ওজু ভঙ্গের কারণ সমূহ – চুমু, পুরুষাঙ্গ, রক্ত , খাবার, ঘুমালে

ওজু ভঙ্গের কারণ সমূহ – চুমু, পুরুষাঙ্গ, রক্ত , খাবার, ঘুমালে

ওজু ভঙ্গের কারণ সমূহ – চুমু, পুরুষাঙ্গ, রক্ত , খাবার, ঘুমালে >>আবুদ দাউদ শরীফ এর মুল সুচিপত্র পড়ুন

অধ্যায়ঃ ১, অনুচ্ছেদঃ ৬৮-৮২ =১৫টি

অনুচ্ছেদ-৬৮ঃ উযু নষ্টের সন্দেহ হলে
অনুচ্ছেদ -৬৯ঃ চুম্বন দিলে উযু করা প্রসঙ্গে
অনুচ্ছেদ-৭০ঃ পুরুষাঙ্গ স্পর্শ করলে উযু করা প্রসঙ্গে
অনুচ্ছেদ-৭১ঃ পুরুষাঙ্গ স্পর্শ করলে ওযু নষ্ট না হওয়া প্রসঙ্গে
অনুচ্ছেদ- ৭২ঃ উটের গোশত খেলে উযু করা প্রসঙ্গে
অনুচ্ছেদ- ৭৩ঃ কাঁচা গোশত স্পর্শ করলে উযু করিতে ও হাত ধুতে হইবে কিনা
অনুচ্ছেদ- ৭৪ঃ মৃত প্রাণী স্পর্শ করলে উযু না করা
অনুচ্ছেদ- ৭৫ঃ আগুনে পাকানো জিনিস খেলে উযু না করা
অনুচ্ছেদ-৭৬ঃ আগুনে পাকানো জিনিষ খেলে উযু করার ব্যাপারে কঠোরতা
অনুচ্ছেদ-৭৭ঃ দুধ পান করলে উযু [কুলি] করা প্রসঙ্গে
অনুচ্ছেদ- ৭৮ঃ দুধ পানের পর উযু [কুলি] না করা প্রসঙ্গে
অনুচ্ছেদ-৭৯ঃ রক্ত বের হলে উযু করা
অনুচ্ছেদ-৮০ঃ ঘুমালে উযু নষ্ট হয় কিনা
অনুচ্ছেদ-৮১ঃ যে ব্যক্তি তাহাঁর পায়ে ধুলা-ময়লা মাড়িয়েছে
অনুচ্ছেদ-৮২ঃ সালাতের মধ্যে কারো উযু ছুটে গেলে

অনুচ্ছেদ-৬৮ঃ উযু নষ্টের সন্দেহ হলে

১৭৬. আব্বাদ ইবনি তামীম হতে তাহাঁর চাচার সূত্রে হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, এক ব্যক্তি নবি [সাঃআ:]-এর কাছে অভিযোগ করিল যে, কখনো সলাতের মধ্যে কিছু একটা সন্দেহ হয় যে, তার উযু হয়ত নষ্ট হয়ে গেছে। তিনি বলিলেন, [বায়ু নির্গত হওয়ার] শব্দ না শুনা কিংবা গন্ধ না পাওয়া পর্যন্ত সালাত ছাড়বে না।

সহিহঃ বুখারি ও মুসলিম, ওজু ভঙ্গের কারণ সমূহ -এই হাদিসের তাহকিকঃ সহিহ হাদিস

১৭৭. আবু হুরাইরাহ হইতে বর্ণিতঃ

রসুলুল্লাহ [সাঃআ:] বলেছেন, তোমাদের কেউ যদি সলাত আদায়রত অবস্থায় পশ্চাৎ-দ্বারে [মলদ্বারে] স্পন্দন অনুভব করে, অথবা বায়ু নির্গত হয়েছে কিনা এ ব্যাপারে তার সন্দেহ সৃষ্টি হয়, তাহলে শব্দ না শুনা কিংবা গন্ধ না পাওয়া পর্যন্ত সে সলাত পরিত্যাগ করিবে না।

সহীহঃ মুসলিম। ওজু ভঙ্গের কারণ সমূহ -এই হাদিসের তাহকিকঃ সহিহ হাদিস

অনুচ্ছেদ – ৬৯ঃ চুম্বন দিলে উযু করা প্রসঙ্গে

১৭৮. আয়িশাহ হইতে বর্ণিতঃ

নবি [সাঃআ:] তাকে চুম্বন দিয়েছেন, কিন্তু এ জন্য উযু করেননি।

সহিহ। ইমাম আবু দাউদ [রহমাতুল্লাহি আলাইহি] বলেন, ফিরয়াবী এবং অন্যরাও হাদীসটি অনুরুপ বর্ণনা করিয়াছেন। ইমাম আবু দাউদ [রহমাতুল্লাহি আলাইহি] আরো বলেন, এটি মুরসাল হাদীস। কারণ ইব্রাহীম আত-তাইমী আয়িশাহ থেকে কিছুই শোনেননি। ইমাম আবু দাউদ [রহমাতুল্লাহি আলাইহি] আর বলেন, ইবরাহীম আত-তাইমী চল্লিশ বছরে পদার্পণের আগেই মৃত্যু বরণ করেন। তার কুনিয়াত ছিল আবু আসমা। হাদীস থেকে শিক্ষাঃ স্বামী স্ত্রীকে চুমু দিলে উযু ভঙ্গ হয় না [ যদি মযী বা বীর্য নির্গত না হয় ]। ওজু ভঙ্গের কারণ সমূহ -এই হাদিসের তাহকিকঃ সহিহ হাদিস

