সাহাবী ও খলিফাদের জীবনী সম্পর্কে ও ফযিলত সম্পর্কে

সাহাবী ও খলিফাদের জীবনী সম্পর্কে ও ফযিলত সম্পর্কে

সাহাবী ও খলিফাদের জীবনী সম্পর্কে ও ফযিলত সম্পর্কে >>আবুদ দাউদ শরীফ এর মুল সুচিপত্র পড়ুন

অনুচ্ছেদ-৮ঃ সাহাবিগনের [র] ফযিলত সম্পর্কে
অনুচ্ছেদ-৯ঃ খলিফাহ্‌গণ সম্পর্কে
অনুচ্ছেদ-১০ঃ রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ]-এর সাহাবীগণের ফাযীলাত
অনুচ্ছেদ-১১ঃ রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ]–এর সাহাবীদের গালি দেয়া নিষেধ
অনুচ্ছেদ-১২ঃ আবু বাক্‌র [রাদি.] -এর খিলাফাত সম্পর্কে

অনুচ্ছেদ-৮ঃ সাহাবিগনের [র] ফযিলত সম্পর্কে

৪৬২৭. ইবনি উমার [রহমাতুল্লাহি আলাইহি] হইতে বর্ণীতঃ

তিনি বলেন, আমরা নাবী [সাঃআঃ]-এর যুগে বলতাম, আমরা আবু বাক্‌র [রহমাতুল্লাহি আলাইহি] -এর সমকক্ষ কাউকে গণ্য করবো না। অতঃপর উমার, এরপর উসমান, এরপর আমরা নাবী [সাঃআঃ]- এর সাহাবীগণের মধ্যে কোনরূপ মর্যাদার তারতম্য করবো না।

সাহাবী ও খলিফাদের জীবনী সম্পর্কে – এই হাদিসের তাহকিকঃ সহিহ হাদিস

৪৬২৮. ইবনি উমার [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

তিনি বলেন, আমরা রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ]- এর জীবদ্দশায় বলতাম, নাবী [সাঃআঃ]-এর পরে তাহাঁর উম্মাতের মধ্যে সর্বোত্তম হলেন আবু বকর [রাদি.] , অতঃপর উমার [রাদি.] , অতঃপর উসমান [রাদি.]।

সাহাবী ও খলিফাদের জীবনী সম্পর্কে – এই হাদিসের তাহকিকঃ সহিহ হাদিস

৪৬২৯. মুহাম্মাদ ইবনিল হানাফিয়্যাহ [রহমাতুল্লাহি আলাইহি] হইতে বর্ণীতঃ

তিনি বলেন, একদা আমি আমার পিতাহাকে বলিলাম, রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ]-এর পরে কোন ব্যক্তি সর্বোত্তম? তিনি বলেন, আবু বাকর [রাদি.]। আমি বলিলাম, তারপর কে? তিনি বলেন, তারপর উমার [রাদি.]। বর্ণনাকারী বলেন, তারপর কে তা প্রশ্ন করিতে শঙ্কিত হলাম। তিনি হয়ত বলিতেন, উসমান [রাদি.]। আমি বলিলাম, হে পিতা! তারপর আপনি? তিনি বলেন, আমি মুসলিমদেরই একজন।

সাহাবী ও খলিফাদের জীবনী সম্পর্কে – এই হাদিসের তাহকিকঃ সহিহ হাদিস

৪৬৩০. সুফিয়ান সাওরী [রহমাতুল্লাহি আলাইহি] হইতে বর্ণীতঃ

যে ব্যক্তি ধারণা করে যে, আলী [রাদি.] তাহাদের দুজনের তুলনায় খিলাফতের অধিক হকদার ছিলেন, সে আবু বকর [রাদি.] , উমার [রাদি.] , মুহাজিরগণ ও আনসারগণের ভুল নির্দেশ করলো। আর যে ব্যক্তি এরূপ মত পোষণ করে, তার কোন আমল আকাশে উঠবে বলে আমি মনে করি না। {৪৬২৯}

সনদ সহিহ মাক্বতূ। {৪৬২৯} আবু দাউদ এটি এককভাবে বর্ণনা করেছেন । এই হাদিসের তাহকিকঃ সহিহ মাকতু

৪৬৩১. সুফিয়ান সাওরী [রহমাতুল্লাহি আলাইহি] হইতে বর্ণীতঃ

খলীফাহ্‌গণের সংখ্যা পাঁচজনঃ আবু বকর, উমার, উসমান, আলী ও উমার ইবনি আবদুল আযীয [রাদি.]। {৪৬৩০}

