ঋণ গ্রহণ, ঋণ পরিশোধ, নিষেধাজ্ঞা আরোপ ও দেউলিয়া ঘোষণা
ঋণ গ্রহণ, ঋণ পরিশোধ, নিষেধাজ্ঞা আরোপ ও দেউলিয়া ঘোষণা >> বুখারী শরীফ এর মুল সুচিপত্র পড়ুন
পর্বঃ ৪৩, ঋণ গ্রহণ, ঋণ পরিশোধ, নিষেধাজ্ঞা আরোপ ও দেউলিয়া ঘোষণা, অধ্যায়ঃ (১-২০)=২০টি
৪৩/১. অধ্যায়ঃ যার কাছে জিনিসের মূল্য পরিমাণ অর্থ নেই বা সাথে নেই এমন ক্রেতার কোন জিনিস ক্রয় করা।
৪৩/২. অধ্যায়ঃ পরিশোধ করার বা ধ্বংস করার উদ্দেশ্যে কারো সম্পত্তি গ্রহণ করা।
৪৩/৩. অধ্যায়ঃ ঋণ পরিশোধ করা।
৪৩/৪. অধ্যায়ঃ উট কর্জ নেয়া।
৪৩/৫. অধ্যায়ঃ পাওনার জন্য ভদ্র ও উত্তম পন্থায় তাগাদা করা।
৪৩/৬. অধ্যায়ঃ কম বয়সের উটের বিনিময়ে বেশী বয়সের উট দেয়া যায় কি?
৪৩/৭. অধ্যায়ঃ ভালভাবে ঋণ পরিশোধ করা।
৪৩/৮. অধ্যায়ঃ পাওনা অপেক্ষা কম আদায় করা কিংবা মাফ করে দেয়া জায়েয।
৪৩/৯. অধ্যায়ঃ ঋণদাতার সঙ্গে কথা বলা এবং খেজুর অথবা অন্য কিছুর বদলে ঋণ অনুমানে আদায় করা জায়েয।
৪৩/১০. অধ্যায়ঃ ঋণ থেকে আশ্রয় চাওয়া।
৪৩/১১.অধ্যায়ঃ ঋণগ্রস্ত (মৃত) ব্যক্তির উপর জানাযার সালাত।
৪৩/১২. অধ্যায়ঃ ধনী ব্যক্তির (ঋণ আদায়ে) গড়িমসি করা অত্যাচারের শামিল।
৪৩/১৩. অধ্যায়ঃ পাওনাদার ব্যক্তির কড়া কথা বলবার অধিকার রয়েছে।
৪৩/১৪. অধ্যায়ঃ ঋণ, বিক্রয় ও আমানত হিসেবে রক্ষিত নিজ সম্পদ কেউ যদি দেউলিয়া লোকের নিকট পায় তবে সে-ই তার অধিকারী।
৪৩/১৫. অধ্যায়ঃ যে ব্যক্তি পাওনাদারকে দুএক দিনের জন্য বিলম্বিত করলো আর এটাকে টালবাহানা মনে করে না।
৪৩/১৬. অধ্যায়ঃ গরীব বা অভাবী ব্যক্তির সম্পত্তি বিক্রয় করে তা পাওনাদারদের মধ্যে বন্টন করে দেয়া অথবা তার নিজের খরচের জন্য দিয়ে দেয়া।
৪৩/১৭. অধ্যায়ঃ একটি নির্দিষ্ট সময়ের জন্য ঋণ দেয়া কিংবা ক্রয়-বিক্রয়ের মধ্যে সময় নির্ধারণ করা।
৪৩/১৮. অধ্যায়ঃ ঋণভার কমানোর সুপারিশ।
৪৩/১৯. অধ্যায়ঃ ধন-সম্পত্তি অপচয় করা নিষিদ্ধ।
৪৩/২০. অধ্যায়ঃ কৃতদাস তার মনিবের সম্পত্তির রক্ষক। সে তার মনিবের আদেশ ছাড়া তা ব্যয় করিবে না।
৪৩/১. অধ্যায়ঃ যার কাছে জিনিসের মূল্য পরিমাণ অর্থ নেই বা সাথে নেই এমন ক্রেতার কোন জিনিস ক্রয় করা।
২৩৮৫. জাবির ইবনু আবদুল্লাহ (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, আমি নাবী (সাঃআঃ)–এর সঙ্গে যুদ্ধে শরীক হই। তখন তিনি বলেন, তুমি কি মনে কর, তোমাদের উটটি আমার নিকট বিক্রি করিবে? আমি বললাম, হ্যাঁ। তারপর আমি সেটি তাহাঁর নিকট বিক্রি করলাম। পরে তিনি মাদিনায় এলেন, আমি সকাল বেলা উটটি নিয়ে তাহাঁর নিকট গেলাম। তখন তিনি আমাকে এর মূল্য প্রদান করিলেন।
