কাবা শরীফ তাওয়াফ করার দোয়া, রমল, হাজরে আসওয়াদে চুমা ও নামাজ
কাবা শরীফ তাওয়াফ করার দোয়া, রমল, হাজরে আসওয়াদে চুমা ও নামাজ , এই অধ্যায়ে হাদীস=২৫৮ টি ( ৬৯৬-৯৫৩ পর্যন্ত ) >> মুয়াত্তা ইমাম মালিক এর মুল সুচিপত্র দেখুন
অধ্যায় – ২০ঃ হজ্জ
- পরিচ্ছেদঃ ৩৩ -কাবা শরীফ নির্মাণ
- পরিচ্ছেদঃ ৩৪ -তাওয়াফের সময় রমল করা [কিছুটা দ্রুত হাঁটা]
- পরিচ্ছেদঃ ৩৫ -তাওয়াফ করার সময় ইস্তিলাম {১} করা
- পরিচ্ছেদঃ ৩৬ -ইস্তিলামের সময় হাজরে আসওয়াদে চুমা দেওয়া
- পরিচ্ছেদঃ ৩৭ -তাওয়াফের দুই রাকআত নামাজ
- পরিচ্ছেদঃ ৩৮ -ফজর ও আসরের পর তাওয়াফের নামাজ আদায় করা
- পরিচ্ছেদঃ ৩৯ -বিদায়ী তাওয়াফ
- পরিচ্ছেদঃ ৪০ -তাওয়াফের বিবিধ রেওয়ায়ত
পরিচ্ছেদঃ ৩৩ –কাবা শরীফ নির্মাণ
৭৯৯. আয়েশা [রাদি.] হইতে বর্ণিতঃ
নাবী [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম] বলেন, তুমি কি লক্ষ করনি, তোমার কওম কুরাইশগণ যখন কাবা শরীফ পুনঃনির্মাণ করে তখন ইবরাহীম [আ] যে চৌহদ্দি নিয়ে এটা নির্মাণ করেছিলেন ইহা হইতে কিছু কমিয়ে ফেলেছিল ? আয়েশা [রাদি.] বলিলেন, ইয়া রসূলুল্লাহ্! ইবরাহীম [আ] যেমন বানিয়ে ছিলেন তদ্রূপ আপনি বানিয়ে দিচ্ছেন না কেন ? রসূলুল্লাহ্ [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম] বলিলেন, তোমার কওমের কুফরির অবস্থা যদি অতি নিকট না হত তবে নিশ্চয়ই আমি তদ্রূপ বানিয়ে দিতাম। {১} আবদুল্লাহ্ ইবনি উমার [রাদি.] বলেন, আয়েশা [রাদি.] যদি এটা রসূলুল্লাহ্ [সাঃআঃ]-এর নিকট হইতে শুনে থাকেন, আমার ধারণা এই কারণেই রসূলুল্লাহ্ [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম] তাওয়াফের সময় হাতীম সংলগ্ন রুকনে শামী এবং রুকনে ইরাকী ইস্তিলাম করিতেন না, ছুঁতেন না। কেননা ইবরাহীম [আ]-এর বুনিয়াদের উপর কাবা শরীফের নির্মাণ হয়নি।
[বুখারি ১৫৮৩, মুসলিম ১৩৩৩], {১} বেশি দিন হয়নি এরা মুসলমান হয়েছে। এখন যদি এটা ভেঙে পুননির্মাণ করিতে যাই তবে এদের মনে আঘাত লাগতে পারে। এই হাদীসটির তাহকিকঃ সহীহ হাদীস
৮০০. হিশাম ইবনি উরওয়াহ্ [রাহিমাহুল্লাহ] হইতে বর্ণিতঃ
