআত পড়া
১৫.পরিচ্ছেদঃ গ্রহণকালীন নামাজে উচ্চস্বরে কিরাআত না পড়া
১৬.পরিচ্ছেদঃ গ্রহণকালীন নামাজে সিজদায় কথা বলা
১৭.পরিচ্ছেদঃ গ্রহণকালীন নামাজে তাশাহ্হুদ পড়া ও সালাম ফিরানো
১৮.পরিচ্ছেদঃ গ্রহণকালীন নামাজ আদায় করার পর মিম্বরে বসা
১৯.পরিচ্ছেদঃ গ্রহণকালীন [নামাজের পর] খুৎবার প্রকার
২০.পরিচ্ছেদঃ গ্রহণকালীন সময়ে দোয়ার নির্দেশ
২১.পরিচ্ছেদঃ গ্রহণকালীন সময়ে ইস্তিগফারের নির্দেশ
১.পরিচ্ছেদঃ সূর্য ও চন্দ্র গ্রহণ
১৪৫৯. আবু বাক্রা [রাঃআঃ] হইতে বর্ণীত
তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলেছেন যে, সূর্য এবং চন্দ্র হল আল্লাহ তাআলার নিদর্শন সমূহের দুটি নিদর্শন, কারো মৃত্যু এবং কারো জন্মের জন্য তাহাদের গ্রহণ হয় না, এবং আল্লাহ তাআলা তাহাদের দ্বারা তাহাঁর বান্দাদের ভীতি প্রদর্শন করে থাকেন।
সূর্য ও চন্দ্র গ্রহণের নামাজ হাদিসের তাহকিকঃ সহীহ হাদিস
২.পরিচ্ছেদঃ সূর্য গ্রহণের সময় তাসবীহ, তাকবীর এবং দোয়া করা
১৪৬০. আব্দুর রহমান ইবনি সামুরা [রাঃআঃ] হইতে বর্ণীত
তিনি বলেন, আমি মদীনায় আমার তীর মারছিলাম, ইতিমধ্যে সূর্যের গ্রহণ লেগে গেল। তখন আমি আমার তীরসমূহ একত্রিত করলাম এবং বললাম, আজ আমি অবশ্যই লক্ষ্য করব যে, রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] সূর্য গ্রহণ সম্পর্কে কি নতুন বক্তব্য রাখেন। অতএব, আমি তাহাঁর পিঠের কাছাকাছি আসলাম। তখন তিনি মসজিদে ছিলেন। তিনি তাসবীহ, তাকবীর এবং দোয়া করিতে লাগলেন, ইত্যবসরে সূর্য গ্রহণ কেটে গেল। বর্ণনাকারী বলেন, তারপর তিনি দাঁড়ালেন এবং দুরাকআত নামাজ আদায় করিলেন, চারটি সিজদা করিলেন।
সূর্য ও চন্দ্র গ্রহণের নামাজ হাদিসের তাহকিকঃ সহীহ হাদিস
৩.পরিচ্ছেদঃ সূর্য গ্রহণের সময় নামাজ আদায় করার নির্দেশ
১৪৬১. আব্দুল্লাহ ইবনি উমর [রাঃআঃ] হইতে বর্ণীত
রাসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, কারো মৃত্য অথবা জন্মের কারণে চন্দ্র এবং সূর্য গ্রহণ হয় না, বরং তারা হল আল্লাহর নিদর্শন সমূহের দুটি নিদর্শন। তাই তোমরা যখন তাহাদের গ্রহণ দেখবে, তখন নামাজ আদায় করিবে।
সূর্য ও চন্দ্র গ্রহণের নামাজ হাদিসের তাহকিকঃ সহীহ হাদিস
৪.পরিচ্ছেদঃ চন্দ্র গ্রহণের সময় নামাজ আদায় করার নির্দেশ
১৪৬২. আবু মাসঊদ [রাঃআঃ] হইতে বর্ণীত
তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলেছেন যে, সূর্য এবং চন্দ্র গ্রহণ কারো মৃত্যু অথবা জন্মের কারণে হয় না, বরং তারা হল আল্লাহর নিদর্শন সমূহের দুটি নিদর্শন। তাই তোমরা যখন তাহাদের গ্রহণ দেখবে, তখন নামাজ আদায় করিবে।
সূর্য ও চন্দ্র গ্রহণের নামাজ হাদিসের তাহকিকঃ সহীহ হাদিস
৫.পরিচ্ছেদঃ গ্রহণের সময় সূর্য আলোকিত না হওয়া পর্যন্ত নামাজ আদায় করার নির্দেশ
১৪৬৩. আবু বাকরা [রাঃআঃ] হইতে বর্ণীত
তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলেছেন যে, সূর্য এবং চন্দ্র আল্লাহর নিদর্শন সমূহের দুটি নিদর্শন। তাহাদের গ্রহণ কারো মৃত্যু অথবা জন্মের কারণে হয় না, অতএব, যখন তোমরা তাহাদের গ্রহণ দেখবে, তখন নামাজ আদায় করিবে। যতক্ষন পর্যন্ত সূর্য আলোকিত না হয়।
সূর্য ও চন্দ্র গ্রহণের নামাজ হাদিসের তাহকিকঃ সহীহ হাদিস
১৪৬৪. আবু বাকরা [রাঃআঃ] হইতে বর্ণীত
তিনি বলেন, আমরা একবার নাবী [সাঃআঃ] এর সাথে বসা ছিলাম, ইত্যবসরে সূর্য গ্রহণ লেগে গেলে তিনি কাপড় সামলাতে সামলাতে দ্রুত চলে গেলেন ও দুরাকআত নামাজ আদায় করিলেন। ইতিমধ্যে সূর্য আলোকিত হয়ে গেল।
সূর্য ও চন্দ্র গ্রহণের নামাজ হাদিসের তাহকিকঃ সহীহ হাদিস
৬.পরিচ্ছেদঃ গ্রহণকালীন সময়ের নামাজের জন্য ডাক দেওয়ার নির্দেশ
১৪৬৫. আয়িশাহ [রাঃআঃ] হইতে বর্ণীত
তিনি বলেন, একবার রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ]-এর যুগে সূর্য গ্রহণ লেগে গেল। তখন রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] একজন আহবানকারীকে নির্দেশ নিলেন। সে যেন আওয়াজ দেয়; নামাজ অনুষ্ঠিত হইবে। তখন তাঁরা সবাই উপস্থিত হয়ে গেল এবং কাতারবন্দী হয়ে দাঁড়িয়ে গেল। তখন রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] তাঁদের নিয়ে দুরাকআত নামাজ আদায় করিলেন চার রুকূ ও চারটা সিজদাসহ।
সূর্য ও চন্দ্র গ্রহণের নামাজ হাদিসের তাহকিকঃ সহীহ হাদিস
৭.পরিচ্ছেদঃ গ্রহণকালীন নামাজে কাতারবন্দী হওয়া
১৪৬৬. আয়িশাহ [রাঃআঃ] হইতে বর্ণীত
তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ]-এর যুগে একবার সূর্য গ্রহণ লেগে গেল। তখন রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] মসজিদ অভিমুখে বের হয়ে গেলেন, তিনি দাঁড়িয়ে গেলেন ও তাকবীর বলিলেন। আর মানুষেরা তাহাঁর পেছনে কাতারবন্দী হয়ে দাঁড়িয়ে গেল। তারপর তিনি চার রুকূপূর্ণ করিলেন এবং চার সিজদাও। আর তাহাঁর প্রত্যাবর্তনের পূর্বে সূর্যও আলোকিত হয়ে গেল।
সূর্য ও চন্দ্র গ্রহণের নামাজ হাদিসের তাহকিকঃ সহীহ হাদিস
৮.পরিচ্ছেদঃ গ্রহণকালীন নামাজ কিরূপ?
