ওয়াক্ফ করার নিয়মাবলী- মসজিদের জন্য জমি ওয়াক্ফ করা।
ওয়াক্ফ করার নিয়মাবলী- মসজিদের জন্য জমি ওয়াক্ফ করা >> বুখারী শরীফ এর মুল সুচিপত্র পড়ুন
পর্বঃ ৫৫, অসিয়ত, অধ্যায়ঃ (১২-৩৬)=২৫টি
৫৫/১২. অধ্যায়ঃ ওয়াক্ফকারী তার ওয়াক্ফ দ্বারা উপকার গ্রহণ করিতে পারে কি?
৫৫/১৩. অধ্যায়ঃ কোন কিছু ওয়াক্ফ করতঃ অন্যের কাছে হস্তান্তর না করলেও তা জায়িয।
৫৫/১৪. অধ্যায়ঃ যদি কেউ বলে যে, আমার বাড়ীটি আল্লাহর ওয়াস্তে সদকা এবং ফকীর বা অন্য কারো কথা উল্লেখ না করে তবে তা জায়িয। সে তা আত্মীয়দের মধ্যে কিংবা যাদের ইচ্ছা দান করিতে পারে।
৫৫/১৫. অধ্যায়ঃ কেউ যদি বলে আমার এই জমিটি কিংবা বাগানটি আমার মায়ের পক্ষ থেকে আল্লাহর ওয়াস্তে সদকা তবে তা জায়িয, যদিও তা কার জন্য তার বর্ণনা না দেয়।
৫৫/১৬. অধ্যায়ঃ কোন ব্যক্তি তার সম্পদের কিছু অংশ কিংবা তার গোলামদের কতকগুলি অথবা কিছু জন্তু-জানোয়ার সদকা বা ওয়াক্ফ করলে তা জায়িয।
৫৫/১৭. অধ্যায়ঃ যে ব্যক্তি তার উকিলকে সদকা প্রদান করিল, অতঃপর উকিল সেটি তাকে ফিরিয়ে দিল।
৫৫/১৮. অধ্যায়ঃ আল্লাহ তাআলার বানীঃ মীরাসের মাল বণ্টনের সময় যদি কোন আত্মীয়, ইয়াতিম ও মিসকিন হাজির থাকে, তাহলে তাত্থেকে তাদেরও কিছু প্রদান করিবে। (আন-নিসা ৮)
৫৫/১৯. অধ্যায়ঃ অকস্মাৎ কেউ মারা গেলে তার জন্য দান-খয়রাত আর মৃতের পক্ষ থেকে তার মানত আদায় করা।
৫৫/২০. অধ্যায়ঃ ওয়াক্ফ ও সদকায় সাক্ষী রাখা।
৫৫/২১. অধ্যায়ঃ আল্লাহ তাআলার বানীঃ “ইয়াতীমদেরকে তাদের ধন-সম্পদ দিয়ে দিবে এবং ভালোর সঙ্গে মন্দ বদল করিবে না। তোমাদের সঙ্গে তাদের সম্পদ মিলিয়ে গ্রাস করিবে না, তা মহাপাপ। তোমার যদি আশংকা হয় যে, ইয়াতীম মেয়েদের প্রতি সুবিচার করিতে পারবে না, তবে বিবাহ করিবে নারীদের মধ্যে, যাকে তোমাদের ভাল লাগে।” (আন নিসা ২-৩)
৫৫/২২. অধ্যায়ঃ আল্লাহ তাআলার বাণীঃ
৫৫/২৩. অধ্যায়ঃ আল্লাহ তাআলার বাণীঃ নিশ্চয় যারা ইয়াতিমের সম্পদ অন্যায়ভাবে খায়, তারা তো শুধু তাদের পেটে আগুন ভর্তি করছে; আর তারা সত্বরই দোজখের আগুনে জ্বলবে। (আন নিসা ১০)
৫৫/২৪. অধ্যায়ঃ আল্লাহ তাআলার বাণীঃ
৫৫/২৫. অধ্যায়ঃ আবাসে কিংবা সফরে ইয়াতীমদের থেকে খেদমত গ্রহণ করা, যখন তা তাদের জন্য কল্যাণকর হয় এবং মা ও মায়ের স্বামী কর্তৃক ইয়াতীমের প্রতি নযর রাখা।
৫৫/২৬. অধ্যায়ঃ যখন কেউ কোন জমি ওয়াক্ফ করে এবং তার সীমা বর্ণনা না করে তা বৈধ। সদকাহও তদ্রূপ।
৫৫/২৭. অধ্যায়ঃ কোন দল যদি তাদের শরীকী জমি ওয়াক্ফ করে তা জায়িয।
৫৫/২৮. অধ্যায়ঃ ওয়াক্ফ কিভাবে লিখিত হইবে?
৫৫/২৯. অধ্যায়ঃ গরীব, ধনী এবং মেহমানের জন্য ওয়াক্ফ করা।
৫৫/৩০. অধ্যায়ঃ মসজিদের জন্য জমি ওয়াক্ফ করা।
৫৫/৩১. অধ্যায়ঃ পশু, অশ্ব, আসবাবপত্র ও স্বর্ণ-রৌপ্য ওয়াক্ফ করা।
৫৫/৩২. অধ্যায়ঃ ওয়াক্ফের তদারককারীর ব্যয় নির্বাহ।
৫৫/৩৩. অধ্যায়ঃ যখন কেউ জমি বা কূপ ওয়াক্ফ করে এবং অপরাপর মুসলমানদের মত সে নিজেও পানি নেয়ার শর্ত আরোপ করে।
৫৫/৩৪. অধ্যায়ঃ ওয়াক্ফকারী যদি বলে, আমি একমাত্র আল্লাহর নিকট এর মূল্য পেতে চাই তা জায়িয।
৫৫/৩৫. অধ্যায়ঃ আল্লাহ তাআলার বাণীঃ
৫৫/৩৬. অধ্যায়ঃ অসীয়তকারী কর্তৃক মৃত ব্যক্তির ওয়ারিসদের অনুপস্থিতিতে মৃত ব্যক্তির দেনা পরিশোধ করা।
৫৫/১২. অধ্যায়ঃ ওয়াক্ফকারী তার ওয়াক্ফ দ্বারা উপকার গ্রহণ করিতে পারে কি?
