কিতাবুল ফিতনা – মুসান্নাফ ইবনে আবি শায়বা

কিতাবুল ফিতনা – মুসান্নাফ ইবনে আবি শায়বা

৩৭১১৯-৩৭১১২. আব্দুর রহমান বিন আবদু রাব্বিল কাবা বলিয়াছেন:

আমি আব্দুল্লাহ বিন উমর রাদি. এর কাছে এলাম, উনি কাবার ছায়ায় বসে ছিলেন
উনার চারদিকে অনেক মানুষ জমেছিলো। 

একবার আমরা রসুলুল্লাহ ﷺ এর সংগে সফরে ছিলাম. একটা মনজিলে থামার পরে, আমাদের মাঝে কেউ তাবু টাংগানো আরম্ভ করলো, কেউ তীর চালনা প্রতিযোগিতা আরম্ভ করলো, কেউ বা জন্তুগুলো নিয়ে দৌড় আরম্ভ করলো।

এই অবস্থায় একজন ডাক দিলেন, “আসসালাতু জামিয়া”। আমরা শুনে সবাই একত্রিত হলাম। তখন রসুলুল্লাহ ﷺ বলিলেন, আমার আগের সব নাবী উম্মতদের বলে দিয়ে গিয়েছেন কোনটা তাহাদের জন্য ভালো, আর কোনটা তাহাদের জন্য খারাপ। এটা জানানো ছিলো তাহাদের উপর আল্লাহর হক।

এই উম্মতের প্রথম যুগের মানুষেদের সঠিক পথে রাখা হইবে। আর শেষ যুগের মানুষদের উপর বিপদাপদ এবং তারা যা অপছন্দ করে সেগুলো আসিবে। এর পর ফিতনা এত বাড়বে যে মুমিন বলবেন “এটাতে আমি ধ্বংশ হইয়া যাবো” এর পর ফিতনা চলে যাবে।
এর পর ফিতনার আবার বাড়বে। মুমিন বলবে “না, বরং এবার।”

তোমাদের মাঝে যে চায় আগুন থেকে বাচতে এবং জান্নাতে প্রবেশ করিতে, সে যেন আল্লাহ আর আখিরাতের উপর বিশ্বাস রেখে মৃত্যু বরন করে। এবং নিজে যেটা পেতে পছন্দ করে, সেটা যেন মানুষের জন্য পছন্দ করে।

যে লোক কোনো ইমামকে বায়াত দিলো তার হাত ও অন্তর দিয়ে, সে যেন তার আদেশ পালন করে যতটুকু পারে। এবং অন্য কেউ এসে চ্যলেঞ্জ করলে তোমরা তার ঘাড়ে আঘাত করিবে।” আমি মানুষের মাঝ থেকে মাথা বের করে জিজ্ঞাসা করিলাম, “আমি আল্লাহ নামে জিজ্ঞাসা করছি। আপনি কি এটা রসুলুল্লাহ ﷺ থেকে শুনেছেন?”

উনি উনার দু হাত দিয়ে উনার কান দেখালেন এবং বলিলেন, “আমি এই দুই কান দিয়ে শুনেছি এবং অন্তর দিয়ে খেয়াল করেছি।”

আমি বলিলাম, “আমি হলাম আপনার চাচার ছেলে। আমাদের বলুন নিজেদের মাল অবৈধ ভাবে খাওয়া আর নিজেদের হত্যা না করার ব্যপারে। যেমন আল্লাহ বলিয়াছেন — তোমরা তোমাদের মাল নিজেরা অবৈধ ভাবে ভোগ করো না, এবং ভোগ করার জন্য বিচারকের কাছে নিয়ে যেও না…” সুরা বাকার ১৮৮ নং আয়াত তিলওয়াত করিলেন শেষ পর্যন্ত।

উনি দুই হাত একত্র করিলেন এবং মুখের উপর রাখিলেন। এর পর হাত কিছুটা নামিয়ে বলিলেন: “আল্লাহর অনুসরনের ক্ষেত্রে তাহাদের বাধ্য হইবে। আর আল্লাহর অবাধ্যতার ক্ষেত্রে তাহাদের অবাধ্য হইবে।”

আব্দুল্লাহ বিন উমার রাদি. রসুলুল্লাহ ﷺ থেকেও একই কথা বর্ননা করিয়াছেন। তিনি যোগ করিয়াছেন “এই উম্মতের শেষ যুগে একের পর এক ফিতনা দেখা যাবে যার পরেরটা আগেরটার থেকে বড় হইবে।”

৩৭১১৩. খালিদ বিন সুবাই বা সুবাই বিন খালিদ বলিয়াছেন:

আমি কুফায় আসিলাম। সেখানে অনেক বাহনের ডাক শুনতে পারলাম। আমি কুফার মসজিদে গেলাম। একজন লোক আসলেন এবং সমস্ত লোক উনার চারদিকে জমে গেলেন।

আমি জিজ্ঞাসা করিলাম: উনি কে?
জবাব দিলো: হুজাইফা বিন ইয়ামান।

আমি উনার পাশে বসে পড়লাম। উনি বলিলেন:
মানুষজনেরা নাবী ﷺ কে ভালো জিনিষ সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করিতেন। আমি জিজ্ঞাসা করতাম খারাপ সম্পর্কে।

আমি জিজ্ঞাসা করেছিলাম:
: ইয়া রসুলুল্লাহ, দেখছেন আমরা এখন যে ভালোর মাঝে আছি। এর আগে কি খারাপ ছিলো? আর এর পরে কি খারাপ আসিবে?
উনি ﷺ বলিলেন:
: হ্যা।
: এর থেকে রক্ষা কিসে?
: তলোয়ারে।
: ইয়া রসুলুল্লাহ ﷺ, তলোয়ারের পরে কি কিছু বাকি থাকিবে?
: হ্যা। এর পর সন্ধি।
: সন্ধির পরে?
: বিশৃংখলার দিকে ডাক দেয়া হইবে। যদি তুমি তখন কোনো খলিফাকে দেখো, তবে তার আনুগত্য করিবে। যদিও সে তোমার পিঠে বেত্রাঘাত করে, আর তোমার মাল কেড়ে নেয়। আর যদি খলিফা না থাকে, তবে পালাও যতক্ষন না তোমার মউত আসে এই অবস্থায় যে তুমি গাছ কামড়ে ধরে আছো।
: ইয়া রসুলুল্লাহ ﷺ এর পর কি হইবে?
: দাজ্জাল বের হইবে।
: ইয়া রসুলুল্লাহ ﷺ, দাজ্জাল কি নিয়ে আসিবে?
: সে আসিবে আগুন আর ঝর্না নিয়ে। যে তার আগুনে পড়বে সে পুরস্কার পাবে, তার গুনাহ কমে যাবে। যে তার ঝর্নায় পড়বে, তার পুরস্কার কমে যাবে, সে গুনাহ পাবে।
: ইয়া রসুলুল্লাহ ﷺ, দাজ্জালের পর কি?
: তোমাদের কোন একজন ঘোড়ায় জিন চড়িয়ে তাতে উঠার সময় পাবে না, কিয়ামত চলে আসিবে।

৩৭১১৪

হুজাইফা রাদি. বলিয়াছেন:
রসুলুল্লাহ ﷺ কে মানুষ ভালো জিনিষ নিয়ে জিজ্ঞাসা করিতেন। আমি খারাপ জিনিষ নিয়ে জিজ্ঞাসা করতাম। ভালো গুলো সম্পর্কে {মানুষদের কাছ থেকে} জেনে নিতাম যেগুলো শুনিনি।

আমি জিজ্ঞাসা করিলাম: ইয়া রসুলুল্লাহ এই ভালোর পরে কি কোনো মন্দ আসিবে?”
উনি ﷺ জবাব দিলেন, “হ্যা হুজাইফা! আল্লাহর কিতাব, এতে যা আছে তা অনুসরন করিবে।”

আমি এটা তিন বার জিজ্ঞাসা করেছিলাম।

আমি জিজ্ঞাসা করিলাম: “ইয়া রসুলুল্লাহ এই ভালোর পরে কি কোনো মন্দ আসিবে?”
উনি ﷺ জবাব দিলেন, “ফিতনা আর খারাপ”
: ঐ খারাপের পর কি ভালো আসিবে?
: হ্যা, হুজাইফা! আল্লাহর কিতাব, এতে যা আছে তা অনুসরন করিবে।” তিনবার বলিলেন।

আমি জিজ্ঞাসা করিলাম: “ইয়া রসুলুল্লাহ এই ভালোর পরে কি কোনো মন্দ আসিবে?”
জবাব দিলেন, “অন্ধ আর বধির ফিতনা। তখন {কিছু লোক} মানুষকে জাহান্নামের দরজার দিকে ডাকবে। হুজাইফা! তুমি যদি গাছের শেকড় কামড় দেয়া অবস্থায় মরেও যাও তবে সেটা তোমার জন্য ভালো, ঐ লোকদের কাউকে অনুসরন করা থেকে।

৩৭১১৫

আব্দুল্লাহ বিন আমর রাদি. বলিয়াছেন,
আমরা একসময় রসুলুল্লাহ ﷺ এর চারদিকে বসা ছিলাম।
উনি ﷺ ফিতনার কথা আলোচনা করিলেন বা অন্য কেউ প্রসংগ তুললো।
তিনি ﷺ বলিলেন,

: যখন দেখবে মানুষ তাহাদের ওয়াদা ভঙ্গ করছে,
আমানত খিয়ানত করছে,
এবং এই রকম হইয়া গিয়েছে
বলে উনি উনার আংগুলগুলো একে অন্যটার ভেতর ঢুকালেন।

তখন আমি দাড়িয়ে উনাকে জিজ্ঞাসা করিলাম,
: ঐ সময়ে আমি কি করবো? আল্লাহ আমাকে আপনার মুক্তিপন বানান।

উনি ﷺ আমাকে বলিলেন,
: তখন নিজের বাসায় থাকিবে,
নিজের জিহ্বাকে সংযত রাখিবে,
যেটা জানো সেটা গ্রহন করিবে,
যেটা খারাপ জানো,  সেটা পরিত্যাগ  করিবে,
তোমার দায়িত্ব শুধু তোমার নিজের বিষয় দেখা,
আর জনসাধারনের কাজ পরিত্যাগ করিবে। 

৩৭১১৬

আবু সাইদ রাদি. বলিয়াছেন,
রসুলুল্লাহ ﷺ বলিয়াছেন,
এটা হইতে যাচ্ছে যে কোনো মুসলিমের উত্তম সম্পদ হইবে ভেড়া যেটা নিয়ে সে ভালো লাগা কোনো পাহাড়ে চলে যাবে যেখানে বৃস্টি পড়ে। তার দ্বীন নিয়ে ফিতনা থেকে পলানোর জন্য।

৩৭১১৭ঃ

হুজাইর বিন রাবী বলিয়াছেন:
ইমরান বিন হুসাইন আমাকে বলিলেন,
তোমার কওম এসেছিলো, এর পর এই বিষয়ে কম করিতে তাহাদের নিষেধ করা হইয়াছিলো।

আমি বলিলাম,
আমি তাহাদের মাঝে থাকি, তবে তাহাদের অনুসারি না।

উনি বলিলেন,
তাহলে আমার পক্ষ থেকে তাহাদের জানিয়ে দিও যে, এক জন হাবশি গোলাম হইয়া পাহাড়ের চুড়ায় ছাগল পালন করা যতক্ষন না আমার মৃত্যু আসে, আমার কাছে বেশি প্রিয়, কোনো কাতারে ভুল কোনো তীর নিক্ষেপ বা আঘাত করার থেকে।

৩৭১১৮

হুজাইফা রাদি. বলিয়াছেন,
ফিতনা হইবে।
থামবে, আবার আরম্ভ হইবে।
তুমি যদি এটা থেমে থাকার সময়ে মরে যেতে পারো, তবে তাই করো।

৩৭১১৯

আব্দুল্লাহ বিন আমর রাদি. বলিয়াছেন,
ফিতনা দেখা দিবে। আরবদের উপর ফোটায় ফোটায় পড়বে।
সে সময় কতলকারী জাহান্নামে যাবে।
সে সময় জিহ্বা, তলোয়ারের আঘাত থেকেও প্রচন্ড হইবে।

৩৭১২০

আবি মুসা রাদি. বলিয়াছেন,
উনি ﷺ আমাদেরকে খুতবা দিলেন এবং বলিলেন,
সাবধান! তোমাদের পেছনে আধার রাত্রির টুকরার মত ফিতনা আছে।
তখন এক লোক সকালে মুমিন থাকিবে তো সন্ধায় কাফির হইবে।
সন্ধায় কাফির থাকলে সকালে মুমিন হইবে।
ঐ সময়ে বসে থাকা লোক দাড়ানো লোকের থেকে ভালো।
দাড়ানো লোক হেটে চলা লোকের থেকে ভালো।
হেটে চলা লোক আরোহী থেকে ভালো।

লোকেরা জিজ্ঞাসা করলো:
আমাদের কি করিতে বলেন?

