কুরবানী করার নিয়ম। কুরবানীর গরুতে শরীক সম্পর্কে ।

কুরবানী

কুরবানী করার নিয়ম। কুরবানীর গরুতে শরীক সম্পর্কে । >> সুনানে নাসাই শরিফের মুল সুচিপত্র দেখুন

পর্বঃ ৪৩, কুরবানী, হাদীস (৪৩৬১ – ৪৪৪৮)

১.পরিছেদঃ কুরবানী
২.পরিছেদঃ যে কুরবানীর পশু না পায়
৩.পরিছেদঃ ইমামের ঈদগাহে কুরবানীর পশু যবেহ করা
৪.পরিছেদঃ সাধারণ লোকের ঈদগাহে যবেহ করা
৫.পরিছেদঃ যে পশুর কুরবানী নিষিদ্ধঃ কানা পশু
৬.পরিছেদঃ খোঁড়া পশু
৭.পরিছেদঃ দুর্বল পশু
৮.পরিছেদঃ মুকাবালাঃ যে পশুর কানের একদিক কাটা
৯.পরিছেদঃ মুদাবারাঃআঃ যে পশুর কানের মূল থেকে কাটা
১০.পরিছেদঃ খারকাঃ ঐ পশু যাহার কানে ছিদ্র আছে
১১.পরিছেদঃ শারকাঃ কান ফাটা পশু
১২.পরিছেদঃ আযবাঃ শিং ভাঙ্গা পশু
১৩.পরিছেদঃ দুই বছর ও এক বছরের পশুর কুরবানী
১৪.পরিছেদঃ দুম্বা
১৫.পরিছেদঃ উট ও গরুর মধ্যে কয়জনের কুরবানী জায়েয
১৬.পরিছেদঃ কুরবানীর গরুতে শরীক সম্পর্কে
১৭.পরিছেদঃ ইমামের পূর্বে কুরবানী করা
১৮.পরিছেদঃ পাথর দ্বারা যবেহ করা
১৯.পরিছেদঃ কাষ্ঠ দ্বারা যবেহ করা
২০.পরিছেদঃ নখ দ্বারা যবেহ করার নিষেধাজ্ঞা
২১.পরিছেদঃ দাঁত দ্বারা যবেহ করা
২২.পরিছেদঃ ছুরি ধারাল করার আদেশ
২৩.পরিছেদঃ যে পশু যবেহ করা হয় তাকে নহর করা এবং যে পশু নহর করা হয় তাকে যবেহ করার অনুমতি
২৪.পরিছেদঃ হিংস্র পশুর দংশিত জন্তু যবেহ করা
২৫.পরিছেদঃ কূয়ায় পতিত জন্তুর যবেহ, যাহার গলায় ছুরি পৌঁছানো যায় না
২৬.পরিছেদঃ যে জন্তু পালায় এবং তা ধরা যায় না
২৭.পরিছেদঃ উত্তমরূপে যবেহ করা
২৮.পরিছেদঃ কুরবানীর জন্তুর ঘাড়ে পা রাখা
২৯.পরিছেদঃ কুরবানী করাকালে আল্লাহর নাম উচ্চারণ করা
৩০.পরিছেদঃ তাকবীর বলা
৩১.পরিছেদঃ নিজ হাতে কুরবানীর জন্তু যবেহ করা
৩২.পরিছেদঃ অন্যের কুরবানী যবেহ করা
৩৩.পরিছেদঃ যা যবেহ করা হয়, তা নহর করা
৩৪.পরিছেদঃ যে আল্লাহ্ ব্যতীত অন্য কারো উদ্দেশ্যে যবেহ করে
৩৫.পরিছেদঃ তিনদিন পর কুরবানীর গোশত খাওয়া ও রেখে দেওয়ার প্রতি নিষেধাজ্ঞা
৩৬.পরিছেদঃ কুরবানী এর অনুমতি প্রসঙ্গে
৩৭.পরিছেদঃ কুরবানীর গোশত জমা করে রাখা
৩৮.পরিছেদঃ ইয়াহূদীদের যবেহকৃত পশু
৩৯.পরিছেদঃ অজ্ঞাত লোকের যবেহকৃত পশু
৪০.পরিছেদঃ আল্লাহর বাণী- যাতে আল্লাহর নাম নেওয়া হয়নি তার কিছুই খেও না [৬ঃ১২১] – এর ব্যাখ্যা
৪১.পরিছেদঃ মুজাসসামা খাওয়ার নিষেধাজ্ঞা
৪২.পরিছেদঃ যে ব্যক্তি অযথা চড়ুই হত্যা করে
৪৩.পরিছেদঃ জাল্লালার গোশত খাওয়ার উপর নিষেধাজ্ঞা
৪৪.পরিছেদঃ জাল্লালার দুধ পানে নিষেধাজ্ঞা সম্পর্কে

১.পরিছেদঃ কুরবানী

৪৩৬১. উম্মে সালামা [রাঃআঃ] সূত্রে রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেনঃ যে ব্যক্তি যিলহজ্জ মাসের নতুন চাঁদ দেখার পর কুরবানী করার ইচ্ছা করে, সে যেন কুরবানী করার পূর্বে চুল ও নখ না কাটে।

হাদিসের তাহকিকঃ সহীহ হাদীস

৪৩৬২. ইবনি মুসায়্যাব [রাঃআঃ] হইতে বর্ণিতঃ

রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] –এর সহধর্মিণী উম্মে সালামা [রাঃআঃ] তাঁকে অবহিত করিয়াছেনঃ রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলেছেনঃ যে ব্যক্তি কুরবানী করার ইচ্ছা করে, সে যেন যিলহজ্জের প্রথম দশ দিন তার নখ ও কোন চুল না কাটে।

হাদিসের তাহকিকঃ সহীহ হাদীস

৪৩৬৩. সাঈদ ইবনি মুসায়্যাব [রাঃআঃ] হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেনঃ যে ব্যক্তি কুরবানী করার ইচ্ছা করে আর দশদিন আরম্ভ হইয়া যায়, সে যেন তখন আর চুল ও নখ না কাটে। রাবী বলেনঃ এ বিষয়টি ইকরামার নিকট উল্লেখ করলে তিনি বলিলেন. তাহলে কি স্ত্রী এবং সুগন্ধিও ত্যাগ করিতে হইবে?

হাদিসের তাহকিকঃ জইফ হাদীস

৪৩৬৪. সাঈদ ইব্ন মুসায়্যাব সূত্রে উম্মে সালামা [রাঃআঃ] হইতে বর্ণিতঃ

রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলেছেনঃ যখন যিলহজ্জ মাসের দশদিন আরম্ভ হয় এবং তোমাদের কেউ কুরবানী করার ইচ্ছা করে, সে যেন তার চুল ও নখ থেকে কিছুই না কাটে।

হাদিসের তাহকিকঃ সহীহ হাদীস

২.পরিছেদঃ যে কুরবানীর পশু না পায়

৪৩৬৫. আবদুল্লাহ ইবনি আমর ইব্ন আস [রাঃআঃ] হইতে বর্ণিতঃ

রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] এক ব্যক্তিকে বলিলেনঃ কুরবানীর দিনকে ঈদের দিন করার জন্য আমাকে আদেশ করা হইয়াছে। আল্লাহ্ তাআলা এই উম্মতের জন্য একে সাব্যস্ত করিয়াছেন। তখন ঐ ব্যক্তি বললোঃ যদি আমি দুধপান করার জন্য অন্যের দান করা পশু ব্যতীত অন্য কিছু না পাই, তা হলে কি আমি তা-ই কুরবানী করবো? তিনি বলিলেনঃ না, কিন্তু তুমি তোমার চুল, নখ কেটে ফেলবে এবং গোঁফ ছোট করিবে এবং তোমার নাভীর নিচের পশম কামাবে; এটাই হইবে আল্লাহর নিকট তোমার কুরবানীর পূর্ণতা।

হাদিসের তাহকিকঃ জইফ হাদীস

৩.পরিছেদঃ ইমামের ঈদগাহে কুরবানীর পশু যবেহ করা

৪৩৬৬. নাফি [রহমাতুল্লাহি আলাইহি] হইতে বর্ণিতঃ

আবদুল্লাহ [রাঃআঃ] তাহাঁর নিকট বর্ণনা করিয়াছেন যে, রসূলুল্লাহ্ [সাঃআঃ] ঈদগাহে যবেহ বা নাহ্‌র করিতেন।