উমর (রাদি.) শর্তারোপ করেছিলেন, যে ব্যক্তি ওয়াক্ফের মুতাওায়াল্লী হইবে, তার জন্য তা থেকে কিছু খাওয়াতে কোন দোষ নেই। ওয়াক্ফকারী নিজেও মুতাওয়াল্লী হইতে পারে, আর অন্য কেউও হইতে পারে। অনুরূপ যে ব্যক্তি উট বা অন্য কিছু আল্লাহর নামে উৎসর্গ করে তার জন্যও তা থেকে নিজে উপকৃত হওয়া বৈধ, যেমন অন্যদের জন্য তা থেকে উপকৃত হওয়া বৈধ, শর্তারোপ না করলেও।
২৭৫৪. আনাস (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ
নাবী (সাঃআঃ) একদা দেখিতে পেলেন যে, এক ব্যক্তি কুরবানীর উট হাঁকিয়ে নিয়ে যাচ্ছে। আল্লাহর রাসুল (সাঃআঃ) ব্যক্তিটিকে বলিলেন, এর উপর সওয়ার হও। সে বলিল, হে আল্লাহর রাসুল! এটি তো কুরবানীর উট। আল্লাহর রাসুল (সাঃআঃ) তৃতীয়বার বা চতুর্থবার তাকে বলিলেন, তার উপর সওয়ার হয়ে যাও, দুর্ভোগ তোমার জন্য কিংবা বলিলেন, তোমার জন্য আফসোস।
২৭৫৫. আবু হুরাইরা (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ
নাবী (সাঃআঃ) এক ব্যক্তিকে দেখিতে পেলেন যে, সে একটি কুরবানীর উট হাঁকিয়ে নিয়ে যাচ্ছে। আল্লাহর রাসুল (সাঃআঃ) তাকে বলিলেন, এর উপর সওয়ার হও। লোকটি বলিল, হে আল্লাহর রাসুল! এটি তো কুরবানীর উট। তিনি দ্বিতীয়বার কিংবা তৃতীয়বার বলিলেন, এর উপর সওয়ার হও, দুর্ভোগ তোমার জন্য।
৫৫/১৩. অধ্যায়ঃ কোন কিছু ওয়াক্ফ করতঃ অন্যের কাছে হস্তান্তর না করলেও তা জায়িয।
কেননা উমর (রাদি.) এই রকম ওয়াক্ফ করেছিলেন এবং বলেছিলেন, মুতাওয়াল্লীর জন্য তা থেকে কিছু খেতে দোষ নেই। তিনি নিজে মুতাওয়াল্লী হইবেন, না অন্য কেউ তা তিনি নির্দিষ্ট করেননি। নাবী (সাঃআঃ) আবু তালহা (রাদি.) -কে বলেন, আমার অভিমত এই যে, তুমি তা (বাগানটি) তোমার নিকটাত্মীয়দের দিয়ে দাও। আবু তালহা (রাদি.) বলেন, আমি তা-ই করব। অতঃপর তিনি তাহাঁর নিকটাত্মীয় ও চাচাত ভাইদের মধ্যে তা বণ্টন করে দিলেন।
৫৫/১৪. অধ্যায়ঃ যদি কেউ বলে যে, আমার বাড়ীটি আল্লাহর ওয়াস্তে সদকা এবং ফকীর বা অন্য কারো কথা উল্লেখ না করে তবে তা জায়িয। সে তা আত্মীয়দের মধ্যে কিংবা যাদের ইচ্ছা দান করিতে পারে।
আবু তালহা (রাদি.) যখন বলিলেন যে, আমার সবচেয়ে প্রিয় সম্পদ হল বায়রূহা বাগানটি এবং আমি তা আল্লাহর উদ্দেশে সদকা করলাম। তখন নাবী (সাঃআঃ) তা জায়িয রেখেছেন। কোন কোন ফকীহ বলেছেন, যতক্ষণ না কারো জন্য তা নির্দিষ্ট করে দেয়া হইবে, ততক্ষণ পর্যন্ত জায়িয হইবে না। কিন্তু প্রথম অভিমতটি অধিকতর সহীহ।
৫৫/১৫. অধ্যায়ঃ কেউ যদি বলে আমার এই জমিটি কিংবা বাগানটি আমার মায়ের পক্ষ থেকে আল্লাহর ওয়াস্তে সদকা তবে তা জায়িয, যদিও তা কার জন্য তার বর্ণনা না দেয়।
২৭৫৬. ইবনু আব্বাস (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ
সাদ ইবনু উবাদাহ (রাদি.) -এর মা মারা গেলেন এবং তিনি সেখানে অনুপস্থিত ছিলেন। পরে বলিলেন, হে আল্লাহর রাসুল! আমার মা আমার অনুপস্থিতিতে মারা যান। আমি যদি তাহাঁর পক্ষ থেকে কিছু সদকা করি, তাহলে কি তাহাঁর কোন উপকারে আসবে? তিনি বলিলেন, হ্যাঁ। সাদ (রাদি.) বলিলেন, তাহলে আমি আপনাকে সাক্ষী করছি আমার মিখরাফ্ নামক বাগানটি তাহাঁর জন্য সদকা করলাম।
৫৫/১৬. অধ্যায়ঃ কোন ব্যক্তি তার সম্পদের কিছু অংশ কিংবা তার গোলামদের কতকগুলি অথবা কিছু জন্তু-জানোয়ার সদকা বা ওয়াক্ফ করলে তা জায়িয।
২৭৫৭. কাব ইবনু মালিক (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, আমি বললাম, হে আল্লাহর রাসুল! আমি তাওবা হিসেবে আমার যাবতীয় মাল আল্লাহ ও আল্লাহর রসূলের উদ্দেশে সদকা করে মুক্ত হইতে চাই। আল্লাহর রাসুল (সাঃআঃ) বলিলেন, কিছু মাল নিজের জন্য রেখে দাও, তা তোমার জন্য উত্তম। আমি বললাম, তাহলে আমি আমার খায়বারের অংশটি নিজের জন্য রেখে দিলাম।
৫৫/১৭. অধ্যায়ঃ যে ব্যক্তি তার উকিলকে সদকা প্রদান করিল, অতঃপর উকিল সেটি তাকে ফিরিয়ে দিল।
