সম্মতি ব্যতীত ঋতুমতীকে তালাক প্রদান হারাম ..

সম্মতি ব্যতীত ঋতুমতীকে তালাক প্রদান হারাম

সম্মতি ব্যতীত ঋতুমতীকে তালাক প্রদান হারাম >> সহীহ মুসলিম শরীফ এর মুল সুচিপত্র দেখুন >> নিম্নে মুসলিম শরীফ এর একটি অধ্যায়ের হাদিস পড়ুন

১. অধ্যায়ঃ সম্মতি ব্যতীত ঋতুমতীকে তালাক প্রদান হারাম , যদি তালাক দেয় তবে তালাক হয়ে যাবে এবং তালাক প্রদানকারীকে রাজআতের [স্ত্রী ফিরিয়ে নেয়ার] নির্দেশ দিতে হইবে

৩৫৪৪. নাফি [রহমাতুল্লাহি আলাইহি]-এর সূত্রে ইবনি উমর [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

নবী [সাঃআঃ]-এর সময়কালে তিনি [ইবনি উমর] তাহাঁর স্ত্রীকে হায়য অবস্থায় তালাক দিলেন। তখন উমর [রাদি.]-এ বিষয়ে রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ]-এর নিকট জিজ্ঞেস করিলেন। রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] তাঁকে বলিলেন, তাকে {আবদুল্লাহ ইবনি উমর [রাদি.]-কে} আদেশ কর, যেন সে তাকে [স্ত্রীকে] রাজআত করে [পুনঃ স্ত্রীরূপে গ্রহণ করে] নেয়। অতঃপর তার [হায়য হইতে] পবিত্র হবার পরে পুনঃ হায়য এবং তার পরে পুনঃ পবিত্র [তুহর] হওয়া পর্যন্ত তাকে স্থিতাবস্থায় রেখে দেয়। এরপর পরবর্তী সময় তার ইচ্ছা হলে তাকে [স্ত্রী রূপে] রেখে দিবে। আর ইচ্ছে হলে সহবাসের পূর্বে তাকে তালাক দিবে। এটা হল সে ইদ্দাত যার প্রতি লক্ষ্য রেখে স্ত্রীদের তালাক দেয়ার জন্য মহান আল্লাহ আদেশ করিয়াছেন।{৫৬}

[ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৩৫১৬, ইসলামিক সেন্টার- ৩৫১৫{ক}]

{৫৬} “হে নবী তোমরা যখন তোমাদের স্ত্রীদেরকে তালাক দিতে ইচ্ছে কর, তখন তাদের তালাক দিও ইদ্দাতের প্রতি লক্ষ্য রেখে……” –[সূরাহ্ আত্ তালাক ৬৫ : ১]। এ আয়াতের প্রতি ইশারা করে।

৩৫৪৫. নাফি [রহমাতুল্লাহি আলাইহি] সূত্রে আবদুল্লাহ ইবনি উমর [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

তিনি তাহাঁর এক স্ত্রীকে হায়য অবস্থায় এক তালাক দিয়ে দেন। তখন রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] তাঁকে হুকুম দিলেন যেন সে স্ত্রীকে রাজআত করে নেয়। অতঃপর পবিত্র হওয়ার পরে পুনঃ আর একটি হায়য হওয়া পর্যন্ত তাকে নিজের কাছে রেখে দিবে। এরপর তার [এ পরবর্তী] হায়য হইতে পবিত্র হওয়া পর্যন্ত তাকে অবকাশ দিবে। তখন যদি তাকে তালাক দেয়ার ইচ্ছা হয় তবে পবিত্র হবার সময় তার সঙ্গে যৌন সঙ্গম করার আগে তাকে তালাক দিবে। এটাই হল সে ইদ্দাত যার প্রতি লক্ষ্য রেখে স্ত্রীদের তালাক প্রদানের আদেশ আল্লাহ দিয়েছেন।

