কাজা রোজা ও কাফফারার মাসআলা মাসায়েল
কাজা রোজা ও কাফফারার মাসআলা মাসায়েল >> আল হিদায়া ফিকহ এর মুল সুচিপত্র দেখুন
কিতাবঃ আল হিদায়া, প্রথম অনুচ্ছেদঃ যে কারণে কাযা ও কাফ্ফারা ওয়াজিব হয়
রোজাদার যখন ভুলে পানাহার বা সহবাস করে ফেলে তখন তার রোজা ভংগ হয় না। আর কিয়াসের দাবী হলো ভংগ হয়ে যাওয়া। এটি ইমাম মালিক (রঃআঃ) এর মত। কেননা রোজার বিপরীত কর্ম পাওয়া গেছে। সুতরাং এটা নামাযের মধ্যে ভুলে কথা বলার মতো হয়ে গেলো।
ইস্তিসসানের (সূক্ষ কিয়াসের) কারণ হলো ভুলে পানাহারকারী ব্যক্তিকে সম্বোধন করে রসূলুল্লাহ(সাঃআঃ) এর বানী-তুমি তোমার সিয়াম পূর্ণ করো। কেননা আল্লাহ্ই তোমাকে আহার করিয়েছেন এবং পান করিয়েছেন।
পানাহারের ক্ষেত্রে যখন এটি প্রমাণিত হলো তখন সহবাসের ক্ষেত্রেও তা প্রমাণিত হবে। আর রুকন হিসাবে সবগুলোই সমান। নামাজের বিষয়টি এর বিপরীত। কেননা নামাজের অবস্থাই স্মরণকারী। সুতরাং এ ক্ষেত্রে ভুল প্রভাব বিস্তার করিতে পারে।
ফরযা ও নফল সাওমের মাঝে কোন পার্থক্য নেই। কেননা উক্ত হাদিসে কোন পার্থক্য করা হয়নি। আর যদি বিচ্যুতি কিংবা জবরদস্তির কারণে তা করে থাকে তাহলে তার উপর কাযা ওয়াজিব। { কাজা রোজা ও কাফফারার মাসআলা }
ইমাম শাফিঈ (রঃআঃ) ভিন্নমত পোষণ করেন। কেননা তিনি এ দুজনকে ভুলকারী ব্যক্তির উপর কিয়াস করেন। আমাদের দলিল এই যে, এ দুটি অবস্থার অস্তিত্ব অধিক নয়। পক্ষান্তরে ভুলের ওযর অধিক পরিমাণে হয়ে থাকে।
তাছাড়া বিস্মৃতি ঐ সত্তার পক্ষ থেকে ঘটে থাকে, যিনি রোজার হকদার। পক্ষান্তরে বল প্রয়োগ অন্যের পক্ষ থেকে হয়ে থাকে। সুতরাং এ দুটি অবস্থার অস্তিত্ব অধিক নয়। পক্ষান্তরে ভুলের ওযর অধিক পরিমাণে হয়ে থাকে।
তাছাড়া বিস্মৃতি ঐ সত্তার পক্ষ থেকে ঘটে থাকে, যিনি রোজার হকদার। পক্ষান্তরে বল প্রয়োগ অন্যের পক্ষ থেকে হয়ে থাকে। সুতরাং এ দুটির হুকুমে পার্থক্য হবে।
যেমন, নামাজ কাযা করার ক্ষেত্রে শৃংখলিত ও অসুস্থ ব্যক্তির মধ্যে (পার্থক্য) রহিয়াছে।
যদি ঘুমের মাঝে কারো স্বপ্নদোষ ঘটে তাহলে তার সাওম ভংগ হবে না। কেননা রাসূলুল্লাহ্(সাঃআঃ) বলেছেন- তিনটি বিষয় সওম ভংগ করে না। যথা, বমি, শিংগা লাগানো স্বপ্নদোষ।
আর এই জন্য যে, এখানে প্রকৃত সহবাস পাওয়া যায়নি বাহ্যতঃ ও মর্মগতাভাবে। আর সহবাসের মর্মার্থ হলো সংগম যোগে উত্তেজনা সহকারে বীর্যপাত।
তদ্রুপ ( সিয়াম ভংগ হবে না) যদি কোন স্ত্রী লোকের দিকে তাকানোর কারণে বীর্যস্খলিত হয়ে যায়।
আর যদি তৈল লাগায় তাহলে সাওম ভংগ হবে না। কেননা, এতে সাওম বিরোধী কিছু পাওয়া যায়নি।
তদ্রুপ সিংগা লাগালেও সাওম ভংগ হবে না। উক্ত কারণে এবং ইতোপূর্বে আমাদের বর্ণীত হাদিস অনুযায়ী।
যদি সুরমা ব্যবহার করে তাহলে সাওম ভংগ হবে না। কেননা চক্ষু ও মস্তিষ্কের মাঝে কোন ছিদ্রপথে নেই। আর যে অশ্রুঘামের মতো চুইয়ে বের হয় এবং লোমকূপ দিয়ে যা প্রবেশ করে, তা সিয়ামের বিরোধী নয়। যেমন যদি কেউ ঠান্ডা পানি দ্বারা গোসল করে তবে সিয়াম ভঙ্গ হয় না।
যদি স্ত্রীকে চুম্বন করে তবে সিয়াম ভংগ হবে না। অর্থাত্ যদি বীর্যস্খলন না হয়। কেননা বাহ্যিক ও আভ্যন্তরীণ সিয়াম বিরোধী কোন কিছুই ঘটে নি। রুজু করা এবং মুছাহারাতের সম্পর্ক সাব্যস্ত হওয়ার বিষয়টি এর বিপরীত। কেননা এখানে হুকুমটি সবব বা কার্যকারণের উপর আবর্তিত। যথাস্থানে ইনশাল্লাহ্ তা আলোচিত হবে।
তদ্রুপ কোন বেগানা স্ত্রী লোককে চুম্বন করিলে তার উর্ধ্বতন (মা, নানী ইত্যাদি) অধঃস্তন সকল নারী (কন্যা, নাতনী ইত্যাদি) উক্ত লোকের জন্য হারাম হয়ে যায় এটাকে বলে। যদি চুম্বন কিংবা স্পর্শের কারণে বীর্যস্খলিত হয়ে যায়, তাহলে তার সিয়াম কাযা ওয়াজিব হবে, কাফ্ফারা ওয়াজিব হবে না। কেননা, এতে সহবাসের মর্ম বিদ্যমান। আর সতর্কতার খাতিরে বাহ্যিক কিংবা আভ্যন্তরীণ যে কোন রূপে রোজা বিরোধী বিষয়ের অস্তিত্ত্ব রোজার কাযা ওয়াজিব করার জন্য যথেষ্ট। পক্ষান্তরে কাফ্ফারা ওয়াজিব হওয়ার জন্য অপরাধ পূর্ণভাবে সংঘটিত হওয়া প্রয়োজন। কেননা তা হদসমূহের মত সন্দেহ দ্বারা রহিত হয়ে যায়। কাজা { কাজা রোজা ও কাফফারার মাসআলা}
যদি নিজের ব্যাপারে আশ্বস্ত থাকে আর চুম্বন করাতে কোন দোষ নেই, যদি নিজের উপর নির্ভরতা থাকে। অর্থাত্ সহবাস কিংবা বীর্যস্খলনে গড়াবে না। যদি এই ভরসা না থাকে তাহলে মাকরূহ হবে। কেননা মূল চুম্বন রোজা ভংগকারী নয়। বরং পরিণতির দিক থেকে হয়ত তা কখনো বা ভংগকারী হয়ে যেতে পারে। সুতরাং যদি নিজের উপর ভরসা থাকে তাহলে মূল চুম্বনের দিকটি বিবেচনা করে তা তার জন্য মুবাহ্ হবে। পক্ষান্তরে যদি নিজের উপর ভরসা না থাকে তা হলে চুম্বনের পরিণতির দিকটি বিবেচনা করে তার জন্য তা মাকরূহ হবে।
নগ্নদেহে পরস্পর জড়াজড়ি যাহিরী রিওয়ায়াত অনুযায়ী চুম্বনেরই অনুরূপ। তবে ইমাম মুহাম্মাদ (রঃআঃ) হতে বর্ণীত আছে যে, নগ্নদেহে পরস্পর জড়াজড়ি মাকরূহ। কেননা এরূপ আচরণ খুব কমই অবৈধ কর্ম থেকে মুক্ত হয়ে থাকে।
সিয়াম স্মরণ থাকা অবস্থায় যদি তার গলার ভিতর মাছি প্রবেশ করে তাহলে রোজা ভংগ হবে না।
কিয়াস অনুযায়ী তার রোজা ফাসিদ হয়ে যাবে। কেননা রোজা ভংগকারী বস্তু তার উদরে পৌছে গেছে যদিও তা খাদ্যজাতীয় নয়, যেমন মাটি ও কংকর।
সূক্ষ্ম কিয়াসের কারণ এই যে, এ থেকে বেচে থাকা সম্ভব নয়। সুতরাং তা ধুলো ও ধুয়ার সদৃশ হলো। বৃষ্টি ও বরফ সম্পর্কে মাশায়েখগণ মতভেদ করেছেন। তবে বিশুদ্ধতম মত এই যে, তাতে সিয়াম ভংগ হবে। কেননা তাবুতে বা ঘরে আশ্রয় নিয়ে তা থেকে বেচে থাকা সম্ভব।
যদি দাতের ফাকে আটকে থাকা গোশত ‘ভক্ষণ করে তবে কম হলে রোজা ভংগ হবে না। কিন্তু বেশী পরিমাণ হলে ভংগ হবে।
ইমাম যুফার (রঃআঃ) বলেন, উভয় অবস্থাতেই রোজা ভংগ হবে। কেননা মুখ বাইরের অংশ রূপে বিবেচিত। এ কারণেই কুলি করার কারণে তার রোজা নষ্ট হয় না।
আমাদের দলিল এই যে, অল্প পরিমাণ দাতের অনুগত যেমন তার থুথু।
