খবরে ওয়াহিদ আযান, সালাত, সওম, ফরয ও অন্যান্য বিষয়ে অনুমোদনযোগ্য

খবরে ওয়াহিদ আযান, সালাত, সওম, ফরয ও অন্যান্য বিষয়ে অনুমোদনযোগ্য

খবরে ওয়াহিদ আযান, সালাত, সওম, ফরয ও অন্যান্য বিষয়ে অনুমোদনযোগ্য >> বুখারী শরীফ এর মুল সুচিপত্র পড়ুন

পর্বঃ ৯৫, খবরে ওয়াহিদ, অধ্যায়ঃ (১-৬)=৬টি

৯৫/১. অধ্যায়ঃ সত্যবাদী বর্ণনাকারীর খবরে ওয়াহিদ আযান, সালাত, সওম, ফরয ও অন্যান্য আহ্কামের বিষয়ে অনুমোদনযোগ্য।
৯৫/২. অধ্যায়ঃ নাবী (সাঃআঃ) একা যুবায়র (রাদি.)-কে শত্রুদের খবর নেয়ার জন্য পাঠিয়েছিলেন।
৯৫/৩. অধ্যায়ঃ আল্লাহ তাআলার বাণীঃ “হে মুমিনগণ! তোমরা অনুমতি ছাড়া নাবীর গৃহে প্রবেশ করো না”-(সুরা আন্-নূর ২৪/২৭)।. যদি একজন তাকে অনুমতি দেয় তবে প্রবেশ করা বৈধ।
৯৫/৪. অধ্যায়ঃ নাবী (সাঃআঃ) আমীর ও দূতদেরকে একজনের পর একজন করে পাঠাতেন।
৯৫/৫. অধ্যায়ঃ আরবের বিভিন্ন প্রতিনিধি দলের প্রতি নাবী (সাঃআঃ)-এর ওসিয়ত ছিল, যে তারা (তাহাঁর কথাগুলো) তাদের পরবর্তী মানুষের কাছে পৌছে দেয়।
৯৫/৬. অধ্যায়ঃ একজন মাত্র মহিলার দেয়া খবর।

৯৫/১. অধ্যায়ঃ সত্যবাদী বর্ণনাকারীর খবরে ওয়াহিদ আযান, সালাত, সওম, ফরয ও অন্যান্য আহ্কামের বিষয়ে অনুমোদনযোগ্য।

আল্লাহর কথাঃ “তাদের প্রত্যেক দল থেকে একটি অংশ কেন বের হয় না যাতে তারা দ্বীন সম্পর্কে জ্ঞানের অনুশীলন করিতে পারে এবং ফিরে আসার পর তাদের সম্প্রদায়কে সতর্ক করিতে পারে যাতে তারা (অসদাচরণ) থেকে বিরত হয় ?” (সুরা আত্-তওবা ৯/১২২)

(আরবী শব্দ) শব্দটি এক ব্যক্তিকেও বুঝায়। কেননা, আল্লাহর বাণীঃ “মুমিনদের দুদল লড়াইয়ে জড়িয়ে পড়লে তাদের মধ্যে মীমাংসা করে দাও। অতঃপর একটি দল অপরটির উপর বাড়াবাড়ি করলে যে দলটি বাড়াবাড়ি করে, তার বিরূদ্ধে তোমরা লড়াই কর যতক্ষণ না সে দলটি আল্লাহর নির্দেশের দিকে ফিরে আসে। অতঃপর যদি দলটি ফিরে আসে, তাহলে তাদের মধ্যে ইনসাফের সঙ্গে ফায়সালা কর আর সুবিচার কর; আল্লাহ সুবিচারকারীদেরকে ভালবাসেন” (সুরা আল-হুজুরাত ৪৯/৯)।

অতএব যদি দুব্যক্তি দ্বন্দ্বে লিপ্ত হয় তবে তা এ আয়াতের অর্থের মধ্যে শামিল হইবে। আল্লাহর বাণীঃ “যদি কোন পাপাচারী তোমাদের কাছে কোন বার্তা নিয়ে আসে তোমরা তা পরখ করে দেখবে যাতে অজ্ঞতার কারণে তোমরা কোন সম্প্রদায়কে ক্ষতিগ্রস্ত না কর…” (সুরা আল-হুজুরাত ৪৯/৬)। নাবী (সাঃ) কিরূপে তাহাঁর আমীরদেরকে পর্যায়ক্রমে এক এক করে পাঠাতেন- যাতে তাদের কেউ ভুল করলে তাকে সুন্নাতের দিকে ফিরিয়ে আনা হয়।

[খবরে ওয়াহিদ-১৮৫] আযান, সালাত, সওম এবং অন্যান্য ফরয ইবাদতের ব্যাপারে কোন বিশ্বস্ত ব্যক্তির একক সাক্ষ্যকে খবরে ওয়াহিদ বলে। উসূলে হাদীসে এক, দু বা তিনজন রাবী (বর্ণনাকারী) কর্তৃক বর্ণিত হাদীসকে খবরে ওয়াহিদ বলে।

ইবাদত, ফারায়েজ ও আহকামের ক্ষেত্রে (আরবী শব্দ) খবরে ওয়াহেদ হাদীস দ্বারা দলীল গ্রহণ জায়েজ। ইমাম বুখারী (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) উক্ত তিনটি বিষয় উল্লেখ করলেও আক্বীদার বিষয়ে (আরবী শব্দ) দলীল কি না তা উল্লেখ করেননি। কিন্তু আক্বীদার ক্ষেত্রেও (আরবী শব্দ) হাদীস দ্বারা দলীল গ্রহণ জায়েয এবং সে অনুযায়ী আমল করা ওয়াজিব। এ ব্যাপারে অনেক প্রমাণ বিদ্যমান। ড. আহমাদ আল আশকার উল্লেখ করিয়াছেন যে, শাইখ নাসিরুদ্দ্বীন আলবানী এর প্রমাণ স্বরূপ ২০টি কারণ বা দিক লিপিবদ্ধ করিয়াছেন। এর মধ্য থেকে অতি গুরুত্বপূর্ণ দলীলগুলোর দুএকটি এখানে উল্লেখ করলামঃ

১. কুরআন থেকে দলীল। আল্লাহ তাআলা বলেনঃ

উল্লেখিত আয়াতটিতে (আরবী শব্দ) শব্দটির শাব্দিক অর্থ (আরবী শব্দ) এবং তার উপরের জন্য প্রয়োগ করা হয়। আর ইমাম বুখারী উল্লেখ করিয়াছেন যে,(আরবী শব্দ)

কারণ আল্লাহ তাআলা বলেনঃ (আরবী লাইন) (হুজরাত : ৯)