১৭৯. আয়িশাহ হইতে বর্ণিতঃ

নবি [সাঃআ:] তাহাঁর কোন এক স্ত্রীকে চুম্বন করিলেন, অতঃপর সলাত আদায়ের জন্য বের হলেন, কিন্তু উযু করিলেন না। উরওয়াহ বলেন, আমি আয়িশাহ [রাঃআ:] কে বললাম, সেই স্ত্রী আপনি নন কি? ফলে তিনি হেসে দিলেন।

সহিহ। ইমাম আবু দাউদ [রহমাতুল্লাহি আলাইহি] বলেন, সুলাইমান আল-আমাশ সূত্রে যায়িদাহ এবং আবদুল হামীদ আল-হিম্মানী অনুরূপ বর্ণনা করিয়াছেন। ওজু ভঙ্গের কারণ সমূহ -এই হাদিসের তাহকিকঃ সহিহ হাদিস

১৮০. আয়িশাহ [রাঃআ:] হইতে বর্ণিতঃ

উরওয়াহ আল-মুযানী আয়িশাহ সূত্রে উপরোক্ত হাদীস বর্ণনা করেন। ইমাম আবু দাউদ [রহমাতুল্লাহি আলাইহি] বলেন, ইয়াহ্ইয়াহ্ ইবনি সাঈদ আল-কাত্তান এক ব্যাক্তিকে এ মর্মে আদেশ দেন, আমার সূত্রে ঐ হাদীস দুটি বর্ণনা কর। অর্থাৎ আমাশের হাদীস এবং একই সানাদে ইস্তিহাযা রোগিণী” সম্পর্কে বর্ণিত তাহাঁর ঐ হাদীস যাতে রয়েছে, ইস্তিহাযা রোগিনী প্রত্যেক সলাতের জন্যই উযু করিবে। ইয়াহ্ইয়াহ্ ঐ ব্যাক্তিকে আরো বলেন, তুমি আমার সূত্রে বর্ণনা কর যে, [আমাশের সূত্রে বর্ণিত] উপরোক্ত হাদীসদ্বয় দুর্বল। ইমাম আবু দাউদ [রহমাতুল্লাহি আলাইহি] বলেন, সাওরী বলেছেন, হাবীব আমাদের কাছে কেবল উরওয়াহ আল-মুযানীর সুত্রেই হাদীস বর্ণনা করেননি। আবু দাউদ আরো বলেন, অবশ্য হামযাহ আয-যাইয়্যাত, হাবীব এবং উরওয়াহ ইবনি যুবাইরের থেকে আয়িশাহ সূত্রে একটি সহিহ হাদীস বর্ণনা করিয়াছেন।

হাদিসের তাহকিকঃ নির্ণয় করা হয়নি

অনুচ্ছেদ-৭০ঃ পুরুষাঙ্গ স্পর্শ করলে উযু করা প্রসঙ্গে

১৮১. আবদুল্লাহ ইবনি আবু বাকর হইতে বর্ণিতঃ

তিনি উরওয়াহ [রহমাতুল্লাহি আলাইহি]-কে বলিতে শুনেছেন, আমি মারওয়ান ইবনি হাকামের নিকট গিয়ে উযু নষ্ট হওয়ার কারণ সম্পর্কে আলোচনা করলাম। মারওয়ান বলিলেন, পুরুষাঙ্গ স্পর্শ করলেও [উযু করিতে হইবে]। উরওয়াহ বলিলেন আমি এই বিষয়ে অবহিত নই। মারওয়ান বলিলেন, বুসরাহ বিনতু সাফওয়ান [রাঃআ:] আমাকে জানালেন যে, তিনি রসুলুল্লাহ [সাঃআ:]- কে বলিতে শুনেছেনঃ কেউ নিজের পুরুষাঙ্গ স্পর্শ করলে যেন উযু করে।

ওজু ভঙ্গের কারণ সমূহ -এই হাদিসের তাহকিকঃ সহিহ হাদিস

অনুচ্ছেদ-৭১ঃ পুরুষাঙ্গ স্পর্শ করলে ওযু নষ্ট না হওয়া প্রসঙ্গে

১৮২. ক্বায়িস ইবনি ত্বালক্ব থেকে তাহাঁর পিতার সূত্রে হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, আমরা নবি [সাঃআ:] এর নিকট উপস্থিত হলাম। তখন সম্ভবতঃ এক বেদুইন ব্যক্তি এসে জিজ্ঞাসা করিল, হে আল্লাহর রসূল! কোন ব্যাক্তি উযু করার পর নিজ পুরুষাঙ্গ স্পর্শ করলে তাহাঁর ব্যাপারে আপনার অভিমত কী? তিনি বলিলেন, ওটা তো তাহাঁর শরীরের গোশতের একটি টুকরা মাত্র।

সহিহ। ইমাম আবু দাউদ [রহমাতুল্লাহি আলাইহি] বলেন, হাদীসটি ক্বায়িস ইবনি ত্বালক্ব হতে মুহাম্মদ ইবনি জাবির সূত্রে হিশাম ইবনি হাসসান, সুফিয়ান সাওরী, শুবাহ, ইবনি উয়াইনাহ এবং জারীর আর-রাযী প্রমুখ বর্ণনা করিয়াছেন। ওজু ভঙ্গের কারণ সমূহ -এই হাদিসের তাহকিকঃ সহিহ হাদিস

