খুমুস – মৃত্যুর পরে মালামাল বণ্টন এবং গনীমত এর প্রাপ্যতা
খুমুস – মৃত্যুর পরে মালামাল বণ্টন এবং গনীমত এর প্রাপ্যতা >> বুখারী শরীফ এর মুল সুচিপত্র পড়ুন
পর্বঃ ৫৭, খুমুস (এক পঞ্চমাংশ), অধ্যায়ঃ (১-২০)=২০টি
৫৭/১. অধ্যায়ঃ খুমুস নির্ধারণ প্রসঙ্গে।
৫৭/২. অধ্যায়ঃ খুমুস আদায় করা দ্বীনের অন্তর্গত।
৫৭/৩ অধ্যায়ঃ নাবী (সাঃআঃ) -এর ওফাতের পর তাহাঁর স্ত্রীগণের ব্যয় নির্বাহ।
৫৭/৪. অধ্যায়ঃ নাবী (সাঃআঃ) -এর স্ত্রীগণের ঘর এবং যে সব ঘর তাঁদের সঙ্গে সম্পর্কিত সে সবের বর্ণনা।
৫৭/৫. অধ্যায়ঃ নাবী (সাঃআঃ) -এর বর্ম, লাঠি, তরবারী, পেয়ালা ও মুহর এবং তাহাঁর পরের খলীফাগণ সে সব দ্রব্য হইতে যা ব্যবহার করিয়াছেন, আর যেগুলোর বণ্টনের কথা অনুল্লেখিত রয়েছে এবং তাহাঁর চুল, পাদুকা ও পাত্র নাবী (সাঃআঃ) -এর ওফাতের পর তাহাঁর সাহাবীগণ ও অন্যরা যাতে শরীক ছিলেন।
৫৭/৬. অধ্যায়ঃ আল্লাহর রাসুল (সাঃআঃ) -এর সময়ে আকস্মিক প্রয়োজনাদি ও মিসকীনদের জন্য গনীমতের এক পঞ্চমাংশ।
৫৭/৭. অধ্যায়ঃ আল্লাহ তাআলার বাণীঃ নিশ্চয় এক পঞ্চমাংশ আল্লাহর ও রাসূলের। (৮:৪১) তা বন্টনের ইখতিয়ার রাসূলেরই।
৫৭/৮. অধ্যায়ঃ নাবী (সাঃআঃ) -এর বাণীঃ তোমাদের জন্য গনীমতের মাল হালাল করা হয়েছে।
৫৭/৯. অধ্যায়ঃ অভিযানে যারা উপস্থিত থেকেছে গনীমত তাদের প্রাপ্য।
৫৭/১০. অধ্যায়ঃ যে ব্যক্তি গনীমত লাভের জন্য জিহাদ করে তার সওয়াব কি কম হইবে?
৫৭/১১. অধ্যায়ঃ ইমামের কাছে যা আসে তা বন্টন করে দেয়া এবং যে ব্যক্তি সেখানে উপস্থিত হয়নি কিংবা যে দূরে আছে তার জন্য রেখে দেয়া।
৫৭/১২. অধ্যায়ঃ নাবী (সাঃআঃ) কিরূপে কুরাইযাহ ও নাযীরের মালামাল বন্টন করিয়াছেন এবং স্বীয় প্রয়োজনে কিভাবে তাত্থেকে ব্যয় করিয়াছেন?
৫৭/১৩. অধ্যায়ঃ আল্লাহর রাসুল (সাঃআঃ) ও ইসলামী নেতৃবৃন্দের সঙ্গী মুজাহিদদের সম্পদে তাদের জীবনে ও মৃত্যুর পরে বরকত সৃষ্টি সম্পর্কে।
৫৭/১৪. অধ্যায়ঃ যখন ইমাম কোন দূতকে কার্যোপলক্ষে প্রেরণ করেন কিংবা তাকে অবস্থান করার নির্দেশ দেন; এমতাবস্থায় তার জন্য অংশ নির্ধারিত হইবে কিনা?
৫৭/১৫. অধ্যায়ঃ যিনি বলেন, এক পঞ্চমাংশ মুসলিমদের প্রয়োজন পূরণের উদ্দেশ্যে।
৫৭/১৬. অধ্যায়ঃ খুমুস পৃথক না করেই বন্দীগনের প্রতি নাবী (সাঃআঃ)–এর অনুগ্রহ।
৫৭/১৭. অধ্যায়ঃ খুমুস ইমামের জন্য, অধিকার রয়েছে আত্মীয়গনের কাউকে বাদ দিয়ে কাউকে প্রদানের।
৫৭/১৮. অধ্যায়ঃ নিহত ব্যক্তি থেকে প্রাপ্ত মালামালের খুমুস বের না করা;
৫৭/১৯. অধ্যায়ঃ নাবী (সাঃআঃ) ইসলামের দিকে যাদের মন আকৃষ্ট করিতে চাইতেন তাদেরকে ও অন্যদেরকে খুমুস বা তদ্রূপ মাল থেকে দান করিতেন।
৫৭/২০. অধ্যায়ঃ দারুল হরবে যে সকল খাদ্যদ্রব্য পাওয়া যায়।
৫৭/১. অধ্যায়ঃ খুমুস নির্ধারণ প্রসঙ্গে।
৩০৯১. আলী (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, বদর যুদ্ধের গনীমতের মালের মধ্য হইতে যে অংশ আমি পেয়েছিলাম, তাতে একটি জওয়ান উটনীও ছিল। আর নাবী (সাঃআঃ) খুমুসের মধ্য হইতে আমাকে একটি জওয়ান উটনী দান করেন। আর আমি যখন আল্লাহর রাসুল (সাঃআঃ) -এর কন্যা ফাতিমা (রাদি.) -এর সঙ্গে বাসর যাপন করব, তখন আমি বানূ কায়নুকা গোত্রের এক স্বর্ণকারের সঙ্গে এ মর্মে চুক্তিবদ্ধ হলাম যে, সে আমার সঙ্গে যাবে এবং আমরা উভয়ে মিলে ইযখির ঘাস সংগ্রহ করে আনব। আমার ইচ্ছা ছিল তা স্বর্ণকারদের নিকট বিক্রয় করে তা দিয়ে আমার বিবাহের ওয়ালীমা সম্পন্ন করব। ইতোমধ্যে আমি যখন আমার জওয়ান উটনী দুটির জন্য আসবাবপত্র যেমন পালান, থলে ও রশি ইত্যাদি একত্রিত করছিলাম, আর আমার উটনী দুটি এক আনসারীর ঘরের পার্শ্বে বসা ছিল। আমি আসবাবপত্র যোগাড় করে এসে দেখি উট দুটির কুঁজ কেটে ফেলা হয়েছে এবং কোমরের দিকে পেট কেটে কলিজা বের করে নেয়া হয়েছে। উটনী দুটির এ হাল দেখে আমি অশ্রু চেপে রাখতে পারলাম না। আমি বললাম, কে এমনটি করেছে? লোকেরা বলিল, হামযা ইবনু আবদুল মুত্তালিব এমনটি করেছে। সে এ ঘরে আছে এবং শরাব পানকারী কতিপয় আনসারীর সঙ্গে আছে। আমি নাবী (সাঃআঃ) -এর নিকট চলে গেলাম। তখন তাহাঁর নিকট যায়দ ইবনু হারিসা (রাদি.) উপস্থিত ছিলেন। রাসুলুল্লাহ (সাঃআঃ) আমার চেহারা দেখে আমার মানসিক অবস্থা উপলব্ধি করিতে পারলেন। তখন নাবী (সাঃআঃ) বলিলেন, তোমার কী হয়েছে? আমি বললাম, হে আল্লাহর রাসুল! আমি আজকের মত দুঃখজনক অবস্থা দেখিনি। হামযা আমার উট দুটির উপর অত্যাচার করেছে। সে দুটির কুঁজ কেটে ফেলেছে এবং পাঁজর ফেড়ে ফেলেছে। আর সে এখন অমুক ঘরে শরাব পানকারী দলের সঙ্গে আছে। তখন নাবী (সাঃআঃ) তাহাঁর চাদরখানি আনতে আদেশ করিলেন এবং চাদরখানি জড়িয়ে পায়ে হেঁটে চললেন। আমি এবং যায়দ ইবনু হারিসা (রাদি.) তাহাঁর অনুসরণ করলাম। হামযা যে ঘরে ছিল সেখানে পৌঁছে আল্লাহর রাসুল (সাঃআঃ) ঘরে প্রবেশের অনুমতি চাইলেন। তারা অনুমতি দিল। তখন তারা শরাব পানে বিভোর ছিল। আল্লাহর রাসুল (সাঃআঃ) হামযাকে তার কাজের জন্য তিরস্কার করিতে লাগলেন। হামযা তখন পূর্ণ নেশাগ্রস্থ। তার চক্ষু দুটি ছিল রক্তলাল। হামযা তখন আল্লাহর রাসুল (সাঃআঃ) -এর প্রতি তাকাল। অতঃপর সে তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে তাকাল এবং তাহাঁর হাঁটু পানে তাকাল। আবার তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে তাহাঁর নাভির দিকে তাকাল। আবার সে তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে তাহাঁর মুখমণ্ডলের দিকে তাকাল। অতঃপর হামযা বলিল, তোমরাই তো আমার পিতার গোলাম। এ অবস্থা দেখে আল্লাহর রাসুল (সাঃআঃ) বুঝতে পারলেন, সে এখন পূর্ণ নেশাগ্রস্থ আছে। তখন আল্লাহর রাসুল (সাঃআঃ) পেছনে হেঁটে সরে আসলেন। আর আমরাও তাহাঁর সঙ্গে বেরিয়ে আসলাম।
৩০৯২. উম্মুল মুমিনীন আয়েশা (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, ফাতিমা বিনতে আল্লাহর রাসুল (সাঃআঃ) আবু বক্র সিদ্দীক (রাদি.) -এর নিকট আল্লাহর রাসুল (সাঃআঃ) -এর ইনতিকালের পর তাহাঁর মিরাস বণ্টনের দাবী করেন। যা আল্লাহর রাসুল (সাঃআঃ) ফায় হিসেবে আল্লাহ তাআলা কর্তৃক তাঁকে প্রদত্ত সম্পদ হইতে রেখে গেছেন।
৩০৯৩. উম্মুল মুমিনীন আয়েশা (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ
অতঃপর আবু বকর (রাদি.) তাঁকে বলিলেন, আল্লাহর রাসুল (সাঃআঃ) বলেছেন, আমাদের পরিত্যক্ত সম্পদ বণ্টিত হইবে না, আমরা যা ছেড়ে যাই, তা সদকা রূপে গণ্য হয়। এতে আল্লাহর রসূলের কন্যা ফাতিমা (রাদি.) অসুন্তুষ্ট হলেন এবং আবু বক্র সিদ্দিক (রাদি.) -এর সঙ্গে কথাবার্তা বলা ছেড়ে দিলেন। এ অবস্থা তাহাঁর মৃত্যু পর্যন্ত বহাল ছিল। আল্লাহর রাসুল (সাঃআঃ) -এর ওফাতের পর ফাতিমা (রাদি.) ছয় মাস জীবিত ছিলেন। আয়েশা (রাদি.) বলেন, ফাতিমা (রাদি.) আবু বক্র সিদ্দিক (রাদি.) -এর নিকটা আল্লাহর রাসুল (সাঃআঃ) কর্তৃক ত্যাজ্য খায়বার ও ফাদাকের ভূমি এবং মদীনার সদকাতে তাহাঁর অংশ দাবী করেছিলেন। আবু বকর (রাদি.) তাঁকে তা প্রদানে অস্বীকৃতি জানান এবং তিনি বলেন, আল্লাহর রাসুল (সাঃআঃ) যা আমল করিতেন, আমি তাই আমল করব। আমি তাহাঁর কোন কিছুই ছেড়ে দিতে পারি না। কেননা আমি আশংকা করি যে, তাহাঁর কোন কথা ছেড়ে দিয়ে আমি পথভ্রষ্ট হয়ে না যাই। অবশ্য আল্লাহর রাসুল (সাঃআঃ) -এর মদীনার সদকাকে উমর (রাদি.) আলী ও আব্বাস (রাদি.) -এর নিকট হস্তান্তর করেন। আর খায়বার ও ফাদাকের ভূমিকে আগের মত রেখে দেন। উমর (রাদি.) এ প্রসঙ্গে বলেন, এ সম্পত্তি দুটিকে রাসুলুল্লাহ (সাঃআঃ) জরুরী প্রয়োজন পূরণ ও বিপদকালীন সময়ে ব্যয়ের জন্য রেখেছিলেন। সুতরাং এ সম্পত্তি দুটি তাহাঁরই দায়িত্বে নিয়োজিত থাকবে, যিনি মুসলিমদের শাসক খলীফা হইবেন। যুহরী (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) বলেন, এ সম্পত্তি দুটির ব্যবস্থাপনা আজ পর্যন্ত ও রকমই আছে।
৩০৯৪. মালিক ইবনু আউস ইবনু হাদাসান (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, একবার আমি আমার পরিবার-পরিজনের সঙ্গে বসা ছিলাম, যখন রোদ প্রখর হল তখন উমর ইবনু খাত্তাব (রাদি.) -এর দূত আমার নিকট এসে বলিল, আমীরুল মুমিনীন আপনাকে ডেকে পাঠিয়েছেন। আমি তার সঙ্গে রওয়ানা হয়ে উমর (রাদি.) -এর নিকট পৌঁছলাম। দেখিতে পেলাম, তিনি একটি চাটাইয়ের উপর উপবিষ্ট ছিলেন। যাতে কোন বিছানা ছিল না। আর তিনি চামড়ার একটি বালিশে হেলান দিয়ে উপবিষ্ট ছিলেন। আমি তাঁকে সালাম করে বসে পড়লাম। তিনি বলিলেন, হে মালিক! তোমার গোত্রের কতিপয় লোক আমার নিকট এসেছেন। আমি তাদের জন্য সামান্য পরিমাণ ত্রাণ সামগ্রী দেয়ার আদেশ দিয়েছি। তুমি তা বুঝে নিয়ে তাদের মধ্যে বণ্টন করে দাও। আমি বললাম, হে আমীরুল মুমিনীন! এ কাজটির জন্য আমাকে ব্যতীত যদি অন্য কাউকে নির্দেশ দিতেন। তিনি বলিলেন, ওহে তুমি তা গ্রহণ কর। আমি তাহাঁর কাছেই বসা ছিলাম। এমন সময় তাহাঁর দারোয়ান ইয়ারফা এসে বলিল, উসমান ইবনু আফ্ফান, আবদুর রাহমান ইবনু আউফ, যুবাইর (ইবনু আওয়াম) ও সাদ ইবনু আবু ওয়াক্কাস (রাদি.) আপনার নিকট প্রবেশের অনুমতি চাচ্ছেন। উমর (রাদি.) বলিলেন, হ্যাঁ, তাঁদের আসতে দাও। তাঁরা এসে সালাম করে বসে পড়লেন। ইয়ারফা ক্ষণিক সময় পরে এসে বলিল, আলী ও আব্বাস (রাদি.) আপনার সাক্ষাতের জন্য অনুমতির অপেক্ষায় আছেন। উমর (রাদি.) বলিলেন, হ্যাঁ, তাঁদেরকে আসতে দাও। অতঃপর তাঁরা উভয়ে প্রবেশ করে সালাম করিলেন এবং বসে পড়লেন। আব্বাস (রাদি.) বলিলেন, হে আমীরুল মুমিনীন! আমার ও এ ব্যক্তির মধ্যে