কূটকৌশল

কূটকৌশল

কূটকৌশল >> বুখারী শরীফ এর মুল সুচিপত্র পড়ুন

পর্বঃ ৯০, পানীয় দ্রব্যসমূহ, অধ্যায়ঃ (১-১৫)=১৫টি

৯০/১. অধ্যায়ঃ কূট চাল ত্যাগ করা। [১৩৭] এবং কসম ও অন্যান্য ক্ষেত্রে যে যা নিয়ত করিবে ফলাফল প্রাপ্ত হইবে।
৯০/২. অধ্যায়ঃ সালাত
৯০/৩. অধ্যায়ঃ যাকাত এবং সদকা দেয়ার ভয়ে যেন একত্রিত পুঁজিকে পৃথক করা না হয় এবং পৃথক পুঁজিকে যেন একত্র করা না হয়।
৯০/৪. অধ্যায়ঃ বিবাহ
৯০/৫. অধ্যায়ঃ কেনা-বেচায় যে কূটচাল পছন্দীয় নয়। প্রয়োজনের অতিরিক্ত ঘাস উত্পাদনে বাধা দেয়ার জন্য প্রয়োজনের অতিরিক্ত পানি সরবরাহে বাধা দেয়া যাবে না।
৯০/৬. অধ্যায়ঃ দালালী করা অপছন্দনীয় [১৪০] হওয়া প্রসঙ্গে
৯০/৭. অধ্যায়ঃ কেনা-বেচায় ধোঁকাবাজি নিষিদ্ধ হওয়া প্রসঙ্গে।
৯০/৮. অধ্যায়ঃ অভিভাবকের দ্বারা আকর্ষণীয়া ইয়াতীম বালিকার পূর্ণ মাহর না দেয়ার জন্য কূটকৌশল গ্রহণ করা নিষিদ্ধ হওয়া প্রসঙ্গে।
৯০/৯. অধ্যায়ঃ কেউ যদি কোন বাঁদী চুরি করার পর বলে, সে মরে গেছে এবং বিচারকও মৃত বাঁদীর মূল্যের ফায়সালা করে দেন। এরপর যদি সে বাঁদী মালিকের হস্তগত হয়ে যায়, তখন সে মালিকেরই হইবে। তবে মালিক মূল্য ফেরত দেবে। এ মূল্য (বাঁদীর) দাম বলে গণ্য হইবে না।
৯০/১০. অধ্যায়ঃ
৯০/১০. অধ্যায়ঃ
৯০/১১. অধ্যায়ঃ বিয়ে
৯০/১২. অধ্যায়ঃ কোন নারীর জন্য স্বামী ও সতীনের বিরুদ্ধে কূটকৌশল অবলম্বন করা অপছন্দনীয় এবং এ ক্ষেত্রে নাবী (সাল্লালাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর ওপর যা অবতীর্ণ হয়েছে।
৯০/১৩. অধ্যায়ঃ প্লেগ মহামারী আক্রান্ত এলাকা থেকে পালিয়ে যাওয়ার জন্য কৌশল গ্রহণ করা নিষিদ্ধ।
৯০/১৪. অধ্যায়ঃ হেবা ও শুফআর ক্ষেত্রে কূটকৌশল গ্রহণ করা।
৯০/১৫. অধ্যায়ঃ বখ্‌শিশ পাওয়ার জন্য কর্মচারীর কৌশল গ্রহন করা

৯০/১. অধ্যায়ঃ কূট চাল ত্যাগ করা। [১৩৭] এবং কসম ও অন্যান্য ক্ষেত্রে যে যা নিয়ত করিবে ফলাফল প্রাপ্ত হইবে।

[১৩৭] সব কৌশল বা ছলচাতুরী সাধারণভাবে বর্জনীয় নয়, বরং কিছু কৌশল বা ছলচাতুরী শরীয়াসম্মত। আর এর নিয়মনীতি হচ্ছে, যদি এর দ্বারা হারাম থেকে পলায়ন এবং গুনাহ থেকে দূরে থাকা উদ্দেশ্য হয় তাহলে তা চমৎকার। আর যদি মুসলমানের হাক্ব নষ্ট করা উদ্দেশ্য হয় তাহলে তা শরীয়ত সম্মত হইবে না। বরং তা গুনাহ ও শত্রুতা বলে বিবেচিত হইবে। (ফাতহুল বারী)

৬৯৫৩

উমর ইবনু খাত্তাব (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ

তিনি ভাষণ দিতে গিয়ে বলেন, আমি নাবী (সাঃআঃ)-কে বলিতে শুনিয়াছি হে জনতা! সকল আমলই নিয়তের সঙ্গে সম্পর্কযুক্ত। যে যা নিয়ত করিবে সে তা-ই পাবে। যার হিজ্‌রত আল্লাহ ও তাহাঁর রাসুল (সাঃআঃ)-এর জন্য হইবে তার হিজরত আল্লাহ ও তাহাঁর রাসুল (সাঃআঃ)-এর জন্যই হইবে। আর যার হিজরত দুনিয়া পাওয়ার জন্য বা কোন মহিলাকে বিয়ে করার জন্য হইবে, তার হিজরত সে জন্যই হইবে যে জন্য সে হিজরত করেছে। (আঃপ্রঃ- ৬৪৭০, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৬৪৮৩)

* সব কৌশল বা ছলচাতুরী সাধারণভাবে বর্জনীয় নয়, বরং কিছু কৌশল বা ছলচাতুরী শরীয়াসম্মত। আর এর নিয়মনীতি হচ্ছে, যদি এর দ্বারা হারাম থেকে পলায়ন এবং গুনাহ থেকে দূরে থাকা উদ্দেশ্য হয় তাহলে তা চমৎকার। আর যদি মুসলমানের হাক্ব নষ্ট করা উদ্দেশ্য হয় তাহলে তা শরীয়ত সম্মত হইবে না। বরং তা গুনাহ ও শত্রুতা বলে বিবেচিত হইবে। (ফাতহুল বারী)

৯০/২. অধ্যায়ঃ সালাত

৬৯৫৪

আবু হুরায়রা (রাদি.) সূত্রে নাবী (সাঃআঃ) হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, বায়ু বের হলে ওযূ না করা পর্যন্ত আল্লাহ তোমাদের কারো সালাত কবুল করবেন না।(আঃপ্রঃ- ,৬৪৭১ ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৬৪৮৪)

৯০/৩. অধ্যায়ঃ যাকাত এবং সদকা দেয়ার ভয়ে যেন একত্রিত পুঁজিকে পৃথক করা না হয় এবং পৃথক পুঁজিকে যেন একত্র করা না হয়।