…….. ইবনি রুম্‌হ [রহমাতুল্লাহি আলাইহি] তার রিওয়ায়াতে অধিক বলেছেন- এবং এ প্রসঙ্গে জিজ্ঞাসিত হলে আবদুল্লাহ [রাদি.] তাদের [প্রশ্নকর্তাদের] যে কাউকে বলিতেন : দেখ, তুমি তোমার স্ত্রীকে [যতক্ষণ] একবার কিংবা দুবার তালাক দিলে তা রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] আমাকে এরূপ [রাজআত] করার নির্দেশ দিয়েছেন। আর তুমি তাকে তিন তালাক দিয়ে দিলে তবে সে [স্ত্রী] তোমার জন্য হারাম হয়ে যাবে- যতক্ষণ না তুমি ব্যতীত অন্য কাউকে সে বিয়ে করে। আর তোমার স্ত্রীকে তালাক দেয়ার ব্যাপারে আল্লাহ তোমাকে বিধান দিয়েছিলেন তাতে তুমি তাহাঁর প্রতি অবাধ্যতা দেখালে।

ঈমাম মুসলিম [রহমাতুল্লাহি আলাইহি] বলেছেনঃ রাবী লায়স [রহমাতুল্লাহি আলাইহি] [কুতায়বাহ্‌ প্রমুখের শায়খ] তার একটি তালাক কথাটি স্পষ্ট করে দিয়ে উত্তম কাজ করিয়াছেন।

[ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৩৫১৭, ইসলামিক সেন্টার- ৩৫১৬]

৩৫৪৬. ইবনি উমর [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ]-এর যুগে আমি আমার স্ত্রীকে তালাক দিলাম, তখন সে ঋতুমতী ছিল। উমর [রাদি.] বিষয়টি রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ]-এর কাছে আলোচনা করলে তিনি বলিলেন, তাকে আদেশ কর সে যেন তাকে রাজআত [পুনঃগ্রহণ] করে। অতঃপর পবিত্র হয়ে পুনরায় আর একটি মাসিকে ঋতুমতী হওয়া পর্যন্ত তাকে স্থিতাবস্থায় রেখে দিবে। পরে যখন পবিত্র হইবে তখন তার সঙ্গে যৌন সঙ্গম করার আগে [যৌন সঙ্গম মুক্ত তুহর কালে] তাকে তালাক দিবে কিংবা তাকে [স্ত্রীরূপে] রেখে দিবে। কেননা, এটাই হল সে ইদ্দাত যার প্রতি লক্ষ্য রেখে স্ত্রীদের তালাক দেয়ার জন্য আল্লাহ তাআলা আদেশ করিয়াছেন।

রাবী উবায়দুল্লাহ [রহমাতুল্লাহি আলাইহি] বলেন, আমি শায়খ নাফি [রহমাতুল্লাহি আলাইহি]-কে বললাম ধার্য করা হল।

[ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৩৫১৮, ইসলামিক সেন্টার- ৩৫১৭]

৩৫৪৭. উবায়দুল্লাহ [রহমাতুল্লাহি আলাইহি] সূত্রে এ সানাদ হইতে বর্ণীতঃ

অনুরূপ রিওয়ায়াত করিয়াছেন। তবে নাফি [রহমাতুল্লাহি আলাইহি]-এর উদ্দেশ্যে, উবায়দুল্লাহ [রহমাতুল্লাহি আলাইহি]-এর বক্তব্যটি এতে উল্লেখিত হয়নি। এছাড়া ইবনিল মুসান্না [রাদি.] তার রিওয়ায়াতে বলেছেন [আরবী] সে যেন প্রত্যাহার করে এবং আবু বকর [রহমাতুল্লাহি আলাইহি] বলেছেন [আর-বী.] সে যেন ফিরিয়ে নেয়।

[ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৩৫১৯, ইসলামিক সেন্টার- ৪৫১৮]