১৮৩., ক্বায়িস ইবনি ত্বাল্ক্ব হইতে বর্ণিতঃ

ক্বায়িস ইবনি ত্বাল্ক্ব হতে একই সানাদে উপরোক্ত হাদীসের সমার্থক হাদীস বর্ণিত আছে। তাতেঃ সলাতরত অবস্থায় পুরুষাঙ্গ স্পর্শ করলে –কথাটি রয়েছে।

ওজু ভঙ্গের কারণ সমূহ -এই হাদিসের তাহকিকঃ সহিহ হাদিস

অনুচ্ছেদ- ৭২ঃ উটের গোশত খেলে উযু করা প্রসঙ্গে

১৮৪. আল-বারাআ ইবনি আযিব হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, রসুলুল্লাহ [সাঃআ:] কে উটের গোশত খেলে উযু করিতে হইবে কিনা এ বিষয়ে জিজ্ঞাসা করলে তিনি বলেনঃ তা খেলে তোমরা উযু করিবে। আর তাঁকে বকরীর গোশত সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করা হলে তিনি বলেনঃ তার জন্য উযু করিতে হইবে না। তাঁকে প্রশ্ন করা হল, উটশালায় সলাত আদায় করা যাবে কিনা? তিনি বলেনঃ তোমরা উটশালায় সলাত আদায় করো না। কারণ, সেখানে শাইত্বান বসবাস করে। রসুলুল্লাহ [সাঃআ:]-কে বকরীর আবাসস্থলে সলাত আদায় করা যাবে কি না তা জিজ্ঞাসা করা হলে তিনি বলেনঃ হ্যাঁ, সেখানে সলাত আদায় কর। কারণ, ওটা হচ্ছে বারকাতময় প্রাণী [বা বারকাতময় স্থান]।

ওজু ভঙ্গের কারণ সমূহ -এই হাদিসের তাহকিকঃ সহিহ হাদিস

অনুচ্ছেদ- ৭৩ঃ কাঁচা গোশত স্পর্শ করলে উযু করিতে ও হাত ধুতে হইবে কিনা

১৮৫. আবু সাঈদ হইতে বর্ণিতঃ

একদা নবি [সাঃআ:] একটি বালকের নিকট দিয়ে যাচ্ছিলেন। সে তখন একটি বকরীর চামড়া ছাড়াচ্ছিল। রসুলুল্লাহ [সাঃআ:] তাকে বললেনঃ তুমি একটু সরে যাও, আমি তোমাকে শিখিয়ে দিচ্ছি। এ বলে তিনি বকরীর চামড়া ও গোশতের মাঝখানে হাত ঢুকিয়ে দিলেন। এমনকি তাহাঁর হাত বগল পর্যন্ত ঢুকে গেল। অতঃপর সেখান থেকে উঠে গিয়ে উযু না করেই তিনি লোকদের সলাত আদায় করালেন। আমর তাহাঁর বর্ণিত হাদীসে আরো উল্লেখ করেন যে, তিনি পানিও স্পর্শ করেননি।

সহিহ। তিনি বলেন, এছাড়া হিলাল আত্বা থেকে সাঈদের নাম উল্লেখ না করে রসুলুল্লাহ [সাঃআ:]-এর সূত্রে হাদীসটি মুওরসালভাবে বর্ণনা করিয়াছেন। হাদীস থেকে শিক্ষাঃ ১। কাঁচা গোশত স্পর্শ করলে উযু করিতে হয় না। ২। অন্যের প্রতি নবি [সাঃআ:] এর সহযোগীতা ও বদান্যতা। তিনি বলেন, এছাড়া হিলাল হতে আত্বা থেকে আবু সাঈদের নাম উল্লেখ না করে রসলুল্লাহ [সাঃআ:] এর সূত্রে হাদীসটি মুরসালভাবে বর্ণনা করিয়াছেন। ওজু ভঙ্গের কারণ সমূহ -এই হাদিসের তাহকিকঃ সহিহ হাদিস

অনুচ্ছেদ- ৭৪ঃ মৃত প্রাণী স্পর্শ করলে উযু না করা

১৮৬. জাবির হইতে বর্ণিতঃ

একদা রসুলুল্লাহ [সাঃআ:] মাদীনার আশে পাশের উচ্চভূমিতে অবস্থিত একটি বাজারের পাশ দিয়ে অতিক্রম করছিলেন। তাহাঁর দুপাশে অন্যান্য লোকও ছিল। পথ অতিক্রমকালে তিনি রাস্তার পাশে ক্ষুদ্র কান বিশিষ্ট একটি মৃত বকরীর বাচ্চা দেখিতে পেয়ে সেটির কান ধরে উপরে উঠিয়ে বললেনঃ তোমাদের কেউ কি এটা নিতে পছন্দ করিবে? তারপর সম্পূর্ণ হাদীস বর্ণনা করেন।

সহীহঃ মুসলিম। ওজু ভঙ্গের কারণ সমূহ -এই হাদিসের তাহকিকঃ সহিহ হাদিস

অনুচ্ছেদ- ৭৫ঃ আগুনে পাকানো জিনিস খেলে উযু না করা

১৮৭. ইবনি আব্বাস হইতে বর্ণিতঃ

রসুলুল্লাহ [সাঃআ:] বকরীর সামনের রানের গোশত খেলেন। অতঃপর উযু না করেই সলাত আদায় করিলেন।

সহীহঃ বোখারী ও মুসলিম। হাদীস থেকে শিক্ষাঃ ১। মৃত প্রাণী স্পর্শ করা জায়িয এবং তা স্পরশের পর হাত ধোয়া জরুরী নয়। ২। দুনিয়ার জীবন তুচ্ছ।ওজু ভঙ্গের কারণ সমূহ -এই হাদিসের তাহকিকঃ সহিহ হাদিস