ফলে যদি দুব্যক্তি লড়াই করে তবুও তারা এই আয়াতের অর্থের মধ্যে অন্তর্ভুক্ত হয়ে যাবে।

সুতরাং আয়াত থেকে জানা যাচ্ছে যে, যদি কোন ব্যক্তি তার স্বজাতির কাছে ফিরে আসে তাহলে সে তাদেরকে সতর্ক করিবে। আর (আরবী শব্দ) শব্দটি (আরবী শব্দ) এর অর্থ যা ইলমের ফায়দা দেয়। আর (আরবী শব্দ) শব্দটি (আরবী শব্দ) এর অর্থে যা ইলমের ফায়দা দেয়। আর তা হইবে আক্বীদা ও অন্যান্য বিষয়ের তাবলীগের মাধ্যমে। সুতরাং কোন ব্যক্তি যদি দ্বীনের কোন বিষয় সম্পর্কে সংবাদ দিলে তা গ্রহণীয় হয়, তাহলে তো এটাই প্রমাণ করে যে, তার সংবাদ দলীল। আর দ্বীনের পাণ্ডিত্য অর্জন আক্বীদা ও আহকাম উভয়কে শামিল করে। বরং আহকামের ব্যাপারে পাণ্ডিত্য অর্জনের চাইতে আক্বীদার ব্যাপারে পাণ্ডিত্য অর্জন করাই বেশী গুরুত্বপূর্ণ।

২. হাদীস থেকে দলীল :

রাসুল (সাঃ) মুআয বিন জাবালকে ইয়ামানে প্রেরণের প্রারম্ভে বলেনঃ

(আরবী লাইন)

(সহীহ বুখারী ২/৫২৯ যাকাত অধ্যায়)

হাদীসটিতে সুস্পষ্ট আহ্বান হচ্ছে তাওহীদের দিকে। অর্থাৎ আল্লাহ ও তাহাঁর রসূলের প্রতি ঈমান আনা। আর আল্লাহ ও তাহাঁর রসূলের প্রতি ঈমান আনা আক্বাঈদের মৌলিক বিষয়ের অন্তর্গত। সুতরাং খবরে ওয়াহিদ আক্বীদার ক্ষেত্রে (আরবী লাইন) দলীল।

৩. রাসুল (সাঃ) এর বিভিন্ন গোত্রের ও রাজা বাদশাহর নিকট দূত প্রেরণের ধারাবাহিকতা- যেমনঃ দাহইয়া কালবীকে হিরাকল এর নিকট, আবদুল্লাহ ইবনু হুযাইফা সাহমীকে কিসরার নিকট, আমর ইবনু উমাইয়া জমরীকে হাবশায়, উসমান ইবনু আবিলকে আসকে তায়েফে, হাতেব বিন বালাতাহকে মুকাওলিস এর নিকট প্রেরণ করেন।

এই দূত প্রেরণের একমাত্র কারণ হল যাতে করে তাদের উপর দলীল প্রতিষ্ঠিত হয়। আর তাদেরকে প্রেরণের উদ্দেশ্যই ছিল তাওহীদের দিকে আহ্বান।

—————————————-

বিশেষত : যারা আক্বীদার ক্ষেত্রে (আরবী শব্দ) কে গ্রহণ করে না তাদের জন্য আক্বীদার অনেক বিষয়কে প্রত্যাখ্যান করা অপরিহার্য হয়ে পড়ে যা (আরবী শব্দ) হাদীস দ্বারা সাব্যস্ত।

যেমন :

১. সমস্ত নাবী রাসুলদের উপর মুহাম্মাদ (সাঃ) এর শ্রেষ্ঠত্ব।

২. কিয়ামত দিবসে তার শাফাআতে কুবরা।

৩. কবীরা গুনাহগারদের জন্য তাহাঁর শাফাআত।

৪. কুরআন ব্যতীত নাবী (সাঃ)র সমস্ত মুজিযা।

৫. ফেরেশতা, জিন, জান্নাত ও জাহান্নামের বর্ণনা যা কুরআনে উল্লেখ হয়নি।

৬. কবরে মুনকার ও নাকীরের প্রশ্ন।

৭. মৃতকে কবরের চাপ দেয়া।

৮. প্রত্যেক ব্যক্তির তার মায়ের গর্ভের মধ্যেই ভাল-মন্দ, রিযিক ও মৃত্যু আল্লাহ লিপিবদ্ধ করেন তার প্রতি ঈমানের আনয়ন।

৯. পুলসিরাত (আরবী শব্দ), হাউজ, দু পাল্লা বিশিষ্ট মীযান (দাঁড়িপাল্লা)। ( ফাতহুল বারী)

৭২৪৬

মালিক ইবনু হুওয়ায়রিস (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, আমরা নাবী (সাঃআঃ)-এর কাছে এলাম। আমরা সবাই এক বয়সী যুবক ছিলাম। আমরা বিশ রাত তাহাঁর কাছে অবস্থান করলাম। রাসুলল্লাহ (সাঃআঃ) ছিলেন কোমল হৃদয়ের। তিনি যখন অনুমান করিলেন যে আমরা আমাদের স্ত্রী-পরিবারের প্রতি ঝুঁকে পরেছি, কিংবা আসক্ত হয়ে পড়েছি তখন তিনি জিজ্ঞেস করিলেন, আমরা বাড়িতে কাদেরকে রেখে এসেছি। আমরা তাঁকে জানালাম। তিনি বললেনঃ তোমরা তোমাদের পরিবারের কাছে ফিরে যাও এবং তাদের মাঝে অবস্থান কর, আর তাদেরকে (দ্বীন) শিক্ষা দাও। আর তাদের হুকুম কর। তিনি [মালিক (রাদি.)] কিছু বিষয়ে উল্লেখ করেছিলেন, যা আমি মনে রেখেছি বা মনে রাখতে পারিনি। (নাবী (সাঃআঃ) বলেছিলেন) তোমরা আমাকে যেভাবে সালাত আদায় করিতে দেখছ সেভাবে সালাত আদায় কর। যখন সালাতের সময় হাজির হয়, তখন তোমাদের কোন একজন যেন তোমাদের জন্য আযান দেয়, আর তোমাদের মধ্যে যে বড় সে যেন তোমাদের ইমামত করে।(আঃপ্রঃ- ৬৭৩৯, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৬৭৫২)

খবরে ওয়াহিদ গ্রহণযোগ্য [১]

