কুরআন সাত হরফে অবতীর্ণ হওয়ার বিবরণ ও এর যথার্থতা
কুরআন সাত হরফে অবতীর্ণ হওয়ার বিবরণ ও এর যথার্থতা >> সহীহ মুসলিম শরীফ এর মুল সুচিপত্র দেখুন >> নিম্নে মুসলিম শরীফ এর একটি অধ্যায়ের হাদিস পড়ুন
১৬. অধ্যায়ঃ কুরআন সাত হরফে অবতীর্ণ হওয়ার বিবরণ ও এর যথার্থতা
১৭৮৪. আবদুর রহমান ইবনি আবদুল ক্বারী [রহমাতুল্লাহি আলাইহি] হইতে বর্ণীতঃ
তিনি বলেন, আমি উমর ইবনিল খাত্ত্বাব [রাদি.]-কে বলিতে শুনেছি, আমি যেভাবে সুরা আল ফুরক্বান তিলাওয়াত করি হিশাম ইবনি হাকীম ইবনি হিযাম [রাদি.]-কে অন্যভাবে তিলাওয়াত করিতে শুনলাম অথচ রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] এ সূরাটি আমাকে এভাবে পড়িয়েছিলেন। তৎক্ষণাৎ আমি তাকে বাধা দিতে যাচ্ছিলাম। কিন্তু পরক্ষণেই আবার তাকে পড়ে শেষ করার অবকাশ দিলাম। তারপর তাকে গলায় চাদর জড়িয়ে রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ]-এর কাছে নিয়ে গিয়ে বললাম : হে আল্লাহর রসূল! আপনি আমাকে যেভাবে সুরা আল ফুরক্বান পড়তে শিখিয়েছিলেন এ লোকটি তার থেকে ভিন্ন রকম করে সূরাটি পড়তে শুনেছি। এ কথা শুনে তিনি বললেনঃ তাকে ছেড়ে দাও। তারপর তাকে লক্ষ্য করে বলিলেন- তুমি পড়। তখন সে আবার সেভাবে পড়ল যেভাবে আমি তাকে পড়তে শুনেছিলাম। তারপর পড়ার পর রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] বললেনঃ এটি এভাবেই অবতীর্ণ হয়েছে। অতঃপর তিনি আমাকে লক্ষ্য করে বলিলেন, তুমি পড়। সুতরাং আমি পড়লেও তিনি বললেনঃ এভাবেই অবতীর্ণ হয়েছে। এর মধ্যে যতটুকু যেভাবে তোমাদের কাছে সহজ সেভাবেই পড়।
[ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ১৭৬৯, ইসলামিক সেন্টার- ১৭৭৬]
১৭৮৫. উমর ইবনিল খাত্ত্বাব [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
তিনি বলেন, আমি রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ]-এর জীবদ্দশায় হিশাম ইবনি হাকীম [ইবনি হিযাম]-কে সূরা আল ফুরক্বান পড়তে শুনেছি। এতটুকু বর্ণনা করার পর তিনি পরের অংশটুকু পূর্ববর্তী হাদীসের অনুরূপ বর্ণনা করিলেন। তবে এতে এতটুকু কথা অতিরিক্ত আছে, আমি তাকে নামাজের মধ্যেই বাধা দিতে যাচ্ছিলাম। অবশেষে সালাম ফিরানো পর্যন্ত ধৈর্য ধারণ করলাম।
[ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ১৭৭০, ইসলামিক সেন্টার- ১৭৭৭]
১৭৮৬. যুহরী [রহমাতুল্লাহি আলাইহি] হইতে বর্ণীতঃ
ইউনুস [রহমাতুল্লাহি আলাইহি] থেকে সানাদসহ হাদীসের অনুরূপ বর্ণনা করিয়াছেন।
[ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ১৭৭১, ইসলামিক সেন্টার- ১৭৭৮]
১৭৮৭. আবদুল্লাহ ইবনি আব্বাস [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলেছেনঃ জিব্রীল [আঃ] আমাকে একটি রীতিতে কুরআন মাজীদ পড়ালে আমি তা পড়ে নিলাম। আমি তার কাছে অতিরিক্ত চাইলে তিনি অতিরিক্ত বা অন্য রীতিতে পড়ে শুনতাম। এভাবে তিনি সাত সাতটি রীতি বা আঞ্চলিক নিয়মে আমাকে কুরআন মাজীদ পড়ে শুনিয়েছেন।
ইবনি শিহাব বলেছেনঃ আমি এ মর্মে অবহিত হয়েছি যে, এ সাতটি পদ্ধতি, রীতি বা নিয়মে কুরআন মাজীদ পড়ার কারণে হালাল হারামের ব্যাপারে কোন পার্থক্য সৃষ্টি হয় না বরং তা একই থাকে।
[ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ১৭৭২, ইসলামিক সেন্টার- ১৭৭৯]
১৭৮৮. যুহরী [রহমাতুল্লাহি আলাইহি] হইতে বর্ণীতঃ
একই সানাদে হাদীসটি বর্ণনা করিয়াছেন।
[ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ১৭৭৩, ইসলামিক সেন্টার- ১৭৮০]
১৭৮৯. উবাই ইবনি কাব [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
