কবর জিয়ারত মহামারী শহীদগণ আত্মহত্যা শাস্তি প্রসঙ্গ

কবর জিয়ারত মহামারী শহীদগণ আত্মহত্যা শাস্তি প্রসঙ্গ

কবর জিয়ারত মহামারী শহীদগণ আত্মহত্যা শাস্তি প্রসঙ্গ

অধ্যায়ঃ ৮, অনুচ্ছেদঃ (৫৩-৭৬)=২৪টি

৫৩. অনুচ্ছেদঃ রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ]-এর বাণীঃ আমাদের জন্য লাহ্‌দ কবর এবং অন্যদের জন্য শাক কবর
৫৪. অনুচ্ছেদঃ মৃত ব্যক্তিকে কবরে রাখার সময় যে দুআ পাঠ করিতে হয়
৫৫. অনুচ্ছেদঃ কবরে লাশের নিচে একটি কাপড় বিছিয়ে দেওয়া
৫৬. অনুচ্ছেদঃ কবরকে সমান করা
৫৭. অনুচ্ছেদঃ কবরের উপর দিয়ে চলাফিরা করা এবং এর উপর বসা, উহার দিকে মুখ করে নামাজ আদায় করা মাকরূহ্
৫৮. অনুচ্ছেদঃ কবর পাকা করা, এতে ফলক লাগানো নিষেধ
৫৯. অনুচ্ছেদঃ কবরস্থানে প্রবেশ করে যা বলিতে হইবে
৬০. অনুচ্ছেদঃ কবর যিয়ারাত করার অনুমতি
৬১. অনুচ্ছেদঃ [মৃত ব্যক্তিকে মৃত্যু স্থলে কবর দেয়া প্রসঙ্গে]
৬২. অনুচ্ছেদঃ কবর যিয়ারাত করা মহিলাদের জন্য মাকরূহ্
৬৩. অনুচ্ছেদঃ মৃত ব্যক্তির প্রশংসা বর্ণনা করা
৬৪. অনুচ্ছেদঃ যে ব্যক্তির শিশু সন্তান মারা যায় সে ব্যক্তির সাওয়াব
৬৫. অনুচ্ছেদঃ শহীদগণের বর্ণনা
৬৬. অনুচ্ছেদঃ মহামারীতে আক্রান্ত এলাকা হইতে পালানো নিষেধ
৬৭. অনুচ্ছেদঃ আল্লাহ্ তাআলার সাথে সাক্ষাত লাভকে যে লোক পছন্দ করে আল্লাহ্ তাআলাও তার সাক্ষাত লাভকে পছন্দ করেন
৬৮. অনুচ্ছেদঃ আত্মহত্যাকারীর [জানাযার নামাজ] প্রসঙ্গে
৬৯. অনুচ্ছেদঃ ঋণগ্রস্ত লোকের জানাযা
৭০. অনুচ্ছেদঃ কবরের শাস্তি প্রসঙ্গে
৭১. অনুচ্ছেদঃ বিপদগ্রস্ত ব্যক্তিকে সান্ত্বনা দেয়ার সাওয়াব
৭২. অনুচ্ছেদঃ জুমুআর দিন যে লোক মৃত্যু বরণ করে
৭৩. অনুচ্ছেদঃ তাড়াতাড়ি জানাযার ব্যবস্থা করা
৭৪. অনুচ্ছেদঃ বিপদগ্রস্তের প্রতি সহানুভূতি প্রদর্শনের ফাযীলাত
৭৫. অনুচ্ছেদঃ জানাযা আদায়ে দুই হাত উঠানো [রাফউল ইয়াদাইন]
৭৬. অনুচ্ছেদঃ রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ]-এর বাণীঃ মুমিন ব্যক্তির রূহ্ দেনা পরিশোধ না করা পর্যন্ত দেনার সাথে বন্ধক অবস্থায় থাকে

৫৩. অনুচ্ছেদঃ রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ]-এর বাণীঃ আমাদের জন্য লাহ্‌দ কবর এবং অন্যদের জন্য শাক কবর

১০৪৫. ইবনি আব্বাস [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

তিনি বলেন, রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলেছেনঃ আমাদের জন্য লাহ্দ এবং অন্যদের জন্য শাক।

-সহীহ, ইবনি মা-জাহ [১৫৫৪]।জারীর ইবনি আবদুল্লাহ, আইশা, ইবনি উমার ও জাবির [রাদি.] হইতেও এ অনুচ্ছেদে হাদীস বর্ণিত আছে। ইবনি আব্বাসের হাদীসটিকে উল্লেখিত সনদ সূত্রে আবু ঈসা হাসান গারীব বলেছেন। – এই হাদীসটির তাহকিকঃ সহীহ হাদীস

৫৪. অনুচ্ছেদঃ মৃত ব্যক্তিকে কবরে রাখার সময় যে দুআ পাঠ করিতে হয়

১০৪৬. ইবনি উমার [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

মৃত ব্যক্তিকে যখন কবরে রাখা হত; আবু খালিদের বর্ণনায় আছে, মৃত ব্যক্তিকে যখন তার কবরে নামানো হত রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ] তখন বলিতেনঃ

بِسْمِ اللَّهِ وَبِاللَّهِ وَعَلَى مِلَّةِ رَسُولِ اللَّهِ

“বিসমিল্লাহি ওয়া বিল্লাহি ওয়া আলা মিল্লাতি রাসূলিল্লাহ”, অপর বর্ণনায় আছেঃ

 بِسْمِ اللَّهِ وَبِاللَّهِ وَعَلَى سُنَّةِ رَسُولِ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم 

বিসমিল্লাহি ওয়া বিল্লাহি ওয়া আলা সুন্নাতি রাসূলিল্লাহ [সাঃআঃ]”

-সহীহ, ইবনি মা-জাহ [১৫৫০]। আবু ঈসা বলেন, এ হাদীসটি উপরোক্ত সূত্রে হাসান গারীব। এ হাদীসটি ইবনি উমার [রাদি.] হইতে অন্যান্য সূত্রেও বর্ণিত হয়েছে। আবু সিদ্দীক আন-নাজী হাদীসটিকে ইবনি উমারের বরাতে নাৰী [সাঃআঃ] হইতে বর্ণনা করিয়াছেন। আবু সিদ্দীক আন-নাজীর সূত্রে এটা মাওকূফ হিসাবেও আবদুল্লাহ ইবনি উমার [রাদি.] হইতে বর্ণিত হয়েছে। – এই হাদীসটির তাহকিকঃ সহীহ হাদীস

