কুরআন তিলাওয়াতের আদব ও অধ্যায়ন
কুরআন তিলাওয়াতের আদব ও অধ্যায়ন >> মিশকাতুল মাসাবীহ এর মুল সুচিপত্র দেখুন
পর্বঃ ৮, অধ্যায়ঃ ১
- অধ্যায়ঃ ১. প্রথম অনুচ্ছেদ
- অধ্যায়ঃ ১. দ্বিতীয় অনুচ্ছেদ
- অধ্যায়ঃ ১. তৃতীয় অনুচ্ছেদ
অধ্যায়ঃ ১. প্রথম অনুচ্ছেদ
২১৮. আবু মূসা আল আশ্আরী [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ তোমরা সবসময় কুরআনের প্রতি লক্ষ্য রাখবে। যাঁর হাতে আমার জীবন নিহিত, তাহাঁর শপথ, নিশ্চয় কুরআন সিনা হইতে এত তাড়াতাড়ি বের হয়ে যায় যে, উটও তত তাড়াতাড়ি নিজের রশি ছিঁড়ে বের হয়ে যেতে পারে না
। [বোখারী, মুসলিম]{১}. {১} সহীহ : বোখারী ৫০৩৩, মুসলিম ৭৯১, ইবনি আবী শায়বাহ্ ৮৫৬৯, শুআবুল ঈমান ১৮০৯, সহীহ আত তারগীব ১৪৪৭, সহীহ আল জামি ২৯৫৬। কুরআন তিলাওয়াতের আদব -এই হাদিসটির তাহকীকঃ সহীহ হাদিস
২১৮৮. আবদুল্লাহ ইবনি মাস্ঊদ [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ কোন ব্যক্তির জন্য এ কথা বলা খুবই খারাপ যে, আমি কুরআনের অমুক অমুক আয়াত ভুলে গেছি। বরং সে যেন বলে, তাকে ভুলিয়ে দেয়া হয়েছে। তোমরা বার বার কুরআন পড়তে থাকিবে। কারণ কুরআন মানুষের মন হইতে চতুষ্পদ জন্তু হইতেও দ্রুত পালিয়ে যায়।
[বোখারী, মুসলিম। ঈমাম মুসলিম, রশিতে বাঁধা চার পা জন্তু বাড়িয়ে বলেছেন।]{১}, {১} সহীহ : বোখারী ৩০৫২, মুসলিম ৭৯০, তিরমিজি ২৯৪২, নাসায়ী ৯৪৩, আহমাদ ৩৯৬০, দারিমী ২৭৮৭, মুজামুল কাবীর লিত্ব ত্ববারানী ১০৪১৫, সুনানুল কুবরা লিল বায়হাক্বী ৪০৫৩, শুআবুল ঈমান ১৮১২, সহীহ ইবনি হিববান ৭৬২, সহীহ আত তারগীব ১৪৪৬, সহীহ আল জামি ২৮৪৯। কুরআন তিলাওয়াতের আদব -এই হাদিসটির তাহকীকঃ সহীহ হাদিস
২১৮৯. আবদুল্লাহ ইবনি উমার [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
তিনি বলেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ কুরআনকে স্মৃতিতে ধারণকারীদের দৃষ্টান্ত হলো রশিতে বাঁধা উটের মতো। উটের প্রতি সব সময় লক্ষ্য রেখেই তাঁকে বেঁধে রাখা যেতে পারে। আর লক্ষ্য না রাখলে সে রশি ছিঁড়ে পালিয়ে যায়। [বোখারী ও মুসলিম]{১}
{১} সহীহ : বোখারী ৫০৩১, মুসলিম ৭৮৯, মুয়াত্ত্বা মালিক ৬৯০, আহমাদ ৫৯২৩, সুনানুল কুবরা লিল বায়হাক্বী ৪০৫১, শুআবুল ঈমান ১৮১০, সহীহ ইবনি হিববান ৭৬৪, সহীহাহ্ ৩৫৭৭, সহীহ আত তারগীব ১৪৪৫, সহীহ আল জামি ২৩৭২। কুরআন তিলাওয়াতের আদব -এই হাদিসটির তাহকীকঃ সহীহ হাদিস
২১৯০. জুনদুব ইবনি আবদুল্লাহ [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ মনের আকর্ষণ থাকা পর্যন্ত কুরআন পড়বে। মনের ভাব পরিবর্তিত হলে অর্থাৎ- আগ্রহ কমে গেলে তা ছেড়ে উঠে যাবে।
