কিয়ামতের আলামত সম্পর্কিত হাদিস ও মর্মস্পর্শী বিষয়

কিয়ামতের আলামত সম্পর্কিত হাদিস ও মর্মস্পর্শী বিষয়

কিয়ামতের আলামত সম্পর্কিত হাদিস ও মর্মস্পর্শী বিষয় , এই অধ্যায়ে মোট ১০৮ টি হাদীস (২৪১৫ -২৫২২) >> সুনান তিরমিজি শরীফ এর মুল সুচিপত্র দেখুন

অধ্যায়ঃ ৩৫, অনুচ্ছেদঃ (১-১৩)=১৩টি

১. অনুচ্ছেদঃ কিয়ামত প্রসঙ্গে
২. অনুচ্ছেদঃ হিসাব-নিকাশ ও প্রতিশোধ প্রসঙ্গে
৩. অনুচ্ছেদঃ হাশরের ময়দানের অবস্থা
৪. অনুচ্ছেদঃ কিয়ামাত ও মর্মষ্পর্শী বিষয়
৫. অনুচ্ছেদঃ সহজ হিসাব
৬. অনুচ্ছেদঃ দুনিয়ার সঞ্চিত সম্পদ পরকালে ব্যয় করার আকাঙ্খা
৭. অনুচ্ছেদঃ পৃথিবী তার বৃত্তান্ত পেশ করিবে
৮. অনুচ্ছেদঃ শিঙ্গার ফুৎকার প্রসঙ্গে
৯. অনুচ্ছেদঃ পুলসিরাতের অবস্থা
১০. অনুচ্ছেদঃ শাফাআত প্রসঙ্গে
১১. অনুচ্ছেদঃ কাবীরা গুনাহের অপরাধীদের জন্য শাফায়াত
১২. অনুচ্ছেদঃ সত্তরহাজার লোক বিনা হিসাবে জান্নাতে প্রবেশ করিবে
১৩. অনুচ্ছেদঃ আমি শাফাআতের প্রস্তাবই গ্রহণ করলাম

১. অনুচ্ছেদঃ কিয়ামত প্রসঙ্গে

২৪১৫. আদী ইবনি হাতিম [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

তিনি বলেন, রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলেছেনঃ তোমাদের সকলের সাথেই তার প্রতিপালক আল্লাহ তাআলা কিয়ামত দিবসে কথা বলবেন। তার ও তার প্রতিপালকের মধ্যে কোন দোভাষী থাকিবে না। সে তার ডানপাশে তাকিয়ে তার দুনিয়াবী জীবনে পাঠানো আমল ব্যতীত আর কোন কিছুই দেখিতে পাবে না। সে তার বাম পাশে তাকিয়েও তার দুনিয়াবী জীবনে কৃত আমল ব্যতীত আর কোন কিছুই দেখিতে পাবে না। তারপর সে তার সম্মুখে তাকাতেই জাহান্নাম দেখিতে পাবে। রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলেছেনঃ তোমাদের মধ্যে যে ব্যক্তিই এক টুকরা খেজুরের বিনিময়ে হলেও জাহান্নাম হইতে আত্মরক্ষা করিতে সক্ষম হয় সে যেন তাই করে।

সহীহ, ইবনি মা-জাহ [১৮৫], বুখারী, মুসলিম। আবু ঈসা বলেন, এই হাদীসটি হাসান সহীহ। আবুস সাইব বলেন, উপরোক্ত হাদীসটি একদিন ওয়াকী [রাহঃ] আমাদের নিকট আমাশের সূত্রে বর্ণনা করেন। বর্ণনাশেষে তিনি বলেন, যদি খুরাসানবাসী কোন ব্যক্তি এখানে উপস্থিত থাকে তাহলে সে যেন এ হাদীসটি খুরাসানে প্রচার করাকে সাওয়াবের কাজ মনে করে। কেননা, জাহমিয়া সম্প্রদায়ের মানুষ এটা [মানুষের সাথে আল্লাহ্ তাআলার কথা বলার বিষয়টি] অস্বীকার করে। আবুস সাইবের নাম সালম ইবনি জুনাদা ইবনি সালম ইবনি খালিদ ইবনি জাবির ইবনি সামুরা আল-কূফী। কিয়ামতের আলামত সম্পর্কিত হাদিস – এই হাদীসটির তাহকিকঃ সহীহ হাদীস

২৪১৬. ইবনি মাসউদ [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

নাবী [সাঃআঃ] বলেছেনঃ কিয়ামত দিবসে পাঁচটি বিষয় সম্পর্কে জিজ্ঞাসাবাদ হওয়ার আগপর্যন্ত আদম সন্তানের পদদ্বয় আল্লাহ্ তাআলার নিকট হইতে সরতে পারবে না। তার জীবনকাল সম্পর্কে, কিভাবে অতিবাহিত করেছে? তার যৌবনকাল সম্পর্কে, কি কাজে তা বিনাশ করেছে ; তার ধন-সম্পদ সম্পর্কে, কোথা হইতে তা উপার্জন করেছে এবং তা কি কি খাতে খরচ করেছে এবং সে যত টুকু জ্ঞান অর্জন করেছিল সে মুতাবিক কি কি আমল করেছে।

সহীহ, সহীহাহ্ [৯৪৬], তালীকুর রাগীব [১/৭৬], রাওযুন নাযীর [৬৪৮]। আবু ঈসা বলেন, এ হাদীসটি গারীব। আমরা রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ]-এর এ হাদীসটি শুধুমাত্র হুসাইন ইবনি কাইসের রিওয়ায়াত হিসাবে ইবনি মাসউদ [রাদি.]-এর বরাতে [দায়িত্বে] জেনেছি। হাদীসের বর্ণনাকারী হুসাইন ইবনি কাইস তার স্মৃতিশক্তির দুর্বলতার জন্য সমালোচিত। আবু বারযা ও আবু সাঈদ [রাদি.] হইতেও এ অনুচ্ছেদে হাদীস বর্ণিত আছে। কিয়ামতের আলামত সম্পর্কিত হাদিস – এই হাদীসটির তাহকিকঃ সহীহ হাদীস

২৪১৭. আবু বারযা আল-আসলামী [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

তিনি বলেন, রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলেছেনঃ কোন বান্দার পদদ্বয় [কিয়ামাত দিবসে] এতটুকুও সরবে না, তাকে এ কয়টি বিষয় সম্পর্কে যে পর্যন্ত জিজ্ঞাসাবাদ না করা হবেঃ কিভাবে তার জীববনকালকে অতিবাহিত করেছে; তার অর্জিত জ্ঞান অনুযায়ী কি আমল করেছে ; কোথা হইতে তার ধন-সম্পদ উপার্জন করেছে ও কোন কোন খাতে ব্যয় করেছে এবং কি কি কাজে তার শরীর বিনাশ করেছে।

