খনিজ সম্পদের যাকাতের পরিমাণ কত মাসালা সহ

খনিজ সম্পদের যাকাতের পরিমাণ কত মাসালা সহ

খনিজ সম্পদের যাকাতের পরিমাণ কত মাসালা সহ >> আল হিদায়া ফিকহ এর মুল সুচিপত্র দেখুন

কিতাবঃ আল হিদায়া, চতুর্থ অনুচ্ছেদ: খনিজ-সম্পদ ও প্রোথিত-সম্পদ

খারাজী কিংবা উশরী ভূমিতে প্রাপ্ত স্বর্ণ, রৌপ্য, সীসা, কিংবা তামা জাতীয় খনিজ দ্রব্য পাওয়া গেলে তাতে খুমুস (এক-পশ্চমাংশ) ওয়াজিব।

এ আমাদের মাযহাব। ইমাম শাফিঈ (রঃআঃ) বলেন, এ সকল দ্রব্যের ক্ষেত্রে প্রাপকের উপর কোন কিছু ওয়াজিব নয়।

কেননা,তা মালিকানা মুক্ত সম্পদ, সে সর্বাগ্রে তার অধিকার লাভ করেছে, যেমন শিকারের হুকুম। তবে খনিজদ্রব্য যদি স্বর্ণ বা রৌপ্য হয় তাহলে তাতে জাকাত ওয়াজিব হবে। কিন্তু এক মত অনুযায়ী তিনি এ ক্ষেত্রে বর্ষপূর্তির শর্ত আরোপ করেননি। কেননা এতো সম্পূর্ণ বর্ধিত সম্পদ। আর বর্ষপূর্তির শর্তারোপ করা হয় সম্পদ বর্ধিত হওয়ার জন্য।

আমাদের দলিল হলো রাসূলুল্লাহ্‌ (সাঃআঃ) এর বাণীঃ ভু-গর্ভস্থ সম্পদের উপর এক-পশ্চমাংশ ওয়াজিব।

হাদিসে ব্যবহৃত শব্দটি ধাতু থেকে নিষ্পন্ন, যার অর্থ স্থাপিত সম্পদ। সুতরাং খনিজদ্রব্যের উপরও শব্দটি প্রযুক্ত হবে।

তাছাড়া এই কারণেও যে, খনি-অঞ্চলটি কাফিরদের দখলে ছিলো, তা বিজিত রূপে আমাদের হাতে এসেছে। সুতরাং সেটা গনীমতে গণ্য হবে। আর গনীমতের মধ্যে পশ্চমাংশ ওয়াজিব।

শিকারের বিষয়টি এর বিপরীত। কেননা তা কখনো কারো দখলে ছিলো না।

অবশ্য তাতে মুজাহিদের কবজা হলো নীতিগত। কেননা, তাহাদের নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠিত হয়েছে ভূ-পৃষ্ঠের উপর। আর প্রকৃত পক্ষে কবজা হাসিল হয়েছে খনিজ উত্তোলনকারীর। তাই পশ্চমাংশ ওয়াজিব হওয়ার ব্যাপারে আমরা নীতিগত অবস্থার বিষয়টি বিবেচনা করেছি আর অবশিষ্ট চারভাগের ক্ষেত্রে প্রকৃত অবস্থা বিবেচনা করেছি। অতএব এতে উত্তোলনকারী-এর মালিক হবে।

যদি নিজের বাড়ীর সীমানার ভিতরে কোন খনিজ-সম্পদ পায় তাহলে তাতে কিছুই ওয়াজিব হবে না।

এটা ইমাম আবূ হানীফা (রঃআঃ)-এর মত। সাহেবাইন বলেন, তাতে পশ্চমাংশ ওয়াজিব হবে। কেননা আমরা যে হাদিস বর্ণনা করেছি, তা ব্যাপক।

ইমাম আবূ হানীফা (রঃআঃ)-এর দলিল এই যে, এটা ভূমির সংগে যুক্ত অংশ বিশেষ। আর ভূমির অন্যান্য অংশের উপর কোন কিছু ধার্য নেই। সুতরাং এটার উপরও কিছু ধার্য হবে না। কেননা (হুকুম ও বিধানের ক্ষেত্রে) এক অংশ সমষ্টির বিপরীত হয় না।

