কসর নামাজের নিয়ম । মুসাফির দুরুত্ত সুতরা ও সওয়ারীর বর্ণনা

কসর নামাজের নিয়ম । মুসাফির দুরুত্ত সুতরা ও সওয়ারীর বর্ণনা

কসর নামাজের নিয়ম । মুসাফির দুরুত্ত সুতরা ও সওয়ারীর বর্ণনা, এই অধ্যায়ে হাদীস =৯৫ টি ( ৩১৯-৪১৩ পর্যন্ত ) >> মুয়াত্তা ইমাম মালিক এর মুল সুচিপত্র দেখুন

অধ্যায় – ৯ঃ সফরে নামায কসর আদায় করা

  • পরিচ্ছেদঃ ১ – মুসাফির ও মুকীম থাকা অবস্থায় দুই নামাজ একত্রে আদায় করা৩১৮
  • পরিচ্ছেদঃ ২ – সফরে নামাজ কসর আদায় করা
  • পরিচ্ছেদঃ ৩ – কত দূরের সফরে নামাজ কসর আদায় করা ওয়াজিব হয়
  • পরিচ্ছেদঃ ৪ – কোন স্থানে অবস্থানের নিয়ত না করলে মুসাফির নামাজ কত রাকআত আদায় করিবে
  • পরিচ্ছেদঃ ৫- মুসাফির ইকামতের নিয়ত করলে তখনকার নামাজ
  • অনুচ্ছেদ: ৬-মুসাফিরের নামাজ যখন তিনি ঈমাম হন অথবা অন্য ইমামের পিছনে নামাজ পড়েন
  • পরিচ্ছেদঃ ৭ – সওয়ারীর উপর নামাজ আদায় করা এবং সফরে দিনে ও রাত্রিতে নফল আদায় করা
  • পরিচ্ছেদঃ ৮ – সালাতুয যুহা [চাশ্ত ও ইশরাকের নামাজ]
  • পরিচ্ছেদঃ ৯ – চাশতের সময় বিভিন্ন নফল নামাযের বর্ণনা
  • পরিচ্ছেদঃ ১০ – মুসল্লিদের সম্মুখ দিয়ে কারো চলার ব্যাপারে কড়া নিষেধাজ্ঞা
  • পরিচ্ছেদঃ ১১ – মুসল্লির সামনে দিয়ে চলার অনুমতি
  • পরিচ্ছেদঃ ১২ – সফরে মুসল্লি কর্তৃক সুতরা বা আড় ব্যবহার
  • পরিচ্ছেদঃ ১৩ – নামাযে হাত দিয়ে কাঁকর সরানো
  • পরিচ্ছেদঃ ১৪ – সফ্ সোজা রাখা
  • পরিচ্ছেদঃ ১৫ – নামাযে এক হাত অপর হাতের উপর রাখা
  • পরিচ্ছেদঃ ১৬ – ফজরে কুনূত পড়া
  • পরিচ্ছেদঃ ১৭ – যে সময় [পায়খানা-প্রশ্রাব ইত্যাদি] আবশ্যক পূরণের ইচ্ছা করে সে সময় নামাজ আদায় নিষেধ
  • পরিচ্ছেদঃ ১৮ – নামাযের অপেক্ষা করা এবং নামাযের জন্য গমন করা
  • পরিচ্ছেদঃ ১৯ – সিজদায় হস্তদ্বয় মুখমণ্ডলের পাশাপাশি রাখা
  • পরিচ্ছেদঃ ২০ – প্রয়োজনবশত নামাযে অন্যদিকে দেখা এবং দস্তক বা তালি দেয়া
  • পরিচ্ছেদঃ ২১ – ঈমামকে রুকূতে পেলে কি করিবে
  • পরিচ্ছেদঃ ২২ – নবী সাঃআঃ-এর উপর দরূদ পাঠ করা
  • পরিচ্ছেদঃ ২৩ – নামাযের বিভিন্ন আমল
  • পরিচ্ছেদঃ ২৪ – নামাজ সম্পর্কিত বিবিধ আহ্কাম

পরিচ্ছেদঃ ১ – মুসাফির ও মুকীম থাকা অবস্থায় দুই নামাজ একত্রে আদায় করা৩১৮

আবু হুরায়রা [রাদি.] হইতে বর্ণিতঃ

রাসূলুল্লাহ সাঃআঃ তাঁর তাবুক সফরকালে যোহর ও আসরের নামাজ একত্রে আদায় করেছিলেন। [হাদীসটি ঈমাম মালিক [রাহিমাহুল্লাহ] একক ভাবে বর্ণনা করিয়াছেন, তবে উল্লেখিত সনদে ইয়াহইয়া বিন ইয়াহইয়া কর্তৃক সনদ মুত্তাসিল নাকি মুরসাল তা নিয়ে ওলামাগণ মতভেদ করিয়াছেন]

কসর নামাজের নিয়ম -এই হাদীসটির তাহকিকঃ অন্যান্য

৩১৯ আবুত তুফায়েল আমির ইবনি ওয়াসিলা [রাদি. হইতে বর্ণিতঃ

মুআয ইবনি জবর [রাদি.] তাহাকে বলেছেন, তাঁরা তাবুকের যুদ্ধের বৎসর রাসূলুল্লাহ সাঃআঃ-এর সাথে সফরে বের হলেন। [সে সফরে] রাসূলুল্লাহ সাঃআঃ যোহর, আসর, মাগরিব ও ইশা একত্রে আদায় করিতেন। [মুআয] বলিলেন, রাসূলুল্লাহ সাঃআঃ একদিন নামাযে দেরি করলেন, অতঃপর তিনি আসলেন এবং যোহর ও আসর একত্রে আদায় করলেন। আবার ভেতরে গেলেন, পুনরায় বের হলেন, তারপর মাগরিব ও ইশা একত্রে আদায় করলেন। অতঃপর বলিলেন, তোমরা আগামীকাল ইনশাআল্লাহ তাবুকের ঝর্ণার কাছে পৌঁছে যাবে। তোমরা দিনের প্রথমাংশেই সেখানে পৌঁছাবে। যে আগে সে জায়গায় পৌঁছে, আমি না আসা পর্যন্ত সে ব্যক্তি যেন উহার সামান্যতম পানিও স্পর্শ না করে। অতঃপর আমরা সেখানে পৌঁছালাম। কিন্তু আমাদের আগেভাগে সেখানে দুজন লোক পৌঁছে গিয়েছিল। আর ঝর্ণা হইতে অতি সামান্য পানি নির্গত হচ্ছিল। রাসূলুল্লাহ সাঃআঃ উক্ত ব্যক্তিদ্বয়কে জিজ্ঞেস করলেন তোমরা কি এর পানি হইতে কিছু স্পর্শ করেছ? তাঁরা দুজনে হ্যাঁসূচক উত্তর দিলেন। রাসূলুল্লাহ সাঃআঃ তাদেরকে অনেক তিরস্কার করলেন এবং আল্লাহর যতটুকু ইচ্ছা ততটুকু তাঁদের সম্পর্কে বলিলেন। তারপর তাঁরা আঁজলা ভরে অল্প অল্প করে কিছু পানি কোন এক পাত্রে জমা করলেন। অতঃপর রাসূলুল্লাহ সাঃআঃ সে পানিতে তাঁর উভয় হাত ও মুখমণ্ডল ধুলেন এবং সে পানি ঝর্ণায় নিক্ষেপ করলেন যদ্দরুন ঝর্ণা হইতে ফল্গুধারার মত অনেক পানি উঠতে লাগল। লোকজন ঝর্ণা হইতে পানি পান করে তৃষ্ণা নিবারণ করলেন। তারপর রাসূলুল্লাহ সাঃআঃ বলিলেন হে মুআয, সম্ভবত তুমি দীর্ঘায়ু লাভ করিবে এবং তুমি এ ঝর্ণার পানি দ্বারা এই স্থানের অনেক বাগবাগিচায় পূর্ণভাবে পানি সেচ হইতে দেখবে।

[সহীহ, মুসলিম ৭০৬] কসর নামাজের নিয়ম -এই হাদীসটির তাহকিকঃ সহীহ হাদীস

৩২০ নাফি [রাদি.] হইতে বর্ণিতঃ

আবদুল্লাহ ইবনি উমার [রাদি.] বলেছেন, যদি [কোন কারণবশত] রাসূলুল্লাহ সাঃআঃ-এর দ্রুত ভ্রমণ করিতে হত, তবে তিনি মাগরিব ও ইশা একত্রে আদায় করিতেন।

[বুখারি, ১০৯১, মুসলিম ৭০৩] কসর নামাজের নিয়ম -এই হাদীসটির তাহকিকঃ সহীহ হাদীস

৩২১ আবদুল্লাহ্ ইবনি আব্বাস [রাদি.] হইতে বর্ণিতঃ

ভয় ভীতিজনিত কোন কারণ ছাড়া এবং সফর ব্যতিরেকে রাসূলুল্লাহ সাঃআঃ আমাদেরকে যোহর ও আসর একসাথে এবং মাগরিব ও ইশা এক সাথে আদায় করিয়েছেন। [সহীহ, মুসলিম ৭০৫]

ইয়াহইয়া [রাহিমাহুল্লাহ] বলেন, মালিক [রাহিমাহুল্লাহ] বলেছেন, আমার মতে ইহা বৃষ্টির জন্য ছিল।

কসর নামাজের নিয়ম -এই হাদীসটির তাহকিকঃ সহীহ হাদীস

৩২২ নাফি [রাদি.] হইতে বর্ণিতঃ

আমীরগণ বর্ষণকালে মাগরিব ও ইশার নামাজকে একত্রে আদায় করলে আবদুল্লাহ ইবনি উমার [রাদি.] তাঁদের সাথে [উক্ত দুই ওয়াক্তের] নামাজ একত্রে আদায় করিতেন। [হাদীসটি ঈমাম মালিক [রাহিমাহুল্লাহ] একক ভাবে বর্ণনা করিয়াছেন]

কসর নামাজের নিয়ম -এই হাদীসটির তাহকিকঃ অন্যান্য

৩২৩ ইবনি শিহাব [রাহিমাহুল্লাহ] হইতে বর্ণিতঃ

সালিম ইবনি আবদুল্লাহ [রাহিমাহুল্লাহ]-কে প্রশ্ন করলেন সফরে যোহর ও আসরকে পর্যায়ক্রমে একত্রে আদায় করা যায় কিনা? তিনি বলিলেন, হ্যাঁ, এতে কোন সমস্যা নেই, আরাফাতে লোকজনের নামাযের প্রতি [যা এক সাথে আদায় করা হয়] তুমি কি লক্ষ করনি? [হাদীসটি ঈমাম মালিক [রাহিমাহুল্লাহ] একক ভাবে বর্ণনা করিয়াছেন]

আলী ইবনি হুসায়ন [রাদি.] বলিতেন, রাসূলুল্লাহ সাঃআঃ দিনে সফরের ইচ্ছা করলে যোহর ও আসর একযোগে আদায় করিতেন। আর রাত্রে সফরের ইচ্ছা করলে মাগরিব ও ইশা একত্রে আদায় করিতেন। [মুয়াজবিন জাবাল ও ইবনি ওমর সহ অন্যান্য সাহাবী থেকে সনদ সহ অনুরূপ হাদীস বর্ণিত হয়েছে]

কসর নামাজের নিয়ম -এই হাদীসটির তাহকিকঃ অন্যান্য

পরিচ্ছেদঃ ২ – সফরে নামাজ কসর আদায় করা

৩২৪ খালিদ্ ইবনি আসীদ [রাহিমাহুল্লাহ]- হইতে বর্ণিতঃ

বংশের জনৈক ব্যক্তি আবদুল্লাহ ইবনি উমার [রাদি.]-কে প্রশ্ন করলেন হে আবু আবদুর রহমান! আমরা সালাতুল খাওফ [ভয়জনিত অবস্থায় নামাজ] ও সালাতুল হাযর [মুকীম অবস্থায় নামাজ]-এর উল্লেখ কুরআনে পাই, কিন্তু সালাতুস সফর [সফরের নামাযের কথা তো কুরআনে] পাইনি? আবদুল্লাহ্ ইবনি উমার [রাদি.] বলিলেন, হে আমার ভাতিজা! আল্লাহ তাআলা আমাদের নিকট যখন মুহাম্মাদ সাঃআঃ কে প্রেরণ করেন, তখন আমরা কিছু জানতাম না, ফলে আমরা তাহাকে যেরূপ করিতে দেখেছি সেরূপ করে থাকি।

[সহীহ, নাসাঈ ৪৫৭, ইবনি মাজাহ ১০৬৬, আল্লামা আলবানী হাদীসটিকে সহীহ বলেছেন সহীহ ওযয়ীফ সুনানে ইবনি মাজাহ। আর ঈমাম মালিক [রাহিমাহুল্লাহ] কর্তক উল্লেখিত সনদে একজন সন্দেহ যুক্ত রাবী রয়েছেন।] কসর নামাজের নিয়ম -এই হাদীসটির তাহকিকঃ অন্যান্য

৩২৫ আয়েশা [রাদি.] হইতে বর্ণিতঃ

সফরে এবং হাযরে [মুকীম থাকাকালীন] দুই-দুই রাকআতই ফরয করা হয়, অতঃপর সফরের নামাজ পূর্বাবস্থায় বাকি রাখা হয়, আবাসের নামাযে বৃদ্ধি করা হয়।

