পবিত্র কুরআন পড়ার ফযীলত। বিশেষ সূরা ও আয়াত
পবিত্র কুরআন পড়ার ফযীলত। বিশেষ সূরা ও আয়াত >> রিয়াদুস সালেহীন হাদিস শরীফ এর মুল সুচিপত্র দেখুন >> নিম্নে রিয়াদুস সালেহীন হাদিস শরীফ এর 5 টি পরিচ্ছেদের হাদিস পড়ুন
পবিত্র কুরআন পড়ার ফযীলত। বিশেষ সূরা ও আয়াত
রিচ্ছেদ – ১৮০ঃ পবিত্র কুরআন পড়ার ফযীলত
পরিচ্ছেদ – ১৮১ঃ কুরআন মাজীদ সযত্নে নিয়মিত পড়া ও তা ভুলে যাওয়া থেকে সতর্ক থাকার নির্দেশ
পরিচ্ছেদ – ১৮২ঃ সুললিত কণ্ঠে কুরআন পড়া মুস্তাহাব। মধুরকণ্ঠ কারীকে তা পড়ার আবেদন করা ও তা মনোযোগ সহকারে শোনা প্রসঙ্গে
পরিচ্ছেদ – ১৮৩ঃ বিশেষ বিশেষ সূরা ও আয়াত পাঠ করার উপর উৎসাহ দান
পরিচ্ছেদ – ১৮৪ঃ কুরআন পঠন-পাঠনের জন্য সমবেত হওয়া মুস্তাহাব
পরিচ্ছেদ – ১৮০: পবিত্র কুরআন পড়ার ফযীলত
৯৯৮. আবু উমামাহ রাঃআঃ হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, আমি রাসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম)-কে এ কথা বলতে শুনেছি যে, “তোমরা কুরআন মাজীদ পাঠ কর । কেননা, কিয়ামতের দিন কুরআন, তার পাঠকের জন্য সুপারিশকারী হিসাবে আগমন করিবে ।”(মুসলিম)
(মুসলিম ৮০৪, আহমাদ ২১৬৪২, ২১৬৫৩, ২১৬৮১, ২১৭১০)হাদীসটির মানঃ সহীহ হাদীস
৯৯৯. নাওয়াস ইবনে সামআন রাঃআঃ হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, আমি রসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম)-কে এ কথা বলতে শুনেছি যে, “কুরআন ও ইহজগতে তার উপর আমলকারীদেরকে (বিচারের দিন মহান আল্লাহর সামনে) পেশ করা হবে । সূরা বাকারাহ ও সূরা আলে ইমরান তার আগে আগে থাকবে এবং তাদের পাঠকারীদের স্বপক্ষে (প্রভুর সঙ্গে) বাদানুবাদে লিপ্ত হবে ।
(মুসলিম ৮০৫, তিরমিজী ২৮৮৩, আহমাদ ১৭১৮৫) হাদীসটির মানঃ সহীহ হাদীস
১০০০. উসমান ইবনে আফ্ফান রাঃআঃ হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, রসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেছেন, “তোমাদের মধ্যে সর্বশ্রেষ্ঠ ব্যক্তি সেই, যে নিজে কুরআন শিখে ও অপরকে শিক্ষা দেয় ।”(বুখারী)
(সহীহুল বুখারী শরীফ ৫০২৭, ৫০২৮, তিরমিজী ২৯০৭, ২৯০৮, আবু দাঊদ ১৪৫২, ইবনু মাজাহ ২১১, আহমাদ ৫০৭, ৪১৪, ৫০২, দারেমী ৩৩২৮)হাদীসটির মানঃ সহীহ হাদীস
১০০১.আয়েশা রাঃআঃ হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, রসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেছেন, “কুরআনের (শুদ্ধ ভাবে পাঠকারী ও পানির মত হিফয্কারী পাকা) হাফেয মহাসম্মানিত পুণ্যবান লিপিকার (ফেরেশতাবর্গের) সঙ্গী হবে । আর যে ব্যক্তি (পাকা হিফ্য না থাকার কারণে) কুরআন পাঠে ‘ওঁ-ওঁ’ করে এবং পড়তে কষ্টবোধ করে, তার জন্য রয়েছে দু’টি সওয়াব।” (একটি তেলাওয়াত ও দ্বিতীয়টি কষ্টের দরুন।)
(বুখারী, মুসলিম ৭৯৮নং) (সহীহুল বুখারী শরীফ ৪৯৩৭, মুসলিম ৭৯৮, তিরমিজী ২৯০৪, আবু দাঊদ ১৪৫৪, ইবনু মাজাহ ৩৭৭৯, আহমাদ ২৩৬৯১, ২৪১১৩, ২৪১৪৬, ২৪২৬৭, দারেমী ৩৩৬৮)হাদীসটির মানঃ সহীহ হাদীস
১০০২. আবু মুসা আশআরী রাঃআঃ হইতে বর্ণিতঃ
রসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেছেন, “কুরআন পাঠকারী মুমিনের উদাহরণ হচ্ছে ঠিক কমলা লেবুর মত; যার ঘ্রাণ উত্তম এবং স্বাদও উত্তম । আর যে মুমিন কুরআন পড়ে না তার উদাহরণ হচ্ছে ঠিক খেজুরের মত; যার (উত্তম) ঘ্রাণ তো নেই, তবে স্বাদ মিষ্ট। (অন্যদিকে) কুরআন পাঠকারী মুনাফিকের দৃষ্টান্ত হচ্ছে সুগন্ধিময় (তুলসী) গাছের মত; যার ঘ্রাণ উত্তম, কিন্তু স্বাদ তিক্ত। আর যে মুনাফিক কুরআন পড়ে না তার উদাহরণ হচ্ছে ঠিক মাকাল ফলের মত; যার (উত্তম) ঘ্রাণ নেই, স্বাদও তিক্ত।”
(বুখারী, মুসলিম) (সহীহুল বুখারী শরীফ ৫০২০, ৫৪২৭, ৫০৫৯, ৭৫৬০, মুসলিম ৭৯৭, তিরমিজী ২৮৬৫, নাসাঈ ৫০৩৮, আবু দাঊদ ৪৮২৯, ইবনু মাজাহ ২১৪, আহমাদ ১৯০৫৫, ১৯১১৭, ১৯১৬৫, দারেমী ৩৩৬৩)হাদীসটির মানঃ সহীহ হাদীস
১০০৩. উমার ইবনে খাত্তাব রাঃআঃ হইতে বর্ণিতঃ
রসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেছেন, “মহান আল্লাহ এই গ্রন্থ (কুরআন মাজীদ) দ্বারা (তার উপর আমলকারী) জনগোষ্ঠীর উত্থান ঘটান এবং এরই দ্বারা (এর অবাধ্য) অন্য গোষ্ঠীর পতন সাধন করেন ।”
(মুসলিম ৮১৭, ইবনু মাজাহ ২১৮, আহমাদ ২৩৩, দারেমী ৩৩৬৫) হাদীসটির মানঃ সহীহ হাদীস
১০০৪. আব্দুল্লাহ ইবনে উমার রাঃআঃ হইতে বর্ণিতঃ
রসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেছেন, “দু’জনের ক্ষেত্রে ঈর্ষা করা সিদ্ধ । (১) যাকে আল্লাহ কুরআন (মুখস্থ করার শক্তি) দান করিয়াছেন, সুতরাং সে ওর (আলোকে) দিবা-রাত্রি পড়ে ও আমল করে । (২) যাকে আল্লাহ তা‘আলা মালধন দান করিয়াছেন এবং সে (আল্লাহর পথে) দিন-রাত ব্যয় করে ।”
সহীহুল বুখারী শরীফ ৫০২৫, ৭৫২৯, মুসলিম ৮১৫, তিরমিজী ১৯৩৬, ইবনু মাজাহ ৪২০৯, আহমাদ ৪৫৩৬, ৪৯০৫, ৫৫৮৬, ৬১৩২, ৬৩৬৭) হাদীসটির মানঃ সহীহ হাদীস
১০০৫.বারা’ ইবনে আযেব রাঃআঃ হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, একদা একটি লোক সূরা কাহাফ পাঠ করছিল । তার পাশেই দুটো রশি দিয়ে একটি ঘোড়া বাঁধা ছিল । ইতোমধ্যে লোকটিকে একটি মেঘে ঢেকে নিলো । মেঘটি লোকটির নিকটবর্তী হইতে থাকলে ঘোড়াটি তা দেখে চমকাতে আরম্ভ করল । অতঃপর যখন সকাল হলো তখন লোকটি রসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম)-এর দরবারে হাজির হয়ে উক্ত ঘটনা বর্ণনা করল । তা (শুনে) তিনি বললেন, “ওটি প্রশান্তি ছিল, যা তোমার কুরআন পড়ার দরুন অবতীর্ণ হয়েছে ।”
(সহীহুল বুখারী শরীফ ৫০১১, ৩৬১৪, ৪৮৩৯, মুসলিম ৭৯৫, তিরমিজী ২৮৮৫, আহমাদ ১৮০০৬, ১৮০৩৮, ১৮১১৮, ১৮১৬৩) হাদীসটির মানঃ সহীহ হাদীস
১০০৬. আব্দুল্লাহ ইবনে মাসঊদ রাঃআঃ হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, রসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেছেন, “যে ব্যক্তি আল্লাহর কিতাব (কুরআন মাজীদ)এর একটি বর্ণ পাঠ করিবে, তার একটি নেকী হবে । আর একটি নেকী দশটি নেকীর সমান হয় । আমি বলছি না যে, ‘আলিফ-লাম-মীম’ একটি বর্ণ; বরং আলিফ একটি বর্ণ, লাম একটি বর্ণ এবং মীম একটি বর্ণ ।” (অর্থাৎ তিনটি বর্ণ দ্বারা গঠিত ‘আলিফ-লাম-মীম, যার নেকীর সংখ্যা হবে ত্রিশ ।
(তিরমিজী, হাসান) (তিরমিজী ২৯১০) হাদীসটির মানঃ সহীহ হাদীস
১০০৭. আবদুল্লাহ ইবনু ‘আব্বাস রাঃআঃ হইতে বর্ণিতঃ
রসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেছেন: কুরআনের কোনো অংশই যে ব্যক্তির পেটে নেই সে (সেই পেট বা উদর) বিরান ঘরের সমতুল্য । (তিরমিযি) যইফ । (আমি (আলবানী) বলছিঃ অর্থাৎ যে কুরআনের কিছু অংশ হেফয না করিবে । হাদীসটির দুর্বল হওয়ার ব্যাপারে আমি “আলমিশকাত” গ্রন্থে (নং ২১৩৫) আলোচনা করেছি । হাদীসটির সনদকে “মুসনাদু আহমাদ” এর তাহকীক্ব করতে গিয়ে শু‘য়াইব আলআরনাঊতও দুর্বল আখ্যা দিয়েছেন । এর সনদে কাবূস ইবনু আবী যিবইয়ান নামক এক বর্ণনাকারী রয়েছেন তিনি দুর্বল ।
(তিরমিজী ২৯১৩, আহমাদ ১৯৪৮, দারেমী ৩৩০৬, ইয়াহইয়া ইবন মুঈন একে দুর্বল বলেছেন ।) হাদীসটির মানঃ দুর্বল হাদীস
১০০৮. আব্দুল্লাহ ইবনে আম্র ইবনে আস রাঃআঃ হইতে বর্ণিতঃ
রসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেছেন, “পবিত্র কুরআনের পাঠক, হাফেয ও তার উপর আমলকারীকে (কিয়ামতের দিন) বলা হবে, ‘তুমি কুরআন করীম পড়তে থাক ও চড়তে থাক । আর ঠিক সেইভাবে স্পষ্ট ও ধীরে ধীরে পড়তে থাক, যেভাবে দুনিয়াতে পড়তে । কেননা, (জান্নাতের ভিতর) তোমার স্থান ঠিক সেখানে হবে, যেখানে তোমার শেষ আয়াতটি খতম হবে ।
(আবু দাঊদ, তিরমিজী হাসান)(আবু দাঊদ ১৪৬৪, তিরমিজী ২৯১৪, আহমাদ ৬৭৬০) হাদীসটির মানঃ হাসান হাদীস
পরিচ্ছেদ – ১৮১: কুরআন মাজীদ সযত্নে নিয়মিত পড়া ও তা ভুলে যাওয়া থেকে সতর্ক থাকার নির্দেশ
১০০৯. আবু মুসা আশআরী রাঃআঃ হইতে বর্ণিতঃ
রসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেছেন, “এই কুরআনের প্রতি যত্ন নাও (অর্থাৎ, নিয়মিত পড়তে থাক ও তার চর্চা রাখ ।) সেই মহান সত্তার কসম, যাঁর হাতে মুহাম্মদের জীবন আছে, উট যেমন তার রশি থেকে অতর্কিতে বের হয়ে যায়, তার চেয়ে অধিক অতর্কিতে কুরআন (স্মৃতি থেকে) বের হয়ে (বিস্মৃত হয়ে) যায় ।” (অর্থাৎ অতিশীঘ্র ভুলে যাবার সম্ভাবনা থাকে ।)
(মুসলিম ৭৯১, আহমাদ ১৯০৫২, ১৯১৮৬) হাদীসটির মানঃ সহীহ হাদীস
. আব্দুল্লাহ ইবনে উমার রাঃআঃ হইতে বর্ণিতঃ
রসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেছেন, “কুরআন-ওয়ালা হল বাঁধা উট-ওয়ালার মত । সে যদি তা বাঁধার পর তার যথারীতি দেখাশোনা করে, তাহলে বাঁধাই থাকবে । নচেৎ ঢিল দিলেই উট পালিয়ে যাবে ।”
(সহীহুল বুখারী শরীফ ৫০৩১, মুসলিম ৭৮৯, নাসাঈ ৯৪২, ইবনু মাজাহ ৩৭৮৩, আহমাদ ৪৬৫১, ৪৭৪৫, ৪৮৩০, ৪৯০৪, ৫২৯৩, ৫৮৮৭, মুওয়াত্তা মালিক ৪৭৩) হাদীসটির মানঃ সহীহ হাদীস
পরিচ্ছেদ – ১৮২: সুললিত কণ্ঠে কুরআন পড়া মুস্তাহাব । মধুরকণ্ঠ কারীকে তা পড়ার আবেদন করা ও তা মনোযোগ সহকারে শোনা প্রসঙ্গে
১০১১. আবু হুরাইরা রাদিয়াল্লাহু হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, আমি রসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম)-কে এ কথা বলতে শুনেছি যে, “মহান আল্লাহ এভাবে উৎকর্ণ হয়ে কোন কথা শোনেন না, যেভাবে সেই মধুরকণ্ঠী পয়গম্বরের প্রতি উৎকর্ণ হয়ে শোনেন, যিনি মধুর কণ্ঠে উচ্চ স্বরে কুরআন মাজীদ পড়তেন ।” (বুখারী, মুসলিম)
(সহীহুল বুখারী শরীফ ৭৫৪৪, ৫০২৩, ৫০২৪, ৭৪৮২, ৭৫২৭, মুসলিম ৭৯২, নাসাঈ ১০১৭, ১০১৮, আবু দাঊদ ১৪৭৩, আহমাদ ৭৬১৪, ৭৭৭৩, ৯৫১৩, দারেমী ৩৪৯০, ৩৪৯১, ৩৪৯৭) হাদীসটির মানঃ সহীহ হাদীস