মীমাংসা করে দিন। বানূ নাযীরের সম্পদ হইতে আল্লাহ তাআলা আল্লাহর রাসুল (সাঃআঃ) -কে যা দান করেছিলেন, তা নিয়ে তাঁরা উভয়ে বিরোধ করেছিলেন। উসমান (রাদি.) এবং তাহাঁর সাথীগণ বলিলেন, হ্যাঁ, আমীরুল মুমিনীন! এঁদের মধ্যে মীমাংসা করে দিন এবং তাঁদের একজনকে অপরজন হইতে নিশ্চিত করে দিন। উমর (রাদি.) বলিলেন, একটু থামুন। আমি আপনাদেরকে সে মহান সত্তার শপথ দিয়ে বলছি, যাঁর আদেশে আসমান ও জমিন স্থির রয়েছে। আপনারা কি জানেন যে, রাসুলুল্লাহ (সাঃআঃ) বলেছেন, আমাদের (নাবীগণের) মীরাস বণ্টিত হয় না। আমরা যা রেখে যাই তা সদকারূপে গণ্য হয়? এর দ্বারা আল্লাহর রাসুল (সাঃআঃ) নিজেকেই উদ্দেশ্য করিয়াছেন। উসমান (রাদি.) ও তাহাঁর সাথীগণ বলিলেন, হ্যাঁ, আল্লাহর রাসুল (সাঃআঃ) এমন বলেছেন। অতঃপর উমর (রাদি.) আলী এবং আব্বাস (রাদি.) -এর প্রতি লক্ষ্য করে বলিলেন, আমি আপনাদের আল্লাহর কসম দিয়ে বলছি। আপনারা কি জানেন যে, আল্লাহর রাসুল (সাঃআঃ) এমন বলেছেন? তাঁরা উভয়ে বলিলেন, হ্যাঁ, তিনি এমন বলেছেন। উমর (রাদি.) বলিলেন, এখন এ বিষয়টি সম্পর্কে আপনাদের বুঝিয়ে বলছি। ব্যাপার হলো এই যে, আল্লাহ তাআলা ফায়-এর সম্পদ হইতে স্বীয় রাসুল (সাঃআঃ) -কে বিশেষভাবে দান করিয়াছেন যা তিনি ব্যতীত কাউকেই দান করেননি। অতঃপর উমর (রাদি.) নিম্নোক্ত আয়াত তিলাওয়াত করেনঃ (আরবী) আর আল্লাহ তাআলা তাহাঁর রাসুল (সাঃআঃ) -কে তাদের অর্থাৎ ইয়াহূদীদের নিকট হইতে যে ফায় দিয়েছেন, তজ্জন্য তোমরা ঘোড়া কিংবা উটে আরোহণ করে যুদ্ধ করনি। আল্লাহ তাআলাই তো যাদের উপর ইচ্ছা তাহাঁর রাসুলগণকে কর্তৃত্ব দান করেন। আল্লাহ তাআলা সর্ববিষয়ে সর্বশক্তিমান- (হাশর ৬)। সুতরাং এ সকল সম্পত্তি নির্দিষ্টরূপে আল্লাহর রাসুল (সাঃআঃ) -এর জন্য নির্ধারিত ছিল। কিন্তু আল্লাহর কসম! আল্লাহর রাসুল (সাঃআঃ) এ সকল সম্পত্তি নিজের জন্য নির্দিষ্ট করে রাখেননি এবং আপনাদের বাদ দিয়ে অন্য কাউকে দেননি। বরং আপনাদেরকেও দিয়েছেন এবং আপনাদের কাজেই ব্যয় করিয়াছেন। এ সম্পত্তি হইতে যা উদ্বৃত্ত রয়েছে, তা হইতে রাসুলুল্লাহ (সাঃআঃ) নিজ পরিবার-পরিজনের বাৎসরিক খরচ নির্বাহ করিতেন। অতঃপর যা অবশিষ্ট থাকতো, তা আল্লাহর সম্পদে জমা করে দিতেন। আল্লাহর রাসুল (সাঃআঃ) আজীবন এরূপই করিয়াছেন। আপনাদেরকে আল্লাহর কসম দিচ্ছি, আপনারা কি তা জানেন? তাঁরা বলিলেন, হ্যাঁ, আমরা অবগত আছি। অতঃপর উমর (রাদি.) আলী ও আব্বাস (রাদি.) -কে লক্ষ্য করে বলিলেন, আমি আপনাদের উভয়কে আল্লাহর কসম দিচ্ছি, আপনারা কি এ বিষয়ে অবগত আছেন? অতঃপর উমর (রাদি.) বলিলেন, অতঃপর আল্লাহ তাআলা তাহাঁর নাবী (সাঃআঃ) -কে ওফাত দিলেন তখন আবু বকর (রাদি.) বলিলেন, আমি আল্লাহর রাসুল (সাঃআঃ) -এর পক্ষ হইতে দায়িত্ব প্রাপ্ত একথা বলে তিনি এ সকল সম্পত্তি নিজ দায়িত্বে নিয়ে নেন এবং আল্লাহর রাসুল (সাঃআঃ) এ সবের আয়-উৎপাদন যে সব কাজে ব্যয় করিতেন, সে সকল কাজে ব্যয় করেন। আল্লাহ তাআলা জানেন যে, তিনি এক্ষেত্রে সত্যবাদী, পুণ্যবান, সুপথপ্রাপ্ত ও সত্যাশ্রয়ী ছিলেন। অতঃপর আল্লাহ তাআলা আবু বকর (রাদি.) -কে ওফাত দেন। এখন আমি আবু বকর (রাদি.) -এর পক্ষ হইতে দায়িত্বপ্রাপ্ত। আমি আমার খিলাফতকালের প্রথম দুবছর এ সম্পত্তি আমার দায়িত্বে রেখেছি এবং এর দ্বারা আল্লাহর রাসুল (সাঃআঃ) ও আবু বকর (রাদি.) যা যা করিতেন, তা করেছি। আল্লাহ তাআলাই জানেন যে, আমি এক্ষেত্রে সত্যবাদী, পুণ্যবান, সুপথপ্রাপ্ত ও সত্যাশ্রয়ী রয়েছি। অতঃপর এখন আপনারা উভয়ে আমার নিকট এসেছেন। আর আমার সঙ্গে এ ব্যাপারে আলোচনা করিয়াছেন এবং আপনাদের উভয়ের কথা একই। আর আপনাদের ব্যাপার একই। হে আব্বাস (রাদি.)! আপনি আমার নিকট আপনার ভ্রাতুষ্পুত্রের সম্পত্তির অংশের দাবী নিয়ে এসেছেন আর আলী (রাদি.) -কে উদ্দেশ্য করে বলেছেন যে, ইনি আমার নিকট তাহাঁর স্ত্রী কর্তৃক পিতার সম্পত্তিতে প্রাপ্য অংশ নিতে এসেছেন। আমি আপনাদের উভয়কেই বলছি যে, আল্লাহর রাসুল (সাঃআঃ) বলেছেন, আমরা নাবীগণের সম্পদ বণ্টিত হয় না, আমরা যা ছেড়ে যাই তা সদকারূপে গণ্য হয়। অতঃপর আমি সঙ্গত মনে করেছি যে, এ সম্পত্তিকে আপনাদের দায়িত্বে ছেড়ে দিব। এখন আমি আপনাদের বলছি যে, আপনারা যদি চান, তবে আমি এ সম্পত্তি আপনাদের নিকট সমর্পণ করে দিব। এ শর্তে যে, আপনাদের উপর আল্লাহ তাআলার প্রতিশ্রুতি ও অঙ্গীকার থাকবে, আপনারা এ সম্পত্তির আয় আমদানী সে সকল কাজে ব্যয় করবেন, যে সকল কাজে আল্লাহর রাসুল (সাঃআঃ), আবু বকর (রাদি.) ও আমি আমার খিলাফতকালে এ যাবৎ ব্যয় করে এসেছি। তদুত্তরে আপনারা বলছেন, এ সম্পত্তিকে আমাদের নিকট দিয়ে দিন। আমি উক্ত শর্তের উপর আপনাদের প্রতি সমর্পণ করেছি। আপনাদেরকে (উসমান (রাদি.) ও তাহাঁর সাথীগণকে) উদ্দেশ্য করে আমি আল্লাহর কসম দিচ্ছি যে, বলুন তো আমি কি তাঁদেরকে এ শর্তে এ সম্পত্তি সমর্পণ করেছি? তাঁরা বলিলেন, হ্যাঁ। অতঃপর উমর (রাদি.) আলী ও আব্বাস (রাদি.) -এর প্রতি লক্ষ্য করে বলিলেন, আমি আপনাদের উভয়কে আল্লাহর নামে কসম দিচ্ছি, বলুন তো আমি কি এ শর্তে আপনাদের প্রতি এ সম্পত্তি সমর্পণ করেছি? তাঁরা উভয়ে বলিলেন, হ্যাঁ। অতঃপর উমর (রাদি.) বলিলেন, আপনারা কি আমার নিকট এ ছাড়া অন্য কোন মীমাংসা চান? আল্লাহর কসম! যাঁর আদেশে আকাশ ও পৃথিবী আপন স্থানে প্রতিষ্ঠিত আছে, আমি এ ব্যাপারে এর বিপরীত কোন মীমাংসা করব না। যদি আপনারা এ শর্ত পালনে অক্ষম হন, তবে এ সম্পত্তি আমার দায়িত্বে ছেড়ে দিন। আপনাদের উভয়ের পক্ষ হইতে এ সম্পত্তির দেখাশুনা করার জন্য আমিই যথেষ্ট।
৫৭/২. অধ্যায়ঃ খুমুস আদায় করা দ্বীনের অন্তর্গত।
৩০৯৫. ইবনু আব্বাস (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, আবদুল কায়স গোত্রের প্রতিনিধি দল আল্লাহর রাসুল (সাঃআঃ) -এর নিকট এসে বলিল, হে আল্লাহর রাসুল! আমরা রাবীআ গোত্রের একটি উপদল। আপনার ও আমাদের মাঝে মুযার (কাফির) গোত্রের বসবাস। তাই আমরা আপনার নিকট নিষিদ্ধ মাসসমূহ ব্যতীত অন্য সময় আসতে পারিনা। কাজেই আপনি আমাদের এমন কাজে আদেশ করুন, যার উপর আমরা আমল করব এবং আমাদের পশ্চাতে যারা রয়ে গেছে, তাদেরকেও তা আমল করিতে আহ্বান জানাব। তিনি [রাসুলুল্লাহ (সাঃআঃ)] বলিলেন, আমি তোমাদেরকে চারটি কাজের আদেশ করছি এবং চারটি কাজ হইতে নিষেধ করছি। আল্লাহর রাসুল (সাঃআঃ) হাতের অঙ্গুলিতে তা গণনা করে বলেন, আল্লাহ তাআলার প্রতি ঈমান আন। আর তা হচ্ছে এ সাক্ষ্যদান করা যে, আল্লাহ ব্যতীত অন্য কোন ইলাহ নেই আর সালাত প্রতিষ্ঠা করা, যাকাত দান করা, রমযান মাসে সিয়াম পালন করা এবং আল্লাহর জন্য গনীমত লদ্ধ সম্পদের এক পঞ্চমাংশ আদায় করা [১]। আর আমি তোমাদের শুকনো লাউয়ের খোলে তৈরি পাত্র, খেজুর গাছের মূল দ্বারা তৈরি পাত্র, সবুজ মটকা, আলকাতরার প্রলেপ দেয়া মটকা ব্যবহার করিতে নিষেধ করছি।
[১] যেহেতু এই উপদলটি যুদ্ধমান ছিল তাই খুমুসের বিষয়টি এখানে অতিরিক্ত যোগ করতঃ পাঁচটি কাজের নির্দেশ দেয়া হয়েছে।
৫৭/৩ অধ্যায়ঃ নাবী (সাঃআঃ) -এর ওফাতের পর তাহাঁর স্ত্রীগণের ব্যয় নির্বাহ।
৩০৯৬. আবু হুরাইরা (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ
আল্লাহর রাসুল (সাঃআঃ) বলেছেন, আমার উত্তরাধিকারীগণ একটি দীনারও ভাগ বণ্টন করে নিবে না। আমি যা রেখে যাব, তা হইতে আমার স্ত্রীগণের খরচাদি ও আমার কর্মচারীদের ব্যয় নির্বাহের পর বাকী যা থাকবে, তা সদকারূপে গণ্য হইবে।
৩০৯৭. আয়েশা (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ (সাঃআঃ) -এর ওফাত হল, তখন আমার ঘরে এমন কোন বস্তু ছিল না, যা খেয়ে কোন প্রাণী বাঁচতে পারে। শুধুমাত্র তাকের উপর আধা ওয়াসাক আটা পড়ে ছিল। আমি তা হইতে খেতে থাকলাম এবং বেশ কিছুকাল কেটে গেল। অতঃপর আমি তা মেপে দেখলাম, ফলে তা শেষ হয়ে গেল।
৩০৯৮. আমর ইবনু হারিস (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, নাবী (সাঃআঃ) তাহাঁর যুদ্ধাস্ত্র, সাদা খচ্চর ও কিছু যমীন ছাড়া কিছুই রেখে যাননি এবং তাও তিনি সদকা হিসেবে রেখে গেছেন।
৫৭/৪. অধ্যায়ঃ নাবী (সাঃআঃ) -এর স্ত্রীগণের ঘর এবং যে সব ঘর তাঁদের সঙ্গে সম্পর্কিত সে সবের বর্ণনা।
আল্লাহ তাআলার বাণীঃ তোমরা নিজেদের ঘরে অবস্থান কর- (আহযাব ৩৩)।
(হে মুসলিমগণ) তোমরা নাবী (সাঃআঃ) -এর ঘরে অনুমতি ছাড়া প্রবেশ করিবে না। (আহযাব ৫৩)
৩০৯৯. উবায়দুল্লাহ ইবনু আব্দুল্লাহ ইবনু উতবা ইবনু মাসউদ (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ
নাবী (সাঃআঃ) -এর স্ত্রী আয়েশা (রাদি.) বলেছেন, রাসুলুল্লাহ (সাঃআঃ) -এর রোগ যখন অতি মাত্রায় বেড়ে গেল তখন তিনি আমার ঘরে অবস্থান করে রোগের সেবা শুশ্রুষার ব্যাপারে তাহাঁর অপর স্ত্রীগণের নিকট অনুমতি চান। তাঁকে অনুমতি দেয়া হয়।
৩১০০. আয়েশা (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, আমার ঘরে আমার পালার দিন আমার কণ্ঠ ও বুকের মধ্য বরাবর মাথা রাখা অবস্থায় নাবী (সাঃআঃ) -এর মৃত্যু হয়েছে। আল্লাহ তাআলা তাহাঁর ও আমার মুখের লালাকে একত্রিত করিয়াছেন। তিনি বলেন, আবদুর রাহমান (রাদি.) একটি মিস্ওয়াক নিয়ে প্রবেশ করেন। আল্লাহর রাসুল (সাঃআঃ) তা চিবাতে অক্ষম হন। তখন আমি সে মিসওয়াকটি নিয়ে চিবিয়ে আল্লাহর রাসুল (সাঃআঃ) -এর দাঁত মেজে দেই।
৩১০১. আলী ইবনু হুসাইন (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ
নাবী (সাঃআঃ) -এর স্ত্রী সাফিয়্যা (রাদি.) তাঁকে জানিয়েছেন যে, তিনি আল্লাহর রাসুল (সাঃআঃ) -এর সঙ্গে সাক্ষাৎ করার জন্য আসেন। তখন তিনি রমযানের শেষ দশকে মাসজিদে ইতিকাফ অবস্থায় ছিলেন। অতঃপর যখন তিনি ফিরে যাবার জন্য উঠে দাঁড়ান, তখন আল্লাহর রাসুল (সাঃআঃ) -ও তাহাঁর সঙ্গে উঠে দাঁড়ালেন। যখন তিনি আল্লাহর রাসুল (সাঃআঃ) -এর অপর স্ত্রী উম্মু সালামা (রাদি.) -এর দরজার নিকটবর্তী মাসজিদের দরজার নিকট পৌঁছলেন তখন দুজন আনসার তাঁদের পাশ দিয়ে যাচ্ছিলেন। আল্লাহর রাসুল (সাঃআঃ) তাদের উদ্দেশ্যে বলিলেন, একটু থাম, (এ মহিলা আমার স্ত্রী) তারা বলিল, সুবহানাল্লাহ! হে আল্লাহর রাসুল! আল্লাহর রাসুল (সাঃআঃ) -এর এ রকম বলাটা তাদের নিকট কষ্টদায়ক মনে হল। তখন আল্লাহর রাসুল (সাঃআঃ) বলিলেন, শয়তান মানুষের রক্ত কণিকার মত সর্বত্র বিচরণ করে। আমি আশঙ্কা করেছিলাম, না জানি সে তোমাদের মনে কোন সন্দেহ জাগ্রত করে দেয়।
৩১০২. আবদুল্লাহ ইবনু উমর (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, আমি হাফসাহ (রাদি.) -এর ঘরের উপর আরোহণ করি। তখন আমি নাবী (সাঃআঃ) -কে কিবলাকে পেছন দিকে রেখে সিরিয়া মুখী হয়ে প্রাকৃতিক প্রয়োজন সেরে নিতে দেখলাম।
৩১০৩. আয়েশা (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ (সাঃআঃ) আসরের সালাত তখন আদায় করিতেন, যখন সূর্যের আলো তাহাঁর আঙ্গিণা থেকে বাহির হয়ে যায়নি।
৩১০৪. আবদুল্লাহ ইবনু উমর (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, একবার নাবী (সাঃআঃ) খুতবা দিতে দাঁড়িয়েছিলেন। এ সময় তিনি আয়েশা (রাদি.) -এর ঘরের দিকে ইশারা করে তিনবার বলিলেন, এ দিক থেকেই ফিতনা, যে দিক হইতে সূর্য উদয়ের কালে শয়তান দাঁড়িয়ে থাকে।
৩১০৫. আমরা বিনতু আব্দুর রহমান (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ
নাবী (সাঃআঃ) -এর স্ত্রী আয়েশা (রাদি.) বর্ণনা করেন যে, আল্লাহর রাসুল (সাঃআঃ) একবার তাহাঁর নিকট ছিলেন, তখন আয়েশা (রাদি.) আওয়াজ শুনতে পেলেন যে, এক ব্যক্তি হাফসাহ (রাদি.) -এর ঘরে প্রবেশের অনুমতি চাচ্ছে। আমি বললাম, হে আল্লাহর রাসুল! এ ব্যক্তি আপনার ঘরে প্রবেশের অনুমতি চাচ্ছে। তখন আল্লাহর রাসুল (সাঃআঃ) বলিলেন, আমার মনে হয়, সে অমুক, হাফসা (রাদি.) -এর দুধ চাচা। দুখপান তা-ই হারাম করে, যা জন্মগত সম্পর্ক হারাম করে।
৫৭/৫. অধ্যায়ঃ নাবী (সাঃআঃ) -এর বর্ম, লাঠি, তরবারী, পেয়ালা ও মুহর এবং তাহাঁর পরের খলীফাগণ সে সব দ্রব্য হইতে যা ব্যবহার করিয়াছেন, আর যেগুলোর বণ্টনের কথা অনুল্লেখিত রয়েছে এবং তাহাঁর চুল, পাদুকা ও পাত্র নাবী (সাঃআঃ) -এর ওফাতের পর তাহাঁর সাহাবীগণ ও অন্যরা যাতে শরীক ছিলেন।
৩১০৬.আনাস (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ
যখন আবু বকর (রাদি.) খলীফা হন, তখন তিনি তাঁকে বাহরাইনে প্রেরণ করেন এবং তাহাঁর এ বিষয়ে একটি নিয়োগপত্র লিখে দেন। আর তাতে আল্লাহর রাসুল (সাঃআঃ) -এর মোহর দ্বারা সীলমোহর করে দেন। উক্ত মোহরে তিনটি লাইন খোদিত ছিল। এক লাইনে মুহাম্মদ, এক লাইনে রাসুল ও এক লাইনে আল্লাহ।
৩১০৭. ঈসা ইবনু তাহমান (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, আনাস (রাদি.) দুটি পশমবিহীন পুরনো চপ্পল বের করিলেন, যাতে দুটি ফিতা লাগানো ছিল। সাবিত বুনানী (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) পরে আনাস (রাদি.) হইতে এরূপ বর্ণনা করিয়াছেন যে, এ দুটি নাবী (সাঃআঃ) -এর পাদুকা ছিল।
৩১০৮. আবু বুরদাহ (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, আয়েশা (রাদি.) একটি মোটা তালি বিশিষ্ট কম্বল বের করিলেন আর বলিলেন, এ কম্বল জড়ানো অবস্থায়ই নাবী (সাঃআঃ) -এর ওফাত হয়েছে। আর সুলাইমান (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) হুমাইদ (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) সূত্রে আবু বুরদাহ (রাদি.) হইতে বাড়িয়ে বর্ণনা করিয়াছেন যে, আয়েশা (রাদি.) ইয়ামানে তৈরি একটি মোটা তহবন্দ এবং একটি কম্বল যাকে তোমরা জোড়া লাগানো বলে থাক, আমাদের নিকট বের করিলেন।
৩১০৯. আনাস ইবনু মালিক (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ
নাবী (সাঃআঃ) -এর পেয়ালা ভেঙ্গে যায়। তখন তিনি ভাঙ্গা জায়গায় রূপার পাত দিয়ে জোড়া লাগান। আসিম (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) বলেন, আমি সে পেয়ালাটি দেখেছি এবং তাতে আমি পান করেছি।
৩১১০. আলী ইবনু হুসাইন (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, যখন তাঁরা ইয়াযীদ ইবনু মুআবিয়াহর নিকট হইতে হুসাইন (রাদি.) -এর শাহাদাতের পর মদীনায় আসলেন, তখন তাহাঁর সঙ্গে মিসওয়ার ইবনু মাখরামা (রাদি.) মিলিত হলেন এবং বলিলেন, আপনার কি আমার নিকট কোন প্রয়োজন আছে? থাকলে বলুন। তখন আমি তাঁকে বললাম, না। তখন মিসওয়ার (রাদি.) বলিলেন, আপনি কি আল্লাহর রাসুল (সাঃআঃ) -এর তরবারিটি দিবেন? আমার আশঙ্কা হয়, লোকেরা আপনাকে কাবু করে তা ছিনিয়ে নিবে। আল্লাহর কসম! আপনি যদি আমাকে এটি দেন, তবে আমার জীবন থাকা অবধি কেউ আমার নিকট হইতে তা নিতে পারবে না। একবার আলী ইবনু আবু তালিব (রাদি.) ফাতিমা (রাদি.) থাকা অবস্থায় আবু জাহল কন্যাকে বিবাহ করার প্রস্তাব দেন। আমি তখন আল্লাহর রাসুল (সাঃআঃ) -কে তাহাঁর মিম্বারে দাঁড়িয়ে লোকদের এ খুতবা দিতে শুনিয়াছি, আর তখন আমি সাবালক। আল্লাহর রাসুল (সাঃআঃ) বলিলেন, ফাতিমা আমার হইতেই। আমি আশঙ্কা করছি সে দ্বীনের ব্যাপারে পরীক্ষার সম্মুখীন হয়ে পড়ে। অতঃপর আল্লাহর রাসুল (সাঃআঃ) বানূ আবদে শামস গোত্রের এক জামাতার ব্যাপারে আলোচনা করেন। তিনি তাহাঁর জামাতা সম্পর্কে প্রশংসা করেন এবং বলেন, সে আমার সঙ্গে যা বলেছে, তা সত্য বলেছে, আমার সঙ্গে যে ওয়াদা করেছে, তা পূরণ করেছে। আমি হালালকে হারামকারী নই এবং হারামকে হালালকারী নই। কিন্তু আল্লাহর কসম! আল্লাহর রসূলের মেয়ে এবং আল্লাহর দুশমনের মেয়ে একত্র হইতে পারে না।
৩১১১. ইবনু হানাফিয়্যা (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, আলী (রাদি.) যদি উসমান (রাদি.) -এর সমালোচনা করিতেন, তবে সেদিনই করিতেন, যেদিন তাহাঁর নিকট কিছু লোক এসে উসমান (রাদি.) কর্তৃক নিযুক্ত যাকাত আদায়কারী কর্মীদের বিরুদ্ধে অভিযোগ করছিল। আলী (রাদি.) আমাকে জানিয়েছেন, উসমান (রাদি.) –এর নিকট যাও এবং তাঁকে সংবাদ দাও যে, এটি আল্লাহর রাসুল (সাঃআঃ) -এর ফরমান। কাজেই আপনার কর্মচারীদের কাজ করার নির্দেশ দিন। তারা যেন সে অনুসারে কাজ করে। তা নিয়ে আমি তাহাঁর নিকট গেলাম। তখন তিনি বলিলেন, আমার এটির প্রয়োজন নেই। অতঃপর আমি তা নিয়ে আলী (রাদি.) -এর নিকট ফিরে এসে তাঁকে এ সম্পর্কে জ্ঞাত করি। তখন তিনি বলিলেন, এটি যেখান হইতে নিয়েছে সেখানে রেখে দাও।
৩১১২. ইবনু হনাফিয়্যাহ (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, আমার পিতা আমাকে পাঠিয়ে বলেন, এ ফরমানটি নাও এবং এটি উসমান (রাদি.) -এর নিকট নিয়ে যাও, এতে আল্লাহর রাসুল (সাঃআঃ) সদকা সম্পর্কিত নির্দেশ দিয়েছেন।
৫৭/৬. অধ্যায়ঃ আল্লাহর রাসুল (সাঃআঃ) -এর সময়ে আকস্মিক প্রয়োজনাদি ও মিসকীনদের জন্য গনীমতের এক পঞ্চমাংশ।
যখন ফাতিমা (রাদি.) তাহাঁর নিকট আটা পিষার কষ্টের কথা জ্ঞাপন করতঃ বন্দীদের নিকট হইতে তাহাঁর খেদমতের জন্য দাসী চাইলেন, তখন আল্লাহর রাসুল (সাঃআঃ) আহলে সুফ্ফা ও বিধবাদের অগ্রাধিকার দিয়ে তিনি তাঁকে আল্লাহর উপর সোপর্দ করেন।
৩১১৩. আলী (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ
ফাতিমা (রাদি.) আটা পিষার কষ্টের কথা জানান। তখন তাহাঁর নিকট সংবাদ পৌঁছে যে, আল্লাহর রাসুল (সাঃআঃ) -এর নিকট কয়েকজন বন্দী আনা হয়েছে। ফাতিমা (রাদি.) আল্লাহর রাসুল (সাঃআঃ) -এর নিকট এসে একজন খাদিম চাইলেন। তিনি তাঁকে পেলেন না। তখন তিনি আয়েশা (রাদি.) -এর নিকট তা উল্লেখ করেন। অতঃপর নাবী (সাঃআঃ) এলে আয়েশা (রাদি.) তাহাঁর নিকট বিষয়টি বলিলেন। (রাবী বলেন) আল্লাহর রাসুল (সাঃআঃ) আমাদের নিকট এলেন। তখন আমরা শুয়ে পড়েছিলাম। আমরা উঠতে চাইলাম। তিনি বলিলেন, তোমরা নিজ নিজ জায়গায় থাক। আমি তাহাঁর পায়ের শীতলতা আমার বুকে অনুভব করলাম। তখন তিনি বলিলেন, তোমরা যা চেয়েছ, আমি কি তোমাদের তার চেয়ে উত্তম জিনিসের সন্ধান দিব না? যখন তোমরা বিছানায় যাবে, তখন চৌত্রিশ বার আল্লাহু আকবর তেত্রিশবার আলহামদু লিল্লাহ এবং তেত্রিশবার সুবহানাল্লাহ বলবে, এটাই তোমাদের জন্য তার চেয়ে উত্তম, যা তোমরা চেয়েছ।
৫৭/৭. অধ্যায়ঃ আল্লাহ তাআলার বাণীঃ নিশ্চয় এক পঞ্চমাংশ আল্লাহর ও রাসূলের। (৮:৪১) তা বন্টনের ইখতিয়ার রাসূলেরই।
আল্লাহর রাসুল (সাঃআঃ) বলেছেন, আমি বণ্টনকারী ও সংরক্ষণকারী আর আল্লাহ তাআলাই প্রদান করেন।
৩১১৪. জাবির ইবনু আবদুল্লাহ (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, আমাদের আনসারী এক ব্যক্তির একটি পুত্র জন্মে। সে তার নাম মুহাম্মাদ রাখার ইচ্ছা করিল। মানসূর (রাদি.) সূত্রে বর্ণিত হাদিসে শুবা বলেন, সে আনসারী বলিল, আমি তাকে আমার ঘাড়ে তুলে নিয়ে নাবী (সাঃআঃ) -এর নিকট এলাম। আর সুলাইমান (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) বর্ণিত হাদীসে শুবা বলেন, সে আনসারী বলিল, আমি তাকে আমার ঘাড়ে তুলে নিয়ে নাবী (সাঃআঃ) -এর নিকট এলাম। আর সুলাইমান (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) বর্ণিত হাদীসে রয়েছে যে, তার একটি পুত্র জন্মে। তখন সে তার নাম মুহাম্মাদ রাখার ইচ্ছা করে। আল্লাহর রাসুল (সাঃআঃ) বলেন, তোমরা আমার নামে নাম রাখ। কিন্তু আমার কুনীয়াতের অনুরূপ কুনীয়াত রেখ না। আমাকে বণ্টনকারী করা হয়েছে। আমি তোমাদের মধ্যে বণ্টন করি। আর হুসাইন (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) বলেন, রাসুলুল্লাহ (সাঃআঃ) বলেছেন, আমি বণ্টনকারীরূপে প্রেরিত হয়েছি। আমি তোমাদের মধ্যে বণ্টন করি। আর আমর (রাদি.) জাবির (রাদি.) হইতে বর্ণনা করেন যে, সে ব্যক্তি তার ছেলের নাম কাসিম রাখতে চেয়েছিল, তখন নাবী (সাঃআঃ) বলেন, তোমরা আমার নামে নাম রাখ, আমার কুনীয়াতের ন্যায় কুনীয়াত রেখ না।