২৭৫৮. ইসমাঈল (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) আনাস (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেছেন, যখন নাযিল হলো, “তোমরা যা ভালবাস তা থেকে ব্যয় না করা পর্যন্ত কখনো পুণ্য লাভ করিতে পারবে না।”-(আল-ইমরানঃ ৯২)। তখন আবু তালহা (রাদি.) আল্লাহর রাসুল (সাঃআঃ) -এর নিকট এসে বলেন, হে আল্লাহর রাসুল (সাঃআঃ)! আল্লাহ তাহাঁর কিতাবে বলেছেন, —– এবং আমার নিকট সবচেয়ে প্রিয় সম্পদ হলো বায়রূহা। আনাস (রাদি.) বলেন, এটি সে বাগান যেখানে আল্লাহর রাসুল (সাঃআঃ) তাশরীফ নিয়ে ছায়ায় বসতেন এবং এর পানি পান করিতেন। আবু তালহা (রাদি.) বলেন, এটি আল্লাহ ও তাহাঁর রসূলের উদ্দেশে দান করলাম। আমি এর বিনিময়ে সওয়াব ও আখিরাতের সঞ্চয়ের আশা রাখি। হে আল্লাহর রাসুল! আল্লাহ আপনাকে যেখানে ব্যয় করার নির্দেশ দেন সেখানে তা ব্যয় করুন। রাসুলুল্লাহ (সাঃআঃ) বলেন, বেশ, হে আবু তালহা! এটি লাভজনক সম্পদ। আমি তোমার নিকট হইতে তা গ্রহণ করলাম এবং তোমাকে ফিরিয়ে দিলাম। তা তুমি তোমার আত্মীয়-স্বজনদের মধ্যে বণ্টন করে দাও। অতঃপর আবু তালহা (রাদি.) তা আত্মীয়-স্বজনদের মধ্যে সদকা করে দিলেন। আনাস (রাদি.) বলেন যে, এদের মধ্যে উবাই এবং হাস্সান (রাদি.) -ও ছিলেন। হাস্সান তার অংশ মুআবিয়াহ (রাদি.) -এর নিকট বিক্রি করে দেন। জিজ্ঞেস করা হলো, তুমি কি আবু তালহা এর সদকাকৃত সম্পদ বিক্রি করে দিচ্ছ? হাস্সান (রাদি.) বলেন, আমি কি এক সা দিরহামের বিনিময়ে এক সা খেজুর বিক্রি করবো না? আনাস (রাদি.) বলেন, বাগানটি ছিল বনু হুদায়লা প্রাসাদের জায়গায় অবস্থিত, যা মুআবিয়াহ (রাদি.) নির্মাণ করেন।
৫৫/১৮. অধ্যায়ঃ আল্লাহ তাআলার বানীঃ মীরাসের মাল বণ্টনের সময় যদি কোন আত্মীয়, ইয়াতিম ও মিসকিন হাজির থাকে, তাহলে তাত্থেকে তাদেরও কিছু প্রদান করিবে। (আন-নিসা ৮)
২৭৫৯. ইবনু আব্বাস (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, লোকদের ধারণা উক্ত আয়াতটি মানসূখ হয়ে গেছে; কিন্তু আল্লাহর কসম। আয়াতটি মানসূখ হয়নি; বরং লোকেরা এর উপর আমল করিতে অনীহা প্রকাশ করছে। আত্মীয় দুধরনের- এক, আত্মীয় যারা ওয়ারিস হয়, এবং তারা উপস্থিতদের কিছু দিবে। দুই, এমন আত্মীয় যারা ওয়ারিস নয়, তারা উপস্থিতদের সঙ্গে সদালাপ করিবে এবং বলবে, তোমাদেরকে কিছু দেয়ার ব্যাপারে আমাদের কোন অধিকার নেই।
৫৫/১৯. অধ্যায়ঃ অকস্মাৎ কেউ মারা গেলে তার জন্য দান-খয়রাত আর মৃতের পক্ষ থেকে তার মানত আদায় করা।
২৭৬০. আয়েশা (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ
জনৈক ব্যক্তি নাবী (সাঃআঃ) -কে বলিলেন, আমার মা হঠাৎ মৃত্যুবরণ করিয়াছেন। আমার ধারণা হয় যে, যদি তিনি কথা বলিতে পারতেন তবে সদকা করিতেন। আমি কি তার পক্ষ হইতে সদকা করব? আল্লাহর রাসুল (রাদি.) বলিলেন, হ্যাঁ, তার পক্ষ হইতে সদকা করিতে পার।
২৭৬১. ইবনু আব্বাস (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ
সাদ ইবনু উবাদাহ (রাদি.) রাসুলুল্লাহ (সাঃআঃ) -এর নিকট জানতে চাইলেন যে, আমার মা মারা গেছেন এবং তার উপর মানত ছিল, রাসুলুল্লাহ (সাঃআঃ) বলিলেন, তুমি তার পক্ষ থেকে তা পূর্ণ কর।
৫৫/২০. অধ্যায়ঃ ওয়াক্ফ ও সদকায় সাক্ষী রাখা।
২৭৬২. ইবনু আব্বাস(রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ
বানু সাঈদাহর নেতা সাদ ইবনু উবাদাহ (রাদি.) -এর মা মারা গেলেন। তখন তিনি অনুপস্থিত ছিলেন। অতঃপর নাবী (সাঃআঃ) -এর নিকট এসে বলিলেন, হে আল্লাহর রাসুল! আমার মা আমার অনুপস্থিতিতে মারা গেছেন। এখন আমি যদি তাহাঁর পক্ষ থেকে সদকা করি, তবে তা কি তাহাঁর কোন উপকারে আসবে? তিনি বলেন, হ্যাঁ। সাদ (রাদি.) বলিলেন, তাহলে আপনাকে সাক্ষী করে আমি আমার মিখরাফের বাগানটি তাহাঁর উদ্দেশ্যে সদকা করলাম।
