মুযদালিফা, মুহাসসির, জামরা ও কঙ্কর নিক্ষেপ এর পর দুআ
মুযদালিফা, মুহাসসির, জামরা ও কঙ্কর নিক্ষেপ এর পর দুআ >> সুনানে নাসাই শরিফের মুল সুচিপত্র দেখুন
পর্বঃ ২৪ঃ হজ্জের বিধি-বিধানসমূহ (৩০২৬-৩০৮৪)
১.পরিচ্ছেদঃ মুয্দালিফায় দুই নামাজ একত্রে আদায় করা
২.পরিচ্ছেদঃ মুযদালিফায় মহিলা এবং শিশুদেরকে আগে-ভাগে মনযিলে প্রেরণ করা
৩.পরিচ্ছেদঃ ভোরের পূর্বেই মুয্দালিফা হইতে নারীদের চলে যাওয়ার অনুমতি
৪.পরিচ্ছেদঃ মুযদালিফায় ফজরের সালাতের সময়
৫.পরিচ্ছেদঃ মুয্দালিফায় যে ব্যক্তি ফজরের নামাজ ইমামের সঙ্গে আদায় করিতে পারেনি
৬.পরিচ্ছেদঃ মুযদালিফায় তালবিয়া পাঠ করা
৭.পরিচ্ছেদঃ মুযদালিফা হইতে প্রস্থানের সময়
৮.পরিচ্ছেদঃ দূর্বলদের জন্য কুরবানীর দিন ফজরের নামাজ মিনায় আদায় করার অনুমতি
৯.পরিচ্ছেদঃ মুহাস্সির নামক উপত্যকায় [বাহন] দ্রুত চালান
১০.পরিচ্ছেদঃ [মুযদালিফা থেকে মিনার দিকে] যাওয়ার সময় তালবিয়া পড়া
১১.পরিচ্ছেদঃ কংকর কুড়িয়ে নেয়া
১২.পরিচ্ছেদঃ কংকর কোথা থেকে কুড়াবে ?
১৩.পরিচ্ছেদঃ নিক্ষেপের জন্য যে কংকর নিবে তার পরিমাণ
১৪.পরিচ্ছেদঃ জামরার উদ্দেশ্যে সওয়ার হয়ে গমন করা এবং মুহরিমের ছায়া গ্রহণ
১৫.পরিচ্ছেদঃ কুরবানীর দিন জামরাতুল –আকাবায় কংকর নিক্ষেপের সময়
১৬.পরিচ্ছেদঃ সূর্যোদয়ের আগে জামরাতুল আকাবায় কংকর মারার প্রতি নিষেধাজ্ঞা
১৭.পরিচ্ছেদঃ মহিলাদের জন্য এ বিষয়ে অনুমতি
১৮.পরিচ্ছেদঃ সন্ধ্যার পর কংকর মারা
১৯.পরিচ্ছেদঃ রাখালদের কংকর মারা
২০.পরিচ্ছেদঃ যে স্থান থেকে জামরাতুল আকাবায় কংকর মারা হয়
২১.পরিচ্ছেদঃ জামরায় ছুঁড়ে মারা কংকরের সংখ্যা
২২.পরিচ্ছেদঃ প্রত্যেকটি কংকর নিক্ষেপের সময় তাকবীর বলা
২৩.পরিচ্ছেদঃ জামারাতুল আকাবায় কংকর মারার সময় মুহরিমের তালবিয়া পাঠ বন্ধ করে দেয়া
২৪.পরিচ্ছেদঃ কংকর মারার পর দুআ
২৫.পরিচ্ছেদঃ কংকর মারার পর দুআ
১.পরিচ্ছেদঃ মুয্দালিফায় দুই নামাজ একত্রে আদায় করা
৩০২৬. আবু আইউব [রাঃআঃ] হইতে বর্ণিতঃ
রাসূলুল্রাহ্ [সাঃআঃ] মুয্দালিফায় মাগরিব এবং ইশার নামাজ একত্রে আদায় করেন।
হজ্জের বিধান হাদিসের তাহকিকঃ সহীহ হাদীস
৩০২৭. ইবনি মাসঊদ [রাঃআঃ] হইতে বর্ণিতঃ
নাবী [সাঃআঃ] মুয্দালিফায় মাগরিব এবং ইশার নামাজ একত্রে আদায় করেন।
হজ্জের বিধান হাদিসের তাহকিকঃ সহীহ হাদীস
৩০২৮. সালিম [রহমাতুল্লাহি আলাইহি] হইতে বর্ণিতঃ
রাসূলুল্রাহ্ [সাঃআঃ] মুয্দালিফায় মাগরিব ও ইশার নামাজ একত্রে আদায় করেন, একই ইকামতে, দুয়ের মধ্যে কোন নফল আদায় করেন নি এবং উভয় সালাতের কোনটির পরেও [কোন নফল নামাজ] আদায় করেন নি।
হজ্জের বিধান হাদিসের তাহকিকঃ সহীহ হাদীস
৩০২৯. ইবনি শিহাব [রাঃআঃ] হইতে বর্ণিতঃ
রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] মাগরিব ও ইশার নামাজ একত্রে আদায় করেন এবং দুই সালাতের মধ্যে কোন নফল আদায় করেন নি। মাগরিব আদায় করেন তিন রাকআত, ইশা আদায় করেন দুই রাকআত। আবদুল্রাহ্ ইবনি উমার [রাঃআঃ] -ও এরূপ একত্রে আদায় করিতেন, মহান মহিয়ান আল্লাহর সঙ্গে মিলিত হওয়া পর্যন্ত।
হজ্জের বিধান হাদিসের তাহকিকঃ সহীহ হাদীস
৩০৩০. ইবনি উমার [রাঃআঃ] হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেনঃ রাসূলুল্রাহ [সাঃআঃ] মুয্দালিফায় একই ইকামতে মাগরিব ও ইশার নামাজ একত্রে আদায় করেন।
হজ্জের বিধান হাদিসের তাহকিকঃ অন্যান্য
৩০৩১. কুরায়ব [রহমাতুল্লাহি আলাইহি] হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেনঃ আমি উসামা ইবনি যায়দ [রাঃআঃ] -কে প্রশ্ন করেছিলাম, তিনি আরাফার সন্ধ্যায় রাসূলুল্রাহ্ [সাঃআঃ]-এর পেছনে সওয়ার ছিলেন। আমি বললামঃ আপনারা কিরূপ করছিলেন? তিনি বললেনঃ আমরা পথ চলতে চলতে মুয্দালিফায় পৌঁছলাম। সেখানে নাবী [সাঃআঃ] উট বসিয়ে অবতরণ করিলেন এবং মাগরিবের নামাজ আদায় করিলেন। এরপর লোকদের কাছে লোক পাঠিয়ে সংবাদ দেয়া হলো। তাঁরাও তাহাদের [নিজ নিজ অবস্থানে] উট বসিয়ে দিলেন। রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ]-এর শেষ ইশার নামাজ আদায় করার পূর্বে তাঁরা আসবাবপত্র নামালেন না। তারপর তাঁরা আসবাবপত্র নামালেন এবং মনযিলে অবতরণ করিলেন। ভোরে আমি পায়ে হেঁটে কুরায়শদের অগ্রবর্তী দলের সঙ্গে রওনা হলাম। তখন ফযল [রাঃআঃ] নাবী [সাঃআঃ]-এর পেছনে একই বাহনে সওয়ার ছিল।