৩১১৫. জাবির ইবনু আবদুল্লাহ আল-আনসারী (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, আমাদের মধ্যে এক জনের পুত্র জন্মে। সে তার নাম রাখল কাসিম। তখন আনসারগণ বলিলেন, আমরা তোমাকে আবুল কাসিম কুনীয়াত ব্যবহার করিতে দিব না এবং এর দ্বারা তোমার চক্ষু শীতল করব না। সে ব্যক্তি নাবী (সাঃআঃ) -এর নিকট এসে বলিল, হে আল্লাহর রাসুল! আমার একটি পুত্র জন্মেছে। আমি তার নাম রেখেছি কাসিম। তখন আনসারগণ বলিলেন, আমরা তোমাকে আবুল কাসিম কুনীয়াত ব্যবহার করিতে দিব না এবং এর দ্বারা তোমার চক্ষু শীতল করব না। নাবী (সাঃআঃ) বলিলেন, আনসারগণ ঠিকই করেছে। তোমরা আমার নামে নাম রাখ, কিন্তু কুনীয়াতের মত কুনীয়াত ব্যবহার করো না। কেননা, আমি তো কাসিম (বণ্টনকারী)।
৩১১৬. মুআবিয়া (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, রাসুল (সাঃআঃ) বলেছেন, আল্লাহ তাআলা যার কল্যাণ চান, তাকে দ্বীনের জ্ঞান দান করেন। আল্লাহই দানকারী আর আমি বণ্টনকারী। এ উম্মত সর্বদা তাদের প্রতিপক্ষের উপর বিজয়ী থাকবে, আল্লাহর আদেশ আসা পর্যন্ত আর তারা বিজয়ী থাকবে।
৩১১৭. আবু হুরাইরা (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ
আল্লাহর রাসুল (সাঃআঃ) বলেন, আমি তোমাদের দানও করি না এবং তোমাদের বঞ্চিতও করিনা। আমি তো মাত্র বণ্টনকারী, যেভাবে নির্দেশিত হই, সেভাবে ব্যয় করি।
৩১১৮. খাওলাহ আনসারীয়া (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, আমি নাবী (সাঃআঃ) -কে বলিতে শুনিয়াছি যে, কিছু লোক আল্লাহর দেয়া সম্পদ অন্যায়ভাবে ব্যয় করে, কিয়ামতের দিন তাদের জন্য জাহান্নাম নির্ধারিত।
৫৭/৮. অধ্যায়ঃ নাবী (সাঃআঃ) -এর বাণীঃ তোমাদের জন্য গনীমতের মাল হালাল করা হয়েছে।
আর আল্লাহ তাআলা ইরশাদ করেছেনঃ “আল্লাহ তোমাদেরকে প্রচুর গনীমতের ওয়াদা দিয়েছেন, যা তোমরা লাভ করিতে থাকবে। অতএব, এটা তিনি তোমাদের জন্য প্রথমে ত্বরান্বিত করিয়াছেন”- (সুরা ফাতহ : ২০) [আয়াতের শেষ পর্যন্ত] গনীমত সাধারণ মুসলমানের জন্য ছিল কিন্তু আল্লাহর রাসুল (সাঃআঃ) তা ব্যাখ্যা করে নির্দিষ্ট করে দিয়েছেন।
৩১১৯. উরওয়াহ আল-বারেকী (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ
নাবী (সাঃআঃ) বলেছেন, ঘোড়ার কপালের উপরিভাগের কেশদামে আছে কল্যাণ, সওয়াব ও গনীমত কিয়ামত অবধি।
৩১২০. আবু হুরাইরা (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ
আল্লাহর রাসুল বলেছেন, যখন কিস্রা ধ্বংস হয়ে যাবে, তারপরে আর কোন কিস্রা হইবে না। আর যখন কায়সার ধ্বংস হয়ে যাবে, অতঃপর আর কোন কায়সার হইবে না। যাঁর হাতে আমার প্রাণ তাহাঁর কসম, তোমরা অবশ্যই উভয় সাম্রাজ্যের ধন ভান্ডার আল্লাহর পথে ব্যয় করিবে।
৩১২১. জাবির ইবনু সামূরা (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ (সাঃআঃ) বলেছেন, যখন কিস্রা ধ্বংস হয়ে যাবে অতঃপর আর কোন কিস্রা হইবে না। আর যখন কায়সার ধ্বংস হয়ে যাবে, তারপরে আর কোন কায়সার হইবে না। যাঁর হাতে আমার প্রাণ তাহাঁর কসম, অবশ্যই উভয় সাম্রাজ্যের ধনভাণ্ডার আল্লাহর পথে ব্যয় হইবে।
৩১২২.জাবির ইবনু আবদুল্লাহ (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, আল্লাহর রাসুল (সাঃআঃ) বলেছেন, আমার জন্য গনীমত হালাল করা হয়েছে।
৩১২৩. আবু হুরাইরা (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ
আল্লাহর রাসুল (সাঃআঃ) বলেছেন, যে ব্যক্তি আল্লাহর পথে জিহাদ করে এবং তাহাঁরই বাণীর প্রতি দৃঢ় আস্থায় তাহাঁরই পথে জিহাদের উদ্দেশ্যে বের হয়, আল্লাহ তার দায়িত্ব গ্রহণ করিয়াছেন, হয় তাকে জান্নাতে প্রবেশ করাবেন অথবা সে যে সওয়াব ও গনীমত লাভ করেছে তা সমেত তাকে ঘরে ফিরাবেন, যেখান হইতে সে জিহাদের উদ্দেশ্যে বের হয়েছিল।
৩১২৪. আবু হুরাইরা (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, নাবী (সাঃআঃ) বলেছেন, কোন একজন নাবী জিহাদ করেছিলেন। তিনি তাহাঁর সম্প্রদায়কে বলিলেন, এমন কোন ব্যক্তি আমার অনুসরণ করিবে না, যে কোন মহিলাকে বিবাহ করেছে এবং তার সাথে মিলিত হবার ইচ্ছা রাখে, কিন্তু সে এখনও মিলিত হয়নি। এমন কোন ব্যক্তি ও না যে ঘর তৈরি করেছে কিন্তু তার ছাদ তোলেনি। আর এমন ব্যক্তিও না যে গর্ভবতী ছাগল বা উটনী কিনেছে এবং সে তার প্রসবের অপেক্ষায় আছে। অতঃপর তিনি জিহাদে গেলেন এবং আসরের সলাতের সময় কিংবা এর কাছাকাছি সময়ে একটি জনপদের নিকটে আসলেন। তখন তিনি সূর্যকে বলিলেন, তুমিও আদেশ পালনকারী আর আমিও আদেশ পালনকারী। হে আল্লাহ! সূর্যকে থামিয়ে দিন। তখন তাকে থামিয়ে দেয়া হল। অবশেষে আল্লাহ তাকে বিজয় দান করেন। অতঃপর তিনি গনীমত একত্র করিলেন। তখন সেগুলো জ্বালিয়ে দিতে আগুন এল কিন্তু আগুন তা জ্বালিয়ে দিল না। নাবী (আঃ) তখন বলিলেন, তোমাদের মধ্যে (গনীমতের) আত্মসাৎকারী রয়েছে। প্রত্যেক গোত্র হইতে একজন যেন আমার নিকট বায়আত করে। সে সময় একজনের হাত নাবীর হাতের সঙ্গে আটকে গেল। তখন তিনি বলিলেন, তোমাদের মধ্যেই আত্মসাৎকারী রয়েছে। কাজেই তোমার গোত্রের লোকেরা যেন আমার নিকট বায়আত করে। এ সময় দু ব্যক্তির বা তিন ব্যক্তির হাত তাহাঁর হাতের সঙ্গে আটকে গেল। তখন তিনি বলিলেন, তোমাদের মধ্যেই আত্মসাৎকারী রয়েছে। অবশেষে তারা একটি গাভীর মস্তক পরিমান স্বর্ণ উপস্থিত করিল এবং তা রেখে দিল। অতঃপর আগুন এসে তা জ্বালিয়ে ফেলল। অতঃপর আল্লাহ আমাদের জন্য গনীমত হালাল করে দিলেন এবং আমাদের দুর্বলতা ও অক্ষমতা লক্ষ্য করে আমাদের জন্য তা হালাল করে দিলেন।
৫৭/৯. অধ্যায়ঃ অভিযানে যারা উপস্থিত থেকেছে গনীমত তাদের প্রাপ্য।
৩১২৫. যায়দ ইবনু আসলাম (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) -এর পিতা হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, উমর (রাদি.) বলেছেন, যদি পরবর্তী মুসলিমদের ব্যাপার না হতো, তবে যে জনপদই বিজিত হতো, তাই আমি সেই জনপদবাসীদের মধ্যে বন্টন করে দিতাম, যেমন নাবী (সাঃআঃ) খায়বার এলাকা বন্টন করে দিয়েছিলেন।
৫৭/১০. অধ্যায়ঃ যে ব্যক্তি গনীমত লাভের জন্য জিহাদ করে তার সওয়াব কি কম হইবে?
৩১২৬. আবু মূসা আশআরী (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, এক বেদুঈন নাবী (সাঃআঃ) -এর নিকট প্রশ্ন করিল যে, কেউ যুদ্ধ করে গনীমত লাভের জন্য, কেউ যুদ্ধ করে খ্যাতি অর্জনের উদ্দেশ্যে আর আর যুদ্ধ করে বীরত্ব প্রদর্শনের জন্য, এদের মধ্যে কে আল্লাহর পথে যুদ্ধ করিল? তখন আল্লাহর রাসুল (সাঃআঃ) বলিলেন, যে ব্যক্তি আল্লাহর কালিমা উচ্চ করার উদ্দেশ্যে জিহাদ করে, সেই আল্লাহর রাহে জিহাদকারী।
৫৭/১১. অধ্যায়ঃ ইমামের কাছে যা আসে তা বন্টন করে দেয়া এবং যে ব্যক্তি সেখানে উপস্থিত হয়নি কিংবা যে দূরে আছে তার জন্য রেখে দেয়া।
৩১২৭. আবদুল্লাহ ইবনু আবু মুলাইকা (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ
নাবী (সাঃআঃ) -কে সোনালী কারুকার্য খচিত কিছু রেশমী কাবা জাতীয় পোষাক হাদিয়া দেয়া হল। তিনি তাহাঁর সাহাবীগণের মধ্য হইতে কয়েকজনকে তা বন্টন করে দেন এবং তা হইতে একটি কাবা মাখরামা ইবনু নাওফাল (রাদি.) -এর জন্য আলাদা করে রাখেন। অতঃপর মাখরামা (রাদি.) তাহাঁর পুত্র মিস্ওয়ার ইবনু মাখরামা (রাদি.) -কে সঙ্গে নিয়ে এসে দরজায় দাঁড়ালেন আর বলিলেন, তাঁকে আমার জন্য আহ্বান কর। তখন নাবী (সাঃআঃ) তাহাঁর আওয়াজ শুনতে পেলেন। তিনি একটি কাবা নিয়ে তার সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন। আর এর কারুকার্য খচিত অংশ তার সম্মুখে তুলে ধরে বলিলেন, হে আবুল মিসওয়ার! আমি এটি তোমার জন্য রেখে দিয়েছি। আমি এটি তোমার জন্য রেখে দিয়েছি। আর মাখরামা (রাদি.) -এর স্বভাবে কিছুটা রুঢ়তা ছিল। এ হাদীসটি ইসমাঈল ইবনু উলাইয়া (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) -ও আইউব (রহমাতুল্লাহি আলাইহি)-এর নিকট হইতে বর্ণনা করিয়াছেন। আর হাতিম ইবনু ওয়ারদান (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) বলেন, আইউব (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) ইবনু আবু মুলাইকাহ (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) সূত্রে মিসওয়ার ইবনু মাখরামা (রাদি.)–এর নিকট হইতে বর্ণনা করিয়াছেন। তিনি বলেন যে, রসূলূল্লাহ (সাঃআঃ) -এর নিকট কয়েকটি কাবা জাতীয় পোষাক এসেছিল। লাইস (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) ইবনু আবু মুলাইকাহ (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) নিকট হইতে হাদীস বর্ণনায় আইয়ুব (রহমাতুল্লাহি আলাইহি)-এর অনুসরণ করিয়াছেন।
৫৭/১২. অধ্যায়ঃ নাবী (সাঃআঃ) কিরূপে কুরাইযাহ ও নাযীরের মালামাল বন্টন করিয়াছেন এবং স্বীয় প্রয়োজনে কিভাবে তাত্থেকে ব্যয় করিয়াছেন?