১০১২. আবু মুসা আশআরী রাঃআঃ হইতে বর্ণিতঃ
একদা রসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) তাঁকে বললেন, “তোমাকে দাউদের সুললিত কণ্ঠের মত মধুর কণ্ঠ দান করা হয়েছে ।” (বুখারী, মুসলিম)
(সহীহুল বুখারী শরীফ ৫০৪৮, মুসলিম ৭৯৩, তিরমিজী ৩৮৫৫) হাদীসটির মানঃ সহীহ হাদীস
১০১৩. বারা’ ইবনে আযেব রাঃআঃ হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, “আমি রসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম)-কে এশার নামাযে সূরা ‘অততীন অযযাইতূন’ পড়তে শুনেছি । বস্তুতঃ আমি তাঁর চেয়ে মধুর কণ্ঠ আর কারো শুনিনি ।” (বুখারী, মুসলিম)
(সহীহুল বুখারী শরীফ ৭৬৭, ৪৯৫২, ৭৫৪৬, মুসলিম ৪৬৪, তিরমিজী ৩১০, নাসাঈ ১০০০, ১০০১, আবু দাঊদ ১২২১, ইবনু মাজাহ ৮৩৫, মুওয়াত্তা মালিক ১৭৬) হাদীসটির মানঃ সহীহ হাদীস
১০১৪. আবু লুবাবাহ বাশীর ইবনে আব্দুল মুনযির রাঃআঃ হইতে বর্ণিতঃ
রসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেছেন, “যে ব্যক্তি মিষ্ট স্বরে কুরআন পড়ে না, সে আমাদের মধ্যে নয় ।” (অর্থাৎ আমাদের ত্বরীকা ও নীতি-আদর্শ বহির্ভূত ।)
(আবু দাঊদ ১৪৭১) হাদীসটির মানঃ সহীহ হাদীস
১০১৫. আব্দুল্লাহ ইবনে মাসঊদ রাঃআঃ হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, একদা রসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) আমাকে বললেন, “(হে ইবনে মাসঊদ !) আমাকে কুরআন পড়ে শুনাও ।” আমি বললাম, ‘হে আল্লাহর রসূল ! আমি আপনাকে পড়ে শোনাব, অথচ আপনার উপরে তা অবতীর্ণ করা হয়েছে ?’ তিনি বললেন, “অপরের মুখ থেকে (কুরআন পড়া) শুনতে আমি ভালবাসি ।” সুতরাং তাঁর সামনে আমি সূরা নিসা পড়তে লাগলাম, পড়তে পড়তে যখন এই (৪১নং) আয়াতে পৌঁছলাম—যার অর্থ, “তখন তাদের কি অবস্থা হবে, যখন প্রত্যেক সম্প্রদায় থেকে একজন সাক্ষী উপস্থিত করব এবং তোমাকেও তাদের সাক্ষীরূপে উপস্থিত করব ?” তখন তিনি বললেন, “যথেষ্ট, এখন থাম ।” অতঃপর আমি তাঁর দিকে ফিরে দেখি, তাঁর নয়ন যুগল অশ্রু ঝরাচ্ছে ।
(সহীহুল বুখারী শরীফ ৪৫৮২, ৫০৪৯, ৫০৫৯, ৫০৫৫, ৫০৫৬, মুসলিম ৮০০, তিরমিজী ৩০২৪, ৩০২৫, আবু দাঊদ ৩৬৬৮, ইবনু মাজাহ ৪১৯৪, আহমাদ ৩৫৪০, ৩৫৯৫, ৪১০৭) হাদীসটির মানঃ সহীহ হাদীস
পরিচ্ছেদ – ১৮৩: বিশেষ বিশেষ সূরা ও আয়াত পাঠ করার উপর উৎসাহ দান
১০১৬. আবু সাঈদ রাফে’ ইবনে মুআল্লা রাঃআঃ হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, একদা রসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) আমাকে বললেন, “মসজিদ থেকে বের হবার পূর্বেই তোমাকে কি কুরআনের সবচেয়ে বড় (মাহাত্ম্যপূর্ণ) সূরা শিখিয়ে দেব না ?” এই সাথে তিনি আমার হাত ধরলেন । অতঃপর যখন আমরা বাইরে যাওয়ার ইচ্ছা করলাম, তখন আমি নিবেদন করলাম, ‘ইয়া রসুলুল্লাহ ! আপনি যে আমাকে বললেন, তোমাকে অবশ্যই কুরআনের সবচেয়ে বড় (মাহাত্ম্যপূর্ণ) সূরা শিখিয়ে দেব ?’ সুতরাং তিনি বললেন, “(তা হচ্ছে) ‘আলহামদু লিল্লাহি রাব্বিল আলামীন’ (সূরা ফাতেহা) । এটি হচ্ছে ‘সাবউ মাসানী’ (অর্থাৎ নামাযে বারংবার পঠিতব্য সপ্ত আয়াত) এবং মহা কুরআন; যা আমাকে দান করা হয়েছে ।”
