এতেকাফ ও লাইলাতুল ক্বদর এর বর্ণনা – মুয়াত্তা হাদীস
এতেকাফ ও লাইলাতুল ক্বদর এর বর্ণনা – মুয়াত্তা হাদীস, এই অধ্যায়ে হাদীস =১৭ টি ( ৬৭৯-৬৯৫ পর্যন্ত ) >> মুয়াত্তা ইমাম মালিক এর মুল সুচিপত্র দেখুন
অধ্যায় – ১৯ঃ ই’তিকাফ
পরিচ্ছেদঃ ১ – এতেকাফের বর্ণনা
পরিচ্ছেদঃ ২ -যা ছাড়া এতেকাফ হয় না
পরিচ্ছেদঃ ৩ – এতেকাফকারীর ঈদের উদ্দেশ্যে গমন
পরিচ্ছেদঃ ৪ – এতেকাফ কাযা করা
পরিচ্ছেদঃ ৫ – এতেকাফ অবস্থায় বিবাহ করা
পরিচ্ছেদঃ ৬ – লাইলাতুল ক্বদর -এর বর্ণনা
পরিচ্ছেদঃ ১ – এতেকাফের বর্ণনা
৬৭৭ নাবী সাঃআঃ-এর সহধর্মিণী আয়েশা [রাদি.] হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেছেন, রাসূলুল্লাহ [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম] ইতিকাফে থাকা অবস্থায় তাঁর শির আমার দিকে ঝুঁকিয়ে দিতেন, আমি তাঁর চুল চিরুনি দিয়ে আঁচড়িয়ে দিতাম। আর তিনি হাজতে-ইনসানী [পায়খানা-প্রস্রাবের আবশ্যক] ব্যতীত গৃহে প্রবেশ করিতেন না।
[বুখারি ২০২৯, মুসলিম ২৯৭] যই হাদীসটির তাহকিকঃ সহীহ হাদীস
৬৭৮ আমরা বিন্ত আবদুর রহমান [রাহিমাহুল্লাহ] হইতে বর্ণিতঃ
আয়েশা [রাদি.] যখন এতেকাফ করিতেন, তখন তিনি রোগীর অবস্থা জিজ্ঞাসা করিতে গমন করিতেন না। কিন্তু চলার পথে না দাঁড়িয়ে জিজ্ঞেস করে নিতেন। [হাদীসটি ঈমাম মালিক [রাহিমাহুল্লাহ] একক ভাবে বর্ণনা করিয়াছেন]
ইয়াহ্ইয়া [রাহিমাহুল্লাহ] বলেন, মালিক [রাহিমাহুল্লাহ] বলেছেন, এতেকাফকারী কোন প্রয়োজনে মসজিদের বাহিরে যাবে না এবং কোন কারণে বাহিরও হইবে না। আর কাউকে সাহায্যও করিবে না। কিন্তু যদি হাজতে-ইনসানীর [প্রস্রাব-পায়খানা] জন্য বাহির হয় তা বৈধ হইবে। আর যদি কারো আবশ্যকের জন্য বের হওয়া জায়েয হত তবে রোগীর অবস্থা দেখা, জানাযার নামাজ পড়া ও উহার অনুগমন তার জন্য সর্বাগ্রে বৈধ হত [কিন্তু সেগুলোর জন্যও বের হওয়া নিষেধ]।
ইয়াহ্ইয়া [রাহিমাহুল্লাহ] বলেন, মালিক [রাহিমাহুল্লাহ] বলেছেন, এতেকাফকারী [প্রকৃত] এতেকাফকারী হইবে না যতক্ষণ যেসব বস্তু হইতে তার পরহেয করিতে হয় সেসব হইতে সে পরহেয না করিবে [যথা রোগী দেখিতে যাওয়া, জানাযার নামাজ পড়া, হাজতে-ইনসানী ব্যতীত গৃহে প্রবেশ করা]।
এই হাদীসটির তাহকিকঃ নির্ণীত নয়
৬৭৯ মালিক [রাহিমাহুল্লাহ] হইতে বর্ণিতঃ