উনি ﷺ বলিলেন,
বাসায় বসে থাকিবে।

৩৭১২১

মুজাহিদ রাদি. বলিয়াছেন,
রসুলুল্লাহ ﷺ বলিয়াছেন,
কিয়ামতের আগে রাতের আধার টুকরার মত ফিতনা দেখা দিবে।
সকালে এক জন মুমিন থাকিবে, তো সন্ধায় সে কাফির হইয়া যাবে।
সন্ধায় মুমিন থাকিবে, তো সকালে কাফির হইয়া যাবে।
মানুষ তার দ্বীনকে দুনিয়ার মালের বিনিময়ে বিক্রি করে দেবে।

৩৭১২২

হুজাইফা রাদি. বর্ননা করিয়াছেন আবি মুসা রাদি. থেকে:
নাবী ﷺ বলিয়াছেন:
তোমাদের ধনুক ভেঙ্গে ফেলো, অর্থাৎ ফিতনার সময়।
আর ধনুকের তারগুলো কেটে ফেলো।
আর নিজেদেরকে বাসায় আবদ্ধ করে ফেলো।
এবং সে সময় আদমের সন্তানদের মাঝে উত্তম জনের মত হইয়া যাও।

৩৭১২৩

আবু জর রাদি. বলিয়াছেন,
রসুলুল্লাহ ﷺ আমাকে বলিয়াছেন
: হে আবু যর। যখন তুমি দেখবে মানুষ একে অন্যকে কতল করছে এমন কি “হিজারাতু জাইত” পর্যন্ত রক্তে ডুবে গিয়েছে তখন তুমি কি করিবে?
: আল্লাহ আর উনার রাসুল ভালো জানেন।
: তুমি নিজের বাসায় ঢুকে যাবে।
: আমি কি অস্ত্র বহন করবো না?
: যদি এটা তোমার বিষয় হয়।
: তখন আমি কি করবো, ইয়া রসুলুল্লাহ ﷺ ?
: যদি ভয় পাও সূর্যরশ্মি তোমাকে পরাজিত করছে তবে তোমার জামার অংশ দিয়ে মুখ ঢেকে ফেলবে। সে তোমার আর তার নিজের পাপের বোঝা নেবে।

৩৭১২৪

আবি মুসা রাদি. বলিয়াছেন:
রসুলুল্লাহ ﷺ বলিয়াছেন:
তোমাদের পরে এমন দিন আসিবে যখন অজ্ঞতা নেমে আসিবে। ইলম তুলে নেয়া হইবে। আর হারজ বেড়ে যাবে।

সবাই জিজ্ঞাসা করলো:
ইয়া রসুলুল্লাহ ﷺ, হারজ কি?

উনি ﷺ বলিলেন:
কতল করা।

৩৭১২৫

হুজাইফা রাদি. বলিয়াছেন:

আধার রাত্রির টুকরার মত তোমাদের উপর ফিতনা আসিবে। তাতে ধ্বংশ হইয়া যাবে প্রত্যেক সাহসী বীর, প্রত্যেক স্থির সাওয়ারী আর প্রত্যেক দক্ষ বক্তা।

৩৭১২৬

কুরযি বিন আলকামা আল-খুজাই বলিয়াছেন:
এক লোক বলিলেন:
ইয়া রসুলুল্লাহ ﷺ, ইসলামের কি সমাপ্তি আছে?

উনি ﷺ বলিলেন,
: হ্যা। যখন আল্লাহ তায়ালা কোনো আরব বা অনারব কোনো পরিবারের ভালো চান তখন উনি তাহাদের ইসলামে প্রবেশ করান।
: এর পর?
: এর পর ফিতনা যেটা ছায়ার মত ঢেকে ফেলবে। সে সময়ে সিংহরা গড়িয়ে পড়ে যাবে। তোমাদের এক দল অন্য দলের গলায় আঘাত করিবে।

সিংহ হলো: জীবিত লোক যারা জেগে উঠবে, এর পর আবার গড়িয়ে পড়বে।

৩৭১২৭

আসমা রাদি. বলিয়াছেন,
রসুলুল্লাহ ﷺ একবার মদিনার উচু ঘরগুলোর মাঝে একটা উচু ঘরে দাড়ালেন এবং বলিলেন,
তোমরা কি দেখছো যা আমি দেখছি?
আমি ফিতনার দেখছি তোমাদের বাসাগুলোর মাঝ দিয়ে পড়ছে, যেমন করে বৃস্টি ঐ জায়গায় পড়ে।

৩৭১২৮

আউফ বলিয়াছেন আবু মিনহাল সাইয়ার বিন সালামা থেকে:
যে সময়ে ইবনু জিয়াদ বেরুলেন তখন
সিরিয়ায় মারওয়ান উঠে দাড়ালেন
মক্কায় ইবনু জুবাইর উঠে দাড়ালেন
বসরায় দুনিয়া ত্যগিরা দাড়িয়ে গেলেন।

তখন আমার পিতা প্রচন্ড দুশ্চিন্তায় পড়ে গেলেন।
উনার বেশ প্রসংসা ছিলো ঐ সময়ে।

আমার পিতা আমাকে বলিলেন:
হে আমার ছেলে, আমার সাথে চলো। আমরা রসুলুল্লাহ ﷺ এর এক সাহাবির কাছে যাবো।

এর পর আমরা আবি বারযাহ আল-আসলামি রাদি. এর কাছে গেলাম প্রচন্ড এক গরম দিনে।

উনি আখের ছালের তৈরি একটা কিছুর ছায়ায় বসে ছিলেন।
আমার আব্বা উনাকে পেয়ে উনার সাথে কথপোকথন আরম্ভ করিলেন,

এটা দিয়ে কথা আরম্ভ করিলেন।
: হে আবি বারযাহ! আপনি দেখছেন না? দেখছেন না?

উনি বলিলেন,
: আমি কুরাইশদের কাজকর্মের উপর অসন্তুস্ট।
তোমরা আরব জাতীরা কিরকম জাহিলিয়াত আর অধ্বঃপতনে ছিলে সেটা তোমরা জানো।
আল্লাহ তোমাদের ইসলাম দিয়ে তুলে এনেছে, আর মুহাম্মদ ﷺ কে দিয়েছেন যিনি তোমাদের কাছে কি নিয়ে এসেছেন দেখেছো।
আর এই দুনিয়া তোমাদের মাঝে ফাসাদ {ঝগড়া} সৃস্টি করছে।
এবং শামে একই অবস্থা — মানে মারওয়ান।
ওয়াল্লাহ! দুনিয়ার কারন ছাড়া যুদ্ধ করছে না।
এবং মক্কাতেও একই অবস্থা — মানে ইবন জুবাইর।
ওয়াল্লাহ! দুনিয়ার কারন ছাড়া যুদ্ধ করছে না।
একই অবস্থা তোমাদের আশেপাশে যারা আছে তাহাদেরও, যাদের তোমরা দুনিয়া ত্যগি ডাকো।
ওয়াল্লাহ! তারা দুনিয়ার কারন ছাড়া যুদ্ধ করছে না।

যখন উনি কারো পক্ষে বলিলেন না তখন আমার পিতা উনাকে জিজ্ঞাসা করিলেন,
: হে আবি বারজাহ! তাহলে আপনার মত কি?

উনি বলিলেন,
: দুনিয়া ত্যগিদের ভালোগুলো এখন আর দেখা যায় না।
যাদের পেটে মানুষের মাল নেই।
যাদের গায়ে অন্যের রক্ত নেই।

৩৭১২৯

শাকিক বলিয়াছেন:
হুজাইফা রাদি. বলিয়াছেন:
আমরা ওমর রাদি. এর সাথে বসে ছিলাম। উনি জিজ্ঞাসা করিলেন:
“তোমাদের মাঝে কে রসুলুল্লাহ ﷺ এর ফিতনা সম্পর্কিত হাদিস মুখস্ত করে রেখেছো যেভাবে উনি বলেছিলেন?”

বলিলাম, “আমি।”

: তুমি তো দুঃসাহসী। কিভাবে?

: আমি শুনেছি রসুলুল্লাহ ﷺ বলিয়াছেন: একজন মানুষের ফিতনা হলো তার পরিবার, তার মাল, সে নিজে, তার সন্তান আর তার প্রতিবেশি। এর ক্ষমা হলো রোজা আর সদকা।

: আমি এটা জানতে চাইনি। আমি জানতে চাইছি ওটা সম্পর্কে যেটার ঢেউ হইবে সমূদ্রের ঢেউয়ের মত।

: তাতে আপনার আর তার কি আমিরুল মুমিনিন? আপনার আর তার মাঝে একটা দরজা আছে, বন্ধ।

: দরজাটা কি ভাঙ্গা হইবে নাকি খুলা হইবে?

: না। বরং ভাঙ্গা হইবে।

: সেটা হলে, চেস্টা করলেও সেই দরজা আর কখনো বন্ধ করিতে পারবে না।

আমরা হুজাইফা রাদি. কে জিজ্ঞাসা করিলাম,
: ওমর রাদি. কি জানতেন দরজাটা কে?

: হ্যা। যে রকম আমি জানি রাতের পরে দিন। আমি উনাকে এমন হাদিস বর্ননা করেছি যেটাতে প্রশ্ন তোলার মত কিছু ছিলো না।

শাকিক বলিয়াছেন:
আমরা ভয় পেলাম হুজাইফা রাদি. কে জিজ্ঞাসা করিতে, ঐ দরজাটা আসলে কে? তাই আমরা মাসরুককে বলিলাম, আপনি বরং উনাকে জিজ্ঞাসা করেন।

উনি জিজ্ঞাসা করিলেন।

হুজাইফা রাদি. জবাব দিলেন: “ওমর।”

৩৭১৩০

হুজাইফা রাদি. বলিয়াছেন:
চাবুকের ফিতনা হইবে তলোয়ারের ফিতনা থেকেও প্রচন্ড।

জিজ্ঞাসা করা হলো:
কিভাবে?