হাদিসের তাহকিকঃ সহীহ হাদীস

৪৩৬৭. আবদুল্লাহ ইবনি উমার [রাঃআঃ] হইতে বর্ণিতঃ

রসূলুল্লাহ্ [সাঃআঃ] কুরবানীর দিন মদীনায় নহর করিয়াছেন। তিনি বলেন, মদীনায় নহর না করলে ঈদগাহে যবেহ করিতেন।

হাদিসের তাহকিকঃ সহীহ হাদীস

৪.পরিছেদঃ সাধারণ লোকের ঈদগাহে যবেহ করা

৪৩৬৮. জুনদুব ইবনি সুফ্‌য়ান [রাঃআঃ] হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, আমি রসূলুল্লাহ্ [সাঃআঃ] -এর সঙ্গে ঈদগাহে উপস্থিত ছিলাম। তিনি লোকদের নিয়ে নামাজ আদায় করিলেন, নামাজ শেষে দেখলেন, একটি বকরী যবেহ করা হইয়াছে। তখন তিনি বললেনঃ সালাতের পূর্বে কে যবেহ করলো? সে যেন এর পরিবর্তে অন্য একটি বকরী যবেহ করে। আর যে এখনও যবেহ করেনি, সে যেন আল্লাহর নামে যবেহ করে।

হাদিসের তাহকিকঃ সহীহ হাদীস

৫.পরিছেদঃ যে পশুর কুরবানী নিষিদ্ধঃ কানা পশু

৪৩৬৯. -বনী শায়বানের আযাদকৃত দাস আবু যাহ্‌হাক উবায়দ ইবনি ফায়রূয [রহমাতুল্লাহি আলাইহি] হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, আমি বারা [রাঃআঃ]-কে বললামঃ যে সকল পশুর কুরবানী করিতে রসূলুল্লাহ্ [সাঃআঃ] নিষেধ করিয়াছেন, তা আমার নিকট বর্ণনা করুন। তিনি বলেন, রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ] [খুতবা দিতে] দাঁড়ালেন আর আমার হাত তাহাঁর হাত অপেক্ষা ছোট। তিনি বলিলেন, চার প্রকার পশুর কুরবানী বৈধ নয়, কানা পশু যাহার কানা হওয়াটা সুস্পষ্ট, রুগ্ন যাহার রোগ সুস্পষ্ট, খোঁড়া পশু যাহার খোঁড়া হওয়া সুস্পষ্ট; দুর্বল, যাহার হাঁড়ে মজ্জা নেই। আমি বললামঃ আমি শিং ও দাঁতে ত্রুটি থাকাও পছন্দ করিনা। তিনি বললেনঃ তুমি যা অপছন্দ কর, তা ত্যাগ কর; কিন্তু অন্য লোকের জন্য তা হারাম করো না।

হাদিসের তাহকিকঃ সহীহ হাদীস

৬.পরিছেদঃ খোঁড়া পশু

৪৩৭০. -উবায়দ ইবনি ফাযরূয [রহমাতুল্লাহি আলাইহি] হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, আমি বারা ইবনি আযিবকে বললামঃ রসূলুল্লাহ্ [সাঃআঃ] কুরবানীতে কোন্‌ কোন্‌ পশু অপছন্দ করিতেন বা নিষেধ করিতেন তা আমাকে বলুন। তিনি বললেনঃ রসূলুল্লাহ্ [সাঃআঃ] তাহাঁর হাত দ্বারা এরূপ দেখালেন। আর আমার হাত রসূলুল্লাহ্ [সাঃআঃ] -এর হাত থেকে ছোট। বলিলেন- চার প্রকারের পশু কুরবানী করা বৈধ নয়ঃ কানা পশু, যাহার কানা হওয়া প্রকাশ্য; রোগা পশু, যাহার রোগ প্রকাশ্য; খোঁড়া পশু, যাহার খোঁড়া হওয়া প্রকাশ্য আর এমন দুর্বল পশু যাহার হাঁড়ে মজ্জা নেই। তিনি বললেনঃ আমি শিং এবং কানে ত্রুটি থাকাও অপছন্দ করি। তিনি বললেনঃ যা তোমার অপছন্দ হয় তা ত্যাগ কর; কিন্তু অন্য মুসলমানের জন্য তা হারাম করো না।

হাদিসের তাহকিকঃ সহীহ হাদীস

৭.পরিছেদঃ দুর্বল পশু

৪৩৭১। বারা ইবনি আযিব [রাঃআঃ] হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, আমি রসূলুল্লাহ্ [সাঃআঃ] -কে বলিতে শুনছি, তখন তিনি তাহাঁর আঙ্গুল দ্বারা ইঙ্গিত করছিলেন। আর আমার অঙ্গুলি রসূলুল্লাহ্ [সাঃআঃ] -এর আঙ্গুল অপেক্ষা ছোট। তিনি তাহাঁর আঙ্গুল দ্বারা ইঙ্গিত করে বললেনঃ কুরবানীতে জায়েয নয় কানা পশু, যাহার কানা হওয়া প্রকাশ্য; খোঁড়া পশু, যাহার খোঁড়া হওয়া প্রকাশ্য; রুগ্ন পশু, যাহার রোগ প্রকাশ্য; আর দুর্বল পশু, যাহার হাঁড়ে মজ্জা নেই।

হাদিসের তাহকিকঃ সহীহ হাদীস

৮.পরিছেদঃ মুকাবালাঃ যে পশুর কানের একদিক কাটা

৪৩৭২. আলী [রাঃআঃ] হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেনঃ রসূলুল্লাহ্ [সাঃআঃ] আমাদের আদেশ করিয়াছেন, আমরা যেন কুরবানীর পশুর চোখ ও কান উত্তমরূপে দেখে নিই। আর আমরা যেন কানের অগ্রভাগ কাটা, কানের পেছন দিক কাটা লেজ কাটা এবং কানের গোড়া থেকে কাটা পশু কুরবানী না করি।

হাদিসের তাহকিকঃ জইফ হাদীস

৯.পরিছেদঃ মুদাবারাঃআঃ যে পশুর কানের মূল থেকে কাটা

৪৩৭৩. আলি [রাঃআঃ] হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেনঃ রসূলুল্লাহ্ [সাঃআঃ] আমাদের আদেশ করিয়াছেন, আমরা যেন [কুরবানী পশুর] চোখ ও কান ভালরূপে দেখে নিই। আর আমরা যেন এমন পশু দ্বারা কুরবানী না করি যা কানা, যাহার কানের একদিক কাটা, যাহার কানের গোড়া কাটা এবং যাহার কান ফাঁড়া এবং যাহার কানে ছিদ্র আছে।

হাদিসের তাহকিকঃ জইফ হাদীস

১০.পরিছেদঃ খারকাঃ ঐ পশু যাহার কানে ছিদ্র আছে

৪৩৭৪. আলী ইবনি আবু তালিব [রাঃআঃ] হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেনঃ রসূলুল্লাহ্ [সাঃআঃ] ঐ পশু কুরবানী করিতে নিষেধ করিয়াছেন যাহার কানের একদিক কাটা বা গোড়া কাটা বা যাহার কান কাটা বা যাহার কানে ছিদ্র আছে এবং যাহার কান মূল থেকে কাটা।

হাদিসের তাহকিকঃ জইফ হাদীস

১১.পরিছেদঃ শারকাঃ কান ফাটা পশু

৪৩৭৫. আলী [রাঃআঃ] হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেনঃ রসূলুল্লাহ্ [সাঃআঃ] বলেছেনঃ যে পশুর কানের একদিক কাটা বা কানের গোড়ার দিক থেকে কাটা অথবা যাহার কান ফাটা বা যাহার কানে ছিদ্র আছে কিংবা যে পশু কানা, তা দ্বারা কুরবানী করা যাবে না।

হাদিসের তাহকিকঃ জইফ হাদীস

৪৩৭৬. হুজায়্যা ইবনি আদী [রহমাতুল্লাহি আলাইহি] হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেনঃ আমি আলী [রাঃআঃ]-কে বলিতে শুনিয়াছি, রসূলুল্লাহ্ [সাঃআঃ] আমাদেরকে আদেশ করিয়াছেন আমরা যেন কুরবানীর পশুর চোখ ও কান উত্তমরূপে দেখে নিই।

হাদিসের তাহকিকঃ হাসান সহীহ

১২.পরিছেদঃ আযবাঃ শিং ভাঙ্গা পশু

৪৩৭৭. জুরাই ইবনি কুলায়ব [রাঃআঃ] হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেনঃ আমি আলী [রাঃআঃ]-কে বলিতে শুনেছিঃ রসূলুল্লাহ্ [সাঃআঃ] শিং ভাঙ্গা পশু কুরবানী করিতে নিষেধ করিয়াছেন। এরপর আমি তা সাঈদ ইবনি মুসায়্যাব [রাঃআঃ]-এর নিকট উল্লেখ করলে তিনি বললেনঃ শিংয়ের অর্ধেক বা তার বেশি ভাঙ্গা হলে সেই পশু কুরবানী করিতে নিষেধ করিয়াছেন।