পরিমাণের অবস্থা ভিন্ন। কেননা, শেষ পর্যন্ত তা দাতের ফাকে বিদ্যমান থাকে না। কম ও বেশীর মাঝে পার্থক্য নির্ধারণকারী হলো একটি বুটের পরিমাণ। এর চাইতে কম অল্প হিসাবে গণ্য।
যদি তা বের করে হাতে নেয় অতঃপর তা ভক্ষণ করে তাহলে রোজা ফাসিদ হওয়াই যুক্তিসঙ্গত। যেমন- ইমাম মুহাম্মাদ (রঃআঃ) হতে বর্ণীত যে, কোন সিয়াম পালনকারী যদি দাতের ফাকে (আটকে থাকা) তিল গিলে ফেলে তবে সিয়াম নষ্ট হবে না। আর যদি সরাসরি তা মুখে নিয়ে খায় তাহলে তার সিয়াম ভংগ হবে। আর যদি তা শুধু চিবায় তাহলে ইউসুফ (রঃআঃ) এর মতে তার উপর কাযা ওয়াজিব হবে। কেননা তা বিকৃত খাদ্য। ইমাম আবূ ইউসুফ (রঃআঃ) এর দলিল এই যে, মানুষের রুচি তা ঘৃণা করে।
যদি অনিচ্ছাকৃত বমি এসে পড়ে তাহলে তাতে রোজা ভংগ হবে না। কেননা রাসূলুল্লাহ্ (সাঃআঃ) বলেছেন- যে ব্যক্তি বমি করে, তার উপর কাযা ওয়াজিব হবে না। কিন্তু যে ইচ্ছাকৃত বমি করে, তার উপর কাযা ওয়াজিব হবে। অনিচ্ছাকৃত বমির ক্ষেত্রে মুখ ভরা বমি ও কম বমির হুকুম সমান।
যদি বমি ভিতরে ফেরত যায় আর তা মুখ ভরা থাকে, তাহলে ইমাম আবূ ইউসুফ (রঃআঃ) এর মতে তাতে রোজা ফাসিদ হয়ে যাবে। কেননা তা বাইরের, এমনকি এত উযূ ভংগ হয়ে যায়। আর তা-ই ভিতরে প্রবেশ করেছে।
ইমাম মুহাম্মাদ (র) এর মতে রোজা ফাসিদ হবে না। কেননা রোজা ভংগের বাহ্যরূপ অর্থাত্ গলাধঃকরণ পাওয়া যায়নি। তদ্রুপ রোজা ভংগ করার প্রকৃত মর্মও পাওয়া যায়নি। কেননা তা সাধারণতঃ খাদ্য হিসাবে ব্যবহৃত হয় না।
যদি উক্ত বমি সে নিজে পালটিয়ে নেয় তাহলে সকলের মতেই রোজা ফাসিদ হয়ে যাবে, কেননা বাহির হওয়ার পর প্রবেশ করানো পাওয়া গেছে। সুতরাং রোজা ভংগের বাহ্যরূপ বিদ্যমান হয়।
বমি যদি মুখভরা থেকে কম হয় আর নিজেই ফেরত যায় তাহলে তার রোজা ভংগ হবে না। কেননা এটা বাইরের নয় এবং এর প্রবেশের ব্যাপারে তার কোন প্রয়াস নেই।
যদি সে নিজে ইচ্ছা করে গিলে ফেলে তাহলে ইমাম আবূ ইউসুফ (রঃআঃ) এর মতে একই হুকুম হবে। কেননা, বের হওয়া সাব্যস্ত হয়নি। আর ইমাম মুহাম্মাদ (রঃআঃ) এর মতে তার রোজা ফাসিদ হয়ে যাবে। কেননা প্রবেশ করানোর ক্ষেত্রে তার প্রয়াস রহিয়াছে।
যদি রোজা স্মরণ থাকা অবস্থায় মুখ ভরে বমি করে তাহলে তার উপর কাযা ওয়াজিব হবে। প্রমাণ হলো আমাদের বর্ণীত হাদিস। আর এই হাদিসের কারণে কিয়াস বর্ণীত হয়। কাফ্ফারা ওয়াজিব হবে না; কেননা (রোজা ভংগ হওয়ার) বাহ্য রূপ পাওয়া যায়নি। যদি উক্ত বমি ভরা মুখের কম হয় তাহলে ইমাম মুহা্ম্মদ (রঃআঃ) এর মতে একই হুকুম হবে। কেননা হাদিসটি নিঃশর্ত।
ইমাম আবূ ইউসুফ (রঃআঃ) এর মতে রোজা ফাসিদ হবে না। কেননা, শরী্আতের হুকুম মতে বাহির হওয়া সাব্যস্ত হয় নি।
অতঃপর যদি তা ফেরত যায়, তাহলে তার মতে রোজা ফাসিদ হবে না। কেননা ফেরত যাওয়ার পূর্বে বের হওয়া সাব্যস্ত হয়নি। যদি সে ই্চ্ছা করে ফেরত নেয় তবে তার পক্ষ হতে বর্ণীত একটি মতে পূর্ববর্ণীত কারণেই ফাসিদ হবে না। কিন্তু তার পক্ষ হতে বর্ণীত অন্য একটি মতে ফাসিদ হবে। কেননা, এটাকে তিনি মুখভরা বমির সাথে যুক্ত করেছেন। কারণ, তার ইচ্ছাকৃত কর্মের (ই্চ্ছাকৃত বমন ও গলাধঃকরণ) আধিক্যের কারণে।
যে ব্যক্তি কংকর কিংবা লোহা গিলে ফেলে তার রোজা ভংগ হয়ে যাবে। কেননা, রোজা ভঙ্গের ‘বাহ্যরূপ পাওয়া গেছে।
তবে তার উপর কাফ্ফারা ওয়াজিব নয়। কারণ (আহারের) প্রকৃত মর্ম পাওয়া যায়নি। { কাজা রোজা ও কাফফারার মাসআলা }
যে ব্যক্তি (রোজার) স্মরণ অবস্থায় দুপথের কোন এক পথে সংগম করবে তার উপর কাযা ওয়াজিব হবে।
কাযা ওয়াজিব রোজার বিনষ্ট উদ্দেশ্য পুনঃঅর্জনের জন্য। আর কাফ্ফারাও ওয়াজিব হবে, অপরাধ সংঘটিত হওয়ার কারণে। উভয় সংগমের ক্ষেত্রেই বীর্যস্খলনের শর্ত নেই, এটাকে গোসলের উপর কিয়াস করা হয়েছে। এর কারণ এই যে, বীর্যস্খলন ছাড়াই আনন্দ পাওয়া যায়। তা দ্বারা তো-তৃপ্তি লাভ হয়।
ইমাম আবূ হানীফা (রঃআঃ) থেকে আরেক বর্ণনায় রহিয়াছে যে,ঘৃণিত স্থানে (গুহ্যদ্বারে) সংগম দ্বারা কাফ্ফারা ওয়াজিব হবে না। তার মতে কাফ্ফারা হদের সাথে বিবেচ্য।
আর বিশুদ্ধ মত এই যে, কাফ্ফারা ওয়াজিব হবে। কেননা শাহওয়াত পূর্ণ হওয়ার কারণে অপরাধ পূর্ণতা লাভ করেছে। মৃতদেহের সাথে কিংবা জন্তুর সাথে সংগম করিলে বীর্যস্খলন ঘটুক কিংবা না ঘটুক, তার উপর কাফ্ফারা ওয়াজিব হবে না।
ইমাম শাফিঈ (রঃআঃ) ভিন্নমত পোষণ করেন। (আমাদের দলিল) কেননা স্বাভাবিক আকর্ষণীয় স্থানে বাসনা চরিতার্থ করা দ্বারা অপরাধপূর্ণতা লাভ করে। কিন্তু এখানে তা পাওয়া যায়নি।
অতঃপর আমাদের মতে সংগম দ্বারা পুরূষের উপর যেমন কাফ্ফারা ওয়াজিব, তেমনি স্ত্রীলোকের উপরও ওয়াজিব।
ইমাম শাফিঈ (রঃআঃ) এর একটি মতে স্ত্রী লোকের উপর কাফ্ফারা ওয়াজিব হবে না। কেননা কাফ্ফারার সম্পর্ক হলো সংগমের সাথে। আর এটা হলো পুরুষের কাজ, স্ত্রী লোকটি হলো সংগম ক্ষেত্র।
ইমাম শাফিঈ (রঃআঃ) এর অন্য একটি মতে স্ত্রী লোকেরও উপরও ওয়জিব হবে। তবে (এ দায়) তার পক্ষ হতে পুরুস বহন করবে; পানির ব্যয় ভারের উপর কিয়াস করে।
আমাদের প্রমাণ হলো রাসূলুল্লাহ্ (সাঃআঃ) এর বাণী- যে রমাযানে রোজা ভংগ করবে তার উপর তাই ওয়াজিব হবে, যা যিহারকারীর উপর ওয়াজিব হয়।
(বা যে) শব্দটি পুরুষ ও স্ত্রী উভয়কে অন্তর্ভূক্ত করে। তাছাড়া এ জন্য যে, কাফ্ফারা ওয়াজিব হওয়ার কারণ হচ্ছে রোজা নষ্ট করা। শুধু সহবাসই নয়। আর উক্ত অপরাধে সেও পুরুষের সাথে শরীক। আর দায় বহণের প্রশ্নই উঠে না। কেননা এ কাফ্ফারা হয় ইবাদত, না হয়ে শাস্তি। আর উভয়টির মধ্যে অন্যের বহন চলে না।
যদি এমন কিছু আহার করে বা পান করে, যা খাদ্যরূপে কিংবা ঔষধরূপে ব্যবহৃত হয় তাহলে তার উপর কাযা ও কাফ্ফারা দুটোই ওয়াজিব হবে।
ইমাম শাফিঈ (রঃআঃ) বলেন, তার উপর কাফ্ফারা ওয়াজিব নয়। কেননা, সহবাসের ক্ষেত্রে শরীআত কিয়াসের বিরুদ্ধে কাফ্ফারা প্রবর্তন করেছে। কারণ পাপ তো তওবা দ্বারাই মোচন হয়ে যায়। এ কারণে (রোজাভংগের) অন্য ব্যাপারকে সহবাসের উপর কিয়াস করা যাবে না।