২৩৮৬. আবদুল ওয়াহিদ সূত্রে আমাশ (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, আমরা ইবরাহীম নাখঈর কাছে ধার (বাকীতে) ক্রয় করা সম্পর্কে আলোচনা করলাম। তখন তিনি বলিলেন, আসওয়াদ (রাদি.) আয়েশা (রাদি.) হইতে বর্ণনা করেন যে, নাবী (সাঃআঃ) এক ইয়াহুদীর নিকট হইতে এক নির্দিষ্ট মেয়াদে (বাকীতে) খাদ্য ক্রয় করেন এবং তার নিকট নিজের লোহার বর্মটি বন্ধক রাখেন।
৪৩/২. অধ্যায়ঃ পরিশোধ করার বা ধ্বংস করার উদ্দেশ্যে কারো সম্পত্তি গ্রহণ করা।
২৩৮৭. আবু হুরাইরা (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ
নাবী করীম (সাঃআঃ) বলেছেন, যে ব্যক্তি মানুষের মাল (ধার) নেয় পরিশোধ করার উদ্দেশ্যে আল্লাহ তাআলা তা আদায়ের ব্যবস্থা করে দেন। আর যে তা নেয় বিনষ্ট করার নিয়্যাতে আল্লাহ তাআলা তাকে ধ্বংস করেন।
৪৩/৩. অধ্যায়ঃ ঋণ পরিশোধ করা।
আর আল্লাহ তাআলার বাণীঃ “আমানত তার হকদারকে ফিরিয়ে দেয়ার জন্য আল্লাহ তোমাদের নির্দেশ দিচ্ছেন। আর যখনই তোমরা মানুষের মধ্যে বিচার পরিচালনা করিবে, তখন ন্যায়পরায়ণতার সাথে বিচার করিবে। নিশ্চয়ই আল্লাহ তোমাদের যে উপদেশ দেন তা কত উৎকৃষ্ট। আল্লাহ সব শুনেন, সব দেখেন।
” (আন-নিসা (৪): ৫৮)
২৩৮৮. আবু যার (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, আমি নাবী করীম (সাঃআঃ)-এর সঙ্গে ছিলাম। যখন তিনি উহুদ পাহাড় দেখলেন, তখন বলিলেন, আমি পছন্দ করি না যে, এই পাহাড়টি আমার জন্য সোনায় পরিণত করা হোক এবং এর মধ্য হইতে একটি দীনারও (স্বর্ণ মুদ্রা) আমার নিকট তিন দিনের বেশী থাকুক, সেই দীনার ব্যতীত যা আমি ঋণ আদায়ের জন্য রেখে দেই। তারপর তিনি বলিলেন, যারা অধিক সম্পদশালী তারাই (সওয়াবের দিক দিয়ে) স্বল্পের অধিকারী। কিন্তু যারা এভাবে ওভাবে ব্যয় করেন (তারা ব্যতীত) (বর্ণনাকারী) আবু শিহাব তার সামনের দিকে এবং ডান ও বাম দিকে ইশারা করেন এবং এরূপ লোক খুব কম আছে। আল্লাহর রাসুল (সাঃআঃ) বলিলেন, তুমি এখানেই অবস্থান কর। তিনি একটু দূরে গেলেন। আমি কিছু শব্দ শুনতে পেলাম। তখন আমি তাহাঁর কাছে আসতে চাইলাম। এরপর “আমি ফিরে আসা পর্যন্ত তুমি এখানে অবস্থান কর” তাহাঁর এ কথাটি আমার মনে পড়ল। তিনি যখন আসলেন, আমি বললাম, হে আল্লাহর রাসুল! যা আমি শুনলাম অথবা বলিলেন যে আওয়াজটি আমি শুনতে পেলাম তা কী? তিনি বলিলেন, তুমি কী শুনেছ? আমি বললাম, হ্যাঁ। তিনি বলিলেন, আমার কাছে জিবরাঈল (আঃ)- এসেছিলেন এবং তিনি বলিলেন, আপনার কোন উম্মত আল্লাহর সঙ্গে কোন কিছুর শরীক না করে মারা গেলে সে জান্নাতে প্রবেশ করিবে। আমি বললাম, যদিও সে এরূপ, এরূপ কাজ করে? তিনি বলিলেন, হ্যাঁ।
