পাপ শিরক নিয়ত জাহান্নাম ও কুফরির বর্ণনা

পাপ শিরক নিয়ত জাহান্নাম ও কুফরির বর্ণনা

পাপ শিরক নিয়ত জাহান্নাম ও কুফরির বর্ণনা >> হাদীসে কুদসী এর মুল সুচিপত্র দেখুন

পাপ শিরক নিয়ত জাহান্নাম ও কুফরির বর্ণনা

ভূমিকা
পাপ-পুণ্য লিখার নিয়ম ও আল্লাহর অনুগ্রহ
আল্লাহ তা‘আলার বাণী: ﴿وَإِن تُبۡدُواْ مَا فِيٓ أَنفُسِكُمۡ أَوۡ تُخۡفُوهُ يُحَاسِبۡكُم بِهِ ٱللَّهُۖ ﴾ “আর তোমরা যদি প্রকাশ কর যা তোমাদের ‎অন্তরে রয়েছে অথবা গোপন কর, আল্লাহ সে ‎বিষয়ে তোমাদের হিসাব নেবেন”
যার নিয়ত নষ্ট তার জন্য জাহান্নাম
শির্কের ভয়াবহতা
দুনিয়া ভর স্বর্ণ দ্বারা কাফিরের মুক্তি কামনা
অমুক নক্ষত্রের কারণে বৃষ্টি পেয়েছি বলা কুফরি

হাদীসে কুদসী ভূমিকা

সকল প্রশংসা আল্লাহ তা‘আলার জন্য এবং দুরূদ ও সালাম আল্লাহর রাসূল, তার পরিবারবর্গ, তার সাথী ও তার সকল অনুসারীদের ওপর। অতঃপর,

“সহীহ হাদীসে কুদসী” গ্রন্থটি আমার নিকট বিশুদ্ধ প্রমাণিত হাদীসে কুদসীর বিশেষ সংকলন। এখানে আমি সনদ ও ব্যাখ্যা ছাড়া হাদীসে কুদসীগুলো উপস্থাপন করেছি। হাদীসগুলো সূত্রসহ উল্লেখ করে হুকুম ও শব্দের জরুরী অর্থ বর্ণনা করে ক্ষান্ত হয়েছি। আল্লাহ আমার এ আমল কবুল করুন এবং এর দ্বারা সকল মুসলিমকে উপকৃত করুন। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যেসব হাদীস আল্লাহর সাথে সম্পৃক্ত করে বর্ণনা করেছেন আলিমগণ সেগুলোকে “হাদীসে কুদসী” নামে অভিহিত করেছেন। আল্লাহর নাম “কুদ্দুস” এর সাথে সম্পর্কযুক্ত করে এসব হাদীসকে ‘কুদসী’ বলা হয়। (‘কুদ্দুস’ অর্থ পবিত্র ও পুণ্যবান।)

“ হাদীসে কুদসী ” ও কুরআনুল কারীমের মধ্যে পার্থক্য:

১. রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের নিকট জিবরীল আলাইহিস সালাম কুরআনুল কারীম নিয়ে অবতরণ করেছেন, কিন্তু হাদীসে কুদসী তিনি লাভ করেছেন কখনো জিবরীল, কখনো এলহাম, কখনো অন্য মাধ্যমে।

২. সম্পূর্ণ কুরআন মুতাওয়াতির সনদে বর্ণিত, কিন্তু হাদীসে কুদসী অনুরূপ নয়।

৩. কুরআনুল কারীমে ভুল অনুপ্রবেশ করতে পারে না, কিন্তু হাদীসে কুদসীতে কখনো কোনো বর্ণনাকারী ধারণার বশবর্তী হয়ে বর্ণনা করার সময় ভুল করতে পারে।

৪. সালাতে কুরআনুল কারীম তিলাওয়াত করতে হয়, কিন্তু হাদীস কুদসী তিলাওয়াত করা বৈধ নয়।

৫. কুরআনুল কারীম সূরা, আয়াত, পারা ও অংশ ইত্যাদিতে বিভক্ত, কিন্তু হাদীসে কুদসী অনুরূপ নয়।

৬. কুরআনুল কারীম তিলাওয়াত করলে সাওয়াব রয়েছে, কিন্তু হাদীসে কুদসীতে অনুরূপ ফযীলত নেই।

