ক্রেতা বিক্রেতা এর ইখতিয়ার । রক্ত মোক্ষমকারীদের প্রসঙ্গে
ক্রেতা বিক্রেতা এর ইখতিয়ার । রক্ত মোক্ষমকারীদের প্রসঙ্গে >> বুখারী শরীফ এর মুল সুচিপত্র পড়ুন
পর্বঃ ৩৪, ক্রয় ও বিক্রয়, অধ্যায়ঃ (৩৩-৪৮)=১৬টি
৩৪/৩৩. অধ্যায়ঃ ইমাম বা রাষ্ট্রের প্রধান কর্তৃক প্রয়োজনীয় বস্তু নিজেই ক্রয় করা।
৩৪/৩৪. অধ্যায়ঃ চতুষ্পদ জন্তু ও গর্দভ ক্রয় করা।
৩৪/৩৫. অধ্যায়ঃ জাহিলী যুগের বাজার যেখানে লোকেরা ক্রয়-বিক্রয় করেছে এরপর ইসলামী যুগে সেগুলোতে লোকেদের ক্রয়-বিক্রয় করা
৩৪/৩৬. অধ্যায়ঃ তৃষ্ণা কাতর অথবা চর্মরোগে আক্রান্ত উটের ক্রয়-বিক্রয় করা। হায়িম বলা হয় যে কোন ব্যাপারে মধ্যম পন্থা বর্জনকারীকে।
৩৪/৩৭. অধ্যায়ঃ ফিতনার (গোলযোগপূর্ণ) সময় বা অন্য সময়ে অস্ত্র বিক্রি।
৩৪/৩৮. অধ্যায়ঃ আতর ও মিস্ক বিক্রেতাদের সম্পর্কে।
৩৪/৩৯. অধ্যায়ঃ রক্ত মোক্ষমকারীদের প্রসঙ্গে।
৩৪/৪০. অধ্যায়ঃ যা পরিধান করা নারী ও পুরুষ উভয়ের জন্য নিষিদ্ধ সেই জিনিসের ব্যবসা।
৩৪/৪১. অধ্যায়ঃ দ্রব্যসামগ্রীর মালিক মূল্য বলার অধিক হকদার।
৩৪/৪২. অধ্যায়ঃ (ক্রেতা-বিক্রেতার) ক্রয়-বিক্রয় বাতিল করার ইখতিয়ার কতক্ষণ থাকবে?
৩৪/৪৩. অধ্যায়ঃ ইখতিয়ারের সময়-সীমা নির্ধারণ না করলে ক্রয়-বিক্রয় কি বৈধ হইবে?
৩৪/৪৪. অধ্যায়ঃ ক্রেতা-বিক্রেতা বেচা-কেনা বাতিল করার ইখতিয়ার ততক্ষণ পর্যন্ত থাকে যতক্ষণ না তারা পরস্পর পৃথক হয়।
৩৪/৪৫. অধ্যায়ঃ ক্রেতা এবং বিক্রেতা ক্রয়-বিক্রয়ের পর একে অপরকে ইখতিয়ার প্রদান করলে ক্রয়-বিক্রয় অবশ্যই বহাল হইবে।
৩৪/৪৬. অধ্যায়ঃ শুধু বিক্রেতার জন্য ইখতিয়ার থাকলে ক্রয়-বিক্রয় বৈধ হইবে কি?
