খাদ্যের বদলে খাদ্য সমান সমান বিক্রয়

খাদ্যের বদলে খাদ্য সমান সমান বিক্রয়

খাদ্যের বদলে খাদ্য সমান সমান বিক্রয় >> সহীহ মুসলিম শরীফ এর মুল সুচিপত্র দেখুন >> নিম্নে মুসলিম শরীফ এর একটি অধ্যায়ের হাদিস পড়ুন

১৮. অধ্যায়ঃ খাদ্যের বদলে খাদ্য সমান সমান বিক্রয়

৩৯৭২. মামার ইবনি আবদুল্লাহ [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

তিনি এক সা গমসহ তার গোলামকে পাঠিয়ে দেন এবং বলে দেন যে, এটা বিক্রি করে তা দিয়ে যব কিনে আনো। গোলাম চলে যায় এবং এক সা ও সায়ের কিছু অতিরিক্ত গ্রহণ করে। যখন সে মামারের নিকট উপস্থিত হলো এবং যখন তাঁকে এ বষয়ে অবহিত করিল মামার [রহমাতুল্লাহি আলাইহি] তাকে বলিল, তুমি এরূপ কেন করেছ? পুনরায় যাও ও তাকে ফেরত দাও, সমপরিমাণ ব্যতীত কিছুতেই গ্রহণ করিবে না। কারণ, আমি রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] -কে বলিতে শুনেছিঃ খাদ্যের বিনিময়ে খাদ্য সমান সমান হইতে হইবে। আর ঐ সময়ে যব ছিল আমাদের খাদ্য। তাকে জিজ্ঞেস করা হলো এটা তো সেটার অনুরূপ নয়। তিনি বলিলেন, অনুরূপ হওয়ার আশংকা আমি বোধ করছি।

[ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৩৯৩৫, ইসলামিক সেন্টার-৩৯৩৪]

৩৯৭৩. আবু হুরাইরাহ্ [রাদি.] ও আবু সাঈদ খুদরী [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

তাঁরা উভয়ে বর্ণনা করেন যে, আনসারদের আদী গোত্রের এক ব্যক্তিকে রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] খাইবারে আমির নিযুক্ত করেন। সে জানীব জাতীয় [উন্নত মানের] খেজুর নিয়ে আসে। রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] তাকে জিজ্ঞেস করিলেন, খাইবারের সমস্ত খেজুরই কি এ রকম? সে বলিল, না; আল্লাহর কসম, হে আল্লাহ্‌র রসূল! আমরা মিশ্রিত খেজুরের দু সা -এর বিনিময়ে এক সা ক্রয় করি। রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] বললেনঃ এরূপ করো না বরং সমান সমানভাবে করো অথবা একটি বিক্রি করে তার মূল্য দিয়ে অন্যটি খরিদ করিও, অনুরূপভাবে ওজনের ক্ষেত্রেও।

[ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৩৯৩৬, ইসলামিক সেন্টার-৩৯৩৫]

৩৯৭৪. আবু সাঈদ খুদরী ও আবু হুরাইরাহ্ [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] এক ব্যক্তিকে খায়বরের আমির নিযুক্ত করেন। সে জানীব শ্রেণীর খেজুর নিয়ে তাহাঁর নিকট আগমন করে। রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] তাঁকে জিজ্ঞেস করলেনঃ খাইবারের সব খেজুর কি এ শ্রেণীর? সে বলিল, হে আল্লাহ্‌র রসূল! আল্লাহর কসম! এরূপ নয়। আমরা এ শ্রেণীর এক সা দু সার বদলে এবং দু সা তিন সার বদলে খরিদ করে থাকি। রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] বললেনঃ এরূপ করো না। মিশ্রিত খেজুর দিরহামের বিনিময়ে বিক্রি করো। তারপর দিরহামের বিনিময়ে জানীব খরিদ করো।

[ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৩৯৩৭, ইসলামিক সেন্টার-৩৯৩৬]

৩৯৭৫. আবু সাঈদ [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

তিনি বলেন, বার্‌নী জাতীয় খেজুর নিয়ে বিলাল [রাদি.] আগমন করিলেন। রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] তাঁকে জিজ্ঞেস করিলেন, এ কোত্থেকে এনেছ? বিলাল [রাদি.] বলিল, আমাদের নিকট নিম্ন শ্রেণীর খেজুর ছিল আমি তা থেকে দু সা এক সা -এর বিনিময়ে বিক্রি করেছি, নবী [সাঃআঃ] -কে খাওয়ানোর জন্যে। রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] তখন বললেনঃ হায় আফসোস! এতো সাক্ষাত সুদ, এরূপ করো না, বরং যখন তুমি খেজুর ক্রয় করিতে চাও, তখন এটাকে বিক্রি করিবে, তারপর এর মূল্য দ্বারা ক্রয় করিবে।

