কুরবানির বিধান – কী পরিমাণ কুরবানীর গোশত ভক্ষণ করিবে
কুরবানির বিধান – কী পরিমাণ কুরবানীর গোশত ভক্ষণ করিবে >> বুখারী শরীফ এর মুল সুচিপত্র পড়ুন
পর্বঃ ২৫, হজ্জ, অধ্যায়ঃ (১০১-১২৫)=২৫টি
২৫/১০১. অধ্যায়ঃ কুরবানীর দিবসে সকালে জামরায়ে আকাবাতে কঙ্কর নিক্ষেপের সময় তাকবীর ও তালবিয়া পাঠ করা এবং চলার পথে কাউকে সওয়ারীতে পেছনে বসানো
২৫/১০২. অধ্যায়ঃ “আর তোমাদের মধ্যে যারা হজ্জ ও উমরাহ একত্রে একই সঙ্গে পালন করিতে চাও, তাহলে যা কিছু সহজলভ্য, তা দিয়ে কুরবানী করাই তার উপর কর্তব্য। বস্তুত যারা কুরবানীর পশু পাবে না, তারা হজ্জের দিনগুলোর মধ্যে তিনটি সওম পালন করিবে এবং সাতটি পালন করিবে ফিরে যাবার পর। এভাবে দশটি সিয়াম পূর্ণ হয়ে যাবে। এ নির্দেশটি তাদের জন্য যাদের পরিবার-পরিজন মাসজিদুল হারামের আশেপাশে বসবাস করে না।” (আল-বাকারা : ১৯৬)
২৫/১০৩. অধ্যায়ঃ কুরবানীর উটের পিঠে আরোহণ করা। আল্লাহর বাণীঃ
২৫/১০৪. অধ্যায়ঃ যে ব্যক্তি কুরবানীর জন্তু সাথে নিয়ে যায়।
২৫/১০৫. অধ্যায়ঃ রাস্তা হইতে কুরবানীর পশু ক্রয় করা।
২৫/১০৬. অধ্যায়ঃ যে ব্যক্তি যুল-হুলাইফা হইতে (কুরবানীর পশুকে) ইশ্আর এবং কিলাদা করে পরে ইহরাম বাঁধে।
২৫/১০৭. অধ্যায়ঃ উট এবং গরুর জন্য কিলাদা পাকানো।
২৫/১০৮. অধ্যায়ঃ কুরবানীর পশুকে ইশআর করা।
২৫/১০৯. অধ্যায়ঃ যে নিজ হস্তে কিলাদা বাঁধে।
২৫/১১০. অধ্যায়ঃ বকরীর গলায় কিলাদা ঝুলান।
২৫/১১১. অধ্যায়ঃ পশম বা তুলার কিলাদা (মালা)
২৫/১১২. অধ্যায়ঃ জুতার কিলাদা লটকানো।
২৫/১১৩. অধ্যায়ঃ কুরবানীর উটের পিঠে আচ্ছাদন পরানো।
২৫/১১৪. অধ্যায়ঃ যে ব্যক্তি রাস্তা হইতে কুরবানীর জন্তু ক্রয় করে ও তার গলায় কিলাদা বাঁধে।
২৫/১১৫. অধ্যায়ঃ স্ত্রীদের পক্ষ হইতে তাদের আদেশ ছাড়াই স্বামী কর্তৃক গরু কুরবানী করা।
২৫/১১৬. অধ্যায়ঃ মিনাতে নাবী (সাঃআঃ)-এর কুরবানী করার জায়গায় কুরবানী করা।
২৫/১১৭. অধ্যায়ঃ যে ব্যক্তি নিজ হস্তে কুরবানী করে।
২৫/১১৮. অধ্যায়ঃ বাঁধা অবস্থায় উট কুরবানী করা।
২৫/১১৯. অধ্যায়ঃ উটকে দাঁড় করিয়ে কুরবানী করা।
২৫/১২০. অধ্যায়ঃ কুরবানীর জন্তুর কিছুই কসাইকে দেয়া যাবে না।
২৫/১২১. অধ্যায়ঃ কুরবানীর পশুর চামড়া সদাকাহ করা।
২৫/১২২. অধ্যায়ঃ কুরবানীর পশুর পিঠের আচ্ছাদন সদাকাহ করা।
২৫/১২৩. অধ্যায়ঃ আল্লাহর বাণী
২৫/১২৪. অধ্যায়ঃ কী পরিমাণ কুরবানীর গোশত ভক্ষণ করিবে এবং কী পরিমাণ সদাকাহ করিবে?
২৫/১২৫. অধ্যায়ঃ মাথা মুণ্ডানোর পূর্বে কুরবানী করা।
২৫/১০১. অধ্যায়ঃ কুরবানীর দিবসে সকালে জামরায়ে আকাবাতে কঙ্কর নিক্ষেপের সময় তাকবীর ও তালবিয়া পাঠ করা এবং চলার পথে কাউকে সওয়ারীতে পেছনে বসানো
১৬৮৫. ইবনু আব্বাস (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ
নাবী (সাঃআঃ) ফাযল (রাদি.) -কে তাহাঁর সওয়ারীর পেছনে বসিয়েছিলেন। সেই ফাযল (রাদি.) বলেছেন, নাবী (সাঃআঃ) জামরায় পৌঁছে কঙ্কর নিক্ষেপ না করা পর্যন্ত তালবিয়া পাঠ করেছিলেন। (১৫৪৪)
(আঃপ্রঃ ১৫৭১, ইঃফাঃ ১৫৭৭)
১৬৮৬. ইবনু আব্বাস (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ
আরাফা হইতে মুযদালিফা আসার পথে নাবী (সাঃআঃ)-এর সওয়ারীর পেছনে উসামাহ (রাদি.) উপবিষ্ট ছিলেন। এরপর মুযদালিফা হইতে মিনার পথে তিনি (সাঃআঃ) ফাযলকে সওয়ারীর পেছনে বসালেন। ইবনু আব্বাস (রাদি.) বলেন, তারা উভয়েই বলেছেন, নাবী (সাঃআঃ) জামারায়ে আকাবাতে কঙ্কর না মারা পর্যন্ত অনবরত তালবিয়া পাঠ করছিলেন। (১৫৪৪)
(আঃপ্রঃ ১৫৭২, ইঃফাঃ ১৫৭৮)
১৬৮৭. ইবনু আব্বাস (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ
আরাফা হইতে মুযদালিফা আসার পথে নাবী (সাঃআঃ)-এর সওয়ারীর পেছনে উসামাহ (রাদি.) উপবিষ্ট ছিলেন। এরপর মুযদালিফা হইতে মিনার পথে তিনি (সাঃআঃ) ফাযলকে সওয়ারীর পেছনে বসালেন। ইবনু আব্বাস (রাদি.) বলেন, তারা উভয়েই বলেছেন, নাবী (সাঃআঃ) জামারায়ে আকাবাতে কঙ্কর না মারা পর্যন্ত অনবরত তালবিয়া পাঠ করছিলেন। (১৫৪৪)
(আঃপ্রঃ ১৫৭২, ইঃফাঃ ১৫৭৮)