সহীহ্‌, প্রাগুক্ত, তাখরীজ ইক্‌তিযাউল ইলমি আল-আমাল [১৫/১]। আবু ঈসা বলেন, এ হাদীসটি হাসান সহিহ। সাঈদ ইবনি আব্দুল্লাহ ইবনি জুরাইজ ছিলেন বসরার অধিবাসী এবং আবু বারযা আল-আসলামী [রাদি.]-এর মুক্তদাস। আবু বারযা [রাদি.]-এর নাম নাযলা ইবনি উবাইদ। কিয়ামতের আলামত সম্পর্কিত হাদিস – এই হাদীসটির তাহকিকঃ সহীহ হাদীস

২. অনুচ্ছেদঃ হিসাব-নিকাশ ও প্রতিশোধ প্রসঙ্গে

২৪১৮. আবু হুরাইরা [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ] সাহাবীদের প্রশ্ন করিলেন, তোমরা কি জান, দেউলিয়া কে? তারা বলিলেন, হে আল্লাহ্‌র রাসূল [সাঃআঃ]! আমাদের মধ্যে দেউলিয়া হচ্ছে সেই ব্যক্তি যার দিরহামও [নগদ অর্থ] নেই, কোন সম্পদও নেই। রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ] বললেনঃ আমার উম্মাতের মধ্যে সেই ব্যক্তি হচ্ছে দেউলিয়া যে কিয়ামাত দিবসে নামাজ, রোযা, যাকাতসহ বহু আমল নিয়ে উপস্থিত হইবে এবং এর সাথে সে কাউকে গালি দিয়েছে, কাউকে মিথ্যা অপবাদ দিয়েছে, কারো সম্পদ আত্মসাৎ করেছে, কারো রক্ত প্রবাহিত [হত্যা] করেছে, কাউকে মারধর করেছে, ইত্যাদি অপরাধও নিয়ে আসবে। সে তখন বসবে এবং তার নেক আমল হইতে এ ব্যক্তি কিছু নিয়ে যাবে, ও ব্যক্তি কিছু নিয়ে যাবে। এভাবে সম্পূর্ণ বদলা [বিনিময়] নেয়ার আগেই তার সৎ আমল নিঃশেষ হয়ে গেলে তাহাদের গুনাহসমূহ তার উপর চাপিয়ে দেয়া হইবে, তারপর তাকে জাহান্নামে নিক্ষেপ করা হইবে।

সহীহ, সহীহাহ্‌ [৮৪৫], আহকামুল জানাইয [৪], মুসলিম। আবু ঈসা বলেন, এ হাদীসটি হাসান সহিহ। কিয়ামতের আলামত সম্পর্কিত হাদিস – এই হাদীসটির তাহকিকঃ সহীহ হাদীস

২৪১৯. আবু হুরাইরা [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

তিনি বলেন, রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলেছেনঃ সেই বান্দার উপর আল্লাহ তাআলা রাহমাত বর্ষণ করুন, যে তার কোন ভাইয়ের মান-সম্মান ও ধন-সম্পদের ব্যাপারে যুলুম করেছে। কিয়ামাত দিবসে এ ব্যাপারে তাকে পাকড়াও করার পূর্বেই যেন সে ক্ষতিগ্রস্ত ব্যক্তির কাছে ক্ষমা চেয়ে নেয়। কারণ, সে স্থানে [আখিরাতে] দিরহাম, দীনারের [বিনিময় প্রদানের] ব্যবস্থার থাকিবে না। সুতরাং তার কোন ভালো আমল থাকলে [যুলুমের পরিমাণ অনুযায়ী] তা নিয়ে যাওয়া হইবে। আর যদি কোন ভালো আমল না থাকে, তাহলে মাযলুমদের গুনাহ তার উপর চাপিয়ে দেয়া হইবে।

সহিহ, সহীহাহ্ [৩২৬৫]। আবু ঈসা বলেন, এ হাদীসটি হাসান সহিহ এবং সাঈদ আল-মাকবুরীর রিওয়ায়াত হিসেবে গারীব। মালিক ইবনি আনাস-সাঈদ আল-মাকবুরী হইতে, তিনি আবু হুরাইরা [রাদি.] হইতে, তিনি রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ] হইতে এই সূত্রেও উপরের হাদীসের মতোই বর্ণনা করিয়াছেন। কিয়ামতের আলামত সম্পর্কিত হাদিস – এই হাদীসটির তাহকিকঃ সহীহ হাদীস

২৪২০. আবু হুরাইরা [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলেছেনঃ নিঃসন্দেহে [কিয়ামাত দিবসে] সকল হকদারের হক আদায় করা হইবে। এমনকি শিংবিহীন বকরীর পক্ষে শিংবিশিষ্ট বকরীর [গুতোর] বদলা নেওয়া হইবে।

সহীহ, সহীহাহ্ [১৫৮৮]। আবু যার ও আব্দুল্লাহ ইবনি উনাইস [রাদি.] হইতেও এ অনুচ্ছেদে হাদীস বর্ণিত আছে। আবু ঈসা বলেন, আবু হুরাইরা [রাদি.] হইতে বর্ণিত হাদীসটি হাসান সহিহ। কিয়ামতের আলামত সম্পর্কিত হাদিস – এই হাদীসটির তাহকিকঃ সহীহ হাদীস

২৪২১. রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ]-এর সাহাবী মিকদাদ [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

তিনি বলেন, আমি রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ]-কে বলিতে শুনেছিঃ কিয়ামাত দিবসে সূ্র্যকে মানুষের এত নিকটে আনা হইবে যে, তা মাত্র এক অথবা দুমাইল ব্যবধানে থাকিবে। সুলাইম ইবনি আমির [রাহঃ] বলেন, আমি জানি না উক্ত মাইল দ্বারা যামীনের দূরত্ব জ্ঞাপক মাইল বুঝানো হয়েছে, না চোখের সুরমা লাগানোর শলাকা বুঝানো হয়েছে। তিনি বলেন, সূর্য তাহাদের গলিয়ে দেবে। তারা তখন নিজেদের আমল [গুনাহ] অনুপাতে ঘামের মধ্যে হাবুডুবু খাবে। আর তা কারো পায়ের গোড়ালী পর্যন্ত, কারো হাঁটু পর্যন্ত, কারো কোমর পর্যন্ত এবং কারো মুখ পর্যন্ত ঘাম পৌঁছে লাগামের মতো বেষ্টন করিবে। এই কথা বলার পর রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ] তাহাঁর হাত দ্বারা মুখের দিকে ইশারা করেন, অর্থাৎ লাগামের মতো বেষ্টন করাকে বুঝালেন।