তিনি বলেন, আমি মাসজিদে থাকা অবস্থায় জনৈক ব্যক্তি তাতে প্রবেশ করে নামাজ শুরু করিল। সে এমন পদ্ধতিতে ক্বিরাআত পড়ল যা আমার নিকট অভিনব মনে হল। অতঃপর আরেক ব্যক্তি প্রবেশ করে আগের ব্যক্তি থেকে ভিন্নতর [পদ্ধতিতে] ক্বিরাআত পড়ল। আমরা নামাজ শেষ করে সকলে নবী [সাঃআঃ]-এর নিকট প্রবেশ করলাম। আমি বললাম, এ ব্যক্তি এমন [পদ্ধতিতে] ক্বিরাআত পড়েছে যে, আমার নিকট অভিনব মনে হয়েছে। অতঃপর আরেকজন প্রবেশ করে তার পূর্ববর্তী জনের থেকে ভিন্নতর [পদ্ধতিতে] ক্বিরাআত পড়েছে। রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] তাদের উভয়ের ক্বিরাআত সম্পর্কে উত্তম মন্তব্য করিলেন। এতে আমার মনে মিথ্যা অবিশ্বাসের উদ্রেক হল, এমনকি জাহিলী যুগেও এমন তীব্র অবিশ্বাসের উদ্রেক হয়নি। আমাকে যে চিন্তা আচ্ছন্ন করেছিল, রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] তার প্রতিক্রিয়া লক্ষ্য করে আমার বক্ষস্থলে আঘাত করিলেন। এতে আমি ঘর্মাক্ত হয়ে পড়লাম। যেন আমি ভীত-বুহ্বল হয়ে মহামহিম আল্লাহর দিকে তাকিয়ে আছি। তিনি [সাঃআঃ] আমাকে বললেনঃ হে উবাই! আমার নিকট বার্তা পাঠানো হয়েছে যে, আমি যেন এক হরফে [উচ্চারণ পদ্ধতিতে] কুরআন পড়ি। আমি অনুরোধ করে বললাম, আমার উম্মতের প্রতি সহজসাধ্য করুন। আমাকে প্রত্যুত্তরে বলা হল, তা দু হরফে [পদ্ধতিতে] পড়ুন। আমি তাঁকে পুনরায় অনুরোধ করলাম যে, আমার উম্মতের প্রতি সহজসাধ্য করুন। তৃতীয়বারে আমাকে বলা হল, তা সাত হরফে [পদ্ধতিতে] পাঠ করুন এবং আমার এ সাতবারের প্রতিবার প্রত্যুত্তরের পরিবর্তে আপনার জন্য একটি করে কিছু আমার নিকট প্রার্থনা করিতে পারেন [যা আমি কবুল করব]। আমি বললাম, হে আল্লাহ ! আমার উম্মাতকে ক্ষমা করুন, হে আল্লাহ ! আমার উম্মাতকে ক্ষমা করুন। আর তৃতীয় প্রার্থনাটি আমি সেদিনের জন্য স্থগিত করে রেখেছি, যেদিন সমগ্র সৃষ্টি, এমনকি ইব্রাহীম [আঃ] পর্যন্ত আমার প্রতি আগ্রহান্বিত হইবেন।
[ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ১৭৭৪, ইসলামিক সেন্টার- ১৭৮১]
১৭৯০. আবদুর রহমান ইবনি আবু লায়লা [রহমাতুল্লাহি আলাইহি] হইতে বর্ণীতঃ
তিনি বলেন, আমাকে উবাই ইবনি কাব [রাদি.] অবহিত করিয়াছেন যে, তিনি মাসজিদে উপবিষ্ট থাকাবস্থায় জনৈক ব্যক্তি প্রবেশ করে নামাজ আদায় করিল। তিমি এমন এক পদ্ধতিতে ক্বিরাআত পড়লেন… বর্ণনাকারী সংক্ষেপে উপরোক্ত হাদীসের অনুরূপ হাদীস বর্ণনা করিয়াছেন।
[ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ১৭৭৫, ইসলামিক সেন্টার- ১৭৮২]
১৭৯১. উবাই ইবনি কাব [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] গিফার গোত্রের জলাশয়ের [কূপের] নিকট ছিলেন। তখন জিব্রীল [আঃ] তাহাঁর নিকট এসে বলেন, নিশ্চয় আল্লাহ আপনাকে এ নির্দেশ দিয়েছেন যে, আপনি আপনার উম্মাতকে এক হার্ফে [পদ্ধতিতে] কুরআন পড়ান। তিনি বলেনঃ আমি আল্লাহর নিকট তাহাঁর মার্জনা ও ক্ষমা প্রার্থনা করি। নিশ্চয় আমার উম্মাত এতে সমর্থ হইবে না। জিব্রীল [আঃ] তৃতীয়বার এসে বলেন, নিশ্চয় আল্লাহ আপনাকে এ নির্দেশ দিয়েছেন যে, আপনি যেন আপনার উম্মাতকে তিন হার্ফে [পদ্ধতিতে] কুরআন পড়ান। তিনি বলেনঃ নিশ্চয় আমার উম্মাত এতে সমর্থ হইবে না। আমি আল্লাহর নিকট তাহাঁর মার্জনা ও ক্ষমা প্রার্থনা করি। জিব্রীল [আঃ] চতুর্থবার তাহাঁর নিকট এসে বলেন, নিশ্চয় আল্লাহ আপনাকে এ নির্দেশ দিয়েছেন যে, আপনি যেন আপনার উম্মাতকে সাত হার্ফে [পদ্ধতিতে] কুরআন শিক্ষা দেন। তারা এর যে কোন একটি পদ্ধতিতে পাঠ করলে তা যথার্থ হইবে।
[ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ১৭৭৬, ইসলামিক সেন্টার- ১৭৮৩]
১৭৯২. শুবাহ্ [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
একই সানাদে অনুরূপ বর্ণিত হয়েছে।
[ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ১৭৭৭, ইসলামিক সেন্টার- ১৭৮৪]
Leave a Reply