কুরআন সুন্নাহ কে দৃঢ়ভাবে ধারণ করা

কুরআন সুন্নাহ কে দৃঢ়ভাবে ধারণ করা

কুরআন সুন্নাহ কে দৃঢ়ভাবে ধারণ করা >> বুখারী শরীফ এর মুল সুচিপত্র পড়ুন

পর্বঃ ৯৬, কুরআন সুন্নাহ কে দৃঢ়ভাবে ধারণ করা, অধ্যায়ঃ (১-২৮)=২৮টি

৯৬/০০. অধ্যায়ঃ

৯৬/০০. অধ্যায়ঃ
৯৬/১. অধ্যায়ঃ নাবী (সাঃআঃ) – এর বাণীঃ আমি জাওয়ামিউল কালিম (ব্যাপক অর্থবহ সংক্ষিপ্ত কথা) সহ প্রেরিত হয়েছি।
৯৬/২. অধ্যায়ঃ রাসুলুল্লাহ (সাঃআঃ) – এর সুন্নাতের অনুসরণ।
৯৬/৩. অধ্যায়ঃ অধিক অধিক প্রশ্ন করা এবং অকারণে কষ্ট করা নিন্দনীয়।
৯৬/৪. অধ্যায়ঃ নাবী (সাঃআঃ)র কাজকর্মের অনুসরণ ।
৯৬/৫. অধ্যায়ঃ দ্বীনের ব্যাপারে অতিরিক্ত কঠোরটা করা, তর্কে লিপ্ত হওয়া, বাড়াবাড়ি করা এবং বিদআত অপছন্দনীয়।
৯৬/৬. অধ্যায়ঃ বিদআতীকে আশ্রয়দানকারীর পাপ। আলী (রাদি.) এ হাদীসটি নাবী (সাঃআঃ) থেকে বর্ণনা করিয়াছেন
৯৬/৭. অধ্যায়ঃ মনগড়া মত ও ভিত্তিহীন কিয়াস নিন্দনীয়।
৯৬/৮. অধ্যায়ঃ ওয়াহী নাযিল হয়নি এমন কোন বিষয়ে নাবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সালাম) – কে জিজ্ঞেস করলে তিনি বলিতেন: আমি জানি না কিংবা সে সর্ম্পকে ওয়াহী নাযিল না হওয়া পর্যন্ত কোন জবাব দিতেন না এবং তিনি ব্যক্তিগত মতের উপর ভিত্তি করে কিংবা অনুমান করে কিছু বলিতেন না।
৯৬/৯. অধ্যায়ঃ নাবী করীম (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সালাম) উম্মাতের পুরুষ ও নারীদেরকে সে বিষয়েরই শিক্ষা দিতেন, যা আল্লাহ তাঁকে শিখিয়ে দিতেন, নিজস্ব মতামত বা দৃষ্টান্তের উপর ভিত্তি করে নয়।
৯৬/১০. অধ্যায়ঃ নাবী করীম (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সালাম) – এর বাণীঃ আমার উম্মাতের মধ্যে এক দল সর্বদাই হকের উপর বিজয়ী থাকবেন। আর তাঁরা হলেন (দ্বীনী) ইলমের অধিকারী।
৯৬/১১. অধ্যায়ঃ আল্লাহর বাণীঃ অথবা তোমাদেরকে দলে দলে ভাগ করিতে … । (সুরা আনআম ৬/৬৫)
৯৬/১২. অধ্যায়ঃ কোন বিষয়ে প্রশ্নকারীকে স্পষ্টভাবে বুঝিয়ে দেয়ার উদ্দেশে সুস্পষ্ট হুকুম বর্ণিত আছে এরূপ কোন বিষয়ের সঙ্গে আরেকটি বিষয়ের নিয়ম মোতাবেক তুলনা করা।
৯৬/১৩. অধ্যায়ঃ আল্লাহ যা নাযিল করিয়াছেন, তার ভিত্তিতে ফায়সালার মধ্যে ইজ্‌তিহাদ করা।
৯৬/১৪. অধ্যায়ঃ নাবী (সাঃআঃ) – এর বাণীঃ অবশ্য অবশ্যই তোমরা তোমাদের আগের লোকদের নীতি-পদ্ধতির অনুকরণ করিতে থাকবে।
৯৬/১৫. অধ্যায়ঃ পথভ্রষ্টতার দিকে ডাকা অথবা কোন খারাপ পদ্ধতি প্রবর্তনের অপরাধ।
৯৬/১৬. অধ্যায়ঃ নাবী (সাঃআঃ) যা বলেছেন এবং আলেমগণকে ঐক্যের ব্যাপারে যে উৎসাহ দান করিয়াছেন।
৯৬/১৭. অধ্যায়ঃ আল্লাহ তাআলার বাণীঃ (হে নাবী!) কোন বিষয়ের সিদ্ধান্ত নেয়া তোমার কাজ নয়। (সুরা আল্‌ ইমরান ৩/১২৮)
৯৬/১৮. অধ্যায়ঃ আল্লাহর বাণীঃ মানুষ অধিকাংশ বিষয়েই বিতর্কপ্রিয়। (সুরা আল-কাহাফ ১৮/৫৪)
৯৬/১৯. অধ্যায়ঃ আল্লাহর বাণীঃ এভাবে আমি তোমাদেরকে এক মধ্যপন্থী জাতি করেছি, যাতে তোমরা মানব জাতির জন্য সাক্ষী হও। (সুরা আল-বাক্বারাহ ২/১৪৩)
৯৬/২০. অধ্যায়ঃ কোন কর্মকর্তা কিংবা বিচারক অজ্ঞতার কারণে ইজ্‌তিহাদে ভুল করে রাসুলুল্লাহ (সাঃআঃ) – এর মতের বিরুদ্ধে সিদ্ধান্ত দিলে তা বাতিল।
৯৬/২১. অধ্যায়ঃ বিচারক ইজতিহাদে ঠিক করুক বা ভুল করুক তার প্রতিদান পাবে।
৯৬/২২. অধ্যায়ঃ যারা বলে নাবী (সাঃআঃ) – এর সব কাজই সুস্পষ্ট ছিল তাহাঁর প্রমাণ
৯৬/২৩. অধ্যায়ঃ কোন বিষয়ে নাবী (সাঃআঃ) কর্তৃক অস্বীকৃতি প্রকাশ না করাই তা বৈধ হবার দলীল, অন্য কারো অস্বীকৃতি বৈধতার দলীল নয়।
৯৬/২৪. অধ্যায়ঃ প্রমানাদির সাহায্যে যেসব বিধিবিধান সম্পর্কে জানা যায়।
৯৬/২৫. অধ্যায়ঃ নাবী (সাঃআঃ) – এর বাণীঃ আহলে কিতাবদের কাছে কোন বিষয়ে জিজ্ঞেস করো না ।
৯৬/২৬. অধ্যায়ঃ মতবিরোধ অপছন্দনীয় ।
৯৬/২৭. অধ্যায়ঃ নাবী (সাঃআঃ)র নিষেধাজ্ঞা দ্বারা হারাম সাব্যস্ত হয়।
৯৬/২৮. অধ্যায়ঃ মহান আল্লাহর বাণীঃ তারা নিজেদের মাঝে পরামর্শের ভিত্তিতে নিজেদের কর্ম সম্পাদন করে। (সুরা আশ-শূরা ৪২/৩৮)

৭২৬৮

ত্বারিক ইবনু শিহাব (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, ইয়াহূদীদের এক লোক উমর (রাদি.) – কে বলিল, হে আমীরুল মুমিনীন! আমাদের উপর যদি এ আয়াতঃ “আজ আমি তোমাদের জন্য তোমাদের দ্বীনকে পূর্ণাঙ্গ করে দিলাম, তোমাদের প্রতি আমার নিমাত পূর্ণ করে দিলাম এবং ইসলামকে তোমাদের দ্বীন হিসেবে কবূল করে নিলাম” – (সুরা আল-মায়িদাহ ৫/৩) অবতীর্ণ হত, তাহলে সে দিনটিকে আমরা অবশ্যই ঈদের দিন হিসেবে গণ্য করতাম। উমর (রাদি.) বলিলেন, আমি অবশ্যই জানি এ আয়াতটি কোন দিন অবতীর্ণ হয়েছিল। আরাফাহর দিন জুমুআহর দিনে এ আয়াতটি নাযিল হয়েছিল। হাদীসটি সুফিয়ান (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) মিসআর (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) থেকে, মিস্‌আর কায়স থেকে কায়স (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) তারিক থেকে শুনেছেন। (আঃপ্রঃ- ৬৭৬০, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৬৭৭২)

৭২৬৯

আনাস ইবনু মালিক (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ

দ্বিতীয় দিনে যখন মুসলিমরা আবু বকর (রাদি.) – এর বায়আত গ্রহণ করেছিল এবং তিনি রাসুলুল্লাহ (সাঃআঃ) – এর মিম্বারের উপর উপবিষ্ট ছিলেন; উমর (রাদি.) – কে আবু বকর (রাদি.) – এর পূর্বে হামদ ও ছানা ও কালেমা শাহাদাত পাঠ করিতে তিনি (আনাস) শুনেছেন। তিনি বলিলেন, অতঃপর আল্লাহ তাহাঁর রাসূলের জন্য তোমাদের কাছে যা ছিল তার চেয়ে তার নিকট যা আছে সেটাকেই পছন্দ করিয়াছেন। আর এই যে সে কিতাব যার মাধ্যমে আল্লাহ তাআলা তোমাদের রাসুল (সাঃআঃ) – কে হিদায়াত দিয়েছিলেন।কাজেই একে তোমারা আঁকড়ে ধর। তাহলে এর মাধ্যমে আল্লাহ তাহাঁর রাসুল (সাঃআঃ) – কে যে হিদায়াত দিয়েছিলেন তোমরাও সেই হিদায়াত পাবে। (আঃপ্রঃ- ৬৭৬১, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৬৭৭৩)

৭২৭০

ইবনু আব্বাস (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, নাবী (সাঃআঃ) (তাহাঁর শরীরের সঙ্গে) আমাকে জড়িয়ে ধরলেন এবং বললেনঃ হে আল্লাহ! তাঁকে কিতাবের ইলম দাও। [১] (আঃপ্রঃ- ৬৭৬২, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৬৭৭৪)

[১] আল্লাহর রাসূলের এই দুআর কারণেই আল কুরআনের সর্বশ্রেষ্ঠ তাফসীরকারক হলেন ইবনে আব্বাস (রাদি.)।

৭২৭১

আবু বারযা (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, আল্লাহ তাআলা তোমাদেরকে ইসলাম দ্বারা ও মুহাম্মাদ (সাঃআঃ) এর দ্বারা মুখাপেক্ষীহীন কিংবা পরিপূর্ণ করিয়াছেন।(আঃপ্রঃ- ৬৭৬৩, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৬৭৭৫)

৭২৭২

আবদুল্লাহ ইবনু দীনার (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ

আবদুল্লাহ ইবনু উমর (রাদি.) আবদুল মালিক ইবনু মারওয়ানের বাইআত করে লিখলেনঃ আল্লাহ ও তাহাঁর রাসুল (সাঃআঃ) – এর সুন্নাতের ভিত্তিতে আমার সাধ্যমত (আপনার নির্দেশ) শোনা ও মানার অঙ্গীকার করছি। (আঃপ্রঃ- ৬৭৬৪, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৬৭৭৬)

৯৬/১. অধ্যায়ঃ নাবী (সাঃআঃ) – এর বাণীঃ আমি জাওয়ামিউল কালিম (ব্যাপক অর্থবহ সংক্ষিপ্ত কথা) সহ প্রেরিত হয়েছি।

৭২৭৩

আবু হুরাইরা (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ

রাসুলুল্লাহ (সাঃআঃ) বলেছেনঃ আমি জাওয়ামিউল কালিম[১৯০] (ব্যাপক অর্থবহ সংক্ষিপ্ত কথা) সহ প্রেরিত হয়েছি এবং আমাকে প্রভাব দিয়ে সাহায্য করা হয়েছে। একবার আমি ঘুমের অবস্থায় দেখলাম, পৃথিবীর ভান্ডারগুলোর চাবি আমাকে দেয়া হয়েছে এবং তা আমার হাতে রেখে দেয়া হয়েছে। আবু হুরাইরা (রাদি.) বলেন, রাসুলুল্লাহ (সাঃআঃ) ইন্তিকাল করে গেছেন। আর তোমরা তা ব্যবহার করছ কিংবা বলেছিলেন তোমরা তা থেকে উপকার লাভ করছ কিংবা তিনি এরকমই কোন কথা বলেছিলেন।(আঃপ্রঃ- ৬৭৬৫, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৬৭৭৭)

[১] (আমি আবির্ভূত হয়েছি সুসংক্ষিপ্ত ও মর্মসমৃদ্ধ বাণীসহ)

ইমাম যুহরী * এর ব্যাখ্যা করে বলেন :

তিনি এমন সংক্ষিপ্ত কথা বলিতেন যা শব্দ বা উচ্চারণের দিক থেকে হতো অল্প কিন্তু ব্যাপক অর্থবোধক। ইমাম যুহরী ব্যতীত অন্যজন জোর দিয়ে বলেন যে, (جوام الكلام) থেকে উদ্দেশ্য হলো আল-কুরআন তার নির্দশন, রাসুল (সাঃ)র কথা (بعثت), কেননা আল-কুরআন তো শব্দের সংক্ষিপ্ততা ও অর্থের ব্যাপকতার ব্যাপারে শেষ সীমা।

কুরআন جوام الكلام সম্বলিত আয়াতের উদাহরণ যেমন :

{وَلَكُمْ فِي الْقِصَاصِ حَيَاةٌ يَاْ أُولِيْ الأَلْبَابِ لَعَلَّكُمْ تَتَّقُونَ}

(বাকারাহ : ১৭৯) এবং

وَمَنْ يُطِعِ اللَّهَ وَرَسُولَهُ وَيَخْشَ اللَّهَ وَيَتَّقْهِ فَأُولَئِكَ هُمُ الْفَائِزُونَ (নূর : ৫২)

হাদীসের মধ্যে جوامع الكلام এর উদাহরণ যেমন আয়েশাহর হাদীস : كُلُّ عَمَلٍ لَيْسَ عَلَيْهِ أَمْرُنَا فَهُوَ رَدٌّ

আবু হুরাইরাহর হাদীস : وإذا أمرتكم بأمر فأتوا منه ما استطعتم (ফাতহুল বারী)

৭২৭৪

আবু হুরাইরা (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ

নাবী (সাঃআঃ) থেকে বর্ণনা করিয়াছেন। তিনি বলেছেনঃ প্রত্যেক নাবীকেই কোন-না-কোন অতুলনীয় নিদর্শন দেয়া হয়েছে যার উপর ঈমান আনা হয়েছে, কিংবা লোকেরা তাহাঁর উপর ঈমান এনেছে। আর আমাকে দেয়া হয়েছে ওয়াহী, যা আল্লাহ আমার উপর অবতীর্ণ করিয়াছেন। সুতরাং আমি আশা করি যে, কেয়ামতের দিন আমার অনুসারীর সংখ্যা তাদের সবার চেয়ে বেশি হইবে।(আঃপ্রঃ- ৬৭৬৬, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৬৭৭৮)

আল কুরআন হল সর্বশেষ রাসূলের উপর নাযিলকৃত সর্বশ্রেষ্ঠ মুযিযা। দুনিয়ার তামাম মানুষ একত্রিত হয়ে কিয়ামত পর্যন্ত চেস্টা সাধনা করলেও আল কুরআনের সুরার মত একটি সুরা তৈরি করিতে সক্ষম হইবে না। আল্লাহ তাআলা কুরআনে অতি স্পষ্টভাবে একাধিক জায়গায় এ চ্যালেঞ্জ দিয়ে রেখেছেন।

৯৬/২. অধ্যায়ঃ রাসুলুল্লাহ (সাঃআঃ) – এর সুন্নাতের অনুসরণ।

আর আল্লাহর বাণীঃ “আমাদেরকে মুত্তাকীদের নেতা বানিয়ে দাও” – (সুরা আল-ফুরক্বান ২৫/৭৪)। একজন বর্ণনাকারী বলেছেন, এরূপ ইমাম যে আমরা আমাদের পূর্ববর্তীদের অনুসরণ করব, আর আমাদের পরবর্তীরা আমাদের অনুসরণ করিবে। ইবনু আউন বলেন, তিনটি বিষয় আমি আমার নিজের জন্য ও আমার ভাইদের জন্য পছন্দ করি। এই সুন্নাত, যা শিখবে এবং জানার জন্য এ বিষয়ে প্রশ্ন করিবে। কুরআন যা তারা ভালভাবে বুঝতে চেস্টা করিবে এবং জানার জন্য এ বিষয়ে প্রশ্ন করিবে এবং মানুষকে একমাত্র কল্যাণের দিকে আহবান জানাবে।

৭২৭৫

আবু ওয়ায়িল (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, আমি এই মসজিদে শায়বাহর (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) কাছে বসেছিলাম। তিনি বলিলেন, তুমি যেমন বসে আছ, উমর (রাদি.) তেমনি এ জায়গা বসা ছিলেন এবং তিনি বলেছিলেন, আমি ইচ্ছা করছি যে, এতে সোনা ও রূপার কোন অবশিষ্ট রাখব না বরং সবকিছু মুসলিমদের মাঝে বন্টন করে দেব। আমি বললাম, আপনি তা করবেন না। তিনি জিজ্ঞেস করিলেন, কেন? আমি বললাম, আপনার সঙ্গীদ্বয় এমনটা করেননি। তিনি বলিলেন, তাঁরা দুজন অনুসরণ করার মত লোকই ছিলেন।(আঃপ্রঃ- ৬৭৬৭, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৬৭৭৯)

৭২৭৬

হুযাইফা (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ (সাঃআঃ) আমাদের হাদীস বর্ণনা করিয়াছেন যে, আমানাত আসমান হইতে মানুষের অন্তরের অন্তঃস্থলে অবতীর্ণ হয়েছে, তারপর কুরআন অবতীর্ণ হয়েছে এবং মানুষ কুরআন পাঠ করেছে এবং সুন্নাত শিক্ষা করেছে। (আঃপ্রঃ- ৬৭৬৮, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৬৭৮০)

৭২৭৭

আবদুল্লাহ ইবনু মাসউদ (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ

সর্বোত্তম কালাম হল আল্লাহর কিতাব, আর সর্বোত্তম পথ নির্দেশনা হল মুহাম্মাদ (সাঃআঃ) – এর পথ নির্দেশনা। আর সবচেয়ে নিকৃষ্ট বিষয় হল নতুনভাবে উদ্ভাবিত পন্থাসমূহ। “তোমাদের কাছে যার ওয়াদা দেয়া হচ্ছে তা ঘটবেই, তোমরা ব্যর্থ করিতে পারবে না” (আঃপ্রঃ- ৬৭৬৯, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৬৭৮১)

[১] বিদআত শব্দের আভিধানিক অর্থ হল : اَلشَّيْءُ الْمُخْتَرَعُ عَلٰى غَيْرِ مِثَالٍ سَابِقٍ অর্থাৎ পূর্ববর্তী কোন নমুনা ছাড়াই নতুন আবিষ্কৃত বিষয়। [আন-নিহায়াহ, পৃঃ ৬৯, কাওয়ায়েদ মারিফাতিল বিদআহ, পৃঃ ১৭]

আর শরীয়তের পরিভাষায়- مَا أُحْدِثَ فِى دِيْنِ اللهِ وَلَيْسَ لَهُ أَصْلٌ عَامٌ وَلاَخَاصٌّ يَدُلُّ عَلَيْهِ. অর্থাৎ আল্লাহর দ্বীনের মধ্যে নতুন করে যার প্রচলন করা হয়েছে এবং এর পক্ষে শরীয়তের কোন ব্যাপক ও সাধারণ কিংবা খাস ও সুনির্দিষ্ট দলীল নেই। [কাওয়ায়েদ মারিফাতিল বিদআহ, পৃঃ ২৪] এ সংজ্ঞটিতে তিনটি বিষয় লক্ষণীয় :

১. নতুনভাবে প্রচলন অর্থাৎ রাসুল (সাঃ) ও সাহাবায়ে কিরামের যুগে এর কোন প্রচলন ছিল না এবং এর কোন নমুনাও ছিল না।

২. এ নব প্রচলিত বিষয়টিকে দ্বীনের মধ্যে সংযোজন করা এবং ধারণা করা যে, এটি দ্বীনের অংশ।

৩. নব প্রচলিত এ বিষয়টি শরীয়তের কোন আম বা খাস দলীল ছাড়াই চালু ও উদ্ভাবন করা।

সংজ্ঞার এ তিনটি বিষয়ের একত্রিত রূপ হল বিদআত, যা থেকে বিরত থাকার কঠোর নির্দেশ শরীয়তে এসেছে। কঠোর নিষেধাজ্ঞার এ বিষয়টি হাদীসে বারবার উচ্চারিত হয়েছে। রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বলেছেন,

(وَإِيَّاكُمْ وَمُحْدَثَاتِ الأُ(রাদি.)مُوْرِ فَإِنَّ كُلَّ مُحْدَثَةٍ بِدْعَةٌ وَكُلَّ بِدْعَةٍ ضَلاَلَةٌ) رواه أبو داود والترمذى وقال حديث حسن صحيح.

তোমরা (দ্বীনের) নব প্রচলিত বিষয়সমূহ থেকে সতর্ক থাক। কেননা প্রত্যেক নতুন বিষয় বিদআত এবং প্রত্যেক বিদআত ভ্রষ্টতা। [সুনান আবু দাউদ, হাদীস নং ৩৯৯১ ও সুনান আত-তিরমিযী, হাদীস নং ২৬৭৬। তিরমিযী হাদীসটিকে হাসান ও সহীহ বলেছেন।] নাবী (সাঃ) তাহাঁর এক খুতবায় বলেছেন :

إِنَّ أَصْدَقَ الْحَدِيثِ كِتَابُ اللهِ وَأَحْسَنَ الْهَدْيِ هَدْيُ مُحَمَّدٍ وَشَرُّ الأُمُوْرِ مُحْدَثَاتُهَا وَكُلُّ مُحْدَثَةٍ بِدْعَةٌ وَكُلُّ بِدْعَةٍ ضَلاَلَةٌ وَكُلُّ ضَلاَلَةٍ فِي النَّارِ. رواه مسلم والنسائى واللفظ للنسائى.

