কোরআন শরীফ এর ফযিলত । বিভিন্ন সুরার ফজিলতের বর্ণনা
কোরআন শরীফ এর ফযিলত । বিভিন্ন সুরার ফজিলতের বর্ণনা , এই অধ্যায়ে মোট ৫২ টি হাদীস (২৮৭৫-২৯২৬) >> সুনান তিরমিজি শরীফ এর মুল সুচিপত্র দেখুন
অধ্যায়-৪২ঃ কুরআনের ফযিলত, অনুচ্ছেদঃ (১-২৫)=২৫টি
অনুচ্ছেদ-১ সূরা আল-ফাতিহার ফযিলত
অনুচ্ছেদ-২: সূরা আল-বাক্বারাহ ও আয়াতুল কুরসীর ফযিলত
অনুচ্ছেদ-৩: [আয়াতুল কুরসীর ফযিলত]
অনুচ্ছেদ-৪: সূরা আল-বাক্বারার শেষ আয়াতের ফযিলত
অনুচ্ছেদ-৫: সূরা আল-ইমরানের ফযিলত
অনুচ্ছেদ-৬: সূরা আল-কাহ্ফের ফযিলত
অনুচ্ছেদ-৭: সূরা ইয়াসীনের ফযীলাত
অনুচ্ছেদ-৮: সূরা হা-মীম আদ-দুখানের ফাযীলাত
অনুচ্ছেদ-৯: সূরা আল-মুল্কের ফযিলত
অনুচ্ছেদ-১০: সূরা আয-যিলযালের ফযিলত
অনুচ্ছেদ-১১: সূরা আল-ইখলাসের ফযিলত
অনুচ্ছেদ-১২: মুআব্বিযাতাইনের [সূরা আল-ফালাক্ব ও সূরা আন-নাস] ফযিলত
অনুচ্ছেদ-১৩: কুরআন তিলাওয়াতকারীর মর্যাদা
অনুচ্ছেদ-১৪: কুরআন মাজীদের মযার্দা প্রসঙ্গে
অনুচ্ছেদ-১৫: কুরআন শিক্ষার ফযিলত
অনুচ্ছেদ-১৬: কুরআনের একটি অক্ষরও পাঠকারী ব্যক্তির সাওয়াব প্রসঙ্গে
অনুচ্ছেদ-১৭: [কুরআন পাঠের মাধ্যমে আল্লাহ্ তাআলার অধিকতর নৈকট্য অর্জন করা যায়]
অনুচ্ছেদ-১৮: [কুরআন পাঠকারীর অবস্থান]
অনুচ্ছেদ-১৯: [কুরআন ভুলে যাওয়ার গুনাহ ভয়াবহ]
অনুচ্ছেদ-২০: [কুরআনকে ভিক্ষার উপায় বানানো নিষেধ]
অনুচ্ছেদ-২১: [রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ] ঘুমানোর পূর্বে যেসব সূরা পাঠ করিতেন]
অনুচ্ছেদ-২২: [সূরা আল-হাশরের শেষ তিন আয়াতের ফাযীলাত]
অনুচ্ছেদ-২৩: রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ]-এর ক্বিরাআত কিরূপ ছিল
অনুচ্ছেদ-২৪: [হাজীদের নিকটে নাবী [সাঃআঃ] নিজেকে পেশ করিতেন]
অনুচ্ছেদ-২৫: [আল্লাহ্ তাআলার কালামের মর্যাদা]
অনুচ্ছেদ-১ সূরা আল-ফাতিহার ফযিলত
২৮৭৫. আবু হুরাইরাহ্ [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ] উবাই ইবনি কাব [রাদি.]-এর নিকট গেলেন এবং তাকে ডাকলেনঃ হে উবাই! উবাই [রাদি.] তখন নামাজরত ছিলেন। তিনি তাহাঁর প্রতি দৃষ্টিপাত করিলেন কিন্তু জবাব দিলেন না। তবে তিনি সংক্ষেপে নামাজ শেষ করে রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ]-এর নিকট গেলেন এবং বললেনঃ
السَّلاَمُ عَلَيْكَ يَا رَسُولَ اللَّهِ
আসসালামু আলাইকা ইয়া রসুলুল্লাহ! রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ] বললেনঃ
وَعَلَيْكَ السَّلاَمُ
ওয়া আলাইকাস সালাম। হে উবাই! আমি তোমাকে ডাকলে কিসে তোমাকে জবাব দিতে বাধা দিল? তিনি বলিলেন, হে আল্লাহর রাসূল! আমি তো নামাজরত ছিলাম। তিনি বললেনঃ আমার নিকট আল্লাহ তাআলা যে ওয়াহী প্রেরণ করিয়াছেন, তার মধ্যে তুমি কি এ হুকুম পাওনি “রাসূল যখন তোমাদের এমন কিছুর দিকে ডাকে যা তোমাদেরকে প্রাণবন্ত করে, তখন আল্লাহ তাআলা ও রাসূলের ডাকে সাড়া দিবে” — [সূরা আল-আনফাল ২৪]? তিনি বলিলেন, হ্যাঁ। আর কখনো এরূপ করব না ইন্শাআল্লাহ। তিনি বললেনঃ তুমি কি চাও যে, আমি এমন একটি সূরা তোমাকে শিখিয়ে দেই যার মত কোন সূরা তাওরাত, ইনজীল, যাবুর এমনকি কুরআনেও অবতীর্ণ হয়নি? তিনি বলিলেন, হ্যাঁ ইয়া রসুলুল্লাহ! রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ] প্রশ্ন করলেনঃ তুমি নামাযে কি পাঠ কর? বর্ণনাকারী বলেনঃ তিনি [উবাই] উন্মুল কুরআন [ফাতিহা] পাঠ করিলেন। রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ] বললেনঃ যাঁর হাতে আমার প্রাণ, সেই সত্তার শপথ! এ সূরার মত [মর্যাদা সম্পন্ন] কোন সূরা তাওরাত, ইনজীল, যাবূর, এমনকি কুরআনেও অবতীর্ণ করা হয়নি। আর এটি বারবার পঠিত সাতটি আয়াত সম্বলিত সূরা এবং মহাসম্মানিত কুরআন যা আমাকে দেয়া হয়েছে।
সহীহঃ সহীহ আবু দাঊদ [১৩১০], মিশকাত তাহ্ক্বীক্ব সানী [২১৪২], তালীকুর রাগীব [২/২১৬]। আবু ঈসা বলেন, এ হাদীসটি হাসান সহীহ। আনাস ইবনি মালিক [রাদি.] হইতেও এ অনুচ্ছেদে হাদীস বর্ণিত আছে। আর তাতে উবাই ইবনি কাব-এর স্থলে সাঈদ ইবনি মুআল্লার নাম উল্লেখ আছে। কোরআন শরীফ এর ফযিলত – এই হাদীসটির তাহকিকঃ সহীহ হাদীস
অনুচ্ছেদ-২: সূরা আল-বাক্বারাহ ও আয়াতুল কুরসীর ফযিলত
২৮৭৬. আবু হুরাইরা [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
তিনি বলেনঃ একবার রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ] [এক অভিযানে] একটি ক্ষুদ্র বাহিনী পাঠান। তারা সংখ্যায় খুব অধিক ছিল না। তিনি তাহাদেরকে কুরআন তিলাওয়াত করিতে বলেন। সুতরাং প্রত্যেকেই যার যা মুখস্ত ছিল তা তিলাওয়াত করে শুনায়। অবশেষে তিনি এদের মধ্যে সবচাইতে কম বয়সী এক ব্যক্তির নিকটে আসলেন। তিনি তাকে প্রশ্ন করলেনঃ হে আদমি! তোমার নিকটে কি আছে? সে বলিল, আমার এই সূরা ও সূরা আল-বাকারা মুখস্ত আছে। তিনি আবার প্রশ্ন করেনঃ তোমার সূরা আল-বাকারা মুখস্ত আছে? সে বলিল হ্যাঁ। তিনি বললেনঃ যাও তুমিই এ বাহিনীর দলপতি। দলের একজন নেতৃস্থানীয় ব্যক্তি বলিল, ইয়া রাসূলাল্লাহ [সাঃআঃ], আল্লাহ্র শপথ! আমি সূরা আল-বাকারা এই ভয়ে হেফয করিনি যে, আমি এটা নিয়ে [রাতের নামাযে] দাঁড়াতে পারব না। রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ] বললেনঃ তোমরা কুরআন শিক্ষা কর এবং তা তিলাওয়াত কর। কেননা যে ব্যক্তি কুরআন পাঠ করিতে শিখে, তা পাঠ করে এবং এটা নিয়ে নামাযে দাঁড়ায় তার জন্য কুরআনের নমুনা হল কস্তুরী ভর্তি চামড়ার থলের মত যার খুশবু সবখানে ছড়িয়ে পড়ছে। আর যে ব্যক্তি তা শিখে ঘুমিয়ে আছে তার উদাহরন হল মুখবন্ধ কস্তুরীর থলের মত।
যঈফ, ইবনি মাজাহ হাদীস নং-[২১৭] আবু ঈসা বলেনঃ এ হাদীসটি হাসান। লাইস ইবনি সাদ-সাঈদ আল-মাকবুরী হইতে তিনি আবু আহমাদের মুক্তদাস আতা [রাদি.] হইতে রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ] সূত্রে মুরসাল হিসেবেও উপরোক্ত হাদীসের মতই বর্ণিত আছে। এই সূত্রে আবু হুরাইরা [রাদি.]-এর উল্লেখ নেই। কোরআন শরীফ এর ফযিলত – এই হাদীসটির তাহকিকঃ দুর্বল হাদীস
২৮৭৭. আবু হুরাইরাহ্ [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলেছেনঃ তোমরা তোমাদের ঘরসমূহ কবরস্থানে পরিণত করো না। যে ঘরে সূরা আল-বাক্বারাহ্ তিলাওয়াত করা হয় তাতে শাইতান প্রবেশ করে না।
সহীহ ঃ আহকা-মুল জানা-য়িয [২১২], মুসলিম।আবু ঈসা বলেন, এ হাদীসটি হাসান সহীহ। কোরআন শরীফ এর ফযিলত – এই হাদীসটির তাহকিকঃ সহীহ হাদীস
২৮৭৮. আবু হুরাইরা [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
তিনি বলেনঃ রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলেছেনঃ প্রতিটি বস্তুরই চূড়া আছে। কুরআনের উঁচু চূড়া হল সূরা আল-বাকারা। এতে এমন একটি আয়াত আছে যা কুরআনের আয়াতসমূহের প্রধান। তা হল আয়াতুল কুরসী।
