ক্রয় বিক্রয়ের শর্তাবলী ও তার নিষিদ্ধ বিষয়

ক্রয় বিক্রয়ের শর্তাবলী ও তার নিষিদ্ধ বিষয়

ক্রয় বিক্রয়ের শর্তাবলী  >> বুলুগুল মারাম এর মুল সুচিপত্র দেখুন

অধ্যায় -১ঃ ক্রয় বিক্রয়ের শর্তাবলী ও তার নিষিদ্ধ বিষয়

পরিচ্ছেদ ০১. উত্তম ক্রয়-বিক্রয়ের ফযীলত
পরিচ্ছেদ ০২. যে সমস্ত ক্রয়-বিক্রয় নিষেধ করা হয়েছে
পরিচ্ছেদ ০৩. ক্রেতা এবং বিক্রেতার মতবিরোধের বিধান
পরিচ্ছেদ ০৪. নিকৃষ্ট উপার্জনসমূহ
পরিচ্ছেদ ০৫. বিক্রিত দ্রব্য থেকে সুবিধা পাওয়ার জন্য শর্তারোপ করার বিধান
পরিচ্ছেদ ০৬. “মুদাব্বার” গোলাম বিক্রির বিধান
পরিচ্ছেদ ০৭. ইদুর পড়ে যাওয়া ঘিয়ের বিধান
পরিচ্ছেদ ০৮. কুকুর এবং বিড়াল ক্রয় বিক্রয়ের বিধান
পরিচ্ছেদ ০৯. শরীয়ত সম্মত সকল শর্তের বৈধতা এবং এছাড়া অন্য সকল শর্ত বাতিল বলে গন্য হওয়া
পরিচ্ছেদ ১০. উম্মুল অলাদ [যে দাসীর গর্ভে মনিবের সন্তান জন্মগ্রহন করেছে তার] বিক্রয়ের বিধান
পরিচ্ছেদ ১১. উদ্বৃত পানি বিক্রয় করা এবং মাদী জন্তুর উপর নর উঠানোর মজুরী গ্রহণ করা নিষেধ
পরিচ্ছেদ ১২. যে সমস্ত ব্যবসা নিষিদ্ধ
পরিচ্ছেদ ১৩. ওয়ালা -এর বিক্রয় এবং তা হেবা করা নিষেধ
পরিচ্ছেদ ১৪. ধোঁকা দিয়ে বিক্রি করা নিষেধ
পরিচ্ছেদ ১৫. খাদ্য বস্তু হাতে আসার পূর্বেই মৌখিকভাবে বিক্রি করা নিষেধ
পরিচ্ছেদ ১৬. এক জিনিস বিক্রির মধ্যে দুই জিনিস বিক্রি করার বিধান
পরিচ্ছেদ ১৭. ক্রয় বিক্রয়ের কতিপয় মাসআলা
পরিচ্ছেদ ১৮. “উরবুন” নামক বিক্রির বিধান”
পরিচ্ছেদ ১৯. পণ্য হাতে আসার পূর্বেই বিক্রি করা নিষেধ
পরিচ্ছেদ ২০. স্বর্ণমুদ্রার বদলে রৌপ্যমুদ্রা দিয়ে ক্রয়-বিক্রয় করা নিষেধ
পরিচ্ছেদ ২১. ধোঁকা দেওয়া নিষেধ
পরিচ্ছেদ ২২. কতিপয় লেনদেন নিষেধ
পরিচ্ছেদ ২৩. বহিরাগত বিক্রেতার সঙ্গে সাক্ষাত করা এবং গ্রামবাসীর পক্ষে শহরবাসীর বিক্রয় করা নিষিদ্ধ
পরিচ্ছেদ ২৪. কোন ভাইয়ের বিক্রয়ের উপর বিক্রয় করা [কমমূল্যে বিক্রয় করার প্রস্তাব দেয়া] এবং কোন ভাইয়ের ক্রয়ের উপর ক্রয় করা [বেশী দাম দিয়ে ক্রয় করার প্রস্তাব দেওয়া] নিষিদ্ধ
পরিচ্ছেদ ২৫. দাস-দাসীদের বিক্রির ক্ষেত্রে এদের আত্মীয়স্বজনের মধ্যে বিচ্ছেদ ঘটানো [অর্থাৎ একজনকে এক জায়গায় আর অন্যজনকে অন্য জায়গায় বিক্রি করা] নিষেধ
পরিচ্ছেদ ২৬. -দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধি করার বিধান
পরিচ্ছেদ ২৭. [খাদ্য দ্রব্য] গুদামজাত করার বিধান
পরিচ্ছেদ ২৮. উট, গরু, ছাগলের দুধ আটকিয়ে রেখে বিক্রয় করা নিষেধ
পরিচ্ছেদ ২৯. প্রতারনা, ঠগবাজি করা নিষেধ
পরিচ্ছেদ ৩০. মদ তৈরিকারকদের নিকট আঙ্গুর বিক্রি করার ব্যাপারে নিষেধাজ্ঞা
পরিচ্ছেদ ৩১. জিম্মাদার ব্যক্তি লভ্যাংশের হকদার
পরিচ্ছেদ ৩২. লভ্যাংশ খরচ করার বিধান
পরিচ্ছেদ ৩৩. ধোঁকা দিয়ে বিক্রি করার কতিপয় মাসআলা
পরিচ্ছেদ ৩৪. ধোঁকা দিয়ে বিক্রি করার আরও কতিপয় মাসআলা

পরিচ্ছেদ ০১. উত্তম ক্রয়-বিক্রয়ের ফযীলত

৭৮২ : রিফা`আহ বিন রাফি` [রাঃআঃ] হইতে বর্ণিতঃ

নবী [সাঃআঃ] জিজ্ঞাসিত হয়েছিলেন- `কোন্‌ প্রকারের জীবিকা উত্তম?` উত্তরে তিনি বলিলেন— নিজ হাতের কামাই এবং সৎ ব্যবসায় । -হাকিম একে সহিহ বলেছেন। {৮৩১}

{৮৩১} সহিহ, বাযযার ২য় খণ্ড ৮৩ পৃষ্ঠা, হাকিম ২য় খণ্ড ১০ পৃষ্ঠা।সহিহ, তাওযিহুল আহকাম ৮/২১৮ পৃঃ। ক্রয় বিক্রয়ের শর্তাবলী হাদিসের তাহকিকঃ সহিহ হাদিস

পরিচ্ছেদ ০২. যে সমস্ত ক্রয়-বিক্রয় নিষেধ করা হয়েছে

৭৮৩ – জাবির ইবনু `আবদুল্লাহ [রাঃআঃ] হইতে বর্ণিতঃ

তিনি আল্লাহর রসূল [সাঃআঃ] -কে মাক্কাহ বিজয়ের বছর মাক্কাহয় অবস্থানকালে বলিতে শুনেছেনঃ আল্লাহ তা`আলা ও তাহাঁর রসূল হারাম করে দিয়েছেন মদ, মৃতপ্রাণী, শূকর ও মূর্তি ক্রয় বিক্রয়। তাঁকে জিজ্ঞেস করা হলো, হে আল্লাহর রসূল! মৃত জন্তুর চর্বি সম্পর্কে আপনি কী বলেন? তা দিয়ে তো নৌকায় প্রলেপ দেয়া হয় এবং চামড়া তৈলাক্ত করা হয় আর লোকে তা প্রদীপ জ্বালিয়ে থাকে। তিনি বলিলেন, না, সেটিও হারাম। তারপর আল্লাহর রসূল [সাঃআঃ] বলেন, আল্লাহ তা`আলা ইয়াহূদীদের ধ্বংস করুন। আল্লাহ যখন তাহাদের জন্য মৃত জিনিসের চর্বি হারাম করে দেন, তখন তারা তা সংগ্রহ করে, তা বিক্রি করে তার মূল্য ভক্ষণ করে। {৮৩২}

হাদিসের তাহকিকঃ সহিহ হাদিস

পরিচ্ছেদ ০৩. ক্রেতা এবং বিক্রেতার মতবিরোধের বিধান

৭৮৩ -ইবনু মাস`ঊদ [রাঃআঃ] হইতে বর্ণিতঃ

৭৮৩/১. তিনি বলেন, আমি রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] -কে বলিতে শুনেছিঃ ক্রেতা ও বিক্রেতার মধ্যে মতবিরোধের সময় যদি কোন সাক্ষ্য প্রমাণ না থাকে সেক্ষেত্রে বিক্রেতার কথাই গ্রহণযোগ্য হইবে নতুবা তারা চুক্তি বাতিল করিবে। -হাকিম একে সহিহ বলেছেন। {৮৩৩}

{৮৩৩} আবূ দাউদ ৩৫১১, তিরমিজি ১২৭০, হাদিসটি জঈফ, তবে বিভিন্ন সূত্রের কারণে শক্তিশালী হয়েছে, তাওযিহুল আকরাম ৪/২২৯ পৃঃ , তাই হাসান। হাদিসের তাহকিকঃ অন্যান্য