নিশ্চয়ই সর্বোত্তম বাণী আল্লাহর কিতাব এবং সর্বোত্তম আদর্শ মুহাম্মদের আদর্শ। আর সবচেয়ে নিকৃষ্ট বিষয় হল (দ্বীনের মধ্যে) নব উদ্ভাবিত বিষয়। আর নব উদ্ভাবিত প্রত্যেক বিষয় বিদআত এবং প্রত্যেক বিদআত হল ভ্রষ্টতা এবং প্রত্যেক ভ্রষ্টতার পরিণাম জাহান্নাম। [সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ১৫৩৫ ও সুনান আন-নাসায়ী, হাদীস নং ১৫৬০, হাদীসের শব্দ চয়ন নাসায়ী থেকে।]

বিদআতের বৈশিষ্ট্য

বিদআতের চারটি বৈশিষ্ট্য রয়েছে :

১. বিদআতকে বিদআত হিসেবে চেনার জন্য সুনির্দিষ্ট কোন দলীল পাওয়া যায় না; তবে তা নিষিদ্ধ হওয়ার ব্যাপারে মূলনীতিগত আম ও সাধারণ দলীল পাওয়া যায়।

২. বিদআত সবসময়ই শরীয়তের উদ্দেশ্য, লক্ষ্য ও মাকাসিদ এর বিপরীত ও বিরোধী অবস্থানে থাকে। আর এ বিষয়টিই বিদআত নিকৃষ্ট ও বাতিল হওয়ার সবচেয়ে বড় প্রমাণ। এ জন্যই হাদীসে বিদআতকে ভ্রষ্টতা বলে অভিহিত করা হয়েছে।

৩. অধিকাংশ ক্ষেত্রে বিদআত এমন সব কার্যাবলী সম্পাদনের মাধ্যমে হয়ে থাকে যা রাসূলুল্লাহ (সাঃ) ও সাহাবাদের যুগে প্রচলিত ছিল না। ইমাম ইবনুল জাওযী রহ: বলেন, البِدْعَةُ عِبارةٌ عَنْ فِعلٍ لَمْ يَكُنْ فابتُدِعَ

বিদআত বলিতে বুঝায় এমন কাজকে যা ছিল না, অতঃপর তা উদ্ভাবন করা হয়েছে। [তালবীসু ইবলীস, পৃ: ১৬]

৪. বিদআতের সাথে শরীয়তের কোন কোন ইবাদাতের কিছু মিল থাকে। দুটো ব্যাপারে এ মিলগুলো লক্ষ্য করা যায়:

প্রথমত : দলীলের দিক থেকে এভাবে মিল রয়েছে যে, কোন একটি আম দলীল কিংবা সংশয় অথবা ধারণার ভিত্তিতে বিদআতটি প্রচলিত হয় এবং খাস ও নির্দিষ্ট দলীলকে পাশ কাটিয়ে এ আম দলীল কিংবা সংশয় অথবা ধারণাটিকে বিদআতের সহীহ ও সঠিক দলীল বলে মনে করা হয়।

দ্বিতীয়ত : শরীয়ত প্রণীত ইবাদাতের রূপরেখা ও পদ্ধতির সাথে বিদআতের মিল তৈরী করা হয় সংখ্যা, আকার-আকৃতি, সময় বা স্থানের দিক থেকে কিংবা হুকুমের দিক থেকে। এ মিলগুলোর কারণে অনেকে একে বিদআত মনে না করে ইবাদাত বলে গণ্য করে থাকেন।

বিদআত নির্ধারণে মানুষের মতপার্থক্য

বিদআত নির্ধারণে মানুষ সাধারণতঃ তিনটি শ্রেণীতে বিভক্ত :

এক : দলীল পাওয়া যায় না এমন প্রতিটি বিষয়কে এক শ্রেণীর মানুষ বিদআত হিসেবে চিহ্নিত করছে এবং এক্ষেত্রে তারা বিশেষ বাছ-বিচার না করেই সব কিছুকে (এমন কি মুআমালার বিষয়কেও) বিদআত বলে অভিহিত করছে। এদের কাছে বিদআতের সীমানা বহুদূর বিস্তৃত।

দুই : যারা দ্বীনের মধ্যে নব উদ্ভাবিত সকল বিষয়কে বিদআত বলিতে রাজী নয়; বরং বড় বড় নতুন কয়েকটিকে বিদআত বলে বাকী সবকিছু শরীয়তভুক্ত বলে তারা মনে করে। এদের কাছে বিদআতের সীমানা খুবই ক্ষুদ্র।

তিন : যারা যাচাই-বাছাই করে শুধুমাত্র প্রকৃত বিদআতকেই বিদআত বলে অভিহিত করে থাকেন। এরা মধ্যম পন্থাবলম্বী এবং হকপন্থী।

বিদআতের মৌলিক নীতিমালা

বিদআতের তিনটি মৌলিক নীতিমালা রয়েছে। সেগুলো হল :

১.এমন আমলের মাধ্যমে আল্লাহর নিকট সাওয়াবের আশা করা যা শরীয়ত সিদ্ধ নয়। কেননা শরীয়তের স্বতঃসিদ্ধ নিয়ম হল- এমন আমল দ্বারা আল্লাহর নিকট সাওয়াবের আশা করিতে হইবে যা কুরআনে আল্লাহ নিজে কিংবা সহীহ হাদীসে তাহাঁর রাসুল মুহাম্মদ (সাঃ) অনুমোদন করিয়াছেন। তাহলেই কাজটি ইবাদাত বলে গণ্য হইবে। পক্ষান্তরে আল্লাহ ও তাহাঁর রাসুল (সাঃ) যে আমল অনুমোদন করেননি সে আমলের মাধ্যমে আল্লাহর ইবাদাত করা হইবে বিদআত।

২.দ্বীনের অনুমোদিত ব্যবস্থা ও পদ্ধতির বাইরে অন্য ব্যবস্থার অনুসরণ ও স্বীকৃতি প্রদান। ইসলামে একথা স্বতঃসিদ্ধ যে, শরীয়তের বেঁধে দেয়া পদ্ধতি ও বিধানের মধ্যে থাকা ওয়াজিব। যে ব্যক্তি ইসলামী শরীয়ত ব্যতীত অন্য বিধান ও পদ্ধতি অনুসরণ করিল ও তার প্রতি আনুগত্যের স্বীকৃতি প্রদান করিল সে বিদআতে লিপ্ত হল।

৩. যে সকল কর্মকান্ড বিদআত না হলেও বিদআতের দিকে পরিচালিত করে এবং পরিশেষে মানুষকে বিদআতে লিপ্ত করে, সেগুলোর হুকুম বিদআতেরই অনুরূপ।

৭২৭৮

আবু হুরাইরা (রাদি.) ও যায়দ ইবনু খালিদ (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ

তারা বলেন, আমরা নাবী (সাঃআঃ) – এর কাছে উপস্থিত ছিলাম। (এ সময়) তিনি বললেনঃ আমি অবশ্য অবশ্যই মহান আল্লাহ তাআলার কিতাব অনুযায়ী তোমাদের মাঝে ফায়সালা করব। (আঃপ্রঃ- ৬৭৭০, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৬৭৮২)

৭২৭৯

আবু হুরাইরা (রাদি.) ও যায়দ ইবনু খালিদ (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ

তারা বলেন, আমরা নাবী (সাঃআঃ) – এর কাছে উপস্থিত ছিলাম। (এ সময়) তিনি বললেনঃ আমি অবশ্য অবশ্যই মহান আল্লাহ তাআলার কিতাব অনুযায়ী তোমাদের মাঝে ফায়সালা করব।(আঃপ্রঃ- ৬৭৭০, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৬৭৮২)

৭২৮০

আবু হুরাইরা (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ

রাসুলুল্লাহ (সাঃআঃ) বলেছেনঃ আমার সকল উম্মতই জান্নাতে প্রবেশ করিবে, কিন্তু যে অস্বীকার করে। তারা বললেনঃ কে অস্বীকার করিবে। তিনি বললেনঃ যারা আমার অনুসরণ করিবে তারা জান্নাতে প্রবেশ করিবে, আর যে আমার অবাধ্য হইবে সে-ই অস্বীকার করিবে। [১] (আঃপ্রঃ- ৬৭৭১, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৬৭৮৩)

[১] যারা আল্লাহর রাসূলের সহীহ হাদিসকে জেনে বুঝে স্বেচ্ছায় সজ্ঞানে পরিত্যাগ করে কারো স্বকপোল কল্পিত রায় কিয়াসের অনুসরন করে তারা আল্লাহর রসূলের অবাধ্য।

৭২৮১

জাবির ইবনু আবদুল্লাহ (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, একদল ফেরেশ্তা নাবী (সাঃআঃ) – এর নিকট আসলেন। তিনি তখন ঘুমিয়ে ছিলেন। একজন ফেরেশ্তা বলিলেন, তিনি [নাবী (সাঃআঃ)] ঘুমিয়ে আছেন। অন্য একজন বলিলেন, চক্ষু ঘুমিয়ে বটে, কিন্তু অন্তর জেগে আছে। তখন তারা বলিলেন, তোমাদের এ সাথীর একটি উদাহরণ আছে। সুতরাং তাহাঁর উদাহরণ তোমরা বর্ননা কর। তখন তাদের কেউ বলিল- তিনি তো ঘুমন্ত, আর কেউ বলিল, চক্ষু ঘুমন্ত তবে অন্তর জাগ্রত। তখন তারা বলিল, তাহাঁর উদাহরণ হল সেই লোকের মত, যে একটি বাড়ী তৈরি করিল। তারপর সেখানে খানার আয়োজন আহবানকারীকে করিল এবং একজন (লোকদের ডাকতে) পাঠাল। যারা আহবানকারীর ডাকে সাড়া দিল, তারা ঘরে প্রবেশ করে খানা খাওয়ার সূযোগ পেল। আর যারা আহবানকারীর ডাকে সাড়া দিল না, তারা ঘরেও প্রবেশ করিতে পারল না এবং খানাও খেতে পারল না। তখন তারা বলিলেন, উদাহরণটি ব্যাখ্যা করুন, যাতে তিনি বুঝতে পারেন। তখন কেউ বলিল, তিনি তো ঘুমন্ত, আর কেউ বলিল, চক্ষু ঘুমন্ত, তবে অন্তর জাগ্রত। তখন তারা বলিলেন, ঘরটি হল জান্নাত, আহবানকারী হলেন মুহাম্মাদ (সাঃআঃ)। যারা মুহাম্মাদ (সাঃআঃ) – এর অনুসরণ করিল, তারা আল্লাহর আনুগত্য করিল। আর যারা মুহাম্মাদ (সাঃআঃ) এর অবাধ্যতা করিল, তারা আসলে আল্লাহরই অবাধ্যতা করিল। মুহাম্মাদ (সাঃআঃ) হলেন মানুষের মাঝে পার্থক্যের মাপকাঠি। কুতাইবাহ জাবির (রাদি.) থেকে এরকম হাদীস বর্ণনা করিয়াছেন, তবে তিনি “নাবী (সাঃআঃ) আমাদের কাছে বের হয়ে আসলেন”, এই কথাটি বলছেন।(আঃপ্রঃ- ৬৭৭২, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৬৭৮৪)

৭২৮২

হুযাইফাহ (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, হে কুরআন পাঠকারী সমাজ! তোমরা (কুরআন ও সুন্নাহর উপর) সুদৃঢ় থাক। নিশ্চয়ই তোমরা অনেক পশ্চাতে পড়ে আছ। আর যদি তোমরা ডানদিকের কিংবা বামদিকের পথ অনুসরণ কর তাহলে তোমরা সঠিকপথ (হেদায়েত থেকে) অনেক দুরে সরে পড়বে।(আঃপ্রঃ- ৬৭৭৩, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৬৭৮৫)

৭২৮৩

আবু মুসা (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ

নাবী (সাঃআঃ) বলেছেনঃ আমার ও আমাকে আল্লাহ যা কিছু দিয়ে পাঠিয়েছেন তার উদাহরণ হল এমন যে, এক লোক কোন এক কাওমের নিকট এসে বলিল, হে কাওম! আমি নিজের চোখে সেনাবাহিনীকে দেখে এসেছি। আমি সুস্পষ্ট সতর্ককারী। কাজেই তোমরা আত্নরক্ষার চেষ্টা কর। কাওমের কিছু লোক তার কথা মেনে নিল, সূতরাং রাতের প্রথম প্রহরে তারা সে জায়গা ছেড়ে রওনা হল এবং একটি নিরাপদ জায়গায় গিয়ে পৌছল। ফলে তারা রক্ষা পেল। তাদের মধ্যেকার আর একদল লোক তার কথা মিথ্যা জানল, ফলে তারা নিজেদের জায়গাতেই রয়ে গেল। সকাল বেলায় শক্রবাহিনী তাদের উপর আক্রমণ চালাল, তাদেরকে ধ্বংস করে দিল এবং তাদেরকে উৎপাটিত করে দিল। এই হল তাদের উদাহরণ, যারা আমার আনুগত্য করে এবং আমি যা নিয়ে এসেছি তার অনুসরন করে। আর যারা আমার কথা অমান্য করে তাদের দৃষ্টান্ত হল আমি যে সত্য নিয়ে এসেছি তাকে নিথ্যা প্রতিপন্ন করে।(আঃপ্রঃ- ৬৭৭৪, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৬৭৮৬)

৭২৮৪

আবু হুরাইরা (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, যখন রাসূলুল্লাহ সাঃআঃ ইন্তিকাল করিলেন আর তাহাঁর পরে আবু বকর (রাদি.)-কে খালীফা করা হলো এবং আরবের যারা কাফির হবার তারা কাফির হয়ে গিয়েছিল, তখন উমার (রাদি.) আবু বকর (রাদি.)-কে বলিলেন, আপনি কী করে লোকদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করবেন, অথচ রাসূলুল্লাহ সাঃআঃ বলেছেনঃ আমি মানুষের সঙ্গে লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ বলার পূর্ব পর্যন্ত যুদ্ধ করার জন্য নির্দেশপ্রাপ্ত। অতএব যে ব্যক্তি লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ বলিল, সে তার জান ও মালকে আমার থেকে নিরাপদ করে নিল। তবে ইসলামী বিধানের আওতায় পড়লে আলাদা। তাদের প্রকৃত হিসাব আল্লাহর কাছে হইবে। আবু বকর (রাদি.) বলিলেন, যারা সালাত ও যাকাতের মধ্যে পার্থক্য করে, আমি অবশ্য অবশ্যই তাদের সঙ্গে যুদ্ধ করব। কেননা, যাকাত হল মালের হক। আল্লাহর শপথ! যদি তারা রাসূলুল্লাহ সাঃআঃ-এর নিকট যা আদায় করত, এখন তা (সেভাবে) দিতে অস্বীকার করে, তাহলেও আমি অবশ্যই তাদের সঙ্গে যুদ্ধ করব। উমার (রাদি.) বলিলেন, আল্লাহর কসম! আমি দেখছিলাম যে, যুদ্ধ করার জন্য আল্লাহ তাআলা আবু বকরের সিনা খুলে দিয়েছেন। সুতরাং আমি বুঝতে পারলাম এ সিদ্ধান্ত সঠিক।

[ইমাম বুখারী (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) বলেন] ইবনু বুকায়র ও আবদুল্লাহ (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) লায়স-এর সূত্রে উকায়ল থেকে বর্ণনা করিতে গিয়ে। لو منعونى كذا (যদি তারা এ পরিমাণ দিতে অস্বীকার করে)-এর স্থলে لو منعونى عناقا (যদি তারা একটা ছোট উটের বাচ্চাও দিতে অস্বীকার করে) উল্লেখ করিয়াছেন। আর এটিই সবচেয়ে শুদ্ধ। আর এটিকে লোকেরাعَنَاقًا বর্ণনা করিয়াছেন। عزوجل বস্তুত এ স্থানে عقالا পড়াটা জায়েয নয়। আর عقالا শব্দটি শাবী-এর হাদীসে মুরসাল সূত্রে বর্ণিত হয়েছে। সে রকম কুতাইবাহ (রহমাতুল্লাহি আলাইহি)ও عقالا বলেছেন।[১] [১৩৯৯, ১৪০০) (আঃপ্রঃ- ৬৭৭৫, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৬৭৮৭)

[১] যারা বলে আমরা আল্লাহর কথা মানি, রাসূলের কথা মানিনা, আমরা ওমুক নাবীকে মানি,অন্যদেরকে মানি না, আমরা সলাত কায়েম করব, কিন্তু যাকাত, সিয়াম এগুলো মানি না, এরা সবাই পাক্কা কাফির। যারা আল্লাহ ও তাহাঁর রাসুলদেরকে অস্বীকার করে আর আল্লাহ ও রাসুলদের মাঝে পার্থক্য সৃষ্টি করিতে চায় আর বলে (রাসুলদের) কতককে আমরা মানি আর কতককে মানি না, আর তারা তার (অর্থাৎ কুফরের ও ঈমানের) মাঝ দিয়ে একটা রাস্তা বের করিতে চায় তারাই হল পাক্কা কাফির আর কাফিরদের জন্য আমি অবমাননাকর শাস্তি প্রস্ত্তত করে রেখেছি- (আন-নিসা-১৫০,১৫১)

৭২৮৫

আবু হুরাইরা (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, যখন রাসূলুল্লাহ সাঃআঃ ইন্তিকাল করিলেন আর তাহাঁর পরে আবু বকর (রাদি.)-কে খালীফা করা হলো এবং আরবের যারা কাফির হবার তারা কাফির হয়ে গিয়েছিল, তখন উমার (রাদি.) আবু বকর (রাদি.)-কে বলিলেন, আপনি কী করে লোকদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করবেন, অথচ রাসূলুল্লাহ সাঃআঃ বলেছেনঃ আমি মানুষের সঙ্গে লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ বলার পূর্ব পর্যন্ত যুদ্ধ করার জন্য নির্দেশপ্রাপ্ত। অতএব যে ব্যক্তি লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ বলিল, সে তার জান ও মালকে আমার থেকে নিরাপদ করে নিল। তবে ইসলামী বিধানের আওতায় পড়লে আলাদা। তাদের প্রকৃত হিসাব আল্লাহর কাছে হইবে। আবু বকর (রাদি.) বলিলেন, যারা সালাত ও যাকাতের মধ্যে পার্থক্য করে, আমি অবশ্য অবশ্যই তাদের সঙ্গে যুদ্ধ করব। কেননা, যাকাত হল মালের হক। আল্লাহর শপথ! যদি তারা রাসূলুল্লাহ সাঃআঃ-এর নিকট যা আদায় করত, এখন তা (সেভাবে) দিতে অস্বীকার করে, তাহলেও আমি অবশ্যই তাদের সঙ্গে যুদ্ধ করব। উমার (রাদি.) বলিলেন, আল্লাহর কসম! আমি দেখছিলাম যে, যুদ্ধ করার জন্য আল্লাহ তাআলা আবু বকরের সিনা খুলে দিয়েছেন। সুতরাং আমি বুঝতে পারলাম এ সিদ্ধান্ত সঠিক।

[ইমাম বুখারী (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) বলেন] ইবনু বুকায়র ও আবদুল্লাহ (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) লায়স-এর সূত্রে উকায়ল থেকে বর্ণনা করিতে গিয়ে। لو منعونى كذا (যদি তারা এ পরিমাণ দিতে অস্বীকার করে)-এর স্থলে لو منعونى عناقا (যদি তারা একটা ছোট উটের বাচ্চাও দিতে অস্বীকার করে) উল্লেখ করিয়াছেন। আর এটিই সবচেয়ে শুদ্ধ। আর এটিকে লোকেরাعَنَاقًا বর্ণনা করিয়াছেন। عزوجل বস্তুত এ স্থানে عقالا পড়াটা জায়েয নয়। আর عقالا শব্দটি শাবী-এর হাদীসে মুরসাল সূত্রে বর্ণিত হয়েছে। সে রকম কুতাইবাহ (রহমাতুল্লাহি আলাইহি)ও عقالا বলেছেন।[১] [১৩৯৯, ১৪০০) (আঃপ্রঃ- ৬৭৭৫, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৬৭৮৭)

যারা বলে আমরা আল্লাহর কথা মানি, রাসূলের কথা মানিনা, আমরা অমুক নাবীকে মানি, অন্যদেরকে মানিনা, আমরা সালাত কায়েম করব, কিন্তু যাকাত, সিয়াম এগুলো মানি না, এরা সবাই পাক্কা কাফির । “যারা আল্লাহ ও তাহাঁর রাসুলদেরকে অস্বীকার করে আর আল্লাহ ও রাসুলদের মাঝে পার্থক্য সৃষ্টি করিতে চায় আর বলে (রাসুলদের) কতককে আমরা মানি আর কতককে মানি না, আর তারা তার (অর্থাৎ কুফরের ও ঈমানের) মাঝ দিয়ে একটা রাস্তা বের করিতে চায় তারাই হল পাক্কা কাফির আর কাফিরদের জন্য আমি আবমাননাকর শাস্তি প্রস্তুত করে রেখেছি – (আন-নিসা-১৫০, ১৫১)