৩৫৪৮. নাফি [রহমাতুল্লাহি আলাইহি]-এর সূত্র হইতে বর্ণীতঃ

ইবনি উমর [রাদি.] তাহাঁর স্ত্রীকে তার ঋতুকালীন অবস্থায় তালাক দিলেন। তখন উমর [রাদি.] নবী [সাঃআঃ]-কে [এ বিষয়ে] জিজ্ঞেস করলে তিনি তাঁকে [ইবনি উমরকে] হুকুম দিলেন যে, স্ত্রীকে সে রাজআত [পুনঃগ্রহণ] করে নিবে। এরপর তাকে অপর একটি ঋতুতে ঋতুমতী হওয়া পর্যন্ত অবকাশ দিবে। অতঃপর [ঋতু হইতে] পবিত্র হওয়া পর্যন্ত তাকে অবকাশ দিবে। পরে তার সঙ্গে যৌন সঙ্গম করার আগেই তাকে তালাক দিবে। এটাই হল সে ইদ্দাত যার প্রতি লক্ষ্য রেখে স্ত্রীদের তালাক দেয়ার জন্য মহামহীয়ান আল্লাহ হুকুম করিয়াছেন। রাবী [নাফি] বলেন, পরবর্তীতে স্ত্রীর হায়য অবস্থায় তালাক প্রদানকারী পুরুষ [এর মাসাআলা] সম্পর্কে তাকে জিজ্ঞেস করা হলে ইবনি উমর [রাদি.] বলিতেন, যদি তুমি এক কিংবা দুতালাক দিয়ে থাক, নিশ্চই রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] তাকে হুকুম দিয়েছেন যে, সে তাকে রাজআত করে নিবে। অতঃপর আর একটি হায়েযে ঋতুমতী হওয়া পর্যন্ত তাকে অবকাশ দিবে, এরপর পবিত্রতা [তুহর] পর্যন্ত তাকে অবকাশ দিবে। অতঃপর স্পর্শ [যৌন সঙ্গম] করার আগেই তালাক দিবে [যদি ইচ্ছা কর]। আর যদি তুমি তাকে তিন তালাক দিয়ে থাক তবে তুমি তোমার প্রতিপালকের অবাধ্য হয়েছো- তোমার স্ত্রীকে তালাক দেয়ার ব্যাপারে তিনি তোমাকে যে আদেশ করিয়াছেন সে ব্যাপারে এবং সে স্ত্রী তোমার সঙ্গ হইতে বিচ্ছিন্ন হয়ে গিয়েছে।

[ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৩৫২০, ই.সে ৩৫১৯]

৩৫৪৯. সালিম ইবনি আবদুল্লাহ [রহমাতুল্লাহি আলাইহি] সুত্র হইতে বর্ণীতঃ

ইবনি উমর [রাদি.] বলেছেন, আমি আমার স্ত্রীকে তালাক দিলাম- তখন সে ঋতুমতী ছিল। উমর [রাদি.] তা নবী [সাঃআঃ]-এর নিকট উল্লেখ করিলেন। ফলে রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] রাগান্বিত হলেন। পরে বলিলেন, তাকে আদেশ কর সে যেন তাকে রাজআত করে নেয়- যতক্ষণ না যে হায়েয কালে তাকে তালাক দিয়েছে সেটি ব্যতীত আর একটি হায়েযে সে ঋতুমতী হয়। তখন যদি তাকে তালাক দেয়া তার মনঃপুত হয় তবে যেন তার হায়য থেকে পবিত্র হওয়া অবস্থায় তার সঙ্গে যৌন সঙ্গম করার আগে তাকে তালাক দেয়। তিনি আরো বলিলেন, এটিই হল ইদ্দাতের [সময় নির্ণয়ের] জন্য তালাক প্রদান যেমন আল্লাহ হুকুম করিয়াছেন। [সালিম বলন] আবদুল্লাহ [রাদি.] তাকে এক তালাক দিয়েছিলেন। সেটি তার তালাক গণনা করা হল [অর্থাৎ এক তালাক ধরা হল] এবং রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ]-এর নির্দেশ অনুসারে আবদুল্লাহ [রাদি.] তাকে [স্ত্রীকে রাজআত করে নিয়েছিলেন।]

[ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৩৫২১, ইসলামিক সেন্টার- ৩৫২০]

৩৫৫০. [পূর্বোক্ত সানাদের ন্যায়] যুহরী [রহমাতুল্লাহি আলাইহি] সূত্রে ঐ সানাদ হইতে বর্ণীতঃ

তবে এতে রাবী [ ইবনি উমারের উক্তি উদ্ধৃত করে] বলেছেন যে, ইবনি উমর [রাদি.] বলেছেন, পরে আমি তাকে রাজআত করে নিলাম এবং তাকে যে তালাকটি দিয়েছিলাম তা তার জন্য একটি তালাকরূপে হিসাব করা হল।

[ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৩৫২২, ইসলামিক সেন্টার- ৩৫২১]

৩৫৫১. সালিম [রহ] সূত্রে উমর [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

