কুরআনের মর্যাদা – মেশকাত শরীফ হাদীস

কুরআনের মর্যাদা – মেশকাত শরীফ হাদীস

কুরআনের মর্যাদা – মেশকাত শরীফ হাদীস >> মিশকাতুল মাসাবীহ এর মুল সুচিপত্র দেখুন

পর্বঃ৮, অধ্যায়ঃ কুরআনের মর্যাদা

পরিচ্ছদঃ প্রথম অনুচ্ছেদ

২১০৯. উসমান [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ তোমাদের মধ্যে সে ব্যক্তিই উত্তম, যে কুরআন শিক্ষা করে এবং তা [মানুষকে] শিক্ষা দেয়। [বোখারী]{১}

{১} সহীহ : বোখারী ৫০২৭, আবু দাউদ ১৪৫২, তিরমিজি ২৯০৭, আহমাদ ৫০০, শুআবুল ঈমান ১৭৮৫, সহীহ ইবনি হিব্বান ১১৮, সহীহাহ্ ১১৭৩, সহীহ আত তারগীব ১৪১৫, সহীহ আল জামি ৩৩১৯। কুরআনের মর্যাদা -এই হাদিসটির তাহকীকঃ সহীহ হাদিস

২১১০. উকবাহ্ ইবনি আমির [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

তিনি বলেন, আমরা [একদিন] মাসজিদের প্রাঙ্গণে বসেছিলাম। এ সময়ে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বের হয়ে আসলেন ও [আমাদেরকে] বললেন, তোমাদের কেউ প্রতিদিন সকালে বুত্বহান অথবা আক্বীক বাজারে গিয়ে দুটি বড় কুঁজওয়ালা উটনী কোন অপরাধ সংঘটন ও আত্মীয়তার বন্ধন ছিন্ন করা ছাড়া নিয়ে আসতে পছন্দ করিবে? এ কথা শুনে আমরা বললাম, হে আল্লাহর রসূল! আমাদের প্রত্যেকেই এ কাজ করিতে পছন্দ করিবে। তখন তিনি [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম] বললেনঃ যদি তা-ই হয় তাহলে তোমাদের কেউ কোন মাসজিদে গিয়ে সকালে আল্লাহর কিতাবের দুটি আয়াত [মানুষকে] শিক্ষা দেয় না বা [নিজে] শিক্ষাগ্রহণ করে না কেন? অথচ এ দুটি আয়াত শিক্ষা দেয়া তার জন্য দুটি উটনী অথবা তিনটি আয়াত শিক্ষা দেয়া তার জন্য তিনটি উটনী অথবা চারটি আয়াত শিক্ষা দেয়া তার জন্য চারটি উটনীর চেয়েও উত্তম। সারকথা কুরআনের যে কোন সংখ্যক আয়াত, একই সংখ্যক উটনীর চেয়ে উত্তম। [মুসলিম]{১}

{১} সহীহ : মুসলিম ৮০৩, ইবনি আবী শায়বাহ্ ৩০০৭৪, সহীহ আত তারগীব ১৪১৮, সহীহ আল জামি ২৬৯৭। কুরআনের মর্যাদা -এই হাদিসটির তাহকীকঃ সহীহ হাদিস

২১১১. আবু হুরাইরাহ [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ তোমাদের কেউ কি নিজ ঘরে ফিরে তিনটি মোটাতাজা গর্ভবতী উটনী পেতে পছন্দ করো? আমরা বললাম, [হে আল্লাহর রসূল!] নিশ্চয়ই পছন্দ করি। তখন তিনি [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম] বললেন, তাহলে তারা যেন সলাতে তিনটি আয়াত পড়ে। এ তিনটি আয়াত তার জন্য তিনটি মোটাতাজা গর্ভবতী উটনী অপেক্ষা উত্তম। [মুসলিম]{১}

{১} সহীহ : মুসলিম ৮০২, ইবনি মাজাহ ৩৭৮২, আহমাদ ১০৪৪৬, শুআবুল ঈমান ২০৪৮। কুরআনের মর্যাদা -এই হাদিসটির তাহকীকঃ সহীহ হাদিস

২১১২. আয়িশাহ্ [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ কুরআন অধ্যয়নে পারদর্শী ব্যক্তি মর্যাদাবান লিপিকার মালায়িকাহ্র [ফেরেশ্তাগণের] সাথী হবে। আর যে ব্যক্তি কুরআন অধ্যয়ন করে ও যে এতে আটকে যায় এবং কুরআন তার জন্য কষ্টদায়ক হয়, তাহলে তার জন্য দুটি পুরস্কার। [বোখারী, মুসলিম]{১}

{১} সহীহ : বোখারী ৪৯৩৭, মুসলিম ৭৯৮, ইবনি মাজাহ ৩৭৭৯, মুসান্নাফ আবদুর রাযযাক্ব ৪১৯৪। কুরআনের মর্যাদা -এই হাদিসটির তাহকীকঃ সহীহ হাদিস

২১১৩. আবদুল্লাহ ইবনি উমার হইতে বর্ণীতঃ

তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ দুটি ব্যতীত অন্য কোন বিষয়ে ঈর্ষা করা যায় না। প্রথম, সে ব্যক্তি যাকে আল্লাহ কুরআনের [ইলম] দান করিয়াছেন, আর সে তা দিন-রাত অধ্যয়ন করে। দ্বিতীয়, ঐ ব্যক্তি যাকে আল্লাহ ধন-সম্পদ দান করিয়াছেন এবং তা সে সকাল সন্ধ্যায় দান করে। [বোখারী, মুসলিম]{১}

{১} সহীহ : বোখারী ৭৫২৯, মুসলিম ৮১৫, ইবনি মাজাহ ৪২০৯, মুসান্নাফ আবদুর রাযযাক্ব ৫৯৭৪, আহমাদ ৪৫৫০, সুনানুল কাবীর লিল বায়হাক্বী ৭৮২১, সহীহ ইবনি হিববান ১২৫, সহীহ আত তারগীব ৬৩৫, সহীহ আল জামি ৭৪৮৭। কুরআনের মর্যাদা -এই হাদিসটির তাহকীকঃ সহীহ হাদিস

২১১৪. আবু মূসা আল আশ্আরী [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ কুরআন পাঠকারী মুমিনের দৃষ্টান্ত হলো তুরঞ্জ ফল বা কমলা লেবুর ন্যায়। যার গন্ধ ভাল, স্বাদও উত্তম। যে মুমিন কুরআন পড়ে না, তার দৃষ্টান্ত হলো খেজুরের ন্যায়। এর কোন গন্ধ নেই বটে, কিন্তু উত্তম স্বাদ আছে। কুরআন পাঠ করে না যে মুনাফিক, সে হানাযালাহ্ [তিতা] ফলের মতো, যার কোন গন্ধ নেই অথচ স্বাদ তিতা। আর ওই মুনাফিক যে কুরআন পড়ে তার দৃষ্টান্ত ঐ ফুলের মতো, যার গন্ধ আছে কিন্তু স্বাদ তিতা। [বোখারী, মুসলিম।]

অন্য এক বর্ণনায় আছে, যে মুমিন, কুরআন পড়ে ও সে অনুযায়ী আমাল করে সে কমলা লেবুর মতো। আর যে মুমিন কুরআন পড়ে না, কিন্তু এর উপর আমাল করে সে খেজুরের মতো।]{১}{১} সহীহ : বোখারী ৫৪২৭, ৫০৫৯, মুসলিম ৭৯৭, তিরমিজি ২৮৬৫, নাসায়ী ৫০৩৮, ইবনি মাজাহ ২১৪, আহমাদ ১৯৫৪৯, সহীহ ইবনি হিব্বান ৭৭০, সহীহ আত তারগীব ১৪১৯। কুরআনের মর্যাদা -এই হাদিসটির তাহকীকঃ সহীহ হাদিস

২১১৫. উমার ইবনুল খাত্ত্বাব [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ আল্লাহ তাআলা এ কিতাব কুরআনের মাধ্যমে কোন কোন জাতিকে উন্নতি দান করেন। আবার অন্যদেরকে করেন অবনত। [মুসলিম]{১}

{১} সহীহ : মুসলিম ৮১৭, ইবনি মাজাহ ২১৮, আহমাদ ২৩২, দারিমী ৩৪০৮, সুনানুল কুবরা লিল বায়হাক্বী ৫১২৫, শুআবুল ঈমান ২৪২৮, সহীহাহ্ ২২৩৯। কুরআনের মর্যাদা -এই হাদিসটির তাহকীকঃ সহীহ হাদিস

২১১৬. আবু সাঈদ আল খুদরী [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

উসায়দ ইবনি হুযায়র [রাদি.] বলেন, এক রাতে তিনি সূরা আল বাকারাহ্ পড়ছিলেন। তাহাঁর ঘোড়া তাহাঁর কাছেই বাঁধা ছিল। হঠাৎ ঘোড়াটি লাফিয়ে উঠল। তিনি ঘোড়াটিকে চুপ করালেন। ঘোড়াটি চুপ হলো। তিনি আবার পড়তে লাগলেন। ঘোড়াটি আবার লাফিয়ে উঠল। তিনি ঘোড়াটিকে শান্ত করিলেন। আবার পড়তে লাগলেন। আবার ঘোড়াটি লাফিয়ে উঠল। এবার তিনি থেমে গেলেন। কারণ তখন তাহাঁর ছেলে ইয়াহ্ইয়া ঘোড়াটির কাছাকাছি ছিল। তিনি ওর ক্ষতির আশংকা করিলেন। তারপর তিনি তাকে দূরে সরিয়ে নিয়ে আকাশের দিকে মাথা উঠালেন। দেখলেন, [আকাশে] সামিয়ানার মতো [কি একটা ঝুলছে]। আর এতে যেন অনেক বাতি রয়েছে। ভোরে উঠে তিনি তা নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে জানালেন।

[ঘটনা] শুনে তিনি বললেন, তুমি পড়তে থাকলে না কেন ইবনি হুযায়র? তুমি পড়তে থাকলে না কেন? ইবনি হুযায়র বললেন, হে আল্লাহর রসূল! আমার ঘোড়া ইয়াহ্ইয়া-কে মাড়িয়ে দেবার ভয় করছিলাম। সে ছিল ঘোড়াটির কাছাকাছি। তাই পড়া বন্ধ করে তার কাছে গেলাম। আবার আকাশের দিকে মাথা উঠালাম। দেখলাম, সামিয়ানার মতো, এতে প্রদীপের মতো কিছু আছে। তারপর আমি ওখান থেকে বের হলাম। আর তা ধীরে ধীরে অদৃশ্য হয়ে গেল।

[এসব] শুনে তিনি [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম] বললেনঃ এসব কি ছিল জানো? উসায়দ বললেন, জি না, হে আল্লাহর রসূল! তিনি বললেন, এটা ছিল মালায়িকাহর [ফেরেশতাগণের] দল। তাঁরা তোমার তিলাওয়াত শুনে তোমার নিকটবর্তী হচ্ছিলেন। তুমি যদি পড়তে থাকতে, ভোর পর্যন্ত তাঁরা ওখানে থাকতেন। লোকেরা তাঁদেরকে দেখিতে পেত। মানুষ হইতে তাঁরা লুকিয়ে থাকত না। [বোখারী, মুসলিম। তবে মতন বোখারীর। মুসলিম-এর বর্ণনায় রয়েছে, সামিয়ানা শূন্যে উঠে গেল, আমি বের হলাম-এর স্থলে।]{১}

{১} সহীহ : বোখারী ৫০১৮, মুসলিম ৭৯৬, শুআবুল ঈমান ২৪২৬। কুরআনের মর্যাদা -এই হাদিসটির তাহকীকঃ সহীহ হাদিস

২১১৭. বারা ইবনি আযিব [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

তিনি বলেন, এক ব্যক্তি সূরা আল কাহাফ পড়ছিল। দুটি রশি দিয়ে তার ঘোড়া পাশেই বাঁধা ছিল। এমন সময় এক খণ্ড মেঘ তাকে ঢেকে নিলো। মেঘখণ্ডটি ধীরে ধীরে তার নিকটতর হইতে লাগল। আর তার ঘোড়াটি লাফাতে লাগল। সে ভোরে উঠে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর কাছে এসে এ ঘটনা তাঁকে জানাল। [তিনি ঘটনা শুনে] বললেন, এটা ছিল রহমত, যা কুরআনের কারণে নেমে এসেছিল। [বোখারী, মুসলিম]{১}

{১} সহীহ : বোখারী ৫০১১, মুসলিম ৭৯৫, শুআবুল ঈমান ২২১৭। কুরআনের মর্যাদা -এই হাদিসটির তাহকীকঃ সহীহ হাদিস

২১১৮. আবু সাঈদ ইবনি মুআল্লা [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

বলেন, মাসজিদে আমি নামাজ আদায় করছিলাম। এ সময় নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাকে ডাকলেন। নামাজ শেষ না হওয়া পর্যন্ত আমি উত্তর দিলাম না। এরপর আমি তাহাঁর কাছে গিয়ে বললাম, হে আল্লাহর রসূল! আমি নামাজ আদায় করছিলাম। তখন তিনি [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম] বললেন, আল্লাহ কি এ কথা বলেননি যে, যখন আল্লাহ ও আল্লাহর রসূল ডাকেন তখন তাঁদের ডাকের জবাব দাও? অতঃপর তিনি [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম] বললেন, মাসজিদ হইতে বের হবার আগে আমি কি তোমাকে [পড়ার জন্য] শ্রেষ্ঠতর সূরাটি শিখাব না?