৩৪/৪৭. অধ্যায়ঃ কেউ কোন দ্রব্য ক্রয় করে উভয়ের বিচ্ছিন্ন হওয়ার আগে সে মুহূর্তেই দান করে দিল, এবং ক্রেতা বিক্রেতা এই কাজে আপত্তি না জানায় অথবা কেউ ক্রীতদাস খরিদ করে সে সময়ই মুক্ত করে দেয়।
৩৪/৪৮. অধ্যায়ঃ ক্রয়-বিক্রয়ে ধোঁকা দেয়া অপছন্দনীয়।
৩৪/৩৩. অধ্যায়ঃ ইমাম বা রাষ্ট্রের প্রধান কর্তৃক প্রয়োজনীয় বস্তু নিজেই ক্রয় করা।
ইবনু উমর (রাদি.) বলেন, নাবী (সাঃআঃ) উমর (রাদি.)-এর নিকট হইতে একটি উট খরিদ করেছিলেন। আবদুর রহমান ইবনু আবু বকর (রাদি.) বলেন, জনৈক মুশরিক তার ছাগলের পাল নিয়ে আসলে নাবী (সাঃআঃ) তার হইতে একটি বকরী খরিদ করেন। আর তিনি জারির (রাদি.) হইতে একটি উট খরিদ করেছিলেন।
২০৯৬. আয়েশা (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, আল্লাহর রাসুল (রাদি.) জনৈক ইয়াহূদী হইতে বাকীতে খাদ্য ক্রয় করেন এবং নিজের লৌহ বর্ম তার কাছে বন্ধক রাখেন।
৩৪/৩৪. অধ্যায়ঃ চতুষ্পদ জন্তু ও গর্দভ ক্রয় করা।
জন্তু বা উট খরিদ কালে বিক্রেতা যদি তার পিঠে আরোহী অবস্থায় থাকে তবে তার অবতরণের পূর্বেই কি ক্রেতার হস্তগত হয়েছে বলে গণ্য হইতে পারে?
ইবনু উমর (রাদি.) বর্ণনা করেন যে, নাবী (সাঃআঃ) উমর (রাদি.)– কে বলিলেন, আমার কাছে তা অর্থাৎ অবাধ্য উট বিক্রয় করে দাও।
২০৯৭. জাবির ইবনু আবদুল্লাহ (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, এক যুদ্ধে নাবী (সাঃআঃ)- এর সঙ্গে ছিলাম। আমার উটটি অত্যন্ত ধীরে চলছিল বরং চলতে অক্ষম হয়ে পড়েছিল। এমতাবস্থায় নাবী (সাঃআঃ) আমার কাছে এলেন এবং বলিলেন, জাবির? আমি বললাম, জী। তিনি জিজ্ঞেস করিলেন, তোমার অবস্থা কী? আমি বললাম, আমার উট আমাকে নিয়ে অত্যন্ত ধীরে চলছে এবং অক্ষম হয়ে পড়ছে। ফলে আমি পিছনে পড়ে গেছি। তখন তিনি নেমে চাবুক দিয়ে উটটিকে আঘাত করিতে লাগলেন। তারপর বলিলেন, এবার আরোহণ কর। আমি আরোহণ করলাম। এরপর অবশ্য আমি উটটিকে এমন পেলাম যে, আল্লাহর রাসুল (সাঃআঃ) হইতে অগ্রসর হওয়ায় বাধা দিতে হয়েছিল। তিনি জিজ্ঞেস করিলেন, তুমি কি বিবাহ করেছ? আমি বললাম, হ্যাঁ। তিনি বলিলেন, কুমারী না বিবাহিতা? আমি বললাম, বিবাহিতা। তিনি বলিলেন, তরুণী বিবাহ করলে না কেন? তুমি তার সাথে হাসি-তামাসা এবং সে তোমার সাথে পূর্ণভাবে হাসি-তামাসা করত। আমি বললাম, আমার কয়েকটি বোন রয়েছে, ফলে আমি এমন এক মহিলাকে বিবাহ করিতে পছন্দ করলাম, যে তাদেরকে মিল-মহব্বতে রাখতে, তাদের পরিচর্যা করিতে এবং তাদের উত্তমরূপে কর্তৃত্ব করিতে সক্ষম হয়। তিনি বলিলেন, শোন! তুমি তো বাড়ীতে পৌছবে? যখন তুমি পৌছবে তখন তুমি