{৪৬৩০} আবু দাউদ এটি এককভাবে বর্ণনা করেছেন। এই হাদিসের তাহকিকঃ দুর্বল মাকতু

অনুচ্ছেদ-৯ঃ খলিফাহ্‌গণ সম্পর্কে

৪৬৩২. ইবনি আব্বাস [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

তিনি বলেন, আবু হুরায়রা [রাদি.] হাদিস বর্ণনা করিতেন, একদা এক ব্যক্তি রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ]-এর নিকট এসে বললো, আমি রাতে স্বপ্নে দেখেছি, এক টুকরা মেঘ হইতে মাখন ও মধু ঝরে পড়ছে এবং আমি আরো দেখলাম যে, লোকজন হাতের মুঠোয় করে তা তুলে নিচ্ছে; তাতে কেউ বেশি নিচ্ছে আবার কেউ কম নিচ্ছে। আর দেখিতে পেলাম একখানা রশি আকাশ হইতে পৃথিবী পর্যন্ত ঝুলন্ত অবস্থায় রয়েছে। হে আল্লাহর রাসূল! আমি দেখলাম, সেটা ধরে আপনি উপরে উঠে গেলেন। অতঃপর অন্য এক ব্যক্তি তা ধরে উপরের দিকে উঠে গেলেন। এরপর আরেক ব্যক্তি তা ধরে উঠতে লাগলে তা ছিঁড়ে যায়, তারপর পুনরায় তা জোড়া দেয়া হলে সেও তা দিয়ে উপরে উঠে যায়। আবু বাকর [রাদি.] বলিলেন, আমার পিতা-মাতার কসম! আমাকে অনুমতি দিন আমিই এর ব্যাখ্যা করি। তিনি বলিলেন, ঠিক আছে, করুন। তিনি {আবু বকর [রাদি.]} বলিলেন, মেঘ হলো ইসলামের মেঘ, আর মেঘ হইতে যে মধু ও মাখন ঝরে পড়ছে তা হলো কুরআনের মাধুর্যতা ও আস্বাদ, আর কম-বেশি গ্রহণ হলো কুরআন হইতে বেশি হিদায়াত গ্রহণ ও কম গ্রহণ করা। আর আকাশ হইতে পৃথিবী পর্যন্ত ঝুলন্ত রশিটি হলো সেই সত্য যার উপর আপনি রয়েছেন এবং এটা ধরেই আল্লাহ আপনাকে উর্ধ্বে উঠাবেন। অতঃপর এক ব্যক্তি তা ধরে উপরে উঠবেন {তিনি হলেন, আবু বকর [রাদি.]}। তারপর এক ব্যক্তি তা ধরে উপরের দিকে উঠতেই তা ছিঁড়ে যাবে। তারপর পুনরায় জুড়ে দেয়া হলে তা ধরে তিনিও উপরে উঠবেন {তিনি হলেন উসমান [রাদি.]}। হে আল্লাহর রাসূল! আমি ভুল বলেছি না ঠিক বলেছি বলে দিন। তিনি বলিলেন, কিছুটা ঠিক হয়েছে এবং কিছুটা ভুল হয়েছে। তিনি বলিলেন, আমি কসম করে বলছি! আমার যা ভুল হয়েছে তা হে আল্লাহর রাসূল! আমাকে অবশ্যই বলে দিন। এতে নাবী [সাঃআঃ] বলিলেনঃ তুমি কসম করো না।

সাহাবী ও খলিফাদের জীবনী সম্পর্কে – এই হাদিসের তাহকিকঃ সহিহ হাদিস

৪৬৩৩. ইবনি আব্বাস [রাদি.] হইতে নাবী [সাঃআঃ] সূত্রে হইতে বর্ণীতঃ

অনুরূপ ঘটনাটি বর্ণিত। তিনি বলেন, তিনি তাহাকে ভুল-ত্রুটি অবহিত করিতে অসম্মতি জানান।

এই হাদিসের তাহকিকঃ দুর্বল হাদিস

৪৬৩৪. আবু বাক্‌রাহ [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

একদিন নাবী [সাঃআঃ] বলিলেনঃ তোমাদের মধ্যে কে স্বপ্ন দেখেছে? এক ব্যক্তি বললো, আমি দেখেছি যে, আসমান হইতে যেন একটি দাড়িপাল্লা নেমে এলো। তাতে আপনাকে এবং আবু বাকর [রাদি.] -কে ওজন করা হলো। এতে দেখা গেল যে, আপনার ওজনই আবু বাকর [রাদি.] -এর চেয়ে বেশি। অতঃপর আবু বাক্‌র ও উমার [রাদি.] -কে ওজন করা হলে দেখা গেল, আবু বকর [রাদি.] -এর ওজন বেশি হয়েছে। তারপর উমার ও উসমান [রাদি.] -কে ওজন করা হলে উমার[রাদি.]-এর ওজন বেশি হলো। অতঃপর দাড়িপাল্লাটি উপরে তুলে নেয়া হলো। আমরা রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ]-এর চেহারায় অসন্তুষ্টির ভাব দেখলাম।

সাহাবী ও খলিফাদের জীবনী সম্পর্কে – এই হাদিসের তাহকিকঃ সহিহ হাদিস

৪৬৩৫. আবদুর রহমান ইবনি আবু বাক্‌রাহ [রহমাতুল্লাহি আলাইহি] হইতে বর্ণীতঃ

একদিন নাবী [সাঃআঃ] বলিলেনঃ তোমাদের মধ্যে কে স্বপ্ন দেখেছে? অতঃপর উপরোক্ত হাদিসের অনুরূপ অর্থে বর্ণিত। তবে অসন্তুষ্টির কথা উল্লেখ নেই। বরং বর্ণনাকারী বলেন, একথা শুনে রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] বিরক্তি প্রকাশ করে বলিলেন, তুমি যা দেখেছ তার ব্যাখ্যা হলো, নবুওয়্যাতের প্রতিনিধিত্বের পর হলো রাজতন্ত্র; আল্লাহ যাকে ইচ্ছা রাজত্ব দান করেন।

সাহাবী ও খলিফাদের জীবনী সম্পর্কে – এই হাদিসের তাহকিকঃ সহিহ হাদিস

৪৬৩৬. জাবির ইবনি আবদুল্লাহ [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