৫৫/২১. অধ্যায়ঃ আল্লাহ তাআলার বানীঃ “ইয়াতীমদেরকে তাদের ধন-সম্পদ দিয়ে দিবে এবং ভালোর সঙ্গে মন্দ বদল করিবে না। তোমাদের সঙ্গে তাদের সম্পদ মিলিয়ে গ্রাস করিবে না, তা মহাপাপ। তোমার যদি আশংকা হয় যে, ইয়াতীম মেয়েদের প্রতি সুবিচার করিতে পারবে না, তবে বিবাহ করিবে নারীদের মধ্যে, যাকে তোমাদের ভাল লাগে।” (আন নিসা ২-৩)
২৭৬৩. উরওয়াহ ইবনু যুবাইর (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ
তিনি আয়েশা (রাদি.) -কে জিজ্ঞেস করেনঃ (আরবী) “যদি আশংকা কর যে, তাদের মধ্যে সুবিচার করিতে পারবে না, তবে একজনকে অথবা তোমাদের স্বত্বাধীন ক্রীতদাসীকে”-(আন নিসা ৩)। আয়াতটির অর্থ কী? আয়েশা (রাদি.) বলিলেন, এখানে সেই ইয়াতীম মেয়েদের উদ্দেশ্য করা হয়েছে, যে তার অভিভাবকের লালন-পালনে থাকে। অতঃপর সে অভিভাবক তার রূপ-লাবণ্য ও ধন-সম্পদে আকৃষ্ট হয়ে, তার সম মানের মেয়েদের প্রচলিত মোহর থেকে কম দিয়ে তাকে বিয়ে করিতে চায়। অতএব যদি মোহর পূর্ণ করার ব্যাপারে এদের প্রতি ইনসাফ করিতে না পারে তবে ঐ অভিভাবকদেরকে নিষেধ করা হয়েছে এদের বিবাহ করিতে এবং নির্দেশ দেয়া হয়েছে তাদের ব্যতীত অন্য মেয়েদের তোমরা বিবাহ করিবে। আয়েশা (রাদি.) বলেন, অতঃপর লোকেরা আল্লাহর রাসুল (সাঃআঃ) -এর নিকট এ সম্পর্কে জানতে চাইলে আল্লাহ তাআলা এই আয়াত নাযিল করেনঃ —- “আর লোকেরা আপনার কাছে নারীদের সম্বন্ধে বিধান জানতে চায়। বলুনঃ আল্লাহ তাদের সম্বন্ধে তোমাদের ব্যবস্থা দিচ্ছেন”- (আন-নিসা ১২৭)। আয়েশা (রাদি.) বলেন, আল্লাহ তাআলা এই আয়াতে বর্ণনা করেন যে, ইয়াতীম মেয়েরা সুন্দরী ও সম্পদশালীনী হলে অভিভাবকেরা তাদের বিয়ে করিতে আগ্রহী হয়, কিন্তু পূর্ণ মোহর প্রদান করে না। আবার ইয়াতীম মেয়েরা গরীব হলে এবং সুশ্রী না হলে তাদের বিয়ে করিতে চায় না বরং অন্য মেয়ে তালাশ করে। আয়েশা (রাদি.) বলেন যে, আকর্ষণীয়া না হলে তারা যেমন ইয়াতীম মেয়েদের পরিত্যাগ করে, তেমনি আকর্ষণীয়া মেয়েদেরও তারা বিয়ে করিতে পারবে না, যদি তাদের ইনসাফের ভিত্তিতে পূর্ণ মোহর প্রদান এবং তাদের হক ন্যায়সঙ্গতভাবে আদায় না করে।
৫৫/২২. অধ্যায়ঃ আল্লাহ তাআলার বাণীঃ
আর তোমরা ইয়াতিমদের পরীক্ষা করে নিবে, যে পর্যন্ত না তারা বিয়ের বয়সে পৌঁছে। যদি তাদের মধ্যে ভাল-মন্দ বিচারের জ্ঞান দেখিতে পাও, তবে তাদের মাল তাদের হাতে ফিরিয়ে দিবে। ইয়াতিমের মাল প্রয়োজনাতিরিক্ত খরচ কর না এবং তারা বড় হয়ে যাবে মনে করে তাড়াতাড়ি খেয়ে ফেল না। যে স্বচ্ছল সে যেন ইয়াতিমের মাল খরচ করা থেকে বিরত থাকে এবং যে অভাবগ্রস্ত সে যেন সঙ্গত পরিমাণে ভোগ করে। যখন তোমরা তাদের হাতে তাদের সম্পদ প্রত্যর্পণ করিবে, তখন সাক্ষী রাখবে। অবশ্যই হিসাব গ্রহণে আল্লাহই যথেষ্ট। পুরুষদের জন্য অংশ আছে সে সম্পত্তিতে যা পিতা-মাতা ও নিকট আত্মীয়রা রেখে যায়; এবং নারীদের জন্যও অংশ আছে সে সম্পত্তিতে যা পিতা-মাতা ও নিকট আত্মীয়রা রেখে যায়, হোক তা অল্প কিংবা বেশী। তা অকাট্য নির্ধারিত অংশ। (আন নিসা ৬-৭)
باب وَمَا لِلْوَصِيِّ أَنْ يَعْمَلَ فِي مَالِ الْيَتِيمِ، وَمَا يَأْكُلُ مِنْهُ بِقَدْرِ عُمَالَتِهِ
—- অর্থ যথেষ্ট আর অসী ইয়াতীমের মাল কীভাবে ব্যবহার করিবে এবং তার শ্রমের অনুপাতে কী পরিমাণ সে ভোগ করিতে পারবে।
২৭৬৪. ইবনু উমর (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ
আল্লাহর রাসুল (সাঃআঃ) -এর সময়ে উমর (রাদি.) নিজের কিছু সম্পত্তি সদকা করেছিলেন, তা ছিল, ছামাগ নামে একটি খেজুর বাগান। উমর (রাদি.) বলেন, হে আল্লাহর রাসুল! আমি একটি সম্পদ পেয়েছি, যা আমার নিকট খুবই পছন্দনীয়। আমি সেটি সদকা করিতে চাই। নাবী (সাঃআঃ) বলেন, মূল সম্পদটি এ শর্তে সদকা কর যে তা বিক্রি করা যাবে না, দান করা যাবে না এবং কেউ ওয়ারিস হইবে না, বরং তার ফল দান করা হইবে। অতঃপর উমর (রাদি.) সেটি এভাবেই সদকা করিলেন। তার এ সদকা ব্যয় হইবে আল্লাহর রাস্তায়, দাস মুক্তির ব্যাপারে, মিসকিন, মেহমান, মুসাফির ও আত্মীয়দের জন্য। এর যে মুতাওায়াল্লী হইবে তার জন্য তা থেকে সঙ্গত পরিমাণ আহার করলে কিংবা বন্ধু-বান্ধবকে খাওয়ালে কোন দোষ নেই। তবে তা সঞ্চয় করা যাবে না।
২৭৬৫. আয়েশা (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, (আল্লাহ তাআলার বাণীঃ) যে বিত্তবান সে যেন বিরত থাকে আর যে বিত্তহীন সে যেন সংগত পরিমাণ ভোগ করে (৪:৬)। আয়াতটি ইয়াতীমের অভিভাবক সম্বন্ধে নাযিল হয়েছে। অভিভাবক যদি অভাবগ্রস্ত হয়, তাহলে ন্যায়সঙ্গতভাবে ইয়াতীমের সম্পত্তি থেকে খেতে পারবে।
৫৫/২৩. অধ্যায়ঃ আল্লাহ তাআলার বাণীঃ নিশ্চয় যারা ইয়াতিমের সম্পদ অন্যায়ভাবে খায়, তারা তো শুধু তাদের পেটে আগুন ভর্তি করছে; আর তারা সত্বরই দোজখের আগুনে জ্বলবে। (আন নিসা ১০)
২৭৬৬. আবু হুরাইরা (রাদি.) সূত্রে নাবী (সাঃআঃ) হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, সাতটি ধ্বংসকারী বিষয় থেকে তোমরা বিরত থাকবে। সাহাবীগণ বলিলেন, হে আল্লাহর রাসুল! সেগুলো কী? তিনি বলিলেন, (১) আল্লাহর সাঙ্গে শরীক করা (২) যাদু (৩) আল্লাহ তাআলা যাকে হত্যা করা হারাম করিয়াছেন, শরীয়ত সম্মত কারন ব্যতিরেকে তাকে হত্যা করা (৪) সুদ খাওয়া (৫) ইয়াতীমের মাল গ্রাস করা (৬) রণক্ষেত্র থেকে পালিয়ে যাওয়া এবং (৭) সরল স্বভাবা সতী-সাধ্বী মুমিনাদের অপবাদ দেয়া।
৫৫/২৪. অধ্যায়ঃ আল্লাহ তাআলার বাণীঃ
তারা আপনাকে ইয়াতিমদের সম্পর্কে জিজ্ঞেস করে। আপনি বলুনঃ তাদের সুব্যবস্থা করা উত্তম। তবে যদি তোমরা তাদের সাথে মিলেমিশে একত্রে থাক তাহলে মনে করিবে তারা তো তোমাদের ভাই। আর আল্লাহ জানেন কে ফাসাদ সৃষ্টিকারী এবং কে মঙ্গলকামী। আর আল্লাহ ইচ্ছা করলে তোমাদের কষ্টে ফেলতে পারতেন। নিশ্চয় তিনি পরাক্রমশালী ও প্রজ্ঞাময়। (আল-বাক্বারাহ ২২০)
{لأَعْنَتَكُمْ} لأَحْرَجَكُمْ وَضَيَّقَ عَلَيْكُمْ، وَعَنَتْ خَضَعَتْ.
—– এর অর্থ তোমাদের ক্ষতিগ্রস্ত এবং কষ্টে ফেলতে পারতেন। —– শব্দের অর্থঃ নত হল।
২৭৬৭. নাফি (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ
ইবনু উমর (রাদি.) কখনো কারো অসীয়ত প্রত্যাখ্যান করেননি। ইবনু সীরীন (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) -এর নিকট ইয়াতীমের মাল সম্পর্কে সবচেয়ে প্রিয় বিষয় ছিল, অভিভাবক ও শুভাকাঙক্ষীদের একত্রিত হওয়া, যাতে তারা তার কল্যাণের কথা বিবেচনা করে। তাউস (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) -এর নিকট ইয়াতীমের ব্যাপারে কিছু জিজ্ঞেস করা হলে তিনি পাঠ করিতেনঃ “আল্লাহ জানেন কে হিতকারী আর কে অনিষ্টকারী।” (আল-বাকারা ২২০) আত্বা (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) বলেন, ইয়াতীম ছোট হোক কিংবা বড়, অভিভাবক তার অংশ থেকে প্রত্যেকের জন্য পরিমাণ মত ব্যয় করিতে পারবে।
৫৫/২৫. অধ্যায়ঃ আবাসে কিংবা সফরে ইয়াতীমদের থেকে খেদমত গ্রহণ করা, যখন তা তাদের জন্য কল্যাণকর হয় এবং মা ও মায়ের স্বামী কর্তৃক ইয়াতীমের প্রতি নযর রাখা।
২৭৬৮. আনাস (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, আল্লাহর রাসুল (সাঃআঃ) যখন মদীনায় এলেন, তখন তাহাঁর কোন খাদিম ছিল না। আবু তালহা (রাদি.) আমার হাত ধরে আল্লাহর রাসুল (সাঃআঃ) -এর নিকট আমাকে নিয়ে গেলেন এবং বলিলেন, হে আল্লাহর রাসুল! আনাস একজন বুদ্ধিমান ছেলে। সে আপনার খেদমত করিবে। অতঃপর সফরে ও আবাসে আমি তাহাঁর খেদমত করেছি। আমার কোন কাজ সম্পর্কে তিনি কখনো বলেননি, তুমি এরূপ কেন করলে? কোন কাজ না করলে তিনি বলেননি, তুমি এটি এরকম কেন করলে না?
