ক্বদর বা ভাগ্য । মায়ের পেটে তার রিযক, আয়ু, কর্ম লেখা হয়
ক্বদর বা ভাগ্য । মায়ের পেটে তার রিযক, আয়ু, কর্ম লেখা হয় , এই পর্বের হাদীস =১০ টি (১৬৯৫-১৭০৪) >> আল লুলু ওয়াল মারজান এর মুল সুচিপত্র দেখুন
পর্ব-৪৬ঃ ক্বাদর বা ভাগ্য
৪৬/১. মানুষ তার মায়ের পেটে সৃষ্টির পদ্ধতি, তার রিযক, আয়ু, কর্ম এবং তার দুর্ভাগ্য ও সৌভাগ্য লেখা।
৪৬/২. আদাম ও মূসা [আ.]-এর মাঝে কথা কাটাকাটি।
৪৬/৫. যিনা বা এ জাতীয় অপকর্মের যে অংশ আদাম সন্তানের উপর নির্ধারিত আছে।
৪৬/৬. প্রত্যেক শিশু ইসলামের সত্য বিশ্বাস নিয়ে জন্মলাভ করে এবং কাফির ও মুসলিমদের শিশু মারা যাওয়ার হুকুম।
৪৬/১. মানুষ তার মায়ের পেটে সৃষ্টির পদ্ধতি, তার রিযক, আয়ু, কর্ম এবং তার দুর্ভাগ্য ও সৌভাগ্য লেখা।
১৬৯৫. যায়দ ইবনি ওয়াহ্ব [রাদি.] হইতে বর্ণিতঃ
আবদুল্লাহ [রাদি.] বলেন, সত্যবাদী হিসেবে গৃহীত আল্লাহর রসূল [সাঃআঃ] আমাদের নিকট হাদীস বর্ণনা করিতে গিয়ে বলেছেন, নিশ্চয় তোমাদের প্রত্যেকের সৃষ্টির উপাদান নিজ নিজ মায়ের পেটে চল্লিশ দিন পর্যন্ত বীর্যরূপে অবস্থান করে, অতঃপর তা জমাট বাঁধা রক্তে পরিণত হয়। ঐভাবে চল্লিশ দিন অবস্থান করে। অতঃপর তা মাংসপিণ্ডে পরিণত হয়ে [আগের মত চল্লিশ দিন] থাকে। অতঃপর আল্লাহ একজন ফেরেশতা প্রেরণ করেন। আর তাঁকে চারটি বিষয়ে আদেশ দেয়া হয়। তাঁকে লিপিবদ্ধ করিতে বলা হয়, তার আমল, তার রিযক, তার আয়ু এবং সে কি পাপী হইবে না নেককার হইবে। অতঃপর তার মধ্যে আত্মা ফুঁকে দেয়া হয়। কাজেই তোমাদের কোন ব্যক্তি আমল করিতে করিতে এমন পর্যায়ে পৌঁছে যে, তার এবং জান্নাতের মাঝে মাত্র একহাত পার্থক্য থাকে। এমন সময় তার আমলনামা তার উপর জয়ী হয়। তখন সে জাহান্নামবাসীর মত আমল করে। আর একজন আমল করিতে করিতে এমন স্তরে পৌঁছে যে, তার এবং জাহান্নামের মাঝে মাত্র একহাত তফাৎ থাকে, এমন সময় তার আমলনামা তার উপর জয়ী হয়। ফলে সে জান্নাতবাসীর মত আমল করে।
[বোখারী পর্ব ৫৯ অধ্যায় ৬ হাদীস নং ৩২০৮; মুসলিম ৪৬ অধ্যায় ১ হাঃ ৩৬৪৩] ক্বদর -এই হাদীসটির তাহক্কিকঃ সহীহ হাদীস
১৬৯৬. আনাস ইবনি মালিক [রাদি.] হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেনঃ নাবী [সাঃআঃ] বলেনঃ আল্লাহ তাআলা মাতৃগর্ভের জন্যে একজন ফেরেশতা নির্ধারণ করিয়াছেন। তিনি [পর্যায়ক্রমে] বলিতে থাকেন, হে রব! এখন বীর্য-আকৃতিতে আছে। হে রব! এখন জমাট রক্তে পরিণত হয়েছে। হে রব! এখন মাংসপিণ্ডে পরিণত হয়েছে। অতঃপর আল্লাহ তাআলা যখন তার সৃষ্টি পূর্ণ করিতে চান, তখন জিজ্ঞেস করেনঃ পুরুষ, না স্ত্রী? সৌভাগ্যবান, না দুর্ভাগা? রিযক ও বয়স কত? আল্লাহর রসূল বলেছেনঃ তার মাতৃগর্ভে থাকতেই তা লিখে দেয়া হয়।
[বোখারী পর্ব ৬ অধ্যায় ১৭ হাদীস নং ৩১৮; মুসলিম ৪৬ অধ্যায় ১, হাঃ ২৬৪৬] ক্বদর -এই হাদীসটির তাহক্কিকঃ সহীহ হাদীস