মাটিতে পুতে রাখা সম্পদের হুকুম এর বিপরীত। কেননা তা ভুমির সংগে যুক্ত ও মিশ্রিত নয়।

ইমাম মুহাম্মাদ (রঃআঃ) বলেন, যদি নিজের জমিতে পেয়ে থাকে তাহলে সে সম্পর্কে ইমাম আবূ হানীফা (রঃআঃ) থেকে দুটি বর্ণনা রহিয়াছে।

একটি বর্ণনা হিসাবে অর্থাত্ জামেউস-সাগীরের বর্ণনা হিসাবে (বাড়ী ও সাধারণ জমির মাঝে) পার্থক্যের কারণ এই যে, বাড়ীর মালিকানা আর্থিক দায়মুক্ত। কিন্তু জমির মালিকানা তদ্রুপ নয়। এ কারণেই জমির উপর উশর বা খারাজ ওয়াজিব হয় কিন্তু বাড়ীর উপর হয় না।

যদি জমিতে অবস্থিত অর্থাত্ প্রোথিত কোন সম্পদ লাভ করে তবে সকলের মতেই তাতে খুমুস ওয়াজিব হবে।

আমাদের ইতোপূর্বে বর্ণীত হাদিসটি হলো এর দলিল। কেননা হাদিসে উল্লেখিত শব্দটি প্রোথিত সম্পদের উপরও প্রযোজ্য হয়। কেননা তাতে বা স্থায়িত্বের অর্থ বিদ্যমান রহিয়াছে।

তবে যদি তাতে ইসলামী আমলের ছাপ থাকে, যেমন কালিমা শাহাদাত উত্কীর্ণ থাকলো, তাহলে তা লুকতাহ (হারানো জিনিসের) পর্যায়ভুক্ত হবে। আর তার বিধান যথাস্থানে বর্নিত হয়েছে। আর যদি তাতে জাহিলী যুগের ছাপ থাকে, যেমন তাতে মুর্তি ইত্যাদি উত্কীর্ণ থাকলো, তবে পূর্ব বর্ণীত কারণে সর্বাবস্থায় তাতে খুমুস ওয়াজিব হবে।

যদি জাহিলী যুগের প্রোথিত সম্পদ মালিকানামুক্ত (পতিত) ভূমিতে পেয়ে থাকে তাহলে এক-পঞ্চমাংশের অবশিষ্ট চার ভাগের প্রাপকের হবে। কারণ, তারপক্ষ থেকে সংরক্ষণ পূর্ণ হয়েছে। কেননা, যোদ্ধাদের তো এর উপস্থিতি সম্পর্কে জানা ছিলো না। সুতরাং সে-ই এটার নিরংকুশ মালিকানা লাভ করবে। অর্থাত্ নিজের জমিতে হোক কিংবা অন্যের জমিতে।

আর যদি মালিকানাধীন ভূমিতে পেয়ে থাকে,তাহলে ইমাম আাবূ ইউসুফ (রঃআঃ) এর মতে একই হুকুম হবে। কেননা অধিকার লাভ হয় পূর্ণ সংরক্ষনের মাধ্যমে। আর তা তার দ্বারা সম্পন্ন হয়েছে।

আর ইমাম আবূ হানীফা ও ইমাম মুহাম্মাদ (রঃআঃ) এর মতে শাসকের পক্ষ হতে জমিটি প্রথমে যার নামে দেশ জয়ের শুরুতে চিহ্নিত করে দেওয়া হয়েছে, সে-ই এর মালিক হবে। কেননা প্রথমে তারই কবজা এর উপর প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। আর তা হলো নির্দিষ্ট কবজা। সুতরাং এই কবজার কারণে ভূ-গর্ভস্থ সম্পদের মালিক হবে। যদিও তার কবজা ভূ-পৃষ্ঠের উপরে সম্পন্ন হয়েছে। যেমন কেউ একটি মাছ শিকার করল আর তার পেটে একটি মুক্তা পাওয়া গেলো।

অতঃপর ঐ জমি অন্যের কাছে বিক্রি করার কারণে প্রোথিত সম্পদ তার মালিকানা থেকে বের হয়ে যাবে না। কেননা তা মাটির নীচে রক্ষিত আমানত। খনিজ দ্রব্যের বিষয়টি এর বিপরীত। কেননা তা যমীনের অংশ বিশেষ। সুতরাং তা ক্রেতার মালিকানায় স্থানান্তরিত হয়ে যাবে।