তিনি ইবনি শিহাব [রাহিমাহুল্লাহ]-কে প্রশ্ন করলেন, এক ব্যক্তি সম্পর্কে যে এতেকাফ করিতেছে, সে কি তার প্রস্রাব-পায়খানার প্রয়োজনে [গৃহের] ছাদের নিচে প্রবেশ করিতে পারবে ? তিনি বলিলেন, হ্যাঁ, এতে কোন ক্ষতি নেই। [হাদীসটি ঈমাম মালিক [রাহিমাহুল্লাহ] একক ভাবে বর্ণনা করিয়াছেন]
ইয়াহ্ইয়া [রাহিমাহুল্লাহ] বলেন, মালিক [রাহিমাহুল্লাহ] বলেছেন, আমাদের নিকট যাতে কোন ইখতিলাফ নেই তা এই যে, যে সকল মসজিদে জুমআর নামাজ পড়া হয়, সেই সকল মসজিদে এতেকাফ করা মাকরূহ নয়। আর আমি মনে করি না যে, যে সকল মসজিদে জুমআর নামাজ পড়া হয় না, সে সকল মসজিদে এতেকাফকে তিনি [মালিক র.] মাকরূহ বলেছেন। ব্যাপার হল এই যে, এতেকাফকারী যে মসজিদে এতেকাফ করিতেছে উহা হইতে বের হইবে অথবা জুমআ ছেড়ে দিবে, সে জন্য তিনি মাকরূহ বলেছেন। তাঁর মতে, যদি এরূপ মসজিদ হয় যাতে জুমআ পড়া হয় না এবং এতেকাফকারীর উপর সেই মসজিদ ছাড়া অন্য কোন মসজিদে জুমআতে যাওয়া ওয়াজিব না হয় তবে সেই মসজিদে এতেকাফ করিতে কোন দোষ নেই। কারণ আল্লাহ তাআলা ইরশাদ করিয়াছেন, {১} وَأَنْتُمْ عَاكِفُونَ فِي الْمَسَاجِدِ এতে সাধারণভাবে সকল মসজিদকে উদ্দেশ্য করা হয়েছে এবং কোন মসজিদকে আল্লাহ্ নির্দিষ্ট করে দেননি।
মালিক [রাহিমাহুল্লাহ] বলেন, এজন্যই এতেকাফকারীর পক্ষে জুমআ অনুষ্ঠিত হয় না সেইরূপ মসজিদে এতেকাফ করা জায়েয হইবে, যদি মসজিদ হইতে বের হয়ে জুমআ মসজিদে যাওয়া তার উপর ওয়াজিব না হয়।
মালিক [রাহিমাহুল্লাহ] বলেন, যে মসজিদে এতেকাফ করেছে [এতেকাফকারী] সেই মসজিদেই রাত্রি যাপন করিবে, তবে যদি তাঁর তাঁবু মসজিদের চত্বরের কোন চত্বরে হয়।
মালিক [রাহিমাহুল্লাহ] বলেন, আমি শুনি নাই, এতেকাফকারী রাত্রি যাপন করার জন্য কোন কিছু নির্মাণ করিবে কিন্তু তার রাত্রি যাপন হইবে মসজিদে অথবা মসজিদের চত্বরে। মসজিদ ব্যতীত অন্যত্র রাত্রি যাপন সে করিবে না, এর প্রমাণ হল আয়েশা [রাদি.]-এর উক্তি রাসূলুল্লাহ [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম] যখন এতেকাফ করিতেন তখন হাজতে-ইনসানী ছাড়া গৃহে প্রবেশ করিতেন না।
মালিক [রাহিমাহুল্লাহ] বলেন, কেউ মসজিদের ছাদের উপর এতেকাফ করিবে না এবং সাওমাআতেও [মিনার] না।
মালিক [রাহিমাহুল্লাহ] বলেন, এতেকাফকারী যেই রাত্রে ইতিকাফের ইচ্ছা করেছে, সেই রাত্রের সূর্যাস্তের পূর্বে ইতিকাফের স্থানে প্রবেশ করিবে যাতে যে রাত্রে এতেকাফ করিবে, সে রাত্রের প্রথম অংশকে সে এতেকাফ দ্বারা মুবারকবাদ জানাতে পারে।