[১] আযান, সলাত, সওম এবং অন্যান্য ফার্য ইবাদাতের ব্যাপারে কোন বিশ্বস্ত ব্যক্তির একক সাক্ষ্যকে খবরে ওয়াহিদ বলে। উসূলে হাদীসে এক, দু বা তিনজন রাবী (বর্ণনাকারী) কর্তৃক বর্ণিত হাদীসকে খবরে ওয়াহিদ বলে।

ইবাদাত, ফারায়েয ও আহকামের ক্ষেত্রে (خبر الواحد) খবরে ওয়াহেদ হাদীস দ্বারা দলীল গ্রহণ জায়েজ। ইমাম বুখারী (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) উক্ত তিনটি বিষয় উল্লেখ করলেও আক্বীদার বিষয়ে দ্ধخبر الواحد দলীল কি না তা উল্লেখ করেননি। কিন্তু আক্বীদার ক্ষেত্রেও خبر الواحد হাদীস দ্বারা দলীল গ্রহণ জায়েয এবং সে অনুযায়ী আমাল করা ওয়াজিব। এ ব্যাপারে অনেক প্রমাণ বিদ্যমান। ড. আহমাদ আল আশকার উল্লেখ করিয়াছেন যে, শাইখ নাসিরদ্দীন আলবানী এর প্রমাণ স্বরূপ ২০টি কারণ বা দিক লিপিবদ্ধ করিয়াছেন। এর মধ্য থেকে অতি গুরুত্বপূর্ণ দলীলগুলোর দু-একটি এখানে উল্লেখ করলাম :

কুরআন থেকে দলীল। আল্লাহ তাআলা বলেন :

وَمَا كَانَ الْمُؤْمِنُونَ لِيَنْفِرُوا كَافَّةً فَلَوْلا نَفَرَ مِنْ كُلِّ فِرْقَةٍ مِنْهُمْ طَائِفَةٌ لِيَتَفَقَّهُوا فِي الدِّينِ وَلِيُنْذِرُوا قَوْمَهُمْ إِذَا رَجَعُوا إِلَيْهِمْ لَعَلَّهُمْ يَحْذَرُونَ) (التوبة:১২২)

উল্লেখিত আয়াতটিতে طائفة শব্দটির শাব্দিক অর্থ واحد এবং তার উপরের জন্য প্রয়োগ করা হয়। আর ইমাম বুখারী উল্লেখ করিয়াছেন যে, إن الرجل يسمى طائفة

কারণ আল্লাহ তাআলা বলেন : (وَإِنْ طَائِفَتَانِ مِنَ الْمُؤْمِنِينَ اقْتَتَلُوا فَأَصْلِحُوا بَيْنَهُمَا)(الحجرات: من الآية৯) (হুজরাত : ৯)

ফলে যদি দুব্যক্তি লড়াই করে তবুও তারা এই আয়াতের অর্থের মধ্যে অন্তর্ভুক্ত হয়ে যাবে।

সুতরাং আয়াত থেকে জানা যাচ্ছে যে, যদি কোন ব্যক্তি তার স্বজাতির কাছে ফিরে আসে তাহলে সে তাদেরকে সতর্ক করিবে। আর انذار শব্দটি إعلام এর অর্থে যা ইলমের ফায়দা দেয়। আর তা হইবে আক্বীদাহ ও অন্যান্য বিষয়ের তাবলীগের মাধ্যমে। সুতরাং কোন ব্যক্তি যদি দ্বীনের কোন বিষয় সম্পর্কে সংবাদ দিলে তা গ্রহণীয় হয়, তাহলে তো এটাই প্রমাণ করে যে, তার সংবাদ দলীল। আর দ্বীনের পান্ডিত্য অর্জন আক্বীদা ও আহকাম উভয়কে শামিল করে। বরং আহকামের ব্যাপারে পান্ডিত্য অর্জনের চাইতে আক্বীদার ব্যাপারে পান্ডিত্য অর্জন করাই বেশী গুরুত্বপূর্ণ।

২. হাদীস থেকে দলীল :

রাসুল (সাঃ) মুআয বিন জাবালকে ইয়ামানে প্রেরণের প্রারম্ভে বলেন :

إنك تقدم على قوم أهل كتاب فليكن أ,ل ما تدعوهم إليه عبادة الله، فإذا عرفوا الله فأخبرهم إن الله قد فرض عليهم خمس صلوات في يوم وليلتهم ……………..

(সহীহ বুখারী ২/৫২৯ যাকাত অধ্যায়)

হাদীসটিতে সুস্পষ্ট আহবান হচ্ছে তাওহীদের দিকে। অর্থাৎ আল্লাহ ও তাহাঁর রসূলের প্রতি ঈমান আনা। আর আল্লাহ ও তাহাঁর রসূলের প্রতি ঈমান আনা আক্বাঈদের মৌলিক বিষয়ের অন্তর্গত। সুতরাং খবরু ওয়াহিদ আক্বীদার ক্ষেত্রে خبر الواحد দলীল।

৩. রাসুল (সাঃ) এর বিভিন্ন গোত্রের ও রাজা বাদশার নিকট দূত প্রেরণের ধারাবাহিকতা- যেমন : দাহইয়া কালবীকে হিরাকল এর নিকট, আবদুল্লাহ ইবনু হুযাইফা সাহমীকে কিসরার নিকট, আমর ইবনু উমাইয়া জমরীকে হাবশায়, উসমান ইবনু আবিল আসকে তায়েফে, হাতেব বিন বালাতাহকে মুকাওকিস এর নিকট প্রেরণ করেন।

এই দূত প্রেরণের একমাত্র কারণ হল যাতে করে তাদের উপর দলীল প্রতিষ্ঠিত হয়। আর তাদেরকে প্রেরণের উদ্দেশ্যই ছিল তাওহীদের দিকে আহবান।

বিশেষত: যারা আক্বীদার ক্ষেত্রে خبر الواحد কে গ্রহণ করে না তাদের জন্য আক্বীদার অনেক বিষয়কে প্রত্যাখ্যান করা অপরিহার্য হয়ে পড়ে যা أخبار الآحاد হাদীস দ্বারা সাব্যস্ত।

যেমন :

১. সমস্ত নাবী রাসুলদের উপর মুহাম্মাদ (সাঃ) এর শ্রেষ্ঠত্ব।

২. কিয়ামাত দিবসে তার শাফাআতে কুবরা।

৩. কাবীরা গুনাহগারদের জন্য তাহাঁর শাফাআত।

৪. কুরআন ব্যতীত নাবী (সাঃ)র সমস্ত মুজিযা।

৫. ফেরেশতা, জ্বিন, জান্নাত ও জাহান্নামের বর্ণনা যা কুরআনে উল্লেখ হয়নি।

৬. কবরে মুনকার ও নাকীরের প্রশ্ন।

৭. মৃতকে কবরের চাপ দেয়া।

৮. প্রত্যেক ব্যক্তির তার মায়ের গর্ভের মধ্যেই ভাল-মন্দ, রিযিক ও মৃত্যু আল্লাহ লিপিবদ্ধ করেন তার প্রতি ঈমান আনয়ন।