৫৫. অনুচ্ছেদঃ কবরে লাশের নিচে একটি কাপড় বিছিয়ে দেওয়া

১০৪৭. জাফর ইবনি মুহাম্মাদ [রঃ] হইতে তার পিতা হইতে বর্ণীতঃ

তিনি বলেন, রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ]-এর জন্য যে ব্যক্তি লাহ্দ [সিন্দুকী] কবর খুঁড়েছিলেন সে ব্যক্তি হচ্ছেন আবু তালহা [রাদি.]। আর তাহাঁর [কবরে লাশের] নিচে যে ব্যক্তি পশমী চাদর বিছিয়ে ছিলেন সে ব্যক্তি হচ্ছেন রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ]-এর মুক্তদাস শুকরান [রাদি.]।

জাফর [রঃ] বলেন, আবু রাফির ছেলে উবাইদুল্লাহ আমাকে জানিয়েছেন, তিনি বলেছেন, শুকরানকে আমি বলিতে শুনেছিঃ আল্লাহুর শপথ। কবরের মধ্যে রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ]-এর নিচে আমিই পশমী চাদর বিছিয়েছি। ইবনি আব্বাস [রাদি.] হইতেও এ অনুচ্ছেদে হাদীস বর্ণিত আছে। শুকরানের হাদীসটিকে আবু ঈসা হাসান গারীব বলেছেন। উসমান ইবনি ফারকাদের সূত্রে আলী ইবনিল মাদীনীও উল্লেখিত হাদীসটি বর্ণনা করিয়াছেন।- এই হাদীসটির তাহকিকঃ সহীহ হাদীস

১০৪৮. ইবনি আব্বাস [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

তিনি বলেন, একটি লাল পশমী চাদর রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ]-এর কবরে ৰিছিয়ে দেয়া হয়েছিল।

-সহীহ, মুসলিম [৩/৬১]। অন্য জায়গায় মুহাম্মাদ ইবনি ৰাশশার এই হাদীসের সনদে ইয়াহইয়ার পূর্বে মুহাম্মাদ ইবনি জাফরের নাম উল্লেখ করিয়াছেন। আর এই সনদটি বেশি সহিহ। এ হাদীসটিকে আবু ঈসা হাসান সহিহ বলেছেন। শুবা হাদীসটিকে আবু হাম্যা আল-কাসসাব হইতে বর্ণনা করিয়াছেন, তার নাম ইমরান ইবনি আবু আতা। আবু হামযা আয-যুবাঈ হইতেও হাদীসটি বর্ণিত হয়েছে, তার নাম নাসর ইবনি ইমরান। তারা উভয়েই ইবনি আব্বাসের ছাত্র। বর্ণিত আছে যে, কবরে লাশের নিচে কিছু দেয়া ইবনি আব্বাস [রাদি.] মাকরূহ্ মনে করিতেন। এই হাদীস অনুযায়ী কোন কোন আলিম এই অভিমত গ্রহণ করিয়াছেন। – এই হাদীসটির তাহকিকঃ সহীহ হাদীস

৫৬. অনুচ্ছেদঃ কবরকে সমান করা

১০৪৯. আবু ওয়াইল [রঃ] হইতে বর্ণীতঃ

আবুল হাইয়ায আলা-আসাদীকে আলী [রাদি.] বলিলেন, আমি এমন এক কাজের দায়িত্ব দিয়ে তোমাকে পাঠাব যে কাজ করিতে রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ] আমাকে পাঠিয়ে ছিলেন। কোন ধরণের উঁচু কবরকে সমান না করে ছাড়বে না এবং কোন প্রতিকৃতি না ভেঙ্গে রাখবে না।

-সহিহ, আল আহকাম [২০৭], ইরওয়া [৭৫৯], তাহযীরুস্ সাজিদ [১৩০], মুসলিম৷ জাবির [রাদি.] হইতেও এ অনুচ্ছেদে হাদীস বর্ণিত আছে। আলী [রাদি.] হইতে বর্ণিত হাদীসটিকে আবু ঈসা হাসান বলেছেন। এ হাদীস অনুযায়ী একদল আলিম আমল করেন। ভূমি হইতে কবর অধিক উঁচু করাকে তার মাকরূহ্ মনে করেন। ঈমাম শাফি বলেন, কবর উঁচু করাকে আমি মাকরূহ বলে মনে করি। তবে এটুকু উঁচু তো অবশ্য করিতে হইবে যাতে করে লোকেরা বুঝে এটা কবর। এর ফলে কবরের উপর দিয়ে তারা চলাফিরা করিবে না এবং এর উপর বসবে না। – এই হাদীসটির তাহকিকঃ সহীহ হাদীস

৫৭. অনুচ্ছেদঃ কবরের উপর দিয়ে চলাফিরা করা এবং এর উপর বসা, উহার দিকে মুখ করে নামাজ আদায় করা মাকরূহ্

১০৫০. আবু মারসাদ আল-গানাবী [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

তিনি বলেন, রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলেছেনঃ কবরের উপর তোমরা বসবে না এবং কবরকে সামনে রেখে নামাজ আদায় করিবে না।

-সহীহ, আল আহকাম [২০৯, ২১০], তাহযীরুস সাজিদ [৩৩], মুসলিম। আবু হুরাইরা, আমর ইবনি হাযম ও বাশীর ইবনিল খাসাসিয়া [রাদি.] হইতেও এ অনুচ্ছেদে হাদীস বর্ণিত আছে। উপরের হাদীসের মত আবদুল্লাহ ইবনিল মুবারাক হইতেও একটি সনদ সূত্রে হাদীস বর্ণিত হয়েছে। – এই হাদীসটির তাহকিকঃ সহীহ হাদীস

১০৫১. ওয়ালীদ ইবনি মুসলিম হইতে বর্ণীতঃ

আলী ইবনি হুজর এবং আবু আম্মার উভয়েই ওয়ালীদ ইবনি মুসলিম হইতে, তিনি আব্দুর রাহমান ইবনি ইয়ামীদ হইতে, তিনি বুসর ইবনি উবাইদুল্লাহ হইতে, তিনি ওয়াসিলা ইবনিল আসকা হইতে, তিনি মারসাদ আল-গানাবী হইতে, তিনি নাবী [সাঃআঃ] হইতে উপরের হাদীসের মতই বর্ণনা করিয়াছেন।