তিনি বর্ণনা করেন, রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলেনঃ আমাকে স্বপ্নে এক পুণ্যবান ব্যক্তিকে দেখানো হয়েছে, আবু বকর [রাদি.] রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ]-এর সাথে সংযুক্ত রয়েছেন, উমার[রাদি.] আবু বকর [রাদি.] -এর সঙ্গে এবং উসমান[রাদি.] উমার[রাদি.] -এর সঙ্গে সংযুক্ত রয়েছেন। জাবির [রাদি.] বলেন, যখন আমরা রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ]-এর নিকট হইতে উঠে দাঁড়ালাম তখন আমরা বলিলাম, সেই পুণ্যবান ব্যক্তি হলেন, রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ]। আর একে অপরের সাথে যুক্ত হলো, নাবী [সাঃআঃ]-কে যে নির্দেশ দিয়ে আল্লাহ প্রেরণ করেছেন তাঁরা তারই অভিভাবক। {৪৬৩৫}

দুর্বল। {৪৬৩৫} আহমাদ, হাকিম। ঈমাম হাকিম এর সনদকে সহিহ বলিয়াছেন। কিন্তু সানাদে আমর ইবনি আবান বিন উসমান রয়েছে। তার অবস্থা অজ্ঞাত। হাফিয বলেনঃ মাক্ববূল। এই হাদিসের তাহকিকঃ দুর্বল হাদিস

৪৬৩৭. সামুরাহ ইবনি জুন্‌দুব [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

এক ব্যক্তি বললো, হে আল্লাহর রাসূল! আমি স্বপ্নে দেখলাম, একটি বালতি আকাশ হইতে ঝুলন্ত অবস্থায় রয়েছে। অতঃপর আবু বাকর [রাদি.] এসে এর কাঠের হাতলের দুই প্রান্ত ধরে যৎসামান্য পান করিলেন। অতঃপর উমার [রাদি.] এসে বালতির কাঠের হাতলের দুই প্রান্ত ধরলেন এবং পেটভরে পান করিলেন। তারপর উসমান[রাদি.] আসলেন এবং এর কাঠের হাতলের দুই প্রান্ত ধরে পেটভরে পান করিলেন। অতঃপর আলী [রাদি.] এসে তার কাঠের হাতলের দুই প্রান্ত ধরলে তা দোল খেতে থাকে এবং কিছু পানি তা হইতে ছিটকে তার দেহে পড়ে যায়। {৪৬৩৬}

দুর্বল। {৪৬৩৬} আহমাদ, ইবনি আবু আসিম আস-সুন্নাহ। ঈমাম যাহাবী বলেনঃ সানদে আশআস এর অবস্থা অজ্ঞাত এবং তার পিতা আবদুর রহমান আযদী সম্পর্কে হাফিয বলেনঃ মাক্ববূল। এই হাদিসের তাহকিকঃ দুর্বল হাদিস

৪৬৩৮. মাকহুল [রহমাতুল্লাহি আলাইহি] হইতে বর্ণীতঃ

তিনি বলেন, রোমীয়রা সিরিয়ায় প্রবেশ করে চল্লিশ দিন অবস্থান করিবে এবং দামিস্ক ও আম্মান ব্যতীত কোন স্থানই তাহাদের থেকে নিরাপদ থাকিবে না।

এই হাদিসের তাহকিকঃ দুর্বল মাকতু

৪৬৩৯. আবদুল আযীয ইবনিল আলা [রহমাতুল্লাহি আলাইহি] হইতে বর্ণীতঃ

আবুল আয়াস আবদুর রহমান ইবনি সালমান [রহমাতুল্লাহি আলাইহি] -কে বলিতে শুনেছেন, অচিরেই একজন বিদেশী বাদশাহ দামিস্ক ছাড়া অন্যান্য সকল শহরের উপর বিজয়ী হইবে।

এই হাদিসের তাহকিকঃ সহিহ মাকতু

৪৬৪০. মাকহুল [রহমাতুল্লাহি আলাইহি] হইতে বর্ণীতঃ

রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলিয়াছেনঃ তুমুল যুদ্ধের সময় মুসলিমদের সমাবেশ স্থলের নাম হলো গূত্বাহ।

সাহাবী ও খলিফাদের জীবনী সম্পর্কে – এই হাদিসের তাহকিকঃ সহিহ হাদিস

৪৬৪১. আওফ [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

তিনি বলেন, আমি হাজ্জাজকে ভাষণ দানকালে বলিতে শুনেছিঃ নিশ্চয়ই উসমান[রাদি.] -এর উদাহরণ মহান আল্লাহর নিকট মরিয়মের পুত্র ঈসা [আঃ]-এর মত। অতঃপর তিনি এ আয়াত পড়ে ব্যাখ্যা করলেনঃ “যখন আল্লাহ বলেছিলেন, হে ঈসা! আমি তোমাকে ফিরিয়ে আনবো এবং তোমাকে আমার নিকট উঠিয়ে আনবো। তোমাকে যারা মেনে নিতে অস্বীকার করেছে তাহাদের সাহচার্য থেকে তোমাকে পবিত্র করবো [সূরাহ আল-ইমরানঃ ৫৫] এবং সে তার হাতের মাধ্যমে আমাদের সিরিয়াবাসীদের দিকে ইঙ্গিত করছিলো।

এই হাদিসের তাহকিকঃ দুর্বল মাকতু

৪৬৪২. ইবনি খালিদ আদ-দাব্বী [রহমাতুল্লাহি আলাইহি] হইতে বর্ণীতঃ

তিনি বলেন, আমি হাজ্জাজকে তার ভাষণে বলিতে শুনেছিঃ তোমাদের কারো প্রয়োজনে প্রেরিত দূত তার নিকট বেশী সম্মানিত না তার পরিবারের মধ্যে তার প্রতিনিধি? একথা শুনে আমি মনে মনে বলিলাম, আল্লাহর কসম! আমার এখন কর্তব্য হলো, তোমার পিছনে কখনো সালাত না পড়া। আর আমি যদি এমন কোন দল পাই যারা তোমার বিরুদ্ধে সংগ্রাম করিবে তবে আমিও তাহাদের সঙ্গী হয়ে তোমার বিরুদ্ধে সংগ্রাম করবো। ইসহাক্ব [রহমাতুল্লাহি আলাইহি] তার হাদিসের বৃদ্ধি করেন যে, তিনি বলেন, জামাজিম যুদ্ধক্ষেত্রে যুদ্ধ করিতে গিয়ে শেষ পর্যন্ত তিনি নিহত হন।