৬৯৫৫

আনাস (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বর্ণনা করেন যে, রাসুলুল্লাহ (সাঃআঃ) কর্তৃক নির্ধারিত সদাকাহর ব্যাপারে আবু বকর (রাদি.) তার কাছে একটি ফরমান পাঠান। এতে লিখেন যে, সদকা প্রদানের আশংকায় যেন পৃথক মালকে একত্র করা না হয় এবং একত্রিত মালকে যেন পৃথক করা না হয়। [১৩৮](আঃপ্রঃ- ৬৪৭২, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৬৪৮৫)

[১৩৮] যাকাত আদায়ের সময় হলে যাকাত না দেয়ার জন্য যৌথ কোন সম্পদকে বিভক্ত করা অথবা পৃথক পৃথক সম্পদকে মিলিয়ে দেয়ার কৌশল অবলম্বনের অবৈধতা প্রমানের জন্য ইমাম বুখারী এই হাদীসটিকে বর্ণনা করিয়াছেন।

পৃথক সম্পদকে মিলিত করার পদ্ধতি হল, তিন ব্যক্তির আলাদা আলাদা ৪০টি করে ছাগল আছে। ফলে তাদের প্রত্যেকের ১টি করে যাকাত দেয়া ওয়াজিব। কিন্তু যাকাত দেওয়ার আগমুহূর্তে তারা তাদের আলাদা আলাদা সম্পদকে মিলিয়ে দিয়ে বলে যে, এটি তাদের যৌথ সম্পদ। ফলে তাদেরকে আর প্রতি চল্লিশে ১টি করে ছাগল যাকাত দিতে হইবে না। বরং যেহেতু ৪০-১২০ পর্যন্ত ১টি ছাগল সেহেতু তারা শুধু ১টি ছাগল যৌথভাবে যাকাত হিসেবে দেয়। এই কৌশল অবৈধ।

আর যৌথ সম্পদকে বিভক্ত করার পদ্ধতি হল, দুই ব্যক্তির যৌথভাবে ২শ ২টি ছাগল আছে। ফলে তাদের উপর তিনটি ছাগল যাকাত হিসাবে আদায় করা ওয়াজিব। কিন্তু তারা যাকাত আদায়ের আগ মুহূর্তে যৌথ সম্পদকে পৃথক করে নেয়। এখন তারা প্রত্যেকে ১টি করে ছাগল যাকাত দিবে- যেহেতু প্রত্যেকে ১০১টি ছাগল ভাগে পেয়েছে। কেননা ছাগলের যাকাত ৪০-১২০ পর্যন্ত ১টি ছাগল। এই কৌশল অবলম্বনও অবৈধ। (ফাতহুল বারী)

৬৯৫৬

ত্বলহা ইবনু উবাইদুল্লাহ (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ

এক এলোমেলো কেশধারী বেদুঈন রাসুলুল্লাহ (সাঃআঃ)-এর কাছে এসে বলিল, হে আল্লাহর রাসুল! আল্লাহ আমার উপর সালাত থেকে কী ফরয করিয়াছেন, তা বলে দিন। তিনি বললেনঃ পাঁচ বারের সালাত, তবে তুমি কিছু নফল পড়তে পার। সে বলিল, আল্লাহ আমার উপর সওম থেকে কী ফরয করিয়াছেন তা আমাকে বলে দিন। তিনি বললেনঃ রমযান মাসের সওম। তবে তুমি কিছু নফল আদায় করিতে পার। সে বলিল, আল্লাহ আমার উপর যাকাত থেকে কী ফরয করিয়াছেন সে সম্পর্কে আমাকে বলে দিন। বর্ণনাকারী বলেন, রাসুলুল্লাহ (সাঃআঃ) তাকে ইসলামী হুকুম আহ্কাম সম্পর্কে জানিয়ে দিলেন। সে বলিল, ঐ সত্তার কসম! যিনি আপনাকে সম্মানিত করিয়াছেন, আমি নফল কিছু করব না। এবং আল্লাহ আমার উপর যা ফরয করিয়াছেন তা থেকে কমাবও না। তা শুনে রাসূলুল্লাহ (সাঃআঃ) বললেনঃ যদি লোকটি এর উপর স্থির থাকে, তাহলে সফলকাম হয়েছে। যদি এ সত্যের উপর স্থির থাকে তাহলে তাকে জান্নাতে প্রবেশ করানো হইবে। (আঃপ্রঃ- ৬৪৭৩, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৬৪৮৬)

কোন কোন মনীষী বলেন, একশ বিশটি উটের যাকাত হলো দুটি হিক্‌কা। যদি যাকাত থেকে বাঁচার জন্য সে এগুলো স্বেচ্ছায় ধ্বংস করে ফেলে অথবা দান করে দেয় অথবা অন্য কোন বাহানা তালাশ করে যাকাত থেকে বেঁচে থাকার জন্য তাহলে তার উপর কোন কিছু ওয়াজিব হইবে না।

৬৯৫৭

আবু হুরায়রা (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ (সাঃআঃ) বলেছেনঃ তোমাদের প্রত্যেকের সঞ্চিত ধন, যার যাকাত আদায় করা হয়নি, ক্বিয়ামাতের দিন টাকওয়ালা হিংস্র সাপে পরিণত হইবে। সম্পদের মালিক তা থেকে পালাতে থাকবে। কিন্তু সাপ তার পিছে লেগে থাকবে। আর বলবে, আমি তোমার সঞ্চিত সম্পদ। তিনি বলেন, আল্লাহর শপথ! সাপ তার পিছু ধাওয়া করিতেই থাকবে। পরিশেষে সে বাধ্য হয়ে তার হাত প্রসারিত করে দেবে। ফলে সাপ তার মুখ গিলে নেবে। (আঃপ্রঃ- ৬৪৭৪, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৬৪৮৭)

৬৯৫৮

বর্ণনাকারী হইতে বর্ণিতঃ

রাসুলুল্লাহ (সাঃআঃ) বলেন: পশুর মালিক যদি তার হক যাকাত আদায় না করে তাহলে পশুকে তার পিছে লাগিয়ে দেয়া হইবে। পশু তার মুখমন্ডল পায়ের ক্ষুর দ্বারা আঁচড়ে ফেলবে।