সহীহ, সহীহাহ্‌ [১৩৮২], মুসলিম। আবু ঈসা বলেন, এ হাদীসটি হাসান সহিহ। আবু সাঈদ ও ইবনি উমার [রাদি.] হইতেও এ অনুচ্ছেদে হাদীস বর্ণিত আছে। কিয়ামতের আলামত সম্পর্কিত হাদিস – এই হাদীসটির তাহকিকঃ সহীহ হাদীস

২৪২২. ইবনি উমার [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

হাম্মাদ [রাহঃ] বলেন, আমাদের নিকট এ হাদীসটি মারফূভাবে অর্থাৎ রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ]-এর বাণী হিসেবে বর্ণিত হয়েছে। “মানুষ যেদিন জগতসমূহের প্রতিপালকের সামনে দাঁড়াবে” [সূরাদি. মুতাফফিফীন-৬] আয়াত প্রসঙ্গে তিনি বলেন, মানুষ কানের অর্ধেক পর্যন্ত ঘামে ডুবে থাকাবস্থায় দাঁড়িয়ে থাকিবে।

সহীহ, ইবনি মা-জাহ [৪২৭৮], বুখারী, মুসলিম। আবু ঈসা বলেন, এ হাদীসটি হাসান সহিহ। উপরোক্ত হাদীসের অনুরূপ হাদীস হান্নাদ-ঈসা ইবনি ইউনুস হইতে, তিনি ইবনি আওন হইতে, তিনি নাফি হইতে, তিনি ইবুন উমার [রাদি.] হইতে, তিনি রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ] হইতে এই সূত্রে বর্ণনা করিয়াছেন। কিয়ামতের আলামত সম্পর্কিত হাদিস – এই হাদীসটির তাহকিকঃ সহীহ হাদীস

৩. অনুচ্ছেদঃ হাশরের ময়দানের অবস্থা

২৪২৩. ইবনি আব্বাস [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

তিনি বলেন, রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলেছেনঃ কিয়ামাত দিবসে মানুষকে খালি পায়ে, উলঙ্গ শরীরে ও খাৎনাবিহীন অবস্থায় হাযির করা হইবে, যেভাবে প্রথমবার সৃষ্টি করা হয়েছিল। তারপর তিনি এ আয়াত তিলাওয়াত করেনঃ

‏كَمَا بَدَأْنَا أَوَّلَ خَلْقٍ نُعِيدُهُ وَعْدًا عَلَيْنَا إِنَّا كُنَّا فَاعِلِينَ

“আমি যেভাবে প্রথমবার সৃষ্টির সূচনা করেছিলাম সেভাবেই আবার সৃষ্টি করব। প্রতিশ্রুতি পূর্ণ করা আমার কর্তব্য, আমি তা পালন করবই” [সূরাদি. আম্বিয়া-১০৪]। ইবরাহীম [আঃ]-কে সকল সৃষ্টির মধ্যে সর্বপ্রথম পোশাক পরিধান করানো হইবে। আমার সাহাবীগণের মধ্যকার কিছু সংখ্যক লোককে বন্দী করে ডানে-বামে নিয়ে যাওয়া হইবে। তখন আমি বলব, হে প্রভু! এরা তো আমার অনুসারী। আমাকে তখন বলা হইবে, আপনি তো জানেন না, আপনার পরে এরা যে কি সব বিদআতী কাজ করেছে। আপনি তাহাদের কাছ থেকে পৃথক হওয়ার পর হইতে তারা পূর্বাবস্থায় ফিরে যেতে আরম্ভ করেছে। তখন আমি আল্লাহ্‌ তাআলার সৎকর্মপরায়ণ বান্দাহ {ঈসা [আঃ]-এর} মতো বলব, [সূরাদি. মাইদা-১১৮]ঃ

‏إِنْ تُعَذِّبْهُمْ فَإِنَّهُمْ عِبَادُكَ وَإِنْ تَغْفِرْ لَهُمْ فَإِنَّكَ أَنْتَ الْعَزِيزُ الْحَكِيمُ

“আপনি যদি তাহাদের শাস্তি দেন তাহলে তারা তো আপনারই বান্দাহ, আর যদি তাহাদেরকে ক্ষমা করেন তাহলে নিশ্চয়ই আপনি মহা পরাক্রমশালী প্রজ্ঞাময়”।

সহীহ, বুখারী, মুসলিম। মুহাম্মাদ ইবনি বাশশার ও মুহাম্মাদ ইবনিল মুসান্না-মুহাম্মদ ইবনি জাফর হইতে, তিনি শুবা হইতে, তিনি মুগীরা ইবনি নুমান হইতে এই সূত্রে উপরোক্ত হাদীসের মতোই বর্ণনা করিয়াছেন। কিয়ামতের আলামত সম্পর্কিত হাদিস – এই হাদীসটির তাহকিকঃ সহীহ হাদীস

২৪২৪. বাহ্য ইবনি হাকীম [রাহঃ] হইতে তার বাবা, অতঃপর তার দাদা হইতে বর্ণীতঃ

তিনি বলেন, আমি রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ]-কে বলিতে শুনেছিঃ [কিয়ামাত দিবসে] তোমাদের পায়ে হাঁটিয়ে, সাওয়ারী হিসেবে এবং কিছু সংখ্যককে মুখের উপর উপুর করে টেনে হাযির করা হইবে।

সহীহ, ফাযাইলুশ্‌শাম [১৩]। আবু হুরাইরা [রাদি.] হইতেও এ অনুচ্ছেদে হাদীস বর্ণিত আছে। আবু ঈসা বলেন, এ হাদীসটি হাসান সহিহ। কিয়ামতের আলামত সম্পর্কিত হাদিস – এই হাদীসটির তাহকিকঃ সহীহ হাদীস