যঈফ, যঈফা [১৩৪৮], তালীকুর রাগীব [২/২১৮] আবু ঈসা বলেনঃ এ হাদীসটি গারীব। শুধুমাত্র হাকীম ইবনি জুবাইরের সূত্রেই আমরা এ হাদীস জেনেছি। শুবা তার সমালোচনা করিয়াছেন এবং তাকে দুর্বল রাবী আখ্যায়িত করিয়াছেন। কোরআন শরীফ এর ফযিলত – এই হাদীসটির তাহকিকঃ দুর্বল হাদীস
২৮৭৯. আবু হুরাইরা [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
তিনি বলেন, রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলেছেনঃ যে ব্যক্তি সকালবেলা সূরা আল-মুমিন-এর হা-মী-ম হইতে ইলাইহিল মাসীর [১, ২, ও ৩ নং আয়াত] পর্যন্ত এবং আয়াতুল কুরসী তিলাওয়াত করিবে সে এর উসীলায় সন্ধ্যা পর্যন্ত [আল্লাহ্ তাআলার] হিফাযাতে থাকিবে। আর যে ব্যক্তি সন্ধ্যা বেলায় তা পাঠ করিবে সে ব্যক্তি এর উসীলায় সকাল পর্যন্ত হিফাযাতে থাকিবে।
যঈফ, মিশকাত, তাহকীক ছানী [২১৪৪] আবু ঈসা বলেনঃ এ হাদীসটি গারীব। কোন কোন হাদীসবেত্তা আবদুর রহমান ইবনি আবু বাক্র ইবনি আবু মুলাইকার স্মৃতিশক্তির সমালোচনা করিয়াছেন। যুরারা ইবনি মুসআব হলেন আবু মুসাআবের দাদা। কোরআন শরীফ এর ফযিলত – এই হাদীসটির তাহকিকঃ দুর্বল হাদীস
অনুচ্ছেদ-৩: [আয়াতুল কুরসীর ফযিলত]
২৮৮০. আবু আইয়ূব আল-আনসারী [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
তাহাঁর খেজুর বাগানে একটি ছোট মাচান ছিল। তিনি তাতে শুকনো খেজুর রাখতেন। রাতে শাইতান জিন এসে মাচান হইতে খেজুর নিয়ে যেত। তিনি এ বিষয়ে নাবী [সাঃআঃ]-এর নিকট নালিশ করিলেন। তিনি বললেনঃ যাও, তুমি যখন এটিকে দেখবে তখন বলবে, বিসমিল্লাহ, রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ]-এর ডাকে তুমি সাড়া দাও। বর্ণনাকারী বলেন, জিন আসতেই তিনি তাকে ধরে ফেললেন। সে তখন কসম করে বলিল যে, সে আর কখনও আসবে না। কাজেই তিনি তাকে ছেড়ে দিলেন। তারপর তিনি রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ]-এর নিকট আসলে তিনি প্রশ্ন করলেনঃ তোমার বন্দী কি করেছে? তিনি বলিলেন, সে শপথ করেছে যে, সে আর কখনও আসবে না। তিনি বললেনঃ সে মিথ্যা বলেছে এবং সে তো মিথ্যা বলায় অভ্যস্ত। বর্ণনাকারী বলেন, এরপর তিনি তাকে আবার ধরলেন। এবারও সে শপথ করিল যে, সে আর কখনো আসবে না। তিনি তাকে ছেড়ে দিলেন। তারপর তিনি নাবী [সাঃআঃ]-এর নিকট হাযির হলে তিনি প্রশ্ন করলেনঃ কি হে! তোমার বন্দীর কি খবর? তিনি বলিলেন, সে কসম করে বলেছে যে, সে আর আসবে না, [কাজেই আমি তাকে ছেড়ে দিয়েছি]। তিনি বলিলেন, সে এবারও মিথ্যা বলেছে, আর সে মিথ্যা বলায় অভ্যস্ত। বর্ণনাকারী বলেন, তিনি আবারো তাকে ধরে ফেললেন এবং বলিলেন, আমি তোকে নাবী [সাঃআঃ]-এর নিকট না নিয়ে ছাড়ছি না। সে বলিল, আমি আপনাকে একটি বিষয় স্মরণ করাতে চাই। আপনি আপনার ঘরে আয়তুল কুরসী পাঠ করবেন। তাহলে শাইতান বা অন্য কিছু এতে প্রবেশ করিতে পারবে না। এবার তিনি নাবী [সাঃআঃ]-এর নিকট হাযির হলে তিনি প্রশ্ন করলেনঃ তোমার বন্দী কি করেছে? বর্ণনাকারী বলেন, তিনি তাঁকে জিনের কথা ব্যক্ত করিলেন। তিনি বললেনঃ সে মিথ্যাবাদী হলেও এ কথাটা সত্য বলেছে।
সহীহঃ তালীকুর রাগীব [২/২১২], মুসলিম। আবু ঈসা বলেন, এ হাদীসটি হাসান গারীব। উবাই ইবনি কাব [রাদি.] হইতেও এ অনুচ্ছেদে হাদীস বর্ণিত আছে। কোরআন শরীফ এর ফযিলত – এই হাদীসটির তাহকিকঃ সহীহ হাদীস
অনুচ্ছেদ-৪: সূরা আল-বাক্বারার শেষ আয়াতের ফযিলত
২৮৮১. আবু মাসউদ আল-আনসারী [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
তিনি বলেন, রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলেছেনঃ সে ব্যক্তি সূরা আল-বাক্বারার শেষ দুই আয়াতে রাতের বেলা তিলাওয়াত করিবে তা তার জন্য যথেষ্ট হইবে।
সহীহঃ সহীহ আবু দাঊদ [১২৬৩]। আবু ঈসা বলেন, এ হাদীসটি হাসান সহীহ। কোরআন শরীফ এর ফযিলত – এই হাদীসটির তাহকিকঃ সহীহ হাদীস
২৮৮২. নুমান ইবনি বাশীর [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
নাবী [সাঃআঃ] বলেছেনঃ আল্লাহ তাআলা আসমান-যামীন সৃষ্টির দুই হাজার বছর পূর্বে একটি কিতাব লিখেছেন। সেই কিতাব হইতে তিনি দুটি আয়াত নাযিল করছেন। সেই দুটি আয়াতের মাধ্যমেই সূরা আল-বাক্বারা সমাপ্ত করিয়াছেন। যে ঘরে তিন রাত এ দুটি আয়াত তিলাওয়াত করা হয় শাইতান সেই ঘরের নিকট আসতে পারে না।
সহীহঃ রাওযুন নাযীর [৮৮৬], তালীকুর রাগীব [২/২১৯], মিশকাত [২১৪৫]। আবু ঈসা বলেন, এ হাদীসটি হাসান গারীব। কোরআন শরীফ এর ফযিলত – এই হাদীসটির তাহকিকঃ সহীহ হাদীস
অনুচ্ছেদ-৫: সূরা আল-ইমরানের ফযিলত
২৮৮৩. নাওওয়াস ইবনি সামআন [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
নাবী [সাঃআঃ] বলেছেনঃ ক্বিয়ামাতের দিবসে কুরআন ও কুরআনের ধারক-বাহকগণ যারা দুনিয়াতে তদনুযায়ী আমাল করিবে এমন ভাবে হাযির হইবে যে, সূরা আল-বাক্বারাহ্ ও আল ইমরান তাহাদের আগে আগে থাকিবে। নাওওয়াস [রাদি.] বলেন, রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ] এ সূরা দুটি আগমনের তিনটি উদাহরণ দিয়েছিলেন, আমি সেগুলো এখনও ভুলিনি। তিনি বলেনঃ [১] এ সূরা দুটি ছায়ার মত আসবে, আর এতদুভয়ের মাঝে থাকিবে আলো। [২] অথবা এ দুটি কালো মেঘ খন্ডের ন্যায় [৩] অথবা ডানা বিস্তার করে ছায়াদানকারী পাখীর ন্যায় আসবে এবং তাহাদের সাথীর পক্ষ হয়ে বিতর্ক করিবে।
সহীহঃ মুসলিম [২/১৯৭] বুরাইদাহ্ ও আবু উমামাহ্ [রাদি.] হইতেও এ অনুচ্ছেদে হাদীস বর্ণিত আছে। আবু ঈসা বলেন, এ হাদীসটি হাসান এবং এই সূত্রে গারীব। আলিমগণের মতে এ হাদীসের তাৎপর্য এই যে, ক্বিয়ামাতের দিবসে উক্ত সূরা দুটির সাওয়াব এভাবে এসে হাযির হইবে। কোন কোন আলিম এই হাদীস এবং এমন বক্তব্য সম্বলিত অন্যান্য হাদীসের ব্যাখ্যায় এ কথাই বলেছেন। নাওওয়াস ইবনি সামআন [রাদি.] বর্ণিত হাদীসে নাবী [সাঃআঃ] বলেছেনঃ “কুরআন এবং যারা দুনিয়াতে কুরআনের উপর আমাল করত তারা হাযির হইবে” এ বাক্য দ্বারা প্রমাণিত হয় যে, আমালের সাওয়াবই হাযির হইবে। কোরআন শরীফ এর ফযিলত – এই হাদীসটির তাহকিকঃ সহীহ হাদীস
২৮৮৪. মুহাম্মদ ইবনি ইসমাঈল হইতে বর্ণীতঃ
মুহাম্মদ ইবনি ইসমাঈল-হুমাইদী হইতে, বর্ণনা করেন যে, আবদুল্লাহ ইবনি মাসউদ [রাদি.] বর্ণিত হাদীসঃ “আসমান-যামীনের মধ্যে আয়াতুল কুরসীর চাইতে মহান আর কোন কিছুই আল্লাহ তাআলা সৃষ্টি করেননি”, এর ব্যাখ্যায় সুফ্ইয়ান ইবনি উয়াইনাহ্ বলেন, আয়াতুল কুরসী হল আল্লাহ তাআলার কালাম, আর আল্লাহ তাআলার কালাম তো নিঃসন্দেহে আসমান-যামীনের সকল সৃষ্টির চাইতে মহান।
সহীহঃ দেখুন পূর্বের হাদীস। কোরআন শরীফ এর ফযিলত – এই হাদীসটির তাহকিকঃ সহীহ হাদীস
অনুচ্ছেদ-৬: সূরা আল-কাহ্ফের ফযিলত
২৮৮৫. আল-বারাআ ইবনি আযিব [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
একদা এক লোক সূরা আল-কাহ্ফ তিলাওয়াত করছিল। সে লোকটি হঠাৎ দেখিতে পেল, তার পশুটি লাফাচ্ছে। সে দৃষ্টি নিক্ষেপ করে মেঘমালা বা ছায়ার মত কিছু দেখল। লোকটি রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ]-এর নিকট গিয়ে এ ঘটনা বলিল। নাবী [সাঃআঃ] বললেনঃ এটা হল বিশেষ প্রশান্তি যা কুরআনের সাথে বা কুরআনের উপর অবতীর্ণ হয়েছে।