কোন কোন মনীষী বলেন, কোন ব্যক্তির কয়েকটি উট ছিল, এগুলোতে যাকাত ওয়াজিব হয়ে যাবার আশংকায় যাকাত এড়াবার উদ্দেশ্যে কূট আশ্রয় নিয়ে বছর পূর্ণ হবার একদিন আগে সমপরিমাণ উটের বদলে বা ছাগল বা গরুর বা মুদ্রার বিনিময়ে বিক্রি করে ফেলল, তাহলে তার উপর কোন কিছু ওয়াজিব হইবে না। অথচ ইনি বলেন, যদি বছর পূর্ণ হবার একদিন অথবা এক বছর আগেই উটের যাকাত দিয়ে দেয় তাহলে তার পক্ষে আদায় হয়ে যাবে।(আঃপ্রঃ- ৬৪৭১, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৬৪৮৭)

৬৯৫৯

ইবনু আব্বাস (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, সাদ ইবনু উবাদাহ আনসারী (রাদি.) রাসুলুল্লাহ (সাঃআঃ)-এর কাছে তাহাঁর মায়ের মানত সম্পর্কে জানতে চাইলেন, যে মানত তার মায়ের যিম্মায় ছিল। কিন্তু তা আদায় করার পূর্বে তার মৃত্যু হয়। রাসুলুল্লাহ (সাঃআঃ) বললেনঃতুমি তার পক্ষ থেকে আদায় করে দাও।

কোন কোন মনীষী বলেন, যখন উটের সংখ্যা বিশে পৌঁছে তখন তার যাকাত হইবে চারটি ছাগল। কিন্তু যদি সে যাকাত থেকে রেহাই পাওয়ার জন্য অথবা যাকাত এড়াবার কূটচাল হিসেবে বছর পূর্ণ হবার আগে ঐগুলো দান করে দেয় অথবা বিক্রি করে ফেলে, তাহলে তার উপর কিছু ওয়াজিব হইবে না। তেমনি যদি সে ঐগুলো ধ্বংস করে দেয় তারপর সে মারা যায় তাহলেও তার মালের উপর কোন যাকাত ওয়াজিব হইবে না। (আঃপ্রঃ- ৬৪৭৫, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৬৪৮৮)

৯০/৪. অধ্যায়ঃ বিবাহ

৬৯৬০

আবদুল্লাহ (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ

রাসুলুল্লাহ (সাঃআঃ) শিগার থেকে নিষেধ করিয়াছেন। বর্ণনাকারী বলেন, আমি নাফি (রহমাতুল্লাহি আলাইহি)- কে জিজ্ঞেস করলাম, শিগার কী? তিনি বলিলেন, কেউ এক ব্যক্তির মেয়ে বিয়ে করিবে এবং সে তার মেয়েকে ঐ ব্যক্তির কাছে বিনা মোহরে বিয়ে দেবে। কেউ কোন লোকের বোনকে বিয়ে করিবে এবং সে তার বোনকে ঐ লোকের কাছে বিনা মোহরে বিয়ে দেবে।

কোন কোন আলিম বলেন, যদি কেউ কূট কৌশলের সাহায্য নিয়ে শিগারের ভিত্তিতে বিয়ে করে নেয়, তাহলে বিয়ে কার্যকর হয়ে যাবে। তবে শর্তটি বাতিল হইবে। আর মুতআ সম্পর্কে তিনি বলেন, বিয়ে ফাসিদ ও শর্ত বাতিল। আবার কেউ কেউ বলেন মুতআ ও শিগার উভয়টি জায়েয হইবে। আর শর্ত বাতিল হইবে। (আঃপ্রঃ- ৬৪৭৬, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৬৪৮৯)

৬৯৬১

মুহাম্মাদ ইবনু আলী (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ

আলী (রাদি.)-কে বলা হলো – ইবনে আব্বাস (রাদি.) মহিলাদের মুতআ বিয়েতে কোন আপত্তি মনে করেন না। তখন তিনি বলিলেন, রাসুলুল্লাহ (সাঃআঃ) খায়বারের দিন মুতআ ও গৃহপালিত গাধার গোশ্‌ত (খাওয়া) থেকে নিষেধ করিয়াছেন।

কোন কোন লোক বলেন, যদি কৌশলের মাধ্যমে মুতআ বিয়ের চুক্তি করে নেয় তবে বিয়ে ফাসিদ বলে গণ্য হইবে। আর কেউ কেউ বলেন, বিয়ে বৈধ হইবে আর শর্ত বাতিল হইবে।(আঃপ্রঃ- ৬৪৭৭, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৬৪৯০)

৯০/৫. অধ্যায়ঃ কেনা-বেচায় যে কূটচাল পছন্দীয় নয়। প্রয়োজনের অতিরিক্ত ঘাস উত্পাদনে বাধা দেয়ার জন্য প্রয়োজনের অতিরিক্ত পানি সরবরাহে বাধা দেয়া যাবে না।

৬৯৬২

আবু হুরায়রা (রা:) হইতে বর্ণিতঃ

রাসুলুল্লাহ (সাঃআঃ) বলেন: প্রয়োজনের বেশি ঘাস উত্পাদনে বাধা দেয়ার জন্য প্রয়োজনের বেশি পানি সরবরাহে বাধা দেয়া যাবে না। [১৩৯](আঃপ্রঃ- ৬৪৭৮, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৬৪৯১)

[১৩৯] অর্থাৎ এক ব্যক্তির একটি নিজস্ব কূপ রহিয়াছে। কূপটির চারপাশে রহিয়াছে সকলের জন্য উন্মুক্ত ঘাস। লোকটি চাচ্ছে যে, এই ঘাসগুলো যেন শুধু তারই হয়ে যায়। কিন্তু যেহেতু চারণভূমির ঘাস সকলের জন্য উন্মুক্ত তাই সে লোকদের সেখানে চতুস্পদ জন্তু চরাতে নিষেধ করিতেও পারছে না। ফলে সে তার কূপের পানি সংগ্রহ থেকে লোকদের নিষেধ করে। তখন লোকজন যেখানে পানি রহিয়াছে সেই চারণভূমির দিকে ঝুঁকে পড়ে। অবশেষে কূপপার্শ্ববর্তী চারণভূমির ঘাস তার জন্যই নির্ধারিত হয়ে যায়। অতিরিক্ত পানি থেকে নিষেধ করার আসল উদ্দেশ্যই হচ্ছে ঐ চারণভূমির ঘাস থেকে নিষেধ করা। সুতরাং এই কৌশল ও ছলচাতুরীর অবৈধতা প্রমাণের জন্যই ইমাম বুখারী হাদীসটি উল্লেখ করিয়াছেন। (ফাতহুল বারী)