৪. অনুচ্ছেদঃ কিয়ামাত ও মর্মষ্পর্শী বিষয়

২৪২৫. আবু হুরাইরা [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

তিনি বলেন, রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলেছেনঃ কিয়ামাতের দিন মানুষকে তিনবার হাযির করা হইবে। দুইবারের হাযিরা হইবে ঝগড়া-বিবাদ ও বিভিন্ন ওযর-আপত্তি শুনানী প্রসঙ্গে এবং তৃতীয়বারের হাযিরাতে প্রত্যেকের [নিজ নিজ] আমলনামা উড়তে থাকিবে। কেউ তা পাবে ডান হাতে আর কেউ পাবে বাম হাতে।

যঈফ, ইবনি মাজাহ হাদীস নং-[৪২৭৭] আবু ঈসা বলেন, এ হাদীসটি সনদের দিক দিয়ে সহীহ নয়। কারণ হাসান বাসরী [রঃ] আবু হুরাইরা [রাদি.] হইতে কিছু শুনেননি। কিছু রাবী আলী আর-রিফাঈর সূত্রে আল-হাসান হইতে তিনি আবু মূসা [রাদি.] হইতে তিনি রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ] হইতে এই হাদীস বর্ণনা করিয়াছেন। এ বর্ণনাটিও সহীহ নয়, কারণ হাসান আবু মূসার নিকট হাদীস শুনেন নাই। কিয়ামতের আলামত সম্পর্কিত হাদিস – এই হাদীসটির তাহকিকঃ দুর্বল হাদীস

৫. অনুচ্ছেদঃ সহজ হিসাব

২৪২৬. আয়েশা [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

তিনি বলেন, আমি রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ]-কে বলিতে শুনেছিঃ পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে যার হিসাব গ্রহণ করা হইবে সে তো ধ্বংস হয়ে যাবে। আমি বললাম, হে আল্লাহ্‌র রসূল [স্বল্লাল্লহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম]! আল্লাহ্‌ তাআলা তো বলেছেন,

(‏فَأَمَّا مَنْ أُوتِيَ كِتَابَهُ بِيَمِينِهِ * فَسَوْفَ يُحَاسَبُ حِسَابًا يَسِيرًا 

“যে ব্যক্তির ডান হাতে তার আমলনামা প্রদান করা হইবে, খুব সহজেই তার হিসাব-নিকাশ হইবে” [সূরাদি. ইনশিকাক-৭-৮]। তিনি বললেনঃ সেটা তো শুধু নামমাত্র উপস্থাপন করা।

সহীহ, যিলালুল জান্নাত [৮৮৫], বুখারী, মুসলিম। আবু ঈসা বলেন, এ হাদীসটি হাসান সহিহ। এ হাদীসটি ইবনি আবী মুলাইকার সূত্রে আইয়্যূব [রাহঃ]-ও বর্ণনা করিয়াছেন। কিয়ামতের আলামত সম্পর্কিত হাদিস – এই হাদীসটির তাহকিকঃ সহীহ হাদীস

৬. অনুচ্ছেদঃ দুনিয়ার সঞ্চিত সম্পদ পরকালে ব্যয় করার আকাঙ্খা

২৪২৭. আনাস [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলেনঃ কিয়ামাতের দিন আদম-সন্তানকে ভেড়ার [সদ্য প্রসূত] বাচ্চার ন্যায় অবস্থায় হাযির করা হইবে। তারপর তাকে আল্লাহ তাআলার সামনে দাঁড় করানো হইবে। আল্লাহ তাআলা তাকে প্রশ্ন করবেন, আমি তোমাকে ক্ষেত-খামার, দাস-দাসী ও অন্যান্য সুযোগ-সুবিধা দান করেছিলাম এবং আরো বিভিন্ন ধরণের অনুগ্রহ দিয়েছিলাম। তুমি কি আমল করে এসেছ? সে বলবে, হে রব! আমি সেগুলো সঞ্চয় করে রেখেছি, বহু গুণে বৃদ্ধি করেছি এবং যা ছিল তার চাইতে অনেক বাড়িয়ে রেখে এসেছি। আমাকে একটুখানি ফেরত যেতে দিন, আমি সেগুলো আপনার নিকটে নিয়ে আসব। তিনি তাকে বলবেন, তুমি কি কি আমল করে এসেছ আগে তা আমাকে দেখাও। অতঃপর দেখা যাবে সে এমন এক বান্দা, যে কোন ভাল কাজই করে নাই, ফলে তাকে জাহান্নামে নিক্ষেপ করা হইবে।

যঈফ, তালীকুর রাগীব [৩/১১] আবু ঈসা বলেন, একাধিক রাবী উপরোক্ত হাদীসটি হাসান বাসরী [রঃ]-এর বক্তব্য হিসাবে বর্ণনা করিয়াছেন। তারা এটিকে মুসনাদ হাদীস হিসাবে বর্ণনা করেননি। রাবী ইসমাঈল ইবনি মুসলিম তার স্মরণশক্তির দূর্বলতার জন্য সমালোচিত। এ অনুচ্ছেদে আবু হুরাইরা ও আবু সাঈদ আল-খুদরী [রাদি.] হইতেও হাদীস বর্ণিত আছে। কিয়ামতের আলামত সম্পর্কিত হাদিস – এই হাদীসটির তাহকিকঃ দুর্বল হাদীস

২৪২৮. আবু হুরাইরা [রাদি.] ও আবু সাঈদ [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

তারা দুজনেই বলেন, রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলেছেনঃ কিয়ামাতের দিন কোন বান্দাকে উপস্থিত করা হইবে। আল্লাহ্‌ তাআলা তাকে প্রশ্ন করবেন, আমি কি তোমাকে কান, চোখ, ধন-সম্পদ ও সন্তান-সন্তুতি দেইনি এবং তোমার অধীনে জীব-জন্তু ও খেত-খামার দেইনি? তোমাকে তো স্বাধীনভাবে ছেড়ে রেখেছিলাম সর্দারী করিতে এবং মানুষের নিকট হইতে এক-চতুর্থাংশ গ্রহণ করিতে [জাহিলী যুগের একটি রীতি]। তুমি কি ধারণা করিতে যে, এই দিনে আমার সাথে তোমার সাক্ষাৎ হইবে? সে বলবে, না। তিনি তাকে বলবেন, তুমি যেভাবে আমাকে ভুলে গিয়েছিলে, আমিও আজ তোমাকে ভুলে গেলাম।