৭২৮৬

আবদুল্লাহ ইবনু আব্বাস (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, উয়াইনাহ ইবনু হিস্ন ইবনু হুযাইফাহ ইবনু বাদ্র (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) তাহাঁর ভাতিজা হুর ইবনু কায়স ইবনু হিস্ন-এর কাছে আসলেন। উমর (রাদি.) যাদের নিজে সন্নিকটে রাখতেন, হুর ইবনু কায়স (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) ছিলেন তাদেরই একজন। যুবক হোক কিংবা বৃদ্ধ ক্বারী (আলিম) ব্যাক্তিরাই উমর (রাদি.) – এর মজলিসের সদস্য ও পরামর্শদাতা ছিলেন। উয়ায়না তার ভাতিজাকে বলিলেন, হে ভাতিজা! তোমার কি আমীরের নিকট এভটুকু প্রভাব আছে যে আমার জন্য সাক্ষাতের অনুমতি গ্রহণ করিতে পারবে? সে বলিল, আমি আপনার ব্যাপারে তাহাঁর কাছে অনুমতি চাইব। ইবনু আব্বাস (রাদি.) বলেন তিনি (হুর) উয়াইনাহ্র জন্য অনুমতি চাইলেন। তারপর যখন উয়াইনাহ (রাদি.) উমর (রাদি.) – এর নিকট গেলেন, তখন সে বলিল, হে ইবনু খাত্তাব! আল্লাহর কসম! আপনি আমাদের মাল দিচ্ছেন না, আবার ইনসাফের ভিত্তিতে আমাদের মাঝে ফায়সালাও করছেন না। তখন উমর (রাদি.) রেগে গেলেন, এমন কি তিনি তাকে মারতে উদ্যত হলেন। তখন হুর বলিলেন, হে আমীরুল মুমিনীন। আল্লাহ তাহাঁর নাবী (সাঃআঃ) – কে বলেছেনঃ “তুমি ক্ষমা অবলম্বন কর, সৎকাজের আদেশ দাও, আর নির্বোধদের উপেক্ষা কর”। – (সুরা আল-আরাফ ৭/১৯৯)। এ লোকটি একজন মূর্খ। আল্লাহর শপথ! উমর (রাদি.) – এর সামনে এ আয়াতটি পাঠ করা হলে তিনি তা এতটুকু লংঘন করিলেন না। বস্তুত তিনি মহান আল্লাহ তাআলার কিতাবের বড়ই অনুগত ছিলেন। (আঃপ্রঃ- ৬৭৭৬, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৬৭৮৮)

৭২৮৭

আসমা বিনত আবু বক্‌র (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, একবার সুর্যগ্রহণের সময় আমি আইশাহ (রাদি.) – এর কাছে এলাম। লোকেরা তখন (সালাতে) দাঁড়িয়েছিল এবং তিনিও দাঁড়িয়ে সালাত পড়ছিলেন। আমি জিজ্ঞাসাঃ করলাম, লোকদের কি হল? তিনি হাত দিয়ে আকাশের দিকে ইঙ্গিত করিলেন এবং বলিলেন, সুবহানাল্লাহ! আমি বললাম, এটা কি কোন নিদর্শন? তখন তিনি মাথা নেড়ে হাঁ বলিলেন। রাসুলুল্লাহ (সাঃআঃ) যখন সালাত পড়া শেষ করিলেন, তখন তিনি আল্লাহর প্রশংসা করিলেন ও ছানা পড়লেন। তারপর বলিলেন, আমি যা দেখিনি তার সবকিছুই আজকের আমার এ জায়গায় দেখলাম। এমন কি জান্নাত ও জাহান্নামও দেখলাম। আর আমার কাছে ওয়াহী করা হয়েছে যে, কবরে তোমাদের পরীক্ষা করা হইবে, প্রায় দাজ্জালের পরীক্ষার মতই। তবে যারা মুমিন হইবে, অথবা (বলেছিলেন) মুসলিম হইবে। বর্ননাকারী বলেন, আসমা (রাদি.) মুমিন- বলেছিলেন, না মুসলিম- বলেছিলেন তা আমার স্বরণ নেই। তারা বলবে, মুহাম্মাদ (সাঃআঃ) আমাদের কাছে স্পষ্ট প্রমাণ নিয়ে এসেছিলেন, আমরা তার ডাকে সাড়া দিয়েছি এবং ঈমান এনেছি। তখন তাকে বলা হইবে, তুমি শান্তিতে ঘুমোও, আমরা জানি তুমি দৃঢ় বিশ্বাসী ছিলে। আর যারা মুনাফিক হইবে অথবা (বলেছিলেন) সন্দেহকারী হইবে, বর্ণনাকারী বলেন, আসমা মুনাফিক- বলেছিলেন না সন্দেহকারী বলেছিলেন তা আমার মনে নেই- তারা বলবে, আমি কিছুই জানি না, আমি মানুষকে কথা বলিতে শুনিয়াছি, আর তাই বলেছি।(আঃপ্রঃ- ৬৭৭৭, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৬৭৮৯)

৭২৮৮

আবু হুরাইরা (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেছেনঃ তোমরা আমাকে প্রশ্ন করা থেকে বিরত থাক, যে পর্যন্ত না আমি তোমাদের কিছু বলি। কেননা, তোমাদের আগে যারা ছিল, তারা তাদের নাবীদেরকে অধিক অধিক প্রশ্ন করা ও নাবীদের সঙ্গে মতভেদের জন্যই ধ্বংস হয়েছে। তাই আমি যখন তোমাদেরকে কোন ব্যাপারে নিষেধ করি, তখন তা থেকে বেঁচে থাক। আর যদি কোন বিষয়ে আদেশ করি তাহলে সাধ্য অনুসারে মেনে চল।[মুসলিম ১৫/৭৩, হাদীস ১৩৩৭, আহমাদ ৯৭৮৭] (আঃপ্রঃ- ৬৭৭৮, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৬৭৯০)

৯৬/৩. অধ্যায়ঃ অধিক অধিক প্রশ্ন করা এবং অকারণে কষ্ট করা নিন্দনীয়।

এবং আল্লাহর বানীঃ তোমরা সেসব বিষয়ে প্রশ্ন করো না , যা প্রকাশিত হলে তোমরা দুঃখিত হইবে। (সুরা আল-মায়িদাহ ৫/১০১)

৭২৮৯

আবু ওয়াক্কাস (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ

নাবী (সাঃআঃ) বলেছেনঃ মুসলিমদের সর্বাপেক্ষা বড় অপরাধী ঐ লোক যে এমন বিষয়ে প্রশ্ন করে যা আগে হারাম ছিল না, কিন্তু তার প্রশ্ন করার কারণে তা হারাম করা হয়েছে।[মুসলিম ৪৩/৩৭, হাদীস ২৩৫৮, আহমাদ ১৫৪৫] (আঃপ্রঃ- ৬৭৭৯, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৬৭৯১)

৭২৯০

যায়দ ইবনু সাবিত (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ

নাবী (সাঃআঃ) চাটাই দিয়ে মসজিদে একটি হুজরা বানিয়ছিলেন। রাসুলুল্লাহ (সাঃআঃ) তার ভিতর কয়েক রাত সালাত পড়লেন। এতে লোকেরা তার সঙ্গে একত্রিত হত। তারপর এক রাতে তারা তাহাঁর আওয়ায শুনতে পেল না এবং তারা ভাবল, তিনি ঘুমিয়ে পড়েছেন। তাদের কেউ কেউ গলা খাকার দিতে লাগল, যাতে তিনি তাদের নিকট বেরিয়ে আসেন। তখন তিনি [নাবী (সাঃআঃ)] বললেনঃ তোমাদের এ ক দিনের কর্মকান্ড আমি দেখেছি, এতে আমার আশঙ্কা হচ্ছে, তোমাদের উপর তা ফরয করে দেওয়া থেকে পারে। কিন্তু যদি তোমাদের উপর ফরয করে দেওয়া হয় তাহলে তোমরা তা প্রতিষ্ঠিত করিবে না। কাজেই ওহে লোকেরা! তোমরা নিজ নিজ ঘরে সালাত পড়। কারন, মানুষের সবচেয়ে উত্তম সালাত হল যা সে তার ঘরে আদায় করে ফরয সালাত ছাড়া।(আঃপ্রঃ- ৬৭৮০, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৬৭৯২)

৭২৯১

আবু মূসা আশআরী (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ (সাঃআঃ) – কে কতকগুলো বিষয়ে প্রশ্ন করা হল যা তিনি অপছন্দ করিলেন। লোকেরা যখন তাঁকে অধিক অধিক প্রশ্ন করিতে লাগল, তিনি রাগাম্বিত হলেন এবং বললেনঃ আমাকে প্রশ্ন কর। তখন এক লোক দাঁড়িয়ে জিজ্ঞেস করিল, হে আল্লাহর রাসুল! আমার পিতা কে? তিনি বললেনঃ তোমার পিতা হল হুযাফা। এরপর আরেকজন দাঁড়িয়ে জিজ্ঞেস করিল, হে আল্লাহর রাসুল! আমার পিতা কে? তিনি বললেনঃ তোমার পিতা শায়বাহর আযাদকৃত গোলাম সালিম। উমর (রাদি.) রাসুলুল্লাহ (সাঃআঃ) – এর চেহারায় রাগের আলামত দেখে বলিলেন, আমরা আল্লাহর কাছে তওবা করছি। (আঃপ্রঃ- ৬৭৮১, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৬৭৯৩)

৭২৯২

মুগীরাহ ইবনু শুবাহ (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, মুআবিয়া (রাদি.) মুগীরাহ (রাদি.) এর কাছে লিখে পাঠালেন যে, তুমি রাসুলুল্লাহ (সাঃআঃ) থেকে যা কিছু শুনেছ তা আমার কাছে লিখে পাঠাও। তিনি বলেন, তিনি তাকে লিখলেন যে, আল্লাহর নাবী (সাঃআঃ) প্রতি সালাতের পর বলিতেনঃ আল্লাহ ব্যতীত অন্য কোন ইলাহ নেই। তিনি একক! তাহাঁর কোন শারীক নেই, সম্রাজ্য কেবলমাত্র তাহাঁরই, আর সকল প্রশংসা তাহাঁরই জন্য, তিনি সকল বিষয়ের উপর ক্ষমতাবান। হে আল্লাহ! তুমি যা দান করিবে তাকে আটকানোর কেউ নেই, আর তুমি আটকাবে তা দেওয়ার মত কেউ নেই। ধন সম্পদ তোমার দরবারে সম্পদশালীদের কোন উপকার করিবে না। তিনি আরো লিখেছিলেন যে, নাবী (সাঃআঃ) তর্কে লিপ্ত হওয়া, বেশি বেশি প্রশ্ন করা ও সস্পদ বিনষ্ট করা থেকে নিষেধ করিতেন। আর তিনি মায়েদের অবাধ্য হইতে, কন্যা সন্তানদের জীবন্ত কবর দিতে ও প্রাপকের পাওনা দেওয়া থেকে হাত গুটাতে আর নেয়ার ব্যাপারে হাত বাড়িয়ে দিতে নিষেধ করিতেন। আবু আবদুল্লাহ [বুখারী(রহমাতুল্লাহি আলাইহি)] বলেন, তারা (কাফির) জাহিলীয়্যাতের যুগে স্বীয় কন্যাদেরকে হত্যা করিতেন। অতঃপর আল্লাহ তা হারাম করে দেন। (আঃপ্রঃ- ৬৭৮২, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৬৭৯৪)

৭২৯৩

আনাস (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, আমরা উমর (রাদি.) – এর কাছে ছিলাম। তখন তিনি বললেনঃ (যাবতীয়) কৃত্রিমতা হইতে আমাদের নিষেধ করা হয়েছে। (আঃপ্রঃ- ৬৭৮৩, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৬৭৯৫)

যাবতীয় মুনাফেকী নীতি অবলম্বন করা, ইবাদতের ক্ষেত্রে অনর্থক বাড়তি কষ্ট করা, নাটক করা, অন্যের চরিত্রে অভিনয় করা, নকল চুল, দাড়ি গোঁফ লাগিয়ে অন্যের মত হওয়া, যেমন খুশি তেমন সাজা, ছেলেদের পাকা চুল, দাড়ি লাগিয়ে মুরুব্বি সাজা ইত্যাদি যাবতীয় কৃএিমতা গ্রহন করিতে আল্লাহর রাসুল (সাঃআঃ) নিষেধ করিয়াছেন।

৭২৯৪

আনাস ইবনু মালিক (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ

দুপুরের পর নাবী (সাঃআঃ) বেরিয়ে আসলেন এবং যুহরের সালাত পড়লেন। সালাম ফিরানোর পর তিনি মিম্বরে দাঁড়ালেন এবং কেয়ামত সম্পর্কে আলোচনা করিলেন। তিনি উল্লেখ করিলেন যে, কেয়ামতের আগে অনেক বড় বড় ঘটনা ঘটবে। তারপর তিনি বললেনঃ কেউ যদি আমাকে কোন বিষয়ে জিজ্ঞেস করা পছন্দ করে, তাহলে সে তা করিতে পারবে। আল্লাহর শপথ! আমি এখানে অবস্হান করা পর্যন্ত তোমরা আমাকে যে বিষয়েই প্রশ্ন করিবে, আমি তা তোমাদের জানাব। আনাস (রাদি.) বলেন, এতে লোকেরা খুব বেশি কাঁদল। আর রাসুলুল্লাহ (সাঃআঃ) বেশি বেশি বলিতে থাকলেন তোমরা আমার কাছে প্রশ্ন কর। আনাস (রাদি.) বলেন, তখন এক লোক দাঁড়িয়ে বলিল, হে আল্লাহর রাসুল! আমার আশ্রয়ের জায়গা কোথায়? তিনি বলিলেন, জাহান্নাম। তারপর আবদুল্লাহ ইবনু হুযাফা (রাদি.) দাড়িয়ে বললেনঃ হে আল্লাহর রাসুল! আমার পিতা কে? তিনি বললেনঃ তোমার পিতা হুযাফা। আনাস (রাদি.) বলেন, তারপর তিনি বার বার বলিতে লাগলেনঃ তোমরা আমার কাছে প্রশ্ন কর, আমার কাছে প্রশ্ন কর। এতে উমর (রাদি.) হাঁটু গেড়ে বসে গেলেন এবং বলিলেন, আমরা আল্লাহকে রব হিসাবে মেনে ইসলামকে দ্বীন হিসাবে গ্রহণ করে এবং মুহাম্মাদ (সাঃআঃ) – কে রাসুল হিসাবে বিশ্বাস করে সন্তুষ্ট আছি। আনাস (রাদি.) বলেন, উমর (রাদি.) যখন এ কথা বলিলেন, তখন রাসুলুল্লাহ (সাঃআঃ) চুপ করিলেন। তারপর নাবী (সাঃআঃ) বললেনঃ উত্তম! যে সত্তার হাতে আমার প্রাণ তাহাঁর শপথ করে বলছি, এই মুহূর্তে আমি যখন সালাতে ছিলাম তখন এ দেয়ালের প্রস্থে জান্নাত ও জাহান্নাম আমার সামনে পেশ করা হয়েছিল। আজকের মত এমন ভাল আর মন্দ আমি আর দেখিনি।(আঃপ্রঃ- ৬৭৮৪, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৬৭৯৬)

৭২৯৫

আনাস‏ ‏ইবনু‏ ‏মালিক (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ

‏ ‏তিনি‏ ‏বলেন,‎‏ ‏এক‏ ‏লোক‏ ‏জিজ্ঞাসা ‎‏ ‏করিল, হে‏ ‏আল্লাহর‏ ‏নাবী! কে‏ ‏আমার‏ ‏পিতা? তিনি‏ ‏বললেনঃ‏ ‏তোমার‏ ‏পিতা‏ ‏অমুক।‏ ‏তারপর‏ ‏এ‏ ‏আয়াত‏ ‏নাযিল‏ ‏হলঃ‏ ‏‎“হে‏ ‏মুমিনরা! তোমরা‏ ‏এমন‏ ‏বিষয়ে‏ ‏প্রশ্ন‏ ‏কর‏ ‏না, যা‏ ‏প্রকাশিত‏ ‏হলে‏ ‏তোমরা‏ ‏দুঃখিত‏ ‏হইবে‏.‏‎…(আঃপ্রঃ- ৬৭৮৫, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৬৭৯৭)

৭২৯৬

আনাস ইবনু মালিক (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ (সাঃআঃ) বলেছেনঃ লোকেরা একে অপরকে প্রশ্ন করিতে থাকবে যে, এ আল্লাহ সব কিছুরই স্রষ্টা, তবে আল্লাহকে কে সৃষ্টি করিল?[মুসলিম ১/৬০, হাদীস ১৩৬] (আঃপ্রঃ- ৬৭৮৬, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৬৭৯৮)

[১] যদি কেউ এ রকম পরিস্থিতির সম্মুখীন হয় তবে সে যেন আল্লাহর কাছে আশ্রয় প্রার্থনা করে। অর্থাৎ أعوذ بالله من الشيطان الرجيم বলে এবং তা বলা থেকে বিরত থাকে। আর সহীহ মুসলিমের শব্দে রয়েছে :

فَمَنْ وَجَدَ مِنْ ذَلِكَ شَيْئًا فَلْيَقُلْ آمَنْتُ بِاللَّهِ

আর আবু দাউদ ও নাসায়ীতে অতিরিক্ত হলো : তখন তোমরা বলবে : الله أحد الله الصمد

অতঃপর বাম দিকে থুথু দিবে ও أعوذ بالله من الشيطان الرجيم বলবে। আর মুসনাদে আহমাদে বর্ণিত আয়েশাহর হাদীসে রয়েছে: فَإِذَا وَجَدَ أَحَدُكُمْ ذَلَكَ فَلْيَقُلْ آمَنْتُ بِاللَّهِ وَرَسُوْلِهِ فَإِن ذَلِكَ يَذْهَبُ عَنْهُ

(ফাতহুল বারী)

৭২৯৭

ইবনু মাসউদ (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, আমি নাবী (সাঃআঃ) – এর সঙ্গে মদিনায় এক শস্য ক্ষেতে ছিলাম। তিনি একটি খেজুরের ডালে ভর দিয়ে ইয়াহূদীদের একটি দলের নিকট দিয়ে যাচ্ছিলেন। তাদের কেউ বলিল, তাকে রূহ সম্পর্কে জিজ্ঞাসা কর। আর কেউ বলিল তাঁকে জিজ্ঞাসা করো না, এতে তোমাদেরকে এমন উত্তর শুনতে হইতে পারে যা তোমরা অপছন্দ কর। অতঃপর তারা তাহাঁর কাছে উঠে গিয়ে বলিল, হে আবুল কাসিম! আমাদেরকে রূহ সস্পর্কে জানান। রাসুলুল্লাহ (সাঃআঃ) দাঁড়িয়ে কিছুক্ষণ তাকিয়ে রইলেন। আমি বুঝলাম, তাহাঁর কাছে ওয়াহী অবতীর্ন হচ্ছে, আমি তার থেকে একটু পিছে সরে দাঁড়ালাম। ওয়াহী শেষ হল। তারপর তিনি বললেনঃ “তাঁরা তোমাকে রূহ সম্পর্কে জিজ্ঞেস করে। বল, রূহ আমার প্রতিপালকের আদেশ……(আঃপ্রঃ- ৬৭৮৭, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৬৭৯৯)

৯৬/৪. অধ্যায়ঃ নাবী (সাঃআঃ)র কাজকর্মের অনুসরণ ।

৭২৯৮

ইবনু উমর (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, নাবী (সাঃআঃ) একটি সোনার আংটি পরতেন। তখন লোকেরাও সোনার আংটি পরতে লাগল। এরপর (একদিন) নাবী (সাঃআঃ) বলিলেন, আমি সোনার আংটি পরছিলাম – তারপর তিনি তা ছুঁড়ে ফেলে দিলেন এবং বললেনঃ আমি আর কোন দিনই তা পরিধান করব না। ফলে লোকেরাও তাদের আংটিগুলো ছুঁড়ে ফেলল। (আঃপ্রঃ- ৬৭৮৮, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৬৮০০)

৯৬/৫. অধ্যায়ঃ দ্বীনের ব্যাপারে অতিরিক্ত কঠোরটা করা, তর্কে লিপ্ত হওয়া, বাড়াবাড়ি করা এবং বিদআত অপছন্দনীয়।

কারন, আল্লাহ বলেছেনঃ ওহে কিতাবধারীগণ! তোমরা তোমাদের দ্বীনের ব্যাপারে বাড়াবাড়ি করো না, আর আল্লাহ সম্বন্ধে সত্য ছাড়া কিছু বলো না…….। (সুরা আন-নিসা ৪/১৭১)

৭২৯৯

বূ হুরাইরা (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, নাবী (সাঃআঃ) বলেছেনঃ তোমরা ইফতার না করে লাগাতার সওম রেখো না। সাহাবীরা বলিলেন, আপনি তো ইফতার না করে লাগাতার সওম রাখেন। তিনি বললেনঃ আমি তোমাদের মতো নই। আমি রাত কাটাই যাতে আমার রব আমাকে খাওয়ান ও পান করান। কিন্তু তাঁরা লাগাতার সওম রাখা থেকে বিরত হলো না। ফলে তাদের সঙ্গে নাবী (সাঃআঃ) ও দুদিন অথবা (বর্ণনাকারী বলেছিলেন) দু রাত লাগাতার সওম রাখলেন। এরপর তারা নতুন চাঁদ দেখিতে পেলেন। তখন নাবী (সাঃআঃ) বললেনঃ যদি চাঁদ (আরও কয়েক দিন) দেরী করে উঠত, তাহলে আমিও (লাগাতার সওম রেখে) তোমাদের সওমের সময়কে বাড়িয়ে দিতাম, তাদেরকে দৃষ্টান্ত মূলক শাস্তি দেয়ার জন্য। (আঃপ্রঃ- ৬৭৮৯, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৬৮০১)