এই হাদিসের তাহকিকঃ দুর্বল মাকতু

৪৬৪৩. আসিম [রহমাতুল্লাহি আলাইহি] হইতে বর্ণীতঃ

তিনি বলেন, আমি হাজ্জাজকে মিম্বারের উপর দাঁড়িয়ে বলিতে শুনেছিঃ তোমরা যথাসাধ্য আল্লাহকে ভয় করো, এতে কোন ব্যতিক্রম নেই। আর আমিরুল মুমিনীন আবদুল মালিকের [আদেশ] শুনো এবং অনুসরণ করো, এতেও কোন ব্যতিক্রম নেই। আল্লাহর কসম! আমি লোকদেরকে যদি মাসজিদের এক দরজা দিয়ে বের হয়ে যাওয়ার নির্দেশ দেই এবং তারা অন্য দরজা দিয়ে বের হয়, তাহলে আমার জন্য তাহাদের রক্ত ও সম্পদ বৈধ। আল্লাহর কসম! যদি আমি রবীআহ গোত্রকে মুদার গোত্রের অপরাধের জন্য শাস্তি দেই এটাও আমার জন্য আল্লাহর পক্ষ হইতে বৈধ। হুজাইল পুত্র মনে করে যে, সে যেভাবে কুরআন পড়ে তা আল্লাহর পক্ষ হইতে। আল্লাহর কসম! তা তো বেদুঈনদের সঙ্গীতমালার মধ্যকার সঙ্গীতমাত্র। তা আল্লাহ তার নাবীর উপর নাযীল করেননি। অনারব লোকদের পক্ষ হইতে কে আমার নিকট ওজনখানি করিবে। তাহাদের মধ্যকার কেউ পাথর নিক্ষেপ করে, অতঃপর বলে, দ্যাখো! এই পাথর কতো দূর গিয়ে পৌঁছে। সে একটি নতুন ঘটনার জন্ম দিলো। আল্লাহর কসম! আমি তাহাদেরকে গতকালের ন্যায় নিশ্চিহ্ন করবো। বর্ণনাকারী বলেন, আমি কথাগুলো আল-আমাশ [রহমাতুল্লাহি আলাইহি] -এর নিকট বর্ণনা করলে তিনি বলেন, আল্লাহ্‌র কসম! আমিও তাহাকে কথাগুলো বলিতে শুনিয়াছি।

সনদ সহিহ – হাজ্জাজ পর্যন্ত। সাহাবী ও খলিফাদের জীবনী সম্পর্কে – এই হাদিসের তাহকিকঃ সহিহ হাদিস

৪৬৪৪. আমাশ [রহমাতুল্লাহি আলাইহি] হইতে বর্ণীতঃ

তিনি বলেন, আমি হাজ্জাজকে মিম্বারে দাঁড়িয়ে বলিতে শুনিয়াছি, এসব অনারব আযাদকৃত গোলামদের বংশধর হত্যা ও টুকরা টুকরা করে দেয়ার যোগ্য। আল্লাহর কসম! আমি যদি চরম আঘাত হানি তাহলে তাহাদেরকে গতকালের মত নিশ্চিহ্ন করে দিবো।

সাহাবী ও খলিফাদের জীবনী সম্পর্কে – এই হাদিসের তাহকিকঃ সহিহ হাদিস

৪৬৪৫. সুলাইমান আল্‌-আমাশ [রহমাতুল্লাহি আলাইহি] হইতে বর্ণীতঃ

তিনি বলেন, আমি হাজ্জাজের সঙ্গে জুমুআহ্‌র সলাত আদায় করলাম। তিনি ভাষণ দিলেন… অতঃপর বর্ণনাকারী আবু বাক্‌র ইবনি আইয়াশের হাদিস উল্লেখ করেন। তিনি ভাষণে বলেন, তোমরা আল্লাহর প্রতিনিধি ও বন্ধু আবদুল মালিক ইবনি মারওয়ানের কথা শুনবে ও মেনে চলবে। অতঃপর হাদিসের বাকি অংশ উল্লেখ করেন। তিনি বলিলেন, আমি যদি রবীআহ গোত্রকে মুদার গোত্রের অপরাধে পাকড়াও করি। কিন্তু বর্ণনাকারী এখানে অনারবদের ঘটনাটি উল্লেখ করেননি।

সনদ সহিহ – হাজ্জাজ পর্যন্ত। সাহাবী ও খলিফাদের জীবনী সম্পর্কে – এই হাদিসের তাহকিকঃ সহিহ হাদিস

৪৬৪৬. সাফীনাহ [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলিয়াছেনঃ নবুওয়্যাতের ভিত্তিতে পরিচালিত খিলাফত ত্রিশ বছর অব্যাহত থাকিবে। অতঃপর আল্লাহর যাকে ইচ্ছা রাজত্ব বা তাহাঁর রাজত্ব দান করবেন। সাঈদ [রহমাতুল্লাহি আলাইহি] বলেন, আমাকে সাফীনাহ [রাদি.] বলিয়াছেন, হিসেব করো, আবু বকর [রাদি.] দুই বছর, উমার [রাদি.] দশ বছর, উসমান [রাদি.] বারো বছর ও আলী [রাদি.] এতো বছর খিলাফতের দায়িত্ব পালন করেছেন। সাঈদ [রহমাতুল্লাহি আলাইহি] বলেন, আমি সাফীনাহ [রাদি.] -কে বলিলাম, এরা ধারণা করে যে, আলী[রাদি.] খলীফাহ ছিলেন না। তিনি বলেন, বনী যারকা অর্থাৎ মাওয়ানের বংশধরগণ মিথ্যা বলেছে।