[বুখারি ৩৫০, মুসলিম ৬৮৫] কসর নামাজের নিয়ম -এই হাদীসটির তাহকিকঃ সহীহ হাদীস

৩২৬ ইয়াহইয়া ইবনি সাঈদ [রাহিমাহুল্লাহ] হইতে বর্ণিতঃ

সালিম ইবনি আবদুল্লাহ [রাহিমাহুল্লাহ]-এর নিকট জিজ্ঞেস করলেন আপনি আপনার পিতাকে সফরে মাগরিবের নামাজ সর্বাধিক কতটুকু বিলম্বে আদায় করিতে দেখেছেন? তখন সালিম [রাহিমাহুল্লাহ] বলিলেন, আমরা যখন যাতুল-জায়শ নামক স্থানে, তখন সূর্যাস্ত হয়, তিনি মাগরিবের নামাজ আকীক নামক স্থানে গিয়ে আদায় করিয়াছেন। [দুই স্থানের দূরত্ব ৭ মাইল] [হাদীসটি ঈমাম মালিক [রাহিমাহুল্লাহ] একক ভাবে বর্ণনা করিয়াছেন]

কসর নামাজের নিয়ম -এই হাদীসটির তাহকিকঃ অন্যান্য

পরিচ্ছেদঃ ৩ – কত দূরের সফরে নামাজ কসর আদায় করা ওয়াজিব হয়

৩২৭ নাফি [রাহিমাহুল্লাহ] হইতে বর্ণিতঃ

আবদুল্লাহ ইবনি উমার [রাদি.] হজ্জ অথবা উমরার উদ্দেশ্যে বের হলে যুল-হুলায়ফা {১} নামক স্থানে নামাজ কসর করিতেন। [হাদীসটি ঈমাম মালিক [রাহিমাহুল্লাহ] একক ভাবে বর্ণনা করিয়াছেন]

{১} যুল-হুলায়ফা মদীনা শরীফ হইতে ছয় মাইল দূরবর্তী একটি জায়গার নাম। কসর নামাজের নিয়ম -এই হাদীসটির তাহকিকঃ অন্যান্য

৩২৮ সালিম ইবনি আবদুল্লাহ [রাহিমাহুল্লাহ] হইতে বর্ণিতঃ

তাঁর পিতা সওয়ারীতে আরোহণ করে রীম {১} নামক স্থানে যান এবং তিনি এতটুকু পথ ভ্রমণে নামাজ কসর আদায় করিয়াছেন। [হাদীসটি ঈমাম মালিক [রাহিমাহুল্লাহ] একক ভাবে বর্ণনা করিয়াছেন]

ইয়াহইয়া [রাহিমাহুল্লাহ] বলেন মালিক [রাহিমাহুল্লাহ] বলেছেন, উক্ত স্থানটির দূরত্ব অন্তত চার বরীদ {২} হইবে।

{১} রীম – মদীনা শরীফ হইতে উক্ত জায়গাটির দূরত্ব ত্রিশ মাইল।{২} এক বরীদ অন্তত বার [১২] মাইল দূরের পথ।কসর নামাজের নিয়ম -এই হাদীসটির তাহকিকঃ অন্যান্য

৩২৯ সালিম ইবনি আবদুল্লাহ [রাহিমাহুল্লাহ] হইতে বর্ণিতঃ

আবদুল্লাহ ইবনি উমার [রাদি.] সওয়ার হয়ে যাতুন-নুসুব নামক স্থানের দিকে গমন করলেন। তিনি তাঁর এই পরিমাণ যাত্রায় নামাজ কসর আদায় করলেন। [হাদীসটি ঈমাম মালিক [রাহিমাহুল্লাহ] একক ভাবে বর্ণনা করিয়াছেন]

ইয়াহইয়া [রাহিমাহুল্লাহ] বলেন, মালিক [রাহিমাহুল্লাহ] বলেছেন, যাতুন-নুসুব ও মদীনার ও মদীনার মধ্যে ব্যবধান হল চার বরীদ।

কসর নামাজের নিয়ম -এই হাদীসটির তাহকিকঃ অন্যান্য

৩৩০ নাফি [রাহিমাহুল্লাহ] হইতে বর্ণিতঃ

আবদুল্লাহ ইবনি উমার [রাদি.] খায়বরের দিকে সফর করিতেন এবং নামাজ কসর আদায় করিতেন। [হাদীসটি ঈমাম মালিক [রাহিমাহুল্লাহ] একক ভাবে বর্ণনা করিয়াছেন]

সালিম ইবনি আবদুল্লাহ [রাহিমাহুল্লাহ] হইতে বর্ণিত; আবদুল্লাহ ইবনি উমার [রাদি.] পূর্ণ একদিনের সফরে কসর আদায় করিতেন।

কসর নামাজের নিয়ম -এই হাদীসটির তাহকিকঃ অন্যান্য

৩৩১ নাফি [রাহিমাহুল্লাহ] হইতে বর্ণিতঃ

আবদুল্লাহ ইবনি উমার [রাদি.]-এর সাথে এক বরীদ সফর করিতেন কিন্তু নামাজ কসর আদায় করিতেন না। [হাদীসটি ঈমাম মালিক [রাহিমাহুল্লাহ] একক ভাবে বর্ণনা করিয়াছেন]

কসর নামাজের নিয়ম -এই হাদীসটির তাহকিকঃ অন্যান্য

৩৩২মালিক [রাহিমাহুল্লাহ] হইতে বর্ণিতঃ

তাঁর নিকট রেওয়ায়ত পৌঁছেছে যে, আবদুল্লাহ্ ইবনি আব্বাস [রাদি.] মক্কা হইতে তায়েফ অথবা মক্কা হইতে উসফান বা মক্কা হইতে জিদ্দার সমান দূরত্বের স্থানে সফরে বের হলে কসর আদায় করিতেন। [হাদীসটি ঈমাম মালিক [রাহিমাহুল্লাহ] একক ভাবে বর্ণনা করিয়াছেন]

ইয়াহইয়া [রাহিমাহুল্লাহ] বর্ণনা করেন, মালিক [রাহিমাহুল্লাহ] বলেছেন, উক্ত পথের দূরত্ব চার বরীদ পরিমাণ।

তিনি আরও বলেন, যে ব্যক্তি সফরের নিয়ত করে, সে যতক্ষণ নিজের পল্লীর গৃহাদি ছেড়ে না যাবে, ততক্ষণ নামাজ কসর আদায় করিবে না। অনুরূপ ফেরার পথেও যতক্ষণ নিজ গ্রামের সর্বপ্রথম গৃহ বা উহার নিকটতম স্থান পর্যন্ত না পৌঁছিব নামাজ পূর্ণ আদায় করিবে না। [হাদীসটি ঈমাম মালিক [রাহিমাহুল্লাহ] একক ভাবে বর্ণনা করিয়াছেন]

কসর নামাজের নিয়ম -এই হাদীসটির তাহকিকঃ অন্যান্য

পরিচ্ছেদঃ ৪ – কোন স্থানে অবস্থানের নিয়ত না করলে মুসাফির নামাজ কত রাকআত আদায় করিবে

৩৩৩ সালিম ইবনি আবদুল্লাহ [রাহিমাহুল্লাহ] হইতে বর্ণিতঃ

আবদুল্লাহ ইবনি উমার [রাদি.] বলিতেন, আমি যতক্ষণ অবস্থান করার নিয়ত না করি ততক্ষণ মুসাফিরের মত নামাজ আদায় করিতে থাকি, যদিও বা এই অবস্থায় বার রাত্রি পর্যন্ত আবদ্ধ থাকি। [হাদীসটি ঈমাম মালিক [রাহিমাহুল্লাহ] একক ভাবে বর্ণনা করিয়াছেন]

কসর নামাজের নিয়ম -এই হাদীসটির তাহকিকঃ অন্যান্য

৩৩৪ নাফি [রাহিমাহুল্লাহ] হইতে বর্ণিতঃ

ইবনি উমার [রাহিমাহুল্লাহ] মক্কা শরীফে দশ রাত্রি পর্যন্ত অবস্থান করেছিলেন এবং নামাজ কসর আদায় করেছিলেন। কেবল ইমামের সাথে নামাজ আদায় করলে তখন ইমামের নামাযের মতই আদায় করিতেন। [হাদীসটি ঈমাম মালিক [রাহিমাহুল্লাহ] একক ভাবে বর্ণনা করিয়াছেন]

কসর নামাজের নিয়ম -এই হাদীসটির তাহকিকঃ অন্যান্য

পরিচ্ছেদঃ ৫- মুসাফির ইকামতের নিয়ত করলে তখনকার নামাজ

৩৩৫ আতা খোরাসানী [রাহিমাহুল্লাহ] হইতে বর্ণিতঃ

সাঈদ ইবনি মুসায়্যাব [রাহিমাহুল্লাহ]-কে বলিতে শুনেছেন যে ব্যক্তি চার রাত্রি পর্যন্ত ইকামতের নিয়ত করিবে মুসাফির হওয়া সত্ত্বেও সে নামাজ পূর্ণই আদায় করিবে। [হাদীসটি ঈমাম মালিক [রাহিমাহুল্লাহ] একক ভাবে বর্ণনা করিয়াছেন]

মালিক [রাহিমাহুল্লাহ] বলেছেন, আমি যা শুনিয়াছি তন্মধ্যে এটা আমার পছন্দনীয় বটে।

মালিক [রাহিমাহুল্লাহ]-কে কয়েদীদের নামাজ সম্বন্ধে প্রশ্ন করা হয়। তিনি বলিলেন, মুকীমের মতই নামাজ আদায় করিবে, কিন্তু যদি সে মুসাফির হয় [তবে কসর আদায় করিবে]।

কসর নামাজের নিয়ম -এই হাদীসটির তাহকিকঃ অন্যান্য

অনুচ্ছেদ: ৬-মুসাফিরের নামাজ যখন তিনি ঈমাম হন অথবা অন্য ইমামের পিছনে নামাজ পড়েন

৩৩৬ সালিম ইবনি আবদুল্লাহ [রাহিমাহুল্লাহ] হইতে বর্ণিতঃ

তাঁর পিতা আবদুল্লাহ [রাদি.] হইতে বর্ণনা করেন যে, উমার ইবনি খাত্তাব [রাদি.] যখন মক্কায় আসতেন তখন তাঁদেরকে দুরাকআত নামাজ আদায় করাতেন। [নামাজ শেষে] বলিতেন, হে মক্কাবাসীরা! তোমরা তোমাদের নামাজ পূর্ণ কর, কেননা আমরা মুসাফির। [হাদীসটি ঈমাম মালিক [রাহিমাহুল্লাহ] একক ভাবে বর্ণনা করিয়াছেন]

আসলাম তাঁর পিতা হইতে, তিনি উমার ইবনি খাত্তাব [রাদি.] হইতে অনুরূপ রেওয়ায়ত বর্ণনা করেন।

কসর নামাজের নিয়ম -এই হাদীসটির তাহকিকঃ অন্যান্য

৩৩৭ নাফি [রাহিমাহুল্লাহ] হইতে বর্ণিতঃ

আবদুল্লাহ ইবনি উমার [রাদি.] ইমামের ইকতিদা করে নামাজ পড়লে মিনাতে চার রাকআত আদায় করিতেন। আর একা আদায় করলে তখন দুরাকআতই আদায় করিতেন। [হাদীসটি ঈমাম মালিক [রাহিমাহুল্লাহ] একক ভাবে বর্ণনা করিয়াছেন]

কসর নামাজের নিয়ম -এই হাদীসটির তাহকিকঃ অন্যান্য

৩৩৮ ইবনি শিহাব [রাহিমাহুল্লাহ] হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেছেন, আবদুল্লাহ্ ইবনি উমার [রাদি.] আবদুল্লাহ্ ইবনি সাফওয়ানকে দেখিতে আসলেন যখন তিনি অসুস্থ ছিলেন, তখন আবদুল্লাহ ইবনি উমার [রাদি.] আমাদের দুই রাকআত নামাজ আদায় করালেন। অতঃপর তিনি প্রস্থান করলেন আর আমরা নামাজ পূর্ণ করলাম। [হাদীসটি ঈমাম মালিক [রাহিমাহুল্লাহ] একক ভাবে বর্ণনা করিয়াছেন]

কসর নামাজের নিয়ম -এই হাদীসটির তাহকিকঃ অন্যান্য

পরিচ্ছেদঃ ৭ – সওয়ারীর উপর নামাজ আদায় করা এবং সফরে দিনে ও রাত্রিতে নফল আদায় করা

৩৩৯ নাফি [রাহিমাহুল্লাহ] হইতে বর্ণিতঃ

আবদুল্লাহ ইবনি উমার [রাদি.] সফরে ফরয নামাযের সাথে অন্য কোন নামাজ আদায় করিতেন না, আগেও না, পরেও না। অবশ্য তিনি মধ্যরাত্রে মৃত্তিকার উপর নামাজ আদায় করিতেন, আর আদায় করিতেন তাঁর উটের হাওদার উপর, উট যে দিকেই মুখ করে থাকুক না কেন। [হাদীসটি ঈমাম মালিক [রাহিমাহুল্লাহ] একক ভাবে বর্ণনা করিয়াছেন]

কসর নামাজের নিয়ম -এই হাদীসটির তাহকিকঃ অন্যান্য

৩৪০ মালিক [রাহিমাহুল্লাহ] হইতে বর্ণিতঃ

তাঁর নিকট সংবাদ পৌঁছেছে যে, কাসিম ইবনি মুহাম্মাদ, উরওয়াহ ইবনি যুবায়র, আবু বাকর ইবনি আবদুর রহমান [রাহিমাহুল্লাহ] তাঁরা সকলেই সফরে নফল নামাজ আদায় করিতেন। [হাদীসটি ঈমাম মালিক [রাহিমাহুল্লাহ] একক ভাবে বর্ণনা করিয়াছেন]