১৮৮. মুগীরাহ ইবনি শুবাহ হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, এক রাতে আমি নবি [সাঃআ:] এর মেহমান হলাম। তিনি আমার জন্য একটি বকরীর রান আনার নির্দেশ দিলান। রান ভাজি করা হলে তিনি ছুড়ি নিয়ে আমার জন্য গোশত কাটতে লাগলেন। বর্ণনাকারী বলেন, এমতাবস্থায় বিলাল [রাঃআ:] এসে তাকে সলাতের কথা অবহিত করেন। ফলে তিনি ছুড়ি ফেলে দিয়ে বললেনঃ তাহাঁর কী হয়েছে! তাহাঁর হাত ধূলায় ধূসরিত হোক! অতঃপর সলাতের জন্য দাঁড়িয়ে গেলেন। বর্ণনাকারী আনবারীর বর্ণনায় আরো আছেঃ আমার [মুগীরাহর] গোঁফ কিছুটা বড় হয়ে গিয়েছিল বিধায় তিনি আমার গোঁফের নীচে মিসওয়াক রেখে তা ছেঁটে ছোট করে দিলেন। অথবা বললেনঃ আমি তোমার গোঁফ মিসওয়াকের উপর রেখে তা ছোট করে কেটে দিব।

ওজু ভঙ্গের কারণ সমূহ -এই হাদিসের তাহকিকঃ সহিহ হাদিস

১৮৯. ইবনি আব্বাস হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, রসুলুল্লাহ [সাঃআ:] সামনের রানের গোশত খেলেন। অতঃপর তাহাঁর নিচে বিছানো রুমাল বা চাদরে হাত মুছে দাঁড়িয়ে সলাত আদায় করিলেন।

ওজু ভঙ্গের কারণ সমূহ -এই হাদিসের তাহকিকঃ সহিহ হাদিস

১৯০. ইবনি আব্বাস [রাঃআ:] হইতে বর্ণিতঃ

ইবনি আব্বাস [রাঃআ:] সূত্রে বর্ণিত। নবি [সাঃআ:] সামনের রানের কিছু গোশত খাওয়ার পর উযু না করেই সলাত আদায় করিলেন।

ওজু ভঙ্গের কারণ সমূহ -এই হাদিসের তাহকিকঃ সহিহ হাদিস

১৯১. মুহাম্মাদ ইবনি মুনকাদির হইতে বর্ণিতঃ

একদা আমি জাবির ইবনি আবদুল্লাহ [রাঃআ:]- কে বলিতে শুনেছিঃ আমি নবি [সাঃআ:]- এর সামনে রুটি ও গোশত পেশ করলাম। তিনি তা খেয়ে উযুর পানি আনিয়ে উযু করে যুহরের সলাত আদায় করিলেন। এরপর অবশিষ্ট খাবার চেয়ে নিয়ে তা খেলেন। অতঃপর পুনরায় উযু না করে সলাত আদায়ের জন্য দাঁড়িয়ে গেলেন।

ওজু ভঙ্গের কারণ সমূহ -এই হাদিসের তাহকিকঃ সহিহ হাদিস

১৯২. জাবির হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, রসুলুল্লাহ [সাঃআ:]- এর দুটি কাজের [অর্থাৎ আগুনে পাকানো খাবার খেয়ে উযু করা বা না করার] মধ্যকার সর্বশেষ কাজ ছিল আগুনে পাকানো খাদ্য খাওয়ার পর উযু না করা।

ওজু ভঙ্গের কারণ সমূহ -এই হাদিসের তাহকিকঃ সহিহ হাদিস

১৯৩. উবাইদ ইবনি সুমামাহ আল-মুরাদী [রহমাতুল্লাহি আলাইহি] হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, আবদুল্লাহ ইবনি হারিস ইবনি হারিস ইবনি জাযই [রাঃআ:] নামক রসুলুল্লাহ [সাঃআ:]- এর জনৈক সহাবী মিসরে আমাদের কাছে আগমন করিলেন। আমি তাকে মিসরের একটি মাসজিদে হাদীস বর্ণনা করিতে শুনলাম। তিনি বলেন, এক ব্যাক্তির ঘরে রসুলুল্লাহ [সাঃআ:] এর সাথে আমি সহ সাতজন অথবা ছয়জন উপস্থিত ছিলাম। এমন সময় বিলাল [রাঃআ:] এসে তাঁকে সলাতের জন্য ডাকলেন। তখন আমরা সবাই বেরিয়ে গেলাম। পথিমধ্যে আমরা এমন এক ব্যাক্তির পাশ দিয়ে অতিক্রম করলাম যার পাতিল ছিল আগুনের উপর। রসুলুল্লাহ [সাঃআ:] তাকে বলিলেন, তোমার পাতিলের [গোশত] রান্না হয়েছে কি? সে বললঃ হ্যাঁ, আমার পিতা-মাতা আপনার জন্য কুরবান হোক। এরপর তিনি সেখান থেকে এক টুকরা [গোশত] তুলে নিয়ে চিবাতে লাগলেন। এমনকি সলাতের তাকবীরে তাহরীমা বাঁধা পর্যন্ত তিনি তা চিবাচ্ছিলেন। আর আমি তাহাঁর দিকে তাকিয়ে দেখছিলাম। {১৯২}