বলিলেন:
মানুষকে চাবুক দিয়ে মারা হইবে যতক্ষন না সে কাঠের তক্তায় আরোহন করে।

৩৭১৩১

সাইদ বিন যাইদ রাদি. বলিয়াছেন:
আমরা নাবী ﷺ এর সংগে বসে ছিলাম।
উনি ফিতনার কথা আলোচনা করিলেন এবং ঐ সময়ের বিপদের প্রচন্ডতা বর্ননা করিলেন।

আমরা বলিলাম:
ইয়া রসুলুল্লাহ ﷺ, যদি এটা আমরা পাই তাহলে এটা তো আমাদের ধংশ করে দেবে।

উনি বলিলেন:
না! বরং, কতল হইয়া যাওয়া তোমাদের জন্য যথেষ্ট।

সাইদ রাদি. বলিয়াছেন:
আমি দেখেছি আমার ভাইদের কতল হইয়া যেতে।

৩৭১৩২

হুজাইফা রাদি. বলিয়াছেন:
তিনটা ফিতনা হইবে। চতুর্থটা দাজ্জালের দিকে নিয়ে যাবে।
তখন কালো পাথর ছুড়ে মারা হইবে। এবং অগ্নি পাথর ছুড়ে মারা হইবে।
ঢেউয়ের মত অন্ধকার আসিবে। সমুদ্রের ঢেউয়ের মত।

৩৭১৩৩

হুজাইফা রাদি. বলিয়াছেন,
রসুলুল্লাহ সা: বলিয়াছেন,

ফিতনা দেখা দিবে
অন্ধ ও বধির হইয়া যাওয়া মানুষদের জাহান্নামের দরজার দিকে ডাকা হইবে।

হুজাইফা! তুমি যদি গাছের শেকড় কামড় দেয়া অবস্থায় মরেও যাও তবে সেটা তোমার জন্য ভালো, ঐ লোকদের কাউকে অনুসরন করা থেকে।

৩৭১৩৪

এক ব্যক্তি হুজাইফা রাদি. কে জিজ্ঞাসা করলো,
: যখন মুসুল্লিদের কতল করা হইবে তখন আমি কি করবো?
: নিজের বাসায় ঢুকে যাবে।
: সে যদি আমার বাসায় ঢুকে পড়ে তখন কি করবো?
: বলে দিবে, আমি তোমাকে হত্যা করবো না, আমি রাব্বুল আলামিন আল্লাহকে ভয় করি।

৩৭১৩৫

হুজাইফা রাদি. বলিয়াছেন:
তিনটা জিনিস দিয়ে ফিতনা বাড়বে।

এমন লোকের হাতে রক্তপাত বৃদ্ধির কারনে, যে ফিতনা বাড়ুক সেটা চায় না, বরং তলোয়ার দ্বারা কমাতে চায়।
এমন খতিবের কারনে যে সবকিছু নিজের দিকে ডাকে।
এবং প্রশংসিত শরিফ লোকের কারনে।

এর পর রক্তপাত যখন বেড়ে যাবে, তখন সেটা তাহাদেরকে ফেলে দেবে।
এরপর তাহাদেরকে উপড়ে ফেলবে এবং তাহাদের নিকট যা ছিলো সেটা তাহাদের ক্ষতি করিবে।

৩৭১৩৬

হুজাইফা রাদি. বলিয়াছেন:
: তখন তোমাদের কি অবস্থা হইবে যখন উট তার লাগাম সহ এসে তোমাদের মাঝে হাটু গেড়ে বসবে, এবং তোমাদের কাছে এখান থেকে, ওখান থেকে লোকেরা আসিবে?

: ওয়াল্লাহ আমরা জানি না।

: তবে ওয়াল্লাহ। আমি জানি। তোমারা তখন গোলাম আর তার মালিকের মত হইয়া যাবে। মালিক গোলামকে ধমক দিলেও গোলাম পাল্টা ধমক দেয় না। আর পিটালেও গোলাম পাল্টা পিটায় না।

৩৭১৩৭

হুজাইফা রাদি. লোকদের বলিয়াছেন,
: তখন তোমাদের কি অবস্থা হইবে যখন তোমরা দ্বীনের ব্যপারে এরকম উদার হইয়া যাবে, যেমন এক মহিলা কবুল বলার পর উদার হইয়া যায়। তার কাছে যে আসে তাকে মানা করে না?

: আমরা জানি না।

: কিন্তু ওয়াল্লাহ! আমি জানি। তোমরা সেদিন থাকিবে অক্ষম আর অসৎ হবার মাঝে।

ঐ কওম থেকে এক লোক বলিলেন,

: এর অক্ষমতাকে ঘৃনা করে তা থেকে দূরে থাকতে হইবে।

হুজাইফা রাদি. তখন ঐ লোকের গায়ে কয়েকবার আঘাত করিলেন। এর পর বলিলেন,

: যেভাবে তুমি এ থেকে দূরে থাকলে। যেভাবে তুমি এ থেকে দূরে থাকলে।

৩৭১৩৮

খারাশাহ বলিয়াছেন:
হুজাইফা রাদি. একবার মসজিদে ঢুকলেন।
দেখলেন এক কওমের কিছু লোক অন্য লোককে পড়াচ্ছেন।
বলিলেন,
: তোমরা যদি পথের উপর থাকতে! তোমরা অনেক দূরের জিনিষকে জরুরী বানিয়ে ফেলেছো।

এর পর উনি রাদি. তাহাদের সাথে বসলেন এবং বলিলেন,
: আমরা ছিলাম সেই কওম যারা পড়া শেখার আগে ঈমান এনেছি। শিগ্রই এমন কওম আসিবে যারা ঈমান আনার আগে পড়া শিখবে।

ঐ কওম থেকে একজন বলিলেন,
: এটা ফিতনা?

উনি বলিলেন,
: দ্রুতই, তোমাদের সামনে থেকে কিছু এসে তোমাদের চেহারাকে অপরাধি করে দিবে। এর পর অনবরত আসতে থাকিবে আসতে থাকিবে। লোকজন ফিরে গিয়ে পরামর্শ নেবে এমন দুব্যক্তি থেকে, তাহাদের একজন অথর্ব, অন্যজন অসৎ।

খারাশাহ বলিলেন,
: এর পর কিছু সময় যায় নি। আমি দেখলাম লোকটা তার তলোয়ার নিয়ে বেরিয়ে মানুষকে পর্যবেক্ষন করছে।

৩৭১৩৯

যাইদ বিন ওয়াহাব বলিয়াছেন:
হুজাইফা রাদি. কে প্রশ্ন করা হলো:
ফিতনা “আরম্ভ হওয়া” আর “থেমে যাওয়া” মানে কি?

বলিলেন:
আরম্ভ হওয়া মানে তলোয়ারকে খাপমুক্ত করা।
থেমে যাওয়া মানে সেটাকে কোষবদ্ধ করা।

৩৭১৪০

আবি আল-তাফাইল আমির বিন ওয়াথিলা বলিয়াছেন:
হুজাইফা রাদি. আমাকে জিজ্ঞাসা করিলেন,
: তোমার কি অবস্থা হইবে যখন ফিতনা দেখা দেবে — যাদের চাহিদা নেই এবং নিজেদেরকে গোপন রাখে — এরকম উত্তম মানুষদের মাঝে?

: আর কেমন? একে একে এটা আমাদের সামনে পরিবেশন করা হইবে। প্রত্যেক বিচ্ছিন্ন লোককে এটা বিচ্ছিন্ন করে দেবে। প্রতিটা লক্ষ্যেকে কেন্দ্র করে ছুড়ে মারা হইবে।

: তুমি তখন সদ্যজাত শিশুর মত হইয়া যাবে
সে চড়ে বসে না, তাকে বহন করা হয়।
সে দুধ খায় না, তাকে খাওয়ানো হয়।

৩৭১৪১

হুজাইফা রাদি. বলিয়াছেন,
ফিতনা আসিবে।
তখন সন্দেহ জনক বিষয় বাড়বে, পরিস্কার বিষয় চলে যাবে।
তখন ঐ বেদুইন সম্মানিত হইবে, যে লাঠিতে ভর করে তার ভেড়ার পেছনে থাকিবে।
এবং সে তোমাদের স্রোতের সাথে চলবে না।

৩৭১৪২

হুজাইফা রাদি. কে জিজ্ঞাসা করা হলো,
: বনি ইসরাইল কি একদিনেই কুফরিতে চলে গিয়েছিলো?

বলিলেন,
: না। বরং তাহাদের উপর ফিতনা আসে। তারা এতে পড়ে যায়।
কিন্তু ফিতনাকে তারা খারাপ বুঝতে পারে।

এর পর আবার ফিতনা আসে, এতে আবার পড়ে যায়।
এভাবে,
এক পর্যায়ে তারা চাবুক আর তলোয়ার নিয়ে ঝাপিয়ে পড়ে।
এক পর্যায়ে তারা সাওয়ারী নিয়ে ঝাপিয়ে পড়ে।
এক পর্যায়ে তারা জানা জিনিস ভুলে যায়।
এবং খারাপকে আর খারাপ বুঝতে পারে না।

৩৭১৪৩

রিবয়ি বলিয়াছেন:
আমি শুনেছি হুজাইফা রাদি. এর জানাজায় এক লোক বলিয়াছেন:
আমি এই খাটিয়ার লোকের কাছে শুনেছি উনি বলিয়াছেন:
আমার সামান্য কস্টও নেই।
কারন আমি রসুলুল্লাহ ﷺ এর কাছে শুনেছি,
: তোমাদের যদি হত্যা করা হয়, তবে তোমরা আমার ঘরে প্রবেশ করিবে। তাই, তারা যদি আমার ঘরে প্রবেশ করে তবে আমি তাহাদেরকে বলবো: আসো! আমার আর তোমার গুনাহ নিয়ে ফিরে যাও।

৩৭১৪৪

হুজাইফা রাদি. বলিয়াছেন:
যে জামাত থেকে এক হাত দূরে চলে গেলো সে যেনো ইসলাম থেকে দূরে চলে গেলো।

৩৭১৪৫

হুজাইফা রাদি. বলিয়াছেন,
মানুষের উপর এমন যুগ আসিবে, ডুবন্ত মানুষের মত যে দোয়া করছে, সে ছাড়া আর কেউ তখন বাচতে পারবে না।

৩৭১৪৬

হুজাইফা রাদি. বলিয়াছেন:
মানুষের উপর এমন একটা যুগ আসিবে যখন কেউ রক্ষা পাবে না, সে ছাড়া যে দোয়া করছে, ডুবন্ত মানুষের দোয়ার মত।

৩৭১৪৭

হুজাইফা রাদি. বলিয়াছেন:
ওয়াল্লাহ! এক জন সকাল অতিবাহিত করিবে দৃস্টি ক্ষমতা নিয়ে। এর পর সন্ধায় সে থাকিবে অন্ধ।

৩৭১৪৮

হুজাইফা রাদি. সুরা তৌবার ১২ নং আয়াত পাঠ করিলেন,
অর্থ: আর যদি ভঙ্গ করে তারা তাহাদের শপথ প্রতিশ্রুতির পর এবং বিদ্রুপ করে তোমাদের দ্বীন সম্পর্কে, তবে কুফর প্রধানদের সাথে যুদ্ধ কর। কারণ, এদের কেন শপথ নেই যাতে তারা ফিরে আসে

এর পর বলিলেন,
: পরবর্তিতে এই আয়াতে যাদের কথা আছে তাহাদের সাথে আর যুদ্ধ হয় নি।

৩৭১৪৯

মুহাম্মদ বিন মাসলামা রাদি. বলিয়াছেন:
রসুলুল্লাহ ﷺ আমাকে একটা তলোয়ার দিয়ে বলিলেন:

এটা দিয়ে তুমি মুশরিকদের কতল কর, যাদের কতল করা হয়।
আর যখন দেখবে মানুষদের একদল অন্যদলকে মারছে — বা এরকম কোনো কথা বলিলেন,
তখন এটা নিয়ে তুমি পাথরের কাছে চলে যাও এবং এটা দিয়ে পাথরের উপর মারতে থাকো যতক্ষন না এটা ভেঙ্গে যায়।