৫৫/২৬. অধ্যায়ঃ যখন কেউ কোন জমি ওয়াক্ফ করে এবং তার সীমা বর্ণনা না করে তা বৈধ। সদকাহও তদ্রূপ।
২৭৬৯. আনাস ইবনু মালিক (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ
মদীনায় আনসারদের মধ্যে আবু তালহার খেজুর বাগান-সম্পদ সবচেয়ে অধিক ছিল। আর সকল সম্পদের মধ্যে তাহাঁর নিকট সবচেয়ে প্রিয় সম্পদ ছিল মাসজিদের সামনে অবস্থিত বায়রুহা বাগানটি। আল্লাহর রাসুল (সাঃআঃ) সে বাগানে যেতেন এবং এর সুস্বাদু পানি পান করিতেন। আনাস (রাদি.) বলেন, যখন নাযিল হলঃ “তোমরা যা ভালবাস তা থেকে ব্যয় না করা পর্যন্ত তোমরা নেকী হাসিল করিতে পারবে না।” আবু তালহা (রাদি.) দাঁড়িয়ে বলেন, হে আল্লাহর রাসুল, আল্লাহ বলেছেনঃ “তোমরা যা ভালবাস, তা থেকে ব্যয় না করা পর্যন্ত তোমরা কখনো নেকী হাসিল করিতে পারবে না।” আমার নিকট সবচেয়ে প্রিয় সম্পদ হল বায়রুহা। সেটি আল্লাহর নামে সদকা। আমি আল্লাহর নিকট এর সওয়াব ও ক্বিয়ামাতের সঞ্চয়ের আশা করি। আল্লাহর মর্জি অনুযায়ী আপনি তা ব্যয় করুন। আল্লাহর রাসুল (সাঃআঃ) বলেন, ভাল কথা! এটি লাভজনক সম্পদ অথবা (বলিলেন), অস্থায়ী সম্পদ। ইবনু মাসলামা সন্দেহ পোষণ করেন। [রাসুলুল্লাহ (সাঃআঃ) বলেন] তুমি যা বলেছ, আমি তা শুনিয়াছি। আমার মতে তুমি তা তোমার আত্নীয়দের মধ্যে বন্টন করে দাও। আবু তালহা (রাদি.) বলেন, হে আল্লাহর রাসুল! আমি তা-ই করব। অতঃপর তিনি তা তার আত্নীয় ও চাচাতো ভাইদের মধ্যে বন্টন করে দিলেন। ইসমাঈল, আবদুল্লাহ ইবনু ইউসুফ, ইয়াহইয়া ইবনু ইয়াহইয়া (রাদি.) মালিক (রাদি.) -এর (সন্দেহ ব্যতীতই) আরবী (অস্থায়ী) বর্ণনা করিয়াছেন।
২৭৭০. ইবনু আব্বাস (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ
এক সাহাবী আল্লাহর রাসুল (সাঃআঃ) -কে বলিলেন যে, তার মা মারা গেছেন। তার পক্ষ থেকে যদি আমি সদকা করি তাহলে তা কি তার উপকারে আসবে? তিনি বলিলেন, হ্যাঁ। সাহাবী বলিলেন, আমার একটি বাগান আছে, আপনাকে সাক্ষী রেখে আমি তার পক্ষ থেকে সদকা করলাম।
৫৫/২৭. অধ্যায়ঃ কোন দল যদি তাদের শরীকী জমি ওয়াক্ফ করে তা জায়িয।
২৭৭১. আনাস (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, নাবী (সাঃআঃ) মসজিদ তৈরির নির্দেশ দিলেন। অতঃপর বলিলেন, হে বনূ নাজ্জার! তোমরা এই বাগানটির মূল্য নির্ধারণ করে আমার নিকট বিক্রি কর। তারা বলিল, না। আল্লাহর কসম! আমরা একমাত্র আল্লাহ ছাড়া কারো কাছে এর মূল্য চাই না।
৫৫/২৮. অধ্যায়ঃ ওয়াক্ফ কিভাবে লিখিত হইবে?