৭৩০০

ইবরাহীম তায়মী (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, আমার পিতা বর্ণনা করিয়াছেন যে, একবার আলী (রাদি.) পাকা ইটের তৈরী একটি মিম্বরে উঠে আমাদের উদ্দেশে খুতবা দিলেন। তাহাঁর সাথে একটি তলোয়ার ছিল, যার মাঝে একটি সহীফা ঝুলছিল। তিনি বলিলেন, আল্লাহর কসম! আমাদের কাছে আল্লাহর কিতাব এবং যা এই সহীফাতে লেখা আছে এ ব্যতীত অন্য এমন কোন কিতাব নেই যা পাঠ করা যেতে পারে। তারপর তিনি তা খুললেন। তাতে উটের বয়স সম্পর্কে লেখা ছিল এবং লেখা ছিল যে, আয়র পর্বত থেকে অমুক স্থান পর্যন্ত মদীনা হারাম (পবিত্র এলাকা) বলে গণ্য হইবে। যে কেউ এখানে কোন অন্যায় করিবে তার উপর আল্লাহ, ফেরেশ্‌তামন্ডলী ও সকল মানুষের অভিসস্পাত। আর আল্লাহ তার ফরয ও নফল কোন ইবাদতই কবূল করবেন না এবং তাতে আরও ছিল যে, এখানকার সকল মুসলমানের নিরাপত্তা একই স্তরের। একজন নিন্ম স্তরের লোকও (অন্যকে) নিরাপত্তা দিতে পারবে। যদি কেউ অন্য মুসলমানের প্রদত্ত নিরাপত্তাকে লংঘন করে, তাহলে তার উপর আল্লাহর, ফেরেশ্‌তামন্ডলীর ও সকল মানুষের লানাত। আল্লাহ তাআলা তার ফরয ও নফল কোন ইবাদতই গ্রহন করবেন না। তাতে আরও ছিল, যদি কেউ তার (মুক্তি দাতা) মনিবের অনুমতি ছাড়া অন্যকে নিজের (গোলামী কালীন সময়ের) মনিব বলে উল্লেখ করে, তাহলে তার উপর আল্লাহর, ফেরেশ্‌তামন্ডলীর ও সকল মানুষের অভিসম্পাত। আর আল্লাহ তাআলা তার ফরয, নফল কোন ইবাদতই কবূল করবেন না। [১১১; মুসলিম ১৫/৮৫, হাদীস ১৩৭০, আহমাদ ১৩৭, ৬১৫] (আঃপ্রঃ- ৬৭৯০, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৬৮০২)

৭৩০১

আয়েশা (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ

নাবী (সাঃআঃ) নিজে একটি কাজ করিলেন এবং তাতে তিনি অবকাশ দিলেন। তবে কিছু লোক এর থেকে নিবৃত থাকল। নাবী (সাঃআঃ) – এর কাছে এ খবর পৌছল। তিনি আল্লাহর প্রশংসা করিলেন ও ছানা পাঠ করিলেন, তারপর বললেনঃ লোকদের কী হল যে, তারা এমন কাজ থেকে নিবৃত থাকে যা আমি নিজে করি। আল্লাহর শপথ! আমি আল্লাহ সস্পর্কে তাদের চেয়ে বেশি জানি এবং আমি তাদের চেয়ে আল্লাহকে অনেক বেশি ভয় করি।(আঃপ্রঃ- ৬৭৯১, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৬৮০৩)

৭৩০২

ইবনু আবু মুলাইকাহ (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, দুজন অতি ভাল লোক আবু বকর (রাদি.) ও উমর (রাদি.) ধ্বংসের কাছাকাছি পৌছে গিয়েছিলেন। বনী তামীমের প্রতিনিধি দল যখন নাবী (সাঃআঃ) কাছে আসল, তখন তাদের একজন [উমর (রাদি.)] আকরা ইবনু হাবিস হানযালী নামে বনী মুজাশে গোত্রের ভ্রাতা এক লোকর দিকে ইঙ্গিত করিলেন, অন্যজন [আবু বকর (রাদি.)] আরেক জনের দিকে ইঙ্গিত করিলেন। এতে আবু বকর (রাদি.) উমর (রাদি.) – কে বলিলেন, আপনার ইচ্ছা হল আমার বিরোধিতা করা। উমর (রাদি.) বলিলেন, আমি আপনার বিরোধিতার ইচ্ছা করিনি। নাবী (সাঃআঃ) – এর সামনে তাঁদের দুজনেরই আওয়াজ উচ্চ হয়ে যায়। ফলে অবতীর্ণ হয়ঃ “হে মুমিনগগ! তোমরা নাবীর গলার আওয়াজের উপর নিজেদের গলার আওয়াজ উচ্চ করিবে না…… (সুরা আল-হুজুরাত ৪৯/২)। ইবনু আবু মুলাইকাহ বলেন, ইবনু যুবায়র (রাদি.) বর্ণনা করেন যে, এরপরে উমর (রাদি.) যখন নাবী (সাঃআঃ) – এর সঙ্গে কোন কথা বলিতেন, তখন গোপন বিষয়ের আলাপকারীর মত চুপে চুপে বলিতেন, এমন কি তা শোনা যেত না, যতক্ষন নাবী (সাঃআঃ) তাকে আবার জিজ্ঞেস না করিতেন। এ হাদীসের রাবী ইবনু যুবায়র তার পিতা অর্থাৎ নানা আবু বকর (রাদি.) থেকে উল্লেখ করেননি।(আঃপ্রঃ- ৬৭৯২, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৬৮০৪)

৭৩০৩

উম্মুল মুমিনীন আয়েশা (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ

রাসুলুল্লাহ (সাঃআঃ) তাহাঁর অসুখের সময় বললেনঃ তোমরা আবু বক্‌রকে বল, লোকদের নিয়ে তিনি যেন সালাত আদায় করে নেন। আয়েশা (রাদি.) বলেন, আমি বললাম যে, আবু বকর (রাদি.) যদি আপনার জায়গায় দাঁড়ান তাহলে কান্নার কারনে মানুষকে তার আওয়াজ শোনাতে পারবেন না। কাজেই আপনি উমর (রাদি.) – কে আদেশ করুন, তিনি যেন লোকদের নিয়ে সালাত আদায় করেন। তিনি আবার বলিলেন, তোমরা আবু বক্‌রকে বল, যেন তিনি লোকদের নিয়ে সালাত আদায় করেন। আইশাহ (রাদি.) বলেন, আমি হাফসাহ (রাদি.) – কে বললাম, তুমি বল যে, আবু বক্‌র আপনার জায়গায় দাড়ালে কান্নার কারনে লোকদেরকে তার আওয়ায শোনাতে পারবেন না। কাজেই আপনি উমর (রাদি.) – কে আদেশ করুন। তিনি যেন লোকদের নিয়ে সালাত আদায় করেন। হাফসাহ (রাদি.) তাই করিলেন। তখন রাসুলুল্লাহ (সাঃআঃ) বললেনঃ তোমরা তো ইউসুফ (আঃ) – এর মহিলাদের মত (যারা তাঁকে বিভ্রান্ত করিতে চেয়েছিল)। আবু বকরকে বল, তিনি যেন লোকদের নিয়ে সালাত আদায় করেন। হাফসাহ (রাদি.) আইশাহ (রাদি.) – কে বলিলেন, আমি আপনার নিকট থেকে কখনই কল্যাণ পাইনি। (আঃপ্রঃ- ৬৭৯৩, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৬৮০৫)

৭৩০৪

সাহল ইবনু সাদ সাঈদী (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, উওয়ায়মির (রাদি.) আসিম ইবনু আদীর কাছে এসে বলিল, আপনার কী অভিমত, যদি কেউ তার স্ত্রীর সঙ্গে অন্য কাউকে পায় এবং তাকে হত্যা করে ফেলে, তাহলে এজন্য আপনারা কি তাকে হত্যা করবেন? হে আসিম! আপনি আমার জন্য এ বিষয়টি রাসুলুল্লাহ (সাঃআঃ) – কে জিজ্ঞাসা করুন। তিনি জিজ্ঞেস করলে নাবী (সাঃআঃ) এমন বিষয় জিজ্ঞেস করাকে অপছন্দ করিলেন এবং উত্তর দিতে অস্বীকার করিলেন। আসিম (রাদি.) ফিরে এসে তাকে জানাল যে, নাবী (সাঃআঃ) বিষয়টিকে অপছন্দ মনে করিয়াছেন। উওয়াইমির (রাদি.) বলিলেন, আল্লাহর কসম! অবশ্য অবশ্যই আমি নিজেই নাবী (সাঃআঃ) – এর নিকট যাব। তারপর তিনি আসলেন। আসিম (রাদি.) চলে যাওয়ার পরেই আল্লাহ কুরআন অবতীর্ণ করিয়াছেন। নাবী (সাঃআঃ) তাকে বললেনঃ তোমাদের ব্যাপারে আল্লাহ তাআলা কুরআনের আয়াত নাযিল করিয়াছেন। তিনি তাদের দু”জনকেই (সে ও তার স্ত্রী) ডাকলেন। তারা উপস্থিত হল এবং লিআন করিল। তারপর উওয়াইমির (রাদি.) বলিল, হে আল্লাহর রাসুল! যদি আমি তাকে আটকে রাখি তাহলে তো আমি তার উপর মিথ্যারোপ করেছি, এ বলে তিনি তার সঙ্গে বিবাহ ছিন্ন করিলেন। অবশ্য নাবী (সাঃআঃ) তাকে বিবাহ ছিন্ন করিতে বলেননি। পরে লিআনকারীদের মাঝে এ প্রথাই চালু হয়ে গেল। নাবী (মহিলাটি সস্পর্কে) বললেনঃ একে লক্ষ্য রেখ, যদি সে খাটো ওয়াহারার (এক জাতীয় পোকা) মত লালচে সন্তান প্রসব করে, তাহলে আমি মনে করব উওয়াইমির মিথ্যাই বলেছে। আর যদি সে কাল চোখওয়ালা ও বড় নিতম্বধারী সন্তান প্রসব করে, তাহলে মনে করব উওয়াইমির তার ব্যাপারে সত্যই বলেছে। পরে সে অপকর্মের ফল নিয়ে হাজির হয়।(আঃপ্রঃ- ৬৭৯৪, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৬৮০৬)

৭৩০৫

ইবনু শিহাব (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, মালিক ইবনু আওস নাযরী (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) আমাকে এ হাদীসটি বর্ননা করিয়াছেন। অবশ্য মুহাম্মাদ ইবনু যুবায়র ইবনু মুতঈম এ সম্পর্কে কিছু কথা বলেছিলেন। পরে আমি মালিকের নিকট যাই এবং তাকে এ সম্পর্কে জিজ্ঞেস করি। তখন তিনি বলেন, উমর (রাদি.) – এর সঙ্গে দেখা করার জন্য রওনা হয়ে তার কাছে হাজির হলাম। এমন সময় তার দ্বাররক্ষক ইয়ারফা এসে বলিল, উসমান, আবদুর রহমান, যুবায়র এবং সাদ (রাদি.) আসতে চাচ্ছেন। আপনার অনুমতি আছে কি? তিনি বলিলেন, হ্যাঁ। তারপর তাঁরা প্রবেশ করিলেন এবং সালাম দিয়ে আসনে বসলেন। দ্বাররক্ষক (আবার) বলিল, আলী এবং আব্বাসের ব্যাপারে আপনার অনুমতি আছে কি? তিনি তাদের দুজনকে অনুমতি দিলেন। আব্বাস (রাদি.) এসে বললেনঃ হে আমীরুল মুমিনীন! আমার ও সীমাংঘনকারীর মাঝে ফায়সালা করে দিন। এবং তারা পরস্পরে গালমন্দ করিলেন। তখন দলটি বলিলেন, উসমান ও তাহাঁর সঙ্গীরা, হে আমীরুল মুমিনীন! এ দুজনের মাঝে ফায়সালা করে দিয়ে একজনকে অন্যজন হইতে শাস্তি দিন। উমর (রাদি.) বলিলেন, আপনারা একটু ধৈর্য ধারন করুন। আমি আপনাদেরকে সেই আল্লাহর কসম দিয়ে জিজ্ঞেস করছি যার হুকুমে আসমান ও যমীন নিজ স্থানে বিদ্যমান, আপনারা কি এ কথা জানেন যে রাসুলুল্লাহ (সাঃআঃ) বলেছিলেনঃ আমাদের সস্পদ ওয়ারিশদের মাঝে বন্টিত হয় না, আমরা যা রেখে যাই তা সদকা হিসাবে গণ্য হয়? এ কথা দ্বারা নাবী (সাঃআঃ) নিজেকেই বুঝিয়েছিলেন। দলের সবাই বলিলেন, হ্যাঁ তিনি এ কথা বলেছিলেন। তারপর উমর (রাদি.) আলী ও আব্বাস (রাদি.) – এর দিকে ফিরে বলিলেন, আপনাদের দুজনকে আল্লাহর কসম দিয়ে জিজ্ঞেস করছি, আপনারা কি জানেন যে, রাসুলুল্লাহ (সাঃআঃ) এ কথা বলেছিলেন? তাঁরা দুজনেই আল্লাহর কসম দিয়ে বলিলেন, হ্যাঁ। উমর (রাদি.) বলিলেন, আমি আপনাদেরকে জানিয়ে দিচ্ছি যে, আল্লাহ তাআলা এ সম্পদের একাংশ তাহাঁর রাসুল (সাঃআঃ)র নির্ধারিত করে দিয়েছিলেন, অপর কারো জন্য দেওয়া হয়নি। এ ব্যাপারে আল্লাহ তাআলা বলেনঃ আল্লাহ ইয়াহুদীদের নিকট হইতে তার রাসুলকে যে ফায় দিয়েছেন তার জন্য তোমরা ঘোড়া কিংবা উটে চড়ে যুদ্ধ করনি…..(৫৯ : ৬)। কাজেই এ সম্পদ একমাত্র রাসুলুল্লাহ (সাঃআঃ)র জন্যই নির্দিষ্ট ছিল। তারপর আল্লাহর কসম! তিনি আপনাদেরকে বাদ দিয়ে এককভাবে নিজের জন্য তা সঞ্চিত করে রাখেননি, কিংবা এককভাবে আপনাদেরকেও দিয়ে দেননি। বরং তিনি আপনাদের সকলকেই তা থেকে দিয়েছেন এবং সকলের মাঝে বণ্টন করে দিয়েছেন। অবশেষে তা থেকে এ পরিমান সস্পদ অবশিষ্ট রয়েছে। নাবী (সাঃআঃ) এ সম্পদ থেকে তার পরিবারের জন্য তাদের বছরের খরচ দিতেন। এরপর যা অবশিষ্ট থাকত তা আল্লাহর মাল যে পথে ব্যয় হয় সে পথে খরচের জন্য রেখে দিতেন। নাবী (সাঃআঃ) তাহাঁর জীবিত অবস্থায় এমন করিতেন। আল্লাহর কসম দিয়ে জিজ্ঞেস করছি! আপনারা কি এ ব্যাপারে জ্ঞাত আছেন? সকলেই বলিলেন, হ্যাঁ। তারপর আলী (রাদি.) ও আব্বাস (রাদি.)-কে লক্ষ্য করে বলিলেন, আল্লাহর কসম দিয়ে আপনাদের দুজনকে জিজ্ঞেস করছি! আপনারা কি এ সম্পর্কে জ্ঞাত আছেন? তারা দুজনেই বলিলেন, হ্যাঁ। এরপর আল্লাহ তাআলা তাহাঁর নাবী (সাঃআঃ) – কে মৃত্যু দিলেন। তখন আবু বাকর (রাদি.) বলিলেন, আমি রাসুলুল্লাহ (সাঃআঃ) এর স্থলাভিষিক্ত। কাজেই তিনি সে সম্পদ অধিগ্রহণ করিলেন এবং রাসুলুল্লাহ (সাঃআঃ) যে খাতে এ সম্পদ খরচ করিতেন তিনিও ঠিক সেভাবেই ব্যয় করিতেন। আপনারা তখন ছিলেন। তারপর আলী (রাদি.) ও আব্বাস (রাদি.) – এর দিকে ফিরে বলিলেন, আপনারা দুজন তখনও মনে করিতেন যে আবু বকর (রাদি.) এ ব্যাপারে এরূপ ছিলেন। আল্লাহ জানেন তিনি এ ব্যাপারে সত্যবাদী, ন্যায়পরায়ণ, সত্যনিষ্ঠ ও হক্কের অনুসারী ছিলেন। তারপর আল্লাহ তাআলা আবু বকর (রাদি.) – কেও মৃত্যু দিলেন। তখন আমি বললাম, এখন আমি আবু বাকর ও রাসুলুল্লাহ (সাঃআঃ) – এর স্থলাভিষিক্ত। সুতরাং দুবছর আমি তা আমার তত্ত্বাবধানে রাখলাম এবং আবু বকর (রাদি.) ও রাসুলুল্লাহ (সাঃআঃ) তা যে খাতে খরচ করিতেন, আমিও তেমন করিতে লাগলাম। তারপর আপনারা দুজন আমার কাছে এলেন। আপনাদের দুজনের একই কথা ছিল, দাবিও ছিল একই। আপনি এসেছিলেন নিজের ভাতিজার থেকে নিজের অংশ আদায় করে নেওয়ার দাবি নিয়ে, আর ইনি (আলী) এসেছিলেন তাহাঁর স্ত্রীর পৈতৃক সুত্রে প্রাপ্ত অংশ আদায় করে নেওয়ার দাবি নিয়ে। আমি বললাম যদি আপনারা চান তাহলে আমি আপনাদেরকে তা দিয়ে দিতে পারি, তরে এ শর্তে যে, আপনারা আল্লাহর নামে এই ওয়াদা ও প্রতিশ্রুতিতে আবদ্ধ হইবেন যে, এ সস্পদ রাসুলুল্লাহ (সাঃআঃ) ও আবু বকর (রাদি.) যে ভাবে খরচ করিতেন এবং আমি এর দায়িত্ব নেয়ার পর যেভাবে তা খরচ করেছি, আপনারাও তেমনিভাবে ব্যায় করবেন। তখন আপনারা দুজনে বলেছিলেন, এ শর্তেই আপনি তা আমাদের হাতে দিয়ে দিন। ফলে আমি তা আপনাদের কাছে দিয়ে দিয়েছিলাম। আল্লাহর কসম দিয়ে আপনাদেরকে জিজ্ঞেস করছি! আমি কি সেই শর্তাধীনে এদের কাছে সে সম্পদ দিয়ে দেইনি? সকলেই বলিল, হ্যাঁ। তখন তিনি আলী (রাদি.) ও আব্বাস (রাদি.) – এর দিকে তাকিয়ে বলিলেন, আল্লাহর কসম দিয়ে আপনাদের দুজনকে জিজ্ঞেস করছি! আমি কি ঐ শর্তাধীনে আপনাদেরকে সে সস্পদ দিয়ে দেইনি? তারা দুজনে বললেনঃ হ্যাঁ। তখন তিনি বলিলেন, আপনারা কি আমার নিকট হইতে এর ভিন্ন কোন ফয়সালা পেতে চান? সে সঁত্তার কসম করে বলছি, যার হুকুমে আকাশ ও যমীন নিজ স্থানে বিরাজমান, ক্বিয়ামতের পূর্বে আমি এ বিষয়ে নতুন কোন ফয়সালা করব না। যদি আপনারা এর তত্ত্বাবধানে অক্ষম হন, তাহলে তা আমার নিকট সোর্পদ করুন। আপনাদের দুজনের বদলে আমি একাই এর তত্ত্বাবধানের জন্য যথেষ্ট।(আঃপ্রঃ- ৬৭৯৫, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৬৮০৭)

৯৬/৬. অধ্যায়ঃ বিদআতীকে আশ্রয়দানকারীর পাপ। আলী (রাদি.) এ হাদীসটি নাবী (সাঃআঃ) থেকে বর্ণনা করিয়াছেন

আলী (রাদি.) নাবী (সাঃআঃ) থেকে এ মর্মে একটি হাদীস বর্ণনা করিয়াছেন

৭৩০৬

আসিম (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, আমি আনাস (রাদি.)-কে জিজ্ঞেস করলাম যে, নাবী সাঃআঃ কি মাদ্বীনাহ্কে হারাম (পবিত্র এলাকা) হিসাবে ঘোষণা করেছিলেন। উত্তরে তিনি বলিলেন, হ্যাঁ, অমুক জায়গা থেকে অমুক জায়গা পর্যন্ত। এখানকার কোন গাছ কাটা যাবে না, আর যে ব্যক্তি এখানে বিদ্আত করিবে তার উপর আল্লাহ, ফেরেশ্তা ও সকল মানুষের অভিশাপ। আসিম বলেন, আমাকে মূসা ইবনু আনাস বলেছেন, বর্ণনাকারী أَوْ آوَى مُحْدِثًا কিংবা বিদ্আতীকে আশ্রয় দেয় বলেছেন। [১৮৬৭] (আঃপ্রঃ- ৬৭৯৬, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৬৮০৮)

৯৬/৭. অধ্যায়ঃ মনগড়া মত ও ভিত্তিহীন কিয়াস নিন্দনীয়।

আর আল্লাহর বাণীঃ যে বিষয়ে তোমার কোন জ্ঞান নেই, তার অনুসরণ করো না….। (সুরা বনী ইসরাঈল ১৭/৩৬)

৭৩০৭

উরওয়াহ (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, আবদুল্লাহ ইবনু আমর (রাদি.) আমাদের এ দিক দিয়ে হাজ্জে যাচ্ছিলেন। আমি শুনতে পেলাম, তিনি বলেছেন যে, আমি নাবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সালাম) – কে বলিতে শুনিয়াছি, আল্লাহ তোমাদেরকে যে ইল্‌ম দান করিয়াছেন, তা হঠাৎ ছিনিয়ে নেবেন না বরং উলামাগণকে তাদের ইল্‌মসহ ক্রমশ তুলে নেয়ার মাধ্যমে তা ছিনিয়ে নেবেন। তখন কেবল মূর্খ লোকেরা অবশিষ্ট থাকবে। তাদের কাছে ফাতওয়া চাওয়া হইবে। তারা মনগড়া ফাতওয়া দেবে। ফলে নিজেরাও পথভ্রষ্ট হইবে, অন্যদেরকেও পথভ্রষ্ট করিবে। উরওয়াহ (রাদি.) বলেন,আমি এ হাদীসটি নাবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সালাম) – এর স্ত্রী আয়েশা (রাদি.)-কে বললাম। তারপর আবদুল্লাহ ইবনু আমর (রাদি.) আবার হজ্জ করিতে এলেন। তখন আয়েশা (রাদি.) আমাকে বলিলেন, হে ভাগ্নে! তুমি আবদুল্লাহর কাছে যাও এবং তার থেকে যে হাদীসটি তুমি আমাকে বর্ণনা করেছিলেন, তাহাঁর নিকট থেকে যাচাই করে আস। আমি তাহাঁর নিকট গেলাম এবং জিজ্ঞেস করলাম। তিনি আমাকে ঠিক সে রকমই বর্ণনা করিলেন, যেরকম আগে বর্ণনা করেছিলেন। আমি আয়েশা (রাদি.) – র কাছে ফিরে এসে তাকে জানালাম। তিনি আশ্চর্য হয়ে গেলেন এবং বলিলেন, আল্লাহর কসম! আবদুল্লাহ ইবনু আমর (রাদি.) মনে রেখেছে। (আঃপ্রঃ- ৬৭৯৭, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৬৮০৯)