৭. কুরআনুল কারীম কিয়ামত পর্যন্ত সর্বকালের জন্য মু‘জিযা।

৮. কুরাআনুল কারীম অস্বীকারকারী কাফির, কিন্তু হাদীসে কুদসী অস্বীকারকারী অনুরূপ নয়। (কারণ, তার মনে হতে পারে যে, এটি দুর্বল)।

৯. হাদীসে কুদসী র শুধু ভাব বর্ণনা করা বৈধ, কিন্তু কুরআনুল কারীমের ভাবকে কুরআন হিসেবে বর্ণনা করা বৈধ নয়; অনুরূপভাবে কুরআনের অর্থের তিলাওয়াতও বৈধ নয়।

এ হচ্ছে কুরআন ও হাদীসে কুদসী র মধ্যে মৌলিক ও গুরুত্বপূর্ণ কতক পার্থক্য, এ ছাড়া উভয়ের আরো কিছু পার্থক্য রয়েছে।

আর সালাত ও সালাম আমাদের নবী, তার পরিবার ও তার সকল সাথীদের ওপর।

আবু আব্দুল্লাহ মুস্তফা ইবন আল-আদাভি

মিসর, দিকহিলিয়াহ, মুনিয়া সামনুদ

১. অনুচ্ছেদঃ পাপ-পুণ্য লিখার নিয়ম ও আল্লাহর অনুগ্রহ

হাদীস কুদসিঃ ১ – আবু হুরাইরা (রাদিআল্লাহু আঃ) থেকে বর্ণিতঃ

রসূলুল্লাহ (সাঃআঃ) বলেছেনঃ “আল্লাহ বলেনঃ আমার বান্দা যখন কোন পাপ করার ইচ্ছা করে, তখন তোমরা তা লিখ না যতক্ষণ না সে তা করে। যদি সে তা করে সমান পাপ লিখ। আর যদি সে তা আমার কারণে ত্যাগ করে, তাহলে তার জন্য তা নেকি হিসেবে লিখ । আর যদি সে নেকি করার ইচ্ছা করে কিন্তু সে তা করেনি, তার জন্য তা নেকি হিসেবে লিখ। অতঃপর যদি সে তা করে তাহলে তার জন্য তা দশগুণ থেকে সাতশো গুণ পর্যন্ত লিখ”।

(সহিহ বুখারি ও সহিহ মুসলিম) হাদিসের মান নির্ণয়ঃসহিহ হাদিস

হাদীসে কুদসী – আবু হুরাইরা (রাদিআল্লাহু আঃ) থেকে বর্ণিতঃ

রসূলুল্লাহ (সাঃআঃ) বলেছেনঃ “আল্লাহ বলেনঃ আমার বান্দা যখন নেকি করার ইচ্ছা করে আমি তার জন্য একটি নেকি লিখি যতক্ষণ সে না করে, যখন সে করে আমি তার দশগুণ লিখি। আর যখন সে পাপ করার ইচ্ছা করে আমি তার জন্য তা ক্ষমা করি যতক্ষণ সে না করে, অতঃপর যখন সে তা করে তখন আমি তার সমান লিখি”। রসূলুল্লাহ (সাঃআঃ) বলেনঃ “ফেরেশতারা বলেঃ হে আমার রব আপনার এ বান্দা পাপ করার ইচ্ছা করে, -যদিও আল্লাহ তাকে বেশী জানেন- তিনি বলেনঃ তাকে পর্যবেক্ষণ কর যদি সে করে তার জন্য সমান পাপ লিখ, যদি সে ত্যাগ করে তার জন্য তা নেকি লিখ, কারণ আমার জন্যই সে তা ত্যাগ করেছে ।

(সহিহ মুসলিম) হাদিসের মান নির্ণয়ঃসহিহ হাদিস

২. অনুচ্ছেদঃ

আল্লাহ তাআলার বাণী: “আর তোমরা যদি প্রকাশ কর যা তোমাদের ‎অন্তরে রহিয়াছে অথবা গোপন কর, আল্লাহ সে ‎বিষয়ে তোমাদের হিসাব নেবেন”