১৪৬৭. ইবনি আব্বাস [রাঃআঃ] হইতে বর্ণীত
রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] সূর্য গ্রহণের জন্য [দুরাকআত নামাজে] রুকূ ও চারটি সিজদা করিলেন।
সূর্য ও চন্দ্র গ্রহণের নামাজ হাদিসের তাহকিকঃ শায
১৪৬৮. ইবনি আব্বাস [রাঃআঃ] হইতে বর্ণীত
নাবী [সাঃআঃ] থেকে বর্ণিত যে, তিনি গ্রহণের সময় নামাজ আদায় করছিলেন। তিনি তখন কিরাআত পড়লেন ও রুকূ করিলেন, তারপর পুনরায় কিরাআত পড়লেন ও রুকূ করিলেন। পুনরায় কিরাআত পড়লেন ও রুকূ করিলেন। তারপর কিরাআত পড়লেন, রুকূ করিলেন, তারপর সিজদা করিলেন পুনরায় তার মত আর এক রাকআত আদায় করিলেন।
সূর্য ও চন্দ্র গ্রহণের নামাজ হাদিসের তাহকিকঃ অন্যান্য
৯.পরিচ্ছেদঃ ইবনি আব্বাস [রাঃআঃ] থেকে বর্ণিত আর এক প্রকার গ্রহণকালীন নামাজ
১৪৬৯. আব্দুল্লাহ ইবনি আব্বাস [রাঃআঃ] হইতে বর্ণীত
যে, রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] সূর্য গ্রহণের দিন নামাজ আদায় করেছিলেন। তখন তিনি দুরাকআতে চার রুকূ এবং চার সিজদা করেছিলেন।
সূর্য ও চন্দ্র গ্রহণের নামাজ হাদিসের তাহকিকঃ সহীহ হাদিস
১০.পরিচ্ছেদঃ অন্য আর এক প্রকার সূর্য গ্রহণকালীন নামাজ
১৪৭০. আয়িশাহ [রাঃআঃ] হইতে বর্ণীত
তিনি বলেন, একবার রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] এর যুগে সূর্যের গ্রহণ লাগলো। তখন তিনি মানুষদের নিয়ে দীর্ঘক্ষন পর্যন্ত দাঁড়িয়ে নামাজ আদায় করিলেন। তিনি তাহাদের নিয়ে দাঁড়ালেন, তারপর রুকূ করিলেন, আবার দাঁড়ালেন, তারপর রুকূ করিলেন, আবার দাঁড়ালেন, তারপর রুকূ করিলেন, এভাবে তিনি প্রতি রাকাআতে তিন রুকূসহ দুরাকআত নামাজ আদায় করিলেন। তৃতীয় বার রুকূ পরে তিনি সিজদা করিলেন। এমনকি কিছু লোক সেদিন দীর্ঘক্ষন দাঁড়িয়ে থাকার জন্য সংজ্ঞা হারিয়ে ফেলেছিল। যে কারণে তাহাদের ওপর প্রচুর পানি ঢালা হয়েছিল। তিনি যখন রুকূ করিতেন তখন বলিতেন,
اللَّهُ أَكْبَرُ
“আল্লাহ আকবার”
আর যখন রুকূ থেকে মাথা উঠাতেন, তখন বলিতেন,
سَمِعَ اللَّهُ لِمَنْ حَمِدَهُ
“সামিআল্লাহু লিমান হামিদা”
তিনি সূর্য আলোকিত না হওয়া পর্যন্ত নামাজ শেষ করিলেন না। এরপর তিনি দাঁড়িয়ে আল্লাহর গুন বর্ণনা ও প্রশংসা করিলেন এবং বলিলেন কারো জন্ম-মৃত্যুর কারণে চন্দ্র সূর্য গ্রহণ হয় না, বরং তা আল্লাহর নিদর্শন সমুহের দুটো নিদর্শন। আল্লাহ্ তাআলা তদ্বারা তোমাদের ভীতি প্রদর্শন করেন। সুতরাং যখন তাহাদের গ্রহণ লাগে, তখন তোমরা আল্লাহর স্মরণে ধাবিত হও, তা আলোকিত না হওয়া পর্যন্ত।
সূর্য ও চন্দ্র গ্রহণের নামাজ হাদিসের তাহকিকঃ অন্যান্য
১৪৭১. আয়িশাহ [রাঃআঃ] হইতে বর্ণীত
নাবী [সাঃআঃ] ছয় রুকূ ও চার সিজদা দ্বারা দুরাকআত নামাজ আদায় করিলেন। আমি মুআয [রাঃআঃ]-কে জিজ্ঞাসা করলাম, এ কি তুমি রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] থেকে বর্ণনা করছ? তিনি বললেনঃ নিঃসন্দেহে এবং নিঃসংশয়ে।
সূর্য ও চন্দ্র গ্রহণের নামাজ হাদিসের তাহকিকঃ শায
১১.পরিচ্ছেদঃ আয়িশাহ [রাঃআঃ] থেকে আর এক প্রকার বর্ণনা
১৪৭২. আয়িশাহ [রাঃআঃ] হইতে বর্ণীত
তিনি বলেন, একবার রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] এর জীবদ্দশায় সূর্য গ্রহণ লেগে গেল। তখন তিনি নামাজে দাঁড়িয়ে গেলেন এবং তাকবীর বলিলেন, মুসল্লীরাও তাহাঁর পিছনে কাতারবন্দী হয়ে দাঁড়িয়ে গেল। রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] দীর্ঘ কিরাআত পড়লেন। তারপর তাকবীর বলিলেন ও দীর্ঘ রুকূ করিলেন। এরপর মাথা উঠালেন ও বলিলেন,
سَمِعَ اللَّهُ لِمَنْ حَمِدَهُ، رَبَّنَا وَلَكَ الْحَمْدُ
“সামি আল্লাহু লিমান হামিদা রাব্বালা ওয়ালাকাল হামদ”
তারপর দাঁড়ালেন ও দীর্ঘ কিরাআত পড়লেন, যা পূর্ববর্তী কিরাআত থেকে সংক্ষিপ্ত ছিল, তারপর তাকবীর বলিলেন ও দীর্ঘ রুকূ করিলেন, যা পূর্ববর্তী রুকূ থেকে সংক্ষিপ্ত ছিল, পরে বলিলেন,
سَمِعَ اللَّهُ لِمَنْ حَمِدَهُ، رَبَّنَا وَلَكَ الْحَمْدُ
“সামিআল্লাহু লিমান হামিদা, রাব্বালা ওয়ালাকাল হাম্দ”
তারপর সিজদা করিলেন। পরে দ্বিতীয় রাকআতেও অনুরূপই করিলেন। এভাবে তিনি চার রুকূ এবং চার সিজদা পূর্ণ করিলেন, আর তাহাঁর নামাজ সমাপ্ত করে প্রত্যাবর্তনের পূর্বে সূর্যও আলোকিত হয়ে গেল। পরে তিনি দাঁড়ালেন ও লোকদের সামনে খুতবা দিলেন ও আল্লাহ তাআলার যথোপযুক্ত প্রশংসা করে বলিলেন, সূর্য এবং চন্দ্র আল্লাহর নিদর্শন সমুহের দুটো নিদর্শন। তাহাদের গ্রহণ কারো জন্ম-মৃত্যুর কারণে হয় না। অতএব, তোমরা যখন তাহাদের গ্রহণ দেখবে, তখন তোমরা নামাজ আদায় করিতে থাকিবে যাতে যতক্ষন না তোমরা ভীতি মুক্ত হও। আর রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলিলেন, আমি আমার এই দাঁড়ানো অবস্থায় থেকে তোমাদের জন্য ওয়াদা কৃত সমুদয় বস্তু দেখিতে পেয়েছি। তোমরা আমাকে দেখেছ যে, যখন আমি অগ্রসর হচ্ছিলাম তখন আমি জান্নাতের একটি মাথা ধরার ইচ্ছা করেছিলাম, যখন তোমরা আমাকে পিছু হটতে দেখলে, তখন আমি জাহান্নামকে দেখলাম যে, তার কিয়দংশ কিয়দংশকে খেয়ে ফেলছে। আর আমি তাতে ইবনি লুহাইকেও দেখেছি, যে চতুষ্পদ জন্তুকে [পিঠে সওয়ার হওয়া, বোঝা বহন করানো ইত্যাদি কাজ থেকে অব্যাহতি দিয়ে] ছেড়ে দেওয়ার প্রথা চালু করেছিল।
সূর্য ও চন্দ্র গ্রহণের নামাজ হাদিসের তাহকিকঃ সহীহ হাদিস
১৪৭৩. আয়িশাহ [রাঃআঃ] হইতে বর্ণীত
তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ]- এর যুগে একবার সূর্য গ্রহণ লেগে গেল। তখন আওয়াজ দেওয়া হলো যে, নামাজ অনুষ্ঠিত হইবে। লোকজন একত্রিত হয়ে গেলে রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] তাঁদের নিয়ে দুরাকআত নামাজ আদায় করিলেন চার রুকূর এবং চার সিজদা সহকারে।
সূর্য ও চন্দ্র গ্রহণের নামাজ হাদিসের তাহকিকঃ সহীহ হাদিস
১৪৭৪. আয়িশাহ [রাঃআঃ] হইতে বর্ণীত
তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ]-এর যুগে একবার সূর্যগ্রহণ লেগে গেল। তখন রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] লোকদের নিয়ে নামাজ আদায় করিলেন, তিনি দাঁড়ালেন এবং দীর্ঘক্ষণ দাঁড়ালেন। তারপর রুকূ করিলেন এবং রুকূ দীর্ঘায়িত করিলেন, তারপর দাঁড়ালেন যার দাঁড়ানোকে দীর্ঘায়িত করিলেন এবং তা ছিল পূর্ববর্তী দাঁড়ানো থেকে সংক্ষিপ্ত। তারপর রুকূ করিলেন এবং রুকূ দীর্ঘায়িত করিলেন, কিন্তু তা পূর্ববর্তী রুকূ থেকে সংক্ষিপ্ত ছিল। তারপর মাথা উঠালেন ও সিজদা করিলেন, এরপর দ্বিতীয় রাকআতেও অনুরূপ করিলেন। এভাবে নামাজ শেষ করিলেন। ইতিমধ্যে সূর্য আলোকিত হয়ে গেল। তখন তিনি মানুষদের সামনে খুতবা দিলেন। তাতে আল্লাহ তাআলার প্রশংসা এবং মহিমা প্রকাশ করিলেন। তারপর বলিলেন, সূর্য এবং চন্দ্র আল্লাহ তাআলার নিদর্শন সমূহের দুটি নিদর্শন কারো জন্ম মৃত্যুর কারণে তাহাদের গ্রহণ হয় না। অতএব, তোমরা যখন তা দেখবে তখন তোমরা আল্লাহ তাআলার কাছে দুআ করিবে এবং তাকবীর বলবে ও সাদকা করিবে। পরে তিনি বলিলেন, হে উম্মাতে মুহাম্মাদী! আল্লাহ তাআলার কোন বান্দা কিংবা কোন মহিলা ব্যভিচারে লিপ্ত হোক এ কাজ থেকে আল্লাহর চেয়ে কঠোর নিষেধকারী আর কেউ নেই। হে উম্মাতে মুহাম্মাদী! আল্লাহর শপথ! যদি তোমরা ঐ সকল বিষয়ে অবহিত হইতে, যে বিষয়ে আমি অবহিত রয়েছি, তাহলে নিশ্চয় তোমরা কম হাসতে এবং অধিক কাঁদতে।
সূর্য ও চন্দ্র গ্রহণের নামাজ হাদিসের তাহকিকঃ সহীহ হাদিস
১৪৭৫. আমরাহ [রহঃ] হইতে বর্ণীত
আয়িশাহ [রাঃআঃ] তার কাছে বর্ণনা করিয়াছেন যে, এক ইয়াহুদী মহিলা তাহাঁর কাছে এসে বললঃ আল্লাহ তাআলা আপনাকে কবরের আযাব থেকে রক্ষা করুন। আয়িশাহ [রাঃআঃ] বলিলেন, ইয়া রাসূলুল্লাহ! মানুষদের কি কবরে আযাব দেওয়া হইবে? তখন রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলিলেন, আমি তা থেকে আল্লাহ্র কাছে কায়মনোবাক্যে পানাহ চাচ্ছি। আয়িশাহ [রাঃআঃ] বলেন যে, নাবী [সাঃআঃ] কিছুক্ষণের জন্য বের হলেন, ইতিমধ্যে সূর্যগ্রহণ লেগে গেল। তখন আমরা হুজরা থেকে বের হয়ে গেলাম, এসময় আমাদের পাশে অনেক মহিলা একত্রিত হয়ে গেল এবং রাসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] আমাদের কাছে ফিরে আসলেন তখন ছিল সূর্যোদয়ের এবং দ্বিপ্রহরের মধ্যবর্তী সময়। তিনি নামাজে দীর্ঘক্ষণ দাঁড়ালেন। তারপর দীর্ঘ রুকূ করিলেন, এরপর তাহাঁর মাথা উঠালেন ও দাঁড়িয়ে গেলেন, পূর্ববর্তী দাঁড়ানো থেকে সংক্ষিপ্তভাবে। তারপর রুকূ করিলেন পূর্ববর্তী রুকূর থেকে সংক্ষিপ্ত। পরে সিজদা করিলেন, অতঃপর দ্বিতীয় রাকআতে দাঁড়িয়ে গেলেন এবং অনুরূপই করিলেন কিন্তু দ্বিতীয় রাকআতের রুকূ এবং দাঁড়ানো প্রথম রাকআতের রুকূ এবং দাঁড়ানো থেকে সংক্ষিপ্ত ছিল। তারপর সিজদা করিলেন এবং সূর্যও আলোকিত হয়ে গেল। যখন নামাজ শেষ করিলেন মিম্বরের উপরে বসলেন এবং তাহাঁর খুতবার মধ্যে বলিলেন যে, নিশ্চয় মানুষ তাহাদের কবরে দাজ্জালের পরীক্ষার ন্যায় পরীক্ষার সম্মুখীন হইবে। আয়িশাহ [রাঃআঃ] বলিলেন, আমরা তাঁকে এরপরে শুনতাম যে, তিনি কবরের আযাব থেকে পানাহ চাইতেন।
সূর্য ও চন্দ্র গ্রহণের নামাজ হাদিসের তাহকিকঃ সহীহ হাদিস
১২.পরিচ্ছেদঃ অন্য আর এক প্রকার বর্ণনা
১৪৭৬. আমরা [রহঃ] হইতে বর্ণীত
তিনি বলেন, আয়িশাহ [রাঃআঃ]-কে বলিতে শুনিয়াছি- আমার কাছে একজন ইয়াহুদী মহিলা এসে কিছু চাচ্ছিল। সে বলিল, আল্লাহ আপনাকে কবরের আযাব থেকে মুক্তি দান করুন। তারপর যখন রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] আসলেন, আমি তাঁকে বললাম, ইয়া রাসূলুল্লাহ! মানুষদের কি কবরে আযাব দেওয়া হইবে? তিনি বলিলেন, আমি আল্লাহ্র কাছে কায়মনোবাক্যে [তা থেকে] পানাহ চাচ্ছি। তারপর তিনি বাহনে আরোহণ করিলেন, ইতিমধ্যে সূর্য গ্রহণ লেগে গেল। তখন আমি অন্যান্য মহিলাদের সাথে হুজরা সমূহের মধ্যবর্তী স্থানে ছিলাম, রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] তাহাঁর সওয়ারীর স্থান থেকে ফিরে এসে তাহাঁর নামাজের স্থানে আসলেন এবং মানুষদের নিয়ে নামাজ আদায় করিলেন। তিনি নামাজে দাঁড়ালেন এবং দাঁড়ানোকে দীর্ঘায়িত করিলেন, তারপর রুকূ করিলেন আর রুকূকেও দীর্ঘায়িত করিলেন। তারপর তাহাঁর মাথা উঠালেন ও [পরবর্তী] দাঁড়ানোকেও দীর্ঘ করিলেন। পুনরায় রুকূ করিলেন এবং রুকূ দীর্ঘায়িত করিলেন। তারপর মাথা উত্তোলন করিলেন এবং দীর্ঘক্ষণ দাঁড়িয়ে রইলেন। পরে সিজদা করিলেন এবং সিজদাকেও দীর্ঘ করিলেন, তারপর দাঁড়ালেন এবং এ দাঁড়ানো ছিল প্রথম দাঁড়ানো অপেক্ষা সংক্ষিপ্ত। তারপর রুকূ করিলেন পূর্ববর্তী রুকূ থেকে সংক্ষিপ্ত। পরে তার মাথা উঠালেন ও দাঁড়ালেন যা পূর্ববর্তী দাঁড়ানো থেকে সংক্ষিপ্ত ছিল। পরে রুকূ করিলেন যা পূর্ববর্তী রুকূ থেকে সংক্ষিপ্ত ছিল। এরপর তাহাঁর মাথা উঠালেন ও দাঁড়ালেন এবং তা পূর্ববর্তী দাঁড়ানো থেকে সংক্ষিপ্ত ছিল। অতএব মোট চার রুকূ এবং চার সিজদা হল। আর [ইত্যবসরে] সূর্য আলোকিত হয়ে গেল। তখন তিনি বলিলেন, নিশ্চয় তোমরা তোমাদের কবরে দাজ্জালের পরীক্ষার ন্যায় পরীক্ষার সম্মুখীন হইবে। আয়িশাহ [রাঃআঃ] বলেন, আমি রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] –কে এর পরে কবরের আযাব থেকে পানাহ চাইতে শুনিয়াছি।
সূর্য ও চন্দ্র গ্রহণের নামাজ হাদিসের তাহকিকঃ সহীহ হাদিস
১৪৭৭. আয়িশাহ [রাঃআঃ] হইতে বর্ণীত
রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] সূর্য গ্রহণের সময় যমযমের নিকটস্থ ময়দানে চার রুকূ এবং চার সিজদাসহ নামাজ আদায় করেছিলেন।
সূর্য ও চন্দ্র গ্রহণের নামাজ হাদিসের তাহকিকঃ অন্যান্য
১৪৭৮. জাবির ইবনি আব্দুল্লাহ [রহঃ] হইতে বর্ণীত
