ক্রীতদাস আযাদ করা এবং গোলাম দাসদের মারধোর করা নিসেধ
ক্রীতদাস আযাদ করা এবং গোলাম দাসদের মারধোর করা নিসেধ >> বুখারী শরীফ এর মুল সুচিপত্র পড়ুন
পর্বঃ ৪৯, ক্রীতদাস আযাদ করা, অধ্যায়ঃ (১-২০)=২০টি
৪৯/১. অধ্যায়ঃ ক্রীতদাস আযাদ করা ও তার গুরুত্ব।
৪৯/২. অধ্যায়ঃ কোন্ ধরনের ক্রীতদাস আযাদ করা শ্রেয়?
৪৯/৩. অধ্যায়ঃ সূর্যগ্রহণ ও (আল্লাহর কুদরতের) বিভিন্ন নিদর্শন প্রকাশের সময় ক্রীতদাস আযাদ করা পছন্দনীয়।
৪৯/৪. অধ্যায়ঃ দু ব্যক্তির মালিকানাভুক্ত ক্রীতদাস বা কয়েকজন অংশীদারের দাসী আযাদ করা।
৪৯/৫. অধ্যায়ঃ কেউ ক্রীতদাসের নিজের অংশ আযাদ করে দিলে এবং তার জরুরী অর্থ না থাকলে চুক্তিবদ্ধ ক্রীতদাসের মত তাকে অতিরিক্ত ক্লেশ না দিয়ে আয় করিতে বলা হইবে।
৪৯/৬. অধ্যায়ঃ ভুলক্রমে অথবা অনিচ্ছায় ক্রীতদাস আযাদ করা ও স্ত্রীকে তালাক দেয়া ইত্যাদি। আল্লাহ তাআলার সন্তোষ ব্যতীত অন্য কোন উদ্দেশে গোলাম আযাদ করা যায় না।
৪৯/৭. অধ্যায়ঃ আযাদ করার সংকল্পে কোন ব্যক্তি নিজের ক্রীতদাস সম্পর্কে সে আল্লাহর জন্য নির্দিষ্ট বলা এবং আযাদ করার ক্ষেত্রে সাক্ষী রাখা।
৪৯/৮. অধ্যায়ঃ উম্মু ওয়ালাদ সম্পর্কে
৪৯/৯. অধ্যায়ঃ মুদাব্বার (ক্রীতদাস) বিক্রয় করা
৪৯/১০. অধ্যায়ঃ ক্রীতদাসের অভিভাবকত্ব বিক্রয় বা দান করা।
৪৯/১১. অধ্যায়ঃ কোন ব্যক্তির মুশরিক ভাই বা চাচা যুদ্ধে বন্দী হলে কি তাদের পক্ষ হইতে মুক্তিপণ গ্রহণ করা হইবে?
৪৯/১২. অধ্যায়ঃ মুশরিক কর্তৃক গোলাম আযাদ করা
৪৯/১৩. অধ্যায়ঃ কোন আরব যদি কোন দাস-দাসীর মালিক হয় এবং তাকে দান করে, বিক্রয় করে, সহবাস করে এবং ফিদিয়া হিসাবে দেয় অথবা শিশুদেরকে বন্দী করে রাখে তবে এর বিধান কী?
৪৯/১৪. অধ্যায়ঃ নিজ গোলামকে জ্ঞান ও আদব কায়দা শিক্ষা দেয়ার গুরুত্ব।
৪৯/১৫. অধ্যায়ঃ নাবী (সাঃআঃ) -এর বাণী, তোমাদের গোলামেরা তোমাদেরই ভাই। কাজেই তোমরা যা খাবে তা হইতে তাদেরকেও খাওয়াবে।
৪৯/১৬. অধ্যায়ঃ যে ক্রীতদাস উত্তমরূপে তার মহান প্রভুর (আল্লাহর) ইবাদাত করে আর তার মালিকের শুভাকাঙ্ক্ষী হয়।
৪৯/১৭. অধ্যায়ঃ দাসদের মারধোর করা এবং আমার ক্রীতদাস ও আমার বাঁদী এরূপ বলা মাকরূহ।
৪৯/১৮. অধ্যায়ঃ খাদিম যখন ভালভাবে খাবার পরিবেশন করে।
৪৯/১৯. অধ্যায়ঃ ক্রীতদাস আপন মালিকের সম্পত্তির হিফাযাতকারী।
৪৯/২০. অধ্যায়ঃ ক্রীতদাসের মুখমণ্ডলে মারবে না।
৪৯/১. অধ্যায়ঃ ক্রীতদাস আযাদ করা ও তার গুরুত্ব।
আল্লাহ তাআলার বাণীঃ “ক্রীতদাস মুক্তি অথবা দুর্ভিক্ষের দিনে ইয়াতীম আত্নীয়কে অন্নদান” (বালাদ (৯০) : ১৩)
২৫১৭. আবু হুরাইরা (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, নাবী (সাঃআঃ) বলেছেন, কেউ কোন মুসলিম ক্রীতদাস মুক্ত করলে আল্লাহ সেই ক্রীতদাসের প্রত্যেক অঙ্গের বিনিময়ে তার এক একটি অঙ্গ (জাহান্নামের) আগুন হইতে মুক্ত করবেন। সাঈদ ইবনু মারজানা (রাদি.) বলেন, এ হাদীসটি আমি আলী ইবনু হুসাইনের খিদমতে পেশ করলাম। তখন আলী ইবনু হুসাইন (রাদি.) তাহাঁর এক ক্রীতদাসের কাছে উঠে গেলেন যার বিনিময়ে আবদুল্লাহ ইবনু জাফার (রাদি.) তাকে দশ হাজার দিরহাম কিংবা এক হাজার দীনার দিতে চেয়েছিলেন এবং তিনি তাকে মুক্ত করে দিলেন।
৪৯/২. অধ্যায়ঃ কোন্ ধরনের ক্রীতদাস আযাদ করা শ্রেয়?