পরিচ্ছেদ ০৪. নিকৃষ্ট উপার্জনসমূহ

৭৮৪ -আবূ মাস`ঊদ আনসারী [রাঃআঃ] হইতে বর্ণিতঃ

আল্লাহর রসূল [সাঃআঃ] নিষেধ করিয়াছেন কুকুরের মূল্য, ব্যভিচারের বিনিময় এবং গণকের পারিশ্রমিক [গ্রহণ করিতে]। {৮৩৪}

{৮৩৪} বুখারি ২২৮২, ৫৩৪৬, ৫৭৬১, মুসলিম ১৫৬৭, তিরমিজি ১১৩৩, ১২৭৬, নাসায়ী ৪২৯২, ৪৬৬৬, আবূ দাউদ ৩৪২৮, ৩৪৮১, ইবনু মাযাহ ২১৫৯, ৩৭৪৪, আহমাদ ১৬৬২২, ১৬৬২৬, মুওয়াত্তা মালেক ১৩৬৩, দারেমী ২৫৬৮। উক্ত হাদীসে তিনটি বিষয়ের হারাম সাব্যস্ত হয়। ১. কুকুরের মূল্য নেওয়া হারাম। আর তা সমস্ত কুকুরের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য। যা ইমাম মালেক এবং শাফেয়ী [রহমাতুল্লাহি আলাইহি] এর অভিমত। ২. ব্যভিচারিণীর উপার্জন হারাম। ৩. গণক ভাগ্য গণনা করে যা কিছু নেয় তা হারাম। আর তা সকলের মতে হারাম। হাদিসের তাহকিকঃ সহিহ হাদিস

পরিচ্ছেদ ০৫. বিক্রিত দ্রব্য থেকে সুবিধা পাওয়ার জন্য শর্তারোপ করার বিধান

৭৮৫ -জাবির ইবনু `আবদুল্লাহ [রাঃআঃ] হইতে বর্ণিতঃ

তিনি একটা উটের উপর উপবিষ্ট ছিলেন। উটটি অচল হয়ে যাওয়াতে তাকে ছেড়ে দেয়ার ইরাদা করিলেন; তিনি বলেন, তখন নবী [সাঃআঃ] -এর সাথে আমার সাক্ষাত হলে তিনি আমার জন্য দু`আ করিলেন, আর উটটিকে প্রহার করিলেন, তারপর থেকে উটটি এমন গতিতে চলতে লাগল যা ইতিপূর্বে আর চলেনি। তারপর নবী [সাঃআঃ] আমাকে বলিলেন- তুমি একে আমার নিকট এক উকিয়াহর বিনিময়ে বিক্রি কর। আমি বললাম, না। অতঃপর দ্বিতীয়বার তিনি বলিলেন, এটা আমার কাছে বিক্রি কর। ফলে আমি ঐটি তাহাঁর নিকট এক উকিয়াহ্‌র মূল্যে বিক্রি করে দিলাম এবং বাড়ি পর্যন্ত তার উপর চড়ে যাবার শর্ত করে নিলাম। যখন বাড়ি পৌঁছালাম তখন উটটি নিয়ে তাহাঁর নিকটে এলাম। ফলে সেটির নগদ মূল্য তিনি দিয়ে দিলেন। তারপর ফিরে আসছি এমন সময় তিনি আমার পেছনে লোক পাঠালেন এবং আমাকে বলিলেন- তুমি কি মনে করছ যে, আমি তোমার উটটি কম মূল্য দিয়ে নিতে চাচ্ছি- তুমি তোমার উট ও দিরহামগুলো নাও, এ [সবই] তোমার জন্য। -এ [শব্দের] ধারাবাহিকতা মুসলিমের। {৮৩৫}

{৮৩৫} বুখারি ৪৪৩, ১৮০১, ২০৯৭, মুসলিম ৭১৫, তিরমিজি ১১০০, নাসায়ী ৪৫৯০, ৪৫৯১, আবূ দাউদ ৩৩৪৭, ৩৫০৫, ইবনু মাযাহ ১৮৬০, আহমাদ ১৩৭১০, ১৩৭৬৪, দারেমী ২২১৬। ক্রয় বিক্রয়ের শর্তাবলী হাদিসের তাহকিকঃ সহিহ হাদিস

পরিচ্ছেদ ০৬. “মুদাব্বার” গোলাম বিক্রির বিধান

৭৮৬ -জাবির [রাঃআঃ] হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, কোন এক সহাবী তাহাঁর একমাত্র দাসকে মুদাব্বের* করে মুক্ত করার ব্যবস্থা করেন। সেটি ছাড়া তার আর কোন সম্পদ ছিল না। ফলে নবী [সাঃআঃ] দাসটিকে নিয়ে ডেকে আনালেন ও বিক্রি করে দিলেন। {৮৩৬}

{৮৩৬} বুখারি ২২৩১, ২৪০৪, মুসলিম ৯৯৭, তিরমিজি ১২১৯, নাসায়ী ৪৬৫২, ৪৬৫৩, আবূ দাউদ ৩৯৫৫, ৩৯৫৭, ইবনু মাযাহ ২৫১২, আহমাদ ১৩৭১৯, ১৩৮০৩, দারেমী ২৫৭৩। যে দাস বা দাসীকে তার মনিব জীবিতাবস্থায় তাহাঁর মৃত্যুর পর মুক্ত হওয়ার ঘোষণা দেয়া এমন দাস-দাসীকে মুদাব্বের বলা হয়। অর্থাৎ মনিব মারা যাবার সাথে সাথে সে মুক্ত হয়ে যাবে সংশ্লিষ্ট বিষয়ে হাদিস থেকে দলীল। জাবির [রাঃআঃ] হইতে বর্ণিত যে, [আরবী] উযরাহ সম্প্রদায়ের জনৈক ব্যক্তি তার মৃত্যুর পরে তার গোলাম আযাদ হইবে বলে ঘোষণা দিল, বিষয়টি রাসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] এর কাছে পৌঁছলে তিনি বললেনঃ তোমার কাছে কি এ ছাড়া অন্য কোন সম্পদ আছে? সে বললঃ না। তিনি বলিলেন, কে আমার কাছ থেকে এ গোলামটি খরিদ করিবে? নুয়াইম বিন আব্দুল্লাহ আল আদাবী একে আটশত দিরহামের বিনিময়ে খরিদ করিলেন। রাসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] একে নিয়ে আসা হলো, তিনি তাকে তার কাছে দিয়ে দিলেন। অতঃপর বলিলেন, তুমি প্রথমে নিজেকে দান করিবে। যদি কিছু অতিরিক্ত থাকে তাহলে তোমার পরিবারের পিছনে ব্যয় করিবে। যদি তারপরও কিছু অতিরিক্ত থাকে, তাহলে তোমার আত্মীয় স্বজনদের সদকা করিবে। [আরবী] অর্থাৎ মানবের মৃত্যুর সাথে দাস আযাদের সম্পর্ক করা। এ ভাবে বলা যে, আমার মৃত্যুর পর তুমি আযাদ । ক্রয় বিক্রয়ের শর্তাবলী হাদিসের তাহকিকঃ সহিহ হাদিস

পরিচ্ছেদ ০৭. ইদুর পড়ে যাওয়া ঘিয়ের বিধান

৭৮৭ -নবী [সাঃআঃ] এর স্ত্রী মাইমূনাহ [রাঃআঃ] হইতে বর্ণিতঃ

ঘি-এর মধ্যে পড়ে ইঁদুর মারা যাওয়া সম্বন্ধে নবী [সাঃআঃ] কে জিজ্ঞেস করা হলে তিনি বলিলেন, ইঁদুরটিকে উঠিয়ে ফেলে তার চারপাশের ঘি ফেলে দিয়ে তা খাও। – আহমাদ ও নাসায়ী বৃদ্ধি করেছেনঃ “জমে যাওয়া ঘি-এর জন্য [এরূপ ব্যবস্থা]”। {৮৩৭}

{৮৩৭} বুখারি ২৩৫, ২৩৬, ৪৫৩৮, তিরমিজি ১৭৯৮, নাসায়ী ৪২৫৮, ৪২৫৯, ৪২৬০, আবূ দাউদ ৩৮৪১, ৩৮৪২, আহমাদ ২৬২৫৬, ২৬৩০৭, মুওয়াত্তা মালেক ১৮১৫, দারেমী ৭৩৮, ২০৮৩। হাদিসের তাহকিকঃ অন্যান্য

৭৮৮ -আবূ হুরাইরা [রাঃআঃ] হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, আল্লাহর রসূল [সাঃআঃ] বলেছেন- যদি জমা ঘি-এর মধ্যে ইঁদুর পড়ে তাহলে ইঁদুরটি ও তার আশেপাশের ঘি ফেলে দাও, আর যদি ঘি তরল হয় তাহলে [ঘি নেয়ার জন্য] এগিয়ো না। [তা সম্পূর্ণ গ্রহণের অনুপযোগী]। – বুখারি ও আবূ হাতিম এ হাদীসের রাবীর উপর অহমের হুকুম জারী করিয়াছেন [তার স্মৃতিশক্তি ছিল দুর্বল]। {৮৩৮}