তিনি বলেন, একবার রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ]-এর যুগে ভীষণ গরমের দিনে সূর্যের গ্রহণ লেগে গেল। তখন রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] তাহাঁর সাহাবীদের নিয়ে নামাজ আদায় করিলেন এবং দাঁড়ানোকে এত দীর্ঘায়িত করিলেন যে, সাহাবীরা পড়ে যেতে লাগলেন। তারপর রুকূ করিলেন এবং তাও দীর্ঘায়িত করিলেন এরপর মাথা উঠালেন এবং তাও দীর্ঘায়িত করিলেন। পরে রুকূ করিলেন এবং তাও দীর্ঘায়িত করিলেন, পরে মাথা উঠালেন আর তাও দীর্ঘায়িত করিলেন। তারপর দুটো সিজদা করিলেন, তারপর দাঁড়ালেন এবং অনুরূপ করিলেন। আর কথনো সম্মুখে এগিয়ে যেতে লাগলেন এবং কখনো পেছনে সরে যেতে লাগলেন এভাবে মোট চার রুকূ এবং চার সিজদা হল। তাঁরা বলিতেন যে, তাঁদের কোন বড় ব্যক্তির মৃত্যুর ছাড়া চন্দ্র-সূর্য গ্রহণ হয় না। অথচ সূর্য এবং চন্দ্র হল আল্লাহ্র নিদর্শন সমূহের দুটি নিদর্শন যা আল্লাহ্ তোমাদের দেখান। অতএব, যখন সূর্য গ্রহণ লাগে তখন তোমরা সূর্য আলোকিত না হওয়া পর্যন্ত নামাজ আদায় করিবে।
সূর্য ও চন্দ্র গ্রহণের নামাজ হাদিসের তাহকিকঃ সহীহ হাদিস
১৪৭৯. আব্দুল্লাহ ইবনি আমর [রাঃআঃ] হইতে বর্ণীত
তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ]-এর যুগে একবার সূর্য গ্রহণ লেগে গেল। তখন তিনি আদেশ দিলে আওয়াজ দেওয়া হল যে, নামাজ অনুষ্ঠিত হইবে। রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] মানুষদের নিয়ে নামাজ আদায় করিলেন, দুরুকূ এবং সিজদা দ্বারা। পরে দাঁড়ালেন ও নামাজ আদায় করিলেন দুরুকূ এবং সিজদা দ্বারা। আয়িশাহ [রাঃআঃ] বলেন, আমি কখনো এর চেয়ে দীর্ঘ কোন রুকূ এবং সিজদা করিনি।
সূর্য ও চন্দ্র গ্রহণের নামাজ হাদিসের তাহকিকঃ সহীহ হাদিস
১৪৮০. আব্দুল্লাহ ইবনি আমর [রাঃআঃ] হইতে বর্ণীত
তিনি বলেন, একবার সূর্য গ্রহণ লেগে গেল। তখন রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] দুটো রুকূ এবং দুটো সিজদা করিলেন, তারপর দাঁড়ালেন এবং দুটো রুকূ ও দুটো সিজদা করিলেন, পরে সূর্যের গ্রহণ ছেড়ে গেল। আয়িশাহ [রাঃআঃ] বলিতেন, রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ]-এর থেকে দীর্ঘ কোন রুকূ এবং সিজদা করেন নি।
সূর্য ও চন্দ্র গ্রহণের নামাজ হাদিসের তাহকিকঃ সহীহ হাদিস
১৪৮১. আয়িশাহ [রাঃআঃ] হইতে বর্ণীত
আযাদকৃত গোলাম আবু হাফসা [রহঃ] থেকে বর্ণিত যে, আয়িশাহ [রাঃআঃ] তার কাছে বর্ণনা করিয়াছেন যে, একবার যখন রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ]-এর যুগে একবার সূর্য গ্রহণ লেগে গেল, তখন তিনি উযূ করিলেন এবং নির্দেশ দিলে আওয়াজ দেওয়া হল যে, নামাজ অনুষ্ঠিত হইবে। তখন তিনি দাঁড়ালেন এবং তাহাঁর নামাজে দাঁড়ানোকে দীর্ঘায়িত করিলেন। আয়িশাহ [রাঃআঃ] বলেন, আমি অনুমান করলাম যে, তিনি সূরা বাকারা পড়েছিলেন, তারপর রুকূ করিলেন এবং রুকূকে দীর্ঘায়িত করিলেন। এরপরে বলিলেন
سَمِعَ اللَّهُ لِمَنْ حَمِدَهُ
“সামিআল্লাহু লিমান হামিদা”
তারপর দাঁড়ালেন পূর্বের দাঁড়ানোর সমপরিমাণ কিন্তু সিজদা করিলেন না। পরে রুকূ করিলেন এবং সিজদা করিলেন, এরপর দাঁড়ালেন এবং পূর্বের মতই দুরুকূ এবং সিজদা করিলেন। তারপর বসলেন এবং সূর্যের গ্রহণও ছেড়ে গেল।
সূর্য ও চন্দ্র গ্রহণের নামাজ হাদিসের তাহকিকঃ সহীহ লিগাইরিহি
১৪৮২. আবু সাইব [রহঃ] হইতে বর্ণীত
আব্দুল্লাহ ইবনি আমর [রাঃআঃ] তাহাঁর কাছে বর্ণনা করিতে গিয়ে বলেন, রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ]-এর যুগে একবার সূর্যের গ্রহণ লেগে গেল। তখন রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] নামাজে দাঁড়িয়ে গেলেন আর তাহাঁর সাথে যারা ছিল তাঁরাও দাঁড়িয়ে গেল। তিনি দাঁড়ালেন আর দাঁড়ানোকে দীর্ঘায়িত করিলেন, তারপর রুকূ করিলেন আর রুকূকেও দীর্ঘায়িত করিলেন। তারপর তাহাঁর মাথা উঠালেন ও সিজদা করিলেন এবং সিজদাকেও দীর্ঘায়িত করিলেন। তারপর মাথা উঠালেন ও বসলেন, আর বসাকেও দীর্ঘায়িত করিলেন। তারপর সিজদা করিলেন এবং এ সিজদাকেও দীর্ঘায়িত করিলেন। তারপর মাথা উঠালেন ও দাঁড়িয়ে গেলেন। তিনি প্রথম রাকআতে যা যা করেছিলেন অর্থাৎ দাঁড়ানো, রুকূ, সিজদা, এবং বসা। তদ্রুপ দ্বিতীয় রাকআতেও করিলেন। তিনি দ্বিতীয় রাকআতের শেষ সিজদায় ফুঁক মারতে লাগলেন এবং কেঁদে কেঁদে বলিতে লাগলেন, [হে আল্লাহ!] আমি তাহাদের মাঝে বিদ্যমান থাকাকালীন তুমি তাহাদের এমনতরো আযাব দেওয়ার আমার কাছে ওয়াদা করনি, তোমার কাছে মাগফিরাত চাওয়াকালীন তুমি তো আমার কাছে তাহাদের আযাব দেওয়ার ওয়াদা করনি। তারপর তিনি মাথা উঠালেন এবং সূর্যও আলোকিত হয়ে গেল। তখন রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] দাঁড়ালেন এবং মানুষদের লক্ষ্য করে খূতবা দিলেন। তিনি আল্লাহর প্রশংসা এবং গুণগান করিলেন। তারপর বলিলেন, সূর্য এবং চন্দ্র আল্লাহ্র নিদর্শন সমূহের দুটি নিদর্শন। অতএব, যখন তোমরা তাহাদের কোনটার গ্রহণ দেখিতে পাও, তখন আল্লাহ তাআলার যিক্র অভিমুখে দ্রুত ধাবিত হও। ঐ সত্তার শপথ, যাঁর হাতে আমার প্রাণ! নিশ্চয় জান্নাত আমার নিকটবর্তী করে দেওয়া হয়েছিল যে, আমি যদি হস্ত প্রসারিত করতাম তাহলে আমি তার ফলরাশি ধরতে পারতাম, আর জাহান্নামও আমার নিকটবর্তী করে দেওয়া হলো। আমি তাহাঁর থেকে বেঁচে থাকতে লাগলাম এই ভয়ে যে, তা তোমাদের বেহুঁশ করে ফেলে! আমি তাতে হিময়ার গোত্রের এক মহিলাকে দেখিতে পেলাম। তাকে একটি বিড়ালের কারলে আযাব দেওয়া হচ্ছে, যাকে সে বেঁধে রেখেছিল। তাকে যমীনের কীট-পতঙ্গ খাওয়ার জন্য ছেড়েও দিতনা আর তাকে সে খাদ্য ও পানিও দিত না, এমনকি বিড়ালটা মারা গিয়েছিল। আমি তাকে দেখিতে পেলাম যে, বিড়ালটা ঐ মহিলাকে খামচাচ্ছে। যখনই সে তার দিকে মুখ করছে, আর যখন সে পিছনে ফিরছে, তখন তার নিতম্বে খামচাচ্ছে। এমনকি আমি তাতে দাদাগোত্রের জুতা চোর ভাইকেও দেখেছি, তাকে দুশাখা বিশিষ্ট একটি লাঠি দ্বারা ঠেলে দুমুখে নিক্ষেপ করা হচ্ছে। আমি আরও তাতে মাথা বাঁকা লাঠি ওয়ালা মানুষটিকে দেখেছি, যে বক্র মাথা লাঠি দ্বারা হাজীদের মাল চুরি করত। দেখিতে পেলাম, সে জাহান্নামে বক্র মাথা লাঠিতে ঠেস দিয়ে বলছে, আমি বক্র মাথা লাঠি দ্বারা চুরি করতাম।