হজ্জের বিধান হাদিসের তাহকিকঃ সহীহ হাদীস
২.পরিচ্ছেদঃ মুযদালিফায় মহিলা এবং শিশুদেরকে আগে-ভাগে মনযিলে প্রেরণ করা
৩০৩২. উবায়দুল্লাহ ইবনি আবু ইযায়ীদ [রহমাতুল্লাহি আলাইহি] হইতে বর্ণিতঃ
আমি ইবনি আব্বাস [রাঃআঃ] -কে বলিতে শুনিয়াছি যে, আমি সে সব লোকের অন্তর্ভূক্ত ছিলাম যাদেরকে রাসূলুল্রাহ্ [সাঃআঃ] মুয্দালিফার রাতে বনূ হাশিমের দূর্বলগণের [মহিলা ও বালক] সঙ্গে প্রেরণ করেছিলেন।
হজ্জের বিধান হাদিসের তাহকিকঃ সহীহ হাদীস
৩০৩৩. ইবনি আব্বাস [রাঃআঃ] হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেনঃ আমি সে সব লোকের অন্তর্ভূক্ত ছিলাম, যাদেরকে রাসূলুল্রাহ্ [সাঃআঃ] মুয্দালিফার রাতে আগে ভাগে বনূ হাশিমের দূর্বলগণের সঙ্গে পাঠিয়েছিলেন।
হজ্জের বিধান হাদিসের তাহকিকঃ সহীহ হাদীস
৩০৩৪. ফযল [রাঃআঃ] হইতে বর্ণিতঃ
রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] বনূ হাশিমের দূর্বলগণকে আদেশ করেন যে, তারা যেন মুয্দালিফা থেকে আগে ভাগে চলে যায়।
হজ্জের বিধান হাদিসের তাহকিকঃ হাসান সহীহ
৩০৩৫. সালিম ইবনি শাওয়াল [রহমাতুল্লাহি আলাইহি] হইতে বর্ণিতঃ
নাবী [সাঃআঃ] তাঁকে ভোরের অন্ধকারে মুয্দালিফা হইতে মিনার দিকে চলে যেতে আদেশ করেন।
হজ্জের বিধান হাদিসের তাহকিকঃ সহীহ হাদীস
৩০৩৬. উম্মু হাবীবা [রাঃআঃ] হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেনঃ আমরা রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ]-এর সময়ে ভোরের অন্ধকারে মুয্দালিফা হইতে মিনার দিকে গমন করতাম।
হজ্জের বিধান হাদিসের তাহকিকঃ সহীহ হাদীস
৩.পরিচ্ছেদঃ ভোরের পূর্বেই মুয্দালিফা হইতে নারীদের চলে যাওয়ার অনুমতি
৩০৩৭. আয়েশা [রাঃআঃ] হইতে বর্ণিতঃ
রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] সাওদা [রাঃআঃ] -কে ভোরের পূর্বেই মুয্দালিফা হইতে চলে যাওয়ার অনুমতি দান করেন। কেননা তিনি ছিলেন একজন [মোটা ও] ধীর গতির মহিলা।
হজ্জের বিধান হাদিসের তাহকিকঃ সহীহ হাদীস
৪.পরিচ্ছেদঃ মুযদালিফায় ফজরের সালাতের সময়
৩০৩৮. আবদুল্রাহ্ [রাঃআঃ] হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেনঃ আমি রাসূলুল্রাহ্ [সাঃআঃ] -কে কখনও [অন্য দিন যে সময় নামাজ আদায় করিতেন, সে] নির্ধারিত সময় ব্যতীত নামাজ আদায় করিতে দেখিনি। মাগরিব ও ইশা ব্যতীত, যা তিনি আদায় করিয়াছেন মুয্দালিফায়। আর সেদিন তিনি ফজরের নামাজ আদায় করেন [পূর্ব] নির্ধারিত সময়ের পূর্বে।
হজ্জের বিধান হাদিসের তাহকিকঃ সহীহ হাদীস
৫.পরিচ্ছেদঃ মুয্দালিফায় যে ব্যক্তি ফজরের নামাজ ইমামের সঙ্গে আদায় করিতে পারেনি
৩০৩৯. উরওয়া ইবনি মুদাররিস [রাঃআঃ] হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেনঃ আমি রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] -কে মুয্দালিফায় অবস্থানরত অবস্থায় দেখেছি। তিনি বলেনঃ যে ব্যক্তি এখানে আমাদের সঙ্গে এই নামাজ আদায় করেছে, আমাদের সঙ্গে এখানে অবস্থান করেছে এবং এর আগের দিনে অথবা রাতে আরাফায় অবস্থান করেছে তার হজ্জ পূর্ণ হইয়াছে।
হজ্জের বিধান (কঙ্কর নিক্ষেপ) হাদিসের তাহকিকঃ সহীহ হাদীস
৩০৪০. উরওয়া ইবনি মুদাররিস [রাঃআঃ] হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেনঃ রাসূলুল্রাহ্ [সাঃআঃ] বলেছেনঃ যে ব্যক্তি ঈমাম এবং অন্যান্য লোকের সঙ্গে মুয্দালিফায় অবস্থান করিয়াছেন এবং পরে সেখান থেকে [মিনায়] প্রত্যাবর্তন করেছে, সে হজ্জ পেয়েছে। আর যে ব্যক্তি ঈমাম এবং লোকের সঙ্গে মুয্দালিফায় অবস্থান করেনি, সে হজ্জ পায় নি।১
{১} ঈমাম আবু হানীফা [রহমাতুল্লাহি আলাইহি]-এর মতে এরূপ ব্যক্তির উপর একটি দম ওয়াজিব।-অনুবাদক
হজ্জের বিধান হাদিসের তাহকিকঃ সহীহ হাদীস