১৯২ যুবাইদী আল ইত্তিহাফ [২/৩০৮]। এর সানাদে উবাইদ ইবনি সুমামাহ রয়েছে। হাফিয বলেন, মাকবূল। আর ইমাম যাহাবী বলেন, তাকে চেনা যায়নি। কিন্তু হাদীসটির শাহিদ বর্ণনা আছে ইবনি মাজাহ [অধ্যায়ঃ খাওা-দাওয়া, অনুঃ মাসজিদে খাওয়া, হাঃ ৩৩০০], ইবনি হিব্বান [১/৩৫৮, হাঃ ২২৩]। যাওয়ায়িদ গ্রন্থে রয়েছে এর সানাদ, রিজাল নির্ভরযোগ্য, আর ইয়াকূব সমালোচিত। ইবনি ওহাব সূত্রে আবদুল্লাহ ইবনিল হারিস ইবনি জাওয়িয যুবাইদী বলেন, “রসুলুল্লাহ [সাঃআ:] এর যুগে আমরা মাসজিদে রুটি ও গোশত খেয়েছি”। নাসিরুদ্দিন আলবানি একে সহিহ বলেছেন। এ অনুচ্ছেদের হাদীস থেকে শিক্ষাঃ১। গোশত খেলে উযু ভঙ্গ হয় না। কেননা তিনি গোশত খেয়ে উযু না করেই সলাতে দাঁড়িয়েছেন। ২। ইমাম সলাতের সময় উপস্থিত হওয়ার সংবাদ জানানো শারীআত সম্মত। ৩। খাওয়ার পর কুলি না করে সলাত আদায় জায়িয। খাওয়ার পর হাত ধোয়া ওয়াজিব নয়। ৪। এক ব্যাক্তির জন্য অপর ব্যাক্তির খাদ্য হতে খাওয়া জায়িয আছে, যখন তিনি জানবেন যে, তাহাঁর সেই ভাই সন্তুষ্ট, নারাজ নন। ৫। গোঁফ বড় করা অপছন্দনীয়। কিছুটা বড় হলেই তা ছেঁটে ফেলা উচিত। ৬। একজন আরেকজনের গোফ,চুল ছেঁটে দেয়া জায়িয। ৭। খাবার উপস্থিত হলে তা না খেয়ে সলাত আদায় করা পছন্দীয়। অন্য হাদীসে এর প্রমাণ রয়েছে। হাদিসের তাহকিকঃ দুর্বল হাদিস

অনুচ্ছেদ-৭৬ঃ আগুনে পাকানো জিনিষ খেলে উযু করার ব্যাপারে কঠোরতা

১৯৪. আবু হুরাইরা [রাঃআ:] হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, রসুলুল্লাহ [সাঃআ:] বলেছেনঃ আগুনে পাকানো জিনিস খেলে ওযু করিতে হইবে।

সহিহঃ মুসলিম। ওজু ভঙ্গের কারণ সমূহ -এই হাদিসের তাহকিকঃ সহিহ হাদিস

১৯৫. আবু সালামাহ [রহমাতুল্লাহি আলাইহি] হইতে বর্ণিতঃ

আবু সুফিয়ান ইবনি সাঈদ ইবনিল মুগীরাহ তাহাঁর কাছে বর্ণনা করেন যে, একদা তিনি উম্মু হাবীবাহ [রাঃআ:] এর ঘরে গেলে তিনি তাকে এক পেয়ালা ছাতু পান করান। ফলে আবু সুফিয়ান পানি চেয়ে কুলি করেন। উম্মু হাবীবাহ [রাঃআ:] বলেন, হে আমার বোনের ছেলে! তুমি তো উযু করলে না? অথচ নবি [সাঃআ:] বলেছেনঃ “আগুনে রান্না বা স্পর্শ করা খাদ্য খাওয়ার পর তোমরা উযু করো”। ইমাম আবু দাউদ [রহমাতুল্লাহি আলাইহি] বলেন, যুহরীর হাদীসে হে আমার ভাইয়ের ছেলে- কথাটি রয়েছে।

ওজু ভঙ্গের কারণ সমূহ -এই হাদিসের তাহকিকঃ সহিহ হাদিস

অনুচ্ছেদ-৭৭ঃ দুধ পান করলে উযু [কুলি] করা প্রসঙ্গে

১৯৬. ইবনি আব্বাস [রাঃআ:] হইতে বর্ণিতঃ

নবি [সাঃআ:] দুধ পান করার পর পানি চেয়ে কুলি করিলেন। অতঃপর বললেনঃ দুধের মধ্যে চর্বি আছে।

সহীহঃ বোখারী ও মুসলিম। হাদীস থেকে শিক্ষাঃ দুধ পান করলে এবং চর্বি জাতীয় যে কোন খাদ্য খেলে কুলি করা মুস্তাহাব। ওজু ভঙ্গের কারণ সমূহ -এই হাদিসের তাহকিকঃ সহিহ হাদিস

অনুচ্ছেদ- ৭৮ঃ দুধ পানের পর উযু [কুলি] না করা প্রসঙ্গে

১৯৭, তাওবাহ আল-আনবারী হইতে বর্ণিতঃ

তিনি আনাস ইবনি মালিক [রাঃআ:]-কে বলিতে শুনেছেনঃ রাসুলুল্লাহ [সাঃআ:] দুধ পান করার পর কুলি এবং উযু না করেই সালাত আদায় করিয়াছেন।

হাদীস থেকে শিক্ষা: দুধ পান করে উযু ও কুলি না করা জায়িয। দুধ পান করলে এবং চর্বি জাতীয় যে কোনো খাদ্য খেলে কুলি করা মুস্তাহাব। হাদিসের তাহকিকঃ হাসান হাদিস