২৭৭২. ইবনু উমর (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, উমর (রাদি.) খায়বারের কিছু জমি লাভ করেন। তিনি আল্লাহর রাসুল (সাঃআঃ) -এর নিকট এসে বলিলেন, আমি এমন ভাল একটি জমি পেয়েছি, যা ইতোপূর্বে কখনো পাইনি। আপনি এ সম্পর্কে আমাকে কী নির্দেশ দেন? তিনি বলেন, তুমি ইচ্ছা করলে আসল জমিটি ওয়াক্ফ করে তার উৎপন্ন সদকা করিতে পার। উমর (রাদি.) এটি গরীব, আত্নীয়-স্বজন, গোলাম আযাদ, আল্লাহর পথে, মেহমান ও মুসাফিরদের জন্য এ শর্তে সদকা করিলেন যে, আসল জমি বিক্রি করা যাবে না, কাউকে দান করা যাবে না, কেউ এর ওয়ারিস হইবে না। তবে যে এর মুতাওয়াল্লী হইবে তার জন্য তা থেকে সঙ্গত পরিমাণ খেতে বা বন্ধু-বান্ধবকে খাওয়ানোতে কোন দোষ নেই। তবে এ থেকে সঞ্চয় করা যাবে না।
৫৫/২৯. অধ্যায়ঃ গরীব, ধনী এবং মেহমানের জন্য ওয়াক্ফ করা।
২৭৭৩. ইবনু উমর (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ
উমর (রাদি.) খায়বারে কিছু সম্পদ লাভ করেন এবং নাবী (সাঃআঃ) -এর নিকট এসে তাঁকে অবহিত করেন। তিনি বলিলেন, তুমি ইচ্ছা করলে সেটি সদকা করিতে পার। অতঃপর তিনি সেটি অভাবগ্রস্ত, মিসকীন, আত্নীয়-স্বজন ও মেহমানদের মধ্যে সদকা করে দিলেন।
৫৫/৩০. অধ্যায়ঃ মসজিদের জন্য জমি ওয়াক্ফ করা।
২৭৭৪. আনাস ইবনু মালিক (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, আল্লাহর রাসুল (সাঃআঃ) যখন মদীনায় এলেন তখন মসজিদ নির্মানের নির্দেশ দিলেন এবং তিনি বলিলেন, হে বনূ নাজ্জার! মূল্য নির্ধারণ করে তোমাদের এ বাগানটি আমার নিকট বিক্রি করে দাও। তারা বলিল, না, আল্লাহর কসম! মহান আল্লাহ ছাড়া কারো কাছে আমরা এর মূল্য চাই না।
৫৫/৩১. অধ্যায়ঃ পশু, অশ্ব, আসবাবপত্র ও স্বর্ণ-রৌপ্য ওয়াক্ফ করা।
যুহরী (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) এমন এক ব্যক্তি সম্পর্কে বলেন, যে আল্লাহর পথে এক হাজার স্বর্ণমুদ্রা দান করিল এবং তার এক ব্যবসায়ী গোলামকে তা দিল, সে যেন তা দিয়ে ব্যবসা করে আর লভ্যাংশটি মিসকীন ও আত্নীয়-স্বজনের মধ্যে সদকা করে দিল। লোকটি সেই এক হাজার মুদ্রার লভ্যাংশ থেকে খেতে পারবে কি? যদিও সে এর লভ্যাংশটি মিসকীনদের জন্য সদকা করেনি, যুহরী (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) বলেন, তা থেকে সে নিজে খেতে পারবে না।
২৭৭৫. ইবনু উমর (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ
উমর (রাদি.) এক ব্যক্তিকে তার একটি ঘোড়া আল্লাহর রাস্তায় দিয়ে দেন, যেটি আল্লাহর রাসুল (সাঃআঃ) তাকে আরোহণ করার জন্য দিয়েছিলেন, তিনি এক ব্যক্তিকে তা আরোহণ করার জন্য দিলেন। উমর (রাদি.) -কে জানান হলো যে, ঘোড়াটি সে ব্যক্তি বিক্রির জন্য রেখে দিয়েছে। তিনি আল্লাহর রাসুল (সাঃআঃ) -কে সেটি ক্রয় করার ব্যাপারে জিজ্ঞেস করিলেন। তিনি বলিলেন, তুমি তা ক্রয় করিবে না এবং যা সদকা করে দিয়েছ তা আর ফিরিয়ে নিও না।
৫৫/৩২. অধ্যায়ঃ ওয়াক্ফের তদারককারীর ব্যয় নির্বাহ।
২৭৭৬. আবু হুরাইরা (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ
আল্লাহর রাসুল (সাঃআঃ) বলেন, আমার উত্তরাধিকারীরা কোন স্বর্ণ মুদ্রা এবং রৌপ্য মুদ্রা ভাগাভাগি করিবে না, বরং আমি যা কিছু রেখে গেলাম তা থেকে আমার স্ত্রীদের খরচ এবং কর্মচারীদের পারিশ্রমিক দেয়ার পর যা অবশিষ্ট থাকে তা সদকা।
২৭৭৭. ইবনু উমর (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ
উমর (রাদি.) তাহাঁর ওয়াক্ফে এই শর্তারোপ করেন যে, মুতাওয়াল্লী তা থেকে নিজে খেতে পারবে এবং বন্ধু-বান্ধবকেও খাওয়াতে পারবে, তবে সম্পদ জমা করিতে পারবে না।
৫৫/৩৩. অধ্যায়ঃ যখন কেউ জমি বা কূপ ওয়াক্ফ করে এবং অপরাপর মুসলমানদের মত সে নিজেও পানি নেয়ার শর্ত আরোপ করে।
আনাস (রাদি.) একটি ঘর ওয়াক্ফ করেন। যখন তিনি সেখানে আসতেন, তখন তাতে অবস্থান করিতেন। যুবায়র (রাদি.) তার ঘর সদকা করে তার কন্যাদের মধ্যে যারা তালাক প্রাপ্তা তাদের সম্পর্কে বলেছিলেন যে, কোন প্রকার ক্ষতিসাধন না করে তারা এখানে বসবাস করিতে পারবে; এবং তাদেরও যেন কোন কষ্ট দেয়া না হয়। তবে তারা যদি স্বামী গ্রহণ করে অভাবমুক্ত হয়ে যায় তাহলে সেখানে তাদের হক থাকবে না। ইবনু উমর (রাদি.) তার পিতা উমর (রাদি.) -এর ওয়ারিস হিসেবে যে ঘরটি পেয়েছিলেন সেটি তার অভাবগ্রস্ত বংশধরদের বসবাসের জন্য নির্ধারিত করে দিয়েছিলেন।
২৭৭৮. আবদুর রহমান (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ
উসমান (রাদি.) অবরুদ্ধ হলে তিনি উপর থেকে সাহাবীদের প্রতি দৃষ্টি দিয়ে বলিলেন, আমি আপনাদের আল্লাহর কসম দিয়ে বলছি, আর আমি নাবী (সাঃআঃ) -এর সাহাবীদেরকেই আল্লাহর কসম দিয়ে বলছি, আপনারা কি জানেন না যে, আল্লাহর রাসুল (সাঃআঃ) বলেছিলেন, যে ব্যক্তি রূমার কুপটি খনন করে দিবে সে জান্নাতী এবং আমি তা খনন করে দিয়েছি। আপনারা কি জানেন না যে, তিনি বলেছিলেন, যে ব্যক্তি তাবূকের যুদ্ধে সেনাদের সামগ্রীর ব্যবস্থা করে দিবে, সে জান্নাতী এবং আমি তা ব্যবস্থা করে দিয়েছিলাম। বর্ণনাকারী বলেন, সাহাবীগণ তাহাঁর কথা সত্য বলে স্বীকার করিলেন। উমর (রাদি.) তাহাঁর কথা সম্পর্কে বলেছিলেন, মুতওয়াল্লীর জন্য তা থেকে আহার করিতে কোন দোষ নেই। ওয়াক্ফকারী কখনো নিজে মুতওয়াল্লী হয় আবার কখনো অপর ব্যক্তি হয়। এ ব্যাপারে সকলের জন্য প্রশস্ততা রয়েছে।
৫৫/৩৪. অধ্যায়ঃ ওয়াক্ফকারী যদি বলে, আমি একমাত্র আল্লাহর নিকট এর মূল্য পেতে চাই তা জায়িয।
২৭৭৯. আনাস (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন নাবী (সাঃআঃ) বলিলেন, হে বনূ নাজ্জার! তোমাদের বাগানটি মূল্য নির্ধারণ করে আমার নিকট বিক্রি করে দাও। তারা বলিল, আমরা এর মূল্য একমাত্র আল্লাহ ছাড়া কারো কাছে চাই না।
৫৫/৩৫. অধ্যায়ঃ আল্লাহ তাআলার বাণীঃ
ওহে যারা ঈমান এনেছ! তোমাদের মধ্যে যখন কোন ব্যক্তির মৃত্যু উপস্থিত হয় তখন তোমাদের মধ্য থেকে দুজন ন্যায়পরায়ণ লোককে অসিয়াত করার সময় সাক্ষী রাখবে। …………… আল্লাহ ফাসিক লোকদের সৎ পথে পরিচালিত করেন না। (আল মায়িদাহ ১০৬-১০৮)
২৭৮০. ইবনু আব্বাস (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, সাহম গোত্রের এক ব্যক্তি তামীম দারী ও আদী ইবনু বাদ্দা (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) -এর সঙ্গে সফরে বের হন এবং সাহম গোত্রের ব্যক্তিটি এমন এক স্থানে মারা যান, যেখানে কোন মুসলিম ছিল না। তারা দুজন তার পরিত্যক্ত জিনিস পত্র নিয়ে ফিরে আসলে মৃতের আত্নীয়-স্বজন তার মধ্যে স্বর্ণ খচিত একটি রুপার পেয়ালা পেলেন না। এ সম্পর্কে তাদের দুজনকে আল্লাহর রাসুল (সাঃআঃ) কসম করালেন। অতঃপর পেয়ালাটি মক্কায় পাওয়া গেল। (যাদের নিকট পাওয়া গেল) তারা বলিল, আমরা এটি তামীম ও আদী (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) -এর নিকট থেকে খরিদ করেছি। অতঃপর মৃতের আত্মীয়দের মধ্য থেকে দুব্যক্তি দাঁড়িয়ে কসম করে বলে, এ দুজনের সাক্ষ্য থেকে আমাদের সাক্ষ্য অধিক গ্রহণীয়। নিশ্চয়ই এ পেয়ালাটি তাদের আত্মীয়ের। বর্ণনাকারী বলেন, তাদের সম্বন্ধে এই আয়াতটি অবতীর্ণ হয়ঃ ——- (আল-মায়িদাহ : ১০৬)
৫৫/৩৬. অধ্যায়ঃ অসীয়তকারী কর্তৃক মৃত ব্যক্তির ওয়ারিসদের অনুপস্থিতিতে মৃত ব্যক্তির দেনা পরিশোধ করা।
২৭৮১. জাবির ইবনু আবদুল্লাহ আনসারী (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ
তার পিতাকে উহুদের যুদ্ধে শহীদ করা হয়। তিনি ছটি কন্যা সন্তান রেখে যান আর তাহাঁর উপর ঋণও রেখে যান। খেজুর কাটার সময় হলে আমি আল্লাহর রাসুল (সাঃআঃ) -এর নিকট এসে বললাম, হে আল্লাহর রাসুল! আপনি জানেন যে, আমার পিতাকে উহুদের যুদ্ধে শহীদ করা হয়েছে আর তিনি অনেক ঋণ রেখে গেছেন। আমার মনে চায় যে, পাওনাদাররা আপনার সঙ্গে দেখা করুক। আল্লাহর রাসুল (সাঃআঃ) বলিলেন, তুমি যাও। এক এক রকম খেজুর এক এক স্থানে জমা কর। আমি তা-ই করলাম। অতঃপর তাঁকে অনুরোধ করে নিয়ে এলাম। পাওনাদাররা যখন তাঁকে দেখল, তখন তারা আমার নিকট জোর তাগাদা করিতে লাগল। তিনি তাদের এরূপ করিতে দেখে খেজুরের বড় স্তুপটির চারদিকে তিনবার ঘুরলেন, অতঃপর তার উপর বসে পড়লেন। অতঃপর বলিলেন, তোমার পাওনাদারদের ডাক। তিনি মেপে মেপে তাদের পাওনা আদায় করিতে লাগলেন এবং শেষ পর্যন্ত আল্লাহ আমার পিতার সমস্ত ঋণ আদায় করে দিলেন। আর আল্লাহর কসম, আমি এতেই সন্তুষ্ট যে, আমার পিতার ঋণ আল্লাহ পরিশোধ করে দেন এবং আমি আমার বোনদের নিকট একটি খেজুরও নিয়ে না ফিরি। কিন্তু আল্লাহর কসম! সমস্ত স্তুপই যেমন ছিল তেমন রয়ে গেল। আমি সেই স্তুপটির দিকে বিশেষভাবে তাকিয়ে ছিলাম, যার উপর আল্লাহর রাসুল (সাঃআঃ) বসেছিলেন। মনে হলো যে, তা থেকে একটি খেজুরও কমেনি।
আবু আবদুল্লাহ (ইমাম বুখারী) (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) বলেন, (আরবী) এর অর্থ হলো। (আরবী) অর্থাৎ আমার নিকট জোর তাগাদা করিতে লাগল। মহান আল্লাহর বাণীঃ “আমি কিয়ামাত পর্যন্ত স্থায়ী পারস্পরিক শত্রুতা ও বিদ্বেষ তাদের মধ্যে সঞ্চারিত করে দিয়েছি”। (আল-মায়িদাহ ১৪)
Leave a Reply