এই হাদিসের তাহকিকঃ হাসান সহিহ

৪৬৪৭. সাফীনাহ [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলিয়াছেনঃ নবুওয়্যাতী পন্থায় খিলাফত ত্রিশ বছর পরিচালিত হইবে। অতঃপর যাকে ইচ্ছা আল্লাহ রাজত্ব বা তাহাঁর রাজত্ব দান করবেন।

এই হাদিসের তাহকিকঃ হাসান সহিহ

৪৬৪৮. আবদুল্লাহ ইবনি যালিম আল্‌-মাযিনী [রহমাতুল্লাহি আলাইহি] হইতে বর্ণীতঃ

তিনি বলেন, সাঈদ ইবনি যায়িদ ইবনি আমর ইবনি নুফাইল [রাদি.] বলিয়াছেন এবং আমি শুনিয়াছি, অমুক লোক [মুআবিয়াহ] যখন কুফায় এলেন তখন অমুকে [মুগীরাহ ইবনি শুবাহ] ভাষণ দিতে দাঁড়ালেন {ভাষণে আলী [রাদি.] -এর মর্যাদার পরিপন্থী কথা থাকায়} সাঈদ ইবনি যায়িদ [রাদি.] আমার হাত ধরে বলিলেন, এ যালিম তার ভাষণে কি বলছে তুমি কি লক্ষ্য করছো না? তারপর তিনি নয় ব্যক্তির জান্নাতবাসী হওয়া সম্বন্ধে সাক্ষ্য দিলেন এবং আরো বলিলেন, আমি যদি দশম ব্যক্তির নামও উল্লেখ করি তাতে আমি গুনাহগার হবো না। আবদুল্লাহ ইবনি যালিম [রহমাতুল্লাহি আলাইহি] বলেন, আমি বলিলাম, এই নয়জন কে কে? তিনি [সাঈদ] বলেন, রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] হেরা পাহাড়ে দাঁড়িয়ে পাহাড়টিকে কাঁপতে দেখে বলিলেন, ওহে হেরা! স্থির হও। কেননা তোমার উপর একজন নাবী, একজন সিদ্দীক এবং একজন শহীদ অবস্থান করছেন। আমি পুনরায় বলিলাম, সেই নয়জন কে কে? তিনি বলিলেন, রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলিয়াছেনঃ আবু বাক্‌র, উমার, উসমান, আলী, ত্বালহা, যুবাইর, সাদ ইবনি আবু ওয়াক্‌কাস, ও আবদুর রহমান ইবনি আওফ [রাদি.]। আমি বলিলাম, দশম ব্যক্তি কে? তখন তিনি খানিক চুপ থেকে বলিলেন, আমি।

সাহাবী ও খলিফাদের জীবনী সম্পর্কে – এই হাদিসের তাহকিকঃ সহিহ হাদিস

৪৬৪৯. আবদুর রহমান ইবনিল আখনাস [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

তিনি মাসজিদে থাকাবস্থায় এক ব্যক্তি আলী [রাদি.] এর সমালোচনা করলে সাঈদ ইবনি যায়িদ [রাদি.] দাঁড়িয়ে বলেন, আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলিয়াছেনঃ দশ ব্যক্তি জান্নাতীঃ নাবী [সাঃআঃ] জান্নাতী, আবু বকর [রাদি.] জান্নাতী, উমার [রাদি.] জান্নাতী, উসমান [রাদি.] জান্নাতী, আলী [রাদি.] জান্নাতী, ত্বালহা [রাদি.] জান্নাতী, যুবাইর ইবনিল আওয়াম জান্নাতী, সাদ ইবনি মালিক [রাদি.] জান্নাতী, আবদুর রহমান ইবনি আওফ জান্নাতী। আমি [সাঈদ ইবনি যায়িদ] ইচ্ছা করলে দশম ব্যক্তির নামও বলিতে পারি। বর্ণনাকারী বলেন, তখন তারা বলিলেন, তিনি কে? তখন তিনি চুপ থাকলেন। বর্ণনাকারী বলেন, পুনরায় তারা বলিলেন, তিনি কে? বর্ণনাকারী বলেন, [আমি] সাঈদ ইবনি যায়িদ।