৩১২৮. আনাস ইবনু মালিক (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, কোন ব্যক্তি আল্লাহর রাসুল (সাঃআঃ) -এর জন্য কিছু খেজুর গাছ নির্দিষ্ট করিতেন কুরায়যা ও নাযীরের উপর বিজয় লাভ করা পর্যন্ত। অতঃপর তিনি সে গাছগুলো তাদের ফেরত দিয়ে দেন।
৫৭/১৩. অধ্যায়ঃ আল্লাহর রাসুল (সাঃআঃ) ও ইসলামী নেতৃবৃন্দের সঙ্গী মুজাহিদদের সম্পদে তাদের জীবনে ও মৃত্যুর পরে বরকত সৃষ্টি সম্পর্কে।
৩১২৯. আবদুল্লাহ ইবনু যুবায়র (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, উষ্ট্র যুদ্ধের দিন যুবায়র (রাদি.) যুদ্ধক্ষেত্রে অবস্থান গ্রহণ করে আমাকে ডাকলেন। আমি তাহাঁর পাশে গিয়ে দাঁড়ালাম। তিনি আমাকে বলিলেন, হে বৎস! আজকের দিন যালিম অথবা মাযলূম ব্যতীত কেউ নিহত হইবে না। আমার মনে হয়, আমি আজ মাযলূম হিসেবে নিহত হব। আর আমি আমার ঋণ সম্পর্কে অধিক চিন্তত। তুমি কি মনে কর যে, আমার ঋণ আদায় করার পর আমার সম্পদের কিছু অবশিষ্ট থাকবে? অতঃপর তিনি বলিলেন, হে পুত্র! আমার সম্পদ বিক্রয় করে আমার ঋণ পরিশোধ করে দিও। তিনি এক তৃতীয়াংশের ওসীয়্যত করেন। আর সেই এক তৃতীয়াংশের এক তৃতীয়াংশ ওয়াসিয়াত করেন তাহাঁর (আবদুল্লাহ ইবনু যুবায়রের) পুত্রদের জন্য। তিনি বলিলেন, এক তৃতীয়াংশকে তিন ভাগে বিভক্ত করিবে ঋণ পরিশোধ করার পর যদি আমার সম্পদের কিছু উদ্বৃত্ত থাকে, তবে তার এক তৃতীয়াংশ তোমার পুত্রদের জন্য। হিশাম (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) বলেন, আবদুল্লাহ ইবনু যুবাইর (রাদি.) -এর কোন কোন পুত্র যুবাইর (রাদি.) -এর পুত্রদের সমবয়সী ছিলেন। যেমন, খুবায়ের ও আব্বাদ। আর মৃত্যুকালে তাহাঁর নয় পুত্র ও নয় কন্যা ছিল। আবদুল্লাহ (রাদি.) বলেন, তিনি আমাকে তাহাঁর ঋণ সম্পর্কে ওসীয়্যত করছিলেন এবং বলছিলেন, হে পুত্র! যদি এ সবের কোন বিষয়ে তুমি অক্ষম হও, তবে এ ব্যাপারে আমার মাওলার সাহায্য চাইবে। তিনি বলেন, আল্লাহর কসম! আমি বুঝে উঠতে পারিনি যে, তিনি মাওলা দ্বারা কাকে উদ্দেশ্য করিয়াছেন। অবশেষে আমি জিজ্ঞেস করলাম, হে পিতা! আপনার মাওলা কে? তিনি উত্তর দিলেন, আল্লাহ। আবদুল্লাহ (রাদি.) বলেন, আল্লাহর কসম! আমি যখনই তাহাঁর ঋণ আদায়ে কোন সমস্যার সম্মুখীন হয়েছি, তখনই বলেছি, হে যুবায়রের মাওলা! তাহাঁর পক্ষ হইতে তাহাঁর ঋণ আদায় করে দিন। আর তাহাঁর করয শোধ হয়ে যেতো। অতঃপর যুবায়র (রাদি.) শহীদ হলেন এবং তিনি নগদ কোন দীনার রেখে যাননি আর না কোন দিরহাম। তিনি কিছু জমি রেখে যান যার মধ্যে একটি হল গাবা। আরো রেখে যান মদীনায় এগারোটি বাড়ি, বসরায় দুটি, কূফায় একটি ও মিসরে একটি। আবদুল্লাহ ইবনু যুবায়র (রাদি.) বলেন, যুবায়র (রাদি.) -এর ঋণ থাকার কারন এই ছিল যে, তাহাঁর নিকট কেউ যখন কোন মাল আমানত রাখতে আসত তখন যুবাইর (রাদি.) বলিতেন, না, এভাবে নয়; তুমি তা আমার নিকট ঋণ হিসেবে রেখে যাও। কেননা আমি ভয় করছি যে, তোমার মাল নষ্ট হয়ে যেতে পারে [১]। যুবায়র (রাদি.) কখনও কোন প্রশাসনিক ক্ষমতা বা কর আদায়কারী অথবা অন্য কোন কাজের দায়িত্ব গ্রহণ করেননি। অবশ্য তিনি আল্লাহর রাসুল (সাঃআঃ) -এর সঙ্গী হয়ে অথবা আবু বক্র, উমর ও উসমান (রাদি.) -এর সঙ্গী হয়ে যুদ্ধে অংশগ্রহণ করিয়াছেন। আবদুল্লাহ ইবনু যুবায়র (রাদি.) বলেন, অতঃপর আমি তাহাঁর ঋণের পরিমাণ হিসাব করলাম এবং তাহাঁর ঋণের পরিমাণ বাইশ লাখ পেলাম। রাবী বলেন, সাহাবী হাকীম ইবনু হিযাম (রাদি.) আবদুল্লাহ ইবনু যুবায়র (রাদি.) -এর সঙ্গে সাক্ষাত করে বলেন, হে ভাতিজা। বল তো, আমার ভাইয়ের কত ঋণ আছে? তিনি তা প্রকাশ না করে বলিলেন, এক লাখ। তখন হাকীম ইবনু হিযাম (রাদি.) বলিলেন, আল্লাহর কসম! এ সম্পদ দ্বারা এ পরিমাণ ঋণ শোধ হইতে পারে, আমি এরূপ মনে করি না। তখন আবদুল্লাহ ইবনু যুবায়র (রাদি.) তাঁকে বলিলেন, যদি ঋণের পরিমাণ বাইশ লাখ হয়, তবে কী ধারণা করেন? হাকীম ইবনু হিযাম (রাদি.) বলিলেন, আমি মনে করি না যে, তোমরা এর সামর্থ্য রাখ। যদি তোমরা এ বিষয়ে অক্ষম হও, তবে আমার সহযোগীতা গ্রহণ করিবে। আবদুল্লাহ ইবনু যুবায়র (রাদি.) বলেন, যুবায়র (রাদি.) গাবাস্থিত ভূমিটি এক লাখ সত্তর হাজারে কিনেছিলেন। আবদুল্লাহ ইবনু যুবায়র (রাদি.) তা ষোল লাখের বিনিময়ে বিক্রয় করেন। আর দাঁড়িয়ে ঘোষণা করেন, যুবায়র (রাদি.) -এর নিকট কারা পাওনাদার রয়েছে, তারা আমার সঙ্গে গাবায় এসে মিলিত হইবে। তখন আবদুল্লাহ ইবনু জাফর (রাদি.) তাহাঁর নিকট এলেন। যুবায়র (রাদি.) -এর নিকট তার চার লাখ পাওনা ছিল। তিনি আবদুল্লাহ ইবনু যুবায়র (রাদি.) -কে বলিলেন, তোমরা চাইলে আমি তা তোমাদের জন্য ছেড়ে দিব। আবদুল্লাহ ইবনু যুবায়র (রাদি.) বলিলেন, না। আবদুল্লাহ ইবনু জাফর (রাদি.) বলিলেন, যদি তোমরা তা পরে দিতে চাও, তবে তা পরে পরিশোধের অন্তর্ভূক্ত করিতে পার। আবদুল্লাহ ইবনু যুবায়র (রাদি.) বলিলেন, না। তখন আবদুল্লাহ ইবনু জাফর (রাদি.) বলিলেন, তবে আমাকে এক টুকরা জমি দাও। আবদুল্লাহ ইবনু যুবায়র (রাদি.) বলিলেন, এখান হইতে ওখান পর্যন্ত জমি আপনার। রাবী বলেন, অতঃপর আবদুল্লাহ ইবনু যুবায়র (রাদি.) গাবার জমি হইতে বিক্রয় করে সম্পূর্ণ ঋণ পরিশোধ করেন। তখনও তাহাঁর নিকট গাবার ভূমির সাড়ে চার অংশ অবশিষ্ট থেকে যায়। অতঃপর তিনি মুআবিয়া (রাদি.) -এর নিকট এলেন। সে সময় তাহাঁর নিকট আমর ইবনু উসমান, মুনযির ইবনু যবায়র ও আবদুল্লাহ ইবনু যামআ (রাদি.) উপস্থিত ছিলেন। মুআবিয়া (রাদি.) তাঁকে বলিলেন, গাবার মূল্য কত নির্ধারিত হয়েছে? তিনি বলিলেন, প্রত্যেক অংশ এক লাখ হারে। তিনি জিজ্ঞেস করিলেন, কত বাকী আছে? আবদুল্লাহ (রাদি.) বলিলেন, সাড়ে চার অংশ। তখন মুনযির ইবনু যুবায়র (রাদি.) বলিলেন, আমি একাংশ এক লাখে নিলাম। আমর ইবনু উসমার (রাদি.) বলেন, আমি একাংশ এক লাখে নিলাম। আর আব্দুল্লাহ ইবনু যামআহ (রাদি.) বলিলেন, আমি একাংশ এক লাখে নিলাম। তখন মুআবিয়া (রাদি.) বলিলেন, আর কী পরিমাণ বাকী আছে? আবদুল্লাহ ইবনু যুবাইর (রাদি.) বলিলেন, দেড় অংশ অবশিষ্ট রয়েছে। মুআবিয়া (রাদি.) বলিলেন, আমি তা দেড় লাখে নিলাম। রাবী বলেন, আবদুল্লাহ ইবনু জাফর (রাদি.) তাহাঁর অংশ মুআবিয়া (রাদি.) -এর নিকট ছয় লাখে বিক্রয় করেন। অতঃপর যখন ইবনু যুবাইর (রাদি.) তাহাঁর পিতার ঋণ পরিশোধ করে সারলেন, তখন যুবাইর (রাদি.)–এর পুত্ররা বলিলেন, আমাদের মীরাস ভাগ করে দিন। তখন আবদুল্লাহ ইবনু যুবাইর (রাদি.) বলিলেন, না, আল্লাহর কসম! আমি তোমাদের মাঝে ভাগ করব না, যতক্ষণ আমি চারটি হাজ্জ মৌসুমে এ ঘোষণা প্রচার না করি যে, যদি কেউ যুবাইর (রাদি.) -এর নিকট ঋণ পাওনা থাকে, সে যেন আমাদের নিকট আসে, আমরা তা পরিশোধ করব। রাবী বলেন, তিনি প্রতি হজ্জের মৌসুমে ঘোষণা প্রচার করেন। অতঃপর যখন চার বছর অতিবাহিত হল, তখন তিনি তা তাদের মধ্যে ভাগ করে দিলেন। রাবী বলেন, যুবাইর (রাদি.) -এর চার স্ত্রী ছিলেন। এক তৃতীয়াংশ পৃথক করে রাখা হলো। প্রত্যেক স্ত্রী বার লাখ করে পেলেন। আর যুবাইর (রাদি.) -এর মোট সম্পত্তি পাঁচ কোটি দুলাখ ছিলো।
[১] কেননা ঋণ খোয়া গেলে ক্ষতিপূরণ পাবে, আর আমানত হলে খোয়া গেলে তুমি ক্ষতিপূরণ পাবে না।
৫৭/১৪. অধ্যায়ঃ যখন ইমাম কোন দূতকে কার্যোপলক্ষে প্রেরণ করেন কিংবা তাকে অবস্থান করার নির্দেশ দেন; এমতাবস্থায় তার জন্য অংশ নির্ধারিত হইবে কিনা?