হাদিসের তাহকিকঃ জইফ হাদীস

১৩.পরিছেদঃ দুই বছর ও এক বছরের পশুর কুরবানী

৪৩৭৮. জাবির [রাঃআঃ] হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেনঃ রসূলুল্লাহ্ [সাঃআঃ] বলেছেনঃ তোমরা দুই বছরের কম বয়সী পশু কুরবানী করো না। কিন্তু যদি তোমাদের পক্ষে কঠিন হয় তখন তোমরা এক বছর বয়সী ভেড়া যবেহ করিতে পার।

হাদিসের তাহকিকঃ জইফ হাদীস

৪৩৭৯. উকবা ইবনি আমির [রাঃআঃ] হইতে বর্ণিতঃ

রাসূলুলাহ্‌ [সাঃআঃ] তাহাঁর সাহাবীগণের মধ্যে কুরবানীর পশু বন্টন করার জন্য তাকে এক পাল বকরী দিলেন। বন্টন করার পর একটি ছোট বকরী অবশিষ্ট রইলো। তিনি রসূলুল্লাহ্ [সাঃআঃ]- কে তা জানালে তিনি বললেনঃ এর দ্বারা তুমি কুরবানী কর।

হাদিসের তাহকিকঃ সহীহ হাদীস

৪৩৮০. উকবা ইবনি আমির [রাঃআঃ] হইতে বর্ণিতঃ

রসূলুল্লাহ্ [সাঃআঃ] তাহাঁর সাহাবীদের মধ্যে কুরবানীর পশু বন্টন করিলেন। আমার অংশে একটি এক বছরের বকরী পড়লো। আমি বললামঃ ইয়া রাসূলাল্লাহ্‌! আমার অংশে একটি এক বছরের বকরী পড়েছে। তিনি বললেনঃ তুমি তা কুরবানী কর।

হাদিসের তাহকিকঃ সহীহ হাদীস

৪৩৮১. উকবা ইবনি আমির [রাঃআঃ] হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেনঃ রসূলুল্লাহ্ [সাঃআঃ] তাহাঁর সাহাবীদের মধ্যে কুরবানীর পশু বন্টন করিলেন। আমার অংশে একটি এক বছর বয়সী পশু পড়লো। আমি বললামঃ ইয়া রাসূলাল্লাহ্‌! আমার অংশে একটি এক বছর বয়সী পশু পড়েছে। তিনি বললেনঃ তুমি তা কুরবানী কর।

হাদিসের তাহকিকঃ নির্ণীত নয়

৪৩৮২. উকবা ইবনি আমির [রাঃআঃ] হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেনঃ আমরা রসূলুল্লাহ্ [সাঃআঃ]- এর সঙ্গে একটি এক বছর বয়সী ভেড়া কুরবানী করেছি।

হাদিসের তাহকিকঃ সহীহ হাদীস

৪৩৮৩. কুলায়ব [রাঃআঃ] হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেনঃ আমরা একবার সফরে ছিলাম, তখন কুরবানীর ঈদ উপস্থিত হল। আমাদের একেক ব্যক্তি দুটি বা তিনটি এক বছরের ভেড়ার পরিবর্তে একটি দুবছরের বয়সের ভেড়া খরিদ করছিল। তখন মুযায়না গোত্রের এক ব্যাক্তি বললোঃ আমরা রসূলুল্লাহ্ [সাঃআঃ] –এর সঙ্গে এক সফরে ছিলাম। এমন সময় দিনটি উপস্থিত হলে এক ব্যাক্তি দুটি বা তিনটি এক বছরের ভেড়ার পরিবর্তে একটি দুবছরের ভেড়া তালাশ করছিল। তখন রসূলুল্লাহ্ [সাঃআঃ] বলিলেন, বকরীর ক্ষেত্রে দুবছর বয়সী দ্বারা যেভাবে কুরবানী আদায় হয়, তদ্রুপ এক বছর বয়সী দ্বারাও আদায় হইয়া যাবে।

হাদিসের তাহকিকঃ সহীহ হাদীস

৪৩৮৪. আসিম ইবনি কুলায়ব [রাঃআঃ] হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেনঃ আমার পিতা জনৈক ব্যক্তি থেকে বর্ণনা করিয়াছেন যে, তিনি বলেন, কুরবানীর দুই দিন পূর্বে আমরা রসূলুল্লাহ্ [সাঃআঃ] -এর সঙ্গে ছিলাম। আমরা একটি দুবছরী বকরীর পরিবর্তে দুটি এক বছরী বকরী দিচ্ছিলাম। তখন রসূলুল্লাহ্ [সাঃআঃ] বললেনঃ দুবছর বয়সের বকরী দ্বারা যা করা চলে, তা এক বছর বয়সী বকরী দ্বারাও চলে।

হাদিসের তাহকিকঃ সহীহ হাদীস

১৪.পরিছেদঃ দুম্বা

৪৩৮৫. আনাস [রাঃআঃ] হইতে বর্ণিতঃ

রসূলুল্লাহ্ [সাঃআঃ] দুটি দুম্বা কুরবানী করিতেন। আনাস [রাঃআঃ] বলেন, আমিও দুটি দুম্বা কুরবানী করি।

হাদিসের তাহকিকঃ সহীহ হাদীস

৪৩৮৬. আনাস [রাঃআঃ] হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেনঃ রসূলুল্লাহ্ [সাঃআঃ] সাদা এবং কালো মিশানো রঙের দুটি দুম্বা কুরবানী করিলেন।

হাদিসের তাহকিকঃ সহীহ হাদীস

৪৩৮৭. আনাস [রাঃআঃ] হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেনঃ রসূলুল্লাহ্ [সাঃআঃ] সাদা-কালো মিশানো রঙের দুটি শিং বিশিষ্ট দুম্বা দ্বারা কুরবানী করিয়াছেন। তিনি এ দুটি আল্লাহু আকবর বলে নিজ হাতে যবেহ করেন। আর তিনি তাহাঁর পা ঘাড়ের উপর চেপে ধরলেন।

হাদিসের তাহকিকঃ সহীহ হাদীস

৪৩৮৮. আনাস ইবনি মালিক [রাঃআঃ] হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেনঃ রসূলুল্লাহ্ [সাঃআঃ] কুরবানীর দিন আমাদের খুৎবা দিলেন এবং দুটি কালো-সাদা রঙের দুম্বার নিকট গিয়ে তা যবেহ করিলেন। [সংক্ষিপ্ত]

হাদিসের তাহকিকঃ সহীহ হাদীস

৪৩৮৯. আবু বাকর [রাঃআঃ] হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেনঃ এরপর তিনি অর্থাৎ রসূলুল্লাহ্ [সাঃআঃ] কুরবানীর দিন দুটি সাদা-কালো দুম্বার দিক গমন করিলেন এবং তা যবেহ করিলেন। আর বকরীর এক পালের দিক গমন করে তা আমাদের মধ্যে বন্টন করিলেন।

হাদিসের তাহকিকঃ সহীহ হাদীস

৪৩৯০. আবু সাইদ [রাঃআঃ] হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ্ [সাঃআঃ] দুটি শিংওয়ালা হৃষ্টপুষ্ট দুম্বা কুরবানী করিলেন, যাহার পা সমূহ শুভ্র ছিল আর পূর্ন শরীর কালো আর তার পেট ছিল কালো, আর চোখও ছিল কালো।

হাদিসের তাহকিকঃ সহীহ হাদীস

১৫.পরিছেদঃ উট ও গরুর মধ্যে কয়জনের কুরবানী জায়েয

৪৩৯১. রাফে ইবনি খাদীজ [রাঃআঃ] হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেনঃ রসূলুল্লাহ্ [সাঃআঃ] গনীমতের মাল বন্টন করার সময় একটি উটের পরিবর্তে দশটি বকরী দিতেন।

হাদিসের তাহকিকঃ সহীহ হাদীস

৪৩৯২. ইবনি আব্বাস [রাঃআঃ] হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, আমরা রসূলুল্লাহ্ [সাঃআঃ] -এর সঙ্গে সফরে ছিলাম, তখন কুরবানীর সময় উপস্থিত হলে আমরা একটি উটে দশজন{১} শরীক হলাম, আর একটি গাভীতে সাতজন।

