ওসিয়াত প্রসঙ্গে । ওয়াকফ ও মৃতের পক্ষ হইতে সদাক্বাহ করা
ওসিয়াত প্রসঙ্গে । ওয়াকফ ও মৃতের পক্ষ হইতে সদাক্বাহ করা , এই অধ্যায়ে মোট হাদীস ২৩ টি (২৮৬২ – ২৮৮৪)>>আবুদ দাউদ শরীফ এর মুল সুচিপত্র পড়ুন
অধ্যায় – ১৮ঃ ওসিয়াত প্রসঙ্গে, অনুচ্ছেদঃ ১-১৭=১৭টি, হাদীসঃ (২৮৬২-২৮৮৪)=২৩টি
অনুচ্ছেদ-১: [সম্পদশালীর] ওসিয়াত সম্পর্কে
অনুচ্ছেদ-২: ওসিয়াতকারীর নিজ সম্পদের কতটুকু ওসিয়াত করা বৈধ নয়
অনুচ্ছেদ-৩: ওসিয়াতের দ্বারা ক্ষতিসাধন অন্যায়
অনুচ্ছেদ-৪: ওসিয়াতকৃত সম্পদের তত্ত্বাবধায়ক হওয়া
অনুচ্ছেদ-৫: পিতা-মাতা ও নিকটআত্নীয়ের জন্য ওসিয়াত বাতিল
অনুচ্ছেদ-৬: উত্তরাধিকারদের জন্য ওসিয়াত করা
অনুচ্ছেদ-৭: ইয়াতীমের খাদ্যের সাথে নিজের খাদ্য মিশ্রণ করা
অনুচ্ছেদ-৮: ইয়াতীমের মাল থেকে অভিভাবকের কিছু নেয়া
অনুচ্ছেদ-৯: ইয়াতীমের মেয়াদকাল কখন শেষ হয়
অনুচ্ছেদ-১০: ইয়াতীমের মাল ভক্ষণে কঠোর হুঁশিয়ারী
অনুচ্ছেদ-১১: মৃতের কাফন তার সমস্ত মালের মধ্যে গণ্য
অনুচ্ছেদ-১২: কেউ কোন জিনিস দান করার পর পুনরায় মিরাসী সূত্রে তার মালিক হলে
অনুচ্ছেদ-১৩: যে ব্যক্তি কিছু ওয়াকফ করলো
অনুচ্ছেদ-১৪: মৃতের পক্ষ হইতে সদাক্বাহ করা
অনুচ্ছেদ-১৫: যে ব্যক্তি ওসিয়াত না করে মারা গেছে তার পক্ষ হইতে সদাক্বাহ করা
অনুচ্ছেদ-১৬: মৃত কাফিরের ওসিয়াত পূরণ করা মুসলিম ওয়ালীর জন্য অত্যাবশ্যক কিনা?
অনুচ্ছেদ-১৭: ঋণগ্রস্থ মৃতের দেনা পরিশোধে ওয়ারিসদের সময় দেয়া ও সদয় হওয়া
অনুচ্ছেদ-১: [সম্পদশালীর] ওসিয়াত সম্পর্কে
২৮৬২. আবদুল্লাহ ইবনি উমার [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলেনঃ কোন মুসলিমের কাছে ওসিয়াত করার মত সম্পদ থাকলে, তার নিজের কাছে ওসিয়াতনামা না লিখে রেখে দুই রাতও অতিবাহিত করার অধিকার তার নেই।
হাদিসের তাহকিকঃ সহিহ হাদিস
২৮৬৩. আয়িশাহ [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] তাহাঁর ইন্তেকালের সময় কোন দীনার, দিরহাম, উট এবং বকরী কিছু্ই রেখে যাননি এবং তিনি কোন ওসিয়াতও করেননি।
হাদিসের তাহকিকঃ সহিহ হাদিস
অনুচ্ছেদ-২: ওসিয়াতকারীর নিজ সম্পদের কতটুকু ওসিয়াত করা বৈধ নয়
২৮৬৪. আমির ইবনি সাদ [রহমাতুল্লাহি আলাইহি] হইতে তার পিতার হইতে বর্ণীতঃ
তিনি বলেন, আমার পিতা [সাদ] একবার কঠিন রোগে আক্রান্ত হলে রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] তাহাকে দেখিতে আসলেন। তিনি বলেন, হে আল্লাহর রাসূল! আমার প্রচুর সম্পদ আছে। একটি কন্যা সন্তান ছাড়া আমার কোন ওয়ারিস নাই। কাজেই দুই-তৃতীয়াংশ সম্পদ সদাক্বাহ করবো কি? তিনি বলিলেনঃনা। তিনি আবার জিজ্ঞেস করেন, অর্ধেক সম্পদ? তিনি বলিলেনঃ না। তিনি আবার জিজ্ঞেস করেন, এক-তৃতীয়াংশ? তিনি বলিলেন, হাঁ, তিন ভাগের এক ভাগ ওসিয়াত করিতে পারো। তবে এটাও বেশি হয়ে যাচ্ছে। তোমার ওয়ারিসরা অন্যের নিকট ভিক্ষা চাইবে-তাহাদেরকে এমন দুঃস্থ অবস্থায় রেখে যাওয়ার চাইতে সচ্ছল অবস্থায় রেখে যাওয়া অনেক উত্তম। তুমি তাহাদের জন্য যা খরচ করিবে, তোমাকে তার প্রতিদান দেয়া হইবে। এমনকি তুমি তোমার স্ত্রীর মুখে যে খাবারের লোকমা তুলে দাও তারও প্রতিদান পাবে। আমি বলিলাম, হে আল্লাহর রাসূল! আমি কি আমার হিজরাতের নেকী থেকে পরিত্যক্ত হবো? তিনি বলিলেনঃ আমার হিজরাতের পর তুমি যদি [মাক্কাহ্তে] থেকে যাও এবং আমার অনুপস্থিতিতেও আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনের জন্য নেক আমল অব্যাহত রাখো তাহলে তোমার মর্যাদা বৃ্দ্ধি পাবে। আশা করি তুমি বেঁচে থাকিবে এবং একদল তোমার দ্বারা উপকৃত হইবে, আর অন্যদল তোমার দ্বারা ক্ষতিগ্রস্থ হইবে। অতঃপর তিনি এ দুআ করলেনঃ হে আল্লাহ! আমার সাহাবীদের হিজরাত পরিপূর্ণ করুন; তাহাদেরকে হিজরাতের পূর্বাবস্থায় ফিরিয়ে দিবেন না।” কিন্তু নিঃস্ব সাঈদ ইবনি খাওলাহ [রাদি.] মাক্কাহ্য় মারা যান। রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] তাহাকে স্মরণ করে অনুশোচনা করিতেন।
হাদিসের তাহকিকঃ সহিহ হাদিস
অনুচ্ছেদ-৩: ওসিয়াতের দ্বারা ক্ষতিসাধন অন্যায়
২৮৬৫. আবু হুরাইরাহ [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
তিনি বলেন, এক ব্যক্তি রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ]-কে বললো, হে আল্লাহর রাসূল! কোন ধরনের সদাক্বাহ উত্তম? তিনি বলেনঃ সুস্থ ও সচ্ছল অবস্থায় সদাক্বাহ করা। যখন তুমি আরো বেঁচে থাকার আশা রাখো এবং গরীব হওয়ারও আশঙ্কা করো। তুমি এতটা বিলম্ব করিবে না যে, প্রাণবায়ু উড়ে যাওয়ার পূর্ব মুহূর্তে তুমি বলবে, অমুকের জন্য এতটুকু অমুকের জন্য এতটুকু [সদাক্বাহ করলাম]। কেননা তখন তো সেটা অমুকের জন্য হয়েই গেছে।
হাদিসের তাহকিকঃ সহিহ হাদিস
২৮৬৬. আবু সাঈদ আল-খুদরী [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলেনঃ কোন ব্যক্তির নিজ জীবদ্দশায় এক দিরহাম সদাক্বাহ করা তার মৃত্যুর সময়ে একশো দিরহাম সদাক্বাহ করার চেয়েও উত্তম।
দুর্বলঃ যয়ীফ আল-জামিউস সাগীর [৪৬৪৩], মিশকাত [১৭৮০]। হাদিসের তাহকিকঃ দুর্বল হাদিস
২৮৬৭. আবু হুরাইরাহ [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলেনঃ যদি কোন পুরুষ বা নারী ষাট বছর ধরে আল্লাহর ইবাদাতে কাটায়, অতঃপর তাহাদের মৃত্যু এসে যায়। তখন তারা ওসিয়াতের মাধ্যমে উত্তরাধিকারের ক্ষতিসাধন করে। এ অপরাধের কারণে তাহাদের জন্য জাহান্নাম অবধারিত হয়। শাহর ইবনি হাওশাব [রহমাতুল্লাহি আলাইহি] বলেন, অতঃপর আবু হুরায়রা [রাদি.] আমার সামনে এ আয়াত পাঠ করেনঃ “মৃত ব্যক্তির কৃত ওসিয়াত ও ঋণ আদায়ের পর… এটাই হলো বিরাট সফলতা” [সূরাহ আন-নিসাঃ ১২, ১৩]। আবু দাউদ [রহমাতুল্লাহি আলাইহি] বলেন, বর্ণনাকারী আশআস ইবনি জাবির [রহমাতুল্লাহি আলাইহি] হলেন নাসর ইবনি আলীর দাদা।