৯. পুলসিরাত (الصراط), হাউজ, দু পাল্লা বিশিষ্ট মীযান (দাঁড়িপাল্লা)। (ফাতহুল বারী)

৭২৪৭

ইবনু মাসঊদ (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ (সাঃআঃ) বলেছেনঃ বিলালের আযান যেন তোমাদের কাউকে নিজ সাহরি খাওয়া থেকে বিরত না করে। কেননা, সে আযান দিয়ে থাকে, কিংবা বলেছিলেন আহ্বান জানায়, তোমাদের যারা সালাতরত তাদের নিরত হইতে আর তোমাদের ঘুমন্তদের জাগিয়ে দিতে। এরূপ হলে ফজর হয় না- এই বলে ইয়াহইয়া উভয় হাতের তালুকে একত্র করিলেন (অর্থাৎ আলো উপর-নীচে দীর্ঘ হলে) বরং এমন হলে ফজর হয়, এ বলে ইয়াহইয়া তার দুতর্জনীকে ডানে-বামে বিস্তৃত করিলেন।(আঃপ্রঃ- ৬৭৪০, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৬৭৫৩)

৭২৪৮

আবদুল্লাহ ইবনু উমর (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ

আবদুল্লাহ ইবনু উমর (রাদি.) নাবী (সাঃআঃ) থেকে বর্ণনা করিয়াছেন। তিনি বলেছেনঃ বিলাল (রাদি.) রাত থাকতে আযান দেয়, অতএব তোমরা পানাহার কর যতক্ষন না ইবনু উম্মু মাকতূম (রাদি.) আযান দেয়। [১৮৬] (আঃপ্রঃ- ৬৭৪১, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৬৭৫৪)

[১৮৬] যারা তাহাজ্জুদ সালাতে রত থাকতেন তাদেরকে সালাত হইতে ফারেগ হওয়ার জন্য এবং সকলকে সাহরী খাওয়ার ব্যপারে জ্ঞাত করার জন্য বিলাল (রাদি.) আযান দিতেন। অতঃপর সুবহে সাদেক হলে ইব্নে উম্মে মাকতূম (রাদি.) ফজরের আযান দিতেন।

৭২৪৯

আবদুল্লাহ (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ

যে, তিনি বলেন, নাবী (সাঃআঃ) আমাদের নিয়ে যুহরে পাঁচ রাকআত আদায় করিলেন। তাকে বলা হল, সালাত কি বাড়ানো হয়েছে? তিনি বললেনঃ তোমার কী হয়েছে? তাঁরা বলিলেন, আপনি পাঁচ রাকআত সালাত পড়েছেন। তখন তিনি সালামের পর দুটো সিজদা দিলেন।(আঃপ্রঃ- ৬৭৪২, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৬৭৫৫)

৭২৫০

আবু হুরাইরা (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ

যে, রাসুলুল্লাহ (সাঃআঃ) দুরাকাআত আদায় করেই সালাত শেষ করে দিলেন। তখন যুল ইয়াদাইন (রাদি.) তাঁকে বলিলেন, হে আল্লাহর রাসুল! সালাত কি সংক্ষিপ্ত করা হয়েছে, না আপনি ভুলে গেছেন। তিনি বললেনঃ যুল ইয়াদাইন কি ঠিক বলছে? লোকেরা বলিল, হ্যাঁ। তখন রাসুলুল্লাহ (সাঃআঃ) দাঁড়ালেন এবং অবশিষ্ট দুরাকআত পড়লেন। তারপর তিনি সালাম ফিরালেন এবং তাকবীর বলে তার সিজদার মত কিংবা তার চেয়ে দীর্ঘ সিজদা করিলেন এবং মাথা উঠালেন, তারপর আবার তাকবীর বলে তাহাঁর সিজদার মত সিজদা করিলেন ও মাথা উঠালেন। (আঃপ্রঃ- ৬৭৪৩, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৬৭৫৬)

৭২৫১

আবদুল্লাহ ইবনু উমর (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, লোকেরা কুবার মসজিদে ফজরের সালাতে ছিলেন, এমন সময় এক আগন্তুক এসে বলিল, রাতে রাসুলুল্লাহ (সাঃআঃ)-এর উপর কুরআন অবতীর্ণ করা হয়েছে এবং কাবার দিকে মুখ করার নির্দেশ দেয়া হয়েছে। তোমরা কাবার দিকে মুখ করে দাঁড়াও। তখন তাদের মুখ ছিল সিরিয়ার দিকে, অতঃপর তারা কাবার দিকে ঘুরলেন।(আঃপ্রঃ- ৬৭৪৪, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৬৭৫৭)

৭২৫২

বারাআ (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, যখন রাসুলুল্লাহ (সাঃআঃ) মদীনায় আসলেন, তখন ষোল অথবা সতের মাস বাইতুল মুকাদ্দাসের দিকে মুখ করে সালাত পড়লেন। আর তিনি কাবার দিকে মুখ করিতে খুবই ভালবাসতেন। অতঃপর আল্লাহ অবতীর্ণ করলেনঃ “নিশ্চয়ই আমি তোমার আকাশের দিকে মুখ ফিরিয়ে দেখাকে লক্ষ্য করেছি, যে ক্বিবলা তুমি পছন্দ কর” – (সুরা আল-বাকারা ২/১৪৪)। তখন তাঁকে কাবার দিকে ফিরিয়ে দেয়া হয়। তাহাঁর সঙ্গে এক ব্যক্তি আসরের সালাত পড়ছিল। এরপর সে বেরিয়ে আনসারীদের এক গোত্রের নিকট দিয়ে অতিক্রম করিল এবং সে সাক্ষ্য দিয়ে বলিল যে, সে রাসুলুল্লাহ (সাঃআঃ)-এর সঙ্গে সালাত পড়ে এসেছে আর কাবার দিকে মুখ ফিরিয়ে দেয়া হয়েছে। তখন তাঁরা দিক পরিবর্তন করিলেন। এ সময় তাঁরা আসরের সালাতে রুকূর হালতে ছিলেন।(আঃপ্রঃ- ৬৭৪৫, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৬৭৫৮)