(সহীহুল বুখারী শরীফ ৪৪৭৪, ৪৬৪৭, ৪৭০৩, ৫০০৬, নাসাঈ ৯১৩, আবু দাঊদ ১৪৫৮, ইবনু মাজাহ ৩৭৮৫, আহমাদ ১৫৩০৩, ১৭৩৯৫, দারেমী ১৪৯২, ৩৭১) হাদীসটির মানঃ সহীহ হাদীস
১০১৭. আবু সাঈদ খুদরী রাঃআঃ হইতে বর্ণিতঃ
রসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) (সূরা) ‘ক্বুল হুওয়াল্লাহু আহাদ’ সম্পর্কে বলেছেন, “সেই মহান সত্তার শপথ, যার হাতে আমার প্রাণ আছে, নিঃসন্দেহে এটি কুরআনের এক তৃতীয়াংশের সমতুল ।”
অপর এক বর্ণনায় আছে, রসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) সাহাবাগণকে বললেন, ‘তোমরা কি এক রাতে এক তৃতীয়াংশ কুরআন পড়তে অপারগ ?’ প্রস্তাবটি তাঁদের পক্ষে ভারী মনে হল । তাই তাঁরা বলে উঠলেন, ‘হে আল্লাহর রসূল ! এ কাজ আমাদের মধ্যে কে করতে পারবে ?’ (অর্থাৎ কেউ পারবে না ।) তিনি বললেন, “ক্বুল হুওয়াল্লাহু আহাদ, আল্লাহুস স্বামাদ’ (সূরা ইখলাস) কুরআনের এক তৃতীয়াংশের সমতুল ।” (অর্থাৎ, এই সূরা পড়লে এক তৃতীয়াংশ কুরআন পড়ার সমান নেকী অর্জিত হয়) (বুখারী)
(সহীহুল বুখারী শরীফ ৫০১৫, ৫০১৪, ৫৫৪৩, ৭৩৭৫, নাসাঈ ৯৯৫, আবু দাঊদ ১৪৬১, আহমাদ ১০৬৬৯, ১০৭৩১, ১০৭৯৭, ১০৯১৩, ১০৯৯৯, মুওয়াত্তা মালিক ৪৭৭, ৪৮৩) হাদীসটির মানঃ সহীহ হাদীস
১০১৮. উক্ত সাহাবী রাঃআঃ হইতে বর্ণিতঃ
এক ব্যক্তি কোন লোককে সূরাটি বারবার পড়তে শুনল । অতঃপর সে সকালে রসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম)-এর নিকট এসে তা ব্যক্ত করল । সে সূরাটিকে নগণ্য মনে করছিল । রসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বললেন, “সেই সত্তার শপথ ! যাঁর হাতে আমার প্রাণ আছে, নিঃসন্দেহে এই সূরা (ইখলাস) কুরআনের এক তৃতীয়াংশের সমান ।” (বুখারী)
(সহীহুল বুখারী শরীফ ৫০১৫, ৫০১৪, ৫৫৪৩, ৭৩৭৫, নাসাঈ ৯৯৫, আবু দাঊদ ১৪৬১, আহমাদ ১০৬৬৯, ১০৭৩১, ১০৭৯৭, ১০৯১৩, ১০৯৯৯, মুওয়াত্তা মালিক ৪৭৭, ৪৮৩) হাদীসটির মানঃ সহীহ হাদীস
১০১৯. আবু হুরাইরা রাঃআঃ হইতে বর্ণিতঃ
রসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) (সূরা) ‘ক্বুল হুওয়াল্লাহু আহাদ’ সম্পর্কে বলেছেন, “নিঃসন্দেহে এটি কুরআনের এক তৃতীয়াংশের সমতুল্য ।” (মুসলিম)
(মুসলিম ৮১২, তিরমিজী ২৮৯৯, ২৯০০, ইবনু মাজাহ ৩৭৮৭, আহমাদ ৯২৫১, দারেমী ৩৪৩২) হাদীসটির মানঃ সহীহ হাদীস
১০২০. আনাস রাঃআঃ হইতে বর্ণিতঃ
এক ব্যক্তি নিবেদন করল, ‘হে আল্লাহর রসূল ! আমি এই (সূরা) ‘ক্বুল হুওয়াল্লাহু আহাদ’ ভালবাসি ।’ তিনি বললেন, “এর ভালবাসা তোমাকে জান্নাতে প্রবেশ করাবে ।”
(তিরমিজী হাসান সুত্রে, বুখারী বিচ্ছিন্ন সনদে) (সহিহুল বুখারি ৭৭৪ নং হাদিসের পরবর্তী বাব। তিরমিজী ২৯০১, আহমাদ ১২০২৪, ১২১০৩, দারেমী ৩৪৩৫) হাদীসটির মানঃ সহীহ হাদীস
১০২১.উক্ববাহ ইবন আমের রাঃআঃ হইতে বর্ণিতঃ
রসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) একদা বললেন, “তুমি কি দেখনি, আজ রাত্রে আমার উপর কতকগুলি আয়াত অবতীর্ণ হয়েছে; যার অনুরূপ আর কিছু দেখা যায়নি ? (আর তা হল,) ‘ক্বুল আঊযু বিরাব্বিল ফালাক্ব’ ও ‘ক্বুল আঊযু বিরাব্বিন নাস।”