-সহীহ, দেখুন পূর্বের হাদীস। এই সূত্রে আবু ইদরীসের নাম উল্লেখ নেই এবং এটাই সহীহ বর্ণনা। আবু ঈসা বলেন, ঈমাম বুখারী [রঃ] বলেছেন, ইবনিল মুবারাক সনদের মধ্যে আবু ইদরীস আল-খাওলানীর নাম ভুল বশত যোগ করিয়াছেন। এ ভাবেই অনেক বর্ণনাকারী হাদীসটি আবু ইদরীসের উল্লেখ না করেই বর্ণনা করিয়াছেন। ওয়াসিলা ইবনিল আসকা [রাদি.] হইতে বুসর ইবনি উবাইদুল্লাহ  হাদীস শুনেছেন। – এই হাদীসটির তাহকিকঃ সহীহ হাদীস

৫৮. অনুচ্ছেদঃ কবর পাকা করা, এতে ফলক লাগানো নিষেধ

১০৫২. জাবির [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

তিনি বলেন, কবর পাকা করিতে, তার উপর কোন কিছু লিখতে বা কিছু নির্মাণ করিতে এবং তা পদদলিত করিতে রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ] নিষেধ করিয়াছেন।

-সহীহ, আহকামুল জানা-য়িয [২০৪], তাহযীরস সাজিদ [৪০], ইরওয়া [৭৫৭], লিখতে নিষেধ করিয়াছেন ব্যতীত, মুসলিম। আবু ঈসা বলেন, এ হাদীসটি হাসান সহীহ। জাবির [রাদি.] হইতে আরো একাধিক সূত্রে এ হাদীসটি বর্ণিত হয়েছে। কবরকে কাদা দিয়ে লেপার পক্ষে হাসান বাসরীসহ একদল আলিম অনুমতি প্রদান করিয়াছেন। ঈমাম শাফি বলেছেন কাদা দিয়ে কবর লেপাতে কোন সমস্যা নেই। – এই হাদীসটির তাহকিকঃ সহীহ হাদীস

৫৯. অনুচ্ছেদঃ কবরস্থানে প্রবেশ করে যা বলিতে হইবে

১০৫৩. ইবনি আব্বাস [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

তিনি বলেছেন, রসুলুল্লাহ [সাল্লালাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম] মাদীনার গোরস্তানের নিকট দিয়ে যাচ্ছিলেন। তিনি কবরবাসীদের দিকে মুখ করে বললেনঃ

السَّلاَمُ عَلَيْكُمْ يَا أَهْلَ الْقُبُورِ يَغْفِرُ اللَّهُ لَنَا وَلَكُمْ أَنْتُمْ سَلَفُنَا وَنَحْنُ بِالأَثَرِ

“আসসালামু আলাইকুম ইয়া আহ্লাল কুবূর, ইয়াগফিরুল্লাহু লানা ওয়ালাকুম আনতুম সালাফুনা ওয়া নাহ্নু বিল আসার।”

যঈফ, মিশকাত [১৭৬৫] এ অনুচ্ছেদে বুরাইদা ও আইশা [রাদি.] হইতেও হাদীস বর্ণিত আছে। আবু ঈসা বলেনঃ ইবনি আব্বাস বর্ণিত এ হাদীসটি হাসান গারীব। আবু কুদাইনার নাম ইয়াহ্ইয়া, পিতার নাম মুহাল্লাব। আর আবু যাব্ইয়ানের নাম হুসাইন, পিতার নাম জুনদুব। – এই হাদীসটির তাহকিকঃ দুর্বল হাদীস

৬০. অনুচ্ছেদঃ কবর যিয়ারাত করার অনুমতি

১০৫৪. সুলাইমান ইবনি বুরাইদা [রঃ] হইতে তার পিতা হইতে বর্ণীতঃ

তিনি বলেন, রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলেছেনঃ আমি তোমাদেরকে কবর যিয়ারাত করিতে নিষেধ করেছিলাম। মুহাম্মাদ [সাঃআঃ]-কে তাহাঁর মায়ের কবর যিয়ারাত করার অনুমতি দেয়া হয়েছে। সুতরাং তোমরা কবর যিয়ারাত কর। কেননা, তা আখিরাতের কথাকে মনে করিয়ে দেয়।

-সহিহ, আল আহকাম [১৭৮, ১৮৮], মুসলিম। আবু সাঈদ, ইবনি মাসউদ, আনাস, আবু হুরাইরা ও উম্মু সালামা [রাদি.] হইতেও এ অনুচ্ছেদে হাদীস বর্ণিত আছে। বুরাইদার হাদীসটিকে আবু ঈসা হাসান সহী্হ্ বলেছেন। এ হাদীস অনুযায়ী আলিমগণ আমল করেন। কবর যিয়ারাত করিতে তাহাদের মতে কোন দোষ নেই। এই মত দিয়েছেন ইবনিল মুবারাক, শাফিঈ, আহমাদ ও ইসহাক [রঃ]। – এই হাদীসটির তাহকিকঃ সহীহ হাদীস

৬১. অনুচ্ছেদঃ [মৃত ব্যক্তিকে মৃত্যু স্থলে কবর দেয়া প্রসঙ্গে]

১০৫৫. আবদুল্লাহ ইবনি আবু মুলাইকা [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

তিনি বলেছেন, আবদুর রহমান ইবনি আবু বকর [রাদি.] হুবশী নামক স্থানে মারা গেলেন। পরে তাকে মক্কায় এনে এখানে কবর দেয়া হল। আইশা [রাদি.] মক্কায় এসে [ভাই] আবদুর রহমান ইবনি আবু বাক্রের কবর যিয়ারাতে গেলেন। তিনি কবরের পাশে দাঁড়িয়ে নিম্নোক্ত কবিতা আবৃত্তি করেনঃ

“আমরা দুজন জাযীমার দুই সহচর দীর্ঘকাল কাটিয়েছি একসাথে এমনকি বলা হত আমরা কখনো বিচ্ছিন্ন হব না কিন্তু যখন পৃথক হলাম আমি মালিকের থেকে মনে হচ্ছে এক রাতও কাটাইনি একসাথে।” তারপর তিনি বলেন, আল্লাহ্ তাআলার কসম! আমি যদি হাযির থাকতাম তবে আপনার মউতের জায়গাতেই আপনাকে দাফন করা হত। আমি যদি আপনার দাফনের সময় হাযির থাকতাম, তবে আমি আপনার কবর যিয়ারাতে আসতাম না। যঈফ, মিশকাত [১৭১৮] – এই হাদীসটির তাহকিকঃ দুর্বল হাদীস

৬২. অনুচ্ছেদঃ কবর যিয়ারাত করা মহিলাদের জন্য মাকরূহ্

১০৫৬. আবু হুরাইরা [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

কবর যিয়ারাতকারী মহিলাদের রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ] অভিসম্পাত করিয়াছেন।