ইয়াহইয়া [রাহিমাহুল্লাহ] বলেন, মালিক [রাহিমাহুল্লাহ]-কে সফরে নফল আদায় সম্পর্কে প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেছেন, দিনে হোক বা রাত্রে হোক, নফল নামাজ আদায় করাতে কোন ক্ষতি নেই। তাঁর নিকট খবর পৌঁছেছে যে, কতিপয় আহলে ইলম সফরে নফল আদায় করিতেন।

কসর নামাজের নিয়ম -এই হাদীসটির তাহকিকঃ অন্যান্য

৩৪১ মালিক [রাহিমাহুল্লাহ] হইতে বর্ণিতঃ

আমার নিকট নাফি [রাহিমাহুল্লাহ] হইতে রেওয়ায়ত পৌঁছেছে যে, আবদুল্লাহ ইবনি উমার [রাদি.] তাঁর ছেলে উবায়দুল্লাহ ইবনি আবদুল্লাহ [রাহিমাহুল্লাহ]-কে সফরে নফল আদায় করিতে দেখিতেন, অথচ তিনি নিষেধ করিতেন না। [হাদীসটি ঈমাম মালিক [রাহিমাহুল্লাহ] একক ভাবে বর্ণনা করিয়াছেন]

কসর নামাজের নিয়ম -এই হাদীসটির তাহকিকঃ অন্যান্য

৩৪২ আবদুল্লাহ ইবনি উমার [রাদি.] হইতে বর্ণিতঃ

আমি রাসূলুল্লাহ সাঃআঃকে একটি গাধার উপর নামাজ আদায় করিতে দেখেছি, তখন গাধাটির মুখ ছিল খায়বরের দিকে।

[সহীহ, মুসলিম ৭০০] কসর নামাজের নিয়ম -এই হাদীসটির তাহকিকঃ সহীহ হাদীস

৩৪৩ আবদুল্লাহ ইবনি দীনার [রাহিমাহুল্লাহ] হইতে বর্ণিতঃ

রাসূলুল্লাহ সাঃআঃ সফরে তাঁর সওয়ারীর উপর নামাজ আদায় করিতেন সওয়ারী যে দিকেই মুখ করুক না কেন। [বুখারি ১০৯৬, মুসলিম ৭০০]

আবদুল্লাহ ইবনি দীনার [রাহিমাহুল্লাহ] বলেছেন; আবদুল্লাহ ইবনি উমার [রাদি.]-ও তা করিতেন।

ইয়াহইয়া ইবনি সাঈদ [রাহিমাহুল্লাহ] বলেছেন, আমি আনাস ইবনি মালিক [রাদি.]-কে সফরে গাধার পিঠে নামাজ আদায় করিতে দেখেছি অথচ গাধাটির মুখ কিবলার দিকে ছিল না, তিনি রুকূ সিজদা করিতেন ইশারায়, তাঁর ললাট কোন কিছুর উপর রাখতেন না। [বুখারি ১১০০, মুসলিম ৭০২]

কসর নামাজের নিয়ম -এই হাদীসটির তাহকিকঃ সহীহ হাদীস

পরিচ্ছেদঃ ৮ – সালাতুয যুহা [চাশ্ত ও ইশরাকের নামাজ]

৩৪৪ আকীল ইবনি আবি তালিব [রাহিমাহুল্লাহ] হইতে বর্ণিতঃ

উম্মুহানী বিন্ত আবি তালিব [রাদি.] আবু মুররার নিকট বর্ণনা করেন যে, মক্কা বিজয়ের বৎসর রাসূলুল্লাহ সাঃআঃ আট রাকআত নামাজ আদায় করিয়াছেন। তখন তাঁর পরিধানে [সর্বাঙ্গে জড়ানো অবস্থায়] একটি মাত্র কাপড় ছিল। [হাদীসটি ঈমাম মালিক [রাহিমাহুল্লাহ] এককভাবে বর্ণনা করিয়াছেন, তবে হাদীসে বর্ণিত ঘটনাটি বুখারি ও মুসলিমে বর্ণিত হয়েছে]

কসর নামাজের নিয়ম -এই হাদীসটির তাহকিকঃ অন্যান্য

৩৪৫ উম্মুহানী বিনতে আবি তালিব [রাদি.] হইতে বর্ণিতঃ

আমি মক্কা বিজয়ের সালে রাসূলুল্লাহ সাঃআঃ-এর খিদমতে গমন করলাম। আমি রাসূলুল্লাহ সাঃআঃকে গোসল করিতে দেখলাম। তাঁর কন্যা ফাতিমা [রাদি.] একটি কাপড় দিয়ে তাঁর জন্য পর্দা করিয়াছেন। তিনি বলিলেন, আমি গিয়ে তাঁর উদ্দেশ্যে আসসালামু আলাইকুম বললাম। তিনি ফরমালেন ইনি কে? আমি বললাম আবু তালিবের কন্যা উম্মুহানী। তখন তিনি বলিলেন, উম্মুহানীর জন্য মারহাবা [খোশ আমদেদ]। তিনি যখন গোসল সমাপ্ত করলেন, একটি মাত্র কাপড় জড়িয়ে আট রাকআত নামাজ আদায় করলেন। নামাজ হইতে প্রত্যাবর্তন করলে আমি বললাম আমার ভাই আলী [রাদি.] বলেছেন, সে এমন এক ব্যক্তিকে কতল করিবে, যাকে আমি আশ্রয় দিয়েছি। সে হচ্ছে হুবায়রার সন্তান অমুক [তাবরানীর মতে সে হুবাইরার চাচাত ভাই]। রাসূলুল্লাহ সাঃআঃ বলিলেন, উম্মুহানী, তুমি যাকে আশ্রয় দিয়েছ, আমিও তাকে আশ্রয় দিলাম। উম্মুহানী বলেন, সময়টি ছিল চাশতের।

[বুখারি ৩৫৭, মুসলিম ৩৩৬]কসর নামাজের নিয়ম -এই হাদীসটির তাহকিকঃ সহীহ হাদীস

৩৪৬ আয়েশা [রাদি.] হইতে বর্ণিতঃ

আমি রাসূলুল্লাহ সাঃআঃকে কখনও চাশতের নামাজ আদায় করিতে দেখিনি, আমি কিন্তু চাশতের নামাজ আদায় করি। ব্যাপার হল এই যে, রাসূলুল্লাহ সাঃআঃ অনেক আমলকে পছন্দ করা সত্ত্বেও বর্জন করিতেন এই ভয়ে যে, লোকেরা তাঁর উপর আমল করিতে থাকিবে, পরে তা ফরয হয়ে যাবে।

[বুখারি ১১২৮, মুসলিম ৭১৮] কসর নামাজের নিয়ম -এই হাদীসটির তাহকিকঃ সহীহ হাদীস

৩৪৭ উম্মুল মুমিনীন আয়েশা [রাদি.] হইতে বর্ণিতঃ

তিনি চাশতের নামাজ আট রাকআত আদায় করিতেন ও বলিতেন, আমার মা-বাবাকে জিন্দা করে পাঠানো হলেও আমি এই আট রাকআতকে ছাড়ব না। [হাদীসটি ঈমাম মালিক [রাহিমাহুল্লাহ] একক ভাবে বর্ণনা করিয়াছেন]

কসর নামাজের নিয়ম -এই হাদীসটির তাহকিকঃ অন্যান্য

পরিচ্ছেদঃ ৯ – চাশতের সময় বিভিন্ন নফল নামাযের বর্ণনা

৩৪৮ আনাস ইবনি মালিক [রাদি.] হইতে বর্ণিতঃ

মুলায়কা [রাদি.] রাসূলুল্লাহ সাঃআঃকে খাওয়ার দাওয়াত করেছিলেন। তিনি তা হইতে খেলেন, তারপর ফরমালেন তোমরা দাঁড়াও, আমি তোমাদের জন্য [কল্যাণ ও বরকতের উদ্দেশ্যে] নামাজ আদায় করব। আনাস [রাদি.] বলিলেন, আমি আমাদের একটি চাটাই-এর দিকে গেলাম, যা দীর্ঘদিন ব্যবহারের কারণে একেবারে কাল হয়ে গিয়েছিল। আমি তাতে পানি ছিটিয়ে তা পরিষ্কার করলাম। অতঃপর রাসূলুল্লাহ সাঃআঃ দাঁড়ালেন। আমি এবং ইয়াতিম তাঁর পিছনের সারিতে দাঁড়ালাম। আর বৃদ্ধা [নানী] দাঁড়ালেন আমাদের পিছনের সারিতে। তিনি আমাদের জন্য [দুআর উদ্দেশ্যে] দুই রাকআত নামাজ আদায় করলেন; অতঃপর আমাদের গৃহ ত্যাগ করলেন।

[বুখারি ৮৬০, মুসলিম ৬৫৮] কসর নামাজের নিয়ম -এই হাদীসটির তাহকিকঃ সহীহ হাদীস

৩৪৯ উবায়দুল্লাহ ইবনি আবদুল্লাহ ইবনি উতবা ইবনি মাস্উদ [রাহিমাহুল্লাহ] হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেছেন; আমি উমার ইব্নু খাত্তাব [রাদি.]-এর নিকট প্রবেশ করলাম, সময়টা ছিল দুপুর। আমি তখন তাহাকে নফল নামাজ অবস্থায় পেলাম, তাই আমি তাঁর পেছনে দাঁড়ালাম। তারপর তিনি আমাকে কাছে আনলেন এবং তাঁর ডান পার্শ্বে তাঁর বরাবর আমাকে দাঁড় করালেন। তারপর ইয়ারফা [উমারের খাদেম] আসলে আমি পেছনে সরে আসলাম। তারপর আমরা দুজনেই তাঁর পেছনে কাতার করে দাঁড়ালাম। [হাদীসটি ঈমাম মালিক [রাহিমাহুল্লাহ] একক ভাবে বর্ণনা করিয়াছেন]

কসর নামাজের নিয়ম -এই হাদীসটির তাহকিকঃ অন্যান্য

পরিচ্ছেদঃ ১০ – মুসল্লিদের সম্মুখ দিয়ে কারো চলার ব্যাপারে কড়া নিষেধাজ্ঞা

৩৫০ আবু সাঈদ খুদরী [রাদি.] হইতে বর্ণিতঃ

রাসূলুল্লাহ সাঃআঃ বলেছেন, যখন তোমাদের কেউ নামাজ আদায় করে, তবে সে সময় তার সামনে দিয়ে কাউকেও হাঁটতে দেবে না যথাসাধ্য তাকে বারণ করিবে। এতদসত্ত্বেও যদি সে বিরত না হয়, তবে শক্তি প্রয়োগ করিবে। কেননা সে অবশ্যই দুষ্ট লোক।

[বুখারি ৫০৯, মুসলিম ৫০৫] কসর নামাজের নিয়ম -এই হাদীসটির তাহকিকঃ সহীহ হাদীস

৩৫১ বুসর ইবনি সাঈদ [রাহিমাহুল্লাহ] হইতে বর্ণিতঃ

যায়দ ইবনি খালিদ জুহনী [রাদি.] তাহাকে আবু জুহায়ম [রাদি.]-এর নিকট এটা জিজ্ঞেস করার উদ্দেশ্যে পাঠালেন যে, তিনি মুসল্লির সামনে দিয়ে চলাচলকারী সম্পর্কে রাসূলুল্লাহ সাঃআঃ হইতে কি শুনেছেন। আবু জুহায়ম [রাদি.] বলিলেন, রাসূলুল্লাহ সাঃআঃ বলেছেন, যদি মুসল্লি ব্যক্তির সামনে দিয়ে চলাচলকারী জানত যে, এর জন্য তার কি পরিণাম হইবে, তবে সে নিশ্চিত মনে করত যে, মুসল্লি ব্যক্তির সামনে দিয়া চলাচল করা অপেক্ষা সঠিকভাবে চল্লিশ দিন পর্যন্ত অপেক্ষা করা অধিক শ্রেয়। আবুন নায্র বলেন, আমি বলিতে পারছি না, তিনি চল্লিশ দিন, না চল্লিশ মাস, না চল্লিশ বৎসর বলেছিলেন।

[বুখারি ৫১০, মুসলিম ৫০৭] কসর নামাজের নিয়ম -এই হাদীসটির তাহকিকঃ সহীহ হাদীস

৩৫২ আতা ইবনি ইয়াসার [রাহিমাহুল্লাহ] হইতে বর্ণিতঃ

কাব-এ আহ্বার [রাহিমাহুল্লাহ] বলেছেন, মুসল্লির সামনে দিয়ে চলাচলকারী যদি জানত যে, তার পরিণাম কি, তবে সামনে দিয়ে হেঁটে যাওয়ার চাইতে মাটিতে বসে যাওয়া তার পক্ষে উত্তম হত। [হাদীসটি ঈমাম মালিক [রাহিমাহুল্লাহ] একক ভাবে বর্ণনা করিয়াছেন]

কসর নামাজের নিয়ম -এই হাদীসটির তাহকিকঃ অন্যান্য

৩৫৩ মালিক [রাহিমাহুল্লাহ] হইতে বর্ণিতঃ

তাঁর নিকট রেওয়ায়ত পৌঁছেছে যে, মেয়েরা যখন নামাজ আদায় করে তখন তাদের সামনে দিয়ে চলাকে আবদুল্লাহ ইবনি উমার [রাদি.] অপছন্দ করিতেন না। [হাদীসটি ঈমাম মালিক [রাহিমাহুল্লাহ] একক ভাবে বর্ণনা করিয়াছেন]