হাদীসে কুদসী – ইব্‌ন আব্বাস (রাদিআল্লাহু আঃ) থেকে বর্ণিতঃ

যখন

وَإِن تُبۡدُواْ مَا فِيٓ أَنفُسِكُمۡ أَوۡ تُخۡفُوهُ يُحَاسِبۡكُم بِهِ ٱللَّهُۖ

“আর তোমরা যদি প্রকাশ কর যা তোমাদের ‎অন্তরে রহিয়াছে অথবা গোপন কর, আল্লাহ সে ‎বিষয়ে তোমাদের হিসাব নেবেন” (সূরা বাকারাদিআল্লাহু আঃ ২৮৬)‎- এ আয়াত নাযিল হলো, ইব্‌ন আব্বাস বলেন, তখন তাহাদের (সাহাবিদের) অন্তরে কিছু প্রবেশ করিল যা পূর্বে তাহাদের অন্তরে প্রবেশ করেনি। অতঃপর রসূলুল্লাহ (সাঃআঃ) বলেনঃ “তোমরা বলঃ শুনিয়াছি, আনুগত্য করেছি ও মেনে নিয়েছি”। তিনি বলেনঃ ফলে আল্লাহ তাহাদের অন্তরে ঈমান ঢেলে দিলেন এবং তিনি নাযিল করলেনঃ

لَا يُكَلِّفُ ٱللَّهُ نَفۡسًا إِلَّا وُسۡعَهَاۚ لَهَا مَا كَسَبَتۡ وَعَلَيۡهَا مَا ٱكۡتَسَبَتۡۗ رَبَّنَا لَا تُؤَاخِذۡنَآ إِن نَّسِينَآ أَوۡ أَخۡطَأۡنَاۚ

“আল্লাহ কোন ব্যক্তিকে তার সামর্থ্যের বাইরে ‎‎দায়িত্ব দেন না। সে যা অর্জন করে তা তার ‎জন্যই এবং সে যা কামাই করে তা তার ‎উপরই বর্তাবে। হে আমাদের রব! আমরা ‎যদি ভুলে যাই, অথবা ভুল করি তাহলে ‎আপনি আমাদেরকে পাকড়াও করবেন না”। নবী (সাঃআঃ) বলেনঃ “আল্লাহ বলেছেনঃ আমি কবুল করেছি”।

وَلَا تَحۡمِلۡ عَلَيۡنَآ إِصۡرٗا كَمَا حَمَلۡتَهُۥ عَلَى ٱلَّذِينَ مِن قَبۡلِنَاۚ

“হে ‎আমাদের রব, আমাদের উপর বোঝা চাপিয়ে ‎‎দেবেন না, যেমন আমাদের পূর্ববর্তীদের উপর ‎চাপিয়ে দিয়েছেন”। নবী (সাঃআঃ) বলেনঃ “আল্লাহ বলেছেনঃ আমি কবুল করেছি”।

وَٱغۡفِرۡ لَنَا وَٱرۡحَمۡنَآۚ أَنتَ مَوۡلَىٰنَا

“আর আপনি আমাদেরকে ‎‎ক্ষমা করুন, আর আমাদের উপর দয়া করুন। ‎আপনি আমাদের অভিভাবক”। নবী (সাঃআঃ) বলেনঃ “আল্লাহ বলেছেনঃ আমি কবুল করেছি”। (সূরা বাকারাদিআল্লাহু আঃ (২৮৬))

(সহিহ মুসলিম) হাদিসের মান নির্ণয়ঃসহিহ হাদিস

হাদীসে কুদসী: ৪ – আবু হুরাইরা (রাদিআল্লাহু আঃ) থেকে বর্ণিতঃ

যখন রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের ওপর নাযিল হলঃ

لِّلَّهِ مَا فِي ٱلسَّمَٰوَٰتِ وَمَا فِي ٱلۡأَرۡضِۗ وَإِن تُبۡدُواْ مَا فِيٓ أَنفُسِكُمۡ أَوۡ تُخۡفُوهُ يُحَاسِبۡكُم بِهِ ٱللَّهُۖ فَيَغۡفِرُ لِمَن يَشَآءُ وَيُعَذِّبُ مَن يَشَآءُۗ وَٱللَّهُ عَلَىٰ كُلِّ شَيۡءٖ قَدِيرٌ ٢٨٤ ﴾ (البقرة: ٢٨٤)