মালিক [রাহিমাহুল্লাহ] বলেন, এতেকাফকারী নিজের ইতিকাফে মশগুল থাকিবে এতেকাফ ভিন্ন তিজারত বা অন্যকিছুর দিকে যে সবের প্রতি মশগুল হওয়া যায় সেদিকে মনোযোগী হইবে না। এতেকাফকারীর পক্ষে তার কোন আসবাব অথবা পরিবারের উপকারী ও উপযোগী কোন কাজ, তার মাল বিক্রয় অথবা অন্য কোন কাজ যা তাকে ব্যতিব্যস্ত করে না [এই জাতীয়] নিজের কোন আবশ্যকে নির্দেশ দেয়াতে কোন ক্ষতি নেই। এতে কোন দোষ নেই, যদি তিনি ছোটখাট কাজের জন্য কোন ব্যক্তিকে সেই কার্য সমাধা করিতে নির্দেশ দেন।
মালিক [রাহিমাহুল্লাহ] বলেন, কোন আহলে ইলম কর্তৃক ইতিকাফে কোন শর্ত আরোপ করিতে আমি শুনিনি। এতেকাফ অন্যান্য আমলের মত একটি আমল; যথা নামাজ, রোযা, হজ্জ এবং অন্যান্য যা এ সকল আমলের অনুরূপ এবং যা উহাদের মধ্যে ফরয অথবা নফল। [শরীয়তের] এই সকল আমলের মত এতেকাফও একটি আমল। যে ব্যক্তি এর কোন আমলে প্রবেশ করিবে, সে প্রতিষ্ঠিত সুন্নত মুতাবিক আমল করিবে। মুসলমানগণ যে তরীকায় চলেছেন সে তরীকা ছাড়া এতে নূতন কোন পন্থা আবিষ্কার করার অধিকার তার নেই। না কোন শর্ত আরোপ করিবে, না কোন বিদআত সৃষ্টি করিবে। রসূলুল্লাহ্ [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম] এতেকাফ করিয়াছেন, উহা হইতে মুসলমানরা ইতিকাফের সুন্নত অবগত হয়েছেন।
ইয়াহ্ইয়া [রাদি.] বলেন, মালিক [রাহিমাহুল্লাহ] বলেছেন, এতেকাফ এবং মসজিদে অবস্থান এক সমান। আর গ্রাম ও শহরের লোকের এতেকাফ এক সমান [আহকামের ব্যাপারে]।
{১} তোমরা মসজিদে এতেকাফরত অবস্থায় তাদের সাথে [স্ত্রী] মিলিত হইও না। ২ ঃ ১৮৭এই হাদীসটির তাহকিকঃ নির্ণীত নয়
পরিচ্ছেদঃ ২ -যা ছাড়া এতেকাফ হয় না
৬৮০ মালিক [রাহিমাহুল্লাহ] হইতে বর্ণিতঃ
তাঁর কাছে খবর পৌঁছেছে যে, কাসিম ইবনি মুহাম্মদ [রাহিমাহুল্লাহ] ও আবদুল্লাহ্ ইবনি উমার [রাদি.]-এর মাওলা নাফি [রাহিমাহুল্লাহ] বলেছেন, এতেকাফ জায়েয নয় রোযা ব্যতীত, কারণ কুরআনে ইরশাদ হয়েছে
وَكُلُوْا وَاشْرَبُوا حَتَّى يَتَبَيَّنَ لَكُمْ الْخَيْطُ الْأَبْيَضُ مِنْ الْخَيْطِ الْأَسْوَدِ مِنْ الْفَجْرِ ثُمَّ أَتِمُّوا الصِّيَامَ إِلَى اللَّيْلِ وَلَا تُبَاشِرُوهُنَّ وَأَنْتُمْ عَاكِفُونَ فِي الْمَسَاجِدِ .