কসর নামাজের নিয়ম -এই হাদীসটির তাহকিকঃ অন্যান্য

৩৫৪ নাফি [রাহিমাহুল্লাহ] হইতে বর্ণিতঃ

আবদুল্লাহ ইবনি উমার [রাদি.] [তিনি নিজে] করো সামনে দিয়ে চলাচল করিতেন না এবং অন্য কাউকে তাঁর সামনে দিয়ে চলতে দিতেন না। [হাদীসটি ঈমাম মালিক [রাহিমাহুল্লাহ] একক ভাবে বর্ণনা করিয়াছেন]

কসর নামাজের নিয়ম -এই হাদীসটির তাহকিকঃ অন্যান্য

পরিচ্ছেদঃ ১১ – মুসল্লির সামনে দিয়ে চলার অনুমতি

৩৫৫ আবদুল্লাহ্ ইবনি আব্বাস [রাদি.] হইতে বর্ণিতঃ

আমি একটি গাধীর উপর সওয়ার হয়ে আসলাম। আমি সে সময় সাবালগ হওয়ার কাছাকাছি বয়সে উপনীত হয়েছি। রাসূলুল্লাহ সাঃআঃ যখন মিনাতে লোকদের নামাজ আদায় করাচ্ছিলেন। আমি কোন একটি কাতারের মাঝ দিয়ে চললাম, তারপর [সওয়ারী হইতে] অবতরণ করে গাধীকে চরাবার জন্য ছেড়ে দিলাম এবং আমি কাতারে শামিল হলাম। এর জন্য আমাকে কেউ কোন তিরস্কার করেননি।

[বুখারি ৭৬, মুসলিম ৫০৪] কসর নামাজের নিয়ম -এই হাদীসটির তাহকিকঃ সহীহ হাদীস

৩৫৬ মালিক [রাহিমাহুল্লাহ] হইতে বর্ণিতঃ

তাঁর নিকট রেওয়ায়ত পৌঁছেছে যে, নামাজ কায়েম আছে, এমন অবস্থায় সাদ ইবনি আবি ওয়াক্কাস [রাদি.] কোন কোন সময় কাতারের মাঝ দিয়ে চলাচল করিতেন। [হাদীসটি ঈমাম মালিক [রাহিমাহুল্লাহ] একক ভাবে বর্ণনা করিয়াছেন]

ইয়াহইয়া [রাহিমাহুল্লাহ] বলেন, মালিক [রাহিমাহুল্লাহ] বলেছেন, যদি নামাজ আদায় হয়ে যায় এবং ঈমাম নিয়ত করে ফেলেন, তখন কোন ব্যক্তি কাতারের মাঝ দিয়ে ব্যতীত অন্য কোন রাস্তায় মসজিদে প্রবেশ করিতে [নামাযে শামিল হওয়ার জন্য] না পড়লে, তার জন্য এ ব্যাপারে [কাতারের মধ্য দিয়ে প্রবেশ করার] অবকাশ আছে বলে আমি মনে করি।

কসর নামাজের নিয়ম -এই হাদীসটির তাহকিকঃ অন্যান্য

৩৫৭ মালিক [রাহিমাহুল্লাহ] হইতে বর্ণিতঃ

তার নিকট রেওয়ায়ত পৌঁছেছে যে, মুসল্লির সম্মুখ দিয়ে যা কিছু চলাচল করে, তা নামাজ নষ্ট করে না। এইরূপ বলেছেন আলী ইবনি আবি তালিব [রাদি.]। [হাদীসটি ঈমাম মালিক [রাহিমাহুল্লাহ] একক ভাবে বর্ণনা করিয়াছেন]

সালিম ইবনি আবদুল্লাহ [রাহিমাহুল্লাহ] হইতে বর্ণিত; আবদুল্লাহ্ ইবনি উমার [রাদি.] বলিতেন, মুসল্লির সামনে দিয়ে যা কিছু চলাচল করে তার কোনটাই নামাজকে নষ্ট করে না। [হাদীসটি ঈমাম মালিক [রাহিমাহুল্লাহ] একক ভাবে বর্ণনা করিয়াছেন]

কসর নামাজের নিয়ম -এই হাদীসটির তাহকিকঃ অন্যান্য

পরিচ্ছেদঃ ১২ – সফরে মুসল্লি কর্তৃক সুতরা বা আড় ব্যবহার

৩৫৮ মালিক [রাহিমাহুল্লাহ] হইতে বর্ণিতঃ

তাঁর নিকট রেওয়ায়ত পৌঁছেছে যে, আবদুল্লাহ ইবনি উমার [রাদি.] উটের পিঠের হাড় দ্বারা সুতরা করিতেন। [হাদীসটি ঈমাম মালিক [রাহিমাহুল্লাহ] একক ভাবে বর্ণনা করিয়াছেন]

হিশাম ইবনি উরওয়াহ [রাহিমাহুল্লাহ] তাঁর পিতা হইতে বর্ণনা করেন, তিনি সুতরা সামনে না করে মরুভূমিতে নামাজ আদায় করিতেন। [কারণ সেখানে লোকজনের চলাচল তেমন ছিল না।] [হাদীসটি ঈমাম মালিক [রাহিমাহুল্লাহ] একক ভাবে বর্ণনা করিয়াছেন]

কসর নামাজের নিয়ম -এই হাদীসটির তাহকিকঃ অন্যান্য

পরিচ্ছেদঃ ১৩ – নামাযে হাত দিয়ে কাঁকর সরানো

৩৫৯ আবু জাফর কারী [রাহিমাহুল্লাহ] হইতে বর্ণিতঃ

আমি আবদুল্লাহ ইবনি উমার [রাদি.]-কে দেখেছি, তিনি সিজদার জন্য যখন নত হইতেন, তখন তাঁর কপাল রাখার স্থান হইতে খুব হালকাভাবে হাত বুলিয়ে কাঁকর সরাতেন। [হাদীসটি ঈমাম মালিক [রাহিমাহুল্লাহ] একক ভাবে বর্ণনা করিয়াছেন]

কসর নামাজের নিয়ম -এই হাদীসটির তাহকিকঃ অন্যান্য

৩৬০ ইয়াহইয়া ইবনি সাঈদ [রাহিমাহুল্লাহ] হইতে বর্ণিতঃ

তাঁর নিকট রেওয়ায়ত পৌঁছেছে যে, আবু যর [রাদি.] বলিতেন, কাঁকর সরাবার জন্য মাত্র একবার হাত বুলানো যায়। তবে উহা হইতে বিরত থাকাটা লাল বর্ণের উট অপেক্ষাও উত্তম। [হাদীসটি ঈমাম মালিক [রাহিমাহুল্লাহ] একক ভাবে বর্ণনা করিয়াছেন]

কসর নামাজের নিয়ম -এই হাদীসটির তাহকিকঃ অন্যান্য

পরিচ্ছেদঃ ১৪ – সফ্ সোজা রাখা

৩৬১ নাফি [রাহিমাহুল্লাহ] হইতে বর্ণিতঃ

উমার ইবনি খাত্তাব [রাদি.] সফ [কাতারসমূহ] বরাবর করার নির্দেশ দিতেন। যখন এই কাজে নিযুক্ত ব্যক্তিরা তাঁর কাছে আসত এবং সফসমূহ বরাবর হয়েছে বলে তাহাকে জানাত, তখন তিনি তাকবীর বলিতেন। [হাদীসটি ঈমাম মালিক [রাহিমাহুল্লাহ] একক ভাবে বর্ণনা করিয়াছেন]

কসর নামাজের নিয়ম -এই হাদীসটির তাহকিকঃ অন্যান্য

৩৬২ আবু সুহায়ল ইবনি মালিক [রাহিমাহুল্লাহ] হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেছেন, আমি উসমান ইবনি আফফান [রাদি.]-এর সাথে ছিলাম। অতঃপর নামাযের ইকামত শুরু হল, আমি তখন তাঁর সাথে আমার জন্য ভাতা নির্দিষ্ট করার ব্যাপারে আলাপ করিতেছিলাম। আমি বিরতি ছাড়াই তাঁর সাথে আলাপরত ছিলাম। তিনি তাঁর উভয় জুতার সাহায্যে কাঁকর [সরিয়ে] জায়গা সমান করছিলেন। এমন সময় কতিপয় লোক তাঁর কাছে আসলেন, যাদেরকে তিনি সফ বরাবর করার কাজে নিযুক্ত করেছিলেন এবং তাহাকে জানালেন যে, সফসমূহ বরাবর হয়েছে। তিনি আমাকে বলিলেন, কাতারে বরাবর হয়ে দাঁড়িয়ে যাও। অতঃপর তিনি اللهُ اَكْبَرُ বলিলেন। [হাদীসটি ঈমাম মালিক [রাহিমাহুল্লাহ] একক ভাবে বর্ণনা করিয়াছেন]

কসর নামাজের নিয়ম -এই হাদীসটির তাহকিকঃ অন্যান্য

পরিচ্ছেদঃ ১৫ – নামাযে এক হাত অপর হাতের উপর রাখা

৩৬৩ আবদুল করীম ইবনি আবুল মুখারিক [রাহিমাহুল্লাহ] হইতে বর্ণিতঃ

নবুয়তের কালাম হচ্ছে এই কালাম, যখন তুমি লজ্জা পরিহার কর, তবে তুমি যা ইচ্ছা তা করিতে পার। নামাযে উভয় হাতের একটিকে অপরটির উপর রাখা [এইভাবে] যে, ডান হাত বাম হাতের উপর রাখবে, ইফতারে ত্বরা করা ও সাহ্রী [খাওয়া] তে বিলম্ব করা।

[সনদে উল্লেখিত আবদুল কারীম একজন জঈফ রাবী, আর ঈমাম বুখারি প্রথমের মাঝ খানের অংশটুকু মারফু সনদে বর্ণনা করিয়াছেন] কসর নামাজের নিয়ম -এই হাদীসটির তাহকিকঃ অন্যান্য

৩৬৪ সাহল ইবনি সাদ আস-সাঈদী [রাদি.] হইতে বর্ণিতঃ

লোকদেরকে নির্দেশ প্রদান করা হত যেন নামাযে প্রত্যেকে তাঁর ডান হাত বাম হাতের যিরার [যিরা বলা হয় হাতের কুনুই হইতে শুরু করে মধ্যমা আঙ্গুলের মাথা পর্যন্ত] উপর রাখে। [সহীহ, বুখারি ৭৪০]

আবু হাযিম [রাহিমাহুল্লাহ] বলেন, আমি জানি যে তিনি এই বাক্যের সনদ রাসূলুল্লাহ সাঃআঃ পর্যন্ত পৌঁছাতেন।

কসর নামাজের নিয়ম -এই হাদীসটির তাহকিকঃ সহীহ হাদীস

পরিচ্ছেদঃ ১৬ – ফজরে কুনূত পড়া

৩৬৫ নাফি [রাহিমাহুল্লাহ] হইতে বর্ণিতঃ

আবদুল্লাহ্ ইবনি উমার [রাদি.] কোন নামাযেই কুনূত পাঠ করিতেন না। [হাদীসটি ঈমাম মালিক [রাহিমাহুল্লাহ] একক ভাবে বর্ণনা করিয়াছেন]

কসর নামাজের নিয়ম -এই হাদীসটির তাহকিকঃ অন্যান্য

পরিচ্ছেদঃ ১৭ – যে সময় [পায়খানা-প্রশ্রাব ইত্যাদি] আবশ্যক পূরণের ইচ্ছা করে সে সময় নামাজ আদায় নিষেধ

৩৬৬ আবদুল্লাহ ইবনি আরকাম [রাদি.] হইতে বর্ণিতঃ

সহচরদের ঈমামতি করিতেন। একদিন নামাজ শুরু হল। সে মুহূর্তে তিনি নিজ প্রয়োজন সারার উদ্দেশ্যে বাহিরে গেলেন। অনন্তর [তথা হইতে] ফিরলেন। তারপর তিনি বলিলেন, আমি রাসূলুল্লাহ সাঃআঃকে ফরমাতে শুনিয়াছি তোমাদের কেউ [পায়খানা-পেশাবের জন্য] ঢালু জায়গায় যাওয়ার মনস্থ করলে তবে নামাযের পূর্বে তা সেরে নিবে।

[সহীহ, আবু দাঊদ ৮৮, তিরমিজি ১৪২, নাসাঈ ৮৫২, ইবনি মাজাহ ৬১৬, আল্লামা আলবানী হাদীসটি সহীহ বলেছেন সহীহ এবং জঈফ সুনানে নাসাঈ] কসর নামাজের নিয়ম -এই হাদীসটির তাহকিকঃ সহীহ হাদীস

৩৬৭ যায়দ ইবনি আসলাম [রাহিমাহুল্লাহ] হইতে বর্ণিতঃ

উমার ইবনি খাত্তাব [রাদি.] বলেছেন, তোমাদের কেউ যেন এমন সময় কখনও নামাজ না পড়ে, যখন [পায়খানা-প্রসাবের বেগবশত] তার পাছাদ্বয় মিলিয়ে [চাপ দিয়ে] রাখে। [হাদীসটি ঈমাম মালিক [রাহিমাহুল্লাহ] একক ভাবে বর্ণনা করিয়াছেন]

কসর নামাজের নিয়ম -এই হাদীসটির তাহকিকঃ অন্যান্য

পরিচ্ছেদঃ ১৮ – নামাযের অপেক্ষা করা এবং নামাযের জন্য গমন করা

৩৬৮ আবু হুরায়রা [রাদি.] হইতে বর্ণিতঃ

রাসূলুল্লাহ সাঃআঃ বলেছেন, তোমাদের যে ব্যক্তি যে মুসল্লায় নামাজ আদায় করেছে , সে মুসল্লায় যতক্ষণ বসা থাকে এবং ওযূ ছুটে যায় মত কোন কাজ না করে ততক্ষণ ফেরেশতাগণ এই বলে দোয়া করিতে থাকেন,