“আল্লাহর জন্যই যা রহিয়াছে আসমানসমূহে এবং ‎যা রহিয়াছে যমীনে। আর তোমরা যদি প্রকাশ ‎কর যা তোমাদের অন্তরে রহিয়াছে অথবা ‎‎গোপন কর, আল্লাহ সে বিষয়ে তোমাদের ‎হিসাব নেবেন। অতঃপর তিনি যাকে চান ক্ষমা ‎করবেন, আর যাকে চান আযাব দেবেন। আর ‎আল্লাহ সবকিছুর উপর ক্ষমতাবান” (সূরা বাকারাদিআল্লাহু আঃ ২৮৪)‎ তিনি বলেনঃ এ আয়াত রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সাথীদের ওপর কঠিন ঠেকল, তারা রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের নিকট আসল, অতঃপর হাঁটু গেড়ে বসল। তারা বলিলঃ হে আল্লাহর রাসূল? আমাদেরকে কতক আমলের দায়িত্ব দেয়া হয়েছে যা আমরা সাধ্য রাখিঃ সালাত, সিয়াম, জিহাদ ও সদকা; কিন্তু আপনার ওপর এ আয়াত অবতীর্ণ হয়েছে অথচ আমরা তার সাধ্য রাখি না! রসূলুল্লাহ (সাঃআঃ) বললেনঃ “তোমরা কি সেরূপ বলিতে চাও তোমাদের পূর্বে কিতাবওয়ালা দুটি দল (ইয়াহূদী ও নাসারারা) যেরূপ বলেছেঃ শুনলাম ও প্রত্যাখ্যান করলাম? বরং তোমরা বলঃ “আমরা শুনলাম এবং মানলাম। হে আমাদের ‎রব! আমরা আপনারই ক্ষমা প্রার্থনা করি, আর ‎আপনার দিকেই প্রত্যাবর্তনস্থল”। ‎তারা বলিলঃ আমরা শুনলাম, মেনে নিলাম, হে আমাদের রব আপনার ক্ষমা চাই, আপনার নিকটই আমাদের প্রত্যাবর্তনস্থল। যখন সকলে তা পড়ল, তাহাদের জবান দ্বিধাহীন তা উচ্চারণ করিল। আল্লাহ তাআলা তার পশ্চাতে নাযিল করলেনঃ

ءَامَنَ ٱلرَّسُولُ بِمَآ أُنزِلَ إِلَيۡهِ مِن رَّبِّهِۦ وَٱلۡمُؤۡمِنُونَۚ كُلٌّ ءَامَنَ بِٱللَّهِ وَمَلَٰٓئِكَتِهِۦ وَكُتُبِهِۦ وَرُسُلِهِۦ لَا نُفَرِّقُ بَيۡنَ أَحَدٖ مِّن رُّسُلِهِۦۚ وَقَالُواْ سَمِعۡنَا وَأَطَعۡنَاۖ غُفۡرَانَكَ رَبَّنَا وَإِلَيۡكَ ٱلۡمَصِيرُ ٢٨٥﴾ (البقرة: ٢٨٥)

“রাসূল তার নিকট তার রবের পক্ষ থেকে ‎নাযিলকৃত বিষয়ের প্রতি ঈমান এনেছে, আর ‎মুমিনগণও। প্রত্যেকে ঈমান এনেছে আল্লাহর ‎উপর, তাহাঁর ফেরেশতাকুল, কিতাবসমূহ ও তাহাঁর ‎রাসূলগণের উপর, আমরা তাহাঁর রাসূলগণের ‎কারও মধ্যে তারতম্য করি না। আর তারা ‎বলে, আমরা শুনলাম এবং মানলাম। হে ‎আমাদের রব! আমরা আপনারই ক্ষমা প্রার্থনা ‎করি, আর আপনার দিকেই প্রত্যাবর্তনস্থল” (সূরা বাকারাদিআল্লাহু আঃ ১৮৫) যখন তারা এর ওপর আমল করিল, আল্লাহ তা রহিত করিলেন, অতঃপর নাযিল করলেনঃ

لَا يُكَلِّفُ ٱللَّهُ نَفۡسًا إِلَّا وُسۡعَهَاۚ لَهَا مَا كَسَبَتۡ وَعَلَيۡهَا مَا ٱكۡتَسَبَتۡۗ رَبَّنَا لَا تُؤَاخِذۡنَآ إِن نَّسِينَآ أَوۡ أَخۡطَأۡنَاۚ