এরপর তিনি [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম] আমার হাত ধরলেন। তারপর আমরা মাসজিদ হইতে বের হইতে চাইলে, আমি বললাম, হে আল্লাহর রসূল! আপনি তো বলেছিলেন, আমি কি তোমাকে কুরআনের শ্রেষ্ঠ সূরা শিখাব না? তিনি [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম] বললেন, এটি হলো সূরা আলহামদু লিল্লা-হি রব্বিল আ-লামীন। এ সূরাই [পুনঃ পুনঃ আবৃত্ত] সে সাতটি আয়াত [সাব্উল মাসানী] ও মহা কুরআন, যা আমাকে দেয়া হয়েছে। [বোখারী]{১}

{১} সহীহ : বোখারী ৪৪৭৪, ইবনি মাজাহ ৩৭৮৫, আহমাদ ১৭৮৫১, ইবনি মাজাহ ৮৬২, সুনানুল কুবরা লিল বায়হাক্বী ১৩৩৯৭, সহীহ আল জামি ১৪৫২, আবু দাউদ ১৪৫৮, নাসায়ী ৯১৩। কুরআনের মর্যাদা -এই হাদিসটির তাহকীকঃ সহীহ হাদিস

২১১৯. আবু হুরাইরাহ [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ তোমাদের ঘরগুলোকে কবরস্থানে পরিণত করো না। [এগুলোতে কুরআন তিলাওয়াত করো] কারণ যেসব ঘরে সূরা আল বাকারাহ্ তিলাওয়াত করা হয় সে ঘর হইতে শয়তান ভেগে যায়। [মুসলিম]{১}

{১} সহীহ : মুসলিম ৭৮০, তিরমিজি ২৮৭৭, আহমাদ ৭৮২১, সহীহ আত তারগীব ১৪৫৮। কুরআনের মর্যাদা -এই হাদিসটির তাহকীকঃ সহীহ হাদিস

২১২০. আবু উমামাহ্ [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

তিনি বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে বলিতে শুনিয়াছি, তোমরা কুরআন পড়। কারণ কুরআন পাঠ কিয়ামাতের দিন তিলাওয়াতকারীর জন্য সুপারিশকারী হয়ে আসবে। তোমরা দু উজ্জ্বল সূরা আল বাকারাহ্ ও আ-লি ইমরান পড়বে। কেননা কিয়ামাতের দিন এ সূরা দুটি মেঘখণ্ড অথবা দুটি সামিয়ানা অথবা দুটি পক্ষ প্রসারিত পাখির ঝাঁকরূপে আসবে। এ দু সূরার পাঠকদের জন্য আল্লাহর নিকট সুপারিশ করিবে। বিশেষ করে তোমরা সূরা আল বাকারাহ্ পড়বে। কারণ সূরা আল বাকারাহ্ পড়া বারাকাত আর তা না পড়া আক্ষেপ। এ সূরা দুটি পড়তে পারবে না অলস বেকুবরা। [মুসলিম]{১}

{১} সহীহ : মুসলিম ৮০৪, শুআবুল ঈমান ১৮২৭, সহীহ ইবনি হিববান ১১৬, সহীহাহ্ ৩৯৯২। কুরআনের মর্যাদা -এই হাদিসটির তাহকীকঃ সহীহ হাদিস

২১২১. নাওয়াস ইবনি সাম্আন [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

তিনি বলেন, আমি নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে বলিতে শুনিয়াছি, কুরআন ও কুরআনপাঠকদের যারা কুরআন অনুযায়ী আমাল করত [তাদের] কিয়ামাতের দিন উপস্থিত করা হবে। তাদের সামনে দুটি মেঘখণ্ড অথবা দুটি কালো ছায়ারূপে থাকিবে সূরা আল বাকারাহ্ ও সূরা আ-লি ইমরান। এদের মাঝখানে থাকিবে দীপ্তি। অথবা থাকিবে প্রসারিত- পালক বিশিষ্ট পাখির দুটি ঝাঁক। তারা আল্লাহর নিকট কুরআন পাঠকের পক্ষে সুপারিশ করিবে। [মুসলিম]{১}

{১} সহীহ : মুসলিম ৮০৫, তিরমিজি ২৮৮৩, আহমাদ ১৭৬৩৭, শুআবুল ঈমান ২১৫৭, সহীহ আত তারগীব ১৪৬৫। কুরআনের মর্যাদা -এই হাদিসটির তাহকীকঃ সহীহ হাদিস

২১২২. উবাই ইবনি কাব [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ হে আবুল মুনযির! তুমি কি বলিতে পারো তোমার জানা আল্লাহর কিতাবের কোন্ আয়াতটি সবচেয়ে শ্রেষ্ঠ? আমি বললাম, আল্লাহ ও আল্লাহর রসূলই ভাল জানেন। [এরপর] তিনি [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম] আবার বললেন, হে আবুল মুনযির! তুমি বলিতে পারো কি তোমার জানা আল্লাহর কিতাবের কোন্ আয়াতটি শ্রেষ্ঠতর? এবার আমি বললাম, আল্ল-হু লা- ইলা-হা ইল্লা- হুওয়াল হাইয়্যুল কইয়ূম। উবাই বলেন, এবার তিনি [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম] আমার বুকে হাত মেরে বললেন, হে আবুল মুনযির! জ্ঞান ও প্রজ্ঞা তোমার জন্য মুবারক হোক। [মুসলিম]{১}

{১} সহীহ : মুসলিম ৮১০, আবু দাউদ ১৪৬০, আহমাদ ২১২৭৮, মুসতাদারাক লিল হাকিম ৫৩২৬, শুআবুল ঈমান ২১৬৯, সহীহ আত তারগীব ১৪৭১। কুরআনের মর্যাদা -এই হাদিসটির তাহকীকঃ সহীহ হাদিস

২১২৩. আবু হুরাইরাহ [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

তিনি বলেন, এক রাতে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাকে ফিতরার মাল পাহারায় নিযুক্ত করিলেন। এমন সময় আমার নিকট এক ব্যক্তি এসেই অঞ্জলি ভরে খাদ্যশস্য উঠাতে লাগল। আমি তাকে ধরে ফেললাম ও বললাম, আমি তোমাকে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর নিকট নিয়ে যাব। সে বলিল, আমি একজন অভাবী লোক। আমার অনেক পোষ্য। আমি নিদারুণ কষ্টে আছি। আবু হুরাইরাহ [রাদি.] বলেন, আমি তখন তাকে ছেড়ে দিলাম। ভোরে আমি [রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর কাছে] গেলাম। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাকে বললেন, হে আবু হুরাইরাহ! তোমার হাতে গত রাতে বন্দী লোকটির কী অবস্থা? আমি বললাম, হে আল্লাহর রসূল! বন্দীটি তার নিদারুণ অভাব ও বহু পোষ্যের অভিযোগ করিল। তাই আমি তার ওপর দয়া করলাম। তাকে ছেড়ে দিলাম। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তখন বললেন, শুনো! সে তোমার কাছে মিথ্যা বলেছে। সে আবার আসবে।

{আবু হুরাইরাহ [রাদি.] বলেন] আমি রসূলের বলার কারণে বুঝলাম, অবশ্যই সে আবার আসবে। আমি তার অপেক্ষায় রইলাম। [ঠিকই] সে আবার এলো। দু হাতের কোষ ভরে খাদ্যশস্য উঠাতে লাগল এবং আমি তাকে ধরে ফেললাম। বললাম, আমি তোমাকে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর কাছে নিয়ে যাবো। সে বলিল, তুমি আমাকে এবারও ছেড়ে দাও। আমি বড্ড অভাবী মানুষ। আমার পোষ্যও অনেক। আমি আর আসব না। এবারও আমি তার ওপর দয়া করলাম। ছেড়ে দিলাম। ভোরে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাকে বললেন, আবু হুরাইরাহ! তোমরা বন্দীর খবর কী? আমি বললাম, হে আল্লাহর রসূল! সে খুবই অভাবী। বহু পোষ্যের অভিযোগ করিল। তাই আমি তার প্রতি দয়াপ্রদর্শন করলাম। তাকে ছেড়ে দিলাম। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তখন বললেন, শুনো তোমার কাছে সে মিথ্যা বলেছে। আবারও যে আসবে।

[বর্ণনাকারী আবু হুরাইরাহ [রাদি.] বলেন,] আমি বুঝলাম, সে আবারও আসবে। তাই আমি তার অপেক্ষায় থেকে তাকে ধরে ফেললাম। বললাম, তোমাকে আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর নিকট নিয়ে যাব। এটা তিনবারের শেষবার। তুমি ওয়াদা করেছিলে আর আসবে না। এরপরও তুমি এসেছ। সে বলিল, এবারও যদি আমাকে ছেড়ে দাও। আমি তোমাকে এমন কয়টি বাক্য শিখাব, যে বাক্যের দ্বারা আল্লাহ তোমার উপকার করিবেন। তুমি শোবার জন্য বিছানায় গেলে আয়াতুল কুরসী পড়বে, আল্ল-হু লা- ইলা-হা ইল্লা- হুওয়াল হাইয়্যুল কইয়্যূম আয়াতের শেষ পর্যন্ত। তাহলে আল্লাহর তরফ থেকে সব সময় তোমার জন্য একজন রক্ষী থাকিবে, ভোর হওয়া পর্যন্ত তোমার কাছে শয়তান ঘেঁষতে পারবে না। এবারও তাকে আমি ছেড়ে দিলাম।

ভোরে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাকে বললেন, তোমার বন্দীর কী হলো? আমি বললাম [ইয়া রসূলাল্লাহ!], সে বলিল, সে আমাকে এমন কয়টি বাক্য শিখাবে, যার দ্বারা আল্লাহ আমার উপকার করিবেন। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ শুনো! এবার সে তোমার কাছে সত্য কথা বলেছে অথচ সে খুবই মিথ্যুক। তুমি কি জানো, তুমি এ তিন রাত কার সাথে কথা বলেছ? আমি বললাম, জি-না। তখন তিনি [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম] বললেন, এ ছিল একটা শয়তান। [বোখারী]{১}

{১} সহীহ : বোখারী ২৩১১, তিরমিজি ২৮৮০, সহীহ ইবনি খুযায়মাহ্ ২৪২৪, আদ্ দাওয়াতুল কাবীর ৪০৬, সহীহ আত তারগীব ৬১০। কুরআনের মর্যাদা -এই হাদিসটির তাহকীকঃ সহীহ হাদিস