-হাসান, ইবনি মাজাহ হাদীস নং-[১৫৭৬]। ইবনি আব্বাস ও হাস্সান ইবনি সাবিত [রাদি.] হইতেও এ অনুচ্ছেদে হাদীস বর্ণিত আছে। এ হাদীসটিকে আবু ঈসা হাসান সহী্হ্ বলেছেন। একদল বিশেষজ্ঞ আলিম মনে করেন, রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ] কবর যিয়ারাতের অনুমতি দেওয়ার পূর্বেকার হাদীস এটি। তিনি কবর যিয়ারাতের অনুমতি দেওয়ার পর এই অনুমতির মধ্যে নারী-পুরুষ সকলেই অন্তর্ভুক্ত। কোন কোন আলিম মনে করেন, স্ত্রীলোকদের মাঝে অল্প ধৈর্য এবং বেশি অস্থিরতা থাকার জন্যে রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ] তাহাদের কবর যিয়ারাত অপছন্দ করিয়াছেন। – এই হাদীসটির তাহকিকঃ হাসান হাদীস

৬৩. অনুচ্ছেদঃ মৃত ব্যক্তির প্রশংসা বর্ণনা করা

১০৫৭. ইবনি আব্বাস [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ] রাতের বেলা কবরে প্রবেশ করিলেন। তাহাঁর জন্য একটি আলো জ্বালানো হল। তিনি কিবলার দিক হইতে মৃতদেহ ধরলেন এবং বললেনঃ আল্লাহ তাআলা তোমায় রহম করুন! তুমি ছিলে বেশী নরমদিলের এবং বেশী কুরআন তিলাওয়াতকারী। তিনি তার [নামাযে] চারবার আল্লাহু আকবার বলিলেন।

যঈফ, মিশকাত [১৭০৬]তিনি রাত্রে কবরে প্রবেশ করিলেন এ অংশটুকু হাসান, আহকামুল জানায়িয। এ অনুচ্ছেদে জাবির ও ইয়াযীদ ইবনি সাবিত [রাদি.] হইতেও হাদীস বর্ণিত আছে। ইয়াযীদ [রাদি.] যাইদ ইবনি সাবিত [রাদি.]-এর অগ্রজ। আবু ঈসা বলেনঃ ইবনি আব্বাস [রাদি.] বর্ণিত হাদীসটি হাসান। একদল আলিম এ হাদীস অনুযায়ী আমল করিয়াছেন। তারা বলেন, মৃতকে কিবলার দিক হইতে কবরে নামাবে। আর একদল আলিমের মতে পায়ের দিক হইতে নামাতে হইবে। বেশীরভাগ বিশেষজ্ঞ আলিম রাতে মৃতদেহ দাফন করা জায়িয মনে করেন। – এই হাদীসটির তাহকিকঃ দুর্বল হাদীস

১০৫৮. আনাস ইবনি মালিক [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

তিনি বলেন, একটি মৃত ব্যক্তিকে রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ]-এর সামনে দিয়ে নিয়ে যাওয়া হচ্ছিল। লোকজন তার প্রশংসা করিল। রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ] বললেনঃ তার জন্য [জান্নাত] নির্ধারিত হয়ে গেল। এরপর তিনি বললেনঃ পৃথিবীতে তোমরা [মুমিনরা] আল্লাহ্ তাআলার সাক্ষী।

-সহীহ, ইবনি মাজাহ হাদীস নং-[১৪৯১], বুখারী, মুসলিম। উমার, কাব ইবনি উজরা ও আবু হুরাইরা [রাদি.] হইতেও এ অনুচ্ছেদে হাদীস বর্ণিত আছে। আবু ঈসা বলেন, আনাস [রাদি.] হইতে বর্ণিত হাদীসটি হাসান সহিহ। – এই হাদীসটির তাহকিকঃ সহীহ হাদীস

১০৫৯. আবুল আসওয়াদ আদ-দীলী [রঃ] হইতে বর্ণীতঃ

তিনি বলেন, আমি মাদীনাতে এসে উমার ইবনিল খাত্তাব [রাদি.]-এর নিকট গিয়ে বসলাম। [আমাদের সামনে দিয়ে] লোকেরা একটি লাশ নিয়ে যাচ্ছিল। তারা তার ভালো গুণাবলীর প্রশংসা করছিল। উমার [রাদি.] বলিলেন, নির্ধারিত হয়ে গেল। তাকে আমি প্রশ্ন করলাম, কি নির্ধারিত হলো? তিনি বলিলেন, রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ] যা বলেছেন আমি শুধু তাই বলেছি। তিনি বলেছেনঃ তিনজন লোকও যদি কোন মুসলমানের পক্ষে উত্তম সাক্ষী দেয় তাহলে তার জন্য জান্নাত নির্ধারিত হয়ে যায়। উমার [রাদি.] বলেন, আমরা প্রশ্ন করলাম, দুজন লোক যদি এমন সাক্ষী দেয়? তিনি বললেনঃ দুজন লোক [সাক্ষী] দিলেও। উমার [রাদি.] বলেন, তারপর একজনের সাক্ষ্যের কথা আমরা প্রশ্ন করিনি।

-সহীহ, আল আহকাম [৪৫], বুখারী। আবু ঈসা বলেন, এ হাদীসটি হাসান সহিহ। আবুল আসওয়াদের নাম যা-লিম, পিতা আমর এবং দাদা সুফিয়ান। – এই হাদীসটির তাহকিকঃ সহীহ হাদীস

৬৪. অনুচ্ছেদঃ যে ব্যক্তির শিশু সন্তান মারা যায় সে ব্যক্তির সাওয়াব

১০৬০. আবু হুরাইরা [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলেছেনঃ কোন মুসলমান ব্যক্তির তিনটি শিশু সন্তান মারা গেলে তাকে জাহান্নামের আগুন স্পর্শ করিবে না; তবে শপথ ভঙ্গ করে থাকলে [স্পর্শ করিবে]।

-সহীহ ইবনি মাজাহ হাদীস নং-[১৬০৩]। উমার, মুআয, কাব ইবনি মালিক, উতবা ইবনি আবদ, উম্মু সুলাইম, জাবির, আনাস, আবু যার, ইবনি মাসউদ, আবু সালাবা আল-আশজাঈ, ইবনি আব্বাস, উকবা ইবনি আমির, আবু সাঈদ এবং কুররা ইবনি ইয়াস আল-মুযানী [রাদি.] হইতেও এ অনুচ্ছেদে হাদীস বর্ণিত আছে। রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ]-এর এই একটি মাত্র হাদীসই আবু সালাবা হইতে বর্ণিত আছে। ইনি আবু সালাবা আল-খুশানী নন। আবু হুরাইরার হাদীসটিকে আবু ঈসা হাসান সহিহ বলেছেন। – এই হাদীসটির তাহকিকঃ সহীহ হাদীস

