কাবা নির্মাণ ও জাহিলীয়্যাতের যুগ এবং শপথ গ্রহণ
কাবা নির্মাণ ও জাহিলীয়্যাতের যুগ এবং শপথ গ্রহণ >> বুখারী শরীফ এর মুল সুচিপত্র পড়ুন
পর্বঃ ৬৩, আনসারগণের মর্যাদা, অধ্যায়ঃ (২৫-২৭)=৩টি
৬৩/২৫. অধ্যায়ঃ কাবা নির্মাণ।
৬৩/২৬. অধ্যায়ঃ জাহিলীয়্যাতের যুগ।
৬৩/২৭. অধ্যায়ঃ জাহিলী যুগের কাসামাহ ( শপথ গ্রহণ )
৬৩/২৫. অধ্যায়ঃ কাবা নির্মাণ।
৩৮২৯
জাবির ইবনু আবদুল্লাহ (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, যখন কাবা গৃহ পুনর্নির্মাণ করা হচ্ছিল তখন নাবী (সাঃআঃ) ও আব্বাস (রাদি.) পাথর বয়ে আনছিলেন। আব্বাস (রাদি.) নাবী (সাঃআঃ) – কে বলিলেন, তোমার লুঙ্গিটি কাঁধের উপর রাখ, পাথরের ঘর্ষণ হইতে তোমাকে রক্ষা করিবে। (লুঙ্গি খুলতেই) তিনি অজ্ঞান হয়ে মাটিতে পড়ে গেলেন। তাহাঁর চোখ দুটি আকাশের দিকে নিবিষ্ট ছিল। তাহাঁর চেতনা ফিরে এল, তখন তিনি বলিতে লাগলেন, আমার লুঙ্গি, আমার লুঙ্গি। তৎক্ষণাৎ তাহাঁর লুঙ্গি পরিয়ে দেয়া হল।
(আঃপ্রঃ ৩৫৪৪, ইঃফাঃ ৩৫৪৯)
৩৮৩০
আমর ইবনু দীনার ও উবাইদুল্লাহ ইবনু ইয়াযীদ (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) হইতে বর্ণিতঃ
তারা বলেন, নাবী (সাঃআঃ) – এর যুগে কাবা ঘরের চারিপাশে কোন প্রাচীর ছিল না। লোকজন কাবা ঘরকে কেন্দ্র করে তার চারপাশে সলাত আদায় করত। উমার (রাদি.) কাবার চতুষ্পার্শ্বে প্রাচীর নির্মাণ করেন। উবাইদুল্লাহ (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) বলেন, এ প্রাচীর ছিল নীচু, অতঃপর আবদুল্লাহ ইবনু যুবায়র (রাদি.) তা নির্মাণ করেন।
(আঃপ্রঃ ৩৫৪৫, ইঃফাঃ ৩৫৫০)
৬৩/২৬. অধ্যায়ঃ জাহিলীয়্যাতের যুগ।
৩৮৩১
আয়েশা (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, জাহিলী যুগে আশুরার দিন কুরাইশগণ ও নাবী (সাঃআঃ) সাওম পালন করিতেন। যখন হিজরত করে মদীনায় আগমন করিলেন, তখন তিনি নিজেও আশুরার সাওম পালন করিতেন এবং অন্যকেও তা পালনের নির্দেশ দিতেন। যখন রমাযানের সাওম ফরয করা হল তখন যার ইচ্ছা (আশুরা) সওম করিতেন আর যার ইচ্ছা করিতেন না।
(আঃপ্রঃ ৩৫৪৬, ইঃফাঃ ৩৫৫১)
৩৮৩২
ইবনু আব্বাস (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, হাজ্জের মাসগুলোতে উমরাহ পালন করাকে কুরাইশগণ পাপ কাজ বলে মনে করত। তারা মুহাররম মাসের নামকে পরিবর্তন করে সফর মাস নাম দিত এবং বলত, (উটের) যখম যখন শুকিয়ে যাবে এবং পায়ের চিহ্ন মুছে যাবে তখন উমরাহ পালন করা হালাল হইবে যারা পালন করিতে চায়। রাসুলুল্লাহ (সাঃআঃ) ও তাহাঁর সঙ্গী সাথীগণ যিলহাজ্জ মাসের চার তারিখে হাজ্জের তালবিয়াহ পড়তে পড়তে মক্কায় হাযির হলেন। রাসুলুল্লাহ (সাঃআঃ) তারঁ সঙ্গী-সাথীদেরকে বলিলেন, তোমরা উমরায় পরিণত করে নেও। সাহাবীগণ জিজ্ঞেস করিলেন, হে আল্লাহর রাসুল! আমাদের জন্য কোন কোন বিষয় হালাল হইবে? তিনি বলিলেন, সকল বিষয় হালাল হয়ে যাবে।