২১২৪. আবদুল্লাহ ইবনি আব্বাস [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

তিনি বলেন, একদিন জিবরীল আমীন [আঃ] নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর কাছে বসে ছিলেন। এ সময় উপরের দিক হইতে দরজা খোলার শব্দ {জিবরীল [আঃ]] শুনলেন। তিনি উপরের দিকে মাথা উঠালেন এবং বললেন, আসমানের এ দরজাটি আজ খোলা হলো। এর আগে আর কখনো তা খোলা হয়নি। [রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ] এ দরজা দিয়ে একজন মালাক [ফেরেশতা] নামলেন। তখন জিবরীল [আঃ] বললেন, যে মালাক [আজ] জমিনে নামলেন, আজকে ছাড়া আর কখনো তিনি জমিনে নামেননি। [রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,] তিনি সালাম করিলেন। তারপর আমাকে বললেন, আপনি দুটি নূরের সুসংবাদ গ্রহণ করুন। এটা আপনার আগে আর কোন নবীকে দেয়া হয়নি। [তাহলো] সূরা আল ফাতিহাহ্ ও সূরা আল বাকারাহ্র শেষাংশ। আপনি এ দুটি সূরার যে কোন বাক্যই পাঠ করুন না কেন নিশ্চয়ই আপনাকে তা দেয়া হবে। [মুসলিম]{১}

{১} সহীহ : মুসলিম ৮০৬, নাসায়ী ৯১২, মুজামুল কাবীর লিত্ব ত্ববারানী ১২২৫৫, মুসতাদারাক লিল হাকিম ২০৫২, সহীহ আত তারগীব ১৪৫৬। কুরআনের মর্যাদা -এই হাদিসটির তাহকীকঃ সহীহ হাদিস

২১২৫. আবদুল্লাহ ইবনি মাস্ঊদ [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ যে ব্যক্তি রাতে সূরা আল বাকারার শেষ দুটি আয়াত, অর্থাৎ- আ-মানার রসূলু হইতে শেষ পর্যন্ত পড়ে, সেটাই তার জন্য যথেষ্ট হবে। [বোখারী, মুসলিম]{১}

{১} সহীহ : বোখারী ৫০৪০, মুসলিম ৮০৭, মুজামুল কাবীর লিত্ব ত্ববারানী ৫৪৩। কুরআনের মর্যাদা -এই হাদিসটির তাহকীকঃ সহীহ হাদিস

২১২৬. আবু দারদা [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ যে ব্যক্তি সূরা আল কাহাফ-এর প্রথম দশটি আয়াত মুখস্থ করিবে তাকে দাজ্জালের অনিষ্ট হইতে নিরাপদ রাখা হবে। [মুসলিম]{১}

{১} সহীহ : মুসলিম ৮০৯, আবু দাউদ ৪৩২৩, তিরমিজি ২৮৮৬, আহমাদ ২১৭১২, মুসতাদারাক লিল হাকিম ৩৩৯১, সুনানুল কুবরা লিল বায়হাক্বী ৫৯৯৭, রিয়াযুস্ সলিহীন ১০২৮, সহীহাহ্ ৫৮২, সহীহ আত তারগীব ১৪৭২, সহীহ আল জামি ৬২০১। কুরআনের মর্যাদা -এই হাদিসটির তাহকীকঃ সহীহ হাদিস

২১২৭. আবু দারদা [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ তোমাদের কেউ কি প্রতি রাতে এক-তৃতীয়াংশ কুরআন তিলাওয়াতে সক্ষম? সাহাবীগণ বললেন, প্রতি রাতে কি করে এক-তৃতীয়াংশ কুরআন পড়া যাবে? তিনি [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম] বললেন, সূরা কুল হুওয়াল্ল-হু আহাদ কুরআনের এক-তৃতীয়াংশের সমান। [মুসলিম]{১}

{১} সহীহ : মুসলিম ৮১১, দারিমী ৩৪৭৪, সহীহ আত তারগীব ১৪৮০। কুরআনের মর্যাদা -এই হাদিসটির তাহকীকঃ সহীহ হাদিস

২১২৮.

وَرَوَاهُ البُخَارِىُّ عَنْ أَبِىْ سَعِيْدٍ

ঈমাম বোখারী হইতে বর্ণীতঃ

হাদিসটি আবু সাঈদ হইতে বর্ণনা করিয়াছেন।{১}

{১} সহীহ : বোখারী ৫০১৫। কুরআনের মর্যাদা -এই হাদিসটির তাহকীকঃ সহীহ হাদিস

২১২৯. আয়িশাহ্ [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

একবার নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এক ব্যক্তিকে একটি সেনাদলের সেনাপতি করে পাঠালেন। সে তার সঙ্গীদের নামাজ আদায় করাত এবং কুল হুওয়াল্ল-হু আহাদ দিয়ে নামাজ শেষ করত। তারা মাদীনায় ফেরার পর নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর নিকট এ কথা উল্লেখ করেন। তিনি [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম] বললেন, তাকে জিজ্ঞেস করো কি কারণে সে তা করে। সে বলিল, এর কারণ এতে আল্লাহর গুণাবলীর উল্লেখ রয়েছে। আর আমি আল্লাহর গুণাবলী পড়তে ভালবাসি। তার উত্তর শুনে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, তাকে জানিয়ে দাও, আল্লাহ তাআলাও তাকে ভালবাসেন। [বোখারী, মুসলিম]{১}

{১} সহীহ : বোখারী ৭৩৭৫, মুসলিম ৮১৩, ইবনি হিববান ৭৯৩, সহীহ আত তারগীব ১৪৮৩, নাসায়ী ৯৯৩। কুরআনের মর্যাদা -এই হাদিসটির তাহকীকঃ সহীহ হাদিস

২১৩০. আনাস [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

তিনি বলেন, এক ব্যক্তি বলিল, হে আল্লাহর রসূল! আমি এ কুল হুওয়াল্ল-হু আহাদ সূরাকে ভালবাসি। [এ কথা শুনে] রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ তোমার এ সূরার প্রতি ভালবাসা তোমাকে জান্নাতে প্রবেশ করিবে। [তিরমিজি; এই একই অর্থের একটি হাদিস ঈমাম বোখারী বর্ণনা করিয়াছেন]{১}

{১} সহীহ : তিরমিজি ২৯০১, দারিমী ৩৪০৫, সহীহ ইবনি হিববান ৭৯২, আহমাদ ১২৪৩২, সহীহ আত তারগীব ১৪৮৪। ঈমাম বোখারী [রাহিমাহুল্লাহ] সানাদহীন অবস্থায় তা বর্ণনা করিয়াছেন। কুরআনের মর্যাদা -এই হাদিসটির তাহকীকঃ সহীহ হাদিস

২১৩১. উকবাহ্ ইবনি আমির [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

তিনি বলেন, একদিন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেনঃ আজ রাতে এমন কিছু আশ্চর্যজনক আয়াত নাযিল হয়েছে আগে এ রকম কোন আয়াত [নাযিল] হইতে দেখা যায়নি। [আর তা হলো] কুল আঊযু বিরাব্বিল ফালাক ও কুল আঊযু বিরাবিবন্‌না-স। [মুসলিম]{১}

{১} সহীহ : মুসলিম ৮১৪, সহীহ আত তারগীব ১৪৮৫, নাসায়ী ৯৫৪, মুজামুল কাবীর লিত্ব ত্ববারানী ৯৬৮, তিরমিজি ২৯০২, সহীহ আল জামি ১৪৯৯। কুরআনের মর্যাদা -এই হাদিসটির তাহকীকঃ সহীহ হাদিস

২১৩২. আয়িশাহ্ [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

তিনি বলেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম প্রতি রাতে [ঘুমাবার জন্য] বিছানায় যাবার সময় দু হাতের তালু একত্র করিতেন। তারপর এতে কুল হুওয়াল্ল-হু আহাদ, কুল আঊযু বিরাব্বিল ফালাক ও কুল আঊযু বিরাব্বিন্না-স পড়ে ফুঁ দিতেন। এরপর এ দু হাত দিয়ে তিনি [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম] তাহাঁর শরীরের যতটুকু সম্ভব হত মুছে নিতেন। শুরু করিতেন মাথা, চেহারা এবং শরীরের সম্মুখ ভাগ হইতে। এভাবে তিনি [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম] তিনবার করিতেন। [বোখারী, মুসলিম।]

ইবনি মাস্ঊদণ্ডএর হাদিস [لَمَّا أُسْرِىَ بِرَسُولِ اللّٰهِ ﷺ] যখন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে {স্বশরীরে] রাতে সফর করানো হয়েছে আমরা মিরাজ অধ্যায়ে অচিরেই বর্ণনা করব {ইনশাআল্লাহ]।]{১}

{১} সহীহ : বোখারী ৫০১৭, মুসলিম ২৭১৫, আবু দাউদ ৫০৫৬, তিরমিজি ৩৪০২, মুজামুল আওসাত লিত্ব ত্ববারানী ৫০৭৯, সহীহ ইবনি হিব্বান ৫৫৪৪, আল কালিমুত্ব ত্বইয়্যিব ৩০, সহীহাহ্ ৩১০৪।কুরআনের মর্যাদা -এই হাদিসটির তাহকীকঃ সহীহ হাদিস

পরিচ্ছদঃ দ্বিতীয় অনুচ্ছেদ

২১৩৩. আবদুর রহমান ইবনি আওফ [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

তিনি নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম হইতে বর্ণনা করিয়াছেন যে, তিনি ইরশাদ করেছেনঃ তিনটি জিনিস কিয়ামাতের দিন আল্লাহর আরশের নীচে থাকিবে। [১] কুরআন, এ কুরআন বান্দাদের [পক্ষে বিপক্ষে] আর্জি পেশ করিবে। এর যাহের ও বাতেন দুদিক রয়েছে। [২] আমানাত ও [৩] আত্মীয়তার বন্ধন। [এ তিনটি জিনিসের প্রত্যেকে ফরিয়াদ করিবে, হে আল্লাহ! যে আমাকে রক্ষা করেছে তুমি {আল্লাহ] তাকে রক্ষা করো। যে আমার সাথে সম্পর্ক ছিন্ন করেছে আল্লাহ তাকে ছিন্ন করো।] [ঈমাম বাগাবী: শারহুস্ সুন্নাহ]{১}

1] জইফ : যঈফাহ্ ১৩৩৭, জইফ আল জামি ২৫৭৭, শারহুস্ সুন্নাহ ৩৪৩৩। কারণ এর সানাদে হাসান ইবনি আবদুর রহমান একজন মাকহূল রাবী, আর কাসীর ইবনি আবদুল্লাহ আল ইয়াশকুরী দুর্বল রাবী । কুরআনের মর্যাদা -এই হাদিসটির তাহকীকঃ দুর্বল হাদিস

২১৩৪. আবদুল্লাহ ইবনি আমর [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ কুরআন পাঠকারীকে কিয়ামাতের দিন বলা হবে, পাঠ করিতে থাকো আর উপরে উঠতে থাকো। [অক্ষরে অক্ষরে ও শব্দে শব্দে] সুস্পষ্টভাবে পাঠ করিতে থাকো, যেভাবে দুনিয়াতে স্পষ্টভাবে পাঠ করিতে। কারণ তোমার স্থান [মর্যাদা] হবে যা তুমি পাঠ করিবে শেষ আয়াত পর্যন্ত [আয়াত পাঠের তুলনাগত দিক থেকে]। [আহমদ, তিরমিজি, আবু দাউদ, নাসায়ী]{১}

{১} হাসান সহীহ : আবু দাউদ ১৪৬৪, তিরমিজি ২৯১৪, সহীহাহ্ ২২৪০, সহীহ ইবনি হিববান ১৭৯০, সহীহ আত তারগীব ১৪২৬, সুনানুল কুবরা লিল বায়হাক্বী ২৪২৫। কুরআনের মর্যাদা -এই হাদিসটির তাহকীকঃ হাসান হাদিস