১০৬১. আবদুল্লাহ ইবনি মাসউদ [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

তিনি বলেন, রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলেছেনঃ যে ব্যক্তি তিনটি অপ্রাপ্তবয়স্ক সন্তান [আল্লাহ্ তাআলার কাছে] পাঠিয়েছে, তারা তার জন্য [জাহান্নামের বিরুদ্ধে] সুরক্ষিত কেল্লা হইবে। আবু যার [রাদি.] বলিলেন, আমি দুটি সন্তান আগে পাঠিয়েছি। তিনি বললেনঃ দুটি পাঠালেও। কুরআন বিশেষজ্ঞদের নেতা উবাই ইবনি কাব [রাদি.] বলিলেন, আমি একটি আগে পাঠিয়েছি? তিনি বললেনঃ একটি পাঠালেও। কিন্তু এটা শুধু তার জন্য যে প্রথম চোটেই সহিষ্ণুতা অবলম্বন করেছে।

যঈফ, ইবনি মাজাহ হাদীস নং-[১৬০৬] আবু ঈসা বলেন, এ হাদীসটি গারীব। আবু উবাইদা [রাহঃ] তার পিতার কাছে হাদীস শুনেননি। – এই হাদীসটির তাহকিকঃ দুর্বল হাদীস

১০৬২. ইবনি আব্বাস [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

তিনি রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ]-কে বলিতে শুনেছেনঃ আমার উম্মাতের মধ্যে যার দুটি মৃত সন্তান থাকিবে, তাহাদের প্রতিদানে আল্লাহ তাআলা তাকে জান্নাতে প্রবেশ করাবেন। আইশা [রাদি.] তাঁকে প্রশ্ন করিলেন, আপনার উম্মাতের মধ্যে যার একটি মৃত সন্তান থাকিবে? তিনি বললেনঃ হে কল্যাণময়ী! যার এমন একটি সন্তান থাকিবে তাকেও। তিনি আবার প্রশ্ন করিলেন, আপনার উম্মাতের মধ্যে যার কোন অগ্রগামী সন্তান নেই? তিনি বললেনঃ আমিই আমার উম্মাতের জন্য অগ্রগামী। কেননা আমার ইন্তেকালে তারা যে কষ্ট পাবে তেমন আর কারো ইন্তেকালে পাবে না।

যঈফ, তালীকুর রাগীব [৩/৯৩], মিশকাত [১৭৩৫] আবু ঈসা বলেন, এ হাদীসটি হাসান গারীব। কেননা আমরা এ হাদীসটি শুধুমাত্র আবদু রব্বিহি ইবনি বারিকের সূত্রেই জেনেছি। একাধিক মুহাদ্দিস তার নিকট হইতে এ হাদীসটি বর্ণনা করিয়াছেন। আহ্মাদ ইবনি সাঈদ-হাব্বান ইবনি হিলাল হইতে তিনি আবদে রব্বিহির সূত্রে উপরের হাদীসের মতই হাদীস বর্ণনা করিয়াছেন। সিমাক ইবনিল ওয়ালীদ, তিনি হলেন আবু যুমাইল হানাফী। – এই হাদীসটির তাহকিকঃ দুর্বল হাদীস

৬৫. অনুচ্ছেদঃ শহীদগণের বর্ণনা

১০৬৩. আবু হুরাইরা [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলেছেনঃ শহীদ পাঁচ প্রকারেরঃ মহামারির কারণে যে লোক মারা যায়, যে পেটের অসুখের কারণে মারা যায়, পানিতে ডুবে যে লোক মারা যায়, চাপা পড়ে যে লোক মারা যায় এবং যে লোক আল্লাহ তাআলার রাস্তায় [যুদ্ধক্ষেত্রে] শহীদ হয়।

-সহীহ, আল আহকাম [৩৮] বুখারী, মুসলিম৷ আনাস, সাফওয়ান ইবনি উমাইয়্যা, জাবির ইবনি আতীক, খালিদ ইবনি উরফুতা, সুলাইমান ইবনি সুরাদ, আবু মূসা ও আইশা [রাদি.] হইতেও এ অনুচ্ছেদে হাদীস বর্ণিত আছে। আবু হুরাইরা [রাদি.] হইতে বর্ণিত হাদীসটিকে আবু ঈসা হাসান সহিহ বলেছেন। – এই হাদীসটির তাহকিকঃ সহীহ হাদীস

১০৬৪. আবু ইসহাক আস-সাবীঈ [রঃ] হইতে বর্ণীতঃ

তিনি বলেন, খালিদ ইবনি উরফুতা [রাদি.]-কে সুলাইমান ইবনি সুরাদ [রাদি.] অথবা সুলাইমান [রাদি.]-কে খালিদ [রাদি.] প্রশ্ন করিলেন, আপনি কি রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ]-কে একথা বলিতে শুনেছেনঃ “যে লোককে পেটের পীড়া মৃত্যু দিয়েছে কবরে সে লোককে কোন রকম শাস্তি দেয়া হইবে না”? তাহাদের একজন অন্যজনকে বলিলেন, হ্যাঁ।

-সহীহ, আল আহকাম [৩৮]। আবু ঈসা বলেন, এ অনুচ্ছেদে এ হাদীসটি হাসান গারীব। অন্য সূত্রেও এটি বর্ণিত হয়েছে। – এই হাদীসটির তাহকিকঃ সহীহ হাদীস

৬৬. অনুচ্ছেদঃ মহামারীতে আক্রান্ত এলাকা হইতে পালানো নিষেধ

১০৬৫. উসামা ইবনি যাইদ [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

মহামারী প্রসঙ্গে রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ] আলোচনা করিলেন এবং বললেনঃ যে গযব বা শাস্তি বানী ইসরাঈলের এক গোষ্ঠীর উপর এসেছিলো, তার বাকী অংশই হচ্ছে মহামারী। অতএব, কোথাও মহামারীর দেখাদিলে এবং সেখানে তোমরা অবস্থানরত থাকলে সে জায়গা হইতে চলে এসো না। অপরদিকে কোন এলাকায় এটা দেখা দিলে এবং সেখানে তোমরা অবস্থান না করলে সে জায়গাতে যেও না।