আমাদের দলিল এই যে, কাফ্ফারার সম্পর্ক হলো রমাযান মাসে পূর্ণরূপে রোজা ভংগ করার সাথে। আর আলোচ্য অবস্থায় তা সাব্যস্ত হয়। আর কাফ্ফারা হিসাবে গোলাম আযাদ ওয়াজিব করার দ্বারা বোঝা যায় যে, এই অপরাধ তওবা দ্বারা মোচন হয় না।
ইমাম কুদূরী (রঃআঃ) বলেন, কাফ্ফারা যিহারের কাফ্ফারার অনুরূপ। প্রমাণ হলো আমাদের বর্ণীত হাদিস। এবং জনৈক বেদুঈন সাহাবীর ঘটনা সম্পর্কে হাদিস। তিনি বলেছিলেন, ইয়া রাসূলুল্লাহ্ (সাঃআঃ) নিজে হালাক হয়েছি এবং (স্ত্রীকেও) হালাক করেছি। তিনি জিজ্ঞাসা করিলেন, কি করেছো? সাহাবী আরয করিলেন, রমাযানের দিবসে ইচ্ছাকৃতভাবে স্ত্রী সহবাস করেছি। তখন রাসূলুল্লাহ্ (সাঃআঃ) বলিলেন, একটি গোলাম আযাদ করো। তিনি আরয করিলেন, নিজের এই গ্রীবা ছাড়া আমি কারো মালিক নই। তখন তিনি বলিলেন, তাহলে লাগাতার দুইমাস রোজা রাখো। তিনি আরয করিলেন, আমি যে বিপদে এসেছি তাতো এ রোজার কারণেই এসেছে। তখন তিনি বলিলেন, তাহলে ষাটজন মিসকীনকে আহার করাও। তিনি আরয করিলেন, এ সামর্থ্যও আমার নেই। তখন রাসূলুল্লাহ্ (সাঃআঃ) এক ফারাক খেজুর আনার হুকুম দিলেন। অন্য বর্ণনায় আছে, তিনি পনের সাআ খেজুরে পূর্ণ একটি থলে আনার হুকুম দিলেন এবং বলিলেন, এগুলো মিসকীনদের মাঝে বন্টন করে দাও। তিনি আরয করিলেন, আল্লাহ্র কসম, মদীনার দুই প্রান্তরের মধ্যবর্তী স্থানে আমার এবং আমার পরিজনের চেয়ে অভাবী কেউ নেই। তখন রসূলুল্লাহ (সাঃআঃ) বলিলেন, তুমি এবং তোমার পরিবার পরিজন তা খাও। তবে তোমার জন্যই এটা যথেষ্ট, কিন্তু তোমার পরে আর কারো জন্য তা যথেষ্ট হবে না।
এ হাদিস ইমাম শাফিঈ (রঃআঃ) এর মতামতের বিপক্ষে দলিল যে, তার জন্য এর মধ্যে যে কোন একটি করার অধিকার রহিয়াছে। কেননা হাদিসের দাবী হেলা (তিনটির মাঝে) তারতীব রক্ষা করা।
তদ্রুপ ইমাম মালিক (রঃআঃ) এর বিপক্ষেও দলিল যে, রোজা লাগাতার করিতে হবে না। কেননা হাদিসে লাগাতার করার স্পষ্ট নির্দেশ রহিয়াছে।
যে ব্যক্তি স্ত্রীর লজ্জাস্থান ছাড়া অন্যভাবে সংগম করে এবং বীর্যপাত ঘটে, তার উপর কাযা ওয়াজিব হবে। কেননা এতে সংগমের মর্ম বিদ্যমান। { কাজা রোজা ও কাফফারার মাসআলা }
আর তার উপর কাফ্ফারা ওয়াজিব হবে না। কেননা সংগমের বাহ্যরূপ পাওয়া যায় নি।
রমাযান ছাড়া অন্য রোজা নষ্ট করার ক্ষেত্রে কাফ্ফারা নেই। কেননা রমাযান মাসে রোজা ভংগ করা গুরুতর অপরাধ। সুতরাং অন্য রোজাকে তার সাথে যুক্ত করা যাবে না।
যে ব্যক্তি ঢুশ ব্যবহার করে কিংবা নাক দ্বারা ঔষধ প্রবেশ করায় কিংবা কানে ঔষধের ফোটা দেয়, তার রোজা ভংগ হয়ে যাবে। কেননা রাসূলুল্লাহ্ (সাঃআঃ) বলেছেন- কিছু প্রবেশ করার কারণে রোজা ভংগ হয়। এই কারণে যে, রোজা ভংগের মর্ম পাওয়া গেছে, আর তা হল শরীরের উপকারী বস্তু ভিতরে প্রবেশ করা, তবে তার উপর কাফ্ফারা ওয়াজিব হবে না। কেননা রোজা ভঙ্গের বাহ্যরূপ পাওয়া যায়নি।
যদি কানে পানির ফোটা ঢেলে দেয় কিংবা নিজে নিজেই প্রবেশ করে তাহলে তার রোজা নষ্ট হবে না। কেননা, রোজা ভংগের মর্ম ও বাহ্যরূপ কোনটাই পাওয়া যায়নি। কিন্তু তেল প্রবেম করানোর বিষয়টি এর বিপরীত।
যদি পেটের ভিতর পর্যন্ত কিংবা মাথার ভিতর পর্যন্ত উপনীত ক্ষতস্থানে ঔষধ প্রয়োগের মাধ্যমে চিকিত্সা করে আর ঔষধ পেটে কিংবা মস্তিষ্কে পৌছে যায়, তাহলে রোজা ভংগ হয়ে যাবে।
এটা ইমাম আবূ হানীফা (রঃআঃ) এর মত। আর যে ঔষধ পৌছে, তা হলো তরল জাতীয়।
সাহেবাইন বলেন, রোজা ভংগ হবে না। কেননা ঔষধ পৌছার ব্যাপারে নিশ্চয়তা নেই। কারণ, ছিদ্রপথ কখনো প্রসারিত হয় আবার সংকুচিত হয়। যেমন শুষ্ক ঔষধের ক্ষেত্রে (রোজা ভংগ হয় না)।
ইমাম আবূ হানীফা (রঃআঃ) এর দলিল এই যে, ঔষুধের তরলতা ক্ষতের তরলতার সাথে যুক্ত হয়ে নিম্নমুখী প্রবণতা বৃদ্ধি লাভ করে। ফলে তা ভিতরে পৌছে যাবে। শুষ্ক ঔষধের অবস্থায় বিষয়টি বিপরীত। কেননা, ঔষুধ ক্ষতের তরলতা শুষে নেয়। ফলে ক্ষতের মুখ বন্ধ হয়ে যায়।
যদি পুরুষাংগের ছিদ্রপথে ফোটা ফোটা করে (ঔষুধ) ঢালে তাহলে তাতে রোজা ভংগ হবে না।
এটি ইমাম আবূ হানীফা (রঃআঃ) এর মাযহাব। ইমাম আবূ ইউসুফ (রঃআঃ) এর মতে রোজা ভংগ হয়ে যাবে। আর এ বিষয়ে ইমাম মুহাম্মাদ (রঃআঃ) এর মতামত স্ববিরোধী। ইমাম আবূ ইউসুফ (রঃআঃ) সম্ভবতঃ মনে করেছেন যে, পেট ও পুরুষাংগের মাঝে সংযোগ পথ রহিয়াছে। এ জন্যই পুরুষাংগ দিয়ে পেশাব নির্গত হয়।
পক্ষান্তরে ইমাম আবূ হানীফা (রঃআঃ) মনে করেছেন যে, অন্ডকোষ হলো উভয়ের মাঝে আড় স্বরূপ। আর পেশাব তা থেকে চুইয়ে পড়ে। এটি অবশ্য ফিকাহ সংক্রান্ত বিষয় নয়।
যে ব্যক্তি মুখে কিছু চোখে দেখে তার রোজা ভংগ হবে না। কেননা রোজা ভংগের বাহ্যরূপ ও মর্ম কোনটাই বিদ্যমান নেই।
তবে তা মাকরূহ হবে। কেননা এতে রোজা ভংগ হওয়ার উপক্রম হয়।
স্ত্রীলোকের যদি বিকল্প উপায় না পায় তাহলে এতে কোন দোষ নেই। সন্তান রক্ষার নিমিত্ত। তুমি কি লক্ষ্য করনি যে, সন্তানের জীবনাশংকা দেখা দিলে তার রোজা ভংগ করার অনুমতি রহিয়াছে। গদ চিবালে রোজাদারের রোজা ভংগ হয় না। কেননা তা তার উদরে পৌছে না। কোন কোন মতে যদি তা জমাট না হয় তাহলে রোজা নষ্ট হয়ে যাবে। কেননা তখন কিছু অংশ উদরে পৌছবে। কোন কোন মতে যদি তা কালো জাতীয় হয় তাহলে রোজা নষ্ট হয়ে যাবে। এমন কি জমাট হলেও রোজা নষ্ট হয়ে যাবে। কেননা তা ভেংগে ভেংগে যায়।
তবে রোজাদারের জন্য তা ব্যবহার মাকরূহ। কেননা, এতে রোজা নষ্ট হওয়ার উপক্রম হয়। তাছাড়া (মুখ নাড়ার কারণে) তার প্রতি রোজা না রাখার অভিযোগ আরোপিত হবে। তবে রোজাদার না হলে স্ত্রী লোকের জন্য তা মাকরূহ নয়। কেননা তাহাদের ক্ষেত্রে তা মিসওয়াকের স্থলবর্তী।
কেউ কেউ বলেন, দন্তরোগের কারণে না হলে পুরুষদের জন্য তা মাকরূহ। আবার কেউ বলেন, তা পসন্দনীয় নয়। কেননা, এতে স্ত্রী লোকদের সংগে সাদৃশ রহিয়াছে।
সুরমা ব্যবহার করা এবং মোচে তেল দেওয়াতে কোন দোষ নেই। কেননা এটা হলো এক ধরণের উপকার লাভ। আর তা রোজার নিষিদ্ধ বিষয়ের অন্তর্ভূক্ত নয়। তাছাড়া নাবী করীম (সাঃআঃ) আশুরা দিবসে সুরমা ব্যবহার করা ও রোজা রাখার জন্য উত্সাহিত করেছেন।