সহীহঃ বুখারী [৫০১১], মুসলিম [২/১৯৩-১৯৪]। উসাইদ ইবনি হুযাইর [রাদি.] হইতেও এ অনুচ্ছেদে হাদীস বর্ণিত আছে। আবু ঈসা বলেন, এ হাদীসটি হাসান সহীহ। কোরআন শরীফ এর ফযিলত – এই হাদীসটির তাহকিকঃ সহীহ হাদীস
২৮৮৬. আবুদ্ দারদা [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
নাবী [সাঃআঃ] বলেছেনঃ যে ব্যক্তি সূরা আল- কাহ্ফের প্রথম তিনটি আয়াত পাঠ করিবে তাকে দাজ্জালের ফিতনা হইতে বিপদমুক্ত রাখা হইবে।
“মান হাফিযা আশারা আয়াতিন” যে ব্যক্তি দশটি আয়াত মুখস্থ করিবে এই শব্দে হাদীসটি সহীহঃ সহীহাহ্ [৫৮২], আর এখানে বর্ণিত “মান ক্বারায়া ছালাছা আয়া তিন” শব্দে হাদীসটি শাজঃ যঈফাহ্ [১৩৩৬]। মুহাম্মাদ ইবনি বাশশার-মুআয ইবনি হিশাম হইতে তিনি তার পিতা হইতে তিনি আবী ক্বাতাদাহ্ [রঃ] হইতে উপরোক্ত হাদীসের মতই বর্ণনা করিয়াছেন। আবু ঈসা বলেনঃ এ হাদীসটি হাসান সহীহ। কোরআন শরীফ এর ফযিলত – এই হাদীসটির তাহকিকঃ অন্যান্য
অনুচ্ছেদ-৭: সূরা ইয়াসীনের ফযীলাত
২৮৮৭. আনাস [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
তিনি বলেন, রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলেছেনঃ প্রত্যেকটা বস্তুর কলব [হৃদয়] আছে। কুরআনের কলব হচ্ছে সূরা ইয়াসীন। যে ব্যক্তি এ সূরা একবার পাঠ করিবে আল্লাহ্ তাআলা এর পরিবর্তে তার জন্য দশবার কুরআন পাঠের সমান সাওয়াব নিরূপণ করবেন।
মাওযূ , যঈফা [১৬৯] আবু ঈসা বলেনঃ এ হাদীসটি গারীব। আমরা শুধুমাত্র হুমাইদ ইবনি আবদুর রহমানের সূত্রে এ হাদীস জেনেছি। বসরায় এই সূত্র ব্যতীত কাতাদার রিওয়াত প্রসঙ্গে কিছু জানা নেই। হারূন আবু মুহাম্মাদ একজন অপরিচিত শাইখ। আবু মূসা মুহাম্মাদ ইবনিল মুসান্না হইতে তিনি আহমাদ ইবনি সাঈদ আদ-দারিমী হইতে তিনি কুতাইবা হইতে তিনি হুমাইদ ইবনি আবদুর রহমান [রঃ] সূত্রে উপরের হাদীসের মতই বর্ণনা করিয়াছেন। এ অনুচ্ছেদে আবু বাক্র সিদ্দীক [রাদি.] হইতেও হাদীস বর্ণিত আছে। সনদের দিক হইতে তার সূত্রে বর্ণিত হাদীসটি সহীহ নয়। এর সনদসূত্র দুর্বল। এ অনুচ্ছেদে আবু হুরাইরা [রাদি.] হইতেও হাদীস বর্ণিত আছে। কোরআন শরীফ এর ফযিলত – এই হাদীসটির তাহকিকঃ জাল হাদীস
অনুচ্ছেদ-৮: সূরা হা-মীম আদ-দুখানের ফাযীলাত
২৮৮৮. আবু হুরাইরা [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
তিনি বলেন, রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলেছেনঃ যে ব্যক্তি রাতে সূরা হা-মীম আদ-দুখান পাঠ করে, ভোর হওয়া পর্যন্ত তার জন্য সত্তর হাজার ফেরেশতা আল্লাহ্ তাআলার নিকটে ক্ষমা চাইতে থাকে।
মাওযূ, মিশকাত [২১৪৯] আবু ঈসা বলেনঃ এ হাদীসটি গারীব। আমরা শুধুমাত্র উপরোক্ত সূত্রেই এ হাদীস জেনেছি। উমার ইবনি আবু খাসআম যঈফ। মুহাম্মাদ [ঈমাম বুখারী] বলেনঃ উমার একজন মুনকার রাবী। কোরআন শরীফ এর ফযিলত – এই হাদীসটির তাহকিকঃ জাল হাদীস
২৮৮৯. আবু হুরাইরা [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
তিনি বলেন, রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলেছেনঃ যে ব্যক্তি জুমুআর রাতে সূরা হা-মীম আদ-দুখান পাঠ করিবে তাকে ক্ষমা করা হইবে।
যঈফ, যঈফা [৪৬৩২], মিশকাত তাহকীক ছানী [২১৫০] আবু ঈসা বলেনঃ এ হাদীসটি গারীব। আমরা শুধুমাত্র উপরোক্ত সূত্রে এ হাদীস জেনেছি। আবু মিকদাম হাদীস শাস্ত্রে দুর্বল বলে আখ্যায়িত। হাসান বাসরী [রঃ] আবু হুরাইরা [রাদি.] হইতে কিছুই শুনেননি। আইউব, ইউনুস ইবনি উবাইদ ও আলী ইবনি যাইদ এরকমই বলেছেন। কোরআন শরীফ এর ফযিলত – এই হাদীসটির তাহকিকঃ দুর্বল হাদীস
২৮৯০. ইবনি আব্বাস [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
তিনি বলেনঃ কোন এক সময় রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ]-এর এক সাহাবী একটি ক্ববরের উপর তার তাঁবু খাটান। তিনি জানতেন না যে, তা একটি কবর। তিনি হঠাৎ বুঝতে পারেন যে, ক্ববরে একটি লোক সূরা আল-মুলক পাঠ করছে। সে তা পাঠ করে সমাপ্ত করলো। তারপর তিনি নাবী [সাঃআঃ]-এর নিকটে এসে বললেনঃ হে আল্লাহ্র রাসূল! আমি একটি ক্ববরের উপর তাঁবু খাটাই। আমি জানতাম না যে, তা ক্ববর। হঠাৎ বুঝতে পারি যে, একটি লোক সূরা আল-মুলক পাঠ করছে এবং তা সমাপ্ত করেছে। রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ] বললেনঃ এ সূরাটি প্রতিরোধকারী নাজাত দানকারী। এটা কবরের আযাব হইতে তিলাওয়াতকারীকে নাজাত দান করে।
যঈফ, “হিয়া আল-মানি আতু” উহা প্রতিরোধকারী অংশটুকু সহীহ, সহীহাহ্ [১১৪০]। আবু ঈসা বলেনঃ এ হাদীসটি এ সূত্রে হাসান গারীব। এ অনুচ্ছেদে আবু হুরাইরাহ্ [রাদি.] হইতেও হাদীস বর্ণিত আছে। হুরাইম ইবনি মিসআর-ফুযাইল হইতে, তিনি লাইস হইতে, তিনি তাঊস [রঃ] হইতে বর্ণনা করেন যে, তিনি বলেন, এ দুটি সূরায় [আলিফ লাম মীম তানযীল ও সূরা আল-মুল্ক] কুরআনের প্রতিটি সূরার উপর সত্তর গুণ বেশি সাওয়াব আছে। যঈফ, মাক্বতূ। কোরআন শরীফ এর ফযিলত – এই হাদীসটির তাহকিকঃ দুর্বল হাদীস
অনুচ্ছেদ-৯: সূরা আল-মুল্কের ফযিলত
২৮৯১. আবু হুরাইরাহ্ [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
নাবী [সাঃআঃ] বলেছেনঃ কুরআনের মধ্যে ত্রিশ আয়াত বিশিষ্ট একটি সূরা আছে যেটি কারো পক্ষে সুপারিশ করলে তাকে মাফ করে দেয়া হয়। এ সূরাটি হল তাবারাকাল্লাযী বিয়াদিহিল মুল্ক।
হাসানঃ তালীকুর রাগীব [২/২২৩], মিশকাত [২১৫৩]। আবু ঈসা বলেন, এ হাদীসটি হাসান। কোরআন শরীফ এর ফযিলত – এই হাদীসটির তাহকিকঃ হাসান হাদীস
২৮৯২. জাবির [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
নাবী [সাঃআঃ] সূরা আলিফ লাম-মীম তান্যীল ও সূরা “তাবারাকাল্লাযী বিয়াদিহিল্ মুল্ক” না পাঠ করে ঘুমাতেন না।
সহীহঃ সহীহাহ্ [৫৮৫], আর-রওয [২২৭], মিশকাত তাহক্বীক্ব সানী [২১৫৫]। আবু ঈসা বলেন, এ হাদীস লাইস ইবনি আবু সুলাইম হইতে একাধিক বর্ণনাকারী অনুরুপ বর্ণনা করিয়াছেন। মুগীরাহ্ ইবনি মুসলিম-আবুয যুবাইর হইতে, তিনি জাবির [রাদি.] হইতে, তিনি নাবী [সাঃআঃ] হইতে এই সূত্রে একই রকম বর্ণনা করিয়াছেন। যুহাইর বলেন, আবুয যুবাইরকে আমি প্রশ্ন করলাম, আপনি এ হাদীসটি কি জাবির [রাদি.]-কে আলোচনা করিতে শুনেছেন? তিনি বলেন, এ হাদীসটি সাফওয়ান বা ইবনি সাফওয়ান আমাকে বর্ণনা করিয়াছেন। আবুয যুবাইর-জাবির [রাদি.] সূত্রে এ হাদীসটি বর্ণিত হওয়ার বিষয়টি যেন যুহাইর অস্বীকার করিলেন। হান্নাদ-আবুল আহওয়াস হইতে, তিনি লাইস হইতে, তিনি আবুয যুবাইর হইতে, তিনি জাবির [রাদি.] হইতে, তিনি নাবী [সাঃআঃ] হইতে, এই সূত্রে উপরোক্ত হাদীসের একই রকম বর্ণনা করিয়াছেন।কোরআন শরীফ এর ফযিলত – এই হাদীসটির তাহকিকঃ সহীহ হাদীস
অনুচ্ছেদ-১০: সূরা আয-যিলযালের ফযিলত
২৮৯৩. আনাস ইবনি মালিক [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