বুদ্ধিমত্তার পরিচয় দেবে। তিনি বলিলেন, তোমার উটটি বিক্রি করিবে? আমি বললাম, হ্যাঁ। তিনি তা এক উকীয়ার বিনিময়ে আমার নিকট হইতে কিনে নিলেন। তারপর আল্লাহর রাসুল (সাঃআঃ) আমার আগে (মদীনায়) পৌঁছলেন এবং আমি (পরের দিন) ভোরে পৌঁছলাম। আমি মাসজিদে নাববীতে গিয়ে তাঁকে দরজার সামনে পেলাম। তিনি জিজ্ঞেস করিলেন, এখন এলে? আমি বললাম, হ্যাঁ। তিনি বলিলেন, তোমার উটটি রাখ এবং মসজিদে প্রবেশ করে দুরাকআত সালাত আদায় কর। আমি মসজিদে প্রবেশ করে সালাত আদায় করলাম। তারপর তিনি বিলাল (রাদি.)-কে উকীয়া ওজন করে আমাকে দিতে বলিলেন। বিলাল (রাদি.) ওজন করে দিলেন এবং আমার পক্ষে ঝুঁকিয়ে দিলেন। আমি রওয়ানা হলাম। যখন আমি পিছনে ফিরেছি তখন তিনি বলিলেন, জাবিরকে আমার কাছে ডাক। আমি ভাবলাম, এখন হয়তো উটটি আমাকে ফিরিয়ে দেবেন। আর আমার নিকট এর চেয়ে অপছন্দনীয় আর কিছুই ছিল না। তিনি বলিলেন, তোমার উটটি নিয়ে যাও এবং তার দামও তোমার।
৩৪/৩৫. অধ্যায়ঃ জাহিলী যুগের বাজার যেখানে লোকেরা ক্রয়-বিক্রয় করেছে এরপর ইসলামী যুগে সেগুলোতে লোকেদের ক্রয়-বিক্রয় করা
২০৯৮. ইবনু আব্বাস (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলিলেন, উকায, মাজান্না ও যুল-মাজায জাহিলী যুগের বাজার ছিল, ইসলামের আবির্ভাবের পর লোকেরা তথায় ব্যবসা করা গুনাহের কাজ মনে করিল। এ প্রসঙ্গে আল্লাহ তাআলা নাযিল করলেনঃ
لَيْسَ عَلَيْكُمْ جُنَاحٌ
তোমাদের ওপর কোন গুনাহ নাই …… (অর্থাৎ) হাজ্জের মওসুমে। ইবনু আব্বাস (রাদি.) এরূপ পড়েছেন।
৩৪/৩৬. অধ্যায়ঃ তৃষ্ণা কাতর অথবা চর্মরোগে আক্রান্ত উটের ক্রয়-বিক্রয় করা। হায়িম বলা হয় যে কোন ব্যাপারে মধ্যম পন্থা বর্জনকারীকে।
২০৯৯. আমর (ইবনু দীনার) (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) হইতে বর্ণিতঃ
এখানে নাওওয়াস নামক এক ব্যক্তি ছিল। তার নিকট অতি পিপাসা রোগে আক্রান্ত একটি উট ছিল। ইবনু উমর (রাদি.) তার শরীকের কাছ থেকে সে উটটি কিনে নেন। পরে তার শরীক তার নিকট উপস্থিত হয়ে বলিল, সে উটটি বিক্রি করে দিয়েছি। নাওওয়াস জিজ্ঞেস করিলেন, কার কাছে বিক্রি করেছ? সে বলিল, এমন আকৃতির এক বৃদ্ধের কাছে। নাওওয়াস বলে উঠলেন, আরে কি সর্বনাশ! তিনি তো আল্লাহর কসম ইবনু উমর (রাদি.) ছিলেন। এরপর নাওওয়াস তাহাঁর নিকট এলেন এবং বলিলেন, আমার শরীক আপনাকে চিনতে না পেরে আপনার কাছে একটি পিপাসাক্রান্ত উট বিক্রি করেছে। তিনি বলিলেন, তবে উটটি নিয়ে যাও। সে যখন উটটি নিয়ে যেতে উদ্যত হলো, তখন তিনি বলিলেন, রেখে দাও। আমি আল্লাহর রাসুল (সাঃআঃ)-এর ফয়সালায় সন্তুষ্ট যে, রোগে কোন সংক্রমণ নেই। সুফয়ান (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) আমর (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) হইতে উক্ত হাদীসটি শুনেছেন।