এর পর নিজেকে নিজের বাসায় আটকে রাখো যতক্ষন না তোমার কাছে খারাপ কোনো হাত আসে বা মৃত্যুর লিখনি চলে আসে।

৩৭১৫০

আবু সাইদ খুদরী রাদি. লোকদেরকে বলিয়াছেন,
: সাবধান! অন্ধ কতল আর জাহেলিয়াতের উপর মৃত্যু থেকে।
: অন্ধ কতল কি?
: যখন বলা হয় হে অমুকের লোক! হে অমুকের বংশ!
: আর জাহেলিয়াতের মৃত্যু কি?
: তুমি যদি মারা যাও এমন অবস্থায় যে তোমার কোনো ইমাম নেই।

৩৭১৫১

হাসান রাদি. বলিয়াছেন:
অন্ধ যুদ্ধে যে মারা যাবে, তার মৃত্যু জাহেলিয়াতের উপর হলো।

৩৭১৫২

আব্দুল্লাহ বিন আমর রাদি. বলিয়াছেন,
যখন উথমান রাদি. এর বিরোধিতায় মানুষ বিভক্ত হইয়া গেলো তখন আমার পিতা দাড়িয়ে গেলেন।
রাতে নামাজ পড়লেন।
এর পর ঘুমালেন।
তাকে বলা হলো,
: দাড়াও! আর আল্লার কাছে চাও যেন উনি তোমাকে ফিতনা থেকে রক্ষা করেন। যে ফিতনা থেকে উনি উনার নেক বান্দাদের রক্ষা করেন।

উনি দাড়ালেন।
এক সময় অসুস্থ হইয়া গেলেন।

 
মৃত্যু পর্যন্ত উনাকে আর বের হইতে দেখি নি।

৩৭১৫৩

আলী রাদি. বলিয়াছেন:
ইসলাম কমে যেতে থাকিবে।
এমন কি “আল্লাহ, আল্লাহ” বলার মত মানুষ থাকিবে না।
এ অবস্থা হলে দ্বীনের এক শীর্ষ নেতা দাড়িয়ে যাবে তার পাপ নিয়ে।
এর পর মানুষ বেরিয়ে তার চারিদিকে জড়ো হত থাকিবে যেভাবে শরৎ কালে মেঘ জমা হয়।
ওয়াল্লাহ! আমি তাহাদের আমিরের নাম জানি এবং তাহাদের ঘোড়ার জাতও জানি।

৩৭১৫৪

হুজাইফা রাদি. বলিয়াছেন,
যে জামাত থেকে এক হাত দূরে চলে গেলো, সে নিজের গলা থেকে ইসলামের বেড়িকে খুলে ফেললো।

৩৭১৫৫

আলী রাদি. বলিয়াছেন:
নেতৃত্ব হইবে কুরাইশ থেকে।
আর যে জামাত থেকে এক হাত দূরে চলে গেলো সে যেন নিজের ঘাড় থেকে ইসলামের বন্ধনকে খুলে ফেললো।

৩৭১৫৬

আব্দুল্লাহ রাদি. বলিয়াছেন,
: তখন তোমাদের কি অবস্থা হইবে যখন ফিতনার কাপড় তোমাদের পড়ানো হইবে?
অল্প বয়সীরা সে সময় সীমা ছাড়াবে, এবং বয়স্করা দুর্বল হইয়া পড়বে।
মানুষ এটাকে সুন্নাহ হিসাবে নিবে।
এর মাঝে কিছু পরিবর্তন করলে মানুষ বলবে, “তুমি সুন্নাহকে বদলাচ্ছো।”

লোকেরা জিজ্ঞাসা করলো,
: এটা কখন হইবে, আবি আব্দুর রহমান?

: যখন তোমাদের মাঝে লিখাপড়া জানা লোক বেড়ে যাবে কিন্তু বিশ্বস্ত লোক কমে যাবে।
যখন তোমাদের মাঝে নেতা বেড়ে যাবে কিন্তু ফকিহ কমে যাবে।
যখন তোমরা আখেরাতের আমল দ্বারা দুনিয়ার সন্ধান করিবে।

৩৭১৫৭

আলী রাদি. বলিয়াছেন,
এই উম্মার জন্য আল্লাহ তায়ালা পাচটি ফিতনা রেখেছেন।
সর্বসাধারনদের ফিতনা,
এর পর বিশেষ ব্যক্তিদের ফিতনা,
এর পর সর্বসাধারনদের ফিতনা,
এর পর বিশেষ ব্যক্তিদের ফিতনা,
এর পর ঢেউয়ের মত ফিতনা, সমূদ্রের ঢেউয়ের মত।
মানুষ তাতে সাতার কাটবে গরু-ছাগলের মত।

৩৭১৫৮

ইবনু আব্বাস রাদি. মিম্বরে দাড়িয়ে বলিয়াছেন:

যে জামাত থেকে এক হাত দূরে চলে গেলো এর পর মারা গেলো, সে জাহেলিয়াতের উপর মরলো।

৩৭১৫৯

জাইদ বিন উথাইয়ি বলিয়াছেন:
হুজাইফা রাদি. বলিয়াছেন,
: তোমরা তখন কি করিবে যখন তোমাদের কাছে অন্যে হক চাবে তখন তোমরা তাকে দিয়ে দেবে, কিন্তু তোমাদের হক তোমাদেরকে দিতে তারা আস্বিকার করিবে?

লোকেরা জবাব দিলো,
: আমরা সবর করবো।

হুজাইফা রাদি. বলিলেন,
: তোমরা প্রবেশ করেছো! কাবার রবের শপথ।

৩৭১৬০

হুজাইফা রাদি. এবং আবু মাসউদ রাদি. মসজিদে বসে ছিলেন। ঐ সময়ে কুফাবাসীরা সাইদ ইবনু আস রাদি. কে মাত্র বহিস্কার করেছে।

এক লোক উনাদের দুজনের কাছে আসলেন এবং জিজ্ঞাসা করিলেন,
: আপনাদের কি জিনিস আটকিয়ে রেখেছে? অথচ সমস্ত মানুষ বেরিয়ে পড়েছে! ওয়াল্লাহ আমরাই সুন্নাহর উপর আছি।

তারা জবাব দিলো,
: তোমরা কি করে সুন্নাহর উপর আছো, যেখানে তোমরা তোমাদের ইমামকে বহিস্কার করেছো? ওয়াল্লাহ তোমরা সুন্নাহর উপর নেই যতক্ষন না তোমাদের নেতারা দুঃখ প্রকাশ করে জনগনকে নসিহা করে।

: যদি নেতারা দুঃখ প্রকাশ না করে, এবং জনগনকে নসিহা না করে — তবে আমাদের কি বলেবেন?

: তবে আমরা বেরিয়ে যাবো, এবং তোমাদের বিদায় জানাবো।

৩৭১৬১

ইয়াজিদ বিন সুহাইব আল-ফকির বলিয়াছেন:
আমার কাছে এই কথা পৌছেছে যে, ফিতনার সময় যে তার তলোয়ারের অনুসরন করিবে সেই ভুলের মাঝে পড়ে গিয়ে আফসো করিবে এবং সে লাঞ্চিত হইবে।

৩৭১৬২

সুলাইমান বিন আমর বর্ননা করেছে উনার পিতা থেকে:
নাবী ﷺ বিদায়ী হজ্জে বলিয়াছেন,
: এটা কোন দিন?
তিন বার জিজ্ঞাসা করিলেন।

লোকেরা জবাব দিলো,
: বড় হজ্জের দিন।

: নিশ্চই, তোমাদের রক্ত, মাল, সম্মান হারাম, যেরকম হারাম তোমাদের এই দিন, তোমাদের এই মাসে, তোমাদের এই শহরে।

সাবধান! অপরাধির অপরাধের দায়িত্ব শুধু তার উপর। পিতার অপরাধের দায়িত্ব সন্তানের উপর না, আবার সন্তানের অপরাধের দায়িত্ব পিতার উপর না।

সাবধান! হে উম্মতেরা আমি কি তোমাদের কাছে পৌছেছি?

তারা বললো,
: হ্যা।

উনি ﷺ বলিলেন,

: হে আল্লাহ! সাক্ষি থাকিবেন।
তিন বার বলিলেন।

৩৭১৬৩

আদ্দা বিন খালিদ বিন হাওদাহ রাদি. বলিয়াছেন:
নাবী ﷺ এর সংগে আমি বিদায় হজ্জ করেছি। দেখেছি নাবী ﷺ দুটো বাহনের উপর দাড়িয়ে বলিয়াছেন,

: তোমরা জানো এটা কোন মাস? এটা কোন শহর?
তাহলে জেনে রাখো, তোমাদের রক্ত, তোমাদের মাল হারাম যেরকম হারাম তোমাদের এই দিন, তোমাদের এই মাসের মাঝে, তোমাদের এই শহরের মাঝে।

তোমাদের কাছে কি কথাটি পৌছেছি?

: হ্যা।

: হে আল্লাহ! আপনি সাক্ষি থাকেন।

৩৭১৬৪

আবু বকর রাদি. বলিয়াছেন,
রসুলুল্লাহ ﷺ আমাদের বলিয়াছেন,
: এটা কোন মাস?
: আল্লাহ ও উনার রাসুল ﷺ ভালো জানেন।
এর পর এত লম্বা সময় উনি চুপ করে থাকলেন, যে আমাদের ধারনা হলো উনি হয়তো নতুন কোনো নাম দিবেন।
এর পর উনি বলিলেন,

: এটা কি জিলহজ্জ মাস না?
: নিশ্চই।
: এটা কোন শহর?
: আল্লাহ ও উনার রাসুল ﷺ জানেন।
এর পর উনি আবার এত লম্বা সময় চুপ থাকলেন যে আমার ধারনা করিলাম উনি হয়তো নতুন কোনো নাম রাখিবেন।

এর পর বলিলেন,
: এটা কি হারাম শহর না?
: হ্যা।
: এটা কোন দিন?
: আল্লাহ ও উনার রাসুল ﷺ জানেন।
এর পর উনি আবার এত লম্বা সময় চুপ থাকলেন যে আমরা ধারনা করিলাম উনি হয়তো নতুন কোনো নাম রাখিবেন।

এর পর বলিলেন,
: এটা কি কোরবানীর দিন না?
: নিশ্চই, ইয়া রসুলুল্লাহ!
: তাহলে নিশ্চই তোমাদের রক্ত, তোমাদের মাল, তোমাদের সম্মান তোমাদের উপর হারাম যেরকম হারাম তোমাদের এই দিন, তোমাদের এই শহরে, তোমাদের এই মাসে। এর পর তোমাদের আমলের ব্যপারে তোমাদের জিজ্ঞাসা করা হইবে।

৩৭১৬৫

হযরত জাবের রাদি. বলিয়াছেন,
নাবী ﷺ হজ্জে বলিয়াছেন,
: তোমরা জানো কোন দিন সবচেয়ে বেশি হারাম?
আমরা বলিলাম,
: আমাদের এই দিনটি।

: কোন শহর সবচেয়ে বেশি হারাম?
: আমাদের এই শহর।

: কোন মাস সবচেয়ে বেশি হারাম?
: আমাদের এই মাস।

তখন রসুলুল্লাহ ﷺ বলিলেন,
: নিশ্চই তোমাদের রক্ত আর মালও হারাম, যেরকম হারাম তোমাদের এই দিন, তোমাদের এই শহরে, তোমাদের এই মাসে।

৩৭১৬৬

মুররাহ একজন সাহাবী থেকে শুনে বলিয়াছেন:
রসুলুল্লাহ ﷺ আমাদের মাঝে দাড়ালেন একটা বয়স্ক লাল উটনির উপর। এর পর বলিলেন,

: তোমরা কি জানো এটা তোমাদের কোন দিন? তোমরা কি জানো এটা তোমাদের কোন মাস? তোমরা কি জানো এটা তোমাদের কোন শহর?
নিশ্চই তোমাদের রক্ত, মাল তোমাদের উপর হারাম যেরকম হারাম এই এই দিন, এই শহরে, এই মাসে।

৩৭১৬৭

যাইদ বলিয়াছেন:
ইমুল যারআর দিনে হুজাইফা রাদি. কে কেউ বলিলেন,
: আপনিও কি মানুষদের সঙ্গে বের হইবেন না?