আর তোমরা পানাহার কর যতক্ষণ রাত্রির কৃষ্ণ রেখা হইতে উষার শুভ্র রেখা স্পষ্টরূপে তোমাদের নিকট প্রতিভাত না হয়। অতঃপর নিশাগমন-পর্যন্ত সিয়াম পূর্ণ কর। তোমরা মসজিদে এতেকাফরত অবস্থায় তাদের সাথে সঙ্গত হইও না। ২ ১৮৭
আল্লাহ তাআলা ইতিকাফের উল্লেখ করিয়াছেন রোযার সাথে। মালিক [রাহিমাহুল্লাহ] বলেন, আমাদের নিকট মাসআলা অনুরূপ। রোযা ব্যতীত এতেকাফ হয় না। [হাদীসটি ঈমাম মালিক [রাহিমাহুল্লাহ] একক ভাবে বর্ণনা করিয়াছেন]
এই হাদীসটির তাহকিকঃ নির্ণীত নয়
পরিচ্ছেদঃ ৩ – এতেকাফকারীর ঈদের উদ্দেশ্যে গমন
৬৮১ সুমাই [রাহিমাহুল্লাহ] হইতে বর্ণিতঃ
আবু বক্র ইবনি আবদুর রহমান [রাহিমাহুল্লাহ] এতেকাফ করিতেন এবং তিনি স্বীয় প্রয়োজনে মালিক ইবনি ওয়ালিদ [রাহিমাহুল্লাহ]-এর গৃহে ছাদওয়ালা একটি হুজরায় গমন করিতেন, অতঃপর তিনি ঈদের জামাআতে মুসলমানদের সাথে উপস্থিত হওয়ার পূর্বে এতেকাফ হইতে বের হইতেন না। [হাদীসটি ঈমাম মালিক [রাহিমাহুল্লাহ] একক ভাবে বর্ণনা করিয়াছেন]
এই হাদীসটির তাহকিকঃ নির্ণীত নয়
৬৮২ যিয়াদ [রাহিমাহুল্লাহ] হইতে বর্ণিতঃ
মালিক [রাহিমাহুল্লাহ] হইতে যিয়াদ [রাহিমাহুল্লাহ] বর্ণনা করেন তিনি কিন্তু আহলে ইলমকে দেখেছেন, তাঁরা রমযানের শেষ দশ দিন যখন এতেকাফ করিতেন তখন মুসলমানদের সাথে ঈদুল ফিতরে হাজির না হওয়া পর্যন্ত তাঁদের পরিজনের নিকট ফিরতেন না।
মালিক [রাহিমাহুল্লাহ] বলেন, জ্ঞান ও গুণের আধিকারী আমার পূর্ববর্তী মনীষিগণের নিকট হইতে আমার নিকট এটা পৌঁছেছে যে, যখন তাঁরা এতেকাফ করিতেন তখন অনুরূপ করিতেন। এই ব্যাপারে আমি যা শুনিয়াছি তন্মধ্যে এটা আমার কছে পছন্দনীয়।
এই হাদীসটির তাহকিকঃ নির্ণীত নয়
পরিচ্ছেদঃ ৪ – এতেকাফ কাযা করা
৬৮৩ আমরাহ্ বিন্ত আবদুর রহমান [রাহিমাহুল্লাহ] হইতে বর্ণিতঃ
রাসূলুল্লাহ [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম] এতেকাফ করিতে মনস্থ করলেন। অতঃপর যে স্থানে তিনি এতেকাফ করবার মনস্থ করেছিলেন সে স্থানে গমন করলে [সেখানে] কয়েকটি তাঁবু দেখিতে পেলেন। [এটা] আয়েশা [রাদি.]-এর তাঁবু, এটা হাফসা [রাদি.]-এর তাঁবু এবং এটা যায়নব [রাদি.]-এর তাঁবু। তিনি তাঁবু সম্পর্কে জেনে তাদের ব্যাপারে জিজ্ঞেস করলেন। তাহাকে বলা হল, এটা আয়েশা, এটা হাফসা এবং যায়নব [রাদি.]-এর তাঁবু। তারপর রাসূলুল্লাহ [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম] বলিলেন, এই সকলের দ্বারা তাঁরা কি পূণ্যের নিয়ত করিয়াছেন?