২৫১৮. আবু যার (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, নাবী (সাঃআঃ) -কে আমি জিজ্ঞেস করলাম, কোন আমল উত্তম? তিনি বলিলেন, আল্লাহর প্রতি ঈমান আনা এবং তাহাঁর পথে জিহাদ করা। আমি জিজ্ঞেস করলাম, কোন ধরনের ক্রীতদাস মুক্ত করা উত্তম? তিনি বলিলেন, যে ক্রীতদাসের মূল্য অধিক এবং যে ক্রীতদাস তার মনিবের কাছে অধিক আকর্ষণীয়। আমি জিজ্ঞেস করলাম, এ যদি আমি করিতে না পারি? তিনি বলিলেন, তাহলে কাজের লোককে (তার কাজে) সাহায্য করিবে কিংবা বেকারকে কাজ দিবে। আমি (আবারও) বললাম, এও যদি না পারি? তিনি বলিলেন, মানুষকে তোমার অনিষ্টতা হইতে মুক্ত রাখবে। বস্তুতঃ এটা তোমার নিজের জন্য তোমার পক্ষ হইতে সাদাকাহ।
৪৯/৩. অধ্যায়ঃ সূর্যগ্রহণ ও (আল্লাহর কুদরতের) বিভিন্ন নিদর্শন প্রকাশের সময় ক্রীতদাস আযাদ করা পছন্দনীয়।
২৫১৯. আসমা বিনতু আবু বক্র (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, নাবী (সাঃআঃ) সূর্যগ্রহণের সময় ক্রীতদাস মুক্ত করার নির্দেশ দিয়েছেন। আলী (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) দরাওয়ারদী (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) সূত্রে হিশাম (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) হাদীস বর্ণনায় মূসা ইবনু মাসঊদ (রাদি.) -এর অনুসরন করিয়াছেন।
২৫২০. আসমা বিনতু আবু বক্র (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, সূর্যগ্রহণের সময় আমাদেরকে ক্রীতদাস মুক্ত করার নির্দেশ দেয়া হত।
৪৯/৪. অধ্যায়ঃ দু ব্যক্তির মালিকানাভুক্ত ক্রীতদাস বা কয়েকজন অংশীদারের দাসী আযাদ করা।
২৫২১. সালিমের পিতা [ইবনু উমর (রাদি.)] হইতে বর্ণিতঃ
নাবী (সাঃআঃ) বলেছেন, যে ব্যক্তি দুজনের মালিকানাধীন ক্রীতদাস মুক্ত করে, সে স্বচ্ছল হলে প্রথমে ক্রীতদাসের মূল্য নির্ধারণ করা হইবে, তারপর মুক্ত করিবে।
২৫২২. আবদুল্লাহ ইবনু উমর (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ
রাসুলুল্লাহ (সাঃআঃ) বলেছেন, কেউ যদি কোন ক্রীতদাস হইতে নিজের অংশ মুক্ত করে আর ক্রীতদাসের মূল্য পরিমাণ অর্থ তার কাছে থাকে, তবে তার উপর দায়িত্ব হইবে ক্রীতদাসের ন্যায্য মূল্য নির্ণয় করা। তারপর সে শরীকদের তাদের প্রাপ্য অংশ পরিশোধ করিবে এবং ক্রীতদাসটি তার পক্ষ হইতে মুক্ত হয়ে যাবে, কিন্তু (সে পরিমাণ অর্থ) না থাকলে তার পক্ষ হইতে ততটুকুই মুক্ত হইবে যতটুকু সে মুক্ত করেছে।
২৫২৩. ইবনু উমর (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ (সাঃআঃ) বলেছেন, কেউ কোন (শরীকী) ক্রীতদাস হইতে নিজের অংশ মুক্ত করলে ঐ ক্রীতদাসের সম্পূর্ণটা মুক্ত করা তার জন্য অপরিহার্য হয়ে পড়বে, যদি তার কাছে সেই ক্রীতদাসের মূল্য সমপরিমান অর্থ থাকে। আর যদি তার কাছে কোন অর্থ না থাকে তাহলে তার দায়িত্ব হইবে আযাদকৃত (গোলামের) ন্যায্যমূল্য নির্ধারণ করা। এতে আযাদকারীর পক্ষ হইতে ততটুকুই মুক্ত হইবে, যতটুকু সে মুক্ত করেছে।
মুসাদ্দাদ (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) বিশর ইবনু মুফাযযাল (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) সূত্রে উবায়দুল্লাহ (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) থেকে উক্ত হাদীসটি সংক্ষিপ্তভাবে বর্ণিত আছে। (২৪৯১)
(আ.প্র. ২৩৪০, ই.ফা. ২৩৫৭)
২৫২৪. ইবনু উমর (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ
নাবী (সাঃআঃ) বলেছেন, কেউ কোন (শরীকী) ক্রীতদাস হইতে নিজের অংশ মুক্ত করে দিলে এবং ক্রীতদাসের ন্যায্যমূল্য পরিমাণ অর্থ তার কাছে থাকলে, সেই ক্রীতদাস সম্পূর্ণ মুক্ত হয়ে যাবে। নাফি (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) বলেন, আর সেই পরিমাণ অর্থ না থাকলে যতটুকু সে মুক্ত করিবে তারপক্ষ হইতে ততটুকুই মুক্ত হইবে। রাবী আইউব (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) বলেন, আমি জানি না, এটা কি নাফী (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) নিজ হইতে বলেছেন, না এটাও হাদীসের অন্তর্ভুক্ত।
২৫২৫. ইবনু উমর (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ
তিনি শরীকী ক্রীতদাস বা বাঁদী সম্পর্কে ফতোয়া দিতেন যে, শরীকী ক্রীতদাস শরীকদের কেউ নিজের অংশ মুক্ত করে দিলে তিনি বলিতেন, সম্পূর্ণ ক্রীতদাসটাই আযাদ করা তার উপর ওয়াজিব হয়ে গেছে। যদি আযাদকারীর কাছে ক্রীতদাসের মূল্য পরিমাণ অর্থ থাকে, তাহলে সে অর্থ হইতে ক্রীতদাসের ন্যায্যমূল্য নির্ণয় করা হইবে এবং শরীকদেরকে তাদের প্রাপ্য অংশ পরিশোধ করা হইবে, আর আযাদকৃত ক্রীতদাস পূর্ণ মুক্ত হয়ে যাবে। বক্তব্যটি ইবনু উমর (রাদি.) নাবী (সাঃআঃ) হইতে বর্ণনা করেন।
এবং লাইস, ইবনু আবু যিব, ইবনু ইসহাক জুওয়াইরিয়া, ইয়াহইয়া ইবনু সাঈদ ও ইসমাঈল ইবনু উমাইয়া (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) নাফি (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) -এর মাধ্যমে ইবনু উমর (রাদি.) সূত্রে নাবী (সাঃআঃ) হইতে হাদীসটি সংক্ষিপ্তভাবে বর্ণনা করিয়াছেন।
৪৯/৫. অধ্যায়ঃ কেউ ক্রীতদাসের নিজের অংশ আযাদ করে দিলে এবং তার জরুরী অর্থ না থাকলে চুক্তিবদ্ধ ক্রীতদাসের মত তাকে অতিরিক্ত ক্লেশ না দিয়ে আয় করিতে বলা হইবে।
২৫২৬. আবু হুরাইরা (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ
নাবী (সাঃআঃ) ইরশাদ করিয়াছেন, “কেউ শরীকী ক্রীতদাস হইতে নিজের ভাগ বা অংশ (রাবীর দ্বিধা) মুক্ত করে দিলে……..”।
২৫২৭. আবু হুরাইরা (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ
নাবী (সাঃআঃ) ইরশাদ করিয়াছেন, কেউ শরীকী ক্রীতদাস হইতে নিজের ভাগ বা অংশ (রাবীর দ্বিধা) মুক্ত করে দিলে অর্থ ব্যয়ে সেই ক্রীতদাসকে নিষ্কৃতি দেয়া তার উপর কর্তব্য, যদি তার কাছে প্রয়োজনীয় অর্থ থাকে। অন্যথায় তার নায্যমূল্য নির্ধারণ করা হইবে এবং তাকে অতিরিক্ত কষ্ট না দিয়ে উপার্জন করিতে বলা হইবে।
হাজ্জাজ ইবনু হাজ্জাজ, আবান ও মূসা ইবনু খালাফ (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) কাতাদাহ (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) -এর অনুসরণ করিয়াছেন। হাদীসটি শুবা (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) সংক্ষিপ্তভাবে বর্ণনা করিয়াছেন।
৪৯/৬. অধ্যায়ঃ ভুলক্রমে অথবা অনিচ্ছায় ক্রীতদাস আযাদ করা ও স্ত্রীকে তালাক দেয়া ইত্যাদি। আল্লাহ তাআলার সন্তোষ ব্যতীত অন্য কোন উদ্দেশে গোলাম আযাদ করা যায় না।
নাবী (সাঃআঃ) বলেছেন, প্রত্যেক ব্যক্তি তাই পাবে, যা সে নিয়্যাত করিবে এবং যে ব্যক্তি অনিচ্ছায় বা ভুলবশত কিছু বলে, তার কোন নিয়্যাত থাকে না।
২৫২৮. আবু হুরাইরা (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, নাবী (সাঃআঃ) বলেছেন, (আমার বরকতে) আল্লাহ আমার উম্মতের অন্তরে উদিত ওয়াসওয়াসা (পাপের ভাব ও চেতনা) মাফ করে দিয়েছেন। যতক্ষণ পর্যন্ত না সে তা কাজে পরিণত করে অথবা মুখে বলে।
২৫২৯. উমর ইবনু খাত্তাব (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ
নাবী (সাঃআঃ) বলেছেন, আমলসমূহ নিয়্যাতের সাথে সম্পৃক্ত। আর মানুষ তাই পাবে, যা সে নিয়্যাত করিবে। কাজেই কেউ আল্লাহ ও তাহাঁর রসূলের উদ্দেশে হিজরত করে থাকলে তার সে হিজরত আল্লাহ ও তাহাঁর রাসূলের উদ্দেশে বলেই গণ্য হইবে। আর যার হিজরত হইবে দুনিয়া হাসিলের উদ্দেশে অথবা কোন নারীকে বিয়ে করার মতলবে; তার হিজরত সে উদ্দেশে বলেই গণ্য হইবে। (১)
৪৯/৭. অধ্যায়ঃ আযাদ করার সংকল্পে কোন ব্যক্তি নিজের ক্রীতদাস সম্পর্কে সে আল্লাহর জন্য নির্দিষ্ট বলা এবং আযাদ করার ক্ষেত্রে সাক্ষী রাখা।
২৫৩০. আবু হুরাইরা (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ
তিনি ইসলাম গ্রহণের ইচ্ছায় ক্রীতদাসকে সাথে নিয়ে (মদীনায়) আসছিলেন। পথে তারা বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়লেন। পরে ক্রীতদাসটি এসে পৌছল। আবু হুরাইরা (রাদি.) সে সময় নাবী (সাঃআঃ) -এর খিদমাতে উপবিষ্ট ছিলেন। নাবী (সাঃআঃ) বলিলেন, আবু হুরাইরা! দেখ, তোমার ক্রীতদাস এসে গেছে। তখন তিনি [আবু হুরাইরা (রাদি.)] বলিলেন, শুনুন; আমি আপনাকে সাক্ষী রেখে বলছি, সে মুক্ত। রাবী বলেন, (মদীনায়) পৌছে তিনি বলিতেন :
কত দীর্ঘ আর কষ্টদায়কই না ছিল হিজরতের সে রাত, তবুও তা আমাকে দারুল কুফ্র হইতে মুক্তি দিয়েছে।