দুর্বলঃ যয়ীফ আল-জামিউস সাগীর [১৪৫৭]. যয়ীফ সুনান আত-তিরমিজি [৩৭৬/২২১৫], মিশকাত [৩০৭৫]। হাদিসের তাহকিকঃ দুর্বল হাদিস
অনুচ্ছেদ-৪: ওসিয়াতকৃত সম্পদের তত্ত্বাবধায়ক হওয়া
২৮৬৮. আবু যার [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
তিনি বলেন, আমাকে রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলিলেনঃ হে আবু যার! আমি তোমাকে [প্রশাসনিক কাজে] দুর্বল দেখছি। আমি আমার নিজের জন্য যা পছন্দ করি তোমার জন্যও তা পছন্দ করি। তুমি দুই ব্যক্তির মধ্যে বিচারক হইবে না এবং ইয়াতীমের সম্পদের অভিভাবক হইবে না।
হাদিসের তাহকিকঃ সহিহ হাদিস
অনুচ্ছেদ-৫: পিতা-মাতা ও নিকটআত্নীয়ের জন্য ওসিয়াত বাতিল
২৮৬৯, ইবনি আব্বাস [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
[আল্লাহর বাণী]ঃ “তোমাদের কারো মৃত্যু উপস্থিত হলে তার পরিত্যক্ত সম্পদ পিতা-মাতা ও নিকটাত্নীয়ের জন্য প্রচলিত নিয়ম অনুযায়ী ওসিয়াত করা তোমাদের উপর ফার্য” [সূরাহ আল-বাক্বারাহঃ ১৮০]। ওসিয়াতের নিয়ম এভাবেই ছিল। পরে উত্তরাধিকার সম্পর্কিত বিধান অবতীর্ণ হলে এ আয়াত মানসূখ হয়ে যায়।
হাদিসের তাহকিকঃ হাসান সহিহ
অনুচ্ছেদ-৬: উত্তরাধিকারদের জন্য ওসিয়াত করা
২৮৭০. আবু উমামাহ [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
তিনি বলেন, আমি রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ]-কে বলিতে শুনেছিঃ নিশ্চয়ই আল্লাহ প্রত্যেক হকদারের অংশ নির্দিষ্ট করেছেন। সুতরাং কোন ওয়ারিসের জন্য ওসিয়াত করা যাবে না।
হাদিসের তাহকিকঃ হাসান সহিহ
অনুচ্ছেদ-৭: ইয়াতীমের খাদ্যের সাথে নিজের খাদ্য মিশ্রণ করা
২৮৭১. ইবনি আব্বাস [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
তিনি বলেন, মহান আল্লাহ যখন এ আয়াত অবতীর্ণ করেনঃ “ইয়াতীমের সম্পদের নিকটবর্তী হয়ো না। কিন্তু উত্তম পন্থায়, যতদিন না সে তার যৌবনে পদার্পণ করে” [সূরাহ ইসরাদি. ৩৪] এবং “যারা ইয়াতীমের সম্পদ অন্যায়ভাবে খায়, তারা মূলত আগুন দিয়েই নিজেদের পেট বোঝাই করে এবং তারা অবশ্যই জাহান্নামের উত্তপ্ত আগুনে নিক্ষিপ্ত হইবে” [সূরাহ আন-নিসাঃ ১০]। তখন যাদের কাছে ইয়াতীম ছিল তারা নিজেদের খাদ্য হইতে ইয়াতীমের খাদ্য এবং নিজেদের পানীয় হইতে ইয়াতীমের পানীয় আলাদা করে ফেললো। ফলে ইয়াতীমের উদ্বৃত্ত খাদ্য রেখে দেয়া হতো, সে হয় পরে তা খেতো নতুবা তা নষ্ট হতো। অভিভাবকদের কাছে বিষয়টি কঠিন মনে হলো। তারা বিষয়টি রসূলুল্লাহর [সাঃআঃ] এর কাছে উপস্থাপন করলো। অতঃপর মহান আল্লাহ তাআলা আয়াত অবর্তীর্ণ করেনঃ “তোমাকে তারা জিজ্ঞেস করছে ইয়াতীমদের সম্পর্কে। বলো, তাহাদের সাথে উত্তম পন্থা অবলম্বন করাই শ্রেয়। যদিও তোমাদের ও তাহাদের খরচপত্র ও থাকা খাওয়া একত্র রাখা দোষণীয় নয়। কেননা তারা তোমাদেরই ভাই” [সূরাহ আল-বাক্বারাহঃ ২২০]। অতঃপর তারা নিজেরদের পানাহার তাহাদের পানাহারের সাথে একত্র করলো।