৭৩০৮

আমাস (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) হইতে বর্ণিতঃ

আমি আবু ওযায়িলকে জিজ্ঞেস করলাম, আপনি কি সিফ্‌ফীনের যুদ্ধে যোগদান করেছিলেন? তিনি বলিলেন, হ্যাঁ। মূসা ইবনু ইসমাঈল… সাহল ইবনু হুনায়ফ (রাদি.) বলেন, হে লোকেরা! দ্বীনের ব্যাপারে তোমাদের নিজস্ব মতামতকে গ্রহণযোগ্য মনে করো না। কেননা আবু জান্দাল দিবসে (হুদাইবিয়াহর দিন) আমি ভেবেছিলাম, যদি রাসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সালাম) – এর সিদ্ধান্তকে প্রত্যাখ্যান করিতে পারতাম, তাহলে অবশ্যই আমি তা প্রত্যাখ্যান করতাম। যে কোন ভয়াবহ অবস্থার জন্য আমরা যখনই তলোয়ার কাঁধে নিয়েছি, তখনই তলোয়ার আমাদের কাঙ্ক্ষিত লক্ষ্যের পথ সহজ করে দিয়েছ। বর্তমান বিষয়টি আলাদ। রাবী বলেন, আবু ওয়ায়িল (রাদি.) বলেছেন, আমি সিফ্‌ফীনের যুদ্ধে শরীক ছিলাম; কতই না মন্দ ছিল সিফ্‌ফীনের লড়াই!(আঃপ্রঃ- ৬৭৯৮, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৬৮১০)

৯৬/৮. অধ্যায়ঃ ওয়াহী নাযিল হয়নি এমন কোন বিষয়ে নাবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সালাম) – কে জিজ্ঞেস করলে তিনি বলিতেন: আমি জানি না কিংবা সে সর্ম্পকে ওয়াহী নাযিল না হওয়া পর্যন্ত কোন জবাব দিতেন না এবং তিনি ব্যক্তিগত মতের উপর ভিত্তি করে কিংবা অনুমান করে কিছু বলিতেন না।

কেননা, আল্লাহ তাআলার বাণীঃ আল্লাহ আপনাকে যা কিছু জানিয়ে দিয়েছেন তদদ্বারা (ফয়সালা ‎করুন) । (সুরা আন-নিসা ৪/১০৫)‎

ইবন মাসউদ (রাদি.) বলেন, নাবী (সাঃআঃ)-কে রূহ সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করা হলে ওহী অবতীর্ণ হওয়া পর্যন্ত তিনি চুপ ছিলেন।

৭৩০৯

জাবির ইবনু আবদুল্লাহ (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, আমি অসুস্থ ছিলাম। নাবী করীম (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সালাম) ও আবু বকর (রাদি.) আমার নিকট আসলেন। তাঁরা দুজনেই হেঁটে এসেছিলেন। তাঁরা যখন আমার কাছে আসলেন, তখন আমি বেহুঁশ ছিলাম। নাবী করীম (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সালাম) উযূ করিলেন এবং উযূর পানি আমার উপরে ঢেলে দিলেন। তাতে আমি জ্ঞান ফিরে পেলাম। তখন আমি বললাম, হে আল্লাহর রাসুল! বর্ণনাকারী সুফিয়ান কোন কোন সময় বলিতেন হে আল্লাহর রাসুল-আমার সম্পদের বিষয়ে কী সিদ্ধান্ত নেব? আমার সম্পদগুলো কী করব? (বর্ণনাকারী সাহাবী বলেন) তিনি আমাকে কোন জবাব দিলেন না, অবশেষে মীরাসের আয়াত অবতীর্ণ হল।(আঃপ্রঃ- ৬৭৯৯, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৬৮১১)

৯৬/৯. অধ্যায়ঃ নাবী করীম (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সালাম) উম্মাতের পুরুষ ও নারীদেরকে সে বিষয়েরই শিক্ষা দিতেন, যা আল্লাহ তাঁকে শিখিয়ে দিতেন, নিজস্ব মতামত বা দৃষ্টান্তের উপর ভিত্তি করে নয়।

৭৩১০

আবু সাঈদ (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন , এক মহিলা নাবী করীম (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সালাম) – এর কাছে এসে বলিল, হে আল্লাহর রাসুল! আপনার হাদীস তো কেবল পুরুষেরা শুনতে পায়। সুতরাং আপনার পক্ষ থেকে আমাদের জন্য একটি দিন নির্দিষ্ট করে দিন, যে দিন আমরা আপনার কাছে আসব, আল্লাহ আপনাকে যা কিছু শিখিয়েছেন তা থেকে আপনি আমাদের শেখাবেন। তিনি বললেনঃ তোমরা অমুক অমুক দিন অমুক অমুক জায়গায় একত্রিত হইবে। সে মোতাবেক তারা একত্রিত হলেন এবং নাবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সালাম) তাদের কাছে এলেন এবং আল্লাহ তাঁকে যা কিছু শিখিয়েছেন তা থেকে তাদের শিক্ষা দিলেন এবং বললেনঃ তোমাদের কেউ যদি সন্তানদের থেকে তিনটি সন্তান আগে পাঠিয়ে দেয় (মৃত্যুবরণ করে) তাহলে এ সন্তানরা তার জন্য জাহান্নাম থেকে পর্দা যাবে। তাদের মাঝ থেকে একজন মহিলা জিজ্ঞেস করিল, হে আল্লাহর রাসুল! যদি দুজন হয়? বর্ণনাকারী বলেন, মহিলা কথাটি দুদুবার জিজ্ঞেস করিলেন। তখন নাবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সালাম) বললেনঃ দুজন হলেও, দুজন হলেও, দুজন হলেও। [মুসলিম ৪৫/৪৭, হাদীস ২৬৩৩, আহমাদ ১১২৯৬] (আঃপ্রঃ- ৬৮০০, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৬৮১২)

৯৬/১০. অধ্যায়ঃ নাবী করীম (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সালাম) – এর বাণীঃ আমার উম্মাতের মধ্যে এক দল সর্বদাই হকের উপর বিজয়ী থাকবেন। আর তাঁরা হলেন (দ্বীনী) ইলমের অধিকারী।

৭৩১১

মুগীরাহ ইবনু শুবাহ (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, নাবী করীম (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সালাম) বলেছেনঃ কেয়ামত আসা পর্যন্ত আমার উম্মাতের এক দল সর্বদাই বিজয়ী থাকবে। আর তাঁরা হলেন বিজয়ী। (আঃপ্রঃ- ৬৮০১, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৬৮১৩)

৭৩১২

মুআবিয়া ইবনু আবু সুফয়ান (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, আমি নাবী করীম (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সালাম) – কে বলিতে শুনিয়াছি যে, আল্লাহ যার কল্যাণ চান, তাকে দ্বীনের জ্ঞান দান করেন। আমি (ইল্‌মের) বন্টনকারী মাত্র; আল্লাহ তা দান করে থাকেন। এ উম্মাতের কার্যকলাপ কেয়ামত অবধি কিংবা বলেছিলেন, মহান আল্লাহ তাআলার হুকুম আসা পর্যন্ত (সত্যের উপর) সুপ্রতিষ্ঠিত থাকবে। (আঃপ্রঃ- ৬৮০২, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৬৮১৪)

৯৬/১১. অধ্যায়ঃ আল্লাহর বাণীঃ অথবা তোমাদেরকে দলে দলে ভাগ করিতে … । (সুরা আনআম ৬/৬৫)

৭৩১৩

জাবির ইবনু আবদুল্লাহ (রাঃ হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, যখন রাসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সালাম) – এর উপর এ আয়াতঃ বল, তিনি সক্ষম তোমাদের উর্ধ্বদেশ থেকে শাস্তি প্রেরণ করিতে… অবর্তীণ হল, তখন তিনি বললেনঃ (হে আল্লাহ!) আমি আপনার কাছে (এমন আযাব থেকে) আশ্রয় প্রার্থনা করি (তারপর যখন অবতীর্ণ হল) অথবা তোমাদের পায়ের নিচে থেকে। তখন তিনি বললেনঃ (হে আল্লাহ!) আমি আপনার নিকট (এমন আযাব থেকে) আশ্রয় প্রার্থনা করি। এরপর যখন নাযিল হলঃ অথবা তোমাদেরকে দলে দলে ভাগ করিতে এবং একদলকে অপর দলের সংঘর্ষের স্বাদ আস্বাদন করাতে তখন তিনি বললেনঃ এ দুটি অপেক্ষাকৃত নরম অথবা বলেছেনঃ অপেক্ষাকৃত সহজ।(আঃপ্রঃ- ৬৮০৩, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৬৮১৫

৯৬/১২. অধ্যায়ঃ কোন বিষয়ে প্রশ্নকারীকে স্পষ্টভাবে বুঝিয়ে দেয়ার উদ্দেশে সুস্পষ্ট হুকুম বর্ণিত আছে এরূপ কোন বিষয়ের সঙ্গে আরেকটি বিষয়ের নিয়ম মোতাবেক তুলনা করা।

৭৩১৪

আবু হুরাইরা (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ

এক বেদুঈন রাসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সালাম) – এর নিকট এসে বলিল, আমার স্ত্রী একটি কালো সন্তান জন্ম দিয়েছে। আর আমি তাকে (আমার সন্তান হিসাবে) অস্বীকার করছি। রাসুলুল্লাহ (সাঃআঃ) বললেনঃ তোমার কি উট আছে? সে বলিল, হ্যাঁ আছে। তিনি জিজ্ঞেস করিলেন, সেগুলোর কী রঙ? সে বলিল, লাল। তিনি জিজ্ঞেস করিলেন, সেগুলোর মাঝে সাদা কালো মিশ্রিত রঙের কোন উট আছে কি? সে বলিল, হ্যাঁ, সাদা কালো মেশানো রঙের অনেকগুলো আছে। তিনি জিজ্ঞেস করিলেন এ রং কিভাবে এল বলে তুমি মনে কর? সে বলিল, হে আল্লাহর রাসুল! বংশ সূত্রের প্রভাবে এমন হয়েছে। তিনি বললেনঃ সম্ভবত তোমার সন্তানও বংশ সূত্রের প্রভাবে (পূর্বপুরুষের কেউ কালো ছিল বলে) এমন হয়েছে। এবং তিনি এ সন্তানটিকে অস্বীকার করার অনুমতি লোকটিকে দিলেন না। (আঃপ্রঃ- ৬৮০৪, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৬৮১৬)

৭৩১৫

ইবনু আব্বাস (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ

এক মহিলা নাবী করীম (সাঃআঃ) – এর নিকট এসে বলিল, আমার মা হজ্জ করার মানৎ করেছিলেন। এরপর তিনি হজ্জ করার আগেই মারা গেছেন। এখন আমি কি তার পক্ষ থেকে হজ্জ করব? উত্তরে তিনি বলিলেন, হ্যাঁ, তার পক্ষ থেকে হজ্জ কর। মনে কর যদি তার উপর ঋণ থাকত তাহলে কি তুমি তা আদায় করিতে? সে বলিল, অবশ্যই। তিনি বললেনঃ কাজেই তার উপর যে মানত আছে তা তুমি আদায় কর। আল্লাহ অধিক হক্‌দার, যে তাহাঁর জন্য কৃত মানত মানুষেরা পূর্ণ করিবে।(আঃপ্রঃ- ৬৮০৫, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৬৮১৭)

৯৬/১৩. অধ্যায়ঃ আল্লাহ যা নাযিল করিয়াছেন, তার ভিত্তিতে ফায়সালার মধ্যে ইজ্‌তিহাদ করা।

কেননা, আল্লাহর কথাঃ আল্লাহর নাযিল করিয়াছেন সেই অনুসারে যারা বিধান দেয় না তারাই ‎যালিম…। (সুরা আল-মায়িদাহ ৫/৪৫)‎

যারা হিক্‌মাতের সঙ্গে বিচার করে ও হিক্‌মাতের শিক্ষা দেন এবং মনগড়া কোন ফায়সালা করেন না, (এমন হিক্‌মাতওয়ালা লোকের) নাবী (সাঃআঃ) প্রশংসা করিয়াছেন। খলীফাদের সঙ্গে পরামর্শ করা এবং বিচারকদের আলেমদের নিকট জিজ্ঞেস করা।

৭৩১৬

আবদুল্লাহ ইবনু মাসউদ (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, নাবী (সাঃআঃ) বলেছেনঃ দুরকম লোক ব্যতীত কারো উপর হিংসা করা যাবে না। (এক) যাকে আল্লাহ সম্পদ দিয়েছেন এবং হকপথে খরচ করার ক্ষমতা দান করিয়াছেন। (দুই) যাকে আল্লাহ হিক্‌মাত (দ্বীনের বিষয়ে তীক্ষ্ন বুদ্ধি) দান করিয়াছেন, আর সে এর আলোকে বিচার করে এবং তা অন্যকে শিখায়। (আঃপ্রঃ- ৬৮০৬, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৬৮১৮)

৭৩১৭

মুগীরাহ ইবনু শুবাহ (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, উমার (রাদি.) মহিলাদের গর্ভপাত সংক্রান্ত বিষয়ে জিজ্ঞেস করিলেন, অর্থাৎ তার পেটে আঘাত করা হয়, যার ফলে সন্তানের গর্ভপাত ঘটে। তিনি জিজ্ঞেস করিলেন, তোমাদের মধ্যে কে নাবী সাঃআঃ থেকে এ সম্পর্কে কিছু শুনেছ? আমি বললাম, আমি শুনিয়াছি। তিনি জিজ্ঞেস করিলেন, কী শুনেছ? আমি বললাম, নাবী সাঃআঃ-কে এ সম্পর্কে আমি বলিতে শুনিয়াছি যে, এ কারণে গুর্রা অর্থাৎ একটি দাস কিংবা দাসী দান করিতে হইবে। এ শুনে তিনি বলিলেন, তুমি যে হাদীস বর্ণনা করেছ এর প্রমাণ হাজির না করা পর্যন্ত তুমি এখান থেকে যেও না। [৬৯০৫] (আঃপ্রঃ- ৬৮০৭ প্রথমাংশ, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৬৮১৯)

৭৩১৮

মুগীরাহ ইবনু শুবাহ (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ

তারপর আমি বের হলাম এবং মুহাম্মাদ ইবনু মাসলামাহ (রাদি.)-কে পেলাম। আমি তাকে নিয়ে হাজির হলাম, সে আমার পক্ষে সাক্ষ্য দিল, তিনিও নাবী সাঃআঃ-কে বলিতে শুনেছেন যে, এতে গুর্রা অর্থাৎ একটি দাস কিংবা দাসী দান করিতে হইবে। ইবনু আবু যিনাদ……মুগীরাহ (রাদি.) থেকে একরম একটি হাদীস বর্ণনা করিয়াছেন। [৬৯০৬] (আঃপ্রঃ- ৬৮০৭ শেষাংশ, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৬৮১৯)

৯৬/১৪. অধ্যায়ঃ নাবী (সাঃআঃ) – এর বাণীঃ অবশ্য অবশ্যই তোমরা তোমাদের আগের লোকদের নীতি-পদ্ধতির অনুকরণ করিতে থাকবে।

৭৩১৯

আবু হুরাইরা (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ

রাসুল (সাঃআঃ) বলেছেনঃ ক্বিয়ামত ক্বায়িম হইবে না যে পর্যন্ত না আমার উম্মত পূর্বযুগের লোকদের নীতি পদ্ধতিকে আচার-অভ্যাসকে বিঘতে বিঘতে, হাতে হাতে গ্রহণ না করিবে। বলা হল, হে আল্লাহর রাসুল! পারসিক ও রোমকদের মত কি? তিনি বললেনঃ এরা ছাড়া মানুষদের মধ্যে অন্য আর কারা?(আঃপ্রঃ- ৬৮০৮, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৬৮২০)

৭৩২০

আবু সাঈদ খুদরী (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ

রাসুল (সাঃআঃ) বলেছেনঃ অবশ্য অবশ্যই তোমরা তোমাদের আগের লোকদের নীতি-পদ্ধতিকে বিঘতে বিঘতে, হাতে হাতে অনুকরণ করিবে। এমনকি তারা যদি দবের গর্তে ঢুকে, তাহলে তোমরাও তাদের অনুকরণ করিবে। আমরা বললাম, হে আল্লাহর রাসুল! এরা কি ইয়াহূদী ও নাসারা? তিনি বললেনঃ আর কারা?[৩৪৫৬; মুসলিম ৪৭/৩, হাদীস ২৬৬৯, আহমাদ ১১৮০০] (আঃপ্রঃ- ৬৮০৯, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৬৮২১)

৯৬/১৫. অধ্যায়ঃ পথভ্রষ্টতার দিকে ডাকা অথবা কোন খারাপ পদ্ধতি প্রবর্তনের অপরাধ।

কারণ, আল্লাহর বাণীঃ এবং পাপের ভার তাদেরও যাদের তারা অজ্ঞতার কারণে পথভ্রষ্ট করেছে…। (সুরা নাহল ১৬/২৫)

৭৩২১

আবদুল্লাহ (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, নাবী সাঃআঃ বলেছেনঃ যে কোন ব্যক্তিকেই অন্যায়ভাবে কতল করা হয়, তার পাপের ভাগ আদাম (আঃ)-এর প্রথম (হত্যাকারী) পুত্রের উপরও পড়বে। রাবী সুফ্ইয়ান مِنْ دَمِهَا তার রক্তপাত করার অপরাধ তার উপরেও পড়বে উল্লেখ করিয়াছেন। কারণ সেই প্রথমে হত্যার রীতি চালু করে।[১] [৩৩৩৫] (আঃপ্রঃ- ৬৮১০, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৬৮২২)

৯৬/১৬. অধ্যায়ঃ নাবী (সাঃআঃ) যা বলেছেন এবং আলেমগণকে ঐক্যের ব্যাপারে যে উৎসাহ দান করিয়াছেন।

আর যেসব ব্যাপারে দুই হারাম মক্কা ও মদীনার আলেমগণ ঐক্যমত পোষণ করিয়াছেন। মদীনায় নাবী (সাঃআঃ) মুহাজির ও আনসারদের স্মৃতিচিহ্ন এবং নাবী (সাঃআঃ) এর সালাতের স্থান, মিনা ও কবর সম্পর্কে।

৭৩২২

জাবির ইবনু আবদুল্লাহ সালাম (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ

এক বেদুঈন রাসুলুল্লাহ (সাঃআঃ) – এর নিকট ইসলামের উপর বায়আত নিল। এরপর সে মদীনায় জ্বরে আক্রান্ত হল। বেদুঈন রাসুলুল্লাহ (সাঃআঃ) – এর নিকট উপস্থিত হয়ে বলিল, হে আল্লাহর রাসুল! আমার বায়আত ফিরিয়ে দিন। রাসুলুল্লাহ (সাঃআঃ) অস্বীকৃতি জানালেন। আবার সে এসে বলিল, আমার বায়আত ফিরিয়ে দিন। রাসুলুল্লাহ (সাঃআঃ) অস্বীকৃতি জানালেন। এরপর সে আবার এসে বলিল, আমার বায়আত ফিরিয়ে দিন। এবারও নাবী (সাঃআঃ) অস্বীকৃতি জানালেন, বেদুঈন বেরিয়ে গেল। তখন রাসুলুল্লাহ (সাঃআঃ) বললেনঃ মদীনা হাপরের মত। সে তার মধ্যেকার ময়লাকে দূর করে দেয় এবং ভালটুকু ধরে রাখে।(আঃপ্রঃ- ৬৮১১, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৬৮২৩)

৭৩২৩

ইবনু আব্বাস (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, আমি আবদুর রহমান ইবনু আওফ (রাদি.) – কে কুরআন পড়াতাম। উমর (রাদি.) যখন তার শেষ হজ্জ পালন করিতে আসলেন, তখন আবদুর রহমান (রাদি.) মিনায় আমাকে বলিলেন, তুমি আজ আমীরুল মুমিনীনের কাছে থাকলে দেখিতে পেতে যে, তাহাঁর কাছে এক লোক এসে বলিল, এক লোক বলেছে, যদি আমীরুল মুমিনীন মারা যেতেন, তাহলে আমরা অমুক লোকের হাতে বায়আত নিতে পারতাম। উমর (রাদি.) বলিলেন, আজ বিকেলে অবশ্য অবশ্যই দাঁড়িয়ে আমি তাদেরকে সতর্ক করব, যারা মুসলিমদের হক ছিনিয়ে নিতে চায়। আমি বললাম, আপনি এমনটি করবেন না। কেননা, এখন হাজ্জের মৌসুম। এখন সাধারণ মানুষের সমবেত হওয়ার সময়। তারা আপনার মাজলিসকে কাবু করে ফেলবে। আমার ভয় হচ্ছে যে, তারা আপনার বক্তব্য সঠিকভাবে বুঝতে পারবে না। হের-ফের করে চারদিকে রটিয়ে দেবে। বরং আপনি হিজরত ও সুন্নাতের আবাসভূমি মদীনায় পোঁছা পর্যন্ত অপেক্ষা করুন। তারা আপনার বক্তব্য হেফাজত করিবে এবং তার উপযুক্ত মর্যাদা দিবে। উমর (রাদি.) বলিলেন, আল্লাহর কসম! আমি মদীনায় পোঁছলে অবশ্য অবশ্যই সবচেয়ে আগে এটি করবো। ইবনু আব্বাস (রাদি.) বলিলেন, আমরা মদীনায় পোঁছলাম। তখন উমর (রাদি.) ভাষণ দিলেন, আল্লাহ মুহাম্মাদ (সাঃআঃ) – কে সত্য বাণী দিয়ে পাঠিয়েছেন, তাহাঁর উপর কিতাব নাযিল করিয়াছেন। তাতে রজম – এর আয়াতও রয়েছে।(আঃপ্রঃ- ৬৮১২, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৬৮২৪)