৩০৪১. উরওয়া ইবনি মুদাররিস [রাঃআঃ] হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেনঃ আমি মুযদালিফায় নাবী [সাঃআঃ]-এর খেদমতে উপস্থিত হইয়া বললামঃ ইয়া রাসূলাল্লাহ্! আমি তায় গোত্রের পাহাড়দ্বয় হইতে আগমন করেছি, আর আমি কোন পাহাড়ে অবস্থান বাদ দেইনি; এমতাবস্থায় আমার কি হজ্জ আদায় হইয়াছে? রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] বললেনঃ যে ব্যক্তি আমাদের সঙ্গে এই নামাজ আদায় করেছে আর এর পূর্বে আরাফায় অবস্থান করেছে- দিনে [হোক] অথবা রাতে, তার হজ্জ পূর্ণ হইয়াছে এবং সে তার ময়লা বিদুরীত করেছে [ইহ্-রাম শেষ করেছে]। [এখন সে ইহরামে নিষিদ্ধ কার্যাদি চুল কাটা, নখ কাটা ইত্যাদি করিতে পারবে।]
হজ্জের বিধান হাদিসের তাহকিকঃ সহীহ হাদীস
৩০৪২. উরওয়া ইবনি মুদাররিস ইবনি আউস ইবনি হারিসা ইবনি লাম [রাঃআঃ হইতে বর্ণিতঃ
আমি মুয্দালিফায় রাসূলুল্রাহ্ [সাঃআঃ]-এর খিদমতে উপস্থিত হইয়া জিজ্ঞাসা করলামঃ আমার কি হজ্জ আদায় হইয়াছে? তিনি বললেনঃ যে ব্যক্তি আমাদের সঙ্গে এই নামাজ আদায় করেছে এবং এস্থানে অবস্থান করেছে, এর পূর্বে আরাফা হইতে প্রত্যাবর্তন করেছে -রাতে অথবা দিনে, তার হজ্জ আদায় হইয়াছে এবং সে তার ময়লা বিদুরীত করেছে [ইহরামের দায়িত্ব পূর্ণ করেছে]। [এখন হালাল হওয়ার জন্য যা করণীয়, তা পূর্ণ করিবে।]
হজ্জের বিধান হাদিসের তাহকিকঃ সহীহ হাদীস
৩০৪৩. উরওয়া ইবনি মুদাররিস তায়ী [রাঃআঃ] হইতে বর্ণিতঃ
আমি রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ]-এর খিদমতে উপস্থিত হইয়া আরয করলামঃ আমি তায়-এর পাহাড়দ্বয় হইতে আপনার খিদমতে হাযির হইয়াছি। আমার সওয়ারীকে খেয়ে ফেলেছি [ক্লান্ত করেছি] এবং নিজেও অনেক কষ্ট স্বীকার করেছি। এমন কোন পাহাড় নেই যাহার উপর আমি অবস্থান করিনি, আমার কি হজ্জ আদায় হইয়াছে? তিনি বললেনঃ যে ব্যক্তি এখানে আমাদের সঙ্গে ভোরের নামাজ আদায় করেছে, আর এর পূর্বে আরাফায় আগমন করেছে -সে ময়লা বিদুরীত করেছে [ইহ্-রামের কাজ সমাপ্ত করে চুল, গোঁফ, নখ ইত্যাদি কর্তন করার পর্যায়ে পৌঁছেছে] এবং সে তার হজ্জ পূর্ণ করেছে।
হজ্জের বিধান হাদিসের তাহকিকঃ সহীহ হাদীস
৩০৪৪. বুকায়র ইবনি আতা [রহমাতুল্লাহি আলাইহি] হইতে বর্ণিতঃ
আমি আবদুর রহমান ইবনি ইয়ামার দীলী [রাঃআঃ] -কে বলিতে শুনিয়াছি, তিনি বলেনঃ আমি আরাফায় নাবী [সাঃআঃ] -কে দেখেছি, তাহাঁর কাছে নাজদ হইতে কতিপয় লোক এসে তাহাদের একজনকে তারা প্রতিনিধি নিযুক্ত করে, সে তাঁকে হজ্জ সম্বন্ধে প্রশ্ন করলে, তিনি বলেনঃ হজ্জ হলো আরাফায় অবস্থান। যে ব্যক্তি মুযদালিফায় রাতে ভোরের সালাতের পূর্বে সেখানে আগমন করলো, সে তার হজ্জ পেল। মিনার দিন হচ্ছে [তিন দিন] যে ব্যক্তি দুই দিনের পর তাড়াতাড়ি চলে যায়, তার কেন পাপ নেই। আর যে ব্যক্তি দেরি করে তারও কোন পাপ নেই। তারপর তিনি একজন লোককে তাহাঁর পশ্চাতে আরোহণ করান, যিনি এ কথাগুলো লোকের মধ্যে প্রচার করছিলেন।
হজ্জের বিধান হাদিসের তাহকিকঃ সহীহ হাদীস
৩০৪৫. জাফর ইবনি মুহাম্মাদ [রহমাতুল্লাহি আলাইহি] হইতে বর্ণিতঃ
আমার পিতা বর্ণনা করিয়াছেন যে, আমরা জাবির ইবনি আবদুল্রাহ্ [রাঃআঃ]-এর কাছে আগমন করলাম, তিনি আমাদের কাছে হাদীস বর্ণনা করিলেন, রাসূলুল্রাহ্ [সাঃআঃ] বলেছেনঃ মুযদালিফার সমস্ত স্থানই মওকিফ বা অবস্থানের স্থান।
হজ্জের বিধান হাদিসের তাহকিকঃ সহীহ হাদীস
৬.পরিচ্ছেদঃ মুযদালিফায় তালবিয়া পাঠ করা
৩০৪৬. আবদুর রহমান ইবনি ইয়াযীদ [রহমাতুল্লাহি আলাইহি] হইতে বর্ণিতঃ
আমরা মুযদালিফায় ছিলাম। যাঁহার উপর সূরা বাকারা নাযিল হইয়াছে, তাঁকে এ স্থান
لَبَّيْكَ اللَّهُمَّ لَبَّيْكَ
[তালবিয়া] বলিতে শুনিয়াছি।
হজ্জের বিধান হাদিসের তাহকিকঃ সহীহ হাদীস
৭.পরিচ্ছেদঃ মুযদালিফা হইতে প্রস্থানের সময়
৩০৪৭. আবু ইসহাক [রহমাতুল্লাহি আলাইহি] হইতে বর্ণিতঃ
আমি আমর ইবনি মায়মূন [রহমাতুল্লাহি আলাইহি] -কে বলিতে শুনিয়াছি, তিনি বলেনঃ আমি মুযদালিফায় উমার [রাঃআঃ]-এর কাছে হাযির হলাম। তিনি বললেনঃ জাহিলী যুগে তারা সূর্যোদয়ের পূর্বে মুযদালিফা হইতে প্রস্থান করতো না। তারা বলতোঃ “হে সাবির! উদয় [উজ্জ্বল] হও! [সাবির পাহাড়ে সূর্য উদিত হওয়া পর্যন্ত অবস্থান কর।] আর রাসূলুল্রাহ্ [সাঃআঃ] তাহাদের বিরোধিতা করে সূর্যোদয়ের পূর্বেই মুযদালিফা থেকে প্রস্থান করেন।