তিনি নিজের স্ত্রীকে তার ঋতুবতী অবস্থায় তালাক দিলেন। তখন উমর [রাদি.] বিষয়টি নবী [সাঃআঃ]-এর সকাশে আলোচনা করিলেন। তিনি বলিলেন, তাঁকে আদেশ কর যেন সে তাকে রাজআত করে নেয়। পরে যেন তাকে তুহর [পবিত্র] অবস্থায় কিংবা গর্ভাবস্থায় [অবস্থা সম্পর্কে নিশ্চিত হয়ে] তালাক দেয়।{৫৭}

[ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৩৫২৩, ইসলামিক সেন্টার- ৩৫২২]

{৫৭} এ বর্ণনার প্রেক্ষিতে উম্মাতের ইজমা হল, হায়য অবস্থায় তালাক দেয়া হারাম। আর তালাক দিলে গুনাহগার হইবে। হাদীসে রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] রুজু তথা তালাক প্রত্যাহার করার নির্দেশ দেয়াতে স্পষ্টভাবে জানা গেল যে, তালাক পতিত হয়েছে এবং রাজআত করা মুসতাহাব। এটাও স্পষ্ট হল যে, তালাক প্রদানের স্থান তুহুর তথা পবিত্র অবস্থা। আর হাদীসের শেষে যে, তালাক দিবে তুহুর বা গর্ভাবস্থায় এ দ্বারা জানা গেল যে, গর্ভাবস্থায় তালাক প্রদান জায়িয। ঈমাম শফিঈ এবং অধিকাংশ আলিম যেমন ত্বাউস, হাসান, ইবনি সীরীন ও অন্যান্যদের মতও এটাই।

৩৫৫২. আবদুল্লাহ ইবনি দীনার [রহমাতুল্লাহি আলাইহি] হইতে বর্ণীতঃ

ইবনি উমর [রাদি.] সম্পর্কে বর্ণনা করেন যে, তিনি নিজের স্ত্রীকে- যখন সে হায়য অবস্থায় ছিল- তালাক দিলেন। তখন উমর [রাদি.] এ বিষয়ে রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ]-কে জিজ্ঞেস করলে তিনি বলিলেন, তাঁকে হুকুম কর যেন সে তাকে [স্ত্রীকে] রাজআত করে নেয়। অবশেষে সে আর একটি হায়েযে ঋতুমতী হবার পরে আবার পবিত্র হলে, তখন তাকে তালাক দিবে কিংবা [স্ত্রীরূপে] রেখে দিবে।

[ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৩৫২৪, ইসলামিক সেন্টার- ৩৫২৩]

৩৫৫৩. ইবনি সীরীন [রহমাতুল্লাহি আলাইহি] হইতে বর্ণীতঃ

তিনি বলেন, বিশ বছর আমি এ অবস্থায় অবস্থান করলাম যে, আমি অবিশ্বস্ত মনে করি না এমন লোক আমাকে এ মর্মে হাদীস শোনাচ্ছিল যে, ইবনি উমর [রাদি.] তাহাঁর স্ত্রী ঋতুবতী অবস্থায় তাকে তিন তালাক দেয়ার পরে তাকে রাজআত করে নেয়ার জন্য তিনি আদিষ্ট হয়েছিলেন। আমি এ বর্ণনাকারীদের প্রতি অনাস্থা ও সন্দেহ পোষণ করছিলাম না অথচ আমি ছিলাম প্রকৃত হাদীসের পরিচয় লাভে বঞ্চিত। অবশেষে আমি আবু গাল্লাব ইউনুস ইবনি জুবায়র আল বাহিলী [রহমাতুল্লাহি আলাইহি]-এর সঙ্গে সাক্ষাৎ করলাম। তিনি ছিলেন স্থিরমতি-আস্থাভাজন। তিনি আমাকে হাদীস বর্ণনা করিলেন যে, তিনি [নিজে] ইবনি উমর [রাদি.]-কে জিজ্ঞেস করলে তিনি [ইবনি উমর] তাঁকে হাদীস বর্ণনা করিলেন যে, তিনি তাহাঁর স্ত্রীকে তার হায়য চলাকালে এক তালাক দিয়েছিলেন। তখন তাকে রাজআত করে নেয়ার জন্য তিনি আদিষ্ট হলেন। তিনি [আবু গাল্লাব] বলেছেন, তবে আর কী! যদি নাকি তিনি [ইবনি উমর] অপারগ হয়ে থাকেন ও নির্বুদ্ধিতার পরিচয় দিয়ে থাকেন। [তাতে কার কী আসে যায়]।

[ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৩৫২৫, ইসলামিক সেন্টার- ৩৫২৪]