৩৪/৩৭. অধ্যায়ঃ ফিতনার (গোলযোগপূর্ণ) সময় বা অন্য সময়ে অস্ত্র বিক্রি।
ইমরান ইবনু হুসাইন (রাদি.) ফিতনার সময় অস্ত্র বিক্রয়কে অপছন্দ করিতেন।
২১০০. আবু কাতাদাহ (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলিলেন, আমরা আল্লাহর রাসুল (সাঃআঃ)- এর সাথে হুনাইনের যুদ্ধে গমন করেছিলাম। তখন তিনি আমাকে একটি বর্ম দিয়েছিলেন। আমি সেটি বিক্রয় করে তার মূল্য দ্বারা বণূ সালিমা গোত্রের এলাকায় একটি বাগান ক্রয় করি। এ ছিল ইসলাম গ্রহণের পর আমার প্রথম স্থাবর সম্পত্তি অর্জন।
৩৪/৩৮. অধ্যায়ঃ আতর ও মিস্ক বিক্রেতাদের সম্পর্কে।
২১০১. আবু মূসা (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, আল্লাহর রাসুল (সাঃআঃ) বলেছেন, সৎ সঙ্গী ও অসৎ সঙ্গীর উদাহরণ মিস্ক বিক্রেতা ও কর্মকারের হাপরের ন্যায়। আতর বিক্রেতাদের থেকে শূন্য হাতে ফিরে আসবে না। হয় তুমি আতর খরিদ করিবে, না হয় তার সুঘ্রাণ পাবে। আর কর্মকারের হাপর হয় তোমার ঘর অথবা তোমার কাপড় পুড়িয়ে দেবে, না হয় তুমি তার দুর্গন্ধ পাবে।
৩৪/৩৯. অধ্যায়ঃ রক্ত মোক্ষমকারীদের প্রসঙ্গে।
২১০২. আনাস ইবনু মালিক (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, আবু তায়বা আল্লাহর রাসুল (সাঃআঃ)-কে শিঙ্গা লাগলেন তখন তিনি তাকে এক সা পরিমাণ খেজুর দিতে আদেশ করিলেন এবং তার মালিককে তার দৈনিক পারিশ্রমিকের হার কমিয়ে দেয়ার নির্দেশ দিলেন।
২১০৩. ইবনু আব্বাস (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, নাবী (সাঃআঃ) শিঙ্গা লাগালেন এবং যে তাঁকে শিঙ্গা লাগিয়েছে, তাকে তিনি মজুরী দিলেন। যদি তা হারাম হতো তবে তিনি তা দিতেন না।
৩৪/৪০. অধ্যায়ঃ যা পরিধান করা নারী ও পুরুষ উভয়ের জন্য নিষিদ্ধ সেই জিনিসের ব্যবসা।
২১০৪. আবদুল্লাহ ইবনু উমর (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, নাবী (সাঃআঃ) উমর (রাদি.)-এর নিকট একটি রেশমী চাদর পাঠিয়ে দেন, পরে তিনি তা তাহাঁর গায়ে দেখিতে পেয়ে বলেন, আমি তা তোমাকে এই জন্য দেই নি যে, তুমি তা পরিধান করিবে। অবশ্য তা তারাই পরিধান করে, যার (আখিরাতে) কোন অংশ নেই। আমি তো তা তোমার কাছে এ জন্য পাঠিয়েছি যে, তুমি তা দিয়ে উপকৃত হইবে অর্থাৎ তা বিক্রি করিবে।