সূর্য ও চন্দ্র গ্রহণের নামাজ হাদিসের তাহকিকঃ সহীহ হাদিস
১৪৮৩. আবু হুরাইরা [রাঃআঃ] হইতে বর্ণীত
তিনি বলেন, একবার রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ]-এর যুগে সূর্য গ্রহণ লেগে গেল। তখন তিনি দাঁড়ালেন এবং মানুষদের নিয়ে নামাজ আদায় করিলেন। তিনি দাঁড়ানোকে দীর্ঘায়িত করিলেন তারপর রুকূ করিলেন আর রুকূও দীর্ঘায়িত করিলেন। তারপর দাঁড়ালেন এবং দাঁড়ানোকেও দীর্ঘায়িত করিলেন কিন্তু তা পূর্ববর্তী দাঁড়ানো থেকে সংক্ষিপ্ত ছিল। তারপর রুকূ করিলেন এবং রুকূকেও দীর্ঘায়িত করিলেন, কিন্তু তা পূর্ববর্তী রুকূ থেকে সংক্ষিপ্ত ছিল। তারপর সিজদা করিলেন আর সিজদাকেও দীর্ঘায়িত করিলেন। পরে তাহাঁর মাথা উঠালেন এবং সিজদা করিলেন। আর সিজদাও দীর্ঘায়িত করিলেন কিন্তু তা পূর্ববর্তী সিজদা থেকে সংক্ষিপ্ত ছিল। তারপর দাঁড়ালেন ও দুরূকু করিলেন এবং তাতেও পূর্বের ন্যায় করিলেন। তারপর দুটা সিজদা করিলেন এবং তাতেও পূর্বের ন্যায় করিলেন। এভাবে তিনি তাহাঁর নামাজ থেকে অবসর হয়ে গেলেন। তারপর বলিলেন, সূর্য এবং চন্দ্র আল্লাহ্র নিদর্শন সমূহের দুটি নিদর্শন। নিশ্চয় কারো জন্ম মৃত্যুর কারণে তাহাদের গ্রহণ হয় না। অতএব, তোমরা যখন তা দেখবে তখন দ্রুত আল্লাহ্র যিক্র এবং নামাজের প্রতি ধাবিত হইবে।
সূর্য ও চন্দ্র গ্রহণের নামাজ হাদিসের তাহকিকঃ হাসান সহীহ
১৪৮৪. আসওয়াদ ইবনি কায়স [রহঃ] হইতে বর্ণীত
তিনি বলেন, বসরার অধিবাসী ছালাবা ইবনি আব্বাদ আবদী [রহঃ] একদিন সামুরা ইবনি জুন্দুব [রাঃআঃ]-এর খুতবায় উপস্থিত ছিলেন। তিনি তাহাঁর খুতবায় রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] থেকে একটি হাদিস বর্ণনা করিলেন। সামুরা [রাঃআঃ] বলিলেন, আমি এবং এক আনসারী গোলাম রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ]-এর যুগে একদিন আমাদের লক্ষ্যস্থলে তীর নিক্ষেপ করছিলাম। ইতিমধ্যে যখন সূর্য দিগন্তে দর্শনার্থীদের দৃষ্টিতে দুই কি তিন বর্শার পরিমাণ মাত্র অবশিষ্ট রয়ে গেল, তা কাল হয়ে গেল। তখন আমাদের একজন তাহাঁর সাথীকে বলিল, তুমি আমাদের সাথে মসজিদে চল। আল্লাহ্র শপথ! নিশ্চয় রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ]-এর যুগে সূর্যের এ অবস্থা তাহাঁর উম্মাতের জন্য কোন নতুন ঘটনার ইঙ্গিতবহ। তিনি বলেন, তখন আমরা মসজিদে গেলাম এবং রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ]-কে দেখিতে পেলাম যে, তিনি লোকদের নিকট বের হয়ে এসেছেন। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] অগ্রসর হয়ে নামাজে দাঁড়ালেন। তিনি নামাজে এত দীর্ঘক্ষণ দাঁড়িয়ে রইলেন যে, ইতিপূর্বে তিনি আমাদের নিয়ে নামাজে এতক্ষণ দাঁড়িয়ে থাকেন নি। তাহাঁর কোন আওয়াজ আমরা শুনতে পাচ্ছিলাম না। তারপর তিনি আমাদের সহ এত দীর্ঘ রুকূ করিলেন যে, ইতিপূর্বে কোন নামাজে আমাদের নিয়ে এত দীর্ঘায়িত রুকূ করেন নি। আমরা তাহাঁর কোন আওয়াজ শুনতে পাচ্ছিলাম না। তারপর তিনি আমাদের নিয়ে এত দীর্ঘ সিজদা করিলেন যে, ইতিপূর্বে কোন নামাজে এরূপ দীর্ঘ সিজদা করেন নি। তাহাঁর কোন আওয়াজ আমরা শুনতে পাচ্ছিলাম না। তারপর তিনি অনুরূপভাবে দ্বিতীয় রাকআতেও করিলেন। তিনি বলেন, তাহাঁর দ্বিতীয় রাকআতে বসা অবস্থায় সূর্যের আলো বিকশিত হয়ে গেল। পরে তিনি সালাম ফিরালেন এবং আল্লাহ্ তাআলার প্রশংসা ও তারীফ করিলেন এবং এ কথার সাক্ষ্য দিলেন যে, আল্লাহ ভিন্ন কোন ইলাহ্ নেই এবং এ কথারও সাক্ষ্য দিলেন যে, তিনি আল্লাহর বান্দা এবং তাহাঁর রাসূল। [সংক্ষিপ্ত]
সূর্য ও চন্দ্র গ্রহণের নামাজ হাদিসের তাহকিকঃ দুর্বল হাদিস
১৪৮৫. নুমান ইবনি বাশীর [রাঃআঃ] হইতে বর্ণীত
তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ]-এর যুগে একবার সূর্য গ্রহণ লেগে গেল। তখন তিনি ভীত সন্ত্রস্ত হয়ে তাহাঁর কাপড় সামলাতে সামলাতে বের হয়ে মসজিদে পৌঁছে গেলেন এবং আমাদের নিয়ে এভাবে নামাজ আদায় করিতে থাকলেন যে, সূর্য আলোকিত হয়ে গেল। যখন সূর্য আলোকিত হয়ে গেল, তখন তিনি বলিলেন, মানুষেরা ধারণা করে যে, সূর্য এবং চন্দ্র গ্রহণ শুধু বিশিষ্ট ব্যক্তিদের মৃত্যুর কারণেই হয়ে থাকে, কিন্তু ব্যাপারে তা নয়। কারো জন্ম মৃত্যুর কারণে চন্দ্র-সূর্য গ্রহণ হয় না, বরং তারা হল আল্লাহ্র নিদর্শন সমূহের দুটি নিদর্শন। যখন আল্লাহ্ তাআলা তাহাঁর কোন সৃষ্টির প্রতি তাহাঁর নূরে বহিঃপ্রকাশ ঘটান, তখন ঐ সৃষ্টি তাহাঁর অনুগত হয়ে যায় [অর্থাৎ তার আলো নিস্প্রভ হয়ে যায়]। অতএব, তোমরা যখন তা দেখ, তখন নামাজ আদায় কর, তোমাদের আদায়কৃত ফরয নামাজের মধ্যে সম্প্রতি আদায়কৃত নামাজের [ফজরের নামাজের] মত।
সূর্য ও চন্দ্র গ্রহণের নামাজ হাদিসের তাহকিকঃ দুর্বল হাদিস
১৪৮৬. কাবীসা ইবনি মুখারিক হিলালী [রাঃআঃ] হইতে বর্ণীত
তিনি বলেন, একবার সূর্য গ্রহণ লেগে গেল। তখন আমরা রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ]-এর সাথে মদীনায় ছিলাম। তখন তিনি ভীত সন্ত্রস্ত হয়ে কাপড় সামলাতে সামলাতে বের হলেন। তারপর দুরাকআত নামাজ আদায় করিলেন এবং তা এত দীর্ঘায়িত করিলেন যে, তাহাঁর নামাজের সমাপ্তির সাথে সাথে সূর্যের আলো বিকশিত হয়ে গেল। তারপর তিনি আল্লাহ্ তাআলার প্রশংসা ও তারীফ করিলেন। তারপর বলিলেন যে, চন্দ্র-সূর্য আল্লাহ্র নিদর্শন সমূহের দুটি নিদর্শন। নিশ্চয় কারো জন্ম মৃত্যুর কারণে তাহাদের গ্রহণ হয় না। অতএব তোমরা যখন তার কোন কিছু দেখিতে পাও, তখন নামাজ আদায় কর তোমাদের সম্প্রতি আদায়কৃত [ফজরের নামাজ] ফরয নামাজের ন্যায়।
সূর্য ও চন্দ্র গ্রহণের নামাজ হাদিসের তাহকিকঃ দুর্বল হাদিস
১৪৮৭. কাবীসা হিলালী[রাঃআঃ] হইতে বর্ণীত