১৬৯৭. আলী [রাদি.] হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, আমরা বাকীউল গারক্বাদ [ক্ববরস্থানে] এক জানাযায় উপস্থিত ছিলাম। নাবী [সাঃআঃ] আমাদের নিকট আগমন করিলেন। তিনি উপবেশন করলে আমরাও তাহাঁর চারদিকে বসে পড়লাম। তাহাঁর হাতে একটি ছড়ি ছিল। তিনি নীচের দিকে তাকিয়ে তাহাঁর ছড়িটি দ্বারা মাটি খুঁড়তে লাগলেন। অতঃপর বললেনঃ তোমাদের মধ্যে এমন কেউ নেই, অথবা বললেনঃ এমন কোন সৃষ্ট প্রাণী নেই, যার জন্য জান্নাত ও জাহান্নামে জায়গা নির্ধারিত করে দেয়া হয়নি আর এ কথা লিখে দেয়া হয়নি যে, সে দুর্ভাগা হইবে কিংবা ভাগ্যবান। তখন এক ব্যক্তি আরয করিল, হে আল্লাহ্র রসূল ! তা হলে কি আমরা আমাদের ভাগ্যলিপির উপর ভরসা করে আমল করা ছেড়ে দিব না? কেননা, আমাদের মধ্যে যারা ভাগ্যবান তারা অচিরেই ভাগ্যবানদের আমলের দিকে ধাবিত হইবে। আর যারা দুর্ভাগা তারা অচিরেই দুর্ভাগাদের আমলের দিকে ধাবিত হইবে। তিনি বললেনঃ যারা ভাগ্যবান, তাহাদের জন্য সৌভাগ্যের আমল সহজ করে দেয়া হয় আর ভাগ্যাহতদের জন্য দুর্ভাগ্যের আমল সহজ করে দেয়া হয়। অতঃপর তিনি এ আয়াত তিলাওয়াত করলেনঃ arbi
“কাজেই যে দান করে এবং তাক্ওয়া অবলম্বন করে” [সূরাহ লাইল ৯২/৫]
[বোখারী পর্ব ২৩ অধ্যায় ৮২ হাদীস নং ১৩৬২; মুসলিম ৪৬ অধ্যায় ১, হাঃ ২৬৪৭] ক্বদর -এই হাদীসটির তাহক্কিকঃ সহীহ হাদীস
১৬৯৮. ইমরান ইবনি হুসায়ন [রাদি.] হইতে বর্ণিতঃ
এক ব্যক্তি বলিল, হে আল্লাহ্র রসূল ! জাহান্নামীদের থেকে জান্নাতীদেরকে চেনা যাবে? তিনি বললেনঃ হ্যাঁ। সে বলিল, তাহলে আমালকারীরা আমাল করিবে কেন? তিনি বললেনঃ প্রত্যেক ব্যক্তি ঐ আমালই করে যার জন্য তাকে সৃষ্টি করা হয়েছে। অথবা যা তার জন্য সহজ করা হয়েছে।
[বোখারী পর্ব ৮২ অধ্যায় ২ হাদীস নং ৬৫৯৬; মুসলিম ৪৬ অধ্যায় ১, হাঃ ২৬৪৯] ক্বদর -এই হাদীসটির তাহক্কিকঃ সহীহ হাদীস
১৬৯৯. সাহ্ল ইবনি সাদ সাঈদী [রাদি.] হইতে বর্ণিতঃ
আল্লাহর রসূল [সাঃআঃ] বলেছেন, মানুষের বাহ্যিক বিচারে অনেক সময় কোন ব্যক্তি জান্নাতবাসীর মত আমল করিতে থাকে, আসলে সে জাহান্নামী হয় এবং তেমনি মানুষের বাহ্যিক বিচারে কোন ব্যক্তি জাহান্নামীর মত আমল করলেও প্রকৃতপক্ষে সে জান্নাতী হয়।
[বোখারী পর্ব ৫৬ অধ্যায় ৭৭ হাদীস নং ২৮৯৮; মুসলিম ৪৬ অধ্যায় ১, হাঃ ১১২] ক্বদর -এই হাদীসটির তাহক্কিকঃ সহীহ হাদীস
৪৬/২. আদাম ও মূসা [আ.]-এর মাঝে কথা কাটাকাটি।
১৭০০. আবু হুরাইরাহ [রাদি.] হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, আদাম ও মূসা [আ.] [পরস্পরে] কথা কাটাকাটি করেন। মূসা [আ.] বলেন, হে আদাম, আপনি তো আমাদের পিতা। আপনি আমাদেরকে বঞ্চিত করিয়াছেন এবং আমাদেরকে জান্নাত থেকে বের করিয়াছেন। আদাম [আ.] মূসা [আ.] কে বলিলেন, হে মূসা! আপনাকে তো আল্লাহ্ তাআলা স্বীয় কালামের মাধ্যমে সম্মানিত করিয়াছেন এবং আপনার জন্য স্বীয় হাত দ্বারা লিখেছেন। অতএব আপনি কি আমাকে এমন একটি ব্যাপার নিয়ে তিরস্কার করছেন যা আমার সৃষ্টির চল্লিশ বছর পূর্বেই আল্লাহ্ নির্ধারণ করে রেখেছেন। তখন আদাম [আ.] মূসা [আ.]-এর উপর এই বিতর্কে জয়ী হলেন। উক্ত কথাটি রসূলুল্লাহ্ [সাঃআঃ] তিনবার বলেছেন।