তিনি বলেন, রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলেছেনঃ যে ব্যক্তি সূরা “ইযা যুলযিলাত” পাঠ করিবে তাকে অর্ধেক কুরআনের সমান এবং যে ব্যক্তি “কুল ইয়া আইয়্যুহাল কাফিরূন” পাঠ করিবে তাকে কুরআনের এক-চতুর্থাংশের সমান এবং যে ব্যক্তি সূরা “কুল হুওয়াল্লাহু আহাদ” পাঠ করিবে তাকে কুরআনের এক-তৃতীয়াংশের সমান সাওয়াব দেয়া হইবে।
সূরা ইযাযুল যিলাত-এর ফযিলত ব্যতীত হাদীসটি হাসান, যঈফা [১১৪২]।আবু ঈসা বলেনঃ এ হাদীসটি গারীব। হাসান ইবনি সাল্ম-এর সূত্রেই শুধুমাত্র আমরা এ হাদীস জেনেছি। এ অনুচ্ছেদে ইবনি আব্বাস [রাদি.] হইতেও হাদীস বর্ণিত আছে। কোরআন শরীফ এর ফযিলত – এই হাদীসটির তাহকিকঃ হাসান হাদীস
২৮৯৪. ইবনি আব্বাস [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
তিনি বলেন, রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলেছেনঃ সূরা ইযা যুলযিলাতিল আরদু কুরআনের অর্ধেকের সমান, কুল হুওয়াল্লাহু আহাদ এক-তৃতীয়াংশের সমান এবং কুল ইয়া আইয়্যুহাল কাফিরূন এক-চতুর্থাংশের সমান।
সূরা “ইযাযুল যিলাত”-এর ফযিলত ব্যতীত সহীহ। আবু ঈসা বলেনঃ এ হাদীসটি গারীব। আমরা শুধুমাত্র ইয়ামান ইবনিল মুগীরার সূত্রেই এ হাদীস জেনেছি। কোরআন শরীফ এর ফযিলত – এই হাদীসটির তাহকিকঃ সহীহ হাদীস
২৮৯৫. আনাস ইবনি মালিক [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ] তাহাঁর এক সাহাবীকে প্রশ্ন করলেনঃ হে অমুক! তুমি কি বিয়ে করেছ? তিনি বললেনঃ না, হে আল্লাহ্র রাসূল। আল্লাহ্র কসম! আমার কাছে বিয়ে করার মত মাল নেই। তিনি প্রশ্ন করলেনঃ “তোমার কি সূরা ক্কুল্ হুওয়াল্লাহু আহাদ মুখস্ত নেই”? তিনি বলেনঃ হ্যাঁ আছে। তিনি বলেনঃ এটা কুরআনের এক-তৃতীয়াংশ। তিনি আবারও প্রশ্ন করলেনঃ তোমার কি সূরা ইযা জাআ নাসরুল্লাহি ওয়াল ফাতহু মুখস্ত নেই? তিনি বলেন, হ্যাঁ আছে। তিনি বলেনঃ এটা কুরআনের এক-চতুর্থাংশ। তিনি আবার প্রশ্ন করলেনঃ তোমার কি সূরা ক্কুল ইয়া আইয়্যুহাল কাফিরূন জানা নেই? তিনি বলেন, হ্যাঁ আছে। তিনি বলেনঃ এটা কুরআনের এক-চতুর্থাংশ। তিনি আবার প্রশ্ন করেনঃ তোমার কি সূরা ইযা যুলযিলাতিল আরযু মুখস্ত নেই? তিনি বলেন, হ্যাঁ আছে। তিনি বলেনঃ এটা কুরআনের এক-চতুর্থাংশ। অতএব তুমি বিয়ে কর, বিয়ে কর।
যঈফ, তালীকুর রাগীব [২/২২৪] আবু ঈসা বলেনঃ এ হাদীসটি হাসান। কোরআন শরীফ এর ফযিলত – এই হাদীসটির তাহকিকঃ দুর্বল হাদীস
অনুচ্ছেদ-১১: সূরা আল-ইখলাসের ফযিলত
২৮৯৬. আবু আইয়ূব [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
তিনি বলেনঃ রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলেছেনঃ তোমাদের কোন ব্যক্তি কি এক রাতে এক-তৃতীয়াংশ কুরআন তিলাওয়াত করিতে অপারগ? যে লোক আল্লাহু ওয়াহিদুস্ সামাদ [সূরা আল-ইখলাস] পাঠ করিল সে কুরআনের এক-তৃতীয়াংশ পাঠ করিল।
সহীহঃ তালীকুর রাগীব [২/২২৫], মুসলিম, আবু দারদা হইতে। আবুদ দারদা, আবু সাঈদ, ক্বাতাদাহ্ ইবনিন নুমান, আবু হুরাইরাহ্, আনাস, ইবনি উমার ও আবু মাসউদ [রাদি.] হইতেও এ অনুচ্ছেদে হাদীস বর্ণিত আছে। আবু ঈসা বলেন, এ হাদীসটি হাসান। এ হাদীসটি যায়িদার রিওয়ায়াতের চাইতে অধিক উত্তমভাবে আর কেউ বর্ণনা করিয়াছেন বলে আমাদের জানা নেই। ইসরাঈল ও ফুযাইল ইবনি ইয়ায এটির সমার্থক রিওয়ায়াত করিয়াছেন। শুবাহ্ প্রমুখ নির্ভরযোগ্য বর্ণনাকারীগণ মানসূরের সূত্রে এ হাদীস বর্ণনা করিয়াছেন কিন্তু এতে তারা গড়মিল করিয়াছেন। কোরআন শরীফ এর ফযিলত – এই হাদীসটির তাহকিকঃ সহীহ হাদীস
২৮৯৭. আবু হুরাইরাহ্ [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
তিনি বলেন, একদা আমি রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ] এর সাথে আসছিলাম। তখন তিনি এক ব্যক্তিকে “কুল হুওয়াল্লাহু আদাদ, আল্লাহুস সামাদ” পাঠ করিতে শুনলেন। রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ] বললেনঃ ওয়াজিব [অবধারিত] হয়ে গেছে। আমি প্রশ্ন করলাম, কি ওয়াজিব হয়ে গেছে? তিনি বললেনঃ জান্নাত।
সহীহঃ আত্তালীক [২/২২৪]। আবু ঈসা বলেন, এ হাদীসটি হাসান গারীব। আমরা এ হাদীস শুধুমাত্র মালিক ইবনি আনাস [রঃ]-এর সূত্রে জেনেছি। ইবনি হুনাইন হলেন উবাইদ ইবনি হুনাইন। কোরআন শরীফ এর ফযিলত – এই হাদীসটির তাহকিকঃ সহীহ হাদীস
২৮৯৮. আনাস [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলেনঃ যে ব্যক্তি প্রতিদিন দুইশত বার সূরা ক্কুল হুওয়াল্লাহু আহাদ পাঠ করিবে তার পঞ্চাশ বছরের গুনাহ মাফ করে দেয়া হইবে, কিন্তু তার কর্জের বোঝা থাকলে তা ছাড়া।
যঈফ, যঈফা [৩০০], মিশকাত [২১৫৮] একই সনদে রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ] হইতে বর্ণিত আছে যে, তিনি বলেনঃ যে ব্যক্তি ঘুমানোর উদ্দেশ্যে বিছানায় গিয়ে ডান কাতে শুয়ে এক শত বার কুল হুওয়াল্লাহু আহাদ পাঠ করিবে, কিয়ামতের দিন আল্লাহ্ তাআলা তাকে বলবেনঃ হে আমার বান্দা! তোমার ডান দিক দিয়ে জান্নাতে যাও। যঈফ, মিশকাত [২১৫৯], আবু ঈসা বলেনঃ সাবিত হইতে আনাস [রাদি.] সূত্রে বর্ণিত রিওয়ায়াত হিসেবে এ হাদীসটি গারীব। এ হাদীসটি সাবিতের সূত্রে ভিন্নভাবেও বর্ণিত আছে। কোরআন শরীফ এর ফযিলত – এই হাদীসটির তাহকিকঃ দুর্বল হাদীস
২৮৯৯. আবু হুরাইরাহ্ [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
তিনি বলেন, রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলেছেনঃ সূরা কুল হুওয়াল্লাহু আহাদ কুরআনের এক-তৃতীয়াংশের সমান।
সহীহঃ ইবনি মা-জাহ [৩৭৮৩], মুসলিম, বুখারী। আবু ঈসা বলেন, এ হাদীসটি হাসান সহীহ। কোরআন শরীফ এর ফযিলত – এই হাদীসটির তাহকিকঃ সহীহ হাদীস
২৯০০. আবু হুরাইরাহ্ [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
তিনি বলেন, একদা রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ] বললেনঃ তোমরা একত্র হও, আমি তোমাদেরকে কুরআনের এক-তৃতীয়াংশ তিলাওয়াত করে শুনাব। তিনি [বর্ণনাকরী] বলেন, অতএব যাদের একত্র হওয়ার সুযোগ হয়েছে তারা একত্র হল। আল্লাহর নাবী [সাঃআঃ] [ঘর হইতে] বেরিয়ে এসে কুল হুওয়াল্লাহু আহাদ [সূরাদি. আল-ইখলাস] তিলাওয়াত করিলেন, তারপর ভেতরে চলে গেলেন। আমরা পরস্পর বলাবলি করিতে লাগলাম, রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলেছিলেনঃ আমি কুরআনের এক-তৃতীয়াংশ তোমাদের সামনে তিলাওয়াত করব। মনে হয় এ বিষয়ে এখন তাহাঁর নিকট আসমান হইতে খবর এসেছে। তারপর আল্লাহর নাবী [সাঃআঃ] বেরিয়ে এসে বললেনঃ আমি বলেছিলাম তোমাদেরকে কুরআনের এক-তৃতীয়াংশ তিলাওয়াত করে শুনাব। জেনে রাখ! এ সূরাইটিই কুরআনের এক তৃতীয়াংশের সমান।
সহীহঃ তালীকুর রাগীব [২/২২৪], সিফাতুস নামাজ [৮৫], বুখারী। আবু ঈসা বলেন, এ হাদীসটি হাসান সহীহ এবং এ সূত্রে গারীব। আবু হাযিম আল-আশজাঈর নাম সালমান। কোরআন শরীফ এর ফযিলত – এই হাদীসটির তাহকিকঃ সহীহ হাদীস