অনুচ্ছেদ-৭৯ঃ রক্ত বের হলে উযু করা

১৯৮. জাবের [রাঃআ:] হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, আমরা রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের সঙ্গে যাতুর-রিক্বা যুদ্ধাভিযানে বের হলাম। তখন এক ব্যক্তি মুশরিকদের এক লোকের স্ত্রীকে হত্যা করে। ফলে ঐ মুশরিক এ মর্মে শপথ করে যে, যতক্ষণ পর্যন্ত মুহাম্মাদের [সাঃআ:] কোন সাথীর রক্তপাত না করব, ততক্ষণ পর্যন্ত আমি ক্ষান্ত হব না। অতএব সে নবি [সাঃআ:] এর সন্ধানে বেরিয়ে পড়ল। নবি [সাঃআ:] এক জায়গায় অবতরন করে বললেনঃ এমন কে আছো, যে আমাদের পাহারা দিবে? তখন মুহাজিরদের থেকে একজন এবং আনসারদের থেকে একজন তৈরি হয়ে গেলেন। তিনি বললেনঃ তোমরা দুজনে গিরিপথের চূড়ায় মোতায়েন থাক। উভয়ে গিরিমুখে পৌছলে মুহাজির লোকটি ঘুমিয়ে পড়েন। আর আনসারী লোকটি দাঁড়িয়ে সালাত আদায়ে মশগুল হন। এমন সময় ঐ লোকটি এসে আনসারী লোকটিকে দেখেই চিনে ফেলল, সে বুঝতে পারল তিনি [প্রতিপক্ষের] নিরাপত্তা প্রহরী। অতএব সে তাহাঁর প্রতি একটি তীর নিক্ষেপ করিল, যা তার দেহে বিঁধে গেল। তিনি তা বের করে নিলেন। সে একে একে তিনটি তীর নিক্ষেপ করিল। তিনি রুকু সাজদাহ করে [যথারীতি সালাত শেষ করে] সাথীকে জাগালেন। সাহাবীগণ সতর্ক হয়ে গিয়েছেন, এটা টের পেয়ে মুশরিক লোকটি পালিয়ে গেল। মুহাজির সাহাবী আনসার সাহাবীকে রক্তাক্ত অবস্থায় দেখিতে পেয়ে বলিলেন, সুবহানাল্লাহ! প্রথম তীর নিক্ষেপের পরই আমাকে সতর্ক করেননি কেন? তিনি বলিলেন, আমি [সালাতে] এমন একটি সূরাহ তিলাওয়াত করছিলাম যা ভঙ্গ করিতে আমি পছন্দ করিনি।

হাদীস থেকে শিক্ষা: প্রসাব-পায়খানা রাস্তা ব্যতীত দেহের অন্য কোন স্থান হতে রক্ত প্রবাহিত হলে উযু ভঙ্গ হইবে কিনা এ নিয়ে ফুক্বাহাদের মধ্যে মতভেদ রয়েছে। কেউ বলেছেন, এতে উযু ভঙ্গ হইবে।আর কেউ বলেছেন, ভঙ্গ হইবেনা। তারা প্রত্যেকে স্বপক্ষে দলীল পেশ করে থাকেন। কিন্তু সবচেয়ে মজবুত কথা হচ্ছে, দেহ থেকে রক্ত বের হলে উযু ভঙ্গ হইবেনা। এ ব্যপারে সামনে আলোচনা আসছে। তবে প্রসাব-পায়খানা দিয়ে রক্ত বের হলে উযু ভঙ্গ হইবে। ইমাম আবু হানিফা, ইমাম শাফিঈ ও ইমাম আহমদ [রহমাতুল্লাহি আলাইহি] প্রমুখের মতও তাই। হাদিসের তাহকিকঃ হাসান হাদিস

অনুচ্ছেদ-৮০ঃ ঘুমালে উযু নষ্ট হয় কিনা

১৯৯. আব্দুল্লাহ ইবনি উমার [রাঃআ:] হইতে বর্ণিতঃ

রসুলুল্লাহ [সাঃআ:] একদিন ইশার সালাতে আসতে বিলম্ব করেন। এমনকি আমরা মাসজিদে ঘুমিয়ে পড়লাম, তারপর জাগলাম। আবার ঘুমিয়ে পড়লাম, তারপর জাগলাম। অতঃপর আবার আমরা ঘুমিয়ে পড়লাম। তারপর তিনি আমাদের নিকট এলেন এবং বললেনঃ তোমরা ব্যতীত অন্য কেউই সালাতের জন্য অপেক্ষা করছেনা।

সহীহঃ বোখারী ও মুসলিম। ওজু ভঙ্গের কারণ সমূহ -এই হাদিসের তাহকিকঃ সহিহ হাদিস

২০০. আনাস [রাঃআ:] হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, রসুলুল্লাহ [সাঃআ:] -এর সাহাবীগন ইশার সালাতের জন্য এতক্ষন অপেক্ষা করিতেন যে [তন্দ্রায়] তাঁদের মাথা ঢলে পড়ত। অতঃপর তাঁরা সালাত আদায় করিতেন অথচ [এজন্য পুনরায়] উযু করিতেন না।

সহীহঃ মুসলিম। ইমাম আবু দাউদ [রহমাতুল্লাহি আলাইহি] বলেন, শুবাহ তাতে কাত্বাদাহ সূত্রে রসুলুল্লাহ [সাঃআ:] -এর যুগে কথাটি বৃদ্ধি করিয়াছেন। ইমাম আবু দাউদ [রহমাতুল্লাহি আলাইহি] আরও বলেন, ইবনি আবু আরুবাহ ক্বাতাদাহ হতে এটি অন্য শব্দে বর্ণনা করিয়াছেন। ওজু ভঙ্গের কারণ সমূহ -এই হাদিসের তাহকিকঃ সহিহ হাদিস