সহীহ, যিলালুল জান্নাত [৬৩২], মুসলিম। আবু ঈসা বলেন, এ হাদীসটি সহীহ্‌ গারীব। “তোমাকে ভুলে গেলাম” কথার অর্থ এই যে, আমি আজ তোমাকে শাস্তি প্রদান করলাম। আবু ঈসা বলেন, কিছু আলিম [“আজ আমি তাহাদের ভুলে গেছি”] [সূরাদি. আরাফ-৫১] আয়াতের ব্যাখ্যায় বলেন, আজ আমি তাহাদের শাস্তি কার্যকর করলাম। কিয়ামতের আলামত সম্পর্কিত হাদিস – এই হাদীসটির তাহকিকঃ সহীহ হাদীস

৭. অনুচ্ছেদঃ পৃথিবী তার বৃত্তান্ত পেশ করিবে

২৪২৯. আবু হুরাইরা [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

তিনি বলেন, রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ] “যে দিন পৃথিবী তার বৃত্তান্ত পরিবেশন করিবে” [সূরাদি. যিলযাল-৪] তিলাওয়াত করে প্রশ্ন করিলেন, তোমরা কি জান পৃথিবীর পরিবেশনযোগ্য বৃত্তান্ত কি? সাহাবীগণ বলিলেন, আল্লাহ তাআলা ও তাহাঁর রাসূলই ভালো জানেন। তিনি বলিলেন, তার বৃত্তান্ত এই যে, সে সমস্ত নারী-পুরুষের সেইসব কাজের সাক্ষ্য দিবে, যা তারা তার উপরে করেছে। সে বলবে, অমুক দিন অমুক ব্যক্তি এই এই কাজ করেছে। এভাবে সে সাক্ষ্য দেবে। তিনি বলিলেন, এটাই হইবে পৃথিবীর পেশকৃত বৃত্তান্ত।

দুর্বল সনদ। এ হাদীসটি হাসান গারীব। কিয়ামতের আলামত সম্পর্কিত হাদিস – এই হাদীসটির তাহকিকঃ দুর্বল হাদীস

৮. অনুচ্ছেদঃ শিঙ্গার ফুৎকার প্রসঙ্গে

২৪৩০. আবদুল্লাহ ইবনি আমর ইবনিল আস [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

তিনি বলেন, কোন এক গ্রাম্য লোক নাবীর [সাঃআঃ] নিকট এসে প্রশ্ন করিল, শিঙ্গা কি? তিনি বললেনঃ এটা একটা শিং যাতে ফুৎকার দেয়া হইবে।

সহীহ, সহীহাহ্‌ [১০৮০]। আবু ঈসা বলেন, এ হাদীসটি হাসান। একাধিক বর্ণনাকারী সুলাইমান আত-তাইমীর সূত্রে এ হাদীসটি বর্ণনা করিয়াছেন। আমরা এ হাদীসটি শুধুমাত্র তার রিওয়ায়াত হিসাবেই জেনেছি। কিয়ামতের আলামত সম্পর্কিত হাদিস – এই হাদীসটির তাহকিকঃ সহীহ হাদীস

২৪৩১. আবু সাঈদ [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

তিনি বলেন, রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলেছেনঃ আমি কিভাবে নিশ্চিন্তে আরাম করিতে পারি, অথচ শিঙ্গাওয়ালা [ফেরেশতা ইসরাফীল আঃ] মুখে শিঙ্গা নিয়ে অধীর আগ্রহে কান পেতে শিঙ্গায় ফুৎকার দেয়ার নির্দেশ শোনার অপেক্ষায় আছেন, কখন ফুঁ দেয়ার নির্দেশ প্রদান করা হইবে, আর অমনি তিনি ফুঁ দিবেন। বিষয়টি রসুলুল্লাহর [সাঃআঃ] সাহাবীদের নিকট অত্যন্ত ভীতিকর মনে হলো। তখন তিনি তাহাদেরকে বললেনঃ তোমরা বল যে, আমাদের জন্য আল্লাহ্‌ তাআলাই যথেষ্ট, তিনি কতই না উত্তম কর্মবিধানকারী। আমরা আল্লাহ্‌ তাআলার উপর ভরসা করলাম।

সহীহ, সহীহাহ্‌ [২০৭৯]। আবু ঈসা বলেন, এ হাদীসটি হাসান। এ সূত্র ছাড়াও আতিয়্যা হইতে, তিনি আবু সাঈদ [রাদি.] হইতে, তিনি রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ] হইতে এই সূত্রে হাদীসটি একইরকম বর্ণিত আছে। কিয়ামতের আলামত সম্পর্কিত হাদিস – এই হাদীসটির তাহকিকঃ সহীহ হাদীস

৯. অনুচ্ছেদঃ পুলসিরাতের অবস্থা

২৪৩২. মুগীরা ইবনি শুবা [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

তিনি বলেন, রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলেছেনঃ পুলসিরাত পার হওয়ার সময় মুমিনদের নিদর্শন হবেঃ হে প্রভু! রক্ষা কর রক্ষা কর।

যঈফ, যঈফা [১৯৭৩] আবু ঈসা বলেন, মুগীরা ইবনি শুবা [রাদি.]-এর রিওয়ায়াত হিসাবে এ হাদীসটি গারীব। শুধুমাত্র আবদুর রহমান ইবনি ইসহাকের সূত্রেই আমরা এ হাদীস জেনেছি। এ অনুচ্ছেদে আবু হুরা0ইরা [রাদি.] হইতেও হাদীস বর্ণিত আছে। কিয়ামতের আলামত সম্পর্কিত হাদিস – এই হাদীসটির তাহকিকঃ দুর্বল হাদীস

২৪৩৩. আনাস ইবনি মালিক [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

তিনি বলেন, আমি রসুলুল্লাহর [সাঃআঃ] নিকট নিবেদন করলাম যে, তিনি যেন কিয়ামাত দিবসে আমার জন্য সুপারিশ করেন। তিনি বলিলেন, ঠিক আছে আমি সুপারিশ করব। আমি তাকে প্রশ্ন করলাম, হে আল্লাহ্‌র রাসূল [সাঃআঃ]! আমি আপনাকে কোথায় খোঁজ করব? তিনি বলিলেন, তুমি সর্বপ্রথম আমাকে পুলসিরাতের সামনে খোঁজ করিবে। আমি বললাম, পুলসিরাতে যদি আপনাকে না পাই? তিনি বলিলেন, তাহলে মীযানের ঐখানে খুঁজবে। আমি আবার বললাম, মীযানের ঐখানেও যদি আপনাকে না পাই? তিনি বলিলেন, তাহলে হাওযে কাওসারের সামনে খুঁজবে। আমি এ তিনটি জায়গায় যে কোন একটিতে অবশ্যই উপস্থিত থাকব।