৭২৫৩

আনাস ইবনু মালিক (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, আমি আবু তালহা আনসারী, আবু উবাইদাহ ইবনু জাররাহ ও ইবাই ইবনু কাবকে আধাপাকা খেজুরের তৈরি শরাব পান করাচ্ছিলাম। তখন তাদের কাছে একজন আগন্তুক এসে বলিল, শরাব হারাম করে দেয়া হয়েছে। আবু তালহা (রাদি.) বলিলেন, হে আনাস! তুমি উঠে গিয়ে মটকাগুলো ভেঙ্গে ফেল। আনাস (রাদি.) বলেন, আমি উঠে গিয়ে আমাদের ঘটি দিয়ে ওগুলোর তলায় আঘাত করে ভেঙ্গে ফেললাম।(আঃপ্রঃ- ৬৭৪৬, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৬৭৫৯)

৭২৫৪

হুযাইফা (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ

হুযাইফা (রাদি.) থেকে বর্ণনা করেন যে, রাসুলুল্লাহ (সাঃআঃ) নাজরানের অধিবাসীদের উদ্দেশে বললেনঃ আমি তোমাদের জন্য অবশ্য অবশ্যই এমন একজন লোক পাঠাব, যিনি পুরোপুরি বিশ্বস্ত। নাবী (সাঃআঃ)-এর সাহাবীরা এর জন্য অপেক্ষা করছিলেন। অতঃপর তিনি আবু উবাইদাকে পাঠালেন।(আঃপ্রঃ- ৬৭৪৭, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৬৭৬০)

৭২৫৫

আনাস (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, নাবী (সাঃআঃ) বলেছেনঃ প্রত্যেক উম্মাতে একজন বিশ্বস্ত লোক থাকে আর এ উম্মাতের বিশ্বস্ত লোক হল আবু উবাইদা ইবনুল জাররাহ (রাদি.)।(আঃপ্রঃ- ৬৭৪৮, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৬৭৬১)

৭২৫৬

উমর (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, এক আনসারী ছিলেন, তিনি রাসুলুল্লাহ (সাঃআঃ)-এর নিকট যা কিছু ঘটত তা আমি তাকে বর্ণনা করতাম। আর যখন আমি রাসুলুল্লাহ (সাঃআঃ) থেকে অনুপস্থিত থাকতাম আর তিনি উপস্থিত থাকতেন, তখন রাসুলুল্লাহ (সাঃআঃ)-এর নিকট যা কিছু ঘটত তিনি এসে তা আমাকে বর্ণনা করিতেন। (আঃপ্রঃ- ৬৭৪৯, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৬৭৬২)

৭২৫৭

আলী (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ

যে, রাসুলুল্লাহ (সাঃআঃ) একটি ক্ষুদ্র সেনাদল পাঠালেন এবং এক ব্যক্তিকে তাঁদের আমীর নিযুক্ত করে দিলেন। তিনি (আমির) আগুন জ্বালালেন এবং বলিলেন, তোমরা এতে প্রবেশ কর। কতক লোক তাতে প্রবেশ করিতে যাচ্ছিল। তখন অন্যরা বলিল, আমরা তো (মুসলিম হয়ে) আগুন থেকে পালাতে চেয়েছি। অতঃপর তারা এ ঘটনা নাবী (সাঃআঃ)-এর নিকট জানাল। তখন যাঁরা আগুনে প্রবেশ করিতে চেয়েছিলেন তাদেরকে বললেনঃ যদি তারা তাতে প্রবেশ করত তাহলে কেয়ামত পর্যন্তই সেখানে থাকত। আর অন্যদেরকে বললেনঃ আল্লাহর নাফরমানীর কাজে কোনরূপ আনুগত্য নেই। আনুগত্য করিতে হয় কেবলমাত্র ন্যায়সঙ্গত কাজে।(আঃপ্রঃ- ৬৭৫০, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৬৭৬৩)

৭২৫৮

আবু হুরাইরা (রাদি.) ও যায়দ ইবনু খালিদ (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ

আবু হুরাইরা (রাদি.) ও যায়দ ইবনু খালিদ (রাদি.) বর্ণনা করেন যে, দুব্যক্তি নাবী (সাঃআঃ)-এর নিকট একটি মুকাদ্দামা নিয়ে আসল। (আঃপ্রঃ- ৬৭৫১, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৬৭৬৪)

৭২৫৯

আবু হুরাইরা (রাদি.) ও যায়দ ইবনু খালিদ (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ

আবু হুরাইরা (রাদি.) ও যায়দ ইবনু খালিদ (রাদি.) বর্ণনা করেন যে, দুব্যক্তি নাবী (সাঃআঃ)-এর নিকট একটি মুকাদ্দামা নিয়ে আসল।(আঃপ্রঃ- ৬৭৫১, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৬৭৬৪)

৭২৬০

আবুল ইয়ামান (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) হইতে বর্ণিতঃ

আবুল ইয়ামান (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) আবু হুরাইরা (রাদি.) থেকে এ বর্ণনায় উল্লেখ করা হয় যে, তিনি [আবু হুরাইরা (রাদি.)] বলেছেন,আমরা নাবী (সাঃআঃ)-এর নিকট উপস্থিত ছিলাম। এমন সময় একজন গ্রাম্য লোক দাঁড়িয়ে বলিল, হে আল্লাহর রাসুল! আল্লাহ তাআলার কিতাব অনুসারে আমার ফায়সালা করে দিন। তখন তার বিরোধী লোকটি দাঁড়িয়ে বলিল, হে আল্লাহর রাসুল! তিনি সত্যই বলেছেন, আল্লাহর কিতাব অনুসারে তার ফায়সালা করে দিন এবং আমাকে বলার অনুমতি দিন। নাবী (সাঃআঃ) তাকে বললেনঃ তুমি বল। তখন সে বলিল, আমার ছেলে এ লোকটির বাড়িতে মজুর ছিল। বর্ণনাকারী বলেন, হাদীসে উক্ত (আরবী) শব্দটির অর্থ মজুর। সে ছেলে এ লোকের স্ত্রীর সঙ্গে যিনা করে। কতক লোক আমাকে বলিল যে, আমার ছেলেটির উপর রজম কার্যকর হইবে। তখন আমি মুক্তিপণ হিসাবে একশ বক্‌রী ও একটি দাসী দেই। অতঃপর আমি আলিমদের নিকট এ বিষয়ে জিজ্ঞেস করি। তাঁরা আমাকে বলিলেন যে, তাহাঁর স্ত্রীর জন্য রজম। আর আমার ছেলের জন্য রয়েছে একশ বেত্রাঘাত ও এক বছরের জন্য দেশান্তরের বিধান। তখন নাবী (সাঃআঃ) বললেনঃ যে সত্তার হাতে আমার প্রাণ, তাহাঁর শপথ করে বলছি, অবশ্য অবশ্যই আমি তোমাদের দুজনের মাঝে সেই মহান আল্লাহর কিতাব অনুসারে ফায়সালা করব। বক্‌রী ও বাঁদী ফিরিয়ে নাও। তোমার ছেলের জন্য রয়েছে একশ বেত্রাঘাত ও একবছরের জন্য দেশান্তরের হুকুম। অতঃপর তিনি আসলাম গোত্রের এক লোককে ডেকে বলিলেন, হে উনায়স! তুমি এর স্ত্রীর নিকট যাও, যদি সে স্বীকার করে তাহলে তাকে রজম করো। উনায়স সেই মহিলার নিকট গেলেন, সে স্বীকার করিল, তখন তিনি তাকে রজম করিলেন। (আঃপ্রঃ- ৬৭৫২, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৬৭৬৪)