৯০/৬. অধ্যায়ঃ দালালী করা অপছন্দনীয় [১৪০] হওয়া প্রসঙ্গে

[১৪০] এখানে মাকরূহ থেকে উদ্দেশ্য মাকরূহে তাহরীমী। (ফাতহুল বারী)

৬৯৬৩

ইবনু উমর (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ

রাসুলুল্লাহ (সাঃআঃ) এক ক্রেতার উপর দিয়ে অন্য ক্রেতার দরাদরি করিতে নিষেধ করিয়াছেন। (আঃপ্রঃ- ৬৪৭৯, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৬৪৯২)

৯০/৭. অধ্যায়ঃ কেনা-বেচায় ধোঁকাবাজি নিষিদ্ধ হওয়া প্রসঙ্গে।

আইউব (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) বলেন, লোকেরা আল্লাহকে ধোঁকা দিতে চায়, যেন তারা মানুষকে ধোঁকা দেয়। তারা যদি প্রকাশ্যে কাজটি করত তবে তা আমার নিকট অধিক সহজ মনে হত।

৬৯৬৪

ইবনু উমর (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ

এক লোক নাবী (সাঃআঃ)-এর কাছে উল্লেখ করিল যে, সে কেনা-বেচার সময় প্রতারিত হয়ে যায়। তিনি বললেনঃযখন তুমি কেনা-বেচা করিবে তখন বলবে (কোন) ধোঁকাবাজি নেই। (আঃপ্রঃ- ৬৪৮০, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৬৪৯৩)

৯০/৮. অধ্যায়ঃ অভিভাবকের দ্বারা আকর্ষণীয়া ইয়াতীম বালিকার পূর্ণ মাহর না দেয়ার জন্য কূটকৌশল গ্রহণ করা নিষিদ্ধ হওয়া প্রসঙ্গে।

৬৯৬৫

উরওয়াহ (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) হইতে বর্ণিতঃ

তিনি আয়েশাহ (রাদি.)-কে এ আয়াত সম্পর্কে জিজ্ঞেস করেন

.{وَإِنْ خِفْتُمْ أَنْ لاَ تُقْسِطُوا فِي الْيَتَامَى فَانْكِحُوا مَا طَابَ لَكُمْ مِنْ النِّسَاءِ}

যদি তোমরা আশঙ্কা কর যে, (নারী) ইয়াতীমদের প্রতি সুবিচার করিতে পারবে না, তবে নারীদের মধ্য হইতে নিজেদের পছন্দমত দুই-দুই, তিন-তিন ও চার-চার জনকে বিবাহ কর- (সুরা আন্-নিসা ৪/৩)।

তিনি বলিলেন, এ আয়াত ঐ ইয়াতীম মেয়ের ব্যাপারে নাযিল হয়েছে, যে তার অভিভাবকের তত্ত্বাবধানে আছে। আর অভিভাবক তার সম্পদ ও সৌন্দর্যের প্রতি আকৃষ্ট হয়ে পড়ে এবং তার স্বগোত্রীয় মহিলাদের ক্ষেত্রে প্রচলিত মাহরের চেয়ে কম মাহর দিয়ে বিয়ে করে নেয়ার মনস্থ করে। তাই তাদেরকে এমন ইয়াতীম মেয়েদেরকে বিয়ে করা থেকে নিষেধ করা হয়েছে। তবে যদি পূর্ণ মাহর দিয়ে তাদের সঙ্গে সুবিচার করে তবে অন্য কথা। এরপর লোকেরা রাসূলুল্লাহ সাঃআঃ-এর কাছে এ ব্যাপারে জানতে চাইলে আল্লাহ এ আয়াত অবতীর্ণ করেনঃ লোকেরা তোমার কাছে নারীদের সম্বন্ধে বিধান জানতে চাচ্ছে…… (সুরা আন্-নিসা ৪/১২৭)। তারপর হাদীসের (বাকি অংশ) বর্ণনা করেন। [২৪৯৪] (আঃপ্রঃ- ৬৪৮১, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৬৪৯৪)

৯০/৯. অধ্যায়ঃ কেউ যদি কোন বাঁদী চুরি করার পর বলে, সে মরে গেছে এবং বিচারকও মৃত বাঁদীর মূল্যের ফায়সালা করে দেন। এরপর যদি সে বাঁদী মালিকের হস্তগত হয়ে যায়, তখন সে মালিকেরই হইবে। তবে মালিক মূল্য ফেরত দেবে। এ মূল্য (বাঁদীর) দাম বলে গণ্য হইবে না।

কোন কোন মনীষী বলেন, বাঁদীটি অপহরণকারীরই থাকবে। কারণ মালিক মূল্য গ্রহণ করে নিয়েছে। এ ক্ষেত্রে ঐ লোকের জন্য একটা কূটকৌশল অবলম্বনের ব্যবস্থা করে দেয়া হলো। যে লোকের কারো দাসী পছন্দ হয়, কিন্তু মালিক তা বিক্রয় করে না, তখন সে তা অপহরণ করে বাহানা করে বলিল যে, সে মরে গেছে। যাতে করে মালিক মূল্য গ্রহণ করে নেয়। আর অন্যের দাসী অপরহণকারীর জন্য হালাল হয়ে যায়। অথচ নাবী (সাঃআঃ) বলেন : একে অন্যের মাল হরণ করা তোমাদের জন্য হারাম। প্রত্যেক বিশ্বাসঘাতকের জন্য ক্বিয়ামাতের দিন একটা পতাকা থাকবে।

৬৯৬৬

ইবনু উমর (রাদি.) সূত্রে নাবী (সাঃআঃ) হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, প্রত্যেক বিশ্বাসঘাতকের জন্য ক্বিয়ামাতের দিন একটা পতাকা থাকবে, যার দ্বারা তাকে চেনা যাবে। (আঃপ্রঃ- ৬৪৮২, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৬৪৯৫

৯০/১০. অধ্যায়ঃ

৯০/১০. অধ্যায়ঃ

৬৯৬৭

উম্মু সালামা (রাদি.) সূ্ত্রে নাবী (সাল্লালাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেছেনঃ আমি তো একজন মানুষ। আর তোমরা আমার কাছে বিবাদ মীমাংসার জন্য এসে থাক। তোমাদের এক পক্ষ অন্য পক্ষ অপেক্ষা দলীল-প্রমাণ পেশ করার ক্ষেত্রে বেশি পারদর্শী হইতে পারে। ফলে আমি আমার শোনার কারণে যদি কাউকে তার অন্য ভাইয়ের হক দিয়ে দেই, তাহলে যেন সে তা গ্রহণ না করে। কেননা, আমি তার জন্য জাহান্নামের একটা অংশই পৃথক করে দিচ্ছি। [১৪১](আঃপ্রঃ- ৬৪৮৩, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৬৪৯৬)