{১} এ বিধান অন্য হাদীস দ্বারা রহিত হইয়াছে।হাদিসের তাহকিকঃ সহীহ হাদীস

১৬.পরিছেদঃ কুরবানীর গরুতে শরীক সম্পর্কে

৪৩৯৩. জাবির [রাঃআঃ] হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেনঃ আমরা রসূলুল্লাহ্ [সাঃআঃ] -এর সঙ্গে তামাত্তু হজ্জ করতাম। আমরা সাতজনের পক্ষ থেকে গরু যবেহ করতাম এবং তাতে শরীক হতাম।

হাদিসের তাহকিকঃ সহীহ হাদীস

১৭.পরিছেদঃ ইমামের পূর্বে কুরবানী করা

৪৩৯৪. বারা [রাঃআঃ] হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, কুরবানীর দিন রসূলুল্লাহ্ [সাঃআঃ] দাঁড়িয়ে বললেনঃ যে ব্যক্তি আমাদের কিবলার দিকে মুখ করে আমাদের সালাতের ন্যায় নামাজ আদায় করে এবং আমাদের হজ্জের আরকানসমূহ আদায় করে; সে যেন নামাজ আদায় করার পূর্বে কুরবানী না করে। তখন আমার মামা দাঁড়িয়ে বললেনঃ ইয়া রাসূলাল্লাহ্‌! আমি তো সালাতের পূর্বেই কুরবানী করে ফেলেছি আমার পরিবারের ও বাড়ির লোকদের, অথবা তিনি বলেছেন আমার পরিবারের লোক ও প্রতিবেশীদেরকে খাওয়ানোর জন্য। তখন রাসূলুললাহ্‌ [সাঃআঃ] বললেনঃ অন্য একটি পশু যবেহ কর। তিনি বললেনঃ আমার নিকট বকরীর বাচ্চা রয়েছে, যা আমার নিকট গোশতের দুটি বকরী অপেক্ষা অধিক প্রিয়। তিনি বললেনঃ তুমি তা যবেহ কর, কেননা তোমার দুই কুরবানীর মধ্যে সেটাই উত্তম। তোমার পর আর কারো পক্ষ থেকে অপ্রাপ্ত বয়স্ক বকরী গ্রহণযোগ্য হইবে না।

হাদিসের তাহকিকঃ সহীহ হাদীস

৪৩৯৫. বারা ইবনি আযিব [রাঃআঃ] হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেনঃ রসূলুল্লাহ্ [সাঃআঃ] কুরবানীর দিন সালাতের পর আমাদেরকে খুতবা দান করিলেন। এরপর বললেনঃ যে ব্যক্তি আমাদের সালাতের ন্যায় নামাজ আদায় করিল এবং আমাদের মত কুরবানী করিবে, তার কুরবানী সঠিক হইবে। আর যে ব্যক্তি সালাতের পূর্বেই কুরবানী করলো, তা তার জন্য গোশতের বকরী হিসেবে গণ্য হইবে। তখন আবু বুরদা [রাঃআঃ] বললেনঃ ইয়া রাসূলাল্লাহ্‌! আল্লাহর শপথ। আমি তো সালাতের জন্য বের হবার পূর্বেই কুরবানী করেছি। আমি ধারণা করেছি, এই দিন পানাহারের দিন। অতএব আমি তাড়াতাড়ি করলাম এবং আমিও খেলাম, পরিবারের লোক এবং প্রতিবেশীকে খাওয়ালাম। রসূলুল্লাহ্ [সাঃআঃ] বললেনঃ এটা গোশতের বকরী হইয়াছে। তিনি বললেনঃ আমার নিকট অপূর্ণ বয়সের বকরীর বাচ্চা রয়েছে যা এই বকরী অপেক্ষা উত্তম। তা কি আমার পক্ষ থেকে যথেষ্ট হইবে? তিনি বললেনঃ হ্যাঁ। তোমার পরে আর কারো জন্য তা যথেষ্ট হইবে না।

হাদিসের তাহকিকঃ সহীহ হাদীস

৪৩৯৬. আনাস [রাঃআঃ] হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেনঃ রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] কুরবানীর দিন বলিলেনঃ যে ব্যক্তি সালাতের পূর্বেই যবেহ করেছে সে যেন পুনরায় যবেহ করে। তখন এক ব্যক্তি দাঁড়িয়ে বলিলেনঃ ইয়া রাসূলাল্লাহ্! এই দিনটি এমন যে, এ দিন গোশত খাওয়ার ইচ্ছা প্রবল হয়। তিনি তাহাঁর পড়শীর প্রয়োজনের কথাও উল্লেখ করিলেন, যেন রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] তার সমর্থন করেন। তিনি বলিলেনঃ আমার নিকট অপূর্ণ বয়স্ক একটি বকরী রয়েছে। যা এই গোশতের বকরী হইতে আমার নিকট অধিক প্রিয়। তখন তিনি তাকে এর অনুমতি দিলেন। আমি জানি না তাহাঁর এই অনুমতি দান তিনি ব্যতীত অন্যের জন্য প্রযোজ্য হইবে কিনা? এরপর তিনি দুটি বকরীর কাছে গিয়ে তা যবেহ্ করেন।

হাদিসের তাহকিকঃ সহীহ হাদীস

৪৩৯৭. আবু বুরদা ইবনি নিয়ার [রাঃআঃ] হইতে বর্ণিতঃ

তিনি রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] -এর পূর্বে যবেহ করলে রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] তাকে পুনরায় যবেহ করিতে নির্দেশ দিলেন। তিনি বলিলেনঃ আমার নিকট অপূর্ণ বয়স্ক বকরীর বাচ্চা রয়েছে, যা আমার নিকট পূর্ণ বয়স্ক বকরী অপেক্ষা উত্তম। তিনি বলিলেনঃ তা যবেহ কর, আর উবায়দুল্লাহর হাদীসে রয়েছে, তিনি বলিলেনঃ আমি অপ্রাপ্ত বয়স্ক বকরী ব্যতীত আর কিছু পাচ্ছি না। তিনি তাঁকে তা-ই যবেহ করিতে বলিলেন।

হাদিসের তাহকিকঃ সহীহ হাদীস

৪৩৯৮. জুনদুব ইবনি সুফয়ান [রাঃআঃ] হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেনঃ আমরা একদিন রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] -এর সঙ্গে কুরবানী করলাম। তখন দেখা গেল, লোক সালাতের পূর্বেই তাহাদের কুরবানীর পশু যবেহ করে ফেলেছে। তিনি ফিরে এসে দেখলেন তারা সালাতের পূবেই তাহাদের পশু যবেহ করে ফেলেছে। তখন তিনি বলিলেনঃ যারা সালাতের পূর্বে যবেহ করে ফেলেছে, তারা তার পরিবর্তে যেন অন্য একটি যবেহ করে। আর যে ব্যক্তি আমাদের সালাতের পূর্বে যবেহ করেনি, সে যেন আল্লাহর নামে যবেহ করে।

হাদিসের তাহকিকঃ সহীহ হাদীস

১৮.পরিছেদঃ পাথর দ্বারা যবেহ করা

৪৩৯৯. মুহাম্মদ ইবনি সাফওয়ান [রাঃআঃ] হইতে বর্ণিতঃ

তিনি দুটি খরগোশ পেলেন, তা যবেহ করার জন্য কোন লৌহ জাতীয় অস্ত্র পেলেন না, তাই তিনি তা পাখর দ্বারা যবেহ করিলেন। পরে রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] -এর নিকট উপস্থিত হইয়া বলিলেনঃ ইয়া রাসূলাল্লাহ্! আমি দুটি খরগোশ শিকার করেছি। আমি এদেরকে যবেহ করার জন্য কোন লৌহাস্ত্র না পেয়ে পাথর দ্বারা যবেহ করেছি। এখন আমি তা খাব? তিনি বলিলেন ঃ হ্যাঁ, খাও।

হাদিসের তাহকিকঃ সহীহ হাদীস

৪৪০০. যায়দ ইবনি সাবিত [রাঃআঃ] হইতে বর্ণিতঃ

এক বাঘ একটি বকরীর গায়ে দাঁত বসালো। তখন তারা তা পাথর দ্বারা যবেহ করিলেন, রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] তা খাওয়ার অনুমতি প্রদান করিলেন।