২৯০১. আনাস ইবনি মালিক [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
তিনি বলেন, কুবা মসজিদে আনসার সম্প্রদায়ের এক লোক তাহাদের ঈমামতি করিতেন। তিনি নামাযে সূরা আল-ফাতিহার পর কোন সূরা পাঠ করা্র ইচ্ছা করলে প্রথমে সূরা কুল হওয়াল্লাহু আহাদ পাঠ করিতেন এবং এ সূরা শেষ করার পর এর সাথে অন্য সূরা পাঠ করিতেন। তিনি প্রতি রাকআতেই এরূপ করিতেন। তার সাথীরা তার সাথে এ ব্যাপারে আলোচনা করে বলিলেন, আপনি এ সূরাটি পাঠ করার পর মনে করেন যে, এটা বুঝি যথেষ্ট হয়নি, তাই এর সাথে অন্য আরেকটি সূরাও পাঠ করেন। আপনি হয় এ সূরাটিই পাঠ করবেন, না হয় এটা বাদ দিয়ে অন্য কোন সূরা পাঠ করবেন। তিনি বলিলেন, আমি এ সূরা বাদ দিতে পারব না। যদি তোমাদের পছন্দ হয় তবে আমি এ সূরাসহ ঈমামতি করি, আর পছন্দ না হলে ঈমামতি ছেড়ে দেই। কিন্তু তাহাদের দৃষ্টিতে তিনি ছিলেন তাহাদের মধ্যে সবচাইতে উত্তম ব্যক্তি। তাই তাকে বাদ দিয়ে অন্য কাউকে ঈমাম বানাতে তারা সম্মত হলেন না। পরে নাবী [সাঃআঃ] তাহাদের নিকট এলে তারা বিষয়টি তাঁকে জানালেন। তিনি বললেনঃ হে অমুক! তোমার সাথীরা তোমাকে যে নির্দেশ দিচ্ছে তা পালন করিতে তোমাকে কিসে বাধা দিচ্ছে? আর তোমাকে প্রতি রাক্আতে এ সূরা পাঠ করিতে কিসে উদ্বুদ্ধ করছে? তিনি বলিলেন, হে আল্লাহ্র রাসূল! আমি এটি খুব ভালোবাসি। তখন রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ] বললেনঃ এর প্রতি তোমার ভালোবাসাই তোমাকে জান্নাতে নিয়ে যাবে।
হাসান সহীহঃ তালীকুর রাগীব [২/২৪৪], সিফাতুস নামাজ [৮৫], বুখারী, মুআল্লাক হিসেবে বর্ণনা করিয়াছেন। আবু ঈসা বলেন, এ হাদীসটি হাসান সহীহ এবং উবাইদুল্লাহ ইবনি উমার-সাবিত আল-বুনানী সূত্রে বর্ণিত হাদীস হিসেবে গারীব। মুবারক ইবনি ফাযালা-সাবিত আল-বুনানী হইতে আনাস [রাদি.] এর বরাতে বর্ণনা করিয়াছেন যে, “একজন লোক বলিল, হে আল্লাহর রাসূল! আমি কুল হুওয়াল্লাহু আহাদ সূরাটিকে ভালোবাসি। তিনি বললেনঃ তোমার এই ভালোবাসাই তোমাকে জান্নাতে নিয়ে যাবে”। পূর্বের হাদীসের সহায়তায় সহীহ। কোরআন শরীফ এর ফযিলত – এই হাদীসটির তাহকিকঃ হাসান সহীহ
অনুচ্ছেদ-১২: মুআব্বিযাতাইনের [সূরা আল-ফালাক্ব ও সূরা আন-নাস] ফযিলত
২৯০২. উক্ববাহ্ ইবনি আমির আল-জুহানী [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
নাবী [সাঃআঃ] বলেছেনঃ আল্লাহ তাআলা আমার উপর এমন কতগুলো আয়াত অবতীর্ণ করিয়াছেন যার কোন তুনলা হয় নাঃ “কুল আঊযু বিরব্বিন নাস……” শেষ পর্যন্ত এবং “কুল আঊযু বিরব্বিল ফালাক্ব” হইতে সূরার শেষ পর্যন্ত।
সহীহঃ মুসলিম [২/২০০]। আবু ঈসা বলেন, এ হাদীসটি হাসান সহীহ। আবু হাযিমকে আবু কাইস বলা হয়। তার নাম আবদ আওফ। তিনি রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ]-কে দেখেছেন এবং তার নিকট হইতে হাদীসও বর্ণনা করিয়াছেন। কোরআন শরীফ এর ফযিলত – এই হাদীসটির তাহকিকঃ সহীহ হাদীস
২৯০৩. উক্ববাহ্ ইবনি আমির [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
তিনি বলেন, রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ] আমাকে প্রতি ওয়াক্ত নামাযের পর সূরা আন্-নাস ও সূরা আল-ফালাক্ব পাঠের আদেশ করিয়াছেন।
সহীহঃ সহীহাহ্ [১৫১৪], সহীহ আবু দাঊদ [১৩৬৩], তালীক আলা ইবনে খুযাইমাহ্ [৭৫৫]। আবু ঈসা বলেন, এ হাদীসটি হাসান গারীব। কোরআন শরীফ এর ফযিলত – এই হাদীসটির তাহকিকঃ সহীহ হাদীস
অনুচ্ছেদ-১৩: কুরআন তিলাওয়াতকারীর মর্যাদা
২৯০৪. আয়েশা [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
তিনি বলেন, রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলেছেনঃ কুরআন পাঠে দক্ষ ব্যক্তি [আখিরাতে] সম্মানিত নেককার লিপিকর ফেরেশতাহাদের সাথে থাকিবে। আর যে ব্যক্তি উহা পাঠ করে এবং এটা তার পক্ষে [হিশামের বর্ণনায়] খুবই কঠিন ও [শুবাহ্র বর্ণনায়] কষ্টকর, সে দুটি পুরস্কার পাবে।
সহীহঃ সহীহ আবু দাঊদ [১৩০৭], বুখারী শরীফ ও মুসলিম শরীফ। আবু ঈসা বলেন, এ হাদীসটি হাসান সহীহ। কোরআন শরীফ এর ফযিলত – এই হাদীসটির তাহকিকঃ সহীহ হাদীস
২৯০৫. আলী [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
তিনি বলেন, রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলেছেনঃ যে ব্যক্তি কুরআন পাঠ করেছে এবং তা হেফয রেখেছে, এর হালালকে হালাল এবং হারামকে হারাম মেনেছে, তাকে আল্লাহ্ তাআলা জান্নাতে প্রবেশ করাবেন এবং তার পরিবারের এমন দশজন ব্যক্তি সর্ম্পকে তার শাফায়াত ক্ববূল করবেন যাদের প্রত্যেকের জন্য জাহান্নাম অনিবার্য ছিল।
অত্যন্ত দুর্বল, ইবনি মাজাহ হাদীস নং-[২১৬] আবু ঈসা বলেনঃ এ হাদীসটি গারীব। আমরা শুধুমাত্র উপরোক্ত সূত্রেই এ হাদীস জেনেছি। এর সনদসূত্র সহীহ নয়। হাফ্স ইবনি সুলাইমান হাদীস শাস্ত্রে দুর্বল। কোরআন শরীফ এর ফযিলত – এই হাদীসটির তাহকিকঃ খুবই দুর্বল
অনুচ্ছেদ-১৪: কুরআন মাজীদের মযার্দা প্রসঙ্গে
২৯০৬. আল-হারিস আল-আওয়ার [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
তিনি বলেনঃ এক সময় আমি মাসজিদে গিয়ে দেখি যে, কিছু লোক নানারকম আলাপ করছে। আমি আলী [রাদি.]-এর নিকটে গিয়ে বললাম, হে আমীরুল মুমিনীন! আপনি কি দেখিতে পাচ্ছেন না যে, লোকেরা নানারকম আলাপ করছে? তিনি প্রশ্ন করিলেন, তারা কি তাই করছে? আমি বললাম, হ্যাঁ। তিনি বলিলেন, শোন! আমি রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ]-কে বলিতে শুনেছিঃ হুঁশিয়ার! শীঘ্রই ফিতনা-ফাসাদ দেখা দিবে। আমি প্রশ্ন করলাম, হে আল্লাহ্র রাসূল! এ ফিত্না হইতে আত্নরক্ষার পন্থা কি? তিনি বললেনঃ আল্লাহ্ তাআলার কিতাব [কুরআন]। এতে আছে তোমাদের পূর্ববর্তীদের সংবাদ ও পরবর্তীদের সংবাদ এবং তোমাদের মাঝে ফায়সালার বিধান। এটা [সত্য-মিথ্যার মধ্যে] সুস্পষ্ট বিভাজনকারী, কোন অর্থহীন ব্যাপার নয়। যে ব্যক্তি গর্ববশে এটা ছেড়ে দেবে, আল্লাহ্ তাআলা তার গর্ব চূর্ণ করবেন। এটাকে বাদ দিয়ে যে হিদায়াত খোঁজ করিবে আল্লাহ্ তাআলা তাকে পথভ্রষ্ট করবেন। এটা হল আল্লাহ্ তাআলার মযবুত রশি, হিকমাত ও প্রজ্ঞাপূর্ণ উপদেশ এবং সহজ-সরল পথ। তা অনুসরণ করলে মানুষের চিন্তাধারা বিপথগামী হয় না এবং এতে যবানও আড়ষ্ট হয় না। আলিমগণ এ থেকে তৃপ্ত হয় না [যতই পড়ে ততই ভালো লাগে], বারবার পড়লেও এটা পুরানো হয় না এবং এর রহস্য ও নিগূঢ় তত্ত্বের শেষ নেই। এটা সেই গ্রস্থ যা শোনা মাত্রই জিনেরা বলে উঠলো, “আমরা এক আশ্চর্যজনক কুরআন শুনলাম যা সঠিক পথের সন্ধান দেয়। সুতরাং আমরা এতে ঈমান এনেছি” [সূরাদি. জ্বিন-১, ২]। যে ব্যক্তি কুরআন অনুযায়ী কথা বলে সে সত্য বলে এবং যে সে অনুসারে আমল করে সে প্রতিদান পায়। যে এর সাহায্যে ফায়সালা করে সে ইনসাফ করে এবং যে এর দিকে আহ্বান করে সে সঠিক পথ দেখায়। হে আওয়ার! তুমি এটা শক্তভাবে আকড়ে ধর।
