কেয়ামতের লক্ষন, শিঙ্গায় ফুৎকার, হাশর, সীরাত, হাউযে কাওসার

কেয়ামতের লক্ষন, শিঙ্গায় ফুৎকার, হাশর, সীরাত, হাউযে কাওসার

কেয়ামতের লক্ষন, শিঙ্গায় ফুৎকার, হাশর, সীরাত, হাউযে কাওসার >> বুখারী শরীফ এর মুল সুচিপত্র পড়ুন

পর্বঃ ৮১, কোমল হওয়া, অধ্যায়ঃ (৩৯-৫৩)=১৫টি

৮১/৩৯. অধ্যায় : নাবী (সাঃআঃ) এর বাণী : “আমাকে ও কিয়ামাতকে পাঠানো হয়েছে এ দুটি আঙ্গুলের মত” । আল্লাহর ইরশাদঃ : ক্বিয়ামাতের ব্যাপার তো চোখের পলকের মত বরং তাত্থেকেও দ্রুত । আল্লাহ সব কিছু করিতেই সক্ষম । (সুরা নাহল ১৬/৭৭)
৮১/৪০. অধ্যায় : কেয়ামতের লক্ষন
৮১/৪১. অধ্যায় : যে ব্যক্তি আল্লাহর সাক্ষাৎ পছন্দ করে, আল্লাহও তার সাক্ষাৎ পছন্দ করেন ।
৮১/৪২. অধ্যায় : মৃত্যুর যন্ত্রণা
৮১/৪৩. অধ্যায় : শিঙ্গায় ফুৎকার ।
৮১/৪৪. অধ্যায় : আল্লাহ দুনিয়াকে মুষ্ঠিতে ধারণ করবেন ।
৮১/৪৫. অধ্যায় : হাশরের অবস্থা কেমন হইবে
৮১/৪৬. অধ্যায় : কিয়ামাতের কম্পন এক ভয়ানক জিনিস- (সুরা হাজ্জ ২২/১) । আগমনকারী মুহূর্ত (ক্বিয়ামাত) নিকটবর্তী- (সুরা নাজ্‌ম ৫৩/৫৭) । ক্বিয়ামাত নিকটবর্তী হয়েছে- (সুরা আল-ক্বামার ৫৪/১) ।
৮১/৪৭. অধ্যায় : আল্লাহর বাণী : তারা কি চিন্তা করে না যে (তাদের মৃত্যুর পর) তাদেরকে আবার উঠানো হইবে, এক মহা দিবসে । যেদিন মানুষ বিশ্বজগতের প্রতিপালকের সামনে দাঁড়াবে । (সুরা আল-মুতাফ্‌ফিফীন ৮৩/৪-৬)
৮১/৪৮. অধ্যায় : ক্বিয়ামাতের দিন কিসাস গ্রহণ ।
৮১/৪৯. অধ্যায় : যার হিসাব পরীক্ষা করা হইবে তাকে আযাব দেয়া হইবে
৮১/৫০. অধ্যায় : সত্তর হাজার লোকের বিনা হিসাবে জান্নাতে প্রবেশ
৮১/৫১. অধ্যায় : জান্নাত ও জাহান্নাম-এর বিবরণ ।
৮১/৫২. অধ্যায় : সীরাত হল জাহান্নামের পুল
৮১/৫৩. অধ্যায় : হাউয [৫০] আল্লাহর বাণী : আমি তোমাকে অশেষ কল্যাণ দান করেছি (যার মধ্যে) কাওসারও অন্তর্ভুক্ত । আবদুল্লাহ ইবনু যায়দ (রাদি.) বর্ণনা করেন, নাবী (সাঃআঃ) বলেছেন : তোমরা হাউযের কাছে আমার সঙ্গে মিলিত হওয়া পর্যন্ত ধৈর্য ধারণ করিবে ।

৮১/৩৯. অধ্যায় : নাবী (সাঃআঃ) এর বাণী : “আমাকে ও কিয়ামাতকে পাঠানো হয়েছে এ দুটি আঙ্গুলের মত” । আল্লাহর ইরশাদঃ : ক্বিয়ামাতের ব্যাপার তো চোখের পলকের মত বরং তাত্থেকেও দ্রুত । আল্লাহ সব কিছু করিতেই সক্ষম । (সুরা নাহল ১৬/৭৭)

৬৫০৩

সাহল (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, নাবী (সাঃআঃ) বলেছেনঃ আমাকে পাঠানো হয়েছে কিয়ামতের সঙ্গে এভাবে। এ বলে তিনি তাহাঁর দু আঙ্গুল দ্বারা ইশারা করে সে দুটোকে প্রসারিত করিলেন। [৩৭] (আঃপ্রঃ- ৬০৫৩, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৬০৫৯)

[৩৭] হাদীসটি কিয়ামাত যে অতি সন্নিকটে তার দিকে ইঙ্গিতবহ । শেষ নাবী মুহাম্মদ (সাঃআঃ)-এর পৃথিবীতে আগমন কিয়ামাতের প্রথম নিদর্শন । কিয়ামাতের অনেক আলামাতই প্রকাশিত হয়ে গেছে যা আমরা দেখিতে পাচ্ছি । ব্যভিচার ছড়িয়ে পড়ছে, আমানাত বিদায় নিচ্ছে, ইল্‌ম উঠে যাচ্ছে, ফাসিক ফাজিররা সমাজের নেতৃত্ব দিচ্ছে, গায়ক গায়িকাদের দারুনভাবে কদর করা হচ্ছে । এখন কিয়ামাত কোন মুহূর্তে ঘটবে সেটাতো কেবল আল্লাহই জানেন । কিয়ামতের পূর্বে কিয়ামতের নিদর্শনসমূহের অগ্রগামিতার হিকমত হল, গাফিলদের সতর্ক করা এবং তাওবাহ ও কিয়ামাতের জন্য প্রস্তুতি গ্রহনে উৎসাহ প্রদান । (ফাতহুল বারী)

৬৫০৪

আনাস ইবনু মালিক (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ

নাবী (সাঃআঃ) বলেছেনঃ আমাকে পাঠানো হয়েছে ক্বিয়ামাতের সঙ্গে এ রকম। [মুসলিম ৫২/২৬, হাদীস ২৯৫১, আহমাদ ১৩৩১৮] (আঃপ্রঃ- ৬০৫৪, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৬০৬০)

৬৫০৫

আবু হুরাইরাহ (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ

নাবী (সাঃআঃ) বলেছেনঃ আমাকে ও ক্বিয়ামাতকে পাঠানো হয়েছে এ দুটি (আঙ্গুলের) ন্যায়। (আঃপ্রঃ- ৬০৫৫, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৬০৬১)

৮১/৪০. অধ্যায় : কেয়ামতের লক্ষন

৬৫০৬

আবু হুরাইরাহ (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ

রাসূলুল্লাহ (সাঃআঃ) বলেছেনঃ ক্বিয়ামাত সংঘটিত হইবে না, যতক্ষণ না সূর্য পশ্চিম দিক থেকে উদিত হইবে। যখন সূর্য পশ্চিম দিক থেকে উদিত হইবে, আর লোকজন তা দেখবে, তখন সকলেই ঈমান আনবে। এ সম্পর্কেই (আল্লাহর বাণী) “তখন তার ঈমান কাজে আসবে না ইতোপূর্বে যে ঈমান আনেনি, কিংবা যে ব্যক্তি ঈমান এনে নেক কাজ করেনি। ক্বিয়ামাত সংঘটিত হইবে (এ অবস্থায়) যে, দুব্যক্তি (বেচা কেনার) জন্য পরস্পরের সামনে কাপড় ছড়িয়ে রাখবে। কিন্তু তারা বেচাকেনার সময় পাবে না। এমন কি তা ভাঁজ করারও সময় পাবে না। আর ক্বিয়ামাত (এমন অবস্থায়) অবশ্যই সংঘটিত হইবে যে, কোন ব্যক্তি তার উষ্ট্রীর দুধ দোহন করে রওয়ানা হইবে কিন্তু তা পান করার সুযোগ পাবে না। আর ক্বিয়ামাত (এমন অবস্থায়) সংঘটিত হইবে যে, কোন ব্যক্তি (তার পশুকে পানি পান করানোর জন্য) চৌবাচ্চা তৈরি করিবে কিন্তু সে এ পানি থেকে পানি পান করানোর সময়ও পাবে না। আর ক্বিয়ামাত (এমন অবস্থায়) কায়েম হইবে যে, কোন ব্যক্তি তার মুখ পর্যন্ত লোক্‌মা উঠাবে, কিন্তু সে তা খাওয়ার সময় ও সুযোগ পাবে না। [৮৫; মুসলিম ৫২/২৬, হাদীস ২৯৫৪] (আঃপ্রঃ- ৬০৫৬, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৬০৬২)

৮১/৪১. অধ্যায় : যে ব্যক্তি আল্লাহর সাক্ষাৎ পছন্দ করে, আল্লাহও তার সাক্ষাৎ পছন্দ করেন ।

৬৫০৭

উবাদাহ ইবনু সামিত (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ

নাবী (সাঃআঃ) বলেছেনঃ যে ব্যক্তি আল্লাহর সাক্ষাৎ লাভ পছন্দ করে, আল্লাহও তার সাক্ষাৎ পছন্দ করেন। আর যে ব্যক্তি আল্লাহর সাক্ষাৎ পছন্দ করে না, আল্লাহও তার সাক্ষাৎ পছন্দ করেন না। তখন আয়েশাহ (রাদি.) অথবা তাহাঁর অন্য কোন স্ত্রী বলিলেন, আমরাও তো মৃত্যুকে পছন্দ করি না। নাবী (সাঃআঃ) বললেনঃ ব্যাপারটা এমন নয়। আসলে, যখন মুমিনের মৃত্যু উপস্থিত হয়, তখন তাকে আল্লাহর সন্তুষ্টি ও তার সম্মানিত হবার খোশ খবর শোনানো হয়। তখন তার সামনের খোশ খবরের চেয়ে তার নিকট অধিক পছন্দনীয় কিছু হইতে পারে না। কাজেই সে তখন আল্লাহর সাক্ষাৎ লাভ করাকেই ভালবাসে, আর আল্লাহও তার সাক্ষাৎ ভালবাসেন। আর কাফিরের যখন মৃত্যু উপস্থিত হয়, তখন তাকে আল্লাহর আযাব ও গজবের সুসংবাদ দেয়া হয়। তখন তার সামনে যা থাকে তার চেয়ে তার কাছে অধিক অপছন্দনীয় আর কিছুই থাকে না। সুতরাং সে তখন আল্লাহর সাক্ষাৎ অপছন্দ করে, আর আল্লাহও তার সাক্ষাত অপছন্দ করেন। [৩৮] [মুসলিম ৪৮/৫, হাদীস ২৬৮৩, ২৬৮৪, আহমাদ ২৪২২৭] (আঃপ্রঃ- ৬০৫৭, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৬০৬৩)

হাদীসটি প্রমাণ করে যে, কোন জীবিত ব্যক্তি পৃথিবীতে আল্লাহকে দর্শন করিতে পারবে না। বরং মুমিনরা মৃত্যুর পরে আল্লাহকে স্বচক্ষে দর্শন করিবে। সহীহ মুসলিমে বর্ণিত আবু উমামার (রাদি.) হাদীসটি এর চাইতে আরো স্পষ্ট। যথা : রাসুল (সাঃ) বলেন : إنكم لن تروا ربكم عز وجل حتى تموتوا। (অর্থাৎ মৃত্যুর পূর্বে তোমরা আল্লাহকে কখনই দেখিতে পাবে না) (সহীহ জামেইস সগীর) (ফাতহুল বারী)

৬৫০৮

আবু মূসা আশ্‌আরী (রাঃ হইতে বর্ণিতঃ

নাবী (সাঃআঃ) বলেছেনঃ যে ব্যক্তি আল্লাহর সাক্ষাত ভালবাসে, আল্লাহও তার সাক্ষাত ভালবাসেন। আর যে ব্যক্তি আল্লাহর সাক্ষাত ভালবাসে না, আল্লাহও তার সাক্ষাত ভালবাসেন না। [মুসলিম ৪৮/৬, হাদীস ২৬৮৬] (আঃপ্রঃ- ৬০৫৮, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৬০৬৪)

৬৫০৯

আয়েশাহ (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ

নাবী সাঃআঃ-এর স্ত্রী আয়েশাহ (রাদি.) বর্ণনা করিয়াছেন যে, রাসূলুল্লাহ সাঃআঃ সুস্থ অবস্থায় বলিতেন যে, কোন নাবীরই (জান) কবয করা হয় না, যতক্ষণ না তাঁকে জান্নাতে তার স্থান দেখানো হয়, আর তাঁকে (জীবন অথবা মৃত্যুর) যে কোন একটিকে বেছে নেয়ার অধিকার না দেয়া হয়। কাজেই যখন নাবী সাঃআঃ-এর মৃত্যুকাল আসন্ন হল, তখন তাহাঁর মাথা আমার রানের উপর ছিল, তখন কিছুক্ষণের জন্য তিনি অচেতন হয়ে পড়লেন। চেতনা ফেরার পর তিনি উপরে ছাদের দিকে তাকিয়ে বললেনঃ আল্লাহুম্মার রাফীকাল আলা ( ইয়া আল্লাহ! তুমিই আমার পরম বন্ধু)। আয়েশাহ (রাদি.) বর্ণনা করেন, তখনই আমি (মনে মনে) বললাম যে, তিনি এখন আমাদেরকে পছন্দ করবেন না। আর আমি বুঝলাম যে, এটাই সেই কথা, যা তিনি ইতোপূর্বে বর্ণনা করিতেন এবং এটাই ছিল তাহাঁর শেষ কথা, যা তিনি উচ্চারণ করেছেনঃ اللهُمَّ الرَّفِيقَ الأَعْلَى হে আল্লাহ! উচ্চ মর্যাদা সম্পন্ন বন্দুর সঙ্গে করে দিন। [৪৪৩৫] (আঃপ্রঃ- ৬০৫৯, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৬০৬৫)

৮১/৪২. অধ্যায় : মৃত্যুর যন্ত্রণা

৬৫১০

আয়েশাহ (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলিতেন, রাসুলুল্লাহ (সাঃআঃ)-এর সামনে চামড়ার অথবা (বর্ণনাকারী উমরের সন্দেহ) কাঠের একপাত্রে কিছু পানি রাখা ছিল। তিনি তাহাঁর হাত ঐ পানির মধ্যে ঢুকিয়ে দিতেন। এরপর নিজ চেহারা দু হাত দ্বারা মাসহ করিতেন আর বলিতেন “লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ, : নিশ্চয়ই মৃত্যুর অনেক যন্ত্রণা। এরপর দুহাত তুলে বলিতে লাগলেন : হে আল্লাহ! উচ্চ মর্যাদা সম্পন্নদের সঙ্গে করে দেন। এ অবস্থাতেই তাহাঁর (জান) কবয করা হলো। আর তাহাঁর হাত দুটো এলিয়ে পড়ল। [৩৯](আঃপ্রঃ- ৬০৬০, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৬০৬৬)

[৩৯] মৃত্যুর কষ্ট ও যন্ত্রণা মর্যাদা হ্রাস প্রমাণ করে না । বরং মুমিনের ক্ষেত্রে তার নেকীকে আরো বৃদ্ধি করে অথবা তার গুনাহকে মিটিয়ে ফেলে । (ফাতহুল বারী)

