কোরবানি । কুরবানীর সময় ফারাআ ও আতিরার বর্ণনা

কোরবানি । কুরবানীর সময় ফারাআ ও আতিরার বর্ণনা

কোরবানি । কুরবানীর সময় ফারাআ ও আতিরার বর্ণনা , এই পর্বের হাদীস =১২ টি (১২৮০-১২৯১) >> আল লুলু ওয়াল মারজান এর মুল সুচিপত্র দেখুন

পর্ব-৩৫ঃ কুরবানী

৩৫/১. কুরবানীর সময়
৩৫/৪. রক্ত প্রবাহিত করে এমন বস্তু দিয়ে যব্‌হ করা জায়িয তবে দাঁত, নখ ও হাড় ব্যতীত।
৩৫/৫. ইসলামের প্রথম যুগে কুরবানীর গোশ্‌ত তিনদিনের অতিরিক্ত খাওয়া নিষিদ্ধ ছিল ও সে বিধান রহিত হয়ে যাওয়া এবং তা বৈধ হয়ে যাওয়া যে চায় তার জন্য।
৩৫/৬. ফারাআ ও আতিরার বর্ণনা।

৩৫/১. কুরবানীর সময়

১২৮০. জুন্‌দাব ইবনি আবদুল্লাহ্ [রাদি.] হইতে বর্ণিতঃ

নাবী [সাঃআঃ] কুরবানীর দিন সলাত আদায় করেন, অতঃপর খুত্‌বা দেন। অতঃপর যবেহ্ করেন এবং তিনি বলেনঃ সলাতের পূর্বে যে ব্যক্তি যবেহ্ করিবে তাকে তার স্থলে আর একটি যবেহ্ করিতে হইবে এবং যে যবেহ্ করেনি, আল্লাহ্‌র নামে তার যবেহ্ করা উচিত।

[বোখারী পর্ব ১৩ অধ্যায় ২৩ হাদীস নং ৯৮৫; মুসলিম ৩৫/১, হাঃ ১৯৬০] রবানি -এই হাদীসটির তাহক্কিকঃ সহীহ হাদীস

১২৮১. বারাআ [রাদি.] হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, আবু বুরদাহ [রাদি.] নামক আমার এক মামা সলাত আদায়ের পূর্বেই কুরবানী করেছিলেন। তখন রাসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] তাঁকে বললেনঃ তোমার বকরী কেবল গোশ্‌তের বকরী হল। তিনি বললেনঃ হে আল্লাহ্‌র রসূল  [সাঃআঃ]! আমার নিকট একটি ঘরে পোষা বকরীর বাচ্চা রয়েছে। নাবী [সাঃআঃ] বললেনঃ সেটাকে কুরবানী করে নাও। তবে তা তুমি ব্যতীত অন্য কারোর জন্য ঠিক হইবে না। এরপর তিনি বললেনঃ যে ব্যক্তি সলাত আদায়ের পূর্বে যবহ্ করেছে, সে নিজের জন্যই যবহ্ করেছে [কুরবানীর জন্য নয়] আর যে ব্যক্তি সলাত আদায়ের পর যবহ্ করেছে, সে তার কুরবানী পূর্ণ করেছে। আর সে মুসলিমদের নীতি-পদ্ধতি অনুসারেই করেছে।

[বোখারী পর্ব ৭৩ অধ্যায় ৮ হাদীস নং ৫৫৫৬; মুসলিম ৩৫/১, হাঃ ১৯৬১] কোরবানি -এই হাদীসটির তাহক্কিকঃ সহীহ হাদীস

১২৮২. আনাস ইবনি মালিক [রাদি.] হইতে বর্ণিতঃ

নাবী [সাঃআঃ] বলেছেনঃ সলাতের পূর্বে যে যবেহ্ করিবে তাকে পুনরায় যবেহ [কুরবানী] করিতে হইবে। তখন এক ব্যক্তি দাঁড়িয়ে বলিল, আজকের এ দিনটিতে গোশত খাবার আকাঙ্ক্ষা করা হয়। সে তার প্রতিবেশীদের অবস্থা উল্লেখ করিল। তখন নাবী [সাঃআঃ] যেন তার কথার সত্যতা স্বীকার করিলেন। সে বলিল, আমার নিকট এখন ছয় মাসের এমন একটি মেষ শাবক আছে, যা আমার নিকট দুটি হৃষ্টপুষ্ট বকরীর চেয়েও অধিক পছন্দনীয়। নাবী [সাঃআঃ] তাকে সেটা কুরবানী করার অনুমতি দিলেন। অবশ্য আমি জানি না, এ অনুমতি তাকে ছাড়া অন্যদের জন্যও কি-না?