{৮৩৮} আবূ দাউদ ৩৮৪১, হাদিসটি শায ও ত্রুটিযুক্ত, তাওযিহুল আহকাম ৪/২৪২ পৃঃ। হাদিসের তাহকিকঃ শায

পরিচ্ছেদ ০৮. কুকুর এবং বিড়াল ক্রয় বিক্রয়ের বিধান

৭৮৯ -আবূ যুবাইর [রাঃআঃ] হইতে বর্ণিতঃ

তিনি জাবির [রাঃআঃ] – কে বিড়াল ও কুকুরের মূল্য [এর বৈধা বৈধ] সম্বন্ধে জিজ্ঞেস করলে তিনি বলেন, নবী [সাঃআঃ] এর কারণে ধমক দিয়েছেন। – নাসায়ীতে রহিয়াছে শিকারী কুকুরের মূল্য ব্যতীত। অর্থাৎ শিকারী কুকুরের মূল্য বৈধ। {৮৩৯}

{৮৩৯} মুসলিম ১৫৬৯, তিরমিজি ১২৭৯, নাসায়ী ৪২৯৫, ৪৬৬৮, আবূ দাউদ ৩৪৭৯, ৩৪৮০, ইবনু মাযাহ ২১৬১, আহমাদ ১৪০০২, ১৪৭২৮ । হাদিসের তাহকিকঃ সহিহ হাদিস

পরিচ্ছেদ ০৯. শরীয়ত সম্মত সকল শর্তের বৈধতা এবং এছাড়া অন্য সকল শর্ত বাতিল বলে গন্য হওয়া

৭৯০ -আয়িশা [রাঃআঃ] হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, বারীরাহ [রাঃআঃ] আমার কাছে এসে বলিল, আমি আমার মালিক পক্ষের সাথে নয় উকিয়া দেয়ার শর্তে মুকাতাবা {৮৪০} করেছি- প্রতি বছর যা হইতে এক উকিয়া করে দিতে হইবে। আপনি [এ ব্যাপারে] আমাকে সাহায্য করুন। আমি বললাম, যদি তোমার মালিক পক্ষ পছন্দ করে যে, আমি তাহাদের একবারেই তা পরিশোধ করব এবং তোমার ওয়ালা-এর অধিকার আমার হইবে, তবে আমি তা করব। তখন বারীরাহ [রাঃআঃ] তার মালিকদের নিকট গিয়ে তা বলিল। তারা তাতে অস্বীকৃতি জানাল। বারীরাহ [রাঃআঃ] তাহাদের নিকট হইতে [আমার কাছে] এল। আর তখন আল্লাহর রসূল [সাঃআঃ] সেখানে উপস্থিত ছিলেন। সে বলিল, আমি [আপনার] সে কথা তাহাদের কাছে পেশ করেছিলাম। কিন্তু তারা নিজেদের জন্য ওয়ালার অধিকার সংরক্ষণ ছাড়া রাযী হয়নি। নবী [সাঃআঃ] শুনলেন, `আয়িশা [রাঃআঃ] নবী [সাঃআঃ]-কে তা সবিস্তারে জানালেন। তিনি বলিলেন, তুমি তাকে নিয়ে নাও এবং তাহাদের জন্য ওয়ালার শর্ত মেনে নাও। কেননা, ওয়ালা এর হক তারই, যে আযাদ করে। `আয়িশা [রাঃআঃ] তাই করিলেন। এরপর আল্লাহর রসূল [সাঃআঃ] জনসমক্ষে দাঁড়িয়ে আল্লাহর হাম্‌দ ও সানা বর্ণনা করিলেন। তারপর বলিলেন, লোকদের কী হলো যে, তারা আল্লাহর বিধান বহির্ভূত শর্তারোপ করে। আল্লাহর বিধানে যে শর্তের উল্লেখ নেই, তা বাতিল বলে গণ্য, একশত শর্ত করলেও না। আল্লাহর ফায়সালাই সঠিক, আল্লাহর শর্তই সুদৃঢ়। ওয়ালার হাক্ব তো তারই, যে মুক্ত করে। শব্দ বিন্যাস বুখারির। মুসলিমে আছে- নবী [সাঃআঃ] আয়িশা [রাঃআঃ]-কে বলিলেন, তাকে কিনে নাও, তাহাদের জন্য অলা-র শর্ত কর। {৮৪১}

{৮৪০} বুখারি ৪৫৬, ১৪৯৩, ২১৫৫, ২৫৩৬, ২৫৬১, মুসলিম ১৫০৪, তিরমিজি ১২৫৬, আবূ দাউদ ৩৯২৯, ইবনু মাযাহ ৩৮৫৩, মুওয়াত্তা মালেক ১৫১৯। নিজের দাস-দাসীকে কোন কিছুর বিনিময়ে আযাদ করার চুক্তিকে মুকাতাবা বলে। {৮৪১} `অলা` অর্থ মুক্তির পর দাস দাসীর সঙ্গে মুক্তিদাতার আত্মীয়তা সুলভ সম্পর্ক ও মিরাস লাভের অধিকার। ক্রয় বিক্রয়ের শর্তাবলী হাদিসের তাহকিকঃ সহিহ হাদিস

পরিচ্ছেদ ১০. উম্মুল অলাদ [যে দাসীর গর্ভে মনিবের সন্তান জন্মগ্রহন করেছে তার] বিক্রয়ের বিধান

৭৯১ -ইবনু `উমার [রাঃআঃ] হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, উমার [রাঃআঃ] জননী দাসী বিক্রি করিতে নিষেধ করিয়াছেন, তিনি বলেছেন, বিক্রি করা যাবে না, হেবা [দান] করা যাবে না, ওয়ারিস হিসেবেও কেউ তাকে অধিগ্রহণ করিতে পারবে না। তার মালিক যতদিন চাইবে ততদিন তার দ্বারা ফায়দা উঠাবে। মালিকের মৃত্যুর পর সে স্বাধীন হয়ে যাবে। -বাইহাকি বলেছেন- এ হাদীসের কিছু বর্ণনাকারী, অহম বা অনিশ্চয়তার ভিত্তিতে `মারফূ` বৰ্ণনা করিয়াছেন। {৮৪২}

{৮৪২} ইবনু মাযাহ ২৫১৭, আবূ দাউদ ৩৯৫৪। সহিহ মাওকুফ, তাওযিহুল আহকাম ৪/২৫৬। হাদিসের তাহকিকঃ সহিহ মাওকুফ।

৭৯২ -জাবির [রাঃআঃ] হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেছেন, আমরা জননী দাসী বিক্রি করে দিতাম আর নবী [সাঃআঃ] আমাদের মধ্যে জীবিত ছিলেন, এ বিষয়টিকে আমরা দোষ হিসেবে দেখতাম না। -ইবনু হিব্বান একে সহীহ্ বলেছেন। {৮৪৩}

{৮৪৩} হাদিসটি বিভিন্ন সূত্রের ভিত্তিতে সহিহ, তাওযিহুল আহকাম৪/২৫৭। হাদিসের তাহকিকঃ সহিহ হাদিস

পরিচ্ছেদ ১১. উদ্বৃত পানি বিক্রয় করা এবং মাদী জন্তুর উপর নর উঠানোর মজুরী গ্রহণ করা নিষেধ

৭৯৩ -জাবির বিন `আবদুল্লাহ [রাঃআঃ] হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] উদ্বৃত্ত পানি বিক্রি করিতে নিষেধ করিয়াছেন।

[মুসলিমের] অন্য বর্ণনায় আছে- নবী [সাঃআঃ] নরকে মাদীর উপর [গর্ভসঞ্চারের উদ্দেশ্যে যৌন মিলন ঘটানোর ব্যবস্থা বিক্রি করিতে] উঠাতে নিষেধ করিয়াছেন। {৮৪৪}

{৮৪৪} মুসলিম ১৫৬৫, নাসায়ী ৪৬৬০, ৪৬৭০, ইবনু মাযাহ ২৪৭৭. আহমাদ ১৪২২৯, ১৪২৩৪, ১৪৪২৮। হাদিসের তাহকিকঃ সহিহ হাদিস

৭৯৪ -ইবনু `উমার [রাঃআঃ] হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] পশুকে পাল দেয়া বাবদ বিনিময় নিতে নিষেধ করিয়াছেন। {৮৪৫}