৬৫১১

আয়েশাহ (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, কিছু সংখ্যক কঠিন মেজাজের গ্রাম্য লোক নাবী (সাঃআঃ) -এর কাছে এসে জিজ্ঞেস করিল- ক্বিয়ামাত কবে হইবে? তখন তিনি তাদের সর্ব-কনিষ্ঠ লোকটির দিকে তাকিয়ে বললেনঃ যদি এ লোক বেঁচে থাকে তবে তার বুড়ো হবার আগেই তোমাদের উপর তোমাদের ক্বিয়ামাত এসে যাবে। হিশাম বলেন, অর্থাৎ তাদের মৃত্যু। [মুসলিম ৫২/২৬, হাদীস ২৯৫২] (আঃপ্রঃ- ৬০৬১, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৬০৬৭)

৬৫১২

ক্বাতাদাহ ইবনু রিবঈ আনসারী (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ

একবার রাসুলুল্লাহ (সাঃআঃ)-এর পাশ দিয়ে একটি জানাযা নিয়ে যাওয়া হলো। তিনি বললেনঃ সে সুখী অথবা (অন্য লোকেরা) তার থেকে শান্তি লাভকারী। লোকেরা জিজ্ঞেস করলো, হে আল্লাহর রাসুল! মুস্তারিহ ও মুস্তারাহ মিনহু-এর অর্থ কি? তিনি বললেনঃ মুমিন বান্দা দুনিয়ার কষ্ট ও যন্ত্রণা থেকে মুক্তি পেয়ে আল্লাহর রহমতের দিকে পৌঁছে শান্তি প্রাপ্ত হয়। আর গুনাহগার বান্দার আচার-আচরণ থেকে সকল মানুষ, শহর-বন্দর, বৃক্ষলতা ও জীবজন্তু শাস্তি প্রাপ্ত হয়। [৬৫১৩; মুসলিম ১১/২১, হাদীস ৯৫০, আহমাদ ২২৬৩৯] (আঃপ্রঃ- ৬০৬২, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৬০৬৮)

৬৫১৩

আবু ক্বাতাদাহ (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ

নাবী (সাঃআঃ) বলেছেনঃ মৃত ব্যক্তি হয়ত নিজে শান্তি প্রাপ্ত হইবে অথবা লোকজন তার থেকে শান্তি লাভ করিবে। মুমিন (দুনিয়ার কষ্ট হইতে) শান্তি লাভ করে। [৬৫১২; মুসলিম ১১/২১, হাদীস ৯৫০] (আঃপ্রঃ- ৬০৬৩, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৬০৬৯)

৬৫১৪

আনাস ইবনু মালিক (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ (সাঃআঃ) বলেছেনঃ তিনটি বস্তু মৃত ব্যক্তির অনুসরণ করে। দুটি ফিরে আসে, আর একটি তার সঙ্গে থেকে যায়। তার পরিবারবর্গ, তার মাল ও তার আমাল তার অনুসরণ করে। তার পরিবারবর্গ ও তার মাল ফিরে আসে, এবং তার আমাল তার সঙ্গে থেকে যায়।[মুসলিম পর্ব ৫৩/হাদীস ২৯৬০, আহমাদ ১২০৮১] (আঃপ্রঃ- ৬০৬৪, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৬০৭০)

৬৫১৫

ইবনু উমর (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ

রাসূলুল্লাহ (সাঃআঃ) বলেছেনঃ তোমাদের কোন ব্যক্তির মৃত্যু হলে, (কবরে) প্রতিদিন সকাল ও সন্ধ্যায় তার জান্নাত অথবা জাহান্নামের ঠিকানা তার সামনে পেশ করা হয়। এবং বলা হয় যে, এই হলো তোমার ঠিকানা তোমার পুনরুত্থান পর্যন্ত (এটা তোমার সামনে পেশ করা হইতে থাকবে)।(আঃপ্রঃ- ৬০৬৫, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৬০৭১)

৬৫১৬

আয়েশাহ (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, নাবী (সাঃআঃ) বলেছেনঃ তোমরা মৃতদেরকে গালি দিও না। কারণ তারা তাদের কৃতকর্মের (পরিণাম ফল) পর্যন্ত পৌঁছে গেছে। (আঃপ্রঃ- ৬০৬৬, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৬০৭২)

৮১/৪৩. অধ্যায় : শিঙ্গায় ফুৎকার ।

মুজাহিদ বলেছেন, শিঙ্গা হচ্ছে ডংকার আকৃতির, যাযরাহ অর্থ চিৎকার, এবং ইবনু আব্বাস (রাদি.) বলেন, নাকুর অর্থ শিঙ্গা, রাযিফা প্রথম ফুৎকার, নাদিফা দ্বিতীয় ফুৎকার ।

৬৫১৭

আবু হুরাইরাহ (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, দুব্যক্তি একে অন্যকে গালমন্দ করিল। একজন মুসলিম, অন্যজন ইয়াহূদী। মুসলমান বলিল, ঐ সত্তার শপথ, যিনি মুহাম্মাদ (সাঃআঃ)-কে জগৎবাসীর উপর শ্রেষ্ঠত্ব দান করিয়াছেন। ইয়াহূদী বলিল, ঐ সত্তার শপথ, যিনি মূসা (আঃ)-কে জগৎবাসীর উপর শ্রেষ্ঠত্ব দিয়েছেন। রাবী বলেন, এত মুসলিম রেগে গেল এবং ইয়াহূদীর মুখে একটি চড় মারল। তখন ইয়াহূদী রাসুলুল্লাহ (সাঃআঃ)-এর কাছে গিয়ে তার মাঝে এবং মুসলিমের মাঝে যা ঘটেছিল সে সম্পর্কে তাঁকে জানাল। তখন রাসুলুল্লাহ (সাঃআঃ) বললেনঃ তোমরা আমাকে মূসা (আঃ)-এর উপর প্রাধান্য দিও না। কারণ কিয়ামাতের দিন সব মানুষ অচেতন হয়ে যাবে, আর আমিই হব সেই ব্যক্তি যে সর্বপ্রথম চেতনা ফিরে পাবে। তখন দেখব মূসা (আঃ) আরশের কিনারা ধরে আছেন। আমি জানি না মূসা (আঃ) কি সেই লোক যিনি অচেতন হওয়ার পর আমার আগেই চেতনা ফিরে পেয়েছেন। নাকি তিনি সেই লোকদের অন্তর্ভুক্ত যাদেরকে আল্লাহ অচেতন হওয়া থেকে রক্ষা করিয়াছেন। (আঃপ্রঃ- ৬০৬৭, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৬০৭৩)

৬৫১৮

আবু হুরাইরাহ (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, নাবী (সাঃআঃ) বলেছেনঃ অচেতন হওয়ার সময় সব মানুষই অচেতন হইবে। আর আমিই হব সর্বপ্রথম ব্যক্তি, যে চৈতন্য হয়ে দাঁড়াবে। আর সে অবস্থায়, মূসা (আঃ) আরশ ধরে থাকবেন। আমি জানি না, যারা অচৈতন্য হয়েছিল তিনি তাদের অন্তর্ভুক্ত কি না? এ হাদীস আবু সাঈদ খুদরী (রাদি.) নাবী (সাঃআঃ) থেকে বর্ণনা করিয়াছেন। (আঃপ্রঃ- ৬০৬৮, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৬০৭৪)

৮১/৪৪. অধ্যায় : আল্লাহ দুনিয়াকে মুষ্ঠিতে ধারণ করবেন ।

এ কথা নাফী (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) ইবনু উমার (রাদি.) সূত্রে নাবী (সাঃআঃ) থেকে বর্ণনা করিয়াছেন ।

৬৫১৯

আবু হুরাইরাহ (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ

আবু হুরাইরা (রাদি.) সূত্রে নাবী (সাঃআঃ) হইতে বর্ণিত। তিনি বলেন, (ক্বিয়ামাতের দিন) আল্লাহ দুনিয়াকে আপন মুষ্ঠিতে আবদ্ধ করবেন আর আকাশকে ডান হাতে গুটিয়ে নিবেন। অতঃপর তিনি বলবেনঃ “আমি একমাত্র বাদশাহ, দুনিয়ার রাজা বাদশাহরা কোথায়?” [৪০](আঃপ্রঃ- ৬০৬৯, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৬০৭৫)

[৪০] স্বীয় ক্ষমতা সম্পর্কে আল্লাহ তাআলা বলেন, তারা আল্লাহর যথাযোগ্য মর্যাদা দেয়না । কিয়ামাতের দিন সমগ্র পৃথিবী তাহাঁর হাতের মুষ্টিতে থাকবে, আর আকাশ মন্ডলী থাকবে ভাঁজ করা অবস্থায় তাহাঁর ডান হাতে–(সুরা আয-যুমার-৬৭)

৬৫২০

আবু সাঈদ খুদরী (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ

নাবী (সাঃআঃ) বলেছেনঃ ক্বিয়ামাতের দিন সারা জগৎ একটি রুটি হয়ে যাবে। আর আল্লাহ জান্নাতীদের মেহমানদারীর জন্য তাকে হাতের মধ্যে নিয়ে এমনভাবে উল্টা-পাল্টা করবেন। যেমন তোমাদের মধ্যে কেউ সফরের সময় তাড়াহুড়া করে এ হাতে সে হাতে নিয়ে রুটি প্রস্তুত করে। এমন সময় এক ইয়াহূদী এসে বলিল, হে আবুল কাসিম! দয়াময় আপনার উপর বারাকাত প্রদান করুন। কিয়ামতের দিন জান্নাতবাসীদের মেহমানদারি সম্পর্কে আপনাকে কি জানাব না? তিনি বললেনঃ হ্যাঁ। লোকটি বলিল, (সে দিন) দুনিয়াটা একটি রুটি হয়ে যাবে। যেমন নাবী (সাঃআঃ) বলেছিলেন (লোকটিও তেমনি বলিল)। তখন নাবী (সাঃআঃ) আমাদের দিকে তাকালেন এবং হাসলেন। এমনকি তার চোয়ালের দাঁত গুলো প্রকাশিত হল। এরপর তিনি বললেনঃ তবে কি আমি তোমাদেরকে (তাদের) তরকারী সম্পর্কে বলব না? তিনি বললেনঃ বালাম এবং নুন। সহাবাগন বলিলেন, সেটা কি জিনিস? তিনি বললেনঃ ষাঁড় এবং মাছ। যাদের কলিজার গুরদা হইতে সত্তর হাজার লোক খেতে পারবে।[মুসলিম ৫০/৩, হাদীস ২৭৯২] (আঃপ্রঃ- ৬০৭০, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৬০৭৬)

৬৫২১

সাহল্ ইবনু সাদ সাঈদ (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, আমি নাবী (সাঃআঃ)-কে বলিতে শুনিয়াছি যে, ক্বিয়ামাতের দিন মানুষকে সাদা ধবধবে রুটির ন্যায় যমীনের ওপর একত্রিত করা হইবে। সাহল বা অন্য কেউ বলেছেন, তার মাঝে কারও কোন পরিচয়ের পতাকা থাকবে না। [মুসলিম ৫০/২, হাদীস ২৭৯০] (আঃপ্রঃ- ৬০৭১, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৬০৭৭)

৮১/৪৫. অধ্যায় : হাশরের অবস্থা কেমন হইবে

৬৫২২

আবু হুরাইরাহ (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ

আবু হুরাইরা (রাদি.) সূত্রে নাবী (সাঃআঃ) হইতে বর্ণিত। তিনি বলেন, ক্বিয়ামাতের দিন মানুষকে একত্রিত করা হইবে তিন প্রকারে। একদল হইবে আল্লাহর প্রতি আসক্ত ও দুনিয়ার প্রতি অনাসক্ত। দ্বিতীয় দল হইবে দুজন, তিনজন, চারজন বা দশজন এক উটের ওপর আরোহণকারী। আর অবশিষ্ট যারা থাকবে অগ্নি তাদেরকে তাড়িয়ে নিয়ে যাবে। যেখানে তারা থামবে আগুনও তাদের সঙ্গে সেখানে থামবে। তারা যেখানে রাত্রি কাটাবে আগুনও সেখানে তাদের সঙ্গে রাত্রি কাটাবে। তারা যেখানে সকাল করিবে আগুনও সেখানে তাদের সঙ্গে সকাল করিবে। যেখানে তাদের সন্ধ্যা হইবে আগুন সেখানেও তাদের সাথে অবস্থান করিবে। [মুসলিম ৫১/১৪, হাদীস ২৮৬১] (আঃপ্রঃ-৬০৭২ , ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৬০৭৮)

৬৫২৩

আনাস ইবনু মালিক (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ

আনাস ইবনু মালিক (রাদি.) হইতে বর্ণিত যে, এক ব্যক্তি বলিল, হে আল্লাহর নাবী! মুখের ভরে কাফিরদেরকে কিভাবে হাশরের ময়দানে উঠানো হইবে? তিনি বললেনঃ দুনিয়াতে যে সত্তা দুপায়ের উপর হাঁটান, তিনি কি ক্বিয়ামাতের দিন মুখের ভরে করে হাঁটাতে পারবেন না? তখন ক্বাতাদাহ (রাদি.) বলিলেন, আমাদের প্রতিপালকের ইয্যতের কসম! অবশ্যই (পারবেন)।(আঃপ্রঃ- ,৬০৭৩ ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৬০৭৯)

৬৫২৪

ইবনু আব্বাস (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, আমি নাবী (সাঃআঃ)-কে বলিতে শুনিয়াছি, নিশ্চয় তোমরা নগ্ন পদে নগ্ন দেহে পায়ে হেঁটে ও খাতনা বিহীন অবস্থায় আল্লাহর সঙ্গে মিলিত হইবে। সুফ্ইয়ান বলেন, এ হাদীসকে ইবনু আব্বাস (রাদি.) এর নাবী (সাঃআঃ) থেকে স্বয়ং শুনা হাদীসসমূহের অন্তর্ভুক্ত মনে করা হয়। [৩৩৪৯; মুসলিম ৫১/১৪, হাদীস ২৮৬০, আহমাদ ১৯১৩] (আঃপ্রঃ- ৬০৭৪, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৬০৮০)

৬৫২৫

ইবনু আব্বাস (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ (সাঃআঃ)-কে মিম্বারে দাঁড়িয়ে এই বলে খুতবা দিতে শুনিয়াছি যে, নিশ্চয় তোমরা আল্লাহর সঙ্গে সাক্ষাত করিবে নগ্ন পদ, নগ্ন দেহ ও খাতনাবিহীন অবস্থায়। (আঃপ্রঃ- ৬০৭৫, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৬০৮১)

