কাবা ঘর নিয়ে হাদিস – গিলাফ ,ধ্বংস, সালাত এবং রামল করা
কাবা ঘর নিয়ে হাদিস – গিলাফ ,ধ্বংস, সালাত এবং রামল করা >> বুখারী শরীফ এর মুল সুচিপত্র পড়ুন
পর্বঃ ২৫, হজ্জ, অধ্যায়ঃ (৪৮-৫৭)=১০টি
২৫/৪৮. অধ্যায়ঃ কাবা গিলাফ দ্বারা আবৃত করা।
২৫/৪৯. অধ্যায়ঃ কাবা ঘর ধ্বংস করা।
২৫/৫০. অধ্যায়ঃ হাজ্রে আসওয়াদ সম্পর্কে যা কিছু বর্ণিত হয়েছে।
২৫/৫১. অধ্যায়ঃ কাবা ঘরের দরজা বন্ধ করা এবং কাবা ঘরের ভিতর যেখানে ইচ্ছা সালাত আদায় করা।
২৫/৫২. অধ্যায়ঃ কাবার অভ্যন্তরে সালাত আদায় করা।
২৫/৫৩. অধ্যায়ঃ কাবার অভ্যন্তরে যে প্রবেশ করেনি।
২৫/৫৪. অধ্যায়ঃ কাবা ঘরের অভ্যন্তরে চতুর্দিকে তাকবীর ধ্বনি দেয়া।
২৫/৫৫. অধ্যায়ঃ রামল কিভাবে শুরু হয়েছিল।
২৫/৫৬. অধ্যায়ঃ মক্কায় আগমণের পরই তাওয়াফের প্রারম্ভে হাজ্রে আসওয়াদ চুম্বন ও স্পর্শ করা এবং তিন চক্করে রামল করা।
২৫/৫৭. অধ্যায়ঃ হজ্জ ও উমরাতে রামল করা।
২৫/৪৮. অধ্যায়ঃ কাবা গিলাফ দ্বারা আবৃত করা।
১৫৯৪. আবু ওয়াইল (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, কাবার সামনে আমি শাইবাহর সাথে কুরসীতে বসলাম। তখন তিনি বলিলেন, উমর (রাদি.) এখানে বসেই বলেছিলেন, আমি কাবা ঘরে রক্ষিত সোনা ও রূপা বণ্টন করে দেয়ার ইচ্ছা করেছি। (শাইবাহ বলেন) আমি বললাম, আপনার উভয় সঙ্গী [আল্লাহর রাসুল (সাঃআঃ) ও আবু বকর (রাদি.)] তো এরূপ করেননি। তিনি বলিলেন, তাঁরা এমন দু ব্যক্তিত্ব যাঁদের অনুসরণ আমি করব। (৭২৭৫)
(আঃপ্রঃ ১৪৯০, ইঃফাঃ ১৪৯৬)
২৫/৪৯. অধ্যায়ঃ কাবা ঘর ধ্বংস করা।
আয়েশা (রাদি.) বলেন, নাবী করীম (সাঃআঃ) বলেছেনঃ একটি সেনাদল কাবা আক্রমণ করিবে, কিন্তু তাদেরকে ভূগর্ভে ধসিয়ে দেয়া হইবে।
১৫৯৫. ইবনু আব্বাস (রাদি.) সূত্রে নাবী (সাঃআঃ) হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেনঃ আমি যেন দেখিতে পাচ্ছি কাল বর্ণের বাঁকা পা বিশিষ্ট লোকেরা (কাবা ঘরের) একটি একটি করে পাথর খুলে এর মূল উতপাটন করে দিচ্ছে।
(আঃপ্রঃ ১৪৯১, ইঃফাঃ ১৪৯৭)
১৫৯৬. আবু হুরাইরা (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, আল্লাহর রাসুল (সাঃআঃ) বলেছেনঃ হাবশার অধিবাসী পায়ের সরু নলা বিশিষ্ট লোকেরা কাবা ঘর ধ্বংস করিবে। (১৫৯১)
(আঃপ্রঃ ১৪৯২, ইঃফাঃ ১৪৯৮)
২৫/৫০. অধ্যায়ঃ হাজ্রে আসওয়াদ সম্পর্কে যা কিছু বর্ণিত হয়েছে।
১৫৯৭. উমর (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ
তিনি হাজ্রে আসওয়াদের কাছে এসে তা চুম্বন করে বলিলেন, আমি অবশ্যই জানি যে, তুমি একখানা পাথর মাত্র, তুমি কারো কল্যাণ বা অকল্যাণ করিতে পার না। নাবী (সাঃআঃ)-কে তোমায় চুম্বন করিতে না দেখলে কখনো আমি তোমাকে চুম্বন করতাম না।
(১৬০৫, ১৬১০, মুসলিম ১৫/৪১, হাদীস ১২৭০) (আঃপ্রঃ ১৪৯৩, ইঃফাঃ ১৪৯৯)
২৫/৫১. অধ্যায়ঃ কাবা ঘরের দরজা বন্ধ করা এবং কাবা ঘরের ভিতর যেখানে ইচ্ছা সালাত আদায় করা।