اَللّٰهُمَّ اغْفِرْ لَهُ اَللّٰهُمَّ ارْحَمْهُ

আল্লাহুম্মাগফির লাহু আল্লাহুম্মার হামহু, “হে আল্লাহ! তোমার এই বান্দার গুনাহ মাফ করো, হে আল্লাহ! তোমার এই বান্দার প্রতি রহমত বর্ষণ করো।” [বুখারি ৪৪৫, মুসলিম ৬৪৯]

ইয়াহইয়া [রাহিমাহুল্লাহ] বলেন, মালিক [রাহিমাহুল্লাহ] বলেছেন, হাদিসে বর্ণিত, مَا لَمْ يُحْدِثْ [মালাম য়ুহদিস] বাক্যটির অর্থ আমার মতে, [মুসল্লি কতৃক] এমন কোন কাজ করা যাতে ওযূ ভেঙে যায়, এটা অন্য কিছু নয় ।

কসর নামাজের নিয়ম -এই হাদীসটির তাহকিকঃ অন্যান্য

৩৬৯ আবু হুরায়রা [রাদি.] হইতে বর্ণিতঃ

রাসূলুল্লাহ সাঃআঃ বলেছেন, তোমাদের এক ব্যক্তি, যতক্ষণ নামাজ তাহাকে আবদ্ধ রাখিবে নামাজ ছাড়া অন্য কোন বস্তু নিজ পরিবারবর্গের দিকে ফিরে যেতে তাকে বাধা প্রদান করেনি, ততক্ষণ সে নামাযে থাকিবে।

[বুখারি ৬৫৯, মুসলিম ৬৪৯] কসর নামাজের নিয়ম -এই হাদীসটির তাহকিকঃ সহীহ হাদীস

৩৭০ আবু বাকর ইবনি আবদুর রহমান [রাহিমাহুল্লাহ] হইতে বর্ণিতঃ

যে ব্যক্তি সকালে ও বিকালে মসজিদের দিকে গমন করে এবং সে মসজিদে কোন ভাল কথা শিক্ষা করার জন্য অথবা শিক্ষা দেওয়ার জন্যই গমন করে, সে নিজ গৃহে প্রত্যাবর্তন করিবে আল্লাহর রাস্তায় মুজাহিদদের মত [গণ্য] হয়ে, এমন মুজাহিদ যে গনীমতের মালসহকারে [গৃহে] ফিরেছে। [হাদীসটি ঈমাম মালিক [রাহিমাহুল্লাহ] একক ভাবে বর্ণনা করিয়াছেন]

কসর নামাজের নিয়ম -এই হাদীসটির তাহকিকঃ অন্যান্য

৩৭১ নুয়ায়ম ইবনি আবদুল্লাহ [রাহিমাহুল্লাহ] হইতে বর্ণিতঃ

তিনি আবু হুরায়রা [রাদি.]-কে বলিতে শুনেছেন তোমাদের একজন যখন নামাজ আদায় করে, তারপর জায়নামাযে বসে থাকে, তবে ফেরেশতারা তার জন্য اَللّٰهُمَّ اغْفِرْ لَهُ [হে আল্লাহ! একে ক্ষমা কর] اَللّٰهُمَّ ارْحَمْهُ [হে আল্লাহ! একে দয়া কর] বলে দোআ করিতে থাকেন। অতঃপর সে যদি জায়নামাজ হইতে দাঁড়িয়ে যায় কিন্তু নামাযের অপেক্ষায় বসে থাকে, তবে সে যেন নামাযেই রয়েছে। [হাদীসটি ঈমাম মালিক [রাহিমাহুল্লাহ] একক ভাবে বর্ণনা করিয়াছেন, এই হাদীসটি বুখারি এবং মুসলিমে মারফু সনদে বর্ণিত হয়েছে]

কসর নামাজের নিয়ম -এই হাদীসটির তাহকিকঃ অন্যান্য

৩৭২ আবু হুরায়রা [রাদি.] হইতে বর্ণিতঃ

রাসূলুল্লাহ সাঃআঃ বলেছেন, আমি কি তোমাদের খবর দিব না ঐ বস্তুর, যে বস্তু দ্বারা আল্লাহ [বান্দার] গুনাহসমূহ মুছে দেন এবং তা দ্বারা তার অনেক মর্তবা বুলন্দ করে দেন? [তা হচ্ছে এই] পূর্ণরূপে ওযূ করা কষ্টবোধের সময়, মসজিদের দিকে নামাযের উদ্দেশ্যে গমনাগমন এবং এক নামাযের পর আর এক নামাযের অপেক্ষায় থাকা। আর এটা [হল] রিবাত এটাই রিবাত, এটাই রিবাত [সীমান্ত প্রহরায় সর্বদা সজাগ ও প্রস্তুত থাকা]।

[সহীহ, মুসলিম ২৫১] কসর নামাজের নিয়ম -এই হাদীসটির তাহকিকঃ সহীহ হাদীস

৩৭৩ মালিক [রাহিমাহুল্লাহ] হইতে বর্ণিতঃ

সাঈদ ইবনি মুসায়্যাব [রাহিমাহুল্লাহ] বলেছেন, বলা হয়, আযানের পর একমাত্র মুনাফিক ব্যতীত কোন ব্যক্তি মসজিদ হইতে বের হয় না, অবশ্য যে ব্যক্তি পুনরায় ফিরে আসার ইচ্ছা রাখে [সে বের হইতে পারে]। [হাদীসটি আবু হুরায়রা বরাত দিয়ে মারফু সনদে বর্ণনা করা হয়েছে, ইবনি —– হাদীসটিকে সহীহ বলেছেন]

কসর নামাজের নিয়ম -এই হাদীসটির তাহকিকঃ অন্যান্য

৩৭৪ আবু কাতাদা আনসারী [রাদি.] হইতে বর্ণিতঃ

রসূলুল্লাহ্ সাঃআঃ বলেছেন, তোমাদের কেউ মসজিদে প্রবেশ করলে সে যেন বসার পূর্বে দুরাকআত নামাজ আদায় করে নেয়।

[বুখারি ৪৪৪, মুসলিম ৭১৪] কসর নামাজের নিয়ম -এই হাদীসটির তাহকিকঃ সহীহ হাদীস

৩৭৫ উমার ইবনি উবায়দুল্লাহ [রাহিমাহুল্লাহ] হইতে বর্ণিতঃ

আবুন নাযর বলেন, আবু সালমা ইবনি আব্দুর রহমান [রাহিমাহুল্লাহ] তাহাকে বলেছেন, আমি তোমার মনিবকে অর্থাৎ আজাদীদাতাকে কখনও দেখিনি যে, তিনি মসজিদে এসে [বসার পূর্বে] নামাজ অর্থাৎ [তাহিয়্যাতুল মসজিদ] না আদায় করে বসেছেন। আবুন নাযর [রাহিমাহুল্লাহ] বলেন, তিনি উমার ইবনি উবায়দুল্লাহ [রাহিমাহুল্লাহ]-কে অভিযোগস্বরূপ এটা বলেছেন, কারণ তিনি মসজিদে প্রবেশ করে নামাযের পূর্বে বসে যেতেন। [হাদীসটি ঈমাম মালিক [রাহিমাহুল্লাহ] একক ভাবে বর্ণনা করিয়াছেন]

ইয়াহইয়া [রাহিমাহুল্লাহ] বলেন, মালিক [রাহিমাহুল্লাহ] বলেছেন, এইরূপ করা ভাল, তবে ওয়াজিব নয়।

কসর নামাজের নিয়ম -এই হাদীসটির তাহকিকঃ অন্যান্য

পরিচ্ছেদঃ ১৯ – সিজদায় হস্তদ্বয় মুখমণ্ডলের পাশাপাশি রাখা

৩৭৬ নাফি [রাহিমাহুল্লাহ] হইতে বর্ণিতঃ

আব্দুল্লাহ্ ইবনি উমার [রাদি.] সিজদায় যে স্থানে তাঁর মুখমণ্ডল রাখতেন, সে স্থানেই [অর্থাৎ তার পার্শ্বে] তাঁর উভয় হাতের তালু রাখতেন। [হাদীসটি ঈমাম মালিক [রাহিমাহুল্লাহ] একক ভাবে বর্ণনা করিয়াছেন]

নাফি [রাহিমাহুল্লাহ] বলেন, আমি তাহাকে দেখেছি, তিনি অতি শীতের সময়ও তাঁর দুহাত জুব্বা [লম্বা পোশাক বিশেষ] হইতে বের করে কঙ্করময় ভূমিতে রাখতেন।

কসর নামাজের নিয়ম -এই হাদীসটির তাহকিকঃ অন্যান্য

৩৭৭ নাফি [রাহিমাহুল্লাহ] হইতে বর্ণিতঃ

আব্দুল্লাহ্ ইবনি উমার [রাদি.] বলিতেন, যে ব্যক্তি তাঁর ললাট যমীনে রাখে, সে যে তার দুহাত ও সে জায়গায় রাখে, যে জায়গায় ললাট রেখেছে। অতঃপর যখন [সিজদা হইতে] ললাট উঠায় তখন যেন উভয় হাতকে উঠিয়েনেয়। কারণ মুখমণ্ডল যেমন সিজদা করে, হস্তদয়ও তেমনিভাবে সিজদা করে। [হাদীসটি ঈমাম মালিক [রাহিমাহুল্লাহ] একক ভাবে বর্ণনা করিয়াছেন]

কসর নামাজের নিয়ম -এই হাদীসটির তাহকিকঃ অন্যান্য

পরিচ্ছেদঃ ২০ – প্রয়োজনবশত নামাযে অন্যদিকে দেখা এবং দস্তক বা তালি দেয়া

৩৭৮ সাহ্ল ইবনি সাদ সাঈদী [রাদি.] হইতে বর্ণিতঃ

রসূলুল্লাহ্ সাঃআঃ বনী আমর ইবনি আউফ কাবীলার দিকে তাঁদের একটি বিষয় মীমাংসা করার উদ্দেশ্যে গমন করেন, তখন নামাযের সময় উপস্থিত হয়। মুয়াযযিন আবু বাকর [রাদি.]-এর খিদমতে এসে বলিলেন, আপনি নামাযে লোকের ঈমামতি করিতে সম্মত আছেন কি? তা হলে আমি ইকামত বলতাম। আবু বাকর [রাদি.] আচ্ছা বলে সম্মতি দিলেন। অতঃপর আবু বাকর [রাদি.] নামাজ আদায় করালেন। লোকজন যখন নামাযে, তখন হঠাৎ রসূলুল্লাহ্ সাঃআঃ তশরীফ আনলেন। তিনি কাতারে ফাঁক করে একেবারে প্রথম কাতারে গিয়ে দাঁড়ালেন। এতে লোকেরা তালি দিতে শুরু করলেন। আবু বাকর [রাদি.] [তাঁর অভ্যাস ছিল] নামাযে অন্যদিকে মনোযোগ দিতেন না। কিন্তু যখন লোকদের তালি দেওয়া বেড়ে গেল, তখন তিনি পেছনের দিকে ফিরে রসূলুল্লাহ্ সাঃআঃকে দেখিতে পেলেন। তারপর আবু বাকর [রাদি.] পিছনে যেতে চাইলেন। রসূলুল্লাহ্ সাঃআঃ ইঙ্গিতে তাহাকে নির্দেশ দিলেন আপন জায়গায় স্থির থাক। রসূলুল্লাহ্ সাঃআঃ তাহাকে ঈমামতিতে বহাল থাকার নির্দেশ দিলেন বলে আবু বাকর [রাদি.] স্বীয় হাতদুটি তুলে আল্লাহর হামদ বা শুকরিয়া আদায় করলেন। অতঃপর পেছনে সরে সফের বরাবর এসে দাঁড়ালেন। রসূলুল্লাহ্ সাঃআঃ আগে বেড়ে নামাজ আদায় করালেন। নামাজ সমাপ্ত করার পর তিনি বলিলেন, হে আবু বকর! তোমাকে যখন আমি নির্দেশ দিলাম, তখন [ঈমামতিতে] স্থির থাকতে তোমাকে কোন জিনিস বাধা প্রদান করিল ? [উত্তরে] আবু বাকর [রাদি.] বলিলেন, রসূলুল্লাহ্ সাঃআঃ-এর সামনে [উপস্থিতিতে] আবু কোহাফার সন্তানের জন্য নামাযের ঈমামতি করা সাজে না। অতঃপর রসূলুল্লাহ্ সাঃআঃ বলিলেন, আমি তোমাদেরকে অনেক হাততালি দিতে দেখে অবাক হয়েছি। কারো নামাযে কোন বিষয়ে প্রয়োজন দেখা দিলে সে যেন তসবীহ [সুবহানাল্লাহ্] বা [আল্লাহু আকবার] উচ্চারণ করে। কেননা সে তসবীহ্ উচ্চারণ করলেই তার দিকে মনোযোগ দেয়া হইবে। হাততালি দেয়া অবশ্য নারীর জন্য

[বুখারি ৬৮৪, মুসলিম ৪২১] কসর নামাজের নিয়ম -এই হাদীসটির তাহকিকঃ সহীহ হাদীস

৩৭৯ নাফি [রাহিমাহুল্লাহ] হইতে বর্ণিতঃ

আবদুল্লাহ ইবনি উমার [রাদি.] নামাযে অন্য দিকে ফিরে দেখিতেন না। [হাদীসটি ঈমাম মালিক [রাহিমাহুল্লাহ] একক ভাবে বর্ণনা করিয়াছেন]