যদি সৌন্দর্যের উদ্দেশ্যে না হয়ে চিকিত্সাগত উদ্দেশ্যে হয় তাহলে পুরুষদের জন্য সুরমা ব্যবহারে কোন দোষ নেই। তদ্রুপ সৌন্দর্যের উদ্দেশ্যে না হলে মোচে তেল দেওয়া উত্তম। কেননা এটা খেযাবের কাজ করে। তবে দাড়ি সুন্নাত পরিমাণ তথা একমুঠ পরিমাণ থাকলে তা লম্বা করার উদ্দেশ্যে এটা করবে না।
রোজাদারের পক্ষে সকালে ও বিকাল বেলায় কাচা মিসওয়াক ব্যবহার করাতে কোন দোষ নেই। কেননা রাসূলুল্লাহ্ (সাঃআঃ) বলেছেন- রোজাদারের সর্বোত্তম আমল হলো মিসওয়াক করা। এতে সময়ের কোন পার্থক্য করা হয়নি।
ইমাম শাফিঈ (রঃআঃ) বলেন, বিকেল বেলা মিসওয়াক করা মাকরূহ। কেননা তাতে একটি প্রশংসিত চিহ্ন দূর করা হয়। আর তা হলো রোজাদারের মুখের গন্ধ। সুতরাং তা শহীদের রক্তের সদৃশ।
আমাদের বক্তব্য এই যে, এটা হলো ইবাদতের চিহ্ন। আর এ ব্যাপারে গোপনীয়তাই হলো অধিক উপযুক্ত। শহীদের রক্তের অবস্থা ভিন্ন। কেননা, এটি হলো যুলমের চিহ্ন।
আমাদের বর্ণীত হাদিসের আলোকে কাচা আদ্র এবং পানি দ্বারা ভিজান মিসওয়াকের মাঝে কোন পার্থক্য নেই।
পরিচ্ছেদঃ রোজা ভংগ
কেউ যদি রমাযানে অসুস্থ থাকে এবং এই আশংকা করে যে, রোজা রাখলে তার অসুস্থতা বেড়ে যাবে, তাহলে রোজা রাখবে না এবং কাযা করবে।
ইমাম শাফিঈ (রঃআঃ) বলেন, রোজা ভাঙবে না। তিনি তায়াম্মুমের মতো এখানেও প্রাণ-নাশের কিংবা অংগহানীর আশংকার কথা বিবেচনা করেন।
আমরা বলি রোগ-বৃদ্ধি ও রোগের দীর্ঘায়িত হওয়া কখনো প্রাণ-নাশের দিকে উপনীত করে। সুতরাং তা থেকেও বেচে থাকা জরুরী। { কাজা রোজা ও কাফফারার মাসআলা }
মুসাফিরের যদি রোজার কারণে কষ্ট না হয় তাহলে তার জন্য রোজা রাখাই উত্তম। তবে রোজা না রাখাও জাইয। কেননা সফর কষ্ট শূন্য হয় না। সুতরাং মূল সফরকেই ওযর রূপে গণ্য করা হয়েছে । অসুস্থতার বিষয়টি এর বিপরীত। কেননা কোন কোন অসুস্থতা রোজা দ্বারা উপশম হয়। সুতরাং রোজার ক্ষেত্রে কষ্টসাধ্য হওয়ার শর্ত আরোপ করা হয়েছে।
ইমাম শাফিঈ (রঃআঃ) বলেন, রোজা না রাখাই উত্তম । কেননা রাসূলুল্লাহ্ (সাঃআঃ) বলেছেন- সফরে রোজা রাকা নেকিতে গণ্য নয়। (বুখারী)
আমাদের দলিল এই যে, রমাযান হলো দুই সময়ের মধ্যে অধিকতর উত্তম সময়। সুতরাং তাতে আদায় করাই উত্তম হবে।
আর ইমাম শাফিঈ (রঃআঃ) বর্ণীত হাদিসটি কষ্টের অবস্থার উপর প্রযুক্ত হবে।
অসু্স্থ ব্যক্তি যদি সুস্থতা লাভ করে এবং মুসাফির যদি মুকিম হয়ে যায় তারপর মারা যায়, তাহলে সুস্থ হওয়ার এবং মুকিম হওয়ার দিনের পরিমাণ কাযা তার উপর ওয়াজিব হবে। কেননা সে পরিমাণ সময় সে পেয়েছে।
কাযা ওয়াজিব হওয়ার ফল এই দাড়ায় যে, (কাযা আদায় না করে থাকলে রোজার ফলে) ফিদ্ইয়া দানের ওসীয়ত করা ওয়াজিব হবে।
ইমাম তাহাবী (রঃআঃ) এ বিষয়ে শায়খাইন এবং মুহাম্মাদ (রঃআঃ) এর মধ্যে মতপার্থক্যের কথা উল্লেখ করেছেন। কিন্তু তা ঠিক নয়। বরং মত পার্থক্য হলো মান্নতের ক্ষেত্রে শায়খাইনের মতে পার্থক্যের কারণ এই যে, নযর হল রোজা ওয়াজিব হওয়ার কারণে। সুতরাং (রোজার ) স্থলবর্তীর ক্ষেত্রে ওয়াজিব হওয়ার কার্যকারিতা প্রকাশ পাবে। পক্ষান্তরে আলোচ্য মাসআলায় (রোজা ওয়াজিব হওয়ার) কারণ হলো নির্ধারিত সময় পাওয়া। সুতরাং যে পরিমাণ সময় সে পাবে, সেই পরিমাণ সময়ের সাথেই ওয়াজিব হওয়ার হুকুম সীমিত হবে।
রামযানের কাযা ইচ্ছা করিলে বিচ্ছিন্নভাবে রাখবে আবার ইচ্ছা করিলে লাগাতার রাখবে। কেননা নাস শর্ত মুক্ত। তবে ওয়াজিব দ্রুত আদায়ের লক্ষ্য লাগাতার রাখাই মুস্তাহাব।
আর যদি তা বিলম্বিত করে এমনকি অন্য রমাযান এসে পড়ে তাহলে দ্বিতীয় রমাযানের রোজা রাখবে। কেননা তা দ্বিতীয় রমাযানেরই সময়। আর প্রথম রোজার কাযা তার পরে করবে। কেননা রমাযান বহির্ভূত সময়ই হলো ‘কাযা এর সময় তবে তার উপর ফিদইয়া ওয়াজিব হবে না। কেননা বিলম্বের (অবকাশের) ভিত্তিতেই কাযা ওয়াজিব হয়। এজন্যই তো সে (কাযা আদায় না করে) নফল রোজা রাখতে পারে।
গর্ভবর্তী ও স্তন্যদানকারিণী যদি নিজেদের কিংবা তাহাদের শিশুর ক্ষতির আশংকা করে তাহলে রোজা পরিহার করিতে পারে এবং পরে কাযা করবে। এ হুকুমের উদ্দেশ্য হলো অসুবিধা দূরীভূত করা।
আর তাহাদের উপর কাফ্ফারা ওয়াজিব হবে না। কেননা এ রোজা ভংগ হলো ওজরের কারণে। তদ্রুপ তাহাদের উপর ‘ফিদইয়া ওয়াজিব হবে না। তবে (ফিদ্ইয়ার ব্যাপারে) ইমাম শাফিঈ (রঃআঃ) ভিন্নমত পোষণ করেন, যখন শিশুর ব্যাপারে আশংকা করে। তিনি ‘শায়খে ফানী বা অতি বৃদ্ধের উপর কিয়াস করেন।
আমাদের দলিল এই যে, শায়খে ফানীর ক্ষেত্রে ফিদ্ইয়া ওয়াজিব হয়েছে কিয়াসের বিপরীতে (নাই দ্বারা) । আর শিশুর আশংকার কারণে রোজা ভংগ করা তার সমপর্যায়ের নয়। কেননা শায়খে ফানী তার উপর রোজা ওয়াজিব হওয়ার পর অপরাগ হয়েছে। পক্ষান্তরে শিশুর উপর তো মূলতঃ ওয়াজিবই হয়নি (বরং তার মায়ের উপর, এবং সে পরবর্তীতে কাযা করবে।)
শায়খে ফানী, যিনি রোজা রাখতে সক্ষম নন, তিনি প্রতিদিনের পরিবর্তে রোজা না রেখে একজন মিসকীনকে খাওয়াবেন, যেমনিভাবে কাফ্ফার ক্ষেত্রে খাওয়াতে হয়।
এ বিষয়ে দলিল হলো আল্লাহ্ তা’আলার বাণী – যারা রোজা রাখতে সক্ষম নয়, তাহাদের উপর ফিদইয়া ওয়াজিব এক মিসকীনের আহার। কোন কোন তাফসীর মতে এর মানে হলো অর্থাত্ সক্ষম না হওয়া। ফিদ্ইয়া আদায় করার পর যদি রোজা রাখতে পুনঃসক্ষম হয় তাহলে ফিদ্ইয়ার হুকুম বাতিল হয়ে যাবে। কেননা স্থলবর্তিতার জন্য শর্ত হলো অক্ষমতা অব্যাহত থাকা।
যে ব্যক্তি রমাযানের কাযা যিম্মায় থাকা অবস্থায় মৃত্যুর সম্মুখীন হয় আর সে ঐ বিষয়ে ওসীয়ত করে তাহলে তার ওয়ালী বা তত্তাবধায়ক তার পক্ষ হতে প্রতিদিনের জন্য একজন মিসকীনের অর্ধ সাআ গাম কিংবা এক সাআ খেজুর বা যব দান করবে। কেননা জীবনের শেষ মুহূর্তে সে রোজা আদায় করিতে অপরাগ হয়েগেছে। সুতরাং সে ‘শায়খে ফানী-এর অনুরূপ হয়ে যাবে।
