কুরবানীর মাসায়েল । কি ধরনের পশু কুরবানী করতে হয়?
কুরবানীর মাসায়েল । কি ধরনের পশু কুরবানী করতে হয়?, এই অধ্যায়ে হাদীস =১৩ টি ( ১০২৬-১০৩৮ পর্যন্ত ) >> মুয়াত্তা ইমাম মালিক এর মুল সুচিপত্র দেখুন
অধ্যায় – ২৩ঃ কুরবানী সম্পর্কিত অধ্যায়
পরিচ্ছেদ ১ -কি ধরনের পশু কুরবানী করা দুরস্ত নয়
পরিচ্ছেদ ২ -কি ধরনের পশু কুরবানী করা মুস্তাহাব
পরিচ্ছেদ ৩ -ঈদের জামাআত হইতে ইমামের প্রত্যাবর্তনের পূর্বে কুরবানী করা দুরস্ত নয়
পরিচ্ছেদ ৪-কুরবানীর গোশত রেখে দেয়া
পরিচ্ছেদ ৫ -কুরবানীর মধ্যে শরীক লওয়া এবং গরু ও উট কত জনের পক্ষ হইতে যবেহ করা যাবে
পরিচ্ছেদ ৬ -গর্ভস্থ সন্তানের তরফ হইতে কুরবানী
পরিচ্ছেদ ১ -কি ধরনের পশু কুরবানী করা দুরস্ত নয়
১০১৯ বারা ইবনি আযিব [রাদি.] হইতে বর্ণিতঃ
রাসূলুল্লাহ সাঃআঃকে জিজ্ঞেস করা হয়েছিল : কি ধরনের পশু কুরবানী করা উচিত নয়। রাসূলুল্লাহ সাঃআঃ তখন অঙ্গুলি দ্বারা গুণে বলিলেন : চার ধরনের পশু হইতে বিরত থাকা উচিত। বারা ইবনি আযিব [রাদি.] রাসূলুল্লাহ সাঃআঃ-এর অনুকরণে অঙ্গুল গুণে এই হাদীস বর্ণনা করিতেন। বলিতেন : আমার হাত রাসূলুল্লাহ সাঃআঃ-এর হাত হইতে ছোট। এমন খোঁড়া যা হাঁটতে অক্ষম। এমন কানা যা সকলেই ধরতে পারে। স্পষ্ট রোগা। এমন কৃশ যার হাড্ডির মগজ পর্যন্ত শুকিয়ে গিয়েছে।
[সহীহ, আবু দাঊদ ২৮০২, তিরমিজি ১৪৯৭, ইবনি মাজাহ ৩১৪৪, আলবানী হাদীসটি সহীহ বলেছেন {সহীহ আলজামে ৮৮৬}]কুরবানীর মাসায়েল -এই হাদীসটির তাহকিকঃ সহীহ হাদীস
১০২০ নাফি [রাহিমাহুল্লাহ] হইতে বর্ণিতঃ
মুসিন্না {১} নয় বা অঙ্গহীন এমন পশুর কুরবানী করা হইতে আবদুল্লাহ ইবনি উমার [রাদি.] বিরত থাকতেন। [হাদীসটি ঈমাম মালিক এককভাবে বর্ণনা করিয়াছেন]
মালিক [রাহিমাহুল্লাহ] বলেন: আমি যা শুনিয়াছি তন্মধ্যে এই বিষয়টি আমার অধিক প্রিয়।
{১} যে পশুর দুধ দাঁত পরে গিয়ে সামনে দুটি দাঁত গজিয়েছে তাকে মুসিন্নাহ্ বলা হয়। কুরবানীর মাসায়েল -এই হাদীসটির তাহকিকঃ অন্যান্য
পরিচ্ছেদ ২ -কি ধরনের পশু কুরবানী করা মুস্তাহাব
১০২১ নাফি [রাহিমাহুল্লাহ] হইতে বর্ণিতঃ