হাদিসের তাহকিকঃ হাসান হাদিস
অনুচ্ছেদ-৮: ইয়াতীমের মাল থেকে অভিভাবকের কিছু নেয়া
২৮৭২. আমর ইবনি শুআইব [রহমাতুল্লাহি আলাইহি] হইতে পর্যায়ক্রমে তার পিতা ও তার দাদার সূত্র হইতে বর্ণীতঃ
এক ব্যক্তি নাবী [সাঃআঃ] এর নিকট এসে বললো, আমি গরীব মানুষ। আমার কোন সম্পদ নাই। তবে আমার অধীনে একজন ইয়াতীম আছে। নাবী [সাঃআঃ] বলিলেনঃ তুমি ইয়াতীমের সম্পদ থেকে খেতে পারো কিন্তু কোন অপচয় করিবে না, অতিরিক্ত গ্রহণ করিবে না এবং তোমার নিজের জন্য কিছু সঞ্চয়ও করিবে না।
হাদিসের তাহকিকঃ হাসান সহিহ
অনুচ্ছেদ-৯: ইয়াতীমের মেয়াদকাল কখন শেষ হয়
২৮৭৩. আলী ইবনি আবু ত্বালিব [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
আমি রসূলুল্লাহর [সাঃআঃ] কাছ থেকে শুনে মুখস্ত করে নিয়েছিঃ “যৌবনপ্রাপ্ত হলে কেউ ইয়াতীম থাকে না এবং সকাল থেকে রাত পর্যন্ত নীরব থাকা জায়িয নয়।”
হাদিসের তাহকিকঃ সহিহ হাদিস
অনুচ্ছেদ-১০: ইয়াতীমের মাল ভক্ষণে কঠোর হুঁশিয়ারী
২৮৭৪. আবু হুরাইরাহ [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলেনঃ তোমরা সাতটি ধ্বংসকারী বিষয় থেকে দূরে থাকো। জিজ্ঞেস করা হলো, হে আল্লাহর রাসূল! সেগুলো কি কি? তিনি বলেনঃ আল্লাহর সাথে কাউকে শরীক করা, যাদু করা, যে প্রাণকে হত্যা করা আল্লাহ হারাম করেছেন, তা ন্যায়সংগত কারণ ছাড়া হত্যা করা, সুদ খাওয়া, ইয়াতীমের সম্পদ অন্যায়ভাবে আত্নসাৎ করা, যুদ্ধক্ষেত্র থেকে পালানো এবং নির্দোষ মুমিন স্ত্রীদের নামে ব্যভিচারের অপবাদ দেয়া।
হাদিসের তাহকিকঃ সহিহ হাদিস
২৮৭৫. উমাইর [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
যিনি সাহাবী ছিলেন। তিনি বলেন, এক ব্যক্তি জিজ্ঞেস করলো, হে আল্লাহর রাসূল! কোনগুলি কবীরাহ গুনাহ? তিনি বলিলেনঃ এর সংখ্যা নয়টি। অতঃপর উপরোক্ত হাদিসের অনুরূপ বর্ণিত। এতে আরো রয়েছেঃ মুসলিম পিতা-মাতাহাকে কষ্ট দেয়া এবং তোমদের জীবন-মরণের ক্বিবলাহ কাবা ঘরের চত্বরে নিষিদ্ধ কাজকে হালাল গণ্য করা।
হাদিসের তাহকিকঃ হাসান হাদিস
অনুচ্ছেদ-১১: মৃতের কাফন তার সমস্ত মালের মধ্যে গণ্য
২৮৭৬. খাব্বার [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
তিনি বলেন, মুসআব ইবনি উমাইর [রাদি.] উহুদ যুদ্ধে শহীদ হন। তার একটি কম্বল ছাড়া কিছুই ছিলো না। আমরা সেটা দিয়ে তার মাথা পর্যন্ত ঢাকলে তার দু পা বেরিয়ে পড়তো এবং তার দু পা ঢাকলে মাথা উন্মুক্ত হয়ে যেতো। রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলিলেনঃ কম্বল দ্বারা তার মাথা ঢেকে দাও এবং ইযখির [সুগন্ধি ঘাস] দ্বারা পা দুটি ঢেকে দাও।