হিশাম ইবনি উরওয়াহ্ [রাহিমাহুল্লাহ] তাঁর পিতা হইতে বর্ণনা করেন উম্মুল মুমিনীন আয়েশা [রাদি.] বলেছেন, আমি পরওয়া করি না, নামাজ হাতীমে আদায় করি বা কাবা শরীফের অভ্যন্তরে আদায় করি। [অর্থাৎ এই দুই স্থানের মধ্যে কোন পার্থক্য আছে বলে আমি মনে করি না কেননা হাতীমও কাবার অংশ]। [হাদীসটি ঈমাম মালিক [রাহিমাহুল্লাহ] একক ভাবে বর্ণনা করিয়াছেন]
কাবা শরীফ তাওয়াফ করার দোয়া -এই হাদীসটির তাহকিকঃ নির্ণীত নয়
৮০১. মালিক [রাহিমাহুল্লাহ] হইতে বর্ণিতঃ
তিনি ইবনি শিহাব [রাহিমাহুল্লাহ]-কে বলিতে শুনেছেন কতিপয় আলিমের নিকট শুনিয়াছি, তাঁরা বলেন, হাতীমের পাশে দেয়াল উঠানোর এবং তাওয়াফের মধ্যে শামিল করার কারণ হল এতে সম্পূর্ণ বায়তুল্লাহর তাওয়াফ যেন আদায় হয়ে যায়। [কেননা এটাও বায়তুল্লাহর অংশ]। [হাদীসটি ঈমাম মালিক [রাহিমাহুল্লাহ] একক ভাবে বর্ণনা করিয়াছেন]
কাবা শরীফ তাওয়াফ করার দোয়া -এই হাদীসটির তাহকিকঃ নির্ণীত নয়
পরিচ্ছেদঃ ৩৪ –তাওয়াফের সময় রমল করা [কিছুটা দ্রুত হাঁটা]
৮০২. জাবির ইবনি আবদুল্লাহ্ [রাদি.] হইতে বর্ণিতঃ
রসূলুল্লাহ্ [সাঃআঃ]কে দেখেছি, হাজরে আসওয়াদ হইতে আরম্ভ করে হাজরে আসওয়াদ পর্যন্ত তাওয়াফে [চক্করে] তিনি রমল করিয়াছেন।
{১} [সহীহ, মুসলিম ১২৬৩], মালিক [রাহিমাহুল্লাহ] বলেন, আমাদের শহরস্থ আলিমদের অভিমত এটাই। {১} কুরাইশগণ যখন কাবা ঘর পুনঃনির্মাণ করেন তখন হালাল উপায়ে অর্জিত অর্থ কম হওয়ায় কিছু স্থান ছেড়ে দিয়েছিলেন। এ স্থানটিকে হাতীম বলা হয়। তাওয়াফের সময় ঐ স্থানটিসহ তাওয়াফ করিতে হয়। রুকনে শামী ও রুকনে ইরাকী তৎসংলগ্ন দুইটি কোণের নাম।এই হাদীসটির তাহকিকঃ সহীহ হাদীস
৮০৩. নাফি [রাহিমাহুল্লাহ] হইতে বর্ণিতঃ
আবদুল্লাহ্ ইবনি উমার [রাদি.] হাজরে আসওয়াদ হইতে হাজরে আসওয়াদ পর্যন্ত তিন তাওয়াফে রমল করিতেন আর বাকি তাওয়াফগুলোতে সাধারণভাবে চলতেন। {১}
[হাদীসটি ঈমাম মালিক [রাহিমাহুল্লাহ] একক ভাবে বর্ণনা করিয়াছেন], {১} বুক টান করে হাত দুলিয়ে দ্রুত প্রদক্ষিণ করার নাম রমল। মক্কার কাফিরগণ মুহাজির সাহাবীগণ সম্পর্কে বলেছিলÑ মদীনার জ্বর এদেরকে দুর্বল করে ফেলেছে। তখন রসূলুল্লাহ্ সাঃআঃ তাঁদের শক্তিমত্তা প্রদর্শনের জন্য রমল করিতে বলেছিলেন। কাবা শরীফ তাওয়াফ করার দোয়া -এই হাদীসটির তাহকিকঃ নির্ণীত নয়
৮০৪. হিশাম ইবনি উরওয়াহ্ [রাহিমাহুল্লাহ] হইতে বর্ণিতঃ