তবে আমাদের মতে ওসীয়ত করে যাওয়া আবশ্যক। কিন্তু ইমাম শাফিঈ (রঃআঃ) ভিন্নমত পোষণ করেন। যাকাতের ক্ষেত্রেও এই মতভিন্নতা রহিয়াছে। এটাকে তিনি বান্দাদের ঋণের উপর কিয়াস করেন। কেননা দুটোই অর্থ সংক্রান্ত হক, যাতে স্থলবর্তিতা কার্যকর হবে।
আমাদের দলিল এই যে, এটা ইবাদত। আর তাতে ইচ্ছার প্রয়োগ অপরিহার্য। আর তা ওসীয়তের মাধ্যমে প্রকাশ পায়, উত্তরাধিকার এর মাধ্যমে নয়। কেননা উত্তরাধিকারিতা তো বাধ্যতামূলক ব্যাপার। আর যেহেতু এই ওসীয়ত একটি নতুন দান, সুতরাং তা সম্পত্তির এক-তৃতীয়াংশ থেকে কার্যকরী।
মাশায়েখগনের সূক্ষ্ম কিয়াস অনুযায়ী নামায রোজার মতই এবং প্রতিটি নামায এক দিনের রোজার সমান। এটিই বিশুদ্ধ মত।
মৃত ব্যক্তির পক্ষ থেকে ওয়ালী নিজে সিয়াম পালন করবে না বা নামাজ আদায় করবে না। কেননা রসূলুল্লাহ (সাঃআঃ) বলেছেন- কেউ কারো পক্ষে থেকে সিয়াম পালন করবে না এবাং কেউ কারো পক্ষ থেকে নামাজ আদায় করবে না।
যে ব্যক্তি নফল নামায কিংবা নফল রোজা শুরু করলো অতঃপর তা নষ্ট করে ফেললো, সে তা কাযা করবে।
ইমাম শাফিঈ (রঃআঃ) ভিন্নমত পোষণ করেন। তার দলিল এই যে, আদায়কৃত অংশটুকু সে স্বেচ্ছায় করেছে। সুতরাং পরবর্তী যেটুকু সে স্বেচ্ছায় করেনি, তা তার উপর অনিবার্য হতে পারে না। { কাজা রোজা ও কাফফারার মাসআলা}
আমাদের দলিল এই যে, আদায়কৃত অংশটুকু একটি আমল ও ইবাদত। সুতরাং অব্যাহত রাখার মাধ্যমে উক্ত আমলকে বাতিল হওয়া থেকে হিফাযত করা ওয়াজিব হবে। আর যখন পূর্ণ করা ওয়াজিব, তখন তা তরক করার কারণে কাযা করাও ওয়াজিব হবে।
আমাদের নিকট দুটি বর্ণনার একটি বর্ণনা মতে বিনা ওযরে সিয়াম ভংগ করা জাইয নয়। এর কারণ ইতোপূর্বে বর্ণনা করেছি। অবশ্য ওযরের কারণে জাইয হবে। মেহমানদারি গ্রহণ করাও একটি ওযর। কেননা রাসূলুল্লাহ্(সাঃআঃ) বলেছেন- রোজা ভংগ কর এবং তদস্থলে কাযা সিয়াম পালন কর।
বালক যদি রমাযানের দিবসে প্রাপ্তবয়স্ক হয় কিংবা কাফির যদি ইসলাম গ্রহণ করে তাহলে উভয়ে দিনের অবশিষ্ট অংশ (পানাহার থেকে) বিরত থাকবে। যাতে (রোজাদারদের সংগে) সাদৃশ্যের মাধ্যমে সময়ের হক আদায় করা যায়।
তবে যদি দিনের অবশিষ্ট অংশে তাহারা পানাহার করে ফেলে তাহলে তাহাদের উপর কাযা ওয়াজিব হবে না। কেননা ঐ দিনে তার সিয়াম ওয়াজিব ছিল না।
তার পরবর্তী দিনগুলোতে সিয়াম পালন করবে। কেননা সিয়ামের (ওয়াজিব হওয়ার ) কারণ এবং (তা আদায় করার) যোগ্যতা সাব্যস্ত হয়েছে।
আর সেই দিনটির এবং পূর্ববর্তী দিনগুলোর কাযা করবে না। কেনা (ঐ দিনগুলোতে তার প্রতি) সিয়ামের নির্দেশ ছিল না। এটি নামাজের বিপরীত।
কেননা নামাজের ক্ষেত্রে (ওয়াজিব হওয়ার) কারণ হলো সময়ের আদায়ের নিকটবর্তী অংশটি। আর সেই মূহুর্তটিতে (উভয়ের মধ্যে নামাজ আদায় করায়) যোগ্যতা পাওয়া গেছে। পক্ষান্তরে সিয়ামের ক্ষেত্রে (ওয়াজিব হওয়ার কারণ হলো) দিনের প্রথম অংশটি। আর সেই মুহুর্তে যোগ্যতা অনুপস্থিত ছিল।
ইমাম আবূ ইউসুফ (রঃআঃ) এর মতে যদি যাওয়ালের পূর্বে কুফরি বা অপ্রাপ্তবয়স্কতা বিলুপ্ত হয় তাহলে তার উপর সাওমের কাযা ওয়াজিব হবে। কেননা সে নিয়্যতের সময় পেয়েছে। যাহেরী রিওয়ায়াতের কারণ এই যে, ওয়াজিব হওয়ার দিক থেকে সাওম বিভাজ্য নয়। আর দিবসের প্রথমাংশে ওয়াজিব হওয়ার যোগ্যতা ছিল না। তবে বালকের ক্ষেত্রে এই অবস্থায় নফল সিয়ামের নিয়্যত করা জাইয রহিয়াছে। কিন্তু কাফিরের ক্ষেত্র নেই, যেমন মাশায়েখগণ বলেছেন। কেননা কাফির (দিনের প্রথমাংশ) সিয়াম পালনের যোগ্য ছিল না। আর বালক নফলের যোগ্য ছিল।
মুসাফির যদি (রমাযান ছাড়া অন্য সময়ে) সিয়াম না রাখার নিয়্যত করে অতঃপর যাওয়ালের পূর্বে শহরে প্রবেশ করে সিয়ামের নিয়্যত করে নেয় তাহলে (সিয়াম বৈধ হওয়ার জন্য) তা যথেষ্ট হবে। কেননা সফর সিয়াম ওয়াজিব হওয়ার যোগ্যতার বিরোধী নয় এবং সিয়াম শুরু করার বৈধতাও বিরোধী নয়।
আর যদি বিষয়টি রমাযানের দিবসে হয় তা হলে সিয়াম পালন তার জন্য ওয়াজিব। কেননা নিয়্যতের সময় সীমার মাঝেই রুখসতের কারণের অবসান ঘটেছে।
দেখুন না যদি সে দিবসের প্রথমাংশে মুকীম থাকতো, অতঃপর সফরে বের হতো তাহলে মুকীম হওয়ার দিকটিকে অগ্রাধিকার প্রদানের প্রেক্ষিতে সিয়াম ভংগ করা তার জন্য বৈধ হতো না। সুতরাং এ ক্ষেত্রে বৈধ না হওয়াই অধিকতর সংগত। তবে উভয় ক্ষেত্রে যদি সিয়াম ভংগ করে ফেলে তাহলে তার উপর কাফ্ফারা ওয়াজিব হবে না। কেননা, বৈধতার সন্দেহ বিদ্যমান রহিয়াছে।
যে ব্যাক্তি রমাযানের দিবসে বেহুশ হয়ে গেল, সে সেদিনের সিয়ামের কাযা করবে না যেদিন বেহুশ হয়েছে। কেননা ঐ দিবসটিতে সিয়াম অর্থাত্ (পানাহার ও সংগম থেকে) বিরতি পাওয়া গেছে। কারণ, বাহ্যতঃ নিয়্যত বিদ্যমান থাকাটাই স্বাভাবিক।
পরবর্তী দিনগুলোর কাযা করিতে হবে। কেননা নিয়্যত পাওয়া যায়নি।
যদি রমাযানের প্রথম রাত্রেই বেহুশ হয়ে যায় তাহলে ঐ রাত্রের পরবর্তী দিবসটি ছাড়া পূর্ণ রমাযানের প্রথম রাত্রেই বেহুশ হয়ে যায় তাহলে ঐ রাত্রের পরবর্তী দিবসটি ছাড়া পূর্ণ রমাযানের কাযা করবে। এর কারণ আমরা ইতোপূর্বে বলেছি।
ইমাম মালিক (রঃআঃ) বলেন, পরবর্তী দিনগুলোর রোজাও কাযা করবে না। কেননা তার মতে ইতিকাফের ন্যায় রমাযানের সিয়ামও একই নিয়্যতে আদায় হয়ে যায়।
আর আমাদের মতে প্রত্যেক দিনের জন্য স্বতন্ত্র নিয়্যত অপরিহার্য। কেননা এগুলো বিচ্ছিন্ন ইবাদত। কারণ প্রতি দুই দিনের মাঝে এমন সময়, যা উক্ত ইবাদতের সময়ভূক্ত নয়। ইতিকাফের বিষয়টি এর বিপরীত।
যে ব্যক্তি পুরো রমাযান মাস বেহুশ অবস্থায় থাকে সে তা কাযা করবে। কেননা, সংজ্ঞাহীনতা হলো এক ধরনের অসুস্থতা, যা শক্তিকে দুর্বল করে দেয়, কিন্তু তা আকলকে বিলুপ্ত করে না। সুতরাং তা সাওমকে বিলম্বিত করার ক্ষেত্রে ওযর রূপে গণ্য হবে, রহিত করার ক্ষেত্রে নয়। { কাজা রোজা ও কাফফারার মাসআলা }
যে ব্যক্তি পুরো রমাযান পাগল থাকে, সে তার জন্য কাযা করবে না।
ইমাম মালিক (রঃআঃ) ভিন্নমত পোষণ করেন। তিনি এটাকে বেহুশীর উপর কিয়াস করেন।