হজ্জের বিধান হাদিসের তাহকিকঃ সহীহ হাদীস
৮.পরিচ্ছেদঃ দূর্বলদের জন্য কুরবানীর দিন ফজরের নামাজ মিনায় আদায় করার অনুমতি
৩০৪৮. আতা ইবনি আবু রাবাহ্ [রহমাতুল্লাহি আলাইহি] হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেনঃ রাসূলুল্রাহ্ [সাঃআঃ] আমাকে তাহাঁর পরিবারের দূর্বলদের সঙ্গে প্রেরণ করেন। আমরা ফজরের নামাজ মিনায় আদায় করি, এবং জামরায় কংকর নিক্ষেপ করি।
হজ্জের বিধান হাদিসের তাহকিকঃ সহীহ হাদীস
৩০৪৯. উম্মুল মুমিনীন আয়েশা [রাঃআঃ] হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেনঃ আমার বাসনা হয় যে, সাওদা [রাঃআঃ] যেরূপ রাসূলুল্রাহ্ [সাঃআঃ]-এর কাছ থেকে অনুমতি চেয়ে নিয়েছিলেন, আমিও যদি সেরূপ তাহাঁর কাছ থেকে অনুমতি চেয়ে নিতাম এবং ফজরের নামাজ মিনায় লোকের আগমনের পূর্বে আদায় করতাম। সাওদা [রাঃআঃ] ছিলেন মোটা মানুষ এবং ধীরগতি সম্পন্না। তিনি রাসূলুল্রাহ্ [সাঃআঃ]-এর কাছে অনুমতি প্রার্থনা করলে তিনি তাঁকে অনুমতি দেন। তিনি ফজরের নামাজ মিনায় আদায় করেন এবং লোকের আগমনের পূর্বেই কংকর মারেন।
হজ্জের বিধান হাদিসের তাহকিকঃ সহীহ হাদীস
৩০৫০. আতা ইবনি আবু রাবাহ্ [রহমাতুল্লাহি আলাইহি] হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেনঃ আসমা বিনত আবু বকর [রাঃআঃ]-এর এক আযাতকৃত গোলাম তাহাঁর কাছে বর্ণনা করিতে গিয়ে বলেছেন যে, আমি আসমা বিনত আবু বকর [রাঃআঃ]-এর সঙ্গে মিনায় [ভোর রাতের] অন্ধকারে গমন করলাম। আমি তাঁকে বললামঃ আমরা যে মিনায় অন্ধকারে এসে গেলাম। তিনি বললেনঃ আমরা এরূপ করতাম ঐ ব্যক্তির সঙ্গে, যিনি তোমার চাইতে উত্তম ছিলেন।
হজ্জের বিধান হাদিসের তাহকিকঃ সহীহ হাদীস
৩০৫১. উরওয়া [রহমাতুল্লাহি আলাইহি] হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেনঃ আমি উসামা ইবনি যায়দের সঙ্গে উপবিষ্ট ছিলাম, তখন তাঁকে প্রশ্ন করা হলো যে, রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] বিদায় হজ্জে মুযদালিফা থেকে ফেরার সময় কিরূপে পথ চলতেন? তিনি বলেনঃ তিনি তাহাঁর উটনী স্বাভাবিকভাবে চালাতেন, যখন কোন উন্মুক্ত স্থানে উপনীত হন, তখন সওয়ারী দ্রুত চালাতেন।
হজ্জের বিধান হাদিসের তাহকিকঃ সহীহ হাদীস
৩০৫২. ফযল ইবনি আব্বাস [রাঃআঃ] হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেনঃ রাসূলুল্রাহ্ [সাঃআঃ] লোকদের উদ্দেশ্যে বলিলেন, যখন তাঁরা সন্ধ্যায় আরাফা ত্যাগ করছিলেন আর মুযদালিফায় ভোরে, তোমরা ধীরস্থির ভাবে পথ অতিক্রম করিবে আর তখন তিনি তাহাঁর উটনীর লাগাম ধরে রেখেছিলেন। তারপর যখন তিনি মিনায় প্রবেশ করিলেন, অবতরণ করিলেন। যখন তিনি মুহাসসার নামক স্থানে অবতরণ করিলেন, তখন বললেনঃ তোমরা আংগুলে ছোঁড়ার কংকর সঙ্গে নাও, যা জামরায় মারতে হইবে। রাবী বলেন, রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] হাতে ইঙ্গিত করে বললেনঃ যেরূপ কংকর মানুষ সাধারণত মেরে থাকে।
হজ্জের বিধান হাদিসের তাহকিকঃ সহীহ হাদীস
৯.পরিচ্ছেদঃ মুহাস্সির নামক উপত্যকায় [বাহন] দ্রুত চালান
৩০৫৩. জাবির [রাঃআঃ] হইতে বর্ণিতঃ
নাবী [সাঃআঃ] মুহাসসির উপত্যকায় দ্রুত উট চালনা করেন।
হজ্জের বিধান হাদিসের তাহকিকঃ সহীহ লিগাইরিহি
৩০৫৪. জাফর ইবনি মুহাম্মাদ [রহমাতুল্লাহি আলাইহি] হইতে বর্ণিতঃ
আমি জাবির ইবনি আবদুল্রাহ্ [রাঃআঃ]-এর কাছে উপস্থিত হইয়া তাঁকে বললামঃ রাসূলুল্রাহ্ [সাঃআঃ]-এর হজ্জ সম্বন্ধে আমাকে অবহিত করুন। তিনি বললেনঃ রাসূলুল্রাহ্ [সাঃআঃ] সূর্য উদিত হওয়ার পূর্বেই মুযদালিফা ত্যাগ করেন এবং ফযল ইবনি আব্বাসকে তাহাঁর বাহনে তাহাঁর পেছনে বসিয়ে নেন, মুহাস্সিরে এসে তিনি তাহাঁর বাহনকে দ্রুতগতিতে পরিচালনা করেন। পরে তিনি সে পথ ধরে চলেন যা তোমাকে জামরায় কুবরায় [বড় শয়তান] পৌঁছে দেবে। এরপর তিনি বৃক্ষের নিকটের জামরায় উপনীত হন এবং সেখানে সাতটি কংকর নিক্ষেপ করেন। তিনি এগুলোর প্রত্যেকটি নিক্ষেপের সময় তাকবীর বলেন। তিনি [কংকর] নিক্ষেপ করেন উপত্যকার নিম্নভূমি থেকে।
হজ্জের বিধান হাদিসের তাহকিকঃ সহীহ হাদীস