আল্লাহর রাসুল (সাঃআঃ) এর সাহাবীরা যে কত গভীর দূরদৃষ্টি সম্পন্ন মানুষ ছিলেন এ হাদীসে তারই কিছুটা প্রমাণ পাওয়া যায়। এ সব হাদীস থেকে শিক্ষা গ্রহণ করে আমাদেরকে অতি উচ্চ মানের চরিত্র গঠন ও দূরদর্শিতা অবলম্বন করিতে হইবে।

৭৩২৪

মুহাম্মাদ ইবনু সীরীন (রহঃ হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, আমরা আবু হুরাইরা (রাদি.) – এর নিকটে ছিলাম। তিনি লাল রঙের দুটো কাতান পরে ছিলেন। এরপর তিনি নাক পরিষ্কার করিলেন এবং বলিলেন, বাহঃ! বাহঃ! আবু হুরাইরা আজ কাতান দিয়ে নাক পরিষ্কার করছে। অথচ আমার অবস্থা এমনও ছিল যে, আমি রাসুলুল্লাহ (সাঃআঃ) – এর মিম্বর ও আয়েশা (রাদি.) – এর হুজরার মধ্যবর্তী স্থানে বেহুঁশ হয়ে পড়ে থাকতাম। আগমনকারী আসতো, তার নিজ পা আমার গর্দানে রাখতো, মনে হতো আমি যেন পাগল। অথচ আমার তিলমাত্র পাগলামি ছিল না। আমার ছিল একমাত্র ক্ষুধার যন্ত্রণা।(আঃপ্রঃ- ৬৮১৩, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৬৮২৫)

৭৩২৫

আবদুর রহমান ইবনু আবিস (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) হইতে বর্ণিতঃ

আবদুল্লাহ ইবনু আব্বাস (রাদি.) – কে জিজ্ঞেস করা হয়েছিল; আপনি কি নাবী (সাঃআঃ) – এর সঙ্গে কোন ঈদে উপস্থিত ছিলেন? তিনি বলিলেন, হ্যাঁ। যদি তাহাঁর কাছে আমার বিশেষ একটা মর্যাদা না থাকতো তবে এত অল্প বয়সে তাহাঁর কাছে যাওয়ার সুযোগ পেতাম না। নাবী (সাঃআঃ) কাসীর ইবনু সালাতের বাড়ির নিকটের পতাকার নিকট আসলেন। এরপর ঈদের সালাত পড়লেন। তারপর খুৎবা দিলেন। রাবী আযান এবং ইকামত-এর উল্লেখ করেননি। নাবী (সাঃআঃ) লোকদেরকে সদকা প্রদানের নির্দেশ দিলেন। নারীরা তাদের কান ও গলার (অলঙ্কারের) দিকে ইশারা করলে নাবী (সাঃআঃ) বিলাল (রাদি.) (তাদের কাছে যাবার) হুকুম করিলেন। বিলাল (রাদি.) (অলঙ্কারাদি নিয়ে) নাবী (সাঃআঃ)র কাছে ফিরে আসলেন।(আঃপ্রঃ- ৬৮১৪, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৬৮২৬)

৭৩২৬

ইবনু উমর (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ

নাবী (সাঃআঃ) কুবার মসজিদে কখনো পায়ে হেঁটে আবার কখনো, সওয়ার হয়েও আসতেন। (আঃপ্রঃ- ৬৮১৫, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৬৮২৭)

৭৩২৭

আয়েশা (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ

তিনি আবদুল্লাহ ইবনু যুবায়রকে বলিলেন, আমাকে আমার অন্যান্য সঙ্গিণীদের সঙ্গে দাফন করিবে। আমাকে নাবী (সাঃআঃ) – এর সঙ্গে ঘরে দাফন করিবে না। কেননা তাতে আমাকে অধিক দ্বীনদার পরহেজগার মনে করা হইবে, আমি তা পছন্দ করি না।(আঃপ্রঃ- ৬৮১৬ প্রথমাংশ, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৬৮২৮ প্রথমাংশ)

৭৩২৮

বর্ণনাকারী হিশাম তাহাঁর পিতা থেকে হইতে বর্ণিতঃ

উমর (রাদি.) আয়েশা (রাদি.) – এর নিকট লোক পাঠালেন, আমাকে আমার দু সঙ্গী [রাসুলুল্লাহ (সাঃআঃ) ও আবু বাকর (রাদি.) – এর সঙ্গে দাফন হবার অনুমতি দিন। আয়েশা (রাদি.) বলিলেন, হ্যাঁ। আল্লাহর কসম! বর্ণনাকারী আরো বলেন, আয়েশা (রাদি.) – এর কাছে সাহাবাদের কেউ যখনই এই অনুমতির জন্য কাউকে পাঠাতেন, তখনি তিনি বলিতেন, না। আল্লাহর কসম! আমি তাঁদের কাউকে কক্ষনো প্রাধান্য দেবো না। (আঃপ্রঃ- ৬৮১৬ শেষাংশ, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৬৮২৮ শেষাংশ)

৭৩২৯

আনাস ইবনু মালিক (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ

রাসুলুল্লাহ (সাঃআঃ) আসরের সালাত পড়তেন। তারপর আমরা আওয়ালী (মদীনার নিকট উঁচু টিলার স্থান) যেতাম। তখনও সূর্য উপরে থাকত। বর্ণনাকারী লায়স (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) ইউনুস (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) হইতে আরো বর্ণনা করিয়াছেন যে, আওয়ালীর দূরত্ব চার অথবা তিন মাইল।(আঃপ্রঃ- ৬৮১৭, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৬৮২৯)

৭৩৩০

সায়িব ইবনু ইয়াযীদ (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, নাবী (সাঃআঃ) – এর যুগের সা তোমাদের এ সময়ের এক মুদ ও এক মুদের এক-তৃতীয়াংশ মাপের ছিল। অবশ্য (পরবর্তী সময়ে) তা বৃদ্ধি পেয়েছে। (হাদীসটি) কাসিম ইবনু মালিক (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) যুআয়দ (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) থেকে শুনেছেন।(আঃপ্রঃ- ৬৮১৮, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৬৮৩০)

৭৩৩১

আনাস ইবনু মালিক (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ

রাসুলুল্লাহ (সাঃআঃ) এই বলে দুআ করেছেনঃ হে আল্লাহ! তাঁদের পরিমাপে বরকত দান করুন, তাদের সা–এ বরকত দিন এবং তাদের মুদে- অর্থাৎ মদীনাবাসীদের। (আঃপ্রঃ- ৬৮১৯, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৬৮৩১)

৭৩৩২

ইবনু উমর (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ

ইয়াহূদীগণ নাবী (সাঃআঃ) – এর নিকট এক ব্যভিচারী পুরুষ এবং এক ব্যভিচারিণী নারীকে নিয়ে আসলো। তখন তিনি তাঁদের দুজনকে শাস্তি দেয়ার নির্দেশ দিলে মসজিদে নাবাবীর নিকট জানাজা রাখার স্থানে তাদেরকে পাথর নিক্ষেপে মারা হয়। (আঃপ্রঃ- ৬৮২০, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৬৮৩২)

৭৩৩৩

আনাস ইবনু মালিক (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ

একদা উহুদ পাহাড় নজরে পড়লে রাসুলুল্লাহ (সাঃআঃ) বললেনঃ এ পর্বত আমাদেরকে ভালোবাসে আর আমরাও একে ভালোবাসি। হে আল্লাহ! ইবরাহীম (আঃ) মক্কাকে হারাম ঘোষণা করিয়াছেন, আর আমি এ মদীনার দুটি কঙ্করময় প্রান্তের মাঝের স্থানকে হারাম ঘোষণা করছি। উহুদ সংক্রান্ত নাবী (সাঃআঃ) থেকে এ হাদীস বর্ণনায় সাহল (রাবী) আনাস (রাদি.) – এর অনুসরণ করিয়াছেন।(আঃপ্রঃ- ৬৮২১, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৬৮৩৩)

৭৩৩৪

সাহল (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ

মসজিদে নববীর কিবলার দিকের দেয়াল ও মিম্বরের মাঝে মাত্র একটা বকরী যাতায়াতের জায়গা ছিল।(আঃপ্রঃ- ৬৮২২, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৬৮৩৪)

৭৩৩৫

আবু হুরাইরা (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ (সাঃআঃ) বলেছেনঃ আমার ঘর ও আমার মিম্বরের মাঝের জায়গা জান্নাতের বাগানগুলোর একটি বাগান। আর আমার মিম্বর আমার হাওযের উপর। (আঃপ্রঃ- ৬৮২৩, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৬৮৩৫)

৭৩৩৬

আবদুল্লাহ (রাঃ হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ (সাঃআঃ) ঘোড়দৌড়ের প্রতিযোগিতা করিয়েছিলেন। ক্ষিপ্র গতির জন্য প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত ঘোড়াগুলোর প্রতিযোগিতার স্থান ছিল হাফয়া হইতে সানীয়্যাতুল বিদ্যা পর্যন্ত। আর প্রশিক্ষণবিহীনগুলোর স্থান ছিল সানীয়্যাতুল বিদ্যা হইতে বনী যুরায়ক-এর মসজিদ পর্যন্ত। আবদুল্লাহও প্রতিযোগীদের মধ্যে ছিলেন।(আঃপ্রঃ- ৬৮২৪, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৬৮৩৬)

৭৩৩৭

ইবনু উমর (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, আমি উমর (রাদি.)-কে রাসুলুল্লাহ (সাঃআঃ) – এর মিম্বরে (খুৎবাহ দিতে) শুনিয়াছি।(আঃপ্রঃ- ৬৮২৫, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- র৩৭)

৭৩৩৮

সায়িব ইবনু ইয়াযীদ (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, আমি উসমান ইবনু আফ্‌ফান (রাদি.)-কে রাসুলুল্লাহ (সাঃআঃ) – এর মিম্বরে (খুতবাহ দিতে) শুনিয়াছি।(আঃপ্রঃ- ৬৮২৬, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৬৮৩৮)

৭৩৩৯

আয়েশা (রাদি.) হইতে হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, আমার এবং রাসুলুল্লাহ (সাঃআঃ) – এর গোসলের জন্য এ পাত্রটি রাখা হত। আমরা এক সাথে এর থেকে গোসল করতাম। (আঃপ্রঃ- ৬৮২৭, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৬৮৩৯)

দাম্পত্য জীবনকে সুখময় করার উদ্দেশ্যে মুসলমানদের ঘরগুলোতে ব্যবস্থা থাকা দরকার যাতে তারা রাসূলের এ সুন্নাত পালন করিতে পারেন।

৭৩৪০

আনাস (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ

নাবী (সাঃআঃ) আনসার ও মুহাজিরদেরকে আমার মদীনার বাড়িতে প্রীতির ডোরে বেঁধেছিলেন। এবং বনী সুলায়মের গোত্রের উপর বদদুআ করার জন্য মাসব্যাপী তিনি (ফাজ্‌রের সালাতে) কুনূত (নাযিলা) পড়েছিলেন। (আঃপ্রঃ- ৬৮২৮ প্রথমাংশ, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৬৮৪০ প্রথমাংশ)

৭৩৪১

আনাস (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ

নাবী (সাঃআঃ) আনসার ও মুহাজিরদেরকে আমার মদীনার বাড়িতে প্রীতির ডোরে বেঁধেছিলেন। এবং বনী সুলায়মের গোত্রের উপর বদদুআ করার জন্য মাসব্যাপী তিনি (ফাজ্‌রের সালাতে) কুনূত (নাযিলা) পড়েছিলেন। (আঃপ্রঃ- ৬৮২৮ শেষাংশ, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৬৮৪০ শেষাংশ)

৭৩৪২

আবু বূরদাহ (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, আমি মদীনায় আসলে আবদুল্লাহ ইবনু সালাম (রাদি.) আমার সঙ্গে দেখা করেন। তিনি আমাকে বলিলেন, চলুন ঘরে যাই। আমি আপনাকে একটি পাত্রে পান করাবো, যেটিতে রাসুলুল্লাহ (সাঃআঃ) পান করছেন। আপনি ঐ সালাতের জায়গায় সালাত পড়তে পারবেন, যেখানে নাবী (সাঃআঃ) সালাত পড়েছিলেন। অতঃপর আমি তার সঙ্গে গেলাম। তিনি আমাকে ছাতু গুলে খাওয়ালেন এবং খেজুর খাওয়ালেন। তারপর আমি রাসুলুল্লাহ (সাঃআঃ) – এর সালাত পড়ার স্থানে সালাত পড়লাম। (আঃপ্রঃ- ৬৮২৯, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৬৮৪১)

৭৩৪৩

উমর (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, নাবী (সাঃআঃ) আমাকে বলেছেনঃ আকীক নামক জায়গায় থাকার সময় এক রাতে আমার রব্বের নিকট হইতে একজন আগন্তুক (ফেরেশ্‌তা) আমার কাছে এলেন। তিনি বলেন, এই বারাকাতময় উপত্যকায় সালাত পড়ুন এবং বলুন, উমরা ও হাজ্জের নিয়ত করছি। হারূন ইবনু ইসমাঈল (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) বলেন, আলী (রাদি.) আমার কাছে হাজ্জের সঙ্গে উমরার নিয়ত করুন শব্দ বর্ণনা করিয়াছেন।(আঃপ্রঃ- ৬৮৩০, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৬৮৪২)

৭৩৪৪

ইবনু উমর (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ (সাঃআঃ) মীকাত নির্ধারন করিয়াছেন নাজদবাসীদের জন্য কারনকে, সিরিয়াবাসীদের জন্য জুহফাকে এবং মদীনাবাসীদের জন্য যুল হুলাইফাকে। ইবনু উমর (রাদি.) বলেন, আমি এগুলো নাবী (সাঃআঃ) থেকে শুনিয়াছি। আমার কাছে খবর পৌঁছেছে, নাবী (সাঃআঃ) বলেছেন, ইয়ামানের লোকদের মীকাত হচ্ছে ইয়ালামলাম এবং ইরাকের কথা উল্লেখ করা হল। তখন ইবনু উমর (রাদি.) বলিলেন, সে সময় ইরাক ছিল না।(আঃপ্রঃ- ৬৮৩১, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৬৮৪৩)

৭৩৪৫আবদুল্লাহ ইবনু উমর (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ

নাবী (সাঃআঃ) হইতে বর্ণিত যে, তিনি যুলহুলাইফাতে রাতের শেষ ভাগে অবস্থানকালে তাঁকে বলা হলো আপনি একটি বরকতপূর্ণ জায়গায় আছেন।(আঃপ্রঃ- ৬৮৩২, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৬৮৪৪)

৯৬/১৭. অধ্যায়ঃ আল্লাহ তাআলার বাণীঃ (হে নাবী!) কোন বিষয়ের সিদ্ধান্ত নেয়া তোমার কাজ নয়। (সুরা আল্‌ ইমরান ৩/১২৮)

৭৩৪৬

ইবনু উমর (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ

তিনি নাবী (সাঃআঃ) – কে ফাজ্‌রের সালাতের শেষে রুকু থেকে মাথা উঠানোর সময় বলিতে শুনেছেন, (আরবী) (হে আমাদের প্রতিপালক! সমস্ত প্রশংসা কেবলমাত্র আপনারই জন্য। তিনি আরো বলিলেন, হে আল্লাহ! আপনি অমুক অমুক লোকের উপর অভিশাপ দিন। তখন আল্লাহ নাজিল করলেনঃ “আল্লাহ তাদের প্রতি ক্ষমাশীল হইবেন অথবা তাদেরকে শাস্তি প্রদান করবেন – এ ব্যাপারে তোমার কিছু করার নেই। কেননা তারা হচ্ছে যালিম” – (সুরা আলু ইমরান ৩/১২৮)। [৪০৬৯] (আঃপ্রঃ- ৬৮৩৩, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৬৮৪৫)

৯৬/১৮. অধ্যায়ঃ আল্লাহর বাণীঃ মানুষ অধিকাংশ বিষয়েই বিতর্কপ্রিয়। (সুরা আল-কাহাফ ১৮/৫৪)

মহান আল্লাহর বাণীঃ তোমরা কিতাবধারীদের সঙ্গে বিতর্ক করোনা….. । (সুরা আল-আনকাবূত ২৯/৪৬)

৭৩৪৭

আলী ইবনু আবু ত্বলিব (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, এক রাতে রাসুলুল্লাহ (সাঃআঃ) তাহাঁর এবং রসূলের মেয়ে ফাতিমা (রাদি.) এর নিকট আসলেন। রাসুলুল্লাহ (সাঃআঃ) তাদেরকে জিজ্ঞেস করিলেন, তোমরা সালাত পড়েছ কি? আলী (রাদি.) বলেন, আমি বললাম, হে আল্লাহর রাসুল! আমাদের জীবন তো আল্লাহর হাতে। তিনি আমাদেরকে যখন জাগাতে চান, জাগিয়ে দেন। এ কথা বলার সঙ্গে সঙ্গে রাসুলুল্লাহ (সাঃআঃ) চলে গেলেন, তার কথার জবাব দিলেন না। আলী (রাদি.) বলেন, আমি শুনতে পেলাম, তিনি চলে যাচ্ছেন, আর ঊরুতে হাত মেরে মেরে বলছেনঃ মানুষ অধিকাংশ বিষয়েই বিতর্কপ্রিয়। আবু আব্দুল্লাহ (বুখারী) (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) বলেন, তোমার কাছে রাতের বেলা আগমনকারী আসে তাকে তারিক বা রাতের অতিথি বলে। তারিক একটি তারাকেও বলা হয়। আর সাক্বিব অর্থ হল জ্যোতির্ময়। এজন্যই আগুন যে জ্বালায় তাকে বলা হয়, তুমি আগুন জ্বালাও।(আঃপ্রঃ- ৬৮৩৪, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৬৮৪৬)

শাইখ আবু মুহাম্মাদিবনু আবি জামরাহ বলেন, এ হাদীসের মধ্যে শিক্ষণীয় হচ্ছেঃ

১. বিশেষ করে গাফেল নিকটাত্মীয় এবং সঙ্গী সাথীদেরকে স্মরণ করে দেওয়ার বৈধতা।

২. যা অন্যের সাথে সংশ্লিষ্ট সেই ব্যাপারে কোন ব্যক্তির তার নিজের সাথে কথোপকথনের বৈধতা।

৩. আশ্চর্য হওয়ার সময় কোন ব্যক্তি তার নিজের কোন অঙ্গের উপর প্রহার করার বৈধতা। অনুরূপভাবে আফসোস বা পরিতাপের সময় ও তা বৈধ।

৪. আলী (রাদি.)র ফযীলত। (ফাতহুল বারী)

৭৩৪৮

আবু হুরাইরা (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, একবার আমরা মসজিদে নাবাবীতে ছিলাম। রাসুলুল্লাহ (সাঃআঃ) মসজিদ থেকে বের হয়ে আমাদেরকে বললেনঃ তোমরা চলো ইয়াহূদীদের সেখানে যাই। আমরা তাহাঁর সঙ্গে বেরোলাম। শেষে আমরা বায়তুল মিদরাসে (তাদের শিক্ষালয়ে) পৌঁছলাম। তারপর নাবী (সাঃআঃ) সেখানে দাঁড়িয়ে তাদেরকে উদ্দেশ্য করে বললেনঃ হে ইয়াহূদী সম্প্রদায়! তোমরা ইসলাম কবূল কর, এতে তোমরা নিরাপত্তা লাভ করিবে। ইয়াহূদীরা বলিল, হে আবুল কাসিম! আপনার পৌঁছানোর দায়িত্ব আপনি পালন করিয়াছেন। অতঃপর তিনি বললেনঃ আমার ইচ্ছা তোমরা ইসলাম গ্রহণ কর এবং শান্তিতে থাক। তারাও আবার বলিল, হে আবুল কাসিম! আপনার পৌঁছানোর দায়িত্ব আপনি পালন করিয়াছেন। রাসুলুল্লাহ (সাঃআঃ) বললেনঃ আমি এরকমই ইচ্ছে পোষন করি। তৃতীয়বারেও তিনি তাই বলিলেন। অবশেষে রাসুলুল্লাহ (সাঃআঃ) বললেনঃ জেনে রেখো, যমীন একমাত্র আল্লাহ ও তাহাঁর রাসূলের। আমি তোমাদেরকে এই এলাকা থেকে নির্বাসিত করিতে চাই। কাজেই তোমাদের যাদের মালপত্র আছে, তা যেন সে বিক্রি করে দেয়। তা নাহলে জেনে রেখো যমীন আল্লাহ ও তাহাঁর রাসূলের। (আঃপ্রঃ- ৬৮৩৫, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৬৮৪৭)

ইয়াহূদীদের সঙ্গে নাবী (সাঃআঃ) এর শান্তি চুক্তি থাকলেও তাঁরা চুক্তি লঙ্ঘন করে মুসলমানদের বিরোধিতায় লিপ্ত হয়ে পড়েছিল। ইয়াহূদীদের কায়নুকা বাজারে পর্দানশীল এক আরব মহিলা দুধ বিক্রি করিতে আসলে ইয়াহূদীরা তাঁকে চরমভাবে অপমানিত করে। ইয়াহূদীদের নানামূখী ষড়যন্ত্র ও নির্লজ্জ শত্রুতার প্রেক্ষাপটে নাবী (সাঃআঃ) তাদেরকে বলিলেন – “হে ইয়াহূদ সমাজ! তোমরা আনূগত্য স্বীকার কর, না হলে কুরাইশদের মত তোমাদেরকেও বিপন্ন হইতে হইবে। তারা তা না করায় রাসুলুল্লাহ (সাঃআঃ) তাদের বিরুদ্ধে অভিযানের প্রস্তুতি নেন। তারা দূর্গে আশ্রয় নেয়। পনের দিন অবরুদ্ধ থাকার পর তারা আত্ন সমর্পণে বাধ্য হয়। অতঃপর রাসুলুল্লাহ (সাঃআঃ) তাদের নির্বাসিত করেন।