৬৫২৬

ইবনু আব্বাস (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, নাবী সাঃআঃ আমাদের মাঝে ভাষণ দিতে দাঁড়ালেন। এরপর বললেনঃ নিশ্চয়ই তোমাদের হাশর করা হইবে নগ্ন পা, নগ্ন দেহে ও খাতনাবিহীন অবস্থায়। আয়াতঃ {كَمَا بَدَأْنَا أَوَّلَ خَلْقٍ نُعِيْدُهُ} অর্থাৎ আল্লাহ বলেন, যেভাবে আমি প্রথমবার সৃষ্টি করেছিলাম, সেভাবে আবার সৃষ্টি করব। আর ক্বিয়ামাতের দিন সর্বপ্রথম ইব্রাহীম (আঃ)-কে বস্ত্র পরিধান করানো হইবে। আমার উম্মাত হইতে কিছু লোককে হাজির করা হইবে আর তাদেরকে আনা হইবে বাম হাতে আমালনামা প্রাপ্তদের ভিতর থেকে। তখন আমি বলব, হে আমার প্রতিপালক! এরা তো আমার উম্মাত। তখন আল্লাহ বলবেনঃ তুমি জান না তোমার পরে এরা কী করেছে। তখন আমি নিবেদন করব, যেমন নিবেদন করেছে পুণ্যবান বান্দা অর্থাৎ ঈসা (আঃ) {وَكُنْتُ عَلَيْهِمْ شَهِيْدًا مَا دُمْتُ فِيْهِمْ….. الْحَكِيْمُ} আয়াত পর্যন্ত। অর্থাৎ আর তাদের কাজ কর্মের ব্যাপারে সাক্ষী ছিলাম যদ্দিন আমি তাদের মাঝে ছিলাম الْحَكِيْمُ….. পর্যন্ত। রাসূলুল্লাহ সাঃআঃ বলেনঃ এরপর বলা হইবে। এরা সর্বদায় দ্বীন ত্যাগ করে পূর্বাবস্থায় ফিরে যেত। [৩৩৪৯; মুসলিম ৫১/১৪, হাদীস ২৮৬০, আহমাদ ২০৯৬] (আঃপ্রঃ- ৬০৭৬, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৬০৮২)

৬৫২৭

আয়েশাহ (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাঃআঃ) বলেছেনঃ মানুষকে হাশরের মাঠে উঠানো হইবে নগ্ন পদ, নগ্ন দেহ ও খাতনাবিহীন অবস্থায়। আয়েশাহ (রাদি.) বলেন, আমি তখন বললাম, হে আল্লাহর রাসুল! তখন তাহলে পুরুষ ও নারীগণ একে অপরের দিকে তাকাবে। তিনি বললেনঃ এরকম ইচ্ছা করার চেয়ে তখনকার অবস্থা হইবে অতীব সংকটময়। [মুসলিম ৫১/১৪, হাদীস ২৮৫৯] (আঃপ্রঃ- ৬০৭৭, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৬০৮৩)

৬৫২৮

আবদুল্লাহ ইবনু মাসঊদ (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, একবার আমরা এক তাঁবুতে নাবী (সাঃআঃ)-এর সঙ্গে ছিলাম। তখন তিনি বললেনঃ তোমাদের সংখ্যা জান্নাতীদের এক-চতুর্থাংশ হলে তোমরা কি খুশি হইবে? আমরা বললাম, হ্যাঁ। তিনি আবার বললেনঃ তোমরা জান্নাতীদের এক-তৃতীয়াংশ হলে তোমরা কি খুশি হইবে? আমরা বললাম, হ্যাঁ। তখন নাবী (সাঃআঃ) বললেনঃ ঐ সত্তার কসম! যাঁর হাতে মুহাম্মাদের প্রাণ। আমি দৃঢ় আশা রাখি যে, তোমরা জান্নাতীদের অর্ধেক হইবে। আর জান্নাতে কেবল মুসলিমগণই প্রবেশ করিতে পারবে। আর মুশরিকদের তুলনায় তোমাদের অবস্থা, যেমন কাল ষাঁড়ের চামড়ার উপর একটি সাদা পশম। অথবা লাল ষাঁড়ের চামড়ার উপর একটি কাল পশম। [৬৬৪২; মুসলিম ১/৯৫, হাদীস ২২১, আহমাদ ৩৬৬১] (আঃপ্রঃ- ৬০৭৮, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৬০৮৪)

৬৫২৯

আবু হুরাইরাহ (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ

নাবী (সাঃআঃ) বলেছেনঃ ক্বিয়ামাতের দিন সর্বপ্রথম আদাম (আঃ)-কে ডাকা হইবে। তিনি তাহাঁর সন্তানদের দেখিতে পাবেন। তখন তাদেরকে বলা হইবে, ইনি তোমাদের পিতা আদাম (আঃ)। তখন তারা বলবে (আরবী) আমরা তোমার খিদমাতে হাযির! এরপর তাঁকে আল্লাহ বলবেন, তোমার জাহান্নামী বংশধরকে বের কর। তখন আদাম (আঃ) বলবেন, হে আমার প্রতিপালক! কী পরিমাণ বের করব? আল্লাহ বলবেনঃ প্রতি একশ তে নিরানব্বই জনকে বের কর। তখন সহাবাগণ বলে উঠলেন, হে আল্লাহর রাসুল! প্রতি একশ থেকে নিরানব্বই জনকে বের করা হইবে তখন আর আমাদের কে বাকী থাকবে? তিনি (সাঃআঃ) বললেনঃ নিশ্চয়ই অন্যান্য সকল উম্মাতের তুলনায় আমার উম্মাত হল কাল ষাঁড়ের গায়ে একটি সাদা চুলের মত।(আঃপ্রঃ- ৬০৭৯, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৬০৮৫)

৮১/৪৬. অধ্যায় : কিয়ামাতের কম্পন এক ভয়ানক জিনিস- (সুরা হাজ্জ ২২/১) । আগমনকারী মুহূর্ত (ক্বিয়ামাত) নিকটবর্তী- (সুরা নাজ্‌ম ৫৩/৫৭) । ক্বিয়ামাত নিকটবর্তী হয়েছে- (সুরা আল-ক্বামার ৫৪/১) ।

৬৫৩০

আবু সাঈদ খুদরী (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ (সাঃআঃ) বলেছেনঃ আল্লাহ ডেকে বলবেন, হে আদাম! তিনি বলবেন, আমি তোমার খিদমতে হাযির। যাবতীয় কল্যাণ তোমারই হাতে। রাসুলুল্লাহ (সাঃআঃ) বলেন, আল্লাহ বলবেন, জাহান্নামীদের (নিক্ষেপ করার জন্য) বের কর। আদাম (আঃ) বলবেন, কী পরিমাণ জাহান্নামী বের করব? আল্লাহ বলবেন, প্রতি হাজারে নয়শ নিরানব্বই জন। আর এটা ঘটবে ঐ সময়, যখন (ক্বিয়ামাতের ভয়াবহতায়) শিশু বুড়িয়ে যাবে। (আয়াত) : আর প্রত্যেক গর্ভবতী গর্ভপাত করে ফেলবে, আর মানুষকে দেখবে মাতাল, যদিও তারা প্রকৃতপক্ষে মাতাল নয়, কিন্তু আল্লাহর শাস্তি বড়ই কঠিন (যার কারণে তাদের ঐ অবস্থা ঘটবে)- (সুরা হাজ্জ ২২/২)। এ ব্যাপারটি সহাবাগণের নিকট বড় কঠিন মনে হল। তখন তাঁরা বললেনঃ হে আল্লাহর রাসুল! আমাদের মধ্য থেকে (মুক্তি প্রাপ্ত) সেই লোকটি কে হইবেন? তিনি বললেনঃ তোমরা সুসংবাদ গ্রহণ কর যে ইয়াযুয ও মাযূয থেকে এক হাজার আর তোমাদের হইবে একজন। এরপর তিনি বললেনঃ শপথ ঐ সত্তার, যাঁর করতলে আমার প্রাণ! আমি আশা রাখি যে তোমরা জান্নাতীদের এক-তৃতীয়াংশ হইবে। বর্ণনাকারী বলেন, এরপর আমরা আল হামদুলিল্লাহ ও আল্লাহু আকবর বলে উঠলাম। তিনি আবার বললেনঃ শপথ ঐ সত্তার, যাঁর হাতের মুঠোয় আমার প্রাণ! আমি অবশ্যই আশা রাখি যে তোমরা জান্নাতীদের অর্ধেক হইবে। অন্য সব উম্মাতের তুলনায় তোমাদের দৃষ্টান্ত হচ্ছে কাল ষাঁড়ের চামড়ায় একটি সাদা চুলের মত। অথবা সাদা দাগ, যা গাধার সামনের পায়ে হয়ে থাকে। [৩৩৪৮; মুসলিম ১/৯২, হাদীস ২২২, আহমাদ ১১২৮৪] (আঃপ্রঃ- ৬০৮০, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৬০৮৬)

৮১/৪৭. অধ্যায় : আল্লাহর বাণী : তারা কি চিন্তা করে না যে (তাদের মৃত্যুর পর) তাদেরকে আবার উঠানো হইবে, এক মহা দিবসে । যেদিন মানুষ বিশ্বজগতের প্রতিপালকের সামনে দাঁড়াবে । (সুরা আল-মুতাফ্‌ফিফীন ৮৩/৪-৬)

(আরবী) সম্পর্কে ইবনু আব্বাস (রাদি.) বলেন, সেদিন দুনিয়ার যাবতীয় যোগসূত্র ছিন্ন হয়ে যাবে ।

৬৫৩১

ইবনু উমার (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ

ইবনু উমার (রাদি.) নাবী (সাঃআঃ) হইতে বর্ণিত। আল্লাহর বাণী : যেদিন মানুষ বিশ্বজগতের প্রতিপালকের সামনে দাঁড়াবে। নাবী (সাঃআঃ) বলেনঃ মানুষ দণ্ডায়মান হইবে কান পর্যন্ত ঘামে ডুবে থাকা অবস্থায়।(আঃপ্রঃ- ৬০৮১, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৬০৮৭)

৬৫৩২

আবু হুরাইরাহ (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ

রাসুল (সাঃআঃ) বলেছেনঃ ক্বিয়ামাতের দিন মানুষের ঘাম ঝরবে। এমনকি তাদের ঘাম যমীনে সত্তর হাত পর্যন্ত ছড়িয়ে পড়বে এবং তাদের মুখ পর্যন্ত ঘামে ডুবে যাবে; এমনকি কান পর্যন্ত।[মুসলিম ৫১/১৫, হাদীস ২৮৬৩, আহমাদ ৯৪২৬] (আঃপ্রঃ- ৬০৮২, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৬০৮৮)

৮১/৪৮. অধ্যায় : ক্বিয়ামাতের দিন কিসাস গ্রহণ ।

ক্বিয়ামাতের আরেক নাম (আরবী) যেহেতু সেই দিন সাওয়াব পাওয়া যাবে এবং সমস্ত কাজের বিনিময় পাওয়া যাবে (আরবী)-এর একই অর্থ । তেমনি (আরবী) ক্বিয়ামাতের নাম । [৪১] (আরবী) এর অর্থ জান্নাতবাসীরা জাহান্নামবাসীদেরকে ভুলিয়ে দেবে ।

৬৫৩৩

আবদুল্লাহ (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ

নাবী (সাঃআঃ) বলেছেনঃ (ক্বিয়ামাতের দিন) মানুষের মধ্যে সর্বপ্রথম হত্যার বিচার করা হইবে। [৪২][৬৮৬৪; মুসলিম ২৮/৮, হাদীস ১৬৭৮, আহমাদ ৩৬৭৪] (আঃপ্রঃ- ৬০৮৩, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৬০৮৯)

الحاقة والقارعة والغاثية والصاخة والتغابن এগুলো কিয়ামত দিবসের এক একটি নাম। ইমাম কুরতবী কিয়ামত দিবসের নাম প্রায় আশিটির মত একত্রিত করেন। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য কয়েকটি হলোঃ

يوم الجمع ويوم الفزع الأكبر ويوم التناد ويوم الوعيد ويوم الحسرة ويوم التلاق ويوم المآب ويوم الفصل ويوم العرض على الله ويوم الخروج ويوم الخلود ومنها يوم عظيم ويوم عسير ويوم مشهود ويوم عبوس قمطرير ومنها يوم تبلى السرائر ومنها يوم لاتملك نفس لنفس شيئا ويوم يدعون إلى نار جهنم ويوم تشخص فيه الابصار ويوم لا ينفع الظالمين معذرتهم ويوم لا ينطقون ويوم لا ينفع مال ولا بنون ويوم لا يكتمون الله حديثا ويوم لا مرد له من الله ويوم لا بيع فيه ولا خلال ويوم لا ريب فيه। (ফাতহুল বারী)

[2] এই হাদীসটির সাথে সুনানে বর্ণিত আবু হুরাইরা (রাদি.)র হাদীসের কোন দ্বন্দ্ব নেই। কারণ আবু হুরাইরার (রাদি.) বর্ণিত হাদীসটিঃ إن أول ما يحاسب به العبد يوم القيامة صلاته আল্লাহর তাআলার ইবাদতের (আল্লাহর হক্বের) সাথে সংশ্লিষ্ট। সুতরাং এই বিষয়ের মধ্যে সর্বপ্রথম সলাতের হিসাব হইবে। আর এখানে বর্ণিত হাদীসটি সৃষ্ট জীবের (বান্দার হক্বের) সাথে সংশ্লিষ্ট। সুতরাং এই বিষয়ের মধ্যে সর্বপ্রথম খুনের হিসাব হইবে। হাদীসটি থেকে আরো জানা যায় : (১) খুনের ব্যাপার অত্যন্ত মারাত্মক। এ বিষয়ে পবিত্র কুরআন ও হাদীসে কঠোর বিধান বর্ণনা করা হয়েছে। (ফাতহুল বারী)

৬৫৩৪

আবু হুরাইরাহ (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ

রাসূলুল্লাহ (সাঃআঃ) বলেছেনঃ যে ব্যক্তি তার ভাই-এর ওপর যুলুম করেছে সে যেন তার কাছ থেকে ক্ষমা নিয়ে নেয়, তার ভাই-এর পক্ষে তার নিকট হইতে পুণ্য কেটে নেয়ার আগেই। কারণ সেখানে কোন দীনার বা দিরহাম পাওয়া যাবেনা। তার কাছে যদি পুণ্য না থাকে তবে তার (মজলুম) ভাই-এর গোনাহ এনে তার উপর চাপিয়ে দেয়া হইবে।(আঃপ্রঃ- ৬০৮৪, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৬০৯০)

৬৫৩৫

আবু সাঈদ খুদরি (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ

وَنَزَعْنَا مَا فِي صُدُورِهِمْ مِنْ غِلٍّ -এর তারপর্যে সাল্ত ইবনু মুহাম্মাদ (রহমাতুল্লাহি আলাইহি)…..আবু সাঈদ খুদরী (রাদি.) হইতে বর্ণিত। তিনি বলেন, নাবী সাঃআঃ বলেছেনঃ মুমিনগণ জাহান্নাম থেকে মুক্তি পাওয়ার পর একটি পুলের ওপর তাদের দাঁড় করানো হইবে, যা জান্নাত ও জাহান্নামের মধ্যস্থলে অবস্থিত। দুনিয়ায় তারা একে অপরের উপর যে যুলুম করেছিল তার প্রতিশোধ গ্রহণ করানো হইবে। তারা যখন পাক-সাফ হয়ে যাবে, তখন তাদের জান্নাতে প্রবেশের অনুমতি দেয়া হইবে। সেই সত্তার কসম! যাঁর হাতে মুহাম্মাদ সাঃআঃ-এর প্রাণ, প্রত্যেক ব্যক্তি তার দুনিয়ার বাসস্থানের তুলনায় জান্নাতের বাসস্থানকে উত্তমরূপে চিনতে পারবে। [২৪৪০] (আঃপ্রঃ- ৬০৮৫, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৬০৯১)

৮১/৪৯. অধ্যায় : যার হিসাব পরীক্ষা করা হইবে তাকে আযাব দেয়া হইবে

৬৫৩৬

আয়েশাহ (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেছেনঃ যার হিসাব খতিয়ে দেখা হইবে তাকে আযাব দেয়া হইবে। আয়েশাহ (রাদি.) বলেন, আমি তখন বললাম, আল্লাহ কি বলেননি যে, তার হিসাব সহজভাবেই নেয়া হইবে? তিনি বলেন, তা তো কেবল পেশ করা মাত্র। (আঃপ্রঃ- ৬০৮৬, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৬০৯২)