[বোখারী, মুসলিম]{১}, {১} সহীহ : বোখারী ৫০৬০, মুসলিম ২৬৬৭, সহীহাহ্ ৩৯৯৩, দারিমী ৪৪২। কুরআন তিলাওয়াতের আদব -এই হাদিসটির তাহকীকঃ সহীহ হাদিস
২১৯১. আবু কাতাদাহ্ [রাহিমাহুল্লাহ] হইতে বর্ণীতঃ
তিনি বলেন, একবার আনাস [রাদি.]-কে জিজ্ঞেস করা হয়েছিল, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর কুরআন পাঠ কেমন ছিল? তিনি বললেন, তাহাঁর কুরআন পাঠ ছিল টানা টানা। তারপর তিনি {আনাস [রাদি.]] বিস্মিল্লা-হির রহমা-নির রহীম পড়লেন। তিনি বিস্মিল্লা-হি টানলেন। রহমা-নির টানলেন এবং রহীম-এ টানলেন
। [বোখারী]{১}, {১} সহীহ : বোখারী ৫০৪৬। কুরআন তিলাওয়াতের আদব -এই হাদিসটির তাহকীকঃ সহীহ হাদিস
২১৯২. আবু হুরাইরাহ [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ একজন নবীর সুর করে কুরআন পড়াকে আল্লাহ তাআলা যতটা কান পেতে শোনেন আর কোন কথাকে এতো কান পেতে শোনেন না।
[বোখারী, মুসলিম]{১}, {১} সহীহ : বোখারী ৫০২৩, মুসলিম ৭৯২, আবু দাউদ ১৪৭৩, নাসায়ী ১০১৭, আহমাদ ৭৬৭০, দারিমী ১৫২৯, সুনানুল কুবরা লিল বায়হাক্বী ২৪২৮, শুআবুল ঈমান ১৯৫৬, সহীহ ইবনি হিববান ৭৫১, সহীহ আত তারগীব ১৪৪৮। কুরআন তিলাওয়াতের আদব -এই হাদিসটির তাহকীকঃ সহীহ হাদিস
২১৯৩. আবু হুরাইরাহ [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ আল্লাহ তাআলা কোন নবীর মধুর স্বরে সুরেলা কণ্ঠে স্বরবে কুরআন পাঠ যত পছন্দ করেন, তত পছন্দ করেন না আর কোন স্বরকে
। [বোখারী, মুসলিম]{১}, {১} সহীহ : বোখারী ৭৫৪৪, মুসলিম ৭৯২, সুনানুল কুবরা লিল বায়হাক্বী ২১০৪০। কুরআন তিলাওয়াতের আদব -এই হাদিসটির তাহকীকঃ সহীহ হাদিস
২১৯৪. আবু হুরাইরাহ [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ যে ব্যক্তি সুর করে কুরআন পড়ে না সে আমাদের অন্তর্ভুক্ত নয়।
[বোখারী]{১}, {১} সহীহ : বোখারী ৭৫২৭, সুনানুল কুবরা লিল বায়হাক্বী ২১০৪৬। কুরআন তিলাওয়াতের আদব -এই হাদিসটির তাহকীকঃ সহীহ হাদিস
২১৯৫. আবদুল্লাহ ইবনি মাস্ঊদ [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
তিনি বলেন, একদিন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মিম্বারে বসে আমাকে বললেন, তুমি আমার সামনে কুরআন পড়ো [আমি তোমার কুরআন পড়া শুনব]। [তাহাঁর কথা শুনে] আমি বললাম, হে আল্লাহর রসূল! আপনার সামনে আমি কুরআন পড়ব? অথচ এ কুরআন আপনার ওপর অবতীর্ণ হয়েছে। তিনি [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম] বললেনঃ কুরআন আমি অন্যের মুখে শুনতে পছন্দ করি। অতঃপর আমি সূরা আন্ নিসা পড়তে শুরু করলাম। আমি তখন কেমন হবে আমি যখন প্রত্যেক উম্মাতের বিরুদ্ধে একজন সাক্ষী উপস্থিত করব এবং আপনাকেও সাক্ষী হিসেবে উপস্থিত করব এদের বিরুদ্ধে এ আয়াত পর্যন্ত পৌঁছলে তিনি [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম] বললেন, এখন বন্ধ করো। এ সময় আমি তাহাঁর দিকে তাকালাম। দেখলাম তাহাঁর দু চোখ বেয়ে পানি গড়িয়ে পড়ছে।
[বোখারী, মুসলিম]{১}, {১} সহীহ : বোখারী ৫০৫০, মুসলিম ৮০০, আবু দাউদ ৩৬৬৮, তিরমিজি ৩০২৫, ইবনি আবী শায়বাহ্ ৩০৩০৩, আহমাদ ৩৬০৬, মুজামুল কাবীর লিত্ব ত্ববারানী ৮৪৬০, সুনানুল কুবরা লিল বায়হাক্বী ২১০৫৭, শুআবুল ঈমান ৯৮৯২। কুরআন তিলাওয়াতের আদব -এই হাদিসটির তাহকীকঃ সহীহ হাদিস
২১৯৬. আনাস [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম একদিন উবাই ইবনি কাব [রাদি.]-কে বললেন, তোমাকে কুরআন তিলাওয়াত শুনাতে আল্লাহ আমাকে হুকুম দিয়েছেন। উবাই জিজ্ঞেস করিলেন, হে আল্লাহর রসূল! আল্লাহ কি আমার নাম ধরে আপনাকে এ কথা বলেছেন? তিনি [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম] বললেন, হ্যাঁ। এবার উবাই বললেন, রব্বুল আলামীনের কাছে আমি কী উত্থাপিত হয়েছি? রব্বুল আলামীনের কাছে আমার সম্পর্কে আলোচনা করা হয়েছে? বা আমার নাম নেয়া হয়েছে? তিনি [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম] বললেনঃ হ্যাঁ। এ কথা শুনে উবাই-এর দু চোখ বেয়ে অশ্রু ঝরতে লাগল। অন্য এক বর্ণনায় আছে, তিনি [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম] বলেছেনঃ আমাকে আল্লাহ তাআলা হুকুম দিয়েছেন তোমাকে লাম ইয়াকুনিল্লাযীনা কাফারূ সূরা পাঠ শুনাতে। উবাই বললেন, আল্লাহ কি আমার নাম বলেছেন? তিনি [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম] বললেন, হ্যাঁ। শুনে উবাই কেঁদে ফেললেন।
[বোখারী, মুসলিম]{১}, {১} সহীহ : বোখারী ৪৯৬০, ৪৯৬১, মুসলিম ৭৯৯, সহীহ ইবনি হিব্বান ৭১৪৪। কুরআন তিলাওয়াতের আদব -এই হাদিসটির তাহকীকঃ সহীহ হাদিস
২১৯৭. আবদুল্লাহ ইবনি উমার [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম শত্রুর দেশে কুরআন নিয়ে সফর করিতে নিষেধ করিয়াছেন।
[বোখারী, মুসলিম। ঈমাম মুসলিমের এক বর্ণনায় আছে, কুরআন নিয়ে সফরে বের হয়ো না। কারণ কুরআন শত্রুর হাতে পড়ে যাওয়া আমি নিরাপদবোধ করি না।]{১},{১} সহীহ : বোখারী ২৯৯০, মুসলিম ১৮৬৯, আবু দাউদ ২৬১০, ইবনি মাজাহ ২৮৭৯, মুয়াত্ত্বা মালিক ১৬২৩, মুসান্নাফ আবদুর রাযযাক্ব ৯৪১০, আহমাদ ৪৫২৫, সুনানুল কুবরা লিল বায়হাক্বী ১৮২৪১, ইবনি হিববান ৪৭১৫, ইরওয়া ২৫৫৮, সহীহাহ্ ৬৮২৫।কুরআন তিলাওয়াতের আদব -এই হাদিসটির তাহকীকঃ সহীহ হাদিস