২৩৮৯. আবু হুরাইরা (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, আল্লাহর রাসুল (সাঃআঃ) বলেছেন, আমার কাছে যদি উহুদ পাহাড়ের সমান সোনা থাকত, তাহলেও আমার পছন্দ নয় যে, তিন দিন অতিবাহিত হওয়ার পর তার কিছু অংশ আমার কাছে থাকুক। তবে এতটুকু পরিমাণ ব্যতীত, যা আমি ঋণ পরিশোধ করার জন্য রেখে দেই। সালিহ ও উকাইল (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) যুহরী (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) হইতে এ হাদীস বর্ণনা করিয়াছেন।
৪৩/৪. অধ্যায়ঃ উট কর্জ নেয়া।
২৩৯০. আবু হুরাইরা (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ
জনৈক ব্যক্তি আল্লাহর রাসুল (সাঃআঃ)-এর কাছে তার পাওনা আদায়ের কড়া তাগাদা দিল। সাহাবায়ে কিরাম তাকে শায়েস্তা করিতে উদ্যত হলেন। তিনি বলেন, তাকে ছেড়ে দাও। কেননা, পাওনাদারের কথা বলার অধিকার রয়েছে। তার জন্য একটি উট কিনে আন এবং তাকে দিয়ে দাও। তাঁরা বলিলেন, তার উটের চেয়ে বেশী বয়সের উট ছাড়া আমরা পাচ্ছি না। তিনি বলিলেন, সেটিই কিনে তাকে দিয়ে দাও। কারণ, তোমাদের উত্তম লোক সেই, যে উত্তমরূপে ঋণ পরিশোধ করে।
৪৩/৫. অধ্যায়ঃ পাওনার জন্য ভদ্র ও উত্তম পন্থায় তাগাদা করা।
২৩৯১. হুযাইফা (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, আমি নাবী করীম (সাঃআঃ)- কে বলিতে শুনিয়াছি, একজন লোক মারা গেল, তাকে জিজ্ঞেস করা হল, তুমি কী করিতে? সে বলিল, আমি লোকজনের সাথে বেচা-কেনা করতাম। ধনীদেরকে অবকাশ দিতাম এবং গরীবদেরকে হ্রাস করে দিতাম। কজেই তাকে মাফ করে দেয়া হল। আবু মাসউদ (রাদি.) বলেন, আমি নাবী করীম (সাঃআঃ)-এর নিকট হইতে এ হাদীস শুনিয়াছি।
৪৩/৬. অধ্যায়ঃ কম বয়সের উটের বিনিময়ে বেশী বয়সের উট দেয়া যায় কি?
২৩৯২. আবু হুরাইরা (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ
একজন লোক নাবী করীম (সাঃআঃ)-এর নিকট তার (প্রাপ্য) উটের তাগাদা দিতে আসে। আল্লাহর রাসুল (সাঃআঃ) সাহাবীদের বলিলেন, তাকে একটি উট দিয়ে দাও। তাঁরা বলিলেন, তার চেয়ে উত্তম বয়সের উটই পাচ্ছি। লোকটি বলিল, আপনি আমাকে পূর্ণ হক দিয়েছেন, আল্লাহ আপনাকে যেন পূর্ণ হক দেন। আল্লাহর রাসুল (সাঃআঃ) বলিলেন, তাকে সেটি দিয়ে দাও। কেননা, মানুষের মধ্যে সেই উত্তম, যে উত্তমরূপে ঋণ পরিশোধ করে।
৪৩/৭. অধ্যায়ঃ ভালভাবে ঋণ পরিশোধ করা।
২৩৯৩. আবু হুরাইরা (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, নাবী করীম (সাঃআঃ)-এর যিম্মায় একজন লোকের এক নির্দিষ্ট বয়সের উট ঋণ ছিল। লোকটি তাহাঁর নিকট সেটির তাগাদা করিতে আসল। তিনি সাহাবীদের বলিলেন, তাকে একটি উট দিয়ে দাও। তাঁরা সে বয়সের উট তালাশ করিলেন। কিন্তু তার চেয়ে বেশী বয়সের উট ছাড়া পাওয়া গেল না। তিনি বলিলেন, সেটি তাকে দিয়ে দাও। লোকটি বলিল, আপনি আমাকে পূর্ণ হক দিয়েছেন, আল্লাহ আপনার পূর্ণ বদলা দিন। নাবী করীম (সাঃআঃ) বলিলেন, তোমাদের মধ্যে উত্তম লোক সেই, যে উত্তমরূপে ঋণ পরিশোধ করে।