[১৪১] চাপার জোরে বিচারককে ঠকিয়ে জেনে শুনে অন্যের মাল আত্মসাৎ করা জাহান্নামের টুকরা ভক্ষণ করা।

৯০/১১. অধ্যায়ঃ বিয়ে

৬৯৬৮

আবু হুরায়রা (রাদি.) সূত্রে নাবী (সাল্লালাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেছেন, কুমারী নারী বিয়ে দেয়া যাবে না, যতক্ষণ পর্যন্ত না তার অনুমতি গ্রহণ করা হইবে। আর বিধবা নারী বিয়ে দেয়া যাবে না, যতক্ষণ পর্যন্ত না তার মত গ্রহণ করা হইবে। প্রশ্ন করা হল, হে আল্লাহর রাসুল! তার অনুমতি কেমন করে? তিনি বললেনঃ যখন সে নীরব থাকে।

কোন কোন লোক বলেন, যদি কুমারীর অনুমতি নেয়া না হয় এবং তাকে বিয়ে দেয়া না হয় অতঃপর কোন লোক কূটচালের আশ্রয় নিয়ে দুজন মিথ্যা সাক্ষী দাঁড় করায় যে, ঐ লোক উক্ত মহিলাকে তার সম্মতি নিয়ে বিয়ে করেছে এবং বিচারকও তার বিয়ে বলবৎ রাখে, অথচ স্বামী জানে যে, সাক্ষীটি মিথ্যা, তখন তার জন্য উক্ত মহিলার সঙ্গে সহবাস করিতে কোন আপত্তি নেই এবং এটি সহীহ শুদ্ধ বিয়ে। (আঃপ্রঃ- ৬৪৭৪, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৬৪৯৭)

৬৯৬৯

কাসিম (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) হইতে বর্ণিতঃ

যে, জাফর (রাদি.)-এর বংশের এক নারী আশঙ্কা করিল যে, তার অভিভাবকরা তার অসম্মতিতে বিয়ে দিতে যাচ্ছে। এ জন্য সে আনসারী দুজন মুরববী জারিয়ার দু পুত্র আবদুর রহমান (রাদি.) ও মুজামমি (রাদি.)-কে এ কথা বলে পাঠাল। তারা বলিলেন, তোমার ভয়ের কারণ নেই। কেননা, খানসা বিনত খিযাম (রাদি.)-কে তার পিতা তার অসম্মতিতে বিয়ে দিয়েছিল। কিন্তু নাবী সাঃআঃ এ বিয়ে রদ করে দেন। সুফ্ইয়ান (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) বলেছেন যে, আমি আবদুর রহমান (রহমাতুল্লাহি আলাইহি)-কে তাহাঁর পিতা থেকে إِنَّ خَنْسَاءَ বলিতে শুনিয়াছি। [৫১৩৮] (আঃপ্রঃ- ৬৪৮৫, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৬৪৯৮)

৬৯৭০

আবু হুরায়রা (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ (সাল্লালাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ বিধবাকে তার মতামত ব্যতীত বিয়ে দেয়া যাবে না এবং কুমারীকে তার অনুমতি ব্যতীত বিয়ে দেয়া যাবে না। তারা বলিলেন, তার অনুমতি কেমন হইবে? তিনি বললেনঃ তার চুপচাপ থাকা।

কেউ কেউ বলেন, যদি কোন লোক কোন বিধবা নারীর মতানুসারে বিয়ে হওয়ার ওপর দুজন মিথ্যা সাক্ষীর মাধ্যমে কূটকৌশল গ্রহণ করে আর বিচারকও তাদের এ বিয়েকে কার্যকর করে দেন অথচ স্বামী জানে যে, সে তাকে এর পূর্বে বিয়ে করেনি, তাহলে তার জন্য এ বিয়ে বৈধ ও কার্যকর হয়ে যাবে এবং তার জন্য উক্ত মহিলার সঙ্গে বিবাহিত জীবন যাপনে কোন বাধা নেই।(আঃপ্রঃ- ৬৪৮৬, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৬৪৯৯)

৬৯৭১

আয়িশা (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লালাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ কুমারীর অনুমতি নিতে হইবে। আমি বললাম, কুমারী তো লজ্জাবোধ করিবে। তিনি বললেনঃ তার অনুমতি হলো তার নীরবতা।

কেউ কেউ বলেন, যদি কোন ইয়াতীম বাঁদী অথবা কোন কুমারী কারো পছন্দ হয় কিন্ত সে অসম্মতি জানায়, তখন ঐ লোক কূটকৌশলের মাধ্যমে দুজন মিথ্যা সাক্ষী এ মর্মে পেশ করে যে, সে তাকে বিয়ে করেছে এবং সে প্রাপ্তবয়স্কা হবার পর সম্মতি প্রদান করেছে আর বিচারকও মিথ্যা সাক্ষ্য গ্রহণ করে নেন অথচ স্বামী জানে যে তা মিথ্যা, এক্ষেত্রে তার জন্য যৌন সঙ্গম করা বৈধ হয়ে যায়। [১৪২](আঃপ্রঃ- ৬৪৮৭, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৬৫০০)

[১৪২] অত্র হাদীসসহ উপরে তিনটি হাদীস ইমাম বুখারীর বর্ণনা করার উদ্দেশ্য হল, বিবাহের ক্ষেত্রে মিথ্যা সাক্ষ্য দিয়ে কোন মহিলাকে স্ত্রী বানানো ও তার সাথে সহবাস করার কৌশল বা ছলচাতুরী অবলম্বন অবৈধ।

ইমাম ইবনু বাত্তাল বলেন, আলেমদের কারো নিকটে এ বিবাহ হালাল নয়। বাহ্যিকভাবে দুজন সাক্ষীর ন্যায়পরায়ণতা প্রকাশিত হওয়ায় বিচারকের কোন ফায়সালা আল্লাহ যা স্বামীর উপর হারাম করিয়াছেন তা হালাল করিবে না। এরূপ মিথ্যা সাক্ষ্য দ্বারা অন্যের সম্পদ ভক্ষণকে হালাল করিবে না। হারাম সম্পদ ভক্ষণ ও হারাম লজ্জাস্থানে সহবাসের মাঝে কোন পার্থক্য নেই। (ফাতহুল বারী)