১০.পরিচ্ছেদঃ [মুযদালিফা থেকে মিনার দিকে] যাওয়ার সময় তালবিয়া পড়া
৩০৫৫. ফযল ইবনি আব্বাস [রাঃআঃ] হইতে বর্ণিতঃ
তিনি নাবী [সাঃআঃ]-এর পেছনে সওয়ার ছিলেন, তিনি [নাবী করীম [সাঃআঃ]] জামরায় কংকর নিক্ষেপ করা পর্যন্ত তালবিয়া পাঠ করিতে থাকেন।
হজ্জের বিধান হাদিসের তাহকিকঃ সহীহ হাদীস
৩০৫৬. ইবনি আব্বাস [রাঃআঃ] হইতে বর্ণিতঃ
রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] জামরায় কংকর নিক্ষেপ করা পর্যন্ত [সর্বদা] তালবিয়া পাঠ করিয়াছেন।
হজ্জের বিধান হাদিসের তাহকিকঃ সহীহ হাদীস
১১.পরিচ্ছেদঃ কংকর কুড়িয়ে নেয়া
৩০৫৭. আবুল আলিয়া [রহমাতুল্লাহি আলাইহি] হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেনঃ ইবনি আব্বাস [রাঃআঃ] বলেন ঃ রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] আকাবার সকালে [জামরায় আকাবায় কংকর মারার সকালে- ১০ তারিখ] তার সওয়ারীতে উপবিষ্ট থেকে আমাকে বলেন ঃ এসো, আমার জন্য [কংকর] কুড়িয়ে দাও। এরপর আমি তার জন্য কয়েকটি কংকর তুলে নেই, যেগুলো ছিল দুই আংগুলে মারার কংকরের মত। যখন আমি সেগুলো তাহাঁর হাতে দিলাম। তখন তিনি বলিলেন ঃ এগুলোর মত [কংকর নিক্ষেপ করিবে]। সাবধান, দ্বীনের ব্যাপারে বাড়াবাড়ি করো না, কেননা তোমাদের পূর্বে যারা ছিল, ধর্মের ব্যাপারে বাড়াবাড়ি তাহাদের ধ্বংস করেছে।
হজ্জের বিধান (কঙ্কর নিক্ষেপ) হাদিসের তাহকিকঃ সহীহ হাদীস
১২.পরিচ্ছেদঃ কংকর কোথা থেকে কুড়াবে ?
৩০৫৮. আবদুল্লাহ ইবনি আব্বাস [রাঃআঃ] হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন ঃ রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] লোকদের উদ্দেশ্যে বলিলেন, যখন তারা সন্ধ্যায় আরাফা ও সকালে মুযদালিফা ত্যাগ করেন, তোমরা ধীর-স্থিরভাবে চল। তখন তিনি তার উটনীর লাগাম টেনে রাখেন। এরপর যখন তিনি মিনায় প্রবেশ করেন তখন তিনি অবতরণ করেন। মুহাসসির নামক স্থানে তিনি বলেন ঃ তোমরা খায়ক [দুই আংগুলে মারার ছোট] কংকর সাথে নাও, যা জামরায় মারতে হইবে। রাবী বলেন, রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] হাতে ইঙ্গিত করে বলেন ঃ যেরূপ কংকর মানুষ সাধারণত মেরে থাকে।
হজ্জের বিধান হাদিসের তাহকিকঃ সহীহ হাদীস
১৩.পরিচ্ছেদঃ নিক্ষেপের জন্য যে কংকর নিবে তার পরিমাণ
৩০৫৯. আবুল আলিয়া [রহমাতুল্লাহি আলাইহি] হইতে বর্ণিতঃ
আব্বাস [রাঃআঃ] থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন ঃ রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] আকাবার ভোরে তার সওয়ারীর উপর থেকে বলিলেনঃ এসো, আমার জন্য [কংকর] কুড়িয়ে নাও, তখন আমি তাহাঁর জন্য কয়েকটি কংকর কুড়িয়ে নেই। সেগুলো ছিল দুই আংগুলে ছুড়ে মারার কংকর। সেগুলো তার হাতে দিলাম। তিনি সেগুলো তাহাঁর হাতে নাড়াচাড়া করিতে লাগলেন এবং বলিলেন ঃ এগুলোর মত [কংকরই তোমরা নিক্ষেপ করিবে]। ইয়াহইয়া [রহমাতুল্লাহি আলাইহি] সেগুলোর মত কংকর তার হাতে নিয়ে নাড়াচাড়া করার অবস্থা বর্ণনা করিয়াছেন।
হজ্জের বিধান (কঙ্কর নিক্ষেপ) হাদিসের তাহকিকঃ সহীহ হাদীস
১৪.পরিচ্ছেদঃ জামরার উদ্দেশ্যে সওয়ার হয়ে গমন করা এবং মুহরিমের ছায়া গ্রহণ
৩০৬০. ইয়াহইয়া ইবনি হুসায়ন হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ]-এর হজ্জের বছর আমিও হজ্জ করি। বিলাল [রাঃআঃ] -কে দেখলাম, তার সওয়ারীর লাগাম ধরে টেনে চলছেন। আর উসামা ইবনি যায়দ [রাঃআঃ] তার উপর কাপড় উঁচু করে ধরে তাঁকে ছায়া দিচ্ছেন রৌদ্র তাপ থেকে রক্ষার জন্য। তখন তিনি ছিলেন মুহরিম। এরপর তিনি জামরায়ে আকাবায় কংকর মারেন এবং লোকদের সম্মুখে খুতবা দেন। তিনি আল্লাহর শোকর আদায় করেন, তার প্রশংসা করেন এবং একটি দীর্ঘ খুতবা দেন।
হজ্জের বিধান হাদিসের তাহকিকঃ সহীহ হাদীস
৩০৬১. কুদামা ইবনি আবদুল্লাহ [রাঃআঃ] হইতে বর্ণিতঃ
আমি রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] -কে তার সাহবা [সাদা ও লাল মিশ্রিত রংয়ের] উটনীর উপর থেকে কুরবানীর দিনে জামরাতুল আকাবায় কংকর মারতে দেখেছি। [বাহনকে বা পথচারীদের] পেটানো হচ্ছিল না, তাড়ানো হচ্ছিল না এবং সর সর ও বলা হচ্ছিল না।