হাদিসের তাহকিকঃ সহিহ হাদিস
অনুচ্ছেদ-১২: কেউ কোন জিনিস দান করার পর পুনরায় মিরাসী সূত্রে তার মালিক হলে
২৮৭৭. বুরাইদাহ [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
একদা রসূলুল্লাহর [সাঃআঃ] নিকট এক মহিলা এসে বললো, আমি আমার মাকে একটি দাসী দান করি। দাসীকে রেখে মা মারা যান। তিনি বলিলেনঃ তুমি তোমার দানের সওয়াব পেয়েছো এবং উত্তরাধিকার সূত্রে দাসীও তোমার কাছে ফিরে এসেছে। মহিলাটি বললো, তিনি এক মাসের সওম অবশিষ্ট রেখে মারা গেছেন। আমি তার পক্ষ হইতে সওম পালন করলে তা কি তার জন্য যথেষ্ট হইবে? তিনি বলিলেনঃ হাঁ। সে বললো, আমার মা হাজ্জ করেননি। আমি তার পক্ষ হইতে হাজ্জ করলে কি তার জন্য যথেষ্ট হইবে? তিনি বলিলেনঃ হাঁ।
হাদিসের তাহকিকঃ সহিহ হাদিস
অনুচ্ছেদ-১৩: যে ব্যক্তি কিছু ওয়াকফ করলো
২৮৭৮.ইবনি উমার [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
তিনি বলেন, উমার [রাদি.] খায়বারে একখন্ড জমি পান। তিনি নাবী [সাঃআঃ] এর নিকট এসে বলিলেন, আমি খায়বারে একখন্ড জমি পেয়েছি যা অপেক্ষা উত্তম সম্পদ ইতিপূর্বে আমি পাইনি। আপনি আমাকে এর কি নির্দেশ দেন? তিনি বলিলেনঃ তুমি চাইলে আসল জমি রেখে দিয়ে এর থেকে প্রাপ্ত লভ্যাংশ [ফসল] সদাক্বাহ করে দাও। তখন থেকে উমার [রাদি.] সিদ্ধান্ত নেন যে, আসল জমি বিক্রয় করা যাবে না, হেবা করা যাবে না এবং তাতে কোনরূপ উত্তরাধিকার স্বত্ব প্রতিষ্ঠিত হইবে না। তিনি তা দান করে দিলেন ফকীর, আত্নীয়স্বজন, দাস মুক্তকরণে, আল্লাহর পথে এবং মুসাফিরদের জন্য। বর্ণনাকারী মুসাদ্দাদ [রহমাতুল্লাহি আলাইহি] বিশর সূত্রে মেহমানের কথাও উল্লেখ করেন। পরে তারা একমত হয়ে বর্ণনা করেনঃ যিনি এ সম্পত্তির মোতাওয়াল্লী হইবেন তিনি ন্যায়সঙ্গতভাবে তা থেকে ভোগ করিতে পারবেন এবং বন্ধুদেরও আপ্যায়ন করিতে পারবেন। কিন্তু নিজের জন্য সঞ্চয় করিতে পারবেন না।
হাদিসের তাহকিকঃ সহিহ হাদিস
২৮৭৯.ইয়াহইয়া ইবনি সাঈদ [রহমাতুল্লাহি আলাইহি] হইতে বর্ণীতঃ
তিনি উমার ইবনিল খাত্তাবের [রাদি.] ওয়াক্ফ দলীল সম্পর্কে বলেন, আবদুল হামীদ ইবনি আবদুল্লাহ ইবনি আবদুল্লাহ ইবনি উমার ইবনিল খাত্তাব [রাদি.] আমাকে ওয়াক্ফ দলীলটির অনুলিপি দিয়েছেন। [তা হলো] বিস্মিল্লাহির রহমানির রহীম। আল্লাহর বান্দা উমার [রাদি.] তার সামাগ নামক ফলের বাগান ওয়াক্ফ করেছেন- এটা তারই দলীল। অতঃপর ইয়াহইয়া ইবনি সাঈদ পুরো হাদিস নাফি বর্ণিত হাদিসের অনুরূপ বর্ণনা করেন। উমার [রাদি.] বলেন, এই ওয়াক্ফকৃত সম্পত্তির আয় সঞ্চয় করা যাবে না। দলীলে উল্লেখিত খাতসমূহে