২১৩৫. আবদুল্লাহ ইবনি আব্বাস [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ যে পেটে কুরআনের কিছু নেই তা শূন্য [ধ্বংসপ্রাপ্ত] ঘরের মতো। [তিরমিজি ও দারিমী; ঈমাম তিরমিজি বলেন, হাদিসটি সহীহ]{১}

{১} জইফ : তিরমিজি ২৯১৩, আহমাদ ১৯৪৭, দারিমী ৩৩৪৯, মুসতাদারাক লিল হাকিম ২০৩৭, রিয়াযুস্ সলিহীন ১০০৭, জইফ আত তারগীব ৮৭১, জইফ আল জামি ১৫২৪। কারণ এর সানাদে ত্ববুস ইবনি আবী যব্ইয়ান একজন দুর্বল রাবী। কুরআনের মর্যাদা -এই হাদিসটির তাহকীকঃ দুর্বল হাদিস

২১৩৬. আবু সাঈদ [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ আল্লাহ তাআলা বলেন, যাকে আমার জিকির ও আমার কাছে কিছু চাওয়া হইতে কুরআন বিরত রেখেছে, আমি তাকে প্রার্থনাকারীদের চেয়ে বেশি দান করব। তিনি [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম] বলেন, কেননা আল্লাহর কালামের শ্রেষ্ঠত্ব অন্য সব কালামের উপর; যেমন আল্লাহর শ্রেষ্ঠত্ব তাহাঁর সৃষ্টির উপর। [তিরমিজি, দারিমী ও বায়হাক্বী- শুআবুল ঈমানে। ঈমাম তিরমিজি বলেছেন, হাদিসটি হাসান ও গরীব।]{১}

{১} জইফ : তিরমিজি ২৯২৬, যঈফাহ্ ১৩৩৫, জইফ আত তারগীব ৮৬০, জইফ আল জামি ৬৪৩৫, দারিমী ৩৩৯৯, শুআবুল ঈমান ১৮৬০। কারণ এর সানাদে আত্বিয়্যাহ্ আল আওফী একজন দুর্বল রাবী এবং মুহাম্মাদ ইবনি হাসান ইবনি আবী ইয়াযীদ মিথ্যার অপবাদপ্রাপ্ত রাবী। ইবনি মাঈন [রাহিমাহুল্লাহ] তাকে অবিশ্বস্ত বলে অবহিত করিয়াছেন। কুরআনের মর্যাদা -এই হাদিসটির তাহকীকঃ দুর্বল হাদিস

২১৩৭. আবদুল্লাহ ইবনি মাস্ঊদ [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ যে ব্যক্তি আল্লাহর কিতাবের কোন একটি অক্ষরও পাঠ করিবে, সে নেকী পাবে। আর নেকী হচ্ছে আমালের দশ গুণ। আমি বলছি না যে, الٓمٓ]] আলিফ লাম মীম একটি অক্ষর। বরং আলিফ একটি অক্ষর, লাম একটি অক্ষর ও মীম একটি অক্ষর। [তাই আলিফ, লাম ও মীম বললেই ত্রিশটি নেকী পাবে]। [তিরমিজি, দারিমী। আর ঈমাম তিরমিজি বলেছেন, হাদিসটি হাসান সহীহ। কিন্তু সানাদের দিক দিয়ে গরীব।]{১}

{১} সহীহ : তিরমিজি ২৯১০, সহীহাহ্ ৩৩২৭, সহীহ আত তারগীব ১৪১৬, সহীহ আল জামি ৬৪৬৯, দারিমী ৩৩১১। কুরআনের মর্যাদা -এই হাদিসটির তাহকীকঃ সহীহ হাদিস

২১৩৮. হারিস আওয়ার [রাহিমাহুল্লাহ] হইতে বর্ণীতঃ

বলেন, আমি [একদিন কূফার] মাসজিদে বসা লোকজনের কাছে গেলাম। দেখলাম, লোকেরা আজে-বাজে কথায় ব্যস্ত। এরপর আমি আলী [রাদি.] এর কাছে গিয়ে এ খবর বললাম। তিনি বললেন, তারা এমন করছে? আমি জবাব দিলাম, হ্যাঁ। তিনি বললেন, [তবে] শুনো, আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে বলিতে শুনিয়াছি, সাবধান! শীঘ্রই পৃথিবীতে কলহ-ফাসাদ আরম্ভ হবে। আমি {আলী] বললাম, হে আল্লাহর রসূল! এ থেকে বাঁচার উপায় কী? তিনি [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম] বললেন, আল্লাহর কিতাব, এতে তোমাদের আগের ও পরের খবর রয়েছে। তোমাদের ভিতরে বিতর্কের মীমাংসার পদ্ধতিও রয়েছে। সত্য মিথ্যার পার্থক্যও আছে। এটা কোন অর্থহীন কিতাব নয়। যে অহংকারী ব্যক্তি এ কুরআন ত্যাগ করিবে, আল্লাহ তাআলা তার অহংকার চূর্ণ-বিচূর্ণ করিবেন। যে ব্যক্তি এর বাইরে হিদায়াত সন্ধান করিবে, আল্লাহ তাআলা তাকে পথভ্রষ্ট করিবেন। এ কুরআন হলো আল্লাহর মজবুত রশি। জিকির ও সত্য সরল পথ।

কুরআন অবলম্বন করে কোন প্রবৃত্তি বিপথগামী হয় না। এর দ্বারা যবানের কষ্ট হয় না। এর দ্বারা প্রজ্ঞাবানগণ বিতৃষ্ণ হয় না। এ কুরআন বার বার পাঠ করায় পুরাতন হয় না। এ কুরআনের বিস্ময়কর তথ্য অশেষ। কুরআন শুনে স্থির থাকতে পারেনি জিনেরা। এমনকি তারা এ কুরআন শুনে বলে উঠেছিল, শুনিয়াছি আমরা এমন এক বিস্ময়কর কুরআন। যা সন্ধান দেয় সত্য পথের। অতএব ঈমান এনেছি আমরা এর উপর। যে ব্যক্তি কুরআনের কথা সত্য বলে, যে এর উপর আমাল করে, সে পুরস্কার পাবে। যে এর দ্বারা বিচার-ফায়সালা করে, ন্যায়বিচার করে, যে [মানুষকে] এর দিকে ডাকে, সে সত্য সরল পথের দিকেই ডাকে। [তাই এরূপ কুরআন ছেড়ে তারা কেন অন্য আলোচনায় বিভোর হচ্ছে?]। [তিরমিজি ও দারিমী। কিন্তু ঈমাম তিরমিজি বলেছেন, এ হাদিসের সানাদ মাজহূল {অপরিচিত]। আর হারিস আল আওয়ার-এর ব্যাপারে বিতর্ক রয়েছে।]{১}

{১} জইফ : তিরমিজি ২৯০৬, যঈফাহ্ ৬৩৯৩। কারণ এর সানাদে হারিস আল আওয়ার একজন মাজহূল রাবী। কুরআনের মর্যাদা -এই হাদিসটির তাহকীকঃ দুর্বল হাদিস

২১৩৯. মুআয আল জুহানী [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ যে ব্যক্তি কুরআন পাঠ করে এবং এর মধ্যে তাহাঁর হুকুম-আহকামের উপর আমাল করে, তার মাতাপিতাকে কিয়ামাতের দিন একটি মুকুট পরানো হবে। এ মুকুটের কিরণ দুনিয়ার সূর্যের কিরণ হইতেও উজ্জ্বল হবে, যদি এ সূর্য তোমাদের মধ্যে থাকত [তবে উপলব্ধি করিতে পারতে]। যে ব্যক্তি এ কুরআনের উপর আমাল করে তার ব্যাপারে এখন তোমাদের কী ধারণা? [আহমদ, আবু দাউদ]{১}

{১} জইফ : আবু দাউদ ১৪৫৩, জইফ আত তারগীব ৮৬১, মুসতাদারাক লিল হাকিম ২০৮৫, শুআবুল ঈমান ১৭৯৭, জইফ আল জামি ৫৭৬২। কারণ এর সানাদে যব্বান ইবনি ফায়িদ একজন দুর্বল রাবী। কুরআনের মর্যাদা -এই হাদিসটির তাহকীকঃ দুর্বল হাদিস

২১৪০. উকবাহ্ ইবনি আমির [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

তিনি বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে বলিতে শুনিয়াছি, কুরআন কারীমকে যদি চামড়ায় মুড়িয়ে রেখে আগুন ধরিয়ে দেয়া হয় তাহলে তা পুড়বে না। [দারিমী]{১}

{১} সহীহ : দারিমী ৩৩১০, সহীহাহ্ ৩৫৬২, আহমাদ ১৭৪০৯। কুরআনের মর্যাদা -এই হাদিসটির তাহকীকঃ সহীহ হাদিস

২১৪১. আলী ইবনি আবু ত্বলিব [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ যে ব্যক্তি কুরআন পড়ে ও একে মুখস্থ করে, এর হালালকে হালাল এবং হারামকে হারাম মেনে চলে, আল্লাহ তাকে জান্নাতে প্রবেশ করাবেন। তার পরিবারের এমন দশ ব্যক্তির জন্য তার সুপারিশ কবূল করিবেন, যাদের প্রত্যেকেরই নিশ্চিত ছিল জাহান্নাম। [আহমদ, তিরমিজি, ইবনি মাজাহ ও দারিমী। কিন্তু ঈমাম তিরমিজি বলেছেন, এ হাদিসটি গরীব। এর একজন বর্ণনাকারী হাফস ইবনি সুলায়মান হাদিস বর্ণনায় দুর্বল।]{১}

{১} খুবই দুর্বল : তিরমিজি ২৯০৫, ইবনি মাজাহ ২১৬, আহমাদ ১২৬৮, শুআবুল ঈমান ১৭৯৬, জইফ আত তারগীব ৮৬৮, জইফ আল জামি ৫৭৬১। কারণ এর সানাদে হাফস্ ইবনি সুলায়মান একজন দুর্বল রাবী এবং কাসীর ইবনি যাযান একজন মাজহূল রাবী। কুরআনের মর্যাদা -এই হাদিসটির তাহকীকঃ খুবই দুর্বল

২১৪২. আবু হুরাইরাহ [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম একবার উবাই ইবনি কাবকে জিজ্ঞেস করিলেন, তুমি সলাতে কিভাবে কুরআন পড়ো? উত্তরে উবাই ইবনি কাব রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে সূরা আল ফাতিহাহ্ পড়ে শুনালেন। [তাহাঁর পড়া শুনে] তিনি [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম] বললেন, আল্লাহর কসম, যাঁর হাতে আমার জীবন! এর মতো কোন সূরা তাওরাত, ইঞ্জীল, যাবূর বা ফুরকান-এ [কুরআনের অন্য কোন সূরাতেও] নাযিল হয়নি। এ সূরা হলো সাব্উল মাসানী [পুনরাবৃত্ত সাতটি আয়াত] ও মহান কুরআন। এটি আমাকেই দেয়া হয়েছে। [তিরমিজি। তিনি বলেন, এ হাদিসটি হাসান ও সহীহ। দারিমী বর্ণনা করিয়াছেন, এর মতো কোন সূরা নাযিল করা হয়নি। তাহাঁর বর্ণনায় হাদিসের শেষের দিক ও উপরের বর্ণিত উবাই-এর ঘটনা বর্ণিত হয়নি।]{১}

{১} সহীহ : তিরমিজি ২৮৭৫, দারিমী ৩৪১৬। কুরআনের মর্যাদা -এই হাদিসটির তাহকীকঃ সহীহ হাদিস