হাদিসের তাহকিকঃ সহীহ লিগাইরিহি

১৯.পরিছেদঃ কাষ্ঠ দ্বারা যবেহ করা

৪৪০১. আদী ইবনি হাতীম [রাঃআঃ] হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেনঃ আমি বললামঃ ইয়া রাসূলাল্লাহ্! আমি আমার কুকুর ছেড়ে শিকার ধরি। কিন্তু তা যবেহ করার কিছু না পেয়ে তা কাষ্ঠ ও লাঠি দ্বারা যবেহ করি। তিনি বলিলেনঃ যা দ্বারা ইচ্ছা, রক্ত প্রবাহিত করে দাও এবং আল্লাহর নাম উচ্চারণ কর।

হাদিসের তাহকিকঃ সহীহ হাদীস

৪৪০২. আবু সাইদ খুদরী [রাঃআঃ] হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেনঃ এক আানসারী ব্যক্তির একটি উষ্ট্রী উহুদ পাহাড়ের দিকে চরে ঘাস খেত। হঠাৎ তার মৃত্যুর লক্ষণ দেখা দিল। সে তা একখানা কীলক দ্বারা যবেহ করিল। আমি যায়দকে বললাম তা কি কাঠের কীলক না লোহার? তিনি বলিলেন, না, বরং তা ছিল কাঠের। তারপর তিনি রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] -এর নিকট এ সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করলে তিনি তা খাওয়ার আদেশ দেন।

হাদিসের তাহকিকঃ সহীহ হাদীস

২০.পরিছেদঃ নখ দ্বারা যবেহ করার নিষেধাজ্ঞা

৪৪০৩. রাফে ইবনি খাদীজ [রাঃআঃ] হইতে বর্ণিতঃ

রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলেছেনঃ যা রক্ত প্রবাহিত করে এবং আল্লাহর নামে যবেহ করা হয়, তা খাও; দাঁত এবং নখ দ্বারা যবেহকৃত পশু ব্যতীত।

হাদিসের তাহকিকঃ সহীহ হাদীস

২১.পরিছেদঃ দাঁত দ্বারা যবেহ করা

৪৪০৪. রাফে ইবনি খাদীজ [রাঃআঃ] হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন আমি বললামঃ ইয়া রসূলুল্লাহ! আমরা আগামীকাল শত্রুর মোকাবেলা করবো। আমাদের সাথে ছুরি নেই। একথা শুনে রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলিলেনঃ যা রক্ত প্রবাহিত করে দেয় এবং যাহার উপর আল্লাহ্ তায়ালার নাম উচ্চারণ করা হয়, তা তোমরা খাও; যতক্ষণ পর্যন্ত তা দাঁত এবং নখের দ্বারা যবেহ করা না হয়। এ ব্যাপারে আমি বলছি যে, দাঁত তো এক প্রকার হাঁড় আর নখ হলো হাবশীদের ছুরি।

হাদিসের তাহকিকঃ সহীহ হাদীস

২২.পরিছেদঃ ছুরি ধারাল করার আদেশ

৪৪০৫. শাদ্দাদ ইবনি আউস [রাঃআঃ] হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেনঃ আমি রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] থেকে দুটি বিষয় স্মরণ রেখেছি। তিনি বলেছেন, আল্লাহ্ তাআলা প্রত্যেক বস্তুর প্রতি সদয় আচরণ [ইহসান করা] ফরয করিয়াছেন। অতএব তোমরা যখন কাউকে হত্যা করিবে, তখন উত্তমরূপে হত্যা করিবে, আর যখন কোন জন্তু যবেহ করিবে, তখন উত্তম পন্থায় যবেহ করিবে এবং তোমাদের প্রত্যেকে যেন ছুরি ধার দিয়ে নেয়। আর যবেহকৃত পশুকে ঠান্ডা হইতে দেয়।

হাদিসের তাহকিকঃ সহীহ হাদীস

২৩.পরিছেদঃ যে পশু যবেহ করা হয় তাকে নহর করা এবং যে পশু নহর করা হয় তাকে যবেহ করার অনুমতি

৪৪০৬. আসমা বিন্‌ত আবু বকর [রাঃআঃ] হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেনঃ রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] –এর সময়ে আমরা একটি ঘোড়া নহর করেছি। তারপর তা খেয়েছি।

হাদিসের তাহকিকঃ সহীহ হাদীস

২৪.পরিছেদঃ হিংস্র পশুর দংশিত জন্তু যবেহ করা

৪৪০৭. যায়দ ইবনি সাবিত [রাঃআঃ] হইতে বর্ণিতঃ

একটি ব্যাঘ্র একটি বকরী দংশন করলে লোকেরা একটি ধারাল পাথর দ্বারা তা যবেহ করিল। তখন রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] তা খাওয়ার অনুমতি দিলেন।

হাদিসের তাহকিকঃ সহীহ হাদীস

২৫.পরিছেদঃ কূয়ায় পতিত জন্তুর যবেহ, যাহার গলায় ছুরি পৌঁছানো যায় না

৪৪০৮.আবুল উশারা [রাঃআঃ] তাহাঁর পিতা থেকে হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেছেন, আমি বললামঃ ইয়া রসূলুল্লাহ! গলা এবং লাব্বার{১} মধ্য ব্যতীত কি যবেহ হয় না? তিনি বলিলেনঃ যদি তুমি তার উরুতেও আঘাত কর, তবে তাই তোমার জন্য যথেষ্ট।

{১} লাব্বা বলা হয় বুকের উপরের অংশকে।হাদিসের তাহকিকঃ জইফ হাদীস

২৬.পরিছেদঃ যে জন্তু পালায় এবং তা ধরা যায় না

৪৪০৯. রাফি [রাঃআঃ] হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেনঃ আমি বললাম, ইয়া রসূলুল্লাহ! আমরা কাল শত্রুর সম্মুখীন হবো। তখন আমাদের সাথে ছুরি ইত্যাদি থাকিবে না। তিনি বলিলেনঃ যা রক্ত প্রবাহিত করে দেয় এবং যাকে আল্লাহর নাম নিয়ে যবেহ করা হয়, তা আহার করিতে পার; দাঁত ও নখ দ্বারা যা যবেহ করা হয় তা ব্যতীত। সেই যুদ্ধে রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] গনীমতের মাল হিসাবে একপাল উট ও বকরী পেলেন। তা থেকে একটি উট পালিয়ে যেতে লাগল। এক ব্যক্তি তীর মেরে তাকে আটকে ফেলল। তখন তিনি বলিলেনঃ এ সকল জন্তু অথবা তিনি বলেছেন, এ সকল উটের জংলী জন্তুর ন্যায় পলায়নের অভ্যাস রয়েছে। অতএব যদি কোন উট পালিয়ে যায় এবং তোমরা ধরতে না পার, তবে তোমরা তার প্রতি এরূপ করিবে।

হাদিসের তাহকিকঃ সহীহ হাদীস

৪১০. রাফি ইবনি খাদীজ্ [রাঃআঃ] হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেনঃ আমি বললামঃ ইয়া রসূলুল্লাহ! আমরা আগামীকাল শত্রুর সম্মুখীন হব, আর তখন আমাদের সাথে ছুরি থাকিবে না। তিনি বলিলেনঃ যা রক্ত প্রবাহিত করে এবং যবেহ করার সময় আল্লাহর নাম উল্লেখ করা হয়, তা খাও; তবে দাঁত ও নখ দ্বারা নয়। আর আমি তোমাদের নিকট এর কারণ বলছি যে, দাঁত তো এক প্রকার হাঁড়, আর নখ হলো হাবশী লোকদের ছুরি। আমরা গনীমতরূপে একপাল উট বা ছাগল পেলাম। তা থেকে একটি উট পালাতে থাকলে এক ব্যক্তি তীর ছুঁড়ে তাকে বাধা দিল। তখন রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলিলেনঃ এই সকল উটের মধ্যে জংলী জন্তুর ন্যায় পলায়ন করার অভ্যাস রয়েছে। অতএব যদি কোন জন্তু তোমরা ধরতে না পার, তবে তোমরা তার প্রতি এরূপ করিবে।

হাদিসের তাহকিকঃ সহীহ হাদীস

৪৪১১. শাদ্দাদ ইবনি আউস [রাঃআঃ] হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, আমি রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ]– কে বলিতে শুনিয়াছিঃ আল্লাহ্ তায়ালা সকলের উপর সদয় আচরণের নির্দেশ দিয়েছেন। তোমরা যখন হত্যা করিবে, তখন উত্তমরূপে হত্যা করিবে; আর যখন তোমরা যবেহ করিবে, তখন উত্তমরূপে যবেহ করিবে তোমাদের ছুরি ধারাল করিবে এবং যবেহকৃত জন্তুকে ঠান্ডা হইতে দেবে।