২৫৩১. আবু হুরাইরা (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, নাবীজীর খিদমতে আগমনকালে আমি পথে পথে (কবিতা) বলতাম: হিজরতের সে রাত কত না দীর্ঘ আর কষ্টদায়ক ছিল- তবুও তা আমাকে দারুল কুফ্র হইতে মুক্তি দিয়েছে। তিনি বলেন, পথে আমার এক ক্রীতদাস পালিয়ে গিয়েছিল। যখন আমি নাবী (সাঃআঃ) -এর খিদমতে এসে তাহাঁর (হাতে) বায়আত হলাম। আমি তাহাঁর খিদমাতেই ছিলাম, এ সময় ক্রীতদাসটি এসে হাযির হল। তখন রাসুলুল্লাহ (সাঃআঃ) বলিলেন, আবু হুরাইরা! এই যে, তোমার ক্রীতদাস! আমি বললাম, সে আল্লাহর ওয়াস্তে আযাদ। এই বলে তাকে মুক্ত করে দিলাম।
আবু আবদুল্লাহ (বুখারী) (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) বলেন, আবু কুরাইব (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) আবু উসামাহ (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) হইতে বর্ণিত রিওয়ায়াতে —— শব্দ বলেননি।
২৫৩২. কাইস (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, আবু হুরাইরা (রাদি.) তাহাঁর ক্রীতদাসকে সাথে করে ইসলামের উদ্দেশ্যে (মদীনা) আগমনকালে পথিমধ্যে তারা একে অপরকে হারিয়ে ফেললেন এবং তিনি (আবু হুরাইরা) বলিলেন, শুনুন! আমি আপনাকে সাক্ষী রেখে বলছি, সে আল্লাহর জন্য।
৪৯/৮. অধ্যায়ঃ উম্মু ওয়ালাদ সম্পর্কে
আবু হুরাইরা (রাদি.) নাবী (সাঃআঃ) হইতে বর্ণনা করিয়াছেন, কিয়ামতের একটি আলামত এই যে, বাঁদী তার মুনিবকে প্রসব করিবে।
২৫৩৩. আয়েশা (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, উতবাহ ইবনু আবু ওয়াক্কাস আপন ভাই সাদ ইবনু আবু ওয়াক্কাসকে ওসীয়্যাত করেছিলেন, তিনি যেন যামআর দাসীর গর্ভজাত পুত্রকে গ্রহণ করেন (কারণ স্বরূপ) উতবাহ বলেছিলেন, সে আমার (ঔরসজাত) পুত্র। মক্কা বিজয়কালে রাসুলুল্লাহ (সাঃআঃ) যখন মক্কায় তাশরীফ আনলেন; তখন সাদ যামআর দাসীর পুত্রকে নিয়ে রাসুলুল্লাহ (সাঃআঃ) -এর খিদমতে আসলেন এবং তার সাথে আবদ ইবনু যামআকে নিয়ে আসলেন। সাদ বলিলেন, হে আল্লাহর রাসুল! এ আমার ভাই, যামআর পুত্র। তার শয্যাতেই এ জন্ম নিয়েছে। রাসুলুল্লাহ (সাঃআঃ) তখন যামআর দাসীর পুত্রের দিকে তাকালেন। দেখলেন, উতবার সাথেই তার (আদলের) সর্বাধিক মিল। তবু রাসুলুল্লাহ (সাঃআঃ) বলিলেন, হে আবদ ইবনু যামআ! এ তোমারই (ভাই), কেননা এ তার (আবদ ইবনু যামআর) শয্যাতে জন্মগ্রহণ করেছে। তারপর রাসুলুল্লাহ (সাঃআঃ) বলিলেন, হে সাওদা বিনতে যামআ। তুমি এ হইতে পর্দা করিবে। কেননা, তিনি উতবার সাথেই তার (চেহারার) মিল দেখিতে পেয়েছিলেন। সাওদা ছিলেন নাবী (সাঃআঃ) -এর স্ত্রী।
৪৯/৯. অধ্যায়ঃ মুদাব্বার (ক্রীতদাস) বিক্রয় করা
২৫৩৪. জাবির ইবনু আবদুল্লাহ (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, আমাদের কোন একজন তার এক ক্রীতদাসকে মুদাব্বার (মনিবের মৃত্যুর পর যে ক্রীতদাস মুক্ত বলে ঘোষিত হয়) রূপে মুক্ত ঘোষণা করিল। তখন নাবী (সাঃআঃ) সেই ক্রীতদাসকে ডেকে নিয়ে অন্যত্র বিক্রি করে দিলেন। জাবির (রাদি.) বলেন, ক্রীতদাসটি সে বছরই মারা গিয়েছিল।
৪৯/১০. অধ্যায়ঃ ক্রীতদাসের অভিভাবকত্ব বিক্রয় বা দান করা।
২৫৩৫. ইবনু উমর (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, নাবী (সাঃআঃ) ক্রীতদাসের অভিভাবকত্ব বিক্রি করিতে এবং তা দান করিতে নিষেধ করিয়াছেন।
২৫৩৬. আয়েশা (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, বারীরাকে আমি (আযাদ করার নিয়্যতে) খরিদ করলাম, তখন তার (পূর্বতন) মালিক অভিভাবকত্বের শর্তারোপ করিল। প্রসঙ্গটি আমি নাবী (সাঃআঃ) -এর কাছে উত্থাপন করলাম। তিনি বলিলেন, তুমি তাকে মুক্ত করে দাও। অভিভাবকত্ব সেই লাভ করিবে, সে অর্থ ব্যয় করিবে। তখন আমি তাকে মুক্ত করে দিলাম। তারপর নাবী (সাঃআঃ) তাকে ডেকে তার স্বামীর ব্যাপারে ইখতিয়ার দিলেন। বারীরা (রাদি.) বলিলেন, যদি সে আমাকে এত এত সম্পদও দেয় তবু আমি তার কাছে থাকব না। অবশেষে তিনি তার ইখতিয়ার প্রয়োগ করিলেন।
৪৯/১১. অধ্যায়ঃ কোন ব্যক্তির মুশরিক ভাই বা চাচা যুদ্ধে বন্দী হলে কি তাদের পক্ষ হইতে মুক্তিপণ গ্রহণ করা হইবে?