অধ্যায়ঃ ১. দ্বিতীয় অনুচ্ছেদ
২১৯৮. আবু সাঈদ আল খুদরী [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
তিনি বলেন, আমি একবার দরিদ্র মুহাজিরদের একদলের মধ্যে বসলাম। তারা নিজেদের পোশাক স্বল্পতার জন্য একে অন্যের সাথে মিশে মিশে বসেছিলেন। এ সময় একজন আমাদের সামনে কুরআন পাঠ করছিল। এ সময় হঠাৎ রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এখানে এসে উপস্থিত হলেন এবং আমাদের সামনে দাঁড়িয়ে গেলেন। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এসে দাঁড়ালে কুরআন পাঠক চুপ হয়ে গেল। তিনি [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম] তখন আমাদেরকে সালাম দিলেন। তারপর জিজ্ঞেস করিলেন, কী করছিলে তোমরা? জবাবে আমরা বললাম, আল্লাহর কিতাব শুনছিলাম। এ কথা শুনে তিনি [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম] বললেনঃ আল্লাহ তাআলার শুকর, যিনি আমার উম্মাতের মধ্যে এ ধরনের লোক সৃষ্টি করে দিয়েছেন, যাদের সাথে শারীক হবার জন্য আমি আদিষ্ট হয়েছি।
বর্ণনাকারী আবু সাঈদ আল খুদরী [রাদি.] বলেন, এরপর তিনি [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম] আমাদের মধ্যে বসে নিজেকে আমাদের অন্তর্ভুক্ত করে নেন। এরপর তিনি [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম] তাহাঁর হাত দিয়ে [ইশারা করে] বললেন, তোমরা গোল হয়ে বসো। [বর্ণনাকারী বলেন এ কথা শুনে] তারা গোল হয়ে বসলেন। তাদের চেহারা রসূলের মুখোমুখি হয়ে গেল। তখন তিনি [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম] বললেন, হে গরীব মুহাজিরের দল! তোমরা কিয়ামাতের দিন পূর্ণ জ্যোতির সুখবর গ্রহণ কর। তোমরা ধনীদের অর্ধেক দিন পূর্বে জান্নাতে প্রবেশ করিবে। আর এ অর্ধেক দিনের [পরিমাণ] হলো পাঁচশ বছর। [আবু দাউদ]{১}
{১} জইফ : তবে تدخلون الجنة….. হইতে শেষ পর্যন্ত সহীহ। আবু দাউদ ৩৬৬৬, শুআবুল ঈমান ১০০১০। কারণ এর সানাদে আল আলা ইবনি বাশীর একজন মাজহূল রাবী । এই হাদিসটির তাহকীকঃ দুর্বল হাদিস
২১৯৯. বারা ইবনি আযিব [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ তোমাদের মিষ্টি স্বর দিয়ে কুরআনকে সুন্দর করো। [আহমদ, আবু দাউদ, ইবনি মাজাহ ও দারিমী]{১}
{১} সহীহ : আবু দাউদ ১৪৬৮, নাসায়ী ১০১৫, ইবনি মাজাহ ১৩৪২, ইবনি আবী শায়বাহ্ ৮৭৩৭, আহমাদ ১৮৪৯৪, দারিমী ৩৫৪৩, মুসতাদারাক লিল হাকিম ২০৯৮, সুনানুল কুবরা লিল বায়হাক্বী ২৪২৬, সহীহ ইবনি হিব্বান ৭৪৯, সহীহ আত তারগীব ১৪৪৯। কুরআন তিলাওয়াতের আদব -এই হাদিসটির তাহকীকঃ সহীহ হাদিস