সাহাবী ও খলিফাদের জীবনী সম্পর্কে – এই হাদিসের তাহকিকঃ সহিহ হাদিস

৪৬৫০. রিয়াহ ইবনিল হারিস [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

তিনি বলেন, একদা আমি অমুক লোকের [মুগীরাহ ইবনি শুবার] নিকট কুফার মাসজিদে বসা ছিলাম এবং তার নিকট কুফার লোকজনও উপস্থিত ছিল। এ সময় সাঈদ ইবনি যায়িদ আমর ইবনি নুফাইল [রাদি.] এলে তিনি তাহাকে সাদর সম্ভাষণ ও সালাম জানিয়ে খাটের উপর নিজের পায়ের কাছে বসালেন। অতঃপর ক্বাইস ইবনি আলক্বামাহ নামক জনৈক কুফাবাসী এলে তাহাকেও অভ্যর্থনা জানালেন। তারপর সে গালাগালি করিতে লাগলো। সাঈদ [রাদি.] বলিলেন, এ ব্যক্তি কাকে গালি দিচ্ছে? তিনি বলিলেন, সে আলী [রাদি.] -কে গালি দিচ্ছে। তিনি বলিলেন, আমি দেখিতে পাচ্ছি, সে রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ]-এর সাহাবীকে আপনার সম্মুখে গালি দিচ্ছে অথচ আপনি তাহাকে নিষেধ করছেন না আর থামাচ্ছেনও না! আমি রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ]-কে বলিতে শুনেছিঃ আমি তাহাঁর সম্পর্কে এমন উক্তি করা হইতে মুক্ত যা তিনি বলেননি। অতঃপর ক্বিয়ামাতের দিন যখন তার সঙ্গে আমার সাক্ষাৎ হইবে তখন এ ব্যাপারে জিজ্ঞাসাবাদ করবেন। আবু বকর [রাদি.] জান্নাতী, উমার [রাদি.] জান্নাতী। বর্ণনাকারী অতঃপর অনুরূপ অর্থের বর্ণনা করিলেন এবং তিনি বলিলেন, তাহাদের কোন একজনের রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ]-এর সাহচর্য লাভ, যে সাহচর্যে তিনি সন্তুষ্ট ছিলেন না তাও তোমাদের কোন ব্যক্তির সারা জীবনের আমলের চেয়ে উত্তম, যদিও সে নূহ [আঃ]-এর মতো দীর্ঘ আয়ু পায়।

সাহাবী ও খলিফাদের জীবনী সম্পর্কে – এই হাদিসের তাহকিকঃ সহিহ হাদিস

৪৬৫১. ক্বাতাদাহ [রহমাতুল্লাহি আলাইহি] হইতে বর্ণীতঃ

আনাস ইবনি মালিক [রাদি.] তাহাদের নিকট বর্ণনা করেন, একদা নাবী [সাঃআঃ] উহুদ পাহাড়ে উঠলেন। অতঃপর আবু বাক্‌র, উমার ও উসমান [রাদি.] তাহাঁর অনুসরণ করিলেন। পাহাড় কাঁপতে থাকলে আল্লাহর নাবী [সাঃআঃ] একে পদাঘাত করে বলিলেন, “উহুদ স্থির হও! তোমার উপর একজন নাবী, একজন সিদ্দীক ও দুজন শহীদ [উমার ও উসমান] রয়েছেন।

সাহাবী ও খলিফাদের জীবনী সম্পর্কে – এই হাদিসের তাহকিকঃ সহিহ হাদিস

৪৬৫২. জাবির [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলিয়াছেন, যারা গাছের নিচে বাইআত করেছে তাহাদের কেউ জাহান্নামে প্রবেশ করিবে না।

সাহাবী ও খলিফাদের জীবনী সম্পর্কে – এই হাদিসের তাহকিকঃ সহিহ হাদিস

৪৬৫৩. আবু হুরাইরাহ [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলিয়াছেনঃ বর্ণনাকারী মূসার বর্ণনায় রয়েছেঃ “আশা করা যায়, মহান আল্লাহ” এবং বর্ণনাকারী ইবনি সিনান [রহমাতুল্লাহি আলাইহি]-এর বর্ণনা রয়েছেঃ “আল্লাহ্‌ বদরের যুদ্ধে অংশগ্রহণ কারীদেরকে অবহিত করে বলেন, তোমরা যা ইচ্ছা আমল করো, অবশ্যই আমি তোমাদেরকে ক্ষমা করে দিয়েছি।

এই হাদিসের তাহকিকঃ হাসান সহিহ

৪৬৫৪. আল-মিসওয়ার ইবনি মাখরামা [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

তিনি বলেন, নাবী [সাঃআঃ] হুদায়বিয়ার সময় রওয়ানা হলেন। অতঃপর বর্ণনাকারী হাদিসটি উল্লেখ করেন। তিনি বলেন, তখন উরওয়াহ ইবনি মাসউদ এসে নাবী [সাঃআঃ]-এর সঙ্গে আলাপ করিতে লাগলো এবং সে বরাবর তাহাঁর দাড়ি মুবারকে হাত লাগালো। তখন মুগারাহ ইবনি শুবাহ [রাদি.] নাবী [সাঃআঃ]-এর পাশে দাঁড়িয়েছিলেন এবং তার হাতে তরবারি ও মাথায় শিরস্ত্রাণ ছিল। তিনি তার হাতে তরবারির হাতল দিয়ে আঘাত করে বলিলেন, তোমার হাত তাহাঁর দাড়ি থেকে সরাও। উরওয়াহ মাথা তুলে বললো, ইনি কে? তারা বলিলেন, ইনি হলেন মুগীরাহ ইবনি শুবাহ [রাদি.]।

সাহাবী ও খলিফাদের জীবনী সম্পর্কে – এই হাদিসের তাহকিকঃ সহিহ হাদিস

৪৬৫৫. আবু হুরাইরাহ [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলিয়াছেনঃ জিবরাঈল [আঃ] এসে আমার হাত ধরে আমার উম্মাত জান্নাতের যে দরজা দিয়ে তাতে প্রবেশ করিবে তা দেখালেন। আবু বকর [রাদি.] বলিলেন, হে আল্লাহর রাসূল! আমার একান্ত বাসনা যে, আমি তা দেখা পর্যন্ত আপনার সঙ্গে থাকি। রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলিলেনঃ হে আবু বাক্‌র! আমার উম্মাতের মধ্যে যে ব্যক্তি সর্বপ্রথম জান্নাতে প্রবেশ করিতে সে তুমিই। {৪৬৫৪}