২৫/১০২. অধ্যায়ঃ “আর তোমাদের মধ্যে যারা হজ্জ ও উমরাহ একত্রে একই সঙ্গে পালন করিতে চাও, তাহলে যা কিছু সহজলভ্য, তা দিয়ে কুরবানী করাই তার উপর কর্তব্য। বস্তুত যারা কুরবানীর পশু পাবে না, তারা হজ্জের দিনগুলোর মধ্যে তিনটি সওম পালন করিবে এবং সাতটি পালন করিবে ফিরে যাবার পর। এভাবে দশটি সিয়াম পূর্ণ হয়ে যাবে। এ নির্দেশটি তাদের জন্য যাদের পরিবার-পরিজন মাসজিদুল হারামের আশেপাশে বসবাস করে না।” (আল-বাকারা : ১৯৬)
১৬৮৮. আবু জামরাহ (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, আমি ইবনু আব্বাস (রাদি.) -কে তামাত্তু হজ্জ সম্পর্কে জিজ্ঞেস করলাম। তিনি আমাকে তা আদায় করিতে আদেশ দিলেন। এরপর আমি তাঁকে কুরবানী সম্বন্ধে জিজ্ঞেস করলাম। তিনি বলিলেন, তামাত্তুর কুরবানী হলো একটি উট, গরু বা বকরী অথবা এক কুরবানীর পশুর মধ্যে শরীকানা এক অংশ। আবু জামরাহ (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) বলেন, লোকেরা তামাত্তু হজ্জকে যেন অপছন্দ করত। একদা আমি ঘুমালাম তখন দেখলাম, একটি লোক যেন (আমাকে লক্ষ্য করে) ঘোষণা দিচ্ছে, উত্তম হজ্জ এবং মাকবূল তামাত্তু। এরপর আমি ইবনু আব্বাস (রাদি.) -এর কাছে এসে স্বপ্নের কথা বললাম। তিনি আল্লাহু আকবার উচ্চারণ করে বলিলেন, এটাই তো আবুল কাসিম (সাঃআঃ)-এর সুন্নাত। আদম, ওয়াহাব ইবনু জারীর এবং গুনদার (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) শুবাহ (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) হইতে মাকবূল উমরাহ এবং উত্তম হজ্জ বলে উল্লেখ করিয়াছেন। (১৫৬৭)
(আঃপ্রঃ অনুচ্ছেদ ১০২, ইঃফাঃ ১৫৭৯)
২৫/১০৩. অধ্যায়ঃ কুরবানীর উটের পিঠে আরোহণ করা। আল্লাহর বাণীঃ
“আর উটকে আমি করেছি তোমাদের জন্য আল্লাহর নিদর্শনাবলীর মধ্যে অন্যতম নিদর্শন, তোমাদের জন্য এতে রয়েছে মঙ্গল। সুতরাং সারিবদ্ধভাবে দাঁড় করানো অবস্থায় তাদের উপর তোমরা আল্লাহর নাম উচ্চারণ কর; অত:পর যখন তারা কাত হয়ে পড়ে যায় তখন তোমরা তা থেকে খাও এবং সাহায্য কর ধৈর্য্যশীল অভাবগ্রস্থকে এবং যাচ্ঞাকারী অভাবগ্রস্থকেও। আমি এভাবে ঐ পশুগুলোকে তোমাদের অধীন করে দিয়েছি যেন তোমরা শোকর কর। আর আল্লাহর কাছে পৌঁছে না এগুলোর গোশত এবং না এগুলোর রক্ত, বরং তাহাঁর কাছে পৌছে তোমাদের তাকওয়া। এভাবেই তিনি এগুলোকে তোমাদের বশীভূত করে দিয়েছেন যেন তোমরা আল্লাহর মহত্ব ঘোষণা কর, যেহেতু তিনি তোমাদেরকে হিদায়াত দান করিয়াছেন। সুতরাং আপনি সুসংবাদ দিন সৎকর্মশীলদেরকে।” (আল-হজ্জ : ৩৬-৩৭)
মুজাহিদ (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) বলেন, কুরবানীর উটগুলোকে মোটা তাজা হওয়ার কারণে (আরবি) বলা হয়, (আরবি) অর্থাৎ যাচ্ঞাকারী, (আরবি) ঐ ব্যক্তি, যে ধনী হোক বা দরিদ্র, কুরবানীর উটের গোশত খাওয়ার জন্য ঘুরে বেড়ায়। (আরবি) অর্থাৎ কুরবানীর উটের প্রতি সম্মান করা এবং ভাল জানা। (আরবি) অর্থাৎ যালিমদের হইতে মুক্ত হওয়া (আরবি) অর্থ যমীনে লুটিয়ে পড়ে। এ অর্থেই হল (আরবি) সূর্য অস্তমিত হয়েছে।
১৬৮৯. আবু হুরাইরা (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ
আল্লাহর রাসুল (সাঃআঃ) এক ব্যক্তিকে কুরবানীর উট হ্যাঁকিয়ে নিতে দেখে বলিলেন, এর পিঠে আরোহণ কর। সে বলিল, এ-তো কুরবানীর উট। আল্লাহর রাসুল (সাঃআঃ) বলিলেন, এর পিঠে সওয়ার হয়ে চল। এবারও লোকটি বলিল, এ-তো কুরবানীর উট। এরপরও আল্লাহর রাসুল (সাঃআঃ) বলিলেন, এর পিঠে আরোহণ কর, তোমার সর্বনাশ! এ কথাটি দ্বিতীয় বা তৃতীয়বারে বলেছেন।
(১৭০৬, ২৭৫৫, ৬১৬০, মুসলিম ১৫/৬৫, হাদীস ১৩২২, আহমাদ ১০৩১৯) (আঃপ্রঃ ১৫৭৩, ইঃফাঃ ১৫৮০)
১৬৯০. আনাস (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ
নাবী (সাঃআঃ) এক ব্যক্তিকে কুরবানীর উট হ্যাঁকিয়ে নিতে দেখে বলিলেন, এর উপর সওয়ার হয়ে যাও। সে বলিল, এ তো কুরবানীর উট। তিনি বলিলেন, এর উপর সওয়ার হয়ে যাও। লোকটি বলিল, এ তো কুরবানীর উট। তিনি বলিলেন, এর উপর সওয়ার হয়ে যাও। এ কথাটি তিনি তিনবার বলিলেন।
(২৭৫৪, ৬১৫৯, মুসলিম ১৫/৬৫, হাদীস ১২২৩, আহমাদ ১২০৪০) (আঃপ্রঃ ১৫৭৪, ইঃফাঃ ১৫৮১)