আমাদের দলিল এই যে, প্রকৃতপক্ষে রহিতকারী হলো কষ্টে-সাধ্য হওয়া; আর বেহুশী সাধারণতঃ মাস ব্যাপী হয় না। সুতরাং তা কষ্টসাধ্য নয়। পক্ষান্তরে মস্তিষ্ক বিকৃতি মাসব্যাপী হতে পারে। সুতরাং সে ক্ষেত্রে অসুবিধা আপতিত হবে।
যদি বিকৃত মস্তিষ্ক ব্যক্তি রমাযানের কোন অংশে সুস্থতা লাভ করে তাহলে সে বিগত দিনগুলোর কাযা করবে।
ইমাম যুফার ও ইমাম শাফিঈ (রঃআঃ) ভিন্নমত পোষণ করেন। তাহারা উভয়ে বলেন, যোগ্যতা না থাকার কারণে তার উপর আদায় করা ওয়াজিব হয়নি। আর কাযা প্রবর্তিত হয় আদায় ওয়াজিব হওয়ার ভিত্তিতে। সুতরাং সে পূর্ণ রমাযানব্যাপী বিকৃত মস্তিষ্ক ব্যক্তির মত হবে।
আমাদের দলিল এই যে, রোজা ওয়াজিব হওয়ার কারণ অর্থাত্ রমাযান মাস তো বিদ্যমান রহিয়াছে। আর যোগ্যতা দায়িত্ব পালনে সক্ষমতার সাথে সম্পর্কিত।
আর এ ক্ষেত্রে ওয়াজিব হওয়ার ফলাফল রহিয়াছে। আর তা হলো (শরীআতের পক্ষ হতে) এমনভাবে দায়বদ্ধ হওয়া, যা আদায় করিতে কোন অসুবিধা হবে না। মাসব্যাপী বিকৃতমস্তিষ্ক ব্যক্তির বিষয়টি এর বিপরীত। কেননা সে ক্ষেত্রে আদায়ে অসুবিধা রহিয়াছে। সুতরাং ওয়াজিব হওয়ার কোন ফলাফল নেই। পূর্ণ আলোচনা মতপার্থক্য বিষয়ক গ্রন্থাবলীতে রহিয়াছে।
প্রাপ্তবয়স্ক হওয়ার পূর্ব থেকেই মস্তিষ্ক বিকৃতি থাকা এবং পরবর্তীতে মস্তিষ্ক বিকৃতি ঘটা এ দুয়ের মাঝে কোন পার্থক্য নেই। কেউ কেউ বলেন, তা হল যাহেরী রিওয়ায়াত অনুসারে।
আর ইমাম মুহাম্মাদ (রঃআঃ) হতে বর্ণীত যে, তিনি উভয়ের মধ্যে পার্থক্য করেছেন। কেননা যদি সে বিকৃত মস্তিষ্ক অবস্থায় প্রাপ্তবয়স্ক হয় তাহলে সে অপ্রাপ্ত বয়স্কের সংগেই যুক্ত। তখন শরীআতের পক্ষ থেকে তার প্রতি নির্দেশ অনুপস্থিত। যদি সুস্থ অবস্থায় প্রাপ্তবয়স্ক হয় তারপর মস্তিষ্ক বিকৃতি ঘটে, তার অবস্থা তার বিপরীত। আর এটা হল পরবর্তী কোন কোন মাশায়েখগণের কাছে গ্রহণীয়।
যে ব্যাক্তি পূর্ণ রমাযান (বিরতি পালন সত্ত্বেও) রোজা রাখার বা না রাখার কোন নিয়ত করেনি, তার উপর পূর্ণ রমাযানের কাযা ওয়াজিব হবে।
ইমাম যুফার (রঃআঃ) বলেন, রমাযানের রোজা সুস্থ ও মুকীম ব্যক্তির ক্ষেত্রে নিয়্যত ছাড়াই আদায় হয়ে যাবে। কেননা সংযম পালন তার উপর অপরিহার্যকৃত বিষয়। সুতরাং যেভাবেই সে তা আদায় করবে, তা তার পক্ষ থেকে আদায় হয়ে যাবে। যেমন (নিয়্যত ছাড়া ) কেউ পূর্ণ নিসাব কোন ফকীরকে দান করে ছিল (তবে যাকাত আদায় হয়ে যায়)।
আমাদের দলিল এই যে, বান্দার উপর ফরযকৃত বিষয় হলো ইবাদত হিসাবে সংযম পালন করা। আর নিয়্যত ছাড়া ইবাদত হয় না। আর পুরা নিসাব দান করে দেওয়ার ক্ষেত্রে সওয়াবের নিয়্যত বিদ্যমান রহিয়াছে। যাকাত অধ্যায়ে এ সম্বন্ধে আলোচনা করা হয়েছে।
যে ব্যক্তি রোজার নিয়্যত না করেই ভোর করেছে, এরপর পানাহারও করেছে, তার উপর কাফ্ফারা ওয়াজিব হবে না-ইমাম আবূ হানীফা (রঃআঃ) –এর মত। আর ইমাম যুফার (রঃআঃ) বলেন, তার উপর কাফ্ফারা ওয়াজিব হবে। কেননা তার মতে নিয়্যত ছাড়া রোজা আদায় হয়।
ইমাম আবূ ইউসুফ (রঃআঃ) ও মুহাম্মাদ (রঃআঃ) বলেন, যাওয়ালের পূর্বে যদি পানাহার করে তাহলে কাফ্ফারা ওয়াজিব হবে। কেননা সে ফরয আদায়ের সম্ভাবনাকে নষ্ট করে দিয়েছে। সুতরাং সে গসবকারী ব্যক্তির নিকট থেকে গসবকারীর ন্যায় হলো।
ইমাম আবূ হানীফা (রঃআঃ) এর দলিল এই যে, কাফ্ফারার সম্পর্ক হলো ফাসিদ করার সাথে। কিন্তু এটা তো বিরত থাকা। কেননা নিয়্যত ছাড়া রোজাই নেই।
রোজা অবস্থায় যদি স্ত্রী লোকের ঋতুস্রাব হয় কিংবা সন্তান প্রসব করে তাহলে তার রোজা ভেংগে যাবে এবং তার কাযা করিতে হবে। নামাজের বিষয়টি এর বিপরীত। কেননা (সংখ্যাধিক্যের কারণে) নামায কাযা করিতে হলে সে অসুবিধার সম্মুখীন হবে। নামাজ অধ্যায়ে এ আলোচনা বিগত হয়েছে।
মুসাফির যদি রমাযানের দিবসের কোন অংশে (বাড়িতে) ফিরে আসে কিংবা ঋতুগ্রস্ত স্ত্রী লোক যদি পবিত্র হয়ে যায়, তাহলে দিনের অবশিষ্ট অংশ তাহারা বিরতি পালন করবে।
ইমাম শাফিঈ (রঃআঃ) বলেন, বিরতি পালন ওয়াজিব নয়। আর এই মতপার্থক্য রহিয়াছে ঐ সকল ব্যক্তির ক্ষেত্রেও, যারা রোজা ওয়াজিব হওয়ার যোগ্য হয়ে যায়, অথচ দিবসের শুরুতে তাহাদের যোগ্যতা ছিল না। তিনি বলেন, সাদৃশ্যের অবলম্বন হলো মূলের স্থলবর্তী। সুতরাং এটি তার উপরই ওয়াজিব হবে, যার উপর মূল রোজা ওয়াজিব হয়েছিল, যেমন কেউ রোজা ভেংগে ফেলল ইচ্ছাকৃতভাবে বা বিভ্রান্তিতে।
আমাদের দলিল এই যে, তা ওয়াজিব হয়েছে সময়ের হক আদায়ের জন্য, স্থলবর্তী হিসাবে নয়। কেননা, এটি হলো মর্যাদাপূর্ণ সময়। ঋতুগ্রস্ত, নিফাসগ্রস্ত, অসুস্থ ও মুসাফির ব্যক্তিগণের বিষয়টি এর বিপরীত। কেননা এ সকল ওযর বিদ্যমান থাকা অবস্থায় তাহাদের উপর বিরতি পালন ওয়াজিব নয়। কেননা এগুলো রোজার ক্ষেত্রে যেমন প্রতিবন্ধক, তেমনি সাদৃশ্যের ক্ষেত্রেও।
ইমাম কুদূরী (রঃআঃ) বলেন, কেউ যদি এই মনে করে সাহরী খায় যে, এখনও ফজর হয়নি। কিন্তু পরবর্তীতে জানা গেলো যে, আসলে তখন ফজর হয়ে গিয়েছিল, কিংবা কেউ একথা মনে করে ইফতার করলো যে, সূর্য অস্ত গিয়াছে, কিন্তু পরে জানা গেলো যে, সূর্য তখনও অস্ত যায়নি, তাহলে ঐ দিনের অবশিষ্ট সময় সে বিরতি পালন করবে।
উদ্দেশ্য হলো যথাসম্ভব সময়ের মর্যাদা রক্ষা করা কিংবা অভিযোগ থেকে মুক্ত থাকা। { কাজা রোজা ও কাফফারার মাসআলা }
তবে তার উপর কাযা ওয়াজিব। কেননা রোজা আদায় করার হুকুম এমন একটি হক, যা অনুরূপ আমলের মাধ্যমে আদায় করা তার যিম্মায় রহিয়াছে। যেমন অসুস্থ ব্যক্তি ও মুসাফিরের ক্ষেত্রে। তবে তার উপর কাফ্ফারা ওয়াজিব নয়। কেননা, ইচ্ছা না থাকায় অপরাধ এখানে লঘু। এ প্রসংগে উমর (রাঃআঃ) বলেছেন, গুনাহ করার মনোবৃত্তি আমাদের ছিল না। আর একদিনের রোজা কাযা করা আমাদের পক্ষে সহজ।
উল্লেখিত ফজর দ্বারা দ্বিতীয় ফজর (সুবিহ সাদিক) উদ্দেশ্য। নামাজ অধ্যায়ে আমরা তা ব্যাখ্যা করে এসেছি।