[বোখারী পর্ব ১৩ অধ্যায় ৫ হাদীস নং ৯৫৪; মুসলিম ৩৫/১, হাঃ ১৯৬২] কোরবানি -এই হাদীসটির তাহক্কিকঃ সহীহ হাদীস

১২৮৩. উকবাহ ইবনি আমির [রাদি.] হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন যে, নাবী [সাঃআঃ] তাঁকে কিছু বকরী [ভেড়া] সাহাবীদের মধ্যে বণ্টন করিতে দিলেন। বণ্টন করার পর একটি বকরীর বাচ্চা বাকী থেকে যায়। তিনি তা নাবী [সাঃআঃ]-কে অবহিত করেন। তখন তিনি বলিলেন, তুমি নিজে এটাকে কুরবানী করে দাও।

[বোখারী পর্ব ৪০ অধ্যায় ১ হাদীস নং ২৩০০; মুসলিম ৩৫/২, হাঃ ১৯৬৫] কোরবানি -এই হাদীসটির তাহক্কিকঃ সহীহ হাদীস ৩৫/৩. কুরবানীর জন্তু কারো মাধ্যম ছাড়া নিজ হাতে যব্‌হ করা মুস্তাহাব এবং যব্‌হ করার সময় বিসমিল্লাহ বলা ও আল্লাহু আকবার বলা।

১২৮৪. আনাস [রাদি.] হইতে বর্ণিতঃ

নাবী [সাঃআঃ] দুটি সাদা-কালো বর্ণের শিং বিশিষ্ট ভেড়া কুরবানী করেন। তিনি ভেড়া দুটির পার্শ্বদেশ তাহাঁর পায়ে স্থাপন করে বিসমিল্লাহি আল্লাহু আকবার বলে নিজ হাতেই সেই দুটিকে যবহ্ করেন।

[বোখারী পর্ব ৮৩ অধ্যায় ১৪ হাদীস নং ৫৫৬৫; মুসলিম ৩৫/৩, হাঃ ১৯৬৬] কোরবানি -এই হাদীসটির তাহক্কিকঃ সহীহ হাদীস

৩৫/৪. রক্ত প্রবাহিত করে এমন বস্তু দিয়ে যব্‌হ করা জায়িয তবে দাঁত, নখ ও হাড় ব্যতীত।

১২৮৫. রাফি ইবনি খাদীজ [রাদি.] হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, আমি বললামঃ হে আল্লাহ্‌র রসূল  [সাঃআঃ]! আমরা আগামী দিন শত্রুর সম্মুখীন হব, অথচ আমাদের কাছে কোন ছুরি নেই। নাবী [সাঃআঃ] বললেনঃ তুমি ত্বরানিত করিবে কিংবা তিনি বলেছেনঃ তাড়াতাড়ি [যবহ্] করিবে। যা রক্ত প্রবাহিত করে এবং এতে আল্লাহ্‌র নাম নেয়া হয়, তা খাও। তবে দাঁত ও নখ দ্বারা নয়। তোমাকে বলছিঃ দাঁত হল হাড় আর নখ হল হাবশীদের ছুরি। আমরা কিছু উট ও বকরী গনীমত হিসাবে পেলাম। সেগুলো থেকে একটি উট পালিয়ে যায়। একজন সেটির উপর তীর নিক্ষেপ করলে আল্লাহ উটটি আটকিয়ে দেন। তখন রাসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] বললেনঃ এ সকল গৃহপালিত উটের মধ্য বন্যপশুর স্বভাব রয়েছে। কাজেই তন্মধ্যে কোনটি যদি তোমাদের নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যায়, তা হলে তার সঙ্গে অনুরূপ ব্যবহার করিবে।