২২০০. সাদ ইবনি উবাদাহ্ [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ যে ব্যক্তি কুরআন শিখে ভুলে গিয়েছে, সে কিয়ামাতের দিন অঙ্গহানি অবস্থায় আল্লাহর সাথে সাক্ষাত করিবে
। [আবু দাউদ, দারিমী]{১}, {১} জইফ : আবু দাউদ ১৪৭৪, জইফ আল জামি ৫১৫৩। কারণ এর সানাদে ইয়াযীদ ইবনি আবী যিয়াদ একজন দুর্বল রাবী। আর ঈসা ইবনি ফায়িদ একজন মাজহূল রাবী। এই হাদিসটির তাহকীকঃ দুর্বল হাদিস
২২০১. আবদুল্লাহ ইবনি আমর [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ যে ব্যক্তি তিন দিনের কমে কুরআন পড়েছে, সে কুরআন বুঝেনি।
[তিরমিজি, আবু দাউদ, দারিমী]{১}, {১} সহীহ : তিরমিজি ২৯৪৯, ইবনি মাজাহ ১৩৪৭, শুআবুল ঈমান ১৯৪১, আবু দাউদ ১৩৯৪, আহমাদ ৬৫৩৫, দারিমী ১৫৩৪, সহীহ ইবনি হিববান ৭৫৮।কুরআন তিলাওয়াতের আদব -এই হাদিসটির তাহকীকঃ সহীহ হাদিস
২২০২. উকবাহ্ ইবনি আমির [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ উচ্চৈঃস্বরে কুরআন পড়া প্রকাশ্যে সদকা করার মতো। আর চুপে চুপে কুরআন পড়া চুপে চুপে সদকা করার মতো
। [তিরমিজি, আবু দাউদ ও নাসায়ী। ঈমাম তিরমিজি বলেন, এ হাদিসটি হাসান ও গরীব।]{১} {১} সহীহ : আবু দাউদ ১৩৩৩, তিরমিজি ২৯১৯, নাসায়ী ২৫৬১, আহমাদ ১৭৩৬৮, সুনানুল কুবরা লিল বায়হাক্বী ৪৭১২, সহীহ ইবনি হিব্বান ৭৩৪, সহীহ আল জামি ৩১০৫। কুরআন তিলাওয়াতের আদব -এই হাদিসটির তাহকীকঃ সহীহ হাদিস
২২০৩. সুহায়ব [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ যে লোক কুরআনে বর্ণিত হারামকে হালাল মনে করেছে সে কুরআনের উপর ঈমান আনেনি।
[তিরমিজি; তিনি বলেছেন, এ হাদিসের সানাদ দুর্বল।]{১}, {১} জইফ : তিরমিজি ২৯১৮, ইবনি আবী শায়বাহ্ ৩০২০১, মুজামুল কাবীর লিত্ব ত্ববারানী ৭২৯৫, শুআবুল ঈমান ১৭১, জইফ আত তারগীব ১০০, জইফ আল জামি ৪৯৭৫। কারণ এর সানাদে আবুল মুবারক একজন মাজহূল রাবী। আর ইয়াযীদ ইবনি সিনান দুর্বল রাবী । এই হাদিসটির তাহকীকঃ দুর্বল হাদিস
২২০৪. লায়স ইবনি সাদ [রাহিমাহুল্লাহ] ইবনি আবু মুলায়কাহ্ [রাহিমাহুল্লাহ] হইতে বর্ণীতঃ
তিনি ইয়ালা ইবনি মুমাল্লাক [রাহিমাহুল্লাহ] হইতে বর্ণনা করিয়াছেন যে, ইয়ালা একদিন উম্মুল মুমিনীন উম্মু সালামাহ্ [রাদি.]-কে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর কুরআন পাঠ সম্পর্কে জিজ্ঞেস করিলেন। উম্মু সালামাহ্ [রাদি.]-কে শুনাতে দেখা গেল, রসূলের কুরআন পাঠ অক্ষর অক্ষর পৃথক করে প্রকাশ করছেন।