যঈফ, মিশকাত, তাহকীক ছানী [২১৩৮] আবু ঈসা বলেনঃ এ হাদীসটি গারীব। আমরা শুধুমাত্র উপরোক্ত সূত্রেই এ হাদীস জেনেছি। এর সনদসূত্র অজানা। আল-হারিসের রিওয়ায়াত প্রসঙ্গে বিরূপ সমালোচনা আছে। কোরআন শরীফ এর ফযিলত – এই হাদীসটির তাহকিকঃ দুর্বল হাদীস
অনুচ্ছেদ-১৫: কুরআন শিক্ষার ফযিলত
২৯০৭. উসমান ইবনি আফফান [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলেছেনঃ সে লোকই তোমাদের মধ্যে শ্রেষ্ঠ যে কুরআন শিক্ষা করে এবং অন্যকে তা শিক্ষা দেয়।
সহীহঃ ইবনি মা-জাহ [২১১], বুখারী। আবদুর রাহমান বলেন, এ হাদীসই আমাকে এ স্থানে বসিয়ে রেখেছে। তিনি উসমান [রাদি.]-এর যুগ হইতে হাজ্জাজ ইবনি ইউসুফের যুগ পর্যন্ত কু্রআন শিক্ষা দিয়েছেন।আবু ঈসা বলেন, এ হাদীসটি হাসান সহীহ। কোরআন শরীফ এর ফযিলত – এই হাদীসটির তাহকিকঃ সহীহ হাদীস
২৯০৮. উসমান [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
তিনি বলেন, রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলেছেনঃ সে লোকই তোমাদের মধ্যে শ্রেষ্ঠ বা উত্তম যে নিজে কুরআন শিখে এবং তা অন্যকে শিখায়।
সহীহঃ দেখুন পূর্বে হাদীস। আবু ঈসা বলেন, এ হাদীসটি হাসান সহীহ। আবদুর রাহমান ইবনি মাহ্দী প্রমুখ সুফ্ইয়ান সাওরী হইতে, তিনি আলক্বামাহ্ ইবনি মারসাদ হইতে, তিনি আবু আবদুর রাহমান হইতে, তিনি উসমান [রাদি.] হইতে, তিনি নাবী [সাঃআঃ] হইতে এই সূত্রে এক রকমই বর্ণনা করিয়াছেন। সুফ্ইয়ান উক্ত হাদীসের সনদে সাদ ইবনি উবাইদার উল্লেখ করেননি। ইয়াহ্ইয়া ইবনি সাঈদ আল-কাত্তান এ হাদীস সুফ্ইয়ান ও শুবাহ্ হইতে, তিনি আলকামাহ্ হইতে, তিনি ইবনি মারসাদ হইতে, তিনি সাদ ইবনি উবাইদাহ্ হইতে, তিনি আবু আবদুর রাহমান হইতে, তিনি উসমান [রাদি.] হইতে, তিনি নাবী [সাঃআঃ] হইতে এই সূত্রে বর্ণনা করিয়াছেন। ইয়াহ্ইয়া ইবনি সাঈদ-সুফ্ইয়ান ও শুবাহ্র সূত্রে মুহাম্মাদ ইবনি বাশ্শার উক্ত হাদীস আমাদের নিকট বর্ণনা করিয়াছেন। মুহাম্মাদ ইবনি বাশ্শার বলেন, ইয়াহ্ইয়া ইবনি সাঈদ উক্ত হাদীস সুফ্ইয়ান ও শুবাহ্-একাধিকবার আলক্বামাহ্ ইবনি মারসাদের সূত্রে-সাদ ইবনি উবাইদাহ্ হইতে, তিনি আবু আবদুর রাহমান হইতে, তিনি উসমান [রাদি.] হইতে, তিনি নাবী [সাঃআঃ] হইতে এই সূত্রে একই রকম বর্ণনা করিয়াছেন। মুহাম্মাদ ইবনি বাশ্শার বলেন, সুফ্ইয়ানের শাগরিদগণ এর সনদে “সুফ্ইয়ান-সাদ ইবনি উবাইদাহ্ হইতে” এভাবে উল্লেখ করেননি এবং এটাই সহীহ। আবু ঈসা বলেন, শুবাহ্ এ হাদীসের সনদে সাদ ইবনি উবাইদার নাম অতিরিক্ত উল্লেখ করিয়াছেন। সুফ্ইয়ানের রিওয়ায়াতই যেন অধিক সহীহ। আলী ইবনি আবদুল্লাহ বলেন, ইয়াহ্ইয়া ইবনি সাঈদ বলেছেন, আমার মতে শুবাহ্র সমতুল্য কেউ নেই। কোন রিওয়ায়াতের বেলায় সুফ্ইয়ানের সাথে তার মতের অমিল হলে সেই ক্ষেত্রে আমি সুফ্ইয়ানের বক্তব্য গ্রহণ করি। আবু ঈসা বলেন, আমি আবু আম্মারকে ওয়াকীর সূত্রে উল্লেখ করিতে শুনিয়াছি, তিনি বলেন, শুবাহ্ বলেছেন, সুফ্ইয়ান আমার চাইতে অনেক বেশী স্মৃতিশক্তির অধিকারী। সুফ্ইয়ান কারো বরাতে আমার নিকট কিছু বর্ণনা করলে আমি সেই প্রসঙ্গে উক্ত ব্যক্তিকে প্রশ্ন করলে তিনি হুবহু তাই বলেন যা সুফ্ইয়ান আমাকে বলেছেন। এ অনুচ্ছেদে আলী ও সাদ [রাদি.] হইতেও হাদীস বর্ণিত আছে। কোরআন শরীফ এর ফযিলত – এই হাদীসটির তাহকিকঃ সহীহ হাদীস
২৯০৯. আলী [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
বলেন, রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলেছেনঃ সে লোকই তোমাদের মধ্যে উত্তম যে কুরআন শিক্ষা করে এবং তা অন্যকে শিখায়।
পূর্বের হাদীসের সহায়তায় সহীহ।
আবু ঈসা বলেন, আমরা এ হাদীস শুধু আবদুর রাহমান ইবনি ইসহাকের রিওয়ায়াত হিসেবে আলী [রাদি.] হইতে নাবী [সাঃআঃ] সূত্রে জেনেছি। কোরআন শরীফ এর ফযিলত – এই হাদীসটির তাহকিকঃ সহীহ হাদীস
অনুচ্ছেদ-১৬: কুরআনের একটি অক্ষরও পাঠকারী ব্যক্তির সাওয়াব প্রসঙ্গে
২৯১০. আবদুল্লাহ ইবনি মাসউদ [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
তিনি বলেন, রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলেছেনঃ আল্লাহ তাআলার কিতাবের একটি হরফ যে ব্যক্তি পাঠ করিবে তার জন্য এর সাওয়াব আছে। আর সাওয়াব হয় তার দশ গুণ হিসেবে। আমি বলি না যে, আলিফ-লাম-মীম একটি হরফ, বরং আলিফ একটি হরফ, লাম একটি হরফ এবং মীম একটি হরফ।
সহীহঃ তাখরীজুত্ তাহাবীয়াহ [১৩৯], মিশকাত [২১৩৭]। ইবনি মাসউদ [রাদি.] হইতে উপরোক্ত সনদ সূত্র ব্যতীত অন্য সূত্রেও এই হাদীস বর্ণিত আছে। এ হাদীস আবুল আহ্ওয়াস [রঃ] ইবনি মাসউদ [রাদি.] হইতে বর্ণনা করিয়াছেন। তাহাদের কিছু বর্ণনাকারী এটিকে মারুফূ হাদীস হিসেবে এবং কিছু বর্ণনাকারী মাওকূফ হাদীস হিসেবে অর্থাৎ ইবনি মাসউদ [রাদি.]-এর বক্তব্য হিসেবে বর্ণনা করিয়াছেন। আবু ঈসা বলেন, এ হাদীসটি হাসান সহীহ এবং উক্ত সনদে গারীব। আমি কুতাইবা ইবনি সাঈদকে বলিতে শুনিয়াছি, আমি অবগত হয়েছি যে, মুহাম্মাদ ইবনি কাব আল-কুরাযী [রঃ] রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ]-এর জীবদ্দশায় জন্মগ্রহণ করেন। মুহাম্মাদ ইবনি কাব আল-কুরাযী [রঃ]-এর উপনাম আবু হামযা। কোরআন শরীফ এর ফযিলত – এই হাদীসটির তাহকিকঃ সহীহ হাদীস
অনুচ্ছেদ-১৭: [কুরআন পাঠের মাধ্যমে আল্লাহ্ তাআলার অধিকতর নৈকট্য অর্জন করা যায়]
২৯১১. আবু উমামা [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ্ [সাঃআঃ] বলেছেনঃ আল্লাহ্ তাআলা বান্দার দুই রাক্আত নামাযে যেভাবে মনঃসংযোগ করেন এর চেয়ে কোন কিছুতেই এই প্রকার করেন না। বান্দা যতক্ষণ নামাযে নিয়োজিত থাকে ততক্ষণ তার মাথার উপর সাওয়াব বর্ষিত হইতে থাকে। বান্দা কুরআন পাঠের মাধ্যমে আল্লাহ্ তাআলার যতটুকু নৈকট্য অর্জন করিতে পারে অন্য কিছু দ্বারা তাহাঁর এত নৈকট্য অর্জন করিতে পারে না।
যঈফ, মিশকাত [১৩৩২], যঈফা [১৯৫৭] আবু ঈসা বলেনঃ এ হাদীসটি গারীব। আমরা শুধুমাত্র উপরোক্ত সূত্রেই এ হাদীস জেনেছি। ইবনিল মুবারাক [রঃ] বাক্র ইবনি খুনাইসের সমালোচনা করিয়াছেন এবং পরিশেষে তাকে পরিহার করিয়াছেন। যাইদ ইবনি আরতাত হইতে জুবাইর ইবনি নুফাইর বরাতে রাসূলুল্লাহ্ [সাঃআঃ] সূত্রে এটি মুরসালরূপে বর্ণিত আছে। কোরআন শরীফ এর ফযিলত – এই হাদীসটির তাহকিকঃ দুর্বল হাদীস
২৯১২. জুবাইর ইবনি নুফাইর [রঃ] হইতে বর্ণীতঃ
তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ্ [সাঃআঃ] বলেছেনঃ আল্লাহ্ তাআলা হইতে নিঃসৃত জিনিস অর্থাৎ কুরআন মাজীদের তুলনায় শ্রেষ্ঠতর কোন কিছু নিয়ে তোমরা আল্লাহ্ তাআলার কাছে ফিরে যেতে পারবে না।
যঈফ, যঈফা। কোরআন শরীফ এর ফযিলত – এই হাদীসটির তাহকিকঃ দুর্বল হাদীস
অনুচ্ছেদ-১৮: [কুরআন পাঠকারীর অবস্থান]
২৯১৩. ইবনি আব্বাস [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
রাসূলুল্লাহ্ [সাঃআঃ] বলেনঃ যার হৃদয়ে কুরআনের কিছুই নেই সে বর্জিত ঘরের মত।