-সহীহঃ বুখারী, মুসলিম। সাদ, খুযাইমা ইবনি সাবিত, আবদুর রাহমান ইবনি আওফ, জাবির ও আইশা [রাদি.] হইতেও এ অনুচ্ছেদে হাদীস বর্ণিত আছে। উসামা ইবনি যাইদের হাদীসটিকে আবু ঈসা হাসান সহিহ বলেছেন। – এই হাদীসটির তাহকিকঃ সহীহ হাদীস

৬৭. অনুচ্ছেদঃ আল্লাহ্ তাআলার সাথে সাক্ষাত লাভকে যে লোক পছন্দ করে আল্লাহ্ তাআলাও তার সাক্ষাত লাভকে পছন্দ করেন

১০৬৬. উবাদা ইবনিস সামিত [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলেছেনঃ যে লোক আল্লাহ্ তাআলার সাক্ষাত লাভ করা পছন্দ করে, তার সাথে সাক্ষাত করিতে আল্লাহ্ তাআলাও পছন্দ করেন। আল্লাহ্ তাআলার সাথে সাক্ষাত করিতে যে লোক পছন্দ করে না, তার সাথে সাক্ষাত করিতে আল্লাহ্ তাআলাও পছন্দ করেন না।

-সহীহঃ বুখারী, মুসলিম। আবু মূসা, আবু হুরাইরা ও আইশা [রাদি.] হইতেও এ অনুচ্ছেদে হাদীস বর্ণিত আছে। উবাদা ইবনিস সা-মিত [রাদি.] হইতে বর্ণিত হাদীসটিকে আবু ঈসা হাসান সহিহ বলেছেন। – এই হাদীসটির তাহকিকঃ সহীহ হাদীস

১০৬৭. আইশা [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

তিনি উল্লেখ করিয়াছেন যে, রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলেছেনঃ আল্লাহ্ তাআলার সাথে সাক্ষাত করিতে যে লোক পছন্দ করে তার সাথে সাক্ষাত করিতে আল্লাহ্ তাআলাও পছন্দ করেন। আল্লাহ্ তাআলার সাথে সাক্ষাত করিতে যে লোক পছন্দ করে না, তার সাথে সাক্ষাত করাকে আল্লাহ্ তাআলাও পছন্দ করেন না। আইশা [রাদি.] বলেন, আমি বললাম, হে আল্লাহর রাসূল! মৃত্যুকে তো আমরা সবাই অপছন্দ করি। তিনি বললেনঃ এর অর্থ তা নয়, বরং যখন আল্লাহ্ তাআলার রাহমাত, তাহাঁর সন্তোষ ও তাহাঁর জান্নাতের সুসংবাদ কোন মুমিন লোককে দেয়া হয় তখন সে লোক আল্লাহ্‌র সাথে সাক্ষাত করিতে ইচ্ছা করে এবং তার সাথে সাক্ষাত করাকে আল্লাহ্ তাআলাও পছন্দ করেন। অপরপক্ষে যখন কাফির লোককে আল্লাহ্‌র নির্ধারিত আযাব ও তাহাঁর গযবের দুঃসংবাদ দেয়া হয় তখন আল্লাহ্ তাআলার সাথে সাক্ষাত করাকে সে লোক পছন্দ করে না এবং তার সাথে সাক্ষাত করাকে আল্লাহ্ তাআলাও পছন্দ করেন না।

-সহীহ, ইবনি মা-জাহ [৪২৬৪], বুখারী, মুসলিম। এ হাদীসটিকে আবু ঈসা হাসান সহীহ বলেছেন। – এই হাদীসটির তাহকিকঃ সহীহ হাদীস

৬৮. অনুচ্ছেদঃ আত্মহত্যাকারীর [জানাযার নামাজ] প্রসঙ্গে

১০৬৮. জাবির ইবনি সামুরা [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

কোন এক লোক আত্মহত্যা করলে রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ] তার জানাযা আদায় করেননি।

-সহীহ, ইবনি মা-জাহ [১৫২৬], মুসলিম। এ হাদীসটিকে আবু ঈসা হাসান সহিহ বলেছেন। আলিমদের মাঝে আত্মহত্যাকারীর জানাযা আদায়ের ব্যাপারে মতের অমিল আছে। একদল আলিম বলেন, কিবলার দিকে ফিরে যেসব লোক নামাজ আদায় করে তাহাদের ও আত্মহত্যাকারীর জানাযা আদায় করা হইবে। এই মতের প্রবক্তা হচ্ছেন সুফিয়ান সাওরী ও ইসহাক [রঃ]। ঈমাম আহমাদ বলেন, আত্মহত্যাকারীর জানাষার নামাজ ঈমাম সাহেব আদায় করবেন না, তবে অন্যান্য লোকেরা তা আদায় করিবে। – এই হাদীসটির তাহকিকঃ সহীহ হাদীস

৬৯. অনুচ্ছেদঃ ঋণগ্রস্ত লোকের জানাযা

১০৬৯. আবদুল্লাহ ইবনি আবু কাতাদা [রঃ] হইতে তার পিতা হইতে বর্ণীতঃ

কোন এক মৃত ব্যক্তিকে রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ]-এর নিকট জানাযার উদ্দেশ্যে আনা হল। রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ] বললেনঃ তোমরা তোমাদের সাথীর জানাযা আদায় কর; কেননা, তার ঋণ [অপরিশোধিত অবস্থায়] আছে। আবু কাতাদা [রাদি.] বলিলেন, তার দেনা পরিশোধ করার দায়িত্ব আমার। রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ] বললেনঃ তুমি তা পরিশোধ করে দেবে তো? তিনি বলিলেন, অবশ্যই পরিশোধ করব। তারপর তিনি সে ব্যক্তির জানাযার নামাজ আদায় করিলেন।

-সহিহ, ইবনি মা-জাহ [২৪০৭], বুখারী, মুসলিম। জাবির, সালামা ইবনিল আকওয়া ও আসমা বিনতু ইয়াযীদ [রাদি.] হইতেও এ অনুচ্ছেদে হাদীস বর্ণিত আছে। আবু কাতাদাহ [রাদি.] হইতে বর্ণিত হাদীসটিকে আবু ঈসা হাসান সহী্হ্ বলেছেন। – এই হাদীসটির তাহকিকঃ সহীহ হাদীস