উনি বলিলেন,
: তাহাদের সাথে আমার বের হওয়ায় কি? আমি জেনেছি যে তাহাদের মাঝে সামান্য রক্তপাত হইবে না, যতক্ষন না তারা ফিরে আসে। তিনি ﷺ যারআর কথা বলিয়াছেন হাদিসে। অনেক হাদিসে।
আমি চাই না যে এর কিছু আমার গায়ে লাগুক, যা তোমাদের ঘরে আছে।
ফিতনার দিকে যে তাকিয়ে দেখবে তাকে ফিতনায় ধরবে।

৩৭১৬৮

হুজাইফা রাদি. বলিয়াছেন,
: আমার ইচ্ছে হয় আমার সাথে ১০০ জন লোক থাকিবে যাদের অন্তর হইবে স্বর্নের।
এর পর আমি একটা পাথরের উপর উঠে তাহাদেরকে হাদিস বর্ননা করবো যে এর পর তারা আর কখনো ফিতনায় পড়বে না।
এর পর অল্প অল্প করে আমি চলে যাবো। আমি আর তাহাদের দেখবো না, তারাও আমাকে দেখবে না।

৩৭১৬৯

হুজাইফা রাদি. বলিয়াছেন:
আমি যদি তোমাদের বলি যা আমি জানি, তবে তোমরা তিন ভাগে ভাগ হইয়া যাবে।

এক ভাগ আমাকে কতল করিবে।
এক ভাগ আমাকে কোনো সাহায্য করিবে না।
আর এক ভাগ আমাকে মিথ্যাবাদী বলবে।

৩৭১৭০

হুজাইফা রাদি. বলিয়াছেন,
এক লোকের বিজয়ে যদি উম্মাহ ময়লা হয়, তবে দুই লোক থাকে।
তাহাদের একজন আশাতীত করেন।
অন্যজন মুশকিলে পড়েন।
যিনি আশাতীত করিয়াছেন, উনি হলেন উমর রাদি.।
যিনি মুশকিলে পড়েছেন উনি হলেন আলী রাদি.।

৩৭১৭১

ইবনু হানাফীয়া রাদি. বলিয়াছেন:
আল্লাহ রহম করুন ঐ লোকের উপর যে
তার হাত গুটিয়ে রাখে,
জিহ্বাকে আটকিয়ে রাখে,
অন্তরকে চাহিদাশূন্য রাখে
নিজের ঘরে বসে থাকে
আর তার নিজ দায়িত্ব নিজের উপর।
সে কিয়ামতের দিন ঐ লোকদের সাথে থাকিবে, যাদেরকে ভালোবাসা হইবে।
সাবধান! মুমিনদের তলোয়ার তাহাদের দিকে সবচেয়ে দ্রুত আসে।
সাবধান! বিজয় হক্বের জন্য। আল্লাহ তায়ালা যখন চান দিবেন।

৩৭১৭২

সুনাবিহ রাদি. বলিয়াছেন,
আমি শুনেছি রসুলুল্লাহ ﷺ বলিয়াছেন,
: আমি তোমাদের আগে হাউজে থাকবো। আমি তোমাদের সংখ্যাধিক্য দেখে আনন্দিত হবো। আমার পরে তোমরা একে অন্যকে হত্যা করো না।

দ্বিতীয় একটা সুত্র থেকে একই হাদিস বর্নিত হইয়াছে।

৩৭১৭৪

আব্দুল্লাহ বিন ওমর রাদি. বলিয়াছেন,
রসুলুল্লাহ ﷺ বিদায় হজ্জে বলিয়াছেন,

সাবধান! আমার পরে তোমরা একে অন্যের ঘাড়ে আঘাত করে কুফরিতে ফিরে যেও না।

৩৫১৭৫

জারির বলিয়াছেন,
রসুলুল্লাহ ﷺ আমাকে বলিয়াছেন,
: মানুষ শান্ত হোক।
এর পর মানুষ শান্ত হলে বলিলেন,
: আমি তোমাদের আশংকা জানাচ্ছি যেটা আমি ভবিষ্যতে দেখছি। তোমরা আমার পরে কুফরিতে ফিরে যাবে। এক দল লোক অন্য দলের গলায় আঘাত করে।

৩৭১৭৬

আবা জুরআহ বিন আমর বিন জারির রাদি. বলিয়াছেন,
রসুলুল্লাহ ﷺ বিদায়ী হজ্জে বলিয়াছেন,
: হে মানুষ, চুপ করে মনোযোগ দিয়ে শুনো। আমার পরে তোমরা একে অন্যের গলায় আঘাত করে কুফরিতে ফিরে যেও না।

৩৭১৭৭

হুজাইফা রাদি. বলিয়াছেন,
রসুলুল্লাহ ﷺ আমাকে বলিয়াছেন,
আমি তোমাদের আগে হাউজে পৌছে যাবো। আমার কওম নিয়ে আমি ঝগড়া করবো এবং তাহাদের উপর জয়ী হবো। আমি বলবো,
: ইয়া রব! আমার আসহাব!

আমাকে বলা হইবে,
: আপনি জানেন না, আপনার পরে তারা কি করেছে।

৩৭১৭৮

আনাস বিন মালিক রাদি. বলিয়াছেন:
রসুলুল্লাহ ﷺ আমাকে বলিয়াছেন:
কাউছার হলো একটা নহর যেটা আমার রব আমাকে দেবেন বলে ওয়াদা করিয়াছেন।
এতে অনেক ভালো কিছু আছে।
ওটা আমার হাউজ।

কিয়ামতের দিন এখান থেকে আমি আমার উম্মাহর জবাব দেবো।
এর পাত্রের সংখ্যা হলো তারকার সংখ্যার সমান।

কিছু আবদদের এখানে আসতে বাধা দেয়া হইবে।

আমি বলবো: এরা তো আমার উম্মত!
আমাকে বলা হইবে: আপনি জানেন না আপনার পরে তারা কি করেছিলো।

৩৭১৭৯

উম্মে সালমা রাদি. বলিয়াছেন,
আমি রসুলুল্লাহ ﷺ কে শুনেই এই মিম্বরের উপর বলতে
আমি কাউছারে তোমাদের আগেই থাকবো।
যখন আমি সেখানে থাকবো তখন আমি তোমাদের কাছে যেতে গেলে তোমাদের মাঝে একটা দূরত্ব চলে আসিবে। আমি ডাক দিবো, তোমরা আসো!

তখন একজন ডেকে বলবে,
: না! তারা আপনার পরে বদলিয়ে গিয়েছিলো।
এর পর আমি বলবো,
: এসো না! তোমরা দুরের লোক! তোমরা দুরের লোক!

৩৭১৮০

মুররাহ বলিয়াছেন:
রসুলুল্লাহ ﷺ এর একজন সাহাবি বলিয়াছেন:
রসুলুল্লাহ ﷺ একবার আমাদের মাঝে দাড়ালেন, এবং বলিলেন:

সাবধান! আমি তোমাদের আগে হাউজে পৌছে যাবো।
তোমাদের দেখবো, এবং তোমাদের বিশাল সংখ্যা দেখে অনন্দিত হবো।
তাই তোমরা আমার মুখকে কালো করো না।

৩৭১৮১

উমর রাদি. আবি মুসা রাদি. কে লিখে পাঠান,
স্বভাবতঃ মানুষ তাহাদের সুলতানকে অপছন্দ করে। তাই আল্লাহর কাছে আশ্রয় চাই আমার আর তোমার মাঝে ঘৃনা আসা থেকে,
দুনিয়া দ্বারা প্রভাবিত হওয়া থেকে,
মনের ইচ্ছার অনুসরন করা থেকে।

কাবিলাগুলো একটা অন্যটার বিরুদ্ধে লাগতে যাচ্ছে।
এটাই হলো অহংকার যে শয়তান থেকে আসে।
এরকম হলে: তখন তলোয়ার তলোয়ার, কতল কতল হইবে।
তারা বলবে: হে ইসলামের পরিবার, হে ইসলামের পরিবার।

৩৭১৮২

উবাই বিন কাব রাদি. বলিয়াছেন,
আমি শুনেছি রসুলুল্লাহ ﷺ বলিয়াছেন,
যে তার নিজের গোত্রে দিকে ডাকে, সে যেন তার পিতার অঙ্গ কামড় দিলো। এবং এটা সরাসরি বলো।

৩৭১৮৪

উমর রাদি. বলিয়াছেন,
যে তার গোত্রের জন্য গর্বিত হলো সে অংগ কামড় দিয়ে চুষলো।

৩৭১৮৫

তালহা বিন উবাইদিল্লাহ বিন কুরাইজ বলিয়াছেন:
উমর রাদি. সেনাপ্রধানদের লিখে দিয়েছিলেন:

যদি গোত্রগুলো একে অন্যের সংগে সংঘর্ষে নামে তবে তলোয়ার দিয়ে তাহাদের তাড়া করো যতক্ষন না তারা ইসলামের শিক্ষার দিকে ফিরে আসে।

৩৭১৮৬

আবি সালেহ বলিয়াছেন,
যে বললো: হে ওমুকের বংশধর!
তবে সে আগুনের শাস্তির দিকে ডাকলো।

৩৭১৮৭

মাসরুক রাদি. বলিয়াছেন:
রসুলুল্লাহ ﷺ বলিয়াছেন:
আমি যেন তোমাদেরকে এই ভাবে না পাই যে আমার পরে তোমরা একদল অন্যদলের ঘাড়ে আঘাত করে কুফরিতে ফিরে গিয়েছো।
কোনো মানুষকে তার ভাইয়ের পাপ বা পিতার পাপের জন্য ধরা হইবে না।

৩৭১৮৮

আব্দুল্লাহ রাদি. বলিয়াছেন,
শিগ্রই উপেক্ষা করা হইবে এবং ঘটনার পূনরাবৃত্তি হইবে।
তখন তুমি ধীরে চলবে এবং ভালোর অনুসরন করিবে।
খারাপ রাষ্ট্রপ্রধানের মাঝে যতটুকু ভালো আছে, সেটার।

৩৭১৮৯

শায়বি বলিয়াছেন,
এক লোক অন্যকে ডাকলো,
: এই! যে দাব্বার জন্য!