৩১৩০. ইবনু উমর (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, উসমান (রাদি.) বদর যুদ্ধে অনুপস্থিত ছিলেন। কেননা, আল্লাহর রাসুল (সাঃআঃ) -এর কন্যা ছিলেন তাহাঁর স্ত্রী আর তিনি ছিলেন পীড়িত। তখন নাবী (সাঃআঃ) তাঁকে বলিলেন, বদর যুদ্ধে যোগদানকারীর সমপরিমাণ সওয়াব ও (গনীমতের) অংশ তুমি পাবে।
৫৭/১৫. অধ্যায়ঃ যিনি বলেন, এক পঞ্চমাংশ মুসলিমদের প্রয়োজন পূরণের উদ্দেশ্যে।
এর প্রমাণঃ হাওয়াযিন, তাদের গোত্রে নাবী (সাঃআঃ) -এর দুধ পানের সৌজন্যে তারা যে আবেদন করছিল, তারই কারনে মুসলিমদের নিকট থেকে তাদের সে দাবী আদায় করিয়ে নেন। নাবী (সাঃআঃ) লোকদেরকে ফায় ও গনীমত-এর অংশ নিকট হইতে খুমুস দানের যে প্রতিশ্রুতি দান করিতেন। আর যা তিনি আনসারদের প্রদান করিয়াছেন এবং যা তিনি খায়বারের খেজুর হইতে জাবির ইবনু আবদুল্লাহ (রাদি.) -কে দান করিয়াছেন।
৩১৩১. উরওয়া (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, তাঁকে মারওয়ান ইবনু হাকাম ও মিসওয়ার ইবনু মাখরামা (রাদি.) রিওয়ায়াত করিয়াছেন যে, যখন হাওয়াযিন গোত্রের প্রতিনিধি দল মুসলিম হয়ে আল্লাহর রাসুল (সাঃআঃ) -এর নিকট এসে বলিল যে, তাদের মালামাল ও বন্দী উভয়ই ফেরত দেয়া হোক। তখন আল্লাহর রাসুল (সাঃআঃ) তাদের বলিলেন, আমার নিকট সত্য কথা অধিকতর প্রিয়। তোমরা দুয়ের মধ্যে যে কোন একটি গ্রহণ কর। বন্দী, নয় মালামাল। আর আমি তো তাদের (হাওয়াযিন গোত্রের) প্রতীক্ষা করেছিলাম আর তায়েফ হইতে ফেরার সময় আল্লাহর রাসুল (সাঃআঃ) দশ দিন থেকে অধিক সময় তাদের জন্য অপেক্ষা করছিলেন। অবশেষে যখন তাদের নিকট স্পষ্ট হলো যে, আল্লাহর রাসুল (সাঃআঃ) তাদের দুটোর মধ্যে যে কোন একটিই ফেরত দিবেন, তখন তারা বলিল, আমরা আমাদের বন্দীদের ফেরত লাভই পছন্দ করি। অতঃপর রাসুল (সাঃআঃ) মুসলিমদের সামনে দাড়াঁলেন। প্রথমে তিনি আল্লাহ তাআলার যথোপযুক্ত প্রশংসা করিলেন। অতঃপর বলিলেন, তোমাদের এ সব ভাই তাওবা করে আমার নিকট এসেছে। আর আমি উচিত মনে করছি যে, তাদের বন্দীদের ফেরত দিব। যে ব্যক্তি সন্তুষ্টচিত্তে তা করিতে চায়, সে যেন তা করে আর তোমাদের মধ্যে যে ব্যক্তি চায় যে, তার অংশ বহাল থাকুক, সে যেন অপেক্ষা করে (কিংবা) আল্লাহ তাআলা আমাদেরকে প্রথম যে গনীমতের মাল দান করিয়াছেন, আমি তাকে তা হইতে তা দিয়ে দিব, তাও করিতে পারে। উপস্থিত লোকেরা বলিল, হে আল্লাহর রাসুল! আমরা সন্তুষ্টচিত্তে তা গ্রহণ করলাম। আল্লাহর রাসুল (সাঃআঃ) বলিলেন, আমি সঠিক জানতে পারিনি, তোমাদের মধ্যে কে এতে সম্মতি দিয়েছে, আর কে দেয়নি। কাজেই, তোমরা ফিরে যাও এবং নিজ নিজ প্রতিনিধির মাধ্যমে আমাকে তোমাদের সিদ্ধান্ত জানাও। লোকরা চলে গেল। আর তাদের প্রতিনিধিরা নিজেদের লোকের সঙ্গে আলোচনা করে আল্লাহর রাসুল (সাঃআঃ) -এর নিকট ফেরত এল এবং তাঁকে জানাল যে, তারা সন্তুষ্টচিত্তে সম্মতি দিয়েছে। হাওয়াযিনের বন্দীগন সম্পর্কিত বিবরণ আমাদের নিকট এ রকমই পৌঁছেছে।
(২৩০৭, ২৩০৮) (আ.প্র. ২৮৯৭, ই.ফা. ২৯০৮)
৩১৩২. উরওয়া (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, তাঁকে মারওয়ান ইবনু হাকাম ও মিসওয়ার ইবনু মাখরামা (রাদি.) রিওয়ায়াত করিয়াছেন যে, যখন হাওয়াযিন গোত্রের প্রতিনিধি দল মুসলিম হয়ে আল্লাহর রাসুল (সাঃআঃ) -এর নিকট এসে বলিল যে, তাদের মালামাল ও বন্দী উভয়ই ফেরত দেয়া হোক। তখন আল্লাহর রাসুল (সাঃআঃ) তাদের বলিলেন, আমার নিকট সত্য কথা অধিকতর প্রিয়। তোমরা দুয়ের মধ্যে যে কোন একটি গ্রহণ কর। বন্দী, নয় মালামাল। আর আমি তো তাদের (হাওয়াযিন গোত্রের) প্রতীক্ষা করেছিলাম আর তায়েফ হইতে ফেরার সময় আল্লাহর রাসুল (সাঃআঃ) দশ দিন থেকে অধিক সময় তাদের জন্য অপেক্ষা করছিলেন। অবশেষে যখন তাদের নিকট স্পষ্ট হলো যে, আল্লাহর রাসুল (সাঃআঃ) তাদের দুটোর মধ্যে যে কোন একটিই ফেরত দিবেন, তখন তারা বলিল, আমরা আমাদের বন্দীদের ফেরত লাভই পছন্দ করি। অতঃপর রাসুল (সাঃআঃ) মুসলিমদের সামনে দাড়াঁলেন। প্রথমে তিনি আল্লাহ তাআলার যথোপযুক্ত প্রশংসা করিলেন। অতঃপর বলিলেন, তোমাদের এ সব ভাই তাওবা করে আমার নিকট এসেছে। আর আমি উচিত মনে করছি যে, তাদের বন্দীদের ফেরত দিব। যে ব্যক্তি সন্তুষ্টচিত্তে তা করিতে চায়, সে যেন তা করে আর তোমাদের মধ্যে যে ব্যক্তি চায় যে, তার অংশ বহাল থাকুক, সে যেন অপেক্ষা করে (কিংবা) আল্লাহ তাআলা আমাদেরকে প্রথম যে গনীমতের মাল দান করিয়াছেন, আমি তাকে তা হইতে তা দিয়ে দিব, তাও করিতে পারে। উপস্থিত লোকেরা বলিল, হে আল্লাহর রাসুল! আমরা সন্তুষ্টচিত্তে তা গ্রহণ করলাম। আল্লাহর রাসুল (সাঃআঃ) বলিলেন, আমি সঠিক জানতে পারিনি, তোমাদের মধ্যে কে এতে সম্মতি দিয়েছে, আর কে দেয়নি। কাজেই, তোমরা ফিরে যাও এবং নিজ নিজ প্রতিনিধির মাধ্যমে আমাকে তোমাদের সিদ্ধান্ত জানাও। লোকরা চলে গেল। আর তাদের প্রতিনিধিরা নিজেদের লোকের সঙ্গে আলোচনা করে আল্লাহর রাসুল (সাঃআঃ) -এর নিকট ফেরত এল এবং তাঁকে জানাল যে, তারা সন্তুষ্টচিত্তে সম্মতি দিয়েছে। হাওয়াযিনের বন্দীগন সম্পর্কিত বিবরণ আমাদের নিকট এ রকমই পৌঁছেছে।
(২৩০৭, ২৩০৮) (আ.প্র. ২৮৯৭, ই.ফা. ২৯০৮)
৩১৩৩. যাহদাম (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, আমরা আবু মূসা (রাদি.) -এর নিকট ছিলাম, এসময় মুরগীর (গোশত) সম্বন্ধে আলোচনা উঠল। তথায় তাইমুল্লাহ গোত্রের এমন লাল বর্ণের এক ব্যক্তিও উপস্থিত ছিল, যেন সে মাওয়ালী (রোমক ক্রীতদাস) -দের একজন। তাকে খাওয়ার জন্য ডাকলেন। তখন সে বলিল, আমি মুরগীকে এমন বস্তু খেতে দেখেছি, যাতে আমার ঘৃণা জন্মেছে। তাই আমি শপথ করেছি যে, তা খাব না। আবু মূসা (রাদি.) বলিলেন, আস, আমি তোমাকে এ সম্পর্কে হাদীস শুনাচ্ছি। আমি কয়েকজন আশআরী ব্যক্তির পক্ষে আল্লাহর রাসুল (সাঃআঃ) -এর নিকট সাওয়ারী চাইতে যাই। তখন আল্লাহর রাসুল (সাঃআঃ) বলিলেন, আল্লাহর কসম! আমি তোমাদের সাওয়ারী দিব না এবং আমার নিকট তোমাদের দেয়ার মত কোন সাওয়ারীও নেই। এ সময় আল্লাহর রাসুল (সাঃআঃ) -এর নিকট গনীমতের কয়েকটি উট আনা হলো। তখন তিনি আমাদের খোঁজ নিলেন এবং বলিলেন, সেই আশআরী লোকেরা কোথায়? অতঃপর আল্লাহর রাসুল (সাঃআঃ) উঁচু সাদা চুলওয়ালা পাঁচটি উট আমাদের দিতে বলিলেন। যখন আমরা উট নিয়ে রওয়ানা দিলাম, বললাম, আমরা কী করলাম? আমাদের কল্যাণ হইবে না। আমরা আল্লাহর রাসুল (সাঃআঃ) -এর নিকট ফিরে এলাম এবং বললাম, আমরা আপনার নিকট সাওয়ারীর জন্য আবেদন করেছিলাম, তখন আপনি শপথ করে বলেছিলেন, আমাদের সাওয়ারী দিবেন না। আপনি কি তা ভুলে গিয়েছেন? আল্লাহর রাসুল (সাঃআঃ) বলিলেন, আমি তোমাদের সাওয়ারী দেইনি বরং আল্লাহ তাআলা তোমাদের সাওয়ারী দান করিয়াছেন। আর আল্লাহর কসম, আমার অবস্থা এই যে, ইন্শাআল্লাহ কোন বিষয়ে আমি কসম করি এবং তার বিপরীতটি কল্যাণকর মনে করি, তখন সেই কল্যানকর কাজটি আমি করি এবং কাফ্ফারা দিয়ে শপথ হইতে মুক্ত হই।
(৪৩৮৫, ৪৪১৫, ৫৫১৭, ৫৫১৮, ৬৬২৩, ৬৬৪৯, ৬৬৭৮, ৬৬৮০, ৬৭১৮, ৬৭১৯, ৬৭২১, ৭৫৫৫) (মুসলিম ২৬/৩ হাদীস ১৬৩৯, আহমাদ ১৯৫৭৫) (আ.প্র. ২৮৯৮, ই.ফা. ২৯০৯)
৩১৩৪. আবদুল্লাহ ইবনু উমর (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ
আল্লাহর রাসুল (সাঃআঃ) নাজদের দিকে একটি সেনাদল পাঠালেন, যাদের মধ্যে আবদুল্লাহ ইবনু উমর (রাদি.) -ও ছিলেন। এ যুদ্ধে গনীমত হিসেবে তাঁরা বহু উট লাভ করেন। তাঁদের প্রত্যেকের ভাগে এগারোটি কিংবা বারটি করে উট পড়েছিল এবং তাঁদেরকে পুরস্কার হিসেবে আরো একটি করে উট দেয়া হয়। (৪৩৩৮)
(মুসলিম ৩১/১২ হাদীস ১৭৪৯, আহমাদ ৪৫৭৯) (আ.প্র. ২৮৯৯, ই.ফা. ২৯১০)
৩১৩৫.আবদুল্লাহ ইবনু উমর (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ
আল্লাহর রাসুল (সাঃআঃ) প্রেরিত কোন কোন সেনা দলে কোন কোন ব্যক্তিকে সাধারণ সৈন্যদের প্রাপ্য অংশের চেয়ে অতিরিক্ত দান করিতেন।
(মুসলিম ৩২/১২ হাদীস ১৭৫০) (আ.প্র. ২৯০০, ই.ফা. ২৯১১)
৩১৩৬. আবু মূসা (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, আমরা ইয়ামানে থাকতেই আমাদের নিকট আল্লাহর রাসুল (সাঃআঃ) -এর হিজরত করার খবর পৌঁছে। তখন আমরাও তাহাঁর নিকট হিজরত করার উদ্দেশ্যে বেরিয়ে পড়লাম। আমি এবং আমার আরো দুভাই এর মধ্যে ছিলাম। আমি ছিলাম সবচেয়ে ছোট। তাদের একজন হলেন আবু বুরদাহ, অন্যজন আবু রুহ্ম। রাবী হয়ত বলেছেন, আমার গোত্রের আরো কতিপয় লোকের মধ্যে; কিংবা বলেছেন, আমার গোত্রের তিপ্পান্ন বা বায়ান্ন জন লোকের মধ্যে। অতঃপর আমরা একটি নৌযানে উঠলাম। ঘটনাক্রমে আমাদেরকে নৌযানটি হাবশার নাজ্জাশী বাদশাহ্র দিকে নিয়ে যায়। সেখানে আমরা জাফর ইবনু আবু তালিব (রাদি.) ও তাহাঁর সঙ্গীদের সঙ্গে মিলিত হই। জাফর (রাদি.) বলিলেন, আল্লাহর রাসুল (সাঃআঃ) আমাদের এখানে পঠিয়েছেন এবং এখানে অবস্থান করার নির্দেশ দিয়েছেন। তাই আপনারাও আমাদের সঙ্গে এখানে থাকুন। তখন আমরা তাহাঁর সঙ্গে থেকে গেলাম। অবশেষে আমরা সকলে একত্রে আল্লাহর রাসুল (সাঃআঃ) -এর নিকট এলাম। এমন সময় আমরা আল্লাহর রাসুল (সাঃআঃ) -এর নিকট পৌঁছলাম, যখন তিনি খায়বার বিজয় করিয়াছেন। আল্লাহর রাসুল (সাঃআঃ) আমাদের জন্য অংশ নির্ধারণ করিলেন। (বর্ণণাকারী বলেন), কিংবা তিনি বলিলেন, আল্লাহর রাসুল (সাঃআঃ) আমাদেরও তা হইতে দিয়েছেন। আমাদের ছাড়া খায়বার বিজয়ে অনুপস্থিত কাউকেই তা হইতে অংশ দেননি, জাফর (রাদি.) ও তাহাঁর সঙ্গীগণের সঙ্গে আমাদের এ নৌযাত্রীদের মধ্যে বন্টন করিয়াছেন।
(৩৮৭৬, ৪২৩০, ৪২৩৩) (আ.প্র. ২৯০১, ই.ফা. ২৯১২)
৩১৩৭. জাবির ইবনু আবদুল্লাহ (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, নাবী (সাঃআঃ) বলেছেন, যদি আমার নিকট বাহ্রাইনের মাল আসে, তবে আমি তোমাকে (দুইহাত মিলিয়ে) এ পরিমাণ ও এ পরিমাণ দান করব। নাবী (সাঃআঃ) -এর মৃত্যু অবধি তা এলো না। অতঃপর যখন বাহরাইনের মাল এল, তখন আবু বক্র (রাদি.) ঘোষণাকারীকে এ ঘোষণা দেয়ার আদেশ করিলেন যে, আল্লাহর রাসুল (সাঃআঃ) -এর নিকট যার কোন ঋণ বা ওয়াদা আছে, সে যেন আমার নিকট আসে। অতঃপর আমি তাহাঁর নিকট গিয়ে বললাম, আল্লাহর রাসুল (সাঃআঃ) আমাকে এত এত ও এত দেয়ার কথা বলেছেন। তখন আবু বক্র (রাদি.) তিনবার আঁজলা ভরে দান করেন। সুফ্ইয়ান (রাদি.) তাহাঁর দুই হাত একত্র করে আঁজলা করে আমাদের বলিলেন, ইবনু মুনকাদির এরূপই বলেছেন। জাবির (রাদি.) বলেন, অতঃপর আমি (জাবির) আবু বকর (রাদি.) –এর নিকট এলাম এবং তাহাঁর নিকট চাইলাম। তিনি আমাকে দিলেন না। আবার আমি তাহাঁর নিকট এলাম। তখনও তিনি আমাকে দিলেন না। আবার আমি তাহাঁর নিকট তৃতীয়বার এসে বললাম, আমি আপনার নিকট চেয়েছি, আপনি আমাকে দেননি। আবার আমি আপনার নিকট চেয়েছি, আপনি আমাকে দেননি। এখন আমাকে আপনি দেবেন, না হয় আমার সঙ্গে কৃপণতা করবেন না। আবু বকর (রাদি.) বলিলেন, তুমি আমাকে বলছ, কৃপণতা করবেন? আমি যতবারই তোমাকে দিতে অস্বীকার করি না কেন, আমার ইচ্ছা ছিল যে, আমি তোমাকে দেই।
সুফইয়ান (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) বলেন, আমর (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) মুহাম্মাদ ইবনু আলী (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) সূত্রে জাবির (রাদি.) হইতে বর্ননা করিয়াছেন, (তিনি বলেন) আবু বকর (রাদি.) আমাকে এক আঁজলা দিয়ে বলিলেন, এটা গুণে নাও। আমি গণনা করে দেখলাম, পাঁচ শত। তখন তিনি বলিলেন, এ রকম আরও দুবার নিয়ে নাও। আর ইবনুল মুনকাদিরের বর্ণনায় আছে যে, [আবু বকর (রাদি.) বলেছেন], কৃপণতার চেয়ে বড় রোগ কি হইতে পারে?