আনাস (রাদি.) বর্ণনা করিয়াছেন, আব্বাস (রাদি.) নাবী (সাঃআঃ)-কে বলেছিলেন, আমি নিজের ও আকীলের মুক্তিপণ আদায় করছি। এদিকে আলী ইবনু আবী তালিব (রা) তার ভাই আকীল ও চাচা আব্বাসের মুক্তিপণ বাবত প্রাপ্ত গনীমতের অংশ পেয়েছিলেন।
২৫৩৭. আনাস ইবনু মালিক (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, মদীনার কিছু লোক রাসুলুল্লাহ (সাঃআঃ) -এর কাছে অনুমতি প্রার্থনা করে বলিল, আপনি অনুমতি দিলে আমরা আমাদের বোনের ছেলে আব্বাসের মুক্তিপণ ছেড়ে দিব। কিন্তু তিনি বলিলেন, তোমরা তার (মুক্তিপণের) একটি দিরহামও ছাড়তে পার না।
৪৯/১২. অধ্যায়ঃ মুশরিক কর্তৃক গোলাম আযাদ করা
২৫৩৮. হিশাম (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) হইতে বর্ণিতঃ
আমার পিতা আমাকে অবগত করিলেন যে, হাকীম ইবনু হিযাম (রাদি.) জাহিলী যুগে একশ ক্রীতদাস মুক্ত করেছিলেন এবং আরোহণের জন্য একশ উট দিয়েছিলেন। যখন তিনি ইসলাম গ্রহণ করিলেন, তখনও একশ উট বাহন হিসেবে দান করেন এবং একশ ক্রীতদাস মুক্ত করিলেন। তিনি বলেন, আমি রাসুলুল্লাহ (সাঃআঃ) -কে জিজ্ঞেস করলাম, হে আল্লাহর রাসুল! জাহেলী যুগে কল্যাণের উদ্দেশে যে কাজগুলো আমি করতাম, সেগুলো সম্পর্কে আমাকে অবহিত করুন। তিনি বলেন, তখন রাসুলুল্লাহ (সাঃআঃ) বলিলেন, তোমার পিছনের আমলগুলোর কল্যাণেই তো তুমি ইসলাম কবূল করেছ।
৪৯/১৩. অধ্যায়ঃ কোন আরব যদি কোন দাস-দাসীর মালিক হয় এবং তাকে দান করে, বিক্রয় করে, সহবাস করে এবং ফিদিয়া হিসাবে দেয় অথবা শিশুদেরকে বন্দী করে রাখে তবে এর বিধান কী?
আল্লাহ তাআলা ইরশাদ করেন : আল্লাহ উপমা দিচ্ছেন অপরের অধিকারভুক্ত এক গোলামের, যে কোন কিছুর উপর শক্তি রাখে না এবং এমন এক ব্যক্তির, যাকে তিনি নিজ হইতে উত্তম রিযিক দান করিয়াছেন এবং সে তা হইতে গোপণে ও প্রকাশ্যে ব্যয় করে। তারা কি একে অপরের সমান? সকল প্রশংসা আল্লাহর প্রাপ্য, অথচ তাদের অধিকাংশই তা জানে না। (নাহল ৭৫)
২৫৩৯.মারওয়ান ও মিসওয়ার ইবনু মাখরামা (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ
হাওয়াযিন গোত্রের প্রতিনিধি দল নাবী (সাঃআঃ) -এর খিদমতে হাযির হলে নাবী (সাঃআঃ) দাঁড়ালেন (অভ্যর্থনার জন্য) এরপর তারা অর্থ-সম্পদ ও বন্দীদের ফিরিয়ে দেয়ার আবেদন জানাল। তখন তিনি বলিলেন, তোমরা দেখেছ, আমার সাথে আরো সাহাবী আছেন। আর সত্য ভাষণই আমার নিকট প্রিয়। কাজেই, অর্থ-সম্পদ ও বন্দী এ দুটির যে কোন একটি তোমরা বেছে নাও। বন্দীদের বন্টনের ব্যাপারে আমি বিলম্বও করেছিলাম। (রাবী বলেন) নাবী (সাঃআঃ) তায়েফ হইতে ফিরে প্রায় দশ রাত তাদেরকে সুযোগ দিয়েছিলেন। যখন প্রতিনিধি দলের কাছে সুষ্পষ্ট হয় যে, নাবী (সাঃআঃ) তাদেরকে দুটির যেকোন একটি ফেরত দিবেন, তখন তারা বলিল, তবে আমরা আমাদের বন্দীদেরই পছন্দ করছি। তখন নাবী (সাঃআঃ) সবার সামনে দাঁড়িয়ে আল্লাহ তাআলার যথাযোগ্য প্রশংসা করার পর বলিলেন, তোমাদের ভাইয়েরা তাওবা করে আমাদের কাছে এসেছে। এমতাবস্থায় আমি তাদেরকে তাদের বন্দীদের ফেরত দিতে মনস্থ করেছি। কাজেই তোমাদের মধ্যে যারা সন্তুষ্টচিত্তে তা পছন্দ করে, তারা যেন তাই করে। আর যারা তাদের নিজেদের হিস্সা পেতে পছন্দ করে তা এভাবে যে, প্রথম দফায় আল্লাহ তাআলা আমাকে দান করবেন, সেখান হইতে আমি তাদের সে হিস্সা আদায় করে দিব। সে যেন তা করে। তখন সবাই বলিল, আমরা আপনার জন্য সন্তুষ্টচিত্তে তা করিতে রাজী আছি। তিনি বলিলেন, আমি বুঝতে পারছি না, তোমাদের মধ্যে কারা সম্মত আর কারা সম্মত নও। কাজেই তোমরা ফিরে যাও। আর তোমাদের মুখপাত্ররা তোমাদের মতামত আমার কাছে উত্থাপন করুক। তারপর সবাই ফিরে গেল আর তাদের প্রতিনিধিরা তাদের সাথে আলোচনা সরে নাবী (সাঃআঃ) -কে ফিরে এসে জানালেন যে, তারা সকলেই সন্তুষ্টচিত্তে সম্মতি প্রকাশ করেছে। [ইবনু শিহাব যুহরী (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) বলেন] হাওয়াযিন গোত্রের যুদ্ধ বন্দী সম্পর্কে এতটুকুই আমাদের কাছে পৌছেছে। আনাস (রাদি.) বলেন, আব্বাস (রাদি.) নাবী (সাঃআঃ) -কে বলিলেন, (বদর যুদ্ধে) আমি (একাই) নিজের ও আকীলের মুক্তিপণ আদায় করেছি।
২৫৪০. Read previous Hadith. মারওয়ান ও মিসওয়ার ইবনু মাখরামা (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ
হাওয়াযিন গোত্রের প্রতিনিধি দল নাবী (সাঃআঃ) -এর খিদমতে হাযির হলে নাবী (সাঃআঃ) দাঁড়ালেন (অভ্যর্থনার জন্য) এরপর তারা অর্থ-সম্পদ ও বন্দীদের ফিরিয়ে দেয়ার আবেদন জানাল। তখন তিনি বলিলেন, তোমরা দেখেছ, আমার সাথে আরো সাহাবী আছেন। আর সত্য ভাষণই আমার নিকট প্রিয়। কাজেই, অর্থ-সম্পদ ও বন্দী এ দুটির যে কোন একটি তোমরা বেছে নাও। বন্দীদের বন্টনের ব্যাপারে আমি বিলম্বও করেছিলাম। (রাবী বলেন) নাবী (সাঃআঃ) তায়েফ হইতে ফিরে প্রায় দশ রাত তাদেরকে সুযোগ দিয়েছিলেন। যখন প্রতিনিধি দলের কাছে সুষ্পষ্ট হয় যে, নাবী (সাঃআঃ) তাদেরকে দুটির যেকোন একটি ফেরত দিবেন, তখন তারা বলিল, তবে আমরা আমাদের বন্দীদেরই পছন্দ করছি। তখন নাবী (সাঃআঃ) সবার সামনে দাঁড়িয়ে আল্লাহ তাআলার যথাযোগ্য প্রশংসা করার পর বলিলেন, তোমাদের ভাইয়েরা তাওবা করে আমাদের কাছে এসেছে। এমতাবস্থায় আমি তাদেরকে তাদের বন্দীদের ফেরত দিতে মনস্থ করেছি। কাজেই তোমাদের মধ্যে যারা সন্তুষ্টচিত্তে তা পছন্দ করে, তারা যেন তাই করে। আর যারা তাদের নিজেদের হিস্সা পেতে পছন্দ করে তা এভাবে যে, প্রথম দফায় আল্লাহ তাআলা আমাকে দান করবেন, সেখান হইতে আমি তাদের সে হিস্সা আদায় করে দিব। সে যেন তা করে। তখন সবাই বলিল, আমরা আপনার জন্য সন্তুষ্টচিত্তে তা করিতে রাজী আছি। তিনি বলিলেন, আমি বুঝতে পারছি না, তোমাদের মধ্যে কারা সম্মত আর কারা সম্মত নও। কাজেই তোমরা ফিরে যাও। আর তোমাদের মুখপাত্ররা তোমাদের মতামত আমার কাছে উত্থাপন করুক। তারপর সবাই ফিরে গেল আর তাদের প্রতিনিধিরা তাদের সাথে আলোচনা সরে নাবী (সাঃআঃ) -কে ফিরে এসে জানালেন যে, তারা সকলেই সন্তুষ্টচিত্তে সম্মতি প্রকাশ করেছে। [ইবনু শিহাব যুহরী (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) বলেন] হাওয়াযিন গোত্রের যুদ্ধ বন্দী সম্পর্কে এতটুকুই আমাদের কাছে পৌছেছে। আনাস (রাদি.) বলেন, আব্বাস (রাদি.) নাবী (সাঃআঃ) -কে বলিলেন, (বদর যুদ্ধে) আমি (একাই) নিজের ও আকীলের মুক্তিপণ আদায় করেছি।
২৫৪১. ইবনু আউন (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, আমি নাফি (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) -কে পত্র লিখলাম, তিনি জওয়াবে আমাকে লিখেন যে, নাবী (সাঃআঃ) বানী মুস্তালিক গোত্রের উপর অতর্কিতভাবে অভিযান পরিচালনা করেন। তাদের গবাদি পশুকে তখন পানি পান করানো হচ্ছিল। তিনি তাদের যুদ্ধক্ষমদের হত্যা এবং নাবালকদের বন্দী করেন এবং সেদিনই তিনি জুওয়ায়রিয়া (উম্মুল মুমিনীন) -কে লাভ করেন। [নাফি (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) বলেন] আবদুল্লাহ ইবনু উমর (রাদি.) আমাকে এ সম্পর্কিত হাদীস শুনিয়েছেন। তিনি নিজেও সে সেনাদলে ছিলেন।
২৫৪২. ইবনু মুহায়রিয (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, আমি আবু সাঈদ (রাদি.) -কে দেখিতে পেয়ে জিজ্ঞেস করলাম। তিনি বলিলেন, নাবী (সাঃআঃ) -এর সাথে আমরা বনী মুস্তালিক যুদ্ধে কিছু আরব যুদ্ধবন্দী আমাদের হস্তগত হল। তখন আমাদের স্ত্রীদের কথা মনে পড়ে (কেননা) দূর-নিঃসঙ্গ জীবন আমাদের জন্য পীড়াদায়ক হয়ে পড়েছিলো। (সে সময়) আমরা আযল করিতে চাইলাম (বাঁদী ব্যবহার করে)। এ সম্পর্কে আমরা রাসূলুল্লহ (সাঃআঃ) -কে জিজ্ঞেস করলে তিনি বলিলেন, এরূপ না করলে তোমাদের কোন ক্ষতি হইবে না। কেননা, ক্বিয়ামাত পর্যন্ত যাদের জন্ম নির্ধারিত রয়েছে, তাদের আগমন ঘটবেই।
২৫৪৩. আবু হুরাইরা (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ (সাঃআঃ) হইতে তিনটি কথা শোনার পর হইতে বনী তামীম গোত্রকে আমি ভালবেসে আসছি। আমি তাঁকে বলিতে শুনিয়াছি, দাজ্জালের মুকাবিলায় আমার উম্মতের মধ্যে এরাই হইবে অধিকতর কঠোর। আবু হুরাইরা (রাদি.) বলেন, একবার তাদের পক্ষ হইতে সদকার মাল আসলো। তখন রাসুলুল্লাহ (সাঃআঃ) বলিলেন, এ যে আমার কাওমের সাদাকা। আয়েশা (রাদি.) -এর হাতে তাদের এক বন্দিনী ছিল। তা দেখে নাবী (সাঃআঃ) বলিলেন, একে মুক্ত করে দাও। কেননা, সে ইসমাঈলের বংশধর।
৪৯/১৪. অধ্যায়ঃ নিজ গোলামকে জ্ঞান ও আদব কায়দা শিক্ষা দেয়ার গুরুত্ব।