ওমর রাদি. কে এটা লিখে পাঠনো হলো। উনি জবাব দিলেন,
: তাকে শাস্তি দাও। আর তাকে আদব শিখাও।
দাব্বা তাহাদের কোনো ক্ষতি করিতে পারে না। আর কোনো উপকারও তাহাদের থেকে নিতে পারে না।

৩৭১৯০

জাইদ বিন থাবিত রাদি. বলিয়াছেন,
রসুলুল্লাহ ﷺ একবার বলিলেন,
আল্লাহর কাছে আশ্রয় চাও প্রকাশ পাওয়া আর গোপন থাকা ফিতনা থেকে।

আমরা বলিলাম,
আমরা আশ্রয় চাইছি আল্লাহর কাছে, প্রকাশ পাওয়া আর গোপন থাকা ফিতনা থেকে।

৩৭১৯১

আব্দুল্লাহ রাদি. বলিয়াছেন,
যখন উসমান রাদি. উনার কাছে হুকুম পাঠালেন মদিনার দিকে বেরিয়ে যেতে।
তখন মানুষেরা উনার কাছে আসলো।

তারা তাকে বললো:
দাড়ান। আপনি বের হইবেন না। আমরা আপনাকে নিষেধ করছি।
উনার কাছ থেকে আপনার কাছে অপছন্দনীয় কিছু আসিবে না।

আব্দুল্লাহ বলিলেন:
শিগ্রি ঘটনা ঘটিবে এবং ফিতনা দেখা দিবে।
আমি এটা পছন্দ করি না যে আমি প্রথম এটা খুলবো, অথচ উনি আমার আনুগত্য প্রাপ্য।

মানুষ এর পর একে একে চলে গেল এবং উনি বের হলেন।

৩৭১৯২

ইবনু মাসউদ রাদি. আমাদের এগিয়ে নিয়ে চললেন। এর পর কাদিসিয়ার রাস্তায় নামলেন। বুস্তান শহরে প্রবেশ করিলেন। উনার হাজত পূর্ন করিলেন। এর পর উনি ওজু করিলেন এবং মুজার উপর মসেহ করিলেন। এর পর বের হলেন। উনার দাড়ি থেকে ফোটা ফোটা পানি পড়ছিলো।

আমরা উনাকে বলিলাম,
: আমাদের সমাধান দিন। মানুষ ফিতনাতে পড়ে যাচ্ছে, এই দিকে আমরা আপনার সাক্ষাৎ পবো নাকি পাবো না সেটা জানি না।

উনি বলিলেন,
: আল্লাহকে ভয় করো। এবং সবর কর। যতক্ষন না বিপদ চলে যায়। অথবা অসৎ লোকদের থেকে পরিত্রান পাও। আর তোমাদের উপর হুকুম জামাতের সংগে থাকা। কারন আল্লাহ মুহাম্মদ ﷺ এর উম্মতকে পথভ্রস্টতার উপর জামাতবদ্ধ করেন না।

৩৭১৯৩

আনাস বিন মালিক রাদি. বলিয়াছেন,
: শিগ্রই প্রথমে রাজা-বাদশাহরা আসিবে, এর পর আসিবে স্বৈরাচাররা, এর পর আসিবে ত্বাগুতরা।

৩৭১৯৪

রসুলুল্লাহ ﷺ উনার হুজুরাত থেকে বের হলেন এবং বলিলেন:
আগুন জ্বালানো হইয়াছে।
ফিতনা এসেছে যেন এটা রাতের অন্ধকার টুকরা।
আমি যা জানি তোমরা যদি তা জানতে, তবে তোমরা হাসতে কম, কাদতে বেশি।

৩৭১৯৫

আবি ইদরিস রাদি. বলিয়াছেন:
ফিতনা হইবে যেগুলোর ছায়া হইবে গরুর চেহারার মত। অধিকাংশ মানুষ তাতে পড়ে ধ্বংশ হইয়া যাবে।
যারা আগেই এটাকে চিনবে তারা ছাড়া।

৩৭১৯৬

হুজাইফা রাদি. আমাদের বলিলেন,
: তখন তোমাদের কি হইবে যখন আল্লাহ তায়ালা উম্মতে মুহাম্মদিকে ﷺ নির্দেশনা ছাড়া করে দেবেন?
এক লোক বললো,
: আমারা অস্বিকার করলেও উনি দেয়া বন্ধ করে দেন না। আর আল্লাহ উম্মতে মুহাম্মদকে ﷺ নির্দেশনা ছাড়া করে দেবেন?
: আল্লাহর কাছে মশার পাখা সমান দামও যার নেই, সেও যখন উনার উত্তরাধিকার পায় সেটা দেখেছো? উম্মতে মুহাম্মদি ﷺ কে আল্লাহ নির্দেশনা ছাড়া করে দেবেন ঐ দিনে এটি কি এখন বিশ্বাস হয়?

৩৭১৯৭

খালিদ বিন উরফুতাহ রাদি. বলিয়াছেন,
নাবী ﷺ বলিয়াছেন,
: হে খালেদ! শিগ্রই মতবিরোধের ঘটনা ঘটিবে। বিভাজন দেখা দেবে। যখন সেটা হইবে তখন তুমি কতল হইয়া যেতে পারলে হযে যাও, কিন্তু কতল করো না।

৩৭১৯৮

আবি বুরদাহ বলিয়াছেন,
মুহাম্মাদ ইবনু মুসলেমা রাদি. এর ঘরে গিয়ে আমি বলিলাম,
: আল্লাহ আপনার উপর রহম করুন। এই সময় আপনি ঘরে আছেন। আপনি কেন মানুষের কাছে গিয়ে সৎ কাজের আদেশ আর অসৎ কাজের নিষেধ করছেন না?

উনি বলিলেন:
রসুলুল্লাহ ﷺ বলিয়াছেন,
অতি সত্বর ফিতনা, বিভাজন আর দ্বিমত দেখা দিবে। এরকম হলে তুমি তোমার তলোয়ার নিয়ে উহুদ পাহাড়ে চলে যাবে। এর পর এটা মারতে থাকিবে যতক্ষন না তলোয়ার ভেঙ্গে যায়। এর পর বাসায় বসে থাকিবে যতক্ষনা না তোমার কাছে কোনো অপরাধীর হাত অথবা মৃত্যুর লিখনি আসে।

এখন এটা হইয়াছে। এজন্য আমাকে রসুলুল্লাহ ﷺ যা করিতে বলিয়াছেন সেটা করেছি।

৩৭২১৯৯

ইবনু সিরিন বলিয়াছেন,
আমার কাছে এই কথা পৌছেছে যে সিরিয়ার ঐক্যকে কেউ নস্ট করিতে পারবে না সিরিয়ার বেদুইনরা যা করিবে তা ছাড়া।

৩৭২০০

আব্দুল্লাহ বিন আমির উনার পিতা থেকে বর্ননা করছেন:
রসুলুল্লাহ ﷺ বলিয়াছেন:

যে মারা গেলো কিন্তু সে কারো নেতৃত্ব মেনে চলতো না, তবে সে জাহেলিয়াতের মৃত্যু বরন করলো। আর যে এই বন্ধন করে ভঙ্গ করলো, সে ওজর খুজে পাবে না।

৩৭১০১

আসিম আল বাজালি বলিয়াছেন,
: তোমাদের মালামাল থেকে তোমরা মুক্ত হও যখন তোমরা দেখবে
শাবান মাসে একটা নিদর্শন,
রমজানে দুটো হটাৎ প্রাকৃতিক দুর্ঘটনা,
শাওয়াল মাসে মানুষের দলে দলে বিভক্ত হইয়া যাওয়া,
জিলকদ মাসে যুদ্ধ ও বিশৃংখলা,
আর জিলহজ্জ মাসে ধংশ বা বিচার।।

৩৭২০২

সালমান বিন রাবী বলিয়াছেন:
উমর রাদি. বলিয়াছেন,
: শিগ্রই আমির আর কর্মিদের অবির্ভাব হইবে। তাহাদের নৈকট্য হইবে ফিতনা। তাহাদের থেকে বিচ্ছিন্ন হওয়া হইবে কুফর।

আমি বলিলাম,
: আল্লাহু আকবার! আরেকবার বলেন হে আমিরুল মুমিনিন। আমি বুঝতে পরি নি।

উনি আবার একই কথা বলিলেন।

সালমান বিন রাবী বলেন,
: আল্লাহ বলিয়াছেন, ফিতনা কতলের থেকেও খারাপ, সুরা বাকারা – ১৯১। আর ফিতনা আমার কাছে কতলের থেকে প্রীয়।

৩৭২০৩

হুজাইফা রাদি. এর অসুস্থাতার সময় আবু মাসউদ আল-আনসারি উনার বাড়িতে গেলেন। যেই অসুস্থতায় উনি শেষ পর্যন্ত মারা যান।

বলিলেন,
: এটাই কি আলাদা হবার সময়?
: হ্যা। আমার প্রীয় জিনিস এসেছে আমার প্রয়োজনের সময়।
যে অনুশোচনা করলো সে সফল হলো — একিন শেখার পর আমি শিখেছিলাম।

৩৭২০৪

হুজাইফা রাদি. বলিয়াছেন,
রসুলুল্লাহ ﷺ আমাদের উদাহরন দেখিয়েছেন:
এক, তিন, পাচ, সাত, নয়, এগার। এর পর এর থেকে উনি এক ব্যখ্যা করিয়াছেন। এবং বাকিগুলো সম্পর্কে চুপ ছিলেন। এর পর উনি বলেন,
: একটা কওম ছিলো দুর্বল আর দরিদ্র। এরা যুদ্ধ করে এমন কওমের সাথে যারা সুদক্ষ ও আক্রমনাত্বক।
তারা মুখোমুখি হয়। তাহাদেরকে কাজে লাগায়। তাহাদের উপর চাপিয়ে দেয়।
তাই তাহাদের রব তাহাদের উপর অসন্তুস্ট হয়।

৩৭২০৫

আলা ইবনু আব্দুল করিম বলিয়াছেন,
এক বেদুইন আমাদের বলেছে,
: আমি কুফাতে হিজরত {মাইগ্রেট} করিলাম। এর পর আমাকে দেয়া সব জিনিস নিয়ে বের হইয়া যেতে চাইলাম।

মানুষেরা বললো,
: তোমার হিজরত মানা।

এর পর সুয়াইদ বিন গাফলার সাথে দেখা হলে আমি তাকে এটা বলিলাম।
উনি বলিলেন,
: আমার ইচ্ছে করে যদি আমার কোনো বাহন থাকতো, সম্পদ না থাকতো। তবে আমি এই এলাকা থেকে অনেক দূরে চলে যেতাম।

৩৭২০৬

সাইদ বিন জুবাই রাদি. কে জিজ্ঞাসা করা হলো,

: হে আবু আব্দুলুল্লাহ! মানুষের ধ্বংশ হবার আলামত কি?

বলিলেন,
: যখন তাহাদের উলামাগন ধ্বংশ হইয়া যায়।

৩৭২০৭

হুজাইফা রাদি. বলিয়াছেন,
আল্লার শপথ!
তাহাদের উপর কোনো হুকুম আসার পর তারা এটা নিয়ে শোরগোল করলে,
সবসময় এর পরে এমন হুকুম আসিবে যেটার কারনে তারা ব্যতিব্যস্ত হইয়া যাবে।

৩৭২০৮

মাকহুল বলিয়াছেন:
মালাহামা, কুসতুনতুনিয়া বিজয় আর দাজ্জালের বের হওয়ার মাঝে সাত মাস সময়।
চুক্তি হওয়া আর ভঙ্গ হওয়া মাঝেও একই সময়। একটা আরেকটার পর পর হইবে।

৩৭২০৯

মুয়াজ বিন জাবাল রাদি. বলিয়াছেন
: বাইতুল মুকাদ্দাসের উন্নয়নের হলে, ইয়াথরিব {মদিনা} ধ্বংশ হইবে।
মালহামার জন্য রওনা দিলে পর কুসতুনতুনিয়া {ইস্তাম্বুল} জয় হইবে।
কুসতুনতুনিয়া জয় হলে

 দাজ্জাল বের হইবে।

এর পর উনার হাত দিয়ে লোকের কাধে বাড়ি দিয়ে বলিলেন
: ওয়াল্লাহ! এটা সত্য!

৩৭২১০

উথাইয়ি বলিয়াছেন:
যখন দেখবে কুফাকে ঘেরাওকারীরা ঘেরাও করে ফেলেছে তখন সেখান থেকে গাধায় চড়ে হলেও বের হইয়া যাবে।…..