আর সাহরী খাওয়া মুস্তাহাব। কেননা রাসূলুল্লাহ্ (সাঃআঃ) বলেছেন- তোমরা সাহরী খাও। কেননা সাহরীতে বরকত রহিয়াছে। তবে সাহরীকে বিলম্বিত করা মুস্তাহাব। কেননা রসূলুল্লাহ (সাঃআঃ) বলেছেন- তিনটি বিষয় রাসূলগণের আচরণের অন্তর্ভূক্ত। ইফতার তরান্বিত করা, বিলম্বে সাহরী খাওয়া এবং মিসওয়াক করা।
তবে যদি ফজর উদয় হওয়ার ব্যাপারে সন্দেহ হয়, অর্থাত্ ফজর উদয় হয়েছে কি হয়নি, উভয়ের সম্ভাবনাই সমান।
তখন পানাহার করাই উত্তম, যাতে হারাম থেকে বাচা যায়। কিন্তু তার উপর তা ওয়াজিব হয়। সুতরাং যদি পানাহার করে তবে তার রোজা পূর্ণ হয়ে যাবে। কেননা রাত্র বিদ্যমান থাকা হলো মূল অবস্থা। ইমাম আবূ হানীফা (রঃআঃ) হতে বর্ণীত। যদি সে এমন কোন স্থানে থাকে, যেখানে ফজর বোঝা যায় না, কিংবা পূর্ণিমার রাত হয় কিংবা মেঘাচ্ছন্ন রাত হয় কিংবা তার দৃষ্টিশক্তি দুর্বল হয় আর এই সকল কারণে তার সন্দেহ হয়, তাহলে পানাহার করবে না। যদি করে তাহলে সে গুনাহ্গার হবে। কেননা রাসূলুল্লাহ্ (সাঃআঃ) বলেছেন- যা তোমাকে সন্দেহ ফেলে তা পরিহার করে ঐ বিষয়ে গ্রহণ করে, যা তোমাকে সন্দেহে ফেলে না।
যদি তার প্রবল ধারণা এই হয় যে, সে ফজর উদয় হওয়া অবস্থায় পানাহার করেছে, তাহলে প্রবল ধারণার উপর আমল হিসাবে কাযা করা তার উপর ওয়াজিব হবে। এতেই সতর্কতা রহিয়াছে।
তবে যাহিরী রিওয়ায়াত অনুযায়ী তার উপর কাযা নেই। কেননা, কোন নিশ্চিত বিষয় অনুরূপ নিশ্চিত বিষয় ছাড়া বিলুপ্ত হয় না।
যদি প্রকাশ পায় যে, ফজর উদিত হয়েছে, তাহলে তার উপর কাফ্ফারা্ ওয়াজিব হবে না। কেননা, সে মূল অবস্থার উপর বিষয়টির ভিত্তি করেছে। সুতরাং ইচ্ছাকৃতভাবে পানাহার সাব্যস্ত হয় না।
যদি সূর্যাস্তের ব্যাপারে সন্দেহ হয়, তাহলে তার জন্য ইফতার করা জাইয হবে না। কেননা এখানে দিন অব্যাহত থাকাই হলো মূল অবস্থা।
যদি পানাহার করে তাহলে তার উপর কাযা ওয়াজিব হবে মূল অবস্থা কার্যকর করার প্রেক্ষিতে।
আর যদি তার প্রবল ধারণা হয় যে, সে ফজরের সূর্যাস্তের পূর্বে পানাহার করেছে তাহলে তার উপর কাযা ওয়াজিব হবে। বিষয়ে একই বর্ণনা রহিয়াছে (এতে কোন দ্বিমত নেই)। কেননা দিবস অব্যাহত থাকাই মূল অবস্থা। যদি এ বিষয়ে সন্দিহান হয় আর পরে প্রকাশ পায় যে, সূর্য অস্ত যায়নি, তাহলে মূল অবস্থার অর্থাত্ দিবস অব্যাহত থাকার দিকে লক্ষ্য করে কাফ্ফারা ওয়াজিব হওয়া উচিত। { কাজা রোজা ও কাফফারার মাসআলা }
যে ব্যক্তি রমাযানের দিবসে ভুলে পানাহার করে ফেললো এবং (অজ্ঞাতবশত) ধারণা করে বসলো যে, ভুলক্রমের পানাহার রোজা ভংগ করে, তাই অতঃপর সে ইচ্ছাকৃতভাবে পানাহার করলো, তাহলে তার উপর কাযা ওয়াজিব হবে, কাফ্ফারা ওয়াজিব হবে না। কেননা তার ধারণা কিয়াস নির্ভর ছিল। সুতরাং এখানে সন্দেহ সৃষ্টি হয়েছে। যদি এতদ্সংক্রান্ত হাদিস তার গোচরে এসেও থাকে তবুও যাহেরী রিওয়ায়াত মতে একই হুকুম।
ইমাম আবূ হানীফা (রঃআঃ) থেকে চারটি মত বর্ণীত আছে যে, কাফ্ফারা ওয়াজিব হবে। সাহেবাইন থেকেও এরূপ বর্ণীত আছে। কেননা এখানে অস্পষ্টতা নেই, সুতরাং সন্দেহেরও অবকাশ নেই।
প্রথমোক্ত মতের দলিল এই যে, কিয়াসের দিকে লক্ষ্য করিলে ‘নীতিগত সংশয় অবশ্যই বিদ্যমান রহিয়াছে। সুতরাং অবগতির কারণে তা রহিত হবে না। যেমন পুত্রের দাসীর সংগে পিতার সংগমের বিষয়।
যদি কেউ শিংগা লাগায় আর ধারণা করে যে তাতে রোজা ভংগ হয়ে যায়, এরপর ইচ্ছাকৃতভাবে পানাহার করে ফেলে তাহলে, তার উপর কাযা ও কাফ্ফারার দুটোই ওয়াজিব হবে। কেননা এ ধারণা শরীআতী কোন দলীলের উপর নির্ভরশীল নয়। তবে যদি কোন নির্ভরযোগ্য ফকীহ রোজা ফাসিদ হয়েছে বলে ফাতওয়া দান করে থাকেন। কেননা তার জন্য ফাতওয়া শরীআতী দলিল রূপে গন্য।
আর যদি তার নিকট এতদসংক্রান্ত হাদিস পৌছে থাকে এবং তার উপর সে নির্ভর করে থাকে, তাহলে ইমাম মুহাম্মাদ (রঃআঃ) এর মতে একই হুকুম হবে। (অর্থাত্ কাফ্ফারা ওয়াজিব হবে না) কারণ রাসূলুল্লাহ্ (সাঃআঃ) এর বাণী মুফতির ফাতওয়ার নিম্নে যেতে পারে না।
ইমাম আবূ ইউসুফ (রঃআঃ) এর নিকট থেকে এর বিপরীত মত (অর্থাত্ কাফ্ফারা ওয়াজিব হওয়ার মত) বর্ণীত হয়েছে। কেননা সাধারণ লোকের পক্ষে যেহেতু হাদিস জানা ও বোঝা সম্ভব নয়। সেহেতু ফকীহ্গণের ইকতিদা ও অনুসরণ করাই তার অবশ্য কর্তব্য।
যদি হাদিসের ব্যাখ্যা জেনে থাকে তাহলে সংশয় রহিত হওয়ার কারণে কাফ্ফারা ওয়াজিব হয়ে যাবে। আর কিয়াসের বিপরীত হওয়ার কারণে ইমাম আওযায়ী (রঃআঃ) এর মতামত সন্দেহ সৃষ্টিকারী বলে গণ্য হবে না।
গীবত করার পর যদি ইচ্ছাকৃতভাবে পানাহার করে বসে তাহলে যে ভাবেই করে থাকুক কাযা ও কাফ্ফারা দুটোই তার উপর ওয়াজিব হবে। কেননা গীবতের কারণে রোজা ভংগ হওয়া কিয়াসের বিপরীত। আর সংশ্লিষ্ট হাদিস সর্বসম্মত ভাবেই অন্য (অর্থাত্ সাওয়াব না হওয়ার ) অর্থে প্রযোজ্য। { কাজা রোজা ও কাফফারার মাসআলা }
যদি ঘুমন্ত কিংবা বিকৃত মস্তিষ্ক স্ত্রী লোকের সংগে সংগম করা হয় আর ঐ স্ত্রীলোক রোজাদার থাকে তাহলে স্ত্রীলোকটির উপর কাযা ওয়াজিব হবে, কাফ্ফারা ওয়াজিব হবে না।
ইমাম যুফার ও শাফিঈ (রঃআঃ) বলেন, ঐ স্ত্রী লোকদ্বয়ের উপর কাযাও ওয়াজিব হবে না। এটা তাহারা বলেছেন ভুলে পানাহারকারীর উপর কিয়াস করে। বরং এদের ওযর আরো প্রবল। কেননা এখানে তাহাদের কোন ইচ্ছাই পাওয়া যায়নি।
আমাদের দলিল এই যে, ভুল সচরাচর হয়ে থাকে। আর উক্ত ঘটনাবলী বিরল। কাফ্ফারা ওয়াজিব না হওয়ার কারণ হলো (তার পক্ষ থেকে) অপরাধ না হওয়া।
পরিচ্ছেদঃ সে সিয়াম প্রসঙ্গে যা বান্দা নিজের উপর ওয়াজিব করে
কেউ যদি বলে আল্লাহ্র ওয়াস্তে কুরবানীর দিনে আমার যিম্মায় সিয়াম , সে ঐ দিন সাওম পালন না করে কাযা করবে।
অর্থাত্ আমাদের নিকট এই মান্নত বিশুদ্ধ। ইমাম যুফার ও শাফিঈ (রঃআঃ) এ সম্বন্ধে ভিন্নমত পোষণ করেন।
তাহাদের বক্তব্য এই যে, সে এমন বিষয়ের মান্নত করেছে, যা গুনাহ। কেননা এই দিনগুলোতে সাওম পালনের বিষয়ে নিষেধাজ্ঞা রহিয়াছে। (সুতরাং তার মান্নত সংঘটিত হবে না।)