২৫/১০৪. অধ্যায়ঃ যে ব্যক্তি কুরবানীর জন্তু সাথে নিয়ে যায়।
১৬৯১. ইবনু উমর (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, বিদায় হজ্জের সময় আল্লাহর রাসুল (সাঃআঃ) হজ্জ ও উমরাহ একসাথে পালন করিয়াছেন। তিনি হাদী পাঠান অর্থাৎ যুল-হুলাইফা হইতে কুরবানীর জানোয়ার সাথে নিয়ে নেন। অত:পর আল্লাহর রাসুল (সাঃআঃ) প্রথমে উমরাহর ইহরাম বাঁধেন, এরপর হজ্জের ইহরাম বাঁধেন। সাহাবীগণ তাহাঁর সঙ্গে উমরাহর ও হজ্জের নিয়্যাতে তামাত্তু করিলেন। সাহাবীগণের কতেক হাদী সাথে নিয়ে চললেন, আর কেউ কেউ হাদী সাথে নেননি। এরপর নাবী (সাঃআঃ) মক্কা পৌছে সাহাবীগণকে উদ্দেশ্য করে বললেনঃ তোমাদের মধ্যে যারা হাদী সাথে নিয়ে এসেছ, তাদের জন্য হজ্জ সমাপ্ত করা পর্যন্ত কোন নিষিদ্ধ জিনিস হালাল হইবে না। আর তোমাদের মধ্যে যারা হাদী সাথে নিয়ে আসনি, তারা বাইতুল্লাহ এবং সাফা-মারওয়ার তাওয়াফ করে চুল কেটে হালাল হয়ে যাবে। এরপর হজ্জের ইহরাম বাঁধবে। তবে যারা কুরবানী করিতে পারবে না তারা হজ্জের সময় তিনদিন এবং বাড়িতে ফিরে গিয়ে সাতদিন সওম পালন করিবে। নাবী (সাঃআঃ) মক্কা পৌঁছেই তাওয়াফ করিলেন। প্রথমে হাজরে আসওয়অদ চুম্বন করিলেন এবং তিন চক্কর রামল করে আর চার চক্কর স্বাভাবিকভাবে হেঁটে তাওয়াফ করিলেন। বাইতুল্লাহর তাওয়াফ সম্পন্ন করে তিনি মাকামে ইব্রাহীমের নিকট দুরাকআত সালাত আদায় করিলেন, সালাম ফিরিয়ে আল্লাহর রাসুল (সাঃআঃ) সাফায় আসলেন এবং সাফা-মারওয়ার মাঝে সাত চক্কর সাঈ করিলেন। হজ্জ সমাধান করা পর্যন্ত তিনি যা কিছু হারাম ছিল তা হইতে হালাল হননি। তিনি কুরবানীর দিনে হাদী কুরবানী করিলেন, সেখান হইতে এসে তিনি বাইতুল্লাহর তাওয়াফ করিলেন। অত:পর তাহাঁর উপর যা হারাম ছিল সে সব কিছু হইতে তিনি হালাল হয়ে গেলেন। সাহাবীগণের মধ্যে যাঁরা হাদী সাথে নিয়ে এসেছিলেন তাঁরা সেরূপ করিলেন, যেরূপ আল্লাহর রাসুল (সাঃআঃ) করেছিলেন।
(আঃপ্রঃ ১৫৭৫, ইঃফাঃ ১৫৮২)
১৬৯২. আয়েশা (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ
উরওয়া (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) আয়েশাহ (রাদি.) হইতে বর্ণনা করিয়াছেন যে, নাবী (সাঃআঃ) হজ্জের সাথে উমরাহ পালন করেন এবং তাহাঁর সঙ্গে সাহাবীগণও তামাত্তু করেন, যেমনি বর্ণনা করিয়াছেন সালিম (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) ইবন উমর (রাদি.) সূত্রে আল্লাহর রাসুল (সাঃআঃ) হইতে।
(মুসলিম ১৫/২৪, হাদীস ১২২৭, ১২২৮, আহমাদ ৬২৫৫) (আঃপ্রঃ নাই, ইঃফাঃ ১৫৮২ শেষাংশ)
২৫/১০৫. অধ্যায়ঃ রাস্তা হইতে কুরবানীর পশু ক্রয় করা।
১৬৯৩. নাফি (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, আবদুল্লাহ ইবনু উমর (রাদি.) -এর পুত্র আবদুল্লাহ (রাদি.) তার পিতাকে বলিলেন, আপনি (এবার বাড়িতেই) অবস্থান করুন। কেননা, বাইতুল্লাহ হইতে আপনার বাধাপ্রাপ্ত হওয়ার ব্যাপারে আমি নিশ্চিত নই। আবদুল্লাহ (রাদি.) বলিলেন, তাহলে আমি তাই করব যা আল্লাহর রাসুল (সাঃআঃ) করেছিলেন। তিনি আরো বলেন, “নিশ্চয়ই আল্লাহর রাসূলের মধ্যে রয়েছে তোমাদের জন্য উত্তম আদর্শ” – (আহযাবঃ ২১)। সুতরাং আমি তোমাদের সাক্ষী করে বলছি, (এবার) উমরাহ আদায় করা আমি আমার উপর ওয়াজিব করে নিয়েছি। তাই তিনি উমরাহর জন্য ইহরাম বাঁধলেন। বর্ণনাকারী বলেন, অতঃপর তিনি রওয়ানা হলেন, যখন বায়দা নামক স্থানে পৌঁছলেন তখন তিনি হজ্জ এবং উমরাহ উভয়টির জন্য ইহরাম বেঁধে বলিলেন, হজ্জ এবং উমরাহর ব্যাপার তো একই। এরপর তিনি কুদাইদ নামক স্থান হইতে কুরবানীর জানোয়ার কিনলেন এবং মক্কা পৌঁছে (হজ্জ ও উমরাহ) উভয়টির জন্য তাওয়াফ করিলেন। উভয়ের সব কাজ শেষ করা পর্যন্ত তিনি ইহরাম খুললেন না। (১৬৩৯)
(আঃপ্রঃ ১৫৭৬, ইঃফাঃ ১৫৮৩)
২৫/১০৬. অধ্যায়ঃ যে ব্যক্তি যুল-হুলাইফা হইতে (কুরবানীর পশুকে) ইশ্আর এবং কিলাদা করে পরে ইহরাম বাঁধে।