হজ্জের বিধান (কঙ্কর নিক্ষেপ) হাদিসের তাহকিকঃ সহীহ হাদীস
৩০৬২. আবু যুবায়র [রহমাতুল্লাহি আলাইহি] হইতে বর্ণিতঃ
তিনি জাবির ইবনি আবদুল্লাহ [রাঃআঃ] -কে বলিতে শুনেছেন যে, আমি রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] -কে তাহাঁর উটনীর উপর থেকে জামরায় কংকর মারতে দেখেছি। তিনি বলিতেছিলেন ঃ হে লোক সকল! তোমরা তোমাদের হজ্জের মাসায়েল শিখে রাখ। আমি জানি না, হয়তো এ বছরের পর আমি আর হজ্জ করিতে পারবো না।
হজ্জের বিধান হাদিসের তাহকিকঃ সহীহ হাদীস
১৫.পরিচ্ছেদঃ কুরবানীর দিন জামরাতুল –আকাবায় কংকর নিক্ষেপের সময়
৩০৬৩. জাবির [রাঃআঃ] হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন ঃ রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] কুরবানীর দিন জামরায় কংকর মারেন প্রথম প্রহরে আর কুরবানীর দিনের পর তিনি কংকর মারেন সূর্য পশ্চিম দিকে ঢলে পড়ার পর।
হজ্জের বিধান (কঙ্কর নিক্ষেপ) হাদিসের তাহকিকঃ সহীহ হাদীস
১৬.পরিচ্ছেদঃ সূর্যোদয়ের আগে জামরাতুল আকাবায় কংকর মারার প্রতি নিষেধাজ্ঞা
৩০৬৪. ইবনি আব্বাস [রাঃআঃ] হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন ঃ রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] আমাদের অর্থাৎ আবদুল মুত্তালিব গোত্রের কিশোরদের গাধায় সওয়ার করিয়ে প্রেরণ করেন। আর আমাদের উরুদেশে মৃদু আঘাত করিতে করিতে বলেন ঃ হে আমার আদরের সন্তানরা! তোমরা সূর্যোদয়ের আগে জামরাতুল-আকাবায় কংকর মারবে না।
হজ্জের বিধান হাদিসের তাহকিকঃ সহীহ হাদীস
৩০৬৫. ইবনি আব্বাস [রাঃআঃ] হইতে বর্ণিতঃ
রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] তার পরিবার পরিজনকে আগেই পাঠিয়ে দিলেন, আর তাহাদের আদেশ দিলেন ঃ তোমরা সূর্যোদয়ের আগে জামরাতুল-আকাবায় আগে কংকর মারবে না।
হজ্জের বিধান হাদিসের তাহকিকঃ সহীহ হাদীস
১৭.পরিচ্ছেদঃ মহিলাদের জন্য এ বিষয়ে অনুমতি
৩০৬৬. আয়েশা বিনত তালহা [রহমাতুল্লাহি আলাইহি] হইতে বর্ণিতঃ
রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] তার এক স্ত্রীকে আদেশ করেন যে, যেন সে মুযদালফার রাতে মুযদালফা ত্যাগ করে জামরাতুল-আকাবায় গিয়ে সেখানে কংকর মারে এবং ভোরে মানযিলে ফিরে আসে। আতা [রহমাতুল্লাহি আলাইহি] মৃত্যুর পূর্ব পর্যন্ত এরূপ করিতেন।
হজ্জের বিধান হাদিসের তাহকিকঃ জইফ হাদীস
১৮.পরিচ্ছেদঃ সন্ধ্যার পর কংকর মারা
৩০৬৭. ইবনি আব্বাস [রাঃআঃ] হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন ঃ রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] -কে মিনার দিনগুলোতে প্রশ্ন করা হতো, [সে দিনের হজ্জের কার্যাবলীর ব্যাপারে] তিনি বলিতেনঃ কোন গুনাহ্ [অসুবিধা] নেই। এরপর এক ব্যক্তি প্রশ্ন করিলেনঃ আমি পশু কুরবানীর পূর্বে মাথা মুণ্ডন করেছি, তিনি বলিলেন ঃ [এখন] যবাই কর। কোন পাপ নেই। পরে এক ব্যক্তি জিজ্ঞাসা করিলেন ; আমি সন্ধ্যার পর কংকর মেরেছি। তিনি বলিলেন ঃ এতে কোন পাপ নেই।।{১}
{১} ফিলহাজের দশ তারিখে হাজীদের চারটি কাজ করিতে হয় এবং যেগুলো ক্রমানুসারে করিতে হয়। অন্যথায় দম বা ফিদয়া দিতে হয়। সেই চারটি কাজ হলো যথাক্রমে ঃ ১. জামারাতুল-আকাবাতে কংকর নিক্ষেপ, ২. কুরবানী করা, ৩. মাথা মুণ্ডান বা চুল কর্তন, ৪. ফরয তাওয়াফ। আল্লাহ্ তাআলা ইরশাদ করিয়াছেন [আরবী] অর্থাৎ হাদয়ী তার স্থানে না পৌছা পর্যন্ত তোমরা মাথা মুণ্ডাবে না। ক্রমের ব্যতিক্রম করলে দম দিতে হইবে বলে হযরত ইবনি আব্বাসও ফাতাওয়া দিতেন। তবে ফিদয়া দিতে হলেও অজ্ঞতাবশত এইরূপ ব্যতিক্রমের কারণে কোন গুনাহ হইবে না। হাদিসের মর্মও সেই দিকে ইঙ্গিত করছে। -অনুবাদক। হজ্জের বিধান (কঙ্কর নিক্ষেপ) হাদিসের তাহকিকঃ সহীহ হাদীস
১৯.পরিচ্ছেদঃ রাখালদের কংকর মারা
৩০৬৮. আদী [রাঃআঃ] হইতে বর্ণিতঃ
নাবী [সাঃআঃ] রাখালদের অনুমতি দিয়েছেন, তারা একদিন কংকর মারবে আর একদিন তা বাদ দেবে।
হজ্জের বিধান হাদিসের তাহকিকঃ সহীহ হাদীস
৩০৬৯. আবুল বাদ্দাহ ইবনি আসিম ইবনি আদী হইতে বর্ণিতঃ
নাবী [সাঃআঃ] রাখালদের রাত যাপনের ব্যাপারে অনুমতি দিয়েছেন, তার কুরবানীর দিন কংকর মারবে এবং পরের দুদিন একত্রে কোন একদিন মারবে।