২৩৯৪. জাবির ইবনু আবদুল্লাহ (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, আমি নাবী করীম (সাঃআঃ)-এর কাছে আসলাম। তখন তিনি মসজিদে ছিলেন। মিসআর (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) বলেন, আমার মনে হয়, তিনি বলেছেন, তা ছিল চাশতের ওয়াক্ত। তিনি বলিলেন, দুই রাকআত সালাত আদায় কর। তাহাঁর কাছে আমার কিছু ঋণ প্রাপ্য ছিল। তিনি আমার ঋণ আদায় করিলেন এবং পাওনার চেয়েও বেশী দিলেন।
৪৩/৮. অধ্যায়ঃ পাওনা অপেক্ষা কম আদায় করা কিংবা মাফ করে দেয়া জায়েয।
২৩৯৫. জাবির ইবনু আবদুল্লাহ (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ
তাহাঁর পিতা উহুদের যুদ্ধে শহীদ হন এবং তাহাঁর উপর কিছু ঋণ ছিল। পাওনাদাররা তাদের পাওনা সম্পর্কে কড়াকড়ি শুরু করে দিল। আমি নাবী করীম (সাঃআঃ)-এর সমীপে আসলাম। তিনি তাদেরকে আমার বাগানের ফল নিয়ে নিতে এবং আমার পিতার অবশিষ্ট ঋণ মাফ করে দিতে বলিলেন। কিন্তু তারা তা মানল না। নাবী করীম (সাঃআঃ) তাদেরকে আমার বাগানটি দিলেন না। আর তিনি (আমাকে) বলেন, আমরা সকালে তোমার কাছে আসব। তিনি সকাল বেলায় আমাদের কাছে আসলেন এবং বাগানের চারদিকে ঘুরে বরকতের জন্য দুআ করিলেন। আমি ফল পেড়ে তাদের সমস্ত ঋণ আদায় করে দিলাম এবং আমার নিকট কিছু অতিরিক্ত খেজুর অবশিষ্ট রয়ে গেল।
৪৩/৯. অধ্যায়ঃ ঋণদাতার সঙ্গে কথা বলা এবং খেজুর অথবা অন্য কিছুর বদলে ঋণ অনুমানে আদায় করা জায়েয।
২৩৯৬. জাবির ইবনু আবদুল্লাহ (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ
তাহাঁর পিতা একজন ইয়াহুদীর কাছে হইতে নেয়া ত্রিশ ওসাক (খেজুর) ঋণ রেখে ইন্তিকাল করেন। জাবির (রাদি.) তার নিকট (ঋণ পরিশোধের জন্য) সময় চান। কিন্তু সে সময় দিতে অস্বীকার করে। জাবির ইবনু আবদুল্লাহ (রাদি.) আল্লাহর রাসুল (সাঃআঃ)-এর সঙ্গে কথা বলিলেন, যেন তিনি তার জন্য ইয়াহুদীর কাছে সুপারিশ করেন। আল্লাহর রাসুল (সাঃআঃ) এলেন এবং ইয়াহুদীর সাথে কথা বলিলেন, ঋণের বদলে সে যেন তার খেজুর গাছের ফল নিয়ে নেয়। কিন্তু সে তা অস্বীকার করিল। এরপর আল্লাহর রাসুল (সাঃআঃ) বাগানে প্রবেশ করে সেখানে গাছের (চারদিকে) হাঁটাচলা করিলেন। তারপর তিনি জাবির (রাদি.)-কে বলিলেন, ফল পেড়ে তার সম্পূর্ণ প্রাপ্য আদায় করে দাও। আল্লাহর রাসুল (সাঃআঃ) ফিরে আসার পর তিনি ফল পাড়লেন এবং তাকে পূর্ণ ত্রিশ ওসাক (খেজুর) দিয়ে দিলেন এবং সত্তর ওসাক (খেজুর) অতিরিক্ত রয়ে গেল। জাবির (রাদি.) আল্লাহর রাসুল (সাঃআঃ)- কে বিষয়টি অবহিত করার জন্য ইচ্ছা করিলেন। তিনি তাঁকে আসরের সালাতরত অবস্থায় পেলেন। তিনি সালাত শেষ করলে তাঁকে অতিরিক্ত খেজুরের কথা অবহিত করিলেন। তিনি বলিলেন, খবরটি ইবনু খাত্তাব (উমর)- কে পৌঁছাও। জাবির (রাদি.) উমার (রাদি.)-এর কাছে গিয়ে খবরটি পৌঁছালেন। উমার (রাদি.) তাঁকে বলিলেন, আল্লাহর রাসুল (সাঃআঃ) যখন বাগানে প্রবেশ করে হাঁটাচলা করিলেন, তখনই আমি বুঝতে পারছিলাম যে, নিশ্চয় এতে বরকত দান করা হইবে।