নাফি (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) বলেন, ইবনু উমর (রাদি.) মদীনা হইতে যখন কুরবানীর জানোয়ার সাথে নিয়ে আসতেন তখন যুল-হুলাইফায় তাকে কিলাদা পরাতেন এবং ইশ্আর করিতেন। ইশ্আর অর্থাৎ উটকে কিবলামুখী করে বসিয়ে বড় ছুরি দিয়ে কুজের ডান পার্শ্বে যখম করিতেন।
১৬৯৪. মিসওয়ার ইবনু মাখরামা ও মারওয়ান (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) হইতে বর্ণিতঃ
তাঁরা উভয়েই বলেছেন, হুদায়বিয়ার সন্ধির পর নাবী (সাঃআঃ) এক হাজারেরও অধিক সাহাবী নিয়ে মদীনা হইতে বের হয়ে যুর-হুলাইফা পৌঁছে কুরবানীর পশুটিকে কিলাদা পরালেন এবং ইশআর করিলেন। এরপর তিনি উমরাহর ইহরাম বাঁধলেন।
(১৬৯৪=১৮১১. ২৭১২, ২৭৩১, ৪১৫৮, ৪১৭৮, ৪১৮১) (১৬৯৫=২৭১১, ২৭৩২, ৪১৫৭, ৪১৭৯, ৪১৮০)
(আঃপ্রঃ ১৫৭৭, ইঃফাঃ ১৫৮৪)
১৬৯৫. মিসওয়ার ইবনু মাখরামা ও মারওয়ান (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) হইতে বর্ণিতঃ
তাঁরা উভয়েই বলেছেন, হুদায়বিয়ার সন্ধির পর নাবী (সাঃআঃ) এক হাজারেরও অধিক সাহাবী নিয়ে মদীনা হইতে বের হয়ে যুর-হুলাইফা পৌঁছে কুরবানীর পশুটিকে কিলাদা পরালেন এবং ইশআর করিলেন। এরপর তিনি উমরাহর ইহরাম বাঁধলেন।
(১৬৯৪=১৮১১. ২৭১২, ২৭৩১, ৪১৫৮, ৪১৭৮, ৪১৮১) (১৬৯৫=২৭১১, ২৭৩২, ৪১৫৭, ৪১৭৯, ৪১৮০)
(আঃপ্রঃ ১৫৭৭, ইঃফাঃ ১৫৮৪)
১৬৯৬. আয়েশা (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, আমি নিজ হাতে নাবী (সাঃআঃ)-এর কুরবানীর পশুর কিলাদা পাকিয়ে দিয়েছি। এরপর তিনি তাকে কিলাদা পরিয়ে ইশআর করার পর পাঠিয়ে দিয়েছেন এবং তাহাঁর জন্য যা হালাল ছিল এতে তা হারাম হয়নি।
(১৬৯৮, ১৬৯৯, ১৭০১ হইতে ১৭০৫, ২৩১৭, ৫৫৬৬, মুসলিম ১৫/৬৪, হাদীস ১৩২১)
(আঃপ্রঃ ১৫৭৮, ইঃফাঃ ১৫৮৫)
২৫/১০৭. অধ্যায়ঃ উট এবং গরুর জন্য কিলাদা পাকানো।
১৬৯৭. হাফসা (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, আমি বললাম, হে আল্লাহর রাসুল! লোকদের কী হল তারা হালাল হয়ে গেল আর আপনি হালাল হলেন না? আল্লাহর রাসুল (সাঃআঃ) বললেনঃ আমি তো আমার মাথার তালবিদ করেছি এবং আমার কুরবানীর জানোয়ারকে কিলাদা পরিয়ে দিয়েছি, তাই হজ্জ সমাধা না করা পর্যন্ত আমি হালাল হইতে পারি না। (১৫৬৬)
(আঃপ্রঃ ১৫৭৯, ইঃফাঃ ১৫৮৬)
১৬৯৮. আয়েশা (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, আল্লাহর রাসুল (সাঃআঃ) মদীনা হইতে কুরবানীর পশু পাঠাতেন, আমি তার গলায় কিলাদার মালা পাকিয়ে দিতাম। এরপর মুহরিম যে কাজ বর্জন করে, তিনি তার কিছু বর্জন করিতেন না। (১৬৯৬)
(আঃপ্রঃ ১৫৮০, ইঃফাঃ ১৫৮৭)
২৫/১০৮. অধ্যায়ঃ কুরবানীর পশুকে ইশআর করা।
উরওয়া (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) মিসওয়ার (রাদি.) হইতে বর্ণনা করেন যে, নাবী (সাঃআঃ) কুরবানীর পশুর কিলাদা পরান ও ইশআর করেন এবং উমরাহর ইহরাম বাঁধেন।
১৬৯৯. আয়েশা (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, আমি নাবী (সাঃআঃ)-এর কুরবানীর পশুর কিলাদা পাকিয়ে দিলাম। এরপর তিনি তার ইশআর করিলেন এবং তাকে তিনি কিলাদা পরিয়ে দিলেন অথবা আমি একে কিলাদা পরিয়ে দিলাম। এরপর তিনি তা বাইতুল্লাহর দিকে পাঠালেন এবং নিজে মদীনায় থাকলেন এবং তাহাঁর জন্য যা হালাল ছিল তা হইতে কিছুই তাহাঁর জন্য হারাম হয়নি। (১৬৯৬)
(আঃপ্রঃ ১৫৮১, ইঃফাঃ ১৫৮৮)
২৫/১০৯. অধ্যায়ঃ যে নিজ হস্তে কিলাদা বাঁধে।
১৭০০. যিয়াদ ইবনু আবু সুফ্ইয়ান (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) হইতে বর্ণিতঃ
তিনি আয়েশা (রাদি.)-এর নিকট পত্র লিখলেন যে, আবদুল্লাহ ইবনু আব্বাস (রাদি.) বলেছেন, যে ব্যক্তি কুরবানীর পশু (মক্কা) পাঠায় তা যবহ না করা পর্যন্ত তার জন্য ঐ সমস্ত কাজ হারাম হয়ে যায়, যা হাজীদের জন্য হারাম। (বর্ণনাকারিণী) আমরাহ (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) বলেন, আয়েশা (রাদি.) বলিলেন, ইবনু আব্বাস (রাদি.) যেমন বলেছেন, ব্যাপার তেমন নয়। আমি নিজ হাতে আল্লাহর রাসুল (সাঃআঃ)-এর কুরবানীর পশুর কিলাদা পাকিয়ে দিয়েছি আর তিনি নিজ হাতে তাকে কিলাদা পরিয়ে দেন। এরপর আমার পিতার সঙ্গে তা পাঠান। সে জানোয়ার যবহ করা পর্যন্ত আল্লাহ কর্তৃক হালাল করা কোন বস্তুই আল্লাহর রাসুল (সাঃআঃ)-এর প্রতি হারাম হয়নি। (১৭৯৬)