একবার আবদুল্লাহ ইবনি উমার [রাদি.] মদীনায় কুরবানী করেন। আমাকে বলিলেন : শিংওয়ালা একটি ছাগল খরিদ করে ঈদুল আযহার দিন ইদগাহে নিয়ে যবেহ কর। আমি তাই করলাম। যবেহকৃত ছাগলটি তাঁর নিকট পাঠিয়ে দেয়া হল। তিনি তখন তাঁর মাথার চুল কাটলেন। সে সময় তিনি অসুস্থ ছিলেন। ঈদের জামাতে হাজির হইতে পারেননি। নাফি [রাহিমাহুল্লাহ] বলেন : আবদুল্লাহ ইবনি উমার [রাদি.] বলিতেন কুরবানীদাতার উপর মাথা মুন্ডন ওয়াজিব নয়। তবে তিনি নিজে মাথা মুন্ডন করিয়াছেন। [হাদীসটি ঈমাম মালিক এককভাবে বর্ণনা করিয়াছেন]
কুরবানীর মাসায়েল -এই হাদীসটির তাহকিকঃ অন্যান্য
পরিচ্ছেদ ৩ -ঈদের জামাআত হইতে ইমামের প্রত্যাবর্তনের পূর্বে কুরবানী করা দুরস্ত নয়
১০২২ বুশাইর ইবনি ইয়াসার [রাহিমাহুল্লাহ] হইতে বর্ণিতঃ
রাসূলুল্লাহ সাঃআঃ-এর কুরবানী করবার আগেই কুরবানী করেছিলেন। রাসূলুল্লাহ সাঃআঃ তাহাকে পুনরায় কুরবানী করিতে নির্দেশ দেন। আবু বুরদা বলিলেন : আমার নিকট এক বৎসরের এক বকরী ব্যতীত আর কিছুই নেই। রাসূলুল্লাহ সাঃআঃ বলিলেন : এটিকেই কুরবানী দিয়ে দাও।
[বুখারি ৯৫১, ৯৫৫, মুসলিম ১৯৬১] কুরবানীর মাসায়েল -এই হাদীসটির তাহকিকঃ সহীহ হাদীস
১০২৩ আব্বাদ ইবনি তামীম [রাহিমাহুল্লাহ] হইতে বর্ণিতঃ
উয়াইমির ইবনি আশকর [রাদি.] ইয়াউমুল আযহাতে [যিলহজ্জ মাসের ১০ তারিখে] ঈদের নামাযের পূর্বে কুরবানী করেছিলেন। রাসূলুল্লাহ সাঃআঃ-এর নিকট এই কথা উল্লেখ করা হলে তিনি তাহাকে পুনরায় কুরবানী করিতে নির্দেশ দেন
। [সহীহ, ইবনি মাজাহ ৩১৫৩, আলবানী হাদীসটিকে সহীহ বলেছেন {সহীহ ও যয়ীফ ইবনি মাজাহ}] কুরবানীর মাসায়েল -এই হাদীসটির তাহকিকঃ অন্যান্য
পরিচ্ছেদ ৪-কুরবানীর গোশত রেখে দেয়া
১০২৪ জাবির ইবনি আবদুল্লাহ [রাদি.] হইতে বর্ণিতঃ
তিন দিনের বেশি কুরবানীর গোশত রাখতে রাসূলুল্লাহ সাঃআঃ নিষেধ করেছিলেন। পরে বলিলেন : তোমরা নিজেরা তা খাও, পাথেয় হিসেবে ব্যবহার কর এবং [ভবিষ্যতের জন্য] রেখে দাও।
[সহীহ, মুসলিম ১৯৭২]কুরবানীর মাসায়েল -এই হাদীসটির তাহকিকঃ সহীহ হাদীস
১০২৫ আবদুল্লাহ ইবনি ওয়াকিদ [রাহিমাহুল্লাহ] হইতে বর্ণিতঃ
তিন দিনের পর কুরবানীর গোশত খেতে রাসূলুল্লাহ সাঃআঃ নিষেধ করিয়াছেন। আবদুল্লাহ ইবনি আবু বাকর [রাহিমাহুল্লাহ] বলেন : এই কথা আমি আমরা বিন্ত আবদুর রহমানকে গিয়ে শুনালাম। তিনি বলিলেন : আবদুল্লাহ সত্য বলেছেন। নাবী সাঃআঃ-এর সহধর্মিণী আয়িশা [রাদি.]