২১৪৩

আবু হুরাইরাহ [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ কুরআন শিক্ষা করো ও পড়তে থাকো। যে ব্যক্তি কুরআন পড়ে এবং কুরআন নিয়ে রাতে সলাতে দাঁড়ায় তার দৃষ্টান্ত মিশক ভর্তি থলির মতো যা চারদিকে সুগন্ধি ছড়ায়। যে ব্যক্তি কুরআন শিক্ষা করে তা পেটে নিয়ে রাতে ঘুমায়, তার দৃষ্টান্ত ওই মিশকপূর্ণ থলির মতো যার মুখ ঢাকনি দিয়ে বন্ধ করা হয়েছে। [তিরমিজি, নাসায়ী ও ইবনি মাজাহ]{১}

{১} জইফ : তিরমিজি ২৮৭৬, ইবনি মাজাহ ২১৬, জইফ আত তারগীব ৮৬৮, জইফ আল জামি ২৪৫২। কারণ এর সানাদে আত্বা একজন মাজহূল রাবী। কুরআনের মর্যাদা -এই হাদিসটির তাহকীকঃ দুর্বল হাদিস

২১৪৪. আবু হুরাইরাহ [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ যে ব্যক্তি সকালে সূরা হা-মীম আল মুমিন….. ইলায়হিল মাসীর পর্যন্ত ও আয়াতুল কুরসী পড়বে, তাকে এর বারাকাতে সন্ধ্যা পর্যন্ত হিফাযাতে রাখা হবে। আর যে ব্যক্তি তা সন্ধ্যায় পড়বে তাকে সকাল পর্যন্ত নিরাপদ রাখা হবে- [তিরমিজি ও দারিমী। কিন্তু ঈমাম তিরমিজি বলেন, হাদিসটি গরীব।]{১}

{১} জইফ : তিরমিজি ২৮৭৯, জইফ আল জামি ৫৭৬৯, শুআবুল ঈমান ২২৪৫। কারণ এর সানাদে আবদুর রহমান ইবনি আবু বাকর আল মুলায়কী স্মৃতিশক্তিগত ত্রুটির কারণে একজন দুর্বল রাবী। কুরআনের মর্যাদা -এই হাদিসটির তাহকীকঃ দুর্বল হাদিস

২১৪৫. নুমান ইবনি বাশীর [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ আসমান ও জমিন সৃষ্টি করার দু হাজার বছর আগে আল্লাহ তাআলা একটি কিতাব লিখেছেন। এ কিতাব হইতে পরবর্তীতে দুটি আয়াত নাযিল করিয়াছেন যা দ্বারা সূরা আল বাকারাহ্ শেষ করিয়াছেন। কোন ঘরে তা তিন রাত পড়া হবে, অথচ এরপরও এ ঘরের কাছে শয়তান যাবে, এমনটা হইতে পারে না। [তিরমিজি ও দারিমী। কিন্তু ঈমাম তিরমিজি বলেছেন, হাদিসটি গরীব।]{১}

{১} সহীহ : তিরমিজি ২৮৮২, আহমাদ ১৮৪১৪, দারিমী ৩৪৩০, মুসতাদারাক লিল হাকিম ৩০৩১, সহীহ আত তারগীব ১৪৬৭। কুরআনের মর্যাদা -এই হাদিসটির তাহকীকঃ সহীহ হাদিস

২১৪৬. আবু দারদা [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ যে ব্যক্তি সূরা আল কাহাফ-এর প্রথম দিকের তিনটি আয়াত পড়বে, তাকে দাজ্জালের ফিতনা হইতে নিরাপদ রাখা হবে। [তিরমিজি। তিনি বলেন, এ হাদিসটি হাসান ও সহীহ।]{১}

{১} শায : আর মাহফূয হলো من حفظ عشر أيات এ শব্দে। তিরমিজি ২৮৮৬, যঈফাহ্ ১৩৩৬, জইফ আত তারগীব ৮৮৩, জইফ আল জামি ৫৭৬৫। কুরআনের মর্যাদা -এই হাদিসটির তাহকীকঃ শায

২১৪৭. আনাস [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ প্রত্যেক জিনিসের কলব [হৃদয়] আছে। কুরআনের কলব হলো, সূরা ইয়াসীন। যে ব্যক্তি এ সূরা একবার পড়বে, আল্লাহ তাআলা তার জন্য একবার পড়ার কারণে দশবার কুরআন পড়ার সাওয়াব লিখবেন। [তিরমিজি, দারিমী। ঈমাম তিরমিজি এ হাদিসটিকে গরীব বলেছেন।]{১}

{১} মাওযূ [জাল] : তিরমিজি ২৮৮৭, দারিমী ৩৪৫৯, যঈফাহ্ ১৬৯, জইফ আল জামি ১৯৩৫, জইফ আত তারগীব ৮৮৫। কারণ এর সানাদে মুহাম্মাদণ্ডএর পিতা হারূন একজন মিথ্যার অপবাদপ্রাপ্ত রাবী। কুরআনের মর্যাদা -এই হাদিসটির তাহকীকঃ জাল হাদিস

২১৪৮. আবু হুরাইরাহ [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ আল্লাহ তাআলা আসমান ও জমিন সৃষ্টির এক হাজার বছর পূর্বে সূরা ত্ব-হা- ও সূরা ইয়াসীন পাঠ করিলেন। মালায়িকাহ্ [ফেরেশতা] [ফেরেশতাগণ] তা শুনে বললেন, ধন্য সে জাতি যাদের ওপর এ সূরা নাযিল হবে। ধন্য সে পেট যে এ সূরা ধারণ করিবে। ধন্য সে মুখ [জিহবা], যে তা উচ্চারণ করিবে। [দারিমী]{১}

{১} মুনকার : দারিমী ৩৪৫৭, শুআবুল ঈমান ২২২৫, যঈফাহ্ ১২৪৮। কারণ এর সানাদে ইব্রাহীম সম্পর্কে ঈমাম বোখারী [রাহিমাহুল্লাহ] বলেছেন, মুনকারুল হাদিস। আর ঈমাম নাসায়ী [রাহিমাহুল্লাহ] বলেছেন, দুর্বল। কুরআনের মর্যাদা -এই হাদিসটির তাহকীকঃ মুনকার

২১৪৯. আবু হুরাইরাহ [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ যে ব্যক্তি রাতে সূরা হা-মীম আদ্ দুখা-ন পড়ে। তার সকাল এভাবে হয় যে সত্তর হাজার মালাক [ফেরেশতা] আল্লাহর নিকট তার জন্য মাগফিরাত চাইতে থাকেন। [তিরমিজি। তিনি বলেন, এ হাদিসটি গরীব। একজন বর্ণনাকারী আমর ইবনি আবু খাস্আম জইফ। ঈমাম বোখারী বলেছেন, আমর একজন মুনকার রাবী।]{১}

{১} মাওযূ [জাল] : তিরমিজি ২৮৮৮, জইফ আত তারগীব ৯৭৮, জইফ আল জামি ৫৭৬৬। কারণ এর সানাদে উমার ইবনি আবু খাস্আম সম্পর্কে ঈমাম বোখারী [রাহিমাহুল্লাহ] বলেছেন সে মুনকারুল হাদিস। কুরআনের মর্যাদা -এই হাদিসটির তাহকীকঃ জাল হাদিস

২১৫০. আবু হুরাইরাহ [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ যে ব্যক্তি জুমার রাতে সূরা হা-মীম আদ্ দুখা-ন পড়বে তাকে মাফ করে দেয়া হবে। [তিরমিজি। তিনি বলেছেন, এ হাদিসটি গরীব। এর রাবী আবুল মিকদাম হিশাম কে দুর্বল বলা হয়েছে।]{১}

{১} খুবই দুর্বল : তিরমিজি ২৮৮৯, যঈফাহ্ ৪৬৩২, জইফ আল জামি ৫৭৬৭। কারণ এর সানাদে হিশাম আবিল মিকদাম একজন মাতরূক রাবী এবং হাসান আল বাসরী [রাহিমাহুল্লাহ] আবু হুরাইরাহ [রাদি.] হইতে শ্রবণ করেননি। ফলে সানাদে বিচ্ছিন্নতা সৃষ্টি হয়েছে। যেমনটি ঈমাম তিরমিজি [রাহিমাহুল্লাহ] হাদিস বর্ণনা শেষে বলেছেন। কুরআনের মর্যাদা -এই হাদিসটির তাহকীকঃ খুবই দুর্বল

২১৫১. ইরবায্ ইবনি সারিয়াহ্ হইতে বর্ণীতঃ

তিনি বলেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম শয়নের আগে মুসাব্বিহাত পাঠ করিতেন। তিনি বলিতেন, ঐ আয়াতসমূহের মধ্যে এমন একটি আয়াত রয়েছে যা হাজারটি আয়াতের চেয়েও উত্তম। [তিরমিজি, আবু দাউদ]{১}

{১} জইফ : আবু দাউদ ৫০৫৭, তিরমিজি ২৬২১, জইফ আত তারগীব ৩৪৪, আহমাদ ১৭১৬০। কারণ এর সানাদে ইবনি আবী বিলাল একজন মাজহূল রাবী। কুরআনের মর্যাদা -এই হাদিসটির তাহকীকঃ দুর্বল হাদিস

২১৫২. وَرَوَاهُ الدَّارِمِىُّ عَنْ خَالِدِ بْنِ مَعْدَانَ مُرْسَلًا وَقَالَ التِّرْمِذِىُّ: هٰذَا حَدِيثٌ حَسَنٌ غَرِيبٌ

দারিমী মুরসাল হইতে বর্ণীতঃ

হাদিস হিসেবে খালিদ ইবনি মাদান [রাদি.] হইতে বর্ণনা করিয়াছেন। ঈমাম তিরমিজি বলেছেন, হাদিসটি হাসান গরীব।{১}

{১} হাসান : দারিমী ৩৪২৪। কুরআনের মর্যাদা -এই হাদিসটির তাহকীকঃ হাসান হাদিস

২১৫৩. আবু হুরাইরাহ [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ কুরআনে ত্রিশ আয়াতের একটি সূরা আছে, যা এক ব্যক্তির জন্য সুপারিশ করেছে। ফলে তাকে মাফ করে দেয়া হয়েছে। সে সূরাটি হচ্ছে, তাবা-রাকাল্লাযী বিইয়াদিহিল মুলক। [আহমদ, তিরমিজি, আবু দাউদ, নাসায়ী ও ইবনি মাজাহ]{১}

{১} হাসান লিগায়রিহী : আবু দাউদ ১৪০০, তিরমিজি ২৮৯১, ইবনি মাজাহ ৩৭৮৬, মুসতাদারাক লিল হাকিম ২০৭৫, সহীহ আত তারগীব ১৪৭৪, সহীহ ইবনি হিব্বান ৭৮৭, শুআবুল ঈমান ২৫০৬। কুরআনের মর্যাদা -এই হাদিসটির তাহকীকঃ হাসান লিগাইরিহি

২১৫৪. আবদুল্লাহ ইবনি আব্বাস [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

তিনি বলেন, একবার নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর কোন এক সাহাবী না জেনে কোন একটি কবরের উপর তাঁবু খাটালেন। তিনি হঠাৎ দেখেন, এ কবরে এক ব্যক্তি সূরা তাবা-রাকাল্লাযী বিইয়াদিহিল মুলক পড়ছে এমনকি তা শেষ করে ফেলেছে। এরপর ওই সাহাবী রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর নিকট এসে তাঁকে এ খবর জানালেন। তিনি বললেন, এটা হচ্ছে [আযাব হইতে] বাধাদানকারী এবং মুক্তিদানকারী। যা পাঠককে আল্লাহ তাআলার আযাব থেকে মুক্তি দিয়ে থাকে। [তিরমিজি; তিনি বলেছেন, হাদিসটি গরীব]{১}

{১} জইফ : তিরমিজি ২৮৯০, মুজামুল কারীব লিত্ব ত্ববারানী ১২৮০১, জইফ আত তারগীব ৮৮৭, জইফ আল জামি ৬১০১, শুআবুল ঈমান ২২৮০। কারণ এর সানাদে ইয়াহ্ইয়া ইবনি আমর ইবনি মালিক একজন দুর্বল রাবী । কুরআনের মর্যাদা -এই হাদিসটির তাহকীকঃ দুর্বল হাদিস