দুর্বলঃ মিশকাত হা/৬০২৪। {৪৬৫৪} এটি জিহাদ অধ্যায়ে গত হয়েছে। এই হাদিসের তাহকিকঃ দুর্বল হাদিস

৪৬৫৬. উমর ইবনিল খাত্তাব [রাদি.] এর মুয়াজ্জিন আকরা [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

তিনি বলেন, উমার [রাদি.] আমাকে উশকুফ [খৃস্টানদের ধর্মগুরু]-এর নিকট প্রেরণ করিলেন। আমি তাহাকে ডেকে আনলে উমার [রাদি.] তাহাকে বলিলেন, তুমি আমার সম্পর্কে কোন কিছু কিতাবে দেখিতে পাও কি? তিনি বলিলেন, হ্যাঁ। তিনি বলিলেন, আমাকে কিভাবে পাও। তিনি বলিলেন, আমি আপনাকে দুর্গ হিসেবে পাই। বর্ণনাকারী বলেন, উমার [রাদি.] তার উপর চাবুক তুলে বলিলেন, দুর্গ মানে? সে বললো, একটি লৌহ দুর্গ ও কঠোর আস্থাভাজন ব্যক্তি। তিনি বলেন, আমার পরে যিনি আসবেন তাহাকে তুমি কেমন পাচ্ছো? তিনি বলিলেন, আমি তাহাকে পুন্যবান খলীফাহ হিসেবে পাচ্ছি, তবে তিনি আত্মীয়দের দ্বারা প্রভাবিত হইবেন। উমার [রাদি.] তিনবার বলিলেন, আল্লাহ্‌ উসমানের উপর দয়া করুন। উমার [রাদি.] বলিলেন, তারপর যিনি আসবেন তাহাকে কেমন পাচ্ছো? উশকুফ বলেন, তাঁকে লোহার মরিচা হিসেবে পাচ্ছি। বর্ণনাকারী বলেন, তারপর উমার [রাদি.] তার হাত তার মাথায় রেখে বলেন, হে দুর্গন্ধ, হে দুর্গন্ধ! ধর্মগুরু বললো, হে আমীরুল মুমিনীন! তিনি একজন সৎ ও ন্যায়নিষ্ঠ খলীফাহ, কিন্তু যখন তাহাকে নির্বাচন করা হইবে তখন তরবারি কোষমুক্ত অবস্থায় থাকিবে এবং হানাহানি চলবে। {৪৬৫৫}

সনদ দুর্বল। {৪৬৫৫} আবু দাউদ এটি এককভাবে বর্ণনা করেন। এই হাদিসের তাহকিকঃ দুর্বল হাদিস

অনুচ্ছেদ-১০ঃ রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ]-এর সাহাবীগণের ফাযীলাত

৪৬৫৭. ইমরান ইবনি হুসাইন [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলিয়াছেনঃ আমার উম্মাতের মধ্যে সর্বোত্তম হলো তারা যাদের মধ্যে আমি প্রেরিত হয়েছি। অতঃপর যারা তাহাদের সঙ্গে সংলগ্ন, আল্লাহই ভালো জানেন যে, তিনি তৃতীয় স্তরটি উল্লেখ করেছেন কিনা। তারপর এমন সম্প্রদায়ের আবির্ভাব ঘটবে যারা সাক্ষী হিসেবে তাহাদেরকে না ডাকা হলেও সাক্ষ্য দিবে। তার মান্নাত করে তা পূর্ণ করিবে না, তারা আত্মসাৎ করিবে এবং আমানতদার হইবে না। আর তাহাদের মধ্যে মেদ-ভূঁড়ি প্রকাশ পাবে।

সাহাবী ও খলিফাদের জীবনী সম্পর্কে – এই হাদিসের তাহকিকঃ সহিহ হাদিস

অনুচ্ছেদ-১১ঃ রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ]–এর সাহাবীদের গালি দেয়া নিষেধ

৪৬৫৮. আবু সাঈদ [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলিয়াছেনঃ তোমরা আমার সাহাবীদেরকে গালি দিও না। যে মহান সত্ত্বার হাতে আমার জীবন তাহাঁর কসম! তোমাদের মধ্যে কেউ যদি উহুদ পাহাড় পরিমাণ স্বর্ণ [দান] ব্যয় করে তবে তা তাহাদের কোন একজনের এক মুদ্দ বা অর্ধ মুদ্দ ব্যয়ের সমানও হইবে না।