-এর কাছে শুনিয়াছি : রাসূলুল্লাহ সাঃআঃ-এর সময় একবার ঈদুল আযহার দিন কিছু সংখ্যক বেদুঈন আসেন। তখন রাসূলুল্লাহ সাঃআঃ বলিলেন : তিন দিনের মতো গোশত রেখে বাকীটা খয়রাত করে দাও। এর পর রাসূলুল্লাহ সাঃআঃ-এর কাছে বলা হল, পূর্বে লোকেরা কুরবানীর পশু দ্বারা ফায়দা লাভ করত। এর চর্বি রেখে দিত এবং চামড়া দ্বারা মশক বানিয়ে রাখত। রাসূলুল্লাহ সাঃআঃ বলিলেন : তোমরা কি বলিতে চাও? বলা হল : আপনি তিন দিনের অতিরিক্ত কুরবানীর গোশত রাখতে নিষেধ করিয়াছেন। রাসূলুল্লাহ সাঃআঃ বলিলেন : কিছু অভাবী লোক গ্রাম হইতে এসে পড়েছিল, তাই তিন দিনের অতিরিক্ত গোশত রাখতে আমি নিষেধ করেছিলাম। এখন তোমরা তা খাও, খয়রাত কর এবং জমা করে রেখে দাও।
[সহীহ, মুসলিম ১৯৭১] কুরবানীর মাসায়েল -এই হাদীসটির তাহকিকঃ সহীহ হাদীস
১০২৬ আবু সাঈদ খুদরী [রাদি.] হইতে বর্ণিতঃ
একবার সফর হইতে ফিরবার পর পরিবারের লোকেরা তাঁর সামনে গোশত পেশ করেন। তিনি এটা দেখে বলিলেন : এটা কুরবানীর গোশত নয় তো? তাঁরা বলিলেন; হ্যাঁ কুরবানীর। আবু সাঈদ [রাদি.] বলিলেন : রাসূলুল্লাহ সাঃআঃ ইহা নিষেধ করেন নাই কি? তাঁরা বলিলেন : আপনি যাওয়ার পর এই বিষয়ে রাসূলুল্লাহ সাঃআঃ অন্য হুকুম প্রদান করিয়াছেন। আবু সাঈদ খুদরী [রাদি.] এই বিষয়টি ভাল করে অনুসন্ধান করে দেখার উদ্দেশ্যে বের হয়ে পড়েন। তখন তিনি জানতে পারেন, রাসূলুল্লাহ সাঃআঃ বলেছেন : তিন দিন পর কুরবানীর গোশত খেতে আমি তোমাদেরকে নিষেধ করেছিলাম, এখন যে কোন পাত্রে ইচ্ছা তোমরা তা বানাতে পার, তবে [মনে রেখ] সকল নেশা সৃষ্টিকারী বস্তু হারাম। কবর যিয়ারত করিতে তোমাদেরকে আমি নিষেধ করেছিলাম। এখন তোমরা কবর যিয়ারত করিতে যেতে পারে, তবে মুখে যেন কোন মন্দ কথা উচ্চারিত না হয়।
[সহীহ, বুখারি ৩৯৯৭] কুরবানীর মাসায়েল -এই হাদীসটির তাহকিকঃ সহীহ হাদীস
পরিচ্ছেদ ৫ -কুরবানীর মধ্যে শরীক লওয়া এবং গরু ও উট কত জনের পক্ষ হইতে যবেহ করা যাবে
১০২৭ জাবির ইবনি আবদুল্লাহ [রাদি.] হইতে বর্ণিতঃ
হুদায়বিয়ার বৎসর রাসূলুল্লাহ সাঃআঃ-এর সাথে প্রতিটি উট সাতজনের এবং প্রতিটি গরু সাতজনের পক্ষে যবেহ করেছি [কুরবানীর উদ্দেশ্যে]।
[সহীহ, মুসলিম ১৩১৮] কুরবানীর মাসায়েল -এই হাদীসটির তাহকিকঃ সহীহ হাদীস
১০২৮ উমারা ইবনি সাইয়্যাদ [রাহিমাহুল্লাহ] হইতে বর্ণিতঃ