৯৬/১৯. অধ্যায়ঃ আল্লাহর বাণীঃ এভাবে আমি তোমাদেরকে এক মধ্যপন্থী জাতি করেছি, যাতে তোমরা মানব জাতির জন্য সাক্ষী হও। (সুরা আল-বাক্বারাহ ২/১৪৩)

নাবী (সাঃআঃ) জামাআতকে আঁকড়ে ধরে রাখার নির্দেশ দিয়েছেন। আর জামাআত আলিমগণকেই বলা হয়েছে।

৭৩৪৯

আবু সাঈদ খুদরী (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাঃআঃ বলেছেনঃ ক্বিয়ামাতের দিন নূহ (আঃ)-কে হাযির করে জিজ্ঞেস করা হইবে, তুমি কি (দ্বীনের দাওয়াত) পৌঁছে দিয়েছ? তখন তিনি বলবেন, হ্যাঁ। হে আমার রব। এরপর তাহাঁর উম্মাতকে জিজ্ঞেস করা হইবে, তোমাদের কাছে নূহ (দাওয়াত) পৌঁছিয়েছে কি? তারা সকলে বলে উঠবে, আমাদের কাছে কোন ভয় প্রদর্শনকারী আসেনি। তখন নূহ (আঃ)-কে বলা হইবে, তোমার কোন সাক্ষী আছে কি? তিনি বলবেন, মুহাম্মাদ সাঃআঃ ও তাহাঁর উম্মাতরাই (আমার সাক্ষী)। রাসূলুল্লাহ সাঃআঃ বলেনঃ তোমাদেরকে তখন নিয়ে আসা হইবে এবং তোমরা (তাহাঁর পক্ষে) সাক্ষ্য দেবে। এরপর রাসূলুল্লাহ সাঃআঃ আল্লাহর বাণী পাঠ করলেনঃ এভাবে আল্লাহ তোমাদেরকে মধ্যমপন্থী উম্মাত বানিয়েছেন। (وسط অর্থ ভারসাম্যপূর্ণ) তাহলে তোমরা মানব জাতির জন্য সাক্ষী হইতে পারবে আর রাসুল তোমাদের জন্য সাক্ষী হইবেন- (সুরা আল-বাক্বারাহ ২/১৪৩)। জাফর ইবনু আওন (রহমাতুল্লাহি আলাইহি)….আবু সাঈদ খুদরী (রাদি.) নাবী সাঃআঃ সূত্রে এরকমই বর্ণনা করিয়াছেন। [৩৩৩৯] (আঃপ্রঃ- ৬৮৩৬, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৬৮৪৮)

৯৬/২০. অধ্যায়ঃ কোন কর্মকর্তা কিংবা বিচারক অজ্ঞতার কারণে ইজ্‌তিহাদে ভুল করে রাসুলুল্লাহ (সাঃআঃ) – এর মতের বিরুদ্ধে সিদ্ধান্ত দিলে তা বাতিল।

কেননা, নাবী করীম (সাঃআঃ) বলেছেনঃ কোন ব্যক্তি যদি এমন কাজ করে, যার আমি নির্দেশ করিনি তা অগ্রাহ্য।

৭৩৫০

আবু সাঈদ খুদরী ও আবু হুরাইরা (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ

তাঁরা বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাঃআঃ) বনী আদী আনসারী গোত্রের এক লোককে খায়বারের শাসনকর্তা নিযুক্ত করে পাঠালেন। এরপর সে ফিরে আসল উন্নতমানের খেজুর নিয়ে। তখন নাবী (সাঃআঃ) জিজ্ঞাসা করিলেন, খায়বারের সব খেজুরই কি এ রকম? তিনি বলিলেন, হে আল্লাহর রাসুল! আল্লাহর কসম! সব খেজুরই এমন নয়। আমরা দু সা মন্দ খেজুরের বিনিময়ে এরূপ এক সা ভাল খেজুর খরিদ করেছি। রাসূলুল্লাহ (সাঃআঃ) বললেনঃ এমন করো না। বরং সমানে সমানে কেনা বেচা করো। কিংবা এগুলো বিক্রি করে এর মূল্য দিয়ে সেগুলো খরিদ করো। ওজনের সব জিনিষের হুকুম এটাই। (আঃপ্রঃ- ৬৮৩৭, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৬৮৪৯)

৭৩৫১

আবু সাঈদ খুদরী ও আবু হুরাইরা (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ

তাঁরা বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাঃআঃ) বনী আদী আনসারী গোত্রের এক লোককে খায়বারের শাসনকর্তা নিযুক্ত করে পাঠালেন। এরপর সে ফিরে আসল উন্নতমানের খেজুর নিয়ে। তখন নাবী (সাঃআঃ) জিজ্ঞাসা করিলেন, খায়বারের সব খেজুরই কি এ রকম? তিনি বলিলেন, হে আল্লাহর রাসুল! আল্লাহর কসম! সব খেজুরই এমন নয়। আমরা দু সা মন্দ খেজুরের বিনিময়ে এরূপ এক সা ভাল খেজুর খরিদ করেছি। রাসূলুল্লাহ (সাঃআঃ) বললেনঃ এমন করো না। বরং সমানে সমানে কেনা বেচা করো। কিংবা এগুলো বিক্রি করে এর মূল্য দিয়ে সেগুলো খরিদ করো। ওজনের সব জিনিষের হুকুম এটাই। (আঃপ্রঃ- ৬৮৩৭, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৬৮৪৯)

৯৬/২১. অধ্যায়ঃ বিচারক ইজতিহাদে ঠিক করুক বা ভুল করুক তার প্রতিদান পাবে।

৭৩৫২

আমর ইবনু আস (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ

তিনি রাসূলুল্লাহ (সাঃআঃ) – কে এ কথা বলিতে শুনেছেন, কোন বিচারক ইজ্‌তিহাদে সঠিক সিদ্ধান্তে পৌঁছলে তার জন্য আছে দুটি পুরস্কার। আর বিচারক ইজ্‌তিহাদে ভুল করলে তার জন্যও রয়েছে একটি পুরস্কার।[মুসলিম ৩০/৬, হাদীস ১৭১৬] (আঃপ্রঃ- ৬৮৩৮, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৬৮৫০)

[১] ইমাম ইবনুল মুনযির বলেন : বিচারক যদি ইজতেহাদ করায় পন্ডিত হয়ে থাকেন, এমতাবস্থায় ইজতেহাদ করিতে গিয়ে কোন ভুল করে বসেন তবুও তাকে নেকী দেয়া হইবে। পক্ষান্তরে যদি তিনি পন্ডিত না হোন, এমতাবস্থায় ইজতেহাদ করিতে গিয়ে কোন ভুল করে বসেন তবে এক্ষেত্রে তাকে নেকী দেয়া হইবে না। এ ব্যাপারে প্রমাণ হল সুনানে বর্ণিত বুরাইদা (রাদি.)র হাদীস যা বিভিন্ন শব্দে বর্ণিত হয়েছে। যথা : القضاة ثلاثة

তার মধ্যে রয়েছে : وقاض قضى بغير حق فهو في النار وقاض قضى وهو لا يعلم فهو في النار

এখানে (الامر) নির্দেশ বা হুকুম দ্বারা উদ্দেশ্য إفعل সিগা (শব্দরূপ) এবং (النهي) নিষেধ দ্বারা উদ্দেশ্য لا تفعل সিগা (শব্দরূপ)।

আর সাহাবীর কথা যেমন : أمرنا رسول الله بكذا অর্থাৎ রাসুলসাঃ আমদেরকে এমন করিতে নির্দেশ দেন অথবা ওটা হইতে নিষেধ করিয়াছেন এ বিষয়ে মতভেদ রয়েছে।

কিন্তু অধিকাংশ সালাফদের নিকট راجح বা অগ্রাধিকারযোগ্য মত হচ্ছে যে, কোন পার্থক্য নেই (অর্থাৎ রসূলের কথা افعل এবং সাহাবীর কথা امرنا رسول الله بكذا এতদুভয়ের মাঝে কোন পার্থক্য নেই। অনুরূপভাবে রসূলের কথা لا تفعل এবং সাহাবীর কথা نهانا عنه এবং মাঝে কোনই পার্থক্য নেই)। আবার কিছু কিছু উসূলবাদী আমরের সিগার (নির্দেশ সূচক শব্দরূপের) ১৭টি অর্থ এবং নাহীর সিগার (নিষেধ সূচক শব্দরূপের) ৮টি অর্থ উল্লেখ করেন। আর কাজী আবু বকর ত্বায়্যিব ইমাম মালেক ও ইমাম শাফেয়ী থেকে বর্ণনা করেন যে, তাদের উভয়ের নিকটই আমরের সীগা ওয়াজিবের জন্য এবং নাহীর সীগা হারামের জন্য প্রয়োগ হইবে যতক্ষণ পর্যন্ত এর বিপরীত কোন প্রমাণ প্রতিষ্ঠিত না হইবে।

ইমাম ইবনু বাত্তাল বলেন :

জামহুরের মত এটাই।

৯৬/২২. অধ্যায়ঃ যারা বলে নাবী (সাঃআঃ) – এর সব কাজই সুস্পষ্ট ছিল তাহাঁর প্রমাণ

কোন কোন সাহাবী নাবী (সাঃআঃ) – এর দরবার থেকে এবং ইসলামের ‎বিধিবিধান জ্ঞাত হওয়া থেকে অনুপস্থিত থাকতেন।

৭৩৫৩

উবায়দ ইবনু উমায়র(রহমাতুল্লাহি আলাইহি) হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, আবু মূসা (রাদি.) উমর (রাদি.) – এর কাছে আসার অনুমতি চাইলেন। আবু মূসা (রাদি.) তাঁকে যেন কোন কাজে ব্যস্ত মনে করে ফিরে যাচ্ছিলেন। উমর (রাদি.) বলিলেন, আমি কি আব্দুল্লাহ ইবনু কায়স-এর শব্দ শুনিনি? তাকে এখানে আসার অনুমতি দাও। এরপর তাঁকে ডেকে আনা হলে উমর (রাদি.) জিজ্ঞেস করিলেন, কী জিনিস আপনাকে ফিরে বাধ্য করিল? আবু মূসা (রাদি.) বলিলেন, আমাদেরকে এরকমই করার আদেশ দেয়া হত। উমর (রাদি.) বলিলেন, আপনার কথার পক্ষে প্রমান পেশ দিন, অন্যথায় আপনার সঙ্গে মোকাবেলা করব। এরপর তিনি আনসারদের এক মজলিসে চলে গেলেন। তারা বলিল, আমাদের বালকরাই এর পক্ষে সাক্ষ্য দেবে। এরপর আবু সাঈদ খুদরী (রাদি.) দাঁড়িয়ে বলিলেন, হ্যাঁ, আমাদেরকে এরকম করারই নির্দেশ দেয়া হত। এরপর উমর (রাদি.) বলিলেন, নাবী (সাঃআঃ) – এর এ আদেশটি আমার অজানা থেকে গেল। বাজারের ব্যস্ততাই আমাকে জানা থেকে বিরত রেখেছে।(আঃপ্রঃ- ৬৮৩৯, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৬৮৫১)

৭৩৫৪

আবু হুরাইরা (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, তোমাদের ধারনা আবু হুরাইরা রাসূলুল্লাহ (সাঃআঃ) থেকে অতিরিক্ত হাদীস বর্ণনা করছে। আল্লাহর কাছে একদিন আমাদেরকে হাযির হইতে হইবে। আমি ছিলাম এক মিসকীন। খেয়ে না খেয়েই আমি রাসূলুল্লাহ (সাঃআঃ) – এর নিকট পড়ে থাকতাম। বাজারের বেচাকেনা মুহাজিরদেরকে ব্যস্ত রাখত। আর আনসারগণকে ব্যস্ত রাখত তাঁদের ধন-মালের প্রতিষ্ঠা। একদিন আমি রাসূলুল্লাহ (সাঃআঃ) – এর নিকট ছিলাম। রাসূলুল্লাহ (সাঃআঃ) বললেনঃ আমার কথা শেষ হওয়া পর্যন্ত যে ব্যক্তি তার চাদর প্রসারিত করে তারপর তা গুটিয়ে নেবে, সে আমার নিকট হইতে শোনা কিছুই কোন দিন ভুলবে না। তখন আমি আমার গায়ের চাদরখানা প্রসারিত করলাম। সে সত্তার শপথ, যিনি তাঁকে হক্কের সঙ্গে পাঠিয়েছেন! অতঃপর তাহাঁর কাছ থেকে শোনা কোন কিছুই আমি ভুলি নি। [১১৮; মুসলিম ৪৪/৮৫, হাদীস ২৪৯২] (আঃপ্রঃ- ৬৮৪০, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৬৮৫২)

৯৬/২৩. অধ্যায়ঃ কোন বিষয়ে নাবী (সাঃআঃ) কর্তৃক অস্বীকৃতি প্রকাশ না করাই তা বৈধ হবার দলীল, অন্য কারো অস্বীকৃতি বৈধতার দলীল নয়।

৭৩৫৫

মুহাম্মাদ ইবনু মুনকাদির (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, আমি জাবির ইবনু আব্দুল্লাহ (রাদি.) – কে আল্লাহর কসম খেয়ে বলিতে শুনিয়াছি যে, ইবনু সাইয়্যাদ একটা দাজ্জাল। আমি তাঁকে জিজ্ঞেস করলামঃ আল্লাহর শপথ করে বলছেন? তিনি উত্তরে বলিলেন, আমি উমর (রাদি.) – কে নাবী (সাঃআঃ) – এর নিকট শপথ করে এ কথা বলিতে শুনিয়াছি। তখন নাবী (সাঃআঃ) এ কথা অস্বীকার করেননি।[মুসলিম ৫২/১৯, হাদীস ২৯৬৯] (আঃপ্রঃ- ৬৮৪১, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৬৮৫৩)

৯৬/২৪. অধ্যায়ঃ প্রমানাদির সাহায্যে যেসব বিধিবিধান সম্পর্কে জানা যায়।

দলীল প্রমাণাদির অর্থ ও বিশ্লেষণ কিভাবে করা যায়? নাবী করীম (সাঃআঃ) ঘোড়া ইত্যাদির হুকুম বলে দিয়েছেন। এরপর তাঁকে গাধার হুকুম সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করা হইবে তিনি মহান আল্লাহর নিম্নোক্ত বাণীর দিকে ইশারা করেনঃ কেউ অণু পরিমাণ সৎকর্ম করলেও তা দেখিতে পাবে (৯৯:৭)। নাবী করীম (সাঃআঃ) কে দব্ব (গুইঁসাপ) সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করা হলে তিনি বলেনঃ আমি এটি খাই না, তবে হারামও বলি না। নাবী করীম (সাঃআঃ) এর দস্তরখানে দব্ব খাওয়া হয়েছে। এর দ্বারা ইবন আব্বাস (রাদি.) প্রমাণ করিয়াছেন যে, দব্ব হামাম নয়।

৭৩৫৬

আবু হুরাইরা (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ

রাসূলুল্লাহ (সাঃআঃ) বলেছেনঃ ঘোড়া ব্যবহারের দিক দিয়ে মানুষ তিন রকম। এক রকম লোকের জন্য ঘোড়া সওয়ারের মাধ্যম, আর এক রকম লোকের জন্য তা পাপ থেকে বাঁচার অবলম্বন এবং আর এক রকম লোকের জন্য তা শাস্তির কারণ। তার জন্য ঘোড়া সওয়ারের মাধ্যম, যে ঘোড়াকে আল্লাহর রাস্তায় ব্যবহারের জন্য প্রস্তুত রাখে এবং চারণভূমি বা বাগানে প্রশস্ত রশিতে বেঁধে বিচরণ করিতে দেয়। এই রশি যত লম্বা এবং যত দূরত্বে ঘোড়া চরতে পারে, সে তত বেশি সওয়াব পায়। যদি ঘোড়া এ দড়ি ছিঁড়ে এক চক্কর বা দুচক্কর লাগায় তবে ঐ ঘোড়ার প্রতিটি পদক্ষেপ এবং মালের বিনিময়ে তাকে সওয়াব দেয়া হয়। ঘোড়া যদি কোন নদী বা নালায় গিয়ে পানি খেয়ে ফেলে অথচ মালিক পানি খাওয়ারনোর নিয়ত করেনি, এগুলো খুবই নেক কাজ। এর জন্য এ লোকের সওয়াব আছে। আর যে লোক ঘোড়া পালন করে একমাত্র অমুখাপেক্ষিতা এবং স্বনির্ভরতা বজায় রাখার জন্য; এর সঙ্গে সঙ্গে ঘোড়ার ঘাড়ে ও পিঠে যে আল্লাহর হক আছে তা আদায় করিতেও সে ভুলে যায় না। এ ঘোড়া তার জন্য শাস্তি থেকে পর্দা হইবে। আর যে ব্যক্তি অহংকার ও বশ্যতঃ ও লোক দেখানোর জন্য ঘোড়া পোষে, তার জন্য এই ঘোড়া (পাপের) বোঝা হইবে। রাসূলুল্লাহ (সাঃআঃ) – কে গাধা সম্পর্কে জিজ্ঞেস করা হল। তখন তিনি বললেনঃ এ সম্পর্কে আমার উপর ব্যাপক অর্থবোধক একটি আয়াত ব্যতীত আল্লাহ অন্য কিছু অবতীর্ণ করেন নিঃ “অতএব কেউ অণু পরিমাণও সৎ কাজ করলে সে তা দেখবে, আর কেউ অণু পরিমাণও অসৎ কাজ করলে সে তা দেখবে।”- (সুরা যিলযালা ৯৯/৭-৮)। [২৩৭১] (আঃপ্রঃ- ৬৮৪২, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৬৮৫৪)

৭৩৫৭

আয়েশা (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ

এক স্ত্রীলোক রাসুলুল্লাহ (সাঃআঃ) – কে জিজ্ঞেস করিল, হায়েয থেকে গোসল কিভাবে করিতে হয়? তিনি বললেনঃ তুমি সুগন্ধিযুক্ত এক টুকরা কাপড় নেবে। এবং এর দ্বারা পবিত্রতা অর্জন করিবে। স্ত্রীলোকটি বলিল, হে আল্লাহর রাসুল! আমি এর দ্বারা কিভাবে পবিত্রতা অর্জন করব? নাবী (সাঃআঃ)ঃ তুমি এর দ্বারা পবিত্রতা অর্জন করিবে। মহিলা আবার বলিল, এর দ্বারা কিভাবে পবিত্রতা লাভ করিবে? নাবী (সাঃআঃ) বললেনঃ তুমি এর দ্বারা পবিত্রতা লাভ করিবে। আয়েশা (রাদি.) বলেন, আমি বুঝতে পারলাম রাসুলুল্লাহ (সাঃআঃ) এর দ্বারা কী বোঝাতে চাচ্ছেন? অতঃপর আমি স্ত্রীলোকটিকে আমার দিকে টেনে নিলাম এবং বিষয়টি তাকে জানিয়ে দিলাম।(আঃপ্রঃ- ৬৮৪৩, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৬৮৫৫)

৭৩৫৮

ইবনু আব্বাস (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, হারিস ইবনু হাযনের মেয়ে উম্মু হুফায়দ (রাদি.) নাবী (সাঃআঃ) – এর জন্য ঘি, পনির এবং কতগুলো দব্ব হাদিয়া পাঠালেন। নাবী (সাঃআঃ) ওগুলো চেয়ে নিলেন এবং এগুলো তাহাঁর দস্তরখানে খাওয়া হল। নাবী (সাঃআঃ) ঘৃণার কারনে খেতে অপছন্দ করিলেন। ওগুলো হারাম হলে, তাহাঁর দস্তরখানে তা খাওয়া হত না এবং তিনিও ওগুলো খেতে অনুমতি দিতেন না। (আঃপ্রঃ- ৬৮৪৪, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৬৮৫৬)

৭৩৫৯

জাবির ইবনু আবদুল্লাহ (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, নাবী সাঃআঃ বলেনঃ যে ব্যক্তি কাঁচা রসুন কিংবা পেঁয়াজ খায়, সে যেন আমাদের থেকে কিংবা আমাদের মাসজিদ থেকে আলাদা থাকে। আর সে যেন তার ঘরে বসে থাকে। এরপর তাহাঁর কাছে একটি পাত্র আনা হল। বর্ণনাকারী ইবনু ওয়াহ্ব (রাদি.) বলেন, অর্থাৎ শাক-সব্জির একটি বড় পাত্র। রাসূলুল্লাহ সাঃআঃ সেই পাত্রে এক প্রকার গন্ধ পাওয়ায় সে সম্পর্কে জিজ্ঞেস করিলেন। তাঁকে পাত্রের মধ্যকার শাক-সব্জি সম্পর্কে জানানো হল। তিনি তা এক সহাবীকে খেতে দিতে বলিলেন যিনি তাহাঁর সঙ্গে উপস্থিত ছিলেন। এরপর তিনি যখন দেখলেন, সে তা খেতে অপছন্দ করছে তখন তিনি বললেনঃ খাও, কারণ আমি যাঁর সঙ্গে গোপনে কথোপকথন করি, তুমি তাহাঁর সঙ্গে তা কর না।

ইবনু উফায়র (রহমাতুল্লাহি আলাইহি)…..ইবনু ওয়াহ্ব (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) থেকে طَبَقًا فِيْهِ خَضِرَاتٌ -এর জায়গায় بِقِدْرٍ فِيْهِ خَضِرَاتٌ (শাক-সব্জির একটি হাঁড়ি) বর্ণনা করিয়াছেন। অন্যদিকে লায়স ও আবু সাফওয়ান (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) ইউনুস (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) থেকে হাঁড়ির ঘটনা উল্লেখ করেননি। এটি কি হাদীসে বর্ণিত না যুহরী (রাদি.)-এর উক্তি তা আমার জানা নেই। [৮৫৪] (আঃপ্রঃ- ৬৮৪৫, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৬৮৫৭)