তাঁর পিতা যখন বায়তুল্লাহ্ তাওয়াফ করিতেন তখন তিন তাওয়াফে দৌড়িয়ে দৌড়িয়ে চলতেন এবং এই দুআ পড়তেন
اَللّٰهُمَّ لَاۤ إِلٰهَ إِلَّا أَنْتَا وَأَنْتَ تُحْيِ بَعْدَ مَا أَمَتَّا {২}
{২} হে আল্লাহ্, তুমি ছাড়া আর কোন ইলাহ্ নেই, আর মৃত্যুর পর আমাদের যিন্দা করিবে তুমিই।
কাবা শরীফ তাওয়াফ করার দোয়া -এই হাদীসটির তাহকিকঃ নির্ণীত নয়
৮০৫. হিশাম ইবনি উরওয়াহ [রাহিমাহুল্লাহ] হইতে বর্ণিতঃ
হিশাম ইবনি উরওয়াহ [রাহিমাহুল্লাহ] তাঁর পিতা হইতে বর্ণনা করেন যে, তিনি আবদুল্লাহ্ ইবনি যুবায়র [রাদি.]-কে তানয়ীম নামক স্থান হইতে উমরার ইহ্রাম বাঁধতে দেখেছেন এবং বায়তুল্লাহ্র চতুষ্পার্শ্বে প্রথম তিন তাওয়াফে রমল করিতে দেখেছেন।
[হাদীসটি ঈমাম মালিক [রাহিমাহুল্লাহ] একক ভাবে বর্ণনা করিয়াছেন], কাবা শরীফ তাওয়াফ করার দোয়া -এই হাদীসটির তাহকিকঃ নির্ণীত নয়
৮০৬. নাফি [রাহিমাহুল্লাহ] হইতে বর্ণিতঃ
আবদুল্লাহ্ ইবনি উমার [রাদি.] যখন মক্কা হইতে ইহরাম বাঁধতেন তখন মীনা হইতে ফিরে না আসা পর্যন্ত বায়তুল্লাহর তাওয়াফ ও সাফা-মারওয়ার সায়ী করিতেন না, রমলও করিতেন না। {১} [হাদীসটি ঈমাম মালিক [রাহিমাহুল্লাহ] একক ভাবে বর্ণনা করিয়াছেন]
{১} মক্কার বাহিরের অধিবাসী ব্যক্তি মক্কা হইতে ইহরাম বাঁধলে তাকে রমল করিতে হয় না। কাবা শরীফ তাওয়াফ করার দোয়া -এই হাদীসটির তাহকিকঃ নির্ণীত নয়
পরিচ্ছেদঃ ৩৫ –তাওয়াফ করার সময় ইস্তিলাম {১} করা
৮০৭. মালিক [রাহিমাহুল্লাহ] হইতে বর্ণিতঃ
তাঁর নিকট রেওয়ায়ত পৌঁছেছে যে, রসূলুল্লাহ্ [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম] তাওয়াফ করার পর দুই রাকআত নামাজ আদায় করলেন। অতঃপর তিনি সাফা-মারওয়াব দিকে রওয়ানা হওয়ার ইচ্ছা করলেন, তখন তিনি হাজরে আসওয়াদ ইস্তিলাম [স্পর্শ] করলেন।
[সহীহ, মুসলিম ১২১৮, ঈমাম মুসলিম হাদীসটিকে জাবের [রাহিমাহুল্লাহ]-এর বরাত দিয়ে মুত্তাসিল সনদে বর্ণনা করিয়াছেন। তবে ঈমাম মালিক কর্তৃক বর্ণিত হাদীসটি মুরসাল।].{১} ইস্তিলাম অর্থ কোন জিনিস স্পর্শ করা। কাবা শরীফ তাওয়াফ করার দোয়া -এই হাদীসটির তাহকিকঃ নির্ণীত নয়
৮০৮. হিশাম ইবনি উরওয়াহ্ [রাহিমাহুল্লাহ] হইতে বর্ণিতঃ