হজ্জের বিধান হাদিসের তাহকিকঃ সহীহ হাদীস
২০.পরিচ্ছেদঃ যে স্থান থেকে জামরাতুল আকাবায় কংকর মারা হয়
৩০৭০. আবদুর রহমান অর্থাৎ ইবনি ইয়াযীদ [রহমাতুল্লাহি আলাইহি] হইতে বর্ণিতঃ
আবদুল্লাহ ইবনি মাসউদ [রাঃআঃ] -কে বলা হলো, লোকেরা আকাবার উপর [পাহাড়ী ভূমির উঁচু অংশ] হইতে জামরায় কংকর মেরে থাকে। রাবী বলেন ঃ এরপর আবদুল্লাহ [রাঃআঃ] বাতনে ওয়াদী [উপত্যকার নিম্ন অংশ] হইতে কংকর মেরে বলেন ঃ যিনি ব্যতীত অন্য কোন ইলাহ নেই তার শপথ করে বলছি। যাঁহার উপর সূরা বাকারা নাযিল হয়েছে, তিনি এখান হইতে কংকর মেরেছেন।
হজ্জের বিধান (কঙ্কর নিক্ষেপ) হাদিসের তাহকিকঃ সহীহ হাদীস
৩০৭১. আবদুর রহমান ইবনি ইয়াযীদ [রহমাতুল্লাহি আলাইহি] হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেনঃ আবদুল্লাহ [রাঃআঃ] জামরায় সাতটি কংকর মারেন। তিনি বায়তুল্লাহকে তার বামদিকে রাখেন এবং আরাফাকে রাখেন তার ডান দিকে এবং তিনি বলেন ঃ যাহার উপর সূরা বাকারা নাযিল হয়েছে, তিনি এ স্থানে দাড়িয়েই কংকর মেরেছেন। আবু আবদুর রহমান [রহমাতুল্লাহি আলাইহি] বলেন, ইবনি আবু আদী ব্যতীত অন্য কেউ এ হাদীসে মানসূর-এর নাম উল্লেখ করিয়াছেন বলে আমার জানা নেই। আল্লাহ তাআলাই অধিক জ্ঞাত।
হজ্জের বিধান হাদিসের তাহকিকঃ সহীহ হাদীস
৩০৭২. আবদুর রহমান ইবনি ইয়াযীদ [রহমাতুল্লাহি আলাইহি] হইতে বর্ণিতঃ
আমি ইবনি মাসউদ [রাঃআঃ] -কে বাতনে ওয়াদী [উপত্যকার নিম্নঅংশ] হইতে জামরাতুল-আকাবায় কংকর মারতে দেখেছি। তারপর তিনি বলিলেন ঃ যিনি ব্যতীত অন্য কোন ইলাহ নেই, তার শপথ! এই সে ব্যক্তির কংকর মারার স্থান, যাহার উপর সূরা বাকার নাযিল হয়েছে।
হজ্জের বিধান (কঙ্কর নিক্ষেপ) হাদিসের তাহকিকঃ সহীহ হাদীস
৩০৭৩. আমাশ [রহমাতুল্লাহি আলাইহি] হইতে বর্ণিতঃ
আমি হাজ্জাজকে বলিতে শুনিয়াছি যে, তোমরা সূরা বাকারা বলবে না। বরং তোমরা বলবে, এই সে সূরা যাতে বাকারা বা গাভীর উল্লেখ রহিয়াছে। আমি ইবরাহীমের নিকট একথা উল্লেখ করলে তিনি বলেন ঃ আবদুর রহমান ইবনি ইয়াযীদ [রহমাতুল্লাহি আলাইহি] আমার নিকট বর্ণনা করিয়াছেন যে, তিনি আবদুল্লাহ [রাঃআঃ]-এর সঙ্গে ছিলেন, যখন তিনি জামরাতুল আকাবায় কংকর মারেন। তিনি বাতনে ওয়াদীতে [উপত্যকার নিচুতে] প্রবেশ করে তা অর্থাৎ জামরার বরাবর দাঁড়ান। এরপর সেখান থেকে সাতটি কংকর মারেন। আর তিনি প্রতিটি কংকর মারার সাথে তাকবীর বলেন। আমি বললাম ঃ লোকেরা পাহাড়ে আরোহণ করে। তিনি বলিলেন ঃ যে আল্লাহ্ ব্যতীত অন্য কোন ইলাহ নেই তার শপথ! যাহার উপর সূরা বাকারা নাযিল হয়েছে, আমি তাকে এখান থেকেই মারতে দেখেছি।
হজ্জের বিধান হাদিসের তাহকিকঃ সহীহ হাদীস
৩০৭৪. জাবির [রাঃআঃ] হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন ঃ রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] জামরায় কংকর মারেন, দুআঙ্গুলে ছুড়ে মারার মত ক্ষুদ্র কংকর।
হজ্জের বিধান হাদিসের তাহকিকঃ সহীহ হাদীস
৩০৭৫. জাবির [রাঃআঃ] হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেনঃ আমি রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] -কে আঙ্গুলে তুলে কংকর নিক্ষেপ করিতে দেখেছি।
হজ্জের বিধান হাদিসের তাহকিকঃ সহীহ হাদীস
২১.পরিচ্ছেদঃ জামরায় ছুঁড়ে মারা কংকরের সংখ্যা
৩০৭৬. হুসায়ন [রাঃআঃ] হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেনঃ আমরা জাবির ইবনি আবদুল্লাহ [রাঃআঃ]-এর নিকট উপস্থিত হয়ে বললাম ; আমাকে রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ]-এর হজ্জ সম্পর্কে অবহিত করুন। তিনি বলিলেন ঃ রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] গাছের নিকটের জামরায় সাতটি কংকর মারেন। তিনি এর প্রত্যেক কংকরের সাথে তাকবীর বলেন। তিনি কংকর মারেন বাতনে-ওয়াদী হইতে। এরপর তিনি যবেহ করার স্থানে গমন করে যবেহ করেন।
হজ্জের বিধান (কঙ্কর নিক্ষেপ) হাদিসের তাহকিকঃ সহীহ হাদীস
৩০৭৭. সাদ [রাঃআঃ] হইতে বর্ণিতঃ
