ওয়াসিয়্যাত, দান-খয়রাত ও ওয়াক্ফ করা
যার কাছে ওয়াসিয়্যাত যোগ্য কিছু নেই, তার ওয়াসিয়্যাত না করা >> সহীহ মুসলিম শরীফ এর মুল সুচিপত্র দেখুন >> নিম্নে মুসলিম শরীফ এর একটি অধ্যায়ের হাদিস পড়ুন
১. অধ্যায়ঃ এক তৃতীয়াংশের ওয়াসিয়্যাত
২. অধ্যায়ঃ মৃতের জন্যে দান-খয়রাতের সওয়াব পৌঁছা
৩. অধ্যায়ঃ মানুষের মৃত্যুর পর যে সকল জিনিসের সাওয়াব তার কাছে পৌঁছে
৪. অধ্যায়ঃ ওয়াক্ফ
৫. অধ্যায়ঃ যার কাছে ওয়াসিয়্যাত যোগ্য কিছু নেই, তার ওয়াসিয়্যাত না করা
১. অধ্যায়ঃ এক তৃতীয়াংশের ওয়াসিয়্যাত
৪০৯৬. ইবনি উমর [রহমাতুল্লাহি আলাইহি] হইতে বর্ণীতঃ
রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলেছেনঃ যে ব্যক্তির কিছু অর্থ সম্পদ রয়েছে, আর সে এ সম্পর্কে ওয়াসিয়্যাত করিতে চায়, সে মুসলিম ব্যক্তির উচিত হইবে না ওয়াসিয়্যাত লিখে না রেখে দুটি রাতও অতিবাহিত করা।
[ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৪০৫৮, ইসলামিক সেন্টার- ৬ষ্ঠ খন্ড -৪০৫৭]
৪০৯৭. আবু বাক্র ইবনি আবু শাইবাহ্ ও ইবনি নুমায়র [রহমাতুল্লাহি আলাইহি] উবাইদুল্লাহ হইতে বর্ণীতঃ
আবু বাক্র ইবনি আবু শাইবাহ্ ও ইবনি নুমায়র [রহমাতুল্লাহি আলাইহি] উবাইদুল্লাহ থেকে উক্ত সানাদে বর্ণনা করেন। তবে এ হাদীসে আছে, তাঁরা উভয়ে বলেছেন, তার কাছে ওয়াসিয়্যাত করার মত কিছু আছে। তাঁরা এ কথা বলেননি যে, সে ওয়াসিয়্যাত করার ইচ্ছা করে।
[ই. ফা.৪০৫৯, ইসলামিক সেন্টার-৪০৫৮]
৪০৯৮. ইবনি উমর [রহমাতুল্লাহি আলাইহি] হইতে বর্ণীতঃ
তিনি নবী [সাঃআঃ] থেকে উবাইদুল্লাহ বর্ণিত হাদীসের অনুরূপ বর্ণনা করেন। আর তাঁরা সবাই এভাবে বলেছেন যে তার কাছে এমন সম্পদ আছে, যাতে সে ওয়াসিয়্যাত করিতে পারে। কিন্তু আইয়ূব [রহমাতুল্লাহি আলাইহি]- এর হাদীসে রয়েছে যে, তিনি বলেছেন, সে তাতে ওয়াসিয়্যাত করিতে চায়। উবাইদুল্লাহ থেকে ইয়াহ্ইয়ার বর্ণনার মতই।
[ ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৪০৬০, ইসলামিক সেন্টার-৪০৫৯]
৪০৯৯. সালিম [রহমাতুল্লাহি আলাইহি]- এর সূত্রে তাহাঁর পিতা হইতে বর্ণীতঃ
তিনি রসূলুল্লাহকে বলিতে শুনেছেন, কোন মুসলিম ব্যক্তির জন্যে সঙ্গত নয়, তার কাছে ওয়াসিয়্যাত করার মত সম্পদ আছে এমতাবস্থায় ওয়াসিয়্যাত লিখিত না রেখে তিন রাত অতিবাহিত করা।
আবদুল্লাহ ইবনি উমর [রাদি.] বলেন, রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] থেকে এ কথা শোনার পর এক রাতও আমার উপর পার হয়নি যে, আমার ওয়াসিয়্যাত আমার কাছে ছিল না।
[ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৪০৬১, ইসলামিক সেন্টার-৪০৬০]
৪১০০. আবু তাহির ও হারমালাহ্, আবদুল মালিক ইবনি শুআয়ব, ইবনি লায়স, ইবনি আবু উমর আব্দ ইবনি উমর [রহমাতুল্লাহি আলাইহি] হইতে বর্ণীতঃ