১৫৯৮. আবদুল্লাহ ইবনু উমর (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, নাবী (সাঃআঃ) এবং উসামাহ ইবনু যায়দ, বিলাল ও উসমান ইবনু তালহা (রাদি.) বাইতুল্লাহর ভিতরে প্রবেশ করে দরজা বন্ধ করে দিলেন। যখন খুলে দিলেন তখন প্রথম আমিই প্রবেশ করলাম এবং বিলালের সাক্ষাত পেয়ে তাকে জিজ্ঞেস করলাম, আল্লাহর রাসুল (সাঃআঃ) কি কাবার ভিতরে সালাত আদায় করিয়াছেন? তিনি বলিলেন, হ্যাঁ, ইয়ামেনের দিকের দুটি স্তম্ভের মাঝখানে। (৩৯৭)
(আঃপ্রঃ ১৪৯৪, ইঃফাঃ ১৫০০)
২৫/৫২. অধ্যায়ঃ কাবার অভ্যন্তরে সালাত আদায় করা।
১৫৯৯. ইবনু উমর (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ
যখন তিনি কাবা ঘরের ভিতরে প্রবেশ করিতেন, তখন দরজা পিছনে রেখে সোজা সম্মুখের দিকে চলে যেতেন, এতদূর অগ্রসর হইতেন যে, সম্মুখের দেয়ালটি মাত্র তিন হাত পরিমাণ দূরে থাকতো এবং বিলাল (রাদি.) আল্লাহর রাসুল (সাঃআঃ) যেখানে সালাত আদায় করিয়াছেন বলে বর্ণনা করিয়াছেন, সেখানে গিয়ে দাঁড়িয়ে তিনি সালাত আদায় করিতেন। অবশ্য কাবার ভিতরে যে কোন স্থানে সালাত আদায় করাতে কোন দোষ নেই। (৩৯৭)
(আঃপ্রঃ ১৪৯৫, ইঃফাঃ ১৫০১)
২৫/৫৩. অধ্যায়ঃ কাবার অভ্যন্তরে যে প্রবেশ করেনি।
ইবনু উমর (রাদি.) বহুবার হজ্জ করিয়াছেন কিন্তু কাবা ঘরে প্রবেশ করেননি।
১৬০০. আবদুল্লাহ ইবনু আবু আওফা (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, আল্লাহর রাসুল (সাঃআঃ) উমরাহ করিতে গিয়ে বাইতুল্লাহ তাওয়াফ করিলেন ও মাকামে ইব্রাহীমের পিছনে দু রাকআত সালাত আদায় করিলেন এবং তাহাঁর সাথে এ সকল সাহাবী ছিলেন যারা তাঁকে লোকদের হইতে আড়াল করে ছিলেন। আল্লাহর রাসুল (সাঃআঃ)কাবার ভিতরে প্রবেশ করেছিলেন কি-না? এক ব্যক্তি আবু আওফা (রাদি.)-এর নিকট তা জিজ্ঞেস করলে তিনি বলিলেন, না।
(১৭৯১, ৪১৮৮, ৪২৫৫) (আঃপ্রঃ ১৪৯৬, ইঃফাঃ ১৫০২)
২৫/৫৪. অধ্যায়ঃ কাবা ঘরের অভ্যন্তরে চতুর্দিকে তাকবীর ধ্বনি দেয়া।
১৬০১. ইবনু আব্বাস (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, নাবী (সাঃআঃ) যখন (মক্কা) এলেন, তখন কাবা ঘরে প্রবেশ করিতে অস্বীকৃতি জানান। কেননা কাবা ঘরের ভিতরে মূর্তি ছিল। তিনি নির্দেশ দিলেন এবং মূর্তিগুলো বের করে ফেলা হল। (এক পর্যায়ে) ইব্রাহীম ও ইসমাঈল (আঃ)-এর প্রতিকৃতি বের করে আনা হয়। তাদের উভয়ের হাতে জুয়া খেলার তীর ছিল। তখন নাবী (সাঃআঃ) বললেনঃ আল্লাহ! (মুশরিকদের) ধ্বংস করুন। আল্লাহর কসম! অবশ্যই তারা জানে যে, [ইব্রাহীম ও ইসমাঈল (আঃ)] তীর দিয়ে অংশ নির্ধারণের ভাগ্য পরীক্ষা কখনো করেননি। এরপর নাবী (সাঃআঃ) কাবা ঘরে প্রবেশ করেন এবং ঘরের চারদিকে তাকবীর বলেন। কিন্তু ঘরের ভিতরে সালাত আদায় করেননি। (৩৯৮)
(আঃপ্রঃ ১৪৯৭, ইঃফাঃ ১৫০৩)
২৫/৫৫. অধ্যায়ঃ রামল কিভাবে শুরু হয়েছিল।
১৬০২. ইবনু আব্বাস (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, আল্লাহর রাসুল (সাঃআঃ) সাহাবীগণকে নিয়ে মক্কা আগমণ করলে মুশরিকরা মন্তব্য করিল, এমন একদল লোক আসছে যাদেরকে ইয়াস্রিব-এর (মদীনার) জ্বর দুর্বল করে দিয়েছে (এ কথা শুনে) নাবী (সাঃআঃ) সাহাবীগণকে তাওয়াফের প্রথম তিন চক্করে রামল করিতে (উভয় কাঁধ হেলে দুলে জোর কদমে চলতে) এবং উভয় রুকনের মধ্যবর্তী স্থানটুকু স্বাভাবিক গতিতে চলতে নির্দেশ দিলেন, সাহাবীদের প্রতি দয়াবশত সব কটি চক্করে রামল করিতে আদেশ করেননি।