১০৭০. আবু হুরাইরা [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

ঋণগ্রস্ত মৃত ব্যক্তিকে রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ]-এর নিকট নিয়ে আসা হলে তিনি প্রশ্ন করিতেন, তার ঋণ পরিশোধ করার মত কোন কিছু রেখে গেছে কি এ ব্যক্তি? সে লোক ঋণ পরিশোধ করার মত সম্পদ রেখে গেছে বলা হলে তবে তিনি তার জানাযার নামাজ আদায় করিতেন। অন্যথায় তিনি মুসলমানদের বলিতেনঃ তোমাদের ভাইয়ের জানাযার নামাজ তোমরা আদায় কর। তারপর তাঁকে আল্লাহ তাআলা অসংখ্য বিজয় দিলে তিনি দাঁড়িয়ে বললেনঃ মুমিনদের জন্য তাহাদের নিজেদের চাইতেও আমি বেশি কল্যাণকামী। অতএব, মুমিনদের মাঝে কোন লোক যদি ঋণগ্রস্ত হয়ে মারা যায় তবে তা পরিশোধ করার দায়িত্ব আমার। আর ধন-সম্পদ রেখে যে ব্যক্তি মারা যায় তা তার ওয়ারিসদের প্রাপ্য।

-সহীহ, ইবনি মা-জাহ [২৪১৫], বুখারী, মুসলিম। এ হাদীসটিকে আবু ঈসা হাসান সহিহ বলেছেন। উপরোক্ত হাদীসের মতই লাইস ইবনি সাদের সূত্রে ইয়াহইয়া ইবনি বুকাইর ও অন্যরা বর্ণনা করিয়াছেন। – এই হাদীসটির তাহকিকঃ সহীহ হাদীস

৭০. অনুচ্ছেদঃ কবরের শাস্তি প্রসঙ্গে

১০৭১. আবু হুরাইরা [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

তিনি বলেন, রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলেছেনঃ মৃত লোককে বা তোমাদের কাউকে যখন কবরের মধ্যে রাখা হয় তখন কালো বর্ণের এবং নীল চোখ বিশিষ্ট দুজন ফেরেশতা আসেন তার নিকট। তাহাদের মধ্যে একজনকে মুনকার এবং অন্যজনকে নাকীর বলা হয়। তারা উভয়ে [মৃত ব্যক্তিকে] প্রশ্ন করেনঃ তুমি এ ব্যক্তির [রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ]-এর] প্রসঙ্গে কি বলিতে? মৃত ব্যক্তিটি [যদি মুমিন হয় তাহলে] পূর্বে যা বলত তাই বলবেঃ তিনি আল্লাহর বান্দা ও তাহাঁর রাসূল। আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, আল্লাহ তাআলা ব্যতীত আর কোন মাবূদ নেই এবং মুহাম্মাদ [সাঃআঃ] তাহাঁর বান্দা ও রাসূল। তারা উভয়ে তখন বলবেন, আমরা তো জানতাম তুমি একথাই বলবে। তারপর সে ব্যক্তির কবর দৈর্ঘ্য-প্রস্থে সত্তর গজ করে প্রশস্ত করা হইবে এবং তার জন্য এখানে আলোর ব্যবস্থা করা হইবে। তারপর সে লোককে বলা হইবে, তুমি ঘুমিয়ে থাক। তখন সে বলবে, আমার পরিবার-পরিজনকে সুসংবাদ দেওয়ার জন্য আমি তাহাদের নিকট ফিরে যেতে চাই। তারা উভয়ে বলবেন, বাসর ঘরের বরের মত তুমি এখানে এমন গভীর ঘুম দাও, যাকে তার পরিবারের সবচাইতে প্রিয়জন ব্যতীত আর কোন ব্যক্তি জাগিয়ে তুলতে পারে না। অবশেষে আল্লাহ তাআলা কিয়ামাতের দিন তাকে তার বিছানা হইতে জাগিয়ে তুলবেন। মৃত লোকটি যদি মুনাফিক হয় তাহলে [প্রশ্নের উত্তরে] বলবে, তার প্রসঙ্গে লোকেরা একটা কথা বলত আমিও তাই বলতাম। এর বেশি কিছুই আমি জানি না। ফেরেশতা দুজন তখন বলবেন, আমরা জানতাম, এ কথাই তুমি বলবে। তারপর যমীনকে বলা হইবে, একে চাপ দাও। সে লোককে এমন শক্ত করে যমীন চাপা দেবে যে, তার পাঁজরের হাড়গুলো পরস্পরের মাঝে ঢুকে পরবে। [কিয়ামাতের দিন] আল্লাহ তাকে তার এ বিছানা হইতে উঠানো পর্যন্ত সে লোক এভাবেই আযাব পেতে থাকিবে।

-হাসান, মিশকাত [১৩০], সহীহাহ্ [১৩৯১]। আলী, যাইদ ইবনি সাবিত, ইবনি আব্বাস, বারাআ ইবনি আযিব, আবু আইয়ূব, আনাস, জাবির, আইশা ও আবু সাঈদ [রাদি.] সকলেই এ অনুচ্ছেদে রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ] হইতে কবরের শাস্তি সম্পর্কিত হাদীস বর্ণনা করিয়াছেন। আবু হুরাইরা [রাদি.] হইতে বর্ণিত হাদীসটিকে আবু ঈসা হাসান গারীব বলেছেন। – এই হাদীসটির তাহকিকঃ হাসান হাদীস

১০৭২. ইবনি উমার [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

তিনি বলেন, রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলেছেনঃ কোন লোক মারা গেলে তার সামনে সকাল ও সন্ধ্যায় তার [আখিরাতের] বাসস্থান তুলে ধরা হয়। সে লোক জান্নাতে বসবাসকারীদের অন্তর্ভুক্ত হলে তাকে জান্নাতের জায়গা দেখানো হয়। আর যদি সে লোক জাহান্নাম বাসীদের অন্তর্ভুক্ত হয় তাহলে তাকে জাহান্নামীদের জায়গা দেখানো হয়। তারপর বলা হয়, তোমার থাকার জায়গা এটাই। তোমাকে কিয়ামাতের দিন আল্লাহ তাআলা এখানে পাঠাবেন।

-সহিহ বুখারী শরীফ ও মুসলিম শরীফ। এ হাদীসটিকে আবু ঈসা হাসান সহিহ বলেছেন। – এই হাদীসটির তাহকিকঃ সহীহ হাদীস

৭১. অনুচ্ছেদঃ বিপদগ্রস্ত ব্যক্তিকে সান্ত্বনা দেয়ার সাওয়াব

১০৭৩. আবদুল্লাহ [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

তিনি বলেন, নাবী [সাঃআঃ] বলেছেনঃ যে লোক দুর্দশাগ্রস্ত ব্যক্তির প্রতি সহানুভূতি প্রকাশ করে, তাকেও দুর্দশাগ্রস্তের সমান বদলা দেয়া হয়।