একবার সূর্য গ্রহণ লেগে গেল। তখন নাবী [সাঃআঃ] দুরাকআত, দুরাকআত করে নামাজ আদায় করিতে থাকলেন। ইত্যবসরে সূর্য আলোকিত হয়ে গেল। তারপর তিনি বলিলেন, কারো মৃত্যুর কারণে চন্দ্র-সূর্যের গ্রহণ হয় না, বরং তারা হল আল্লাহর সৃষ্টি বস্তু সমূহের মধ্যে দুটি বস্তু, আর আল্লাহ্ তাআলা তাহাঁর সৃষ্টিতে যা ইচ্ছা নব নব সৃষ্টি করেন এবং আল্লাহ তাআলা যখন তাহাঁর সৃষ্টির কোন বস্তুতে তাহাঁর নূরের বহিঃপ্রকাশ ঘটান তখন তা তাহাঁর অনুগত হয়ে যায় [অর্থাৎ সেই বস্তুর আলো নিস্প্রভ হয়ে যায়]। অতএব, সূর্য এবং চন্দ্রে যদি নতুন কিছু ঘটে, তবে তোমরা নামাজ আদায় করিতে থাকিবে, তা আলোকিত হওয়া অথবা আল্লাহ্ তাআলার নতুন কোন ফয়সালা না হওয়া পর্যন্ত।
সূর্য ও চন্দ্র গ্রহণের নামাজ হাদিসের তাহকিকঃ দুর্বল হাদিস
১৪৮৮. নুমান ইবনি বশীর [রাঃআঃ] হইতে বর্ণীত
নাবী [সাঃআঃ] বলেছেন, যখন সূর্য এবং চন্দ্রের গ্রহণ লেগে যায়, তখন তোমরা সম্প্রতি আদায়কৃত নামাজের ন্যায় নামাজ আদায় কর।
সূর্য ও চন্দ্র গ্রহণের নামাজ হাদিসের তাহকিকঃ দুর্বল হাদিস
১৪৮৯. নুমান ইবনি বশীর [রাঃআঃ] হইতে বর্ণীত
রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] যখন সূর্য গ্রহণ লেগে গেল, তখন আমাদের নামাজের ন্যায় নামাজ আদায় করিলেন। তিনি রুকূ ও সিজদাও করিলেন।
সূর্য ও চন্দ্র গ্রহণের নামাজ হাদিসের তাহকিকঃ দুর্বল হাদিস
১৪৯০. নুমান ইবনি বশীর [রাঃআঃ] হইতে বর্ণীত
নাবী [সাঃআঃ] থেকে বর্ণিত যে, তিনি একদিন অতি দ্রুত মসজিদ অভিমুখে বের হয়ে গেলেন, তখন সূর্য গ্রহণ লেগে গিয়েছিল। তারপর এমনিভাবে নামাজ আদায় করিলেন যে, সূর্য আলোকিত হয়ে গেল। তারপর বলিলেন, জাহিলিয়া যুগের লোকেরা বলত যে, পৃথিবীর কোন মহান ব্যক্তির মৃত্যু ব্যতীত চন্দ্র-সূর্যের গ্রহণ হয় না। অথচ কারো জন্ম মৃত্যুর কারণে চন্দ্র-সূর্যের গ্রহণ হয় না, বরং তারা আল্লাহর সৃষ্ট বস্তুসমূহের দুটি বস্তু। আল্লাহ তাআলা তাহাঁর সৃষ্টিতে যা যা ইচ্ছা নব নব সৃষ্টি করেন। অতএব সূর্য এবং চন্দ্রের কারো যদি গ্রহণ লেগে যায়, তবে তোমরা নামাজ আদায় করিতে থাকিবে, তা আলোকিত হওয়া অথবা আল্লাহ তাআলার নতুন কোন ফয়সালা না হওয়া পর্যন্ত।
সূর্য ও চন্দ্র গ্রহণের নামাজ হাদিসের তাহকিকঃ দুর্বল হাদিস
১৪৯১. আবু বাকরা [রাঃআঃ] হইতে বর্ণীত
তিনি বলেন, আমরা রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ]-এর সাথে ছিলাম, ইতিমধ্যে সূর্যের গ্রহণ লেগে গেল। তখন রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] চাদর সামলাতে সামলাতে বের হয়ে মসজিদ পর্যন্ত পৌছে গেলেন। অন্যান্য লোকেরাও মসজিদে একত্রিত হয়ে গেল। তখন তিনি আমাদের নিয়ে দুরাকআত নামাজ আদায় করিলেন, যখন সূর্য আলোকিত হয়ে গেল তিনি বলিলেন, চন্দ্র-সূর্য আল্লাহ্র নিদর্শন সমূহের মধ্যে দুটি নিদর্শন, আল্লাহ তাআলা তদ্বারা বান্দাদের ভীতি প্রদর্শন করে থাকেন। আর কারো জন্ম মৃত্যুর কারণে তাহাদের গ্রহণ হয় না। অতএব তোমরা যখন তা দেখবে, তখন নামাজ আদায় করিবে। তোমাদের মধ্যে যে ধারণা রয়েছে তা দূরীভূত হয়ে যায়। তা হল রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ]-এর এক ছেলে ইবরাহীম [রাঃআঃ] মৃত্যুবরণ করেছিল। তখন লোকেরা বলাবলি করিতে লাগল যে, সূর্যের গ্রহণ তাহাঁর মৃত্যুর কারণেই হয়েছে।
সূর্য ও চন্দ্র গ্রহণের নামাজ হাদিসের তাহকিকঃ সহীহ হাদিস
১৪৯২. আবু বাকরা [রাঃআঃ] হইতে বর্ণীত
রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] তোমাদের সদ্য সমাপ্ত নামাজের ন্যায় দুরাকআত নামাজ আদায় করেছিলেন আর তখন সূর্য গ্রহণের কথা উল্লেখ করিলেন।
সূর্য ও চন্দ্র গ্রহণের নামাজ হাদিসের তাহকিকঃ সহীহ হাদিস
১৩.পরিচ্ছেদঃ সূর্য গ্রহণকালীন নামাজে কিরাআতের পরিমাণ
১৪৯৩. আব্দুল্লাহ ইবনি আব্বাস [রাঃআঃ] হইতে বর্ণীত
তিনি বলেন, একবার সূর্যগ্রহণ লেগে গেল, তখন রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] দুরাকআত নামাজ আদায় করিলেন। অন্যান্য মানুষও তাহাঁর সাথে ছিল, তিনি দীর্ঘক্ষণ দাঁড়িয়ে তাতে সূরা বাকারার পরিমাণ কিরাআত আদায় করিলেন। তিনি বলেন, তারপর দীর্ঘক্ষণ রুকূ করিলেন, তারপর মাথা উঠিয়ে দীর্ঘক্ষণ দাঁড়ালেন কিন্তু তা পূর্ববর্তী দাঁড়ানো থেকে সংক্ষিপ্ত ছিল। তারপর দীর্ঘক্ষণ রূকু করিলেন আর তা পূর্ববর্তী রুকূ থেকে সংক্ষিপ্ত ছিল, তারপর সিজদা করিলেন, পরে দীর্ঘক্ষণ দাঁড়ালেন। কিন্তু তা পূর্ববর্তী দাঁড়ানো থেকে সংক্ষিপ্ত ছিল। এরপর দীর্ঘক্ষণ রুকূ করিলেন, আর তা পূর্ববর্তী রুকূ থেকে সংক্ষিপ্ত ছিল, এরপর মাথা উঠিয়ে দীর্ঘক্ষণ দাঁড়ালেন আর তা পূর্ববর্তী দাঁড়ানো থেকে সংক্ষিপ্ত ছিল। পুনরায় দীর্ঘ রুকূ করিলেন, আর তা পূর্ববর্তী রুকূ থেকে সংক্ষিপ্ত ছিল। তারপর সিজদা করিলেন, আর এভাবে নামাজ শেষ করিলেন। ইত্যবসরে সূর্য আলোকিত হয়ে গিয়েছিল। তিনি বলিলেন, চন্দ্র-সূর্য আল্লাহ্র নিদর্শন সমূহের দুটি নিদর্শন, কারো জন্ম মৃত্যুর কারণে তাহাদের গ্রহণ হয় না। অতএব, তোমরা যখন তা দেখবে তখন তোমরা আল্লাহ্র স্মরণ করিবে। তাঁরা [সাহাবীগণ] বলিলেন, ইয়া রাসূলাল্লাহ! আমরা দেখলাম যে, আপনি আপনার এ স্থানে কোন কিছু ধরতে চাইলেন। তারপর আপনাকে দেখলাম যে, আপনি পিছু হটে গেলেন। তিনি বলিলেন, আমি জান্নাত দেখলাম অথবা আমাকে তা দেখানো হলো। আমি তা থেকে একটি আঙ্গুরের ছড়া নিতে চাইলাম। যদি আমি তা নিতাম তাহলে অবশ্যই তোমরা তা থেকে পৃথিবী বিদ্যমান থাকা অবধি খেতে পারতে, আর আমি জাহান্নামও দেখলাম। আমি আজ যে দৃশ্য দেখেছি তা আর কখনো দেখিনি। আর আমি তার অধিকাংশ অধিবাসী নারীদেরকে দেখেছি, তাঁরা বলিল, [এরূপ] কেন? ইয়া রাসূলাল্লাহ! তিনি বলিলেন, তাহাদের নাশোকরীর কারণে। বলা হল, তারা কি আল্লাহ্র না শোকরী করে? তিনি বলিলেন, তারা স্বামীর না শোকরী করে, তারা অনুগ্রহের না শোকরী করে। যদি তুমি তাহাদের কারো প্রতি সুদীর্ঘকাল অনুগ্রহ করে থাক, তারপর যদি তোমার কাছে অমনোপূত সামান্য কোন কিছুও দেখিতে পায়, তাহলে বলবে, আমি তোমার কাছে মনোপূত কোন কিছু কখনো দেখিনি।