২১০৫. উম্মুল মুমিনীন আয়েশা (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বর্ণনা করেন যে, তিনি একটি ছবিওয়ালা বালিশ ক্রয় করেন। আল্লাহর রাসুল (সাঃআঃ) তা দেখিতে পেয়ে দরজায় দাঁড়িয়ে গেলেন, ভিতরে প্রবেশ করিলেন না। আমি তাহাঁর চেহারায় অসন্তুষ্টি ভাব দেখিতে পেলাম। তখন বললাম, হে আল্লাহর রাসুল! আমি আল্লাহ ও তাহাঁর রসূলের কাছে তওবা করছি। আমি কি অপরাধ করেছি? তখন আল্লাহর রাসুল (সাঃআঃ) বলিলেন, এ বালিশের কী ব্যাপার? আয়েশা (রাদি.) বলেন, আমি বললাম, আমি এটি আপনার জন্য ক্রয় করেছি, যাতে আপনি টেক লাগিয়ে বসতে পারেন। তখন আল্লাহর রাসুল (সাঃআঃ) বলিলেন, এই ছবি তৈরীকারীদের ক্বিয়ামাতের দিন শাস্তি দেওয়া হইবে। তাদের বলা হইবে, তোমরা যা তৈরী করেছিলে, তা জীবিত কর। তিনি আরো বলেন, যে ঘরে এ সব ছবি থাকে, সে ঘরে (রহমতের) ফেরেশতাগণ প্রবেশ করেন না।
৩৪/৪১. অধ্যায়ঃ দ্রব্যসামগ্রীর মালিক মূল্য বলার অধিক হকদার।
২১০৬. আনাস ইবনু মালিক (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, নাবী (সাঃআঃ) বলিলেন, হে বানূ নাজ্জার! আমাকে তোমাদের বাগানের মূল্য বল। বাগানটিতে ঘরের ভাঙা চুরা অংশ ও খেজুর গাছ ছিল।
৩৪/৪২. অধ্যায়ঃ (ক্রেতা-বিক্রেতার) ক্রয়-বিক্রয় বাতিল করার ইখতিয়ার কতক্ষণ থাকবে?
২১০৭. ইবনু উমর (রাদি.) সূত্রে নাবী (সাঃআঃ) হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, ক্রেতা-বিক্রেতা যতক্ষণ বিচ্ছিন্ন না হইবে, ততক্ষণ তাদের বেচা-কেনার ব্যাপারে উভয়ের ইখতিয়ার থাকবে। আর যদি খিয়ারের শর্তে ক্রয়-বিক্রয় হয় (তাহলে পরেও ইখতিয়ার থাকবে)। নাফি (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) বলেন, ইবনু উমর (রাদি.) কোন পণ্য ক্রয়ের পর তা পছন্দ হলে মালিক হইতে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়তেন।
২১০৮. হাকীম ইবনু হিযাম (রাদি.) সূত্রে নাবী (সাঃআঃ) হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, যতক্ষণ ক্রেতা-বিক্রেতা বিচ্ছিন্ন না হইবে ততক্ষণ তাদের খিয়ারের অধিকার থাকবে।
আহমাদ (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) বাহয (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) সূত্রে অতিরিক্ত বর্ণনা করেন যে, হাম্মাম (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) বলেন, আমি আবু তাইয়্যাহ (রহমাতুল্লাহি আলাইহি)-কে এ হাদীস সম্পর্কে জিজ্ঞেস করেছিলাম। তিনি বলিলেন, তখন আমি তার সাথে ছিলাম যখন আবদুল্লাহ ইবনু হারিস এই হারিস এই হাদীসটি আবু খলীলকে বর্ণনা করেন।
৩৪/৪৩. অধ্যায়ঃ ইখতিয়ারের সময়-সীমা নির্ধারণ না করলে ক্রয়-বিক্রয় কি বৈধ হইবে?