২১৫৫. জাবির [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

তিনি বলেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম [ঘুমানোর জন্য বিছানায় শোবার পর] যে পর্যন্ত সূরা আলিফ লা-ল মীম্ তানযীল ও সূরা তাবা-রকাল্লাযী বিয়াদিহিল মুলক পড়ে শেষ না করিতেন ঘুমাতেন না। [আহমদ, তিরমিজি ও দারিমী। ঈমাম তিরমিজি বলেছেন, হাদিসটি সহীহ। শারহুস্ সুন্নাহ্য় এরূপ রয়েছে, মাসাবীহ এ হাদিসকে গরীব বলেছেন।]{১}

{১} সহীহ : তিরমিজি ২৮৯২, আহমাদ ১৪৬৫৯, দারিমী ৩৪১১, মুজামুল আওসাত ১৪৮৩, মুসতাদারাক লিল হাকিম ৩৫৪৫, শুআবুল ঈমান ২২২৮, সহীহাহ্ ৫৮৫, সহীহ আল জামি ৪৮৭৩। তবে আহমাদণ্ডএর সানাদটি দুর্বল। কুরআনের মর্যাদা -এই হাদিসটির তাহকীকঃ সহীহ হাদিস

২১৫৬. আবদুল্লাহ ইবনি আব্বাস ও আনাস ইবনি মালিক [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

দুজনেই বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ [সাওয়াবের দিক দিয়ে] সূরা ইযা- যুলযিলাত কুরআনের অর্ধেকের সমান, কুল হুওয়াল্ল-হু আহাদ [কুরআনের] এক-তৃতীয়াংশের সমান, কুল ইয়া- আইয়ুহাল কা-ফিরূন এক-চতুর্থাংশের সমান। [তিরমিজি]{১}

{১} জইফ : তবে সূরা আল ইখলাস ও সূরা আল কাফিরূন-এর ফাযীলাত ব্যতীত। তিরমিজি ২৮৯৪, মুসতাদারাক লিল হাকিম ২০৭৮, শুআবুল ঈমান ২২৮৪, জইফ আল জামি ৫৩১, যঈফাহ্ ১৩৪২। কারণ এর সানাদে ইয়ামান ইবনি আল মুগীরাহ্ একজন দুর্বল রাবী। কুরআনের মর্যাদা -এই হাদিসটির তাহকীকঃ দুর্বল হাদিস

২১৫৭. মাকিল ইবনি ইয়াসার [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

তিনি বলেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ যে ব্যক্তি সকালে [ঘুম থেকে] উঠে তিনবার বলবে, আঊযু বিল্লা-হিস সামীইল আলীমি মিনাশ্ শাইত্ব-নির রজীম এবং এরপর সূরা হাশর-এর শেষের তিন আয়াত পড়বে আল্লাহ তাআলা তার জন্য সত্তর হাজার মালাক [ফেরেশতা] নিযুক্ত করিবেন। এরা তার জন্য সন্ধ্যা পর্যন্ত দুআ করিতে থাকিবেন। যদি এ দিন সে মারা যায়, তার হবে শাহীদের মৃত্যু। যে ব্যক্তি এ দুআ সন্ধ্যার সময় পড়বে, সেও এ একই মর্যাদা পাবে। [তিরমিজি, দারিমী। ঈমাম তিরমিজি বলেছেন, এ হাদিসটি গরীব।]{১}

{১} জইফ : তিরমিজি ২৯২২, আহমাদ ২০৩০৬, দারিমী ৩৪৬৮, মুজামুল কাবীর লিত্ব ত্ববারানী ৫৩৭, শুআবুল ঈমান ২২৭২, জইফ আত তারগীব ৩৭৯, জইফ আল জামি ৫৭৩২। কারণ এর সানাদে খালিদ ইবনি ত্বহমান একজন দুর্বল রাবী। কুরআনের মর্যাদা -এই হাদিসটির তাহকীকঃ দুর্বল হাদিস

২১৫৮. আনাস [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

তিনি নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম হইতে বর্ণনা করিয়াছেন, যে ব্যক্তি প্রত্যেক দিন দুশ বার সূরা কুল হুওয়াল্ল-হু আহাদ পড়বে তার পঞ্চাশ বছরের গুনাহ মিটিয়ে দেয়া হবে। যদি তার ওপর কোন ঋণের বোঝা না থাকে। [তিরমিজি ও দারিমী। কিন্তু দারিমীর বর্ণনায় {দুশ বারের জায়গায়] পঞ্চাশ বারের কথা উল্লেখ হয়েছে। তিনি ঋণের কথা উল্লেখ করেননি।]{১}

{১} জইফ : তিরমিজি ২৮৯৮, জইফ আত তারগীব ৯৭৫, জইফ আল জামি ৫৭৮৩, যঈফাহ্ ৩০০, দারিমী,৩৪৪১ জইফ আত তারগীব ৯৭৫। কারণ এর সানাদে রাবী হাতিম ইবনি মায়মূন মুনকারুল হাদিস। ঈমাম বোখারী [রাহিমাহুল্লাহ] বলেছেন, সে মুনকার হাদিস বর্ণনা করিয়াছেন। কুরআনের মর্যাদা -এই হাদিসটির তাহকীকঃ দুর্বল হাদিস

২১৫৯. আনাস [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ যে ঘুমাবার জন্য বিছানায় যাবে এবং ডান পাশের উপর শোয়ার পর একশ বার সূরা কুল হুওয়াল্ল-হু আহাদ পড়বে, কিয়ামাতের দিন প্রতিপালক আল্লাহ তাআলা তাকে বলবেন, হে আমার বান্দা! তুমি তোমার ডান দিকের জান্নাতে প্রবেশ করো। [তিরমিজি; তিনি বলেছেন, হাদিসটি হাসান তবে গরীব।]{১}

{১} জইফ : তিরমিজি ২৮২৯৮, জইফ আত তারগীব ৩৪৮, জইফ আল জামি ৫৩৮৯। কারণ এর সানাদে রাবী হাতিম ইবনি মায়মূন মুনকারুল হাদিস । কুরআনের মর্যাদা -এই হাদিসটির তাহকীকঃ দুর্বল হাদিস

২১৬০. আবু হুরাইরাহ [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

তিনি বলেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এক ব্যক্তিকে কুল হুওয়াল্ল-হু আহাদ পড়তে শুনে বললেন, সুনিশ্চিত হয়ে গিয়েছে। আমি শুনে বললাম, কি সুনিশ্চিত হয়ে গিয়েছে [হে আল্লাহর রসূল] উত্তরে তিনি [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম] বললেন, জান্নাত। [মালিক, তিরমিজি ও নাসায়ী]{১}

{১} সহীহ : তিরমিজি ২৮৯৭, নাসায়ী ৯৯৪, আহমাদ ১০৯১৯, মুসতাদারাক লিল হাকিম ২০৭৯। কুরআনের মর্যাদা -এই হাদিসটির তাহকীকঃ সহীহ হাদিস

২১৬১. ফারওয়াহ্ ইবনি নাওফাল [রাহিমাহুল্লাহ] হইতে বর্ণীতঃ

তার পিতা নাওফাল হইতে বর্ণনা করিয়াছেন, একদিন নাওফাল [রাদি.] বললেন, হে আল্লাহর রসূল! এমন একটি বিষয় আমাকে শিখিয়ে দিন যা আমি ঘুমাতে গিয়ে পড়তে পারি। তখন তিনি [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম] বললেন, সূরা কুল ইয়া- আইয়্যুহাল কা-ফিরূন পড়ো। কেননা এ সূরা শির্ক হইতে পবিত্র। [তিরমিজি, আবু দাউদ, দারিমী]{১}

{১} সহীহ : আবু দাউদ ৫০৫৫, তিরমিজি ৩৪০৩, সহীহ ইবনি হিববান ৫৫২৬, সহীহ আত তারগীব ৬০৫, সহীহ আল জামি ১১৬১। কুরআনের মর্যাদা -এই হাদিসটির তাহকীকঃ সহীহ হাদিস

২১৬২. উকবাহ্ ইবনি আমির [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

তিনি বলেন, একবার আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সাথে জুহফাহ্ ও আব্ওয়া [নামক স্থানের] মধ্যবর্তী জায়গায় চলছিলাম। এ সময় প্রবল ঝড় ও ঘোর অন্ধকার আমাদেরকে ঘিরে ফেলল। তখন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সূরা কুল আঊযু বিরাব্বিল ফালাক ও সূরা কুল আঊযু বিরাব্বিন্‌না-স পড়ে আল্লাহর নিকট আশ্রয় চাইলেন। তিনি [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম] বললেন, হে উকবাহ্! এ দুটি সূরা দ্বারা আল্লাহর আশ্রয় চাও। কারণ এ দু সূরার মতো অন্য কোন সূরা দিয়ে কোন প্রার্থনাকারীই আশ্রয় প্রার্থনা করিতে পারেনি। [আবু দাউদ]{১}

{১} সহীহ : আবু দাউদ ১৪৬৩, সুনানুল কুবরা লিল বায়হাক্বী ৪০৫০, শুআবুল ঈমান ২৩২৮, সহীহ আত তারগীব ১৪৮৫। কুরআনের মর্যাদা -এই হাদিসটির তাহকীকঃ সহীহ হাদিস

২১৬৩. আবদুল্লাহ ইবনি খুবায়ব [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

তিনি বলেন, আমরা একবার ঝড়-বৃষ্টি ও ঘনঘোর অন্ধকারময় রাতে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর খোঁজে বের হলাম এবং তাঁকে খুঁজে পেলাম। [তিনি আমাদেরকে দেখে] তখন বললেন, পড়ো! আমি বললাম, কি পড়বো [হে আল্লাহর রসূল!]? তিনি [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম] বললেন, সকালে ও সন্ধ্যায় তিনবার করে কুল হুওয়াল্ল-হু আহাদ, ক্বুল আঊযু বিরাব্বিল ফালাক ও ক্বুল আঊযু বিরাব্বিন্‌না-স পড়বে। এ সূরাহগুলো সকল বিপদাপদের মুকাবিলায় তোমার জন্য যথেষ্ট হবে। [তিরমিজি, আবু দাউদ ও নাসায়ী]{১}

{১} হাসান সহীহ : আবু দাউদ ৫০৮২, তিরমিজি ৩৫৭৫, নাসায়ী ৫৪২৮, আদ্ দাওয়াতুল কাবীর ৪৫, সহীহ আত তারগীব ৬৪৯, সহীহ আল জামি ৪৪০৬। কুরআনের মর্যাদা -এই হাদিসটির তাহকীকঃ হাসান সহীহ

২১৬৪. উকবাহ্ ইবনি আমির [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

তিনি বলেন, একদা আমি [রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে] বললাম, হে আল্লাহর রসূল! [বিপদাপদে পড়লে] আমি কি সূরা হূদ পড়ব, না সূরা ইউসুফ? তিনি উত্তরে বললেন, এ ক্ষেত্রে তুমি আল্লাহর কাছে ক্বুল আঊযু বিরাব্বিল ফালাক-এর চেয়ে উত্তম কোন সূরা পড়তে পারবে না। [আহমাদ, নাসায়ী ও দারিমী]{১}

{১} সহীহ : নাসায়ী ৯৫৩, আহমাদ ১৭৪৫৫, ইবনি হিববান ৭৯৫, সহীহ আল জামি ৫২১৭, সহীহাহ্ ৩৪৯৯। কুরআনের মর্যাদা -এই হাদিসটির তাহকীকঃ সহীহ হাদিস

পরিচ্ছদঃ তৃতীয় অনুচ্ছেদ

২১৬৫. আবু হুরাইরাহ [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ কুরআন স্পষ্ট ও শুদ্ধ করে পড়ো। এর গারায়িব অনুসরণ করো। আর কুরআনের গারায়িব হলো এর ফারায়িয ও হুদূদ [সীমা ও বিধানসমূহ]। [ঈমাম বায়হাক্বী তাহাঁর শুআবুল ঈমান-এ বর্ণনা করিয়াছেন]{১}