২৫৪৪. আবু মূসা (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ (সাঃআঃ) বলেছেন, কারো যদি একটি বাঁদী থাকে আর সে তাকে প্রতিপালন করে, তার সাথে ভাল আচরণ করে এবং তাকে মুক্তি দিয়ে বিয়ে করে, তাহলে সে দ্বিগুন সাওয়াব লাভ করিবে।
৪৯/১৫. অধ্যায়ঃ নাবী (সাঃআঃ) -এর বাণী, তোমাদের গোলামেরা তোমাদেরই ভাই। কাজেই তোমরা যা খাবে তা হইতে তাদেরকেও খাওয়াবে।
(এ সম্পর্কে) আল্লাহ তাআলার বাণী : “আরা তোমরা আল্লাহর ইবাদত করিবে ও কোন কিছুকে তাহাঁর শরীক করিবে না এবং পিতা-মাতা, আত্মীয়-স্বজন, ইয়াতীম, অভাবগ্রস্ত, নিকট প্রতিবেশী, দূর প্রতিবেশী, সঙ্গী-সাথী, পথচারী এবং তোমাদের অধিকারভুক্ত দাস-দাসীদের প্রতি সদ্ব্যবহার করিবে। দাম্ভিক আত্মগর্বীকে আল্লাহ পছন্দ করেন না”। (আন-নিসা (৪) : ৩৬)।
২৫৪৫. মারূর ইবনু সুওয়াইদ (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, একবার আমি আবু যার গিফারী (রাদি.) -এর দেখা পেলাম। তার গায়ে তখন এক জোড়া কাপড় আর তার ক্রীতদাসের গায়েও (অনুরূপ) এক জোড়া কাপড় ছিল। তাঁকে এর কারণ জিজ্ঞেস করলে তিনি বলিলেন, একবার এক ব্যক্তিকে আমি গালি দিয়েছিলাম। সে নাবী (সাঃআঃ) -এর কাছে আমার বিরুদ্ধে অভিযোগ করিল। তখন নাবী (সাঃআঃ) আমাকে বলিলেন, তুমি তার মার প্রতি কটাক্ষ করে তাকে লজ্জা দিলে? তারপর তিনি বলিলেন, তোমাদের গোলামরা তোমাদেরই ভাই। আল্লাহ তাদেরকে তোমাদের অধীনস্ত করিয়াছেন, কাজেই কারো ভাই যদি তার অধীনে থাকে তবে সে যা খায়, তা হইতে যেন তাকে খেতে দেয় এবং সে যা পরিধান করে, তা হইতে যেন পরিধান করায় এবং তাদের সাধ্যাতীত কোন কাজে বাধ্য না করে। তোমরা যদি তাদের শক্তির ঊর্ধ্বে কোন কাজ তাদের দাও তবে তাদের সহযোগিতা কর।
৪৯/১৬. অধ্যায়ঃ যে ক্রীতদাস উত্তমরূপে তার মহান প্রভুর (আল্লাহর) ইবাদাত করে আর তার মালিকের শুভাকাঙ্ক্ষী হয়।
২৫৪৬. ইবনু উমর (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ
রাসুলুল্লাহ (সাঃআঃ) বলেছেন, ক্রীতদাস যদি তার মনিবের হিতাকাঙ্ক্ষী হয় এবং তার প্রতিপালকের উত্তমরূপে ইবাদত করে, তাহলে তার সাওয়াব হইবে দ্বিগুণ।
২৫৪৭. আবু মূসা আশআরী (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, নাবী (সাঃআঃ) বলেছেন, যে লোক তার বাঁদীকে উত্তমরূপে জ্ঞান ও আদব শিক্ষা দেয় এবং তাকে মুক্ত করে ও বিয়ে করে, সে দ্বিগুণ সাওয়াব লাভ করিবে। আর যে ক্রীতদাস আল্লাহর হক আদায় করে এবং মনিবের হকও আদায় করে, সেও দ্বিগুণ সাওয়াব লাভ করিবে।
২৫৪৮. আবু হুরাইরা (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ (সাঃআঃ) বলেছেন, সৎ ক্রীতদাসের সাওয়াব হইবে দ্বিগুণ। আবু হুরাইরা (রাদি.) বলেন, যাঁর হাতে আমার প্রাণ, তাহাঁর শপথ করে বলছি, আল্লাহর পথে জিহাদ, হাজ্জ এবং আমার মায়ের সেবার মতো উত্তম কাজ যদি না থাকত, তাহলে ক্রীতদাসরূপে মৃত্যুবরণ করাই আমি পছন্দ করতাম।
২৫৪৯. আবু হুরাইরা (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, নাবী (সাঃআঃ) বলেছেন, কত ভাগ্যবান সে যে উত্তমরূপে আপন প্রতিপালকের ইবাদত করে এবং নিজ মনিবের হিতাকাঙ্ক্ষী হয়।
৪৯/১৭. অধ্যায়ঃ দাসদের মারধোর করা এবং আমার ক্রীতদাস ও আমার বাঁদী এরূপ বলা মাকরূহ।
আল্লাহ তাআলার বাণী : “এবং তোমাদের ক্রীতদাস বাঁদীদের মধ্যে যারা সৎ……” (আন-নূর ৩২)। তিনি আরো বলেন : “অপরের অধিকারভুক্ত এক ক্রীতদাসের ……” (নাহল (১৬) : ৭৫)। “তারা স্ত্রী লোকটির স্বামীকে দরজার কাছে পেল” – (ইউসুফ (১২) : ২৫)। আল্লাহ তাআলা আরো বলেন, “তোমাদের ঈমানদার বাঁদীদের ……” (আন-নিসা (৪) : ২৫)। নাবী (সাঃআঃ) বলেন, তোমরা তোমাদের নেতার জন্য দাঁড়িয়ে যাও। “এবং তোমার প্রভুর নিকট আমার কথা বলবে” – (ইউসুফ (১২) : ৪২)। অর্থাৎ তোমার মনিবের নিকট।
২৫৫০. আবদুল্লাহ ইবনু উমর (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ
নাবী (সাঃআঃ) বলেছেন, ক্রীতদাস যদি স্বীয় মনিবের হিতাকাঙ্ক্ষী হয় এবং আপন প্রতিপালকের উত্তম ইবাদত করে, তাহলে তার পুণ্য হইবে দ্বিগুণ।
২৫৫১. আবু মূসা (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ
নাবী (সাঃআঃ) বলেছেন, যে ক্রীতদাস আপন প্রতিপালকের উত্তমরূপে ইবাদত করে এবং আপন মনিবের যে হক আছে তা আদায় করে, তার কল্যাণ কামনা করে আর তার আনুগত্য করে, সে দ্বিগুণ পুণ্য অর্জন করিবে।