৪৩/১০. অধ্যায়ঃ ঋণ থেকে আশ্রয় চাওয়া।
২৩৯৭. আয়েশা (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, আল্লাহর রাসুল (সাঃআঃ) সালাতে এই বলে দুআ করিতেন, হে আল্লাহ! আমি তোমার কাছে গুনাহ এবং ঋণ হইতে পানাহ চাচ্ছি। একজন প্রশ্নকারী বলিল, (হে আল্লাহর রাসুল)! আপনি ঋণ হইতে এত বেশী বেশী পানাহ চান কেন? তিনি জওয়াব দিলেন, মানুষ ঋণগ্রস্ত হলে যখন কথা বলে মিথ্যা বলে এবং ওয়াদা করলে তা খেলাফ করে।
৪৩/১১.অধ্যায়ঃ ঋণগ্রস্ত (মৃত) ব্যক্তির উপর জানাযার সালাত।
২৩৯৮. আবু হুরাইরা (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ
নাবী করীম (সাঃআঃ) বলেছেন, যে ব্যক্তি মাল রেখে গেল, তা তার ওয়ারিশদের। আর যে দায়-দায়িত্বের বোঝা রেখে গেল, তা আমার যিম্মায়।
২৩৯৯. আবু হুরাইরা (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ
নাবী করীম (সাঃআঃ) বলেছেন, দুনিয়া ও আখিরাতে আমি প্রত্যেক মুমিনেরই সবচেয়ে ঘনিষ্ঠতর। যদি তোমরা ইচ্ছা কর তাহলে এ আয়াতটি তিলাওয়াত করে দেখঃ ———
النَّبِيُّ أَوْلَى بِالْمُؤْمِنِينَ مِنْ أَنْفُسِهِمْ
“নাবী করীম (সাঃআঃ) মুমিনদের নিকট তাদের নিজেদের অপেক্ষা ঘনিষ্ঠতর।” তাই যখন কোন মুমিন মারা যায় এবং মাল রেখে যায়, তা হলে তার যে আত্নীয়-স্বজন থাকে তারা তার ওয়ারিস হইবে; আর যদি সে ঋণ কিংবা অসহায় পরিজন রেখে যায়, তবে তারা যেন আমার নিকট আসে; আমিই তাদের অভিভাবক।
৪৩/১২. অধ্যায়ঃ ধনী ব্যক্তির (ঋণ আদায়ে) গড়িমসি করা অত্যাচারের শামিল।
২৪০০. আবু হুরাইরা (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, আল্লাহর রাসুল (সাঃআঃ) বলেছেন, ধনী ব্যক্তির (ঋণ আদায়ে) গড়িমসি করা যুলুম।
৪৩/১৩. অধ্যায়ঃ পাওনাদার ব্যক্তির কড়া কথা বলবার অধিকার রয়েছে।
নাবী করীম (সাঃআঃ) হইতে বর্ণিত। তিনি বলেছেন, মালদার ব্যক্তির ঋণ পরিশোধে টালবাহানা তার মানহানি ও শাস্তি বৈধ করে দেয়। সুফইয়ান (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) বলেন, তার মানহানি অর্থ-পাওনাদারের এ কথা বলা যে, তুমি আমার সঙ্গে টালবাহানা করছ আর তার শাস্তির অর্থ হচ্ছে বন্দী করা।
২৪০১. আবু হুরাইরা (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, নাবী করীম (সাঃআঃ)-এর কাছে এক লোক (ঋণ পরিশোধের) তাগাদা দিতে আসল এবং কড়া কথা বলিল। সাহাবীগণ তাকে শাস্তি দিতে উদ্যত হলে নাবী করীম (সাঃআঃ) বলিলেন, তাকে ছেড়ে দাও। হাক্বদারের (কড়া) কথা বলার অধিকার আছে।