২০১. আনাস ইবনি মালিক [রাঃআ:] হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেনঃ একদা ইশার সালাতের তাকবীর দেয়া হলো। এমন সময় এক ব্যক্তি দাঁড়িয়ে বলিল, হে আল্লাহর রসুল! আমার কিছু প্রয়োজনীয় কথা আছে। এ বলে সে দাঁড়িয়ে তাহাঁর সঙ্গে কথা বলিতে লাগলো। এদিকে সকলে বা কিছু সংখ্যক লোক তন্দ্রাচ্ছন্ন হয়ে পড়ল। অতঃপর নবি [সাঃআ:] তাঁদের নিয়ে সালাত আদায় করিলেন। [বর্ণনাকারী] উযুর কথা উল্লেখ করেননি।

সহিহঃ মুসলিম, ওজু ভঙ্গের কারণ সমূহ -এই হাদিসের তাহকিকঃ সহিহ হাদিস

২০২. ইবনি আব্বাস [রাঃআ:] হইতে বর্ণিতঃ

রসুলুল্লাহ [সাঃআ:] সাজদাহয় গিয়ে [কখনো] ঘুমিয়ে যেতেন, এমনকি তাহাঁর নাক ডাকার আওয়াজ শোনা যেত। অতঃপর তিনি দাঁড়িয়ে সালাত আদায় করিতেন, কিন্তু উযু করিতেন না। বর্ণনাকারী বলেন, আমি তাঁকে বললাম, আপনি ঘুমানোর পরও উযু না করেই সালাত আদায় করিলেন। তিনি বললেনঃ যে ব্যক্তি শুয়ে ঘুমায়, উযু করা তারই কর্তব্য। উসমান ও হাম্মাদ আরও বলেন, এর কারণ হল, শুয়ে ঘুমালে শরীরের বাঁধন ঢিলা হয়ে যায়। {২০১}

দুর্বলঃ মিশকাত ৩১৮। ইমাম আবু দাউদ [রহমাতুল্লাহি আলাইহি] বলেন, যে ব্যক্তি শুয়ে ঘুমায়, উযু করা তারই কর্তব্য-এ হাদীসটি মুনকার। এটি কেবল মাত্র ইয়াযিদ আল-দালানী ক্বাতাদাহ সূত্রে বর্ণনা করিয়াছেন। একদল বর্ণনাকারী ইবনি আব্বাস [রাঃআ:] সূত্রে হাদীসের প্রথমাংশ বর্ণনা করিয়াছেন। কিন্তু তাঁরা উপরোক্ত কথার কিছুই উল্লেখ করেননি। ইবনি আব্বাস [রাঃআ:] বলেছেন রসুলুল্লাহ [সাঃআ:] [অসতর্কতা] থেকে মাহফুয ছিলেন। আয়িশাহ [রাঃআ:] বলেন, নবি [সাঃআ:] বলেছেন, আমার চক্ষুদ্বয় ঘুমায়, কিন্তু অন্তর ঘুমায় না।

সহিহঃ মুসলিম। {২০১} তিরমিযীঃ [অধ্যায়ঃ পবিত্রতা, অনুঃ ঘুমালে উযু ভঙ্গ হয়, হাঃ ৭৭, ইমাম তিরমিজি এ ব্যপারে নীরব থেকেছেন], আহমদ [১/২৫৬, হাঃ ২৩১৫], আবদ ইবনি হুমাইদ মুসনাদ [৬৫৯], বায়হাক্বী সুনানুল কুবরা [১/১২১]। ইমাম বায়হাক্বী বলেন, এ সূত্রে হাদীস বর্ণনায় ইয়াযিদ ইবনি আবদুর রহমান আবু খালিদ আদ-দালানী এক হয়ে গেছেন। ইমাম তিরমিজি আল-ইলাল গ্রন্থে বলেন, আমি এ হাদীস সম্পর্কে মুহাম্মাদ ইবনি ইসমাইল বোখারীকে জিজ্ঞেস করলে তিনি বলেন, এটা কিছুই না। আল্লামা মুনযিরী মুখতাসার সুনান [১/১৪৫] গ্রন্থে বলেন ইমাম দারাকুতনী বলেন, ক্বাতাদাহ সূত্রে এ হাদীস বর্ণনায় ইয়াযিদ অর্থাৎ আদ-দালানী এক হয়ে গেছেন এবং এটি সহিহ নয়। অতএব হাদিসটি দুর্বল। হাদিসটিকে দুর্বল বলেছেন, আহমদ ইবনি হাম্বল, ইমাম বোখারী, তিরমিজি, আল্লামা মুনযিরী ও অন্যান্যরা। মিশকাতের তাহক্বিক্বে শায়খ নাসিরুদ্দিন আলবানি [রহমাতুল্লাহি আলাইহি] বলেন, সানাদে আদ-দালানী দুর্বল এবং তিনি হাদীসের মাতানেও ভুল করিয়াছেন। হাদিসের তাহকিকঃ অন্যান্য

২০৩. আলী ইবনি আবু ত্বালিব [রাঃআ:] হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন রসুলুল্লাহ [সাঃআ:] বলেছেনঃ চক্ষুদ্বয় হচ্ছে পশ্চাৎদারের সংরক্ষণকারী। কাজেই যে ব্যক্তি [চোখ বন্ধ করে] ঘুমায়, সে যেন উযু করে।