সহীহ, মিশকাত [৫৫৯৫], তালীকুর রাগীব [৪/২১১]। আবু ঈসা বলেন, এ হাদীসটি হাসান গারীব। আমরা এ হাদীসটি শুধুমাত্র উপরোক্ত সূত্রেই জেনেছি। কিয়ামতের আলামত সম্পর্কিত হাদিস – এই হাদীসটির তাহকিকঃ সহীহ হাদীস

১০. অনুচ্ছেদঃ শাফাআত প্রসঙ্গে

২৪৩৪. আবু হুরাইরা [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

তিনি বলেন, কোন এক সময় রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ]-এর সামনে গোশত আনা হলো। তারপর তাঁকে সামনের একটি রান উঠিয়ে দেয়া হলো। তিনি তা খুবই পছন্দ করিতেন- আর তিনি তা দাঁত দিয়ে ছিড়ে ছিড়ে খেতে থাকলেন। তারপর তিনি বললেনঃ কিয়ামাত দিবসে আমিই হবো সকল মানুষের নেতা। তোমরা কি জান এর কারণ কি? আল্লাহ্‌ তাআলা সেদিন পূর্বেকার ও পরের সকল মানুষকে এক জায়গায় সমবেত করবেন। একজনের আওয়াজই সবার কাছে পৌছে যাবে এবং সবাই একজনের দৃষ্টিসীমার মধ্যে থাকিবে।

সূর্য তাহাদের খুব নিকটে এসে যাবে। মানুষ সীমাহীন দুর্ভোগ ও সামর্থ্যের অতীত দুর্ভাবনায় পড়ে যাবে এবং ধৈর্য্যহারা হয়ে পড়বে। তারা পরস্পরকে বলবে, তোমরা কি এ দুঃসহ বিপদ দেখিতে পাচ্ছ না? তোমাদের প্রভুর নিকট তোমাদের জন্য সুপারিশ করিতে পারে এরূপ কাউকে খুঁজে দেখছ না কেন? লোকেরা একে অপরকে বলবে, তোমাদের উচিত আদম [আঃ]-এর কাছে যাওয়া। অতএব, তারা আদম [আঃ]-এর নিকট গিয়ে বলবে, আপনি তো মানব জাতির আদি পিতা। আল্লাহ্‌ তাআলা আপনাকে তাহাঁর নিজ হাতে বানিয়েছেন এবং আপনার মধ্যে তাহাঁর সৃষ্ট রূহ্‌ ফুঁকে দিয়েছেন। তারপর ফেরেশতাহাদের নির্দেশ দিলে তারা আপনাকে সাজদাহ করিয়াছেন। আপনি আমাদের জন্য আপনার প্রভুর নিকট সুপারিশ করুন। আপনি কি দেখিতে পাচ্ছেন না আমরা কি অবস্থার মধ্যে পতিত আছি? আপনি কি লক্ষ্য করছেন না আমরা দুঃখ-দুর্দশার শেষ সীমায় পৌঁছে গেছি! আদম [আঃ] তাহাদেরকে বলবেন, আমার প্রভু তো আজ এতই ক্রোধান্বিত হয়েছেন যেরূপ ইতিপূর্বে আর কখনো হননি এবং পরেও কখনো হইবেন না। তিনি আমাকে একটি গাছের ব্যাপারে [তার ফল খেতে] নিষেধ করেছিলেন। আমি সেটা অমান্য করেছি। নাফসী, নাফসী, নাফসী [অর্থাৎ- আমারই তো কোন উপায় দেখছি না]। তোমরা অন্য কারো নিকটে যাও। তোমরা বরং নূহ্‌ [আঃ]-এর নিকট যাও। তারা তখন নূহ্‌ [আঃ]-এর নিকট গিয়ে বলবে, হে নূহ! আপনি তো দুনিয়াবাসীদের জন্য প্রথম রাসূল। আল্লাহ্‌ তাআলা আপনাকে আব্‌দ শাকূর [কৃতজ্ঞ বান্দাহ] উপাধি দিয়েছেন, আপনি আমাদের জন্য আপনার প্রভুর নিকট সুপারিশ করুন। আপনি কি দেখিতে পাচ্ছেন না যে, আমরা কি অবস্থায় পতিত আছি, আপনি কি লক্ষ্য করছেন না আমরা দুঃখ-দুর্দশার শেষ সীমায় পৌঁছে গেছি! নূহ্‌ [আঃ] তাহাদেরকে বলবেন, আজ আমার প্রতিপালক এতই রাগান্বিত হয়েছেন যেমনটি এরপূর্বে আর কখনো হননি এবং পরেও হইবেন না। আমাকে একটি দুআ করার অধিকার দেয়া হয়েছিল [যে উদ্দেশ্যেই দুআ করব আল্লাহ্‌ তাআলা তা ক্ববূল করবেন বলে অঙ্গীকার ছিল]। কিন্তু আমি আমর উম্মাতের বিরুদ্ধে সেই দুআ করেছি। নাফসী, নাফসী, নাফসী। তোমরা অন্য কারো কাছে যাও। তোমরা বরং ইবরাহীম [আঃ]-এর নিকট যাও। তারা ইবরাহীম [আঃ]-এর নিকট গিয়ে বলবে, হে ইবরাহীম ! আপনি আল্লাহ্‌র নাবী এবং দুনিয়াবাসীদের মধ্যে তাহাঁর অন্তরঙ্গ বন্ধু। আমরা কি অবস্থার মধ্যে পতিত আছি আপনি দেখিতে পাচ্ছেন না? আপনি আমাদের জন্য আপনার প্রভুর নিকট সুপারিশ করুন। তিনি বলবেন, আমার পরোয়ারদিগার আজ এতই রাগান্বিত হয়েছেন, যেমনটি এরপূর্বে তিনি আর কখনো হননি এবং পরেও কখনো হইবেন না। আমি তিনটি মিথ্যা কথা বলেছি। আবু হাইয়্যান তাহাঁর বর্ণিত হাদীসে সেগুলো উল্লেখ করিয়াছেন। নাফসী, নাফসী, নাফসী [আমি আজ আমার নিজের চিন্তায় অস্থির]। তোমরা বরং অন্য কারো নিকট যাও, তোমরা মূসা [আঃ]-এর নিকট যাও। তখন তারা মূসা [আঃ]-এর নিকট উপস্থিত হয়ে বলবে, হে মূসা ! আপনি তো আল্লাহ্‌র রাসূল, আল্লাহ্‌ তাহাঁর রিনামাজ ও বাক্যালাপ দ্বারা আপনাকে মানুষের উপর মর্যাদা প্রদান করিয়াছেন। আপনি কি আমাদের প্রাণান্তকর এ করুণ অবস্থা দেখছেন না? আপনি আমাদের জন্য আপনার প্রভুর নিকট সুপারিশ করুন। তিনি বলবেন, আল্লাহ্‌ তাআলা তো আজ এতই ক্রোধান্বিত হয়েছেন, যেমনটি এরপূর্বে তিনি আর কখনো হননি আর পরেও হইবেন না। আমি তো এক লোককে হত্যা করেছি। অথচ তাকে হত্যার নির্দেশ আমাকে প্রদান করা হয়নি। নাফসী, নাফসী, নাফসী। তোমরা বরং অন্য কারো নিকট যাও। তোমরা ঈসা [আঃ]-এর নিকট যাও। তখন ঈসা [আঃ]-এর নিকট গিয়ে তারা বলবে, হে ঈসা ! আপনি আল্লাহ্‌র রাসূল, তাহাঁর একটি বাণী যা তিনি মারইয়ামের গর্ভে নিক্ষেপ করিয়াছেন এবং তাহাঁর সৃষ্ট আত্মা। আপনি দোলনায় থাকাবস্থায় মানুষের সাথে কথা বলেছেন। আপনি কি আমাদের এ করুণ অবস্থা দেখছেন না? আপনি আমাদের জন্য আপনার প্রভুর নিকট সুপারিশ করুন। তখন ঈসা [আঃ] বলবেন, আমার পরোয়ারদিগার আজ এতই রাগান্বিত হয়েছেন, যেমনটি এর আগে তিনি আর কখনো হননি এবং পরে কখনো হইবেন না। তিনি কোন গুনাহের কথা উল্লেখ করবেন না। তিনি বলিলেন, নাফসী, নাফসী, নাফসী। তোমরা অন্য কারো নিকট যাও। তোমরা মুহাম্মাদ [সাঃআঃ]-এর নিকট যাও। তখন তারা মুহাম্মাদ [সাঃআঃ]-এর নিকট হাযির হয়ে বলবে, হে মুহাম্মাদ ! আপনি আল্লাহ্‌র রাসূল, নাবীগণের মধ্যে সর্বশেষ নাবী, আপনার পূর্বাপর সমস্ত গুনাহ মাফ করে দেয়া হয়েছে। আপনি কি দেখছেন না আমরা কি অবস্থায় পতিত আছি! আপনি আমাদের জন্য আপনার প্রভুর নিকট সুপারিশ করুন। তখন আমি রাওয়ানা হয়ে আরশের নীচে উপস্থিত হবো। তারপর আমার প্রভুর উদ্দেশ্যে সাজদায় লুটিয়ে পড়ব। তারপর আল্লাহ তাআলা আমার জন্য তাহাঁর প্রশংসা ও সর্বোত্তম গুণগানের এমন কিছু উন্মুক্ত করে দিবেন যা আমার পূর্বে আর কারো জন্য উন্মুক্ত করা হয়নি। তারপর বলা হইবে, হে মুহাম্মাদ! তুমি মাথা উঠাও এবং আবেদন কর, তোমার আবেদন পূরণ করা হইবে, সুপারিশ কর তোমার সুপারিশ ক্ববূল করা হইবে। তারপর আমি মাথা তুলে বলব, হে পরোয়ারদিগার! আমার উম্মাত, হে পরোয়ারদিগার! আমার উম্মাত [তাহাদের রক্ষা করুন]। তখন আল্লাহ্‌ তাআলা বলবেন, হে মুহাম্মাদ! তোমার উম্মাতের মধ্যে যাদের কোন হিসাব-নিকাশ নেই তাহাদেরকে তুমি জান্নাতের ডান দরজা দিয়ে প্রবেশ করাও। অধিকন্তু তারা অন্য মানুষের সাথে শরীক হয়ে অন্যান্য দরজা দিয়ে প্রবেশ করার অধিকারও পাবে। তারপর তিনি বলিলেন, যার হাতে আমার প্রাণ সেই মহান সত্তার শপথ! জান্নাতের দরজার দুটি চৌকাঠের মধ্যকার ব্যবধান মক্কা ও হাজার এবং মক্কা ও বুসরার মধ্যকার ব্যবধানের সমান।