(আঃপ্রঃ ১৫৮২, ইঃফাঃ ১৫৮৯)
২৫/১১০. অধ্যায়ঃ বকরীর গলায় কিলাদা ঝুলান।
১৭০১. আয়েশা (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, একদা নাবী (সাঃআঃ) কুরবানীর জন্য বকরী পাঠালেন। (১৭৯৬)
(আঃপ্রঃ ১৫৮৩, ইঃফাঃ ১৫৯০)
১৭০২. আয়েশা (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, আমি নাবী (সাঃআঃ)-এর (কুরবানীর পশুর) কিলাদাগুলো পাকিয়ে দিতাম আর তিনি তা বকরীর গলায় পরিয়ে দিতেন। এরপর তিনি নিজ পরিবারে হালাল অবস্থায় থেকে যেতেন। (১৭৯৬)
(আঃপ্রঃ ১৫৮৪, ইঃফাঃ ১৫৯১)
১৭০৩. আয়েশা (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, আমি নাবী (সাঃআঃ)-এর বকরীর কিলাদা পাকিয়ে দিতাম আর তিনি সেগুলো পাঠিয়ে দিয়ে হালাল অবস্থায় থেকে যেতেন। (১৭৯৬)
(আঃপ্রঃ ১৫৮৫, ইঃফাঃ ১৫৯২)
১৭০৪. আয়েশা (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, আমি নাবী (সাঃআঃ)-এর কুরবানীর পশুর কিলাদা পাকিয়ে দিয়েছি, তাহাঁর ইহরাম বাঁধার আগে। (১৭৯৬)
(আঃপ্রঃ ১৫৮৫, ইঃফাঃ ১৫৯৩)
২৫/১১১. অধ্যায়ঃ পশম বা তুলার কিলাদা (মালা)
১৭০৫. উম্মুল মুমিনীন [আয়েশা (রাদি.)] হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, আমার কাছে যে পশম ছিল আমি তা দিয়ে কিলাদা পাকিয়ে দিয়েছি।(১৭৯৬)
(আঃপ্রঃ ১৫৮৭, ইঃফাঃ ১৫৯৪)
২৫/১১২. অধ্যায়ঃ জুতার কিলাদা লটকানো।
১৭০৬. আবু হুরাইরা (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ
নাবী (সাঃআঃ) এক ব্যক্তিকে একটি কুরবানীর উট হাঁকিয়ে নিতে দেখে বললেনঃ এর উপর সওয়ার হয়ে যাও। লোকটি বলিল, এটি কুরবানীর উট। আল্লাহর রাসুল (সাঃআঃ) বললেনঃ এর উপর সওয়ার হয়ে যাও। বর্ণনাকারী বলেন, আমি লোকটিকে দেখেছি যে, সে ঐ পশুটির পিঠে চড়ে নাবী (সাঃআঃ)-এর সাথে সাথে চলছিল আর পশুটির গলায় জুতার মালা ঝুলানো ছিল। মুহাম্মাদ ইবনু বাশ্শার (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) এ বর্ণনার অনুসরণ করিয়াছেন। উসমান ইবনু উমর (রহমাতুল্লাহি আলাইহি)… আবু হুরাইরা (রাদি.) সূত্রে নাবী (সাঃআঃ) হইতে বর্ণনা করিয়াছেন। (১৬৮৯)
(আঃপ্রঃ ১৫৮৮, ইঃফাঃ ১৫৯৫)
২৫/১১৩. অধ্যায়ঃ কুরবানীর উটের পিঠে আচ্ছাদন পরানো।
ইবনু উমর (রাদি.) শুধু কুঁজের স্থানের ঝুল ফেড়ে দিতেন। আর তা নহর করার সময় নষ্ট করে দেয়ার আশঙ্কায় ঝুলটি খুলে নিতেন এবং পরে তা সদাকাহ করে দিতেন।
১৭০৭. আলী (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, আল্লাহর রাসুল (সাঃআঃ) আমাকে যবেহকৃত কুরবানীর উটের পৃষ্ঠের আবরণ এবং তার চামড়া সদাকাহ করে দেয়ার নির্দেশ দিয়েছেন।
( ১৭১৬, ১৭১৭, ১৭১৮, ২২৯৯)(আঃপ্রঃ ১৫৮৯, ইঃফাঃ ১৫৯৬)
২৫/১১৪. অধ্যায়ঃ যে ব্যক্তি রাস্তা হইতে কুরবানীর জন্তু ক্রয় করে ও তার গলায় কিলাদা বাঁধে।
১৭০৮. নাফি (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, ইবনু যুবাইরের খিলাফতকালে খারিজীদের হজ্জ আদায়ের বছর ইবনু উমর (রাদি.) হজ্জ পালন করার ইচ্ছা করেন। তখন তাঁকে বলা হল, লোকেদের মাঝে পরস্পর লড়াই সংঘটিত হইতে যাচ্ছে, আর তারা আপনাকে বাধা দিতে পারে বলে আমরা আশঙ্কা করি। ইবনু উমর (রাদি.) বলিলেন, (আল্লাহ তাআলা বলেছেন)
لَقَدْ كَانَ لَكُمْ فِي رَسُولِ اللهِ أُسْوَةٌ حَسَنَةٌ
“নিশ্চয়ই তোমাদের জন্য আল্লাহর রাসূলের মধ্যেই রয়েছে উত্তম আদর্শ”- (আল-আহযাবঃ ২১)। কাজেই আমি সেরূপ করব যেরূপ করেছিলেন আল্লাহর রাসুল (সাঃআঃ)। আমি তোমাদেরকে সাক্ষী করে বলছি, আমি আমার উপর উমরাহ ওয়াজিব করে ফেলেছি। এরপর বায়দার উপকণ্ঠে পৌঁছে তিনি বলিলেন, হজ্জ এবং উমরাহর ব্যাপার তো একই। আমি তোমাদেরকে সাক্ষী করে বলছি, উমরাহর সাথে আমি হজ্জকেও একত্রিত করলাম। এরপর তিনি কিলাদা পরিহিত কুরবানীর জানোয়ার নিয়ে চললেন, যেটি তিনি আসার পথে কিনেছিলেন। অতঃপর তিনি বাইতুল্লাহ তাওয়াফ ও সাফা-মারওয়ার সাঈ করিলেন। তাছাড়া অতিরিক্ত কিছু করেননি এবং সে সব বিষয় হইতে হালাল হননি যেসব বিষয় তাহাঁর উপর হারাম ছিল- কুরবানীর দিন পর্যন্ত। তখন তিনি মাথা মুড়ালেন এবং কুরবানী করিলেন। তাহাঁর মতে প্রথম তাওয়াফ দ্বারা হজ্জ ও উমরাহর তাওয়াফ সম্পন্ন হয়েছে। এ সব করার পর তিনি বলিলেন, আল্লাহর রাসুল (সাঃআঃ) এরূপই করিয়াছেন। (১৬৩৯)