আয়েশাহ (রাদি.) হইতে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি নাবী সাঃআঃ-কে এ রকম বলিতে শুনিয়াছি। ইবনু জুরায়জ, মুহাম্মদ ইবনু সুলায়ম, আইউব ও সারিহ ইবনু রুস্তম, ইবনু আবু মুলাইকা আয়েশাহ (রাদি.) সূত্রে নাবী সাঃআঃ থেকে এরূপ বর্ণনার অনুসরণ করিয়াছেন। (আঃপ্রঃ- , ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৬০৯৩)

৬৫৩৭

আয়েশাহ (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ

নাবী (সাঃআঃ) বলেছেনঃ ক্বিয়ামতের দিন যারই হিসাব নেয়া হইবে সে ধ্বংস হয়ে যাবে। [আয়েশাহ (রাদি.) বলেন] আমি বললাম, হে আল্লাহর রাসুল! আল্লাহ কি বলেননি, অতঃপর যার আমালনামা তার ডান হাতে দেয়া হইবে তার হিসাব সহজভাবেই নেয়া হইবে। অতঃপর রাসুলুল্লাহ (সাঃআঃ) বলেনঃ তা কেবল পেশ করা মাত্র। ক্বিয়ামতের দিন যার হিসাব খতিয়ে দেখা হইবে তাকে অবশ্যই আযাব দেয়া হইবে।(আঃপ্রঃ- ৬০৮৭, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৬০৯৪)

৬৫৩৮

আনাস ইবনু মালিক (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ

যে, নাবী (সাঃআঃ) বলিতেন : ক্বিয়ামাতের দিন কাফিরকে হাযির করা হইবে। অতঃপর তাকে বলা হইবে তোমার যদি দুনিয়া ভর্তি সোনা থাকত তাহলে তুমি কি বিনিময়ে তা আযাব থেকে বাঁচতে চাইতে না? সে বলবে, হাঁ। এরপর তাকে বলা হইবে তোমার কাছে তো এর চেয়ে বহু ক্ষুদ্র বস্তু (তৌহীদ) চাওয়া হয়েছিল।(আঃপ্রঃ- ৬০৮৮, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৬০৯৫)

৬৫৩৯

আদী ইবনু হাতিম (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন,নাবী (সাঃআঃ) বলেছেনঃ ক্বিয়ামাতের দিন তোমাদের প্রত্যেক লোকের সাথে আল্লাহ কথা বলবেন। আর সেদিন আল্লাহ ও বান্দার মাঝে কোন দোভাষী থাকবে না। অতঃপর বান্দা দৃষ্টিপাত করে তার সামনে কিছুই দেখিতে পাবে না। সে আবার তার সামনে দৃষ্টি ফেরাবে। তখন তার সামনে হাজির হইবে জাহান্নাম। তোমাদের মধ্যে যে জাহান্নাম থেকে পরিত্রাণ পেতে চায়, সে যেন এক টুকরা খেজুর দিয়ে হলেও নিজেকে বাঁচানোর চেষ্টা করে। (আঃপ্রঃ- ৬০৮৯, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৬০৯৬)

৬৫৪০

আদী ইবনু হাতিম (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, নাবী (সাঃআঃ) বললেনঃ তোমরা জাহান্নামের আগুন থেকে বাঁচ। এরপর তিনি পিঠ ফিরালেন এবং মুখ ঘুরিয়ে নিলেন। আবার বললেনঃ তোমরা জাহান্নামের আগুন থেকে বাঁচ। এরপর তিনি পিঠ ফিরালেন এবং মুখ ঘুরিয়ে নিলেন। তিনবার এরুপ করিলেন। এমন কি আমরা ভাবছিলাম যে তিনি বুঝি জাহান্নাম দেখছেন। তিনি আবার বললেনঃ তোমরা এক টুকরা খেজুর দিয়ে হলেও জাহান্নামর আগুন থেকে বাঁচ। আর যদি কেউ সেটাও না পাও তাহলে উত্তম কথার দ্বারা হলেও (আগুন থেকে নিজেকে রক্ষা কর)। (আঃপ্রঃ- ৬০৮৯, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৬০৯৭)

৮১/৫০. অধ্যায় : সত্তর হাজার লোকের বিনা হিসাবে জান্নাতে প্রবেশ

৬৫৪১

ইবনু আব্বাস (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, নাবী (সাঃআঃ) বলেছেনঃ আগের উম্মাতদের আমার সামনে পেশ করা হয়। কোন নাবী তাহাঁর বহু উম্মাতকে সঙ্গে নিয়ে যাচ্ছেন। কোন নাবীর সঙ্গে অপেক্ষকৃত ছোট দল। কোন নাবীর সঙ্গে আছে দশজন উম্মাত। কোন নাবীর সাথে আছে পাঁচজন আবার কোন নাবী একা যাচ্ছেন। দৃষ্টি দিতেই, হঠাৎ দেখি অনেক বড় একটি দল। জিজ্ঞেস করলামঃ হে জিবরীল! ওরা কি আমার উম্মাত? তিনি বলিলেন, না। তবে আপনি শেষ প্রান্তের দিকে তাকিয়ে দেখুন! আমি দৃষ্টি দিলাম : হঠাৎ দেখি অনেক বড় একটি দল। তিনি বলিলেন, ওরা আপনার উম্মাত। আর তাদের অগ্রবর্তী সত্তর হাজার লোকের কোন হিসাব হইবে না, তাদের কোন আযাব হইবে না। আমি বললাম, কারণ কী! তিনি বলিলেন, তারা শরীরে দাগ লাগাত না, ঝাড়ফুঁকের আশ্রয় নিত না এবং শুভ অশুভ লক্ষণ মানত না। আর তারা কেবল তাদের প্রতিপালকের ওপরই নির্ভর করত। তখন উক্কাশা ইবনু মিহসান নাবী (সাঃআঃ)-এর দিকে দাঁড়িয়ে বলিলেন, আপনি আমার জন্য দুআ করুন আল্লাহ যেন আমাকে তাদের অন্তর্ভুক্ত করেন। রাসুলুল্লাহ (সাঃআঃ) বললেনঃ “হে আল্লাহ তুমি তাকে তাদের অন্তর্ভুক্ত কর।” এরপর আরেক জন উঠে দাঁড়িয়ে বলিল, আমার জন্য দুআ করুন আল্লাহ যেন আমাকে তাঁদের অন্তর্ভুক্ত করেন। রাসূলুল্লাহ (সাঃআঃ) বললেনঃ এ ব্যাপারে উক্কাশা তোমার আগে চলে গেছে। [৪৩] (আঃপ্রঃ- ,৬০৯০ ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৬০৯৮)

[৪৩] উক্কাশা বিন মিহসান ইসলামের প্রাথমিক যুগেই ইসলামে প্রবেশ করেন । তাহাঁর উপনাম আবু মিহসান । তিনি পুরুষ সহাবাদের মধ্যে অধিক সুন্দর ছিলেন । মক্কা হইতে মদীনায় হিজরত করার গৌরব অর্জন করেন । বদর যুদ্ধে অংশগ্রহণ করে বীরত্বের সাথে যুদ্ধ করেন । খালিদ বিন ওয়ালিদের নেতৃত্বাধীন ইসলাম ত্যাগী মুরতাদদের বিরুদ্ধে যুদ্ধকালে ১২ হিজরীতে শহীদ হন । (ফাতহুল বারী)

৬৫৪২

আবু হুরাইরাহ (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ (সাঃআঃ)-কে বলিতে শুনিয়াছি যে, আমার উম্মাত থেকে কিছু লোক দল বেঁধে জান্নাতে প্রবেশ করিবে। তাদের সংখ্যা সত্তর হাজার। তাদের চেহারাগুলো পূর্ণিমার চাঁদের আলোর মত জ্বল জ্বল করিবে। আবু হুরাইরা (রাদি.) বলেন, এতদশ্রবণে উক্কাশা ইবনু মিহসান আসাদী তাহাঁর গায়ে চাদর জড়ানো অবস্থায় দাঁড়ালেন, এবং বলিলেন, হে আল্লাহর রাসুল! আমার জন্য দুআ করুন, আল্লাহ যেন আমাকে তাঁদের মধ্যে শামিল করেন। রাসূলুল্লাহ (সাঃআঃ) দুআ করিলেন : হে আল্লাহ! আপনি একে তাদের মধ্যে শামিল করুন। এরপর আনসার সম্প্রদায়ের এক লোক দাঁড়িয়ে বলিল, হে আল্লাহর রাসুল! আল্লাহর নিকট দুআ করুন, তিনি যে আমাকে তাদের মধ্যে শামিল করেন। নাবী (সাঃআঃ) বললেনঃ উক্কাশা এ ব্যাপারে তোমার চেয়ে এগিয়ে গেছে। (আঃপ্রঃ- ৬০৯১, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৬০৯৯)

৬৫৪৩

সাহল ইবনু সাদ (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন নাবী (সাঃআঃ) বলেছেনঃ আমার উম্মাতের সত্তর হাজার অথবা সাত লাখ লোক একে অপরের হাত ধরে জান্নাতে দাখিল হইবে। বর্ণনাকারীর এ দুসংখ্যার মাঝে সন্দেহ রয়েছে। তাদের প্রথম থেকে শেষ ব্যক্তি পর্যন্ত সকলেই জান্নাতে দাখিল হইবে আর তাদের চেহারাগুলো পূর্ণিমার চাঁদের ন্যায় জ্বল জ্বল করিতে থাকবে। (.১২ ৬০৯২, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৬১০০)

৬৫৪৪

ইবনু উমার (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ

ইবনু উমার (রাদি.) সূত্রে নাবী (সাঃআঃ) হইতে বর্ণিত। তিনি বলেন, জান্নাতীরা জান্নাতে প্রবেশ করিবে আর জাহান্নামীরা জাহান্নামে প্রবেশ করিবে। তখন তাদের মাঝে একজন ঘোষণাকারী দাঁড়িয়ে ঘোষণা দেবে যে, হে জাহান্নামবাসীরা! এখানে মৃত্যু নেই। আর হে জান্নাতবাসীরা! এখানে মৃত্যু নেই। এ জীবন চিরন্তন।(আঃপ্রঃ- ৬০৯৩, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৬১০১)

৬৫৪৫

আবু হুরাইরাহ (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন নাবী (সাঃআঃ) বলেছেনঃ (ক্বিয়ামাতের দিন) জান্নাতবাসীদেরকে বলা হইবে, এ জীবন চিরন্তন, মৃত্যু নেই। জাহান্নামের অধিবাসীদেরকে বলা হইবে, হে জাহান্নামীরা! এ জীবন চিরন্তন, মৃত্যু নেই।(আঃপ্রঃ- ৬০৯৪, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৬১০২)

৮১/৫১. অধ্যায় : জান্নাত ও জাহান্নাম-এর বিবরণ ।

আবু সাঈদ খুদ্রী (রাদি.) বলেন, নাবী (সাঃআঃ) বলেছেন : জান্নাতবাসীরা সর্বপ্রথম যে খাদ্য খাবে তা হল মাছের কলিজা সংলগ্ন অতিরিক্ত অংশ গুর্দা । (আরবী) অর্থ সর্বদা থাকা- (সুরা আত্ তাওবাহ ৯/৭২), (আরবী) অর্থ আমি অবস্থান করেছি- (সুরা আল-ক্বামার ৫৪/৫৫) । এত্থেকেই (আরবী) এসেছে (আরবী) যেখান হইতে সত্য বের হয় ।

৬৫৪৬

ইমরান ইবনু হুসায়ন (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ

ইমরান ইবনু হুসায়ন (রাদি.) সূত্রে নাবী (সাঃআঃ) হইতে বর্ণিত। তিনি বলেনঃ আমি জান্নাতে উঁকি দিয়ে দেখিতে পেলাম, তার অধিকাংশ অধিবাসীই দরিদ্র। আবার জাহান্নামে উঁকি দিয়ে দেখলাম যে এর অধিকাংশ অধিবাসীই মহিলা।(আঃপ্রঃ- ৬০৯৫, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৬১০৩)

৬৫৪৭

উসামাহ ইবনু যায়দ (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ

উসামাহ ইবনু যায়দ (রাদি.) সূত্রে নাবী (সাঃআঃ) হইতে বর্ণিত। তিনি বলেনঃ আমি জান্নাতের দরজায় দাঁড়ালাম। (দেখলাম) সেখানে যারা প্রবেশ করেছে তারা অধিকাংশই দরিদ্র। আর ধনীরা আবদ্ধ অবস্থায় আছে। আর জাহান্নামীদেরকে জাহান্নামে নিয়ে যাবার হুকুম দেয়া হয়েছে। এবং আমি জাহান্নামের দরজায় গিয়ে দাঁড়ালাম। (দেখলাম) সেখানে যারা প্রবেশ করেছে তাদের অধিকাংশই হচ্ছে নারী। (আঃপ্রঃ- ,৬০৯৬ ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৬১০৪)

৬৫৪৮

উমার (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ

ইবনু উমার (রাদি.) হইতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাঃআঃ) বলেছেনঃ জান্নাতীরা জান্নাতে আর জাহান্নামীরা জাহান্নামে যাওয়ার পর, তখন মৃত্যুকে উপস্থিত করা হইবে, এমন কি জান্নাত ও জাহান্নমের মধ্য স্থানে রাখা হইবে। এরপর তাকে যবহ করে দেয়া হইবে, অতঃপর একজন ঘোষণাকারী ঘোষণা দিবে যে, হে জান্নাতীরা! (আর) মৃত্যু নেই। হে জাহান্নামীরা! (আর) মৃত্যু নেই। তখন জান্নাতীগণের বাড়বে আনন্দের উপর আনন্দ। আর জাহান্নামীদের বাড়বে দুঃখের উপর দুঃখ।[৬৫৪৪; মুসলিম ৫১/১৪, হাদীস ২৮৫০, আহমাদ ৬০০০] (আঃপ্রঃ- ৬০৯৭, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৬১০৫)

৬৫৪৯

আবু সাঈদ খুদরী (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাঃআঃ) বলেছেনঃ আল্লাহ জান্নাতীদেরকে লক্ষ্য করে বলবেন, হে জান্নাতীগণ! তারা বলবে, হে আমাদের প্রতিপালক! হাযির, আমরা আপনার খেদমতে হাযির। এরপর আল্লাহ বলবেন, তোমরা কি খুশি হয়েছ? তারা বলবে, কেন খুশি হব না, আপনি আমাদেরকে এমন বস্তু দান করিয়াছেন যা আপনার সৃষ্টি জগতের আর কাউকেই দান করেননি। তখন তিনি বলবেন, আমি এর চেয়েও উত্তম বস্তু তোমাদেরকে দান করব। তারা বলবে, হে আমাদের প্রতিপালক! এর চেয়েও উত্তম সে কোন বস্তু? আল্লাহ বলবেন, তোমাদের ওপর আমি আমার সন্তুষ্টি অবধারিত করব। অতঃপর আমি আর কক্ষনো তোমাদের ওপর নাখোশ হব না।[৭৫১৮; মুসলিম ৫১/২, হাদীস ২৮২৯] (আঃপ্রঃ- ৬০৯৮, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৬১০৬)