“আল্লাহ কোন ব্যক্তিকে তার সামর্থ্যরে বাইরে ‎‎দায়িত্ব দেন না। সে যা অর্জন করে তা তার ‎জন্যই এবং সে যা কামাই করে তা তার ‎উপরই বর্তাবে। হে আমাদের রব! আমরা ‎যদি ভুলে যাই, অথবা ভুল করি তাহলে ‎আপনি আমাদেরকে পাকড়াও করবেন না”। তিনি বলেনঃ হ্যাঁ।

رَبَّنَا وَلَا تَحۡمِلۡ عَلَيۡنَآ إِصۡرٗا كَمَا حَمَلۡتَهُۥ عَلَى ٱلَّذِينَ مِن قَبۡلِنَاۚ

“হে ‎আমাদের রব, আমাদের উপর বোঝা চাপিয়ে ‎‎দেবেন না, যেমন আমাদের পূর্ববর্তীদের উপর ‎চাপিয়ে দিয়েছেন”। তিনি বলেনঃ হ্যাঁ।

رَبَّنَا وَلَا تُحَمِّلۡنَا مَا لَا طَاقَةَ لَنَا بِهِۦۖ

“হে আমাদের রব, আপনি ‎আমাদেরকে এমন কিছু বহন করাবেন না, যার ‎সামর্থ্য আমাদের নেই”। তিনি বলেনঃ হ্যাঁ।

وَٱعۡفُ عَنَّا وَٱغۡفِرۡ لَنَا وَٱرۡحَمۡنَآۚ أَنتَ مَوۡلَىٰنَا فَٱنصُرۡنَا عَلَى ٱلۡقَوۡمِ ٱلۡكَٰفِرِينَ

“আর আপনি ‎আমাদেরকে মার্জনা করুন এবং আমাদেরকে ‎‎ক্ষমা করুন, আর আমাদের উপর দয়া করুন। ‎আপনি আমাদের অভিভাবক। অতএব আপনি ‎কাফির সম্প্রদায়ের বিরুদ্ধে আমাদেরকে ‎সাহায্য করুন”।‎ তিনি বলেনঃ হ্যাঁ।

(সহিহ মুসলিম) হাদিসের মান নির্ণয়ঃসহিহ হাদিস

৩. অনুচ্ছেদঃ যার নিয়ত নষ্ট তার জন্য জাহান্নাম

হাদীসঃ ৫ -আবু হুরাইরা (রাদিআল্লাহু আঃ) থেকে বর্ণিতঃ

তিনি বলেনঃ আমি রসূলুল্লাহ (সাঃআঃ)কে বলিতে শুনেছিঃ “নিশ্চয় সর্বপ্রথম ব্যক্তি কিয়ামতের দিন যার ওপর ফয়সালা করা হইবে, সে ব্যক্তি যে শহীদ হয়েছিল। তাকে আনা হইবে, অতঃপর তাকে তার (আল্লাহর) নিয়ামতরাজি জানানো হইবে, সে তা স্বীকার করিবে। তিনি বলবেনঃ তুমি এতে কি আমল করেছ? সে বলবেঃ আপনার জন্য জিহাদ করে এমনকি শহীদ হয়েছি। তিনি বলবেনঃ মিথ্যা বলেছ, তবে তুমি এ জন্য জিহাদ করেছ যেন বলা হয়ঃ বীর, অতএব বলা হয়েছে। অতঃপর তার ব্যাপারে নির্দেশ দেয়া হইবে, তাকে তার চেহারার ওপর ভর করে টেনে-হিঁচড়ে জাহান্নামে নিক্ষেপ করা হইবে। আরও এক ব্যক্তি যে ইলম শিখেছে, শিক্ষা দিয়েছে ও কুরআন তিলাওয়াত করেছে, তাকে আনা হইবে। অতঃপর তাকে তার নিয়ামতরাজি জানানো হইবে, সে তা স্বীকার করিবে। তিনি বলবেনঃ তুমি এতে কি আমল করেছ? সে বলবেঃ আমি ইলম শিখেছি, শিক্ষা দিয়েছি ও আপনার জন্য কুরআন তিলাওয়াত করেছি। তিনি বলবেনঃ মিথ্যা বলেছ, তবে তুমি ইলম শিক্ষা করেছ যেন বলা হয়ঃ আলেম, কুরআন তিলাওয়াত করেছ যেন বলা হয়ঃ সে কারী, অতএব বলা হয়েছে। অতঃপর তার ব্যাপারে নির্দেশ দেয়া হইবে, তাকে চেহারার ওপর ভর করে টেনে-হিঁচড়ে জাহান্নামে নিক্ষেপ করা হইবে। আরও এক ব্যক্তি যাকে আল্লাহ সচ্ছলতা দিয়েছেন ও সকল প্রকার সম্পদ দান করিয়াছেন, তাকে আনা হইবে। তাকে তার নিয়ামতরাজি জানানো হইবে, সে তা স্বীকার করিবে। তিনি বলবেনঃ তুমি এতে কি আমল করেছ? সে বলবেঃ এমন খাত নেই যেখানে খরচ করা আপনি পছন্দ করেন আমি তাতে আপনার জন্য খরচ করি নাই। তিনি বলবেনঃ মিথ্যা বলেছ, তবে তুমি করেছ যেন বলা হয়ঃ সে দানশীল, অতএব বলা হয়েছে, অতঃপর তার ব্যাপারে নির্দেশ দেয়া হইবে, তাকে তার চেহারার ওপর ভর করে টেনে-হিঁচড়ে অতঃপর জাহান্নামে নিক্ষেপ করা হইবে”।