ইবনি সাহ্‌ল [রহমাতুল্লাহি আলাইহি] তাহাঁর বর্ণনায় তখন শব্দটি উল্লেখ করেননি।

[ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৩৯৩৮, ইসলামিক সেন্টার-৩৯৩৭]

৩৯৭৬. আবু সাঈদ খুদ্‌রী [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] -এর নিকট কিছু খেজুর আনা হয়। তিনি বলিলেন, আমাদের খেজুর অপেক্ষা এ খেজুর তো খুবই উত্তম। লোকটি বলিল, হে আল্লাহ্‌র রসূল! আমাদের দু সা খেজুর এক সার বিনিময়ে বিক্রি করেছি। রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] বললেনঃ এ তো সুদ। এটা ফেরত দাও, তারপর আমাদের খেজুর বিক্রি কর এবং এ জাতীয় খেজুর আমাদের জন্যে ক্রয় করো।

[ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৩৯৩৯, ইসলামিক সেন্টার-৩৯৩৮]

৩৯৭৭. আবু সাঈদ [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ [সাঃআঃ] -এর আমলে মিশ্রিত খেজুর আমাদের দেয়া হত আর তা হচ্ছে মিশ্রিত খেজুর। আমরা এর দু সা এক সার বিনিময়ে বিক্রি করে দিতাম। এ সংবাদ রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] -এর নিকট পৌঁছালো। তিনি বলেন, দু সা খেজুর এক সার বিনিময়ে, দু সা গম এক সার বিনিময়ে এবং দু দিরহাম এক দিরহামের বিনিময়ে বিক্রি করা চলবে না।

[ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৩৯৪০, ইসলামিক সেন্টার-৩৯৩৯]

৩৯৭৮. আবু নায্‌রাহ্‌ [রহমাতুল্লাহি আলাইহি] -এর সূত্রে হইতে বর্ণীতঃ

তিনি বলেন, আমি ইবনি আব্বাস [রাদি.]-কে সার্ফ [স্বর্ণ- রৌপ্যের বিনিময়] সম্পর্কে জিজ্ঞেস করি। তিনি বলেন, সেটা কি নগদ নগদ? আমি বললাম, হ্যাঁ। তিনি বলিলেন এতে কোন আপত্তি নেই। অতঃপর আমি সাঈদকে জানালাম এবং বললাম, আমি ইবনি আব্বাসের নিকট সার্ফ সম্পর্কে জিজ্ঞেস করেছি। তিনি বলেছেন সেটা কি নগদ নগদ? আমি বলেছি, হ্যাঁ। তিনি বলেছেন, কোন ক্ষতি নেই। আবু সাঈদ [রাদি.] বলেছেন, আমি শীঘ্রই তাকে লিখে দিচ্ছি। অতঃপর তিনি আর তোমাদেরকে এ ফাতাওয়া দিবেন না। তিনি বলেন, আল্লাহর কসম। কতিপয় যুবক রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] -এর নিকট কিছু খেজুর নিয়ে আসে। সে বলিল, এটা আমাদের দেশের খেজুরের মধ্যে অথবা আমাদের এ বছরের খেজুরের মধ্যে কিছুটা খারাপ ছিল। অতঃপর আমি এটা গ্রহণ করি এবং কিছুটা বৃদ্ধি করি। তিনি বলেন, বেশী দিয়েছ তো সুদ প্রদান করেছ, এর কাছেও যেয়ো না। যখন তোমার খেজুরের মধ্যে কোন খারাপ খেজুর দেখবে তখন তা বিক্রি করে দিও, পরে যে খেজুর পছন্দ করো তা ক্রয় করো।

[ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৩৯৪১, ইসলামিক সেন্টার-৩৯৪০]

৩৯৭৯. আবু নাযরাহ্ [রাদি.] এর সূত্রে হইতে বর্ণীতঃ

তিনি বলেন, আমি ইবনি উমর ও ইবনি আব্বাস [রাদি.]-এর নিকট বায় -এ সার্ফ [স্বর্ণ-রৌপ্যের বিনিময়] সম্পর্কে জিজ্ঞেস করি। তারা এতে কোন দোষ মনে করেননি। পরবর্তীকালে একবার আমি আবু সাঈদ খুদ্রী [রাদি.]-এর নিকট বসা ছিলাম। তার নিকট সার্ফ বিষয়ে জানতে চাইলাম। তিনি বলিলেন, যা বাড়তি হইবে তা সুদ। কিন্তু তাদের দুজনের মতের কারণে আমি এর প্রতিবাদ করলাম। এরপর তিনি বলিলেন, আমি রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] থেকে যা শুনেছি তাই তোমার কাছে বর্ণনা করেছি। একদা তাহাঁর নিকট খেজুরের বাগানের এক মালিক এক সা ভালো মানের খেজুর নিয়ে আসে। আর নবী [সাঃআঃ] -এর খেজুরও এই শ্রেণীরই ছিল। নবী [সাঃআঃ] তাকে জিজ্ঞেস করলেনঃ এ তুমি কোথায় পেলে? সে বলিল, আমি দু সা খেজুর নিয়ে বাজারে যাই এবং তার বদলে এক সা ক্রয় করি। কেননা বাজারে এটির মূল্য এতো। রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] বল্লেনঃ আফসোস তোমার প্রতি, তুমি সুদের কাজ করেছ। যখন তুমি এরূপ চাও, তখন তোমার খেজুর কোন বস্তুর বিনিময়ে বিক্রি করে দিবে। পরে তোমার বস্তুর বিনিময়ে যে প্রকার খেজুর চাও কিনবে।