কসর নামাজের নিয়ম -এই হাদীসটির তাহকিকঃ অন্যান্য

৩৮০ আবু জাফর কারী [রাহিমাহুল্লাহ] হইতে বর্ণিতঃ

[এমনও হত] আমি নামাজ আদায় করেছি, আর আবদুল্লাহ ইবনি উমার [রাদি.] আমার পশ্চাতে [এসে দাঁড়িয়েছেন], অথচ আমি খবর রাখি না। পরে আমি ফিরে দেখলে তিনি আমাকে ইশারা করলেন [আমাকে ইঙ্গিতে ফিরে না দেখিতে বলিলেন]। [হাদীসটি ঈমাম মালিক [রাহিমাহুল্লাহ] একক ভাবে বর্ণনা করিয়াছেন]

কসর নামাজের নিয়ম -এই হাদীসটির তাহকিকঃ অন্যান্য

পরিচ্ছেদঃ ২১ – ঈমামকে রুকূতে পেলে কি করিবে

৩৮১ আবু উমামা ইবনি হুনায়ফ [রাদি.] হইতে বর্ণিতঃ

যায়দ ইবনি সাবিত [রাদি.] [একবার] মসজিদে প্রবেশ করলেন এবং লোকজনকে রুকূতে পেলেন। তিনিও রুকূ করলেন, অতঃপর [সে অবস্থায়ই] আস্তে আস্তে চলতে চলতে সফ বা কাতার পর্যন্ত পৌঁছলেন। [হাদীসটি ঈমাম মালিক [রাহিমাহুল্লাহ] একক ভাবে বর্ণনা করিয়াছেন]

কসর নামাজের নিয়ম -এই হাদীসটির তাহকিকঃ অন্যান্য

৩৮২ মালিক [রাহিমাহুল্লাহ] হইতে বর্ণিতঃ

তাঁর নিকট রেওয়ায়ত পৌঁছেছে যে, আবদুল্লাহ ইবনি মাসউদ [রাদি.] রুকূতে আস্তে আস্তে হাঁটতেন। [হাদীসটি ঈমাম মালিক [রাহিমাহুল্লাহ] একক ভাবে বর্ণনা করিয়াছেন]

কসর নামাজের নিয়ম -এই হাদীসটির তাহকিকঃ অন্যান্য

পরিচ্ছেদঃ ২২ – নবী সাঃআঃ-এর উপর দরূদ পাঠ করা

৩৮৩ আমর ইবনি সুলায়ম যুরাকী [রাহিমাহুল্লাহ] হইতে বর্ণিতঃ

, আবু হুমায়দ সাঈদী [রাদি.] তাহাকে বলেছেন, তাঁরা {রসূলুল্লাহ্ সাঃআঃ-এর নিকট} বলিলেন, ইয়া রসূলুল্লাহ্! আমরা আপনার উপর দরূদ কিভাবে পাঠ করব ? তিনি বলিলেন, তোমরা এইরূপ বলবে-, আবু হুমায়দ সাঈদী [রাদি.] তাহাকে বলেছেন, তাঁরা {রসূলুল্লাহ্ সাঃআঃ-এর নিকট} বলিলেন, ইয়া রসূলুল্লাহ্! আমরা আপনার উপর দরূদ কিভাবে পাঠ করব ? তিনি বলিলেন, তোমরা এইরূপ বলবে-

اللهُمَّ صَلِّ عَلَى مُحَمَّدٍ وَأَزْوَاجِهِ وَذُرِّيَّتِهِ كَمَا صَلَّيْتَ عَلَى آلِ إِبْرَاهِيمَ وَبَارِكْ عَلَى مُحَمَّدٍ وَأَزْوَاجِهِ وَذُرِّيَّتِهِ كَمَا بَارَكْتَ عَلَى آلِ إِبْرَاهِيمَ إِنَّكَ حَمِيدٌ مَجِيدٌ .

“আল্ল-হুম্মা সল্লি আলা-মুহাম্মাদিন ওয়া আয্ওয়াজিহি ওয়া যুররিয়্যাতিহি কামা-সল্লাইতা আলা-আ-লি ইবরাহীমা ওয়াবা-রিক আলা-মুহাম্মাদিন ওয়া আয্ওয়াজিহি ওয়া যুররিয়্যাতিহি কামা-বা-রাকতা আলা-আ-লি ইবরাহীমা ইন্নাকা হামীদুম্ মাজীদ।” অর্থাৎ হে আল্লাহ ! মুহাম্মাদ [সাঃআঃ] ও তাহাঁর বিবিগন এবং তাহাঁর বংশধরগনের প্রতি রহমাত বর্ষন কর, যেভাবে তুমি রহমাত বর্ষন করেছ ইবরাহীম [আঃ]-এর পরিজনের প্রতি- তুমি বারাকাত নাযিল কর মুহাম্মাদ [সাঃআঃ] ও তাহাঁর বিবিগনের প্রতি যেভাবে তুমি বারাকাত নাযিল করেছ ইবরাহীম [আ]-এর পরিজনের প্রতি। নিশ্চয়ই তুমি প্রশংসিত ও সন্মানিত।

[বুখারি ৩৩৬৯, মুসলিম ৪০৭] কসর নামাজের নিয়ম -এই হাদীসটির তাহকিকঃ সহীহ হাদীস

৩৮৪ আবু মাসউদ আনসারী [রাদি.] হইতে বর্ণিতঃ

সাদ ইবনি উবাদা [রাদি.]-এর মজলিসে রসূলুল্লাহ্ সাঃআঃ আমাদের নিকট শুভাগমন করলেন। বশীর ইবনি সাদ [রাদি.] রসূলুল্লাহ্ সাঃআঃ-এর নিকট বলিলেন, ইয়া রসূলুল্লাহ্ সাঃআঃ! আল্লাহ আমাদের প্রতি নির্দেশ দিয়েছেন আপনার উপর দরূদ পাঠ করার জন্য। আমরা আপনার প্রতি কিভাবে দরূদ পাঠ করব ? আবু মাসউদ আনসারী বলেন, এ প্রশ্ন শোনার পর, রসূলুল্লাহ্ সাঃআঃ নীরব রইলেন। এমন কি [তাঁর নীরবতা দেখিয়া] আকাঙ্ক্ষা করলাম, যদি প্রশ্নকারী প্রশ্ন না-ই করত [তা হলে ভাল হত]। অতঃপর তিনি বলিলেন, এইরূপ বল

اَللّٰهُمَّ صَلِّ عَلَى مُحَمَّدٍ وَعَلَى آلِ مُحَمَّدٍ كَمَا صَلَّيْتَ عَلَى إِبْرَاهِيمَ وَبَارِكْ عَلَى مُحَمَّدٍ وَعَلَى آلِ مُحَمَّدٍ كَمَا بَارَكْتَ عَلَى آلِ إِبْرَاهِيمَ فِي الْعَالَمِينَ إِنَّكَ حَمِيدٌ مَجِيْدٌ.

“আল্ল-হুম্মা সল্লি আলা-মুহাম্মাদিন ওয়া আলা-আ-লি মুহাম্মাদিন কামা-সল্লাইতা আলা-ইবর-হীমা ওয়াবা-রিক আলা-মুহাম্মাদিন ওয়া আলা-আ-লি মুহাম্মাদিন কামা বা-রকতা আলা ইবর-হীমা ফিল আলামীন। ইন্নাকা হামীদুম্ মাজীদ।” অর্থাৎ “ হে আল্লাহ! মুহাম্মাদ ও তার পরিবার-পরিজনের উপর রহমত বর্ষণ করো-যেভাবে তুমি ইবরাহীম [আঃ] এর পরিবার-পরিজনের উপর রহমাত বর্ষণ করেছ। তুমি মুহাম্মাদ ও তাহাঁর পরিবার-পরিজনকে বারাকাত ও প্রাচুর্য দান করো-যেভাবে তুমি ইবরাহীম [আঃ]- এর পরিবার-পরিজনকে দুনিয়া ও আখিরাতে বারাকাত ও প্রাচুর্য দান করেছ। নিশ্চয়ই তুমি প্রশংসিত ও সম্মানিত।“

[এটা হচ্ছে সালাত বা দরূদ] আর সালাম যেরূপ তোমরা অবগত হয়েছ। [সহীহ, মুসলিম ৪০৫] কসর নামাজের নিয়ম -এই হাদীসটির তাহকিকঃ সহীহ হাদীস

৩৮৫ আবদুল্লাহ ইবনি দীনার [রাহিমাহুল্লাহ] হইতে বর্ণিতঃ

আমি আবদুল্লাহ্ ইবনি উমার [রাদি.]-কে দেখেছি, তিনি নাবী সাল্লাল্লাহ সাঃআঃ-এর কবরের নিকট দাঁড়াতেন, তারপর তার উপর দরূদ পাঠ করিতেন এবং আবু বাকর ও উমার [রাদি.]-এর জন্য দোআ করিতেন। [হাদীসটি ঈমাম মালিক [রাহিমাহুল্লাহ] একক ভাবে বর্ণনা করিয়াছেন]

কসর নামাজের নিয়ম -এই হাদীসটির তাহকিকঃ অন্যান্য

পরিচ্ছেদঃ ২৩ – নামাযের বিভিন্ন আমল

৩৮৬ ইবনি উমার [রাদি.] হইতে বর্ণিতঃ

রসূলুল্লাহ্ সাঃআঃ নিজ গৃহে নামাজ আদায় করিতেন, যোহরের পূর্বে দুরাকআত ও পরে দুরাকআত এবং মাগরিবের পর দুরাকআত। আর ইশার পর আদায় করিতেন দুরাকআত। আর জুমআর পর তিনি ঘরে ফিরে না আসা পর্যন্ত নামাজ আদায় করিতেন না।

[ঘরে ফিরলে] অতঃপর দুরাকআত আদায় করিতেন। [বুখারি ৯৩৭, মুসলিম ৮৮২] কসর নামাজের নিয়ম -এই হাদীসটির তাহকিকঃ সহীহ হাদীস

৩৮৭ আবু হুরায়রা [রাদি.] হইতে বর্ণিতঃ

রসূলুল্লাহ্ সাঃআঃ বলেছেন, তোমরা কি ধারণা কর যে, আমার কিবলা শুধু এই স্থানেই [আমি শুধু সামনের দিকেই দেখি, যেদিকে আমার কিবলা] ? আল্লাহর কসম, তোমাদের একাগ্রতা ও মনোযোগ এবং তোমাদের রুকূ [কোনটাই] আমার কাছে গোপন নয়। অবশ্যই আমি আমার পশ্চাৎ দিক হইতেও তোমাদেরকে দেখি।

[বুখারি ৪১৮, মুসলিম ৪২৪] কসর নামাজের নিয়ম -এই হাদীসটির তাহকিকঃ সহীহ হাদীস

৩৮৮ আবদুল্লাহ ইবনি উমার [রাদি.] হইতে বর্ণিতঃ

রসূলুল্লাহ্ সাঃআঃ পদব্রজে এবং সওয়ার হয়ে কুবাতে তশরীফ আনতেন।

[বুখারি ১১৯৪, মুসলিম ১৩৯৯] কসর নামাজের নিয়ম -এই হাদীসটির তাহকিকঃ সহীহ হাদীস

৩৮৯ নুমান ইবনি মুররা [রাদি.] হইতে বর্ণিতঃ

রসূলুল্লাহ্ সাঃআঃ বলেছেন, শারাবী, চোর এবং ব্যভিচারী সম্পর্কে তোমাদের কি মত ? আর এই প্রশ্ন করা হয় এদের সম্পর্কে কোন হুকুম অবতীর্ণ হওয়ার পূর্বে। তাঁরা উত্তর দিলেন, আল্লাহ ও তাঁর রসূল অধিক জ্ঞাত। রসূলুল্লাহ্ সাঃআঃ ফরমালেন এটা ঘৃণা ও জঘন্য পাপ কাজ, এই সবের সাজা রয়েছে। আর যে ব্যক্তি নিজের নামাজ চুরি করে, সে চুরি হচ্ছে সর্বাপেক্ষা বড় চুরি। তাঁরা [সাহাবীগণ] বলিলেন, ইয়া রসূলুল্লাহ্ সাঃআঃ! আপন নামাজ চুরি করে কিভাবে ? তিনি বলিলেন, সে নামাযের রুকূ এবং সিজদা পূর্ণভাবে আদায় করে না।

[আবু হুরায়রা ও আবু সাঈদ [রাদি.] থেকে সনদ সহ বর্ণনা করিয়াছেন] কসর নামাজের নিয়ম -এই হাদীসটির তাহকিকঃ অন্যান্য

৩৯০ উরওয়াহ ইবনিশ যুবায়র [রাদি.] হইতে বর্ণিতঃ

রসূলুল্লাহ্ সাঃআঃ বলেছেন, তোমাদের কিছু নামাজ ঘরে আদায় করো। [বুখারি ৪৩২, ঈমাম মুসলিম ইবনি ওমর থেকে বর্ণনা করেন মুসলিম ৭৭৭, তবে ঈমাম মালিক [রাহিমাহুল্লাহ] কর্তৃক বর্ণিত হাদীসটি মুরসাল]

কসর নামাজের নিয়ম -এই হাদীসটির তাহকিকঃ অন্যান্য

৩৯১ নাফি [রাহিমাহুল্লাহ] হইতে বর্ণিতঃ

রুগ্ন ব্যক্তি সিজদা করিতে না পারলে মাথা দ্বারা শুধু ইশারা করিবে, আর কপালের দিকে কোন বস্তু উত্তোলন করিবে না। [হাদীসটি ঈমাম মালিক [রাহিমাহুল্লাহ] একক ভাবে বর্ণনা করিয়াছেন]