(আঃপ্রঃ ৩৫৪৭, ইঃফাঃ ৩৫৫২)
৩৮৩৩
সাঈদ ইবনু মুসাইয়্যাব (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) হইতে বর্ণিতঃ
সাঈদ ইবনু মুসাইয়্যাব (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) তাহাঁর পিতার মাধ্যমে দাদা হইতে বর্ণনা করেন যে, জাহিলীয়্যাতের যুগে একটি বন্যা হয়েছিল। যাতে মক্কায় দুটি পাহাড়ের মধ্যস্থল সম্পূর্ন প্লাবিত হয়েছিল। সুফ্ইয়ান (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) বলেন, আমর ইবনু দীনার বলিতেন, এ হাদীসটির একটি দীর্ঘ পটভূমি আছে।
(আঃপ্রঃ ৩৫৪৮, ইঃফাঃ ৩৫৫৩)
৩৮৩৪
কাইস ইবনু আবু হাযিম (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, একদিন আবু বকর (রাদি.) আহমাস গোত্রের যায়নাব নামের এক নারীর নিকট গেলেন। তিনি গিয়ে দেখিতে পেলেন, নারীটি কথাবার্তা বলছে না। তিনি (লোকজনকে) জিজ্ঞেস করিলেন, নারীটির এ অবস্থা কেন, কথাবার্তা বলছে না কেন? তারা তাঁকে জানালেন, এ নারী নীরব থেকে থেকে হাজ্জ পালন করে আসছেন। আবু বকর (রাদি.) তাঁকে বলিলেন, কথা বল, কেননা এটা হালাল নয়। এটা জাহিলীয়্যাত যুগের কাজ। তখন নারীটি কথাবার্তা বলিল। জিজ্ঞেস করিল, আপনি কে? আবু বকর (রাদি.) উত্তরে বলিলেন, আমি একজন মুহাজির লোক। মহিলাটি জিজ্ঞেস করিল, আপনি কোন গোত্রের মুহাজির? আবু বকর (রাদি.) বলিলেন, কুরাইশ গোত্রের। মহিলাটি জিজ্ঞেস করিলেন, কোন কুরাইশের কোন শাখার আপনি? আবু বকর (রাদি.) বলিলেন, তুমি তো অত্যধিক উত্তম প্রশ্নকারিণী। আমি আবু বকর। তখন মহিলাটি তাঁকে জিজ্ঞেস করিল, জাহিলীয়্যা যুগের পর যে উত্তম দ্বীন ও কল্যাণময় জীবন বিধান আল্লাহ আমাদেরকে দান করিয়াছেন সে দ্বীনের উপর আমরা কতদিন সঠিকভাবে টিকে থাকতে পারব? আবু বকর (রাদি.) বলিলেন, যতদিন তোমাদের ইমামগণ তোমাদেরকে নিয়ে দ্বীনের উপর অটল থাকবেন। মহিলা জিজ্ঞেস করিল, ইমামগণ কারা? আবু বকর (রাদি.) বলিলেন, তোমাদের গোত্রে ও সমাজে এমন সম্ভ্রান্ত ও নেতৃস্থানীয় লোক কি দেখনি যারা নির্দেশ দিলে সকলেই তা মেনে চলে? নারীটি উত্তর দিল, হাঁ। আবু বকর (রাদি.) বলিলেন, এরাই হলেন জনগণের ইমাম।
(আঃপ্রঃ ৩৫৪৯, ইঃফাঃ ৩৫৫৪)
৩৮৩৫