৩৭২১১

ইবনু হানাফিয়া বলিয়াছেন:
যদি আলী রাদি. আমাদের …

৩৭২১২

আব্দুর রহমান বিন সুহার উনার পিতা থেকে বলিয়াছেন:
রসুলুল্লাহ ﷺ বলিয়াছেন:
কিয়ামত হইবে না যতক্ষন পর্যন্ত না গোত্রগুলো ধসে পড়ে।
এমন কি এক লোককে জিজ্ঞাসা করা হইবে, তুমি কি অমুক বংশের?

বলেন,
: আমরা জেনেছি, আরবরা তাহাদের গোত্রে দিকে ডাকবে। আর অনারবরা তাহাদের এলাকার দিকে ডাকবে।

৩৭২১৩

আব্দুল্লাহ বিন আমর রাদি. বলিয়াছেন:
আমি শুনেছি রসুলুল্লাহ ﷺ বলিয়াছেন:

: আমার উম্মতের মাঝে ভুমিধ্বস, চেহারা বিকৃতি আর পাথর বর্ষন হইবে।

৩৭২১৪

জাইনাব বিনতে জাহাশ রাদি. বলিয়াছেন,
রসুলুল্লাহ ﷺ একবার লাল চেহারা নিয়ে ঘুম থেকে জাগলেন এবং বলিলেন,
: লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ! আরবদের ধ্বংশ, আসন্ন বিপদ থেকে। আজকে ইয়াজুজ আর মাজুজের বাধ থেকে এতটুকু খুলে গিয়েছে।
বলে উনি আঙ্গুল ধরে দশ দেখালেন।

জয়নর রাদি. বলিলেন,
: আমরা কি ধ্বংশ হব, অথচ আমাদের মাঝে সৎ লোক আছে?
উনি বলিলেন,
: হ্যা। যদি অশ্লিলতা প্রকাশ্যে হয়।

৩৭২১৫
আয়শা রাদি. বলিয়াছেন:

রসুলুল্লাহ ﷺ বলিয়াছেন:
দুনিয়াতে যখন প্রকাশ্যে পাপাচার হইবে তখন আল্লাহ পৃথিবীর মানুষের উপর দুঃখ অবতির্ন করিবেন।

আমি বলিলাম:
ইয়া রসুলুল্লাহ! ﷺ তাহাদের মাঝে আল্লাহর অনুসারীরা থাকলেও?

উনি ﷺ বলিলেন:
হ্যা। তবে এর পর তাহাদের পরিনতি আল্লাহর রহমত।

৩৭২১৬

আনাস রাদি. বলিয়াছেন,
রসুলুল্লাহ ﷺ বলিয়াছেন,
কিয়ামতের আগে রাতের আধার টুকরার মত ফিতনা দেখা দিবে।
সকালে এক জন মুমিন থাকিবে, তো সন্ধায় সে কাফির হইয়া যাবে।
সন্ধায় মুমিন থাকিবে, তো সকালে কাফির হইয়া যাবে।
মানুষ তার দ্বীনকে দুনিয়ার জিনিসের বিনিময়ে বিক্রি করে দেবে।

৩৭২১৭

কাইস রাদি. বলিয়াছেন,
রসুলুল্লাহ ﷺ মাথা আকাশের দিকে উচু করে বলিলেন,
: সুবহানাল্লাহ! তাহাদের উপর ফিতনা পাঠাবেন, ফোটায় ফোটায়।

৩৭২১৮

উমর রাদি. এর কাছে এক লোক বললো,
: হে আল্লাহ আমি আপনার কাছে ফিতনা থেকে আশ্রয় চাই।
এটা শুনে ওমর রাদি. বলিলেন,
: হে আল্লাহ আমি আপনার কাছে না বুঝা থেকে আশ্রয় চাই। তুমি কি এটা পছন্দ করিবে যে আল্লাহ তায়ালা তোমাকে মাল ও সন্তান দেবেন না? বরং তোমাদের যে কেউ ফিতনা থেকে রক্ষা চাইতে হলে, সে দোয়া যেন এর পথভ্রস্টতা রক্ষার দোয়া করে।

৩৭২১৯

উবাইদিল্লাহ বিন কাব রাদি. বলিয়াছেন:
আমি উম্মে সালমা রাদি. এর সংগে ছিলাম। তখন হারিথ বিন আবি রাবিয়া রাদি. এবং আব্দুল্লাহ বিন সাফওয়ান রাদি. আসলেন। উনাকে জিজ্ঞাসা করিলেন ঐ বাহিনীর কথা যারা মাটিতে ধ্বসে পড়বে। এটা আব্দুল্লাহ বিন জুবারই রাদি. এর যুগে।

তখন উম্মে সালমা র: বলিলেন:
রসুলুল্লাহ ﷺ বলিয়াছেন:

বাইতুল্লাহ একজন অশ্রয় নিবে। তার কাছে একটা দল পাঠানো হইবে। তারা যখন বাইদাহইতে থাকিবে তখন ভুমি তাহাদের গ্রাস করে নিবে।

আমরা তখন উনাকে ﷺ কে জিজ্ঞাসা করেছিলাম,
: ইয়া রসুলুল্লাহ ﷺ যদি তাহাদের সাথে অনিচ্ছুক কেউ থাকে?
: তাহাদের সাথে সেও ধ্বসে পড়বে। কিন্তু কিয়ামতের দিন তাকে তার নিয়তের উপর তোলা হইবে।

আবু জাফর বলিয়াছেন: এই বাইদা হলো মদিনার বাইদাহ।

৩৭২২০

আবু মুসা রাদি. বলিয়াছেন,
রসুলুল্লাহ ﷺ বলিয়াছেন,
মুসলিমরা যদি তাহাদের তলোয়ার নিয়ে মুখো মুখি হয় এবং তাহাদের কেউ একজন তার সঙ্গীকে হত্যা করে তবে তাহাদের দুজনই জাহান্নামে যাবে।

লোকেরা বললো,
: ইয়া রসুলুল্লাহ ﷺ ! হত্যাকারী কেন যাবে বুঝলাম। কিন্তু নিহত কি কারনে যাবে?

উনি ﷺ বলিলেন,
: সেও চাচ্ছিলো তার সঙ্গীকে কতল করিতে।

৩৭২২১

আবু জিনাদ বলিয়াছেন:
আমি তখন গোলাম ছিলাম। আমি আমার মালিকের সাথে বের হলাম। ভিড় ঠেলে হুজাইফা রাদি. এর কাছে গেলাম। উনি তখন বলছিলেন,

: নাবী ﷺ এর সমস্ত শিক্ষা থেকে যদি কোনো লোক একটা কথাকেই বলতে থাকে, তবে সেটা মুনাফেকির দিকে যাবে।
আমি তোমাদের একটি বয়ানে শুনেছি বক্তা চার বার বলেছে: তোমরা সৎ কাজের আদেশ দাও আর অসৎ কাজের নিষেধ কর, এবং একে অন্যকে ভালো কাজে উৎসাহ দাও। তা না হলে তোমাদের সবার উপর আল্লাহ একসাথে আজাব পঠাবেন। এবং তোমাদের মাঝে সবচেয়ে খারাপ লোকদের তোমাদের আমির বানাবেন। এর পর তোমরা ভালোর জন্য দোয়া করিবে কিন্তু সে দোয়ার কবুল করা হইবে না।

৩৭২২২

থারওয়ান বিন মিলহান বলিয়াছেন,
আমরা মসজিদে বসে ছিলাম। আমাদের কাছে আম্মার বিন ইয়াছিন রাদি. এলেন।
আমরা উনাকে বলিলাম,
: আমাদের রসুলুল্লাহ ﷺ এর একটা হাদিস শুনান ফিতনার উপর।
বলিলেন,
: আমি শুনেছি রসুলুল্লাহ ﷺ বলিয়াছেন, আমার পরে আমির-উমরা হইবে যারা রাজ্য নিয়ে যুদ্ধ করিবে। তাহাদের একদল অন্যদলকে হত্যা করিবে।
আমরা বলিলাম,
: আপনার এই কথার বিপরতি কোনো কথা কেউ যদি আমাদের বলে তবে আমরা তাকে মিথ্যাবাদি বলবো।
: দেখ, শিগ্রই এটা হইবে।

৩৭২২৩

উম্মে সালমা রাদি. বলিয়াছেন,
রসুলুল্লাহ ﷺ বলিয়াছেন,
রুকন ও মাকাম এর মাঝে এক জন লোকের কাছে মানুষ বায়াত দেবে।
তাহাদের সংখ্যা হইবে বদরের লোকদের সমান।
উনার কাছে ইরাক থেকে একটি দল এবং সিরিয়া থেকে আবদালগন আসিবেন।
তাহাদেরকে সিরিয়া বাসীদের মাঝ থেকে একটা বাহিনী এসে আক্রমন করিবে।
বাইদাহইতে তারা ভুমি ধ্বসে পড়বে।
এর পর কুরাইশ বংশের এক লোক তাহাদের আক্রমন করিবে যে কিনা কলব গোত্রের।
তার সাথে যুদ্ধ হইবে এবং আল্লাহ তাহাদের বিজয়ী করিবেন।

এর পর উনি ﷺ বলেন,
সে লোক ব্যর্থ, যে কলবের গনিমত নিতে ব্যর্থ।

৩৭২২৪

সাফিয়া রাদি. বলিয়াছেন,
রসুলুল্লাহ ﷺ বলিয়াছেন:
এই ঘরে মানুষের আক্রমন বন্ধ হইবে না যতক্ষন না এটা একটা বাহিনী আক্রমন করে।
যখন তারা বাইদাতে থাকিবে সমতল ভুমিতে থাকিবে তখন এটা ধ্বসে যাবে তাহাদের প্রথম আর শেষজনকে নিয়ে। তাহাদের মাঝেররাও রেহাই পাবে না।

আমি বলিলাম,
: তাহাদের মাঝে অনিচ্ছুক কেউ থাকলে?
বলিলেন,
: আল্লাহ তাহাদের পুনঃ জীবিত করিবেন তাহাদের অন্তরে কি ছিলো তার উপর।

৩৭২২৫

মাইমুনা রাদি. বলিয়াছেন:
আমাদেরকে নাবী ﷺ সেই দিন বলেছিলেন,
: তখন তোমাদের কি অবস্থা হইবে যখন দ্বীনর মাঝে বিশৃংখলা আরম্ভ হইবে,
মনে যা চায় তার অনুসরন করা হইবে,
ভাইদের মাঝে মত পার্থক্য দেখা দিবে
আর বাইতুল আতিক পুড়িয়ে ফেলা হইবে?