২১০৯.ইবনু উমর (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, নাবী (সাঃআঃ) বলেছেন, বিচ্ছিন্ন না হওয়া পর্যন্ত ক্রেতা-বিক্রেতা উভয়ের খিয়ার থাকবে অথবা একপক্ষ অপর পক্ষকে বলবে, গ্রহণ করে নাও। রাবী কখনো বলেছেনঃ অথবা গ্রহণ বা প্রত্যাখ্যানের শর্তে ক্রয়-বিক্রয় হলো।
৩৪/৪৪. অধ্যায়ঃ ক্রেতা-বিক্রেতা বেচা-কেনা বাতিল করার ইখতিয়ার ততক্ষণ পর্যন্ত থাকে যতক্ষণ না তারা পরস্পর পৃথক হয়।
ইবনু উমর (রাদি.), শুরাইহ, শাবী, তাউস ও ইবনু আবু মুলায়কা (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) এ অভিমত ব্যক্ত করিয়াছেন।
২১১০. হাকীম ইবনু হিযাম (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ
নাবী (সাঃআঃ) বলেন, ক্রেতা-বিক্রেতা (একে অপরের সাথে) বিচ্ছিন্ন না হওয়া পর্যন্ত তাদের উভয়ের ইখতিয়ার থাকবে। যদি তারা উভয়ে সত্য কথা বলে ও (পণ্যের দোষ-ত্রুটি) যথাযথ বর্ণনা করে তবে তাদের কেনা বেচায় বরকত হইবে, আর যদি তারা মিথ্যা বলে ও (ত্রুটি) গোপন করে, তবে তাদের কেনা বেচার বরকত নষ্ট হয়ে যাবে।
২১১১. ইবনু উমর (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ
আল্লাহর রাসুল (সাঃআঃ) বলেছেন, ক্রেতা-বিক্রেতা প্রত্যেকের একে অপরের উপর ইখতিয়ার থাকবে, যতক্ষণ তারা বিচ্ছিন্ন না হইবে। তবে খিয়ারের শর্তে ক্রয়-বিক্রয়ে (বিচ্ছিন্ন হওয়ার পরও ইখতিয়ার থাকবে)।
৩৪/৪৫. অধ্যায়ঃ ক্রেতা এবং বিক্রেতা ক্রয়-বিক্রয়ের পর একে অপরকে ইখতিয়ার প্রদান করলে ক্রয়-বিক্রয় অবশ্যই বহাল হইবে।
২১১২. ইবনু উমর (রাদি.) সূত্রে আল্লাহর রাসুল (সাঃআঃ) হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, যখন দু ব্যক্তি ক্রয়-বিক্রয় করে, তখন তাদের উভয়ে যতক্ষণ বিচ্ছিন্ন না হইবে অথবা একে অপরকে ইখতিয়ার প্রদান না করিবে, ততক্ষণ তাদের উভয়ের ইখতিয়ার থাকবে। এভাবে তারা উভয়ে যদি ক্রয়-বিক্রয় করে তবে তা সাব্যস্ত হয়ে যাবে। আর যদি তারা উভয়ে ক্রয়-বিক্রয়ের পর বিচ্ছিন্ন হয়ে যায় এবং তাদের কেউ যদি তা পরিত্যাগ না করে তবে ক্রয়-বিক্রয় সাব্যস্ত হয়ে যাবে।
৩৪/৪৬. অধ্যায়ঃ শুধু বিক্রেতার জন্য ইখতিয়ার থাকলে ক্রয়-বিক্রয় বৈধ হইবে কি?
২১১৩. ইবনু উমর হইতে বর্ণিতঃ
নাবী (সাঃআঃ) বলেন, ক্রেতা-বিক্রেতা উভয়ে যতক্ষণ বিচ্ছিন্ন না হইবে, ততক্ষণ তাদের মাঝে কোন ক্রয়-বিক্রয় সাব্যস্ত হইবে না। অবশ্য ইখতিয়ারের শর্তে ক্রয়-বিক্রয় হলে তা সাব্যস্ত হইবে।
২১১৪. হাকীম ইবনু হিযাম (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ
নাবী (সাঃআঃ) বলেছেন, ক্রেতা-বিক্রেতার ইখতিয়ার থাকবে উভয়ে বিচ্ছিন্ন না হওয়া পর্যন্ত। যদি তারা উভয়ে সত্য কথা বলে এবং (পণ্যের দোষগুণ) যথাযথ বর্ণনা করে, তবে তাদের ক্রয়-বিক্রয়ে বরকত দেওয়া হইবে, আর যদি তারা মিথ্যা বলে এবং গোপন করে, তবে হয়তো খুব লাভ করিবে এবং কিন্তু তাদের ক্রয়-বিক্রয়ে বরকত মুছে যাবে। অপর সনদে হাম্মাম …..আবদুল্লাহ ইবনু হারিস (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) হাকীম ইবনু হিযাম (রাদি.) সূত্রে নাবী (সাঃআঃ) হইতে এই হাদীসটি বর্ণনা করিয়াছেন।
৩৪/৪৭. অধ্যায়ঃ কেউ কোন দ্রব্য ক্রয় করে উভয়ের বিচ্ছিন্ন হওয়ার আগে সে মুহূর্তেই দান করে দিল, এবং ক্রেতা বিক্রেতা এই কাজে আপত্তি না জানায় অথবা কেউ ক্রীতদাস খরিদ করে সে সময়ই মুক্ত করে দেয়।
তাউস (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) বলেন, স্বেচ্ছায় পণ্য ক্রয় করে পরে তা বিক্রি করে দিলে তা সাব্যস্ত হয়ে যাবে এবং মুনাফা সেই (প্রথম ক্রেতা যে পরে বিক্রি করিল) পাবে।
২১১৫. ইবনু উমর (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, আমরা এক সফরে নাবী (সাঃআঃ)-এর সাথে ছিলাম। আমি (আমার পিতা) উমর (রাদি.)-এর একটি অবাধ্য জওয়ান উটের উপর সাওয়ার ছিলাম। উটটি আমার নিয়ন্ত্রণের বাইরে গিয়ে সকলের আগে আগে চলে যাচ্ছিল। উমর (রাদি.) তাকে তাড়িয়ে ফিরিয়ে আনছিলেন। তখন নাবী (সাঃআঃ) উমর (রাদি.)-কে বলিলেন, এটি আমার কাছে বিক্রি করে দাও। তিনি বলিলেন, হে আল্লাহর রাসুল! এটা আপনারই। আল্লাহর রাসুল (সাঃআঃ) বলিলেন, তুমি এটি আমার কাছে বিক্রি কর। তখন তিনি সেটি আল্লাহর রাসুল (সাঃআঃ)-এর কাছে বিক্রি করে দিলেন। নাবী (সাঃআঃ) বলিলেন, হে আবদুল্লাহ ইবনু উমর! এটি তোমার, তুমি এটি দিয়ে যা ইচ্ছা তা কর।
২১১৬. আবদুল্লাহ ইবনু উমর (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, আমীরুল মুমিনীন উসমান ইবনু আফফান (রাদি.)-এর খায়বারের জমিনের বিনিময়ে আমি ওয়াদির জমিন তাহাঁর কাছে বিক্রি করলাম। আমরা যখন ক্রয়-বিক্রয় সম্পন্ন করলাম, তখন আমি পিছনের দিকে ফিরে তাহাঁর ঘর হইতে এই ভয়ে বের হয়ে গেলাম যে, তিনি হয়তো আমার এ বিক্রয় রদ্দ করে দিবেন। সে সময়ে এ রীতি প্রচলিত ছিল যে, বিচ্ছিন্ন না হওয়া পর্যন্ত ক্রেতা-বিক্রেতার ইখতিয়ার থাকত। আবদুল্লাহ (রাদি.) বলিলেন, যখন আমার ও তাহাঁর মাঝে ক্রয়-বিক্রয় নিশ্চিত হয়ে গেল তখন আমি চিন্তা করে দেখলাম যে, আমি এভাবে তাঁকে ঠকিয়েছি। আমি তাঁকে ছামূদ ভূখন্ডের তিন দিনের পথের দূরত্বের পরিমাণ পোঁছিয়ে দিয়েছি আর তিনি আমাকে মাদীনার তিন দিনের পথের দূরত্বের পরিমাণ পৌঁছে দিয়েছেন।
৩৪/৪৮. অধ্যায়ঃ ক্রয়-বিক্রয়ে ধোঁকা দেয়া অপছন্দনীয়।
২১১৭. আবদুল্লাহ ইবনু উমর (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ
এক সাহাবী নাবী (সাঃআঃ)-এর নিকট উল্লেখ করিলেন যে, তাকে ক্রয়-বিক্রয়ে ধোঁকা দেয়া হয়। তখন তিনি বলিলেন, যখন তুমি ক্রয়-বিক্রয় করিবে তখন বলে নিবে কোন প্রকার ধোঁকা নেই।
Leave a Reply