আয়েশা (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, আরবের কোন এক গোত্রের এক (মুক্তিপ্রাপ্ত) কৃষ্ণকায় মহিলা ইসলাম গ্রহণ করেন। মসজিদের পাশে ছিল তার একটি ছোট ঘর। আয়েশা (রাদি.) বলেন, সে আমদের নিকট আসত এবং আমাদের সাথে কথাবার্তা বলত। যখন তার বাক্যালাপ শেষ হত তখন প্রায়ই বলতো, ইয়াওমূল বিশাহ (মণিমুক্তা খচিত হারের দিন) আমাদের রবের পক্ষ হইতে আশ্চর্যজনক ঘটনাবলীর একটি দিন জেনে রাখুন! আমার রব আমাকে কুফর এর দেশ হইতে মুক্তি দিয়েছেন। সে এ কথাটি প্রায়ই বলত। একদিন আয়েশা (রাদি.) ঐ মহিলাকে জিজ্ঞেস করিলেন, ইয়াওমূল বিশাহ কী? তখন সে বলিল যে, আমার মুনিবের পরিবারের এক শিশু কন্যা ঘর হইতে বের হল। তার গলায় চামড়ার (উপর মনিমুক্তা খচিত) একটি হার ছিল। হারটি (ছিড়ে) গলা হইতে পড়ে গেল। তখন একটি চিল ওটা গোশ্তের টুকরা মনে করে ছোঁ মেরে নিয়ে গেল। তারা আমাকে হার চুরির সন্দেহে শাস্তি ও নির্যাতন করিতে লাগল। অবশেষে তারা আমার লজ্জাস্থানে তল্লাশী চালাল। যখন তারা আমার চারপাশে ছিল এবং আমি চরম দুঃখে ছিলাম এমন সময় একটি চিল কোত্থেকে উড়ে আসল এবং আমাদের মাথার উপরে এসে হারটি ফেলে দিল। তারা হারটি তুলে নিল। তখন আমি বললাম, এটা হল সেই হার যেটা চুরির জন্য আমার উপর অপবাদ দিয়েছ, অথচ এ ব্যাপারে আমি সম্পূর্ণ নির্দোষ।
(আঃপ্রঃ ৩৫৫০, ইঃফাঃ ৩৫৫৫)
৩৮৩৬
ইবনু উমর (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ
ইবনু উমর (রাদি.) সূত্রে নাবী (সাঃআঃ) হইতে বর্ণিত, তিনি বলেন, সাবধান! যদি তোমাদের কসম করিতে হয় তাহলে আল্লাহ ছাড়া অন্য কারো নামে কসম করো না। লোকজন তাদের বাপ-দাদার নামে কসম করত। তিনি বলিলেন, সাবধান! বাপ-দাদার নামে কসম করো না।
(আঃপ্রঃ ৩৫৫১, ইঃফাঃ ৩৫৫৬)
৩৮৩৭
আমর (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ
যে, আবদুর রাহমান ইবনু কাসিম (রাদি.) তার কাছে বলেছেন যে, কাসিম জানাযা বহন করার সময় আগে আগে চলতেন। জানাযা দেখলে তিনি দাঁড়াতেন না [১] এবং তিনি বর্ণনা করিয়াছেন যে, আয়েশা (রাদি.) বলিতেন, জাহিলী যুগে মুশরিকগণ জানাযা দেখলে দাঁড়াত এবং মৃত ব্যক্তির রূহকে লক্ষ্য করে বলত, তুমি তোমার আপন জনদের সাথেই আছ যেমন তোমার জীবদ্দশায় ছিলে। এ কথাটি তার দুবার বলত।
(আঃপ্রঃ ৩৫৫২, ইঃফাঃ ৩৫৫৭)
[১] ১৩১১, ১৩১২, ১৩১৩ নং হাদীস এর বৈপরিত্য লক্ষ্য করা যায়। উক্ত হাদীসগুলোতে জানাযা দেখে দাঁড়ানোর প্রমান পাওয়া যায়। এব্যাপারে ইবনু হাজার আসকালানী (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) – এর ফাতহুল বারীতে আছে, যে সকল মাসাআলার সাথে অন্যান্য সাহাবীর সঙ্গে মা আয়েশা (রাদি.) – এর মত পার্থক্য ছিল এটি তার অন্তর্গত। তবে এখানে উক্ত হাদীসত্রয়ের আলোকে যা মা আয়েশার মতের চেয়ে অন্যান্য সাহাবীর মতই প্রাধান্য পায়।