৬৫৫০

আনাস (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, বাদরের যুদ্ধে হারিসা (রাদি.) শহীদ হলেন। আর তখন তিনি নাবালক ছিলেন। তাহাঁর মা নাবী (সাঃআঃ)-এর কাছে এসে বলিল, হে আল্লাহর রাসুল! আমার অন্তরে হারিসার স্থান সম্পর্কে আপনি তো জানেন। সে যদি জান্নাতী হয়; আমি ধৈর্য ধারণ করব এবং সাওয়াব মনে করব। আর যদি অন্য কিছু হয় তবে দেখবেন আমি কি করি। রাসুলুল্লাহ (সাঃআঃ) বললেনঃ তোমার জন্য আফসোস! অথবা তুমি কি নির্বোধ হয়ে গেলে! জান্নাত মাত্র একটাই না কি? জান্নাতের সংখ্যা অনেক। আর সে আছে জান্নাতুল ফিরদাউসে।(আঃপ্রঃ- ৬০৯৯, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৬১০৭)

৬৫৫১

আবু হুরাইরাহ (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ

আবু হুরাইরা (রাদি.) সূত্রে নাবী (সাঃআঃ) হইতে বর্ণিত। তিনি বলেনঃ কাফিরের দুকাঁধের মাঝের দূরত্ব একজন দ্রুতগতি অশ্বারোহীর তিন দিনের ভ্রমণপথের সমান হইবে।(আঃপ্রঃ- ৬১০০, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৬১০৮)

৬৫৫২

ইস্‌হাক ইবনু ইবরাহীম (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) হইতে বর্ণিতঃ

ইস্‌হাক ইবনু ইবরাহীম (রহমাতুল্লাহি আলাইহি)…সাহল ইবনু সাদ (রাদি.) সূত্রে রাসুলআল্লাহ (সাঃআঃ) হইতে বর্ণিত। তিনি বলেছেনঃ জান্নাতের মাঝে একটি বৃক্ষ হইবে যার ছায়ায় একজন আরোহী একশ বছর পর্যন্ত চলবে, তবুও বৃক্ষের ছায়াকে অতিক্রম করিতে পারবে না।(আঃপ্রঃ- ৬১০০, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৬১০৮)

৬৫৫৩

রাবী আবু হাযিম হইতে বর্ণিতঃ

রাবী আবু হাযিম বলেন, আমি এই হাদীসটি নুমান ইবনু আবু আইয়্যাশ (রহমাতুল্লাহি আলাইহি)-এর নিকট বর্ণনা করলাম। তখন তিনি বলিলেন, নাবী (সাঃআঃ) থেকে আবু সাঈদ খুদরী (রাদি.) আমার কাছে বর্ণনা করেন যে, তিনি বলেছেনঃ নিশ্চয়ই জান্নাতের মাঝে এমন একটি বৃক্ষ হইবে যার ছায়ায় উৎকৃষ্ট, চটপটে ও দ্রুতগামী অশ্বের একজন আরোহী একশ বছর পর্যন্ত চলতে পারবে। কিন্তু তার ছায়া অতিক্রম করিতে পারবে না।[মুসলিম ৫১/১, হাদীস ২৮২৭, ২৮২৮] (আঃপ্রঃ- ৬১০০, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৬১০৮)

৬৫৫৪

সাহল ইবন সাদ (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ

রাসূলুল্লাহ (সাঃআঃ) বলেছেনঃ আমার উম্মাত হইতে সত্তর হাজার অথবা সাত লক্ষ লোক জান্নাতে প্রবেশ করিবে। রাবী আবু হাযিম জানেন না যে, নাবী (সাঃআঃ) উক্ত দুটি সংখ্যা হইতে কোনটি বলেছেন। তারা একে অপরের হস্ত দৃঢ়ভাবে ধারণ করতঃ জান্নাতে প্রবেশ করিবে। প্রথম ব্যক্তি জান্নাতে প্রবেশ করিবে না, যতক্ষণ না সর্বশেষ ব্যক্তি তাতে প্রবেশ করিবে। তাদের চেহারাগুলো পূর্ণিমার রাতের চাঁদের ন্যায় জ্যোতির্ময় হইবে। (আঃপ্রঃ- ৬১০১, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৬১০৯)

৬৫৫৫

সাহল (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ

রাবী বলেন, আমার পিতা বলেছেন যে, আমি এ হাদীসটি নুমান ইবনু আবু আইয়্যাশকে বলেছি। অতঃপর তিনি বলেছেন, আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, আমি অব্যশই আবু সাঈদকে এ হাদীস বর্ণনা করিতে শুনিয়াছি এবং এতে তিনি এটুকু অতিরিক্ত বর্ণনা করিয়াছেন “যেমন তোমরা পূর্ব ও পশ্চিম দিগন্তে অস্তগামী নক্ষত্রকে দেখে থাক।” [৪৪](আঃপ্রঃ- ,৬১০২ ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৬১১০)

[৪৪] পূর্ব ও পশ্চিম উল্লেখ করার ফায়দা হল উচ্চতা এবং দূরত্বের আধিক্য বর্ণনা করা । (ফাতহুল বারী)

৬৫৫৬

বর্ণনাকারী হইতে বর্ণিতঃ

রাবী বলেন, আমার পিতা বলেছেন যে, আমি এ হাদীসটি নুমান ইবনু আবু আইয়্যাশকে বলেছি । অতঃপর তিনি বলেছেন, আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, আমি অব্যশই আবু সাঈদকে এ হাদীস বর্ণনা করিতে শুনিয়াছি এবং এতে তিনি এটুকু অতিরিক্ত বর্ণনা করিয়াছেন “যেমন তোমরা পূর্ব ও পশ্চিম দিগন্তে অস্তগামী নক্ষত্রকে দেখে থাক ।” [৪৪] [৩২৫৬; মুসলিম ৫১/৩, হাদীস ২৮৩০] (আ.প্র. নাই, ই.ফা. ৬১১০)

৬৫৫৭

আনাস ইবনু মালিক (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ

আনাস ইবনু মালিক (রাদি.) সূত্রে নাবী (সাঃআঃ) হইতে বর্ণিত। তিনি বলেনঃ ক্বিয়ামাতের দিন সবচেয়ে কম শাস্তি প্রাপ্ত লোককে আল্লাহ বলবেন, দুনিয়ার মাঝে যত সম্পদ আছে তার তুল্য সম্পদ যদি (আজ) তোমার কাছে থাকত, তাহলে কি তুমি তার বিনিময়ে নিজেকে মুক্ত করার চেষ্টা করিতে? সে বলবে, হ্যাঁ। এরপর আল্লাহ বলবেন, আমি তেমাকে এর চেয়েও সহজ কাজের হুকুম দিয়েছিলাম, যখন তুমি আদামের পৃষ্ঠদেশে ছিলে। তা এই যে, তুমি আমার সাথে কোন কিছুকে শরীক করিবে না। কিন্তু তুমি তা অস্বীকার করলে আর আমার সাথে শরীক করলে। (আঃপ্রঃ- ৬১০৩, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৬১১১)

৬৫৫৮

জাবির (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ

নাবী(সাঃআঃ) বলেছেনঃ শাফাআতের মাধ্যমে জাহান্নাম থেকে (মানুষকে) বের করা হইবে। যেমন তারা সাআরীর। (রাবী জাবির বলেন) আমি বললাম সাআরীর কী? তিনি বললেনঃ সাআরীর মানে যাগাবীস (কচি ঘাস)। আর ঐ সময় (আমরের) মুখের দাঁত পড়ে গিয়েছিল। (রাবী বলেন) আমি আবু মুহাম্মাদ আমর ইবনু দীনারকে জিজ্ঞেস করলাম, আপনি কি জাবির ইবনু আবদুল্লাহ্কে বর্ণনা করিতে শুনেছেন যে, নাবী (সাঃআঃ) বলেছেন, শাফাআতের দ্বারা লোকদেরকে জাহান্নাম থেকে বের করা হইবে। তিনি বলিলেন, হাঁ। [৪৫][মুসলিম ১/৮৪, হঃ ১৯১, আহমাদ ১৪৩১৬] (আঃপ্রঃ- ৬১০৪, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৬১১২)

মুতাযিলা ও খারেজী সম্প্রদায় গুনাহগার (মুমিন) ব্যক্তিদের যারা জাহান্নামে প্রবেশ করেছে, তাদের জাহান্নাম হইতে শাফাআতের মাধ্যমে বের হওয়াকে অস্বীকার করে। তারা তাদের স্বপক্ষে যে প্রমাণ পেশ করে থাকে তার মধ্যে একটি আয়াত হল : {فَمَا تَنفَعُهُمْ شَفَاعَةُ الشَّافِعِينَ} (৪৮) سورة المدثر আহলে সুন্নাত ওয়াল জামাআত তাদের এই আয়াত দ্বারা দলীল গ্রহণের উত্তরে বলেন যে, আয়াতটি কাফিরদের ব্যাপারে। তারা তাদের স্বপক্ষে যে প্রমাণ পেশ করেন তা হল : (১) উল্লেখিত হাদীসটি ছাড়াও শাফাআতের মাধ্যমে জাহান্নাম হইতে মুমিন গুনাহগার ব্যক্তিদের বের হওয়া অনেক মুতাওয়াতির হাদীস দ্বারা সাব্যস্ত। (২) আল্লাহ তাআলার বাণী : {وَمِنَ اللَّيْلِ فَتَهَجَّدْ بِهِ نَافِلَةً لَّكَ عَسَى أَن يَبْعَثَكَ رَبُّكَ مَقَامًا مَّحْمُودًا} (৭৯) سورة الإسراء জামহুর উলামা বলেন, এর দ্বারা উদ্দেশ্য হল শাফাআত। (৩) ইমাম ওয়াহেদী অতিরঞ্জন করিয়াছেন এবং এ ব্যাপারে ইজমা বর্ণনা করিয়াছেন। (ফাতহুল বারী)

শাফাআতের মাধ্যমে (মানুষদেরকে) জাহান্নাম থেকে বের করা হইবে। কিন্তু কিয়ামাতের দিনে আল্লাহর অনুমতি ছাড়া কেউই মুখ খুলতে পারবে না। আল্লাহ যাকে যার জন্য শাফাআত করার অনুমতি দিবেন, তিনি কেবল তার জন্যই সুপারিশ করিতে পারবেন। আর সে সুপারিশও হইবে যথাযথ ও প্রকৃত সত্য ভিত্তির উপর প্রতিষ্ঠিত। আল্লাহ নিজেই যার জন্য শাফাআতের ইচ্ছে করবেন, কেবল তার জন্যই শাফাআত করিতে বলবেন, এ কথাই ধ্বনিত হয়েছে তাহাঁর এ সব বাণীতে- এমন কে আছে যে তাহাঁর অনুমতি ছাড়া তাহাঁর কাছে সুপারিশ করিবে? (বাকারা ২৫৫ আয়াত)

আরো দেখুন আনআম ৭০, ৯৪ আয়াত, আস সাজদাহ ৪ আয়াত, সাবা ২৩ আয়াত, যুমার ৪৪ আয়াত, ইনফিতার ১৯ আয়াত।

৬৫৫৯

আনাস ইবনু মালিক (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ

আনাস ইবনু মালিক (রাদি.) সূত্রে নাবী (সাঃআঃ) হইতে বর্ণিত। তিনি বলেছেনঃ আযাবে চামড়ায় দাগ পড়ে যাবার পর একদল লোককে জাহান্নাম থেকে বের করা হইবে এবং তারা জান্নাতে প্রবেশ করিবে। তখন জান্নাতীগণ তাদেরকে জাহান্নামী বলেই ডাকবে। (আঃপ্রঃ- ৬০১৫, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৬১১৩)

৬৫৬০

আবু সাঈদ খুদ্রী (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ

নাবী (সাঃআঃ) বলেছেনঃ জান্নাতীগণ যখন জান্নাতে আর জাহান্নামীরা জাহান্নামে প্রবেশ করিবে তখন আল্লাহ বলবেন, যার অন্তঃকরণে সরিষার দানা পরিমাণ ঈমান আছে তাকে বের কর। অতঃপর তাদেরকে এমন অবস্থায় বের করা হইবে যে তারা পুড়ে কয়লা হয়ে গেছে। তাদেরকে জীবন-নদে নামিয়ে দেয়া হইবে। এতে তারা তর-তাজা হয়ে উঠবে যেমন নদী তীরে জমাট আবর্জনায় সজীব উদ্ভিদ গজিয়ে ওঠে। নাবী (সাঃআঃ) আরও বললেনঃ তোমরা কি দেখ না সেগুলো হলুদ রঙের হয়ে আঁকাবাঁকা হয়ে উঠতে থাকে?(আঃপ্রঃ- ৬১০৬, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৬১১৪)

৬৫৬১

নুমান ইবনু বাশীর (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, আমি নাবী (সাঃআঃ)-কে বলিতে শুনিয়াছি যে, ক্বিয়ামাতের দিন ঐ ব্যক্তির সর্বাপেক্ষা লঘু আযাব হইবে, যার দুপায়ের তলায় রাখা হইবে জ্বলন্ত অঙ্গার, তাতে তার মগয ফুটতে থাকবে।[৬৫৬২; মুসলিম ১/৯১, হাদীস ২১৩, আহমাদ ১৮৪৪১] (আঃপ্রঃ- ৬১০৭, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৬১১৫)

৬৫৬২

নুমান ইবনু বাশীর (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, আমি নাবী (সাঃআঃ)-কে বলিতে শুনিয়াছি যে, ক্বিয়ামাতের দিন ঐ ব্যক্তির সর্বাপেক্ষা লঘু আযাব হইবে, যার দুপায়ের তলায় দুটি প্রজ্জ্বলিত অঙ্গার রাখা হইবে। এতে তার মগজ টগবগ করে ফুটতে থাকবে। যেমন ডেক বা কলসী ফুটতে থাকে। (আঃপ্রঃ- ৬১০৮, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৬১১৬)

৬৫৬৩

আদী ইবনু হাতিম (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ

যে, নাবী (সাঃআঃ) (একবার) জাহান্নামের উল্লেখ করিলেন। এরপর তিনি তাহাঁর চেহারা ফিরিয়ে নিলেন এবং এর থেকে নিরাপত্তা চাইলেন। আবার তিনি জাহান্নামের উল্লেখ করে মুখ ফিরিয়ে নিলেন ও এর থেকে নিরাপত্তা চাইলেন। অতঃপর তিনি বললেনঃ তোমরা জাহান্নামের আগুন হইতে নিজেদেরকে রক্ষা কর এক টুক্রা খেজুরের বিনিময়ে হলেও। আর যে তাতেও অক্ষম সে যেন ভাল কথার বিনিময়ে হলেও নিজেকে রক্ষা করে। [৪৬] (আঃপ্রঃ- ৬১০৯, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৬১১৭)

[৪৬] জাহান্নাম থেকে রক্ষা পাওয়ার জন্য আমাদেরকে যথাসাধ্য চেষ্টা করিতে হইবে । হক্কুল্লাহর সাথে সাথে হক্কুল ইবাদ করে যেতে হইবে । অপর বান্দার কল্যাণ সাধন করিতে হইবে- বেশি আর কম, যার পক্ষে যতখানি সম্ভব । এজন্য দান খয়রাত করিতে হইবে, খাদ্য খাওয়াতে হইবে- হোকনা তা অতি সামান্য । ভাল কথা, ভাল শিক্ষা, সৎ পরামর্শ- এ সবও আমাদেরকে জাহান্নাম থেকে বাঁচার ব্যাপারে সাহায্য করিবে ।