হাদিসের তাহকিকঃ সহীহ হাদীস

২৭.পরিছেদঃ উত্তমরূপে যবেহ করা

৪৪১২. শাদ্দাদ ইবনি আউস [রাঃআঃ] হইতে বর্ণিতঃ

রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলেনঃ আল্লাহ্ তায়ালা সকল বস্তুর উপর সদয় আচরণের নির্দেশ দিয়েছেন। অতএব যখন তোমরা হত্যা করিবে, তখন উত্তম পন্থায় হত্যা করিবে, আর যখন যবেহ করিবে, তখনও উত্তম পন্থায় যবেহ করিবে। আর তোমাদের প্রত্যেকেরই ছুরিতে ধার দিয়ে নেওয়া উচিত এবং যবেহকৃত জন্তুকে ঠান্ডা হইতে দেওয়া উচিত।

হাদিসের তাহকিকঃ সহীহ হাদীস

৪৪১৩. শাদ্দাদ ইবনি আউস [রাঃআঃ] হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, আমি রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ]– কে দুটি কথা বলিতে শুনিয়াছিঃ আল্লাহ্ তাআলা প্রত্যেক বস্তুর উপরই সদয় আচরণের নির্দেশ দিয়েছেন। সুতরাং যখন তোমরা কাউকে হত্যা করিবে, তখন উত্তম পন্থায় হত্যা করিবে, আর যখন যবেহ করিবে, তখন উত্তম পন্থায় যবেহ করিবে। তোমাদের প্রত্যেকেই ছুরিতে ধার দিয়ে নিবে এবং যবেহকৃত পশুকে ঠান্ডা হইতে দেবে।

হাদিসের তাহকিকঃ সহীহ হাদীস

৪৪১৪. শাদ্দাদ ইবনি আউস [রাঃআঃ] হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, আমি রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] থেকে দুটি কথা মুখস্থ রেখেছিঃ আল্লাহ্ তাআলা প্রত্যেক বস্তুর উপরেই সদয় আচরণের নির্দেশ দিয়েছেন। সুতরাং যখন তোমরা কাউকে হত্যা করিবে, তখন উত্তম পন্থায় হত্যা করিবে, আর যখন যবেহ করিবে, তখন উত্তম পন্থায় যবেহ করিবে এবং তোমাদের প্রত্যেকেই ছুরিতে ধার দিয়ে নিবে, যবেহকৃত পশুকে ঠান্ডা হইতে দেবে।

হাদিসের তাহকিকঃ সহীহ হাদীস

২৮.পরিছেদঃ কুরবানীর জন্তুর ঘাড়ে পা রাখা

৪৪১৫. কাতাদা [রাঃআঃ] হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, আমি আনাস [রাঃআঃ]-কে বলিতে শুনিয়াছিঃ রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] দুটি শিংওয়ালা সাদা-কালো রঙের ভেড়া কুরবানী করিলেন। তিনি বিসমিল্লাহ্ ও আল্লাহু আকবর বলে যবেহ করেন। আমি দেখেছি তিনি তা নিজ হাতে যবেহ করছেন তার ঘাড়ের উপর তাহাঁর পা মুবারক স্থাপন করে। আমি বললামঃ আপনি কি এটা তাহাঁর থেকে শুনেছেন? তিনি বলিলেনঃ হ্যাঁ।

হাদিসের তাহকিকঃ সহীহ হাদীস

২৯.পরিছেদঃ কুরবানী করাকালে আল্লাহর নাম উচ্চারণ করা

৪৪১৬. আনাস ইবনি মালিক [রাঃআঃ] হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] শিংওয়ালা দুটি সাদা-কালো বর্ণের ভেড়া কুরবানী করেন, আর আল্লাহর নাম উচ্চারণ করে তাকবীর বলেন। আমি দেখেছি তিনি তা যবেহ করছেন নিজ হাতে, তার ঘাড়ের উপর তাহাঁর নিজ পা রেখে।

হাদিসের তাহকিকঃ সহীহ হাদীস

৩০.পরিছেদঃ তাকবীর বলা

৪৪১৭. আনাস [রাঃআঃ] হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, আমি তাঁকে অর্থাৎ নাবী [সাঃআঃ] -কে তা নিজ হাতে যবেহ করিতে দেখেছি, তার ঘাড়ের উপর তাহাঁর পা রেখে আর তিনি বিসমিল্লাহ্ ও আল্লাহু আকবর বলেছিলেন। আর তা ছিল শিংওয়ালা দুটি সাদা-কালো রঙের ভেড়া।

হাদিসের তাহকিকঃ সহীহ হাদীস

৩১.পরিছেদঃ নিজ হাতে কুরবানীর জন্তু যবেহ করা

৪৪১৮. আনাস ইবনি মালিক [রাঃআঃ] হইতে বর্ণিতঃ

নাবী [সাঃআঃ] শিংওয়ালা দুটি সাদা-কালো বর্ণের ভেড়া কুরবানী করেন, তার ঘাড়ের উপর নিজের পা রেখে, আর এসময় তিনি বিসমিল্লাহ্ ও আল্লাহু আকবর বলেন।

হাদিসের তাহকিকঃ সহীহ হাদীস

৩২.পরিছেদঃ অন্যের কুরবানী যবেহ করা

৪৪১৯. জাবির ইবনি আবদুল্লাহ [রাঃআঃ] হইতে বর্ণিতঃ

রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] তাহাঁর কোন কোন কুরবানীর পশু নিজ হাতে যবেহ করিয়াছেন, আর কোন কোনটি অন্য লোকে যবেহ করেছে।

হাদিসের তাহকিকঃ সহীহ হাদীস

৩৩.পরিছেদঃ যা যবেহ করা হয়, তা নহর করা

৪৪২০. আসমা [রাঃআঃ] হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেনঃ রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] -এর সময় আমরা একটি ঘোড়াকে নহর করলাম এবং তা খেলাম। কুতায়বা [রহমাতুল্লাহি আলাইহি] তাহাঁর হাদীসে বলেন ঃ আমরা তার গোশত খেয়েছি।

হাদিসের তাহকিকঃ সহীহ হাদীস

৪৪২১. আসমা [রাঃআঃ] হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেনঃ রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] -এর সময় আমরা একটি ঘোড়া যবেহ করলাম, তখন আমরা মদীনায় ছিলাম। এরপর আমরা তা খেলাম।

হাদিসের তাহকিকঃ সহীহ হাদীস

৩৪.পরিছেদঃ যে আল্লাহ্ ব্যতীত অন্য কারো উদ্দেশ্যে যবেহ করে

৪৪২২. আমির ইবনি ওয়াসিলা [রাঃআঃ] হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেনঃ এক ব্যক্তি আলী [রাঃআঃ]-কে জিজ্ঞাসা করলোঃ রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] কি আপনাকে গোপনে কিছু বলেছেন, যা অন্য লোককে বলেন নি? এ কথা শুনে আলী [রাঃআঃ] এত রাগান্বিত হলেন যে, তাহাঁর চেহারা লাল হইয়া গেল। তিনি বলিলেন, অন্য লোককে ব্যতীত আমাকে তিনি গোপনে কোন কিছুই বলেন নি। তবে হ্যাঁ, তিনি আমাকে চারটি কথা বলেছেন। তখন আমি এবং তিনিই ঘরে ছিলাম। তিনি বলেনঃ যে তার পিতাকে লানত করে, আল্লাহ্ তাকে লানত করেন। আল্লাহ্ তাআলা লানত করেন ঔ ব্যক্তিকে, যে আল্লাহ্ ব্যতীত অন্য কারো নামে যবেহ করে। আর অল্লাহ্ তাআলা লানত করেন সেই ব্যক্তিকে, যে কোন বিদআতীকে আশ্রয় দেয়। আর আল্লাহ তাআলা লানত করেন ঐ ব্যক্তিকে, যে ব্যক্তি জমির সীমানা পরিবর্তন করে।

হাদিসের তাহকিকঃ সহীহ হাদীস

৩৫.পরিছেদঃ তিনদিন পর কুরবানীর গোশত খাওয়া ও রেখে দেওয়ার প্রতি নিষেধাজ্ঞা

৪৪২৩. ইবনি উমার [রাঃআঃ] হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেনঃ রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] তিন দিনের পরেও কুরবানীর গোশত আহার করিতে নিষেধ করিয়াছেন।