৯০/১২. অধ্যায়ঃ কোন নারীর জন্য স্বামী ও সতীনের বিরুদ্ধে কূটকৌশল অবলম্বন করা অপছন্দনীয় এবং এ ক্ষেত্রে নাবী (সাল্লালাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর ওপর যা অবতীর্ণ হয়েছে।

৬৯৭২

আয়িশা (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লালাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) মিষ্টান্ন দ্রব্য ও মধু পছন্দ করিতেন। এবং যখন আসরের সালাত আদায় করে নিতেন তখন তিনি তাহাঁর স্ত্রীদের কাছে ঘুরে বেড়াতেন এবং তাঁদের কাছে উপস্থিত হইতেন। একবার তিনি হাফসাহ (রাদি.)-এর ঘরে প্রবেশ করিলেন এবং সাধারণভাবে যত সময় তাহাঁর কাছে অবস্থান করিতেন তার চেয়ে বেশি সময় তাহাঁর কাছে অবস্থান করিলেন। তাই আমি এর কারণ জিজ্ঞেস করলাম। তখন আমাকে বলা হলো যে, তার স্বগোত্রীয় এক মহিলা এক কৌটা মধু হাদিয়া পাঠিয়েছে। এ থেকে তিনি আল্লাহর রাসুলকে কিছু পান করিয়েছেন। আমি মনে মনে বললাম, আল্লাহর কসম! আমরা অবশ্যই একটা কূটকৌশল গ্রহন করব। এরপর আমি এ ব্যাপারে সাওদা (রাদি.)-এর সঙ্গে আলোচনা করলাম। আমি বললাম, যখন তিনি তোমার ঘরে আসবেন, তখন তিনি অবশ্যই তোমার নিকটে যাবেন। এ সময় তুমি তাঁকে বলবে, হে আল্লাহর রাসুল! আপনি মাগাফীর খেয়েছেন? তিনি অবশ্য না-ই বলবেন। তখন তুমি বলবে, তাহলে এ দুর্গন্ধ কিসের? আর রাসুলুল্লাহ (সাল্লালাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর কাছে তাহাঁর থেকে দুর্গন্ধ পাওয়াটা খুবই গুরুতর মনে হত। তখন তিনি বলবেনঃ হাফসাহ আমাকে মধুর শরবত পান করিয়েছে। তখন তুমি তাঁকে বলবে, তাহলে ঐ মধুর পোকা উরফুত গাছের রস সংগ্রহ করেছে। আর আমিও একই কথা বলব। হে সফীয়্যাহ! তুমিও তাঁকে এ কথা বলবে। যখন তিনি সাওদা (রাদি.)-এর ঘরে এলেন, তখন সাওদা (রাদি.) বলিলেন, কসম ঐ সত্তার, যিনি ব্যতীত আর কোন ইলাহ নেই। যখনই তিনি দরজার কাছে এলেন তখনই আমি তোমার ভয়ে তোমার শিখানো কথাগুলো বলিতে প্রস্তুত হলাম। এরপর তিনি যখন নিকটে এলেন, তখন আমি বললাম, হে আল্লাহর রাসুল! আপনি কি মাগফীর খেয়েছেন। তিনি বলিলেন, না। আমি বললাম, তাহলে এ দুর্গন্ধ কিসের? তিনি বললেনঃ হাফসাহ আমাকে মধুর শরবত পান করিয়েছে। আমি বললাম, তাহলে এ মধুর পোকা উরফুত গাছের রস সংগ্রহ করেছে। আয়িশা (রাদি.) বলেন, এরপর রাসুলুল্লাহ (সাল্লালাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) যখন আমার ঘরে এলেন, তখন আমিও তাঁকে তেমনি কথা বললাম। এরপর তিনি সফীয়্যাহ (রাদি.)- এর ঘরে গেলেন, সেও তাঁকে তেমনি কথা বলিল। পুনরায় রাসুলুল্লাহ (সাল্লালাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) যখন হাফসাহ (রাদি.)- এর ঘরে প্রবেশ করিলেন তখন তিনি তাঁকে বলিলেন, হে আল্লাহর রাসুল! আপনাকে মধু পান করিতে দিব কি? তিনি বললেনঃ এর কোন প্রয়োজন নেই। আয়িশা (রাদি.) বলেন, সাওদা (রাদি.) বললঃ সুবহানাল্লাহ! আমরা তা হারাম করে দিলাম। আয়িশা (রাদি.) বলেন, আমি সাওদা (রাদি.)-কে বললাম, চুপ কর। [১৪৩] (আঃপ্রঃ- ৬৪৮৮, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৬৫০১)

[১৪৩] সতীনের ঝাল নারী সমাজের সর্বনিম্ন স্তর হইতে সর্বোচ্চ স্তর পর্যন্ত দেখিতে পাওয়া যাবে। এটা নারীদের স্বভাবজাত ব্যাপার।

৯০/১৩. অধ্যায়ঃ প্লেগ মহামারী আক্রান্ত এলাকা থেকে পালিয়ে যাওয়ার জন্য কৌশল গ্রহণ করা নিষিদ্ধ।

৬৯৭৩

আবদুল্লাহ ইবনু আমির ইবনু রাবীআ (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) হইতে বর্ণিতঃ

একবার উমর ইবনু খাত্তাব (রাদি.) সিরিয়া অভিমুখে রওনা দিলেন। তিনি যখন সারাগ নামক স্থানে পৌঁছলেন, তখন তাহাঁর কাছে এ খবর আসল যে, সিরিয়ায় প্লেগ মহামারী আকারে দেখা দিয়েছে। এ সময় আবদুর রহমান ইবনু আওফ (রাদি.) তাঁকে জানালেন যে, রাসুলুল্লাহ (সল্লালাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ যখন তোমরা কোন এলাকায় মহামারী ছড়িয়ে পড়েছে শুনতে পাবে তখন তোমরা সেখানে যেও না। আর যখন কোন এলাকায় মহামারী ছড়িয়ে পড়ে আর তোমরা সেখানে হাজির থাক, তখন সেখান থেকে পালিয়ে বের হয়ে এসো না। এ কথা শুনে উমর (রাদি.) সারাগ থেকে ফিরে গেলেন। [৫৭২৯]

ইবনু শিহাব (রহমাতুল্লাহি আলাইহি)….সালিম ইবনু আবদুল্লাহ (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) হইতে বর্ণিত, উমর (রাদি.) আবদুর রহমানের হাদীসের কারণে ফিরে এসেছেন।(আঃপ্রঃ- ৬৪৮৯, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৬৫০২)