৪৩/১৪. অধ্যায়ঃ ঋণ, বিক্রয় ও আমানত হিসেবে রক্ষিত নিজ সম্পদ কেউ যদি দেউলিয়া লোকের নিকট পায় তবে সে-ই তার অধিকারী।
হাসান [বসরী (রহমাতুল্লাহি আলাইহি)] বলেন, যদি সে প্রকাশ্যে দেউলিয়া (নিঃসম্বল) হয়ে যায়, তাহলে তার দাসমুক্তি ও ক্রয়-বিক্রয় জায়েয নয়। সাঈদ ইবনু মুসাইয়্যাব (রাদি.) বলেন, উসমান (রাদি.) ফায়সালা দিয়েছেন যে, কারো নিঃসম্বল ঘোষিত হওয়ার আগে যদি কেউ তার প্রাপ্য আদায় করে নেয়, তবে তা তারই। আর যে তার মাল সনাক্ত করিতে পারে, সে তার বেশী হক্বদার।
২৪০২. আবু হুরাইরা (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, আল্লাহর রাসুল (সাঃআঃ) বলেছেন, কিংবা তিনি বলেছেন যে, আমি আল্লাহর রাসুল (সাঃআঃ)- কে বলিতে শুনিয়াছি, যখন কেউ তার মাল এমন লোকের কাছে পায়, যে নিঃসম্বল হয়ে গেছে, তাবে অন্যের চেয়ে সে-ই তার বেশী হকদার। {আবু আবদুল্লাহ [ইমাম বুখারী (রহমাতুল্লাহি আলাইহি)] বলেন, এ সনদে উল্লেখিত রাবীগণ বিচারকের দায়িত্বে নিয়োজিত ছিলেন। তারা হলেন ইয়াহইয়া ইবনু সাঈদ, আবু বক্র ইবনু মুহাম্মাদ, উমার ইবনু আবদুল আযীয, আবু বক্র ইবনু আবদুর রহমান (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) ও আবু বক্র (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) তারা সকলেই মদীনায় বিচারক ছিলেন।}
৪৩/১৫. অধ্যায়ঃ যে ব্যক্তি পাওনাদারকে দুএক দিনের জন্য বিলম্বিত করলো আর এটাকে টালবাহানা মনে করে না।
জাবির (রাদি.) বলেন, আমার পিতার ঋণের ব্যাপারে পাওনাদাররা তাদের পাওনার জন্য কঠোর ব্যবহার করে। তখন নাবী করীম (সাঃআঃ) তাদেরকে আমার বাগানের ফল গ্রহণ করিতে বলিলেন। কিন্তু তারা অস্বীকার করিল। এতে নাবী করীম (সাঃআঃ) তাদেরকে বাগান দিলেন না এবং তাদের জন্য ফলও নির্ধারণ করে দিলেন না। তিনি বলিলেন, আমি আগামীকাল সকালে তোমার ওখানে আসব। সকাল হলে তিনি আমাদের কাছে এলেন এবং বাগানের ফলের মধ্যে বরকতের জন্য দুআ করিলেন। তারপর আমি তাদের পাওনা পরিশোধ করে দিলাম।
(মুসলিম ২২/৫, হাদীস ১৫৫৯, আহমাদ ৭১২৭)
৪৩/১৬. অধ্যায়ঃ গরীব বা অভাবী ব্যক্তির সম্পত্তি বিক্রয় করে তা পাওনাদারদের মধ্যে বন্টন করে দেয়া অথবা তার নিজের খরচের জন্য দিয়ে দেয়া।
২৪০৩. জাবির ইবনু আবদুল্লাহ (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, আমাদের মধ্যে কেউ তার গোলামকে মরণোত্তর শর্তে আযাদ করিল। নাবী করীম (সাঃআঃ) বলিলেন, কে আমার হইতে এই গোলামটি ক্রয় করিবে? তখন নুআঈম ইবনু আবদুল্লাহ (রাদি.) সেটি ক্রয় করিলেন। নাবী করীম (সাঃআঃ) তার দাম গ্রহণ করে গোলামের মালিককে দিয়ে দিলেন।
