গোসলের ফরজ কয়টি ও কী কী মাসআলা
গোসলের ফরজ কয়টি ও কী কী মাসআলা >> আল হিদায়া ফিকহ এর মুল সুচিপত্র দেখুন
কিতাবঃ আল হিদায়া, পরিচ্ছেদঃ গোসল
গোসলের ফরয হল কুলি করা, নাকে পানি দেওয়া এবং সমস্ত শরীর ধোয়া।
ইমাম শাফিঈ [রঃআঃ] এর মতে গোসলের মধ্যে কুলি করা ও নাকে পানি দেওয়া সুন্নত।কেননা নবী করিম [সাঃআঃ] বলিয়াছেন দশটি বিষয় ফিতরাত অর্থাত্ সুন্নাতের অন্তর্ভূক্ত। এর মধ্যে তিনি কুলি করা ও নাকে পানি দেওয়ার কথা উল্লেখ করিয়াছেনঃ এ কারণেই ওজুতে এ দুটিকে সুন্নত গণ্য করা হয়।
আমাদের দলীল হলো আল্লাহ তাআলার ইরশাদঃ যদি তোমরা জুনুবী হও তাহলে পূর্ণ রুপে তাহারাত হাসিল কর।
এখানে পূর্ণরূপে তাহারাত হাসিল করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।যার মর্ম হল সমস্ত শরীর পবিত্র করা। তবে যেখানে পানি পৌছানো দুষ্কর, সেগুলো [ধোয়ার আওতা থেকে] বহির্ভূত।
ওজুর অবস্থা ভিন্ন। কেননা, ওজুর মধ্যে চেহারা ধোয়া ওয়াজিব। আর আভিধানিক অর্থে চেহারার দ্বারা এতটুকু অংশ বুঝায়, যা মুখোমখিতে প্রকাশ পায়। আর মুখ ও নাকের অভ্যন্তরের মধ্যে মুখামুখির অবস্থা অনুপস্থিত।
[ইমাম শাফিঈ [রঃআঃ] কর্তৃক বর্ণিত হাদীসটির উদ্দেশ্য হচ্ছে ওজু ভংগের অবস্থা এর প্রমাণ হল নবী [সাঃআঃ] এর বাণী।
কুলি করা ও নাকে পানি দেওয়া উভয়টি জানাবাতের গোসলে ফরয এবং ওজুতে সুন্নত।
গোসলের সুন্নত এই যে, গোসলকারী প্রথমে দুই হাত এবং লজ্জাস্থান ধুবে। আর শরীরে নাজাসাত লেগে থাকলে তা পরিষ্কার করিবে, অতঃপর সালাতের ওজুর অনূরূপ ওজু করিবে, তবে পদদ্বয় ধুবে না। এরপর মাথায় ও সারা শরীরে তিনবার পানি প্রবাহিত করিবে। এরপর গোসলের স্থান থেকে সরে গিয়ে দুপা ধুয়ে নেবে।
মায়মূনা রাঃআঃ রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] এর গোসলের অনূরূপ বিবরণই দিয়েছেন। পা ধোয়া সর্বশেষে করার কারণ এই যে, পা দুটো ব্যবহৃত পানি জমা থাকার জায়গায় থাকে। তাই আগে ধোয়াতে কোন লাভ নেই। এমনকি তক্তার উপরে [বা উচু স্থানে] দাড়িয়ে গোসল করলে তখন পা ধোয়া বিলম্বিত করিবে না। প্রথমে হাকীকী নাজাসাত [নাপাক পদার্থ] দূর করে নেয়ার কারণ এই যে, পানি লেগে তা যেন আরো ছড়িয়ে না পড়ে।
স্ত্রী লোকের জন্য গোসলের সময় বেণী খুলে নেওয়া জরুরী নয়, যদি চুলের গোড়ায় পানি পৌছে যায়। কেননা রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] উম্মু সালামা রাঃআঃ কে বলেছেনঃ চুলের গোড়ায় পানি পৌছলেই তোমার জন্য যথেষ্ট হবে।
বেণী ভিজানোও স্ত্রীলোকের জন্য জরুরী নয়, এ-ই বিশুদ্ধ মত। কেননা তা কষ্ট সাধ্য দাড়ির ব্যাপার অবশ্য ভিন্ন। কেননা দাড়ির ভিতরে পানি পৌছানো কষ্টদায়ক নয়।
ইমাম কুদূরী বলেন, গোসল ওয়াজিব হওয়ার কারণসমূহ হলঃ
[১] জাগ্রত বা নিদ্রিত অবস্থায় নারী বা পুরুষের সবেগ ও সকাম বীর্যস্খলন।
ইমাম শাফিঈ [রঃআঃ] এর মতে, যে কোন অবস্থায় বীর্যস্খলনেই গোসল ওয়াজিব হয়।কেননা রাসূল করীম [সাঃআঃ] বলেছেনঃ পানির কারণে পানি আবশ্যক। আমাদের দলীল এই যে, পবিত্রতা অর্জনের নির্দেশ জুনুবীর সাথে সম্পর্কিত। লোকটি জুনুবী হয়েছে তখনই বলা হয়, যখন লোকটি স্ত্রীর সাথে কাম-ইচ্ছা চরিতার্থ করে।