হাদিসের তাহকিকঃ সহীহ হাদীস

৪৪২৪. ইবনি আউফ-এর আযাদকৃত দাস আবু উবায়দ [রহমাতুল্লাহি আলাইহি] হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেনঃ ঈদের দিন আমি আলী ইবনি আবু তালিবের নিকট উপস্থিত ছিলাম। তিনি খুতবার পূর্বেই নামাজ আরম্ভ করিলেন। এরপর নামাজ আদায় করিলেন আযান ও ইকামত ব্যতীত। পরে তিনি বলিলেনঃ আমি রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ]- কে তিন দিনের উপরে কুরবানীর গোশতের কিছু রেখে দিতে নিষেধ করিতে শুনিয়াছি।

হাদিসের তাহকিকঃ সহীহ হাদীস

৪৪২৫. আলী ইবনি আবু তালিব [রাঃআঃ] হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেনঃ রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] তোমাদেরকে তিন দিনের উপরে কুরবানীর গোশত খেতে নিষেধ করিয়াছেন।

হাদিসের তাহকিকঃ সহীহ হাদীস

৩৬.পরিছেদঃ কুরবানী এর অনুমতি প্রসঙ্গে

৪৪২৬. জাবির ইবনি আবদুল্লাহ [রাঃআঃ] হইতে বর্ণিতঃ

রাসুলুল্লাহ [সাঃআঃ] তিন দিন পরেও কুরবানীর গোশত খেতে নিষেধ করেছিলেন। পরে তিনি বলেনঃ তোমরা খাও অথবা তা দ্বারা উপকৃত হও অথবা জমা করে রাখ।

হাদিসের তাহকিকঃ সহীহ হাদীস

৪৪২৭. ইবনি খাব্বাব অর্থাৎ আবদুল্লাহ ইবনি খাব্বাব [রাঃআঃ] হইতে বর্ণিতঃ

আবু সাইদ খুদরী [রাঃআঃ] সফর থেকে আসলেন। তখন তাহাঁর পরিবারের লোক তাহাঁর সামনে কুরবানীর গোশত উপস্থিত করলে তিনি বলিলেন, আমি জিজ্ঞাসা না করে এটা খাব না। তিনি তাহাঁর বৈপিত্রেয় ভাই কাতাদা ইবনি নুমানের নিকট গেলেন, আর তিনি ছিলেন বদরী সাহাবী। তিনি তাহাঁর নিকট এ ব্যাপারে জিজ্ঞেস করিলেন। তিনি বলিলেন, আপনার পর নতুন ব্যাপার ঘটেছে, যা তিন দিন পর কুরবানীর গোশত খাওয়ার নিষেধাজ্ঞাকে রহিত করেছে।

হাদিসের তাহকিকঃ সহীহ হাদীস

৪৪২৮. আবু সাইদ খুদরী [রাঃআঃ] হইতে বর্ণিতঃ

রাসুলুল্লাহ [সাঃআঃ] তিন দিনের অধিক সময়ের জন্য কুরবানীর গোশত আহার করিতে নিষেধ করিয়াছেন। কাতাদা ইবনি নুমান [রাঃআঃ] সফর শেষে বাড়ি আসলেন, আর তিনি ছিলেন আবু সাইদ খুদরীর বৈপিত্রেয় ভাই এবং বদরী সাহাবী। তাহাঁর সামনে কুরবানীর গোশত পেশ করা হলো। তিনি বললেনঃ রাসুলুল্লাহ [সাঃআঃ] কি তা থেকে নিষেধ করেন নি? আবু সাইদ [রাঃআঃ] বললেনঃ এ বিষয়ে নতুন ব্যাপার ঘটেছে। রাসুলুল্লাহ [সাঃআঃ] তিন দিনের উপরে তা আহার করিতে নিষেধ করেছিলেন। তারপর আমাদেরকে তা খাওয়ার এবং জমা করে রাখার অনুমতি প্রদান করিয়াছেন।

হাদিসের তাহকিকঃ সহীহ হাদীস

৪৪২৯. বুরায়দা [রাঃআঃ] হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলেছেনঃ আমি তোমাদেরকে তিনটি কাজ থেকে নিষেধ করেছিলাম। যথাঃ কবর যিয়ারত থেকে, এখন তোমরা তা যিয়ারত কর, এর যিয়ারত তোমাদের জন্য অধিক সওয়াবের কারন হইবে। আর আমি তোমাদেরকে তিন দিনের পর কুরবানীর গোশত খেতে নিষেধ করেছিলাম, এখন তোমরা তা খেতে পার এবং যত ইচ্ছা রেখে দিতে পার। আর আমি তোমাদেরকে নিষেধ করেছিলাম মদের পাত্রে পান করিতে। এখন তোমরা যে কোন পাত্রে ইচ্ছা পান করিতে পার। কিন্তু তোমরা নেশাযুক্ত পানীয় পান করিবে না। আর রাবী মুহাম্মদ রেখে দিতে পার—— এ কথাটি উল্লেখ করেন নি।

হাদিসের তাহকিকঃ সহীহ হাদীস

৪৪৩০. বুরায়দা [রাঃআঃ] হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলেছেনঃ আমি তোমাদেরকে নিষেধ করেছিলাম তিন দিনের পর কুরবানীর গোশত খেতে; আর মশক ব্যতীত অন্য পাত্রে নাবীয তৈরি করিতে এবং কবর যিয়ারত করিতে। এখন তোমরা কুরবানীর গোশত খেতে পার যত দিন ইচ্ছা এবং সফরে তা পাথেয় হিসেবে নিতে পার এবং তা জমা করে রাখতে পার। আর যে কবর যিয়ারত করিতে ইচ্ছা করে, সে যিয়ারত করিবে। কেননা তা পরকালকে স্মরণ করিয়ে দেয়। আর তোমরা [যে কোন পাত্রে] পান করিবে, কিন্তু প্রত্যেক নেশা জাতীয় দ্রব্য থেকে বেঁচে থাকিবে।

হাদিসের তাহকিকঃ সহীহ লিগাইরিহি

৩৭.পরিছেদঃ কুরবানীর গোশত জমা করে রাখা

৪৪৩১. আয়েশা [রাঃআঃ] হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেনঃ বেদুঈনদের একটি দল কুরবানীর সময়ে উপস্থিত হলে রাসুলুল্লাহ [সাঃআঃ] বললেনঃ তোমরা খাও এবং তিন দিন পর্যন্ত জমা করে রাখতে পার। পরের বছর লোকজন বললোঃ ইয়া রাসুলুল্লাহ [সাঃআঃ]! মানুষ তাহাদের কুরবানী দ্বারা উপকৃত হয়। তার চর্বি গলাত এবং তা দ্বারা মশক তৈরি করত। তিনি বললেনঃ তা কী হলো? লোকটা বললোঃ আপনি তো কুরবানীর গোশত জমা রাখতে নিষেধ করিয়াছেন। তিনি বলিলেন, আমি তো নিষেধ করেছিলাম ঐ লোকদের জন্য, যারা আগমন করেছিল। এখন তোমরা খাও, জমা করে রাখ এবং সাদকা কর।

হাদিসের তাহকিকঃ সহীহ হাদীস

৪৪৩২. আবিস [রহমাতুল্লাহি আলাইহি] হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেনঃ আমি আয়েশা [রাঃআঃ] –এর নিকট গিয়ে বললামঃ রাসুলুল্লাহ [সাঃআঃ] কি তিন দিনের পর কুরবানীর গোশত খেতে নিষেধ করিয়াছেন? তিনি বললেনঃ হ্যাঁ। লোকের মধ্যে অভাব দেখা দেওয়ায় রাসুলুল্লাহ [সাঃআঃ] পছন্দ করিলেন যেন ধনী লোকেরা দরিদ্রদেরকে খাওয়ায়। এরপর তিনি বললেনঃ আমি মুহাম্মদ [সাঃআঃ] এর পরিবার বর্গকে পনের দিন পরেও গরু-ছাগলের পা– এর গোশত খেতে দেখেছি। আমি বললামঃ তা কেন করিতেন? তখন তিনি হেসে বললেনঃ মুহাম্মদ [সাঃআঃ] এর পরিবারের লোক উপর্যপরি তিন দিন তৃপ্তি সহকারে রুটি খেতে পাননি, যাবৎ না তিনি মহান আল্লাহর সাথে মিলিত হইয়াছেন।

হাদিসের তাহকিকঃ সহীহ হাদীস

৪৪৩৩. আবিস [রহমাতুল্লাহি আলাইহি] হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেনঃ আমি আয়েশা [রাঃআঃ] – কে কুরবানীর গোশত সম্বন্ধে জিজ্ঞাসা করলাম। তিনি বললেনঃ আমরা এক মাস পর্যন্ত রাসুলুল্লাহ [সাঃআঃ] এর জন্য কুরবানীর পশুর পা তুলে রাখতাম। এরপর তিনি তা খেতেন।