৯৫/২. অধ্যায়ঃ নাবী (সাঃআঃ) একা যুবায়র (রাদি.)-কে শত্রুদের খবর নেয়ার জন্য পাঠিয়েছিলেন।

৭২৬১

জাবির (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন যে, খন্দকের দিনে নাবী লোকদের ডাকলেন। যুবায়র (রাদি.) তাতে সাড়া দিলেন। তিনি তাদেরকে আবার আহবান জানালেন, এবারও যুবায়র (রাদি.) সাড়া দিলেন। তিনি আবার তাদের আহবান জানালেন। এবারেও যুবায়র (রাদি.) সাড়া দিলেন। তিনবার। তখন নাবী (সাঃআঃ) বললেনঃ প্রত্যেক নাবীর একজন হাওয়ারী (সাহায্যকারী) থাকে, আর যুবায়র হচ্ছে আমার হাওয়ারী।

সুফিয়ান (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) বলেন, আমি এ হাদীসটি মুহাম্মদ ইবনু মুনকাদির থেকে হিফয করেছি। একবার আইউব তাকে বলিলেন, হে আবু বকর (রাদি.), আপনি জাবির (রাদি.)-এর হাদীস বর্ণনা করুন। কেননা, জাবির (রাদি.) বর্ণিত হাদীস লোকদের খুবই চমৎকৃত করে। তখন তিনি সে মজলিসে বলিলেন, আমি জাবির (রাদি.) থেকে শুনিয়াছি। এ বলে তিনি একে একে অনেক হাদীস বর্ণনা করিলেন, যেগুলো আমিও জাবির (রাদি.) থেকে শুনিয়াছি। আমি সুফিয়ানকে বললাম যে, সাওরী বলেছেন যে, সেটা ছিল বনূ কুরায়যার যুদ্ধের দিন। তিনি বলিলেন, তুমি যেভাবে আমার কাছে উপবিষ্ট, ঠিক তেমনি কাছে বসে আমি মুহাম্মাদ ইবনুল মুনকাদির থেকে হিফ্‌য করেছি যে, সেটি ছিল খন্দকের দিন। সুফিয়ান বলিলেন, ওটা একই দিন। অতঃপর মুচকি হাসলেন। (আঃপ্রঃ- ৬৭৫৩, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৬৭৬৫)

৯৫/৩. অধ্যায়ঃ আল্লাহ তাআলার বাণীঃ “হে মুমিনগণ! তোমরা অনুমতি ছাড়া নাবীর গৃহে প্রবেশ করো না”-(সুরা আন্-নূর ২৪/২৭)।. যদি একজন তাকে অনুমতি দেয় তবে প্রবেশ করা বৈধ।

যদি একজন তাকে অনুমতি দেয় তাহলে প্রবেশ করা বৈধ

৭২৬২

আবু মূসা আশআরী (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ

যে, নাবী (সাঃআঃ) একটি বাগানে প্রবেশ করিলেন এবং আমাকে দরজা পাহারা দেয়ার জন্য নির্দেশ দিলেন। এক লোক এসে প্রবেশের অনুমতি চাইল। তিনি বললেনঃ তাকে অনুমতি দাও এবং তাকে জান্নাতের সুসংবাদ দাও। তিনি ছিলেন আবু বকর (রাদি.)। অতঃপর উমর (রাদি.) আসলেন। তিনি বললেনঃ তাঁকে অনুমতি দাও এবং জান্নাতের সুসংবাদ দাও। তারপর উসমান (রাদি.) আসলেন। তিনি বললেনঃ তাকে অনুমতি দাও এবং জান্নাতের সুসংবাদ দাও।(আঃপ্রঃ- ৬৭৫৪, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৬৭৬৬)

৭২৬৩

উমর (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, আমি আসলাম। তখন রাসুলুল্লাহ (সাঃআঃ) তাহাঁর দোতালার কক্ষে ছিলেন। আর রাসুলুল্লাহ (সাঃআঃ)-এর কালো গোলামটি দরজার সামনে দাঁড়ানো। আমি তাকে বললাম, তুমি বল, এই যে উমর ইবনু খাত্তাব (রাদি.) এসেছে। তিনি আমাকে অনুমতি দিলেন।(আঃপ্রঃ- ৬৭৫৫, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৬৭৬৭)

৯৫/৪. অধ্যায়ঃ নাবী (সাঃআঃ) আমীর ও দূতদেরকে একজনের পর একজন করে পাঠাতেন।

ইবনু আব্বাস (রাদি.) বলেন, নাবী (সাঃআঃ) দাহইয়া কালবী (রাদি.)-কে তাহাঁর চিঠি দিয়ে বস্রার গভর্নরের নিকট পাঠিয়েছিলেন, যাতে সেটি সে (রোমের বাদশাহ) কায়সারের নিকট পৌছিয়ে দেয়।

৭২৬৪

ইবনু আব্বাস (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ (সাঃআঃ) (পারস্যের বাদশাহ) কিস্‌সার নিকট তাহাঁর চিঠি পাঠালেন। তিনি দূতকে নির্দেশ দিলেন, সে যেন এ চিঠি নিয়ে বাহরাইনের শাসকের নিকট দেয়। আর বাহরাইনের শাসক যেন তা কিসরার কাছে পৌছিয়ে দেয়। কিসরা এ চিঠি পড়ে তা টুক্‌রা টুক্‌রা করে ফেলল। ইবনু শিহাব বলেন, আমার ধারণা ইবনু মুসাইয়্যেব বলেছেন যে, তখন রাসুলুল্লাহ (সাঃআঃ) তাদের উপর বদ দুআ করিলেন, যেন আল্লাহ তাদেরকেও একেবারে টুকরো টুকরো করে দেন। [১৮৭](আঃপ্রঃ- ৬৭৫৬, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৬৭৬৮)