৬৫৬৪

আবু সাঈদ খুদরি (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ

তিনি রাসূলুল্লাহ (সাঃআঃ)-কে বলিতে শুনেছেন; যখন তাহাঁর কাছে তাহাঁর চাচা আবু ত্বলিব সম্পর্কে উল্লেখ করা হল। তখন তিনি বললেনঃ ক্বিয়ামাতের দিন আমার শাফাআত সম্ভবত তাহাঁর উপকারে আসবে। আর তখন তাকে জাহান্নামের অগ্নিতে রাখা হইবে যা পায়ের গিরা পর্যন্ত পৌঁছে। তাতে তার মাথার মগজ টগবগ করে ফুটতে থাকবে। (আঃপ্রঃ- ৬১১০, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৬১১৮)

৬৫৬৫

আনাস (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাঃআঃ) বলেছেন, ক্বিয়ামাতের দিন আল্লাহ সমস্ত মানুষকে একত্রিত করবেন। তখন তারা বলবে, আমাদের জন্য আমাদের প্রতিপালকের কাছে যদি কেউ শাফাআত করত, যা এ সংকট থেকে আমাদের উদ্ধার করত। তখন তারা সকলেই আদাম (আঃ)-এর কাছে এসে বলবে, আপনি ঐ ব্যক্তি যাঁকে আল্লাহ নিজ হাতে সৃষ্টি করিয়াছেন। আপনার মাঝে নিজে থেকে রূহ ফুঁকে দিয়েছেন এবং ফেরেশতাদেরকে হুকুম করিয়াছেন; তাঁরা আপনাকে সাজদাহ করেছে। আপনি আমাদের জন্য আমাদের প্রতিপালকের কাছে শাফাআত করুন। তিনি বলবেন : আমি তোমাদের জন্য এ কাজের উপযুক্ত নই এবং স্বীয় অপরাধের কথা উল্লেখ করে বলবেন, তোমরা নূহ (আঃ)-এর কাছে চলে যাও-যাকে আল্লাহ প্রথম রাসুল হিসাবে পাঠিয়েছিলেন। তখন তারা তাহাঁর কাছে আসবে। তিনিও নিজ অপরাধের কথা উল্লেখ করে বলবেন : আমি তোমাদের জন্য এ কাজের উপযুক্ত নই। তোমরা ইবরাহীমের (আঃ)-এর কাছে যাও, যাঁকে আল্লাহ খলীলরূপে গ্রহণ করিয়াছেন। তখন তারা তাহাঁর কাছে আসবে। তিনিও নিজ অপরাধের কথা উল্লেখ করে বলবেন : আমি তোমাদের এ কাজের যোগ্য নই। তোমরা মূসা (আঃ)-এর কাছে যাও, যার সঙ্গে আল্লাহ কথা বলেছেন। তখন তারা তাহাঁর কাছে আসবে। তিনিও বলবেন : আমি তোমাদের জন্য এ কাজের যোগ্য নই। তিনি নিজ অপরাধের কথা উল্লেখ করবেন। তিনি বলবেন : তোমরা ঈসা (আঃ)-এর কাছে যাও। তারা তাহাঁর কাছে আসবে। তখন তিনিও বলবেন : আমি তোমাদের জন্য এ কাজের যোগ্য নই। তোমরা মুহাম্মাদ (সাঃআঃ)-এর কাছে যাও। তাহাঁর অগ্র-পশ্চাতের সমস্ত গুনাহ ক্ষমা করে দেয়া হয়েছে। তখন তারা সকলেই আমার কাছে আসবে। তখন আমি আমার প্রতিপালকের কাছে অনুমতি চাইব। যখনই আমি আল্লাহকে দেখিতে পাব তখন সিজদায় পড়ে যাব। আল্লাহ যতক্ষণ ইচ্ছা আমাকে এ অবস্থায় রাখবেন। এরপর আমাকে বলা হইবে, তোমার মাথা উঠাও। চাও, তোমাকে দেয়া হইবে। বল, তোমার কথা শুনা হইবে। সুপারিশ কর, তোমার সুপারিশ কবূল করা হইবে। তখন আমি মাথা উঠাবো এবং আল্লাহ আমাকে যে প্রশংসার বাণী শিক্ষা দিয়েছেন তার মাধ্যমে আমার প্রতিপালকের প্রশংসা করব। এরপর আমি সুপারিশ করব, তখন আমার জন্য সীমা নির্ধারণ করে দেয়া হইবে। অতঃপর আমি তাদেরকে জাহান্নাম থেকে বের করে বেহেশ্তে প্রবেশ করিয়ে দেব। এরপর আমি আগের মত করব। অতঃপর তৃতীয়বার অথবা চতুর্থবার সিজদায় পড়ে যাব। অবশেষে কুরআনের বাণী মুতাবিক যারা অবধারিত জাহান্নামী তাদের ছাড়া আর কেউই জাহান্নামে অবশিষ্ট থাকবে না। ক্বাতাদাহ (রাদি.) উক্ত আয়াতের ব্যাখ্যায় তখন বলেছিলেন, চিরস্থায়ী জাহান্নাম যাদের জন্য আবশ্যিকভাবে নির্ধারিত হয়ে গেছে। [৪৭](আঃপ্রঃ- ৬১১১, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৬১১৯)

[৪৭] কোন কোন পীর সাহেব বলেন- তিনি আল্লাহর কাছে নিজের মুরীদদের জন্য শাফাআত করে মুরীদকে জাহান্নামের আযাব থেকে রক্ষা করবেন । কিন্তু অত্র হাদীস থেকে আমরা জানতে পারছি, পূর্বেকার সমস্ত নাবীগণ বলবেন- আমরা শাফাআত করার যোগ্য নই । তাহলে কোন কোন পীর সাহেব শাফাআত করার যোগ্য হলেন কী করে? সর্বশেষ রাসুল (সাঃআঃ) ভিন্ন আর কেউই এ কথা বলার অধিকার রাখেনা যে, আমি অমুকের জন্য আল্লাহর কাছে সুপারিশ করব । সুপারিশে দুটি শর্তের উপস্থিতি একান্ত অপরিহার্য- (১) আল্লাহর অনুমতি লাভ করা ব্যতীত কেউই কারো জন্য সুপারিশ করিতে পারবে না । (২) সুপারিশ হইবে একান্তই যথাযথ, প্রকৃত সত্যের উপর প্রতিষ্ঠিত । আর রাসুল (সাঃআঃ) -এর সুপারিশ হইবে বড় গুনাহের সাথে জড়িতদের জন্য । কারণ রাসুল (সাঃআঃ) হাদীসের মধ্যে বলেছেন : “আমার সুপারিশ হইবে আমার উম্মাতের মধ্য থেকে কাবিরাগুনাহে জড়িতদের জন্যে ।” (হাদীসটি আবু দাঊদ, ইবনে মাজাহ ও তিরমিযী বর্ণনা করিয়াছেন, হাদীসটি সহীহ দেখুন “সহীহ আবী দাঊদ” (৪৭৩৯), “সহীহ তিরমিযী” (২৪৩৫, ২৪৩৬) ও “সহীহ ইবনে মাজাহ” (৪৩১০) । কিন্তু কোন্ কাবীরাহ গুনাহকারী এ সুপারিশের অন্তর্ভুক্ত হইবে তা তো কেউ জানে না । অতএব তাহাঁর সুপারিশের উপর ভরসা করে বড় গুনাহে জড়িত হওয়া হইবে বিবেকহীনের কাজ । উল্লেখ্য কোন ব্যক্তি কাফির বা মুশরিক অবস্থায় মারা গেলে সে রাসুল (সাঃআঃ)-এর সুপারিশের অন্তর্ভুক্ত হইবে না ।

৬৫৬৬

ইমরান ইবনু হুসায়ন (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ

ইমরান ইবনু হুসায়ন (রাদি.) সূত্রে নাবী (সাঃআঃ) হইতে বর্ণিত। তিনি বলেন, মুহাম্মাদ (সাঃআঃ)-এর শাফাআতে একদল লোককে জাহান্নাম থেকে বের করা হইবে এবং তারা জান্নাতে প্রবেশ করিবে। তাদেরকে জাহান্নামী বলেই সম্বোধন করা হইবে। (আঃপ্রঃ- ৬১১২, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৬১২০)

৬৫৬৭

আনাস (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ

যে, বদরের যুদ্ধে হারিসা (রাদি.) অজ্ঞাত তীরের আঘাতে শাহাদাত লাভ করলে তাহাঁর মা রাসুলুল্লাহ (সাঃআঃ)-এর নিকট এসে বলিল, হে আল্লাহর রাসুল! আমার অন্তরে হারিসার মায়া-মমতা যে কত গভীর তা তো আপনি জানেন। অতএব সে যদি জান্নাতে থাকে তবে আমি তার জন্য রোনাজারি করব না। আর যদি তা না হয় তবে আপনি শীঘ্রই দেখবেন আমি কী করি। তখন নাবী (সাঃআঃ) তাকে বললেনঃ তুমি কি জ্ঞানশূন্য হয়ে গেছ। জান্নাত কি একটি, না কি অনেক? আর সে তো সবচেয়ে উন্নত মর্যাদার জান্নাত ফিরদাউসে আছে।(আঃপ্রঃ- ৬১১৩, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৬১২১)

৬৫৬৮

আনাস (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ

তিনি আরও বলেনঃ এক সকাল বা এক বিকাল আল্লাহর পথে চলা দুনিয়া ও তার মাঝের সবকিছুর চেয়ে উত্তম। তোমাদের কারো ধনুক পরিমাণ বা পা রাখার জায়গা পরিমাণ জান্নাতের জায়গা দুনিয়া ও তার মাঝের সবকিছুর চেয়ে উত্তম। জান্নাতের কোন নারী যদি দুনিয়ার প্রতি উঁকি মারে তবে তামাম দুনিয়া আলোকিত ও সুঘ্রাণে পূর্ণ হয়ে যাবে। জান্নাতি নারীর ওড়না দুনিয়া ও তার ভিতরের সব কিছুর চেয়ে উত্তম। (আঃপ্রঃ- ৬১১৩, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৬১২১)

৬৫৬৯

আবু হুরাইরাহ (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ

নাবী (সাঃআঃ) বলেছেনঃ যে কোন লোকই জান্নাতে প্রবেশ করিবে, অপরাধ করলে জাহান্নামে তার ঠিকানাটা কোথায় হত তা তাকে দেখানো হইবে যেন সে অধিক অধিক শোকর আদায় করে। আর যে কোন লোকই জাহান্নামে প্রবেশ করিবে নেক কাজ করলে জান্নাতে তার স্থান কোথায় হত তা তাকে দেখানো হইবে যেন এতে তার আফসোস হয়।(আঃপ্রঃ- ৬১১৪, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৬১২২)

৬৫৭০

আবু হুরাইরাহ (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, আমি বললাম, হে আল্লাহর রাসুল! কিয়ামতের দিন আপনার শাফাআত দ্বারা সমস্ত মানুষ থেকে অধিক ভাগ্যবান হইবে কোন ব্যক্তি? তখন তিনি বললেনঃ হে আবু হুরাইরা! আমি ধারণা করেছিলাম যে তোমার আগে কেউ এ ব্যাপারে আমাকে জিজ্ঞেস করিবে না। কারণ হাদীসের প্রতি তোমার চেয়ে বেশি আগ্রহী আমি আর কাউকে দেখিনি। ক্বিয়ামাতের দিন আমার শাফাআত দ্বারা সবচেয়ে ভাগ্যবান ঐ ব্যক্তি হইবে যে বিশুদ্ধ অন্তর থেকে বলে لَا إِلَهَ إِلَّا اللهُ(আঃপ্রঃ- ৬১১৫, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৬১২৩)

৬৫৭১

আবদুল্লাহ ইবনু মাসঊদ (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ

নাবী (সাঃআঃ) বলেছেনঃ সবশেষে যে লোক জাহান্নাম থেকে বের হইবে এবং সবশেষে যে ব্যক্তি জান্নাতে দাখিল হইবে তার সম্পর্কে আমি জানি। এক ব্যক্তি হামাগুড়ি দেয়া অবস্থায় জাহান্নাম থেকে বের হইবে। তখন আল্লাহ বলবেন, যাও জান্নাতে দাখিল হও। তখন সে জান্নাতের কাছে এলে তার ধারণা হইবে যে, জান্নাত ভরতি হয়ে গেছে এবং সে ফিরে আসবে ও বলবে, হে প্রতিপালক! জান্নাত তো ভরতি দেখিতে পেলাম। আবার আল্লাহ বলবেন, যাও জান্নাতে দাখিল হও। তখন সে জান্নাতের কাছে এলে তার ধারণা হইবে যে, জান্নাত ভর্তি হয়ে গেছে। তাই সে ফিরে এসে বলবে, হে প্রতিপালক! জান্নাত তো ভর্তি দেখিতে পেলাম। তখন আল্লাহ বলবেন, যাও জান্নাতে দাখিল হও। কেননা জান্নাত তোমার জন্য দুনিয়ার সমতুল্য এবং তার দশগুণ। অথবা নাবী (সাঃআঃ) বলেছেনঃ দুনিয়ার দশ গুণ। তখন লোকটি বলবে, (হে প্রতিপালক)! তুমি কি আমার সঙ্গে ঠাট্টা বা হাসি-তামাশা করছ? (রাবী বলেন) আমি তখন রাসুলুল্লাহ (সাঃআঃ)-কে তাহাঁর মাড়ির দাঁত প্রকাশ করে হাসতে দেখলাম। এবং তিনি বলছিলেন এটা জান্নাতীদের সর্বনিম্ন অবস্থা। [৪৮][৭৫১১; মুসলিম ১/৮৩, হাদীস ১৮৬, আহমাদ ৩৫৯৫] (আঃপ্রঃ- ৬১১৬, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৬১২৪)

[৪৮] আল্লাহ তাআলার হাসা, রাগ হওয়া আল্লাহর ইচ্ছার সাথে সম্পৃক্ত । তাহাঁর ক্রিয়াবাচক সিফাত যা তাহাঁর জন্য প্রতিষ্ঠিত । সুতরাং (ضحك) বা হাসার অর্থ নেকী, সন্তুষ্টি গ্রহণ করা সঠিক নয় । যেমন (غضب) বা রাগের অর্থ শাস্তি বা অসন্তুষ্টি গ্রহণও আহলে সুন্নাত ওয়াল জামাআতের আকীদা বিশ্বাসের (আক্বীদা) পরিপন্থী । (ফাতহুল বারী)

উল্লেখ্য যে, আল্লাহ তাআলা পবিত্র কুরআন মাজীদে নিজের যে সমস্ত নাম ও গুণাবলী উল্লেখ করিয়াছেন, অথবা তাহাঁর রাসুল (সাঃআঃ) বিশুদ্ধ হাদীসে আল্লাহর যে সব গুণাবলী বর্ণনা করিয়াছেন সেগুলো যথাযথভাবে মেনে নিতে হইবে । এর মধ্যে কোন প্রকারের বিকৃতি, অস্বীকৃতি, ধরন বা প্রকৃতি নির্ণয় অথবা অপব্যাখ্যা, সাদৃশ্য পেশ করা যাবে না । সুতরাং আল্লাহ যে নামে নিজেকে আখ্যায়িত বা গুণান্বিত করিয়াছেন তাহাঁর উপর ঠিক সেই ভাবেই ঈমান আনা অত্যাবশ্যক, রূপক অর্থে নয় ।

৬৫৭২

আব্বাস (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ

তিনি একবার নাবী (সাঃআঃ)-কে জিজ্ঞেস করিলেন, আপনি আবু তালিবের কোন উপকার করিতে পেরেছেন কি?(আঃপ্রঃ- ৬১১৭, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৬১২৫)