(সহিহ মুসলিম ও নাসায়ি) হাদিসের মান নির্ণয়ঃসহিহ হাদিস

৪. অনুচ্ছেদঃ শির্কের ভয়াবহতা

হাদীসঃ ৬ -আবু হুরাইরা (রাদিআল্লাহু আঃ) থেকে বর্ণিতঃ

তিনি বলেনঃ “রসূলুল্লাহ (সাঃআঃ) বলেছেনঃ “আল্লাহ তাআলা বলেনঃ শরীকদের মধ্যে অংশীদারির অংশ (শির্ক) থেকে আমিই অধিক অমুখাপেক্ষী, যে কেউ এমন আমল করিল যাতে আমার সাথে অপরকে শরিক করেছে, আমি তাকে ও তার শির্ককে প্রত্যাখ্যান করি”। 

(সহিহ মুসলিম) হাদিসের মান নির্ণয়ঃহাসান হাদিস

হাদীসে কুদসী: – মাহমুদ ইব্‌ন লাবিদ (রাদিআল্লাহু আঃ) থেকে বর্ণিতঃ

রসূলুল্লাহ (সাঃআঃ) বলেছেনঃ “আমি তোমাদের ওপর যা ভয় করি তার মধ্যে সবচেয়ে ভয়ংকর হচ্ছে শির্কে আসগর (ছোট শির্ক)। তারা বলিলঃ হে আল্লাহর রাসূল শির্কে আসগর কি? তিনি বললেনঃ “রিয়া (লোক দেখানো আমল), আল্লাহ তাআলা কিয়ামতের দিন তাহাদেরকে (রিয়াকারীদের) বলবেন, যখন মানুষকে তাহাদের আমলের বিনিময় দেয়া হবেঃ তোমরা তাহাদের কাছে যাও যাদেরকে তোমরা দুনিয়াতে দেখাতে, দেখ তাহাদের কাছে কোন প্রতিদান পাও কিনা”।

(মুসনাদে আহমদ) হাদিসের মান নির্ণয়ঃসহিহ হাদিস

হাদীসঃ ৮ – আবু হুরাইরা (রাদিআল্লাহু আঃ) থেকে বর্ণিতঃ

নবী (সাঃআঃ) বলেছেনঃ “কিয়ামতের দিন ইবরাহিম তার পিতা আযরের সাথে দেখা করিবে, তার চেহারার ওপর থাকিবে বিষণ্ণতা ও ধুলো-বালি (অবসাদ)। ইবরাহিম তাকে বলবেঃ আমি কি তোমাকে বলিনি আমার অবাধ্য হয়ো না? অতঃপর তার পিতা তাকে বলবেঃ আজ তোমার অবাধ্য হব না। অতঃপর ইবরাহিম বলবেঃ হে আমার রব, আপনি আমাকে ওয়াদা দিয়েছেন যেদিন উঠানো হইবে আমাকে অসম্মান করবেন না, আমার পতিত পিতার অপমানের চেয়ে বড় অপমান কি! অতঃপর আল্লাহ বলবেনঃ নিশ্চয় আমি কাফেরদের ওপর জান্নাত হারাম করে দিয়েছি। অতঃপর বলা হবেঃ হে ইবরাহিম তোমার পায়ের নিচে কি? সে দেখবে তার পিতা আচমকা রক্ত-ময়লায় নিমজ্জিত হায়েনায় পরিণত হয়েছে, তখন তার পা পাকড়াও করে তাকে জাহান্নামে নিক্ষেপ করা হইবে”।