(ফাতহুল বারী ৭ম খন্ড ১৯২ পৃষ্ঠা )
৩৮৩৮
আমর ইবনু মায়মূন (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, উমার ইবনুল খাত্তাব (রাদি.) বলেন, মুশরিকগণ সাবীর পাহাড়ের উপর সূর্যের কিরণ না পড়া পর্যন্ত মুয্দালাফা হইতে রওয়ানা হত না। নাবী (সাঃআঃ) সূর্য উঠার আগে রাওয়ানা হয়ে তাদের প্রথার খেলাফ করেন।
(আঃপ্রঃ ৩৫৫৩, ইঃফাঃ ৩৫৫৮)
৩৮৩৯
ইকরিমাহ (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) হইতে বর্ণিতঃ
ইকরিমাহ (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) বলেন, আল্লাহর বাণীঃ كَأْسًا دِهَاقًا (আন-নাবাঃ ৩৪) এর তাফসীর প্রসঙ্গে বলেন, একের পর এক শরাবে পূর্ণ পেয়ালা। (আঃপ্রঃ ৩৫৫৪ প্রথমাংশ, ইঃফাঃ ৩৫৫৯ প্রথমাংশ)
(আঃপ্রঃ ৩৫৫৪ প্রথমাংশ, ইঃফাঃ ৩৫৫৯ প্রথমাংশ)
৩৮৪০
ইবনু আব্বাস (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ
ইবনু আব্বাস (রাদি.) বলেন, আমার পিতা আব্বাস (রাদি.) – কে ইসলামের পূর্ব যুগে বলিতে শুনিয়াছি, আমাদেরকে পাত্র ভর্তি শরাব একের পর এক পান করাও।
(আঃপ্রঃ ৩৫৫৪, ইঃফাঃ ৩৫৫৯ শেষাংশ)
৩৮৪১
আবু হুরাইরা (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, নাবী (সাঃআঃ) বলেছেন, সবচেয়ে সঠিক বাক্য যা কোন কবি বলেছেন তা হল লাবীদ এর এ পংক্তিটি – সাবধান, আল্লাহ ছাড়া সব জিনিসই বাতিল ও অসার। এবং কবি উমাইয়্যা ইবনু আবু সাল্ত ইসলাম গ্রহণের কাছাকাছি পৌঁছে গিয়েছিল।
(আঃপ্রঃ ৩৫৫৫, ইঃফাঃ ৩৫৬০)
৩৮৪২
আয়েশা (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, আবু বকর (রাদি.) – এর একজন ক্রীতদাস ছিল। সে প্রতিদিন তার উপর ধার্য কর আদায় করত। আর আবু বকর (রাদি.) তার দেওয়া কর হইতে আহার করিতেন। একদিন সে কিছু খাবার জিনিস এনে দিল। তা হইতে তিনি আহার করিলেন। তারপর গোলাম বলিল, আপনি জানেন কি ওটা কিভাবে উপার্জিত করা হয়েছে যা আপনি খেয়েছেন? তিনি বলিলেন, বলত কিভাবে? গোলাম উত্তরে বলিল, আমি জাহিলী যুগে এক ব্যক্তির ভবিষ্যৎ গণনা করে দিয়েছিলাম। কিন্তু ভবিষ্যৎ গণনা আমার ভালভাবে জানা ছিল না। তথাপি প্রতারণা করে তা করেছিলাম। আমার সাথে তার দেখা হলে গণনার বিনিময়ে এ দ্রব্যাদি সে আমাকে হাদীয়া দিল যা হইতে আপনি আহার করিলেন। আবু বকর (রাদি.) এটা শুনামাত্র মুখের ভিতর হাত ঢুকিয়ে দিলেন এবং পেটের ভিতর যা কিছু ছিল সবই বমি করে দিলেন।
(আঃপ্রঃ ৩৫৫৬, ইঃফাঃ ৩৫৬১)
৩৮৪৩