হিশাম ইবনি উরওয়াহ্ [রাহিমাহুল্লাহ] তাঁর পিতা হইতে বর্ণনা করেন রসূলুল্লাহ্ [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম] আবদুর রহমান ইবনি আউফ [রাদি.]-কে বলিলেন, হে আবু মুহাম্মদ, কিরূপে তুমি হাজরে আসওয়াদে ইস্তিলাম কর? তিনি বলিলেন, কখনও ইস্তিলাম করেছি আর কখনও করিনি। রসূলুল্লাহ্ [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম] বলিলেন, তুমি ঠিক করেছ।
[হাকিম ৩/৩০৬, ঈমাম মালিক কর্তৃক বর্ণিত হাদীসটি মুরসাল]. এই হাদীসটির তাহকিকঃ অন্যান্য
৮০৯. হিশাম ইবনি উরওয়াহ্ [রাহিমাহুল্লাহ] হইতে বর্ণিতঃ
হিশাম ইবনি উরওয়াহ্ [রাহিমাহুল্লাহ] বর্ণনা করেন তাঁর পিতা উরওয়া বায়তুল্লাহর তাওয়াফ করার সময় সকল রুকনই ছুঁতেন। বিশেষত একান্ত বাধ্য না হলে রুকনে ইয়ামানীর ইস্তিলাম পরিত্যাগ করিতেন না।
[হাদীসটি ঈমাম মালিক [রাহিমাহুল্লাহ] একক ভাবে বর্ণনা করিয়াছেন]. কাবা শরীফ তাওয়াফ করার দোয়া -এই হাদীসটির তাহকিকঃ নির্ণীত নয়
পরিচ্ছেদঃ ৩৬ –ইস্তিলামের সময় হাজরে আসওয়াদে চুমা দেওয়া
৮১০. হিশাম ইবনি উরওয়াহ [রাহিমাহুল্লাহ] হইতে বর্ণিতঃ
হিশাম ইবনি উরওয়াহ [রাহিমাহুল্লাহ] তাঁর পিতা হইতে বর্ণনা করেন বায়তুল্লাহর তাওয়াফের সময় উমার ইবনি খাত্তাব [রাদি.] হাজরে আসওয়াদকে লক্ষ করে বলিতেন, তুমি শুধু একখানা পাথর, লাভ-লোকসানের কোন ক্ষমতা তোমার নেই। রসূলুল্লাহ্ [সাঃআঃ] কে যদি তোমাকে চুমা দিতে না দেখতাম তবে আমিও তোমাকে চুমা দিতাম না। অতঃপর তিনি হাজরে আসওয়াদ চুমা দিলেন। {১}
[বুখারি ১৬০৫, মুসলিম ১২৭০, মুত্তাসিল ভাবে],মালিক [রাহিমাহুল্লাহ] বলেন, কতিপয় আলিমকে বলিতে শুনিয়াছি, রুকনে ইয়ামানী ইস্তিলাম করে হাত দ্বারা মুখ স্পর্শ করা মুস্তাহাব, উহাকে চুমা দিবে না।{১} তাওয়াফ করার সময় হাজরে আসওয়াদের পার্শ্ব দিয়ে অতিক্রম করার সময় ভিড় না হলে চুমা খাবে আর সুযোগ না হলে ঐ দিকে মুখ করে আল্লাহু আকবার বলে এগিয়ে যাবে।এই হাদীসটির তাহকিকঃ অন্যান্য
পরিচ্ছেদঃ ৩৭ –তাওয়াফের দুই রাকআত নামাজ
৮১১. হিশাম ইবনি উরওয়াহ্ [রাহিমাহুল্লাহ] হইতে বর্ণিতঃ
হিশাম ইবনি উরওয়াহ্ [রাহিমাহুল্লাহ] তাঁর পিতা হইতে বর্ণনা করেন তিনি দুই সাব্আর মাঝখানে নামাজ না পড়ে উভয়কে একত্র করিতেন না, বরং তিনি প্রত্যেক সাব্আর পর দুই রাকআত নামাজ আদায় করিতেন মাকামে ইবরাহীমের নিকট, আর কখনও পড়তেন অন্যত্র। {১} [হাদীসটি ঈমাম মালিক [রাহিমাহুল্লাহ] একক ভাবে বর্ণনা করিয়াছেন]