(আঃপ্রঃ ১৫৯০, ইঃফাঃ ১৫৯৭)
২৫/১১৫. অধ্যায়ঃ স্ত্রীদের পক্ষ হইতে তাদের আদেশ ছাড়াই স্বামী কর্তৃক গরু কুরবানী করা।
১৭০৯. আয়েশা (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, যিল-কাদাহ মাসের পাঁচ দিন বাকী থাকতে আমরা আল্লাহর রাসুল (সাঃআঃ)-এর সঙ্গে রওয়ানা হলাম। হজ্জ আদায় করা ব্যতীত আমাদের অন্য কোন ইচ্ছা ছিল না। যখন আমরা মক্কার কাছাকাছি পৌঁছলাম, তখন আল্লাহর রাসুল (সাঃআঃ) আদেশ করলেনঃ যার সাথে কুরবানীর জানোয়ার নেই সে যেন বাইতুল্লাহর তাওয়াফ এবং সাফা-মারওয়ার সাঈ করে হালাল হয়ে যায়। আয়েশা (রাদি.) বলেন, কুরবানীর দিন আমাদের কাছে গরুর গোশ্ত আনা হলে আমি বললাম, এ কী? তারা বলিল, আল্লাহর রাসুল (সাঃআঃ) তাহাঁর স্ত্রীদের পক্ষ হইতে কুরবানী করিয়াছেন। ইয়াহইয়া (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) বলেন, উক্ত হাদীসখানা কাসিমের নিকট আলোচনা করলে তিনি বলিলেন, সঠিকভাবেই তিনি হাদীসটি তোমার কাছে বর্ণনা করিয়াছেন। (২৯৪)
(আঃপ্রঃ ১৫৯১, ইঃফাঃ ১৫৯৮)
২৫/১১৬. অধ্যায়ঃ মিনাতে নাবী (সাঃআঃ)-এর কুরবানী করার জায়গায় কুরবানী করা।
১৭১০. নাফি (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) হইতে বর্ণিতঃ
আবদুল্লাহ (রাদি.) কুরবানীর স্থানে কুরবানী করিতেন। উবাইদুল্লাহ (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) বলেন, (অর্থাৎ) আল্লাহর রাসুল (সাঃআঃ)-এর কুরবানীর স্থানে। (৯৮২)
(আঃপ্রঃ ১৫৯২, ইঃফাঃ ১৫৯৯)
১৭১১. নাফি (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) হইতে বর্ণিতঃ
ইবনু উমর (রাদি.) মুযদালিফা হইতে শেষ রাতের দিকে হাজীদের সাথে, যাদের মধ্যে আযাদ ও ক্রীতদাস থাকত, নিজ কুরবানীর জানোয়ার পাঠিয়ে দিতেন, যাতে তা আল্লাহর রাসুল (সাঃআঃ)-এর কুরবানীর স্থানে পৌঁছে যায়। (৯৮২)
(আঃপ্রঃ ১৫৯৩, ইঃফাঃ ১৬০০)
২৫/১১৭. অধ্যায়ঃ যে ব্যক্তি নিজ হস্তে কুরবানী করে।
১৭১২. আনাস (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, নাবী (সাঃআঃ) নিজ হাতে সাতটি উট দাঁড়িয়ে থাকা অবস্থায় কুরবানী করেন এবং মদীনাতেও হৃষ্টপুষ্ট শিং বিশিষ্ট সুন্দর দুটি দুম্বা তিনি কুরবানী করিয়াছেন। এখানে হাদীসটি সংক্ষেপে বর্ণিত হয়েছে। (১০৮৯)
(আঃপ্রঃ ১৫৯৪, ইঃফাঃ ১৬০১)
২৫/১১৮. অধ্যায়ঃ বাঁধা অবস্থায় উট কুরবানী করা।
১৭১৩. যিয়াদ ইবনু জুবাইর (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, আমি ইবনু উমর (রাদি.)-কে দেখেছি যে, তিনি আসলেন এমন এক ব্যক্তির নিকট, যে তার নিজের উটটিকে নহর করার জন্য বসিয়ে রেখেছিল। ইবনু উমর (রাদি.) বলিলেন, সেটি উঠিয়ে দাঁড়ানো অবস্থায় বেঁধে নাও। (এ) মুহাম্মদ (সাঃআঃ)-এর সুন্নাত। [ইমাম বুখারী (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) বলেন যে,] শুবাহ (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) ইউনুস সূত্রে যিয়াদ (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) হইতে হাদীসটি (আরবি) শব্দ দিয়ে বর্ণনা করেন।
(আঃপ্রঃ ১৫৯৫, ইঃফাঃ ১৬০২)
২৫/১১৯. অধ্যায়ঃ উটকে দাঁড় করিয়ে কুরবানী করা।
ইবনু উমর (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) বলেন, তা-ই মুহাম্মদ (সাঃআঃ)-এর সুন্নাত। ইবনু আব্বাস (রাদি.) বলেন, (কুরআনের শব্দ) (আরবি) এর অর্থ দাঁড় করিয়ে (কুরবানী করা)।
১৭১৪. আনাস (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, নাবী (সাঃআঃ) মদীনাতে যোহর চার রাকআত এবং যুল হুলাইফাতে আস্র দুরাকআত আদায় করিলেন এবং এখানেই রাত যাপন করিলেন। ভোর হলে তিনি সওয়ারীতে আরোহণ করে তাহলীল ও তাসবীহ পাঠ করিতে লাগলেন। এরপর বায়দায় যাওয়ার পর তিনি হজ্জ ও উমরাহ উভয়ের জন্য তালবিয়া পাঠ করেন এবং মক্কায় প্রবেশ করে তিনি সাহাবাদের ইহরাম খুলে ফেলার নির্দেশ দেন। আর (সে হজ্জে) নাবী (সাঃআঃ) সাতটি উট দাঁড় করিয়ে নিজ হাতে কুরবানী করেন আর মদীনাতে হৃষ্টপুষ্ট শিং বিশিষ্ট সুন্দর দুটি ভেড়া কুরবানী দেন। (১০৮৫)