হাদিসের তাহকিকঃ সহিহ হাদিস

পরিচ্ছেদ ১২. যে সমস্ত ব্যবসা নিষিদ্ধ

৭৯৫ – আবদুল্লাহ ইবনু `উমার [রাঃআঃ] হইতে বর্ণিতঃ

আল্লাহর রসূল [সাঃআঃ] নিষেধ করিয়াছেন গর্ভস্থিত বাচ্চার গর্ভের প্রসবের মেয়াদের উপর বিক্রি করিতে। এটি জাহিলিয়াতের যুগে প্রচলিত এক ধরনের বিক্রি ব্যবস্থা। কেউ এ শর্তে উটনী ক্রয় করত যে, এই উটনীটি প্রসব করিবে পরে ঐ শাবক তার গর্ভ প্রসব করার পর তার মূল্য পরিশোধ করা হইবে। -শব্দ বিন্যাস বুখারির। {৮৪৬}

{৮৪৬} বুখারি ২১৪৩, ২২৫৬, ৩৮৪৩, মুসলিম ১৫১৪, তিরমিজি ১২২৯, নাসায়ী ৪৬২৩, ৪৪২৪, ৪৬২৫, আবূ দাউদ ৩৩৮০, ইবনু মাযাহ ২১৯৭, আহমাদ ৩১৬, ৪৪৭৭, , ৪৪৫৬৮। ক্রয় বিক্রয়ের শর্তাবলী হাদিসের তাহকিকঃ সহিহ হাদিস

পরিচ্ছেদ ১৩. ওয়ালা -এর বিক্রয় এবং তা হেবা করা নিষেধ

৭৯৬ -ইবনু `উমার [রাঃআঃ] হইতে বর্ণিতঃ

রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] `অলা`*-এর বিক্রয় ও হেবা [দান]-কে নিষিদ্ধ করিয়াছেন। {৮৪৭}

{৮৪৭} বুখারি ২৫৩৫, ৬৭৫৬, মুসলিম ১৫০৬ তিরমিজি ১২৩৬, ২১২৬, নাসায়ী ৪৬৫৭, ৪৬৫৮, আবূ দাউদ ২৯১৯, ইবনু মাযাহ ২৭৪৭, ২৭৪৮, আহমাদ ৪৫৪৭, ৫৪৭২, মুওয়াত্তা মালেক ১৫২২, দারেমী ২৫৭২, ৩১৫৫, ৩১৫৬ ৷ অলা বলা হয় উত্তরাধিকারের অধিকারকে। আযাদকৃত দাস দাসীর মৃত্যুর পর তার ফেলে যাওয়া সম্পদের হকদার হয় সেই আযাদকারী অথবা তার ওয়ারিসগণ। পক্ষ থেকে আযাদকারী ব্যক্তি অর্জন করে থাকে। জাহেলিয়াতের যুগে আযাদলাভকারীর মৃত্যুর পূর্বেই দাস দাসীদের বিক্রি অথবা দান করে দিত। হাদিসের তাহকিকঃ সহিহ হাদিস

পরিচ্ছেদ ১৪. ধোঁকা দিয়ে বিক্রি করা নিষেধ

৭৯৭ -আবূ হুরাইরা [রাঃআঃ] হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] নিষিদ্ধ করিয়াছেন, কেনা-বেচায় পাথর নিক্ষেপ প্রথা আর প্রতারণামূলক যাবতীয় ব্যবসায়। {৮৪৮}

{৮৪৮} তিরমিজি ১২৩০, নাসায়ী ৪৫১৮, আবূ দাউদ ৩৩৭৮, ইবনু মাযাহ ২১৯৪, আহমাদ ৭৩৬৩, দারেমী ২৫৫৪, ২৫৬৩। হাদিসের তাহকিকঃ সহিহ হাদিস

পরিচ্ছেদ ১৫. খাদ্য বস্তু হাতে আসার পূর্বেই মৌখিকভাবে বিক্রি করা নিষেধ

৭৯৮ -আবূ হুরাইরা [রাঃআঃ] হইতে বর্ণিতঃ

আয়িশা রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলেছেন, যে ব্যক্তি খাদ্যবস্তু ক্রয় করলো, সে যেন তা না মেপে বিক্রি না করে। {৮৪৯

{৮৪৯} মুসলিম ১৫২৮, আহমাদ ৮২৩৫, ৮৩৮৩। হাদিসের তাহকিকঃ সহিহ হাদিস

পরিচ্ছেদ ১৬. এক জিনিস বিক্রির মধ্যে দুই জিনিস বিক্রি করার বিধান

৭৯৯ -আবূ হুরাইরা [রাঃআঃ] হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] একই বিক্রয়ের মধ্যে দু`টি বিক্রয় সাব্যস্ত করাকে নিষিদ্ধ করিয়াছেন। -তিরমিজি ও ইবনু হিব্বান একে সহিহ বলেছেন।

আবূ দাউদে আছে- যে ব্যক্তি একই বিক্রয়ের মধ্যে একাধিক বিক্রয় করিতে চায় তার জন্য বিক্রয়টি কম-বেশি হইবে যা সুদ বলে গণ্য। {৮৫০}

{৮৫০} তিরমিজি ১২৩১, আবূ দাউদ ৩৪৬১, আহমাদ ৯৩০১, ২৭২৪৫, নাসায়ী ৪৬৩২। হাদিসের তাহকিকঃ সহিহ হাদিস

পরিচ্ছেদ ১৭. ক্রয় বিক্রয়ের কতিপয় মাসআলা

৮০০ -`আম্‌র বিন শু`আইব [রাঃআঃ] হইতে বর্ণিতঃ

তিনি তাহাঁর পিতা হইতে, তিনি তাহাঁর দাদা [রাঃআঃ] হইতে বর্ণনা করে বলেন, রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলেছেন- `সালাফ ও বিক্রয় বৈধ নয়।` `একই বিক্রয়ে দু`টি শর্ত বৈধ নয়।` `যাতে কোন জিম্মাদারী নেই তাতে কোন লাভ নেই।` যা তোমার দখলে নেই তা বিক্রয়যোগ্যও নয়। – তিরমিজি, ইবনু খুযাইমাহ ও হাকিম সহিহ বলেছেন। {৮৫১}

ইমাম হাকিম উলূমুল হাদিস গ্রন্থে উপরোক্ত সাহাবী থেকেই ইমাম আবূ হানীফা [রহমাতুল্লাহি আলাইহি]- এর একটি বর্ণনা উদ্ধৃত করেন, তাতে রয়েছে। রাসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] শর্তারোপ করে বিক্রি করা নিষেধ করিয়াছেন। ইমাম তাবারানীও তাহাঁর আওসাত গ্রন্থে একই সনদে এ হাদিসটি বর্ণনা করিয়াছেন, যা গরীব। {৮৫২}

{৮৫১} আবূ দাউদ ৩৫০৪, তিরমিজি ১২৩৪, নাসায়ী ৪৬১১, ইবনু মাযাহ ২১৮৮, আহমাদ ৬৫৯১, দারেমী ২৫৬০, হাকিম ২য় খন্ড ১৭। `সালাফ ও বিক্রয়` অর্থঃ ক্রেতা-বিক্রেতাকে ঋণ হিসেবে অর্থ দিবে এ শর্তে যে তাহাঁর নিকটে বিক্রেতা পণ্যের মুল্য কম নেবে।ন {৮৫২} ইমাম হাকিম তাহাঁর লিখিত উলূমিল হাদিস গ্রন্থে ১২৮ পৃষ্ঠায়, ইমাম ত্বাবারানী তার আল ওয়াসাত গ্রন্থে, যেমনটি রয়েছে মাজমাউল বাহরাইন [১৯৭৩] আব্দুল্লাহ বিন আইয়ূব আয যরীর সূত্রে, তিনি মুহাম্মাদ বিন সুলাইমান আযযুহালী থেকে, তিনি আব্দুল ওয়ারিস বিন সাঈদ থেকে, তিনি বলেন, আমি মাক্কায় এসে সেখানে আবূ হানীফা, ইবনু আবী লাইলা, ইবনু শুবরুমাকে পেলাম। আমি আবূ হানীফাকে জিজ্ঞেস করলাম, যে ব্যক্তি শর্তারোপ করে কোন কিছু বিক্রি করে, তাহাঁর সম্পর্কে আপনার কি অভিমত। তিনি বলিলেন, বিক্রি ও শর্ত উভয়ই বাতিল। এরপর আবূ লাইলার নিকট এসে একই বিষয়ে জিজ্ঞেস করলে তিনি বলিলেন, বিক্রি বৈধ, কিন্তু শর্ত বাতিল। এরপর ইবনু শুবরুমার নিকট অনুরূপ জিজ্ঞেস করলে, তিনি উত্তর দিলেন, বিক্রি ও শর্ত উভয়টি বৈধ। সুবহানাল্লাহ। ইরাকের তিনজন ফীকহের মধ্যে একটি মাসাআলাতেই মতানৈক্য । এরপর আমি ইমাম আবূ হানীফার নিকট এসে তাহাদের কথা বললে, তিনি বলিলেন, তারা কি বলেছে তা আমি জানি না । এই বলে তিনি উপরোক্ত হাদিসটি বর্ণনা করেন, তা শুলে আমি বললাম, এর সনদ অত্যন্ত দুর্বল। আব্দুল্লাহ বিন আইয়ূব হচ্ছে মাতরুক। আবূ হানীফা সম্পর্কে হাফিয ইবনু হাজার আসকালানী যে মন্তব্য করিয়াছেন তা হচ্ছে, তিনি হাদীসের ক্ষেত্রে জঈফ। ক্রয় বিক্রয়ের শর্তাবলী হাদিসের তাহকিকঃ হাসান হাদিস