এ সম্পত্তির আয় খরচ করার পর কিছু উদ্বৃত্ত থাকলে তা ভিক্ষুক এবং বঞ্চিতদের জন্য ব্যয় করিবে। অতঃপর ইয়াহইয়া সম্পূর্ণ ঘটনা বর্ণনা করেন। দলীলে এও উল্লেখ ছিল, সামাগ এর মোতাওয়াল্লী প্রয়োজনে বাগানের আয় থেকে দাস ক্রয় করিতে পারবে [বাগান দেখাশুনার জন্য]। ওয়াক্ফের এই দলীল মুআইকিব [রাদি.] নাক্বল করেন এবং এর সাক্ষী হন আবদুল্লাহ ইবনি আকরাম [রাদি.]। দলীলের অনুলিপি এরূপঃ “বিস্মিল্লাহির রহমানির রহীম। আল্লাহর বান্দা এবং মুমিনগণের নেতা উমার এ ওসিয়াত করছেন। তার মৃত্যুর পর সামাগের সম্পত্তি, সিরমা ইবনিল আকওয়া [বাগান] এবং এখানে কর্মরত গোলাম, খায়বারের একশো ভাগ জমি এবং সেখানে কর্মরত গোলাম এবং খায়বারের নিকটস্থ উপত্যকায় মুহাম্মদ [সাঃআঃ] আমাকে যে একশো ভাগ জমি প্রদান করেছেন- এগুলোর আজীবন মোতাওয়াল্লী হইবেন হাফসাহ [রাদি.]। তার মৃত্যুর পর এর মোতাওয়াল্লী হইবে তার পরিবারের বিচক্ষণ ব্যক্তি। মোতাওয়াল্লী এসব শর্তগুলো মানবেঃ “এ সম্পত্তি বিক্রি করা যাবে না। ক্রয় করে এর সাথে আর সম্পত্তি যোগ করা যাবে না। মোতাওয়াল্লী তার বুঝ অনুযায়ী এর আয় ভিক্ষুক, বঞ্চিত এবং গরীব নিকট আত্নীয়দের জন্য ব্যয় করবেন। তিনি এ থেকে প্রয়োজন পরিমাণ পরিমাণ নিতে পারবেন এবং গোলাম ক্রয় করিতে পারবেন”।
হাদিসের তাহকিকঃ সহিহ হাদিস
অনুচ্ছেদ-১৪: মৃতের পক্ষ হইতে সদাক্বাহ করা
২৮৮০. আবু হুরাইরাহ [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলেনঃ মানুষ যখন মৃত্যু বরণ করে তখন তার আমলের সুযোগও বন্ধ হয়ে যায়। কিন্তু তিনটি আমলের সওয়াব বন্ধ হয় না। এক. সদাক্বাহ জারিয়া। দুই. এমন জ্ঞান যা দ্বারা মানুষ উপকৃত হয় এবং নেক সন্তান, যে তার জন্য দুআ করে।
হাদিসের তাহকিকঃ সহিহ হাদিস
অনুচ্ছেদ-১৫: যে ব্যক্তি ওসিয়াত না করে মারা গেছে তার পক্ষ হইতে সদাক্বাহ করা
২৮৮১. আয়িশাহ [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
জনৈক স্ত্রীলোক বললো, হে আল্লাহর রাসূল! আমার মা হঠাৎ মারা গেছেন। তিনি এভাবে মারা না গেলে সদাক্বাহ করে যেতেন। এখন আমি যদি তার পক্ষে হইতে সদাক্বাহ করি তবে তিনি কি এর সওয়াব পাবেন? নাবী [সাঃআঃ] বলিলেনঃ হাঁ, তুমি তার পক্ষ হইতে সদাক্বাহ করো।
হাদিসের তাহকিকঃ সহিহ হাদিস
২৮৮২. ইবনি আব্বাস [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
এক ব্যক্তি বললো, হে আল্লাহর রাসূল। আমার মা মারা গেছেন। আমি তার পক্ষ থেকে দান-খয়রাত করলে এতে তার কোন উপকার হইবে কি? তিনি বলিলেনঃ হাঁ। সে বললো, আমার একটি বাগান আছে। আমি আপনাকে সাক্ষী রেখে বাগানটি তার কল্যাণের জন্য দান করে দিলাম।
হাদিসের তাহকিকঃ সহিহ হাদিস
অনুচ্ছেদ-১৬: মৃত কাফিরের ওসিয়াত পূরণ করা মুসলিম ওয়ালীর জন্য অত্যাবশ্যক কিনা?