অতঃপর তিনি ফিরে গেলেন এবং এতেকাফ করলেন না। পরে তিনি শাওয়াল মাসের দশ দিন এতেকাফ করলেন। [বুখারি ২০৩৪, মুসলিম ১১৭৩]
যিয়াদ [রাহিমাহুল্লাহ] বলেন, মালিক [রাহিমাহুল্লাহ]-কে প্রশ্ন করা হল সে ব্যক্তি সম্পর্কে যে রমযানের শেষের দশদিনে ইতিকাফের উদ্দেশ্যে মসজিদে প্রবেশ করেছে, অতঃপর একদিন অথবা দুইদিন অবস্থান করার পর পীড়িত হয়ে পড়ে এবং মসজিদ হইতে বের হয়, সে সুস্থ হলে অবশিষ্ট দিনের এতেকাফ করা তার উপর ওয়াজিব হইবে কি ? কিংবা উহার কাযা তার উপর আদৌ ওয়াজিব হইবে না? ইহা তার উপর ওয়াজিব হলে কোন মাসে সে এতেকাফ করিবে ? উত্তরে মালিক [রাহিমাহুল্লাহ] বলেন, সুস্থ হয়ে গেলে রমযান বা পর-রমযানে তার উপর যে এতেকাফ ওয়াজিব হয়েছে তা কাযা করিবে।
আমার নিকট খবর পৌঁছেছে যে, রাসূলুল্লাহ [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম] একবার রমযানে এতেকাফ করার মনস্থ করলেন। পরে তিনি মত পাল্টালেন এবং এতেকাফ করলেন না। অতঃপর রমযান অতিবাহিত হলে শাওয়াল মাসে দশ দিন এতেকাফ করলেন।
নফল এতেকাফকারী ও যার উপর এতেকাফ ওয়াজিব হালাল ও হারামের বিষয়ে দুজনের হুকুম এক অর্থাৎ যা হালাল দুজনের জন্য হালাল এবং যা হারাম দুজনের জন্য হারাম। রাসূলুল্লাহ [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম]-এর এতেকাফ ছিল নফল এতেকাফ এইরূপই আমার নিকট রেওয়ায়ত পৌঁছেছে।
মালিক [রাহিমাহুল্লাহ] বলেন, যে স্ত্রীলোক এতেকাফ করে এবং এতেকাফ থাকতে তার হায়েয [ঋতুস্রাব] হয়, সে স্ত্রীলোক নিজ ঘরে ফিরে যাবে। তারপর যখন পাক হইবে সে মুহূর্তে মসজিদে উপস্থিত হইবে। এতে বিলম্ব করিবে না। অতঃপর তার ইতিকাফের যে কয়দিন পূর্বে অতিবাহিত হয়েছে উহা বাদ দিয়ে বাকি দিনগুলো এতেকাফ করিবে।
মালিক [রাহিমাহুল্লাহ] বলেন, অনুরূপ যে স্ত্রীলোকের উপর একাধারে দুই মাসের রোযা ওয়াজিব তার যদি ঋতুস্রাব হয়, তৎপর পাক হয়, তবে সে যে রোযা পূর্বে রেখেছিল তার উপর ভিত্তি করে বাকি রোযা রাখবে। উহাতে বিলম্ব করিবে না।
এই হাদীসটির তাহকিকঃ নির্ণীত নয়
৬৮৪ ইবনি শিহাব [রাহিমাহুল্লাহ] হইতে বর্ণিতঃ
রাসূলুল্লাহ [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম] ইতিকাফের অবস্থায় হাজতে ইনসানীর জন্য গৃহে প্রবেশ করিতেন।
[এমনটি ঈমাম বুখারি বর্ণনা করিয়াছেন ২০২৯, মুসলিম ৭১১, তবে, ঈমাম মালিক কর্তৃক বর্ণিত হাদীসটি মুরসাল]
মালিক [রাহিমাহুল্লাহ] বলেন, এতেকাফকারী মাতাপিতার জানাযা এবং তাঁরা ব্যতীত অন্য কারো জানাযায় শরীক হওয়ার জন্য বের হইবে না।
এই হাদীসটির তাহকিকঃ অন্যান্য
পরিচ্ছেদঃ ৫ – এতেকাফ অবস্থায় বিবাহ করা
মালিক [রাহিমাহুল্লাহ] বলেন, এতেকাফকারীর পক্ষে নিকাহ [অর্থাৎ] আক্দ করাতে কোন ক্ষতি নেই যাতে সহবাস করা না হয়। এতেকাফকারী মহিলাকেও বিবাহ করা যায় সহবাস ব্যতীত কেবল খিতবার [প্রস্তাবের] মাধ্যমে। মালিক [রাহিমাহুল্লাহ] বলেন, এতেকাফকারীর জন্য তার স্ত্রীদের সহিত দিনে যা হারাম রাতেও তা হারাম।