(মুসলিম ৮১৪, তিরমিজী) (মুসলিম ৮১৪, তিরমিজী ২৯০২, নাসাঈ ৯৫৩, ৯৫৪, ৫৪৩০, ৫৪৩১, ৫৪৩৩, ৫৪৩৮, ৫৪৩৯, ৫৪৪০, আবু দাঊদ ১৪৬২, আহমাদ ১৬৮৪৫, ১৬৮৭১, ১৬৮৮৩, ১৬৮৯০, দারেমী ৩৪৩৯, ৩৪৪০, ৩৪৪১) হাদীসটির মানঃ সহীহ হাদীস
১০২২.আবু সাঈদ খুদরী রাঃআঃ হইতে বর্ণিতঃ
‘রসুলুল্লাহ (সূরা ফালাক্ব ও নাস অবতীর্ণ হবার পূর্ব পর্যন্ত নিজ ভাষাতে) জিন ও বদ নজর থেকে (আল্লাহর) আশ্রয় প্রার্থনা করতেন । পরিশেষে যখন উক্ত সূরা দু’টি অবতীর্ণ হল, তখন ঐ সূরা দু’টি দ্বারা আশ্রয় প্রার্থনা করতে লাগলেন এবং অন্যান্য সব পরিহার করলেন ।’
(তিরমিজী হাসান) ( তিরমিজী ২০৫৮, নাসাঈ ৫৪৯৪, ইবনু মাজাহ ৩৫১১) হাদীসটির মানঃ হাসান হাদীস
১০২৩. আবু হুরাইরা রাঃআঃ হইতে বর্ণিতঃ
রসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেছেন, “কুরআনে ত্রিশ আয়াতবিশিষ্ট একটি সূরা এমন আছে, যা তার পাঠকারীর জন্য সুপারিশ করিবে এবং শেষাবধি তাকে ক্ষমা ক’রে দেওয়া হবে, সেটা হচ্ছে ‘তাবা-রাকাল্লাযী বিয়্যাদিহিল মুল্ক’ (সূরা মুল্ক) ।”
(আবু দাঊদ, তিরমিজী হাসান) (আবু দাঊদ ১৪০০, ২৮৯১, ইবনু মাজাহ ৩৭৮৬) হাদীসটির মানঃ হাসান হাদীস
১০২৪. আবু মাসঊদ বদরী রাঃআঃ হইতে বর্ণিতঃ
নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, “যে ব্যক্তি রাতে সূরা বাক্বারার শেষ আয়াত দু’টি পাঠ করিবে, তার জন্য সে দু’টি যথেষ্ট হবে ।” (বুখারী, মুসলিম)
(সহীহুল বুখারী শরীফ ৪০০৮, ৫০১০, ৫০৪০, ৫০৫১, ৮০৭, তিরমিজী ২৮৮১, আবু দাঊদ ১৩৯৭, ইবনু মাজাহ ১৩৬৮, ১৩৬৯, আহমাদ ১৬৬২০, ১৬৬৪২, ১৬৬৫১, দারেমী ১৪৮৭. ৩৩৮৮) হাদীসটির মানঃ সহীহ হাদীস
১০২৫. আবু হুরাইরা রাঃআঃ হইতে বর্ণিতঃ
রসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেছেন, “তোমরা নিজেদের ঘর-বাড়িগুলোকে কবরে পরিণত করো না । কেননা, যে বাড়িতে সূরা বাকারাহ পাঠ করা হয়, সে বাড়ি থেকে শয়তান পলায়ন করে ।” (মুসলিম)
(মুসলিম ৭৮০, তিরমিজী ২৮৭৭, আবু দাঊদ ২০৪২, আহমাদ ৭৭৬২, ৮২৩৮, ৮৫৮৬, ৮৬৯৮, ৮৮০৯) হাদীসটির মানঃ সহীহ হাদীস
১০২৬. উবাই ইবনে কা‘ব রাঃআঃ হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, একদা রসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বললেন, “হে আবু মুনযির ! তুমি কি জান, মহান আল্লাহর গ্রন্থ (আল-কুরআন) এর ভিতর তোমার যা মুখস্থ আছে, তার মধ্যে সবচেয়ে বড় (মর্যাদাপূর্ণ) আয়াত কোন্টি ?” আমি বললাম, ‘সেটা হচ্ছে আয়াতুল কুরসি ।’ সুতরাং তিনি আমার বুকে চাপড় মেরে বললেন, “আবুল মুনযির ! তোমার জ্ঞান তোমাকে ধন্য করুক ।” (মুসলিম)
( মুসলিম ৮১০, আবু দাঊদ ১৪৬০, মুওয়াত্তা মালিক ১৮৭) হাদীসটির মানঃ সহীহ হাদীস
১০২৭.আবু হুরাইরা রাঃআঃ হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, (একবার) রসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) আমাকে রমযানের যাকাত (ফিৎরার মাল-ধন) দেখাশোনা করার দায়িত্ব দেন । বস্তুতঃ (আমি পাহারা দিচ্ছিলাম ইত্যবসরে) একজন আগমনকারী এসে আঁজলা ভরে খাদ্যবস্তু নিতে লাগল । আমি তাকে ধরলাম এবং বললাম, ‘তোকে অবশ্যই রসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম)-এর কাছে পেশ করব ।’ সে আবেদন করল, ‘আমি একজন সত্যিকারের অভাবী । পরিবারের ভরণ-পোষণের দায়িত্ব আমার উপর, আমার দারুণ অভাব ।’ কাজেই আমি তাকে ছেড়ে দিলাম । সকালে (রসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম)-এর নিকট হাযির হলাম ।) রসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বললেন, “হে আবু হুরাইরা ! গত রাতে তোমার বন্দী কি আচরণ করেছে ?” আমি বললাম, ‘হে আল্লাহর রসূল ! সে তার অভাব ও (অসহায়) পরিবার-সন্তানের অভিযোগ জানাল । সুতরাং তার প্রতি আমার দয়া হলে আমি তাকে ছেড়ে দিলাম ।’ তিনি বললেন, “সতর্ক থেকো, সে আবার আসবে ।”
আমি রসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম)-এর অনুরূপ উক্তি শুনে সুনিশ্চিত হলাম যে, সে আবার আসবে । কাজেই আমি তার প্রতীক্ষায় থাকলাম । সে (পূর্ববৎ) এসে আঁজলা ভরে খাদ্যবস্তু নিতে লাগল । আমি তাকে বললাম, ‘অবশ্যই তোকে রসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম)-এর দরবারে পেশ করব ।’ সে বলল, ‘আমি অভাবী, পরিবারের দায়িত্ব আমার উপর, (আমাকে ছেড়ে দাও) আমি আর আসব না ।’ সুতরাং আমার মনে দয়া হল । আমি তাকে ছেড়ে দিলাম । সকালে উঠে (যখন রসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম)-এর কাছে গেলাম তখন) রসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) আমাকে বললেন, “আবু হুরাইরা ! গত রাত্রে তোমার বন্দী কিরূপ আচরণ করেছে ?” আমি বললাম, ‘ইয়া রাসূলাল্লাহ ! সে তার অভাব ও অসহায় সন্তান-পরিবারের অভিযোগ জানাল । সুতরাং আমার মনে দয়া হলে আমি তাকে ছেড়ে দিলাম ।’ তিনি বললেন, “সতর্ক থেকো, সে আবার আসবে ।”
সুতরাং তৃতীয়বার তার প্রতীক্ষায় রইলাম । সে (এসে) আঁজলা ভরে খাদ্যবস্তু নিতে লাগল । আমি তাকে ধরে বললাম, “এবারে তোকে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর দরবারে হাযির করবই । এটা তিনবারের মধ্যে শেষবার । ‘ফিরে আসবো না’ বলে তুই আবার ফিরে এসেছিস ।” সে বলল, ‘তুমি আমাকে ছেড়ে দাও, আমি তোমাকে এমন কতকগুলি শব্দ শিখিয়ে দেব, যার দ্বারা আল্লাহ তোমার উপকার করিবেন ।’ আমি বললাম, ‘সেগুলি কি ?’ সে বলল, ‘যখন তুমি (ঘুমাবার জন্য) বিছানায় যাবে, তখন আয়াতুল কুরসি পাঠ করে (ঘুমাবে) । তাহলে তোমার জন্য আল্লাহর পক্ষ থেকে একজন রক্ষক নিযুক্ত হবে । আর সকাল পর্যন্ত তোমার কাছে শয়তান আসতে পারবে না ।’
সুতরাং আমি তাকে ছেড়ে দিলাম । আবার সকালে (রসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) এর কাছে গেলাম ।) তিনি আমাকে বললেন, “তোমার বন্দী কি আচরণ করেছে ?” আমি বললাম, ‘হে আল্লাহর রসূল ! সে বলল, “আমি তোমাকে এমন কতিপয় শব্দ শিখিয়ে দেব, যার দ্বারা আল্লাহ আমার কল্যাণ করিবেন ।” বিধায় আমি তাকে ছেড়ে দিলাম ।’ তিনি বললেন, “সে শব্দগুলি কি ?” আমি বললাম, ‘সে আমাকে বলল, “যখন তুমি বিছানায় (শোয়ার জন্য) যাবে, তখন আয়াতুল কুরসি শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত ‘আল্লাহু লা ইলাহা ইল্লা হুয়াল হাইয়্যুল কাইয়্যুম’ পড়ে নেবে ।” সে আমাকে আরও বলল, “তার কারণে আল্লাহর তরফ থেকে সর্বদা তোমার জন্য একজন রক্ষক নিযুক্ত থাকবে । আর সকাল পর্যন্ত তোমার কাছে শয়তান আসবে না ।” (এ কথা শুনে) তিনি বললেন, “শোনো ! সে নিজে ভীষণ মিথ্যাবাদী; কিন্তু তোমাকে সত্য কথা বলেছে । হে আবু হুরাইরা ! তুমি জান, তিন রাত ধরে তুমি কার সাথে কথা বলছিলে ?” আমি বললাম, ‘জী না।’ তিনি বললেন, “সে শয়তান ছিল ।” (বুখারী)