৪৩/১৭. অধ্যায়ঃ একটি নির্দিষ্ট সময়ের জন্য ঋণ দেয়া কিংবা ক্রয়-বিক্রয়ের মধ্যে সময় নির্ধারণ করা।
ইবনু উমার (রাদি.) বলেন, নির্দিষ্ট সময়ের জন্য ঋণ নিতে কোন দোষ নেই। আর শর্ত করা ব্যতীত তার পাওনা টাকার বেশী দেয়া হলে কোন ক্ষতি নেই। আতা ও আমর ইবনু দীনার (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) বলেন, ঋণ গ্রহীতা নির্ধারিত মেয়াদ মেনে চলবে।
২৪০৪. আবু হুরাইরা (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ
নাবী করীম (সাঃআঃ) বনী ইসরাঈল সম্প্রদায়ের এক লোকের কথা উল্লেখ করে বলেছেন যে, সে তার নিজ গোত্রের একজন লোকের নিকট ঋণ চায়। এরপর সে তাকে নির্দিষ্ট সময়ের জন্য ঋণ দেয় এবং এরপর বর্ণনাকারী হাদীসটি শেষ পর্যন্ত বর্ণনা করিয়াছেন।
৪৩/১৮. অধ্যায়ঃ ঋণভার কমানোর সুপারিশ।
২৪০৫. জাবির (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, আবদুল্লাহ (রাদি.) উহুদের যুদ্ধে শহীদ হন এবং পরিবার-পরিজন ও ঋণ রেখে যান। আমি পাওনাদারের নিকট কিছু ঋণ মাফ করে দেয়ার জন্য অনুরোধ করি। কিন্তু তারা তা অস্বীকার করে। আমি নাবী করীম (সাঃআঃ)-এর নিকট গিয়ে তাহাঁর দ্বারা তাদের কাছে সুপারিশ করাই। তবুও তারা অস্বীকার করিল। তখন নাবী করীম (সাঃআঃ) বলিলেন, প্রত্যেক শ্রেণীর খেজুর আলাদা আলাদা করে রাখ। আযক ইবনু যায়দ এক জায়গায়, লীন আরেক জায়গায় এবং আজওয়াহ অন্য জায়গায় রাখবে। তারপর পাওনাদারদের হাযির করিবে। তখন আমি তোমার নিকট আসব। আমি তাই করলাম। তারপর নাবী করীম (সাঃআঃ) আসলেন এবং তার উপর বসলেন। আর প্রত্যেককে মেপে মেপে দিলেন। শেষ পযর্ন্ত পুরোপুরি আদায় করিলেন। কিন্তু খেজুর যেমন ছিল তেমনি রয়ে গেল, যেন কেউ স্পর্শ করেনি।
২৪০৬. Read previous Hadith. জাবির (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ
আমি নাবী করীম (সাঃআঃ)-এর সঙ্গে একবার আমাদের একটি উটে চড়ে জিহাদে গিয়েছিলাম। উটটি পরিশ্রান্ত হয়ে পড়ে এবং আমাকে নিয়ে পেছনে পড়ে যায়। নাবী করীম (সাঃআঃ) পেছন হইতে উটটিকে চাবুক মারেন এবং বলেন, এটি আমার নিকট বিক্রি করে দাও। তবে মদীনা পযর্ন্ত তুমি এর উপর সাওয়ার হইতে পারবে। আমরা যখন মদীনার নিকটে আসলাম তখন আমি তাহাঁর কাছে তাড়াতাড়ি বাড়ী যাওয়ার অনুমতি চাইলাম এবং বললাম, হে আল্লাহর রাসুল! আমি নব বিবাহিত। তিনি বলিলেন, কুমারী বিয়ে করেছ, না বিধবা? আমি বললাম, বিধবা। কেননা (আমার পিতা) আবদুল্লাহ (রাদি.) ছোট ছোট মেয়ে রেখে শহীদ হয়েছেন। তাই আমি বিধবা বিয়ে করেছি, যাতে সে তাদের জ্ঞান ও আদব শিক্ষা দিতে পারে। তিনি বলিলেন, তবে তোমার পরিবারের নিকট যাও। আমি গেলাম এবং উট বিক্রির কথা আমার মামার কাছে বললাম। তিনি আমাকে তিরস্কার করিলেন। আমি তার নিকট উটটি ক্লান্ত হয়ে যাওয়ার এবং নাবী করীম (সাঃআঃ)-এর এটিকে আঘাত করার ও তার (মুজিযার) কথা উল্লেখ করলাম। নাবী করীম (সাঃআঃ) মদীনায় পৌঁছলে আমি উটটি নিয়ে তাহাঁর কাছে হাযির হলাম। তিনি আমাকে উটটির মূল্য এবং উটটিও দিয়ে দিলেন। আর লোকদের সঙ্গে আমার (গনীমতের) অংশ দিলেন।