[বোখারী পর্ব ৭২ অধ্যায় ২৩ হাদীস নং ৫৫০৯; মুসলিম ৩৫/৪, হাঃ ১৯৬৮] কোরবানি -এই হাদীসটির তাহক্কিকঃ সহীহ হাদীস

১২৮৬. রাফি ইবনি খাদীজ [রাদি.] হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, আমরা নাবী [সাঃআঃ] -এর সঙ্গে যুল-হুলায়ফাতে ছিলাম। সাহাবীগণ ক্ষুধার্ত হয়ে পড়েন, তারা কিছু উট ও বকরী পেলেন। রাফি [রাদি.] বলেন, নাবী [সাঃআঃ] দলের পিছনে ছিলেন। তারা তাড়াহুড়া করে গনীমতের মাল বণ্টনের পূর্বে সেগুলোকে যবহ করে পাত্রে চড়িয়ে দিলেন। তারপর নাবী [সাঃআঃ] -এর নির্দেশে পাত্র উলটিয়ে ফেলা হল। তারপর তিনি [গনীমতের মাল] বণ্টন শুরু করিলেন। তিনি একটি উটের সমান দশটি বকরী নির্ধারণ করেন। হঠাৎ একটি উট পালিয়ে গেল। সাহাবীগণ উটকে ধরার জন্য ছুটলেন, কিন্তু উটটি তাঁদেরকে ক্লান্ত করে ছাড়ল। সে সময় তাঁদের নিকট অল্প সংখ্যক ঘোড়া ছিল। অবশেষে তাঁদের মধ্যে একজন সেটির প্রতি তীর ছুঁড়লেন। তখন আল্লাহ উটটিকে থামিয়ে দিলেন। তারপর নাবী [সাঃআঃ] বলিলেন, নিশ্চয়ই পলায়নপর বন্য জন্তুদের মতো এ সকল চতুষ্পদ জন্তুর মধ্যে কতক পলায়নপর হয়ে থাকে। কাজেই যদি এসব জন্তুর কোনটা তোমাদের উপর প্রবল হয়ে উঠে তবে তার সাথে এরূপ করিবে। [রাবী বলেন], তখন আমার দাদা {রাফি[রাদি.]} বলিলেন, আমরা আশঙ্কা করছি যে, কাল শত্রুর সাথে মুকাবিলা হইবে। আর আমাদের নিকট কোন ছুরি নেই। তাই আমরা ধারালো বাঁশ দিয়ে যবেহ করিতে পারব কি? নাবী [সাঃআঃ] বলিলেন, যে বস্তু রক্ত প্রবাহিত করে এবং যার উপর আল্লাহর নাম নেয়া হয়, সেটা তোমরা আহার করিতে পার। কিন্তু দাঁত বা নখ দিয়ে যেন যবেহ না করা হয়। আমি তোমাদেরকে এর কারণ বলে দিচ্ছি। দাঁত তো হাড় আর নখ হলো হাবশীদের ছুরি।

[বোখারী পর্ব ৪৭ অধ্যায় ৩ হাদীস নং ২৪৮৮; মুসলিম ৩৫/৪, হাঃ ১৯৬৮] কোরবানি -এই হাদীসটির তাহক্কিকঃ সহীহ হাদীস

৩৫/৫. ইসলামের প্রথম যুগে কুরবানীর গোশ্‌ত তিনদিনের অতিরিক্ত খাওয়া নিষিদ্ধ ছিল ও সে বিধান রহিত হয়ে যাওয়া এবং তা বৈধ হয়ে যাওয়া যে চায় তার জন্য।

১২৮৭. আব্দল্লাহ ইবনি উমার [রাদি.] হইতে বর্ণিতঃ

রাসূলুল্লাহ [সাল্লাল্লাহু আলাইহিওয়া সাল্লাম] বলেছেনঃ কুরবানীর গোশ্‌ত তোমরা তিন দিন পর্যন্ত খাও। আবদুল্লাহ [রাদি.] মিনা থেকে প্রত্যাবর্তনকালে কুরবানীর গোশ্‌ত থেকে বিরত থাকার কারণে যায়তুন খাদ্য গ্রহণ করিতেন।