{১} খুবই দুর্বল : শুআবুল ঈমান ২০৯৫, যঈফাহ্ ১৩৪৬, জইফ আল জামি ৯৩৫। কারণ এর সানাদে মাআরিক ইবনি আব্বাদ একজন দুর্বল রাবী। ঈমাম বোখারী [রাহিমাহুল্লাহ] তার সম্পর্কে বলেন, সে মুনকারুল হাদিস। কুরআনের মর্যাদা -এই হাদিসটির তাহকীকঃ খুবই দুর্বল

২১৬৬. আয়িশাহ্ [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

তিনি বলেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ সলাতে কুরআন পাঠ সলাতের বাইরে কুরআন পাঠের চেয়ে উত্তম। সলাতের বাইরে কুরআন পড়া, তাসবীহ ও তাকবীর পড়ার চেয়ে উত্তম। আর তাসবীহ পড়া দান করা হইতে উত্তম। দান করা [নফল] সওম হইতে উত্তম। আর সওম হলো জাহান্নাম থেকে বাঁচার ঢাল। [ঈমাম বায়হাক্বী তাহাঁর শুআবুল ঈমান-এ বর্ণনা করিয়াছেন]{১}

{১} জইফ : শুআবুল ঈমান ২০৪৯, জইফ আল জামি ৪০৮২। কারণ এর সানাদে রাবী ফুযায়ল ইবনি সুলায়মান-কে সহীহায়ন ছাড়া অন্য বর্ণনায় জমহূর দুর্বল বলেছেন আর বানী মাখযূম গোত্রের জনৈক ব্যাক্তি একজন মাজহূল [অপরিচিত] রাবী । কুরআনের মর্যাদা -এই হাদিসটির তাহকীকঃ দুর্বল হাদিস

২১৬৭. উসমান ইবনি আবদুল্লাহ ইবনি আওস আস্ সাকাফী [রাহিমাহুল্লাহ] হইতে বর্ণীতঃ

তাহাঁর দাদা আওস [রাদি.] হইতে বর্ণনা করেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ কোন ব্যক্তির মাসহাফ ছাড়া [অর্থাৎ- কুরআন দেখা ছাড়া] মুখস্থ কুরআন পড়া এক হাজার গুণ মর্যাদা সম্পন্ন। আর কুরআন মাসহাফে পড়া [অর্থাৎ- কুরআন খুলে দেখে দেখে পড়া] মুখস্থ পড়ার দু গুণ থেকে দু হাজার গুণ পর্যন্ত মর্যাদা রাখে। [বায়হাক্বী- শুআবুল ঈমান]{১}

{১} জইফ : মুজামুল কাবীর লিত্ব ত্ববারানী ৬০১, জইফ আল জামি ৪০৮১, শুআবুল ঈমান ২০২৬। কারণ এর সানাদে আবু সাঈদ ইবনি উয একজন দুর্বল রাবী আর উসমান আবদুল্লাহ ইবনি আওস একজন সদুক রাবী হলেও তার দাদার সাক্ষাৎ পাওয়া নিয়ে সন্দেহ রয়েছে। কুরআনের মর্যাদা -এই হাদিসটির তাহকীকঃ দুর্বল হাদিস

২১৬৮. আবদুল্লাহ ইবনি উমার [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ নিশ্চয় হৃদয়ে মরিচা ধরে, যেভাবে পানি লাগলে লোহায় মরিচা ধরে। তাঁকে জিজ্ঞেস করা হলো, হে আল্লাহর রসূল! এ মরিচা দূর করার উপায় কী? তিনি [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম] বললেন, বেশি বেশি মৃত্যুকে স্মরণ করা ও কুরআন তিলাওয়াত করা। [উপরে বর্ণিত এ চারটি হাদিস ঈমাম বায়হাক্বী তাহাঁর শুআবুল ঈমান-এ বর্ণনা করিয়াছেন]{১}

{১} জইফ : শুআবুল ঈমান ১৮৫৯, যঈফাহ্ ৬০৯৬। কারণ এর সানাদে আবদুর রহীম ইবনি হারূন একজন মাতরূক রাবী। কুরআনের মর্যাদা -এই হাদিসটির তাহকীকঃ দুর্বল হাদিস

২১৬৯. আয়ফা ইবনি আবদিল কালাঈ [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

তিনি বলেন, এক ব্যক্তি আরয করিল, হে আল্লাহর রসূল! কুরআনের কোন্ সূরা বেশি মর্যাদাপূর্ণ? তিনি [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম] বললেন, ক্বুল হুওয়াল্ল-হু আহাদ। সে আবার জিজ্ঞেস করিল, কুরআনের কোন্ আয়াত বেশি মর্যাদার? তিনি [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম] বললেন, আয়াতুল কুরসী- আল্ল-হু লা ইলা-হা ইল্লা- হুওয়াল হাইয়্যূল কইয়্যূম। সে পুনরায় বলিল, হে আল্লাহর নবী! কুরআনের কোন্ আয়াত এমন, যার বারাকাত আপনার ও আপনার উম্মাতের কাছে পৌঁছতে আপনি ভালবাসেন? তিনি [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম] বললেন, সূরা আল বাকারাহ্র শেষাংশ। কেননা আল্লাহ তাআলা তাহাঁর আরশের নীচের ভাণ্ডার হইতে তা এ উম্মাতকে দান করিয়াছেন। দুনিয়া ও আখিরাতের এমন কোন কল্যাণ নেই যা এতে নেই। [দারিমী]{১}

{১} জইফ : দারিমী ৩৪২৩। কারণ প্রথমত হাদিসটি মুরসালুত্ তাবিঈ। আর দ্বিতীয়ত আয়ফা ইবনি আবদ-এর হাদিস শুদ্ধ নয়। কুরআনের মর্যাদা -এই হাদিসটির তাহকীকঃ দুর্বল হাদিস

২১৭০. আবদুল মালিক ইবনি উমায়র [রাহিমাহুল্লাহ] হইতে বর্ণীতঃ

তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ সূরা আল ফাতিহার মধ্যে সকল রোগের আরোগ্য রয়েছে। [দারিমী, বায়হাক্বী- শুআবুল ঈমান]{১}

{১} জইফ : দারিমী ৩৪১৩, জইফ আল জামি ৩৯৫১, শুআবুল ঈমান ২১৫৪। কারণ এটি মুরসাল। কুরআনের মর্যাদা -এই হাদিসটির তাহকীকঃ দুর্বল হাদিস

২১৭১.

وَعَنْ عُثْمَانَ بْنِ عَفَّانَ قَالَ: مَنْ قَرَأَ اٰخِرَ اٰلِ عِمْرَانَ فِىْ لَيْلَةٍ كُتِبَ لَه قِيَامُ لَيْلَةٍ. رَوَاهُ الدَّارِمِىُّ

উসমান ইবনি আফফান [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

তিনি বলেন, যে ব্যক্তি রাতে সূরা আ-লি ইমরানের শেষের অংশ পড়বে, তার জন্য সমস্ত রাত সলাতে অতিবাহিত হবার সাওয়াব লিখা হবে। [দারিমী]{১}

{১} জইফ : দারিমী ৩৪৩৯। কারণ এর সানাদে ইবনি লাহ্ইআহ্ একজন দুর্বল রাবী। কুরআনের মর্যাদা -এই হাদিসটির তাহকীকঃ দুর্বল হাদিস

২১৭২.

وَعَنْ مَكْحُولٍ قَالَ: مَنْ قَرَأَ سُورَةَ اٰلِ عِمْرَانَ يَوْمَ الْجُمُعَةِ صَلَّتْ عَلَيْهِ الْمَلَائِكَةُ إِلَى اللَّيْلِ. رَوَاهُ الدَّارِمِىُّ

মাকহূল [রাহিমাহুল্লাহ] হইতে বর্ণীতঃ

বলেছেন, যে লোক জুমার দিনে সূরা আ-লি ইমরান পড়বে মালায়িকাহ্ [ফেরেশতাগণ] তার জন্য রাত পর্যন্ত নামাজ বা দুআ করিতে থাকিবেন। [দারিমী]{১}

{১} মাওকূফ সহীহ : দারিমী ৩৪৪০। কুরআনের মর্যাদা -এই হাদিসটির তাহকীকঃ সহীহ মাওকুফ

২১৭৩. জুবায়র ইবনি নুফায়র [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ সূরা আল বাকারাকে আল্লাহ তাআলা এমন দুটি আয়াত দ্বারা শেষ করিয়াছেন, যা আমাকে আল্লাহর আরশের নীচের ভাণ্ডার হইতে দান করা হয়েছে। তাই তোমরা এ আয়াতগুলোকে শিখবে। তোমাদের রমণীকুলকেও শিখাবে। কারণ এ আয়াতগুলো হচ্ছে রহমত, [আল্লাহর] নৈকট্য লাভের উপায়। [দীন দুনিয়ার সকল] কল্যাণলাভের দুআ। [মুরসালরূপে দারিমী বর্ণনা করিয়াছেন]{১}

{১} জইফ : দারিমী ৩৩৯০, মুসতাদারাক লিল হাকিম ২০৬৬, জইফ আত তারগীব ৮৮১, জইফ আল জামি ১৬০১। কারণ এটি মুরসাল। আর এর সানাদে আবদুল্লাহ ইবনি সলিহ আল মিসরী একজন দুর্বল রাবী , কুরআনের মর্যাদা -এই হাদিসটির তাহকীকঃ দুর্বল হাদিস

২১৭৪. কাব ইবনি মালিক [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ জুমার দিনে সূরা হূদ পড়বে। [দারিমী হইতে মুরসালরূপে বর্ণিত]{১}

{১} জইফ : দারিমী ৩৪৪৬, জইফ আল জামি ১০৭০। কারণ এটি মুরসাল। কুরআনের মর্যাদা -এই হাদিসটির তাহকীকঃ দুর্বল হাদিস

২১৭৫. আবু সাঈদ আল খুদরী [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

তিনি বলেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ যে ব্যক্তি জুমার দিন সূরা আল কাহাফ পড়বে, তার [ঈমানের] নূর এ জুমাহ্ হইতে আগামী জুমাহ্ পর্যন্ত চমকাতে থাকিবে। [বায়হাক্বী- দাওয়াতুল কাবীর]{১}

{১} সহীহ : সুনানুল কুবরা লিল বায়হাক্বী ৫৯৯৬, ইরওয়া ৬২৬, সহীহ আত তারগীব ৭৩৬, সহীহ আল জামি ৬৪৭০, আদ্ দাওয়াতুল কাবীর ৫২৬। কুরআনের মর্যাদা -এই হাদিসটির তাহকীকঃ সহীহ হাদিস

২১৭৬. খালিদ ইবনি মাদান [রাহিমাহুল্লাহ] হইতে বর্ণীতঃ

তিনি বলেন, তোমরা মুক্তিদানকারী সূরা আলিফ লাম মিম তানযীল [সূরা আস্ সাজদাহ্] পড়ো। কেননা নির্ভরযোগ্য সূত্রে এ কথা আমার নিকট পৌঁছেছে যে, এক ব্যক্তি এ সূরা পড়ত, এছাড়া আর কোন সূরা পড়ত না। সে ছিল বড় পাপী মানুষ। এ সূরা তার ওপর ডানা মেলে বলিতে থাকত, হে রব! তাকে মাফ করে দাও। কারণ সে আমাকে বেশি বেশি তিলাওয়াত করত। তাই আল্লাহ তাআলা তার ব্যাপারে এ সূরার সুপারিশ গ্রহণ করেন ও বলে দেন যে, তার প্রত্যেক গুনাহের বদলে একটি করে নেকী লিখে নাও। তার মর্যাদা বৃদ্ধি করো।