সকলেই যুহরী [রহমাতুল্লাহি আলাইহি] সূত্রে উক্ত সানাদে আম্র ইবনি হারিস এর হাদীসের অনুরূপ বর্ণনা করেন।
[ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৪০৬২, ইসলামিক সেন্টার-৪০৬১]
৪১০১. সাদ [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
তিনি বলেন, বিদায় হজ্জের সময় রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] আমাকে দেখিতে আসেন; এমন রোগের সময় যাতে আমি মৃত্যুর কাছাকাছি হয়ে পড়েছিলাম। আমি বললাম, হে আল্লাহ্র রসূল! রোগের কারণে আমার কী অবস্থা হয়েছে, আপনি তো দেখিতেই পাচ্ছেন? আমি একজন সম্পদশালী ব্যক্তি, অথচ একটি মাত্র কন্যা সন্তান ব্যতীত আমার আর কোন ওয়ারিস নেই। সুতরাং আমি আমার সম্পদের দু-তৃতীয়াংশ দান করিতে পারব কি? তিনি বলিলেন, না। আমি বললাম, তবে কি অর্ধেক মাল সদাকাহ্ করিতে পারব? তিনি বলিলেন, না। বরং এক তৃতীয়াংশ এবং এক তৃতীয়াংশও বেশী হয়ে যায়। তোমার ওয়ারিসদের অভাবমুক্ত অবস্থায় রেখে যাওয়া তোমার জন্যে উত্তম, এমন অভাবগ্রস্ত অবস্থায় ছেড়ে যাওয়ার চেয়ে যে, তারা মানুষের নিকট হাত পাতবে। আর আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভের জন্যে তুমি যা কিছুই খরচ কর তার উপর তোমাকে প্রতিদান দেয়া হইবে। এমনকি, সে লোকমাটির বদৌলতেও যা তুমি তোমার স্ত্রীর মুখে তুলে দিবে। আমি বললাম, হে আল্লাহ্র রসূল! আমি তো আমার সাথীদের পর তাদের পিছনে রয়ে যাচ্ছি। তিনি বলিলেন, তুমি পেছনে রয়ে গেছো [জীবিত রয়ে গেছো], তাতে তুমি এমন আমাল করে আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভ করিতে পার যাতে তোমার মর্যাদা বাড়বে ও উঁচু হইবে। আর সম্ভবত তুমি পরবর্তীতেও থাকিবে অর্থাৎ দীর্ঘায়ু লাভ করিবে। এমনকি বহু সম্প্রদায় তোমার দ্বারা লাভবান হইবে এবং বহু লোক তোমার দ্বারা ক্ষতিগ্রস্ত হইবে। [নবীজী দুআ করিলেন।]
اللَّهُمَّ أَمْضِ لأَصْحَابِي هِجْرَتَهُمْ وَلاَ تَرُدَّهُمْ عَلَى أَعْقَابِهِمْ لَكِنِ الْبَائِسُ سَعْدُ ابْنُ خَوْلَةَ
ইয়া আল্লাহ! আমার সাথীদের হিজরাত অক্ষুণ্ন রাখুন এবং তাদেরকে পশ্চাতে ফিরিয়ে দিবেন না। কিন্তু সাদ ইবনি খাওলার জন্যে আফসোস।
বর্ণনাকারী বলেন যে, রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] তার জন্যে দুঃখ প্রকাশ করেন। কারণ, তিনি মাক্কায় মৃত্যুবরণ করেছিলেন।
[ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৪০৬৩, ইসলামিক সেন্টার-৪০৬২]
৪১০২. কুতাইবাহ্ ইবনি সাঈদ, আবু বাক্র ইবনি আবু শাইবাহ, আবু তাহির, হারমালাহ্, ইসহাক্ ইবনি ইবরাহীম ও আব্দ হুমায়দ [রহমাতুল্লাহি আলাইহি] হইতে বর্ণীতঃ
সকলেই যুহরীর সূত্রে উক্ত সানাদের অনুরূপ বর্ণনা করিয়াছেন।
[ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৪০৬৪, ইসলামিক সেন্টার-৪০৬৩]
৪১০৩. সাদ [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
তিনি বলেন, নবী [সাঃআঃ] আমার রোগের খোঁজ-খবর নেয়ার জন্যে আমার নিকট আগমন করেন। তারপর যুহরীর বর্ণিত হাদীসের অনুরূপ উল্লেখ করেন এবং সাদ ইবনি খাওলার প্রসঙ্গে নবী [সাঃআঃ]- এর উক্তির উল্লেখ নেই। তবে এতে এ কথা রয়েছে, কোন ব্যক্তি যেখান থেকে হিজরাত করেছে তথায় মৃত্যুবরণ করুক, এটা নবী [সাঃআঃ] পছন্দ করেন না।
[ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৪০৬৫, ইসলামিক সেন্টার-৪০৬৪]
৪১০৪. মুসআব ইবনি সাদ [রহমাতুল্লাহি আলাইহি] তাহাঁর পিতা হইতে বর্ণীতঃ
তিনি বলেন, আমি একবার অসুস্থ হয়ে পড়ি এবং নবী [সাঃআঃ]- এর কাছে সংবাদ প্রেরণ করি। [তিনি আসলেন] আমি বললাম, আমার সম্পত্তি যে পরিমাণ ইচ্ছা বন্টন করার অনুমতি দিন। তিনি সম্মতি জানালেন না। আমি বললাম, তা হলে অর্ধেক? তিনি তাও স্বীকার করিলেন না। আমি বললাম, তাহলে এক-তৃতীয়াংশ? রাবী বলেন, এক-তৃতীয়াংশ বলার পর নবী [সাঃআঃ] নীরব থাকেন।
রাবী বলেন, এরপর থেকে এক তৃতীয়াংশ জায়িয হয়ে যায়।
[ ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৪০৬৬, ইসলামিক সেন্টার-৪০৬৫]
৪১০৫. সিমাক [রহমাতুল্লাহি আলাইহি] হইতে বর্ণীতঃ
সিমাক [রহমাতুল্লাহি আলাইহি]- এর সূত্রে উক্ত সানাদে অনুরূপ বর্ণনা করেন। তবে তিনি “এরপর থেকে এক তৃতীয়াংশ বৈধ হয়ে যায় কথাটি বর্ণনা করেননি।
[ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৪০৬৭, ইসলামিক সেন্টার-৪০৬৬]
৪১০৬. মুসআব ইবনি সাদ [রহমাতুল্লাহি আলাইহি]- এর সূত্রে তাহাঁর পিতা হইতে বর্ণীতঃ
তিনি বলেন, নবী [সাঃআঃ] আমার রোগের খোঁজ-খবর নিতে এলেন। আমি জিজ্ঞেস করলাম, আমি কি আমার সমস্ত সম্পদ ওয়াসিয়্যাত করে যাব? তিনি বলিলেন, না। আমি বললাম, তা হলে অর্ধেক? তিনি বলিলেন, না। আমি বললাম, তবে এক-তৃতীয়াংশ? তিনি বলিলেন, হ্যাঁ এবং বলিলেন এক-তৃতীয়াংশ অনেক।
[ ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৪০৬৮, ইসলামিক সেন্টার-৪০৬৭]
৪১০৭. সাদ [রাদি.]- এর তিন পুত্র তাঁদের পিতার থেকে হইতে বর্ণীতঃ
মক্কায় নবী [সাঃআঃ] সাদের অসুখ দেখার জন্যে তাহাঁর নিকট আসেন। সাদ [রাদি.] কেঁদে ফেলেন। নবী [সাঃআঃ] বলিলেন, তুমি কেন কাঁদছ? তিনি বলিলেন, আমি ভয় পাচ্ছি, যে স্থান থেকে হিজরত করেছি, সেথায় না আমি মারা যাই; যেমনিভাবে মারা গিয়েছেন সাদ ইবনি খাওলা [রাদি.]। নবী [সাঃআঃ] বলিলেন,
اللَّهُمَّ اشْفِ سَعْدًا اللَّهُمَّ اشْفِ سَعْدًا
আল্লাহুম্মা আসফি সা,দ, আল্লাহুম্মা আসফি সা,দ, ইয়া আল্লাহ! সাদকে সুস্থতা দান করুন
তিন বার বলিলেন। সাদ [রাদি.] বলিলেন, হে আল্লাহ্র রসূল! আমার প্রচুর সম্পদ আছে। আর একমাত্র কন্যাই আমার উত্তরাধিকার হইবে। তবে কি আমার সমুদয় সম্পদ ওয়াসিয়্যাত করিতে পারি? তিনি বলিলেন, না। সাদ [রাদি.] বলিলেন, তবে কি দুই-তৃতীয়াংশ? তিনি বলিলেন, না। সাদ [রাদি.] বলিলেন, তা হলে অর্ধেক? তিনি বলিলেন, না। সাদ বলিলেন, তাহলে এক তৃতীয়াংশ? তিনি বলিলেন, হ্যাঁ, এক তৃতীয়াংশ আর এক তৃতীয়াংশই অনেক। তোমার সম্পদ থেকে তুমি যা সদাকাহ্ কর তা তো সদাকাহ্-ই এবং তোমার পরিবারের জন্যে যা খরচ কর তাও সদাকাহ্ আর তোমার মাল থেকে তোমার স্ত্রী যা খায় তাও সদাকাহ্। তোমার পরিবার-পরিজনকে যদি তুমি সম্পদশালী রেখে যাও, অথবা বলেছেন স্বাচ্ছন্দ্যে রেখে যাও, তবে তা তাদের মানুষের কাছে হাতপাতা অবস্থায় রেখে যাওয়ার তুলনায় ভাল। আর এ কথা বলিতে তিনি নিজ হাত দিয়ে ইশারা করিলেন।
[ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৪০৬৯, ইসলামিক সেন্টার-৪০৬৮]
৪১০৮. সাদ [রাদি.]- এর তিন পুত্র হইতে বর্ণীতঃ
তাঁরা বলেছেন, সাদ [রাদি.] মাক্কায় অসুস্থ হয়ে পড়েন। রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] তাহাঁর খোঁজ-খবর নেয়ার জন্যে তাহাঁর কাছে আসেন। পরবর্তী অংশ সাকাফীর হাদীসের অনুরূপ।
[ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৪০৭০, ইসলামিক সেন্টার-৪০৬৯]
৪১০৯. হুমায়দ ইবনি আবদুর রহমান [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
তিনি বলেন, আমার নিকট সাদ ইবনি মালিকের তিন পুত্র বর্ণনা করিয়াছেন। তাঁরা প্রত্যেকেই আমার কাছে বর্ণনা করেন যে, সাদ মাক্কায় অসুস্থ হয়ে পড়লো। রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] তার খোঁজ-খবর নেয়ার জন্যে তার কাছে আসেন। পরবর্তী অংশ আম্র ইবনি সাঈদ সূত্রে বর্ণিত হুমায়দ হিমইয়ারী [রহমাতুল্লাহি আলাইহি]- এর হাদীসের অনুরূপ।
[ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৪০৭১, ইসলামিক সেন্টার-৪০৭০]
৪১১০. ইবনি আব্বাস [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
তিনি বলেন, হায়! লোকজন যদি এক-তৃতীয়াংশ কমিয়ে এক চতুর্থাংশ করতো। কেননা, রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলেছেন, এক তৃতীয়াংশ এবং এক-তৃতীয়াংশই বেশী। ওয়াকী-এর হাদীসে আছে বড় বা বেশী।
[ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৪০৭২, ইসলামিক সেন্টার-৪০৭১]
২. অধ্যায়ঃ মৃতের জন্যে দান -খয়রাতের সওয়াব পৌঁছা
৪১১১. আবু হুরাইরা [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
এক ব্যক্তি নবী [সাঃআঃ]- কে জিজ্ঞেস করলো, আমার পিতা মারা গেছে এবং তিনি কিছু সম্পদ রেখে গেছেন; কিন্তু ওয়াসিয়্যাত করেননি। তার পক্ষ থেকে সদাকাহ্ করা হলে কি তার গুনাহ ক্ষমা হইবে? তিনি বলিলেন, হ্যাঁ।
[ ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৪০৭৩, ইসলামিক সেন্টার-৪০৭২]
৪১১২. আয়েশাহ [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
এক ব্যক্তি নবী [সাঃআঃ] -কে বললো, আমার মা হঠাৎ মারা গেছেন। তাহাঁর ব্যাপারে আমি ধারণা করি, তিনি যদি কথা বলিতে পারতেন তবে সদাকাহ্ করিতেন। আমি যদি তাহাঁর পক্ষে সদাকাহ্ করি, তবে কি আমার এ কাজের কোন সাওয়াব হইবে? নবী [সাঃআঃ] বলিলেন, হ্যাঁ।
[ ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৪০৭৪, ইসলামিক সেন্টার-৪০৭৩]
৪১১৩. আয়েশাহ [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
এক ব্যক্তি নবী [সাঃআঃ]- এর নিকট এসে বললো, হে আল্লাহ্র রসূল! আমার মা হঠাৎ মৃত্যুবরণ করেন এবং কোন ওয়াসিয়্যাত করেননি। তাহাঁর প্রতি আমার ধারণা যে, যদি তিনি কথা বলার সুযোগ পেতেন তবে সদাকাহ্ করিতেন। আমি যদি তার পক্ষে সদাকাহ্ করি, তবে কি তিনি সাওয়াব পাবেন? নবী [সাঃআঃ] বলিলেন, হ্যাঁ।
[ ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৪০৭৫, ইসলামিক সেন্টার-৪০৭৪]
৪১১৪. আবু কুরায়ব হাকাম ইবনি মুসা, উমাইয়াহ্ ইবনি বিসতাম ও আবু বাক্র ইবনি আবু শাইবাহ্ [রহমাতুল্লাহি আলাইহি] হইতে বর্ণীতঃ
আবু কুরায়ব হাকাম ইবনি মুসা, উমাইয়াহ্ ইবনি বিসতাম ও আবু বাক্র ইবনি আবু শাইবাহ্ [রহমাতুল্লাহি আলাইহি] … এ সকল সূত্রে হিশাম ইবনি উরওয়াহ্ [রহমাতুল্লাহি আলাইহি] থেকে উক্ত সানাদে হাদীসটি উল্লেখ করেন। তবে উসামাহ ও রাওহ [রহমাতুল্লাহি আলাইহি]- এর বর্ণিত হাদীসে আছে, আমার কি সাওয়াব হইবে? যেমন বলেছেন, ইয়াহ্ইয়া ইবনি সাঈদ। আর শুআয়ব ও জাফার [রহমাতুল্লাহি আলাইহি]- এর বর্ণনায় আছে, তাহাঁর কি সাওয়াব হইবে? যেমন রয়েছে ইবনি বিশ্রের রিওয়ায়াতে।
[ ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৪০৭৬, ইসলামিক সেন্টার-৪০৭৫]
৩. অধ্যায়ঃ মানুষের মৃত্যুর পর যে সকল জিনিসের সাওয়াব তার কাছে পৌঁছে
৪১১৫. আবু হুরাইরা [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলেছেনঃ যখন মানুষ মৃত্যুবরণ করে তখন তার সমস্ত আমাল বন্ধ হয়ে যায় তিন প্রকার আমাল ছাড়া। ১. সদাকাহ্ জারিয়াহ্ অথবা ২. এমন ইল্ম যার দ্বারা উপকার হয় অথবা ৩. পুণ্যবান সন্তান যে তার জন্যে দুআ করিতে থাকে।
[ ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৪০৭৭, ইসলামিক সেন্টার-৪০৭৬]।
৪. অধ্যায়ঃ ওয়াকফ
৪১১৬. ইবনি উমর [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