২৫৫২. আবু হুরাইরা (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ
নাবী (সাঃআঃ) বলেছেন, তোমাদের কেউ যেন এমন কথা না বলে “তোমার প্রভুকে আহার করাও” “তোমার প্রভুকে অযু করাও” “তোমার প্রভুকে পান করাও” আর যেন (দাস ও বাঁদীরা) এরূপ বলে, “আমার মনিব” “আমার অভিভাবক”, তোমাদের কেউ যেন এরূপ না বলে “আমার দাস, আমার দাসী”। বরং বলবে- আমার বালক আমার বালিকা আমার খাদিম।
২৫৫৩. ইবনু উমর (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, নাবী (সাঃআঃ) বলেছেন, কেউ কোন (শরীকী) ক্রীতদাস হইতে নিজের অংশ মুক্ত করে দিলে এবং তার কাছে সেই ক্রীতদাসের মূল্য পরিমাণ সম্পদ থাকলে তার ন্যায্যমূল্য নির্ধারণ করা হইবে এবং তার সম্পদ থেকেই সেই ক্রীতদাস সম্পূর্ণ মুক্ত হয়ে যাবে, অন্যথায় সে যতটুকু মুক্ত করেছে ততটুকুই মুক্ত হইবে।
২৫৫৪. আবদুল্লাহ [ইবনু উমর (রাদি.)] হইতে বর্ণিতঃ
নাবী (সাঃআঃ) বলেছেন, তোমরা প্রত্যেকেই দায়িত্বশীল। কাজেই প্রত্যেকেই নিজ অধীনস্থদের বিষয়ে জিজ্ঞাসার সম্মুখীন হইবে। যেমন- জনগণের শাসক তাদের দায়িত্বশীল, কাজেই সে তাদের বিষয়ে জিজ্ঞাসিত হইবে। একজন পুরুষ তার পরিবার পরিজনদের দায়িত্বশীল, কাজেই সে তাদের বিষয়ে জিজ্ঞাসিত হইবে। স্ত্রী স্বামীর ঘরের এবং তার সন্তানের দায়িত্বশীল, কাজেই সে তাদের বিষয়ে জিজ্ঞাসিত হইবে। আর ক্রীতদাস আপন মনিবের সম্পদের রক্ষণাবেক্ষণকারী। কাজেই সে বিষয়ে জিজ্ঞাসিত হইবে। শোন! তোমরা প্রত্যেকেই দায়িত্বশীল। কাজেই প্রত্যেকেই আপন অধীনস্থদের বিষয়ে জিজ্ঞাসিত হইবে।
২৫৫৫. আবু হুরাইরা (রাদি.) ও যায়দ ইবনু খালিদ (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ
নাবী (সাঃআঃ) বলেছেন, বাঁদী যিনায় লিপ্ত হলে তাকে চাবুক লাগাবে। আবার যিনা করলে আবারও চাবুক লাগাবে। তৃতীয়বার বা চতুর্থবার বলেছেন, একগাছি রশির বিনিময়ে হলেও তাকে বিক্রি করে ফেলবে।
২৫৫৬. Read previous Hadith. আবু হুরাইরা (রাদি.) ও যায়দ ইবনু খালিদ (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ
নাবী (সাঃআঃ) বলেছেন, বাঁদী যিনায় লিপ্ত হলে তাকে চাবুক লাগাবে। আবার যিনা করলে আবারও চাবুক লাগাবে। তৃতীয়বার বা চতুর্থবার বলেছেন, একগাছি রশির বিনিময়ে হলেও তাকে বিক্রি করে ফেলবে।
৪৯/১৮. অধ্যায়ঃ খাদিম যখন ভালভাবে খাবার পরিবেশন করে।
২৫৫৭. আবু হুরাইরা (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ
নাবী (সাঃআঃ) বলেছেন, তোমাদের কারো খাদিম খাবার নিয়ে হাযির হলে তাকেও নিজের সাথে বসানো উচিত। তাকে সাথে না বসালেও দু এক লোকমা কিংবা দু এক গ্রাস তাকে দেয়া উচিত। কেননা, সে এর জন্য পরিশ্রম করেছে।
৪৯/১৯. অধ্যায়ঃ ক্রীতদাস আপন মালিকের সম্পত্তির হিফাযাতকারী।
নাবী (সাঃআঃ) সম্পত্তিকে মালিকের সঙ্গে সম্পর্কিত করিয়াছেন।
২৫৫৮. আবদুল্লাহ ইবনু উমর (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ
রাসূলুল্লাহ (সাঃআঃ) বলেছেন, তোমাদের প্রত্যেকে দায়িত্বশীল এবং নিজ অধীনস্থদের বিষয়ে সে জিজ্ঞাসিত হইবে। ইমাম (শাসক) একজন দায়িত্বশীল। কাজেই আপন অধীনস্থদের বিষয়ে সে জিজ্ঞাসিত হইবে। একজন পুরুষ তার পরিবারের দায়িত্বশীল। কাজেই সে তার অধীনস্থদের বিষয়ে জিজ্ঞাসিত হইবে। স্ত্রী তার স্বামীর ঘরের দায়িত্বশীল। কাজেই সে তার অধীনস্থদের বিষয়ে জিজ্ঞাসিত হইবে, আর খাদিম তার মনিবের সম্পদের রক্ষণাবেক্ষণকারী। কাজেই সে তার দায়িত্বাধীন বিষয়ে জিজ্ঞাসিত হইবে। [আবদুল্লাহ ইবনু উমর (রা)] বলেন, আমি নাবী (সাঃআঃ) হইতে এদের সম্পর্কে (নিশ্চিতভাবেই) শুনিয়াছি। তবে আমার ধারণা; নাবী (সাঃআঃ) আরো বলেছেন, আর সন্তান তার পিতার সম্পদের রক্ষণাবেক্ষণকারী। কাজেই তার দায়িত্বাধীন বিষয়ে জিজ্ঞাসিত হইবে। মোটকথা তোমাদের প্রত্যেকে দায়িত্বশীল এবং প্রত্যেকেই তার অধীনস্থদের বিষয়ে জিজ্ঞাসিত হইবে।
৪৯/২০. অধ্যায়ঃ ক্রীতদাসের মুখমণ্ডলে মারবে না।
২৫৫৯. আবু হুরাইরা (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ
নাবী (সাঃআঃ) বলেছেন, তোমাদের মধ্যে কেউ যখন যুদ্ধ করিবে, তখন সে যেন মুখমণ্ডলে আঘাত করা হইতে বিরত থাকে।
Leave a Reply