কসর নামাজের নিয়ম -এই হাদীসটির তাহকিকঃ অন্যান্য

৩৯২ রবীআ ইবনি আবু আবদুর রহমান [রাহিমাহুল্লাহ] হইতে বর্ণিতঃ

লোকজন নামাজ সমাপ্ত করেন, এই অবস্থায় আবদুল্লাহ ইবনি উমার [রাদি.] মসজিদে পৌঁছালে তিনি ফরয নামাজ আদায় আরম্ভ করিতেন এবং উহার পূর্বে অন্য কোন নামাজ আদায় করিতেন না। [হাদীসটি ঈমাম মালিক [রাহিমাহুল্লাহ] একক ভাবে বর্ণনা করিয়াছেন]

কসর নামাজের নিয়ম -এই হাদীসটির তাহকিকঃ অন্যান্য

৩৯৩ নাফি [রাহিমাহুল্লাহ] হইতে বর্ণিতঃ

আবদুল্লাহ ইবনি উমার [রাদি.] একবার এক ব্যক্তির নিকট দিয়ে যাচ্ছিলেন। সে ব্যক্তি নামাজ আদায় করছিলো। তিনি সে ব্যক্তিকে সালাম করলেন। সে ব্যক্তি

وَعَلَيْكُمُ السَّلَامُ وَرَحْمَةُ اللهِ

ওয়া আলাইকুমুস সালামু ওয়া রহমাতুল্লাহি

বাক্য দ্বারা সালামের উত্তর দিলেন। আবদুল্লাহ ইবনি উমার [রাদি.] তাঁর কাছে ফিরে এসে বলিলেন, নামাজরত অবস্থায় যদি তোমাদের কাউকেও সালাম করা হয়, তবে সে সালাম করিবে না বরং হাতের ইশারায় উত্তর দেবে। [হাদীসটি ঈমাম মালিক [রাহিমাহুল্লাহ] একক ভাবে বর্ণনা করিয়াছেন]

কসর নামাজের নিয়ম -এই হাদীসটির তাহকিকঃ অন্যান্য

৩৯৪ নাফি [রাহিমাহুল্লাহ] হইতে বর্ণিতঃ

আবদুল্লাহ ইবনি উমার [রাদি.] বলিতেন, যে ব্যক্তি কোন নামাজ ভুলে যায়, তারপর সে নামাযের কথা আর স্মরণ হয়নি, কিন্তু স্মরণ হয়েছে এমন সময় যখন ইমামের সাথে, তবে ঈমাম সালাম ফিরালে পর সে [প্রথমে] যে নামাজ ভুলেছে তা আদায় করে নিবে, তারপর অন্য নামাজ [যা ইমামের সাথে আদায় করেছিলো] আদায় করিবে। [হাদীসটি ঈমাম মালিক [রাহিমাহুল্লাহ] একক ভাবে বর্ণনা করিয়াছেন]

কসর নামাজের নিয়ম -এই হাদীসটির তাহকিকঃ অন্যান্য

৩৯৫ ওয়াসি ইবনি হাব্বান [রাহিমাহুল্লাহ] হইতে বর্ণিতঃ

আমি নামাজ আদায় করিতেছিলাম, তখন আবদুল্লাহ ইবনি উমার [রাদি.] কিবলার প্রাচীরের সাথে পিঠ লাগিয়ে বসে ছিলেন। আমি নামাজ সমাপ্ত করার পর তাঁর কাছে গেলাম, আমার বাম দিকে ফিরে। আবদুল্লাহ ইবনি উমার [রাহিমাহুল্লাহ] বলিলেন, তোমাকে ডানদিক হয়ে ফিরতে কিসে বাধা দিল? ওয়াসি [রাহিমাহুল্লাহ] উত্তরে বলিলেন, আমি আপনাকে আমার বাম দিকে বসা দেখে আপনার দিকে ফিরলাম। আবদুল্লাহ [রাদি.] বলিলেন, তুমি ঠিক করেছ। হয়ত এক ব্যক্তি বলবে তুমি ডান দিক হয়ে ফির। অতঃপর তুমি যখন নামাজ আদায় কর, যেদিক দিয়ে তোমার ইচ্ছা হয় সেদিক দিয়ে ফিরো, ডানদিক দিয়ে হোক বা বামদিক দিয়ে। [হাদীসটি ঈমাম মালিক [রাহিমাহুল্লাহ] একক ভাবে বর্ণনা করিয়াছেন]

কসর নামাজের নিয়ম -এই হাদীসটির তাহকিকঃ অন্যান্য

৩৯৬ জনৈক মুহাজির আবদুল্লাহ ইবনি আমার ইবনি আস [রাদি.] হইতে বর্ণিতঃ

এর নিকট প্রশ্ন করলেন, উটের বিশ্রামগারে [যা সাধারণত পানির কাছে হয়] নামাজ আদায় করিতে পারি কি ? তিনি বলিলেন, না, তবে ছাগলের বসার স্থানে নামাজ আদায় করিতে পার। [হাদীসটি ঈমাম মালিক [রাহিমাহুল্লাহ] একক ভাবে বর্ণনা করিয়াছেন]

কসর নামাজের নিয়ম -এই হাদীসটির তাহকিকঃ অন্যান্য

৩৯৭ ইবনি শিহাব [রাহিমাহুল্লাহ] হইতে বর্ণিতঃ

সাঈদ ইবনি মুসায়্যাব [রাহিমাহুল্লাহ] বলেছেন, কোন নামাজ এরূপ যার প্রতি রাকআতে বসতে হয় ? অতঃপর [উত্তরে] সাঈদ বলিলেন, সেটা মাগরিবের নামাজ, যখন তোমার উহা হইতে এক রাকআত ছুটে যায় অর্থাৎ ইমামের সাথে এক রাকআত না পেল তাকে সে রাকআত আদায় করিতে হইবে, তখন প্রতি রাকআতেই বসতে হয়। [হাদীসটি ঈমাম মালিক [রাহিমাহুল্লাহ] একক ভাবে বর্ণনা করিয়াছেন]

মালিক [রাহিমাহুল্লাহ] বলেন, সব নামাযেই এরূপ নিয়ম।

কসর নামাজের নিয়ম -এই হাদীসটির তাহকিকঃ অন্যান্য

পরিচ্ছেদঃ ২৪ – নামাজ সম্পর্কিত বিবিধ আহ্কাম

৩৯৮ আবু কাতাদা আনসারী [রাদি.] হইতে বর্ণিতঃ

রসূলুল্লাহ্ সাঃআঃ তাঁর কন্যা যয়নব [রাদি.]-এর মেয়ে উমামাকে উঠিয়ে নামাজ আদায় করিতেন। উমামার পিতা হচ্ছেন আবুল আস ইবনি রবিআ ইবনি আবদ শামস। হযরত সাঃআঃ সিজদা করার সময় তাহাকে রেখে দিতেন, আবার উঠার সময় তাহাকে উঠিয়ে নিতেন।

[বুখারি ৫১৬, মুসলিম ৫৪৩] কসর নামাজের নিয়ম -এই হাদীসটির তাহকিকঃ সহীহ হাদীস

৩৯৯ আবু হুরায়রা [রাদি.] হইতে বর্ণিতঃ

রসূলুল্লাহ্ সাঃআঃ বলেছেন, তোমাদের মধ্যে ফেরেশতাগণ পালাবদল করে আসা যাওয়া করেন। একদল ফেরেশতা রাত্রে এবং আর একদল দিনে, আর আসর ও ফজরের নামাযে তাঁরা একত্র হন। অতঃপর যাঁরা রাত্রে তোমাদের মধ্যে ছিলেন, তাঁরা ঊর্ধ্বলোকে চলে যান। আল্লাহ তাআলা আপন বান্দাদের অবস্থা অধিক জ্ঞাত, তবুও তিনি ফেরেশতাগণকে প্রশ্ন করেন, তোমরা আমার বান্দাগণকে কি অবস্থায় রেখে এসেছ ? উত্তরে ফেরেশতাগণ বলেন, আমরা তাঁদেরকে নামাজরত অবস্থায় রেখে এসেছি এবং আমরা যখন তাঁদের কাছে গিয়েছিলাম তখনও তাঁর নামাযেরত ছিলেন।

[বুখারি ৫৫৫, মুসলিম ৬৩২] কসর নামাজের নিয়ম -এই হাদীসটির তাহকিকঃ সহীহ হাদীস

৪০০ আয়েশা [রাদি.] হইতে বর্ণিতঃ

রসূলুল্লাহ্ সাঃআঃ বলেছেন, আবু বাকরকে বলে দাও, তিনি যেন লোকের ঈমামতি করেন। তখন আয়েশা [রাদি.] বলিলেন, ইয়া রসূলুল্লাহ্ সাঃআঃ! আবু বাকর আপনার স্থানে দাঁড়ালে কান্নার জন্য লোকে তাঁর আওয়াযই শুনতে পাবে না। কাজেই আপনি লোকের ঈমামতি করার জন্য উমার [রাদি.]-কে নির্দেশ প্রদান করুন। তিনি বলিলেন, আবু বাকরকে বলে দাও তিনি যেন লোকের ঈমামতি করেন। আয়েশা [রাদি.] বলেন, তখন আমি হাফ্সাকে বললাম তুমি রসূলুল্লাহ্ সাঃআঃকে বল, আবু বকর [রাদি.] যখন আপনার স্থানে দাঁড়াবেন, কান্নার জন্য লোকে তাঁর আওয়ায শুনতে পাবে না, কাজেই লোকের ঈমামতি করার জন্য উমার [রাদি.]-কে বলুন। হাফসা [রাদি.] উহা করলেন। রসূলুল্লাহ্ সাঃআঃ তাঁর উত্তরে বলিলেন, তোমরা অবশ্যই ইউসুফ [আ]-এর সঙ্গিনী নারীদের মত। আবু বাকরকেই বলে দাও তিনি যেন লোকের ঈমামতি করেন। [এই উত্তর শুনে] হাফসা [রাদি.] আয়েশা [রাদি.]-কে উদ্দেশ্য করে বলিলেন, আমি তোমার নিকট হইতে কোন মঙ্গল লাভ করিনি।

[সহীহ, বুখারি ৬৭৯] কসর নামাজের নিয়ম -এই হাদীসটির তাহকিকঃ সহীহ হাদীস

৪০১ উবায়দুল্লাহ ইবনি আদী ইবনি খিয়ার [রাদি.] হইতে বর্ণিতঃ

রসূলুল্লাহ্ সাঃআঃ লোকের [সাহাবীগণের] মধ্যে বিরাজমান ছিলেন। এমন সময় একজন লোক তাঁর খিদমতে উপস্থিত হলেন এবং তাঁর সাথে চুপে চুপে কথা বলিলেন। সে ব্যক্তি চুপে চুপে কি যে বলিলেন তা আমরা জানতে পারলাম না। ইতিমধ্যে রসূলুল্লাহ্ সাঃআঃ একটু উচ্চঃস্বরে আলাপ করিতে শুরু করলেন, তখন আমরা জানতে পারলাম যে উক্ত ব্যক্তি মুনাফিকদের মধ্য হইতে জনৈক মুনাফিককে কতল করার অনুমতি প্রার্থনা করছেন। রসূলুল্লাহ্ সাঃআঃ একটু জোরে কথা বলিতে শুরু করলেন এবং আগন্তুককে প্রশ্ন করলেন সে মুনাফিক ব্যক্তিটি কি এই কথার সাক্ষ্য দেয়নি যে, আল্লাহ ব্যতীত কোন মাবুদ নেই এবং মুহাম্মাদ সাঃআঃ আল্লাহর {প্রেরিত} রসূল ? সে ব্যক্তি বলিলেন, হ্যাঁ কিন্তু তার শাহাদত বিশ্বাসযোগ্য নয়। রসূলুল্লাহ্ সাঃআঃ ফরমালেন সে কি নামাজ আদায় করে না ? আগন্তুক বলিলেন, হ্যাঁ, তবে তার নামাজ নির্ভরযোগ্য নয়। রসূলুল্লাহ্ সাঃআঃ বলিলেন, এরাই সে লোক, যাদের [হত্যা করা] হইতে আল্লাহ্ আমাকে বিরত রেখেছেন। [হাদীসটি ঈমাম মালিক [রাহিমাহুল্লাহ] একক ভাবে বর্ণনা করিয়াছেন]

কসর নামাজের নিয়ম -এই হাদীসটির তাহকিকঃ অন্যান্য

৪০২ আতা ইবনি ইয়াসার [রাহিমাহুল্লাহ] হইতে বর্ণিতঃ

রসূলুল্লাহ্ সাঃআঃ বলেছেন, হে আল্লাহ! আমার কবরকে পূজা মূর্তি বানাইও না। সে সম্প্রদায়ের উপর আল্লাহর ক্ষোভ প্রবল হয়েছে, যে সম্প্রদায় তাদের নবীগণের কবরকে মসজিদ বা সিজদার জায়গা বানিয়ে নিয়েছে। [হাদীসটি ঈমাম মালিক [রাহিমাহুল্লাহ] একক ভাবে বর্ণনা করিয়াছেন, তবে এই হাদীসের অর্থে আরো অনেক বর্ণনা রয়েছে।]