পরিচ্ছেদ ১৮. “উরবুন” নামক বিক্রির বিধান”

৮০১ -আমর বিন শু`আইবের সূত্রে উক্ত রাবী হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] `উরবান` * নামক ক্রয়-বিক্রয় নিষেধ করিয়াছেন। বর্ণনাকারী ইমাম মালিক; তিনি বলেন, হাদিসটি `আম্‌র বিন শু`আইব এর সুত্রে পৌঁছেছে । {৮৫৩}

* `উরবানের অর্থঃ বিক্রেতাকে দেয়া অফেরতযোগ্য বায়না।

{৮৫৩} মুয়াত্তা মালেক ২য় খন্ড ৬০৯। ইমাম বাইহাকি তাহাঁর সুনান আল কুবরা ৫/৩৪২ গ্রন্থে বলেন, এর সনদে আসেম বিন আবদুল আযীয আল শাজাঈ রয়েছে যার ব্যাপারে সমালোচনা রয়েছে। আর হাবীব বিন আবূ হাবীব হচ্ছে দুর্বল, আব্দুল্লাহ বিন আমের ও ইবনু লাহীআহ এর দ্বারা দলীল সাব্যস্ত হয় না। তাহযীবুল কামাল ৪/১১৬ গ্রন্থে আবূ হাতিম ও ইমাম নাসায়ী হাবীব বিন আবূ হাবীবকে মাতরূক আখ্যা দিয়েছেন। আর ইমাম আবূ দাউদ তাকে মানুষের মধ্যে সর্বাপেক্ষা মিথ্যাবাদী বলেছেন। ইমাম সনআনী সুবুলুস সালাম ৩/২৮ গ্রন্থে বলেন, এ হাদিসে একজন রাবী আছেন যাঁর নাম উল্লেখ করা হয় নি। তবে অন্য একটি বর্ণনায় নাম উল্লেখ থাকলেও তিনি দুর্বল। তাছাড়া এর আরো অনেক সনদ রয়েছে যেগুলো সমালোচনা থেকে মুক্ত নয়। শাইখ আলবানী তাখরীজ মিশকাত ২৭৯৩, জঈফ আবূ দাউদ ৩৫০২ গ্রন্থে এর সনদকে দুর্বল বলেছেন। ইবনু উসাইমীনও বুলুগুল মারামের শরাহ ৩/৫৬০ গ্রন্থে হাদিসটিকে বিশুদ্ধ নয় বলেছেন। ক্রয় বিক্রয়ের শর্তাবলী হাদিসের তাহকিকঃ দুর্বল হাদিস

পরিচ্ছেদ ১৯. পণ্য হাতে আসার পূর্বেই বিক্রি করা নিষেধ

৮০২ -ইবনু `উমার [রাঃআঃ] হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেছেন, আমি বাজারে জয়তুনের তেল ক্রয় করলাম। ক্রয় পাকাপাকি হবার পর একজন লোক আমার কাছে এসে আমাকে তাতে একটা ভাল লাভ দিতে চাইলো। আমিও তার হাতে হাত মেরে বিক্রয় পাকাপাকি করিতে চাইলাম। হঠাৎ করে কোন লোক পেছন থেকে আমার হাত ধরে নিল। আমি পেছনে চেয়ে দেখলাম- তিনি যায়দ বিন সাবেত [রাঃআঃ]। তিনি বলিলেন, যেখানে ক্রয় করবেন ঐ স্থানে বিক্রয় করবেন না- যতক্ষন না আপনার স্থানে নিয়ে না যান। অবশ্য রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] ক্রয় করার স্থানে পণ্য বিক্রয় করিতে নিষেধ করিয়াছেন- যতক্ষণ না তা ক্রেতা তার ডেরায় বা স্থানে নিয়ে যায়। – শব্দ বিন্যাস আবূ দাউদের। ইবনু হিব্বান ও হাকিম একে সহীহ্‌ বলেছেন । {৮৫৪}

{৮৫৪} আবূ দাউদ ৩৪৯৯, ইবনু হিব্বান ১১২০, হাকিম ২য় খন্ড ৪০ পৃষ্ঠা । আহমাদ ৩৯৭, ৪৬২৫, ৪৭০২, ৫২১৩, ৫২৮২। হাদিসের তাহকিকঃ সহিহ হাদিস

পরিচ্ছেদ ২০. স্বর্ণমুদ্রার বদলে রৌপ্যমুদ্রা দিয়ে ক্রয়-বিক্রয় করা নিষেধ

৮০৩ -ইবনু `উমার [রাঃআঃ] হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেছেন, আমি বললাম, হে আল্লাহর রসূল! অবশ্য আমি `বাকী` [নামক স্থানে] উট বিক্রয় করে থাকি; দীনারের বিনিময়ে বিক্রয়ের কথা বলে দিরহাম নিয়ে থাকি- আর দিরহামের বিনিময়ের কথা বলে দীনার নিয়ে থাকি। এটার পরিবর্তে এগুলো আর এগুলোর পরিবর্তে এটা। নবী [সাঃআঃ] বলিলেন, ঐ দিনের বাজার দরে নিলে তাতে দোষ নেই । তাহলে যেন একে অপর থেকে আলাদা হয়ে যাবার পূর্বেই তোমাদের মধ্যে [লেন-দেনের] আর কিছু বাকী না থাকে। – হাকীম একে সহীহ্‌ বলেছেন। {৮৫৫}

{৮৫৫} আবূ দাউদ ৩৩৫৪, তিরমিজি ১২৪২, নাসায়ী ৪৫৮২, ৪৫৮৩, ৪৫৮৯, ইবনু মাযাহ ২২৬২, আহমাদ ৫৫৩০, ৬২০৩, দারেমী ২৫৮১। শাইখ আলবানী জঈফ আবূ দাউদ ৩৩৫৪, ইরওয়াউল গালীল ১৩৫৯ গ্রন্থে জঈফ বলেছেন। জঈফ নাসায়ী ৪৫৯৬ গ্রন্থে বলেন, এটি দুর্বল তবে মাওকূফ হিসেবে সহিহ। ইমাম বাইহাকি সুনান আল কুবরা ৫/২৮৪ গ্রন্থে বলেন, সাম্মাক বিন হারব একাই সাঈদ বিন যুবাইর থেকে মারফূ বর্ণনা করিয়াছেন। আহমাদ শাকের মুসনাদ আহমাদ ৭/২৬৪, ৯/১৬৭ গ্রন্থে এর সনদকে সহিহ বলেছেন।হাদিসের তাহকিকঃ হাসান হাদিস

পরিচ্ছেদ ২১. ধোঁকা দেওয়া নিষেধ

৮০৪ -ইবনু উমার [রাঃআঃ] হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেছেন, নবী [সাঃআঃ] নাজ্‌শ বা ধোঁকা দিয়ে দাম বাড়ানোর কাজকে নিষিদ্ধ করিয়াছেন। {৮৫৬}

৮৫৬. বুখারি ২১৪২, নাসাঈ ৪৪৯৭, ৪৫০৫, ইবনু মাযাহ ২১৭৩, আহমাদ ৬৪১৫, মালিক ১৩৯২। ক্রয় বিক্রয়ের শর্তাবলী হাদিসের তাহকিকঃ সহিহ হাদিস

পরিচ্ছেদ ২২. কতিপয় লেনদেন নিষেধ

৮০৫-জাবির [রাঃআঃ] হইতে বর্ণিতঃ

নবী [সাঃআঃ] মুহাকালাহ [ওজন করা গমের বিনিময়ে বিনিময়ে জমির কোন শস্য বিক্রয় করা] মুযাবানাহ [গাছে লাগানো ফলকে শুকনো ফলের বিনিময়ে বিক্রয় করা]; মুখাবারাহ [অর্থাৎ জমির অনির্দিষ্ট কিছু অংশ ভাড়া দেয়া] এবং সুন্ইয়াই [কোন বস্তুর সওদার সমষ্টি থেকে কিছু অংশ পৃথকীকরণকে] নিষিদ্ধ করিয়াছেন- তবে তা নিশ্চিত ভাবে জানা থাকলে দোষ নেই।

তিরমিজি একে সহীহ্‌ বলেছেন। {৮৫৭}, {৮৫৭} আবূ দাউদ ৩৪০৪, ৩৪০৬, বুখারি ২৩৮১, মুসলিম ১৩৫৬, তিরমিজি ১২৯০, নাসায়ী ৩৯২০, ৪৫২৩, ৪৫২৪, ইবনু মাযাহ ২২৬৬, আহমাদ ১৩৯৪৮, ১৪৪২৭, ১৪৭৮২ । হাদিসের তাহকিকঃ সহিহ হাদিস