যঈফ, মিশকাত [২১৩৫]। আবু ঈসা বলেনঃ এ হাদীসটি হাসান সহীহ। কোরআন শরীফ এর ফযিলত – এই হাদীসটির তাহকিকঃ দুর্বল হাদীস
২৯১৪. আবদুল্লাহ ইবনি আম্র [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
নাবী [সাঃআঃ] বলেছেনঃ [ক্বিয়ামাতের দিন] কুরআনের বাহককে বলা হইবে, পাঠ করিতে থাক ও উপরে আরোহণ করিতে থাক এবং দুনিয়াতে যেভাবে ধীরে সুস্থে পাঠ করিতে ঠিক সেরূপে ধীরে সুস্থে পাঠ করিতে থাক। যে আয়াতে তোমার পাঠ সমাপ্ত হইবে সেখানেই তোমার স্থান।
হাসান সহীহঃ মিশকাত [২১৩৪], তালীকুর রাগীব [২/২০৮], সহীহ আবু দাঊদ [১৩১৭], সহীহাহ্ [২২৪০]। কোরআন শরীফ এর ফযিলত – এই হাদীসটির তাহকিকঃ হাসান সহীহ
২৯১৫. আবু হুরাইরাহ্ [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
নাবী [সাঃআঃ] বলেছেনঃ কুরআন ক্বিয়ামাত দিবসে হাযির হয়ে বলবে, হে আমার প্রভু! একে [কুরআনের বাহককে] অলংকার পরিয়ে দিন। তারপর তাকে সম্মান ও মর্যাদার মুকুট পরানো হইবে। সে আবার বলবে, হে আমার প্রভু! তাকে আরো পোশাক দিন। সুতরাং তাকে মর্যাদার পোশাক পরানো হইবে। সে আবার বলবে, হে আমার প্রভু! তার প্রতি সন্তুষ্ট হোন। কাজেই তিনি তার উপর সন্তুষ্ট হইবেন। তারপর তাকে বলা হইবে, তুমি এক এক আয়াত পাঠ করিতে থাক এবং উপরের দিকে উঠতে থাক। এমনিভাবে প্রতি আয়াতের বিনিময়ে তার একটি করে সাওয়াব [মর্যাদা] বাড়ানো হইবে।
হাসানঃ তালীকুর রাগীব [২/২০৭]। আবু ঈসা বলেন, এ হাদীসটি হাসান সহীহ। মুহাম্মাদ ইবনি বাশশার-মুহাম্মাদ ইবনি জাফার হইতে, তিনি শুবাহ্ হইতে, তিনি আসিম ইবনি বাহদালা হইতে, তিনি আবু সালিহ হইতে, তিনি আবু হুরাইরাহ্ [রাদি.] হইতে উপরোক্ত হাদীসের সমার্থবোধক হাদীস বর্ণনা করিয়াছেন। তিনি এটি এ সূত্রে মারফূরূপে বর্ণনা করেননি। আবু ঈসা বলেন, আবদুস সামাদ হইতে শুবাহ্ [রঃ] সূত্রে বর্ণিত হাদীসের তুলনায় এটিই আমাদের মতে অনেক বেশী সহীহ। বুনদার আবদুর রাহমান ইবনি মাহ্দী হইতে, তিনি সুফ্ইয়ান হইতে, তিনি আসিমের সূত্রে উপরে বর্ণিত হাদীসের মতই বর্ণনা করেছন। কোরআন শরীফ এর ফযিলত – এই হাদীসটির তাহকিকঃ হাসান হাদীস
অনুচ্ছেদ-১৯: [কুরআন ভুলে যাওয়ার গুনাহ ভয়াবহ]
২৯১৬. আনাস ইবনি মালিক [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ্ [সাঃআঃ] বলেছেনঃ আমার উম্মাতের সকল সাওয়াব আমার সামনে উপস্থাপন করা হয়, এমনকি মাসজিদ হইতে জঞ্জাল দূর করার সাওয়াবও। আমার উম্মাতের গুনাহসমূহও আমার সামনে উপস্থাপন করা হয়। কাউকে কুরআনের কোন সূরা বা আয়াত প্রদান করার পর তা বিস্মৃত হওয়ার চাইতে বড় গুনাহ আমি আর দেখিনি।
যঈফ, মিশকাত [৭২০], রওযুননাযীর [৭২], যঈফ, আবু দাঊদ [৭১] আবু ঈসা বলেনঃ এ হাদীসটি গারীব। আমরা শুধুমাত্র উপরোক্ত সূত্রেই এ হাদীস জেনেছি। আমি মুহাম্মাদ ইবনি ইসমাঈলের নিকট এ হাদীস উল্লেখ করলে তিনি তার অজ্ঞতা প্রকাশ করেন এবং হাদীসটিকে গারীব সংজ্ঞায়িত করেন। মুহাম্মাদ আরো বলেনঃ মুত্তালিব ইবনি আবদুল্লাহ ইবনি হানতাব রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ]-এর সাহাবীগণের কারো নিকট হইতে সোজাসুজি কিছু শুনেছেন বলে আমার জানা নেই। তার নিম্নোক্ত কথাটি ভিন্নঃ “যিনি রাসূলুল্লাহ্ [সাঃআঃ]-এর ভাষণে হাজির ছিলেন তিনি আমাকে বলেছেন” [এ কথা তার কোন সাহাবীর সাক্ষাত লাভ প্রমাণ করে, এ ছাড়া আর কোন দলিল পাওয়া যায় না]। আমি আবদুল্লাহ ইবনি আবদুর রহমানকে বলিতে শুনিয়াছি, মুত্তালিব রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ]-এর কোন সাহাবীর নিকট সোজাসুজি কিছু শুনেছেন বলে আমাদের জানা নেই। আবদুল্লাহ [রঃ] আরও বলেনঃ আনাস ইবনি মালিক [রাদি.]-এর নিকট মুত্তালিবের শোনার বিষয়টি আলী ইবনিল মাদীনী প্রত্যাখ্যান করিয়াছেন। কোরআন শরীফ এর ফযিলত – এই হাদীসটির তাহকিকঃ দুর্বল হাদীস
অনুচ্ছেদ-২০: [কুরআনকে ভিক্ষার উপায় বানানো নিষেধ]
২৯১৭. ইমরান ইবনি হুসাইন [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
একদা তিনি জনৈক কুরআন তিলাওয়াতকারীর পাশ দিয়ে যাচ্ছিলেন। লোকটি তখন কুরআন পাঠ করিতে করিতে [মানুষের নিকট] ভিক্ষা করছিল। তিনি “ইন্না লিল্লাহি ওয়াইন্না ইলাইহি রাজিঊন” পাঠ করে বলিলেন, আমি রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ] কে বলিতে শুনেছিঃ কুরআন তিলাওয়াতকারী ব্যক্তি যেন এর দ্বারা শুধু আল্লাহ তাআলার নিকট প্রার্থনা করে। কেননা অচিরেই এমন এক সম্প্রদায়ের আবির্ভাব ঘটবে যারা কুরআন পাঠের মাধ্যমে মানুষের নিকট ভিক্ষা করিবে।
হাসানঃ সহীহাহ্ [২৫৭]। মাহ্মুদ [রঃ] বলেন, এই খাইসামা আল-বাসরী যার নিকট হইতে জাবির আল-জুফী হাদীস বর্ণনা করিয়াছেন ইনি খাইসামা ইবনি আবদুর রাহমান নন। এই খাইসামা হলেন বাসরার শাইখ এবং তার উপনাম আবু নাসর। তিনি আনাস [রাদি.] হইতে কিছু হাদীস রিওয়ায়াত করিয়াছেন। জাবির আল-জুফী এই খাইসামা হইতেও হাদীস বর্ণনা করিয়াছেন। আবু ঈসা বলেন, এ হাদীসটি হাসান। এটির সানাদ তেমন শক্তিশালী নয়। কোরআন শরীফ এর ফযিলত – এই হাদীসটির তাহকিকঃ হাসান হাদীস
২৯১৮. সুহাইব [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ্ [সাঃআঃ] বলেছেনঃ যে ব্যক্তি কুরআনের হারামসমূকে হালাল মনে করে সে কুরআনের প্রতি ঈমান আনেনি।
যঈফ, মিশকাত, তাহকীক ছানী [২২০৩] আবু ঈসা বলেনঃ উক্ত হাদীসের সনদ তেমন মজবুত নয়। ওয়াকীর রিওয়ায়াতের বিরোধিতা করা হয়েছে। মুহাম্মাদ বলেনঃ আবু ফারওয়া ইয়াযীদ ইবনি সিনান আর-রাহাবীর হাদীস বর্ণনায় কোন সমস্যা নেই। তবে তার পুত্র মুহাম্মাদ তার সূত্রে যে রিওয়ায়াত করিয়াছেন সেগুলোর বক্তব্য আলাদা। কারণ তিনি তার আব্বার বরাতে অনেক মুনকার হাদীস বর্ণনা করিয়াছেন। মুহাম্মাদ ইবনি সিনান তার আব্বার সূত্রে এ হাদীস রিওয়ায়াত করিয়াছেন এবং তার সনদে মুজাহিদ-সাঈদ ইবনিল মুসাইয়্যাব-সুহাইব [রঃ] অতিরিক্ত হিসেবে উল্লেখ করিয়াছেন। মুহাম্মাদ ইবনি ইয়াযীদের রিওয়ায়াতের সমর্থক কোন রিওয়ায়াত নেই। ইনি একজন দুর্বল রাবী। আর আবুল মুবারাক একজন অপরিচিত ব্যক্তি। কোরআন শরীফ এর ফযিলত – এই হাদীসটির তাহকিকঃ দুর্বল হাদীস
২৯১৯. উক্ববাহ্ ইবনি আমির [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
তিনি বলেন, আমি রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ] কে বলিতে শুনেছিঃ প্রকাশ্যে কুরআন পাঠকারী প্রকাশ্যে দান-খাইরাতকারীর সমতুল্য এবং গোপনে কুরআন পাঠকারী গোপনে দান-খাইরাতকালরি সমতুল্য।
সহীহঃ মিশকাত তাহ্ক্বীক্ব সানী [২২০২], সহীহ আবু দাঊদ [১২০৪]। আবু ঈসা বলেন, এ হাদীসটি হাসান গারীব। এ হাদীসের অর্থ হলো গোপনে কুরআন পাঠকারীই প্রকাশ্যে পাঠকারীর চাইতে উত্তম। কেননা আলিমদের মতে প্রকাশ্যে [ঐচ্ছিক] দান-খাইরাতের তুলনায় গোপানে দান করা উত্তম। বিশেষজ্ঞ আলিমগণের মতে, হাদীসের তাৎপর্য এই যে, পাঠক যেন অহংকার হইতে বেঁচে থাকে। আর যে আমাল গোপনে করা হয়, তাতে অহংকারের ততটা আশংকা থাকে না যতটা থাকে প্রকাশ্যে আমাল করার মধ্যে। কোরআন শরীফ এর ফযিলত – এই হাদীসটির তাহকিকঃ সহীহ হাদীস