(আঃপ্রঃ ১৫৯৬, ইঃফাঃ ১৬০৩)
১৭১৫. আনাস ইবনু মালিক (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, নাবী (সাঃআঃ) মদীনাতে যোহর চার রাকআত এবং যুল-হুলাইফাতে আসর দু রাকআত আদায় করেন। আইয়ূব (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) এক ব্যক্তির মাধ্যমে আনাস ইবনু মালিক (রাদি.) হইতে বর্ণনা করেন, এরপর তিনি সেখানে রাত যাপন করেন। ভোর হলে তিনি ফজরের সালাত আদায় করার পর সওয়ারীতে আরোহণ করেন। সওয়ারী বায়দায় পৌঁছে সোজা হয়ে দাঁড়ালে আল্লাহর রাসুল (সাঃআঃ) হজ্জ ও উমরাহ উভয়ের জন্য তালবিয়া পাঠ করেন। (১০৮৯)
(আঃপ্রঃ ১৫৯৭, ইঃফাঃ ১৬০৪)
২৫/১২০. অধ্যায়ঃ কুরবানীর জন্তুর কিছুই কসাইকে দেয়া যাবে না।
১৭১৬. আলী (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, নাবী (সাঃআঃ) আমাকে পাঠালেন, আমি কুরবানীর জানোয়ারের পাশে গিয়ে দাঁড়ালাম, অতঃপর তিনি আমাকে আদেশ করিলেন। আমি ওগুলোর গোশ্ত বণ্টন করে দিলাম। এরপর তিনি আমাকে আদেশ করিলেন। আমি এর পিঠের আবরণ এবং চামড়াগুলোও বিতরণ করে দিলাম।
(১৭০৭) (আঃপ্রঃ ১৫৯৮, ইঃফাঃ ১৬০৫) ১৭১৬ (মীম). আলী (রাদি.) হইতে বর্ণিত। তিনি বলেন, নাবী (সাঃআঃ) আমাকে আদেশ করিলেন কুরবানীর জানোয়ারের পাশে দাঁড়াতে এবং এর হইতে পারিশ্রমিক হিসেবে কসাইকে কিছু না দিতে। (১৭০৭)
(আঃপ্রঃ ১৫৯৮ শেষাংশ, ইঃফাঃ ১৬০৫ শেষাংশ)
২৫/১২১. অধ্যায়ঃ কুরবানীর পশুর চামড়া সদাকাহ করা।
১৭১৭. আলী (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ
তাঁকে নাবী (সাঃআঃ) তাহাঁর নিজের কুরবানীর জানোয়ারের পাশে দাঁড়াতে আর এগুলোর সমুদয় গোশ্ত, চামড়া এবং পিঠের আবরণসমূহ বিতরণ করিতে নির্দেশ দেন এবং তা হইতে যেন কসাইকে পারিশ্রমিক হিসেবে কিছুই না দেয়া হয়। (১৭০৭)
(আঃপ্রঃ ১৫৯৯, ইঃফাঃ ১৬০৬)
২৫/১২২. অধ্যায়ঃ কুরবানীর পশুর পিঠের আচ্ছাদন সদাকাহ করা।
১৭১৮. আলী (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, নাবী (সাঃআঃ) কুরবানীর একশ উট পাঠান এবং আমাকে গোশত সম্বন্ধে নির্দেশ দিলেন। আমি তা বণ্টন করে দিলাম। এরপর তিনি তার পিঠের আবরণ সম্বন্ধে আমাকে নির্দেশ দিলেন, আমি তা বণ্টন করে দিলাম। অতঃপর তিনি আমাকে চামড়া সম্বন্ধে নির্দেশ দিলেন, আমি তা বণ্টন করে দিলাম। (১৭০৭)
(আঃপ্রঃ ১৬০০, ইঃফাঃ ১৬০৭)
২৫/১২৩. অধ্যায়ঃ আল্লাহর বাণী
“যখন আমি ইব্রাহীমকে কাবা গৃহের স্থান নির্ধারণ করে বলেছিলাম যে, আমার সাথে কোন কিছু শরীক করো না এবং আমার গৃহকে পবিত্র রেখ তাওয়াফকারীদের জন্য, সালাতে দণ্ডায়মান লোকেদের জন্য, রুকুকারী ও সিজদাকারীদের জন্য এবং মানুষের মধ্যে হজ্জের জন্য ঘোষণা করে দাও, তারা তোমার কাছে আসবে পায়ে হেঁটে এবং সব ধরনের দুর্বল উটের পিঠে সাওয়ার হয়ে, তারা আসবে দূর-দূরান্তের পথ অতিক্রম করে। যাতে তারা উপস্থিত হইতে পারে তাদের কল্যাণময় স্থানে এবং তারা আল্লাহর নাম উচ্চারণ করিতে পারে নির্দিষ্ট দিনগুলোতে সে সব চতুষ্পদ জন্তু যবহ করার সময় যা তাদেরকে তিনি রিজিক হিসেবে দান করিয়াছেন। অতঃপর তোমরা তা থেকে খাও এবং বিপন্ন, অভাবগ্রস্ত কেও খাওয়াও। তারপর তারা যেন দূর করে ফেলে নিজেদের শরীরের অপরিচ্ছন্নতা এবং নিজেদের মানৎ পূর্ণ করে ও প্রাচীন কাবাগৃহের তাওয়াফ করে। এটাই বিধান। আর যে কেউ আল্লাহর পবিত্র অনুষ্ঠান সমূহের মর্যাদা রক্ষা করে তার জন্য তা হইবে তার রবের কাছে উত্তম। তোমাদের জন্য হালাল করা হয়েছে চতুষ্পদ জন্তু। ঐগুলো ছাড়া যা তোমাদেরকে পাঠ করে শুনানো হয়েছে। সুতরাং তোমরা দূরে থাক মূর্তি পূজার অপবিত্রতা হইতে এবং দূরে থাক মিথ্যা কথা হইতে।” (আল-হাজ্জঃ ২৬-৩০)
২৫/১২৪. অধ্যায়ঃ কী পরিমাণ কুরবানীর গোশত ভক্ষণ করিবে এবং কী পরিমাণ সদাকাহ করিবে?