সহীহ, তাখরীজ তাহাভীয়া [১৯৮], যিলালুল জান্নাত [৮১১]। আবু বাক্‌র সিদ্দীক, আনাস, উক্‌বা ইবনি আমির ও আবু সাঈদ [রাদি.] হইতেও এ অনুচ্ছেদে হাদীস বর্ণিত আছে। আবু ঈসা বলেন, এ হাদীসটি হাসান সহীহ। আবু হাইয়্যান আত-তাইমীর নাম ইয়াহ্‌ইয়া ইবনি সাঈদ ইবনি হাইয়্যান। তিনি কূফার অধিবাসী এবং বিশ্বস্ত বর্ণনাকারী। আবু যুরআ ইবনি আমর ইবনি জারীর-এর নাম হারিম। কিয়ামতের আলামত সম্পর্কিত হাদিস – এই হাদীসটির তাহকিকঃ সহীহ হাদীস

১১. অনুচ্ছেদঃ কাবীরা গুনাহের অপরাধীদের জন্য শাফায়াত

২৪৩৫. আনাস [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

তিনি বলেন, রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলেছেনঃ আমার উম্মাতের মধ্যে আমার শাফাআত রয়েছে কাবীরা গুনাহের অপরাধীদের জন্য।

সহীহ, মিশকাত [৫৫৯৯], আয্‌যিলাল [৮৩১-৮৩২], রাওযুন নাযীর [৬৫]। আবু ঈসা বলেন, এ হাদীসটি হাসান সহীহ্‌ এবং এ সূত্রে গারীব। জাবির [রাদি.] হইতেও এ অনুচ্ছেদে হাদীস বর্ণিত আছে। কিয়ামতের আলামত সম্পর্কিত হাদিস – এই হাদীসটির তাহকিকঃ সহীহ হাদীস

২৪৩৬. জাবির ইবনি আবদুল্লাহ [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

তিনি বলেন, রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলেছেনঃ আমার উম্মাতের মধ্যে কাবীরা গুনাহগারদের জন্যই আমার সুপারিশ।