অনুচ্ছেদ-২১: [রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ] ঘুমানোর পূর্বে যেসব সূরা পাঠ করিতেন]
২৯২০. আয়িশাহ্ [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
সূরা বানী ইসরাঈল ও সূরা আয্-যুমার তিলাওয়াত না করা পর্যন্ত নাবী [সাঃআঃ] ঘুমাতেন না।
সহীহঃ সহীহাহ্ [৬৪১]। আবু ঈসা বলেন, এ হাদীসটি হাসান গরীব। আবু লুবাবা একজন বাসরার শাইখ। হাম্মাদ ইবনি যাইদ তার সূত্রে একাধিক হাদীস রিওয়ায়াত করিয়াছেন। তাহাঁর নাম মারওয়ান বলে কথিত। মুহাম্মাদ ইবনি ইসমাঈল উক্ত কথাটি তার কিতাবুত্ তারীখ গ্রন্থে বর্ণনা করিয়াছেন। কোরআন শরীফ এর ফযিলত – এই হাদীসটির তাহকিকঃ সহীহ হাদীস
২৯২১. ইরবায ইবনি সারিয়া [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
তিনি বলেন, রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ] ঘুমানোর পূর্বে মুসাব্বিহাত সূরাসমূহ পাঠ করিতেন এবং বলিতেনঃ এ আয়াতসমূহের মধ্যে এমন একটি আয়াত আছে, যা হাজার আয়াতের চাইতেও উত্তম।
সানাদ দূর্বলঃ তালীকুর রাগীব [১/২১০]। আবু ঈসা বলেন, এ হাদীসটি হাসান গারীব। কোরআন শরীফ এর ফযিলত – এই হাদীসটির তাহকিকঃ দুর্বল হাদীস
অনুচ্ছেদ-২২: [সূরা আল-হাশরের শেষ তিন আয়াতের ফাযীলাত]
২৯২২. মাকিল ইবনি ইয়াসার [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
রাসূলুল্লাহ্ [সাঃআঃ] বলেনঃ যে ব্যক্তি সকালে উপস্থিত হয়ে তিনবার বলবে
أَعُوذُ بِاللَّهِ السَّمِيعِ الْعَلِيمِ مِنَ الشَّيْطَانِ الرَّجِيمِ
“আঊযু বিল্লাহিস্ সামীইল আলীমি মিনাশ্ শাইতানির রাজীম”, তারপর সূরা আল-হাশরের শেষের তিন আয়াত পাঠ করিবে, আল্লাহ্ তাআলা তার জন্য সত্তর হাজার ফেরেশতা নিয়োজিত করবেন। তারা সন্ধ্যা পর্যন্ত তার জন্য দুআ করিতে থাকিবেন। সে ঐ দিন ইন্তেকাল করলে তার শহীদী মৃত্যু হইবে। যে ব্যক্তি সন্ধ্যায় এরূপ পাঠ করিবে, সেও একই রকম গৌরবের অধিকারী হইবে।
যঈফ, তালীকুর রাগীব [২/২২৫] আবু ঈসা বলেনঃ এ হাদীসটি গারীব। আমরা শুধুমাত্র উপরোক্ত সূত্রেই এ হাদীস জেনেছি। কোরআন শরীফ এর ফযিলত – এই হাদীসটির তাহকিকঃ দুর্বল হাদীস
অনুচ্ছেদ-২৩: রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ]-এর ক্বিরাআত কিরূপ ছিল
২৯২৩. ইয়ালা ইবনি মামলাক [রঃ] হইতে বর্ণীতঃ
তিনি রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ]-এর স্ত্রী উম্মু সালামা [রাদি.]-কে প্রশ্ন করেন যে, রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ]-এর [রাতের] কিরাআত ও নামাজ কেমন ছিল? তিনি বললেনঃ তার নামাযের কথা শুনে তোমাদের কি ফায়দা? তিনি যতক্ষণ নামাজ আদায় করিতেন ঠিক ততক্ষণ ঘুমাতেন, আবার উঠে যতক্ষণ ঘুমিয়েছেন ততক্ষণ নামাজ আদায় করিতেন, আবার এ নামাযের সমপরিমাণ সময় ঘুমাতেন। এভাবে তাহাঁর সকাল হত। তারপর তিনি তাহাঁর কিরাআতের বর্ণনা দিতে গিয়ে বলেনঃ তাহাঁর পাঠ ছিল অত্যন্ত সহজবোধ্য তিনি প্রতিটি অক্ষর পৃথক করে পরিষ্কারভাবে উচ্চারণ করিতেন।
যঈফ, যঈফ আবু দাউদ [২৬০], মিশকাত, তাহকীক ছানী [১২১০] আবু ঈসা বলেনঃ এ হাদীসটি হাসান সহীহ গারীব। আমরা শুধুমাত্র লাইস ইবনি সাদের রিওয়ায়াত হিসেবে এ হাদীস জেনেছি, যা তিনি ইবনি আবু মুলাইকা হইতে তিনি ইয়ালা ইবনি মামলাক হইতে তিনি উন্মু সালামা [রাদি.] সূত্রে বর্ণনা করিয়াছেন। ইবনি জুরাইজ উপরোক্ত হাদীসটি ইবনি আবী মুলাইকার সূত্রে উন্মু সালামার বরাতে বর্ণনা করিয়াছেন যে, “রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ] প্রতিটি শব্দ আলাদা আলাদা করে উচ্চারণ করে কুরআন পাঠ করিতেন।” লাইস-এর রিওয়ায়াতটিই অনেক বেশি সহীহ। কোরআন শরীফ এর ফযিলত – এই হাদীসটির তাহকিকঃ দুর্বল হাদীস
২৯২৪. আবদুল্লাহ ইবনি আবু ক্বাইস [রঃ] হইতে বর্ণীতঃ
তিনি বলেন, আমি রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] এর বিত্রের নামাজ বিষয়ে আয়িশা [রাদি.] কে প্রশ্ন করলাম যে, তিনি কি রাতের প্রথম ভাগে বিতর আদায় করিতেন না শেষ ভাগে? তিনি বলিলেন, তিনি দুই সময়েই তা আদায় করিতেন। তিনি কখনো তা রাতের প্রথম ভাগে আদায় করে নিতেন আবার কখনো শেষ রাতে আদায় করিতেন। আমি বললাম, আলহামদুলিল্লাহ, সমস্ত প্রশংসা সেই আল্লাহ্র যিনি এ ব্যাপারে ব্যাপক সুবিধাজনক ব্যবস্থা রেখেছেন। আমি আবার প্রশ্ন করলাম, তাহাঁর ক্বিরাআত পাঠ কেমন ছিল? তিনি কি তা চুপি চুপি পড়তেন না সশব্দে পড়তেন? তিনি বলিলেন, উভয়ভাবেই পড়তেন। কখনো তিনি তা চুপে চুপে পড়তেন, আবার কখনো সশব্দে পড়তেন। আমি বললাম, সমস্ত প্রশংসা আল্লাহ তাআলার যিনি এ ব্যাপারে প্রশস্ততর ব্যবস্থা রেখেছেন। আমি আবার প্রশ্ন করলাম, তিনি জানাবাতের [স্ত্রীসহবাস জনিত গোসল] ব্যাপারে কি করিতেন? তিনি কি ঘুমিয়ে যাওয়ার পূর্বেই গোসল সারতেন না গোসলের পূর্বেই ঘুমিয়ে যেতেন? তিনি বলিলেন, তিনি দুটোই করিতেন। তিনি কখনো গোসলের পর ঘুমাতেন আবার কখনো ওযূ করে ঘুমিয়ে যেতেন [জাগ্রত হওয়ার পর গোসল করিতেন]। আমি বললাম, সমস্ত প্রশংসা আল্লাহ্ তাআলার যিনি এ ব্যাপারেও প্রশস্ততর ব্যবস্থা রেখেছেন।
সহীহঃ সহীহ আবু দাঊদ [২২২, ১২৯১], মুসলিম, বুখারী শুধু বিত্র সংক্রান্ত বিষয় আরো পূর্ণভাবে বর্ণিত হয়েছে। আবু ঈসা বলেন, এ হাদীসটি উপরোক্ত সূত্রে হাসান গারীব।কোরআন শরীফ এর ফযিলত – এই হাদীসটির তাহকিকঃ সহীহ হাদীস
অনুচ্ছেদ-২৪: [হাজীদের নিকটে নাবী [সাঃআঃ] নিজেকে পেশ করিতেন]
২৯২৫. জাবির ইবনি আবদুল্লাহ [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
তিনি বলেন, নাবী [সাঃআঃ] হাজ্জের মৌসুমে নিজেকে বিভিন্ন গোত্রের সামনে পেশ করে বলিতেনঃ এমন কোন লোক নেই কি যে আমাকে তার সম্প্রদায়ের নিকট নিয়ে যেতে পারে? কেননা কুরাইশগণ আমাকে আমার প্রভূর বাণী প্রচার করিতে বাধা দিচ্ছে।
সহীহঃ ইবনি মা-জাহ [২০১]। আবু ঈসা বলেন, এ হাদীসটি গারীব সহীহ। কোরআন শরীফ এর ফযিলত – এই হাদীসটির তাহকিকঃ সহীহ হাদীস
অনুচ্ছেদ-২৫: [আল্লাহ্ তাআলার কালামের মর্যাদা]
২৯২৬. আবু সাঈদ [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
তিনি বলেন, রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলেছেনঃ মহান রাব্বুল ইজ্জাত বলেন, কুরআন [চর্চার ব্যস্ততা] ও আমার যিকির যাকে আমার নিকটে কিছু আবেদন করা হইতে নিবৃত্ত রেখেছে আমি তাকে আমার কাছে যারা চায় তাহাদের চাইতে অনেক উত্তম বখশিশ দিব। সব কালামের উপর আল্লাহ্ তাআলার কালামের গৌরব এত বেশি যত বেশি আল্লাহ্ তাআলার সম্মান তাহাঁর সকল সৃষ্টির উপর।
যঈফ, মিশকাত [২১৩৬], যঈফা [১৩৩৫] আবু ঈসা বলেনঃ এ হাদীসটি হাসান গরীব। কোরআন শরীফ এর ফযিলত – এই হাদীসটির তাহকিকঃ দুর্বল হাদীস
Leave a Reply