৮১/৫২. অধ্যায় : সীরাত হল জাহান্নামের পুল

৬৫৭৩

আবু হুরাইরাহ (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, একবার কয়েকজন লোক বলিল, হে আল্লাহর রাসুল! ক্বিয়ামাতের দিন আমরা কি আমাদের প্রতিপালককে দেখিতে পাব? উত্তরে তিনি বললেনঃ সূর্যের নিচে যখন কোন মেঘ না থাকে তখন তা দেখিতে কি তোমাদের কোন অসুবিধা হয়? তারা বলিল, না, হে আল্লাহর রাসুল! তিনি বললেনঃ পূর্ণিমার চাঁদ যদি মেঘের আড়ালে না থাকে তবে তা দেখিতে কি তোমাদের কোন অসুবিধা হয়? তারা বলিল, না হে আল্লাহর রাসুল! তিনি বললেনঃ তোমরা অবশ্যই ক্বিয়ামাতের দিন আল্লাহ্কে ঐরূপ দেখিতে পাবে। আল্লাহ মানুষকে একত্রিত করে বলবেন, (দুনিয়াতে) তোমরা যে যে জিনিসের ইবাদাত করেছিলে সে তার সঙ্গে চলে যাও। অতএব সূর্যের পূজারী সূর্যের সঙ্গে, চন্দ্রের পূজারী চন্দ্রের সঙ্গে এবং মূর্তি পূজারী মূর্তির সঙ্গে চলে যাবে। অবশিষ্ট থাকবে এ উম্মাতের লোকেরা, যাদের মাঝে মুনাফিক সম্প্রদায়ের লোকও থাকবে। তারা আল্লাহ্কে যে আকৃতিতে জানত, তার আলাদা আকৃতিতে আল্লাহ তাদের কাছে হাযির হইবেন এবং বলবেন, আমি তোমাদের প্রতিপালক। তখন তারা বলবে, আমরা তোমার থেকে আল্লাহর কাছে আশ্রয় চাই। আমাদের প্রতিপালক না আসা পর্যন্ত আমরা এ স্থানেই থেকে যাব। আমাদের প্রতিপালক যখন আমাদের কাছে আসবেন, আমরা তাকে চিনে নেব। এরপর যে আকৃতিতে তারা আল্লাহ্কে জানত সে আকৃতিতে তিনি তাদের কাছে হাযির হইবেন এবং বলবেন, আমি তোমাদের প্রতিপালক। তখন তারা বলবে (হাঁ) আপনি আমাদের প্রতিপালক। তখন তারা আল্লাহর অনুসরণ করিবে। অতঃপর জাহান্নামের পুল স্থাপন করা হইবে। রাসূলুল্লাহ সাঃআঃ বলেন যে, সর্বপ্রথম আমি সেই পুল অতিক্রম করব। আর সেই দিন সমস্ত রাসূলের দুআ হইবে اللهُمَّ سَلِّمْ سَلِّمْ অর্থাৎ হে আল্লাহ! রক্ষা কর, রক্ষা কর। সেই পুলের মাঝে সাদান নামক (এক রকম কাঁটাওয়ালা) গাছের কাঁটার মত কাঁটা থাকবে। তোমরা কি সাদানের কাঁটা দেখেছ? তারা বলিল, হ্যাঁ, ইয়া রাসুরাল্লাহ সাঃআঃ। তখন রাসুল সাঃআঃ বললেনঃ এ কাঁটাগুলি সাদানের কাঁটার মতই হইবে, তবে তা যে কত বড় হইবে সে সম্পর্কে আল্লাহ ছাড়া কেউ জানে না। সে কাঁটাগুলি মানুষকে তাদের আমাল অনুসারে ছিনিয়ে নেবে। তাদের মাঝে কতক লোক এমন হইবে যে তাদের আমালের কারণে ধ্বংস হয়ে যাবে। আর কতক লোক এমন হইবে যে তাদের আমাল হইবে সরিষার মত নগণ্য। তবুও তারা নাজাত পাবে। এমন কি আল্লাহ বান্দাদের বিচার সমাপ্ত করবেন এবং لاَ إِلَهَ إِلاَّ اللهُ এর সাক্ষ্যদাতাদের থেকে যাদেরকে জাহান্নাম থেকে বের করার ইচ্ছা করবেন আল্লাহ তাদেরকে বের করার জন্য ফেরেশতাদেরকে আদেশ করবেন। সাজদাহর চিহ্ন দেখে ফেরেশ্তারা তাদেরকে চিনতে পারবে। আর আল্লাহ বানী আদমের ঐ সাজদাহর স্থানগুলোকে জাহান্নামের জন্য হারাম করে দিয়েছেন। কাজেই ফেরেশ্তারা তাদেরকে এমন অবস্থায় বের করিবে যে, তখন তাদের দেহ থাকবে কয়লার মত। তারপর তাদের দেহে পানি ঢেলে দেয়া হইবে। যাকে বলা হয় মাউল হায়াত জীবন-বারি। সাগরের ঢেউয়ে ভেসে আসা আবর্জনায় যেমন গাছ জন্মায়, পরে এগুলো যেমন সজীব হয় তারাও সেরকম সজীব হয়ে যাবে। এ সময় জাহান্নামের দিকে মুখ করে এক ব্যক্তি দাঁড়িয়ে থাকবে আর বলবে, হে প্রভু! জাহান্নামের লু হাওয়া আমাকে ঝলসে দিয়েছে, এর তেজ আমাকে জ্বালিয়ে দিয়েছে। সুতরাং তুমি আমার চেহারাটা জাহান্নামের দিক থেকে ঘুরিয়ে দাও। এভাবে সে আল্লাহ্কে ডাকতে থাকবে। তখন আল্লাহ বলবেনঃ আমি যদি তোমাকে এটা দিয়ে দেই তবে তুমি আর অন্যটি চাইবে? লোকটি বলবে, না। আল্লাহ, তোমার ইয্যতের কসম! আর অন্যটি চাইব না। তখন তার চেহারাটা জাহান্নামের দিক থেকে ঘুরিয়ে দেয়া হইবে। এরপর সে বলবে, হে প্রতিপালক! তুমি আমাকে জান্নাতের দরজার কাছে পৌঁছে দাও। আল্লাহ বলিলেন, তুমি কি বলনি যে, তুমি আমার কাছে আর অন্য কিছু চাইবে না? আফসোস তোমার জন্য আদম সন্তান! তুমি বড়ই বিশ্বাসঘাতক! সে এরূপই প্রার্থনা করিতে থাকবে। তখন আল্লাহ বলবেনঃ সম্ভবত আমি যদি তোমাকে এটা দিয়ে দেই তবে তুমি অন্য আরেকটি আমার কাছে চাইবে। লোকটি বলবে, না, তোমার ইয্যাতের কসম! অন্যটি আর চাইব না। তখন সে আল্লাহর সাথে ওয়াদা করিবে যে, সে আর কিছুই চাইবে না। তখন আল্লাহ তাকে জান্নাতের দরজার নিকটে নিয়ে দিবেন। সে যখন জান্নাতের ভিতরের নিয়ামতগুলো দেখিতে পাবে, তখন আল্লাহ যতক্ষণ চাইবেন ততক্ষণ সে চুপ থাকবে। এরপরই সে বলিতে থাকবে, হে প্রতিপালক! তুমি আমাকে জান্নাতে প্রবেশ করাও। তখন আল্লাহ বলবেন, তুমি কি বল নাই যে তুমি আর কিছু চাইবে না? আফসোস তোমার জন্য হে আদাম সন্তান! তুমি কতইনা বিশ্বাসঘাতক। লোকটি বলবে, হে প্রতিপালক! তুমি আমাকে তোমার সৃষ্ট জীবের মাঝে সবচেয়ে হতভাগ্য কর না। এভাবে সে চাইতেই থাকবে। শেষে আল্লাহ হেসে দিবেন। আর আল্লাহ যখন হেসে দিবেন, তখন তাকে জান্নাতে প্রবেশের অনুমতি দিয়ে দেবেন। এরপর সে যখন জান্নাতে প্রবেশ করিবে, তখন তাকে বলা হইবে, তোমার যা ইচ্ছে হয় আমার কাছে চাও। সে চাইবে, এমনকি তার সব চাহিদা ফুরিয়ে যাবে। তখন আল্লাহ বলবেনঃ এগুলো তোমার এবং আরো এতটা তোমার। আবু হুরাইরাহ (রাদি.) বলেন, ঐ লোকটি হচ্ছে সবশেষে জান্নাতে প্রবেশকারী। রাবী বলেন যে, এ সময় আবু সাঈদ খুদরী (রাদি.) আবু হুরাইরাহ (রাদি.)-এর সঙ্গে উপবিষ্ট ছিলেন। [৮০৬] (আঃপ্রঃ- ৬১১৮, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৬১২৬)

৬৫৭৪

আবু হুরাইরাহ (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ

আবু হুরাইরা (রাদি.)-এর বর্ণনার মাঝে আবু সাঈদ খুদরীর নিকট কোন রকম পরিবর্তন ধরা পড়েনি। এমন কি তিনি যখন هَذَا لَكَ وَمِثْلُهُ مَعَهُ পর্যন্ত বর্ণনা করিলেন, তখন আবু সাঈদ খুদরী (রাদি.) বলিলেন, আমি রাসুলুল্লাহ (সাঃআঃ)-কে বলিতে শুনিয়াছি, তিনি هَذَا لَكَ وَ عَشَرَةُ أَمْثَالِهِ এটি তোমার এবং এর দশ গুণ বলেছেন। আবু হুরাইরা (রাদি.) বলেন, আমি مِثْلُهُ مَعَهُ মনে রেখেছি। [৪৯](আঃপ্রঃ- ৬১১৮, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৬১২৬)

[৪৯] মেঘমুক্ত আকাশে পূর্ণিমার চাঁদকে যেমন দেখিতে পাওয়া যায়, বান্দারা কিয়ামাতের দিন আল্লাহকে তেমনি সুস্পষ্ট উজ্জ্বলভাবে দেখিতে পাবে । এ সকল হাদীস ও বহু আয়াত থেকে জানা যায় আল্লাহর আকার আছে, তিনি নিরাকার নন । আমরা বাতাসকে দেখিতে পাই না, কেননা তা নিরাকার । কিন্তু আল্লাহর আকার আছে, তাঁকে স্পষ্ট দেখিতে পাওয়া যাবে । তবে কোন কিছুই তাহাঁর মত নয় । তিনি অতুলনীয় । উল্লেখ্য যারা বলেন যে, আল্লাহ নিরাকার তারা কি বলবেন যে, আল্লাহ এ পৃথিবী অবশিষ্ট থাকাকালীন সময়ে নিরাকার ছিলেন আর আখিরাতে তার আকার বিশিষ্ট হয়ে যাবেন? সুরা আরাফের ১৪৩ নম্বর আয়াত পাঠ করুন, সেখানে পাবেন মূসা (আঃ) আল্লাহকে দেখিতে চেয়েছিলেন, কিন্তু আল্লাহ বলিলেন না যে, আমার আকার নেই তুমি আমাকে দেখিতে পাবে না । বরং তিনি তাঁকে দেখার ব্যাপারে শর্ত জুড়ে দিলেন… (উক্ত আয়াত দেখুন) । এছাড়া সুরা শুরার ৫১ নং আয়াত পাঠ করুন সেখানে আল্লাহ রব্বুল আলামীন বলেন : “وَمَاكَانَ لِبَشَرٍ أَنْ يُكَلِّمَهُ اللهُ إِلَّا وَحْيًا أِوْ مِنْ وَرَاءِ حِجَاب…” অতএব যদি আল্লাহ নিরাকার হন তাহলে পর্দার আড়ালের বিষয়টি আসবে কেন? আসলে কুরআন ও হাদীসের অপব্যাখ্যা করলেই যে মানুষ বিভ্রান্তিতে পড়ে দিশেহারা হয়ে যায় এই বিদআতীদের অবস্থাও তাই ।

৮১/৫৩. অধ্যায় : হাউয [৫০] আল্লাহর বাণী : আমি তোমাকে অশেষ কল্যাণ দান করেছি (যার মধ্যে) কাওসারও অন্তর্ভুক্ত । আবদুল্লাহ ইবনু যায়দ (রাদি.) বর্ণনা করেন, নাবী (সাঃআঃ) বলেছেন : তোমরা হাউযের কাছে আমার সঙ্গে মিলিত হওয়া পর্যন্ত ধৈর্য ধারণ করিবে ।

[৫০] হাউয একমাত্র রাসুল (সাঃআঃ)র জন্যই নির্দিষ্ট, সুতরাং হাউজ হক্ব । এ হাউজ সম্পর্কে প্রায় ৮০ জন সাহাবীর বর্ণনা পাওয়া যায় । আর এই অধ্যায়ে ইমাম বুখারী যে হাদীসগুলো বর্ণনা করিয়াছেন সেগুলোর সনদ প্রায় ১৯টি । বুখারী ও মুসলিমে প্রায় ২০জন সাহাবীর বর্ণনা পাওয়া যায় । খারেজী ও কোন কোন মুতাযিলা সম্প্রদায় এই হাউজকে অস্বীকার করে যা আহলে সুন্নাত ওয়াল জামাআতের বিশ্বাসের (আক্বীদা) পরিপন্থী । (ফাতহুল বারী)

৬৫৭৫

আবদুল্লাহ ইবনু মাসঊদ (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ

আবদুল্লাহ ইবনু মাসঊদ (রাদি.) সূত্রে নাবী (সাঃআঃ) হইতে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি তোমাদের আগে হাউয-এর কাছে হাজির হব। [৫১](আঃপ্রঃ- ৬১১৯, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৬১২৭)

[৫১] চোখের আড়ালে কোথায় কী ঘটছে আল্লাহর রাসুল (সাঃআঃ) তা দুনিয়াতে বেঁচে থাকার সময়ও জানতেন না, আর এখন মৃত্যুর পরেও জানেন না । কতক লোক হাউযের পানি পান করার জন্য অগ্রসর হলে নাবী (সাঃআঃ)-কে জানানো হইবে যে তারা বিদআতী কার্যকলাপে লিপ্ত ছিল । বিদআতীদেরকে দূরে সরিয়ে দেয়া হইবে, তাদেরকে পানি পান করিতে দেয়া হইবে না । যারা আল্লাহর রাসুল (সাঃআঃ)-এর সহীহ হাদীসের বিরুদ্ধে নিজেদের মনগড়া নিয়ম পদ্ধতিতে সাওয়াবের আশায় ইবাদাত বন্দেগী করে তারাই বিদআতী পথভ্রষ্ট । এদের ইবাদাত কক্ষনো আল্লাহর নিকট গৃহীত হইবে না আর এরা জাহান্নামী ।

৬৫৭৬

আবদুল্লাহ ইবনু মাসঊদ (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ

আবদুল্লাহ ইবনু মাসঊদ (রাদি.) সূত্রে নাবী (সাঃআঃ) হইতে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি তোমাদের আগে হাউয-এর কাছে গিয়ে হাজির হব। আর (ঐ সময়) তোমাদের কতগুলো লোককে অবশ্যই আমার সামনে উঠানো হইবে। আবার আমার সামনে থেকে তাদেরকে আলাদা করে নেয়া হইবে। তখন আমি বলব, হে প্রতিপালক! এরা তো আমার উম্মাত। তখন বলা হইবে, তোমার পরে এরা কী নতুন কাজ করেছে তাতো তুমি জান না। আসিম আবু ওয়াইল থেকে তার অনুসরণ করিয়াছেন। এবং হুসাইন হুযাইফাহ সূত্রে নাবী (সাঃআঃ) থেকে বর্ণনা করিয়াছেন। [৬৫৭৫; মুসলিম ৪৩/৯, হাদীস ২২৯৭, আহমাদ ৩৮১২] (আঃপ্রঃ- ৬১১৯, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৬১২৭)