প্রথমে যার নামে চিহ্নিত করা হয়েছিল, যদি তার পরিচয় না পাওয়া যায়, তাহলে ইসলামী আমলের যে দূরতম মালিকের সন্ধান পাওয়া যায়, তার হাতেই এর মালিকানা সোপর্দ করা হবে। ফকীহগণ এ মত-ই ব্যক্ত করেছেন।

যদি ছাপ অস্পষ্ট হয়ে গিয়ে থাকে তাহলে যাহেরী মাযহাব অনুসারে সেটাকে জাহিলী যুগের বলে ধরা হবে। কেননা তা-ই মূল অবস্থা।

আর কেউ কেউ বলেছেন, আমাদের যুগে সেটি ইসলামী আমলেরই ধরা হবে। কেননা ইসলামী যুগও প্রবীণ হয়ে গিয়েছে। (সুতরাং দৃশ্যতঃ তা ইসলামী যুগেরই প্রোথিত।)

যে ব্যক্তি দারূল হারবে নিরাপত্তা নিয়ে বৈধভাবে প্রবেশ করলো এবং তাহাদের কারো বাড়ীতে ভূ-গর্ভস্থ সম্পদ লাভ করলো, সে তা তাহাদেরকে ফিরিয়ে দিবে।

এটা করবে ‘বিশ্বাস ঘাতকতা থেকে বাচার জন্য। কেননা, বাড়ীতে যা কিছু আছে তা বাড়ীর মালিকের জন্যই নির্ধারিত।

আর যদি মালিকানামুক্ত মাঠে পেয়ে থাকে তবে সেটা তারই। কেননা, তা কারো ব্যক্তি মালিকানাধীন নয়। সুতরাং তা হস্তগত করা বিশ্বাস ভংগ বলে গণ্য হবে না। আর তাতে কিছু ওয়াজিব হবে না। কেননা সে গোপনে হস্তগতকারীর ন্যায়, মুজাহিদের মত হস্তগতকারীর ন্যায় নয়।

ফিরোজা পাথর যা পাহাড়ে পাওয়া যায়, তাতে খুমস ওয়াজিব নয়। কেননা রসূলুল্লাহ(সাঃআঃ) বলেছেন, পাথরের উপর খুমুস নেই।

পারদের ক্ষেত্রে খুমুস ওয়াজিব হবে। এটা ইমাম আবূ হানীফা (রঃআঃ) এর পরবর্তী মত। এবং ইমাম মুহাম্মাদ (রঃআঃ) এরও এই মত। এতে ইমাম আবূ ইউসুফ (রঃআঃ) এর ভিন্নমত রহিয়াছে।

মুক্তা ও আম্বরের উপর খুমুস নেই।

এটা ইমাম আবূ হানীফা ও মুহাম্মাদ (রঃআঃ)-এর মত। ইমাম আবূ ইউসুফ (রঃআঃ) বলেন, এ দুটিতে এবং সমুদ্র থেকে আহরিত সকল ভুষণের উপর খুমুস ওয়াজিব। কেননা উমর (রাঃআঃ) আম্বর হতে খুমুস গ্রহণ করেছেন। সাহেবাইনের বক্তব্য এই যে, সমুদ্রের তলদেশে বিজয় প্রতিষ্ঠিত হয়নি। সুতরাং তা থেকে লব্ধ বস্তু স্বর্ণ-রৌপ্য হলেও গনীমত রূপে গণ্য হবে না।

আর উমর (রাঃআঃ) হতে বর্ণীত রিওয়ায়াতের ক্ষেত্র হলো সমুদ্র-নিক্ষিপ্ত বস্তু। আর সে ক্ষেত্রে আমাদেরও এ মত।

মাটিতে পুতে রাখা সামানপত্র পাওয়া গেলে তা ঐ ব্যক্তিরই হবে, যে পেয়েছে। আর তাতে খুমুস ধার্য হবে। অর্থাত্ মালিকানামুক্ত পতিত ভূমিতে পাওয়া গেছে। কেননা স্বর্ণ-রৌপ্যের মত এটাও মালে গনীমতগ্রস্ত। আল্লাহ্‌ই অধিক অবগত।


Posted

in

by

Comments

Leave a Reply