সহীহ, প্রাগুক্ত। মুহাম্মাদ ইবনি আলী বলেন, জাবির [রাদি.] আমাকে বলিলেন, হে মুহাম্মাদ ইবনি আলী! যে লোক কাবীরা গুনাহ্‌ করে নাই তার সুপারিশের দি দরকার? আবু ঈসা বলেন, এ হাদীসটি উক্ত সূত্রে হাসান গারীব। এটিকে জাফর ইবনি মুহাম্মাদের রিওয়ায়াতের হিসাবেই গারীব বলা হয়েছে। কিয়ামতের আলামত সম্পর্কিত হাদিস – এই হাদীসটির তাহকিকঃ সহীহ হাদীস

১২. অনুচ্ছেদঃ সত্তরহাজার লোক বিনা হিসাবে জান্নাতে প্রবেশ করিবে

২৪৩৭. আবু উমামা [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

আমি রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ]-কে বলিতে শুনেছিঃ আমার প্রভূ আমার সাথে অঙ্গীকার করিয়াছেন যে, তিনি আমার উম্মাতের মধ্যে সত্তরহাজার লোককে জান্নাতে প্রবেশ করাবেন যাদের কোন হিসাবও নেয়া হইবে না এবং শাস্তিও প্রদান করা হইবে না। আর প্রতি হাজারের সাথে থাকিবে আরো সত্তরহাজার। আর আমার পরোয়ারদিগারের দুই হাতের মুঠির তিনমুঠি পরিমাণ।

সহীহ, ইবনি মা-জাহ [৪২৮৬]। আবু ঈসা বলেন, এ হাদীসটি হাসান গারীব। কিয়ামতের আলামত সম্পর্কিত হাদিস – এই হাদীসটির তাহকিকঃ সহীহ হাদীস

২৪৩৮. আবদুল্লাহ ইবনি শাকীক্ব [রাহঃ] হইতে বর্ণীতঃ

তিনি বলেন, আমি একটি দলের সাথে ইলিয়া [বাইতুল মাকদিসের একটি নগর] নামক জায়গায় অবস্থান করছিলাম। দলের একজন লোক বলিল, আমি রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ]-কে বলিতে শুনেছিঃ আমার উম্মাতের একজন লোকের সুপারিশে তামীম বংশের সকল ব্যক্তির চেয়ে বেশি সংখ্যক ব্যক্তি জান্নাতে প্রবেশ করিবে। প্রশ্ন করা হলো, হে আল্লাহ্‌র রাসূল [সাঃআঃ]! আপনি ব্যতীত অন্য কারো সুপারিশে? তিনি বলিলেন, হ্যাঁ আমি ছাড়াই। বর্ণনাকারী বলেন, তারপর বর্ণনাকারী উঠে দাঁড়ালে আমি প্রশ্ন করলাম, ইনি কে? লোকেরা বলিল, ইনি হলেন ইবনি আবুল জাযআ [রাদি.]।

সহীহ, ইবনি মা-জাহ [৪৩১৬]। আবু ঈসা বলেন, এ হাদীসটি হাসান সহীহ্‌ গারীব। ইবনি আবুল জাযআ হলেন আবদুল্লাহ [রাদি.]। আমরা তাহাঁর নিকট হইতে এই একটি হাদীসই জেনেছি। কিয়ামতের আলামত সম্পর্কিত হাদিস – এই হাদীসটির তাহকিকঃ সহীহ হাদীস

১৩. অনুচ্ছেদঃ আমি শাফাআতের প্রস্তাবই গ্রহণ করলাম

২৪৩৯. হাসান বাসরী [রঃ] হইতে বর্ণীতঃ

তিনি বলেন, রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলেছেনঃ উসমান ইবনি আফফান [রাদি.] কিয়ামাতের দিন রবীআ ও মুদার গোত্রের সমসংখ্যক লোকের জন্য সুপারিশ করিবে।

দুর্বল সনদ, মুরসাল। কিয়ামতের আলামত সম্পর্কিত হাদিস – এই হাদীসটির তাহকিকঃ দুর্বল হাদীস

২৪৪০. আবু সাঈদ [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলেনঃ আমার উম্মাতের মধ্যে কেউ বিরাট জনগোষ্ঠীর জন্য সুপারিশ করিবে, কেউ একটি গোত্রের জন্য, কেউ একটি ছোট দলের জন্য, কেউ একজন লোকের জন্য সুপারিশ করিবে এবং তারা জান্নাতে প্রবেশ করিবে।

যঈফ, মিশকাত [৫৬০২] আবু ঈসা বলেন, এ হাদীসটি হাসান। কিয়ামতের আলামত সম্পর্কিত হাদিস – এই হাদীসটির তাহকিকঃ দুর্বল হাদীস

২৪৪১. আওফ ইবনি মালিক আল-আশজাঈ [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

তিনি বলেন, রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলেছেনঃ আল্লাহ্‌ তাআলার পক্ষ হইতে একজন আগন্তুক আমার সামনে আসলেন এবং দুইটি প্রস্তাবের যে কোন একটি গ্রহণের ইখতিয়ার [স্বাধীনতা] দিলেনঃ [১] হয় আমার উম্মাতের অর্ধেক সংখ্যক ব্যক্তি জান্নাতে প্রবেশ করিবে অথবা [২] আমার সুপারিশের সুযোগ থাকিবে। আমি সুপারিশ করাকেই বেছে নিলাম। আর তা হইবে সেই সকল ব্যক্তির জন্য যে সকল ব্যক্তি আল্লাহ্ তাআলার সাথে কোন শরীক না করে মৃত্যুবরণ করেছে।

সহীহ, ইবনি মা-জাহ [৪৩১৭]। এ হাদীসটি আবুল মালীহ [রাহঃ] হইতে অপর এক সাহাবীর বরাতে রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ] হইতে বর্ণিত আছে। এই সূত্রে আওফ ইবনি মালিক [রাদি.]-এর উল্লেখ নেই। হাদীসটিতে আরো বিস্তৃত বিবরণ আছে। উপরোক্ত হাদীসের ন্যায় হাদীস কুতাইবা-আবু আওয়ানা হইতে, তিনি কাতাদা হইতে, তিনি আবুল মালীহ হইতে, তিনি আওফ ইবনি মালিক [রাদি.] হইতে, তিনি রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ] হইতে এই সূত্রে বর্ণনা করিয়াছেন। কিয়ামতের আলামত সম্পর্কিত হাদিস – এই হাদীসটির তাহকিকঃ সহীহ হাদীস

Comments

Leave a Reply