ইবনু উমর (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, ইসলামের পূর্ব যুগে মানুষ হাবালুল হাবালা রুপে উটের গোশ্ত ক্রয়-বিক্রয় করত। রাবী বলেন, হাবালুল হাবালার অর্থ হল – তারা উট কেনা বেচা করত এই শর্তে যে, কোন নিদিষ্ট গর্ভবতী উটনী বাচ্চা প্রসব করলে পর ঐ প্রসব করা বাচ্চা যখন গর্ভবতী হইবে তখন উটের দাম পরিশোধ করা হইবে। নাবী (সাঃআঃ) তাদেরকে এরুপ কেনা বেচা করিতে নিষেধ করে দিলেন।
(আঃপ্রঃ ৩৫৫৭, ইঃফাঃ ৩৫৬২)
৩৮৪৪
গায়লান ইবনু জারীর (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) হইতে বর্ণিতঃ
আমরা আনাস ইবনু মালিক (রাদি.) – এর কাছে গেলে তিনি আমাদের কাছে আনসারদের ঘটনা বর্ণনা করিতেন। রাবী বলেন, আমাকে লক্ষ্য করে তিনি বলিতেন, তোমার জাতি অমুক অমুক দিন অমুক অমুক কাজ করেছে, অমুক অমুক দিন অমুক অমুক কাজ করেছে।
(আঃপ্রঃ ৩৫৫৮, ইঃফাঃ ৩৫৬৩)
৬৩/২৭. অধ্যায়ঃ জাহিলী যুগের কাসামাহ ( শপথ গ্রহণ )
৩৮৪৫
ইবনু আব্বাস (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, সর্বপ্রথম কাসামাহ হত্যাকারী গোত্রের লোকের (শপথ গ্রহণ) জাহিলী যুগে অনুষ্ঠিত হয় আমাদের হাশেম গোত্রে। কুরাইশের কোন একটি শাখা গোত্রের একজন লোক বনু হাশিমের একজন মানুষকে মজুর হিসাবে নিয়োগ করিল। ঐ মজুর তার সাথে উটগুলির নিকট গমন করিল। ঘটনাক্রমে বনু হাশিমের অপর এক ব্যক্তি তাদের নিকট দিয়ে যাচ্ছিল। তাদের নিকটবর্তী হওয়ার পর খাদ্যপূর্ণ বস্তার বাঁধন ছিড়ে গেল। তখন সে মজুর ব্যক্তিটিকে বলিল, আমাকে একটি রশি দিয়ে সাহায্য কর, যেন আমার বস্তার মুখ বাঁধতে পারি এবং উটটিও যেন পালিয়ে যেতে না পারে। মজুর তাকে একটি রশি দিল। ঐ ব্যক্তি তার বস্তার মুখ বেঁধে নিল। যখন তারা অবতরণ করিল তখন একটি ছাড়া সকল উট বেঁধে রাখা হল। মজুর নিয়োগকারী মজুরকে জিজ্ঞেস করিল, সকল উট বাঁধা কিন্তু এ উটটি বাঁধা হল না কেন? মজুর উত্তরে বলিল, এ উটটি বাঁধার কোন রশি নেই। তখন সে বলিল, এই উটটির রশি কোথায়? রাবী বলেন, এ কথা শুনে মালিক মজুরকে লাঠি দিয়ে এমনভাবে আঘাত করিল যে শেষ পর্যন্ত এ আঘাতেই তার মৃত্যু হল। আহত মজুরটি যখন মুমূর্ষ অবস্থায় মৃত্যুর প্রহর গুণছিল, তখন ইয়ামানের একজন লোক তার নিকট দিয়ে যাচ্ছিল। আহত মজুর তাকে জিজ্ঞেস করিল, আপনি কি এবার হাজ্জে যাবেন? সে বলিল, না, তবে অনেকবার গিয়েছি। আহত মজুরটি বলিল, আপনি কি আমার সংবাদটি আপনার জীবনে যে কোন সময় পৌছে দিতে পারেন? ইয়ামানী লোকটি উত্তরে বলিল, হাঁ তা পারব। তারপর মজুরটি বলিল, আপনি যখন হজ্জ উপলক্ষে মক্কায় উপস্থিত হইবেন তখন হে কুরাইশের লোকজন বলে ঘোষণা দিবেন। যখন তারা আপনার ডাকে সাড়া দিবে, তখন আপনি বনু হাশিম গোত্রকে ডাক দিবেন, যদি তারা আপনার