মালিক [রাহিমাহুল্লাহ]-কে জিজ্ঞেস করা হল কেউ যদি কয়েক সাবআর পর একত্রে সবগুলোর নামাজ আদায় করে তবে তা জায়েয হইবে কি ? তিনি বলিলেন, জায়েয হইবে না। প্রতি সাবআর [সাত তাওয়াফ] সঙ্গে সঙ্গেই দুই রাকআত নামাজ পড়া সুন্নত।
মালিক [রাহিমাহুল্লাহ] বলেন, ভুল করে যদি কেউ আট বা নয় চক্কর [তাওয়াফ] দিয়ে ফেলে তবে যখনই মনে পড়বে তাওয়াফ ছেড়ে দিবে এবং দুই রাকআত নামাজ আদায় করে নিবে। অতিরিক্ত তাওয়াফগুলো ধর্তব্যের বলে মনে করিবে না এবং দুই সাবআ সমাধা করে পরে একত্রে নামাজ আদায় করা সঙ্গত নয়। প্রতি সাব্আর [সাত তাওয়াফ] সঙ্গে সঙ্গেই দুই রাকআত নামাজ পড়া সুন্নত।
মালিক [রাহিমাহুল্লাহ] বলেন, তাওয়াফ করে দুই রাকআত নামাজ আদার করার পর সাত তাওয়াফ [চক্কর] পুরা হয়নি বলে যদি কারো মনে সন্দেহ হয় তবে তাকে য়াকীন [দৃঢ় বিশ্বাস]-এর উপর ভিত্তি করে তাওয়াফ পুরো করে আবার দুই রাকআত নামাজ আদায় করিতে হইবে। কারণ সাত চক্কর পূর্ণ করার পরই তাওয়াফের নামাজ পড়তে হয়।
মালিক [রাহিমাহুল্লাহ] বলেন, তাওয়াফ বা সায়ী করার সময় যদি কারো ওযূ নষ্ট হয়ে যায়, তবে ওযূ করে পুনরায় নতুন করে তাওয়াফ করিবে এবং সায়ীর যে কয় চক্কর অবশিষ্ট ছিল তা পুরা করিবে।
{১} তাওয়াফের সাত চক্করকে এ সাবআ বলা হয়। কাবা শরীফ তাওয়াফ করার দোয়া -এই হাদীসটির তাহকিকঃ নির্ণীত নয়
পরিচ্ছেদঃ ৩৮ –ফজর ও আসরের পর তাওয়াফের নামাজ আদায় করা
৮১২. বর্ণনাকারী হইতে বর্ণিতঃ
আবদুর রহমান ইবনি আবদ আল-কারিয়্যে [রাহিমাহুল্লাহ] ফজরের নামাযের পর উমার ইবনি খাত্তাব [রাদি.]-এর সঙ্গে বায়তুল্লাহর তাওয়াফ করেন। আবদুল্লাহ্ ইবনি উমার [রাদি.] যখন তাওয়াফ শেষ করেন তখনও সূর্যোদয় হয়নি। তিনি উটে আরোহণ করে বাহিরে গেলেন এবং যী-তুয়া নামক স্থানে পৌঁছে উট হইতে অবতরণ করে দুই রাকআত নামাজ আদায় করেন। {১} [হাদীসটি ঈমাম মালিক [রাহিমাহুল্লাহ] একক ভাবে বর্ণনা করিয়াছেন]
{১} খুযায়া গোত্রের একটি শাখার নাম “আলকারা”। সেই দিকে সম্পর্কিত বলে “আল-কারিয়্যে” বলা হয়েছে। কাবা শরীফ তাওয়াফ করার দোয়া -এই হাদীসটির তাহকিকঃ নির্ণীত নয়