(২২৯৬) (আ.প্র. ২৯০২, ই.ফা. ২৯১৩)
৩১৩৮. জাবির ইবনু আবদুল্লাহ (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, একবার আলাহর রাসুল (সাঃআঃ) জিয়রানা নামক জায়গায় গনীমতের মাল বন্টন করছিলেন, তখন এক ব্যক্তি বলিল, ইনসাফ করুন। তখন আল্লাহর রাসুল (সাঃআঃ) বলিলেন, আমি যদি ইনসাফ না করি, তবে তুমি হইবে হতভাগা।
(মুসলিম ১২/৪৭ হাদীস ১০৬৩, আহমাদ ১৪৮১) (আ.প্র. ২৯০৩, ই.ফা. ২৯১৪)।
৫৭/১৬. অধ্যায়ঃ খুমুস পৃথক না করেই বন্দীগনের প্রতি নাবী (সাঃআঃ)–এর অনুগ্রহ।
৩১৩৯. জুবাইর ইবনু মুতয়িম (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ
নাবী (সাঃআঃ) বদরের যুদ্ধে বন্দীদের ব্যাপারে বলেন, যদি মুতয়িম ইবনু আদী (রাদি.) জীবিত থাকতেন আর আমার নিকট এ সকল নোংরা লোকের জন্যে সুপারিশ করিতেন, তবে আমি তাহাঁর সন্মানার্থে এদের মুক্ত করে দিতাম।
৫৭/১৭. অধ্যায়ঃ খুমুস ইমামের জন্য, অধিকার রয়েছে আত্মীয়গনের কাউকে বাদ দিয়ে কাউকে প্রদানের।
এর দলিল এই যে, নাবী (সাঃআঃ) খায়বারের খুমুস হইতে বানূ হাশিম ও বানূ মুত্তালিবকেই দিয়েছেন।
উমর ইবনু আবদুল আযীয (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) বলেছেন, আল্লাহর রাসুল (সাঃআঃ) সাধারনভাবে সকল কুরাইশকে দেননি এবং যে ব্যক্তি অধিকতর অভাবগ্রস্ত তার উপর কোন আত্মীয়কে অগ্রাধিকার দেননি। যদিও তিনি যাদের দিয়েছেন তা এ জন্যে যে, তারা তাহাঁর নিকট তার অভাবের কথা তাঁকে জানিয়েছে। আর এ জন্যে যে, আল্লাহর রাসুল (সাঃআঃ)–এর পক্ষ গ্রহণ করায় তারা নিজ গোত্র ও স্বজনদের দ্বারা অধিক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিলেন।
৩১৪০. জুবাইর ইবনু মুতঈম (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, আমি এবং উসমান ইবনু আফ্ফান (রাদি.) আল্লাহর রাসুল (সাঃআঃ)–এর নিকট গেলাম এবং বললাম, হে আল্লাহর রাসুল! আপনি বানূ মুত্তালিবকে দিয়েছেন, আর আমাদের বাদ দিয়েছেন। অথচ আমরা এবং তারা আপনার সঙ্গে একই স্তরে সম্পর্কিত। তখন আল্লাহর রাসুল (সাঃআঃ) বলিলেন, বানূ মুত্তালিব ও বানূ হাশিম একই স্তরের। লায়স (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) বলেন, ইউনুস (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) আমাকে এ হাদীসটিতে আরো বেশি বলেছেন যে, জুবাইর (রাদি.) বলেন, আল্লাহর রাসুল (সাঃআঃ) বানূ আবদ শামস ও বানূ নাওফালকে অংশ দেননি। ইবনু ইসহাক (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) বলেন, আবদ শামস, হাশিম ও মুত্তালিব একই মায়ের গর্ভজাত সহোদর ভাই। তাঁদের মাতা হলেন আতিকা বিনতু মুররা আর নাওফাল ছিলেন তাদের বৈমাত্রেয় ভাই।
৫৭/১৮. অধ্যায়ঃ নিহত ব্যক্তি থেকে প্রাপ্ত মালামালের খুমুস বের না করা;
কেউ কাউকে হত্যা করিল, অতঃপর নিহত ব্যক্তির নিকট থেকে প্রাপ্ত মালামালের খুমুস বের না করেই তা তারই প্রাপ্য আর ইমাম কর্তৃক এ রকম আদেশ দান করা।
৩১৪১. আবদুর রহমান ইবনু আউফ (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, যখন আমি বদর যুদ্ধে সারিতে দাঁড়িয়ে আছি, আমি আমার ডানে বামে তাকিয়ে দেখলাম, অল্প বয়ষ্ক দুজন আনসার যুবকের মাঝখানে আছি। আমার আকাঙ্ক্ষা ছিল, তাদের চেয়ে শক্তিশালীদের মধ্যে থাকি। তখন তাদের একজন আমাকে খোঁচা দিয়ে জিজ্ঞেস করিল, চাচা! আপনি কি আবু জাহলকে চিনেন? আমি বললাম, হ্যাঁ। তবে ভাতিজা, তাতে তোমার দরকার কী? সে বলিল, আমাকে জানানো হয়েছে যে, সে আল্লাহর রাসুল (সাঃআঃ) –কে গালাগালি করে। সে মহান সত্তার শপথ! যাঁর হাতে আমার প্রাণ। আমি যদি তাকে দেখিতে পাই, তবে আমার দেহ তার দেহ হইতে বিচ্ছিন্ন হইবে না যতক্ষন না আমাদের মধ্যে যার মৃত্যূ আগে নির্ধারিত, সে মারা যায়। আমি তার কথায় আশ্চর্য হলাম। তা শুনে দ্বিতীয়জন আমাকে খোঁচা দিয়ে ঐ রকমই বলিল। তৎক্ষনাৎ আমি আবু জাহলকে দেখলাম, সে লোকজনের মাঝে ঘুরে বেড়াচ্ছে। তখন আমি বললাম, এই যে তোমাদের সেই ব্যক্তি যার সম্পর্কে তোমরা আমাকে জিজ্ঞেস করেছিলে। তারা তৎক্ষনাৎ নিজের তরবারী নিয়ে তার দিকে ঝাঁপিয়ে পড়ল এবং তাকে আঘাত করে হত্যা করিল। অতঃপর আল্লাহর রাসুল (সাঃআঃ) -এর দিকে ফিরে এসে তাঁকে জানালো। তখন আল্লাহর রাসুল (সাঃআঃ) বলিলেন, তোমাদের মধ্যে কে তাকে হত্যা করেছে? তারা উভয়ে দাবী করিল, আমি তাকে হত্যা করেছি। আল্লাহর রাসুল (সাঃআঃ) বলিলেন, তোমাদের তরবারী তোমরা মুছে ফেলনি তো? তারা উভয়ে বলিল, না। তখন আল্লাহর রাসুল (সাঃআঃ) তাদের উভয়ের তরবারী দেখলেন এবং বলিলেন, তোমরা উভয়ে তাকে হত্যা করেছো। অবশ্য তার নিকট হইতে প্রাপ্ত মালামাল মুআয ইবনু আমর ইবনু জামূহের জন্য। তারা দুজন হলো, মুআয ইবনু আফরা ও মুআয ইবনু আমর ইবনু জামূহ। মুহাম্মদ (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) বলেছেন, তিনি ইউসুফ ও তাহাঁর পিতা ইবরাহিম (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) –কে সৎ ব্যক্তি হিসেবে শুনেছেন।
৩১৪২. আবু ক্বাতাদাহ (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, হুনাইনের বছর আমরা আল্লাহর রাসুল (সাঃআঃ)–এর সঙ্গে বের হলাম। আমরা যখন শত্রুর সম্মুখীন হলাম, তখন মুসলিম দলের মধ্যে দৌড়াদৌড়ি শুরু হল। এমন সময় আমি মুশরিকদের এক ব্যক্তিকে দেখলাম, সে একজন মুসলমানের উপর চেপে বসেছে। আমি ঘুরে তার পেছনের দিক দিয়ে এসে তরবারী দ্বারা তার ঘাড়ের রগে আঘাত করলাম। তখন সে আমার দিকে এগিয়ে এল এবং আমাকে এমনভাবে জড়িয়ে ধরল যে, আমি তাতে মৃত্যুর আশংকা করলাম। মৃত্যু তাকেই ধরল এবং আমাকে ছেড়ে দিল। অতঃপর আমি উমর (রাদি.)–এর সঙ্গে সাক্ষাৎ করে বললাম, লোকদের কী হয়েছে? উমর (রাদি.) বলিলেন, আল্লাহর হুকুম। অতঃপর লোকজন ফিরে এলো এবং আল্লাহর রাসুল (সাঃআঃ) বসলেন, তখন তিনি বলিলেন, যে ব্যক্তি কাউকে নিহত করেছে এবং তার নিকট এর সাক্ষ্য রয়েছে, তার নিকট হইতে প্রাপ্ত মাল-সামান তারই প্রাপ্য। তখন আমি দাঁড়িয়ে বললাম, কে আছ যে আমার পক্ষে সাক্ষ্য দিবে? অতঃপর আমি বসে পড়লাম। আল্লাহর রাসুল (সাঃআঃ) আবার বলিলেন, যে ব্যক্তি কাউকে হত্যা করেছে এবং তার নিকট এর সাক্ষ্য রয়েছে, তার নিকট হইতে প্রাপ্ত মাল-সামান তারই প্রাপ্য। আমি দাঁড়িয়ে বললাম, কে আছ যে, আমার পক্ষে সাক্ষ্য দিবে? অতঃপর আমি বসে পড়লাম। আল্লাহর রাসুল (সাঃআঃ) তৃতীয়বার ঐরূপ বলিলেন, আমি আবার দাঁড়ালাম, তখন আল্লাহর রাসুল (সাঃআঃ) বলিলেন, হে আবু ক্বাতাদাহ! তোমার কি হয়েছে? আমি তখন পুরো ঘটনা বললাম। তখন এক ব্যক্তি বলে উঠল, হে আল্লাহর রাসুল! আবু ক্বাতাদাহ (রাদি.) ঠিক বলেছে। সে ব্যক্তি হইতে প্রাপ্ত মাল-সামান আমার নিকট আছে। আপনি আমার পক্ষ হইতে একে সম্মত করিয়ে দিন। তখন আবু বক্র সিদ্দিক (সাঃআঃ) বলিলেন, কক্ষণো না, আল্লাহর কসম! আল্লাহর রাসুল (সাঃআঃ) কখনো এমন করবেন না যে, আল্লাহর সিংহদের মধ্যে হইতে কোন সিংহ আল্লাহ ও রাসুল (সাঃআঃ)–এর পক্ষে যুদ্ধ করিবে আর রাসুল (সাঃআঃ) নিহত ব্যক্তির মাল-সামান তোমাকে দিবেন! তখন নাবী (সাঃআঃ) বলিলেন, আবু বকর (রাদি.) ঠিকই বলেছে। ফলে আল্লাহর রাসুল (সাঃআঃ) তা আমাকে দিলেন। আমি তা হইতে একটি বর্ম বিক্রয় করে বানূ সালমায় একটি বাগান কিনি। এটাই ইসলামে প্রবেশের পর আমার প্রথম সম্মত্তি, যা আমি পেয়েছিলাম।
৫৭/১৯. অধ্যায়ঃ নাবী (সাঃআঃ) ইসলামের দিকে যাদের মন আকৃষ্ট করিতে চাইতেন তাদেরকে ও অন্যদেরকে খুমুস বা তদ্রূপ মাল থেকে দান করিতেন।
এ বিষয়ে আবদুল্লাহ ইবনে যায়দ (রাদি.) নাবী (সাঃআঃ) -এর নিকট হইতে হাদীস বর্ণনা করিয়াছেন।
৩১৪৩. হাকীম ইবনু হিযাম (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, আমি রসূলূল্লাহ (সাঃআঃ)–এর নিকট কিছু চাইলাম। তখন তিনি আমাকে দিলেন। আমি আবার চাইলাম। তিনি আমাকে দিলেন। অতঃপর আমাকে বলিলেন, হে হাকীম, এ সকল মাল সবুজ শ্যামল ও সুমিষ্ট। যে ব্যক্তি তা লোভহীন অন্তরে গ্রহণ করে, তার তাতে বরকত দেয়া হয়। আর যে ব্যক্তি তা লোভনীয় অন্তরে গ্রহণ করে তার জন্য তাতে বারকাত দেয়া হয় না। তার উদাহরণ ঐ ব্যক্তির মত, যে আহার করে কিন্তু পেট পূর্ণ হয় না। আর উপরের হাত নীচের হাত থেকে উত্তম। হাকীম (রাদি.) বলেন, আমি বললাম, হে আল্লাহর রাসুল! সে মহান সত্তার কসম! যিনি আপনাকে সত্যসহ পাঠিয়েছেন আপনার পর আমি দুনিয়া হইতে বিদায় নেয়া পর্যন্ত আর কারো মাল আকাঙ্ক্ষা করব না। পরে আবু বকর (রাদি.) হাকীম ইবনু হিযাম (রাদি.) -কে ভাতা নেয়ার জন্য ডাকতেন কিন্তু তিনি কোন কিছু গ্রহণ করিতে অস্বীকার করিতেন। অতঃপর উমর (রাদি.) তাঁকে ভাতা দানের উদ্দেশ্যে ডাকলেন। কিন্তু তিনি তাহাঁর নিকট থেকেও কিছু গ্রহণ করিতে অস্বীকার করেন। তখন উমর (রাদি.) বলিলেন, হে মুসলিমগন। আমি হাকীম ইবনু হিযাম (রাদি.) –কে তার জন্য সে প্রাপ্য দিতে চেয়েছি যা আল্লাহ তাআলা তার জন্য সম্পদ হইতে অংশ রেখেছেন। আর সে তা গ্রহণ করিতে অস্বীকার করেছে। এভাবে হাকীম ইবনু হিযাম (রাদি.) আল্লাহর রাসুল (সাঃআঃ) -এর পরে আর কারো কাছ হইতে আমৃত্যু কিছুই গ্রহণ করেননি।
৩১৪৪. নাফি (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) হইতে বর্ণিতঃ