সূর্য ও চন্দ্র গ্রহণের নামাজ হাদিসের তাহকিকঃ সহীহ হাদিস
১৪.পরিচ্ছেদঃ গ্রহণকালীন নামাজে উচ্চস্বরে কিরাআত পড়া
১৪৯৪. আয়িশাহ [রাঃআঃ] হইতে বর্ণীত
রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন যে, তিনি চার রাকাআত নামাজ আদায় করেছিলেন চার সিজদা দ্বারা এবং তাতে কিরাআত উচ্চস্বরে পড়েছিলেন। যখন মাথা তুলতেন বলিতেন,
سَمِعَ اللَّهُ لِمَنْ حَمِدَهُ رَبَّنَا وَلَكَ الْحَمْدُ
“সামি আল্লাহু লিমান হামিদা, রাব্বানা ওয়া লাকাল হাম্দ।”
সূর্য ও চন্দ্র গ্রহণের নামাজ হাদিসের তাহকিকঃ সহীহ হাদিস
১৫.পরিচ্ছেদঃ গ্রহণকালীন নামাজে উচ্চস্বরে কিরাআত না পড়া
১৪৯৫. সামুরা [রাঃআঃ] হইতে বর্ণীত
নাবী [সাঃআঃ] তাঁদের নিয়ে সূর্য-গ্রহণকালীন নামাজ আদায় করিলেন, আমরা [তাতে] তাহাঁর আওয়াজ শুনিনি।
সূর্য ও চন্দ্র গ্রহণের নামাজ হাদিসের তাহকিকঃ দুর্বল হাদিস
১৬.পরিচ্ছেদঃ গ্রহণকালীন নামাজে সিজদায় কথা বলা
১৪৯৬. আব্দুল্লাহ ইবনি আমর [রাঃআঃ] হইতে বর্ণীত
তিনি বলেন, একবার রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ]-এর যুগে সূর্য গ্রহণ লেগে গেল। তখন রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] নামাজ আদায় করিলেন, আর দাঁড়ানোকে দীর্ঘায়িত করিলেন। তারপর রুকূ করিলেন আর রুকূকেও দীর্ঘায়িত করিলেন। তারপর মাথা উঠালেন এবং তাও [দাঁড়ানো] দীর্ঘায়িত করিলেন। রাবী শুবা [রহঃ] বলেন, আমি মনে করি যে, তিনি সিজদার ব্যাপারেও অনুরূপ বলেছেন এবং তিনি সিজদায় ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে কাঁদতে লাগলেন। বলিতে লাগলেন, হে রব! আমি তোমার কাছে মাগফিরাত চাওয়াকালীন তুমি তো এরূপ আযাবের ওয়াদা করনি? আমি তাহাদের মাঝে অবস্থানকালীন তুমি তো আমার কাছে এরূপ আযাবের প্রতিশ্রুতি করনি। যখন তিনি নামাজ আদায় করে নিলেন তখন বলিলেন, আমার সামনে জান্নাত উপস্থাপন করা হলো, এমনকি যদি আমি হস্ত প্রসারিত করতাম তাহলে তার ফল স্পর্শ করিতে পারতাম। আমার সামনে জাহান্নামও উপস্থাপন করা হলো, আমি তাতে এই ভয়ে ফুঁক দিতে লাগলাম যে, তার তাপ তোমাদের গ্রাস করে ফেলে। আমি তাতে আমার [রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ]-এর] দুই উটনীর চোরকেও দেখলাম, আর আমি তাতে দাদা গোত্রের এক ব্যক্তিকেও দেখলাম, যে হাজীদের মাল চুরি করত। যখন তার শাস্তি অনুভব হলো তখন সে বললো, এতো হল বক্র লাঠির কাজ। আমি তাতে এক দীর্ঘাকৃতির কৃষ্ণবর্ণের মহিলাকেও দেখলাম, তাকে এক বিড়ালের ব্যাপারে শাস্তি দেওয়া হচ্ছে। সে বিড়ালকে বেঁধে রেখেছিল। তাকে সে খাদ্যও খাওয়াত না এবং পানিও পান করাত না এবং ছেড়েও দিত না সে যমীনের পোকা-মাকড় খেয়ে জীবন ধারণ করিতে পারতো। এমনিভাবে বিড়ালটি মারা গিয়েছিল। আর চন্দ্র-সূর্যের গ্রহণ কারো জন্ম মৃত্যুর কারণে হয় না বরং তারা হল আল্লাহ্র নিদর্শন সমূহের দুটি নিদর্শন। অতএব, যখন তাহাদের কারো গ্রহণ লেগে যায় অথবা বলেছেন যে, তাহাদের কারো এমন ধরনের কিছু ঘটে যায় তখন তোমরা আল্লাহ্র স্মরণে ধাবিত হও।
সূর্য ও চন্দ্র গ্রহণের নামাজ হাদিসের তাহকিকঃ সহীহ হাদিস
১৭.পরিচ্ছেদঃ গ্রহণকালীন নামাজে তাশাহ্হুদ পড়া ও সালাম ফিরানো
১৪৯৭. আয়িশাহ [রাঃআঃ] হইতে বর্ণীত
তিনি বলেন, একবার সূর্য গ্রহণ লেগে গেলে রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] এক ব্যক্তিকে নির্দেশ দিলে সে আওয়াজ দিল যে, নামাজ অনুষ্ঠিত হইবে। অতএব লোকেরা একত্রিত হয়ে গেলে তিনি তাঁদের নিয়ে নামাজ আদায় করিলেন। তারপর তিনি তাকবীর বলিলেন এবং দীর্ঘ কিরাআত পড়লেন। তারপর তাকবীর বলিলেন ও দীর্ঘ রুকূ করিলেন। তাহাঁর কিয়ামের ন্যায় অথবা তার চেয়েও দীর্ঘ। তারপর তাহাঁর মাথা উঠিয়ে
سَمِعَ اللَّهُ لِمَنْ حَمِدَهُ
“সামি আল্লাহু লিমান হামিদা”
বলিলেন। পরে দীর্ঘ কিরাআত পড়লেন কিন্তু তা পূর্ববর্তী কিরাআত থেকে সংক্ষিপ্ত ছিল। তারপর তাকবীর বলিলেন ও দীর্ঘ রুকূ করিলেন কিন্তু তা পূর্ববর্তী রুকূ থেকে সংক্ষিপ্ত ছিল। তারপর তাহাঁর মাথা উঠিয়ে “সামিআল্লাহু লিমান হামিদা” বলিলেন। তারপর তাকবীর বলিলেন ও দীর্ঘ সিজদা করিলেন তাহাঁর রুকূর ন্যায় অথবা তার চেয়েও দীর্ঘ। তারপর তাকবীর বলিলেন ও তাহাঁর মাথা উঠালেন পরে তাকবীর বলিলেন ও সিজদায় গেলেন। তারপর তাকবীর বলে দাঁড়ালেন এবং দীর্ঘ কিরাআত পড়লেন। কিন্তু তা পূর্ববর্তী কিরাআত থেকে সংক্ষিপ্ত ছিল। তারপর তাকবীর বলিলেন ও দীর্ঘ রুকূ করিলেন কিন্তু তা পূর্ববর্তী রুকূ থেকে সংক্ষিপ্ত ছিল। তারপর তাহাঁর মাথা উঠিয়ে বলিলেন
سَمِعَ اللَّهُ لِمَنْ حَمِدَهُ
“সামিআল্লাহু লিমান হামিদা”
তারপর দীর্ঘ কিরাআত পড়লেন কিন্তু তা দ্বিতীয় কিয়ামের প্রথম কিরাআত থেকে সংক্ষিপ্ত ছিল। তারপর তাকবীর বলিলেন ও দীর্ঘ রুকূ করিলেন কিন্তু তা পূর্ববর্তী রুকূ থেকে সংক্ষিপ্ত ছিল। তারপর তাকবীর বলিলেন ও তাহাঁর মাথা উঠালেন এবং বলিলেন, “সামিআল্লাহু লিমান হামিদা”। পরে তাকবীর বলিলেন ও সিজদা করিলেন আর তা তাহাঁর পূর্ববর্তী সিজদা থেকে সংক্ষিপ্ত ছিল। তারপর তাশাহুদ পড়লেন ও সালাম ফিরালেন। পরে তাঁদের সামনে দাঁড়ালেন এবং আল্লাহ্ তাআলার প্রশংসা ও তারীফ করিলেন। পরে বলিলেন, চন্দ্র-সূর্যের গ্রহণ কারো জন্ম-মৃত্যুর কারণে হয় না, বরং তারা হল আল্লাহ্র নিদর্শনসমূহের দুটি নিদর্শন। অতএব, তাহাদের যে কোন একটিতে যদি গ্রহণ লেগে যায়, তা হলে তোমরা নামাজ আদায়ের মাধ্যমে আল্লাহ্র দিকে ধাবিত হও।
সূর্য ও চন্দ্র গ্রহণের নামাজ হাদিসের তাহকিকঃ সহীহ হাদিস
১৪৯৮. আসমা বিন্ত আবু বক্র [রাঃআঃ] হইতে বর্ণীত
তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] একবার গ্রহণ কালে নামাজ আদায় করিলেন। তিনি নামাজে দীর্ঘক্ষণ কিয়াম করিলেন। তারপর রুকূ করিলেন আর তাও দীর্ঘ করিলেন। তারপর মাথা উঠিয়ে দীর্ঘক্ষণ কিয়াম করিলেন। তারপর রুকূ করিলেন আর তাও দীর্ঘ করিলেন। তারপর মাথা উঠালেন এবং সিজদা করিলেন আর তাও দীর্ঘ করিলেন। তারপর মাথা উঠালেন ও সিজদা করিলেন এবং তাও দীর্ঘ করিলেন। তারপর দাঁড়ালেন এবং দীর্ঘক্ষণ কিয়াম করিলেন। তারপর রুকূ করিলেন এবং তাও দীর্ঘ করিলেন। অতঃপর মাথা উঠালেন এবং কিয়ামকেও দীর্ঘ করিলেন। অতঃপর রুকূ করিলেন এবং তাও দীর্ঘ করিলেন। এরপর মাথা উঠালেন ও সিজদা করিলেন। আর তাও দীর্ঘ করিলেন। তারপর মাথা উঠালেন ও সিজদা করিলেন এবং তাও দীর্ঘ করিলেন। অতঃপর মাথা উঠালেন ও সালাম ফিরিয়ে নামাজ শেষ করিলেন।
সূর্য ও চন্দ্র গ্রহণের নামাজ হাদিসের তাহকিকঃ সহীহ হাদিস
১৮.পরিচ্ছেদঃ গ্রহণকালীন নামাজ আদায় করার পর মিম্বরে বসা
১৪৯৯. আয়িশাহ [রাঃআঃ] হইতে বর্ণীত
তিনি বলেন, নাবী [সাঃআঃ] একবার কিছুক্ষণের জন্য বের হয়ে গেলেন। ইত্যবসরে সূর্যগ্রহণ লেগে গেল। তখন আমরা হুজরা অভিমুখে বের হয়ে গেলাম। আমাদের কাছে অন্যান্য মহিলারাও একত্রিত হয়ে গেল, আর রাসূলু্ল্লাহ্ [সাঃআঃ]-ও আমাদের কাছে আসলেন, তখন ছিল সূর্যোদয় এবং দ্বিপ্রহরের মধ্যবর্তী সময়। তিনি কিয়াম করিলেন এবং তা দীর্ঘ করিলেন। তারপর রুকূ করিলেন এবং তাও দীর্ঘ করিলেন। তারপর তাহাঁর মাথা উঠালেন ও দাঁড়ালেন, কিন্তু তা পূর্ববর্তী দাঁড়ানো অপেক্ষা সংক্ষিপ্ত ছিল। তারপর রুকূ করিলেন তাহাঁর [পূর্ববর্তী] রুকূ থেকে সংক্ষিপ্ত। এরপর সিজদা করিলেন ও দ্বিতীয় রাকাআতে দাঁড়িয়ে গেলেন এবং তাতে অনৃরূপই করিলেন। কিন্তু তাহাঁর কিয়াম এবং রুকূ প্রথম রাকাআত থেকে সংক্ষিপ্ত ছিল। তারপর সিজদা করিলেন আর সূর্য আলোকিত হয়ে গেল। পরে যখন সালাম ফিরালেন, তখন মিম্বরের উপর বসলেন এবং তাহাঁর বক্তব্য বলিলেন, মানুষ তাহাদের কবরে দাজ্জালের পরীক্ষার ন্যায় পরীক্ষার সম্মুখীন হইবে।
সূর্য ও চন্দ্র গ্রহণের নামাজ হাদিসের তাহকিকঃ সহীহ হাদিস
১৯.পরিচ্ছেদঃ গ্রহণকালীন [নামাজের পর] খুৎবার প্রকার
১৫০০. আয়িশাহ [রাঃআঃ] হইতে বর্ণীত
তিনি বলেন, একবার রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ]-এর যুগে সূর্য গ্রহণ লেগে গেল। তখন তিনি দাঁড়ালেন ও নামাজ আদায় করিতে লাগলেন। তিনি কিয়ামকে খুব দীর্ঘ করিলেন। তারপর রুকূ করিলেন এবং রুকূকেও খুব দীর্ঘ করিলেন। তারপর মাথা উঠালেন আর কিয়ামকেও খুব দীর্ঘ করিলেন, কিন্তু তা পূর্ববর্তী কিয়াম থেকে সংক্ষিপ্ত ছিল। তারপর রুকূ করিলেন এবং রুকূকেও দীর্ঘ করিলেন কিন্তু তা পূর্ববর্তী রুকূ থেকে সংক্ষিপ্ত ছিল। এরপর সিজদা করিলেন। পরে তাহাঁর মাথা উঠালেন আর কিয়ামকে দীর্ঘ করিলেন। কিন্তু তা পূর্ববর্তী কিয়াম থেকে সংক্ষিপ্ত ছিল। তারপর রুকূ করিলেন এবং রুকূকেও দীর্ঘ করিলেন, কিন্তু তা পূর্ববর্তী রুকূ থেকে সংক্ষিপ্ত ছিল। এরপর মাথা উঠালেন এবং কিয়ামকে দীর্ঘ করিলেন, কিন্তু তা পূর্ববর্তী কিয়াম থেকে সংক্ষিপ্ত ছিল। তারপর রুকূ করিলেন এবং রুকূকে দীর্ঘ করিলেন আর তা পূর্ববর্তী রুকূ থেকে সংক্ষিপ্ত ছিল। এরপর সিজদা করিলেন। তারপর নামাজ থেকে অবসর হয়ে গেলেন। ইত্যবসরে সূর্য আলোকিত হয়ে গেল। এরপর তিনি মানুষদের লক্ষ্য করে খুতবা দিলেন এবং আল্লাহ্ তাআলার তারীফ ও প্রশংসা করিলেন। তারপর বলিলেন, কারো জন্ম-মৃত্যুর কারণে চন্দ্র-সূর্যের গ্রহণ হয় না। অতএব যখন তোমরা তা দেখবে, তখন নামাজ আদায় করিবে এবং সদকা করিবে ও আল্লাহ্র স্মরণ করিবে। তিনি আরও বলিলেন, হে উম্মাতে মুহাম্মাদী! কেউ আল্লাহ্ তাআলা থেকে বেশী আত্মমর্যাদাশীল নয় যে, তাহাঁর কোন বান্দা অথবা বাঁদী ব্যভিচার করিবে। হে উম্মাতে মুহাম্মাদী! আমি যা জানি তা যদি তোমরা জানতে তাহলে অবশ্যই তোমরা কম হাসতে এবং অধিক কাঁদতে।
সূর্য ও চন্দ্র গ্রহণের নামাজ হাদিসের তাহকিকঃ সহীহ হাদিস
১৫০১. সামুরা [রাঃআঃ] হইতে বর্ণীত
নাবী [সাঃআঃ] খুৎবা দিলেন যখন সূর্য গ্রহণ লেগে গেল। খুৎবাতে তিনি হাম্দ ও ছানার পর বলিলেন ঃأَمَّا بَعْدُ
সূর্য ও চন্দ্র গ্রহণের নামাজ হাদিসের তাহকিকঃ দুর্বল হাদিস
২০.পরিচ্ছেদঃ গ্রহণকালীন সময়ে দোয়ার নির্দেশ
১৫০২. আবু বাকরা [রাঃআঃ] হইতে বর্ণীত
তিনি বলেন, আমরা নাবী [সাঃআঃ]-এর কাছে ছিলাম, ইত্যবসরে সূর্য গ্রহণ লেগে গেল। তখন তিনি তাড়াতাড়ি তাহাঁর চাদর সামলাতে সামলাতে মসজিদের দিকে রওয়ানা হলেন, অন্যান্য মানুষজন তাহাঁর সাথে দাঁড়িয়ে গেল। তারপর তিনি দুরাকাআত নামাজ আদায় করিলেন, যেমন অন্যরা আদায় করে থাকে। যখন সূর্য আলোকিত হয়ে গেল তিনি আমাদের খুৎবা দিলেন এবং বলিলেন, চন্দ্র সূর্য আল্লাহর নিদর্শন সমূহের দুটি নিদর্শন, তাহাদের দ্বারা আল্লাহ তাহাঁর বান্দাদেরকে ভীতি প্রদর্শন করে থাকেন। আর তাহাদের গ্রহণ কারো মৃত্যুর কারণে হয় না। অতএব, তোমরা যখন তাহাদের কারো গ্রহণ দেখবে, তখন তোমাদের ভীতি দূরীভূত না হওয়া পর্যন্ত নামাজ আদায় করিতে থাকিবে এবং দোয়া করিতে থাকিবে।
সূর্য ও চন্দ্র গ্রহণের নামাজ হাদিসের তাহকিকঃ সহীহ হাদিস
২১.পরিচ্ছেদঃ গ্রহণকালীন সময়ে ইস্তিগফারের নির্দেশ
১৫০৩. আবু মূসা [রাঃআঃ] হইতে বর্ণীত
তিনি বলেন, একবার সূর্য গ্রহণ লেগে গেল। তখন রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] ভীতসন্ত্রস্ত হয়ে দাঁড়িয়ে গেলেন এই ভয়ে যে, কি জানি কিয়ামত অনুষ্ঠিত হয়ে যায়। তিনি দাঁড়ালেন এবং মসজিদে এসে গেলেন। তারপর তিনি দাঁড়িয়ে নামাজ আদায় করিতে গেলেন। অতি দীর্ঘ কিয়াম, রুকূ এবং সিজদাসহ আমি তাঁকে কোন নামাজে কখনো অনুরূপ করিতে দেখিনি। তারপর তিনি বলিলেন, এই সমস্ত নিদর্শন যা আল্লাহ পাঠিয়ে থাকেন তা কারো জন্ম-মৃত্যুর কারণে নয়, বরং আল্লাহ্ তাআলা তা এই কারণে পাঠান, তাহাঁর বান্দাদের ভীতি প্রদর্শন করার জন্য। অতএব তোমরা যখন তার কিছু দেখবে তখন যিকির, দোয়া এবং ইস্তিগফারে দ্রুত রত হইবে।
সূর্য ও চন্দ্র গ্রহণের নামাজ হাদিসের তাহকিকঃ সহীহ হাদিস
Leave a Reply