যঈফ, ইবনি মাজাহ হাদীস নং-[১৬০২] আবু ঈসা বলেন, এ হাদীসটি গারীব। শুধু আলী ইবনি আসিমের সূত্রেই আমরা হাদীসটি মারফূ হিসেবে জেনেছি। কিছু রাবী মুহাম্মাদ ইবনি সূকার সূত্রে এটা মাওকূফ হিসেবে বর্ণনা করিয়াছেন, মারফূ হিসেবে নয়। কথিত আছে যে, আলী ইবনি আসিম এই হাদীসের জন্যে সমালোচনার মুখোমুখি হয়েছেন। মুহাদ্দিসগণ তাকে দোষারোপ করিয়াছেন। – এই হাদীসটির তাহকিকঃ দুর্বল হাদীস

৭২. অনুচ্ছেদঃ জুমুআর দিন যে লোক মৃত্যু বরণ করে

১০৭৪. আবদুল্লাহ ইবনি আমর [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

তিনি বলেন, রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলেছেনঃ জুমুআর দিনে অথবা জুমুআর রাতে কোন মুসলমান ব্যক্তি যদি মৃত্যুবরণ করে তাহলে কবরের শাস্তি হইতে আল্লাহ তাকে রক্ষা করেন।

-হাসান, মিশকাত [১৩৬৭], আল আহকাম [৩৫]। এ হাদীসটিকে আবু ঈসা গারীব বলেছেন। তিনি আরও বলেছেন, এর সনদ পরস্পর সংযুক্ত নয়। কেননা আবদুল্লাহ ইবনি আমর [রাদি.]-এর নিকট হইতে রাবীআ ইবনি সাইফ  আব্দুল্লাহ ইবনি আমর হইতে কোন হাদীস শুনেছেন বলে আমাদের জানা নেই। মূলতঃ তিনি আবদুর রহমান আল-হুবুল্লীর সূত্রে আব্দুল্লাহ ইবনি আমর হইতে হাদীস বর্ণনা করেন। – এই হাদীসটির তাহকিকঃ হাসান হাদীস

৭৩. অনুচ্ছেদঃ তাড়াতাড়ি জানাযার ব্যবস্থা করা

১০৭৫. আলী ইবনি আবু তালিব [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ] তাকে বলেনঃ হে আলী! তিনটি কাজে দেরি করিবে না। নামাজ- যখন ওয়াক্ত হয়ে যায়; জানাযা- যখন উপস্থিত হয় এবং বিধবা- যখন তার যোগ্য পাত্র পাওয়া যায়।

যঈফ, মিশকাত [১৪৮৬] আবু ঈসা বলেন, এ হাদীসটি গারীব। আমরা এর সনদ পরস্পর সংযুক্ত আছে বলে মনে করি না। – এই হাদীসটির তাহকিকঃ দুর্বল হাদীস

৭৪. অনুচ্ছেদঃ বিপদগ্রস্তের প্রতি সহানুভূতি প্রদর্শনের ফাযীলাত

১০৭৬,. আবু বারযা [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

তিনি বলেন, রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলেছেনঃ যে লোক সন্তানহারা মহিলাকে সমবেদনা জানায় তাকে জান্নাতে একটি কারুকার্য খচিত চাদর পরিয়ে দেয়া হইবে।

যঈফ, মিশকাত [১৭৩৮] আবু ঈসা বলেন, এ হাদীসটি গারীব এবং এর সনদ মজবুত নয়। – এই হাদীসটির তাহকিকঃ দুর্বল হাদীস

৭৫. অনুচ্ছেদঃ জানাযা আদায়ে দুই হাত উঠানো [রাফউল ইয়াদাইন]

১০৭৭. আবু হুরাইরা [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ] এক জানাযা আদায়ে আল্লাহু আকবার বলিলেন এবং প্রথম তাকবীরেই শুধু হাত দুটোকে উঠালেন [রাফউল ইয়াদাইন করিলেন]। ডান হাতকে তিনি বাম হাতের উপর রাখলেন।

-হাসান, আল আহকাম [১১৫, ১১৬]। এ হাদীসটিকে আবু ঈসা গারীব বলেছেন। হাদীসটি শুধুমাত্র উল্লেখিত সূত্রেই আমরা জেনেছি। আলিমগণের মাঝে জানাযায় কাঁধ পর্যন্ত হাত উঠানো প্রসঙ্গে মতের অমিল রহিয়াছে। রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ]-এর বেশিরভাগ সাহাবী ও অপরাপর আলিমের মতে, জানাযায় প্রতি তাকবীরেই হাত দুটোকে উঠাতে হইবে। এরকম মত ইবনিল মুবারাক, শাফিঈ, আহমাদ ও ইসহাকেরও। অপর একদল বিশেষজ্ঞ আলিম তা শুধুমাত্র প্রথম তাকবীরের সময়ই করিতে হইবে বলেছেন। এই মত সুফিয়ান সাওরী ও কূফাবাসী আলিমগণের। ইবনিল মুবারাক বলেন, জানাযায় ডান হাত দিয়ে বাম হাতকে ধরবে না [দুই হাতই ঝুলিয়ে রাখবে]। অপর একদল আলিম বলেছেন, অন্যসব নামাযের অনুরূপ জানাযাতেও ডান হাত দিয়ে বাম হাতকে ধরবে। আবু ঈসা ডান হাত দিয়ে বাম হাত ধরাকেই উত্তম মনে করিয়াছেন। – এই হাদীসটির তাহকিকঃ হাসান হাদীস

৭৬. অনুচ্ছেদঃ রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ]-এর বাণীঃ মুমিন ব্যক্তির রূহ্ দেনা পরিশোধ না করা পর্যন্ত দেনার সাথে বন্ধক অবস্থায় থাকে

১০৭৮. আবু হুরাইরা [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

তিনি বলেন, রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলেছেনঃ মুমিন ব্যক্তির রূহ্ ঋণ পরিশোধ না করা পর্যন্ত তার ঋণের সাথে বন্ধক অবস্থায় থাকে।

-সহীহ, ইবনি মা-জাহ [২৪১৩]। – এই হাদীসটির তাহকিকঃ সহীহ হাদীস

১০৭৯. আবু হুরাইরা [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলেছেনঃ মুমিন ব্যক্তির রূ্হ্ ঋণ পরিশোধ না করা পর্যন্ত তার ঋণের সাথে বন্ধক থাকে।

-সহীহ, পূর্বের হাদীসের কারণে। এ হাদীসটিকে আবু ঈসা হাসান বলেছেন। পূর্বোক্ত হাদীসের তুলনায় এটা বেশি সহী্হ্। – এই হাদীসটির তাহকিকঃ সহীহ হাদীস

Comments

Leave a Reply