ডাকে সাড়া দেয়, তবে আপনি তাদেরকে আবু তালিব সম্পর্কে জিজ্ঞেস করবেন এবং তাকে পেলে জানিয়ে দিবেন যে, অমুক ব্যক্তি একটি রশির কারণে আমাকে হত্যা করেছে। কিছুক্ষণ পর আহত মজুরটি মৃত্যু হল। মজুর নিয়োগকারী যখন মক্কায় ফিরে এল তখন আবু তালিব তার নিকট গিয়ে জিজ্ঞেস করিলেন আমাদের ভাইটি কোথায়? তার কি হয়েছে? এখনও ফিরছে না কেন? সে বলিল, আপনার ভাই হঠাৎ ভীষণ রোগে আক্রান্ত হয়ে শেষ পর্যন্ত মারা গেছে। আমি যথাসাধ্য সেবা শুশ্রূষা করেছি। মারা যাওয়ার পর আমি তাকে যথারীতি সমাহিত করেছি। আবু তালিব বলিলেন, তুমি এরূপ করিবে আমরা এ আশাই পোষণ করি। এভাবে কিছুদিন কেটে গেল। তারপর ঐ ইয়ামানী ব্যক্তি যাকে সংবাদ পৌছে দেয়ার জন্য মজুর ব্যক্তিটি অসিয়াত করেছিল, হজ্জব্রত পালনে মক্কায় উপস্থিত হল এবং হে কুরাইশগণ বলে ডাক দিল। তখন তাকে বলা হল, এই যে, কুরাইশ। সে আবার বলিল, হে বনু হাশিম, বলা হল; এই যে, বনু হাশিম। সে জিজ্ঞেস করিল, আবু তালিব কোথায়? লোকজন আবু তালিবকে দেখিয়ে দিল। তখন ইয়ামানী লোকটি বলিল, আপনাদের অমুক ব্যক্তি আপনার নিকট এ সংবাদটি পৌছে দেয়ার জন্য আমাকে অসিয়াত করেছিল যে অমুক ব্যক্তি মাত্র একটি রশির কারণে তাকে হত্যা করেছে। এ কথা শুনে আবু তালিব মজুর নিয়োগকারী ব্যক্তির নিকট গমন করে বলিল; (তুমি আমাদের ভাইকে হত্যা করেছ) কাজেই আমদের তিনটি প্রস্তাবের যে কোন একটি তোমাকে মেনে নিতে হইবে। তুমি হয়ত হত্যার বিনিময়ে একশ উট দিবে অথবা তোমার গোত্রের বিশ্বাসযোগ্য পঞ্চাশ জন লোক হলফ করে বলবে যে তুমি তাকে হত্যা করনি। যদি তুমি এও করিতে অস্বীকার কর তবে আমরা তোমাকে হত্যার বিনিময়ে হত্যা করব। তখন হত্যাকরী ব্যক্তিটি নিজ গোত্রীয় লোকদের নিকট গমন করে ঘটনা বর্ণনা করিল। ঘটনা শুনে তারা বলিল, আমরা হলফ করে বলব। তখন বনু হাশিম গোত্রের এক মহিলা যার বিবাহ হত্যাকারীর গোত্রে হয়েছিল এবং তার একটি সন্তানও হয়েছিল, আবু তালিবের নিকট এসে বলিল, হে আবু তালিব, আমি এ আশা নিয়ে এসেছি যে, আপনি পঞ্চাশ জন হলফকারী হইতে আমার এ সন্তানটিকে রেহাই দিবেন এবং ঐ স্থানে তার হলফ নিবেন না যে স্থানে হলফ নেয়া হয়। আবু তালিব তার আবদারটি মনজুর করিলেন। তারপর হত্যাকারীর গোত্রের এক পুরুষ আবু তালিবের নিকট এসে বলিল, হে আবু তালিব, আপনি একশ উটের পরিবর্তে পঞ্চাশ জনের হলফ নিতে চাচ্ছেন, এ হিসাব অনুযায়ী প্রতিটি হলফকারীর উপর দুটি উট পড়ে। আমার দুটি উট গ্রহণ করুন এবং যেখানে হলফ করার জন্য দাঁড় করানো হয় সেখানে দাঁড় করানো হইতে আমাকে অব্যাহতি দেন। অপর আট চল্লিশজন এসে যথাস্থানে হলফ করিল। ইবনু আব্বাস (রাদি.) বলেন, আল্লাহর কসম, হলফ করার পর একটি বছর অতিবাহিত হওয়ার পূর্বেই ঐ আটচল্লিশ জনের একজনও বেঁচে ছিল না।