৬৯৭৪

উসামা ইবনু যায়দ (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ

তিনি সাদ (রাদি.)-কে বলেন – একদিন রাসুলুল্লাহ (সাল্লালাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) মহামারী সম্পর্কে আলোচনার সময় বললেনঃ এ একটি শাস্তি, কতক জাতিকে এ দ্বারা শাস্তি দেয়া হয়েছে। তারপর এর কিছু অংশ বাকী রয়ে গেছে। তাই কখনো এ চলে যায় আবার কখনো তা ফিরে আসে। যখন কেউ কোন এলাকায় মহামারীর কথা শুনবে তখন যেন সে সেখানে না যায়। আর যে কেউ এমন এলাকায় থাকে যেখানে এর আক্রমণ ঘটেছে, তখন সে যেন সেখান থেকে পালিয়ে বের হয়ে না আসে।(আঃপ্রঃ- ৬৪৯০, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৬৫০৩)

৯০/১৪. অধ্যায়ঃ হেবা ও শুফআর ক্ষেত্রে কূটকৌশল গ্রহণ করা।

কোন কোন মনীষী বলেন, কেউ যদি কৌশল করে এক হাজার বা ততোধিক দিরহাম হেবা করে এবং তা কয়েক বছর গ্রহীতার কাছে থেকে যায় এবং এতে সে কৌশল করে এরপর হেবাকারী যদি তা আবার ফেরত নিয়ে আসে, তাহলে তাদের দুজনের কারো উপর যাকাত ওয়াজিব হইবে না। আবু আবদুল্লাহ (বুখারী) বলেনঃ তাহলে সে হেবার ক্ষেত্রে রাসুলুল্লাহ (সাঃআঃ)-এর বিরুদ্ধাচরণ করিল এবং যাকাতে ফাঁকি দিল।

৬৯৭৫

ইবনু আব্বাস (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, নাবী (সাল্লালাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ হেবা করে আবার তাকে ফেরত নেয়া লোকের তুলনা যেন এমন একটি কুকুর যে বমি করে তা আবার গলাধঃকরণ করে। আমরা যেন এরূপ খারাপ দৃষ্টান্ত স্থাপন না করি। (আঃপ্রঃ- ৬৪৯১, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৬৫০৪)

৬৯৭৬

জাবির ইবনু আবদুল্লাহ (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন,নাবী (সাঃআঃ) কেবল ঐ সব ভূমিতে শুফআর অধিকার সাব্যস্ত করিয়াছেন,যেগুলো এখন বন্টিত হয় নি।আর যখন সীমানা নির্দিষ্ট হয়ে যায় এবং রাস্তা নির্ধারিত হয়ে যায় তখন আর অধিকার থাকে না।

কোন কোন লোক বলেন,প্রতিবেশী হবার কারণেও শুফআহর অধিকার সাব্যস্ত হয়। কিন্তু এ সম্পর্কে যা দৃঢ়তার সঙ্গে বলিলেন তা আবার বাতিল করে দিলেন এবং বলিলেন,যদি কেউ কোন বাড়ি কেনার পর আশংকা করে যে , প্রতিবেশী শুফআহর অধিকারের ভিত্তিতে নিয়ে যাবে তাই সে শত অংশের এক অংশ প্রথমে ক্রয় করে নেয়, তারপর বাকি অংশ ক্রয় করে। অথচ প্রতিবেশীর জন্য অধিকার শুধু প্রথম অংশে ছিল। তাহলে বাড়ীর বাকি অংশে প্রতিবেশীর জন্য অধিকার থাকেনা। এক্ষেত্রে সে এ কূটকৌশলের আশ্রয় নিতে পারে।(আঃপ্রঃ- ৬৪৯২, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৬৫০৫)

৬৯৭৭

আমর ইবনু শারীদ (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, মিস্‌ওয়ার ইবনু মাখরামাহ (রাদি.) এসে তাহাঁর হাত আমার কাঁধে রাখলেন। তারপর আমি তাহাঁর সঙ্গে সাদ (রাদি.)-এর কাছে গেলাম। তখন আবু রাফি (রাদি.) মিস্‌ওয়ার (রাদি.) -কে বলিলেন, আপনি কি ওকে এ কথা বলবেন যে, সে আমার ঐ ঘরটি কিনে নেবে, যে ঘরটি তার বাড়িতে রহিয়াছে। সাদ (রাদি.) বলিলেন, আমি চারশ থেকে অধিক দেব না। তাও আবার কিস্তিতে কিস্তিতে দেব। আবু রাফি (রাদি.) বলিলেন, আমাকে নগদ পাঁচশ দেয়া হচ্ছে, অথচ আমি তাকে দিচ্ছি না। আমি যদি নাবী (সাঃআঃ) -কে বলিতে না শুনতাম যে, প্রতিবেশী তার পার্শ্ববর্তী ভূমি কেনার ব্যাপারে অধিক হক্‌দার, তাহলে আমি তা তোমার কাছে বিক্রি করতাম না। অথবা বলেছেন, তোমাকে আমি তা দিতাম না। আমি সুফইয়ান (রহমাতুল্লাহি আলাইহি)-কে বললাম যে, মামার তো এমনটি বলেননি। তিনি বলিলেন, কিন্তু তিনি আমাকে এমনটি বলেছেন। কিছু সংখ্যক লোক বলেন, কেউ যদি কোন ভূমি বিক্রি করে, তাহলে কৌশলের আশ্রয় গ্রহন করে শুফআহর অধিকার রদ করে দিতে পারে। যেমন বিক্রেতা ক্রেতাকে বাড়িটি দান করে দেবে এবং তার সীমানা বর্ণনা করে ক্রেতার কাছে সোপর্দ করে দেবে। এরপর ক্রেতা বিক্রেতাকে এক হাজার দিরহাম দিয়ে দেবে। এই অবস্থায় শাফীর জন্য তাতে শুফআহর অধিকার থাকবে না। (আঃপ্রঃ- ৬৪৯৩, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৬৫০৬)

৬৯৭৮

আবু রাফি (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ

সাদ (রাদি.) তার নিকট হইতে চারশ মিসকাল দিয়ে একটা ঘর ক্রয় করার জন্য দর করেন। তখন তিনি বলেন, যদি আমি রাসুলুল্লাহ (সাঃআঃ) -কে বলিতে না শুনতাম যে, “প্রতিবেশী তার পার্শ্ববর্তী ভূমি কেনার ব্যাপারে অধিক হক্‌দার” তাহলে তোমাকে আমি দিতাম না।