৬৫৭৭

ইবনু উমার (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ

ইবনু উমার (রাদি.) সূত্রে নাবী (সাঃআঃ) হইতে বর্ণিত। তিনি বলেনঃ তোমাদের সামনে আমার হাউয এর দূরত্ব হইবে যতটা দূরত্ব জারবা ও আযরুহ নামক স্থান দুটির মাঝে রয়েছে। [মুসলিম ৪৩/৯, হাদীস ২২৯৯, আহমাদ ৪৭২৩] (আঃপ্রঃ- ৬১২০, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৬১২৮)

৬৫৭৮

ইবনু আব্বাস (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, আল-কাউসার হচ্ছে অধিক বা অধিক কল্যাণ, যা আল্লাহ মুহাম্মাদ (সাঃআঃ)-কে দান করিয়াছেন। রাবী আবু বিশ্‌র বলেন, আমি সাঈদকে বললাম যে, লোকেরা তো ধারণা করে সেটি জান্নাতের একটা ঝর্ণা।

তখন সাঈদ বলিলেন, ওটা সেই ঝর্ণা যা জান্নাতের মাঝে রয়েছে। তার ভিতর আছে এমন কল্যাণ যা আল্লাহ তাঁকে প্রদান করিয়াছেন। (আঃপ্রঃ- ৬১২১, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৬১২৯)

৬৫৭৯

আবদুল্লাহ ইবনু আমর (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, নাবী (সাঃআঃ) বলেছেনঃ আমার হাউযের প্রশস্ততা এক মাসের পথের সমান। তার পানি দুধের চেয়ে সাদা, তার ঘ্রাণ মিশ্‌ক-এর চেয়ে বেশি সুগন্ধযুক্ত এবং তার পানপাত্রগুলো হইবে আকাশের তারকার মতো অধিক। তাত্থেকে যে পান করিবে সে আর কক্ষনো পিপাসার্ত হইবে না।(আঃপ্রঃ- ৬১২২, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৬১৩০)

৬৫৮০

আনাস ইবনু মালিক (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ

রাসূলুল্লাহ (সাঃআঃ) বলেছেনঃ আমার হাউযের প্রশস্ততা হল আয়লা হইতে ইয়ামানের সানআ নামক স্থানদ্বয়ের দূরতের সমান আর তার পানপাত্রগুলোর সংখ্যা আকাশের নক্ষত্ররাজির ন্যায়।[মুসলিম ৪৩/৯, হাদীস ২৩০৩] (আঃপ্রঃ- ৬১২৩, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৬১৩১)

৬৫৮১

আনাস ইবনু মালিক (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ

আনাস ইবনু মালিক (রাদি.) সূত্রে নাবী (সাঃআঃ) হইতে বর্ণিত। তিনি বলেছেনঃ আমি জান্নাতে ভ্রমন করছিলাম, এমন সময় এক ঝর্ণার কাছে এলে দেখি যে তার দুধারে ফাঁপা মুক্তার গম্বুজ রয়েছে। আমি বললাম, হে জিবরীল! এটা কি? তিনি বলিলেন, এটা ঐ কাউসার যা আপনার প্রতিপালক আপনাকে দান করিয়াছেন। তার ঘ্রাণে অথবা মাটিতে ছিল উত্তম মানের মিশ্‌ক এর সুগন্ধি। হুদবা (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) সন্দেহ করিয়াছেন। (আঃপ্রঃ- ৬১২৪, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৬১৩২)

৬৫৮২

আনাস (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ

আনাস (রাদি.) সূত্রে নাবী (সাঃআঃ) হইতে বর্ণিত। তিনি বলেছেনঃ আমার সামনে আমার উম্মাতের কতক লোক হাউযের কাছে আসবে। তাদেরকে আমি চিনতে পারব। আমার সামনে থেকে তাদেরকে টেনে নিয়ে যাওয়া হইবে। তখন আমি বলব, এরা আমার উম্মত। তখন আল্লাহ বলবেন, তুমি জান না তোমার পরে এরা কী সব নতুন নতুন মত ও পথ বের করেছিল। [মুসলিম ৪৩/৯, হাদীস ২৩০৪, আহমাদ ১৩৯৯৩] (আঃপ্রঃ- ৬১২৫, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৬১৩৩)

৬৫৮৩

সাহল ইবনু সাদ (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, নাবী (সাঃআঃ) বলেছেনঃ আমি তোমাদের আগে হাউযের নিকট পৌঁছব। যে আমার নিকট দিয়ে অতিক্রম করিবে, সে হাউযের পানি পান করিবে। আর যে পান করিবে সে আর কখনও পিপাসার্ত হইবে না। নিঃসন্দেহে কিছু সম্প্রদায় আমার সামনে (হাউযে) উপস্থিত হইবে। আমি তাদেরকে চিনতে পারব আর তারাও আমাকে চিনতে পারবে। এরপর আমার এবং তাদের মাঝে আড়াল করে দেয়া হইবে। (আঃপ্রঃ- ৬১২৬, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৬১৩৪)

৬৫৮৪

আবু হাযিম হইতে বর্ণিতঃ

নুমান ইবনু আবু আইয়্যাশ আমার নিকট হইতে হাদীস শুনে বলিলেন, তুমিও কি সাহল থেকে এমন শুনেছ? তখন আমি বললাম, হ্যাঁ। তিনি বলিলেন, আমি আবু সাঈদ খুদরীর (রাদি.) ব্যাপারে সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, আমি তার নিকট হইতে এতটুকু বেশি শুনিয়াছি। নাবী সাঃআঃ বলেছেনঃ আমি তখন বলব যে এরা তো আমারই উম্মাত। তখন বলা হইবে, তুমি তো জান না তোমার পরে এরা কি সব নতুন নতুন কথা ও কাজ সৃষ্টি করেছে। রাসুল সাঃআঃ বলেন তখন আমি বলব, আমার পরে যারা দ্বীনের ভিতর পরিবর্তন এনেছে তারা আল্লাহর রহমত থেকে দূরে থাকুক। ইবনু আববাস (রাদি.) বলেন, سُحْقًا অর্থ দূরত্ব سَحِيقٌ অর্থ দূর, سَحَقَهُ وَأَسْحَقَهُ অর্থ তাকে দূর করে দিয়েছে। [৭০৫১; মুসলিম ৪৩/৯, হাদীস ২২৯০, ২২৯১, আহমাদ ২২৮৮৫] (আঃপ্রঃ- নাই, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৬১৩৪)

৬৫৮৫

আবু হুরাইরাহ (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ

রাসূলুল্লাহ সাঃআঃ বলেছেনঃ আমার উম্মাত হইতে একদল লোক ক্বিয়ামাতের দিন আমার সামনে (হাউযে কাউসারে) হাজির হইবে। এরপর তাদেরকে হাউয থেকে আলাদা করে দেয়া হইবে। তখন আমি বলব, হে প্রভু! এরা আমার উম্মাত। তখন আল্লাহ বলবেন, তোমার পরে এরা দ্বীনের মধ্যে কী সব নতুন বিষয় সৃষ্টি করেছে এ ব্যাপারে নিশ্চয়ই তোমার জানা নেই। নিশ্চয় এরা দ্বীন থেকে পিছনের দিকে ফিরে গিয়েছিল। শুআইব (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) যুহরী সূত্রে বর্ণনা করিয়াছেন যে আবু হুরাইরাহ (রাদি.) সূত্রে রাসুল সাঃআঃ থেকে فَيُحَلَّئُونَ বর্ণিত উকায়ল فَيُحَلَّئُونَ বলেছেন। যুবায়দী আবু হুরাইরাহ (রাদি.) সূত্রে নাবী সাঃআঃ থেকে এরকমই বর্ণনা করিয়াছেন। [৬৫৮৬] (আঃপ্রঃ- ,নাই ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৬১৩৪)

৬৫৮৬

সাঈদ ইবনুল মুসাইয়্যাব (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) হইতে বর্ণিতঃ

সাঈদ ইবনুল মুসাইয়্যাব (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) নাবী (সাঃআঃ)-এর সহাবীদের থেকে বর্ণনা করেন যে, নাবী (সাঃআঃ) বলেছেনঃ আমার উম্মাতের কিছু লোক আমার সামনে হাউযে কাউসারে হাজির হইবে। তারপর তাদেরকে সেখান থেকে আলাদা করে নেয়া হইবে। তখন আমি বলব, হে রব! এরা আমার উম্মাত। তিনি বলবেন, তোমার পরে এরা দ্বীনের মধ্যে কী বিষয় সৃষ্টি করেছে সে সম্পর্কে নিশ্চয়ই তোমার জানা নেই। নিঃসন্দেহে এরা দ্বীন থেকে পিছনের দিকে ফিরে গিয়েছিল।(আঃপ্রঃ- ৬১২৭, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৬১৩৫)

৬৫৮৭

আবু হুরাইরাহ (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ

আবু হুরাইরা (রাদি.) সূত্রে নাবী (সাঃআঃ) হইতে বর্ণিত। তিনি বলেন, এক সময় আমি (হাশরের ময়দানে) দাঁড়িয়ে থাকব। হঠাৎ দেখিতে পাব একটি দল এবং আমি যখন তাদেরকে চিনে ফেলব, তখন আমার ও তাদের মাঝ থেকে একটি লোক বেরিয়ে আসবে এবং সে বলবে, আপনি আসুন। আমি বলব, কোথায়? সে বলবে, আল্লাহর কসম জাহান্নামের দিকে। আমি বলব, তাদের অবস্থা কী? সে বলবে, নিশ্চয় এরা আপনার মৃত্যুর পর দ্বীন থেকে পেছনে সরে গিয়েছিল। এরপর হঠাৎ আরেকটি দল দেখিতে পাব। আমি তাদেরকে চিনে ফেলব। তখন আমার ও তাদের মধ্য হইতে একটি লোক বেরিয়ে আসবে। সে বলবে, আসুন! আমি বলব কোথায়? সে বলবে আল্লাহর কসম, জাহান্নামের দিকে। আমি বলব, তাদের অবস্থা কী? সে বলবে, নিশ্চয়ই এরা আপনার মৃত্যুর পর দ্বীন থেকে পেছনে ফিরে গিয়েছিল। অতি নগণ্য সংখ্যক ছাড়া তারা নাযাত পাবে বলে আমার মনে হয় না।(আঃপ্রঃ- ৬১২৮, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৬১৩৬)

৬৫৮৮

আবু হুরাইরাহ (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ

রাসূলুল্লাহ (সাঃআঃ) বলেছেনঃ আমার ঘর ও আমার মিম্বরের মধ্যবর্তী স্থানটি জান্নাতের বাগানসমূহের একটি বাগান। আর আমার মিম্বর আমার হাউযের ওপরে অবস্থিত।(আঃপ্রঃ- ৬১২৯, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৬১৩৭)

৬৫৮৯

জুনদব (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, আমি নাবী (সাঃআঃ)-কে বলিতে শুনিয়াছি : তোমাদের পূর্বেই আমি হাউযে পৌঁছব। [মুসলিম ৪৩/৯, হাদীস ২২৮৯, আহমাদ ১৮৮৩২] (আঃপ্রঃ- ৬১৩০, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৬১৩৮)

৬৫৯০

উকবা ইবনু আমির (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ

যে, নাবী (সাঃআঃ) একদিন বের হলেন এবং সলাতে জানাযার অনুরূপ ওহুদ যুদ্ধে শহীদদের প্রতি সলাত আদায় করিলেন। এরপর তিনি মিম্বরে ফিরে এসে বললেনঃ নিশ্চয় আমি তোমাদের জন্য হাউযের ধারে আগে পৌঁছব। নিশ্চয়ই আমি তোমাদের (আমালের) সাক্ষী হব। আল্লাহর কসম! নিশ্চয়ই আমি এ মুহূর্তে আমার হাউয দেখিতে পাচ্ছি। নিশ্চয়ই আমাকে বিশ্ব ধন ভান্ডারের চাবি দেয়া হয়েছে। অথবা (বলেছেন) বিশ্বের কুঞ্জি। আল্লাহর কসম! আমার ইন্তিকালের পর তোমরা শিরকে লিপ্ত হইবে এ ভয় আমি করি না; তবে তোমাদের ব্যাপারে আমার আশঙ্কা হয় যে, দুনিয়া অর্জনের উদ্দেশ্যে তোমরা পরস্পরে প্রতিযোগিতা করিবে। (আঃপ্রঃ- ৬১৩১, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৬১৩৯)

৬৫৯১

হারিসা ইবনু ওয়াহব (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, আমি নাবী (সাঃআঃ)-কে হাউযে কাউসার সম্পর্কে আলোচনা করিতে শুনিয়াছি। এ বিষয়ে তিনি বলেছেনঃ হাউযে কাউসার মাদীনাহ এবং সানআর মধ্যকার দূরত্বের মতো। (আঃপ্রঃ- , ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৬১৪০)

৬৫৯২

হারিসাহ (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ

হারিসাহ (রাদি.) (কিঞ্চিৎ) অতিরিক্ত বর্ণনা করেন যে, তিনি নাবী (সাঃআঃ) থেকে হাউযে কাউসারের প্রশস্ততা মাদীনাহ ও সানআর দূরত্বের সমান কথাটুকু শুনেছেন। তখন মুসতাওরিদ তাঁকে বলিলেন যে, আল আওয়ানী বলেছেন তা কি তুমি শুননি? তিনি বলিলেন, না। মুসতাওরীদ বলিলেন, এর পাত্রগুলো তারকার মত দেখা যাবে।[মুসলিম ৪৩/৯, হাদীস ২২৯৮] (আঃপ্রঃ- ৬১৩২, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৬১৪০)

৬৫৯৩

আসমা বিনত আবু বাকর (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, নাবী সাঃআঃ বলেছেনঃ নিশ্চয়ই আমি হাউযের ধারে থাকব। তোমাদের মধ্য হইতে যারা আমার কাছে আসবে আমি তাদেরকে দেখিতে পাব। কিছু লোককে আমার সামনে থেকে ধরে নিয়ে যাওয়া হইবে। তখন আমি বলব, হে প্রতিপালক! এরা আমার অন্তর্ভুক্ত, এরা আমার উম্মাত। তখন বলা হইবে, তুমি কি জান তোমার পরে এরা কী সব আমাল করেছে? আল্লাহর কসম! এরা দ্বীন থেকে সর্বদাই পেছন দিকে ফিরে যেত। তখন ইবনু আবু মুলায়কা বলিলেন, হে আল্লাহ! দ্বীন থেকে পিছনে ফেরা থেকে অথবা দ্বীনের ব্যাপারে ফিত্নায় পড়া থেকে আমরা তোমার কাছে পানাহ চাই। আবু আবদুল্লাহ বুখারী (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) বলেন, أَعْقَابِكُمْ تَنْكِصُونَ অর্থ হল تَرْجِعُونَ عَلَى الْعَقِبِ অর্থাৎ তোমরা পিছনে ফিরে যাবে। [৭০৪৮; মুসলিম ৪৩/৯, হাদীস ২২৯৩] (আঃপ্রঃ- ৬১৩৩, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৬১৪১)

Comments

Leave a Reply