তিনি বলেন, উমর [রাদি.] খাইবারে একখন্ড জমি লাভ করেন। তখন এ সম্পর্কে পরামর্শের জন্যে তিনি নবী [সাঃআঃ]- এর নিকট আসেন এবং বলেন, হে আল্লাহ্র রসূল! আমি খাইবারে এমন একখন্ড জমি লাভ করেছি যে, এর চেয়ে উৎকৃষ্টতর সম্পদ আমি কখনও লাভ করিনি। আপনি এ সম্পর্কে আমাকে কী নির্দেশ দিন। তিনি বলিলেন, তুমি যদি চাও, তবে তার মূল মালিকানা রেখে তা সদাকাহ্ করিতে পার। রাবী বলেন, তারপর উমর [রাদি.] তা সদাকাহ্ করে দেন এ শর্তে যে, এর মূলস্বত্ব বিক্রি করা যাবে না, খরিদ করা যাবে না, উত্তরাধিকার সূত্রে লাভ করা যাবে না এবং দানও করা যাবে না। সুতরাং উমর [রাদি.]- এর আয় দরিদ্র, আত্মীয়, দাস মুক্তি, জিহাদ, পথিক ও মেহমানের উদ্দেশ্যে সদাকাহ্ করে দেন। অবশ্য যে ব্যক্তি এর তত্ত্বাবধায়ক হইবে তার জন্যে এর থেকে যুক্তিসংগত পরিমাণ খাওয়া বা কোন বন্ধু-বান্ধবকে খাওয়ানো দূষণীয় হইবে না, যদি সে এর থেকে সঞ্চায় না করে। বর্ণনাকারী বলেন, আমি হাদীসটি মুহাম্মাদ [রহমাতুল্লাহি আলাইহি]- এর নিকট বর্ণনা করিতে গিয়ে যখন এ স্থানে পৌঁছি, [আরবী] [যদি সে এর থেকে সঞ্চয়কারী না হয়,] তখন মুহাম্মদ [রহমাতুল্লাহি আলাইহি] বলিলেন [আরবী] [ সম্পদ সঞ্চয়কারী হইবে না।]
ইবনি আওন [রহমাতুল্লাহি আলাইহি] বলেন, এ কিতাব যিনি পড়েছেন তিনি আমাকে জানিয়েছেন যে, এ স্থলে রয়েছে [আরবী]।
[ ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৪০৭৮, ইসলামিক সেন্টার-৪০৭৭]
৪১১৭. ইবনি আওন [রহমাতুল্লাহি আলাইহি] হইতে বর্ণীতঃ
আবু বকর ইবনি আবু শাইবাহ, ইসহাক্ ও মুহাম্মাদ ইবনি মুসান্না [রহমাতুল্লাহি আলাইহি] …. সূত্রে ইবনি আওন [রহমাতুল্লাহি আলাইহি] থেকে উক্ত সানাদে হুবহু বর্ণনা করিয়াছেন। তবে ইবনি আবু যায়িদাহ্ ও আযহার [রহমাতুল্লাহি আলাইহি]- এর হাদীস এ পর্যন্ত এসে শেষ হয়েছে যে, “অথবা কোন বন্ধু-বান্ধবকে খাওয়ায় এতে সঞ্চয়কারী না হয়ে”, পরের অংশ তিনি উল্লেখ করেননি। আর ইবনি আদী [রহমাতুল্লাহি আলাইহি]-এর হাদীসে তাই আছে, যা সুলায়ম [রহমাতুল্লাহি আলাইহি] উল্লেখ করিয়াছেন অর্থাৎ “অতঃপর আমি এ হাদীসটি মুহাম্মাদ [রহমাতুল্লাহি আলাইহি]- এর নিকট বর্ণনা করি ….শেষ পর্যন্ত।“
[ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৪০৭৯, ইসলামিক সেন্টার- ৪০৭৮]
৪১১৮. উমর [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
তিনি বলেন, আমি খাইবারের এলাকায় একখন্ড জমি লাভ করি। তখন আমি রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ]-এর কাছে এসে বলি, আমি এমন একখন্ড জমি লাভ করেছি, যার চেয়ে বেশি প্রিয় এবং আমার কাছে উত্তম কোন মাল আর পাইনি। রাবী এ হাদীসে পরবর্তী অংশ অন্যান্যের অনুরূপ বর্ণনা করেন। তবে তিনি এ কথা বর্ণনা করেননি যে, অতঃপর আমি মুহাম্মাদ [রহমাতুল্লাহি আলাইহি]- এর নিকট বর্ণনা করি এবং এর পরেরটুকু।“
[ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৪০৮০, ইসলামিক সেন্টার- ৪০৭৯]
৫. অধ্যায়ঃ যার কাছে ওয়াসিয়্যাত যোগ্য কিছু নেই, তার ওয়াসিয়্যাত না করা
৪১১৯. তালহাহ্ ইবনি মুসার্রিফ [রহমাতুল্লাহি আলাইহি] হইতে বর্ণীতঃ
তিনি বলেন, আমি আবদুল্লাহ ইবনি আবু আওফা [রাদি.] কে জিজ্ঞেস করলাম যে, রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] কি ওয়াসিয়্যাত করেছিলেন? তিনি বলিলেন, না। আমি বললাম, তাহলে কেন মুসলিমদের উপর ওয়াসিয়্যাত ফারয্ করা হলো? অথবা বলিলেন, কিভাবে তাদেরকে ওয়াসিয়্যাতের হুকুম দেয়া হলো? তিনি বলিলেন, নবী [সাঃআঃ] ওয়াসিয়্যাত করিয়াছেন, আল্লাহ তাআলার কিতাব সম্পর্কে [আমাল করিতে]।
[ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৪০৮১, ইসলামিক সেন্টার- ৪০৮০]
৪১২০. মালিক ইবনি মিগওয়াল [রহমাতুল্লাহি আলাইহি] হইতে বর্ণীতঃ
মালিক ইবনি মিগওয়াল [রহমাতুল্লাহি আলাইহি]- এর সূত্রে উক্ত সানাদে অনুরূপ বর্ণনা করিয়াছেন। অবশ্য ওয়াকী [রহমাতুল্লাহি আলাইহি]- এর বর্ণনায় আছে- আমি বললাম, “তাহলে কী করে মানুষকে ওয়াসিয়্যাতের হুকুম করা হলো”? আর ইবনি নুমায়র [রহমাতুল্লাহি আলাইহি]- এর বর্ণনায় আছে, আমি বললাম, কিভাবে মুসলিমের উপর ওয়াসিয়্যাত ওয়াজিব হলো?
[ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৪০৮২, ইসলামিক সেন্টার- ৪০৮১]
৪১২১. আয়েশাহ [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] কোন দীনার, দিরহাম, বকরী বা উট রেখে যাননি এবং কোন কিছুর ওয়াসিয়্যাত করেননি।
[ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৪০৮৩, ইসলামিক সেন্টার- ৪০৮২]
৪১২২. যুহায়র ইবনি হার্ব, উসমান ইবনি আবু শাইবাহ্, ইসহাক্ ইবনি ইবরাহীম [রহমাতুল্লাহি আলাইহি] আর সকলে জারীর হইতে ও আলী ইবনি খাশরাম [রহমাতুল্লাহি আলাইহি] হইতে বর্ণীতঃ
আমাশ [রহমাতুল্লাহি আলাইহি] হইতে উক্ত সানাদে অনুরূপ বর্ণনা করিয়াছেন।
[ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৪০৮৪, ইসলামিক সেন্টার- ৪০৮৩]
৪১২৩. আসওয়াদ ইবনি ইয়াযীদ হইতে বর্ণীতঃ
তিনি বলেন, তাঁরা আয়েশাহ [রাদি.]- এর কাছে উল্লেখ করেন যে, আলী [রাদি.] তো রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ]- এর ওয়াসিয়্যাতের ব্যাপারে দায়িত্ববান ছিলেন। তিনি বলিলেন, কখন রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] তাকে ওয়াসিয়্যাত করিয়াছেন? আমি তো তাঁকে [নবী [সাঃআঃ]- কে] আমার বুকে ভর দিয়ে রেখেছিলাম, অথবা বলেছেন, আমার কোলে; তখন তিনি একটি রিকাব চাইলেন, এরপর আমার কোলে ঢলে পড়েন। আমি বুঝতেও পারিনি যে, তিনি মৃত্যুবরণ করিয়াছেন। তিনি কখন ওয়াসিয়্যাত করিলেন?
[ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৪০৮৫, ইসলামিক সেন্টার- ৪০৮৪]
৪১২৪. সাঈদ ইবনি জুবায়র [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
তিনি বলেন, কোন এক সময় ইবনি আব্বাস [রাদি.] বলেন, বৃহস্পতিবার দিন, হায়রে বৃহস্পতিবার দিন! বলে তিনি কেঁদে ফেলেন। এমনকি তার অশ্রুধারায় কংকর ভিজে যায়। আমি বললাম, হে আবু আব্বাস! বৃহস্পতিবার দিনের ব্যাপার কী? তিনি বলিলেন, সেদিন রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ]- এর রোগ বেড়ে যায়। তখন তিনি বলিলেন, আমার নিকট এসো, আমি তোমাদের এমন একটি লিপি লিখে দিই, যাতে আমার পরে তোমরা আর পথহারা হইবে না। তখন উপস্থিত সাহাবাগণ পরস্পর বিতর্কে লিপ্ত হলেন। অথচ নবী [সাঃআঃ]- এর কাছে তর্কবিতর্ক করা উচিত নয়। তারা বলিলেন, নবী [সাঃআঃ]- এর অবস্থা কী হলো? তিনি তা অর্থহীন বলিতে পারেন না? তোমরা তাহাঁর কথা বুঝার চেষ্টা কর। রাবী বলেন, নবী [সাঃআঃ] বলিলেন, তোমাদের তিনটি বিষয়ে ওয়াসিয়্যাত করছি, মুশরিকদেরকে আরব উপদ্বীপ থেকে বহিস্কার কর। প্রতিনিধি [আগন্তুক] দলকে উপঢৌকন দাও, যেমনি আমি তাদেরকে উপহার দিতাম। বর্ণনাকারী বলিলেন, ইবনি আব্বাস [রাদি.] তৃতীয়টা থেকে নীরব থাকেন অথবা তিনি বলেছেন, কিন্তু তা ভুলে গেছি।
আবু ইসহাক্ [রহমাতুল্লাহি আলাইহি] বলেন, হাসান ইবনি বিশ্র [রহমাতুল্লাহি আলাইহি] সুফইয়ান [রাদি.] থেকে অনুরূপ বর্ণনা করিয়াছেন।
[ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৪০৮৬, ইসলামিক সেন্টার- ৪০৮৫]
৪১২৫. ইবনি আব্বাস [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
তিনি কোন এক সময় বলিলেন,] বৃহস্পতিবার দিন, আর কী সে বৃহস্পতিবার দিন! এরপর তাহাঁর অশ্রু প্রবাহিত হইতে থাকে। এমন কি, আমি দেখলাম যে, তাহাঁর উভয় গালের উপরে যেন মুক্তার লহরী। রাবী বলেছেন, রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলিলেন, আমার কাছে হাড় ও দোয়াত নিয়ে আস, অথবা বলেছেন কাষ্ঠফলক ও দোয়াত। আমি তোমাদের এমন একটি কিতাব লিখে দিব যে, এরপর আর তোমরা পথভ্রস্ট হইবে না। অতঃপর তারা বললো, রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] [অসুস্থতা বেড়ে যাওয়ায় অনিচ্ছাকৃত] কথা বলছেন?
[ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৪০৮৭, ইসলামিক সেন্টার- ৪০৮৬]
৪১২৬. ইবনি আব্বাস [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
তিনি বলেন, যখন রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] মৃত্যুশয্যায় ছিলেন এবং ঘরে বেশ লোক উপস্থিত ছিলেন। তাঁদের মধ্যে উমর ইবনি খাত্তাবও ছিলেন। তখন নবী [সাঃআঃ] বলিলেন, এসো, আমি তোমাদের এক কিতাব লিখে দিই। এরপরে আর তোমরা পথভ্রস্ট হইবে না। উমর [রাদি.] বলিলেন, রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ]- এর অসুস্থতা বৃদ্ধি পেয়েছে। আর তোমাদের কাছে কুরআন বর্তমান আছে। আল্লাহর কিতাব আমাদের জন্যে যথেষ্ট। তখন ঘরের লোকজনের মধ্যে বিতর্ক শুরু হয় এবং তারা ঝগড়ায় লিপ্ত হন। তাদের কেউ কেউ বলেন, তোমরা [কাগজ] কাছে নিয়ে এসো। রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] তোমাদের এমন এক কিতাব লিখে দিবেন, যার পরে আর তোমরা পথভ্রষ্ট হইবে না। আর কেউ কেউ সে কথা বলেন, যা উমর [রাদি.] বলেছেন। রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ]- এর কাছে যখন তাদের এ ঝগড়া ও কথা কাটাকাটি বৃদ্ধি পায়, তখন রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলিলেন, তোমরা উঠে যাও।
উবাইদুল্লাহ [রহমাতুল্লাহি আলাইহি] বলেন, এরপর থেকে ইবনি আব্বাস [রাদি.] আক্ষেপ করে বলিতেন, বিপদ সে যে কত বড় বিপদ! রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] ও তাদের জন্য সে কিতাব লিখে দেয়ার মাঝখানে তাদের মতবিরোধ ও ঝগড়া যে অন্তরায় হয়ে পড়ল।
[ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৪০৮৮, ইসলামিক সেন্টার- ৪০৮৭]
Leave a Reply