৮০৬ আনাস [রাঃআঃ] হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, নবী [সাঃআঃ] মুহাকালাহ; মুখাযারাহ [ব্যবহারোপযোগী হয়নি এমন কাঁচা ফল বিক্রয় করা], মুলামাসাহ [বিক্রয়ের কাপড় না দেখেই হাত দিয়ে ছুয়ে বিক্রয় পাকা করা], মুনাবাযাহ [পণ্যদ্রব্য যেমন কাপড়কে ক্রেতা বিক্রেতা একে অপরের উপর নিক্ষেপ দ্বারা বিক্রয় পাকা করা] ও মুযাবানাহ [অর্থাৎ গাছে ফল থাকা অবস্থায় তা শুকনো ফলের বিনিময়ে বিক্রি করা] – এর বেচা-কেনা নিষিদ্ধ করিয়াছেন । {৮৫৮}

{৮৫৮} বুখারি ২২০৭। শস্যদানা এবং ফলফলাদি উপযোগী হওয়ার পূর্বেই বিক্রয় করা। হাদিসের তাহকিকঃ সহিহ হাদিস

পরিচ্ছেদ ২৩. বহিরাগত বিক্রেতার সঙ্গে সাক্ষাত করা এবং গ্রামবাসীর পক্ষে শহরবাসীর বিক্রয় করা নিষিদ্ধ

৮০৭ -`আব্বাস [রাঃআঃ] হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, আল্লাহর রসূল [সাঃআঃ] বলেছেন, তোমরা পণ্যবাহী কাফেলার সাথে [শহরে প্রবেশের পূর্বে সস্তায় পণ্য খরিদের উদ্দেশে] সাক্ষাৎ করিবে না এবং শহরবাসী যেন গ্রামবাসীর পক্ষে বিক্রয় না করে। রাবী তাউস [রহমাতুল্লাহি আলাইহি] বলেন, আমি ইবনু `আব্বাস [রাঃআঃ]-কে জিজ্ঞেস করলাম, শহরবাসী যেন গ্রামবাসীর পক্ষে বিক্রয় না করে, তাহাঁর এ কথার অর্থ কী? তিনি বলিলেন, তার হয়ে যেন সে প্রতারণামূলক দালালী না করে। আব্বাসকে জিজ্ঞেস করলে তিনি বলেন, শহরে লোক গ্রাম্য লোকের [ক্রয়-বিক্রয়ে] যেন দালালী না করে। -শব্দ বিন্যাস বুখারির। {৮৫৯}

{৮৫৯} বুখারি ২১৬৪, ২২৭৪, মুসলিম ১৫২১, নাসায়ী ৪৫০০, আবূ দাউদ ৩৪৩৯, ইবনু মাযাহ ২১১৭, আহমাদ ৩৪৭২।হাদিসের তাহকিকঃ সহিহ হাদিস

৮০৮ -আবূ হুরাইরা [রাঃআঃ] হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলেছেন, পণ্য আমদানীকারীদের সাথে পথে গিয়ে ক্রয় করিবে না; এভাবে ক্রয় করলে বিক্রেতা মোকামে পৌঁছে ঐ ক্রয় বাতিল করার অধিকারী হইবে। {৮৬০}

{৮৬০} মুসলিম ১৫১৯, তিরমিজি ১২২১, নাসায়ী ৪৫০১, আবূ দাউদ ৩৪৩৭, ইবনু মাযাহ ২১৭৮, আহমাদ ৭৭৬৬, ৮৯৬৯, দারেমী ২৫৬৬। ক্রয় বিক্রয়ের শর্তাবলী হাদিসের তাহকিকঃ সহিহ হাদিস

পরিচ্ছেদ ২৪. কোন ভাইয়ের বিক্রয়ের উপর বিক্রয় করা [কমমূল্যে বিক্রয় করার প্রস্তাব দেয়া] এবং কোন ভাইয়ের ক্রয়ের উপর ক্রয় করা [বেশী দাম দিয়ে ক্রয় করার প্রস্তাব দেওয়া] নিষিদ্ধ

৮০৯ -আবূ হুরাইরা [রাঃআঃ] হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, আল্লাহর রসূল [সাঃআঃ] গ্রামবাসীর পক্ষে শহরবাসী কর্তৃক বিক্রয় করা হইতে নিষেধ করিয়াছেন এবং তোমরা প্রতারণামূলক দালালী করিবে না। কোন ব্যক্তি যেন তার ভাইয়ের ক্রয়-বিক্রয়ের উপর ক্রয়-বিক্রয় না করে। {৮৬১} কেউ যেন তার ভাইয়ের বিবাহের প্রস্তাবের উপর প্রস্তাব না দেয়। কোন মহিলা যেন তার বোনের [সতীনের] তালাকের দাবী না করে, যাতে সে তার পাত্রে যা কিছু আছে, তা নিজেই নিয়ে নেয়। [অর্থাৎ বর্তমান স্ত্রীর হক নষ্ট করে নিজে তা ভোগ করার জন্য] -মুসলিম শরীফে আরো আছে- কোন মুসলিম ভাইয়ের ক্রয় করার দরের উপরে দর করিবে না। {৮৬২}

{৮৬১} শহরবাসী যেন গ্রাম্য লোককে ঠকিয়ে দেয়ার উদ্দেশে গ্রাম্য লোকের পক্ষে পণ্য বিক্রয় না করে। নিজের প্রাপ্য অংশ বৃদ্ধি করে অধিক সুখ সুবিধা ভোগ করার উদ্দেশে কোন নারী যেন তার সতীনকে তালাক দেয়ার জন্য স্বামীকে উদ্বুদ্ধ না করে। {৮৬২} বুখারি ২১৪৮, ২১৫০, ২১৫১, ২১৬০, ২১৬২, ২৭২৩, মুসলিম ১০৭৬, ১৪১৩, ১৫১৫, তিরমিজি ১১১৪, ১১৯০, ১১০০, নাসায়ী ৩২৩৯, ৩২৪০, আবূ দাউদ ২০৮০, ৩৪৩৭, ৩৪৩৮, ইবনু মাযাহ ২১৭২, ২১৭৪, আহমাদ ৭২০৭, ৭২৭০, দারেমী ২১৭৫, ২৫৫৩, ২৫৬৬। ইমাম মুসলিম তা বর্ণনা করিয়াছেন। কিন্তু সেখানে -এর বদলে রহিয়াছে। হাদিসের তাহকিকঃ সহিহ হাদিস

পরিচ্ছেদ ২৫. দাস-দাসীদের বিক্রির ক্ষেত্রে এদের আত্মীয়স্বজনের মধ্যে বিচ্ছেদ ঘটানো [অর্থাৎ একজনকে এক জায়গায় আর অন্যজনকে অন্য জায়গায় বিক্রি করা] নিষেধ

৮১০ -আবূ আইউব আল-আনসারী [রাঃআঃ] হইতে বর্ণিতঃ

আমি রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ]-কে বলিতে শুনিয়াছি, যে ব্যক্তি দাসী বিক্রয়কালে মাতা-পুত্রের মধ্যে বিচ্ছেদ ঘটায় পরকালে তার প্রিয়জনের থেকে আল্লাহ্‌ তাকে পৃথক করে দেবেন। -আহমাদ [রাঃআঃ], তিরমিজি ও হাকিম হাদিসটিকে সহীহ্‌ বলেছেন কিন্তু তার সানাদ সম্বন্ধে বিরূপ বক্তব্য রহিয়াছে; এ হাদিসটির একটা শাহেদ বা সমর্থক রহিয়াছে। {৮৬৩}

{৮৬৩} তিরমিজি ১২৬৬, ১২৮৩, আহমাদ ২২৯৮৮, ২৩০০২, দারেমী ২৪৭৯। হাদিসের তাহকিকঃ হাসান হাদিস

৮১১ -`আলী ইবনু আবী তালিব [রাঃআঃ] হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেছেন, নবী [সাঃআঃ] আমাকে দুটি দাসভাইকে বিক্রয়ের আদেশ দিয়েছিলেন। আমি তাহাদেরকে পৃথকভাবে বিক্রি করে দিয়েছিলাম। অতঃপর আমি এ কথা নবী [সাঃআঃ] জানালে তিনি বলিলেন, তাঁদেরকে পেলে ফেরত আনবে এবং তুমি তাঁদেরকে একত্রে বিক্রয় করিবে। [অর্থাৎ তারা দুইভাই যেন একত্রে বাস করিতে পারে।] -এটির সকল বর্ণনাকারী নির্ভরযোগ্য; ইবনু খুযাইমাহ, ইবনু জারূদ, ইবনু হিব্বান, হাকিম, তাবারানী ও ইবনু কাত্তান এটিকে সহিহ বলেছেন। {৮৬৪}