৭৩৬০

জুবায়র ইবনু মুতঈম (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, এক স্ত্রীলোক রাসুলুল্লাহ (সাঃআঃ) – এর নিকট হাযির হল এবং তাহাঁর সঙ্গে কোন ব্যাপারে কথাবার্তা বলিল। নাবী (সাঃআঃ) তাঁকে কোন বিষয়ে নির্দেশ দিলেন। এরপর স্ত্রীলোকটি বলিল, হে আল্লাহর রাসুল। আপনাকে যদি না পাই? তিনি বললেনঃ যখন আমাকে পাবে না, তখন আসবে আবু বকর (রাদি.) – এর কাছে। আবু আবদুল্লাহ [(ইমাম বুখারী (রহমাতুল্লাহি আলাইহি)] বলেন, বর্ণনাকারী হুমায়দী (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) ইবরাহীম ইবনু সাদ (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) থেকে আরো অতিরিক্ত বলেছেন, স্ত্রীলোকটি সম্ভবত তার কথা দ্বারা নাবী (সাঃআঃ) – এর মৃত্যুর প্রতি ইঙ্গিত করিয়াছেন।(আঃপ্রঃ- ৬৮৪৬, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৬৮৫৮)

৯৬/২৫. অধ্যায়ঃ নাবী (সাঃআঃ) – এর বাণীঃ আহলে কিতাবদের কাছে কোন বিষয়ে জিজ্ঞেস করো না ।

৭৩৬১

আবুল ইয়ামান (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) হইতে বর্ণিতঃ

শুআয়ব (রহমাতুল্লাহি আলাইহি), ইমাম যুহরী (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) হুমায়দ ইবনু আবদুর রহমান (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) সূত্রে বর্ণনা করিয়াছেন যে, তিনি মুআবীয়াহ (রাদি.) – কে মদিনায় কুরায়শ বংশের কতকগুলো লোকের সঙ্গে আলাপ-আলোচনা করিতে শুনেছেন। তখন কাব আহবারের কথা আলোচনা হয়। মুআবীয়াহ (রাদি.) বলিলেন, যারা আগেকার কিতাব সম্পর্কে আলোচনা করেন, তাদের মধ্যে তিনি অধিক সত্যবাদী, যদিও বর্ণিত বিষয়গুলোর ভিত্তি মিথ্যের উপর রচিত।(আঃপ্রঃ- অনুচ্ছেদ, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- অনুচ্ছেদ)

৭৩৬২

আবু হুরাইরা (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, আহলে কিতাব হিব্রু ভাষায় তাওরাত পড়ে মুসলিমদের কাছে তা আরবী ভাষায় ব্যাখ্যা করত। (এ সম্পর্কে) রাসুলুল্লাহ (সাঃআঃ) বলেছেনঃ আহলে কিতাবকে তোমরা সত্যবাদী ভেবো না এবং তাদেরকে মিথ্যাবাদীও ভেবো না। তোমরা বলে দাও আমরা ঈমান এনেছি আল্লাহর প্রতি এবং আমাদের উপর যা নাযিল হয়েছে তার প্রতি……(আঃপ্রঃ- ৬৮৪৭, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৬৮৫৯)

৭৩৬৩

উবাইদুল্লাহ ইবনু আবদুল্লাহ (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ

ইবনু আব্বাস (রাদি.) বলেছেন, তোমরা কিভাবে আহলে কিতাবদেরকে কোন বিষয় সম্পর্কে জিজ্ঞেস কর? অথচ তোমাদের কিতাব (আল-কুরআন) তাহাঁর রাসুল (সাঃআঃ) – এর উপর এখন অবতীর্ণ হয়েছে, তা তোমরা পড়ছ যা পূত-পবিত্র ও নির্ভেজাল। এ কিতাব তোমাদেরকে জানিয়ে দিচ্ছে, আহলে কিতাবরা আল্লাহর কিতাবকে পরিবর্তিত ও বিকৃত করে দিয়েছে। তারা নিজ হাতে কিতাব লিখে তা আল্লাহর কিতাব বলে ঘোষণা দিয়েছে, যাতে এর দ্বারা সামান্য সুবিধা লাভ করিতে পারে। তোমাদের কাছে যে ইল্‌ম আছে তা কি তোমাদেরকে তাদের কাছে কোন মাসআলা জিজ্ঞেস করিতে নিষেধ করছে না? আল্লাহর কসম! আমরা তো তাদের কাউকে দেখিনি কখনো তোমাদের উপর নাযিল করা কিতাব সম্পর্কে কিছু জিজ্ঞেস করিতে।(আঃপ্রঃ- ৬৮৪৮, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৬৮৬০)

৯৬/২৬. অধ্যায়ঃ মতবিরোধ অপছন্দনীয় ।

৭৩৬৪

জুনদাব ইবনু আবদুল্লাহ (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ (সাঃআঃ) বলেছেনঃ তোমরা কুরআন তিলাওয়াত করিতে থাক, যতক্ষণ এর প্রতি তোমাদের হৃদয়ের আকর্ষণ অব্যাহত থাকে। আর যখন তোমাদের মনে বিকর্ষণ দেখা দেয় তখন তাথেকে উঠে যাও।

আবু আবদুল্লাহ (বুখারী) (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) বলেন, আবদুর রহমান (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) সাল্লাম থেকে (হাদীসটি) শুনেছেন (সূত্রে) বর্ণিত হয়েছে। (আঃপ্রঃ- ৬৮৫১, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৬৮৬৩)

৭৩৬৫

জুনদাব (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ

রাসুলুল্লাহ (সাঃআঃ) বলেছেনঃ তোমরা ততক্ষন কুরআন তিলাওয়াত করিতে থাক, যে পর্যন্ত এর প্রতি তোমাদের অন্তরের আকর্ষণ থাকে। আর যখন মনে বিকর্ষণ অনুভব কর, তখন তা থেকে উঠে যাও।

ইয়াযীদ ইবনু হারুন (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) জুনদাব (রাদি.) সূত্রে নাবী (সাঃআঃ) থেকে এরকমই বর্ণিত হয়েছে।(আঃপ্রঃ- ৬৮৫২, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৬৮৬৪)

৭৩৬৬

ইবনু আব্বাস (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, যখন নাবী (সাঃআঃ) – এর মৃত্যুর সময় নিকটবর্তী হল। রাবী বলেন, ঘরের মধ্যে অনেক লোক ছিল। তাঁদের মধ্যে ছিলেন উমর ইবনু খাত্তাব (রাদি.)। নাবী (সাঃআঃ) বললেনঃ তোমরা এসো, আমি তোমাদের জন্য লিখে যাব যাতে তার পরে তোমরা কক্ষনো পথভ্রষ্ট হইবে না। উমর (রাদি.) মন্তব্য করিলেন, নাবী (সাঃআঃ) খুবই কষ্টে নিপতিত। তোমাদের কাছে কুরআন আছে, আল্লাহর এই কিতাবই আমাদের জন্য যথেষ্ট। এ সময় গৃহে অবস্থানকারীদের মধ্যে মতভেদ সৃষ্টি হল এবং তারা বিতর্কে লিপ্ত হল। তাঁদের মধ্যে কেউ কেউ বলিল, তাহাঁর কাছে যাও, রাসুলুল্লাহ (সাঃআঃ) তোমাদের জন্য লিখে দেবেন যাতে তাহাঁর পরে তোমরা কক্ষনো পথহারা হইবে না। আবার কেউ কেউ তাই বলিলেন যা উমর (রাদি.) বলেছিলেন। যখন নাবী (সাঃআঃ) – এর সামনে তাদের কথা কাটাকাটি এবং মতপার্থক্য বেড়ে গেল, তখন তিনি বললেনঃ তোমরা আমার নিকট হইতে উঠে যাও। (আঃপ্রঃ- ৬৮৫৩, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৬৮৬৫)

বর্ণনাকারী উবাইদুল্লাহ বলেন, ইবনু আব্বাস (রাদি.) বলিতেন, সমস্ত জটিলতার মূল ছিল তা-ই, যা রাসুলুল্লাহ (সাঃআঃ) ও তাহাঁর লেখার মাঝখানে বাধা সৃষ্টি করেছিল । সেটা ছিল তাদের মতবিরোধ ও কথা কাটাকাটি ।

৯৬/২৭. অধ্যায়ঃ নাবী (সাঃআঃ)র নিষেধাজ্ঞা দ্বারা হারাম সাব্যস্ত হয়।

তবে অন্য দলীলের দ্বারা যা মুবাহ হওয়া প্রমাণিত সেটি ছাড়া। তেমনি তাহাঁর নির্দেশ দ্বারা ওয়াজিব সাব্যস্ত হয়। তবে অন্য দলীল দ্বারা তা মুবাহ হওয়া প্রমাণিত হলে ভিন্ন কথা, যেমন নাবী (সাঃআঃ)র বাণীঃ যখন তোমরা হালাল (ইহরাম থেকে) হয়ে যাও, নিজ স্ত্রীর সাথে সহবাস করিবে।

জাবির (রাদি.) বলেন, এ কাজ তাদের জন্য ওয়াজিব করা হয়নি । বরং তাদের জন্য (স্ত্রী ব্যবহার) হালাল করা হয়েছে । উম্মু আতীয়্যা (রাদি.) বলেছেন, আমাদেরকে (অর্থাৎ মহিলাদেরকে) জানাযার সাথে যেতে নিষেধ করা হয়েছে । এ নিষেধাজ্ঞা আমাদের উপর বাধ্যতামূলক নয় ।

৭৩৬৭

আতা (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, আমি জাবির ইবন আবদুল্লাহকে এ কথা বলিতে শুনিয়াছি যে, তাহাঁর সাথে আরো কিছু লোক ছিল। তিনি বলেন, আমরা রাসুলুল্লাহ (সাঃআঃ) – এর সাহাবীগণ কেবল হজ্জের নিয়তে ইহরাম বেঁধেছিলাম। এর সাথে উমরার নিয়ত ছিল না। বর্ণনাকারী আতা (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) বলেন, জাবির (রাদি.) বলেছেন, নাবী (সাঃআঃ) যিলহজ্জ মাসের চার তারিখ সকাল বেলায় (মক্কায়) আসলেন। এরপর আমরাও যখন আসলাম, তখন নাবী (সাঃআঃ) আমাদের ইহরাম খুলে ফেলার হুকুম করিলেন। তিনি বললেনঃ তোমরা ইহরাম খুলে ফেল এবং স্ত্রীদের সাথে মিলিত হও। (রাবী) আতা (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) বর্ণনা করেন, জাবির (রাদি.) বলেছেন, (স্ত্রী সহবাস) তিনি তাদের উপর বাধ্যতামূলক করেননি বরং বৈধ করিয়াছেন। এরপর তিনি জানতে পারেন যে, আমরা বলাবলি করছি আমাদের ও আরাফার দিনের কেবল পাঁচদিন বাকী। তিনি আমাদেরকে আদেশ করিয়াছেন যে, আমরা ইহরাম খুলে স্ত্রীদের সঙ্গে মিলিত হই। তখন আমরা আরাফায় পৌঁছব আর আমাদের পুরুষাঙ্গ থেকে মযী বের হইতে থাকবে। আতা বলেন, জাবির (রাদি.) এ কথা বোঝানোর জন্য হাত দ্বারা ইশারা করেছিলেন কিংবা হাত নেড়েছিলেন। রাসুলুল্লাহ (সাঃআঃ) দাঁড়ালেন এবং বললেনঃ তোমরা জান, আমি তোমাদের মধ্যে আল্লাহকে বেশী ভয় করি, তোমাদের চেয়ে আমি বেশী সত্যবাদী ও নিষ্ঠাবান। আমার সাথে যদি কুরবানীর পশু না থাকত, আমিও তোমাদের মত ইহরাম খুলে ফেলতাম। সুতরাং ইহরাম খুলে ফেল। আমি যদি আমার কাজের পরিণাম আগে জানতাম যা পরে জেনেছি তবে আমি কুরবানীর পশু সঙ্গে আনতাম না। কাজেই আমরা ইহরাম খুলে ফেললাম। নাবী (সাঃআঃ) – এর [মুসলিম ১৫/১৭, হাদীস ১২১৬, আহমাদ ১৪২৪২] (আঃপ্রঃ- ০০০০, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৬৮৬১)

আদেশ শোনলাম এবং তাহাঁর আনুগত্য করলাম।

৭৩৬৮

আবদুল্লাহ মুযানী (রা:) হইতে বর্ণিতঃ

নাবী (সাঃআঃ) হইতে বর্ণিত। তিনি বলেছেনঃ মাগরিবের সালাতের আগে তোমরা সালাত আদায় করিবে। তবে তৃতীয়বারে তিনি বললেনঃ লোকেরা এটাকে সুন্নাত হিসেবে গ্রহণ করুক-এটা অপছন্দ করার কারণে তিনি তৃতীয়বারে বলিলেন- যার ইচ্ছে সে আদায় করিবে। (আঃপ্রঃ- ৬৮৫০, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৬৮৬২)

৯৬/২৮. অধ্যায়ঃ মহান আল্লাহর বাণীঃ তারা নিজেদের মাঝে পরামর্শের ভিত্তিতে নিজেদের কর্ম সম্পাদন করে। (সুরা আশ-শূরা ৪২/৩৮)

এবং পরামর্শ করো তাঁদের সঙ্গে (দীনী) কাজের ব্যাপারে। পরামর্শ হলো স্থির সিদ্ধান্ত গ্রহণ ও লক্ষ্য নির্ধারণের পূর্বে। যেমন, আল্লাহর বাণীঃ “অতঃপর যখন তুমি দৃঢ়সংকল্প হও, তখন আল্লাহর উপর ভরসা কর”-(সুরা আল্‌ ইমরান ৩/১৫৯)। রাসুলুল্লাহ (সাঃআঃ) যখন কোন বিষয়ে দৃঢ়সংকল্প হন, তখন আল্লাহ ও তাহাঁর রসূলের মতের বিপক্ষে যাওয়ার কারো কোন অধিকার থাকে না। উহূদের যুদ্ধের দিনে নাবী (সাঃআঃ) তাহাঁর সাহাবীদের সঙ্গে এ পরামর্শ করেন যে, যুদ্ধ কি মদীনায় থেকে চালাবেন, না বাইরে গিয়ে? সহাবাগণ মদীনা হইতে বাইরে গিয়ে যুদ্ধ করার রায় দিলেন। রাসুলুল্লাহ (সাঃআঃ) যুদ্ধের পোশাক পরলেন এবং যখন যুদ্ধের জন্য দৃঢ়সংকল্প হলেন, তখন সাহাবীগণ আবেদন জানালেন, মদীনা হইতেই অবস্থান করুন। কিন্তু তিনি দৃঢ়সংকল্প হবার পর তাঁদের এ মতামতের প্রতি ভ্রূক্ষেপ করিলেন না। তিনি মন্তব্য করলেনঃ কোন নাবীর সামরিক পোশাক পরার পর আল্লাহর পক্ষ থেকে হুকুম না পাওয়া পর্‍যন্ত তা খুলে ফেলা উচিত নয়।

তিনি আলী (রাদি.) ও উসামা (রাদি.) – এর সঙ্গে আয়েশার উপর যিনার মিথ্যা অপবাদ লাগানো সম্পর্কে পরামর্শ করেন। তাঁদের কথা তিনি শোনেন। অতঃপর কুরআনের আয়াত নাযিল হয়। মিথ্যা অপবাদকারীদেরকে তিনি বেত্রাঘাত করেন। তাঁদের পারস্পরিক মতপার্থক্যের প্রতি লক্ষ্য না করে আল্লাহর নির্দেশনা মোতাবেক সিদ্ধান্ত নেন।

নাবী (সাঃআঃ) – এর পরে ইমামগণ মুবাহ বিষয়ে বিশ্বস্ত আলেমদের কাছে পরামর্শ চান, যেন তুলনামূলক সহজ পথ তারা গ্রহণ করিতে পারেন। হাঁ, যদি কিতাব কিংবা সুন্নাহতে আলোচ্য ব্যাপারে কোন স্পষ্ট ব্যাখ্যা পাওয়া যেত, তখন তারা নাবী (সাঃআঃ) – এর কথারই অনুসরণ করিতেন, অন্য কারো কথার প্রতি ভ্রূক্ষেপ করিতেন না।

(নাবী (সাঃআঃ) – এর অনুসরণেই) যাকাত যারা বন্ধ করেছিল, আবু বক্‌র (রাদি.) তাঁদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করার সিদ্ধান্ত নেন। উমর (রাদি.) তখন বলিলেন, আপনি কিভাবে লোকদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করবেন, অথচ রাসূলুল্লাহ (সাঃআঃ) বলেছেনঃ আমি ততক্ষণ তাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করিতে আদিষ্ট হয়েছি, যতক্ষণ না তারা বলবে লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ। তারা যখন লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ বলবে তখন তারা আমার নিকট হইতে তাদের জীবন ও সম্পদের নিরাপত্তা লাভ করিবে। তবে ইসলামের হকের ব্যাপার আলাদা। আর সে ব্যাপারে তাদের হিসাব-নিকাশ আল্লাহর উপর। আবু বক্‌র (রাদি.) বলিলেন, আল্লাহর কসম! আমি তাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ অবশ্যই করব, যারা এমন বিষয় বিচ্ছিন্ন করে যা রাসুলুল্লাহ (সাঃআঃ) সুসংহত করিয়াছেন। অবশেষে উমর (রাদি.) তাহাঁর সিদ্ধান্ত মেনে নিলেন। আবু বক্‌র (রাদি.) এ ব্যাপারে (কারো সঙ্গে) পরামর্শ করার প্রয়োজনীয়তা অনুভব করেননি। কেননা, যারা সালাত ও যাকাতের মধ্যে ফারাক সৃষ্টি করে এবং ইসলাম-এর নির্দেশাবলী পরিবর্তন ও বিকৃত করার চেষ্টা করে, তাদের বিরুদ্ধে রাসুলুল্লাহ (সাঃআঃ) – এর সিদ্ধান্ত তাহাঁর সামনে বিদ্যমান ছিল। কেননা, নাবী (সাঃআঃ) বলেছেনঃ যে ব্যক্তি নিজের দ্বীনকে পরিবর্তন করে তাকে হত্যা কর।

উমর (রাদি.) – এর পরামর্শ সভার সদস্যগণ কুরআন বিশেষজ্ঞ ছিলেন। তারা অধিক বয়স্কই হোন কিংবা যুবক। আল্লাহর কিতাব সম্পর্কে উমর (রাদি.) ছিলেন খুব ওয়াকেফহাল।

৭৩৬৯

আয়েশা (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ

যখন মিথ্যা অপবাদকারীরা আয়েশার বিরুদ্ধে ভিত্তিহীন অপবাদ রটিয়েছিল। তিনি বলেন, ওয়াহী আসতে বিলম্ব হচ্ছিল, তখন রাসুলুল্লাহ (সাঃআঃ) আলী ইবনু আবু ত্বলিব ও উসামা ইবনু যায়িদের কাছে কিছু পরামর্শ করার জন্য তাদের ডাকলেন। এবং তাহাঁর স্ত্রী আয়েশা (রাদি.) – কে পৃথক করে দেয়া সম্পর্কে পরামর্শ চাইলেন। উসামা (রাদি.) নাবী (সাঃআঃ) – এর পরিবারের পবিত্রতার ব্যাপারে তাহাঁর যা জানা ছিল তা উল্লেখ করিলেন। আর আলী (রাদি.) বলিলেন, আল্লাহ আপনার জন্য তো কোন সীমাবদ্ধতা রাখেন নি। স্ত্রীলোক তিনি ছাড়া আরও অনেক আছেন। আপনি বাঁদীটির কাছে জিজ্ঞেস করুন, সে আপনাকে সত্য যা, তাই বলবে। তখন রাসুলুল্লাহ (সাঃআঃ) বারীরাকে ডাকলেন। তাঁকে জিজ্ঞেস করিলেন, তুমি কি সন্দেহের কিছু দেখেছ? তিনি বলিলেন, আমি এছাড়া আর অধিক কিছু জানিনা যে, আয়েশা (রাদি.) হচ্ছে অল্পবয়স্কা মেয়ে। তিনি নিজের ঘরের আটা পিষে ঘুমিয়ে পড়েন, এই অবস্থায় বক্‌রী এসে তা খেয়ে ফেলে। এরপর নাবী (সাঃআঃ) মিম্বরে দাঁড়িয়ে বললেনঃ হে মুসলিমগণ। যে ব্যক্তি আমার পরিবারের অপবাদ রটিয়ে আমাকে কষ্ট দিয়েছে তার প্রতিকার করিতে আমাকে সাহায্য করার মত কেউ আছ কি? আল্লাহর শপথ! আমি আমার পরিবারের ব্যাপারে ভালো ব্যতীত মন্দ কিছুই জানি না এবং তিনি আয়েশা (রাদি.) – এর পবিত্রতার কথা উল্লেখ করিলেন। (আঃপ্রঃ- ৬৮৫৪, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৬৮৬৬)

৭৩৭০

আয়েশা (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ

রাসুলুল্লাহ (সাঃআঃ) লোকদের (সামনে) খুতবাহ দিলেন। আল্লাহর প্রশংসা ও গুণগান করিলেন। এরপর তিনি বললেনঃ যারা আমার স্ত্রীর অপবাদ রটিয়ে বেড়াচ্ছে, তাদের সম্পর্কে তোমরা আমাকে কী পরামর্শ দাও। আমি আমার পরিবারের কারো মধ্যে কক্ষনো খারাপ কিছু দেখি নি।

উরওয়াহ (রাদি.) হইতে বর্ণিত। তিনি বলেন, আয়েশাকে সেই অপবাদ সম্পর্কে জানানো হলে তিনি বলিলেন, হে আল্লাহর রাসুল! আমাকে আমার পরিজনের (বাবা-মার) কাছে যাবার অনুমতি দিবেন কি? তখন রাসুল (সাঃআঃ) অনুমতি দিলেন এবং তাহাঁর সঙ্গে একজন গোলামও পাঠালেন। এক আনসারী বলিলেন, তুমিই পবিত্র, হে আল্লাহ! এ ধরনের কথা বলা আমাদের উচিত নয়। এটা তো এক বিরাট অপবাদ, তোমারই পবিত্রতা হে আল্লাহ! (আঃপ্রঃ- ৬৮৫৫, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৬৮৬৭)

Comments

Leave a Reply