সাহাবী ও খলিফাদের জীবনী সম্পর্কে – এই হাদিসের তাহকিকঃ সহিহ হাদিস

৪৬৫৯. আমর ইবনি আবু কুর্‌রা [রহমাতুল্লাহি আলাইহি] হইতে বর্ণীতঃ

তিনি বলেন, হুযাইফাহ [রাদি.] মাদায়েনে অবস্থানকালে এমন কিছু কথা উল্লেখ করেন, যে কথাগুলো রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] অসন্তুষ্ট অবস্থায় কতিপয় সাহাবীকে বলেছিলেন। হুযাইফাহ [রাদি.] -এর কথাগুলো যারা শুনিয়াছিলেন, তাহাদের কতক এসে সালমান [রাদি.] -এর নিকট হুযাইফাহর [রাদি.] বক্তব্যের বর্ণনা দিলে সালমান [রাদি.] বলেন, হুযাইফাহ [রাদি.] যা বলিয়াছেন, তা তিনিই ভালো জানেন। অতঃপর তারা হুযাইফাহ্‌র [রাদি.] নিকট ফিরে এসে বলিলেন, আমরা সালমান [রাদি.] -এর নিকট আপনার কথাগুলো বলেছি কিন্তু তিনি আপনার কথার সমর্থন বা অসমর্থন কোনটাই দেননি। অতঃপর হুযাইফাহ [রাদি.] সালমান [রাদি.] -এর সঙ্গে সবজি বাগানে সাক্ষাত করে বলেন, হে সালমান! যে কথা আমি রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ]-এর নিকট শুনিয়াছি তার সমর্থন দিতে তোমাকে কিসে বিরত রেখেছে? সালমান [রাদি.] বলিলেন, রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] অসন্তুষ্ট হলে তাহাঁর কিছু সাহাবীকে কিছু কথা বলিতেন এবং তাহাঁর সাহাবীদের মধ্যে কারো উপর সন্তুষ্ট হয়ে সন্তোষসূচক কিছু কথা বলিতেন। যদি তুমি এ বিষয়গুলোর উল্লেখ হইতে বিরত না থাকো, তাহলে তুমি অনেক লোককে পরস্পর ভালোবাসা ও বন্ধুত্বে আবদ্ধ করিবে আর এক দলকে পরস্পর মনমালিন্য ও অসন্তোষে ফেলবে, এতে দলাদলির সৃষ্টি হইবে। তুমি জানো, রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] তাহাঁর ভাষণে বলিয়াছেন, আমার উম্মাতের কাউকে আমি অসন্তুষ্ট অবস্থায় মন্দ বলি বা অভিশাপ দেই কেননা আদম সন্তান হিসাবে আমিও তাহাদের মতো অসন্তুষ্ট হয়ে থাকি। তিনি আমাকে সৃষ্টিকুলের জন্য করুণার আঁধার করে পাঠিয়েছেন। হে আল্লাহ! আমার গালি ও অভিশাপকে ক্বিয়ামাতের দিন তাহাদের জন্য রহমতে পরিণত করো। এরপর সালমান [রাদি.] বলেনঃ আল্লাহর কসম! যদি তুমি বিরত না থাকো তাহলে আমি অবশ্যই উমার [রাদি.] -কে লিখে পাঠাবো। অতঃপর কিছু সংখ্যক লোকের দ্বারা তার উপর চাপ সৃষ্টি করা হলে তিনি তার কসম ভঙ্গের কাফ্‌ফারাহ দিলেন, উমার [রাদি.] -কে চিঠি লিখেননি এবং কসম ভঙ্গের আগেই কাফ্‌ফারাহ দিলেন। ঈমাম আবু দাউদ [রহমাতুল্লাহি আলাইহি] বলেন, কসম ভঙ্গের [কাফ্‌ফারাহ] আগে বা পরে দেয়া উভয়ই জায়িয।

সাহাবী ও খলিফাদের জীবনী সম্পর্কে – এই হাদিসের তাহকিকঃ সহিহ হাদিস

অনুচ্ছেদ-১২ঃ আবু বাক্‌র [রাদি.] -এর খিলাফাত সম্পর্কে

৪৬৬০. আবদুল্লাহ ইবনি যামআহ্ [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ]-এর রোগ যখন মারাত্মক রূপ ধারণ করলো তখন আমি মুসলিমদের একটি দলের সঙ্গে তাহাঁর নিকট উপস্থিত ছিলাম। বিলাল [রাদি.] তাঁকে সলাতের জন্য ডাকলে তিনি বলিলেন, “লোকদের সলাত পড়াতে তোমরা কাউকে নির্দেশ দাও।” অতঃপর আবদুল্লাহ ইবনি যামআহ্ [রাদি.] বেরিয়ে এসে দেখলেন লোকদের মধ্যে উমার [রাদি.] উপস্থিত আছেন, কিন্তু আবু বকর [রাদি.] অনুপস্থিত। আমি বলিলাম, হে উমার! আপনি দাঁড়িয়ে সলাত পড়ান। অতএব তিনি সামনে এসে তাকবীর তাহরীমা বলিলেন। উমার [রাদি.] উচ্চস্বরসম্পন্ন হওয়ায় যখন রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] তার শব্দ শুনতে পেলেন তখন বলিলেন, আবু বাকর কোথায়? আল্লাহ এবং মুসলিমগণ এটা [আবু বাকর ছাড়া অন্য কারোর ঈমামতি] অপছন্দ করেন। তিনি পুনরায় বলিলেন, আল্লাহ ও মুসলিমগণ এটা অপছন্দ করেন। অতএব আবু বকর [রাদি.]-এর নিকট লোক পাঠানো হলো, কিন্তু তিনি উমার [রাদি.]-এর ঐ ওয়াক্তের সলাত পড়ানোর পরে উপস্থিত হলেন এবং এরপর হইতে তিনি লোকদের সলাতে ঈমামতি করেন।

এই হাদিসের তাহকিকঃ হাসান সহিহ

৪৬৬১. আবদুল্লাহ ইবনি উতবাহ [রহমাতুল্লাহি আলাইহি] হইতে বর্ণীতঃ

এ হাদিস সম্পর্কে তাহাকে আবদুল্লাহ ইবনি যামআহ্ [রাদি.] জানিয়েছেন। তিনি বলেন, নাবী [সাঃআঃ] উমার [রাদি.]-এর কন্ঠস্বর শোনার সঙ্গে উঠে এসে তাহাঁর ঘর থেকে মাথা বের করে ক্রোধের সঙ্গে বলিলেন, না, না, না; আবু কুহাফার পুত্র যেন লোকদের সলাতে ঈমামতি করে।

সাহাবী ও খলিফাদের জীবনী সম্পর্কে – এই হাদিসের তাহকিকঃ সহিহ হাদিস


Posted

in

by

Comments

Leave a Reply