(সহীহুল বুখারী শরীফ ২৩১১ নং হাদীসের পরবর্তী বাব ।) হাদীসটির মানঃ সহীহ হাদীস
১০২৮. আবু দার্দা রাঃআঃ হইতে বর্ণিতঃ
রসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেছেন, “যে ব্যক্তি সুরা কাহাফের প্রথম দিক থেকে দশটি আয়াত মুখস্থ করিবে, সে দাজ্জালের (ফিতনা) থেকে পরিত্রাণ পাবে ।” অন্য বর্ণনায় ‘কাহাফ সূরার শেষ দিক থেকে’ উল্লেখ হয়েছে । (মুসলিম) (আমি (আলবানী) বলছিঃ দ্বিতীয় বর্ণনাটি শায আর প্রথম বর্ণনাটি নিরাপদ (সহীহ্) যেমনটি আমি “সিলসিলাহ্ সহীহাহ্” গ্রন্থে (নং ৫৮২) তাহকীক্ব করেছি । এর সাক্ষ্য দিচ্ছে নাওয়াস ইবনু সাম‘আনের আগত হাদীসটি । যেটিকে (১৮১৭) নম্বরে লেখক উল্লেখ করিয়াছেন । কারণ এতে বলা হয়েছে যে, তোমাদের মধ্যে থেকে যে ব্যক্তি দাজ্জালকে পেয়ে বসবে সে যেন তার বিপক্ষে সূরা কাহাফের প্রথম অংশ পাঠ করে ।
মুসলিম ৮০৯, তিরমিজী ২৮৮৬, আবু দাঊদ ৪৩২৩, আহমাদ ২১২০০, ২৬৯৭০, ২৬৯৯২
হাদীসটির মানঃ সহীহ হাদীস
১০২৯. আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস রাঃআঃ হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, একদা জিবরীল عليه السلام নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর নিকট বসে ছিলেন । এমন সময় উপর থেকে একটি শব্দ শুনতে পেলেন । তিনি (জিবরীল) মাথা তুলে বললেন, ‘এটি আসমানের একটি দরজা, যা আজ খোলা হল । ইতোপূর্বে এটা কখনও খোলা হয়নি । ওদিক দিয়ে একজন ফিরিশ্তা অবতীর্ণ হল । এই ফিরিশ্তা যে দুনিয়াতে অবতরণ করেছে, ইতোপূর্বে কখনও অবতরণ করেনি ।’ সুতরাং তিনি এসে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-কে সালাম জানিয়ে বললেন, “আপনি দু’টি জ্যোতির সুসংবাদ নিন । যা আপনার আগে কোন নবীকে দেওয়া হয়নি । (সে দু’টি হচ্ছে) সূরা ফাতেহা ও সূরা বাক্বারার শেষ আয়াতসমূহ । ওর মধ্য হইতে যে বর্ণটিই পাঠ করিবেন, তাই আপনাকে দেওয়া হবে ।” (মুসলিম)
(মুসলিম ৮০৬) হাদীসটির মানঃ সহীহ হাদীস
পরিচ্ছেদ – ১৮৪: কুরআন পঠন-পাঠনের জন্য সমবেত হওয়া মুস্তাহাব
১০৩০. আবু হুরাইরা রাঃআঃ হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, রসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেছেন, “যখনই কোনো সম্প্রদায় আল্লাহর ঘরসমূহের মধ্যে কোন এক ঘরে একত্রিত হয়ে আল্লাহর গ্রন্থ (কুরআন) পাঠ করে, তা নিয়ে পরস্পরের মধ্যে অধ্যয়ন করে, তাহলে তাদের প্রতি (আল্লাহর পক্ষ থেকে) প্রশান্তি অবতীর্ণ হয় এবং তাদেরকে তাঁর রহমত ঢেকে নেয়, আর ফিরশ্তাবর্গ তাদেরকে ঘিরে ফেলেন । আল্লাহ স্বয়ং তাঁর নিকটস্থ ফিরিশ্তামণ্ডলীর কাছে তাদের কথা আলোচনা করেন ।” (মুসলিম)
(মুসলিম ২৬৯৯, ২৭০০, তিরমিজী ১৪২৫, ১৯৩০, ২৬৪৬, ২৯৪৫, আবু দাঊদ ১৪৫৫, ৪৯৪৬, নাসাঈ ৯১২, ইবনু মাজাহ ২২৫, আহমাদ ৭৩৭৯, ৭৮৮২, ১০১১৮, ১০২৯৮, দারেমী ৩৪৪)হাদীসটির মানঃ সহীহ হাদীস
Leave a Reply