৩৭২২৬

আবু হুরাইরা রাদি. বলিয়াছেন,
নাবী ﷺ বলিয়াছেন,
: কাবা যে ভাঙ্গবে সে হইবে হাটু থেকে নিচ ছোট পা বিশিষ্ট হাবশার লোক।

৩৭২২৭

উলাইমিন আল-কান্দিই বলিয়াছেন:
জুবাইর রাদি. বংশধরদের হাতে এই ঘর ধ্বংশ হইবে।

৩৭২২৮

মুজাহিদ বলিয়াছেন,
আমি ইবনু আমর থেকে শুনেছি,
: যেন আমি এখানে থেকে দেখছি, টাক মাথা এক লোক যাকে বাধা দেবার কেউ নেই, এর উপর দাড়িয়ে নিজের হাতুড়ি দিয়ে এটা ভাঙ্গছে।

ইবনু জুবাইর রাদি. যখন এটা ভাঙ্গছিলেন তখন আমি এসে ইবনু আমর থেকে বর্নিত রূপ মিলানোর চেস্টা করি এবং করিতেই থাকি।

৩৭২২৯

মুজাহিদ বলিয়াছেন:
ইবনু জুবাইর রাদি. যখন সেটা ভাঙ্গার সময় একত্রিত হন, তখন আমরা তিনজন মিনায় বেরিয়ে যাই, এবং আযাবের জন্য অপেক্ষা করিতে থাকি।

৩৭২৩০

আলী রাদি. বলিয়াছেন
: আমি যেন দেখতে পাচ্ছি হাবশার সেই লোককে, টাক মাথা, চ্যপ্টা ছোটো কান, চিকন পা — এর উপর বসে আছে এবং একে ভাঙ্গছে।

৩৭২৩১

ইবনু আমর রাদি. বলিয়াছেন:
যখন দেখবে কুরাইশরা ঘর ভেঙ্গে ফেলছে,
এবং এর পর আবার বানাচ্ছে এবং সুসজ্জিত করছে,
তাহলে তুমি মরে যেতে পারলে মরে যেও।

৩৭২৩২

ইয়ালি বিন আত্বা বলিয়াছেন উনার পিতা থেকে:
আমি আব্দুল্লাহ বিন উমর রাদি. এর বাহনের লাগাম ধরে যাচ্ছিলাম।
উনি বলিলেন,
: তখন তোমাদের কি অবস্থা হইবে যখন তোমরা বাইতুল্লাহকে ভেঙ্গে ফেলবে এমন ভাবে যে এর একটা পাথরের উপর একটা পাথরও থাকিবে না?
: আমরা কি তখন ইসলামের উপর থাকবো?
: তোমরা ইসলামের উপরই থাকিবে।
: এর পর কি হইবে?
: এর পর এটাকে ইতিহাসে সবচেয়ে সুন্দর করে বানানো হইবে। যখন তুমি দেখবে,
মক্কার ভেতর দিয়ে সুড়ঙ্গ খোড়া হইয়াছে,
এবং এর দালানগুলো পাহাড়ের মাথা থেকে উচু হইয়া গিয়েছে,
তখন জানবে ঘটনার ছায়া তোমার উপর চলে এসেছে।

৩৭২৩৩

আব্দুল্লাহ বিন উমর রাদি. বলিয়াছেন,
এই ঘর থেকে আনন্দিত হইয়া নাও যতক্ষন না এটার উন্নয়ন হয়।
দুই বার এর উন্নয়ন হইবে এবং ভেঙ্গে ফেলা হইবে।
তৃতীয়বার এর উন্নয়ন হইবে।

৩৭২৩৪

আব্দুল্লাহ রাদি. এর কাছে এক লোক এসে জিজ্ঞাসা করিলেন:
: আমরা কখন পথ ভ্রস্ট হবো?
: যখন তোমাদের এমন আমির হইবে যাদের অনুসরন করলে তারা তোমাদের পথভ্রস্ট করিবে। এবং তাহাদের আবাধ্যতা করলে তারা তোমাদের কতল করিবে।

৩৭২৩৫

আবু হুরাইরা রাদি. বলিয়াছেন,
রসুলুল্লাহ ﷺ বলিয়াছেন,
: আল্লার কাছে আশ্রয় চাও, নেতৃত্বে সত্তর থেকে। আর অল্প বয়সী ছেলেদের আমির হওয়া থেকে।

৩৭২৩৬

আবু হুরাইরা রাদি. বলিয়াছেন:
আরবদের ধ্বংস নিকটবর্তি এই খারাপ জিনিসটার কারনে — যুবক ছেলেদের আমির হওয়া।
যদি তাহাদের আনুগত্য করে তবে তাহাদের আগুনে প্রবেশ করিয়ে দেবে।
আর যদি তাহাদের বিরোধিতা করে তবে তাহাদের গলা কেটে ফেলবে।

৩৭২৩৭

উবাদহ ইবনু সাবিত লোকদের বলিয়াছেন:
: আমি যাকে ভালোবাসি তার জন্য আমি কামনা করি মালে স্বল্পতা আর দ্রুত মৃত্যু।
লোকেরা বললো,
: ভালোবাসার পাত্রের জন্য এটা কি ধরনের আকাংখা?

উনি বলিলেন,
: আমি ভয় পাই যে, যদি তোমাদের হায়াত দীর্ঘ হয় তবে, তোমরা এমন লোক পাবে, যাদের অনুসরন করলে তোমরা আগুনে প্রবেশ করিবে, আর বিরোধিতা করলে তোমাদের কতল করা হইবে।
: আমাদের বলুন তারা কে? তাহাদের চোখ আমরা কানা করে দেবো, অথবা তাহাদের মুখে মাটি মাখিয়ে দেবো।

: তুমি তাহাদের পেলে, তারাই তোমার চোখ কানা করে দেবে, আর তোমাদের মুখে মাটি লাগিয়ে দেবে।

৩৭২৩৮

হুজাইফা রাদি. বলিয়াছেন,
ফিতনার কাছে যে কেউ গেলে আমি তার ব্যপারে ভয় পাই।
শুধু মুহাম্মদ বিন মাসলামা রাদি. ছাড়া।

আমি শুনেছি রসুলুল্লাহ ﷺ উনাকে বলিয়াছেন: ফিতনা তোমার কোনো ক্ষতি করিতে পারবে না।

৩৭২৩৯

আলী রাদি. কিছু লোককে পাঠালেন মুহাম্মদ বিন মাসলামা রাদি. কে উনার কাছে নিয়ে আসার জন্য।

তাহাদের বলে দিলেন, যদি সে না আসতে চায় তবে তাকে বহন করে নিয়ে আসিবে।

উনি আসতে অস্বিকৃতি জানালেন।

আগন্তুকরা বলিলেন, আমাদের হুকুম করা হইয়াছে যদি উনার কাছে আপনি না যেতে চান তবে, আপনাকে বহন করে উনার কাছে নিয়ে যেতে।

উনি জবাব দিলেন, তাহলে তোমরা ফিরে যাও এবং উনাকে বলবে:

আপনার চাচাতো ভাই আর আমার বন্ধু আমাকে জানিয়েছেন,

শিগ্রই ফিতনা, বিভক্তি ও বিতর্ক দেখা দিবে।
তখন তুমি বাসায় বসে থাকিবে এবং তোমার তলোয়ার ভেঙ্গে ফেলবে।
যতক্ষন না তোমার উপর মৃত্যুর লিখনি চলে আসে, অথবা কোনো অপরাধীর হাত আসে।
তাই আল্লাহকে ভয় কর হে আলী। এবং তুমি সেই অপরাধীর হাত হয়ো না।

তারা ফিরে এসে আলী রাদি. কে এই কথা বললো।
তিনি বলিলেন: তার জন্য দোয়া করো।

৩৭২৪০

হুজাইফা রাদি. বলিয়াছেন,
: ফিতনা হইবে। এর পর তৌবা ও একতাবদ্ধতা হইবে। এর পর আবার ফিতনা হইবে। এর পর আর তৌবা বা একতাবদ্ধতা হইবে না।

৩৭২৪১

আলী রাদি. বলিয়াছেন,
: যখন এক শত পয়তাল্লিশ বছর হইবে তখন সমূদ্র তখন সমূদ্রের পাশের এলাকা নিষিদ্ধ করা হইবে। আর যখন একশত পঞ্চাশ বছর হইবে, তখন ডাঙ্গার পাশের এলাকা নিষিদ্ধ করা হইবে। আর যখন একশত ষাট বছর হইবে তখন ভুমিধ্বস, আকৃতি বিকৃতি আর কম্পন হইবে।

৩৭২৪২

সাইদ বিন জুবাইর রাদি. বলিয়াছেন:
ফিতনার সময় আমার সাথে এক সংসার ত্যগির দেখা হলো। উনি বলিলেন,

: হে সাঈদ বিন জুবাইর। কে আল্লাহর ইবাদত করে আর কে তাগুত্বের ইবাদত করে সেটা পরিস্কার হইয়া গিয়েছে।

৩৭২৪৩

আবু হুরাইরা রাদি. বলিয়াছেন:

রসুলুল্লাহ ﷺ বলিয়াছেন:

যে আনুগত্য পরিহার করলো

আর জামাত থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে গেলো

এর পর মারা গেলো

সে যেন জাহেলিয়াতের উপর মরলো।

আর যে অন্ধ পতাকার নিচে বের হলো

নিজের গোত্রের পক্ষে রাগাহ্নিত অবস্থায়

বা নিজ গোত্রেকে সাহায্য করলো

বা নিজ গোত্রের দিকে আহ্বান করলো

এবং সে নিহত হলো, সে জাহেলিয়াতের উপর মরলো।

আর যে আমার উম্মতের বিরুদ্ধে বের হলো

ভাল মন্দ লোকদেরকে বিরুদ্ধে যুদ্ধ করার জন্য

এবং মুমিনদেরকে সে পৃথক করলো না

এবং কোনো চুক্তিকে সে সম্মান করলো না

সে আমার কেউ না, আর আমিও তার কেউ না।

৩৭২৪৪

আবু হুরাইরা রাদি. আবু কাতাদা রাদি. কে বলিয়াছেন,

রসুলুল্লাহ ﷺ বলিয়াছেন,

এক লোক রুকন আর মাকামের মাঝে বায়াত নিবে।

এবই এই ঘর তারা বংশ ছাড়া অন্য কারো জন্য হালাল করা হইবে না।

এবং যখন সেটা হালাল করা হইবে, তখন অমাকে আরবদের ধ্বংশের কথা আর জিজ্ঞাসা করিবেন না।

এর পর হাবশিরা আসিবে এবং এটা ধ্বংশস্তুবে পরিনত করিবে।

এর পর এই শহর আর কখনোই আবাদ হইবে না

হাবশিরাই এই ঘরের ধ্বন-সম্পদকে বাহির করেব।

৩৭২৪৬

আব্দুল্লাহ বিন ওমর রাদি. বলিয়াছেন,

মূর্তির চারদিকে মহিলাদের নিতম্ভ ঘুরার পুর্ব পর্যন্ত কিয়ামত কায়েম হইবে না।

৩৭২৪৮

হুজাইফা বিন ইয়ামান রাদি. বলিয়াছেন,

ফিতনা হইবে,
মানুষ দাড়িয়ে তার নাকে আঘাত করিতে থাকিবে যতক্ষন না সেটা চলে যায়।

এর পর আরেকটা ফিতনা হইবে
মানুষ দাড়িয়ে তার নাকে আঘাত করিতে থাকিবে যতক্ষন না সেটা চলে যায়।

এর পর আরেকটা ফিতনা হইবে
মানুষ দাড়িয়ে তার নাকে আঘাত করিতে থাকিবে যতক্ষন না সেটা চলে যায়।

এর পর পঞ্চম ফিতনা হইবে, এর আঘাত হইবে প্রচন্ড। পৃথিবীতে এমন ভাবে ছড়িয়ে পড়বে যেভাবে পানি ছড়িয়ে পড়ে।

৩৭২৪৯

আবি মিজলাজ বলিয়াছেন, এক লোক বলছে,

হে বনু তামিমের বংশধর! উমর বিন খাত্তাব রাদি. তাহাদের এক বছর দান করা নিষেধ করে দিয়েছিলেন, এর পরের বছর থেকে উনি নিজের থেকে দান করা আরম্ভ করেন।

৩৭২৫০

আলী ইবনু আবি তালিব রাদি. বলিয়াছেন,
তোমাদের মাঝে যে সেই জামানা পাবে সে যেন বর্শা দিয়ে আঘাত না করে।
বা তলোয়ার দিয়ে আঘাত না করে।
বা পাথর ছুড়ে না মারে।
বরং সবর করিবে, কারন শেষ পুরষ্কার মুত্তাকিদের।

Comments

Leave a Reply