৮১৩. আবু যুবায়র মক্কী [রাহিমাহুল্লাহ] হইতে বর্ণিতঃ
আবদুল্লাহ্ ইবনি আব্বাস [রাদি.]-কে আসরের পর তাওয়াফ করিতে দেখিতে পেলাম। তাওয়াফের পর হুজরায় চলে গেলেন। জানি না সেখানে তিনি কি করেছিলেন। {১}
[হাদীসটি ঈমাম মালিক [রাহিমাহুল্লাহ] একক ভাবে বর্ণনা করিয়াছেন], {১} হুজরায় প্রবেশ করে সে সময় তাওয়াফের দুই রাকআত নামাজ আদায় করেছিলেন, না সূর্যাস্তের পরে আদায় করেছিলেন তা জানা নাই। কাবা শরীফ তাওয়াফ করার দোয়া -এই হাদীসটির তাহকিকঃ নির্ণীত নয়
৮১৪. আবু যুবায়র মক্কী [রাহিমাহুল্লাহ] হইতে বর্ণিতঃ
আমি দেখেছি আসর ও ফজরের পর বায়তুল্লাহ্ খালি হয়ে পড়ত। ঐ সময় কোন তাওয়াফকারী থাকত না। [হাদীসটি ঈমাম মালিক [রাহিমাহুল্লাহ] একক ভাবে বর্ণনা করিয়াছেন]
মালিক [রাহিমাহুল্লাহ] বলেন, তাওয়াফ শুরু করার পর ফজর বা আসরের জামাতের তাকবীর শুরু হলে ইহা ত্যাগ করে ইমামের সাথে নামাযে শামিল হওয়া উচিত।
নামাজ পড়ার পর অবশিষ্ট তাওয়াফ পুরা করিবে। কিন্তু তাওয়াফের দুই রাকআত নামাজ ফজরের সময় সূর্যোদয় এবং আসরের সময় সূর্য অস্থ না যাওয়া পর্যন্ত আদায় করিবে না। মাগরিবের পর যদি উহা পড়ে তবে উহাতেও কোন দোষ নাই।
মালিক [রাহিমাহুল্লাহ] বলেন, সাত চক্করের উপর বৃদ্ধি না করে যদি কোন ব্যক্তি ফজর ও আসরের পর তাওয়াফ করে এবং তাওয়াফের দুই রাকআত নামাজ সূর্যোদয়ের পর আদায় করে নেয়, যেরূপ উমার ইবনি খাত্তাব [রাদি.] করেছিলেন, তাতে কোন দোষ নেই।
আর যদি আসরের পর তাওয়াফ করে থাকে তবে সূর্য অস্ত যাওয়ার পূর্বে তাওয়াফের নামাজ আদায় করিবে না। সূর্যাস্তের পর ইচ্ছা করলে তাওয়াফের দুই রাকআত নামাজ আদায় করে নিবে অথবা ইচ্ছা করলে মাগরিবের নামাজ সমাপ্ত করার পর আদায় করিবে, এতে কোন ক্ষতি নেই।
কাবা শরীফ তাওয়াফ করার দোয়া -এই হাদীসটির তাহকিকঃ নির্ণীত নয়
পরিচ্ছেদঃ ৩৯ –বিদায়ী তাওয়াফ
৮১৫. আবদুল্লাহ্ ইবনি উমার [রাদি.] হইতে বর্ণিতঃ
উমার ইবনি খাত্তাব [রাদি.] বলেছেন, বায়তুল্লাহর তাওয়াফ না করে হাজীগণের কেউ যেন মক্কা হইতে না ফিরে। কারণ হজ্জের শেষ আমল হল বায়তুল্লাহর তাওয়াফ। {১} [হাদীসটি ঈমাম মালিক [রাহিমাহুল্লাহ] একক ভাবে বর্ণনা করিয়াছেন]