মালিক [রাহিমাহুল্লাহ] বলেন, কোন ব্যক্তির জন্য ইতিকাফে থাকা অবস্থায় তার স্ত্রীকে স্পর্শ [সহবাস] করা হালাল নয় এবং চুমু খাওয়া ইত্যাদি দ্বারা স্ত্রীকে উপভোগ করিবে না।
মালিক [রাহিমাহুল্লাহ] বলেন, এতেকাফকারী পুরুষ ও স্ত্রীলোক দুজনের জন্য এতেকাফ অবস্থায় নিকাহ্ করা মাকরূহ বলিতে আমি কাউকেও শুনিনি যতক্ষণ সহবাস না হয়। আর রোযাদারের জন্য রোযা অবস্থায় বিবাহ করা মাকরূহ নয়। এতেকাফকারীর বিবাহ করা এবং মুহরিম-এর [যিনি হজ্জ উমরার উদ্দেশ্যে ইহরাম করিয়াছেন] বিবাহ করার মধ্যে পার্থক্য এই যে, মুহরিম পানাহার করিতে পারবে না। আর এতেকাফকারীর পুরুষ ও স্ত্রীলোক তারা দুজনে তৈল ব্যবহার করিতে পারবে, খোশবু ব্যবহার করিতে পারবে। তারা প্রত্যেকে চুল কাটতে পারবে কিন্তু জানাযায় শরীক হইতে পারবে না। জানাযা নামাজ পড়িতে পারবে না। আর তাঁরা রোগী দেখিতে যেতে পারবে না। তাই বিবাহের ব্যাপারে দুজনের [মুহরিম ও এতেকাফকারী] হুকুম ভিন্ন ভিন্ন।
মালিক [রাহিমাহুল্লাহ] বলেন, মুহরিম, এতেকাফকারী এবং রোযাদারের বিবাহের ব্যাপারে এটা পূর্ববর্তীদের নীতি ছিল।
পরিচ্ছেদঃ ৬ – লাইলাতুল ক্বদর -এর বর্ণনা
৬৮৫ আবু সাঈদ খুদরী [রাদি.] হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ্ [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম] রমযানের মাঝের দশদিন এতেকাফ করিতেন। তাঁর ইতিকাফের বর্ণনা এই এক বৎসর তিনি এতেকাফ করলেন, অতঃপর যখন একুশের রাত্রি উপস্থিত হল, সে রাত্রির ফজরে এতেকাফ হইতে বের হলেন। তিনি ফরমালেন যে ব্যক্তি আমার সাথে এতেকাফ করেছে, সে যেন শেষের দশ দিনও এতেকাফ করে। আমি এই রাত্রিতে শবে-ক্বদর মালুম করেছি। তারপর আমাকে তা ভুলিয়ে দেওয়া হয়েছে। আমি সে রাত্রির ভোরবেলা আমাকে পানি ও কাদামাটিতে সিজ্দা করিতে অনুভব করেছি। তাই তোমরা উহা তালাশ কর শেষের দশদিনে এবং উহার সন্ধান কর প্রতি বিজোড় রাত্রে। [বুখারি ২০২৭, মুসলিম ১১৬৭]
আবু সাঈদ [রাদি.] বলেন, সেই রাত্রিতে বৃষ্টিপাত হয়, আর মসজিদ [তখন] খেজুরের ডালের। তাই বৃষ্টির পানি চুয়াইয়া মেঝেতে পড়েছিল। আবু সাঈদ [রাদি.] বলেন, আমার দুই নয়ন রসূলুল্লাহ্ সাঃআঃকে দেখেছে। তিনি একুশে রাত্রির ফজরের নামাজ পড়ে ফিরলেন [এই অবস্থায় যে] তাঁর ললাট ও নাকে পানি ও কাদামাটির নিশান রয়েছে।
এই হাদীসটির তাহকিকঃ সহীহ হাদীস
৬৮৬ উরওয়াহ্ ইবনি যুবায়র [রাহিমাহুল্লাহ] হইতে বর্ণিতঃ
রসূলুল্লাহ্ [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম] বলেছেন, রমযানের শেষ দশদিনে তোমরা শবে-ক্বদরের সন্ধান কর।
[বুখারি ২০২০, ঈমাম মুসলিম আয়েশা [রাদি.] থেকে বর্ণনা করেন মুসলিম ১১৬৯, আর ঈমাম মালিক কর্তৃক বর্ণিত হাদীসটি মুরসাল] এই হাদীসটির তাহকিকঃ অন্যান্য
৬৮৭ আবদুল্লাহ ইবনি উমার [রাদি.] হইতে বর্ণিতঃ