উক্ত হাদীস সকাম বীর্যস্খলনের অর্থেই ব্যবহৃত। তবে ইমাম আবূ হানীফা ও মুহাম্মদ [রঃআঃ] এর মতে মূল স্থান থেকে বীর্যেরস্খলনের কামোত্তেজনা থাকাই যথেষ্ট।
ইমাম আবূ ইউসূফ [রঃআঃ] এর মতে বীর্যের প্রকাশ বা নির্গমন কামোত্তেজনাসহ হওয়া শর্ত। তিনি নির্গমন অবস্থাকে মূল স্থান থেকে স্খলন অবস্থার উপর কিয়াস করেন। কেননা গোসলের সম্পর্ক উভয়ের সাথে।
উক্ত দুই ইমামের যুক্তি এই যে, যখন গোসল ওয়াজিব হওয়ার এক কারণ বিদ্যমান তখন সতর্কতার চাহিদা হল গোসল ওয়াজিব সাব্যস্ত করা।
[২] বীর্যস্খলন ব্যতিরেকে দুই অংগের মিলন। কেননা নবী করিম [সাঃআঃ] বলেছেনঃ
উভয় খাতনা স্থান যখন মিলিত হয়; বীর্যস্খলন ঘটুক কিংবা না ঘটুক।
আর এ জন্য যে, দুই অংগের মিলন হল বীর্যস্খলনের কারণ। আর পুরুষাঙ্গ রয়েছে তার দৃষ্টির অগোচরে। পরিমাণ অল্প হলে স্খলন তার অজ্ঞাতও খাকতে পারে। কাজেই কারণকে স্খলনের স্থলবর্তী ধরে নেওয়া হয়েছে। গুহ্যদ্বারে প্রবেশ করানোরও এই হুকুম। কেননা স্খলনের কারণ এখানেও পূর্ণ মাত্রায় বিদ্যমান। আর যার সাথে একাজ করা হয়, সতর্কতা-স্বরূপ তার উপরও গোসল ওয়াজিব।
পশু সংগম ও যৌনাঙ্গ ছাড়া মৈথুন এর বিষয়টি ভিন্ন। কেননা সেখানে স্খলনের কারণ দুর্বল।
[৩] ঋতুস্রাব [এর সমাপ্তি] কেননা—আল্লাহ তাআলা বলেছেনঃ
যতক্ষণ না তারা উত্তমরূপ পবিত্রতা অর্জন করিবে।
[৪]তদ্রুপ সর্বসম্মত মতে নিফাস ও [প্রসব পরবর্তী রক্তস্রাব]ঃ
আর রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] গোসল সুন্নত করিয়াছেন, জুমুআ, দুই ঈদ, আরাফায় অবস্থান ও ইহরামের জন্য গোসল।
মূল আল হেদায়া কিতাব গ্রন্থকার [ইমাম কুদূরী] স্পষ্ট সুন্নত বলিয়াছেন। কারো কারো মতে এই চার সময়ের গোসল মুসতাহাব। মূল [মাবসূত] গ্রন্থে ইমাম মুহাম্মদ [রঃআঃ] জুমুআর গোসলকে উত্তম বলিয়াছেন। আর ইমাম মালিক বলিয়াছেন ওয়াজিব। কেননা রাসূল করীম [সাঃআঃ] বলেছেনঃ জুমুআয় যে শরীক হয়, সে যেন গোসল করে নেয়।
আমাদের দলীল এই যে, নবী করিম [সাঃআঃ] বলেছেনঃ
জুমুআর দিন যে ওজু করে, তা তার জন্য যথেষ্ট ও ভাল। আর যে গোসল করে তা উত্তম। [সমন্বয় সাধনের উদ্দেশ্য] ইমাম মালেক বর্ণিত হাদিসের নির্দেশকে মুসতাহাব অর্থে নেওয়া হবে; কিংবা রহিত বলে গণ্য।
আর ইমাম আবূ ইউসূফের মতে এই গোসল হল সালাতুল জুমআর জন্য এবং এ-ই বিশুদ্ধ মত। কেননা সময়ের তুলনায় তার ফযীলত অধিক। তাছাড়া সালাতের সাথেই তাহারাতের বিশেষ সম্পর্ক। এ বিষয়ে ইমাম হাসান এর ভিন্নমত রয়েছে।
দুই ঈদ ও জুমুআর মতই। কেননা, উভয় ঈদেই বড় সমাবেশ হয়। সুতরাং দুর্গন্ধজনিত কষ্ট দূর করার জন্য তাতে গোসল মুসতাহাব।
আরাফা ও ইহরামের গোসল সম্পর্কে ইনশাআল্লাহ হজ্জের বিষয় প্রসংগে আলোচনা করবো।
কুদূরী [রঃআঃ] বলেন, মযী, ও অদী বের হলে তাতে গোসল আবশ্যক নয়, তবে ওজু আবশ্যক।
কেননা রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলিয়াছেন- সকল পুরুষেরই মযী নির্গত হয়। আর তাতে ওজু আবশ্যক। আর তা হল পেশাবের পর নির্গত অপেক্ষাকৃত গাঢ় তরল পদার্থ। তাই তা পেশাবের হুকুমের মধ্যেই গণ্য হবে। হচ্ছে সাদা আঠাল পদার্থ, যার স্খলন পুরুষাংগকে নিস্তেজ করে দেয়। হল সাদাটে তরল পদার্থ, যা স্ত্রীর সঙ্গে আদর-আহলাদের সময় নির্গত হয়। এ ব্যাখ্যা আইশা রাঃআঃ হইতে বর্ণিত। – গোসলের ফরজ কয়টি ও কী কী মাসআলা
Leave a Reply