মালিক [রাহিমাহুল্লাহ] বলেন, শেষ আমল বায়তুল্লাহর তাওয়াফ উমার ইবনি খাত্তাব [রাদি.]-এর উক্তির অর্থ হল, আল্লাহ্ তাআলা ইরশাদ করেন
وَمَنْ يُعَظِّمْ شَعَائِرَ اللهِ فَإِنَّهَا مِنْ تَقْوَى الْقُلُوْبِ
যে ব্যক্তি আল্লাহর নিদর্শনসমূহের মর্যাদা দেবে উহা তার আল্লাহভীতি হইতেই উৎসারিত। এ সবকিছুরই সম্পর্ক বায়তুল্লাহর সঙ্গে । সুতরাং হজ্জের সমস্ত রুকন ও আমল বায়তুল্লাহ্তে যেয়েই শেষ হয়।
[হাদীসটি ঈমাম মালিক [রাহিমাহুল্লাহ] একক ভাবে বর্ণনা করিয়াছেন];{১} এই তাওয়াফকে তাওয়াফুল-বিদা বা বিদায়ী তাওয়াফ বলা হয়। কাবা শরীফ তাওয়াফ করার দোয়া -এই হাদীসটির তাহকিকঃ নির্ণীত নয়
৮১৬. ইয়াহইয়া ইবনি সাঈদ [রাহিমাহুল্লাহ] হইতে বর্ণিতঃ
উমার ইবনি খাত্তাব [রাদি.] এক ব্যক্তিকে মাররুয-যাহরান [মক্কা শরীফ হইতে ১৮ মাইল দূরে অবস্থিত একটি স্থান] হইতে ফিরিয়ে দিয়েছিলেন। কারণ সে তাওয়াফুল বিদা করে আসেনি
। [হাদীসটি ঈমাম মালিক [রাহিমাহুল্লাহ] একক ভাবে বর্ণনা করিয়াছেন] , কাবা শরীফ তাওয়াফ করার দোয়া -এই হাদীসটির তাহকিকঃ নির্ণীত নয়
৮১৭. হিশাম ইবনি উরওয়াহ্ [রাহিমাহুল্লাহ] হইতে বর্ণিতঃ
হিশাম ইবনি উরওয়াহ্ [রাহিমাহুল্লাহ] তাঁর পিতা হইতে বর্ণনা করেন তিনি বলেছেন, তাওয়াফে ইফাযা [তাওয়াফে যিয়ারত] যে ব্যক্তি করিতে পেরেছে আল্লাহ্ তার হজ্জ পুরা করে দিয়েছেন। পরে বিশেষ অসুবিধা দেখা না দিলে সে যেন তাওয়াফূল-বিদাও করে নেয়। যদি কোন অসুবিধা দেখা দেয় এবং এই কারণে বিদায়ী তাওয়াফ করিতে না পারে তবে তাওয়াফে ইফাযা আদায় করায় হজ্জ তার পুরো হয়ে গিয়েছে।
[হাদীসটি ঈমাম মালিক [রাহিমাহুল্লাহ] একক ভাবে বর্ণনা করিয়াছেন];মালিক [রাহিমাহুল্লাহ] বলেন, তাওয়াফে যিয়ারত করার পর তাওয়াফুল বিদা জানা না থাকার কারণে যদি কেউ তা না করে মক্কা হইতে চলে আসে তবে আর তার জন্য ফিরে যাওয়া জরুরী নয়। তবে মক্কার নিকটবর্তী স্থানে থাকলে পুনরায় গিয়ে বিদায়ী-তাওয়াফ করে নেওয়া উচিত। কাবা শরীফ তাওয়াফ করার দোয়া -এই হাদীসটির তাহকিকঃ নির্ণীত নয়
পরিচ্ছেদঃ ৪০ –তাওয়াফের বিবিধ রেওয়ায়ত
৮১৮. নাবী [সাঃআঃ]-এর সহধর্মিনী উম্মে সালমা [রাদি.] হইতে বর্ণিতঃ