(আঃপ্রঃ ৩৫৫৯, ইঃফাঃ ৩৫৬৪)
৩৮৪৬
আয়েশা (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, বুআস যুদ্ধ এমন একটি যুদ্ধ ছিল যা আল্লাহ তাআলা তাহাঁর রাসুল (সাঃআঃ) – এর অনুকূলে হিজরতের পূর্বেই সংঘটিত করেছিলেন। এ যুদ্ধের কারণে তারা বিভিন্ন দলে উপদলে বিভক্ত হয়েছিল এবং এদের নেতৃস্থানীয় ব্যক্তিবর্গ এই যুদ্ধে নিহত ও আহত হয়েছিল। আল্লাহ তাআলা এ যুদ্ধ ঘটিয়ে ছিলেন এ কারণে যেন তারা ইসলাম গ্রহণ করে নেয়।
(আঃপ্রঃ ৩৫৬০ শেষাংশ, ইঃফাঃ ৩৫৬৫ শেষাংশ)
৩৮৪৭
ইবনু আব্বাস (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ
ইবনু আব্বাস (রাদি.) বলেন, সাফা ও মারওয়ার মধ্যে অবস্থিত বাতনে ওয়াদী নামক স্থানে সাঈ (দৌড়ান) করা সুন্নাত নয়। জাহিলী যুগের লোকেরাই কেবল সেখানে সাঈ করত এবং বলত, আমরা বাতহা নামক জায়গাটি তাড়াতাড়ি দৌড়ে পার হব।
(আঃপ্রঃ ৩৫৬০ শেষাংশ, ইঃফাঃ ৩৫৬৫ শেষাংশ)
৩৮৪৮
আবুস্ সাফার (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) হইতে বর্ণিতঃ
আবুস্ সাফার (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) বলেন, আমি ইবনু আব্বাস (রাদি.) – কে এ কথা বলিতে শুনিয়াছি, হে লোকেরা! আমি যা বলছি তা মনোযোগ দিয়ে শোন এবং তোমরা যা বলিতে চাও তাও আমকে শুনাও এবং এমন যেন না হয় যে তোমরা এখান হইতে চলে গিয়ে বলবে ইবনু আব্বাস এমন বলেছেন। যে ব্যক্তি বাইতুল্লাহ শরীফের তাওয়াফ করিতে ইচ্ছা করে সে যেন হিজর এর বাহির হইতে তাওয়াফ করে এবং এ জায়গাকে হাতীম বলবে না কারণ, জাহিলী যুগে কোন লোক এ জায়গাটিতে তার চাবুক, জুতা, তীর, ধনু ইত্যাদি নিক্ষেপ করে হলফ করত।
(আঃপ্রঃ ৩৫৬১, ইঃফাঃ ৩৫৬৬)
৩৮৪৯
আমর ইবনু মাইমূন (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, আমি জাহিলীয়্যাতের যুগে দেখেছি, একটি বানরী ব্যাভিচার করার কারণে অনেকগুলো বানর একত্র হয়ে প্রস্তর নিক্ষেপে তাকে হত্যা করিল। আমিও তাদের সাথে প্রস্তর নিক্ষেপ করলাম।
(আঃপ্রঃ ৩৫৬২, ইঃফাঃ ৩৫৬৭)
৩৮৫০
ইবনু আব্বাস (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, জাহিলী যুগের কাজের মধ্যে একটি হলঃ কারো বংশ-কুল নিয়ে খুঁটা দেয়া, কারো মৃত্যুতে বিলাপ করা। তৃতীয়টি (বারী উবাইদুল্লাহ) ভুলে গেছেন। তবে সুফিয়ান (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) বলেন, তৃতীয় কাজটি হল, তারকার সাহায্যে বৃষ্টি চাওয়া।
(আঃপ্রঃ ৩৫৬৩, ইঃফাঃ ৩৫৬৮)
Leave a Reply