[বোখারী পর্ব ৭৩ অধ্যায় ১৬ হাদীস নং ৫৫৭৪; মুসলিম ৩৫/৫, হাঃ ১৯৭০] কোরবানি -এই হাদীসটির তাহক্কিকঃ সহীহ হাদীস

১২৮৮. আয়েশা [রাদি.] হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, মাদীনায় অবস্থানের সময় আমরা কুরবানীর গোশ্‌তের মধ্যে লবণ মিশ্রিত করে রেখে দিতাম। এরপর তা নাবী [সাঃআঃ]-এর সামনে পেশ করতাম। তিনি বলিতেনঃ তোমরা তিন দিনের পর খাবে না। তবে এটি জরুরী নয়। বরং তিনি চেয়েছেন যে, তা থেকে যেন অন্যদের খাওয়ানো হয়। আল্লাহ অধিক অবগত।

[বোখারী পর্ব ৭৩ অধ্যায় ১৬ হাদীস নং ৫৫৭০; মুসলিম ৩৫/৫, হাঃ ১৯৭১] কোরবানি -এই হাদীসটির তাহক্কিকঃ সহীহ হাদীস

১২৮৯. জাবির ইবনি আবদুল্লাহ [রাদি.] হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, আমরা আমাদের কুরবানীর গোশ্‌ত মিনার তিন দিনের বেশি খেতাম না। এরপর নাবী [সাঃআঃ] আমাদের অনুমতি দিলেন এবং বললেনঃ খাও এবং সঞ্চয় করে রাখ। তাই আমরা খেলাম এবং সঞ্চয়ও করলাম।

[বোখারী পর্ব ২৫ অধ্যায় ১২৪ হাদীস নং ১৭১৯; মুসলিম ৩৫/৫, হাঃ ১৯৭২] কোরবানি -এই হাদীসটির তাহক্কিকঃ সহীহ হাদীস

১২৯০. সালামাহ ইবনিল আকওয়া [রাদি.] হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, নাবী [সাঃআঃ] বলেছেনঃ তোমাদের মধ্যে যে ব্যক্তি কুরবানী করেছে, সে যেন তৃতীয় দিবসে এমতাবস্থায় সকাল অতিবাহিত না করে যে, তার ঘরে কুরবানীর গোশ্‌ত কিছু পরিমাণ অবশিষ্ট থাকে। এরপর যখন পরবর্তী বছর আসল, তখন সাহাবীগণ বললেনঃ হে আল্লাহ্‌র রসূল  [সাঃআঃ]! আমরা কি সে রূপ করব, যে রূপ গত বছর করেছিলাম? তখন তিনি বললেনঃ তোমরা নিজেরা খাও, অন্যকে খাওয়াও এবং সঞ্চয় করে রাখ, কেননা গত বছর তো মানুষের মধ্যে ছিল অভাব অনটন। তাই আমি চেয়েছিলাম যে, তোমরা তাতে সাহায্য কর।

[বোখারী পর্ব ৭৩ অধ্যায় ১৬ হাদীস নং ৫৫৬৯; মুসলিম ৩৫/৫, হাঃ ১৯৭৪] কোরবানি -এই হাদীসটির তাহক্কিকঃ সহীহ হাদীস

৩৫/৬. ফারাআ ও আতিরার বর্ণনা।

১২৯১. আবু হুরাইরাহ [রাদি.] হইতে বর্ণিতঃ

নাবী [সাঃআঃ] বলেছেন, [ইসলামে] ফারা বা আতীরাহ্ নেই। ফারা হল উটের সে প্রথম বাচ্চা, যা তারা তাহাদের দেব-দেবীর নামে যবহ করত।

[বোখারী পর্ব ৭১ অধ্যায় ৩ হাদীস নং ৫৪৭৩; মুসলিম ৩৫/৬, হাঃ ১৯৭৬] কোরবানি -এই হাদীসটির তাহক্কিকঃ সহীহ হাদীস


by

Comments

One response to “কোরবানি । কুরবানীর সময় ফারাআ ও আতিরার বর্ণনা”

Leave a Reply