{৮৬৪} আহমাদ ৭৬০, ১১১৫, তিরমিজি ২১৪৫, ইবনু মাযাহ ৮১। শাহিদের ভিত্তিতে হাসান, তাওযিহুল আহকাম ৪/৩২৩ পৃঃ। হাদিসের তাহকিকঃ হাসান হাদিস

পরিচ্ছেদ ২৬. -দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধি করার বিধান

৮১২ -আনাস ইবনু মালেক [রাঃআঃ] হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] -এর যুগে একবার জিনিসপত্রের দাম বেড়ে গেলো। লোকজন বললো, হে আল্লাহর রাসূল! জিনিসপত্রের দাম বেড়ে গেছে। অতএব আপনি আমাদের জন্য মূল্য বেঁধে দিন। তিনি বলেনঃ নিশ্চয় আল্লাহ মূল্য নিয়ন্ত্রণকারী, সংকোচনকারী, সম্প্রসারণকারী এবং রিযিক দানকারী। আমি আমার রবের সাথে এমন অবস্থায় সাক্ষাত করিতে চাই যে, কেউ যেন আমার বিরুদ্ধে রক্তের ও সম্পদের কোনরূপ অভিযোগ উত্থাপন করিতে না পারে। -ইবনু হিব্বান একে সহিহ বলেছেন। {৮৬৫}

{৮৬৫} আবূ দাউদ ৩৪৫১, তিরমিজি ১৩১৪, ইবনু মাযাহ ২২০০, আহমাদ ১২১৮১, দারেমী ২৫৪৫। বহু সূত্রের ভিত্তিতে হাদিসটি সহিহ, তাওযিহুল আহকাম ৪/৩২৫ পৃঃ/ ক্রয় বিক্রয়ের শর্তাবলী হাদিসের তাহকিকঃ সহিহ হাদিস

পরিচ্ছেদ ২৭. [খাদ্য দ্রব্য] গুদামজাত করার বিধান

৮১৩ -মা`মার বিন `আবদিল্লাহ [রাঃআঃ] হইতে বর্ণিতঃ

তিনি রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] হইতে বর্ণনা করিয়াছেন, তিনি বলেছেনঃ খাদ্যদ্রব্য গুদামজাত কেবল [সমাজ বিরোধী] পাপী লোকেরাই করে থাকে। {৮৬৬}

{৮৬৬} মুসলিম ১৬০৫, তিরমিজি ১২৬৭, আবূ দাউদ ৩৪৪৭, ইবনু মাযাহ ২১৫৪, আহমাদ ১৫৩৩১, ১৫৩৩৪, দারেমী ২৫৪৫। মুসলিমের অপর এক বর্ণনায় রয়েছে, [আরবী] অর্থাৎ যে গুদামজাত করে সেই পাপী [সমাজবিরোধী]। হাদিসের তাহকিকঃ সহিহ হাদিস

পরিচ্ছেদ ২৮. উট, গরু, ছাগলের দুধ আটকিয়ে রেখে বিক্রয় করা নিষেধ

৮১৪ -আবূ হুরাইরা [রাঃআঃ] নবী [সাঃআঃ] হইতে বর্ণিতঃ

তোমরা উটনী ও বকরীর দুধ [স্তন্যে] আটকিয়ে রেখ না। যে ব্যক্তি এরূপ পশু ক্রয় করে, সে দুধ দোহনের পরে দু`টি অধিকারের যেটি তার পক্ষে ভাল মনে করিবে তাই করিতে পারবে। যদি সে ইচ্ছা করে তবে ক্রয়কৃত পশুটি রেখে দিবে আর যদি ইচ্ছা করে তবে তা ফেরত দিবে এবং এর সাথে এক সা` পরিমাণ খেজুর দিবে।

মুসলিমে রয়েছেঃ ক্রেতা ৩ দিন পর্যন্ত ফেরতের সুযোগ পাবে। অন্য হাদীসে, মুআল্লাকরূপে বুখারিতেও আছে- এক সা` খাদ্য দ্রব্য দেবে, গম দিলে হইবে না, ইমাম বুখারি বলেছেন- এক্ষেত্রে খেজুরের কথা অধিক উল্লেখ রহিয়াছে। {৮৬৭}

{৮৬৭} বুখারি ২১৪৮, মুসলিম ১০৭৬, ১৪১৩, ১৫১৫, তিরমিজি ১১৩৪, ১১৯০, ১২২১, ১২২২, ১২৫১, ১২৫২, নাসায়ী ৩২৩৯-৩২৪২, ৪৪৮৭, আবূ দাউদ ২০৮০, ৩৪৩৭, ৩৪৩৮, ৩৪৪৩, ।হাদিসের তাহকিকঃ সহিহ হাদিস।

৮১৫ -আবদুল্লাহ ইবনু মাস`উদ [রাঃআঃ] হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, যে ব্যক্তি [স্তন্যে] দুধ আটকিয়ে রাখা বকরী ক্রয় করে তা ফেরত দিতে চায়, সে যেন এর সঙ্গে এক সা` পরিমাণ খেজুরও দেয়। বুখারি [রহমাতুল্লাহি আলাইহি]; ইসমাইলী বর্ণনা অতিরিক্ত করিয়াছেন যে, খেজুর হইতে এক সা` বা আড়াই কেজি মালিককে দেবে। {৮৬৮}

{৮৬৮} বুখারি ২১৪৯, ইবনু মাযাহ ২২৪১, আহমাদ ৪০৮৫। ক্রয় বিক্রয়ের শর্তাবলী হাদিসের তাহকিকঃ সহিহ হাদিস

পরিচ্ছেদ ২৯. প্রতারনা, ঠগবাজি করা নিষেধ

৮১৬ -আবূ হুরাইরা [রাঃআঃ] হইতে বর্ণিতঃ

রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] একটা `খাদ্য-স্তুপের` পাশ দিয়ে যেতে গিয়ে তাহাঁর হাত তাতে প্রবেশ করালেন। ফলে তাহাঁর আঙ্গুলে কিছু ভিজা অনুভূত হল। তারপর তিনি বলিলেন, হে খাদ্য বিক্রেতা, এ আবার কি? লোকটি বলিলেন হে আল্লাহ্‌র রাসূল, ওতে বৃষ্টি পেয়েছে। তিনি বলিলেন, `কেন তুমি ঐ ভেজা অংশটাকে উপরে রাখলে না- তাহলে লোকে তা দেখিতে পেত। যে ধোকাবাজী করে [কেনা-বেচা করে] সে আমাদের নীতিতে নয়।` {৮৬৯}

{৮৬৯} মুসলিম ১০২, তিরমিজি ১৩১৫, ইবনু মাযাহ ২২২৪, আহমাদ ৭২৫০, ২৭৫০০। [আরবী] বলা হয় খাদ্যের স্তুপকে অর্থাৎ যেখানে অনেক খাদ্য জমা থাকে। হাদিসের তাহকিকঃ সহিহ হাদিস

পরিচ্ছেদ ৩০. মদ তৈরিকারকদের নিকট আঙ্গুর বিক্রি করার ব্যাপারে নিষেধাজ্ঞা

৮১৭ -বুরাইদাহ [রাঃআঃ] হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলেছেন- আঙ্গুর পাড়বার মৌসুমে বিক্রয় না করে যে ব্যক্তি মদ তৈরিকারকদের নিকটে বিক্রয় করার জন্য আঙ্গুরকে গোলাজাত করে রাখে তাহলে সে জেনে-বুঝেই বলপূর্বক জাহান্নামে প্রবেশ করে। তাবরানির আল-আওসাত নামক কিতাবে উত্তম সানাদে বর্ণনা করিয়াছেন। {৮৭০}

{৮৭০} ইমাম নববী আল মাজমু ৯/২৬২ গ্রন্থে একে দুর্বল বলেছেন। ইবনু হযম আল মাহাল্লা ৮/৪৩৬ গ্রন্থে বলেন,: এর সনদে এক ব্যক্তি রহিয়াছে যার নাম জানা যায়নি যে তিনি কে? শাইখ আলবানী তাখরীজ মিশকাত ২৮৬৭ গ্রন্থে বলেন, এর সনদে হাবীব বিন সাবিত রহিয়াছে যে হাকিম বিন হিযাম থেকে এ হাদিসটি শুনেইনি। সে মুদাল্লিস, আন আন করে বর্ণনা করেছে। হাদিসের তাহকিকঃ হাসান হাদিস

পরিচ্ছেদ ৩১. জিম্মাদার ব্যক্তি লভ্যাংশের হকদার

৮১৮ -আয়িশা [রাঃআঃ] হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলেছেন- [দাস-দাসী বা পশু বা অন্য কিছুর হইতে] লভ্যাংশের অধিকার জিম্মাদারী পাবে। [কেননা, ক্ষয়-ক্ষতির দায়-দায়িত্ব তারই]। -বুখারি ও আবূ দাউদ [রহমাতুল্লাহি আলাইহি] একে যয়ীফ বলেছেন; তিরমিজি, ইবনু খুযাইমাহ, ইবনু জারূদ, ইবনু হিব্বান, হাকিম ও ইবনু কাত্তান হাদিসটিকে সহিহ বলেছেন। {৮৭১}