হাদিসের তাহকিকঃ সহীহ হাদীস

৪৪৩৪. আবু সাইদ খুদরী [রাঃআঃ] হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেনঃ রাসুলুল্লাহ [সাঃআঃ] প্রথম প্রথম তিন দিনের পরে কুরবানীর গোশত রেখে দিতে নিষেধ করেছিলেন, এরপর তিনি বললেনঃ তোমরা তা খাও এবং লোকদেরকে খাওয়াও।

হাদিসের তাহকিকঃ সহীহ হাদীস

৩৮.পরিছেদঃ ইয়াহূদীদের যবেহকৃত পশু

৪৪৩৫. আবদুল্লাহ ইবনি মুগাফফাল [রাঃআঃ] হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেনঃ খায়বরের দিন চর্বি ভর্তি একটি থলি পাওয়া গেল। আমি তা নিয়ে বললাম, আমি এর থেকে কাউকে কিছু দিব না। তারপর আমি ফিরে তাকালাম, দেখি রাসুলুল্লাহ [সাঃআঃ] স্মিত হাসছেন।

হাদিসের তাহকিকঃ সহীহ হাদীস

৩৯.পরিছেদঃ অজ্ঞাত লোকের যবেহকৃত পশু

৪৪৩৬. আয়েশা [রাঃআঃ] হইতে বর্ণিতঃ

বেদুঈনদের কেউ কেউ আমাদের নিকট গোশত নিয়ে আসত। আর আমরা জানতাম না এর উপর যবেহ করার সময় আল্লাহর নাম নেওয়া হইয়াছে কি না। তখন রাসুলুল্লাহ [সাঃআঃ] বললেনঃ তোমরা এর উপর আল্লাহর নাম উচ্চারন কর এবং খাও।

হাদিসের তাহকিকঃ সহীহ হাদীস

৪০.পরিছেদঃ আল্লাহর বাণী- যাতে আল্লাহর নাম নেওয়া হয়নি তার কিছুই খেও না [৬ঃ১২১] – এর ব্যাখ্যা

৪৪৩৭. ইবনি আব্বাস [রাঃআঃ] হইতে বর্ণিতঃ

আয়াতঃ————আরবি————- —– প্রসঙ্গে বলেন, মুশরিকরা মুমিনদের সাথে ঝগড়া করে বলতো, আল্লাহ তাআলা যা যবেহ করিয়াছেন, তোমরা তা খাও না; অথচ তোমরা নিজেরা যা যবেহ করে থাক, তা খাও।

হাদিসের তাহকিকঃ সহীহ হাদীস

৪১.পরিছেদঃ মুজাসসামা খাওয়ার নিষেধাজ্ঞা

৪৪৩৮. আবু সালাবা [রাঃআঃ] হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলেছেনঃ মুজাসসামা হালাল নয়।

হাদিসের তাহকিকঃ সহীহ হাদীস

৪৪৩৯. হিশাম ইবনি যায়দ [রাঃআঃ] হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেনঃ আমি আনাস [রাঃআঃ] –এর সাথে হাকাম অর্থাৎ ইবনি আইয়্যুবের নিকট পৌছলাম এবং দেখলাম যে, কয়েকজন লোক আমীর [শাসন কর্তা]- এর বাড়িতে একটি মুরগীর প্রতি তীর নিক্ষেপ করছে। তখন তিনি বললেনঃ রাসুলুল্লাহ [সাঃআঃ] কোন জন্তুকে বেঁধে লক্ষ্যস্থল বানাতে নিষেধ করিয়াছেন।

হাদিসের তাহকিকঃ সহীহ হাদীস

৪৪৪০. আবদুল্লাহ ইবনি জাফর [রাঃআঃ] হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেনঃ রাসুলুল্লাহ [সাঃআঃ] কয়েকজন লোকের নিকট দিয়ে যাবার সময় দেখিতে পেলেন যে, তারা একটি ভেড়ার প্রতি তীর নিক্ষেপ করছে। তিনি এটা অপছন্দ করিলেন এবং বললেনঃ পশুদের দ্বারা নিশানা বানাবে না।

হাদিসের তাহকিকঃ সহীহ হাদীস

৪৪৪১. ইবনি উমার [রাঃআঃ] হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেনঃ ঐ ব্যক্তিকে রাসুলুল্লাহ [সাঃআঃ] অভিসম্পাত করিয়াছেন, যে ব্যক্তি কোন প্রাণীকে নিশানা বানায়।

হাদিসের তাহকিকঃ সহীহ হাদীস

৪৪৪২. ইবনি উমার [রাঃআঃ] হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেনঃ আমি রাসুলুল্লাহ [সাঃআঃ] কে বলিতে শুনেছিঃ যে ব্যক্তি কোন জীবকে লক্ষ্যস্থল বানিয়ে নেয়, আল্লাহ তাআলা তাকে অভিসম্পাত করেন।

হাদিসের তাহকিকঃ সহীহ হাদীস

৪৪৪৩. ইবনি আব্বাস [রাঃআঃ] হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলেছেনঃ যে বস্তুর প্রাণ রয়েছে, তাকে [তীর ইত্যাদির] লক্ষ্যস্থল বানাবে না।

হাদিসের তাহকিকঃ সহীহ হাদীস

৪৪৪৪. ইবনি আব্বাস [রাঃআঃ] হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেনঃ রাসুলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলেছেনঃ কোন প্রাণীকে লক্ষ্যস্থল বানিও না।

হাদিসের তাহকিকঃ সহীহ হাদীস

৪২.পরিছেদঃ যে ব্যক্তি অযথা চড়ুই হত্যা করে

৪৪৪৫. আবদুল্লাহ ইবনি আমর [রাঃআঃ] রাসুলুল্লাহ [সাঃআঃ হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেছেনঃ যে ব্যক্তি চড়ুই বা তার চাইতে ছোট কোন প্রাণীকে অন্যায়ভাবে হত্যা করে, তাকে আল্লাহ তাআলা কিয়ামতের দিন সে সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করবেন। তখন জিজ্ঞাসা করা হলোঃ ইয়া রাসুলাল্লাহ! তার ন্যায্যতা কী? তিনি বললেনঃ তার ন্যায্যতা হলো তাকে যবেহ করে খাওয়া এবং তার মাথা কেটে নিক্ষেপ না করা।

হাদিসের তাহকিকঃ জইফ হাদীস

৪৪৪৬. আমর ইবনি শারীদ [রাঃআঃ] হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, আমি রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] কে বলিতে শুনিয়াছিঃ যে ব্যক্তি কোন চড়ুইকে অযথা হত্যা করলো, তা কিয়ামতের দিন আল্লাহ তাআলার নিকট উঁচু স্বরে ফরিয়াদ করে বলবেঃ ইয়া আল্লাহ! অমুক ব্যক্তি আমাকে হত্যা অযথা করেছিল, সে কোন লাভের জন্য আমাকে হত্যা করেনি।

হাদিসের তাহকিকঃ জইফ হাদীস

৪৩.পরিছেদঃ জাল্লালার গোশত খাওয়ার উপর নিষেধাজ্ঞা

৪৪৪৭. আমর ইবনি শুয়াইব তাহাঁর পিতা মুহাম্মাদ ইবনি আবদুল্লাহ ইবনি আমর হইতে বর্ণিতঃ

তিনি কোন সময় তাহাঁর পিতা থেকে আবার কোন সময় তাহাঁর দাদা থেকে বর্ণনা করেন যে, রাসূল্লাহ [সাঃআঃ] খায়বর যুদ্ধের দিন গৃহপালিত গাধা এবং জাল্লালার গোশত খেতে, আর তাতে আরোহণ করিতে নিষেধ করিয়াছেন।

হাদিসের তাহকিকঃ হাসান হাদীস

৪৪.পরিছেদঃ জাল্লালার দুধ পানে নিষেধাজ্ঞা সম্পর্কে

৪৪৪৮. ইবনি আব্বাস[রাঃআঃ] হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেনঃ রাসূসুল্লাহ [সাঃআঃ] যে প্রাণীকে পাথর ছুঁড়ে হত্যা করা হয় তা খেতে, জাল্লালার দুধ পান করিতে এবং মশকের মুখ থেকে পানি পান করিতে নিষেধ করিয়াছেন।

হাদিসের তাহকিকঃ সহীহ হাদীস


Posted

in

by

Comments

One response to “কুরবানী করার নিয়ম। কুরবানীর গরুতে শরীক সম্পর্কে ।”

Leave a Reply