নিশ্চয় রসূল [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম] বলেছেন, তোমরা রমযানের শেষের সাত দিনে শবে-ক্বদরের অনুসন্ধান কর।
[বুখারি ২০১৫, মুসলিম ১১৬৫] এই হাদীসটির তাহকিকঃ সহীহ হাদীস
৬৮৮ আবদুল্লাহ্ ইবনি উনায়স জুহানী [রাদি.] হইতে বর্ণিতঃ
তিনি রসূলুল্লাহ্ সাঃআঃ-এর খিদমতে আরজ করলেন, আমি এমন এক ব্যক্তি যার বাড়ি অনেক দূরে অবস্থিত, তাই আমাকে আপনি একটি রাত বলে দিন যে রাত্রে আমি [ইবাদতের জন্য এই মসজিদে] আগমন করব। রসূলুল্লাহ্ [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম] তাহাকে বলিলেন, তুমি রমযানের তেইশে রাত্রে আগমন কর। [সহীহ, মুসলিম ১১৬৮, ঈমাম মালিক কর্তৃক বর্ণিত সনদে মুনকাতে তথা বিচ্ছিন্নতা রয়েছে]
এই হাদীসটির তাহকিকঃ অন্যান্য
৬৮৯ আনাস ইবনি মালিক [রাদি.] হইতে বর্ণিতঃ
রসূলুল্লাহ্ [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম] বের হয়ে আমাদের কাছে এলেন, অতঃপর বলিলেন, আমাকে অবশ্য এই রাত্রিটি [শবে-ক্বদর] রমযানে দেখান হয়েছে, হঠাৎ দুজন লোক বিতর্কে লিপ্ত হল, ফলে উহা [আমার স্মৃতি হইতে] তুলে নেওয়া হয়। অতঃপর তোমরা উহাকে তালাশ কর নবম, সপ্তম ও পঞ্চম রাত্রে।
[সহীহ, বুখারি ৪৯, আনাস [রাদি.] থেকে উবাদা বর্ণনা করিয়াছেন] এই হাদীসটির তাহকিকঃ অন্যান্য
৬৯০ মালিক [রাহিমাহুল্লাহ] হইতে বর্ণিতঃ
তাঁর নিকট রেওয়ায়ত পৌঁছেছে যে, নাবী সাঃআঃ-এর সাহাবীদের মধ্যে কিছু লোককে লাইলাতুল ক্বদর স্বপ্নে দেখানো হয় শেষের সাত রাত্রে। তারপর রসূলুল্লাহ্ [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম] বলেছেন, আমি মনে করি তোমাদের স্বপ্ন শেষের সাতদিনের ব্যাপারে পরস্পর মুয়াফিক [সামঞ্জস্যপূর্ণ] হয়েছে। অতঃপর যে উহাকে [লাইলাতুল ক্বদর] তালাশ করে, সে যেন শেষের সাত দিনে উহাকে তালাশ করে।
[বুখারি ২০১৫, মুসলিম ১১৬৫] এই হাদীসটির তাহকিকঃ সহীহ হাদীস
৬৯১ মালিক [রাহিমাহুল্লাহ] হইতে বর্ণিতঃ
তিনি নির্ভরযোগ্য আহলে ইলমকে বলিতে শুনেছেন রসূলুল্লাহ্ সাঃআঃকে তাঁর পূর্ববর্তী লোকদের আয়ু দেখান হয়। অথবা উহাতে যতটুকু আল্লাহ্ চেয়েছেন তা দেখান হয়। ফলে তিনি যেন তাঁর উম্মতের আয়ুকে সংক্ষিপ্ত মনে করলেন যার কারণে আমলের দিক দিয়ে তাঁরা পূর্ববর্তী ব্যক্তিদের সমপর্যায়ে পৌঁছাতে সক্ষম হইবে না। অতঃপর আল্লাহ্ তাহাকে হাজার মাস হইতে উত্তম লাইলাতুল ক্বদর প্রদান করেন। [হাদীসটি ঈমাম মালিক [রাহিমাহুল্লাহ] একক ভাবে বর্ণনা করিয়াছেন]
এই হাদীসটির তাহকিকঃ নির্ণীত নয়
৬৯২ মালিক [রাহিমাহুল্লাহ] হইতে বর্ণিতঃ
তাঁর কাছে সংবাদ পৌঁছেছে যে, সাঈদ ইবনি মুসায়্যাব [রাহিমাহুল্লাহ] বলিতেন, যে ব্যক্তি শবে-ক্বদরের ইশার নামাযে উপস্থিত হয়েছে, সে উহার [শবে-ক্বদর] অংশ প্রাপ্ত হয়েছে। [হাদীসটি ঈমাম মালিক [রাহিমাহুল্লাহ] একক ভাবে বর্ণনা করিয়াছেন]
এই হাদীসটির তাহকিকঃ নির্ণীত নয়
Leave a Reply