[১৮৭] রাসূলুল্লাহ (সাঃআঃ) পারস্য সম্রাট কিসরার কাছে নিম্নরূপ একখানি চিঠি প্রেরণ করেন- পরম করুণাময় অতি দয়ালু আল্লাহর নামে শুরু করছি- আল্লাহর রাসুল মোহাম্মদের পক্ষ থেকে পারস্য সম্রাট কেসরার নামে। সালাম সে ব্যক্তির প্রতি যিনি হেদায়াতের আনুগত্য করেন এবং আল্লাহ তাআলা ও তাহাঁর রসূলের প্রতি বিশ্বাসস্থাপন করেন এবং সাক্ষ্য দেন, আল্লহ ছাড়া এবাদতের যোগ্য কেউ নাই। তিনি এক অদ্বিতীয়, তাহাঁর কোন শরীক নেই, মোহাম্মদ তাহাঁর বান্দা ও রাসুল। আমি আপনাকে আল্লাহর প্রতি আহবান জানাচ্ছি। কারণ আমি সকল মানুষের প্রতি আল্লাহর পক্ষ থেকে প্রেরিত। যারা বেঁচে আছে তাদের পরিণাম সম্পর্কে ভয় দেখানো এবং কাফেরদের ওপর সত্য কথা প্রমাণিত করাই আমার কাজ। কাজেই আপনি ইসলাম গ্রহণ করুন, শান্তিতে থাকবেন, যদি এতে অস্বীকৃতি জানান, তবে সকল অগ্নি উপাসকের পাপও আপনার ওপর বর্তাবে। এ চিঠি নিয়ে যাওয়ার জন্য হযরত আবদুল্লাহ ইবনে হোযাফা সাহমী (রাদি.)-কে মনোনীত করা হয়। তিনি চিঠিখানি বাহরাইনের শাসনকর্তার হাতে দেন। বাহরাইনের শাসনকর্তা দূতের মাধ্যমে নাকি হযরত আবদুল্লাহ ইবনে হোযাফার মাধ্যমেই এ চিঠি পাঠিয়েছিলেন, তা জানা যায়নি। মোট কথা, চিঠিখানি কেসরা পারভেযকে পড়ে শোনানোর পর সে তা ছিঁড়ে ফেলে অহংকারের সাথে বলে, আমার প্রজাদের মধ্যে একজন সাধারণ প্রজা নিজের নাম আমার নামের আগে লিখেছে। রাসুলুল্লাহ (সাঃআঃ) এ খবর পাওয়ার পর বলেছিলেন, আল্লাহ তাআলা তাহাঁর বাদশাহী ছিন্নভিন্ন করে দিন। এরপর তাই হয়েছিলো, যা রাসুল (সাঃআঃ) বলেছিলেন। পারস্য সম্রাট ইয়েমেনের গভর্নর বাযানকে লিখে পাঠায়, তোমার ওখান থেকে তাগড়া দুজন লোককে পাঠাও, তারা যেন হেজায়ে গিয়ে সে লোককে আমার কাছে ধরে নিয়ে আসে। বাযান সম্রাটের নির্দেশ পালনের জন্য দুজন লোককে তাহাঁর চিঠিসহ আল্লাহর রসূলের কাছে প্রেরণ করে। সে চিঠিতে প্রেরিত লোকদ্বয়য়ের সাথে কেসরার কাছে হাযির হওয়ার জন্যে রাসুল (সাঃআঃ)-কে নির্দেশ দেয়া হয়। তাদের একজন বললো, শাহানশাহ এক চিঠিতে বাযানকে নির্দেশ দিয়েছেন যেন আপনাকে তার দরবারে হাযির করা হয়। বাযান আমাদের আপনার কাছে পাঠিয়েছেন। কাজেই আপনি আমাদের সঙ্গে পারস্যে চলুন। সাথে সাথে উভয় আগন্তক হুমকিপূর্ণ কিছু কথাও বলে। রাসুল (সাঃআঃ) শান্তভাবে তাদের বলিলেন, তোমরা আগামীকাল দেখা করো। এদিকে মদীনায় যখন এ মনোজ্ঞ ঘটনা চলছে, ঠিক তখন পারস্যে খসরু পারভেযের পারিবারিক বিদ্রোহ কলহ তীব্র রূপ ধারণ করে। কায়সারের সৈন্যদের হাতে পারস্যের সৈন্যরা একের পর এক পরাজয় স্বীকার করে যাচ্ছিল। এমতাবস্থায় পারস্য সম্রাট কেসরার পুত্র শেরওয়ায়হ পিতাকে হত্যা করে রাস্ট্র ক্ষমতা দখল করে। সময় ছিল মঙ্গলবার রাত, সপ্তম হিজরীর ১০ই জমাদিউল আউয়াল (ফতহুল বারী, ৮ম খণ্ড, পৃ. ১২৭)। রাসূলুল্লাহ (সাঃআঃ) ওহীর মাধ্যমে এ খবর পেয়ে যান। পর দিন সকালে পারস্য সম্রাটের প্রতিনিধিদ্বয় আল্লাহর রসূলের দরবারে এলে তিনি তাদের এ খবর জানান। তারা বললো, আপনি এসব আবোল-তাবোল কী বলছেন? এর চেয়ে মামুলি কথাও আমরা আপনার অপরাধ হিসাবে গণ্য করছি। আমারা কি আপনার এ কথা বাদশাহর কাছে লিখে পাঠাবো! রাসুল (সাঃআঃ) বলিলেন, হ্যাঁ লিখে দাও। সাথে সাথে একথাও লিখে দাও, আমার দ্বীন এবং আমার হুকুমত সেখানেও পৌছবে, যেখানে তোমার বাদশাহ পৌছেছে। শুধু তাই নয়; বরং এমন জায়গায় গিয়ে থামবে, যার আগে উট বা ঘোড়া যেতে পারে না। তোমরা তাকে একথাও জানিয়ে দিয়ো, যদি তোমরা মুসলমান হয়ে যাও, তবে যা কিছু তোমাদের নিয়ন্ত্রণে রয়েছে সেসব আমি তোমাদের দিয়ে দিবো এবং তোমাদেরকেই কওমের বাদশাহ করে দেবো। উভয় দূত এরপর মদীনা থেকে ইয়েমেনে বাযানের কাছে গিয়ে তাকে কথা জানায়। কিছুক্ষণ পরই ইয়েমেনের এক চিঠি এসে পৌছায়, শেরওয়ায়হ তার পিতাকে হত্যা করে সিংহাসনে আরোহণ করিয়াছেন। নতুন সম্রাট তার চিঠিতে ইয়েমেনের গভর্নর বাযানকে এ নির্দেশও দিয়েছেন, আমার পিতা যার সম্পর্কে লিখেছিলেন, পরবর্তী নির্দেশ না পাওয়া পর্যন্ত তাকে বিরক্ত করিবে না। এ ঘটনায় বাযান এবং তার পারস্যের বন্ধু-বান্ধব, যারা সে সময় ইয়েমেনে উপস্থিত ছিলো,সকলেই মুসলমান হয়ে যান। (মোহাদারাতে খেযরী,১ম খণ্ড,পৃ. ১৪৭; ফাতহুল বারী, ৮ম খণ্ড, পৃ. ১২৭-১২৮; রাহমাতুল লিল আলামীন)।