(৪২৫৬, মুসলিম ১৫/৩৯, হাদীস ১২৬৬) (আঃপ্রঃ ১৪৯৮, ইঃফাঃ ১৫০৪)
২৫/৫৬. অধ্যায়ঃ মক্কায় আগমণের পরই তাওয়াফের প্রারম্ভে হাজ্রে আসওয়াদ চুম্বন ও স্পর্শ করা এবং তিন চক্করে রামল করা।
১৬০৩. আবদুল্লাহ ইবনু উমর (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, আমি আল্লাহর রাসুল (সাঃআঃ)-কে মক্কায় উপনীত হয়ে তাওয়াফের শুরুতে হাজ্রে আসওয়াদ ইসতিলাম (চুম্বন, স্পর্শ)- করিতে এবং সাত চক্করের মধ্যে প্রথম তিন চক্করে রামল করিতে দেখেছি।
(১৬০৪, ১৬১৬, ১৬১৭, ১৬৪৪, মুসলিম ১৫/৩৯ হাদীস ১২৬১) (আঃপ্রঃ ১৪৯৯, ইঃফাঃ ১৫০৫)
২৫/৫৭. অধ্যায়ঃ হজ্জ ও উমরাতে রামল করা।
১৬০৪. ইবনু উমর (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, নাবী (সাঃআঃ) হজ্জ এবং উমরাহর তাওয়াফে (প্রথম) তিন চক্করে রামল করিয়াছেন, অবশিষ্ট চার চক্করে স্বাভাবিক গতিতে চলেছেন। লাইস (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) হাদীস বর্ননায় সুরাইজ ইবনু নুমান (রহমাতুল্লাহি আলাইহি)-এর অনুসরণ করে বলেন, কাসীর ইবনু ফারকাদ (রহমাতুল্লাহি আলাইহি)…ইবনু উমর (রাদি.) সূত্রে নাবী (সাঃআঃ) হইতে বর্ণনা করিয়াছেন। (১৬০৩)
(আঃপ্রঃ ১৫০০, ইঃফাঃ ১৫০৬)
১৬০৫. আবদুল্লাহ ইবনু উমর (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ
উমর ইবনু খাত্তাব (রাদি.) হাজ্রে আসওয়াদকে লক্ষ্য করে বলিলেন, ওহে! আল্লাহর কসম, আমি নিশ্চিতরূপে জানি তুমি একটি পাথর, তুমি কারও কল্যাণ বা অকল্যাণ করিতে পার না। নাবী (সাঃআঃ)-কে তোমায় চুম্বন করিতে না দেখলে আমি তোমাকে চুম্বন করতাম না। এরপর তিনি চুম্বন করিলেন। পরে বলিলেন, আমাদের রামল করার উদ্দেশ্য কী ছিল? আমরা তো রামল করে মুশরিকদেরকে আমাদের শক্তি প্রদর্শন করেছিলাম। আল্লাহ এখন তাদের ধ্বংস করে দিয়েছেন। এরপর বলিলেন, যেহেতু এই (রামল) কাজটি আল্লাহর রাসুল (সাঃআঃ) করিয়াছেন, তাই তা পরিত্যাগ করা পছন্দ করি না। (১৫৯৭)
(আঃপ্রঃ ১৫০১, ইঃফাঃ ১৫০৭)
১৬০৬. ইবনু উমর (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, যখন হইতে রাসূলুল্লাহ (সাঃআঃ)-কে (তাওয়াফ করার সময়) এ দুটি রুকন ইসতিলাম (চুমু) করিতে দেখেছি, তখন হইতে ভীড় থাকুক বা নাই থাকুক কোন অবস্থাতেই এ দু-এর ইসতিলাম (চুমু) করা বাদ দেইনি। [রাবী উবাইদুল্লাহ (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) বলেন] আমি নাফি (রহমাতুল্লাহি আলাইহি)-কে জিজ্ঞেস করলাম, ইবনু উমর (রাদি.) কি ঐ দু রুকনের মধ্যবর্তী স্থানে স্বাভাবিক গতিতে চলতেন? তিনি বলিলেন, সহজে ইসতিলাম করার উদ্দেশে তিনি (এতদুভয়ের মাঝে) স্বাভাবিকভাবে চলতেন।
(১৬১১, মুসলিম ১৫/৪০, হাদীস ১২৬৮, আহমাদ ৪৮৮৭)(আঃপ্রঃ ১৫০২, ইঃফাঃ ১৫০৮)
Leave a Reply