[বোখারী পর্ব ৮২ অধ্যায় ১১ হাদীস নং ৬৬১৪; মুসলিম ৪৬ অধ্যায় ২, হাঃ ২৬৫২] ক্বদর -এই হাদীসটির তাহক্কিকঃ সহীহ হাদীস
৪৬/৫. যিনা বা এ জাতীয় অপকর্মের যে অংশ আদাম সন্তানের উপর নির্ধারিত আছে।
১৭০. আবু হুইরারাহ [রাদি.] হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, নাবী [সাঃআঃ] বলেছেনঃ নিশ্চয়ই আল্লাহ তাআলা বানী আদামের জন্য যিনার একটা অংশ নির্ধারিত রেখেছেন। সে তাতে অবশ্যই জড়িত হইবে। চোখের যিনা হলো তাকানো, জিহ্বার যিনা হলো কথা বলা, কুপ্রবৃত্তি কামনা ও খাহেশ সৃষ্টি করে এবং যৌনাঙ্গ তা সত্য মিথ্যা প্রমাণ করে।
[বোখারী পর্ব ৭৯ অধ্যায় ১২ হাদীস নং ৬২৪৩; মুসলিম ৪৬ অধ্যায় ৫, হাঃ ২৬৫৭]ক্বদর -এই হাদীসটির তাহক্কিকঃ সহীহ হাদীস
৪৬/৬. প্রত্যেক শিশু ইসলামের সত্য বিশ্বাস নিয়ে জন্মলাভ করে এবং কাফির ও মুসলিমদের শিশু মারা যাওয়ার হুকুম।
১৭০২. আবু হুরাইরাহ্ [রাদি.] হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, আল্লাহর রসূল [সাঃআঃ] ইরশাদ করেছেনঃ প্রত্যেক নবজাতকই ফিতরাতের উপর জন্মলাভ করে। অতঃপর তার পিতামাতা তাকে ইয়াহূদী, নাসারা বা মাজূসী [অগ্নিপূজারী] রূপে গড়ে তোলে। যেমন, চতুষ্পদ পশু একটি পূর্ণাঙ্গ বাচ্চা জন্ম দেয়। তোমরা কি তাকে কোন [জন্মগত] কানকাটা দেখিতে পাও? অতঃপর আবু হুরাইরাহ্ [রাদি.] তিলাওয়াত করলেনঃ
فِطْرَةَ اللهِ الَّتِي فَطَرَ النَّاسَ عَلَيْهَا لاَ تَبْدِيلَ لِخَلْقِ اللهِ، ذَلِكَ الدِّينُ الْقَيِّمُ
[যার অর্থ] “আল্লাহ্র দেয়া ফিতরাতের অনুসরণ কর, যে ফিতরাতের উপর তিনি মানুষ সৃষ্টি করিয়াছেন, এটাই সরল সুদৃঢ় দীন” [সূরাহ আর রূম ৩০/৩০]।
[বোখারী পর্ব ২৩ অধ্যায় ৭৯ হাদীস নং ১৩৫৯; মুসলিম ৪৬ অধ্যায় ৬, হাঃ ২৬৫৮] ক্বদর -এই হাদীসটির তাহক্কিকঃ সহীহ হাদীস
১৭০৩. আবু হুরাইরাহ [রাদি.] হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, আল্লাহর রসূল [সাঃআঃ]-কে মুশরিকদের নাবালক সন্তানদের সম্পর্কে জিজ্ঞেস করা হলে তিনি বলেনঃ আল্লাহ্ তাহাদের ভবিষ্যৎ আমাল সম্পর্কে সম্যক জ্ঞাত।
[বোখারী পর্ব ২৩ অধ্যায় ৯২ হাদীস নং ১৩৮৪; মুসলিম ৪৬ অধ্যায় ৬, হাঃ ২৬৬০] ক্বদর -এই হাদীসটির তাহক্কিকঃ সহীহ হাদীস
১৭০৪. ইবনি আব্বাস [রাদি.] হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, আল্লাহর রসূল [সাঃআঃ]-কে মুশরিকদের শিশু সন্তানদের সম্পর্কে জিজ্ঞেস করা হলে তিনি বলেন, আল্লাহ্ তাহাদের সৃষ্টি লগ্নেই তাহাদের ভবিষ্যৎ আমল সম্পর্কে সম্যক জ্ঞাত।
[বোখারী পর্ব ২৩ অধ্যায় ৯২ হাদীস নং ১৩৮৩; মুসলিম ৪৬ অধ্যায় ৬, হাঃ ২৬৬০] ক্বদর -এই হাদীসটির তাহক্কিকঃ সহীহ হাদীস
Leave a Reply