[তিরমিজি, আবু দাউদ, নাসায়ী]{১}, {১} জইফ : তিরমিজি ২৯২৩, আবু দাউদ ১৪৬৬, নাসায়ী ১০২২, ইবনি খুযায়মাহ্ ১১৫৮, মুজামুল কাবীর লিত্ব ত্ববারানী ৬৪৬, মুসতাদারাক লিল হাকিম ১১৬৫, সুনানুল কুবরা লিল বায়হাক্বী ৪৭১৩। কারণ এর সানাদে ইয়ালা ইবনি মুমাল্লাক মাজহূল রাবী। এই হাদিসটির তাহকীকঃ দুর্বল হাদিস
২২০৫.ইবনি জুরায়জ [রাহিমাহুল্লাহ] ইবনি আবু মুলায়কাহ্ [রাহিমাহুল্লাহ] হইতে বর্ণীতঃ
তিনি উম্মুল মুমিনীন উম্মু সালামাহ্ [রাদি.] হইতে বর্ণনা করেন। উম্মু সালামাহ্ [রাদি.] বলেছেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বাক্যের মধ্যে পূর্ণ থেমে কুরআন তিলাওয়াত করিতেন। তিনি বলিতেন, আলহাম্দু লিল্লা-হি রব্বিল আ-লামীন, এরপর থামতেন। তারপর বলিতেন, আর্ রহমা-নির রহীম, তারপর বিরতি দিতেন। [তিরমিজি। তিনি বলেছেন, এ হাদিসের সানাদ মুত্তাসিল নয়। কারণ আগের হাদীসে লায়স একে ইবনি আবু মুলায়কাহ্ হইতে এবং তিনি ইয়ালা ইবনি মামলাক হইতে আর ইয়ালা উম্মু সালামাহ্ [রাদি.] হইতে বর্ণনা করিয়াছেন। {অথচ এখানে ইয়ালা-এর উল্লেখ নেই] তাই উপরের লায়স-এর বর্ণনাটি অধিক নির্ভরযোগ্য।]{১}
{১} সহীহ : তিরমিজি ২৯২৭, দারাকুত্বনী ১১৯১, মুসতাদারাক লিল হাকিম ২৯১০, শামায়িল ২৭০, ইরওয়া ৩৪৩, সহীহ আল জামি ৫০০০। কুরআন তিলাওয়াতের আদব -এই হাদিসটির তাহকীকঃ সহীহ হাদিস
অধ্যায়ঃ ১. তৃতীয় অনুচ্ছেদ
২২০৬. জাবির [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
তিনি বলেন, একদিন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাদের কাছে এলেন। আমরা তখন কুরআন তিলাওয়াত করছিলাম। এ পাঠের মধ্যে আরব অনারব সবই ছিল [যারা কুরআন পাঠে ঠিক মতো উচ্চারণ করিতে পারছিল না] তারপরও তিনি [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম] বললেনঃ পড়ে যাও। প্রত্যেকেই ভাল পড়ছো। [মনে রাখবে] অচিরেই এমন কতক দল আসবে যারা ঠিক মতো কুরআন পাঠ করিবে, যেভাবে তীর সোজা রাখা হয়। তারা [দুনিয়াতেই] তাড়াতাড়ি এর ফল চাইবে। আখিরাতের জন্য অপেক্ষা করিবে না
। [আবু দাউদ, বায়হাক্বী- শুআবুল ঈমান]{১} {১} সহীহ : আবু দাউদ ৮৩০, আহমাদ ১৫২৭৩, শুআবুল ঈমান, ২৩৯৯, সহীহাহ্ ২৫৯, সহীহ আল জামি ১১৬৭। কুরআন তিলাওয়াতের আদব -এই হাদিসটির তাহকীকঃ সহীহ হাদিস
২২০৭. হুযায়ফাহ্ [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ কুরআন পড়ো আরবদের স্বর ও সুরে। আর দূরে থাকো আহলে ইশক ও আহলে কিতাবদের পদ্ধতি হইতে। আমার পর খুব তাড়াতাড়ি এমন কিছু লোকের আগমন ঘটবে, যারা কুরআন পাঠে গান ও বিলাপের সুর ধরবে। কুরআন মাজীদ তাদের কণ্ঠনালী অতিক্রম করে অন্তরের দিকে যাবে না। তাদের অন্তর হবে দুনিয়ার মোহগ্রস্ত। এভাবে তাদের অন্তরও মোহগ্রস্ত হবে যারা তাদের পদ্ধতি ও সুরে কুরআন তিলাওয়াত করিবে