আমাদের দলিল এই যে, সে শরীআত প্রমাণিত রোজার মান্নত করেছে। আর নিষেধাজ্ঞা রহিয়াছে ভিন্ন কারণে। সেটা হলো আল্লাহ্র দাওয়াতে সাড়াদান বর্জন করা। সুতরাং মান্নত তো শুদ্ধ হবে। তবে তার সাথে সংশ্লিষ্ট গুনাহ্ পরিহার করার উদ্দেশ্যে সিয়াম থেকে বিরত থাকবে। এরপর তা কাযা করবে যিম্মার ওয়াজিব আদায়ের জন্য।
আর যদি সে দিন রোজা রেখে ফেলে তাহলে সে দায়িত্ব মুক্ত হয়ে যাবে। কেননা সে যেভাবে নিজের উপর বাধ্যবাধকতা করেছিলো, সেভাবেই আদায় করেছে। { কাজা রোজা ও কাফফারার মাসআলা }
যদি উপরোক্ত বাক্য দ্বারা কসমের নিয়্যত করে থাকে, তাহলে তার উপর কসমের কাফ্ফারা ওয়াজিব হবে। যদি সে সেদিন রোজা না রেখে থাকে।
আলোচ্য মাসআলাটি মোট ছয় প্রকার। প্রথমতঃ (উক্ত বাক্য দ্বারা কসম বা নযর) কোনটারই নিয়্যত করল না। দ্বিতীয়তঃ শুধু নযরের নিয়্যত করলো, অন্য কিছু নিয়্যত করলো না। তৃতীয়তঃ নযরের নিয়্যত করলো এবং ইয়ামীন না হওয়ার নিয়্যত করলো, এই তিন অবস্থায় নযর হবে। কেননা বাক্যটি শব্দগত দিক থেকেই ‘নযর নির্দেশক। আর তা কেন হবে না। অথচ তার নিয়্যত দ্বারা নযরকে স্থির করেছে।
যদি সে উক্ত বাক্য দ্বারা কসমের নিয়্যত করে থাকে এবং নযর না হওয়ার নিয়্যত করে থাকে, তাহলে তা কসম হবে। কেননা, উক্ত বাক্যে কসমের সম্ভাবনা রহিয়াছে। আর তা সে নিয়্যত দ্বারা নির্ধারিত করে নিয়েছে এবং অন্যটিকে প্রত্যাখ্যান করে দিয়েছে।
যদি উভয়টির নিয়্যত করে তাহলে ইমাম আবূ হানীফা ও ইমাম মুহাম্মাদ (রঃআঃ) এর মতে নযর ও কসম দুটোই হবে।
আর ইমাম আবূ ইউসুফ (রঃআঃ) এর মতে শুধু নযর হবে।
আর যদি কসমের নিয়্যত করে, তাহলে ইমাম আবূ হানীফা ও ইমাম মুহাম্মাদ (রঃআঃ) এর মতে একই হুকুম হবে। (অর্থাত্ নযর ও ইয়ামীন দুটোই হবে) । কিন্তু আবূ ইউসুফ (রঃআঃ) এর মতে শুধু কসম হবে।
ইমাম আবূ ইউসুফ (রঃআঃ) এর দলিল এই যে, এ বাক্যের মৌলিক অর্থ হল নযর। আর কসমের অর্থ হলো রূপক। এ কারণেই প্রথমটি নিয়্যতের উপর নির্ভর করে না। কিন্তু দ্বিতীয়টি নিয়্যতের উপর নির্ভর করে। সুতরাং এ বাক্য একই সংগে উভয় অর্থ অন্তর্ভূক্ত করবে না।
সুতরাং নিয়্যতের দ্বারা রূপক অর্থ নির্ধারিত হয়ে যাবে। আর উভয়টি নিয়্যত করার ক্ষেত্রে মূল অর্থই অগ্রাধিকার লাভ করবে।
ইমাম আবূ হানীফা ও ইমাম মুহাম্মাদ (রঃআঃ) এর দলিল এই যে, নযর ও কসম এ উভয়ের লক্ষ্যের মধ্যে কোন বৈপরীত্য নেই। কেননা উভয়টির চাহিদা হল ওয়াজিব হওয়া। তবে ‘নযর তা দাবী করে স্বকীয়ভাবে আর কসম তা দাবী করে ভিন্ন কারণে। সুতরাং উভয় দলিলকে কার্যকরী করার জন্য উভয় অর্থকে এখানে আমরা একত্র করেছি, যেমন বিনিময় শর্তে ‘হেবা এর ক্ষেত্রে দান ও বিনিময় এ উভয় দিক কে আমরা একত্র করেছি।
যদি সে বলে যে, আমার যিম্মায় আল্লাহ্র ওয়াস্তে এই বছরের রোজা। তাহলে ঈদুল ফিতর, ঈদুল আযহা ও তাশরীকের দিনগুলোতে রোজা হতে বিরত থাকবে এবং পরবর্তীতে সেগুলোর কাযা আদায় করে নিবে। কেননা নির্দিষ্ট বছরের নযরের মধ্যে অর্থ শর্ত আরোপ করে। কেননা লাগাতার হওয়া ঐ দিনগুলো থেকে মুক্ত হতে পারে না। তবে এই সুরতে সেই দিনগুলোর রোজা ধারাবাহিক কাযা করবে, যথাসম্ভব লাগাতারের মর্ম বাস্তবায়নের উদ্দেশ্যে।
আর এখানেও ইমাম যুফার ও শাফিঈ (রঃআঃ) এর ভিন্নমত প্রযুক্ত হবে। কেননা এই দিনগুলোতে রোজা নিষিদ্ধ রহিয়াছে। রাসূলুল্লাহ্ (সাঃআঃ) বলেছেন- শোনো, এ দিনগুলোতে রোজা রেখো না, এগুলো হচ্ছে পানাহার ও সহবাসের দিন।
আমরা পূর্বে রোজা ওয়াজিব হওয়ার কারণ এবং হাদিসের ব্যাখ্যা বর্ণনা করে এসেছি।
আর যদি লাগাতার রাখার শর্ত না করে থাকে তাহলে এই দিনগুলোতে রোজা রাখা যথেষ্ট হবে না। কেননা যে রোজা সে নিজের যিম্মায় লাযিম করছে, তার পরিপূর্ণ হওয়াটাই হলো স্বাভাবিক। আর এ দিনগুলোতে আদায়কৃত রোজা হবে ত্রুটিপূর্ণ নিষেধাজ্ঞা থাকার কারণে। { কাজা রোজা ও কাফফারার মাসআলা }
পক্ষান্তরে যদি বছর নির্ধারণ করে থাকে তাহলে এই দিনগুলোতে রোজা রাখা যথেষ্ট হবে। কেননা সে ত্রুটির গুণসহ নিজের যিম্মায় লাযিম করেছিল । সুতরাং নিজের উপর আরোপিত গুণ অনুযায়ী আদায় হবে।
ইমাম কুদূরী (রঃআঃ) বলেন, তবে যদি সে এই বাক্য দ্বারা কসমের নিয়্যত করে থাকে, তাহলে কসমের কাফ্ফারা তার উপর ওয়াজিব হবে। এ বাক্যটির বিভিন্ন প্রকার পিছনে বর্ণীত হয়েছে।
যে ব্যক্তি কুরবানীর দিন রোজা অবস্থায় সকাল যাপন করে অতঃপর সিয়াম ভংগ করে ফেলে, তার উপর (কাযা কাফ্ফারা) কিছুই ওয়াজিব হবে না।
তবে নাওয়াদির (বা অপ্রকাশিত বর্ণনা) মতে ইমাম আবূ ইউসুফ ও মুহাম্মাদ (রঃআঃ) হতে বর্ণীত আছে যে, তার উপর কাযা ওয়াজিব হবে। কেননা কোন আমল শুরূ করা ঐ আমলকে লাযিম করে, যেমন নযর করা আমলকে লাযিম করে। এটা মাকরূহ ওয়াক্তে (নফল) নামাজ শুরু করার মতো হলো।
ইমাম আবূ হানীফা (রঃআঃ) এর মত অনুসারে-এটি যাহির রিওয়ায়াত পার্থক্যের কারণ এই যে, রোজা শুরু করা মাত্র লোকটিকে রোজাদার বলা হয়। এ কারণেই সিয়াম না রাখার কসমকারী ব্যক্তি এই দিন রোজা শুরু করা মাত্র ভংগকারী হয়ে যাবে। সুতরাং রোজা শুরু করা দ্বারা সে গুনাহে লিপ্ত বলে সাব্যস্ত হবে তাই তা বাতিল করা ওয়াজিব হবে, অতএব তা রক্ষা করা ওয়াজিব হবে না। আর এর উপরই কাযা ওয়াজিব হওয়া নির্ভর করে। কিন্তু শুধু ‘নযর-এর কারণে গুনাহে লিপ্ত বলে সাব্যস্ত হবে না। আর নযরই হলো রোজাকে ওয়াজিবকারী। { কাজা রোজা ও কাফফারার মাসআলা }
তদ্রুপ শুধু নামাজ শুরু করার দ্বারা গুনাহে লিপ্ত বলা যায় না। যতক্ষণ না এক রাকাআতে পূর্ণ করে। একারণেই নামায না পড়ার কসমকারী ব্যক্তি নামায শুরু করার কারণে কসম ভংগকারী বলে সাব্যস্ত হবে না। সুতরাং আদায়কৃত অংশকে রক্ষা করা ওয়াজিব হবে। তাই কাযা করা তার যিম্মায় এসে যায়।
ইমাম আবূ হানীফা (রঃআঃ) থেকে অন্য এক বর্ণনায় রহিয়াছে যে, নামাযের ক্ষেত্রেও কাযা ওয়াজিব হবে না। তবে প্রথমোক্ত মতই অধিক প্রবল। সঠিক বিষয় আল্লাহ্ই অধিক অবগত। { কাজা রোজা ও কাফফারার মাসআলা }
Leave a Reply