(সহিহ বুখারি) হাদিসের মান নির্ণয়ঃসহিহ হাদিস

৫. অনুচ্ছেদঃ দুনিয়া ভর স্বর্ণ দ্বারা কাফেরের মুক্তি কামনা

হাদীসে কুদসী -আনাস ইব্‌ন মালেক (রাদিআল্লাহু আঃ) থেকে বর্ণিতঃ

নবী (সাঃআঃ) বলেছেনঃ “আল্লাহ তাআলা জাহান্নামীদের সবচেয়ে হালকা আযাবের ব্যক্তিকে কিয়ামতের দিন বলবেনঃ তোমার জন্য যদি দুনিয়াতে যা রহিয়াছে সব হয় তুমি কি তা মুক্তিপণ হিসেবে দিবে? সে বলবেঃ হ্যাঁ, তিনি বলবেনঃ আমি তোমার কাছে এরচেয়ে কম চেয়েছিলাম যখন তুমি আদমের ঔরসে ছিলেঃ আমার সাথে কোন বস্তুকে অংশীদার করিবে না, কিন্তু তুমি আমার সাথে অংশীদার না করে ক্ষান্ত হওনি”।

(সহিহ বুখারি ও সহিহ মুসলিম) হাদিসের মান নির্ণয়ঃসহিহ হাদিস

৬. অনুচ্ছেদঃ অমুক নক্ষত্রের কারণে বৃষ্টি পেয়েছি বলা কুফরি

হাদীসঃ ১০ -যায়েদ ইব্‌ন খালেদ আল-জুহানি (রাদিআল্লাহু আঃ) থেকে বর্ণিতঃ 

তিনি বলেনঃ রসূলুল্লাহ (সাঃআঃ) আমাদের নিয়ে হুদায়বিয়ায় ফজর সালাত আদায় করিলেন রাতের বৃষ্টি শেষে, যখন সালাত শেষ করিলেন লোকদের দিকে ফিরলেন এবং বললেনঃ “তোমরা কি জান তোমাদের রব কি বলেছেন?” তারা বলিলঃ আল্লাহ ও তার রাসূল ভালো জানেন। তিনি বলেছেনঃ “আমার কতক বান্দা ভোর করেছে আমার ওপর ঈমান অবস্থায়, আর কতক বান্দা ভোর করেছে আমার সাথে কুফরি অবস্থায়। অতএব যে বলেছেঃ আমরা আল্লাহর অনুগ্রহ ও দয়ায় বৃষ্টি লাভ করেছি, সে আমার ওপর বিশ্বাসী ও নক্ষত্রের (প্রভাব) অস্বীকারকারী। আর যে বলেছেঃ অমুক অমুক নক্ষত্রের কারণে, সে আমাকে অস্বীকারকারী ও নক্ষত্রে বিশ্বাসী”।

(সহিহ বুখারি, সহিহ মুসলিম, সুনান আবু দাউদও নাসায়ি) অর্থাৎ সে রাতে বৃষ্টি হয়েছিল। হাদিসের মান নির্ণয়ঃসহিহ হাদিস

হাদীসে কুদসী১১ -আবু হুরাইরা (রাদিআল্লাহু আঃ) থেকে বর্ণিতঃ

রসূলুল্লাহ (সাঃআঃ) বলেনঃ “তোমরা কি লক্ষ্য কর না তোমাদের রব কি বলেছেন? তিনি বলেছেনঃ আমি আমার বান্দাদের যখনই কোন নিয়ামত দেই, তখনই এ ব্যাপারে তাহাদের একটি দল অকৃতজ্ঞ (কাফের) হয়েছে। তারা বলেঃ নক্ষত্রই এবং নক্ষত্রের কারণে (তারা তা প্রাপ্ত হয়েছে)”।

(সহিহ মুসলিম ও নাসায়ি) হাদিসের মান নির্ণয়ঃসহিহ হাদিস

Comments

Leave a Reply