উবায়দুল্লাহ (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) নাফি (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) সূত্রে ইবনু উমর (রাদি.) হইতে বর্ণিত। শিকারের ক্ষতিপূরণ স্বরূপ এবং মানতের জন্য যে জানোয়ার যবহ করা হয়, তা খাওয়া যাবে না। এছাড়া অন্যান্য সব কুরবানীর গোশ্ত খাওয়া যাবে। আত্বা (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) বলেন, তামাত্তুর কুরবানীর গোশত খেতে পারবে এবং (অন্যকেও) খাওয়াতে পারবে।
১৭১৯. জাবির ইবনু আবদুল্লাহ (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, আমরা আমাদের কুরবানীর গোশ্ত মিনার তিন দিনের বেশি খেতাম না। এরপর নাবী (সাঃআঃ) আমাদের অনুমতি দিলেন এবং বললেনঃ খাও এবং সঞ্চয় করে রাখ। তাই আমরা খেলাম এবং সঞ্চয়ও করলাম। রাবী বলেন, আমি আত্বা (রহমাতুল্লাহি আলাইহি)-কে বললাম, জাবির (রাদি.) কি বলেছেন আমরা মদীনায় আসা পর্যন্ত? তিনি বলিলেন, না।
(২৯৮০,৫৪২৪,৫৫৬৭, মুসলিম ৩৫/৫, হাদীস১৯৭২, আহমাদ ১৪৪১৯) (আঃপ্রঃ ১৬০১, ইঃফাঃ ১৬০৮)
১৭২০. আয়েশা (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, যুল-কাদার পাঁচ দিন অবশিষ্ট থাকতে আমরা আল্লাহর রাসুল (সাঃআঃ)-এর সঙ্গে রওয়ানা হলাম। হজ্জ ব্যাতীত আমরা অন্য কিছু উদ্দেশ্য করিনি, অবশেষে আমরা যখন মক্কার নিকটে পৌঁছলাম, আল্লাহর রাসুল (সাঃআঃ) আদেশ করলেনঃ যার সাথে কুবানীর জানোয়ার নেই সে যেন বাইতুল্লাহ তাওয়াফ করে হালাল হয়ে যায়। আয়েশা (রাদি.) বলেন, এরপর কুরবানীর দিন আমাদের কাছে গরুর গোশত পাঠানো হল। আমি বললাম, এ কী? বলা হল, নাবী (সাঃআঃ) তাহাঁর স্ত্রীদের তরফ হইতে কুরবানী করিয়াছেন। ইয়াহইয়া (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) বলেন, আমি কাসিম (রহমাতুল্লাহি আলাইহি)-এর নিকট হাদীসটি উল্লেখ করলে তিনি বলিলেন, আমরাহ (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) হাদীসটি ঠিক ভাবেই তোমার নিকট বর্ণনা করিয়াছেন। (২৯৪)
(আঃপ্রঃ ১৬০২, ইঃফাঃ ১৬০৯)
২৫/১২৫. অধ্যায়ঃ মাথা মুণ্ডানোর পূর্বে কুরবানী করা।
১৭২১. ইবনু আব্বাস (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, নাবী (সাঃআঃ)-কে সে ব্যক্তি সম্পর্কে জিজ্ঞেস করা হল, যে মাথা কামানোর আগে কুরবানী অথবা অনুরূপ কোন কাজ করেছে। তিনি বললেনঃ এতে কোন দোষ নেই, এতে কোন দোষ নেই। (৮৪)
(আঃপ্রঃ ১৬০৩, ইঃফাঃ ১৬১০)
১৭২২. ইবনু আব্বাস (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, এক সাহাবী নাবী (সাঃআঃ)-কে বলিলেন, আমি কঙ্কর মারার আগেই তাওয়াফে যিয়ারত করে ফেলেছি। তিনি বললেনঃ কোন দোষ নেই। সাহাবী পুনরায় বলিলেন, আমি যবহ করার আগেই মাথা কামিয়ে ফেলেছি। তিনি বললেনঃ কোন দোষ নেই। সাহাবী আবারও বলিলেন, আমি কঙ্কর মারার আগেই কুরবানী করে ফেলেছি। তিনি বললেনঃ কোন দোষ নেই। আবদুর রহীম ইবনু সুলাইমান রাযী, কাসিম ইবনু ইয়াহইয়া ও আফ্ফান (রহমাতুল্লাহি আলাইহি)….ইবনু আব্বাস (রাদি.) সূত্রে নাবী (সাঃআঃ) হইতে বর্ণনা করেন। হাম্মাদ (রহমাতুল্লাহি আলাইহি)… জাবির (রাদি.) সূত্রে নাবী (সাঃআঃ) হইতে বর্ণনা করেন।
(৮৪, মুসলিম ১৫/৫৭, হাদীস ১৩০৭, আহমাদ ২৩৩৮) (আঃপ্রঃ ১৬০৪, ইঃফাঃ ১৬১১)
১৭২৩. ইবনু আব্বাস (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, নাবী (সাঃআঃ)-কে জিজ্ঞেস করা হল, সন্ধ্যার পর আমি কঙ্কর মেরেছি। তিনি বললেনঃ কোন দোষ নেই। সে আবার বলিল, কুরবানী করার আগেই আমি মাথা কামিয়ে ফেলেছি। তিনি বললেনঃ এতো কোন দোষ নেই। (৮৪)
(আঃপ্রঃ ১৬০৫, ইঃফাঃ ১৬১২)
১৭২৪. আবু মূসা (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, আমি বাতহা নামক স্থানে আল্লাহর রাসুল (সাঃআঃ)-এর নিকট গেলাম। তিনি বললেনঃ হজ্জ সমাধা করেছ? আমি বললাম, হ্যাঁ। তিনি বললেনঃ কিসের জন্য ইহরাম বেঁধেছিলে? আমি বললাম, নাবী (সাঃআঃ)-এর মত ইহরাম বেঁধে আমি তালবিয়া পাঠ করেছি। তিনি বললেনঃ ভালই করেছ। যাও বায়তুল্লাহ তাওয়াফ কর এবং সাফা-মারওয়ার সায়ী কর। এরপর আমি বনূ কায়স গোত্রের এক মহিলার নিকট এলাম। তিনি আমার মাথার উকুন বেছে দিলেন। অতঃপর আমি হজ্জের ইহরাম বাঁধলাম। (তখন হইতে) উমর (রাদি.)-এর খিলাফতকাল পর্যন্ত এ ভাবেই আমি লোকদের (হজ্জ এবং উমরাহ সম্পর্কে) ফতোয়া দিতাম। অতঃপর তাহাঁর সঙ্গে আমি এ বিষয়ে আলোচনা করলে তিনি বলিলেন, আমরা যদি আল্লাহর কিতাবকে অনুসরণ করি তাহলে তা আমাদের পূর্ণ করার নির্দেশ দেয়। আর যদি আল্লাহর রাসুল (সাঃআঃ)-এর সুন্নতের অনুসরণ করি তাহলে তো (দেখি যে), আল্লাহর রাসুল (সাঃআঃ) কুরবানীর জানোয়ার যথাস্থানে পৌঁছার আগে হালাল হননি।
(১৫৫৯, মুসলিম ১৫/২২, হাদীস ১২২১) (আঃপ্রঃ ১৬০৬, ইঃফাঃ ১৬১৩)
Leave a Reply