আতা ইবনি ইয়াসার [রাহিমাহুল্লাহ] তাঁর কাছে বর্ণনা করিয়াছেন : আবু আইয়ুব {১} আনসারী [রাদি.] তাহাকে বলেছেন, আমরা এক এক পরিবারের তরফ হইতে এক একটি বকরী কুরবানী করতাম। পরে লোকজন গর্ব ও অহংকারের বশবর্তী হয়ে পরিবারের প্রত্যেকের তরফ হইতে এক একটি বকরী কুরবানী করা শুরু করে। [হাদীসটি ঈমাম মালিক এককভাবে বর্ণনা করিয়াছেন]
মালিক [রাহিমাহুল্লাহ] বলেন : এই বিষয়ে সবচাইতে ভাল বর্ণনা যা আমি শুনিয়াছি, তা হল এক ব্যক্তি নিজের এবং পরিবারের অন্যদের তরফ হইতে নিজস্ব একটি উট, গরু বা বকরী কুরবানী করিতে পারবে এবং সওয়াবের মধ্যে অন্যদেরকেও শামিল করে নেবে। কিন্তু একটি উট, গরু বা বকরী খরিদ করে অন্য কাউকে এর কুরবানীতে শরীক করা অর্থাৎ শরীকদের নিকট হইতে টাকা নিয়ে তদনুসারে তাদের গোশত দেয়া মাকরূহ। আমরা শুনিয়াছি কুরবানীতে শরীক নেয়া যেতে পারে না বরং এক পরিবারের পক্ষ হইতে এক একটি কুরবানী করিতে হইবে।
{১} আবু আইয়ুব আনসারী [রাদি.] প্রসিদ্ধ সাহাবী। তাঁর নাম খালিদ ইবনি যাইদ। -আওজায কুরবানীর মাসায়েল -এই হাদীসটির তাহকিকঃ অন্যান্য
১০২৯ মালিক [রাহিমাহুল্লাহ] হইতে বর্ণিতঃ
রাসূলুল্লাহ সাঃআঃ স্বীয় পরিবারের পক্ষ হইতে কখনো একটি উট বা গরুর অতিরিক্ত কিছু কুরবানী করেননি। [হাদীসটি ঈমাম মালিক এককভাবে বর্ণনা করিয়াছেন]
মালিক [রাহিমাহুল্লাহ] বলেন : ইবনি শিহাব [রাহিমাহুল্লাহ] একটি উটের কথা উল্লেখ করেছিলেন কিংবা একটি গরুর কথা উল্লেখ করেছিলেন তা স্পষ্ট আমার স্মরণ নাই।
কুরবানীর মাসায়েল -এই হাদীসটির তাহকিকঃ অন্যান্য
পরিচ্ছেদ ৬ -গর্ভস্থ সন্তানের তরফ হইতে কুরবানী
১০৩০ নাফি [রাহিমাহুল্লাহ] হইতে বর্ণিতঃ
আবদুল্লাহ ইবনি উমার [রাদি.] বলেছেন : ঈদুল আযহা দিবসের পর মাত্র দুই দিন কুরবানী করা দুরস্ত রয়েছে। [হাদীসটি ঈমাম মালিক এককভাবে বর্ণনা করিয়াছেন]
মালিক [রাহিমাহুল্লাহ] বলেন : আলী ইবনি আবু তালিব [রাদি.] হইতেও তাঁর কাছে অনুরূপ রেওয়ায়ত পৌঁছেছে।
কুরবানীর মাসায়েল -এই হাদীসটির তাহকিকঃ অন্যান্য
১০৩১ নাফি [রাহিমাহুল্লাহ] হইতে বর্ণিতঃ
আবদুল্লাহ ইবনি উমার [রাদি.] গর্ভস্থ সন্তানের পক্ষ হইতে কুরবানী করিতেন না। [হাদীসটি ঈমাম মালিক এককভাবে বর্ণনা করিয়াছেন]
মালিক [রাহিমাহুল্লাহ] বলেন : কুরবানী করা সুন্নাত [মুয়াক্কাদা]। ইহা ওয়াজিব নয়। যে কুরবানী ক্রয় করিতে সামর্থ্য রাখে, তাঁর পক্ষে কুরবানী না করা আমি পছন্দ করি না।
কুরবানীর মাসায়েল -এই হাদীসটির তাহকিকঃ নির্ণীত নয়
Leave a Reply