{৮৭১} আবূ দাউদ ৩৫০৮, ৩৫০৯, ৩৫১০, তিরমিজি ১২৮৫, ১২৮৬, নাসায়ী ৪৪৯০, ইবনু মাযাহ ২২৪২, ২২৪৩, আহমাদ ২৩৭০৫, ১৩৯৯৩, ২৪৩২৬। হাদিসের তাহকিকঃ হাসান হাদিস

পরিচ্ছেদ ৩২. লভ্যাংশ খরচ করার বিধান

৮১৯ – উরওয়া আল-বারিকী [রাঃআঃ] হইতে বর্ণিতঃ

নবী [সাঃআঃ] তাহাঁর জন্য একটা কুরবানীর জন্তু বা ছাগল কেনার উদ্দেশ্যে তাকে একটি দীনার দেন। তিনি তাহাঁর জন্য দুটি ছাগল কিনে এর একটি এক দীনারে বিক্রয় করে একটি দীনার ও একটি ছাগল নিয়ে নবী [সাঃআঃ] -এর নিকট উপস্থিত হন। রাসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] তার জন্য বরকতের দোয়া করেন। রাবী বলেন, এরপর তিনি মাটি কিনলে তাতেও লাভবান হইতেন। – বুখারি অন্য হাদীসের আনুসঙ্গিকরূপে হাদিসটি তাখরীজ করিয়াছেন তবে তার শব্দ ব্যবহার করেননি। {৮৭২}

{৮৭২} বুখারি ৩৬৪৩, আবূ দাউদ ৩৩৮৪, তিরমিজি ১২৫৮, ইবনু মাযাহ ২৪০২, আহমাদ ১৮৮৬৭, ১৮৮৭৩। হাদিসের তাহকিকঃ সহিহ হাদিস

৮২০ -বর্ণনাকারী হইতে বর্ণিতঃ

তিরমিজি এর পৃষ্ঠপোষকরূপে হাকিম বিন হিযামের একটি হাদিস বর্ণনা করিয়াছেন। {৮৭৩}

{৮৭৩} তিরমিজি ১২৫৭, আবূ দাউদ ৩৩৮৬। এর সনদ দুর্বল। ক্রয় বিক্রয়ের শর্তাবলী হাদিসের তাহকিকঃ হাসান হাদিস

পরিচ্ছেদ ৩৩. ধোঁকা দিয়ে বিক্রি করার কতিপয় মাসআলা

৮২১ -আবূ সাঈদ আল-খুদরী [রাঃআঃ] হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] গবাদি পশুর গর্ভস্থ বাচ্চা প্রসবের পূর্বে, পশুর স্তনের দুধ পরিমাণ না করে, পলাতক গোলাম, গানীমাতের মাল বন্টনের পূর্বে, দান-খয়রাত হস্তগত করার পূর্বে এবং ডুবুরীর বাজির ভিত্তিতে ক্রয়-বিক্রয় করিতে নিষেধ করিয়াছেন। – ইবনু মাযাহ, বায্‌যার ও দারাকুতনী দুর্বল সানাদে [রাঃআঃ]। {৮৭৪}

{৮৭৪} আহমাদ ১০৯৪৪, ইবনু মাযাহ ২১৯৬। ইমাম শওকানী নাইলুল আওত্বার [৫/২৪৫] গ্রন্থে বলেন, এর সনদে শহর বিন হাউশাব রয়েছে, যে বিতর্কিত। ইবনুল কাইয়িম যাদুল মাআদ [৫/৭৩৬] গ্রন্থে বলেন, এর সনদ দ্বারা দলীল সাব্যস্ত হয় না। ইবনু হাযম আল মাহাল্লা [৮/৩৯০] গ্রন্থে বলেন, এর মধ্যে দুজন অপরিচিত বর্ণনাকারী রয়েছে। শাইখ আলবানী জঈফ ইবনু মাযাহ [৪২৯] গ্রন্থে একে দুর্বল বলেছেন।ন হাদিসের তাহকিকঃ হাসান হাদিস

৮২২ -ইবনু মাস`ঊদ [রাঃআঃ] হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলেছেন, মাছ পানিতে থাকা অবস্থায় ক্রয় করিবে না- কেননা এটা একটা ধোঁকা বিশেষ। – আহমাদ এর সানাদকে মাওকূফ হওয়া সঠিক বলে ইঙ্গিত করিয়াছেন। {৮৭৫}

{৮৭৫} আহমাদ ৩৬৭৬, ৩৭২৪, ৩৮২৪, মুসলিম ২১৬৯, ইবনু মাযাহ ১৩৯। একে আহমাদ শাকের মুসনাদ আহমাদ [৫/২৫০] গ্রন্থে, আলবানী যঈফুল জামে [৬২৩১] গ্রন্থে একে দুর্বল বলেছেন। ইবনু উসাইমীন তার বুলুগুল মারামের শরাহইতে [৩/৬২০] পৃষ্ঠায় একে পরিষ্কার মাওকূফ হিসেবে উল্লেখ করিয়াছেন। ইমাম শওকানী আদ দুরারুল মাযীয়্যাহ [২৫২] গ্রন্থে বলেন, এর মধ্যে ইয়াযীদ বিন আবূ যিয়াদ রয়েছে। তবে তিনি নাইলুল আওত্বার গ্রন্থে [৫/২৪৩] গ্রন্থে এ হাদীসের শাহেদ থাকার কথা উল্লেখ করিয়াছেন। ক্রয় বিক্রয়ের শর্তাবলী হাদিসের তাহকিকঃ অন্যান্য

পরিচ্ছেদ ৩৪. ধোঁকা দিয়ে বিক্রি করার আরও কতিপয় মাসআলা

৮২৩ -ইবনু `আব্বাস [রাঃআঃ] হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] খাওয়ার উপযোগী না হওয়া পর্যন্ত ফল বিক্রয় করিতে নিষেধ করিয়াছেন এবং পশম পশুর শরীরে থাকা অবস্থায় এবং দুধ ওলানে থাকাকালীন বিক্রয় করিতে নিষেধ করিয়াছেন। – তাবারানীর আল-আওসাত, দারাকুতনী, আবূ দাউদ-ইকরামার মারাসিলে এটি বর্ণনা করিয়াছেন, আর এটা [মুরসাল হওয়াটা] অগ্রগণ্য; আবূ দাউদ এটাকে ইবনু `আব্বাস [রাঃআঃ] থেকে শক্তিশালী সানাদে মাওকূফরূপেও বর্ণনা করিয়াছেন। আর ইমাম বাইহাকি [রহমাতুল্লাহি আলাইহি] তা প্রাধান্য দিয়েছেন। {৮৭৬}

{৮৭৬} আবূ দাউদ ১৮২, তিরমিজি ৮৫, নাসায়ী ১৬৫, ইবনু মাযাহ ৪৮৩, আহমাদ ১৫৮৫৭। হাদিসটি মুরসাল সহিহ, মারফুর হুকুমে বর্ণিত, তাওযিহুল আহকাম ৪/৩৫৩ পৃঃ।ক্রয় বিক্রয়ের শর্তাবলী হাদিসের তাহকিকঃ অন্যান্য

৮২৪ -আবূ হুরাইরা [রাঃআঃ] হইতে বর্ণিতঃ

নবী [সাঃআঃ] মাযামীন [পশুর পেটের বাচ্চা] ও মালাকীহ্‌ নরের পিঠের বীর্য [নসল সূত্র] বিক্রয় করিতে নিষেধ করিয়াছেন। বায্‌যার [রাঃআঃ]; এর সানাদ দুর্বল। {৮৭৭}

{৮৭৭} ইমাম হাইসামী মাজমাউয যাওয়ায়েদ [৪/১০৭] গ্রন্থে বলেন, এর সনদে সালিহ বিন আবূ আল আখযর রয়েছে যে দুর্বল। ইবনু হাজার আসকালানী আত-তালখীসুল হাবীর ৩/৯৫৮ গ্রন্থে উক্ত রাবীকে দুর্বল বলেছেন। ইমাম সুয়ূত্বী আল জামেউস সগীর ৯৩৫৬, ও শাইখ আলবানী সহীহুল জামে ৬৯৩৭ গ্রন্থে একে সহিহ বলেছেন, সালেহ আল উসাইমীন বুলুগুল মারামের শরাহ ৩/৬২৩ গ্রন্থে বলেন, এর সনদ দুর্বল তবে অর্থগত দিক দিয়ে এটি সহিহ। ক্রয় বিক্রয়ের শর্তাবলী হাদিসের তাহকিকঃ অন্যান্য


by

Comments

3 responses to “ক্রয় বিক্রয়ের শর্তাবলী ও তার নিষিদ্ধ বিষয়”

Leave a Reply