আবু সাঈদ [রাদি.] বলেন, সুতরাং খেজুরের বিনিময়ে খেজুর সুদ হওয়ায় অধিক যোগ্য নাকি রৌপ্যের বিনিময়ে অতিরিক্ত রৌপ্য সুদ হওয়ার বেশী যোগ্য। রাবী বলেন, পরবর্তীকালে আমি ইবনি উমর [রাদি.]-এর নিকট এসেছি এবং তিনি আমাকে নিষেধ করিয়াছেন। আর আমি ইবনি আব্বাসের নিকট যাইনি। রাবী বলেন, আবুস সাহ্বা [রহমাতুল্লাহি আলাইহি] আমার নিকট বর্ণনা করিয়াছেন যে, তিনি এ ব্যাপারে ইবনি আব্বাসের কাছে মাক্কায় জিজ্ঞেস করেছিলেন, তখন তিনি তা পছন্দ করেননি।

[ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৩৯৪২, ইসলামিক সেন্টার-৩৯৪১]

৩৯৮০. আবু সাঈদ খুদ্‌রী [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

তিনি বলেন, দীনারের বিনিময়ে দীনার ও দিরহামের বিনিময়ে দিরহাম সমান সমান হওয়া চাই। যে বেশি দিবে বা বেশি নিবে সে সুদের কারবার করিল। আমি তাকে বললাম, ইবনি আব্বাস [রাদি.] তো অন্য কিছু বলে থাকেন। তিনি বলেন, আমি ইবনি আব্বাসের সাথে সাক্ষাত করেছি এবং জিজ্ঞেস করেছি যে, আপনি এটা যা বলেছেন, তা-কি রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] থেকে শুনেছেন, না-কি আল্লাহর কিতাবে পেয়েছেন? তিনি বলিলেন, আমি রাসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] থেকে এটা শুনিনি এবং আল্লাহর কিতাবেও পাইনি বরং উসামাহ্‌ ইবনি যায়দ [রাদি.] আমার নিকট বর্ণনা করিয়াছেন যে, নবী [সাঃআঃ] বলেছেনঃ বাকী বিক্রয়ের ক্ষেত্রে সুদ হয়।

[ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৩৯৪৩, ইসলামিক সেন্টার-৩৯৪২]

৩৯৮১. ইবনি আব্বাস [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

তিনি বলেন, আমাকে উসামাহ্‌ ইবনি যায়দ [রাদি.] জানিয়েছেন যে, নবী [সাঃআঃ] বলেছেনঃ সুদ কেবল বাকীতে হয়।

[ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৩৯৪৪, ইসলামিক সেন্টার-৩৯৪৩]

৩৯৮২. উসামাহ্‌ ইবনি যায়দ [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলেছেনঃ নগদ বিক্রয়ের ক্ষেত্রে সুদ হয় না।

[ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৩৯৪৫, ইসলামিক সেন্টার-৩৯৪৪]

৩৯৮৩. আতা ইবনি আবু রাবাহ্‌ [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

আবু সাঈদ খুদরী [রাদি.] ইবনি আব্বাস [রাদি.]-এর সাথে সাক্ষাত করে জিজ্ঞেস করেন, সারফ্‌ সম্পর্কে আপনার যে বক্তব্য, তার কিছু কি আপনি রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] থেকে শুনেছেন, না-কি আল্লাহর কিতাবে কিছু পেয়েছেন? ইবনি আব্বাস [রাদি.] বলিলেন, কোনটাই আমি বলছি না। আর রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] সম্পর্কে তো আপনারা অধিক জানেন এবং আল্লাহর কিতাবেও তা আমি জানি না। বরং উসামাহ্‌ ইবনি যায়দ [রাদি.] আমার নিকট বর্ণনা করিয়াছেন যে, রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলেছেনঃ সুদ কেবল বাকীর ক্ষেত্রেই হয়।

[ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৩৯৪৬, ইসলামিক সেন্টার-৩৯৪৫]


Posted

in

by

Comments

Leave a Reply