২৮৮৩. আমর ইবনি শুআইব [রহমাতুল্লাহি আলাইহি] হইতে পর্যায়ক্রমে তার পিতা ও তার দাদার সূত্র হইতে বর্ণীতঃ
আল-আস ইবনি ওয়াইল তার পক্ষ হইতে একশো গোলাম আযাদ করার ওসিয়াত করেন। তার এক ছেলে হিশাম পঞ্চাশটি গোলাম আযাদ করেন। পরে আরেক ছেলে আমর [রাদি.] বাকি পঞ্চাশটি গোলাম আযাদ করার ইচ্ছা করেন। তিনি বিষয়টি রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] কে জিজ্ঞেস করার মনস্থ করেন। অতঃপর নাবী [সাঃআঃ]-এর কাছে এসে তিনি বলেন, হে আল্লাহর রাসূল! আমার পিতা তার পক্ষ হইতে একশো গোলাম আযাদ করার ওসিয়াত করে যান। হিশাম পঞ্চাশটি গোলাম আযাদ করেছে, এখনো পঞ্চাশটি আযাদ করা বাকি আছে। আমি কি তার পক্ষ হইতে তা আযাদ করবো? রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলিলেনঃ সে যদি মুসলিম হতো, তাহলে তোমরা তার পক্ষ হইতে আযাদ করলে বা সদাক্বাহ করলে কিংবা হাজ্জ করলে তার কাছে এর সওয়াব পৌঁছতো।
হাদিসের তাহকিকঃ হাসান হাদিস
অনুচ্ছেদ-১৭: ঋণগ্রস্থ মৃতের দেনা পরিশোধে ওয়ারিসদের সময় দেয়া ও সদয় হওয়া
২৮৮৪. ওয়াহ্ব ইবনি কাইসান [রহমাতুল্লাহি আলাইহি] হইতে বর্ণীতঃ
তিনি জাবির ইবনি আবদুল্লাহ [রাদি.] হইতে বর্ণনা করেন যে, জাবির তাহাকে জানান, তার পিতা এক ইয়াহুদীর নিকট তিরিশ ওয়াসক্ব খেজুর দেনা রেখে মৃত্যু বরণ করেন। জাবির [রাদি.] ইয়াহুদীর কাছে সময় চাইলে সে সময় দিতে অস্বীকার করে। জাবির [রাদি.] এ বিষয়ে রসূলুল্লাহর [সাঃআঃ] সাথে আলাপ করে তার জন্য ইয়াহুদীর নিকট সুপারিশ করিতে বলেন। রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] ইয়াহুদীর নিকট গিয়ে তাহাকে তার পাওনার পরিবর্তে জাবিরের গাছের খেজুর গ্রহণ করিতে বলিলেন। ইয়াহুদী তা গ্রহণে অস্বীকার করলো। রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] ইয়াহুদীকে ঋণ পরিশোধের জন্য সময় দিতে বলিলেন। সে তাও প্রত্যাখ্যান করলো। অতঃপর হাদিসের শেষ পর্যন্ত বর্ণিত হয়।
হাদিসের তাহকিকঃ সহিহ হাদিস
Leave a Reply