। [বায়হাক্বী- শুআবুল ঈমান]{১}. {১} জইফ : আল মুজামুল আওসাত ৭২২৩, শুআবুল ঈমান ২৪০৬, জইফ আল জামি ১০৬৭। কারণ এর সানাদে হুসায়ন ইবনি মালিক নির্ভরযোগ্য রাবী নয় আর তার শায়খ আবু মুহাম্মাদ একজন মাজহূল রাবী । এই হাদিসটির তাহকীকঃ দুর্বল হাদিস
২২০৮. বারা ইবনি আযিব [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
তিনি বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে বলিতে শুনিয়াছি, তোমরা কুরআনকে তোমাদের কণ্ঠস্বরের মধুর আওয়াজ দিয়ে সৌন্দর্যমণ্ডিত করে পড়বে। কারণ সুমিষ্ট স্বর কুরআনের সৌন্দর্য বাড়ায়।
[দারিমী]{১}, {১} সহীহ : দারিমী ৩৫৪৪, শুআবুল ঈমান ১৯৫৫, সহীহাহ্ ৭৭১, সহীহ আল জামি ৩১৪৫। কুরআন তিলাওয়াতের আদব -এই হাদিসটির তাহকীকঃ সহীহ হাদিস
২২০৯. ত্বাঊস ইয়ামানী [রাহিমাহুল্লাহ] হইতে বর্ণীতঃ
তিনি বলেন, একবার নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে জিজ্ঞেস করা হলো, [হে আল্লাহর নবী!] কুরআনে স্বর প্রয়োগ ও উত্তম তিলাওয়াতের দিক দিয়ে কোন্ ব্যক্তি সর্বোত্তম? তিনি [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম] বললেন, যার তিলাওয়াত শুনে তোমার মনে হবে, তিলাওয়াতকারী আল্লাহকে ভয় করছে। বর্ণনাকারী ত্বাঊস বলছেন, ত্বালক্ব [রাহিমাহুল্লাহ] এরূপ তিলাওয়াতকারী ছিলেন।
[দারিমী]{১}, {১} জইফ : ইবনি মাজাহ ১৩৩৯, সহীহাহ্ ১৫৮৩, দারিমী ৩৫৩২। কারণ এর সানাদে আবদুল কারীম ইবনি আবিল মাখারিকব একজন দুর্বল রাবী । তবে হাদিসটি ইবনি মাজাহ এবং সহীহাহ্-তে সহীহ সূত্রে বর্ণিত। এই হাদিসটির তাহকীকঃ দুর্বল হাদিস
২২১০. উবায়দাহ্ আল মুলায়কী [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
তিনি ছিলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সহচর। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ হে কুরআনের বাহকগণ! কুরআনকে তোমরা বালিশ বানাবে না। বরং তা তোমরা রাতদিন তিলাওয়াত করার মতো তিলাওয়াত করিবে। কুরআনকে সুস্পষ্টভাবে প্রকাশ করে সুর করে পড়বে। কুরআনের বিষয়বস্ত্ত সম্পর্কে গভীরভাবে চিন্তা-ভাবনা করে পড়বে। তাহলেই তোমরা সফলতা অর্জন করিবে। দুনিয়ায় এর প্রতিফল পাবার জন্য তাড়াহুড়া করো না। কারণ আখিরাতে এর উত্তম প্রতিফল রয়েছে।
[বায়হাক্বী- শুআবুল ঈমান]{১}.{১} জইফ : শুআবুল ঈমান ১৮৫২। কারণ এর সানাদে আবু বাকর ইবনি আবী মারইয়াম একজন দুর্বল রাবী। এই হাদিসটির তাহকীকঃ দুর্বল হাদিস
Leave a Reply