কেউ কেউ বলেন, যদি কেউ বাড়ির কোন অংশ কিনে নেয় এবং শুফ্‌আর অধিকার বাতিল করে দিতে চায়, তাহলে তার ছোট ছেলেকে তা দান করে দিবে। আর তখন তার ওপর কোন কসমও আসবে না।(আঃপ্রঃ- ৬৪৯৪, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৬৫০৭)

৯০/১৫. অধ্যায়ঃ বখ্‌শিশ পাওয়ার জন্য কর্মচারীর কৌশল গ্রহন করা

৬৯৭৯

আবু হুমায়দ সাঈদী (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ (সাঃআঃ) লুতাবিয়্যা নামে এক লোককে বণী সুলায়ম গোত্রের যাকাত আদায়কারী নিয়োগ করিলেন। যখন যে ফিরে আসল তখন তিনি তার নিকট হিসাব-নিকাশ নিলেন। সে বলিল, এগুলো আপনাদের মাল, আর এগুলো (আমাকে দেয়া) হাদিয়া। তখন রাসুলুল্লাহ (সাঃআঃ) বললেনঃ যদি তুমি সত্যবাদী হয়ে থাক তাহলে তোমার মা-বাবার ঘরে বসে থাকলে না কেন? সেখানেই তোমার কাছে হাদিয়া পৌঁছে যেত। এরপর তিনি আমাদের উদ্দেশে ভাষণ দিলেন। আল্লাহর প্রশংসা ও গুণ বর্ণনা করার পর তিনি বললেনঃ আমি তোমাদের কাউকে এমন কোন কাজে নিয়োগ করি, যার তত্ত্বাবধায়ক হিসেবে আল্লাহ আমাকে মনোনীত করিয়াছেন। কিন্তু সে কাজ করে এসে বলে, এ হল তোমাদের মাল আর এ হলো আমাকে দেয়া হাদিয়া। তাহলে সে কেন তার মা-বাবার ঘরেই বসে থাকল না, সেখানে এমনিতেই তার কাছে হাদিয়া পৌঁছে যেত? আল্লাহর কসম! তোমরা যে কেউ অন্যায় পন্থায় কোন কিছু গ্রহণ করিবে, সে ক্বিয়ামতের দিন তা বয়ে নিয়ে আল্লাহর সামনে উপস্থিত হইবে। আমি তোমাদের কাউকে ভালভাবেই চিনব যে, সে আল্লাহর কাছে উপস্থিত হইবে উট বহন করে; আর উট আওয়াজ দিতে থাকবে। অথবা গাভী বহন করে, আর সেটা ডাকতে থাকবে। অথবা বক্‌রী বহন করে, আর সেটা ডাকতে থাকবে। তারপর তিনি আপন হাত দুটি এতদূর উত্তোলন করিলেন যে তাহাঁর বগলের শুভ্রতা দেখা যাচ্ছিল। তিনি বললেনঃ হে আল্লাহ! আমি কি পৌছে দিয়েছি? আমার দুচোখ সে অবস্থা দেখেছে এবং আমার কান শুনেছে। [১৪৪] (আঃপ্রঃ- ৬৪৯৫, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৬৫০৮)

[১৪৪] সরকারী কাজে নিয়োজিত অবস্থায় কোন হাদিয়া পেলে তা সরকারী কোষাগার বা বাইতুল মালে জমা দিতে হইবে। তবে কর্তৃপক্ষের অনুমতি থাকলে তা দূষণীয় নয়। (ফাতহুল বারী)

৬৯৮০

আবু রাফি (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, নাবী (সাঃআঃ) বলেছেনঃ প্রতিবেশী তার পার্শ্ববর্তী ভূমির ব্যাপারে সবচেয়ে বেশি হক্‌দার।

কেউ কেউ বলেন, কেউ যদি কোন একটি বাড়ি বিশ হাজার দিরহামের বিনিময়ে ক্রয় করে ঐ বিশ হাজার দিরহাম পরিশোধ করার সময় এ কৌশল গ্রহণ করাতে কোন দোষ নেই যে, ক্রেতা বিক্রেতাকে নহাজার নশ নিরানব্বই দিরহাম ও বিশ হাজারের বাকী দিরহামের বদলে এক দীনার নগদ প্রদান করিবে। এখন যদি শুফআহর অধিকারী শুফআহর দাবি করে, তাহলে এই বাড়ি বিশ হাজার দিরহামের বিনিময়ে নিতে হইবে। এ ব্যতীত তার এ বাড়ী পাওয়ার কোন উপায় নেই। আর যদি এ বাড়ির অন্য কোন মালিক বের হয়ে পড়ে, তাহলে ক্রেতা বিক্রেতাকে দেয়া দামই ফেরত দেবে। আর তা হলো নহাজার নশ নিরানব্বই দিরহাম ও এক দীনার। কেননা, যখন বিক্রিত বস্তুর মূল মালিক বের হয়ে গেছে তখন দীনারের বায়এ-সারফ বাতিল হয়ে গেছে। আর যদি ক্রেতা বাড়িতে কোন দোষ পায়, তার কোন মালিক বের না হয়, তাহলে ক্রেতা বাড়ি ফেরত দেবে ও বিক্রেতা ক্রেতাকে বিশ হাজার দিরহাম দেবে। আবু আবদুল্লাহ (ইমাম বুখারী) (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) বলেনঃ মূলত এরূপ করা মুসলিমদের মধ্যে ধোঁকাবাজিকে বৈধতা দেয়ার নামান্তর। নাবী (সাঃআঃ) বলেছেনঃ মুসলিমদের কেনা-বেচায় কোন রোগবালাই, অপবিত্রতা ও ধোঁকাবাজি নেই।(আঃপ্রঃ- ৬৪৯৬, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৬৫০৯)

৬৯৮১

আমর ইবনু শারীদ (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) হইতে বর্ণিতঃ

আবু রাফি (রাদি.) একটি ঘর ক্রয় করার জন্য আদ ইবনু মালিক (রাদি.)-এর সঙ্গে চারশ মিসকাল মূল্য ঠিক করেন। আর বলেন, যদি আমি নাবী (সাঃআঃ) -কে এ কথা বলিতে না শুনতাম যে, প্রতিবেশি তার পার্শ্ববর্তী ভূমির কেনার ক্ষেত্রে সবচেয়ে অধিক হক্‌দার, তাহলে তোমাকে আমি প্রদান করতাম না।(আঃপ্রঃ- ৬৪৯৭, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৬৫১০)


Posted

in

by

Comments

Leave a Reply