রসূলুল্লাহ্ [সাঃআঃ]-এর নিকট আমার অসুস্থতার কথা জানালে তিনি বলিলেন, পুরুষদের পেছনে থেকে কোন বাহনে আরোহণ করে তোমার তাওয়াফ আদায় করে নাও। উম্মে সালমা [রাদি.] বলেন, আমি তাওয়াফ করলাম, রসূলুল্লাহ্ [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম] তখন কাবা শরীফের এক কোণায় নামাযে দাঁড়িয়ে সূরা তূর পড়িতেছিলেন।
[বুখারি ৪৬৪, মুসলিম ১২৭৬];এই হাদীসটির তাহকিকঃ সহীহ হাদীস
৮১৯.আবুয যুবায়র মক্কী [রাহিমাহুল্লাহ] হইতে বর্ণিতঃ
আবা মায়িয আসলামী আবদুল্লাহ্ ইবনি সুফইয়ান [রাহিমাহুল্লাহ] তাঁর নিকট বর্ণনা করিয়াছেন তিনি আবদুল্লাহ্ ইবনি উমার [রাদি.]-এর নিকট বসা ছিলেন। তখন এক মহিলা এসে বলল, আমি বায়তুল্লাহ্র তাওয়াফের ইচ্ছা করেছিলাম। মসজিদের দরজা পর্যন্ত পৌঁছাতে আমার ঋতুস্রাব আরম্ভ হল। এমতাবস্থায় আমি ফিরে যাই। পরে ঋতুস্রাব বন্ধ হলে আবার তাওয়াফের জন্য আসি, কিন্তু মসজিদের দরজা পর্যন্ত পৌঁছতেই আবার ঋতুস্রাব শুরু হল। ফলে আবার ফিরে গেলাম। শেষে ঋতুস্রাব বন্ধ হলে আবার তাওয়াফ করিতে গেলাম। কিন্তু এইবারও দরজা পর্যন্ত যেতে না যেতে পুনরায় রক্ত দেখা দেয়। এখন কি করব ? আবদুল্লাহ্ ইবনি উমার [রাদি.] বলিলেন, ইহা শয়তানের কাণ্ড! গোসল করে লজ্জাস্থানে কাপড়ের পট্রি দিয়ে তাওয়াফ সেরে নাও।
[হাদীসটি ঈমাম মালিক [রাহিমাহুল্লাহ] একক ভাবে বর্ণনা করিয়াছেন], কাবা শরীফ তাওয়াফ করার দোয়া -এই হাদীসটির তাহকিকঃ নির্ণীত নয়
৮২০. মালিক [রাহিমাহুল্লাহ] হইতে বর্ণিতঃ
তাঁর নিকট রেওয়ায়ত পৌঁছেছে যে, সাদ ইবনি আবি ওয়াককাস [রাদি.] মক্কায় পৌঁছে যদি দেখিতেন নয় তারিখ অতি নিকটবর্তী [সময় অতি অল্প], তবে তাওয়াফ ও সায়ী করার পূর্বেই আরাফাতে চলে যেতেন এবং সেখান হইতে ফিরবার পর তাওয়াফ করিতেন। মালিক [রাহিমাহুল্লাহ] বলেন, সময় সংকীর্ণ হলে এইরূপ করা [আরাফাতে প্রথমে যাওয়া] জায়েয।
[হাদীসটি ঈমাম মালিক [রাহিমাহুল্লাহ] একক ভাবে বর্ণনা করিয়াছেন];মালিক [রাহিমাহুল্লাহ]-কে জিজ্ঞেস করা হল ওয়াজিব তাওয়াফ আদায় করার সময় কারো সাথে কথা বলার জন্য কি থেমে যাওয়া বৈধ ? তিনি বলিলেন, আমি তা পছন্দ করি না।মালিক [রাহিমাহুল্লাহ] বলেন, তাওয়াফ এবং সাফা-মারওয়ার সায়ী পবিত্রতার সহিত করা উচিত। কাবা শরীফ তাওয়াফ করার দোয়া -এই হাদীসটির তাহকিকঃ নির্ণীত নয়
Leave a Reply