এ অনুচ্ছেদের হাদীস থেকে শিক্ষাঃ ১। হালকা ঘুমে উযু নষ্ট হয়না। ২। রাতের এক তৃতীয়াংশের পরও ইশার সালাত বিলম্বে আদায় করা জায়িয। বিশেষ করে এ সময়ে নিতান্ত প্রয়োজন থাকলে। ৩। অনেক লোকের উপস্তিতিতে দু ব্যক্তির পরস্পরে চুপি চুপি কানে কানে কথা বলা জায়িয। আর নিষেধ হচ্ছে কেবল তিনজন থাকলে একজনকে বাদ দিয়ে দুজনে চুপিসারে কথা বলা। ৪। ইক্বামাত ও সালাতের মাঝে দীর্ঘ সময় ব্যবধান হলে পুনরায় ইক্বামাত দেয়ার প্রয়োজন নেই। ৫। দাঁড়িয়ে বা বসে ঘুমালে উযু নষ্ট হয় না। ৬। যমীনের সাথে ঠেস লাগিয়ে ঘুমানো উযু ভঙ্গের কারণ। হাদিসের তাহকিকঃ হাসান হাদিস

অনুচ্ছেদ-৮১ঃ যে ব্যক্তি তাহাঁর পায়ে ধুলা-ময়লা মাড়িয়েছে

২০৪. শাক্বীক্ব হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, আবদুল্লাহ [রাঃআ:] বলেছেনঃ রাস্থার ধুলা-ময়লার উপর দিয়ে অতিক্রম করা সত্ত্বেও আমরা উযু করতাম না এবং আমরা [সালাতের মধ্যে নিজেদের] চুল ও কাপড়-চোপড়ও সামলাতাম না।

হাদীস থেকে শিক্ষাঃ খালি পায়ে হাটার কারণে পায়ে ধুলা ময়লা লাগলে তাতে উযু নষ্ট হয় না। ওজু ভঙ্গের কারণ সমূহ -এই হাদিসের তাহকিকঃ সহিহ হাদিস

অনুচ্ছেদ-৮২ঃ সালাতের মধ্যে কারো উযু ছুটে গেলে

২০৫. আলী ইবনি ত্বালক্ব [রাঃআ:] হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, রসুলুল্লাহ [সাঃআ:] বলেছেনঃ তোমাদের কেউ সালাতের মধ্যে [পশ্চাৎ-দ্বারে] বায়ু নির্গত করলে সে যেন ফিরে গিয়ে উযু করে এবং পুনরায় সালাত আদায় করে। {২০৪}

দুর্বলঃ জঈফ আল-জামিউস সাগীর ৬০৭, মিশকাত ৩১৪, ১০০৬। {২০৪} তিরমিজি [অনুঃ নারীদের পশ্চাৎদ্বারে সঙ্গম করা অপছন্দনীয়, হাঃ ১১৬৪], দারিমী [অধ্যায়ঃ পবিত্রতা, অনুঃ যে ব্যক্তি স্বীয় স্ত্রীর পশ্চাৎদ্বারে সঙ্গম করে, হাঃ ১১৪১], ইবনি হিব্বান [২০৩, ২০৪], আসিম আল আহওয়াল সূত্রে। ইমাম তিরমিজি বলেন, আলী ইবনি ত্বালক্ব এর হাদিসটি হাসান। আমি মুহাম্মাদকে বলিতে শুনিয়াছি নবি [সাঃআ:] এর সূত্রে বর্ণিত আলী ইবনি ত্বালক্বের কেবল এ হাদিসটিই আমার জানা আছে। আহমদ [১/৮৬, হাঃ ৬৫৫] শায়খ আহমদ শাকির বলেন, এর সানাদ সহিহ এবং তিরমিজি [হাঃ ১১৬৫] ওয়াকি সূত্রে ইবনি আবদুল মালিক ইবনি মুসলিম হতে তাহাঁর পিতার সূত্রে। ইমাম তিরমিজি বলেন এখানে আলী হচ্ছে আলী ইবনি ত্বালক্ব। হাদিসটির সানাদ সহিহ। কিন্তু মিশকাতের তাহক্বীক্বে শায়খ নাসিরুদ্দিন আলবানি [রহমাতুল্লাহি আলাইহি] বলেনঃ এর সানাদে ঈসা ইবনি হিত্বত্বান রয়েছে। ইবনি আবদুল বার বলেছেন, তিনি ঐ লোকদের অন্তর্ভুক্ত নন যাঁদের দ্বারা দলীল গ্রহণ করা যায়। হাফিয [রহমাতুল্লাহি আলাইহি] ও আত-তাক্বরীব গ্রন্থে এদিকে ইঙ্গিত করিয়াছেন। সেজন্য আমি একে যইফ সুনানে অন্তর্ভুক্ত করেছি। হাদীস থেকে শিক্ষাঃ ১। পশ্চাতদ্বারে বায়ু নির্গত হলে উযু নষ্ট হইবে। সালাত আদায়কালে বায়ু নির্গত হলে বা উযু ভঙ্গের অন্যান্য কারণ ঘটলে সালাত ছেড়ে দেয়া ওয়াজিব। ২। কারো সালাতরত অবস্থায় বায়ু নির্গত হওয়ার কারণে উযু নষ্ট হলে সে যেন ফিরে এসে পুনরায় সালাত আরম্ভ করে এবং ছুটে যাওয়া অংশ থেকে আরম্ভ না করে। হাদিসের তাহকিকঃ দুর্বল হাদিস


Posted

in

by

Comments

Leave a Reply