৩৫৫৪. পূর্বোক্ত সানাদের রাবী] আইয়ুব [রহমাতুল্লাহি আলাইহি]-এর সূত্রে ঐ সানাদ হইতে বর্ণীতঃ

অনুরূপ রিওয়ায়াত করিয়াছেন। তবে তিনি বলেছেন ….. উমর [রাদি.] নবী [সাঃআঃ]-কে জিজ্ঞেস করলে তিনি তাকে হুকুম করিলেন।

[ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৩৫২৬, ইসলামিক সেন্টার- ৩৫২৫]

৩৫৫৫. আইয়ুব [রহমাতুল্লাহি আলাইহি]-এর সূত্রে এ সানাদ হইতে বর্ণীতঃ

এ সানাদের হাদীসে রাবী বলেছেন, পরে উমর [রাদি.] এ বিষয়ে নবী [সাঃআঃ]-কে জিজ্ঞেস করলে তিনি তাকে পুনঃগ্রহণ করে নেয়ার জন্য তাহাঁর [ইবনি উমারের] প্রতি আদেশ প্রদান করিলেন। যাতে অবশেষে তাকে [স্ত্রীকে] যৌন সঙ্গমবিহীন তুহর [পবিত্র] অবস্থায় তালাক দিতে পারে। তিনি [নবী [সাঃআঃ]] আরো বলিলেন, তার [স্ত্রীর] ইদ্দাত [এর সময়] এর পূর্ব ভাগে [আগমন কালে] তাকে তালাক দিবে।

[ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৩৫২৭, ইসলামিক সেন্টার- ৩৫২৬]

৩৫৫৬. [মুহাম্মাদ ইবনি সীরীন সূত্রে] ইউনুস ইবনি জুবায়ের [রহমাতুল্লাহি আলাইহি] হইতে বর্ণীতঃ

তিনি বলেন, আমি ইবনি উমর [রাদি.]-কে বললামঃ এক ব্যক্তি তার স্ত্রীর হায়য অবস্থায় তাকে তালাক দিল। [এর হুকুম কি?]। তিনি বলিলেন, তুমি আবদুল্লাহ ইবনি উমর [রাদি.]-কে জান কি সে তাহাঁর স্ত্রীকে হায়য অবস্থায় তালাক দিয়েছিল? তখন উমর [রাদি.] নবী [সাঃআঃ]-কে জিজ্ঞেস করলে তিনি তাকে হুকুম করিলেন যে, সে [ইবনি উমর] তাকে [স্ত্রী] রাজআত করে নিবে। এরপর তার ইদ্দাতের [নিশ্চয়তাযুক্ত সময়ের] প্রতীক্ষায় থাকিবে। ইউনুস [রহমাতুল্লাহি আলাইহি] বলেন, তখন আমি তাকে [ইবনি উমরকে] বললাম, কোন পুরুষ যখন তার স্ত্রীকে হায়য অবস্থায় তালাক দিবে তখন ঐ তালাকটি হিসাবে গণনা করা হইবে কি? তিনি বলিলেন, তবে আর কি যদি নাকি সে অক্ষম হয়ে গিয়ে থাকে কিংবা বোকামি করে থাকে [তাহলে কি তার এ কাজের পরিণতি দেখা দিবে না?]

[ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৩৫২৮, ইসলামিক সেন্টার- ৩৫২৭]

৩৫৫৭. ইবনি উমর [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

তিনি বলেনঃ আমি আমার স্ত্রীকে তালাক দিলাম- তখন সে হায়য অবস্থায় ছিল। তখন উমর [রাদি.] নবী [সাঃআঃ]-এর নিকট গিয়ে তাহাঁর কাছে বিষয়টি আলোচনা করিলেন। নবী [সাঃআঃ] বললেনঃ সে যেন তাকে রাজআত করে নেয়। পরে যখন সে [হায়য হইতে] পবিত্র হইবে তখন ইচ্ছা করলে তাকে তালাক দিবে। রাবী ইউনুস [রহমাতুল্লাহি আলাইহি] বলেন, আমি ইবনি উমর [রাদি.]-কে বললাম, সেটি [তালাক] কি হিসাব করা হইবে? তিনি বলিলেন, কোন্‌ বিষয়ে তাকে বাধা দিবে- বলত যদি সে অপরাগ হইয়ে থাকে এবং আহ্‌ম্মকি করে থাকে।

[ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৩৫২৯, ইসলামিক সেন্টার- ৩৫২৮]

৩৫৫৮. আনাস ইবনি সীরীন [রহমাতুল্লাহি আলাইহি] সূত্র হইতে বর্ণীতঃ

তিনি বলেন, আমি উমর [রাদি.]-কে তার সে স্ত্রী সম্পর্কে জিজ্ঞেস করলাম যাকে তিনি তালাক দিয়েছিলেন। তিনি বলিলেন, তাকে আমি তালাক দিয়েছিলাম- যখন সে হায়য অবস্থায় ছিল। আমি বিষয়টি উমর [রাদি.]-এর কাছে উল্লেখ করলে তিনি তা নবী [সাঃআঃ]-এর নিকট আলোচনা করিলেন। তখন নবী [সাঃআঃ] বলিলেন, তাকে আদেশ কর সে যেন তার স্ত্রীকে পুনঃগ্রহণ করে নেয়। পরে যখন সে পাক হইবে তখন যেন সে [ইচ্ছা করলে] তার পাক অবস্থায় তাকে তালাক দেয়। ইবনি উমর [রাদি.] বলেন, আমি তাকে বললাম, তবে কি হায়য অবস্থায় প্রদত্ত তালাকটি কি আপনি হিসাবে ধরবেন? তিনি বলিলেন, আমি কেন সেটা গণনায় ধরবো না? যদি আমি অক্ষম হই অথবা নির্বুদ্ধিতা প্রকাশ করি [তাহলে কি আমার এ কাজ গণনায় আসবে না?]

[ ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৩৫৩০, ইসলামিক সেন্টার- ৩৫২৯]

৩৫৫৯. ইবনি উমর [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

তিনি বলেন, আমি আমার স্ত্রীকে হায়য অবস্থায় তালাক দেই। উমর [রাদি.] বিষয়টি নবী [সাঃআঃ]-এর কাছে উল্লেখ করলে তিনি বলিলেন, তাঁকে আদেশ কর সে যেন তাহাঁর স্ত্রীকে রাজআত করে। পরে যখন সে পবিত্র হইবে তখন যেন সে [ইচ্ছা করলে] তাকে পবিত্র অবস্থায় তালাক দেয়। আমি ইবনি উমর [রাদি.]-কে বললাম, তবে কি হায়য অবস্থায় প্রদত্ত তালাকটি কি আপনি কি হিসাবে ধরবেন? তিনি বলিলেন, তবে কী করব।

[ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৩৫৩১, ইসলামিক সেন্টার- ৩৫৩০]

৩৫৬০. পূর্বোক্ত সানাদের ন্যায়] শুবাহ্ [রহমাতুল্লাহি আলাইহি] সূত্রে এ সানাদ হইতে বর্ণীতঃ

তবে এ দুজনের হাদীসে [আরবী]-এর স্থলে [আরবী] [তাকে ফিরিয়ে আনে] রয়েছে এবং এদের হাদীসে আরো রয়েছে যে, আনাস [রহমাতুল্লাহি আলাইহি] বলেন, আমি বললাম, আপনি কি সেটি হিসাবে ধরবেন? তিনি বলিলেন, তবে আর কী হইবে?

[ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৩৫৩২, ইসলামিক সেন্টার- ৩৫৩১]

৩৫৬১. ইবনি ত্বাউস [রহমাতুল্লাহি আলাইহি]-এর পিতা [ত্বাউস] সূত্র হইতে বর্ণীতঃ

তিনি স্ত্রীকে হায়য অবস্থায় তালাক প্রদানকারী পুরুষ [এর মাসআলা] সম্পর্কে ইবনি উমর [রাদি.]-কে জিজ্ঞাসিত হইতে শুনলেন। তখন ইবনি উমর [রাদি.] বলিলেন, তুমি আবদুল্লাহ ইবনি উমর কে জান কি? লোকটি বলিল, হাঁ। ইবনি উমর [রাদি.] বলিলেন, তিনি তো তাহাঁর স্ত্রীকে হায়য অবস্থায় তালাক দিয়েছিলেন। তখন উমর [রাদি.] নবী [সাঃআঃ]-এর নিকট গিয়ে তাঁকে সংবাদ অবহিত করলে তিনি তাকে [স্ত্রীকে] পুনঃগ্রহণ করে নেয়ার জন্য তাঁকে আদেশ প্রদান করিলেন। ইবনি ত্বাউস [রহমাতুল্লাহি আলাইহি] বলেন, আমি তাঁকে [পিতাকে] এর অধিক বলিতে শুনিনি।

[ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৩৫৩৩, ইসলামিক সেন্টার- ৩৫৩২]

৩৫৬২. আবু যুবায়র [রহমাতুল্লাহি আলাইহি] সূত্র হইতে বর্ণীতঃ

তিনি আয্যাহ্-এর মাওলা [আযাদকৃত গোলাম] আবদুর রহমান ইবনি আয়মান [রহমাতুল্লাহি আলাইহি]-কে ইবনি উমর [রাদি.]-এর কাছে প্রশ্ন করিতে শুনলেন, আবু যুবায়র [রহমাতুল্লাহি আলাইহি] তখন শুনছিলেন– “যে ব্যক্তি তার স্ত্রীকে হায়য অবস্থায় তালাক দিল তার তার সম্পর্কে আপনার অভিমত কী?” ইবনি উমর [রাদি.] বলিলেন, রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ]-এর যুগে ইবনি উমর [রাদি.] তাহাঁর স্ত্রীকে তালাক দিল যখন সে ঋতুমতী ছিল। উমর [রাদি.] এ বিষয়ে রসুলাল্লাহ [সাঃআঃ]-এর নিকট জিজ্ঞেস করিলেন। তিনি বলিলেন, আবদুল্লাহ ইবনি উমর [রাদি.] তার স্ত্রীকে হায়য অবস্থায় তাকে তালাক দিয়েছে। নবী [সাঃআঃ] তাঁকে বলিলেন, সে যেন তাকে পুনঃগ্রহণ করে নেয়। সুতরাং [এভাবে] তিনি তাকে [স্ত্রীকে] ফিরিয়ে নিলেন। তিনি [সাঃআঃ] আরো বলিলেন, যখন [হায়য হইতে] পবিত্র হয়ে যাবে তখন [ইচ্ছা করলে] যেন তালাক দেয় কিংবা রেখে দেয়।

ইবনি উমর [রাদি.] বলেন, এবং [এ সময়] নবী [সাঃআঃ] তিলাওয়াত করলেনঃ

يَا أَيُّهَا النَّبِيُّ إِذَا طَلَّقْتُمُ النِّسَاءَ فَطَلِّقُوهُنَّ فِي قُبُلِ عِدَّتِهِنَّ ‏

[অর্থ] “হে নবী! তোমরা যখন তোমাদের স্ত্রীদের তালাক দিতে ইচ্ছা কর তখন তাদের তালাক দিও তাদের ইদ্দাতের [সময় আগমনের] অগ্রভাগে”- [সূরাহ্ আত্ তালাক ৬৫ : ১]।

[ ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৩৫৩৪, ইসলামিক সেন্টার- ৩৫৩৩]

৩৫৬৩. আবু যুবায়র [রহমাতুল্লাহি আলাইহি]-এর সূত্রে ইবনি উমর [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

পূর্বোক্ত বর্ণনার ন্যায় রিওয়ায়াত করিয়াছেন।

[ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৩৫৩৫, ইসলামিক সেন্টার- ৩৫৩৪]

৩৫৬৪. আবু যুবায়র [রহমাতুল্লাহি আলাইহি]-এর সূত্র হইতে বর্ণীতঃ

তিনি উরওয়াহ্ [রহমাতুল্লাহি আলাইহি]-এর আযদকৃত গোলাম আবদুর রহমান ইবনি আয়মান [রাদি.]-কে ইবনি উমর [রাদি.]-এর নিকট জিজ্ঞেস করিতে শুনেছেন আর আবু যুবায়র [রহমাতুল্লাহি আলাইহি] তখন হাজ্জাজ [রহমাতুল্লাহি আলাইহি]-এর হাদীসের অনুরূপ শুনছিলেন এবং তাতে কিছু অধিক তথ্য রয়েছে।

ঈমাম মুসলিম [রহমাতুল্লাহি আলাইহি] বলেন, উরওয়ার মাওলা বলে রাবী বিচ্যুতির শিকার হয়েছেন। মূলত হইবে আয্যার মাওলা।

[ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৩৫৩৬, ইসলামিক সেন্টার- ৩৫৩৫]


Posted

in

by

Comments

Leave a Reply