উমর ইবনুল খাত্তাব (রাদি.) বলেন, হে আল্লাহর রাসুল! জাহিলী যুগে আমার উপর একদিনের ইতিকাফ (মানৎ) ছিল। তখন আল্লাহর রাসুল (সাঃআঃ) তাঁকে তা পূরণ করের আদেশ করেন। নাফি (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) বলেন, উমর (রাদি.) হুনাইনের যুদ্ধের বন্দীর নিকট হইতে দুটি দাসী লাভ করেন। তখন তিনি তাদেরকে মাক্কাহয় একটি গৃহে রেখে দেন। বর্ণনাকারী বলেন, অতঃপর আল্লাহর রাসুল (সাঃআঃ) হুনাইনের বন্দীদেরকে সৌজন্যমূলক মুক্ত করার আদেশ করিলেন। তারা মুক্ত হয়ে অলি-গলিতে ছুটতে লাগল। উমর (রাদি.) আবদুল্লাহ (রাদি.) -কে বলিলেন, দেখ তো ব্যপার কি? তিনি বলিলেন, আল্লাহর রাসুল (সাঃআঃ) বন্দীদের প্রতি অনুগ্রহ করিয়াছেন। উমর (রাদি.) বলিলেন, তবে তুমি গিয়ে সে দাসী দুজনকে মুক্ত করে দাও। নাফি (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) বলেন, আল্লাহর রাসুল (সাঃআঃ) জিয়েররানা হইতে উমরাহ করেন নি। যদি তিনি উমরাহ করিতেন তবে তা আবদুল্লাহ (রাদি.) হইতে লুকানো থাকত না। আর জারীর ইবনু হাযিম (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) আবদুল্লাহ ইবনু উমর (রাদি.) হইতে অতিরিক্ত বর্ণনা করিতেন যে, উমর (রাদি.) দাসী দুটি খুমুস হইতে পেয়েছিলেন। মাআমার (রহমাতুল্লাহি আলাইহি)…. ইবনু উমর (রাদি.)–এর নিকট হইতে নযরের কথা উল্লেখ করেন, কিন্তু তিনি একদিনের কথা বলেননি।
৩১৪৫. আমর ইবনু তাগলিব (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, রসূলূল্লাহ (সাঃআঃ) এক দলকে দিলেন আর অন্য দলকে দিলেন না। তারা যেন এতে মনোক্ষুণ্ন হলেন। তখন আল্লাহর রাসুল (সাঃআঃ) বলিলেন, আমি এমন লোকদের দেই, যাদের সম্পর্কে বিগড়ে যাওয়া কিংবা ধৈর্যচ্যূত হবার আশঙ্কা করি। আর অন্যদল যাদের অন্তরে আল্লাহ তাআলা যে কল্যাণ ও মুখাপেক্ষীহীনতা দান করিয়াছেন, তার উপর ছেড়ে দেই। আর আমর ইবনু তাগলিব (রাদি.) তাদের মধ্যে। আমর ইবনু তাগলিব (রাদি.) বলেন, আল্লাহর রাসুল (সাঃআঃ) আমার সম্পর্কে যা বলেছেন, তার স্থলে যদি আমাকে লাল বর্ণের উট দেয়া হত তাতে আমি এতখানি আনন্দিত হতাম না। আর আবু আসিম (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) জারীর (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) হইতে হাদীসটি এতটুকু বেশি বর্ণনা করিয়াছেন যে, হাসান (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) বলেন, আমাকে আমর ইবনু তাগলিব (রাদি.) বলেছেন, আল্লাহর রাসুল (সাঃআঃ) -এর নিকট কিছু মালামাল অথবা বন্দী আনা হয়, তখন তিনি তা বন্টন করেন।
৩১৪৬. আনাস (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, নাবী (সাঃআঃ) বলেছেন, আমি কুরাইশদের দেই তাদের মনোস্তুষ্টির জন্য। কেননা তারা জাহিলিয়্যাতের নিকটবর্তী।
৩১৪৭. আনাস ইবনু মালিক (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ
যখন আল্লাহ তাআলা আল্লাহর রাসুল (সাঃআঃ) -কে হাওয়াযিন গোত্রের মাল থেকে যা দান করার তা দান করিলেন। আর তিনি কুরাইশ গোত্রের লোকদের একশ করে উট দিতে লাগলেন। তখন আনসারদের হইতে কিছু সংখ্যক লোক বলিতে লাগল, আল্লাহ আল্লাহর রাসুল (সাঃআঃ) -কে ক্ষমা করুন। তিনি কুরাইশদেরকে দিচ্ছেন, আমাদেরকে দিচ্ছেন না। অথচ আমাদের তলোয়ার থেকে এখনও তাদের রক্ত ঝরছে। আনাস (রাদি.) বলেন, আল্লাহর রাসুল (সাঃআঃ)–এর নিকট তাদের কথা পৌঁছান হল। তখন তিনি আনসারদের ডেকে পাঠালেন এবং চর্ম নির্মিত একটি তাঁবুতে তাঁদের একত্রিত করিলেন আর তাঁদের সঙ্গে তাঁদের ব্যতীত আর কাউকে ডাকলেন না। যখন তাঁরা সকলে একত্রিত হলেন, তখন আল্লাহর রাসুল (সাঃআঃ) তাঁদের নিকট এলেন এবং বলিলেন, আমার নিকট তোমাদের ব্যাপারে যে কথা পৌঁছেছে তা কি? তাঁদের মধ্যে বয়স্ক লোকেরা তাঁকে বলিলেন, হে আল্লাহর রাসুল! আমাদের মধ্য থেকে বয়স্করা কিছুই বলেননি। আমাদের কতিপয় তরুণরা বলেছে : আল্লাহ আল্লাহর রাসুল (সাঃআঃ) –কে ক্ষমা করুন। তিনি আনসারদের না দিয়ে কুরাইশদের দিচ্ছেন; অথচ আমাদের তরবারি হইতে এখনও তাদের রক্ত ঝরছে। আল্লাহর রাসুল (সাঃআঃ) বলিলেন, আমি এমন লোকদের দিচ্ছি, যাদের কুফরীর যুগ মাত্র শেষ হয়েছে। তোমরা কি এতে খুশী নও যে, লোকেরা দুনিয়াবী সম্পদ নিয়ে ফিরবে, আর তোমরা আল্লাহর রাসুল (সাঃআঃ) –কে নিয়ে মনযিলে ফিরবে আর আল্লাহর কসম, তোমরা যা নিয়ে মনযিলে ফিরবে, তা তারা যা নিয়ে ফিরবে, তার চেয়ে উত্তম। তখন আনসারগন বলিলেন, হ্যাঁ, হে আল্লাহর রাসুল! আমরা এতেই সন্তুষ্ট। অতঃপর আল্লাহর রাসুল (সাঃআঃ) বলিলেন, আমার পরে তোমরা তোমাদের উপর অন্যদের খুব প্রাধান্য দেখিতে পাবে। তখন তোমরা ধৈর্য অবলম্বন করিবে, যে পর্যন্ত না তোমরা আল্লাহ ও তাহাঁর রাসুল (সাঃআঃ) -এর সঙ্গে হাউযে কাওসারে মিলিত হইবে। আনাস (রাদি.) বলেন, কিন্তু আমরা ধৈর্যধারণ করিতে পারিনি।
৩১৪৮. জুবাইর ইবনু মুতঈম (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ
তিনি রসূলূল্লাহ (সাঃআঃ)–এর সঙ্গে ছিলেন, আর তখন তাহাঁর সাথে আরো লোক ছিল। আল্লাহর রাসুল (সাঃআঃ) হুনায়ন হইতে আসছিলেন। বেদুঈন লোকেরা তাহাঁর নিকট গনীমতের মাল নেয়ার জন্য তাঁকে আঁকড়ে ধরল। এমনকি তারা তাঁকে একটি বাবলা গাছের সাথে ঠেকিয়ে দিল এবং কাঁটা তাহাঁর চাদর আটকে ধরল। তখন আল্লাহর রাসুল (সাঃআঃ) থামলেন। অতঃপর বলিলেন, আমার চাদরটি দাও। আমার নিকট যদি এ সকল কাঁটাদার বুনো গাছের পরিমাণ পশু থাকত, তবে সেগুলো তোমাদের মাঝে বন্টন করে দিতাম। অতঃপরও আমাকে তোমরা কখনো কৃপণ, মিথ্যাচারী এবং কাপুরুষ পাবে না।
৩১৪৯. আনাস ইবনু মালিক (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, আমি নাবী (সাঃআঃ)–এর সঙ্গে পথে চলছিলাম। তখন তিনি নাজরানে প্রস্তুত মোটা পাড়ের চাদর পরিহিত অবস্থায় ছিলেন। এক বেদুঈন তাঁকে পেয়ে খুব জোরে টেনে দিল। অবশেষে আমি দেখলাম, জোরে টানার কারনে নাবী (সাঃআঃ) -এর স্কন্ধে চাদরের পাড়ের দাগ বসে গেছে। অতঃপর বেদুঈন বলিল, আল্লাহর যে সম্পদ আপনার নিকট আছে তা হইতে আমাকে কিছু দেয়ার আদেশ দিন। আল্লাহর রাসুল (সাঃআঃ) তার দিকে তাকিয়ে মুচকি হাসি দিলেন, আর তাকে কিছু দেয়ার আদেশ দিলেন।
৩১৫০. আবদুল্লাহ (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, হুনাইনের দিনে নাবী (সাঃআঃ) কোন কোন লোককে বন্টনে অন্যদের উপর অগ্রাধিকার দেন। তিনি আকরা ইবনু হাবিছকে একশ উট দিলেন। উয়াইনাকেও এ পরিমাণ দেন। উচ্চবংশীয় আরব ব্যক্তিদের দিলেন এবং বন্টনে তাদের অতিরিক্ত দিলেন। এক ব্যক্তি বলিল, আল্লাহর কসম! এতে সুবিচার করা হয়নি। অথবা সে বলিল, এতে আল্লাহ তাআলার সন্তুষ্টির প্রতি খেয়াল রাখা হয়নি। (রাবী বলেন) তখন আমি বললাম, আল্লাহর কসম! আমি নাবী (সাঃআঃ) -কে অবশ্যই এ কথা জানিয়ে দিব। তখন আমি তাহাঁর নিকট এলাম এবং তাঁকে একথা জানিয়ে দিলাম। আল্লাহর রাসুল (সাঃআঃ) বলিলেন, আল্লাহ তাআলা ও তাহাঁর রাসুল (সাঃআঃ) যদি সুবিচার না করেন, তবে কে সুবিচার করিবে? আল্লাহ তাআলা মুসা (আঃ) -এর প্রতি রহম করুন, তাঁকে এর চেয়েও অধিক কষ্ট দেয়া হয়েছে, কিন্তু তিনি সবর করিয়াছেন।
৩১৫১. আসমা বিনতে আবু বক্র (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, আমি নিজের মাথায় সে জমি থেকে খেজুর দানা বহন করে আনতাম, যা আল্লাহর রাসুল (সাঃআঃ) যুবায়র (রাদি.) -কে দান করেছিলেন। যে জমিটি আমার ঘর থেকে এক ফারসাখের দুতৃতীয়াংশ দূরে অবস্থিত ছিল। আর আবু যামরাহ (রহমাতুল্লাহি আলাইহি)… হিশামের পিতা উরওয়াহ (রাদি.) হইতে বর্ণনা করেন যে, আল্লাহর রাসুল (সাঃআঃ) যুবাইর (রাদি.) -কে বানূ নাযীর গোত্রের সম্পত্তি হইতে এক টুকরা ভূমি দিয়েছিলেন।
৩১৫২. আবদুল্লাহ ইবনু উমর (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ
উমর ইবনু খাত্তাব (রাদি.) ইয়াহূদী ও খ্রিস্টানদেরকে হিজায এলাকা থেকে নির্বাসিত করেন। আর আল্লাহর রাসুল (সাঃআঃ) যখন খায়বার জয় করেন, তখন তিনিও ইয়াহূদীদের সেখান হইতে বের করে দিতে চেয়েছিলেন। আর সে যমীন বিজিত হবার পর আল্লাহ, রাসুলুল্লাহ (সাঃআঃ) ও মুসলিমগনের অধিকারে এসে গিয়েছিল। তখন ইয়াহূদীরা আল্লাহর রাসুল (সাঃআঃ) -এর নিকট নিবেদন করিল, যেন তিনি তাদেরকে এখানে এ শর্তে থাকার অনুমতি দেন যে, তারা কৃষি কাজ করিবে এবং তাদের জন্য অর্ধেক ফসল থাকবে। তখন আল্লাহর রাসুল (সাঃআঃ) বলেছিলেন, যতদিন আমাদের ইচ্ছা তোমাদের এ শর্তে থাকার অনুমতি দিলাম। তারা এভাবে থেকে গেল। অবশেষে উমর (রাদি.) তাহাঁর শাসনকালে তাদের তায়মা বা আরীহা নামক স্থানের দিকে নির্বাসিত করেন।
৫৭/২০. অধ্যায়ঃ দারুল হরবে যে সকল খাদ্যদ্রব্য পাওয়া যায়।
৩১৫৩. আবদুল্লাহ ইবনু মুগাফ্ফাল (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, আমরা খাইবার দূর্গ অবরোধ করেছিলাম। কোন এক লোক একটি থলে ফেলে দিল; তাতে ছিল চর্বি। আমি তা নিতে উদ্যত হলাম। হঠাৎ দেখি যে, নাবী (সাঃআঃ) দাঁড়িয়ে আছেন। এতে আমি লজ্জিত হয়ে পড়লাম।
৩১৫৪. আবদুল্লাহ ইবনু উমর (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, আমরা যুদ্ধের সময় মধু ও আঙ্গুর লাভ করতাম। আমরা তা খেয়ে নিতাম, জমা রাখতাম না।
৩১৫৫. (আবদুল্লাহ) ইবনু আবু আওফা (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, খায়বারের যুদ্ধের সময় আমরা ক্ষুধায় কষ্ট ভোগ করছিলাম। খায়বার বিজয়ের দিন আমরা পালিত গাধার দিকে এগিয়ে গেলাম এবং তা যবহ করলাম। যখন তা হাঁড়িতে ফুটছিল তখন রসূলূল্লাহ (সাঃআঃ) –এর ঘোষণা দানকারী ঘোষণা দিল : তোমরা হাঁড়িগুলো উপুর করে ফেল। গাধার গোশত হইতে তোমরা কিছুই খাবেনা। আবদুল্লাহ (ইবনু আবু আওফা) (রাদি.) বলেন, আমরা বললাম, আল্লাহর রাসুল (সাঃআঃ) এ কারনে নিষেধ করিয়াছেন, যেহেতু তা হইতে খুমুস বের করা হয়নি। (রাবী বলেন) আর অন্যরা বলিলেন, বরং তিনি এটাকে অবশ্যই হারাম করিয়াছেন। (শায়বানী বলেন), আমি এ ব্যাপারে সাঈদ ইবনু যুবায়র (রাদি.) -কে জিজ্ঞেস করলাম। তিনি বলিলেন, নিশ্চিতই তিনি তা হারাম করে দিয়েছেন।
Leave a Reply