৪৩/১৯. অধ্যায়ঃ ধন-সম্পত্তি অপচয় করা নিষিদ্ধ।
আল্লাহ তাআলার বাণীঃ “আল্লাহ অশান্তি পছন্দ করেন না”- (আল-বাকারাঃ ২০৫)। “আল্লাহ অশান্তি সৃষ্টিকারীদের কর্ম সার্থক করেন না”- (ইউনুসঃ ৮১)। “তারা বলিল, হে শুআয়ব! তোমার সালাত কি তোমাকে নির্দেশ দেয় যে, আমাদের পিতৃপুরুষেরা যার ইবাদত করত, আমাদের তা বর্জন করিতে হইবে এবং আমরা আমাদের ধন-সম্পদ ইচ্ছেমত ব্যয় করা থেকে বিরত থাকব?”- (হুদঃ ৮৭), আল্লাহ তাআলা আরো বলেছেনঃ “এবং তোমরা তোমাদের সম্পদ নির্বোধদের হাতে অর্পণ করো না।”-
(আন-নিসাঃ ৫), এই প্রেক্ষিতে অপব্যয় ও প্রতারণা নিষিদ্ধ হওয়া সর্ম্পকে।
২৪০৭. ইবনু উমার (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, জনৈক ব্যক্তি নাবী (সাঃআঃ)- কে বলিল, আমাকে ক্রয়-বিক্রয়ে ধোঁকা দেয়া হয়। তিনি বলেন, ক্রয়-বিক্রয়ের সময় তুমি বলবে, ধোঁকা দিবে না। এরপর লোকটি ক্রয়-বিক্রয়ের সময় এই কথা বলত।
২৪০৮. মুগীরাহ ইবনু শুবাহ (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, নাবী (সাঃআঃ) ইরশাদ করিয়াছেন, আল্লাহ তাআলা তোমাদের উপর হারাম করিয়াছেন মায়ের নাফরমানী, কন্যা সন্তানকে জীবন্ত কবর দেয়া, কারো প্রাপ্য না দেয়া এবং অন্যায়ভাবে কিছু নেয়া আর অপছন্দ করিয়াছেন অনর্থক বাক্য ব্যয়, অতিরিক্ত প্রশ্ন করা, আর মাল বিনষ্ট করা।
৪৩/২০. অধ্যায়ঃ কৃতদাস তার মনিবের সম্পত্তির রক্ষক। সে তার মনিবের আদেশ ছাড়া তা ব্যয় করিবে না।
২৪০৯. আবদুল্লাহ ইবনু উমার (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ
তিনি আল্লাহর রাসুল (সাঃআঃ)- কে বলিতে শুনেছেন, তোমরা প্রত্যেকেই রক্ষক। আর প্রত্যেকেই তার অধীনস্থদের সম্বন্ধে জিজ্ঞাসিত হইবে। নেতা (ইমাম) একজন রক্ষক, সে তার অধীনস্থদের সম্বন্ধে জিজ্ঞাসিত হইবে। পুরুষ তার পরিবারের রক্ষক, সে তার পরিবারের লোকজন সম্বন্ধে জিজ্ঞাসিত হইবে। স্ত্রী তার স্বামীর ঘরের রক্ষক, তাকে তার রক্ষণাবেক্ষণ সম্পর্কে জিজ্ঞেস করা হইবে। ইবনু উমার (রাদি.) বলেন, আমি এ সকলই আল্লাহর রাসুল (সাঃআঃ) হইতে শুনিয়াছি। আমার মনে হয় তিনি এ কথাও বলেছেন, ছেলে তার পিতার সম্পত্তির রক্ষক এবং সে জিজ্ঞাসিত হইবে তার রক্ষণাবেক্ষণ সম্বন্ধে। অতএব, তোমরা প্রত্যেকেই রক্ষক এবং তোমাদের প্রত্যেকেই তার অধীনস্থদের ব্যাপারে প্রশ্নের সম্মুখীন হইবে।
Leave a Reply