আমরা রাসূলুল্লাহু [সাঃআঃ]-এর সঙ্গে হজ্জ হইতে প্রত্যাবর্তন করছিলাম। আমাদেরকে কেউ বলিলেন ঃ আমি সাতটি কংকর নিক্ষেপ করেছি। আর কেউ কেউ বলিলেন ঃ আমি ছয়টি কংকর নিক্ষেপ করেছি। এ ব্যাপারে কেউ কারো প্রতি দোষারোপ করেন নি।
হজ্জের বিধান (কঙ্কর নিক্ষেপ) হাদিসের তাহকিকঃ সহীহ হাদীস
৩০৭৮. কাতাদা [রহমাতুল্লাহি আলাইহি] হইতে বর্ণিতঃ
আমি আবু মিজলাজকে বলিতে শুনিয়াছি, তিনি বলেন, আমি ইবনি আব্বাস [রাঃআঃ] -কে জামরা সম্বন্ধে কিছু জিজ্ঞাসা করলে তিনি বলেনঃ রাসূলুল্লাহু [সাঃআঃ] ছয়টি কংকর মেরেছেন অথবা সাতটি মেরেছেন, তা আমার জানা নেই।
হজ্জের বিধান হাদিসের তাহকিকঃ সহীহ হাদীস
২২.পরিচ্ছেদঃ প্রত্যেকটি কংকর নিক্ষেপের সময় তাকবীর বলা
৩০৭৯. ইবনি আব্বাস [রাঃআঃ] হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেনঃ আমি রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ]-এর পিছনে একই বাহনে সওয়ার ছিলাম, তিনি তালবিয়া পাঠ করিতে থাকেন- জামরাতুল আকাবায় কংকর মারা পর্যন্ত। তিনি সাতটি কংকর নিক্ষেপ করেন এবং প্রতিবার কংকর নিক্ষেপের সময় তিনি তাকবীর বলেন।
হজ্জের বিধান (কঙ্কর নিক্ষেপ) হাদিসের তাহকিকঃ সহীহ হাদীস
২৩.পরিচ্ছেদঃ জামারাতুল আকাবায় কংকর মারার সময় মুহরিমের তালবিয়া পাঠ বন্ধ করে দেয়া
৩০৮০. ইবনি আব্বাস [রাঃআঃ] হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেনঃ ফযল ইবনি আব্বাস [রাঃআঃ] বলেছেনঃ আমি রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ]-এর পিছনে একই বাহনে সওয়ার ছিলাম, আমি সর্বদা তাকে তালবিয়া পাঠ করিতে শুনি। জামরাতুল আকাবায় কংকর মারা পর্যন্ত। যখন তিনি কংকর মারেন [আরম্ভ করেন] তখন তালবিয়া পাঠ বন্ধ করেন।
হজ্জের বিধান (কঙ্কর নিক্ষেপ) হাদিসের তাহকিকঃ সহীহ হাদীস
৩০৮১. ইবনি আব্বাস [রাঃআঃ] হইতে বর্ণিতঃ
তিনি রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ]-এর পেছনে একই বাহনে সওয়ার ছিলেন, রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] কংকর মারা পর্যন্ত তালবিয়া পাঠ করিতে থাকেন।
হজ্জের বিধান হাদিসের তাহকিকঃ সহীহ হাদীস
৩০৮২. ফযল ইবনি আব্বাস [রাঃআঃ] হইতে বর্ণিতঃ
তিনি রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ]-এর পিছনে একই বাহনে সওয়ার ছিলেন, তিনি সর্বদা তালবিয়া পাঠ করছিলেন। আকাবায় কংকর মারা পর্যন্ত।
হজ্জের বিধান (কঙ্কর নিক্ষেপ) হাদিসের তাহকিকঃ সহীহ হাদীস
২৪.পরিচ্ছেদঃ কংকর মারার পর দুআ
৩০৮৩. যুহরী [রহমাতুল্লাহি আলাইহি] হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন ঃ আমাদের নিকট [হাদীস] পৌছেছে যে, রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] যখন মিনার যবাই করার স্থানের নিকটস্থ জামরায় কংকর নিক্ষেপ করেন, তখন তাতে সাতটি কংকর মারেন। যখনই তিনি কংকর মারেন, তখনই তাকবীর বলেন। তারপর তিনি এর সামনে অগ্রসর হন এবং পশ্চিমমুখী হয়ে দাঁড়ান এবং তার দুহাত উত্তোলন করে অনেকক্ষণ দুআয় রত থাকেন। তারপর তিনি দ্বিতীয় জামরায় এসে তাতেও সাতটি কংকর মারেন এবং প্রতিটি কংকর মারার সময় তাকবীর বলেন। এরপর তিনি বাম দিকে কিছুটা সরে যান এবং কেবলামুখী হয়ে দাড়িয়ে তার দুহাত উত্তোলন করে দুআ করেন। এরপর তিনি আকাবার নিকটস্থ জামরায় আগমন করেন এবং এতেও তিনি সাতটি কংকর মারেন। কিন্তু এর নিকট তিনি দাঁড়ান নি। যুহরী [রহমাতুল্লাহি আলাইহি] বলেন, আমি সালিম [রহমাতুল্লাহি আলাইহি] -কে এই হাদীস বর্ণনা করিতে শুনিয়াছি তার পিতার মাধ্যমে। আর তিনি নাবী [সাঃআঃ] থেকে বর্ণনা করেন। আর ইবনি উমার [রাঃআঃ] এরূপ আমল করিতেন।
হজ্জের বিধান হাদিসের তাহকিকঃ সহীহ হাদীস
২৫.পরিচ্ছেদঃ কংকর নিক্ষেপের পর মুহরিমের জন্য যা হালাল হয়
৩০৮৪. ইবনি আব্বাস [রাঃআঃ] হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেনঃ যখন কেউ জামরায় কংকর মারল, তখন তার জন্য স্ত্রী ব্যতীত সকল কিছুই হালাল হয়ে যায়। কেউ জিজ্ঞাস করলোঃ সুগন্ধিও? তিনি বলিলেন ; আমি রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] -কে কস্তুরীর সুগন্ধি মাখাতে দেখেছি। তা কি সুগন্ধী নয়?
হজ্জের বিধান হাদিসের তাহকিকঃ সহীহ হাদীস
Leave a Reply