৭২৬৫

সালামা ইবনু আক্‌ওয়া (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ

বর্ণিত যে, রাসুলুল্লাহ (সাঃআঃ) আশুরার দিন আসলাম কবীলার এক লোককে বললেনঃ তোমার কওমের মধ্যে ঘোষণা কর, কিংবা বলেছিলেনঃ লোকের মাঝে ঘোষণা কর যে, যারা আহার করেছে তারা যেন অবশিষ্ট দিন পূর্ণ করে, আর যারা আহার করেনি তারা যেন সওম রাখে।(আঃপ্রঃ- ৬৭৫৭, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৬৭৬৯)

৯৫/৫. অধ্যায়ঃ আরবের বিভিন্ন প্রতিনিধি দলের প্রতি নাবী (সাঃআঃ)-এর ওসিয়ত ছিল, যে তারা (তাহাঁর কথাগুলো) তাদের পরবর্তী মানুষের কাছে পৌছে দেয়।

এটি মালিক ইবনু হুওয়ারিস হইতে বর্ণিত।

৭২৬৬

আবু জামরাহ (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, ইবনু আব্বাস (রাদি.) আমাকে তার খাটে বসাতেন। তিনি আমাকে বলিলেন, আবদুল কায়েস গোত্রের প্রতিনিধিদল যখন রাসুলুল্লাহ (সাঃআঃ)-এর নিকট আসল। তিনি বললেনঃ এ কোন প্রতিনিধিদল? তারা বলিল, আমরা রাবীআ গোত্রের। রাসুলুল্লাহ (সাঃআঃ) বললেনঃ গোত্র ও তার প্রতিনিধিদলকে ধন্যবাদ, যারা অপমানিত হয়নি এবং লজ্জিতও হয়নি। তারা বলিল হে, আল্লাহর রাসুল! আপনার ও আমাদের মাঝে মুদার গোত্রের কাফিররা (বাধা হয়ে) আছে। কাজেই আমাদের এমন আদেশ দিন, যাতে আমরা জান্নাতে প্রবেশ করিতে পারি এবং আমাদের পরবর্তীদেরকেও জানাতে পারি। তারা পানীয় দ্রব্যের ব্যাপারে জিজ্ঞেস করিল। তিনি তাদের চারটি বিষয় থেকে নিষেধ করিলেন এবং চারটি বিষয়ের আদেশ করিলেন। তিনি তাদেরকে আল্লাহর প্রতি ঈমান আনতে আদেশ করিলেন। তিনি বললেনঃ আল্লাহর প্রতি ঈমান কী তোমরা জান? তারা বলিল, আল্লাহ ও তাহাঁর রাসুলই বেশি জানেন। তিনি বললেনঃ সাক্ষ্য দান করা যে, আল্লাহ ব্যতীত অন্য কোন ইলাহ নেই, তিনি একক, তাহাঁর কোন অংশীদার নেই। আর মুহাম্মাদ (সাঃআঃ) আল্লাহর রাসুল এবং সালাত কায়িম করা, যাকাত দেয়া। ইবনু আব্বাস (রাদি.) বলেন, আমার মনে হয় তাতে সওমের কথাও ছিল। আর গনীমতের মাল হইতে পাঁচ ভাগের এক ভাগ দাও এবং তিনি তাদের জন্য দুব্বা (লাউয়ের খোলের পাত্র), হানতাম (মাটির সবুজ রঙের পাত্র), (মুযাফ্‌ফাত এক রকম তৈলাক্ত পাত্র), নাকীর (কাঠের খোদাই করা পাত্র) নিষেধ করিলেন। কোন কোন বর্ণনায় নাকীর-এর জায়গায় মুকাইয়ার কথাটির উল্লেখ রয়েছে। এবং তিনি তাদের বলিলেন, এ কথাগুলো ভাব। ভাবে মনে রেখ এবং তোমাদের পিছনে যারা আছে তাদের কাছে পৌঁছে দিও। [১৮৮](আঃপ্রঃ- ৬৭৫৮, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৬৭৭০)

[১৮৮] মাটির সবুজ পাত্র, কদুর খোল, কাঠের তৈরি পাত্র এবং এক রকম তৈলাক্ত পাত্র-সেকালে এগুলোতে মদ রাখা হত। মদ হারাম হওয়ার সময় সাময়িকভাবে এসব পাত্র নিষিদ্ধ করা হয়েছিল।

৯৫/৬. অধ্যায়ঃ একজন মাত্র মহিলার দেয়া খবর।

৭২৬৭

তওবা আনবারী (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, শাবী আমাকে বলিলেন, নাবী (সাঃআঃ) থেকে হাসান (রাদি.) বর্ণিত হাদীসের (অধিক সংখ্যার) বিষয়টি কি দেখিতে পাচ্ছেন না? অথচ আমি ইবনু উমর (রাদি.)-এর সঙ্গে দুবছর কিংবা দেড় বছর থেকেছি। কিন্তু তাঁকে নাবী (সাঃআঃ) থেকে এ হাদীস ব্যতীত অন্য কোন হাদীস বর্ণনা করিতে শুনিনি। তিনি বলেছিলেন, নাবী (সাঃআঃ)-এর সাহাবীদের মাঝে কতিপয় ব্যক্তি সমবেত ছিলেন, তাদের মাঝে সাদও ছিলেন, তারা গোশ্‌ত খাচ্ছিলেন। এমন সময় নাবী (সাঃআঃ)-এর পত্নীদের কেউ তাদের ডেকে বলিলেন যে, এটা দবের গোশ্‌ত। তারা (আহার থেকে) বিরত হয়ে গেলেন। তখন রাসুলুল্লাহ (সাঃআঃ) বললেনঃ খাও বা খাওয়াও, এটা হালাল। কিংবা তিনি বললেনঃ কোন অসুবিধে নেই কোন দোষ নেই। তবে এটা আমার খাদ্য নয়।[মুসলিম ৩৪/৭, হাদীস ১৯৪৪] (আঃপ্রঃ- ৬৭৫৯, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৬৭৭১)

Comments

Leave a Reply