তিনি [রাবী] আরো বলেন, এ সূরা কবরে এর পাঠকের জন্য আল্লাহর নিকট নিবেদন করিবে, হে আল্লাহ! আমি যদি তোমার কিতাবের অংশ হয়ে থাকি, তুমি তার ব্যাপারে আমার সুপারিশ গ্রহণ করো। আর যদি আমি তোমার কিতাবের অংশ না হয়ে থাকি, আমাকে তোমার কিতাব হইতে মুছে ফেলো। [অন্য বর্ণনায় আছে] তিনি বলেন, এ সূরা পাখীর রূপ ধারণ করে এর পাঠকারীর ওপর পাখা মেলে ধরবে ও তার জন্য সুপারিশ করিবে। এর ফলে কবর আযাব হইতে হিফাযাত করা হবে। বর্ণনাকারী সূরা তাবা-রকাল্লাযী [মুল্‌ক] সম্পর্কেও এ একই বর্ণনা করিয়াছেন। খালিদ এ সূরা দুটি না পড়ে ঘুমাতেন না।

ত্বাউস [রাহিমাহুল্লাহ] বলেন, এ দুটি সূরাকে কুরআনের অন্য সব সূরা হইতে ষাটগুণ অধিক নেকী অর্জনের মর্যাদা দান করা হয়েছে। [দারিমী]{১}

{২১৭৬ নং উপরোক্ত হাদিসটি মির্আতের মূল গ্রন্থে তিনটি আলাদা নম্বরে আনা হয়েছে] {১} জইফ : দারিমী ৩৪৫১, ৩৪৫৩। কারণ এর সানাদে আবদুল্লাহ ইবনি সলিহ একজন দুর্বল রাবী। আর এটি খালিদ ইবনি মাদান-এর ওপর মাওকূফ। কুরআনের মর্যাদা -এই হাদিসটির তাহকীকঃ দুর্বল হাদিস

২১৭৭. আত্বা ইবনি আবু রবাহ [রাহিমাহুল্লাহ] হইতে বর্ণীতঃ

তিনি বলেন, নির্ভরযোগ্য সূত্রে আমার কাছে এ কথা পৌঁছেছে যে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ যে ব্যক্তি দিনের প্রথম অংশে সূরা ইয়াসীন পড়বে, তার সব প্রয়োজন পূর্ণ হবে। [দারিমী মুরসাল হিসেবে বর্ণনা করিয়াছেন]{১}

{১} জইফ : দারিমী ৩৪৬১। কারণ এটি মুরসাল।

কুরআনের মর্যাদা -এই হাদিসটির তাহকীকঃ দুর্বল হাদিস

২১৭৮

মাকাল ইবনি ইয়াসার আল মুযানী [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

তিনি বলেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ যে ব্যক্তি শুধু আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভের উদ্দেশে সূরা ইয়াসীন পড়বে, তার আগের গুনাহসমূহ [সগীরাহ্] মাফ করে দেয়া হবে। তাই তোমরা তোমাদের মৃত্যু [আসন্ন] ব্যক্তিদের কাছে এ সূরা পড়বে। [বায়হাক্বী- শুআবুল ঈমান]{১}

{১} জইফ : শুআবুল ঈমান ২২৩১, যঈফাহ্ ৬৬২৩, জইফ আল জামি ৫৭৮৫, জইফ আত তারগীব ৮৮৪। কুরআনের মর্যাদা -এই হাদিসটির তাহকীকঃ দুর্বল হাদিস

২১৭৯. আবদুল্লাহ ইবনি মাস্ঊদ [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

তিনি বলেন, প্রত্যেকটি বস্তুর একটি শীর্ষস্থান রয়েছে। কুরআনের শীর্ষস্থান হলো সূরা আল বাকারাহ্। প্রত্যেক বস্তুরই একটি সার রয়েছে। কুরআনের সার হলো মুফাস্‌সাল সূরাহগুলো। [দারিমী]{১}

{১} হাসান : দারিমী ৩৪২০। কুরআনের মর্যাদা -এই হাদিসটির তাহকীকঃ হাসান হাদিস

২১৮০. আলী [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

তিনি বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে বলিতে শুনিয়াছি, প্রত্যেকটি জিনিসের সৌন্দর্য আছে। কুরআনের সৌন্দর্য সূরা আর্ রহমান। [ঈমাম বায়হাক্বী শুআবুল ঈমান-এ বর্ণনা করিয়াছেন]{১}

{১} মাওযূ : শুআবুল ঈমান ২২৬৫, যঈফাহ্ ১৩৫০, জইফ আল জামি ৪৭২৯। কারণ এর সানাদে আহমাদ ইবনি আল হাসান মুনকারূল হাদিস , আবু আবদুর রহমান আস্ সুলামী খুবই দুর্বল এবং আলী ইবনুল হুসায়ন একজন মিথ্যুক রাবী । কুরআনের মর্যাদা -এই হাদিসটির তাহকীকঃ জাল হাদিস

২১৮১. আবদুল্লাহ ইবনি মাস্ঊদ [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ যে ব্যক্তি প্রত্যেক রাতে সূরা আল ওয়াকিআহ্ তিলাওয়াত করিবে, সে কখনো অভাব অনটনে পড়বে না। বর্ণনাকারী আবদুল্লাহ ইবনি মাস্ঊদ তাহাঁর কন্যাদেরকে প্রত্যেক রাতে এ সূরা তিলাওয়াত করিতে বলিতেন। [ঈমাম বায়হাক্বী শুআবুল ঈমান-এ বর্ণনা করিয়াছেন]{১}

{১} জইফ : শুআবুল ঈমান ২২৬৯, যঈফাহ্ ২৮৯, জইফ আল জামি ৫৭৭৩। কেননা এর সানাদে আবু ত্বয়বাহ্ একজন মাজহূল রাবী। কুরআনের মর্যাদা -এই হাদিসটির তাহকীকঃ দুর্বল হাদিস

২১৮২. আলী [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সূরা সাব্বিহিস্‌মা রব্বিকাল আলা- ভালবাসতেন। [আহমদ]{১}

{১} খুবই দুর্বল : আহমাদ ৭৪২, যঈফাহ্ ৪২৬৬, জইফ আল জামি ৪৫৪২। কারণ এর সানাদে সুওয়ার ইবনি আবী ফাখিতাহ্ একজন দুর্বল রাবী। কুরআনের মর্যাদা -এই হাদিসটির তাহকীকঃ খুবই দুর্বল

২১৮৩. আবদুল্লাহ ইবনি আমর [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

বলেন, এক ব্যক্তি নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর নিকট এসে আরয করিল, হে আল্লাহর রসূল! আমাকে কিছু শিখিয়ে দিন। তিনি বললেন, আলিফ্ লা-ম রা- সম্পন্ন সূরাগুলো হইতে তিনটি সূরা পড়বে। সে ব্যক্তি বলিল, হে আল্লাহর রসূল! আমি বুড়ো হয়ে গেছি। আমার কলব কঠিন ও জিহবা শক্ত হয়ে গেছে [অর্থাৎ- আমার মুখস্থ হয় না]। তখন তিনি [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম] বললেনঃ তাহলে তুমি হা-মীম যুক্ত সূরাগুলোর মধ্যকার তিনটি সূরা পড়বে। আবার সে ব্যক্তি আগের জবাবের মতো জবাব দিলো। তারপর বলিল, হে আল্লাহর রসূল! আমাকে আপনি পরিপূর্ণ অর্থবহ একটি সূরা শিখিয়ে দিন। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তখন তাকে সূরা ইযা- যুলযিলাত শেষ পর্যন্ত পড়িয়ে দিলেন। তখন সে ব্যক্তি বলিল, যিনি আপনাকে সত্য নবী করে পাঠিয়েছেন, তাহাঁর শপথ, আমি [আপনার শিখানো] সূরার উপর কখনো আর কিছু বাড়াব না। এরপর লোকটি ওখান থেকে চলে গেল। এ সময় রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, লোকটি সফলতা লাভ করিল, লোকটি সফলতা লাভ করিল। [আহমদ ও আবু দাউদ]{১}

{১} জইফ : আবু দাউদ ১৩৯৯, আহমাদ ৬৫৭৫, মুসতাদারাক লিল হাকিম ৩৯৬৪, শুআবুল ঈমান ২২৮২। কারণ এর সানাদে রাবী ঈসা ইবনি হিলাল আস্ সদাফী একজন অপ্রসিদ্ধ রাবী।কুরআনের মর্যাদা -এই হাদিসটির তাহকীকঃ দুর্বল হাদিস

২১৮৪. আবদুল্লাহ ইবনি উমার [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম একদিন বললেন, তোমাদের কেউ কি দৈনিক [কুরআনের] এক হাজার আয়াত করে পড়তে পারে? সাহাবীগণ বললেন, কে আছে দৈনিক [কুরআনের] এক হাজার আয়াত করে পড়তে পারে? তিনি [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম] তখন বললেন, তাহলে তোমাদের কেউ কি প্রত্যহ সূরা আল হা-কুমুত্ তাকা-সুর পড়তে পারে না? [বায়হাক্বী- শুআবুল ঈমান]{১}

{১} জইফ : মুসতাদারাক লিল হাকিম ২০৮১, শুআবুল ঈমান ২২৮৭, জইফ আত তারগীব ৮৯১। কারণ এর সানাদে উকবাহ্ একজন অপ্রসিদ্ধ রাবী।

কুরআনের মর্যাদা -এই হাদিসটির তাহকীকঃ দুর্বল হাদিস

২১৮৫

সাঈদ ইবনি মুসাইয়্যাব [রাহিমাহুল্লাহ] হইতে বর্ণীতঃ

তিনি বলেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ যদি কোন ব্যক্তি সূরা ক্বুল হুওয়াল্ল-হু আহাদ দশবার পড়ে, বিনিময়ে তার জন্য জান্নাতে একটি প্রাসাদ তৈরি করা হবে। যে ব্যক্তি বিশবার পড়বে তার জন্য দুটি। আর যে ব্যক্তি ত্রিশবার পড়বে তার জন্য জান্নাতে তিনটি প্রাসাদ তৈরি করা হবে। এ কথা শুনে উমার ইবনুল খাত্ত্বাব [রাদি.] বললেন, আল্লাহর শপথ, হে আল্লাহর রসূল! যদি তা-ই হয় তাহলে তো আমরা অনেক প্রাসাদ লাভ করব। তখন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, আল্লাহর রহমত এর চেয়েও অধিক প্রশস্ত [এতে বিস্ময়ের কিছু নেই হে উমার!]। [দারিমী]{১}

{১} জইফ : দারিমী ৩৪৭২। কারণ এর সানাদটি মুরসাল। কুরআনের মর্যাদা -এই হাদিসটির তাহকীকঃ দুর্বল হাদিস

২১৮৬. হাসান বাসরী [রাহিমাহুল্লাহ] হইতে বর্ণীতঃ

নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ যে ব্যক্তি রাতে [কুরআনের] একশটি আয়াত পড়বে, ওই রাতে কুরআন তার বিরুদ্ধে কোন অভিযোগ উত্থাপন করিবে না। আর যে ব্যক্তি রাতে দুশত আয়াত পড়বে, তার জন্য এক রাতের ইবাদাতের সাওয়াব লিখা হবে। আর যে ব্যক্তি রাতে পাঁচশ হইতে এক হাজার আয়াত পর্যন্ত পড়বে ভোরে উঠে সে এক কিনত্বার সাওয়াব পাবে। তারা জিজ্ঞেস করিলেন, হে আল্লাহর রসূল! এক কিনত্বার কী? তিনি [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম] জবাব দিলেন, বারো হাজার দীনার সমান ওজন। [দারিমী]{১}

{১} জইফ : দারিমী ৩৫০২। কারণ এর সানাদটি মুরসাল। কুরআনের মর্যাদা -এই হাদিসটির তাহকীকঃ দুর্বল হাদিস


Posted

in

by

Tags:

Comments

One response to “কুরআনের মর্যাদা – মেশকাত শরীফ হাদীস”

Leave a Reply