কসর নামাজের নিয়ম -এই হাদীসটির তাহকিকঃ নির্ণীত নয়

৪০৩ মাহমুদ ইবনি রাবী আনসারী [রাদি.] হইতে বর্ণিতঃ

উতবান ইবনি মালিক [রাদি.] আপন সম্প্রদায়ের লোকদের ঈমামতি করিতেন, তিনি ছিলেন অন্ধ। তিনি রসূলুল্লাহ্ সাঃআঃ-এর কাছে আরজ করলেন আমাকে অনেক সময় আন্ধকার, বৃষ্টি ও স্রোতের সম্মুখীন হইতে হয়, আর আমি হলাম দুর্বল দৃষ্টিশক্তিসম্পন্ন লোক, তাই হে আল্লাহর রসূল! আপনি আমার গৃহের কোন স্থানে নামাজ আদায় করুন, আমি উহাকে নামাযের স্থান নির্ধারণ করব। তাঁর আবেদন রক্ষার্থে রসূলুল্লাহ্ সাঃআঃ তাঁর গৃহে পদার্পণ করলেন এবং জিজ্ঞেস করলেন, কোন স্থানে নামাজ আদায় করা তুমি পছন্দ কর ? তিনি ইশারায় রসূলুল্লাহ্ সাঃআঃকে একটি নির্দিষ্ট স্থান তাঁর গৃহ হইতে দেখালেন অতঃপর রসূলুল্লাহ্ সাঃআঃ সে স্থানে নামাজ আদায় করলেন।

[বুখারি ৬৬৭, মুসলিম ৩৩] কসর নামাজের নিয়ম -এই হাদীসটির তাহকিকঃ সহীহ হাদীস

৪০৪ আব্বাস ইবনি তামীম [রাহিমাহুল্লাহ] হইতে বর্ণিতঃ

রসূলুল্লাহ্ সাঃআঃকে মসজিদে চিৎ হয়ে শায়িত দেখেছিলেন। তখন রসূলুল্লাহ্ সাঃআঃ এক পা অপর পায়ের উপর রেখেছিলেন। [বুখারি ৪৭৫, মুসলিম ২১০০]

সাঈদ ইবনি মুসায়্যাব [রাহিমাহুল্লাহ] বলেন, উমার ইবনি খাত্তাব ও উসমান ইবনি আফফান [রাদি.] দুজনে অনুরূপ করিতেন। [হাদীসটি ঈমাম মালিক [রাহিমাহুল্লাহ] একক ভাবে বর্ণনা করিয়াছেন]

কসর নামাজের নিয়ম -এই হাদীসটির তাহকিকঃ সহীহ হাদীস

৪০৫ ইয়াহইয়া ইবনি সাঈদ [রাহিমাহুল্লাহ] হইতে বর্ণিতঃ

আবদুল্লাহ ইবনি মাসউদ [রাদি.] জনৈক ব্যক্তিকে সম্বোধন করে বলেছেন, তুমি এমন এক যুগে বাস করছ, যে যুগে ধর্মীয় বিষয়ে বিজ্ঞ অনেক আলিম রয়েছেন, কারী আছেন কম [অর্থাৎ আমল ও জ্ঞান ছাড়া কেবল কুরআন পাঠকারীদের সংখ্যা অতি অল্প]। এই যুগে কুরআনের আদেশ নিষেধ প্রভৃতি হিফাযত করা হয়, শব্দের দিকে মনোযোগ দেয়া হয় কম, ভিক্ষুকের সংখ্যা কম, দাতার সংখ্যা বেশি, নামাজ আদায় করেন দীর্ঘ আর খুতবা পাঠ করেন ছোট। সে যুগে প্রবৃত্তি বা খাহেশাতের তাঁবেদারীর পূর্বে তাঁরা আমল শুরু করে দেন। অদূর ভবিষ্যতে মানুষের উপর এমন এক যুগ আসবে, সে যুগে বিজ্ঞ উলামা হইবেন অল্প। কারিগণ হইবেন অনেক, কুরআনের শব্দসমূহের হিফাযত করা হইবে, অপরদিকে আহকামে কুরআনকে বরবাদ করা হইবে [আমলের প্রতি নযর দেবে কম]। ভিক্ষুক হইবে অনেক, দাতার সংখ্যা হইবে অল্প। খুতবা লম্বা প্রদান করিবে আর নামাজ আদায় করিবে মুখতাসার, আমলের নয়, খাহেশাত বা প্রবৃত্তির অনুসরণ করা হইবে। [হাদীসটি ঈমাম মালিক [রাহিমাহুল্লাহ] একক ভাবে বর্ণনা করিয়াছেন]

কসর নামাজের নিয়ম -এই হাদীসটির তাহকিকঃ অন্যান্য

৪০৬ ইয়াহইয়া ইবনি সাঈদ [রাহিমাহুল্লাহ] হইতে বর্ণিতঃ

আমার নিকট রেওয়ায়ত পৌঁছেছে যে, বান্দার আমল হইতে সর্বপ্রথম যে আমলেন প্রতি নযর করা হইবে, তা হচ্ছে নামাজ, অতঃপর তার নামাজ যদি কবুল করা হয়, তবে অন্যান্য আমলের প্রতি নযর দেয়া হইবে। আর যদি নামাজ তার গ্রহণযোগ্য না হয়, তবে তার আমলের কোন কিছুর প্রতি নযর দেয়া হইবে না।

[হাদীসটি ঈমাম মালিক [রাহিমাহুল্লাহ] একক ভাবে বর্ণনা করিয়াছেন, ঈমাম আবু দাঊদ আবু হুরায়রা থেকে বর্ণনা করেন, আবু দাঊদ ৮৬৪, আলবানী হাদীসটি সহীহ বলেছেন সহীহ ও জঈফ সুনানে আবু দাঊদ] কসর নামাজের নিয়ম -এই হাদীসটির তাহকিকঃ অন্যান্য

৪০৭ আয়েশা [রাদি.] হইতে বর্ণিতঃ

রসূলুল্লাহ্ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম্-এর কাছে সে আমল ছিল সর্বাধিক প্রিয়, যে আমল উহার সম্পাদনকারী সর্বদা সম্পাদন করে থাকে।

[সহীহ, বুখারি ৬৪৬২] কসর নামাজের নিয়ম -এই হাদীসটির তাহকিকঃ সহীহ হাদীস

৪০৮ সাদ ইবনি আবি ওয়াককাস [রাদি.] হইতে বর্ণিতঃ

দুজন লোক পরস্পর ভাই ভাই, [ঘটনাক্রমে] তাঁদের মধ্যে এক ভাই মৃত্যুবরণ করেন অপর ভাইয়ের চল্লিশ রাত্রি পূর্বে। অতঃপর রসূলুল্লাহ্ সাঃআঃ সমীপে প্রথম [মৃত্যুবরণকারী] ভাইয়ের ফযীলত আলোচিত হয়। তখন রসূলুল্লাহ্ সাঃআঃ বলিলেন, দ্বিতীয় ভাই কি মুসলমান ছিলেন না ? [উপস্থিত] সাহাবীগণ বলিলেন, হ্যাঁ [তিনিও মুসলমান ছিলেন], ইয়া রসূলুল্লাহ্! আর তিনি মন্দলোক ছিলেন না। [এটা শ্রবণ করার পর] রসূলুল্লাহ্ সাঃআঃ বলিলেন, তোমরা জান না, তাঁর নামাজ তাকে কোন স্তরে পৌঁছিয়েছে। অবশ্য নামাযের দৃষ্টান্ত হল তোমাদের একজনের দ্বারে অবস্থিত গভীর, পরিপূর্ণ সুমিষ্ট পানির নহরের মত। উক্ত নহরে দৈনিক পাঁচবার যে অবগাহন করে এতে তোমার কি ধারণা, তার দেহে কোন ময়লা অবশিষ্ট থাকিবে ? অবশ্য তোমরা জান না যে, তার নামাজ তাহাকে মর্যাদার কোন স্তরে নিয়ে পৌঁছিয়েছে।

[হাদীসে বর্ণিত ঘটনাটি ——– ঈমাম বুখারি বর্ণনা করেন। বুখারি ৫২৮, আর ঈমাম মুসলিম, আবু হুরায়রা [রাদি.] থেকে বর্ণনা করেন মুসলিম ৬৬৭] কসর নামাজের নিয়ম -এই হাদীসটির তাহকিকঃ সহীহ হাদীস

৪০৯ মালিক [রাহিমাহুল্লাহ] হইতে বর্ণিতঃ

তাঁর কাছে রেওয়ায়ত পৌঁছেছে যে, আতা ইবনি ইয়াসার [রাহিমাহুল্লাহ]-এর [অভ্যাস ছিল] মসজিদে ক্রয়-বিক্রয়কারী কেউ তাঁর কাছ দিয়ে যাতায়াত করলে সে ব্যক্তিকে ডেকে জিজ্ঞেস করিতেন তোমার সাথে কি এবং তোমার উদ্দেশ্য কি ? যদি সে তার নিকট বলত যে, সে এটা বিক্রয় করিতে চায়, তবে তিনি বলিতেন, তুমি দুনিয়ার বাজারে গমন কর, কারণ এটি হল আখিরাতের বাজার। [হাদীসটি ঈমাম মালিক [রাহিমাহুল্লাহ] একক ভাবে বর্ণনা করিয়াছেন]

কসর নামাজের নিয়ম -এই হাদীসটির তাহকিকঃ অন্যান্য

৪১০ মালিক [রাহিমাহুল্লাহ] হইতে বর্ণিতঃ

তাঁর কাছে রেওয়ায়ত পৌঁছেছে যে, উমার ইবনি খাত্তাব [রাদি.] মসজিদের পার্শ্বে একটি চত্বর তৈরী করেছিলেন, যাকে বলা হত বুতায়হা তিনি ঘোষণা করে দিয়েছিলেন, যে ব্যক্তি অনর্থক কথা বলিতে অথবা কবিতা আবৃত্তি করিতে অথবা উচ্চঃস্বরে কথা বলিতে চায়, সে যেন সেই চত্বরে চলে যায়। [হাদীসটি ঈমাম মালিক [রাহিমাহুল্লাহ] একক ভাবে বর্ণনা করিয়াছেন]

কসর নামাজের নিয়ম -এই হাদীসটির তাহকিকঃ অন্যান্য

পরিচ্ছেদঃ ২৫ – নামাযের উৎসাহ প্রদান

৪১১ তালহা ইবনি উবায়দুল্লাহ [রাদি.] হইতে বর্ণিতঃ

একজন নযদবাসী লোক এলোমেলো কেশে রসূলুল্লাহ্ সাঃআঃ-এর কাছে এলেন। আমরা তাঁর স্বরের গুঞ্জন শুনছিলাম। কিন্তু তিনি কি বলছিলেন তা বুঝা যাচ্ছিল না। আবশেষে তিনি নাবী সাঃআঃ-এর খুব কাছে এলেন। তখন তিনি ইসলাম সম্পর্কে প্রশ্ন করছিলেন। অতঃপর রসূলুল্লাহ্ সাঃআঃ [তাঁর প্রশ্নের উত্তরে] বলিলেন, দিন-রাতে পাঁচবার নামাজ। সে বলল, এটা ছাড়া আমার উপর আর কোন কিছু [নামাজ] আছে কি ? তিনি বলিলেন, না, অবশ্য তুমি যদি স্বেচ্ছায় [নফল] আদায় কর। রসূলুল্লাহ্ সাঃআঃ বলিলেন, এবং রমযান মাসের রোযা। সে বলল, এটা ছাড়া আমার উপর [আর কোন রোযা] আছে কি ? তিনি বলিলেন, না, তুমি যদি স্বেচ্ছায় রাখ। তালহা [রাদি.] বলেন, রসূলুল্লাহ্ সাঃআঃ যাকাতের উল্লেখ করেন। সে ব্যক্তি বলল, এটা ছাড়া আমার উপর আর কোন কিছু আছে কি ? রসূলুল্লাহ্ সাঃআঃ বলিলেন, না, তবে যদি তুমি নফলরূপে দাও। তালহা [রাদি.] বলেন, অতঃপর সে ব্যক্তি এই বলিতে বলিতে ফিরে গেল কসম আল্লাহর আমি এর উপর বেশিও করব না এবং এটা হইতে কমও করব না। তারপর রসূলুল্লাহ্ সাঃআঃ বলিলেন, এই ব্যক্তি সফলকাম হল, যদি সে সত্য বলে থাকে।

[বুখারি ১১৪২, মুসলিম ৭৭৬] কসর নামাজের নিয়ম -এই হাদীসটির তাহকিকঃ সহীহ হাদীস

৪১২ আবু হুরায়রা [রাদি.] হইতে বর্ণিতঃ

রসূলুল্লাহ্ সাঃআঃ বলেছেন, তোমাদের একজন যখন ঘুমায়, তখন শয়তান তার ঘাড়ে তিনটি গিট লাগায়। প্রতিটি গিঁটের স্থলে সে এই বলে মন্ত্রণা দেয় عَلَيْكَ لَيْلٌ طَوِيلٌ [তোমার জন্য দীর্ঘ রাত্রি রয়েছে, তাই ঘুমাতে থাক।] যদি সে ব্যক্তি জাগ্রত হয় এবং আল্লাহকে স্মরণ করে, তবে একটি গিঁট খুলিয়া যায়, অতঃপর সে যদি ওযূ করে তবে আর একটি গিঁট খুলে যায়, তারপর সে যদি নামাজ আদায় করে আর একটি গিঁট খুলে যায়, ফলে সে প্রভাত করে উৎফুল্ল ও কলুষমুক্ত আত্মা নিয়ে। অন্যথায় সে প্রভাত করে কলুষিত আত্মা নিয়ে আলসতা সহকারে।

[বুখারি ৪৬, মুসলিম ১১] কসর নামাজের নিয়ম -এই হাদীসটির তাহকিকঃ সহীহ হাদীস


by

Comments

Leave a Reply